জোয়ারদারের দোকান খুঁজে পেতে অসুবিধে হল না। নাম বলতেই দেখিয়ে দিল অন্য-এক দোকানের কর্মচারী।
দোকানটা যে পুরনো বোঝাই যায়। সাবোর্ডের মাথায় লেখা আছে শুভারম্ভের সালটা। হিসেব করলে প্রায় পঞ্চাশে দাঁড়ায় এখন। তা পঞ্চাশ বছরের চেহারায় খানিকটা ভাঙাচোরা ময়লা ছাপ তো পড়বেই।
বড় দোকান বইকি! রাস্তার গা ঘেঁষে দোকান, মালপত্র সাজানো; কাঠের তক্তার “ল’; বোধ হয় ওখানে আরও মালপত্র ঠাসা আছে। কাঠের এক পার্টিশান একদিকে। পার্টিশানের ওপাশে জোয়ারদারের অফিস।
নানান ধরনের পাখা, ল্যাম্প, বাহারি আলোর শেড থেকে ইলেকট্রিক ইস্ত্রি, হিটার, মিটার কী না আছে দোকানে! ইলেকট্রিক তার, সুইচ, প্লাগ, মায় ইনভারটার পর্যন্ত।
দোকানে জনা-তিনেক কর্মচারী, একজন বুড়োসুড়ো ক্যাশবাবু।
তারাপদ সঙ্গেই ছিল। কিকিরা তারাপদকে ইশারায় বুঝিয়ে দিলেম যেন সে সঙ্গে-সঙ্গে থাকে তাঁর।
দোকানের এক কর্মচারী এগিয়ে এল। অন্যরা খদ্দের সামলাচ্ছে। ভিড় এমন কিছু নেই।
“কী চাই আপনার?” কর্মচারী এগিয়ে এসে বলল।
কিকিরা আগেভাগেই সব ছকে এসেছিলেন। বললেন, “মিস্টার জোয়ারদার কে? আপনাদের মালিক না?”
“হ্যাঁ, কেন?”
“তাঁর সঙ্গে কথা বলতে চাই। দোতলা একটা বাড়ির ইলেকট্রিকের সবরকম কাজ হবে। ফিটিংস সুন্ধু। আমার এক বন্ধু মিস্টার জোয়ারদারের কথা বললেন। এখানে কোনো ঠগ-জোচ্চুরি নেই, খারাপ মাল বিক্রি হয় না, দামটাও ঠিকঠাক…। তাই না, তারাপদ?”
তারাপদ মাথা নাড়ল।
কর্মচারীটি যেন ধাঁধায় পড়ে গেল। দোতলা একটা বাড়ির ইলেকট্রিকের সমস্ত কাজকর্মের জিনিস যাবে এই দোকান থেকে? সে তো অনেক টাকার কাজ। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে হাজার বারো-চোদ্দ। মালপত্র দামি কিনলে আরও বেশি।
কর্মচারীটি বলল, “দাঁড়ান দেখছি,” বলে পার্টিশানের ওপারে এক ঘরে ঢুকে গেল।
কিকিরা ফিসফিস করে তারাপদকে বললেন, “সাইনবোর্ডে দেখলাম লেখা আছে, কনট্রাকটারস। ঢিল ছুড়লাম। দেখি কী হয়!”
সামান্য পরেই কর্মচারীটি ফিরে এসে বলল, “আসুন।”
পার্টিশানের গা-লাগানো কাঠের এক খুপরি। চেয়ার, টেবিল, ফোন, লোহার আলমারি, ছোট এক লোহার সিন্দুক।
কিকিরাদের খুপরির মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়ে লোকটি চলে গেল।
টেবিলের ওপাশে জোয়ারদারসাহেব বসে।
কিকিরা নমস্কার করে বলল, “আমার নাম কে, কে, রায়। আপনিই তো। মিস্টার বিশ্বনাথ জোয়ারদার? পাতিপুকুরে থাকেন?”
জোয়ারদার একটু অবাক হলেন। নমস্কার জানিয়ে বললেন, “বসুন।”
লোহার হালকা চেয়ার। দু জনেরই বসার ব্যবস্থা ছিল। কিকিরা তারাপদকে বসতে বলে নিজে বসলেন।
তারাপদ বসল।
কিকিরা জোয়ারদারকে দেখছিলেন। প্যান্ট-শার্ট পরে বসে আছেন। ভদ্রলোক। গায়ের কোটটা আলমারির পাশে দেওয়ালে গাঁথা হুকে। হ্যাঁঙারসমেত ঝোলানো। ভদ্রলোকের বয়েস পঞ্চাশ কি সামান্য বেশি। লম্বাটে মুখ। গালের হাড় উঁচু। আধ-ফরসা গায়ের রং, মাথার চুল কিছু-কিছু পাকতে শুরু করেছে। চশমাটা টেবিলে নামানো। টেবিলে কাগজপত্র, বিল, চেই পড়ে আছে। জলের গ্লাস, চায়ের কাপ।
কিকিরার মনে হল, জোয়ারদারসাহেব তেমন স্বাস্থ্যবান নন। চোখে-মুখে অসুস্থতার ছাপ ফুটে রয়েছে।
জোয়ারদার বললেন, “বলুন, কী দরকার। আমার কথা কে বলল আপনাদের?”
কিকিরা খুব সহজেই সুবলের নাম বলে দিলেন। পারলে সুবলের বাবার নামই বলে ফেলতেন। নামটা তিনি জানেন না।
“আপনার দোকানের পুরনো কাস্টমার,” কিকিরা হেসে-হেসে বললেন।
জোয়ারদার কিছুই মনে করতে পারলেন না। খদ্দের কত আসে কত. যায়। কে আর মনে রাখে সকলকে। তবে জোয়ারদার ব্যবসাদার মানুষ, কথা বলতে জানেন। হেসে বললেন, “ও!…আচ্ছা! পুরনো খদ্দের আমার অনেক। বাবার আমলে এখানে ক’টা আর দোকান ছিল। এখন তো গিজগিজ করছে।…তা বলুন, আপনার দরকারটা শুনি।“
কিকিরা হাসি-হাসি মুখ করে বললেন, “আপনারা তো ইলেকট্রিকের সমত রকম কাজকর্মের কনট্রাক্ট নেন।”
“কনট্রাক্ট …ইয়ে, মানে…সেভাবে এখন আর নিই না। আগে নিতাম। আজকাল লোকজন পাওয়া বড় মুশকিল। হাতেপায়ে ধরতে হয়। কাজে ফাঁকি মারে। পাটির কাছে কথা শুনতে হয় আমাদের। অনর্থক ফ্যাচাং আর ভাল লাগে না। বয়েসও হচ্ছে।”
“কনট্রাক্ট আর নিচ্ছেন না?”
“একেবারে নিই না-তা বলব না। নিই।”
কিকিরা স্পষ্টই বুঝতে পারলেন জোয়ারদার হিসেব করে কথা বললেন। অর্থাৎ এখন ঝামেলার কাজ নেন না বড় একটা, তবে তেমন কাজ হলে নিতে আপত্তি নেই।
তারাপদ হতাশ হবার ভান করে বলল, “তা হলে আমরা…”
“আপনাদের ব্যাপারটা আগে শুনি।”
কিকিরা বেশ গুছিয়ে দোতলা বাড়ির ইলেকট্রিকের কাজকর্মের কথা বললেন।
জোয়ারদার ততক্ষণে সিগারেট ধরিয়ে নিয়েছেন। কিকিরাদেরও দিয়েছেন। তারাপদ সিগারেট নেয়নি।
শেষে জোয়ারদার বললেন, “বাড়িটা কোথায়?”
“টেগোর ক্যাসেল স্ট্রিট।”
“টে-গোর ক্যাসেল!” জোয়ারদার কেমন থতমত খেয়ে গেলেন।
কিকিরা কথা বললেন না, জোয়ারদারকে দেখছিলেন।
নিজেকে সামান্য সামলে নিয়ে জোয়ারদার বললেন, “বলেন কী মশাই! ওখানে বাড়ি! ও জায়গাটা তো সেই কী বলে, ধ্বংসস্তূপ হয়ে গেছে। ওখানে বাড়ি। এত জায়গা থাকতে শেষে…”
কিকিরা বললেন, “খুব সস্তায় পেয়ে গিয়েছিলাম। মর্টগেজ প্রপারটি থেকে কোর্টকাছারি…তা সে যাক, বলতে গেলে মহাভারত। সেই বাড়ি ভেঙেচুরে নতুন করে করাতে হল। আপনি দেখলেই বুঝতে পারবেন।”
“কোথায় বাড়িটা? মানে, ঠিক কোন জায়গায়!”
“কাঁঠালতলা বলে লোকে।”
জোয়ারদার যেন চমকে উঠলেন। “কাঁঠালতলার গলি!…বলেন কী! ওই গলিতে ভদ্রলোক বাড়ি করে। আরে ছি-ছি, সে তো একরকম ব্লাইন্ড লেন। ওখানে নতুন বাড়ি কোথায়? আরে মশাই, ওখানে এক বেটা তান্ত্রিক…ডেঞ্জারাস! সে বেটা ওখানে…”
“শুদ্ধানন্দ প্রেতসিদ্ধ কল্পবৃক্ষঃ…! “কিকিরা কল্পবৃক্ষ-এর বিসর্গে জোর দিলেন।
জোয়ারদারের মুখ হাঁ হয়ে থাকল। চোখের পাতা পড়ছিল না। শেষে বললেন, “চেনেন বেটাকে?”।
“না। নাম শুনেছি।”
“নাম শুনেছেন। দেখেননি?”
“না।” কিকিরা মাথা নাড়লেন, “আপনাকে দেখেছি।”
“আমাকে?” জোয়ারদারের যেন ফাঁস লেগে গেল গলায়, “কবে দেখলেন আমাকে?”
“গত পরশু! শনিবার সন্ধের পর।”
জোয়ারদার রীতিমত হতবাক। বিহ্বল। তাকিয়ে থাকলেন বোকার মতন।
কিকিরা হাসি-হাসি মুখে বললেন, “কী! ঠিক বলিনি?”
“আপনি কে মশাই? ডিটেকটিভ? লালবাজারের লোক?”
মাথা নেড়ে হাসতে-হাসতে কিকিরা বললেন, “না।”
“না!” জোয়ারদার ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকলেন। ঢোক গিললেন বার দুই। নানারকম ভাবতে লাগলেন। তারপর হঠাৎ বললেন, “তা হলে কি আপনি ওই কালো আলখাল্লার দলে ছিলেন?”
“কালো আলখাল্লা “
“বুঝেছি। ওদের দলে আপনি ছিলেন। ওখান থেকেই আপনি আমার নাম শুনেছেন। জোয়ারদার হঠাৎ কেমন খেপে গিয়ে কিছু বলতে যাচ্ছিলেন, তার আগেই কিকিরা বাধা দিলেন।
কিকিরা বললেন, “না, আপনাকে আমি আগেই দেখেছি। প্রেতসিদ্ধর চেলা এসে আপনাকে যখন হাত চেপে ধরল।”
জোয়ারদার যেন অগাধ জলে পড়েছেন! কে এই লোকটা? কাস্টমার না পুলিশের লোক? না চিটিংবাজ!
কিকিরা বললেন, “জোয়ারদারসাহেব, আপনি খুব অবাক হচ্ছেন। অবাক হবারই কথা। আপনাকে আমি আরও অবাক করতে পারি। আচ্ছা দেখুন আপনাকে একটা জিনিস দেখাই।” বলে নিজের পকেটে হাত দিলেন কিকিরা। স্টিলের একটা সুচ বার করলেন। ইঞ্চি-দেড়েক লম্বা। একটু মোটা। সুচের মুখ সামান্য ভোঁতা। সুচটা নিজের ডান চোখে ছোঁয়ালেন, ভুরুর তলায়, চোখের আর নাকের কাছে গর্তে। বললেন, “এই দেখুন, এই সুচটা আমি চোখে ঢুকিয়ে দিচ্ছি সবটা।” বলে কিকিরা চোখের কোলে মুচ ঢোকাতে লাগলেন।
জোয়ারদার ভয় পেয়ে গেলেন। আজব মানুষ তো! চোখে সুচ ঢুকিয়ে যাচ্ছে। মরবে নাকি! মুখ শুকিয়ে যাচ্ছিল জোয়ারদারের। “মশাই, করছেন কী! প্লিজ স্টপ। প্লিজ।…আমার এ-সব সহ্য হয় না।”
কিকিরা বারো আনা সুচ ঢুকিয়ে ফেলেছিলেন। বার করলেন এবার। বার করে চোখ বন্ধ রেখেই পকেট থেকে রুমাল টেনে নিয়ে চোখটা চাপা দিলেন। মুছলেন সামান্য। তারপর রুমালটা নিয়ে টেবিলের ওপর ফেলে দিলেন। তাকালেন এবার। ডান চোখ খুলেই।
হাসি-হাসি মুখ করে কিকিরা প্রথমে রুমালটা দেখালেন। দেখিয়ে টেবিলের ওপরই ফেলে রাখলেন। তারপর ডান চোখটা দেখালেন। বললেন, “কী? রক্তটক্ত দেখলেন?”
“না।”
“সুচটা তো আমি চোখে ঢুকিয়ে ছিলাম।”
“হ্যাঁ।”
“আরও কিছু দেখবেন?”
“না, মশাই। থাক।”
কিকিরা রুমালটা তুলে নিলেন টেবিল থেকে। “আপনি যদি একটা চেক লেখেন এখন, আপনার কালির রং পালটে যাবে!”
“মানে?”
“দেখুন না। পরীক্ষা করুন।”
জোয়ারদার চোখ নামিয়ে চেক বই টানতে যাচ্ছিলেন। বই নেই। কাগজপত্র সরালেন। ড্রয়ার টানলেন। চেক বই? টেবিলের ওপরেই তো ছিল।
কিকিরা এবার হেসে ফেললেন। রুমাল তোলার সময় চেক বইটা তুলে নিয়েছিলেন। জোয়ারদার বোঝেনি।
চেক বই ফেরত দিতে-দিতে কিকিরা বললেন, “জোয়ারদারসাহেব, কিছু মনে করবেন না। এ হল লোককে ধোঁকা দেবার খেলা। চোখে যেটা ঢোকালাম ওর মধ্যে স্প্রিং ছিল। গাড়ির শক অ্যাবজরভার বোঝেন! সেইরকম অন্যটা ক্লিন হাত সাফাই। দুটোই। আমি একজন ওল্ড ম্যাজিশিয়ান, ক্লাসিক্যাল টাইপ। লোকে আমাকে বড় চেনে না। এই ছোকরারা চেনে,” বলে তারাপদকে দেখালেন।
তারাপদ বিনয় করে বলল, “উনি হলেন কিকিরা দি ওয়ান্ডার, কিকিরা দি গ্রেট!”
জোয়ারদার ভীষণ ঘাবড়ে গিয়েছিলেন। বললেন, “আমার এখানে ম্যাজিক কেন? ম্যাজিক দেখাবার জায়গা এটা? আশ্চর্য লোক মশাই.আপনারা!”
কিকিরা বললেন, “না, ম্যাজিক দেখাবার জায়গা এটা নয়। কিন্তু সাহেবমশাই, আপনি গত পরশু দিন, শনিবার, সন্ধেবেলা কী দেখতে গিয়েছিলেন কাঁঠালতলা গলিতে?”
জোয়ারদার বললেন, “আমি দেখতে যাইনি। আমাকে একজন বলল, ওখানে গেলে ওই শুদ্ধানন্দ আমাকে বাসুর গলা শোনাবে।”
“বাসু কে?”
“আমার বন্ধু।”
“আপনার ভগ্নিপতি এবং পার্টনার।”
“কেমন করে জানলেন?”
“আমি পিশাচসিদ্ধ।” বলে কিকিরা হাসতে লাগলেন।
“আপনি মশাই লোকটি কে?”
“কিকিরা দি ম্যাজিশিয়ান।…এখন বলুন তো, স্যার, সেদিন কি আপনি বন্ধুর গলা শুনেছিলেন?”
“একটা গলা শুনেছিলাম।”
“বন্ধুর?”
“মনে হল না বাসুর! সর্দিতে গলা বসে গেলে, কিংবা ফোনের লাইনে গোলমাল হলে যেরকম গলা শোনা যায়, সেইরকম এক গলা শুনলাম।”
“আচ্ছা! তা আপনি কি গলা শুনতেই গিয়েছিলেন, না, কোনো বিশেষ কথা ছিল?
জোয়ারদার খানিক চুপ করে থেকে বললেন, “ছিল। বিজনেস সিক্রেট। পার্সোনাল ব্যাপার।”
“কথা হল?”
“না।…গলাটা শুনলাম, বুঝলাম না। শুদ্ধানন্দ বলল, বাসুর আত্মা একটা লেভেলের এপারে আসতে পারছে না। কোথাও গোলমাল হচ্ছে। আত্মারা নিজের মরজিতে আসে; আবার আসতে চাইলেও সব-সময় পারে না ভিড়ে আটকে যায়। আসছে হপ্তায় আবার চেষ্টা করা যাবে।”
তারাপদ মুচকি হাসল। কিকিরাও হাসিমুখে বললেন,কত নিল? মানে কত টাকা?”
“একশো এক। বেটা বলল, পরের দিন যদি ঠিকঠাক এসে যায় বাসু, কথা বলে, পাঁচশো এক লাগবে।“
কিকিরা মাথা দুলিয়ে বললেন, “বাঃ!…দুশো, পাঁচশো, হাজার…! বাঃ! ভাল ব্যবসা।…তা জোয়ারদারমশাই, কালো আলখাল্লার ব্যাপারটা একটু বলবেন। শুনতে ইচ্ছে করছে।”
জোয়ারদার বললেন, “সে এক ভুতুড়ে কাণ্ড মশাই। ও আপনি বুঝতে পারবেন না। আমি বললেও ধরতে পারবেন না। চোখে দেখতে হবে আপনাকে। অবশ্য চোখে দেখবেনই বা কী! সব অন্ধকার, কালো; যারা থাকে তাদেরও একটা করে কালো আলখাল্লা পরতে হয়। কাঁধ থেকে পা পর্যন্ত তো বটেই, ঘাড় থেকে মাথা পর্যন্ত ঢাকা থাকে, অনেকটা সেই ইংরেজি সিনেমায় দেখা সেকেলে সাধুসন্ন্যাসীর মতন, যাকে ওই ‘রোব’-টোব বলে। ধরুন না, মেয়েদের ওয়াটার পুফের মাথা ঢাকার যেমন ব্যবস্থা থাকে–সেইরকম মাথা ঢাকা।…মশাই, একে অন্ধকার তায় কালো আলখাল্লা, তার ওপর ঘাড়-মাথা ঢাকা, কেউ কারও মুখও আঁচ করতে পারে না।”
তারাপদ বলল, “আলখাল্লা সঙ্গে নিয়ে যেতে হয়?”
না, না, ঘরে ঢোকার আগে এক জায়গায় বসিয়ে দেবে। দিয়ে বলবে, জামা-জুতো খুলে ওই আলখাল্লা পরে নিতে। ওরাই দেয় আলখাল্লা।”
কিকিরা বললেন, “যে ঘরে আপনারা ঢুকলেন, ঘরটা কেমন? সেখানে কী কী আছে?”
“আমায় জিজ্ঞেস করবেন না। আমি বলতে পারব না। জীবন আমার বেরিয়ে যাচ্ছিল। ..আপনি নিজেই যান না, দেখুন গিয়ে।”
“যাবার খুব ইচ্ছে। যাব কেমন করে?”
জোয়ারদার যেন কিছু ভাবলেন। বললেন, “সত্যি সত্যি যাবার ইচ্ছে?”
“হ্যাঁ। একশো ভাগ ইচ্ছে।”
“বেশ, আমার সঙ্গে যাবেন।…তবে আপনি কার জন্যে যাবেন? আছে কেউ যাকে ডাকতে চান?”
কিকিরার, একবার তারাপদর দিকে তাকালেন তারপর মুখ ফিরিয়ে নিয়ে বললেন, “আছে। ও আপনি ভাববেন না! আপনার সঙ্গে যেতে পারলেই হল।”
“আমি নিয়ে যাব। যারা ওখানে যায়, তারা আগে থেকে বলে রাখলে সঙ্গে অন্য একজনকে নিয়ে যেতে পারে।”
“মানে, নতুন খদ্দের।”
জোয়ারদার মাথা নাড়লেন। তারপর বললেন, “আমি আপনাকে নিয়ে যাব। কিন্তু আপনার টাকাটা আপনি দেবেন।”
কিকিরা হেসে বললেন, “ঠিক আছে।”