৬. ক্রিমিনাল লইয়ার হামিদুজ্জামানের চেম্বারে

ক্রিমিনাল লইয়ার হামিদুজ্জামানের চেম্বারে মুহিব বসে আছে। তার কাছে আসার কোনো ইচ্ছা মুহিবের ছিল না। নিলি ম্যাডাম তাকে পাঠিয়েছেন। যদি কেউ কিছু করতে পারে হামিদুজ্জামানই পারবে। হামিদুজ্জামানকে পঞ্চাশ হাজার টাকা আপাতত দেয়া হয়েছে। হামিদুজ্জামান বললেন, উকিল আর ডাক্তার এদের কাছে কিছু গোপন করবে না। গোপন করলে নিজেদেরই সমস্যা। বলো দেখি তোমার

কাছে এখন ক্যাশ টাকা কত আছে? মুহিব বলল, পাঁচ লাখের সামান্য বেশি। উত্তরখানের জমি বিক্রি করেছি। টাকা দিয়ে মামলা মিটমাট করব এইজন্যে। মেয়ের বাবা আশরাফ সাহেব পাচ লাখ টাকার বিনিময়ে মামলা তুলে নিবেন বলেছেন।

হামিদুজ্জামান বললেন, মুখে মামলা তুলে নিলাম বললে তো হবে না। মেয়েকে এবং মেয়ের বাবাকে কোর্টে এসে বলতে হবে মামলা মিথ্যা। তারপর তারা ফেঁসে যাবে। মিথ্যা মামলা করার জন্যে জেলে ঢুকতে হবে। বুঝেছু ঘটনা?

বুঝার চেষ্টা করছি।

জমি কার কাছে বিক্রি করেছ?

হিশাম চাচার কাছে। উনি বাবার বিজনেস পার্টনার। বাবার বিজনেস নিয়ে নেয়ার জন্যে মামলা উনি করিয়েছেন। সালমা মেয়েটা তার ভাগ্নি। দূরসম্পর্কের ভাগ্নি।

জমির দখল ছেড়ে দিয়েছ?

জি-না। আমার মা এবং অশ্রু এখনো উত্তরখানের বাড়িতে আছেন। হিশাম চাচা সাতদিন সময় দিয়েছেন। আমাদের যাওয়ার কোনো জায়গা নাই।

দখল ছাড়বা না। কোনোভাবেই না। আমরা উল্টা মামলা করব— জোর জবরদস্তি করে জমির দলিল করে নিয়েছে। বাঘ তখন ধান খাবে। দবিরকে পাঠাব। দবির এক ফাঁকে হিশাম আর মেয়ের বাপ— এই দুইটাকে ডলা দিয়ে আসবে।

দবির কে?

আছে একজন। তার সঙ্গে তোমার পরিচয় মা হওয়াই ভালো। আমি ক্রিমিনাল লইয়ার। কিছু ক্রিমিনাল আমার পোষা থাকবে না। এখন আমাদের একটা কাজ করতে হবে। জমির বায়না যে তারিখে হয়েছে, তার আগের কোনো তারিখে থানায় জিডি এর ব্যবস্থা নিতে হবে। সেখানে থাকবে হিশাম তোমাকে ভয়-ভীতি দেখাচ্ছে।

মুহিব বলল, ব্যাক ডেটে জিডি এন্ট্রি কীভারে হবে।

হামিদুজ্জামান বিরক্ত মুখে বললেন, সেটা তো তোমার দেখার বিষয় না। আমার দেখার বিষয়। বুঝেছ কিছু?

বুঝার চেষ্টা করছি।

পত্রিকায় আমার পোষী লোক আছে।ক্রয়/তোমার বাবাকে নিয়ে একটা ফিচার। লিখবো।

কী ফিচার লিখবে?

লিখবে—একজনু সুম্মানিত শিক্ষক এবং এ দেশের প্রথম সারির গীতিকার ষড়যন্ত্রের শিকার। মিথ্যা অপবাদে তাকে জেলে পাঠানো হয়েছে এবং তার বিষয়ছপত্তি ইতিমধ্যেইদলিল রেজিঞ্জি করে নিয়ে নেয়া হয়েছেদলিলের কপি ছেপে দেয়া হবে। এইখানেই শেষ না আরো বাকি আছে।

আর কী বাকি?

মেয়েটার নাম কী সালমান জি।

আমরা প্রমাণ করব আলম অতিদুষ্ট উইল ড্রাগ অ্যাভিষ্ট এক তরুণী। অসামাজিক কার্যকলাগালিভার কিছুছবি আমরা যোগাড় করব। নেংটা পুংটা ছবি প্রয়োজনে সস্তা কিছু ম্যাগাজিনে ছেপে দিব।

ছবি কোথায় পাবেন।

ছবি ম্যানুফেকচার করা হর। পুরনো আমল নোই যে গান হবে—তুমি কি কেবলি ছবি শুধু পটে আঁকা? এই সময়ের গান হচ্ছে, তুমি কি নগ্ন ছবি? কম্পিউটারে আঁকা? হা হা হা।

মুহিব বলল, চাচী,আমি এর মধ্য দিয়ে যাব

তোমার বাবার সাত বছরের জুল হয়ে যাবে, তারপরেও যাবে না?

না।

হামিদুজ্জামান টেবিলের ওপর খানিকটা ঝুঁকে এসে বললেন, তুমি বরং এক কাজ করা আমার সঙ্গে কন্ট্রাক্টে আসি।

কী কন্ট্রাক্ট?

তোমার কাছে পাঁচ লাখ টাকা আছে। সেখান থেকে চার লাখ আমাকে দাও। তোমাকে কিছুই করতে হবে না, নাকে সরিষার তেল কিংবা অলিভ ওয়েল যে কোনো একটা দিয়ে ঘুমাবে। আমার দায়িত্ব তোমার বাবাকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসা। আরো সহজ করে দেই। টাকা এখন দিতে হবে না। তোমার বাবা ছাড়া পেয়ে আসুক তারপর দিবে।

চাচা, আপনাকে কিছু করতে হবে না।

আমাকে যে পঞ্চাশ হাজার দিয়েছ সেটা কিন্তু গেল।

গেলে গেল।

তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করা হয় নাই। তুমি কর কী?

আমি তেমন কিছু করি না। চাকরি খুঁজি।

পড়াশোনা কতদূর?

বিএ পাশ করেছি।

রেজাল্ট কী?

থার্ড ক্লাস।

বিবাহ করেছ?

না।

চা খাবে?

জি-না।

আরে বাবা, এক কাপ চা খাও। এত রাগ কেন? তোমার কাছে আমার আরেকটা প্রপোজাল আছে। আমি সরাসরি কথা বলতে পছন্দ করি। এখনো সরাসরি যা বলার বলব। ধানাইপানাই করে নষ্ট করার সময় আমার নাই।

মুহিব বলল, বলুন কী বলবেন।

আমার বিষয়সম্পত্তি অনেক। ঢাকা শহরে বাড়ি আছে তিনটা। চালু দোকান আছে দুটা। দুটাই বসুন্ধরা কমপ্লেক্সে। আমার একটাই মেয়ে। সে বেহেশতের দূর না, আবার খারাপও না। ফিজিক্সের মতো কঠিন বিষয়ে M.Sc, পড়ছে। অনার্সে ফার্স্টক্লাস পেয়েছে। আমার মানিব্যাগে তার ছবি আছে। যদি চাও দেখাতে পারি। আমি নিজে অসৎ বলেই একজন অতি সৎ ছেলের সন্ধানে আছি। পাই না। বাংলাদেশে সব ধরনের পাত্র আছে, সৎপাত্র নাই। তুমি রাজি থাকলে আমি তোমার এবং তোমার পরবর্তী জেনারেশনের সব সমস্যার সমাধান করে দেব।

মুহিব বলল, চাচা, আমি উঠলাম। যা করার নিজেই করব।

হামিদুজ্জামান থুথুদানে থুথু ফেলতে ফেলতে বললেন, তুমি যা করবে তা হলো বুড়া বাপকে সাত বছর জেল খাটাবে।

 

মুহিব রাস্তায় কিছুক্ষণ এলোমেলো হাঁটল। বাবার সঙ্গে দেখা করার কথা আছে। এখনো সময় হয় নি। আগে থেকে জেলখানার গেটে বসে থাকার মানে হয় না। সে দুটা বেদনা কিনল। আলাউদ্দিন স্বপ্নে দেখেছেন বেদানা খাচ্ছেন। আজকাল প্রায়ই তিনি স্বপ্নে নানান খাদ্যদ্রব্য খেতে দেখেন। মুহিবকে সেইসব কিনে নিয়ে যেতে হয়।

হাঁটতে হাঁটতে মুহিব আজ দিনের কাজগুলি গুছিয়ে নিতে চেষ্টা করল। ডিরেক্টর সাহেবের সঙ্গে দেখা করতে হবে। নতুন একটা নাটক নিয়ে তিনি কথা বলবেন। লীলার সঙ্গে অনেকদিন দেখা হয় না। একবার লীলাকে দেখে আসা দরকার। আজ শেষরাতে সে স্বপ্নে দেখেছে, লীলা তার সঙ্গে ঝগড়া করছে। শাড়ি আঁচলে পেঁচিয়ে কঠিন ঝগড়া। মুহিব ঝগড়ার বিষয়টা মনে করার চেষ্টা করল। কিছুতেই মনে পড়ছে না। হঠাৎ কোনো একদিন মনে পড়বে।

লীলাকে একটা টেলিফোন কি করবে? তার মোবাইলে ক্রেডিট নেই বললেই হয়। মুহিব মনে মনে বলল, লীলা, আমাকে একটা টেলিফোন কর। প্লিজ লীলা কর। টেলিপ্যাথির মাধ্যমে যোগাযোগের চেষ্টা। হিমুর একটা বইয়ে এরকম আছে। হিমু এই ভঙ্গিতে যোগাযোগ করতে পারত। বাদলের সঙ্গে তার কথা বলা দরকার। সে চোখ বন্ধ করে বলত–বাদল। বাদল। সঙ্গে সঙ্গে বাদলের টেলিফোন।

মুহিবের টেলিফোন বাজছে। আশ্চর্য, লীলার টেলিফোন। লীলা বলল, আজ সন্ধ্যায় তুমি কী করছ?

মুহিব বলল, কেন বলো তো?

আজ রাতে তোমার নাটকটা দেখাবে। তোমাকে নিয়ে একসঙ্গে দেখতাম। তিনজন মিলে দেখব। আমি, তুমি আর আহসান সাহেব।

মুহিব বলল, না।

না কেন?

তোমাকে সঙ্গে নিয়ে নাটক দেখতে লজ্জা লাগবে।

নিজের নাটক নিজে দেখবে না?

নিলি ম্যাডাম দাওয়াত দিয়েছেন। আজ রাতে তাঁর বাসায় নাটকটা দেখব। নাটকের শেষে আমার কী সব ভুল হয়েছে তিনি ধরিয়ে দেবেন।

লীলা হাসছে।

মুহিব বলল, হাসছ কেন?

লীলা বলল, আমার ক্ষীণ সন্দেহ নিলি ম্যাডাম তোমার প্রেমে পড়েছেন। ছোট্ট উপদেশ দেই, উনার আকর্ষণী ক্ষমতা প্রচণ্ড। তুমি আবার বিপদে পড়ে যেও না।

মুহিব বলল, বিপদে পড়ব না, কারণ নিলি ম্যাডাম কাউকে বিপদে ফেলার মানুষ না।

লীলা বলল, বাসায় চলে এসো। আহসান সাহেব ছাদে একটা বাগান তৈরি করে দিয়েছেন। এত সুন্দর হয়েছে।

মুহিব বলল, এখন আসতে পারব না। বাবার কাছে যেতে হবে। তাকে বেদানা খাওয়াতে হবে। তিনি বেদানা খেতে চাচ্ছেন। লীলা রাখি?

 

আলাউদ্দিন বেদানার দানা ভেঙে ভেঙে মুখে দিচ্ছেন। আগ্রহ নিয়ে চাবাচ্ছেন। তাকে কেন জানি খুব অসহায় লাগছে। মুখের চামড়া ঝুলে পড়েছে। চোখের দৃষ্টি ছানিপড়ার মতো।

আলাউদ্দিন বললেন, তোর পিতা কি বাংলার লট? এক কথায় পঞ্চাশ হাজার টাকা হামিদুজ্জামানকে দিয়ে চলে এসেছিস? আশেপাশে লোকজন না থাকলে এখনই থাপড়ায়ে তোর চাপার দাঁত ফেলে দিতাম। এক্ষণ তাঁর কাছে যাবি। পা ধরে পড়ে থাকবি। বলবি, চাচা মাথা গরম ছিল, ভুল করেছি। আপনি ছাড়া গতি নাই।

মুহিব বলল, উনি তখন নতুন শর্ত দেবেন। বলবেন আমার মেয়েকে বিয়ে কর।

বিয়ে করবি। বিয়ে তো করতেই হবে। তুই তার সঙ্গে কন্ট্রাক্টে চলে যা। তুই বল, আপনি বাবাকে রিলিজ করে নিয়ে আসুন। বিনিময়ে আপনার মেয়েকে আমি বিয়ে করব। বাপের জন্যে এই সামান্য কাজটা করতে পারবি না? কথা বলছিস না কেন? পারবি না? না-কি কারো সাথে এর মধ্যে লদকালদকি প্রেম হয়ে গেছে? বেকার ছেলে আর কিছু পারুক না-পারুক প্রেমটা পারে। তার জন্মই নেয় রোমিওজুলিয়েটের রোমিও হিসেবে। তার চেহারা দেখেই বুঝেছি জটিল প্রেম। নাটকের মেয়ে? তুই তো আবার শুনেছি নাটকে নেমেছিস। নাটকের মেয়েগুলি তো প্রেমের জন্যে জিহ্বা লম্বা করেই রাখে। মেয়েটার নাম কী? নাম বল।

মুহিব বলল, নাম জেনে কী করবে?

আলাউদ্দিন হতাশ গলায় বললেন, তাও তো কথা। আমি নাম জেনে কী করব? নাম দিয়ে তুই তসবির মতো জপ করবি। আমার কী? নাম ফুলকুমারী হলে যা, গাধাকমারী হলেও তা।

সেন্ট্রি ঘরে ঢুকে বলল, আপনাদের সময় শেষ। এখন যান।

আলাউদ্দিন বললেন, বাবারে, আসল কথাই তো বলা হয় নাই।

সেন্ট্রি বলল, নকল কথা যা বলেছেন তাতেই হবে।

 

লীলা টিভির সামনে বসে আছে। লীলার পাশে আহসান। কিছুক্ষণ আগে নাটক শেষ হয়েছে। লীলা চোখে রুমাল চেপে বসে আছে। তার কান্না শেষ হয় নি, এখনো তার শরীর ফুলে ফুলে উঠছে।

আহসান বলল, আমি নাটক-সিনেমা বুঝি না, কিন্তু বলতে বাধ্য হচ্ছি, মুহিবের অভিনয় অসাধারণ। সে তার ব্যক্তিগত হতাশা ছড়িয়ে দিতে পেরেছে। যখন সে হাসতে হাসতে বলল, আমি চলে যাচ্ছি—কিন্তু আমি চাই তোমার সুন্দর সংসার হোক। তোমার উঠানে তোমার ছেলেমেয়েরা খেলা করুক। তখন তার হাসিতে কান্না ঝরে পড়ছিল। যদিও ডায়ালগ সস্তা ধরনের হয়েছে। তারপরেও।

লীলা বলল, রবীন্দ্রনাথের কবিতার দুটা লাইন বললে অনেক সুন্দর হতো—

আমি বর দিনু দেবী তুমি সুখী হবে
ভুলে যাবে সর্বগ্লানি বিপুল গৌরবে।

আহসান বলল, রবীন্দ্রনাথ ছাড়াই কিন্তু ইমোশন তৈরি হয়েছে। এ তো কম কথা না। মুহিবকে টেলিফোন কর।

লীলা বলল, না।

আহসান বলল, না কেন?

মুহিব এখন আছে তার অতি পছন্দের একজন মানুষের সঙ্গে। তার নাম নিলি। এর মধ্যে আমি উপস্থিত হব না।

 

নিলি বলল, আমি একটা ভুল করেছি। এত সুন্দর নাটক হয়েছে। আপনার উচিত ছিল লীলাকে পাশে নিয়ে দেখা। আমি একটা তুচ্ছ অজুহাতে আপনাকে আটকে রেখেছি। সরি। আমি ড্রাইভারকে গাড়ি বের করতে বলছি। আপনি লীলার কাছে যান। বিশাল একটা ফুলের তোড়া কিনবেন। চকলেট কিনবেন। এবং তাকে একটা বিশেষ কথা খুব গুছিয়ে বলবেন।

কী কথা বলব?

আমি বলে দিচ্ছি কী বলবেন। আজ যতটা সুন্দর করেছেন, লীলার সঙ্গে অভিনয় যেন তারচেয়ে সুন্দর হয়। কথাগুলি যেন হৃদয়ের গভীর থেকে বের হয়ে আসে। পারবেন না।

পারব।

আপনি বলবেন, লীলা! আমি নিতান্তই দরিদ্র একজন ছেলে। চোখে আশা এবং স্বপ্ন ছাড়া আমার আর কিছুই নেই। আমার চারদিক অন্ধকার। তবে আমার বিশ্বাস, তুমি যদি একটা মশাল হাতে আমার পাশে এসে দাড়াও আমি অনেক দূর যাব। বলতে পারবেন?

জি মাডাম, পারব।

অভিনয় করে দেখান। মনে করুন এটা চকলেটের বাক্স। আর এই হচ্ছে ফুল। মনে করুন আমি লীলা। কলিংবেল বেজেছে। আমি দরজা খুললাম, ক্যামেরা রোল করছে। অ্যাকশান।

মুহিব কথাগুলি বলল। তার চোখ পানিতে ভর্তি হয়ে গেল। সে একবার চোখও মুছল।

নিলি বলল, খুব সুন্দর হয়েছে। ছোট্ট একটা ভুল হয়েছে। একটা পর্যায়ে লীলার হাত ধরা প্রয়োজন ছিল। মূল জায়গায় ভুলটা করবেন না।

মুহিব বলল, ভুল করব না।

নিলি বলল, একটি মেয়ের ভালবাসাকে আমি যুদ্ধের ট্যাংকের মতো মনে করি। সত্যিকার প্রেমিক-প্রেমিকা ট্যাংকের কঠিন বর্মের ভেতর থাকে। কোনো চড়াইউতরাই ট্যাংককে আটকাতে পারে না। আমার কথা না। আমি এত গুছিয়ে কথা বলতে পারি না। মনে হয় আর্নেস্ট হেমিংওয়ের কথা। উপন্যাসের নাম ফেয়ারওয়েল টু দা আর্মস কিংবা ফর হুম দা বেল টেলস।

 

মুহিব লীলাদের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে। তার হাতে ফুল নেই। চকলেটের বাক্সও নেই। দোকান বন্ধু হয়ে গেছে বলে কিনতে পারে নি। মুহিব লীলাদের বাড়িতে ঢুকছে না। কারণ গাড়িবারান্দায় আহসান সাহেবের প্রকাও গাড়িটা দেখা যাচ্ছে।

আজ সারাদিন বৃষ্টির ছিটেফোঁটা ছিল না। এখন টিপটিপ করে পড়তে শুরু করেছে। আহসানের গাড়ি গেট দিয়ে বের হচ্ছে। মুহিব উল্টোদিকে তাকাল যেন তাকে দেখা না যায়। গাড়ি মুহিবের সামনে এসে থামল। গাড়ির কাচ নামিয়ে আহসান মুখ বের করল।

মুহিব সাহেব, লীলার কাছে যাবেন তো? চলে যান। এখানে দাঁড়িয়ে আছেন কেন? আপনার নাটক দেখে লীলা খুব কেঁদেছে। আমারও চোখের পানি ফেলার ইচ্ছা ছিল। পুরুষমানুষ বলে ফেলতে পারি নি। পুরুষদের errotion দেখানোর অনেক।imitation. গাড়িতে উঠুন, আপনাকে নিয়ে একটা লং ড্রাইভ দেব, তারপর নামিয়ে দেব লীলাদের বাড়ির সামনে।

মুহিব গাড়িতে উঠল।

গাড়ি ঝড়ের গতিতে ছুটছে। আহসান নিচু গলায় গল্প করছে।

আহসান বলল, লীলার সঙ্গে আমার পরিচয়ের শুরুটা কি জানেন? আপনাদের পরিচয়ের শুরুটা জানি। নর্দমায় পরিচয়। আমাদের সেরকম না। তবে সেই পরিচয়ও ইন্টারেস্টিং। বলব?

বলুন।

আমি তখন ক্লাস নাইনে পড়ি। হেঁটে হেঁটে যাচ্ছি। হঠাৎ রাস্তার একটা নেড়ি কুকুর আমাকে তাড়া করল। ভয়ে এবং আতঙ্কে অস্থির হয়ে একটা খোলা গেট দেখে ঢুকে পড়লাম। ততক্ষণে কুকুরটা আমাকে কামড়ে ধরেছে। সেই বিশাল বাড়ির বারান্দায় অতি রূপবতী এক বালিকা কী যেন করছিল। আমি আশ্রয়ের জন্যেই বোধহয় মেয়েটাকে জড়িয়ে ধরে অজ্ঞান হয়ে পড়লাম। কুকুরটা আমাকে কামড়াল। মেয়েটাকে কামড়ালি। মেয়ের মা আমাদের উদ্ধার করতে এলেন, তাকেও কামড়াল। ঐ মেয়েই লীলা।

লীলার মা আপনাকে খুব পছন্দ করতেন?

আহসান বলল, হ্যাঁ। উনি বলতেন, পাগলা কুকুর তাড়া করে আমার মেয়ের জামাইকে আমার ঘরে ঢুকিয়েছে।

মুহিব বলল, লীলার সঙ্গে আপনার পরিচয়ের গল্পটা খুব সুন্দর।

আহসান বলল, গল্পটা চমৎকার, কারণ গল্পটা মিথ্যা। লীলার সঙ্গে প্রথম দেখার অনেক অদ্ভুত অদ্ভুত সিনারিও আমি কল্পনা করি। তারই একটা আপনাকে বললাম। আবার যেদিন দেখা হবে সেদিন আরেকটা বলব। আপনার সঙ্গে আমার কিছু মিলও আছে। আপনি যেমন গভীর রাতে লীলাদের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থাকেন, আমিও থাকি। তফাত একটাই, আপনি থাকেন রাস্তায় দাঁড়িয়ে, আমি থাকি দামি গাড়ির ভেতর। চলুন আপনাকে লীলার কাছে দিয়ে আসি।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *