৬. এবার আমার বাড়ন্ত গড়ন

০৬.

এবার আমার বাড়ন্ত গড়ন, তেরোর মনের কথা বলি। আজ আর আমি রমুদাকে কোনও ভাল সার্টিফিকেট দেব না। কিন্তু, তেরো বছর বয়সে, কলকাতার প্রথম দিনের রমুদাকে আমি ভুল। বুঝেছিলাম। সেই দিনের জন্য ওর ভাল সার্টিফিকেট পাওয়ানা। কিন্তু আমি কেন রেগে গিয়েছিলাম, কেন আমার কাছে সমস্ত ব্যাপারটা, শুধু খারাপই লাগেনি, অতি গর্হিত অপরাধ বলে মনে হয়েছিল! কেননা, আমি জানতাম, আমার মতো মেয়েকে কারোর চুমো খাওয়া পাপ। ভাইবোনের ক্ষেত্রে আরও পাপ। আমার সেই তেরোতে, জীবনকে আমি সেই চোখেই দেখে এসেছি, দেখতে শিখেছিলাম। আমার সেই বয়সে, ছেলেদের আদরের একটাই অর্থ আমার জানা ছিল। খারাপ, অন্যায়। কারণ, চুমোর খারাপটা যে জেনে গিয়েছিলাম আগেই।

এক এক সময়, সবকিছুতেই খুব অবাক লাগে। এখন অনেক কম লাগে, আগে আরও বেশি লাগত। এত অবাক লাগত, ভেবে কোনও কূল-কিনারা পেতাম না। আমাদের সমাজ, সংসার, চারিপাশের অবস্থা, সকলের চিন্তা ভাবনা বিশ্বাস, সবই যেন একরকম সাজানো গোছানো। তার সঙ্গে বাস্তবের মিল খুঁজে পেতাম না। চারিদিকে, ঘরে বাইরে, নানা উপদেশ, আদর্শ, বিধি-নিষেধ। অথচ বাস্তবের ক্ষেত্রে অনেক সময়েই দেখেছি, সব যেন কেমন উলটে-পালটে যেত। যা সত্যি বলে বিশ্বাস করতাম, আরও সবাই যা করত, দেখেছি, সে সত্যিই সব সত্যি না। তারপরেও আরও সত্যি আছে, তা সে যত খারাপই। হোক। দেখেছি, অনেক কিছুই মেলে না।

আমার বাবার কথা তো আগেই বলেছি। তাকে তো ছেলেবেলা থেকে সজ্জন বলেই জানতাম। বাবারা সবসময়ে সজ্জনই হয়ে থাকেন, এটাই চিরদিনের বিশ্বাস। কিন্তু বাবারাও অসাধু হন। জীবনের কোনও কিছুই অঙ্কে মেলে না। যা সত্যি আর বাস্তব বলে প্রচলিত, তার সঙ্গেও সব মিলিয়ে নিতে পারিনি। তা বলে জীবনকে আধিভৌতিক বা অপ্রাকৃত বলব কি না, বুঝতে পারি না। কিন্তু তথাকথিত বাস্তবের সংজ্ঞাটা মেনে নিতে পারি না। বাস্তবের কোনও ধরাবাঁধা নিয়ম নেই। একজনের বাস্তব, আর একজনের কাছে অবাস্তব। কোনটা কার ক্ষেত্রে বাস্তব, সেটা তার জীবনের গতিই নির্ণয় করে।

আর মূল্যবোধ? যারা মূল্যবোধের পরিবর্তনের কথা বিশ্বাস করে না, তাদের চোখের সামনে সারা দেশটাই তো পড়ে আছে। তারাই চেয়ে দেখুক, কোথায় তাদের সেই পুরনো মূল্যবোধ বজায় আছে। তারা নিজেরাই বা কতটুকু রাখতে পারছে, রক্ষা করতে পারছে।

কিন্তু এ সব কথায় আমার দরকার নেই। বলতে চেয়েছিলাম, আমাদের যা কিছু বাস্তব বিশ্বাস ভাবনা, তার সঙ্গে জীবনকে সবসময় মেলানো যায় না। সে কথা জেনে এখন কম অবাক হই। আগে আরও বেশি হতাম। চুমো খাওয়ার খারাপটা যখন জেনেছিলাম, তখন কৃষ্ণনগরে, আমার বয়সি কোনও কোনও বন্ধু চুমোর স্পর্শ পেয়েছিল। তাদের কোনও পাপবোধ ছিল কি না জানি না। তাদের চুমোর স্পর্শ, আমার মনে পাপবোধ জাগিয়েছিল। কিন্তু আমি জানতাম, আমার মনের সেই পাপবোধের কথা মা কোনও দিনই জানতে পারেনি। স্পর্শ যাদের লেগেছিল, তাদের কথাও কি তাদের মা বাবারা জানত! নিশ্চয়ই জানত না। অথচ বারো-তেরো-চৌদ্দ বছরের বন্ধুদের অনেকেই তখন প্রেম’ করতে শুরু করেছিল। কৃষ্ণনগরের মতো জায়গায় তখন বয়ফ্রেন্ড’ বা গার্লফ্রেন্ড’ কথাটা চালু ছিল বলে শুনিনি। বন্ধুদের কাছে ছেলেদের নাম শুনতাম। মেয়েদের মতে, ছেলেরাও সব চেনাশোনাই ছিল।

তার আগে বলি, বারোতেই নারী হয়েছিলাম। নারীত্ব প্রাপ্তি বলতে যা বোঝায়। জেনেছিল শুধু মা। নানান ভয়ে, নিজেই মাকে জানিয়েছিলাম। এখনও পরিষ্কার মনে আছে, মা নির্লিপ্ত মুখে বলেছিল, ও কিছু নয়, ও রকম হয়। মা নিজের হাতেই সব ঠিকঠাক করে দিয়েছিল। তারপরে খুব গম্ভীর মুখে, আমাকে তুমি করে বলেছিল, মনে রেখো, আজ থেকে বড় হয়ে গেলে। খুব সাবধান, খুব হুঁশিয়ার। সত্যিকারের মেয়ে বলতে যা বোঝায়, এখন থেকে তা-ই হয়ে গেলে। আর ছেলেদের সঙ্গে খেলাধুলো করা চলবে না। বড়দের সঙ্গে তো একেবারেই মেশামিশি করবে না। জানবে, তা হলেই বিপদ। এখন পদে পদে বিপদ, বুঝলে তো? খুব সাবধান!’ আসল কথাটা মা ভেঙে বলেনি, কীসের বিপদ, কেন বিপদ, ছেলেদের সঙ্গে আর কেন মেলামেশা করা চলবে না। কিন্তু বন্ধুদের কাছে তাও জানা হয়ে গিয়েছিল।

সত্যি বলতে কী, বন্ধুদের কাছেই বা কেন। বন্ধুদের কাছেই বটে, কিন্তু আগেই জানা হয়ে গিয়েছিল–এই হলে এই হয়। মেঘ হলে বৃষ্টি হয়, বীজ পুঁতলে গাছ হয়। সাবধান হয়েছিলাম বই কী। মায়ের কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছিলাম। তবু মা কি জানত, মেয়ের মনের কথা। আমি যে তার আগেই সব জেনেছি, সে কথা মা জানত না। আমার ধারণা, সব মায়ের বিশ্বাস, তাদের মেয়েরা কিছু জানে না। অনেক আগেই, আমার বন্ধুরা জিজ্ঞেস করেছে, তারা আমার থেকে বয়সে দু-এক বছরের বড়; কিন্তু যখন বলতাম, আমার সে রকম কিছু হয়নি, তখনই তারা জানিয়ে দিয়েছিল, হবে। এক বার মনে হয়েছিল, সকলেরই কি হতে হয়! ওইটুকুই ছিল আমার একমাত্র শিশুত্ব। কিন্তু আমি যে জানতাম, সেই জানাটা ছিল আমার মধ্যে এক রকমের অপরাধ-বোধ।

আর সেই বাড়ন্ত শরীর। যেন সেদিনের চারা লাগানো, হঠাৎ বেড়ে ওঠা লাউ ডগার মতো। মা আমার দিকে তাকিয়ে যেন ভয় পেয়ে যেত। স্পষ্টই বিরক্ত হয়ে উঠত। আমার বন্ধুরাও আমাকে ঠাট্টা করত। সে সব ভাষা শুনলে, মুখ লাল হয়ে উঠত, কান গরম হয়ে উঠত। তারা আমাকে খুঁটিয়ে জিজ্ঞেস করত, আমার শরীরে এত জোয়ার কেন। যারা তখনই প্রেম’ করতে শিখেছিল, তারা স্পষ্টই জিজ্ঞেস করত, আমিও কারও সঙ্গে প্রেম করছি কি না। রাগ হয়েছে, বিরক্ত হয়েছি, তাদের সঙ্গে মিশতে চাইনি। তবু তারা আমাকে শুনিয়ে শুনিয়ে অনেক কথা বলত। যারা প্রেম’ করত, সেই সব মেয়েদের সঙ্গে কোনও দিনই মিশতে সাহস পেতাম না। ওদের দেখে দেখে ভয় লাগত। মনে মনে অবাক হয়ে অনেক কথা ভাবতাম। ওরা নাকি চুমো ছাড়িয়েও অনেক দুর–কেউ কেউ চলে গিয়েছিল। ভাবলে গায়ে কাঁটা দিত। অনেকে আবার ওদের প্রেমিকদের সঙ্গে চিঠি লেখালেখি করত।

এখন হাসি পায়। তা ছাড়া আর কী পাবে! সবই ছিল কতকগুলো সময়ের ব্যাপার। এক একটা স্তরের ব্যাপার। তারপরে কোথায় সে সব মিলিয়ে গিয়েছে। কিন্তু আমার তখন মনে হত, এ সব কথা কি কেউ জানে। অথচ এ সব ঘটত, এখনও ঘটে, আমাদেরই চারপাশে, যা আমরা বিশ্বাস করতে চাই। না, মানতে চাই না, ভাবতেও ভাল লাগে না।

যখন ইস্কুল যেতাম, ইস্কুল থেকে বাড়ি আসতাম, তখন কত বিচিত্র গলার স্বরে কত শব্দ শুনেছি। একা না, আমাদের দলের বন্ধুরা একসঙ্গেই সব শুনতে পেতাম। যেখানেই দোকান, যেখানেই জটলা, সেখানেই শব্দ। এখনও মাঝে মাঝে মনে হয়, সে সব জান্তব শব্দগুলো মানুষের শরীরের কোন অন্ধকার থেকে বেরোয়। মানুষের গলা দিয়ে বেরোয় কী করে! এখন যে একেবারেই জানি না, তা বলব না। তবু অবাক লাগে। বাঘ যখন বাঘিনীর সঙ্গে আদরে খেলা করে, তাদের গোঙানির মানে বুঝি। এমনকী এও বুঝি–ইচ্ছুক পশু যখন সঙ্গিনীকে চিৎকার করে ডাকে। মানুষও জীব সত্যি, তথাপি সে মানুষ। তারা যখন আমাদের দেখলে চিৎকার করে উঠত, নানান শব্দ করত, সেগুলোকে কেন এত বীভৎস মনে হত।

শব্দের তবু এ রকম অবোধ উল্লাস ছিল। কিন্তু সেই শব্দের মধ্যেই যখন তাদের ভাষা ফুটত, তা ছিল আরও কুৎসিত। এত সব রসালো ডাসা ফলের কথা যে তাদের মনে পড়ে যেত, ভাবলে অবাক লাগে। সেই সব ফল কোথায় গেলে, কোন বাগানে পাওয়া যায়, তাও তারা গান গেয়ে শুনিয়ে দিত। ও সব গানের কলি শুনতে শুনতে যেন অন্ধ হয়ে যেতাম, অন্ধের মতো কোনও দিকে না তাকিয়ে রাস্তা দিয়ে চলতে থাকতাম। কোনও বন্ধুর মুখের দিকে তাকাতাম না। কেউ কেউ তাকাত, তাকিয়ে নিজেদের মধ্যে তারা মুখ টেপাটেপি করে হাসত। সেই হাসিটাকেও আমার একই রকম খারাপ লাগত। আমার কখনও হাসি পেত না। আমার কান মাথা যেন ঝা ঝা করত। আমার একলার না, আরও অনেক বন্ধুরই। কিন্তু সেই গানের মধ্যেই যখন শোনা যেত, নবীন মিত্রের বাগানের’ নানা নামের জোড়া ফুলগুলোর কথা, যখন গায়ে ঘেঁষে থাকা কোনও বন্ধুর চিমটি আমার পিঠে লাগত, তখন মনে হত, ঊর্ধ্বশ্বাসে দৌড়ে পালাই। যে বন্ধু চিমটি কেটেছে, তাকে ধরে পিটিয়ে দিই।

কোনওটাই পারতাম না। রুষে ফুঁসে যে উঠব, তাও পারতাম না। যেমনভাবে চলতে থাকতাম, তেমনিভাবেই চলে যেতাম। যেন কিছু শুনতে পাইনি, কিছুই জানি না। কিন্তু সবই শুনতাম, সবই জানা হয়ে গিয়েছিল। অথচ যেন আমাদের জীবনযাত্রার কোথাও এতটুকু টোল খায়নি, ফাট ধরেনি, এবং সেই সব ঘটনাগুলো আমাদের জীবনযাত্রার মধ্যে পড়ে না। যেন ও সব কোনও কিছুই, আমাদের সংসারের কোথাও কোনও ছায়া ফেলে না। সব যেমন ছিল, তেমনি চলছিল। সবই আমাদের চিন্তা ভাবনা আর বিশ্বাস মতো।

হায় পিতৃদেবগণ! হায় পুত্রগণ! শুধু এটুকুই বা বলি কেন। আরও বলি, হায় মাতৃদেবীরা! হায় কন্যারা! এ সব কথা বলতে বলতে, উনির্ভাসিটির কিছু অধ্যাপকের কথা আমার বেশি করে মনে পড়ে যায়। তাদের কারও কারও সঙ্গে, ছোট মুখে পাকা পাকা তর্ক করেছি কিনা। তারা নিজেদের বিশ্বাসের সূচ্যগ্র মেদিনীও ছাড়তে রাজি নন। অথচ কৃষ্ণনগরে আর কতটুকু দেখেছি। তার চেয়ে অনেক বেশি দেখেছি কলকাতায়। অনেক বেশি শুনেছি।

কিন্তু এখন আমার কথা চলছে তেরোর ঘরে বসে। এখন তেরোর দ্বিগুণে বসে, আরও ভাল করে বুঝতে পারছি, তেরো অনেক কিছু বোঝে, অনেক কিছু জানে। তেরোর যা থাকে না, তা একমাত্র বয়সের অভিজ্ঞতা, আরও বেশি দিনের অভিজ্ঞতা। নিজের চোখেই তো দেখেছি, আমাদের গ্রামে, তেরো বছর বয়সের মেয়ের কোলে সন্তান। মাথায় ঘোমটা। ছেলের কপালে কাজলের কালো টিপ পরিয়ে দিয়ে, ঠোঁট টিপে হেসেছে। যে হাসিতে সংসারের অভিজ্ঞতা ছিল না, মায়ের স্নেহ ছিল।

আমার পরিচয় কী ছিল। ছেলেমানুষ মেয়ে, অনাহুত বিরক্তিকর বাড়ন্ত গড়ন। কিন্তু সত্যি ছেলেমানুষ ছিলাম না, যে হিসাবে ছেলেমানুষ ভাবা হত। জেনেছিলাম বলেই অন্যায়ের আশঙ্কা তীব্র হয়ে উঠেছিল। মায়ের সাবধানবাণীকে আরও বেশি করে আঁকড়ে ধরেছিলাম। যারা, যাকে বলে, আওয়াজ দিত’,কথা শোনাত, গান শোনাত, তাতেই তারা শান্ত ছিল না। তারা নিজেদেরকে সামনে এনে হাজির করত, কথা বলতে চাইত। বন্ধুদের হাতে যে দু-চারটে চিঠিও পাইনি, এমন নয়। রাস্তা চলতে গিয়ে, লোকের চোখের দিকে তাকিয়ে, লজ্জায় চোখের পাতা নামিয়ে নিতে হয়েছে। এত স্বচ্ছ স্পষ্ট দৃষ্টি! তাদের বয়সেরও কোনও মাপজোখ নেই। বাবার বয়সের মানুষের চোখকেও দেখেছি।

সভ্যতা, সমাজ-সংসার আর নানা বিশ্বাস, তার মধ্যে কি ওই সব দৃষ্টিপাতকে মানায়! এখন, এ বয়সে এ সব নিয়ে আর মাথা ঘামাই না। বুঝেছি, মানুষ একান্তভাবে মানুষই। আমিও তা-ই। ভাল-মন্দ মিশায়ে সকলই। সেই ভেবে, আমার তেরো বছর বয়সে, মাথা বেশি উঁচু করে চলার কিছু ছিল না, নিচু করে চলারও কিছু ছিল না। যেমন চলেছিলাম, ঠিকই চলেছিলাম, কিন্তু মনকে অকারণ অনেক বেশি শক্ত আর আড়ষ্ট করে ফেলেছিলাম। মেয়ে আর তার শরীর, এ বিষয়ে অতিরিক্ত মাত্রায় সচেতন হয়ে উঠেছিলাম।

এখন আর ও সব ব্যাপারকে খুব অস্বাভাবিক অসহজ মনে হয় না। কিন্তু সেই যে বলেছিলাম, যে সাপের মাথায় মণি–সে যেমন অত্যন্ত সতর্ক সাবধান হয়ে চলে, ভিতরে ভিতরে একটা ভয়জনিত রাগে ফুসতে থাকে, কেউ যদি তার মাথার মণি কেড়ে নেয়, তাকে বিষের ছোবলে শেষ করে দেবে। কলকাতায় আসবার আগে, আমার মনের অবস্থা সেই রকম ছিল। সাপের মাথার মণি আর কিছু না, আমার শরীর। আমার এই তুচ্ছ শরীর, আজ যাকে তুচ্ছ ভাবতে পারছি। কারণটা তো সত্যি তুচ্ছ। মনই। তো আসল। যার মন গিয়েছে, তার শরীরের কী অবশিষ্ট আছে!

আমার মন এমনিতেই শক্ত আর আড়ষ্ট হয়ে উঠেছিল। তাকে মণিসাপের মতো বিষাক্ত আর ক্রুদ্ধ। করে তোলা হয়েছিল। ঘটনা ঘটেছিল, এই কলকাতায় আসার মাত্র মাস তিনেক আগে। সে কথা একজন ছাড়া কারোকে বলতে পারিনি। সজলকে বলেছিলাম। এখনও মনে আছে, সজলের চোখ দুটো হঠাৎ করুণ হয়ে উঠেছিল। আমার চোখের দিকে তাকিয়ে, ব্যথাভরা গলায় জিজ্ঞেস করেছিল, তোমার খুব কষ্ট হয়েছিল বিন্দু, না? তোমার কষ্টের কথা আমি কল্পনা করতে পারছি।

সজল আমার কষ্টের কথাই শুধু ভেবেছিল। রেগে ওঠেনি। ঘটনা শুনে, ঘৃণায় ফুঁসে ওঠেনি। আমার কষ্টের কথাই আগে ওর মনে হয়েছিল। বুঝতে পেরেছিলাম, সেটাই ঠিক। রাগ আর ঘৃণা? তখন আর তার মূল্য কতটুকু?

আমাদের বাড়ির পিছনে যে রায়পুকুর ছিল, সেই রায়েদের বাড়ি ছিল পুকুর থেকে একটু দূরেই। অনেক বড় একটা বাগান। সেই বাগানের পাঁচিলের আড়াল থেকে, পুরনো রায়বাড়িটার চিলেকোঠার ছাদ দেখা যেত। বাড়িতে লোকজন বিশেষ থাকত না। বংশধরদের একজনই তখন থাকতেন। তার নাম সুদেব রায়। বাবার থেকে কয়েক বছরের ছোট। বাবাকে নবীনদাদা বলে ডাকতেন। আমাদের বাড়িতে মাঝে মাঝে আসতেন। আমরা তাকে সুদেব কাকা বলে ডাকতাম। এমনিতে পান খেতে ভালবাসতেন কি না জানি না। আমাদের বাড়িতে এলে, মায়ের কাছে পান চেয়ে খেতেন, কই বউদি, একটু পান খাওয়ান। মা তাকে পান খাওয়াত। রায় ঠাকুরপো বলে সম্বোধন করত। অবসর পেলে একটু গল্পগুজবও করত। সে সব গল্পগুজবে আমার কান দেবার দরকার ছিল না। অনেক সময় হাসিঠাট্টাও হত। বাবা বাড়িতে থাকলেও গল্প হত, না থাকলেও হত। সুদেব রায় বাইরে বিশেষ কোথাও যেতেন না। নিজেদের জমিজমা দেখাশোনা করতেন। তাতেই তাদের চলে যেত। এক সময়ে অবস্থা ভাল ছিল। আমার সঙ্গে তাঁর বাড়িতে দেখা হত, রাস্তাঘাটেও মাঝে-মধ্যে দেখাসাক্ষাৎ হত। কোথায় চললি’, কী করছিস, এমনিতর দু-একটা কথা জিজ্ঞেস করতেন। হেসে মিষ্টি করে, স্নেহের সঙ্গেই জিজ্ঞেস করতেন, কথার জবাবও দিতাম। কিন্তু তার চোখের দৃষ্টি চিনতে ভুল হত না। তার কয়েকটি ছেলেমেয়েও ছিল। আমার বয়সি ছেলে ছিল। রোজ না হলেও তাদের বাড়িতে আমার যাতায়াত ছিল। কাকিমার কাছে যেতাম, বাগান থেকে ফুল নিয়ে আসতাম।

কখনও কখনও এমন হয়েছে, একা পুকুরের ধারে বা গ্রামের পথে, হঠাৎ হঠাৎ তার দেখা পেয়েছি। জিজ্ঞেস করতেন, কী করছিস বিন্দু?’ কোথায় যাচ্ছিস?’ অনেক সময় চমকে উঠতাম। কিন্তু পরে কিছু মনে থাকত না। আমার মনে কোনও সন্দেহ ছিল না। কলকাতায় আসবার তিন মাস আগে, হঠাৎ এক দিন বাড়ির কাছে দেখা হতে বলেছিলেন, বিন্দু, তোর কাকিমা তোকে এক বার ডেকেছে। আমাকে বলতে বলেছিল।

কথাটা অস্বাভাবিক লাগেনি। বলেছিলাম, যাব।

কখন যাবি?

বিকেলে।

সুদেব রায় চলে গিয়েছিলেন। আমি বিকালবেলা রায়বাড়ি গিয়েছিলাম। ভাবতে গেলে, এই বয়সে, এখনও আমার নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে। আমি জানতাম না, কোথায় চলেছি, কীসের ফঁদে। আমি কি জানতাম, একটা বাঘ আমাকে পাক দিতে দিতে, গভীর জঙ্গলের আড়ালে আড়ালে, একেবারে আমার মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু বাঘের নামই বা করছি কেন। ওরা শিকার করে পেটের খাবারের জন্য। সেটাই স্বাভাবিক। মানুষ বাঘের থেকে হিংস্র। মানুষের সমাজ জঙ্গলের থেকে বীভৎস।

বাড়ির মধ্যে ঢুকে, উঠোনের ওপর কারোকে দেখতে পাইনি। কারোর কোনও সাড়াশব্দও পাচ্ছিলাম না। ছেলেমেয়েদের দেখা পাওয়া উচিত ছিল। কাকিমা সাধারণত দোতলাতেই। থাকতেন। সেখানেও কোনও কথাবার্তা শোনা যাচ্ছিল না। ভেবেছিলাম, ছেলেমেয়েরা অন্য দিকে খেলা করছে। কাকিমা ওপরেই কোথাও আছেন। রায়বাড়িতে আমাদের অবাধ যাতায়াত ছিল। সিঁড়ি দিয়ে বারান্দায় উঠে, সামনের দালানে কারোকে দেখতে পাইনি। দালানের এক প্রান্তে, সিঁড়ি দিয়ে দোতলায় উঠেছিলাম। ওপরেও পাশাপাশি সারি সারি ঘর। সব ঘরেরই দরজা খোলা। ঘরগুলোর ভিতর দিয়ে যাতায়াতের দরজা ছিল। আমি দালানের মাঝখান অবধি গিয়ে ডেকেছিলাম, কাকিমা!

কোনও সাড়া পাইনি। দালানের শেষ অবধি গিয়ে, শেষ ঘরের খোলা দরজায় উঁকি দিয়ে আবার ডেকেছিলাম, কাকিমা!

কোনও সাড়া পাইনি। জানতাম, ঘরগুলোর পিছনে একটা লম্বা বারান্দা আছে। সেদিকে বাগান। আমি ঘরের মধ্যে ঢুকে, পিছনের বারান্দার দিকে গিয়েছিলাম। সেই সময়ে হঠাৎ একটা শব্দ শুনতে পেয়েছিলাম। এক বার থমকে দাঁড়িয়েছিলাম। মনে হয়েছিল, কোনও দরজায় যেন শব্দ হল। ঠিকই শুনতে পেয়েছিলাম। কিন্তু মনোযোগ দিইনি। পিছনের বারান্দায় গিয়েছিলাম। সেখানেও কেউ ছিল না। বারান্দার এদিকে ওদিকে দেখে, বাগানের দিকে এক বার ঝুঁকে, আবার ঘরের মধ্যে ঢুকেছিলাম। আর হঠাৎ একটা বিশ্রী শব্দ শুনেই, ভয়ে চমকে উঠেছিলাম, এবং শব্দ করে উঠেছিলাম, উহ।

সঙ্গে সঙ্গে দুটি হাত আমাকে জড়িয়ে ধরেছিল। আর সুদেব রায়ের হাসি শুনতে পেয়েছিলাম, আরে আমি আমি, খুব ভয় পেয়ে গেছিস তো?

একটা মুহূর্তের ভয় আর বিভ্রান্তি। আমি সুদেব রায়ের দু হাতের মধ্যে নিষ্পিষ্ট। ওটাকে আমি কীসের মুখ বলব জানি না। একটা কালো মুখের বীভৎস হ আমার মুখের ওপর নেমে এসেছিল। আগুনের মতো একটা গ্যাস আমাকে শুষে নিচ্ছিল। কোনও শব্দ করতে পারছিলাম না। নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছিল। নিজেকে মুক্ত করার জন্য দু হাত দিয়ে যেন পাথর ঠেলছিলাম, পা ছুড়ছিলাম, পারছিলাম না। কঠিন থাবার আঘাতে, বুকে ভীষণ যন্ত্রণা হচ্ছিল।

কতক্ষণ সে অবস্থায় কেটেছিল, আমি হিসাব করতে পারি না। হয়তো সময়ের হিসাবে দু-এক মিনিট, আমার কাছে অশেষ। তবু একসময় কঠিন আক্রমণ শিথিল করতে পেরেছিলাম, প্রথমেই ডেকে উঠেছিলাম, কাকিমা!

তার জবাবে রুদ্ধনিশ্বাস গোঙানো স্বর শুনতে পেয়েছিলাম, ভয় পাসনে, কাকিমা বাড়ি নেই।

বলতে বলতে আবার আক্রমণ করতে উদ্যত হয়ে উঠেছিল। আবার নিস্পিষ্ট হবার আগেই, আমি সজোরে হাত ছুঁড়তে আরম্ভ করেছিলাম, চিৎকার করে উঠেছিলাম, খবরদার, গায়ে হাত দিও না।

শুনতে পেয়েছিলাম, চেঁচাসনে। কেউ দেখলে, তোকেও ভাল বলবে না।

আমি তবু চিৎকার করেছিলাম, না বলুক, সরে যাও বলছি।

 হাত ছাড়িয়ে নিয়ে, আমি সিঁড়ির দরজার দিকে ছুটেছিলাম। সেই দরজা তখন এদিক থেকে বন্ধ। সেই বন্ধ করার শব্দই আমি ঘরের মধ্য থেকে শুনতে পেয়েছিলাম। পিছন থেকে ডাক শুনতে পেয়েছিলাম, শোন বিন্দু।

দরজা অবধি পৌঁছতে পারিনি, আবার আক্রান্ত হয়েছিলাম। আক্রমণের লক্ষ্যস্থল স্থির ছিল। আমি তখন কামড়াতে খামচাতে আরম্ভ করেছিলাম। কিন্তু তা যেন সবই পাথরের ওপর। সেই বীভৎস মুখ যত বার আমার মুখের ওপর নেমে আসতে চাইছিল, তত বারই খামচে দিচ্ছিলাম। হাত বুকের কাছে উঠে এলেই কামড়ে দিচ্ছিলাম। তবু নিজেকে মুক্ত করতে পারছিলাম না। তারপরে হঠাৎ কী হয়েছিল জানি না। হঠাৎ দলন শিথিল হয়েছিল। একটা ধাক্কা মারতেই, সুদেব রায় সরে দাঁড়িয়েছিল। লোকটার মুখের তখনকার সেই অভিব্যক্তি, আমি বর্ণনা করতে পারি না। আরক্ত আচ্ছন্ন চোখে আমার দিকে তাকিয়েছিল। দরজা খুলতে খুলতে মনে হয়েছিল, লোকটার কাপড় খুলে পড়ছে।

আমি সিঁড়ি দিয়ে নেমে, উঠোন পেরিয়ে ছুটেছিলাম। লক্ষ্য বাড়ির দিকে। কিন্তু বাড়ির কাছাকাছি গিয়েই আমি এক বার থমকে দাঁড়িয়েছিলাম। ভয়ে আমার গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠেছিল। বাড়িতে ঢুকে, মায়ের কাছে আমার দাঁড়াতে সাহস হয়নি। তখন অন্য দিক দিয়ে, বাড়ির পিছনে পুকুরঘাটের দিকে ছুটেছিলাম। তখন যেন আমারই ভয় বেশি। কেউ আমাকে দেখে ফেলবে, আমি কারোর সামনে পড়ে যাব। তখন আমি কী বলব, জানি না। পুকুর ধার থেকে একটু দূরে, বাঁশঝাড়ের আড়ালে চলে গিয়েছিলাম। চারপাশে আসশ্যাওড়া কালকাসুন্দের জঙ্গল। আমি একটা বাঁশ ধরে দাঁড়িয়েছিলাম। মনে হচ্ছিল, আর নিশ্বাস নিতে পারব না। দরদর করে ঘাম হচ্ছিল, হাত-পা থরথর করে কাঁপছিল। তারপরেই আমার ভীষণ কান্না পেয়েছিল।

আমার জামার বোম খুলে গিয়েছিল, কিন্তু ছেড়েনি। ইজার খুলে নেবার চেষ্টা হয়েছিল, পারেনি। গায়ে কোথাও রক্ত বেরোয়নি। কিন্তু সারা গায়ের মধ্যে যেন পাক লাগা শিউরোনি, বিভিন্ন জায়গায় ব্যথা। আস্তে আস্তে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছিল। আবার আমার ভয় বাড়ছিল। সেই বীভৎস মুখ আমার মনে পড়ছিল। আমি নিজেকে স্থির করেছিলাম। স্থির করেছিলাম, বাড়িতে কোনও কথা বলতে পারব না। কেননা, তার পরিণতি আমার কাছে যেন আরও ভয়ংকর মনে হয়েছিল।

বাঁশঝাড়ের আড়াল থেকে বেরিয়ে, চারদিক দেখে, পুকুরঘাটে গিয়ে দাঁড়িয়েছিলাম। কেউ ছিল না। আমি জলে নেমে গিয়েছিলাম। বিকালে মায়ের বেঁধে দেওয়া বিনুনিসুদ্ধ ডুব দিয়েছিলাম। যতক্ষণ নিশ্বাস ছিল, ডুব দিয়ে ছিলাম। উঠতে না হলেই যেন বাঁচতাম। তখন ব্যথার কথা ভুলে, কান্নার কথা ভুলে, ভেজা গায়ে বাড়িতে গিয়ে ঢুকেছিলাম। মা আমাকে দেখে ভূত দেখার মতো চমকে উঠে জিজ্ঞেস করেছিল, একি, এই ভর সন্ধেয় চান করে এলি?

বলেছিলাম, ময়লা মাড়িয়ে ফেলেছিলাম।

মায়ের সামনে থেকে চলে যাচ্ছিলাম। মা আমার দিকে তাকিয়ে বলেছিল, ময়লা মাড়িয়ে ছিলি, রাত্রের মতো না হয় পা ধুয়ে ফেললেই পারতিস। ঘরে গঙ্গাজল ছিল, মাথার একটু দিয়ে দিতাম।

বলেছিলাম, ঘেন্না করছিল বড্ড।

তা বলে চুল ভিজিয়ে এলি এখন?

কিছু হবে না।

তবু জানি, মা আমার দিকে মনোযোগ দিয়ে দেখছিল। রক্ষা শুধু এই, তখন দিনের আলো নেই, অন্ধকার ঘনিয়ে এসেছিল। আমি জামা ছেড়ে, গা মাথা মুছে, শুকনো জামা পরেছিলাম। তারপর হ্যারিকেন জ্বালিয়ে সবাই মিলে পড়তে বসেছিলাম। পড়তে পারছিলাম না। কিছুক্ষণ পরে মনে হয়েছিল, আমার ঘুম আসছে। মা রান্না করছিল। কারোকে কিছু না বলে শুতে চলে গিয়েছিলাম। তারপরে রাত্রে যখন মা খেতে ডেকেছিল, উঠতে পারিনি। মা আমার গায়ে হাত দিয়ে বলে উঠেছিল, যা ভেবেছি তা-ই, জ্বর এসে গেছে। তখনই জানি, ভর সন্ধেবেলা চান করা সহ্য হবে না। কথা না শুনলে এইরকম হয়! এখন ভোগা।

.

পুকুরে ডুবিয়ে আমার কোনও দিন জ্বর আসেনি। সে জ্বর যে কীসের, তা আমারও জানা ছিল না। ডাক্তার দেখে সন্দেহ করেছিল, টাইফয়েড হতে পারে। কারণ প্রথম কয়েক দিন, একশো চার অবধি জ্বর উঠেছিল। তারপরে নামতে আরম্ভ করেছিল। দশ দিনের মধ্যেই ভাল হয়ে গিয়েছিলাম। আমি জানতাম, আমার মনই আমাকে আরোগ্য করে তুলেছিল। কেননা, আমি জ্বরের মধ্যেও ভাবতাম, আমি ভাল হয়ে যাব, আমার কিছু হয়নি। পরে মা আমাকে জিজ্ঞেস করেছিল, জ্বর আসার দিন তুই কি ভয়টয় পেয়েছিলি কিছু?

আমি মনে মনে সতর্ক হয়ে উঠেছিলাম, না তো। কেন?

মা বলেছিল, জ্বরের ঘোরে কী সব বিড়বিড় করতিস, ছাড়ো ছাড়ো, কুকুর পাজি। আমাকে ডেকে উঠতিস। কাকিমা আবার কে? কাকিমা কাকিমা বলে ডেকে উঠতিস!

আমি অবাক হবার ভান করে বলেছিলাম, কী জানি, আমি তো কিছুই জানি না।

সেই থেকে আমি মণিসাপ হয়েছিলাম। শরীর নিয়ে, আগেই আমার মন শক্ত আর আড়ষ্ট হয়ে উঠেছিল। সেই ঘটনার পরে, মনে মনে হিংস্র হয়ে উঠেছিলাম। কিন্তু সেই শক্ত আড়ষ্টতা আর হিংস্রতার মধ্যে, আমার একটা পাপবোধও লুকিয়েছিল। সেই জন্যই, সহজ হতে আমার অনেক সময় লেগেছিল। রমুদা কী করে বুঝবে, কলকাতার প্রথম দিনের আদরে, কেন আমি ও রকম ব্যবহার করেছিলাম। শরীরের শুচিতা বলতে, তখন আমি অন্য রকম বুঝি। রমুদার চুমো আমাকে ভয় ধরিয়ে দিয়েছিল, সুদেব রায়ের কথা মনে পড়িয়ে দিয়েছিল।

এই হল আমার বাড়ন্ত গড়ন, তেরোর মনের কথা। তেরোতে অনেক কিছু জেনেছি, কিন্তু জানতে দিইনি। আমার চারপাশের সমাজ, সংসার নিশ্চিন্ত ছিল। আমি এক অনভিজ্ঞ নিষ্পাপ কিশোরী কুমারী। নিষ্পাপ নিশ্চয়ই ছিলাম। কুমারীও বটে। পাপবোধের মূল কারণটা নিহিত ছিল, এখনও রয়েছে, আমাদের সমাজের মূলে। এ বোধটা চাপানো। প্রকৃত পাপবোধ, তার কারণ এবং তাৎপর্য আলাদা। আমি এখন সেই পাপবোধে ভুগছি। সেই জন্যই আমি নিজেকে দেখতে চাইছি। সজলের চিঠিগুলো আমার সামনে। সুবীর ঘুরে গিয়েছে। রমুদা আমাকে অনেক কথা বলে গিয়েছে। কিন্তু কোথায় আমার বাজছে, কেউ জানে না। কোথায় জ্বলছে, কেউ দেখতে পাচ্ছে না। থেকে থেকে কেবল সজলের মুখ মনে পড়ছে। ইচ্ছা করছে, জপ করবার মতো করে ডাকি, সজল সজল সজল।