একোনসপ্ততিতম অধ্যায় – বস্ত্রাদি উপচারাষ্টক
ভগবান্ বলিলেন,–কার্পাস, কম্বল, বাল্ক এবং কৌষেয় এই চারি প্রকার বস্ত্র। এই সকল প্রথমে মন্ত্র দ্বারা অর্চনা করিয়াই দেবতাকে দান করিবে।
দশাশূন্য, মলিন, জীর্ণ, ছিন্ন, পূর্বে গাত্রসংস, পরকীয়, আখুদষ্ট, সূচিবিদ্ধ, পরিহিত, উপ্তকেশ, বিধৌত, শ্লেষ্ম ও মূত্ৰাদিদূষিত এইরূপ বস্ত্র দেবতার দানে দৈব ও পৈত্রকর্মে এবং যজ্ঞাদি কার্যে বর্জন করিবে। ২-৪
উত্তরীয়, উত্তরীয়াসঙ্গ, নিচোল প্রভৃতি কয় প্রকার বস্ত্র অ-সেলাই করাই দান করিবে। ৫
শণবস্ত্র, নিসার, ছত্র, চন্দ্রাতপ এবং অদৃশ্য এই পাঁচপ্রকার বস্ত্র সেলাই করা দূষণীয় নহে। ৬
পতাকা, ধ্বজ এবং দণ্ডাদিতে সেলাইকরা বস্ত্রই দান করিবে। অন্যত্র আবরণাদিতে সেলাইকরা বা অ-সেলাইকরা দুই প্রকার বস্ত্রই দান করিবে। ৭
রক্তবর্ণ কৌষেয়বস্তু মহাদেবীকে দান করিবার নিমিত্ত প্রশস্ত এবং পীতবর্ণ কৌষেয় বস্ত্র বিষ্ণুকে দান করিবার জন্য প্রশস্ত। ৮
পরমাত্মা শিবকে রক্ত কম্বল দান করিবে এবং সমুদয় দেব ও দেবীকে বিচিত্র বস্ত্র দান করিবে। ৯
সৰ্ব্বতোভদ্র (সকল প্রকারের বিশুদ্ধ) কার্পাসবস্ত্র সকল দেবতাকে দান করিতে পারে। ১০
কেবল রক্তবর্ণ চেলির কাপড় বিষ্ণুকে দান করিবে না এবং কোন নীলবর্ণ বস্ত্র শিবকে দান করিবে না। ১১
যে বস্ত্রের রঙ নীল ও লালে মিশ্রিত, তাহা সকল কার্যেই বর্জনীয়, বিচক্ষণ ব্যক্তি ঐরূপ বস্তুকে দৈব পৈত্র্য অথবা নিজের ব্যবহার কার্যে পরিত্যাগ করিবে। ১২
হে ভৈরব! যে ব্যক্তি প্রমাদবশতঃ ঐরূপ নীল-রক্ত বস্ত্র বিষ্ণুকে অপ্ররপণ করে, তাহার সেই পূজা একেবারে নিষ্ফল হয়। ১৩।
নীল ও রক্তরঙে রঞ্জিত বিচিত্র বসন কেবল মহাদেবীকে দান করিতে পারে, অন্য দেবতাকে কখনই দান করিতে পারে না। ১৪
মনুষ্যদিগের মধ্যে ব্রাহ্মণ যেমন এবং দেবতাদিগের মধ্যে ইন্দ্র যেমন, সেইরূপ ভূষণসমূহের মধ্যে বস্ত্র, সকলের শ্রেষ্ঠ। ১৫
বস্ত্রদ্বারা লজ্জা নিবারণ হয়, পাপও বস্ত্রদ্বারা জিত হয় এবং বস্ত্রদ্বারা সকল প্রকার সিদ্ধি লাভ হয়, এই নিমিত্ত বস্ত্র চতুৰ্বর্গপ্রদ বলিয়া কীৰ্ত্তিত হইয়াছে। ১৬
হে পুত্র! সর্বপ্রকার সিদ্ধিপ্রদ এবং ভোগ্যবস্তুর মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ বস্ত্রের বিষয় তোমার নিকট কীৰ্ত্তন করিলাম, এক্ষণে অলঙ্কারের কথা শুন। ১৭
কিরীট, শিরোরত্ন, কুণ্ডল, ললাটিকা, তালপত্র হার, গ্রৈবেয়ক, উৰ্মিকা, প্রালম্বিকা, রত্নসূত্র, উত্তঙ্গ, অক্ষমালিকা, পার্শ্বদ্যোত, নখদ্যোত, অঙ্গুলীচ্ছাদক। ১৮-১৯
কুটুম্বক, মানবক, মূর্দ্ধাতারা, খলন্তিকা, অঙ্গদ,বাহুবলয়, শিখাভূষণ, ইঙ্গিকা, প্রাগদণ্ডবন্ধ, উদ্ভাস, নাভিপুর, মালিকা, সপ্তকী, শৃঙ্খল, দন্তপত্র, কর্ণক, ঊরুসূত্র, নীবী, মুষ্টিবন্ধ, প্রকীর্ণক, পাদাঙ্গদ, হংসক, নূপুর, ক্ষুদ্রঘণ্টিকা এবং সুখপট্ট, -এই সুশোভন অলঙ্কার সকল উক্ত হইল। এই চল্লিশপ্রকার অলঙ্কার উক্ত হইল, ইহারা লোক ও বেদে সুখপ্রদ। ২০-২৩।
অলঙ্কার সকল দাতার চতুৰ্ব্বর্গের সাধক, ইহাদিগকে প্রথমে অর্চিত করিয়া দেবতার উদ্দেশে দান করিবে। ২৪
বিচক্ষণ সাধক অলঙ্কারের অচ্চনের সময় দেবতারও উল্লেখ করিবে। ২৫
হে ভৈরব! চুড়ারত্নাদি মস্তকের ভূষণ সকল সুবর্ণনিম্মিত করিয়া অর্পণ করিবে। গ্রৈবেয়ক হইতে হংস পর্যন্ত যে সকল ভূষণ উক্ত হইয়াছে, উহা বর্গ ও রজতনিৰ্মিত করিয়াই দেবতাদিগকে অর্পণ করিবে, অন্য ধাতুনির্মিত নয়। ২৬-২৭
লৌহভিন্ন পিতল বা রঙ্গাদিজাত পাত্রের উপকরণ দেবতাকে দান করিতে পারে কিন্তু ভূষণ কখনই পারে না। ২৮
ঘন্টা চামর এবং কুম্ভ প্রভৃতি পাত্রোপকরণ-ইহারা যে যে অঙ্গে ধৃত হয়, সেই সেই অঙ্গের অলঙ্কারের সহিত ইহাদিগকে দান করিবে, কারণ ইহারা সেই অঙ্গের উপভূষণ। ২৯
সকল প্রকার ভূষণ তাম্রময় করিয়াও দান করিতে পারা যায়। সকল স্থলেই তাম্র সুবর্ণের সদৃশ, কিন্তু অর্ঘ্যপত্রে সুবর্ণ অপেক্ষাও ফলপ্রদ। ৩০
পূজাৰ্ঘ্যপাত্র, নৈবেদ্যের আধারপত্র, পানপাত্র যদি উদুম্বরনির্মিত হয়, তাহা হইলে বিষ্ণুর অধিক প্রীতি এবং তোষপ্রদ হয়। ৩১
তাম্রলাভ করিয়া দেবতারা আমোদ করেন, তাম্রেই দেবগণ সর্বদা অবস্থিতি করেন। তা সকলের প্রীতিকর, এই তাম্রের অধিক ব্যবহার করিবে। ৩২।
হে ভৈরব! মনুষ্যেরা আপনার সাধ্যমত ভূষণ সকল নিৰ্মাণ করিবে, কিন্তু গ্রীবার উৰ্দ্ধদেশে কখন রৌপ্য ভূষণ ব্যবহার করিবে না। ৩৩
প্রাবার, পানপাত্র, গেণ্ডুক, গৃহ, পর্য্যঙ্ক প্রভৃতির ব্যবহারের বস্তু সকল উপভূষণ বলিয়া বিখ্যাত। ৩৪
স্বর্ণ এবং রৌপ্যের অভাবে লৌহময় এবং কাংস্যময় ব্যতীত অন্যপ্রকার ভূষণ অধঃশরীরে ধারণ করিবে। ৫
এই সকল ভুষণের মধ্যে যাহার যেরূপ শক্তি হইবে, সে তত পরিমাণে ভূষণ দান করিবে। সম্ভব হইলে সকল প্রকার ভূষণই দান করিবে। ৩৬
ভূষণ সর্বদা চতুব্বর্গপ্রদ সৌখ্যদানকারী এবং নিত্য তুষ্টি ও পুষ্টিদায়ক, অতএব যথাশক্তি ভূষণ দান করিবে। ৩৭
সকল দেবতার তুষ্টিপ্রদ ভূষণের বিষয় তোমাদের নিকট বলা হইল। এক্ষণে হে পুত্র বেতাল ও ভৈরব! চন্দনের বিষয় সম্যক্ শ্রবণ কর। চূণীকৃত, ঘৃষ্ট, দাহাকর্ষিত, সম্মর্দ্দজ রস অথবা প্রাণীর অঙ্গ সমূদ্ভব–এই পাঁচ প্রকার গন্ধ দেবতাদিগের প্রতিদায়ক। ৩৮-৩৯
গন্ধদ্রব্যের চূর্ণ, গন্ধপত্র বা পুষ্পের চূর্ণ এবং প্রশস্ত গন্ধযুক্ত বৃক্ষের পত্রচূর্ণ এই সকল প্রকার গন্ধ প্রথমজাতীয় গন্ধের অনুগত। ৪০
চন্দন সরল ও চমেরুর ঘর্ষণ জন্য গন্ধ এবং অগুরু প্রভৃতি ঘর্ষণদ্বারা যাহার পঙ্ক নির্গত করিয়া দেবতাকে অর্পণ করা যায়, তাহা ঘৃষ্ট ও দ্বিতীয় প্রকারের গন্ধ। ৪১
দেবদারু, অগুরু, পত্র, গন্ধসার, চন্দনপ্রিয়া চোয়াইয়া যে সুগন্ধি রস নির্গত করা হয়, উহার নাম দাহজ গন্ধ; উহা তৃতীয় প্রকার গন্ধের অন্তর্গত। ৪২
সুগন্ধ করবীর, বিল্ব, গন্ধিনী এবং তিলক প্রভৃতি নিপীড়ন করিয়া যে রস গৃহীত হয়, সেই সম্মর্দজন্য গন্ধের নাম সম্মর্দজ গন্ধ। ৪৩
মৃগনাভি বা তাহার কোষ হইতে যে গন্ধ উৎপন্ন হয়, তাহার নাম প্রাণ্যঙ্গজ গন্ধ, উহা স্বর্গবাসিদের অত্যন্ত মনোহর। ৪৪
কর্পূর এবং গন্ধসারাদি চূর্ণ এবং ঘৃষ্ট এই উভয়ের অন্তর্গত চন্দ্রভাগাদি রস এবং পঙ্কের অন্তর্গত। ৪৫
সকল প্রকার সম্মর্দাদিতে গন্ধসারের প্রয়োগ হয়; অপরের যোগে মৃগনাভি কখন ঘৃষ্ট কখন বা চূর্ণ হয়। ৪৬
এইরূপ সকল প্রকারেই গন্ধ পাঁচ প্রকারের অধিক হয় না। পরস্পরের দৃষ্টাদি ভাব থাকাতে গন্ধ সকল অত্যন্ত প্রীতিকর। ৪৭
কালীয়কাদি নানাপ্রকার ভেদ কথিত হইয়াছে। ঐ সকল প্রকার গন্ধই পাঁচ প্রকারের অন্তর্গত। ৪৮
মলয়জ গন্ধ দৈব এবং পৈত্ৰকাৰ্যে সম্মত, তাহার পঙ্কই হউক, রসই হউক অথবা চুর্ণই হউক, বিষ্ণুর তুষ্টিপ্রদ সকল প্রকার গন্ধের মধ্যে মলয়োদ্ভব অত্যন্ত প্রশস্ত; এই নিমিত্ত অতি যত্নপূর্বক মলয়জদান করিবে। ৪৯
হে ভৈরব! কৃষ্ণ অগুরু, কর্পূর এবং মলয়োদ্ভব একত্র মিশ্রিত হইয়া যে গন্ধ উৎপাদন করে, তাহা বৈষ্ণবী দেবীর এবং কামাখ্যার প্রীতিপ্রদ হয়। ৫০
কুঙ্কুম, অগুরু এবং কস্তূরী ইহার সমানাংশ চন্দ্রভাগের সহিত মিলিত হইয়া যে গন্ধ উৎপাদন করে, তাহা ত্রিপুরা দেবীর এবং শম্ভু ও চণ্ডিকাদেবীর প্রীতিপ্রদ হয়। সাধক দেবতোদ্দেশপূর্বক গন্ধ অর্চনা করিয়া ইষ্টদেবকে অৰ্পণ করিলে সকল প্রকার ফলপ্রাপ্ত হয়। ৫১-৫২
গন্ধ দ্বারা কাম লাভ হয়, গন্ধ সর্বদা ধৰ্মপ্ৰদ, গন্ধ অর্থের সাধক এবং গন্ধ মোক্ষেরও কারণ। ৫৩
হে পুত্র বেতাল ও ভৈরব! তোমাদিগকে গন্ধের কথা বলিলাম, এক্ষণে বৈষ্ণবী দেবীর প্রিয় পুষ্পের কথা শ্রবণ কর। ৫৪
বকুল, মন্দার, কুল, কুরুন্টক, করবীর, অর্কপুস্প, শাশ্মল, অপরাজিতা, মদন, সিন্ধুবার, সুরভি কুরুবক, লতা, বৃক্ষ, কোমল দূর্বাঙ্কুর, কুশের মঞ্জরী, শোভন এই সকল পুষ্পাদি দ্বারা বৈষ্ণবী দেবী কামাখ্যা এবং ত্রিপুরাকে পূজা করিবে। ৫৫-৫৭
এতদ্ভিন্ন আরও পুষ্পজাতি অন্যান্য দেবীরও প্রীতির নিমিত্ত হয়। হে বেতাল ভৈরব! আমি সেই সকল পুষ্পের বিষয় কীৰ্ত্তন করিতেছি, শ্রবণ কর। ৫৮
মালতী, মল্লিকা, জাতি, যূথিকা, মাধবী, পাটলা, করবীর, জবা নর্কারিকা, কুব্জ, তগর, কর্ণিকার, রোচন, আতাম্র, চম্পক, বাণ, বৰ্ব্বরা, অশোক, তিলক, লোধ্র, অটরূষ, শিরীষ, শমীপুষ্প, দ্রোণ, পদ্ম, উৎপল, করুন, শোভাঞ্জন, পলাশ, খাদির, বনমালা সীমন্তী, কুমুদ, কদম্ব, চক্র, কোকনদ, ভণ্ডিল, গিরিকর্ণিকা, নাগেশ্বর, পুন্নাগ, কেতকী, অঞ্জলিকা, দোহদা, বীজপুর, নমেরু, শাল, ত্রপুষী, চণ্ডবিল্ব, পঞ্চবিধ ঝিণ্টী ইত্যাদি সকল প্রকার কুসুম দ্বারা বরদায়িনী শিবার পূজা করিবে। ৫৯-৬৫
অপামার্গপত্র, ভৃঙ্গারকপত্র, গন্ধিনী-পত্র, বলাহকপত্র, খদিরপত্র, বঞ্জুলস্তবক, আম্র-স্তবক, জম্বুপত্ৰ, বীজপুর পত্র, কুশপত্র, দূর্বাঙ্কুর, শমীপত্র, আমলকপত্র, আম্রপত্র, ইহারা যথাক্রমে দেবীর অধিক প্রীতিকর এবং সকলের অপেক্ষা বিল্ব পত্র প্রীতিকর। ৬৬-৬৯
কোকনদ, পুষ্প, জবা, বন্ধুক এবং বিল্বপত্র ইহা সর্বাপেক্ষা দেবীর অধিক তুষ্টিপ্রদ বলিয়া প্রসিদ্ধ। ৭০
সকল প্রকার পুষ্পের মধ্যে রক্তপদ্মই দেবীপূজায় সর্বশ্রেষ্ঠ বলিয়া গণ্য। ৭১
যে ব্যক্তি ভক্তিযুক্ত হইয়া সহস্র রক্তপদ্ম দ্বারা মালা নির্মাণ করিয়া মহাদেবীকে অর্পণ করে তাহার ফলের বিষয় শ্রবণ কর। ৭২
সে আমার নগরে শতাধিক সহস্র কল্প বাস করিয়া অন্তে পৃথিবীতে রাজা হইয়া জন্মগ্রহণ করে। ৭৩
পত্রের মধ্যে বিল্বপত্র দেবীর অধিক প্রীতিকর, এই বিল্বপত্রসহস্ৰদ্বারা মালা নির্মাণ করিয়া দেবীকে অর্পণ করিলে পূর্বোক্ত ফললাভ হয়। ৭৪
অধিক কথা বলিয়া আর ফল কি, সামান্যতঃ এই কথা বলিলেই যথেষ্ট যে, উক্তই হউক আর অনুক্তই হউক; জলজাত হউক বা স্থলজাত হউক, সকল প্রকার পদ্ম, তথা সকল প্রকার ঔষধি, বনজ সকল প্রকার পুষ্প এবং পত্ৰদ্বারা দুর্গা দেবীর পূজা করিবে। ৭৫-৭৬
পুষ্পের অভাবে সেই পরমেশ্বরী দেবীর পত্রের দ্বারা পূজা করিবে, পত্রের অভাবে তৃণ, গুল্ম এবং ওষধী দ্বারা, ওষধীর অভাবে তাহাদের ফল-দ্বারা, তাহার অভাবে আতপ তণ্ডুল বা জল দ্বারা, তাহার অভাবে শ্বেত সর্ষপ দ্বারা, তাহারও অভাব হইলে মানসিক ভক্তি করিবে। ৭৭-৭৯
বাজিদন্তক পত্ৰ বা পুষ্প অথবা তুলসীর পত্র ও পুষ্প দ্বারা শ্ৰীর বৃদ্ধি কামনায় চণ্ডিকাদেবীর পূজা করিবে। ৮০
পুরশ্চরণ কার্যে তিলযুক্ত বিল্বপত্র দ্বারা কামনার বৃদ্ধির নিমিত্ত প্রজ্বলিত এবং সংস্কৃত অগ্নিতে হোম করিবে। ৮১
কামনার বৃদ্ধির নিমিত্ত সঙ্কল্পপূর্বক গণনা করিয়া যে জপ করা হয়, সেই জপের অন্তে ব্রাহ্মণগণ যে পূজা করেন, ব্রাহ্মণগণ তাহাকে পুরশ্চরণ বলিয়া অভিহিত করেন। ৮২
সেই পুরশ্চরণ কার্যে পূর্বোক্ত বিধি দ্বারা কামাখ্যা এবং বৈষ্ণবী দেবীর পূজা করিবে। সাধক এই পূজাতেও যথাসম্ভব ষোড়শ প্রকার উপচার দান করিবে, বিধি বিহিত কার্যের লঙ্ঘন করিবে না। ৮৩-৮৪
কল্পোক্ত পূজা সম্পূর্ণ করিয়া দশবার মূলমন্ত্র জপ করিবে, জপের পর হোম করিবে, তদনন্তর তিনটি বলিপ্রদান করিবে। ৮৫
তদনন্তর তিন প্রকার তৌৰ্য্যত্রিকের প্রয়োগ করিবে এবং পত্নী স্বয়ং ভ্রাতা অথবা গুরু অথবা স্বপুত্র কিংবা শিষ্য নৈবেদ্য আদির যোজনা করিবে। ৮৬
যজ্ঞের অবসানে গুরুকে শুভ দক্ষিণা দান করিবে। ৮৭
ঐ দক্ষিণার দ্রব্য সুবর্ণ তিল এবং গাভী। ইহাতে অশক্ত হইলে চেলীয় ষোড় দক্ষিণা দিবে। শুক্লপক্ষের অষ্টমী, নবমী অথবা চতুর্দশীতে জিতেন্দ্রিয় এবং ব্রহ্মচারী হইয়া মহাদেবীর পুরশ্চরণ করিবে। ৮৮
হে ভৈরব! এই সকল তিথিতে কল্পোদিত বিস্তৃত বিধি অনুসারে পূজা করিয়া গুরুবক্ত্র হইতে মন্ত্র গ্রহণ করিবে। ৮৯
সম্পূর্ণ পূজা না করিয়া অভীপ্সিত মন্ত্র গ্রহণ করিবে না এবং পুরশ্চরণও করিবে না, যদি করে তাহা হইলে অবসাদ প্রাপ্ত হইবে। ১০
নিত্য পূজাতেও যদি কল্পোদিত সম্পূর্ণ করিতে সক্ষম হয়, তাহা হইলে আলস্য ত্যাগ করিয়া তাহা করিবে। ৯১
হে ভৈরব! যদি দেবীর বা অন্য দেবতার কল্পোক্ত বিস্তর পূজা করিতে সক্ষম না হয়, তাহা হইলে বক্ষ্যমাণ বিধির অনুসরণ করিবে। ৯২
মার্জনাদি দ্বারা সংস্কার করিয়া স্থণ্ডিলে মণ্ডল অঙ্কিত করিবে এবং পাত্রের প্রতিপত্তি দাহ এবং প্লব করিবে। ১৩
তদনন্তর আত্মার অনুরূপ সংস্কার করিয়া ধ্যান করিবে। অনন্তর শুদ্ধির নিমিত্ত অঙ্গুষ্ঠাদি হইতে অস্ত্র পর্যন্ত দ্বাদশ প্রকার ন্যাস করিয়া অর্ঘ্যপাত্রে আট বার মূলমন্ত্র জপ করিয়া উপচার সকল ঐ জল দ্বারা সিঞ্চন করিয়া আধারশক্তি আদি সুমেরু পর্যন্ত পীঠদেবতার পূজা করিবে। ৯৪
অনন্তর হৃদয়স্থিত দেবতার ধ্যান করিয়া এবং বায়ুর সহিত হৃদয় হইতে তাহাকে বাহির করিয়া মণ্ডলে আরোপ করিয়া যথাশক্তি উপচার প্রদান কমিবে। ১৫
তাহার পর ষড়ঙ্গ পূজা, অষ্টদল দেবতার পূজা, জপ, স্তব এবং প্রণাম করিয়া তিন বার পুস্পাঞ্জলি দান করিবে। ১৬।
তদনন্তর দেবতার সম্মুখে মুদ্রা প্রদর্শন করিয়া বিসৰ্জন করিবে। সকল প্রকার দেবতারই এইরূপ পূজাবিধি জানিবে। ১৭।
যদি কল্পোক্ত সম্যক্ পূজা করিতে অক্ষম হয় এবং সকল প্রকার উপচার দান করিতে অক্ষম হয়, তাহা হইলে বক্ষ্যমাণ পাঁচ উপচার দান করিবে। ১৮
গন্ধ, পুষ্প, ধূপ, দীপ এবং নৈবেদ্য এই পাঁচ প্রকার উপচারের অভাবে পুষ্প এবং জল দিয়া পূজা করিবে এবং তাহারও অভাব হইলে কেবল ভক্তি দ্বারা পূজা করিবে। ১৯
হে ভৈরব! সংক্ষেপ পূজা, বস্ত্রাদি এবং পুরশ্চরণ কার্যের বিষয় বলা হইল। এক্ষণে দীপের কথা শুন। ১০০
দীপ দ্বারা লোক জয় হয়, এই দীপ তেজোময় এবং চতুৰ্বর্গপ্রদ, এই নিমিত্ত দীপ দ্বারা পূজা করা বিধেয়। ১০১
যে সর্বদা পুষ্প দীপ দ্বারা দেবতার পূজা করে, তাহা দ্বারাই সে স্বর্গগামী হয়, সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নাই। ১০২
পুষ্প দ্বারা দেবতা প্রসন্ন হন, পুষ্পেই দেবতাদিগের স্থিতি এবং চরাচর সকল পুষ্পরস বলিয়া অভিহিত হয়। ১০৩
পুষ্পের অতি প্রশস্ততার বিষয় আর কত বলিব? সেই পরম জ্যোতিঃ স্বরূপ পরমাত্মা পুষ্পে বাস করেন এবং পুষ্প দ্বারাই প্রসন্ন হন। ১০৪
পুষ্প ত্রিবর্গের সাধন এবং তুষ্টি, পুষ্টি ও প্রমোদদায়ক। ১০৫
পুষ্পের মূলে ব্ৰহ্মা বাস করেন, পুষ্পের মধ্যে কেশব এবং অগ্রভাগে মহাদেব বাস করেন, পুষ্পের দলে সকল দেবতা অবস্থান করেন। ১০৬
এই হেতু মনুষ্য ভক্তি যুক্ত হইয়া পুষ্প দ্বারা দেবতাদিগের পূজা করিবে। পুষ্পের নাম মাত্র উচ্চারণে সকল প্রকার বিভূতি লাভ হয়। ১০৭
প্রদীপ সাত প্রকার;-ঘৃত প্রদীপ, তিলতৈলযুক্ত প্রদীপ, সর্ষপ-তৈলযুক্ত প্রদীপ, নির্যাসজাত প্রদীপ, রাজিকাজাত প্রদীপ, দধিজাত প্রদীপ এবং অন্ন জাত প্রদীপ। ১০৮
পদ্মসূত্র ভব, দর্ভ, গর্ভসূত্র ভব, শণজা, বাদরী ফলকোষোদ্ভবা এই পাঁচ প্রকার বাতি দীপকাৰ্যে ব্যবহৃত হয়। ১০৯
তৈজস, দারুময়, লৌহনির্মিত, মৃন্ময় এবং নারিকেলজাত এই কয় প্রকার দীপই প্রশস্ত। ১১০
হে ভৈরব! প্রদীপের আধার ও তৈজসাদির নিৰ্মাণ করিবে, অথবা বৃক্ষের উপরে দীপ দান করিবে, কদাচ ভূমিতে দীপ দান করিবে না। ১১১
বসুমতী সকলই সহ্য করেন বটে কিন্তু দুইটি সহ্য করিতে পারেন না; অকাৰ্য্যের নিমিত্ত পদাঘাত এবং প্রদীপের তাপ। ১১২
অতএব যাহাতে পৃথিবী তাপ না পান সেইরূপে, হে ভৈরব! মহাদেবী এবং অন্য দেবতাদিগকে দীপ দান করিবে। ১১৩
পৃথিবীকে তাপ দান করে, সে ব্যক্তি তাম্ৰতাপ নরক প্রাপ্ত হয়, সে বিষয়ে সন্দেহ নাই। ১১৪
শোভন বৃত্তাকার বৰ্তিযুক্ত, সুস্নেহ, অভগ্নপাত্রে স্থিত, সুদৃশ্য সূচ্ছ্রায় এইরূপ বৃক্ষকোষে যত্নপূর্বক দীপ দান করিবে। ১১৫
যে দীপের তাপ চতুরঙ্গুলি দূর হইতে পাওয়া যায়, তাহা দীপ নয়, তাহা পাপবহ্নি বলিয়া অভিহিত হয়। ১১৬।
নেত্রাদির আহ্লাদকর, শোভন অর্চিযুক্ত, ভূমি তাপ বিবর্জিত সুশিখ, শব্দ শূন্য, নির্ধূম অতিহ্রস্ব এবং দক্ষিণাবর্ত বৰ্তিযুক্ত প্রদীপই শ্রীবৃদ্ধিকারক। ১১৭
দীপ যদি বৃক্ষে স্থিত হয় এবং পাত্র স্নেহদ্বারা পরিপূরিত থাকে, বৰ্ত্তী (সলিতা) যদি দক্ষিণাবর্ভে অবস্থিত হইয়া উজ্জ্বলভাবে জ্বলে তাহা হইলে হে পুত্র। সেই দীপই সর্বোত্তম এবং সকলের তুষ্টি প্রদ। ১১৮
যদি ঐরূপ দীপ বৃক্ষে না থাকে তাহা হইলে উহা মধ্যম বলিয়া কীর্তিত হয়। ১১১
যদি দীপপাত্র তৈলদ্বারা হীন হয়, তাহা হইলে উহা অধম বলিয়া গণিত হয়। ১২০
সাধক সূত্র বা বৃক্ষের ত্বক নির্মিত কিম্বা জীর্ণ অথবা শক্ত অথচ মলিন বস্ত্র সলিতা নির্মাণের নিমিত্ত গ্রহণ করিবে না। ১২১
শ্রীবৃদ্ধির নিমিত্ত সর্বদা নূতনের দ্বারাই সলিতা পাকাইবে, কোষজ বা রোমজ বস্ত্রও সলিতার নিমিত্ত গ্রহণ করিবে না। ১২২
ধৃত তৈলাদি মিশাইয়া দীপের স্নেহ করিবে না, যে ব্যক্তি ঘৃত তৈলাদি মিলাইয়া প্রদীপে স্নেহ দান করে, সে তামিস্র নরকে গমন করে। ১২৩
বসা, মজ্জা এবং অস্থি নিৰ্যাস প্রভৃতি প্রাণীর অঙ্গ-সমুদ্ভব স্নেহ দ্বারা প্রদীপ জ্বালিবে না। ঐরূপ স্নেহ দ্বারা প্রদীপ জ্বালিলে নরকে গমন করে। ১২৪
জ্ঞানবান সাধক শ্রীবৃদ্ধির অভিলাষী হইয়া অস্থি নির্মিত পাত্রে অথবা পচা দুর্গন্ধাদি যুক্ত পাত্রে প্রদীপ স্থাপন করিবে না। ১২৫
যত্নপূর্বক কখনও লক্ষণযুক্ত এবং দেবতার নিমিত্ত উপকল্পিত প্রদীপ নির্বাণ করিবে না। ১২৬
জ্ঞানপূর্বক অথবা লোভাদির বশীভূত হইয়া কখনও প্রদীপ হরণ করিবে না, কারণ দীপহরণকারী অন্ধ হয় এবং নির্বাপক কাণা হয়। ১২৭
দেবতার প্রসন্নার্থ অপর উপচার হইতে পৃথক দীপ দান করিবে। এই ত দীপের বিষয় বলা হইল, এক্ষণে ধূপের বিষয় শ্রবণ কর। ১২৮-১২৯
নাসা এবং অক্ষিরন্ধ্রের সুখদ সুগন্ধ অতি মনোহর দহনশীল কাষ্ঠের অথবা অপর কোনরূপ পবিত্র চূর্ণ দ্রব্যের যে তাপশূন্য ধূপ উৎপন্ন হয়, তাহার নামই ধূপ, উহা দেবতাদিগের তুষ্টিপ্রদ। ১৩০-৩১
তুষাগ্নির ন্যায় ঐ সকল দ্রব্য রাশীকৃত করিয়া প্রধূপিত করিবে না, কারণ ঐরূপ করিলে তাহার ফল প্রাপ্ত হয় না। ১৩২
শ্রীচন্দন, সরল, সাল, কৃষ্ণাগুরু, উদয়, সুরথ, স্কন্দী, রক্তবিদ্রুম, পীতশাল, পরিমল, বিমর্দী, কাশন, নমেরু, দেবদারু, বিল্বশাখা, দাড়িম, সন্তান, পারিজাত, হরিচন্দন, বল্লভ, এই সকল বৃক্ষের ধূপ সকলের প্রীতিপ্রদ বলিয়া কীর্তিত হইয়াছে ১৩৩-৩৫
সূত্রের সহিত অরাল, শ্রীবাস, অমল, সর্বৌষধিরজঃ, জাতিবারাহ চূর্ণ, তাহার কণা জাতীকোষের চূর্ণ, গন্ধ এবং কস্তুরিকা ইহাদের চূর্ণ করিলেও ইহারা ধূপ বলিয়া কথিত হয়। ১৩৬-১৩৭
যক্ষধূপ, বৃক্ষধূপ, শ্রীপিষ্ঠ, নির্জর, পরিবাহ, পিণ্ডধূপ, সুগোলকণ্ঠ পরস্পর যুক্ত নিৰ্যাস ধূপের এই কয়টি ভেদ কীৰ্তিত হইয়াছে। ১৩৮
ইহাদের অগ্নির ধুম দ্বারা দেবতা সকলকে ধূপিত করিবে, কারণ ইহাদিগের ধূমোদ্ভব গন্ধ আঘ্রাণ করিয়া প্রাণিগণ তৃপ্তি লাভ করে। ১৩৯
নিৰ্য্যাস (আটারূপ), পরাগ (গুড়াদ্রব্য) কাষ্ঠ, গন্ধ এবং এই পাঁচ প্রকার ধূপের আকার, ইহার শুভদায়ক এবং প্রীতিকর। ১৪০
যক্ষধূপ এবং কাশন ইহা মাধবকে দান করিবে না এবং রক্তবিদ্রুম সুরথ বা কদ্রিল আমাকে দিবে না। ১৪১
যক্ষধূপ, পত্রিবাহ, পিণ্ডধূপ, সুগোলক, কৃষ্ণাগুরু এবং সুকর্পূর ইহারা মহামায়ার প্রিয়। ১৪২।
অথবা মহামায়া দেবীকে বৃক্ষধূপ দ্বারা পূজা করিবে। মেদ ও মজ্জাযুক্ত পরকীয়, পূৰ্ব আঘ্রাত, অপহরণ করিয়া আনীত অথবা যাচিত ধূপ কখনই দান করিবে না। ১৪৩
মনুষ্য দ্বারা পুষ্প, ধূপ, গন্ধ এবং উপচার যদি আঘ্রাত হয়, তাহা হইলে দেবতাকে দিবে না, ঐ আঘ্রাত বস্তু দান করিলে নরকে গমন করে। ১৪৪
মৃত্তিকার আসনে অথবা ঘটে রাখিয়া ধূপ দান করিবে না, যেরূপ হউক, কোন প্রকার আসনে রাখিয়া উহা দান করিবে। ১৪৫
রক্তবিদ্রুম, শাল, সুরথ, সুরল, সন্তানক, নমেরু, কালাগুরু এই কয় প্রকার বৃক্ষসংসক্ত জাতীকোষ জন্য ধূপ কামেশ্বরী দেবীর প্রিয়। ১৪৬
হে পুত্রদ্বয়। এই ধূপ ত্রিপুরা দেবীর মাতৃগণের এবং কান্তাদি পীঠদেবতা সকলের নিত্য প্রিয়। ১৪৭
হে পুত্রদ্বয়। এই ধূপের বিষয় তোমাদের নিকট বলিলাম, এক্ষণে যেরূপ মহাদেবী কামাখ্যা, ত্রিপুরা ও বৈষ্ণবীর অঞ্জনের সৃষ্টি হয়, সেই অঞ্জনের বিষয় শ্রবণ কর। ১৪৮
সৌবীর, যামুন, তুত্থ, ময়ূর শ্রীবক, দৰ্ব্বিকা এবং মেঘনীল এই ছয় প্রকার অঞ্জন প্রসিদ্ধ। ১৪৯
হে পুত্র। সৌবীর স্ৰবদদ্রুম, যামুন প্রস্তর, ময়ূরগ্রীবক রত্ন, মেঘনীল তৈজস ইহাদিগকে শিলাপট্টে অথবা তৈজসপাত্রে ঘসিয়া ঘসিয়া রস বাহির করিয়া সকল দেব ও দেবীকে দান করিবে। ১৫০-১৫১
তাম্ৰাদি পাত্রে ঘৃত ও তৈলাদি লিপ্ত করিয়া অগ্নিতে তাতাইলে যে অঞ্জন উৎপন্ন হয়, তাহার নাম দর্বিকা। ১৫২
অপর সকল প্রকার অঞ্জনের অভাবে দেবীগণকে দাহাঞ্জন দান করিবে। জগদ্ধাত্রী, মহামায়া, কামাখ্যা এবং ত্রিপুরা ইহারা ছয় প্রকার অঞ্জন দ্বারাই সর্বদা তৃপ্তি লাভ করেন। ১৫৩
মহামায়ার নিমিত্ত বিধবা উত্তম অঞ্জন প্রস্তুত করিবে না। বৈষ্ণবীদেবী বিধবাকৃত অঞ্জন গ্রহণ করেন না। ১৫৪
সাধক মৃৎপাত্রে নেত্ৰাঞ্জনের যোগ করিবে না, কারণ মৃৎপাত্রনিহিত অঞ্জন দান করিলে পূজার ফল প্রাপ্ত হয় না। ১৫৫
ধূপ চতুৰ্বর্গপ্রদ এবং নেত্রের অঞ্জন কামনার ফলদান করে। এজন্য লোকে ভক্তিতে এই দুইটি দেবতাকে দান করিবে। এই তোমাদিগের নিকট ধূপ এবং নেত্রের অঞ্জনের বিষয় বলা হইল, এক্ষণে একাগ্রমনে নৈবেদ্যের বিষয় শ্রবণ কর। ১৫৬-১৫৭
উনসপ্ততিতম অধ্যায় সমাপ্ত। ৬৯