2 of 2

৬৮. ইন্দিরা গান্ধী

জওহরলাল নেহেরুর একমাত্র কন্যা ইন্দিরা গান্ধীকে তাঁর দেশের মানুষ শ্ৰদ্ধা ও ভালোবাসার সঙ্গে ডাকে ইন্দিরাজি।

ইন্দিরাজী কোলকাতা বিগ্রেড প্যারেড গ্রাউন্ডে বক্তৃতা দেবেন। তারিখ ডিসেম্বর তিন। তাঁর আসার কথা ছিল চার তারিখে, তিনি একদিন আগেই চলে এসেছেন। এর কোনো বিশেষ তাৎপর্য কি আছে? আজই কি সেই দিন? সেই মাহেন্দ্ৰক্ষণ? আজই কি বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়া হবে? হিন্দুস্থান সেনাবাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্যে সরাসরি নেমে পড়বে। স্বাধীন হবে বাংলাদেশ। এক কোটি শরণার্থ যারা অন্য এক দেশে, অচেনা পরিবেশে অবর্ণনীয় দুঃখে। জীবনযাপন করছে তারা ফিরে যাবে নিজ বাসভূমে।

বিগ্রেড প্যারেড গ্রাউন্ড লোকে লোকারণ্য। উদগ্ৰীব মানুষের সমুদ্র। বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়ার বিশেষ ভাষণ সবাই শুনতে চায়।

ইন্দিরাজী ভাষণ শুরু করলেন। শান্ত গলায় প্রায় উত্তেজনাহীন বক্তৃতা। তিনি নতুন কিছু বললেন না। শরণার্থীদের দুঃখ-দুৰ্দশার কথা বললেন। বিদেশী শক্তিদের আবারো আহ্বান করলেন সমস্যা সমাধানে ভূমিকা রাখার জন্যে। বক্তৃতা শেষ হয়ে গেল। তবে বক্তৃতা চলাকালিন সময়ে তিনি একটা ছোট্ট চিরকুট পেলেন। চিরকুট দেখে কয়েক মুহূর্তের জন্যে তাঁর ভুরু কুঁচকে গেল। চোখের দৃষ্টি হলো তীব্র। তাৎক্ষণিকভাবে নিজেকে সামলে নিয়ে যেন কিছুই হয় নি এমন ভঙ্গিতে বক্তৃতা শেষ করলেন।

চিরকুটে লেখা ছিল— পাকিস্তান বিমানবাহিনী হঠাৎ করে অমৃতসর, পাঠানকোট, শ্ৰীনগর, অবন্তিপুর, যোধুপুর, আম্বালা এবং আগ্ৰায় বোমা বর্ষণ করেছে। পাঞ্জাব সীমান্তে পাকিস্তান স্থলবাহিনী যুদ্ধ শুরু করেছে। তারা ভারতের ভেতরেও কিছুদূর ঢুকে পড়েছে।

ইন্দিরা গান্ধী দিল্লি ফিরে গেলেন। ডিসেম্বরের চার তারিখ মধ্যরাতে আকাশবাণী দিল্লি কেন্দ্র থেকে তিনি বাংলাদেশের মানুষদের বহু প্ৰতীক্ষিত বিশেষ ঘোষণাটা দিলেন। এই ঘোষণায় বাংলাদেশের স্বীকৃতি ছিল না, কিন্তু বোঝা যাচ্ছিল সেই স্বীকৃতি আসার পথ তৈরি হচ্ছে

Today the war in Bangladesh has become a war on india…

Aggression must be met and the people of india will meet it with fortitude and determination and with discipline and atmost unity.

ইন্দিরা গান্ধীর ঘোষণার জবাবে ইয়াহিয়া খান আনুষ্ঠানিক যুদ্ধ ঘোষণা করলেন। ডিসেম্বরের চার তারিখ সকালে। তিনি রেডিও ভাষণে বললেন,

Our enemy has once again challenged us…. March forward. Give the hardest blow of Allah ho Akbar to the enemy.

ইয়াহিয়া খানের যুদ্ধ ঘোষণার জবাবে ইন্দিরা গান্ধী লোকসভায় বললেন, আমি ভোরবেলায় খবর পেয়েছি পাকিস্তান আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। আমরা তৈরি আছি।

কিসিং কনটেম্পরারি আর্কাইভসের সেই সময়ের বিবরণ। এইভাবে দেয়া–

The tindian Army, linking up with the Mukti Bahini entered East Pakistan On Dec. 4 from five main direction, (1) in the Comilla Sector, east of Dacca; (2) In the Sylhet Sector, in the north-east of the province (3) in the Mymensingh Sector, in the North (4) in the Rangpur Dinajpur Sector, in the north west; (5) in the Jessore Sector, south west of Dacca….

শুরু হয়ে গেল অদ্ভুত এক আন্তর্জাতিক দাবা খেলা।

শক্তিমান দেশগুলি মেতে গেল নিজেদের অবস্থান এবং শক্তি পরীক্ষায়।

ডিসেম্বরের পাঁচ তারিখে মার্কিন সরকারের উদ্যোগে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের অধিবেশন বসল। যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব আনলেন মার্কিন প্রতিনিধি জর্জ বুশ।* মার্কিন প্রস্তাবের পক্ষে এগারোটা ভোট পড়ে। গ্রেট ব্রিটেন ও ফ্রান্স ভোটদানে অংশগ্রহণ করে নি। সোভিয়েত ইউনিয়ন মার্কিন প্ৰস্তাবের বিপক্ষে সরাসরি ভেটো প্রয়োগ করে প্রস্তাব বাতিল করে দেয়। সোভিয়েত প্ৰতিনিধি কমরেড জ্যাকভ মালিক বলেন, আপনারা কেউ কি পরিস্থিতি বুঝতে পারছেন না? জাতিসংঘের ৮৮টি দেশের কোনোটির জনসংখ্যা এক কোটির বেশ না অথচ পূর্ব পাকিস্তান থেকে এক কোটির বেশি শরণার্থী ভারতে আশ্রয় নিয়েছে।

রেডিও পিকিং থেকে বলা হলো, চীন পাকিস্তানকে সবরকম সাহায্য দেবে। ভারতীয় বাহিনীকে পরাজয়ের তিক্ত স্বাদ গ্রহণ করতে হবে।

চীন যাতে লাদাক সীমান্ত দিয়ে সরাসরি ভারতে ঢুকে না পড়তে পারে, সেই ব্যবস্থা নিতে এগিয়ে এলো রাশিয়া। রাশিয়া, চীন-রাশিয়া সীমান্তে দশ লক্ষ সৈন্য মোতায়েন করল।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট-রিচার্ড নিক্সন সাংবাদিকদের কাছে বললেন, ভারত যা করছে তার নাম সরাসরি যুদ্ধের মাধ্যমে একটি স্বাধীন দেশের অংশ দখল করার অশুভ পায়তারা।

মার্কিন সরকারের সপ্তম নৌবহর তখনো ছিল উত্তর ভিয়েতনামের কাছে। সপ্তম নৌবহরকে বাংলাদেশের দিকে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিল। সপ্তম নৌবহর রওনা হলো বঙ্গোপসাগরের দিকে। সপ্তম নৌবহরে ছিল পরমাণু শক্তি চালিত বোমারু বিমান বহনকারী বিশাল জাহাজ এন্টারপ্রাইজ, একটি এমফিবিয়াস এসল্ট শিপ, একটি গাইডেড মিজাইল ফ্রিগেট, চারটি গাইডেড মিজাইল ডেসট্রিয়ার এবং একটি ল্যান্ডিং ক্রাফট।

এর জবাবে রাশিয়া বিশটি সোভিয়েত রণতরীকে ভারত সাগবে নিয়ে এলো। একটি ক্ষেপণাস্ত্রবাহী রাশিয়ান ফ্রিগ্রেট এবং ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপে সক্ষম পরমাণু চালিত একটি সোভিয়েট ড়ুবোজাহাজও বঙ্গোপসাগরে উপস্থিত হবার জন্যে রওনা হলো।

হতভম্ব নিয়াজীকে গুল হাসান খান টেলিফোন করে পশতু ভাষায় জানালেন, নার্ভাস হবার কিছু নেই। মনে সাহস রাখ, হলুদ এবং সাদা জাতি উত্তর ও দক্ষিণ উভয় দিক দিয়ে আসছে।

ইয়াহিয়া খানও টেলিফোনে যোগাযোগ করলেন, যে-কোনো মুহুর্তে বিদেশী সাহায্য আসবে। যে-কোনো মূহুর্তে।

সাহায্য কীভাবে আসবে?

কীভাবে সাহায্য আসবে সে ব্যাখ্যা করা যাচ্ছে না, তবে বিদেশী সাহায্য আসবে। এই খবরে কোনো ভুল নেই। অতি গোপন খবর এবং আসল খবর। যে-কোনো ভাবেই হোক ঢাকার পতন যেন না হয়। ঢাকা ধরে রাখা। শুধু ঢাকা। সাহায্য আসবে, কঠিন সাহায্য।

 

গভর্নর হাউসে মিটিং বসেছে। পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ড. মালিকের মাথায় (ড, আব্দুল মোত্তালেব মালিক) সাদা টুপি। তিনি এইমাত্র নামাজ শেষ করেছেন। তাঁর চোখে-মুখে দিশাহারা ভাব। জেনারেল নিয়াজীকে বেশ হাসিখুশি দেখাচ্ছে। মিটিং-এ আরো উপস্থিত আছেন, রাও ফরমান আলি (গভর্নরের সামরিক উপদেষ্টা), জেনারেল জামশেদ। জেনারেল জামশেদকে অসম্ভব চিন্তিত দেখাচ্ছে। তবে রাও ফরমান আলির মুখমণ্ডল ভাবলেশশূন্য। তাঁকে দেখে মনে হচ্ছে, আশেপাশে কী হচ্ছে না হচ্ছে তার সঙ্গে তিনি নিজেকে সম্পৃক্ত করছেন না।

ড. মালিক খাকাড়ি দিয়ে গলা পরিষ্কার করে মিনমিনে স্বরে বললেন, আমাদের অবস্থাটা কী?

নিয়াজী বললেন, অবস্থা ভালো। কাপুরুষ হিন্দুবাহিনী ঢাকায় আসার চেষ্টা করছে। তাদের আগমন শিক্ষাসফরের মতো। পদে পদে শিক্ষা পেয়ে তারা এগুচ্ছে।

ড. মালিক বললেন, মূল অবস্থাটা কী জানতে পারি?

জেনারেল জামশেদ বললেন, মূল অবস্থা আপনার জানার প্রয়োজন নেই। যুদ্ধ কী হচ্ছে কেমন হচ্ছে তা দেখার দায়িত্ব গভর্নরের না। তিনি বেসামরিক বিষয় দেখবেন। জাতীয় পরিষদের সাধারণ অধিবেশনে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব এসেছে, আপনি সেই বিষয় নিয়ে ভাবুন।

ড. মালিক আগের চেয়েও ক্ষীণ গলায় বললেন, আমার মাথায় অন্য পরিকল্পনা ছিল।

রাও ফরমান আলি তীব্ৰ গলায় বললেন, কী পরিকল্পনা?

ড. মালিক থতমত খেয়ে গেলেন। কিছু বলতে পারলেন না। ফরমান আলি বললেন, দাবা খেলা এখন শেষপর্যায়ে চলে এসেছে। এখন আমরা মিডল গেম পার হয়ে এন্ড গেমে এসেছি। এন্ড গেম চট করে শেষ হয় না। চলতেই থাকে। চলতেই থাকে। এই খেলাও চলতে থাকবে। ইন্ডিয়া-পাকিস্তান কেউ জয়ী হবে না। স্টিলমেট অবস্থা হবে। তখন বিদেশী রাষ্ট্রগুলির মধ্যস্থতায় একধরনের সমঝোতা হবে।

ড. মালিক বললেন, এই বিষয়ে কি আপনি নিশ্চিত?

ফরমান আলি বললেন, অবশ্যই। একজন পূর্ব পাকিস্তানি নুরুল আমিনকে প্রধানমন্ত্রী এবং জুলফিকার আলী ভুট্টোকে উপপ্ৰধানমন্ত্রী করে কোয়ালিশন সরকার গঠন করা হয়েছে। আপনি কি এর মধ্যে কোনো ইঙ্গিতে দেখতে পারছেন না? এই কোয়ালিশন সরকার আলাদা আলোচনার মাধ্যমেই গঠন করা হয়েছে। এমনও হতে পারে যে, ইন্দিরা গান্ধীর পরামর্শেই এই সরকার গঠন করা হয়েছে। ড. মালিক বললেন, ইন্ডিয়ান সৈন্যরা যেভাবে এগিয়ে আসছে তাতে মনে হয়, অতি দ্রুত তারা ঢাকায় ঢুকে পড়বে।

জেনারেল নিয়াজী বললেন, ঢাকায় ঢুকতে তাদের খুব কম করে ধরলেও পাঁচ বছর লাগবে। ইন্ডিয়ানরা কাপুরুষ। আমাদের গোলাগুলির ভেতর দিয়ে এরা ঢাকায় কিছুতেই ঢুকবে না। ইন্ডিয়ানরা কেন কাপুরুষ সেই গল্প শুনতে চান?

কেউ জবাব দিল না। তাদের ভাবভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছে তারা এই মুহুর্তে গল্প শোনায় আগ্রহী না। নিয়াজীর উৎসাহে তাতে ভাটা পড়ল না। তিনি গল্প শুরু করলেন–পুরুষদের কাপুরুষতার অংশটা থাকে তাদের নুনুর আগায়। আমরা তা কেটে ফেলে দেই বলে আমরা সাহসী। ওরা তা ফেলে না বলে ওরা কাপুরুষ। হা…হা…হা…।

জেনারেল গলা ফাটিয়ে হাসছেন। সেই হাসি অন্য কারো মুখে সংক্রামিত হচ্ছে না। সাইরেনের শব্দ হচ্ছে। আবারো বিমান আক্রমণ হবে। অতি দ্রুত সবাই স্থান ত্যাগ করলেন। ইন্ডিয়ান বিমানবাহিনী বড় যন্ত্রণা করছে।

 

গভীর রাত। টাঙ্গাইলে পাকবাহিনীর অধিনায়ক বিগ্রেডিয়ার কাদির খান অবস্থান করছেন এলেঙ্গায়। কয়েকটি দুঃসহ রাত তিনি নির্মুম পার করেছেন। এখন আর শরীর টানছে না। মন অবসন্ন। একের পর এক ভয়াবহ দুঃসংবাদ আসছে। নিয়তির কী অপূর্ব রসিকতা! টাঙ্গাইল এলাকার মুক্তিবাহিনীর সর্বাধিনায়কের নামও কাদের। কাদের সিদ্দিকী। কাদির খান এখন প্রায়ই দুঃস্বপ্ন দেখেনতিনি বন্দি হয়েছেন কাদের সিদ্দিকীর হাতে।

কাদের সিদ্দিকী কি তার সঙ্গে সম্মানসূচক আচরণ করবে? তার মনে হয় না। মুক্তিবাহিনীর কাছে তারা অতি ঘূণ্য প্রাণী। একজন মর্যাদাসম্পন্ন সামরিক বাহিনীর অফিসারের সম্মান এবং মর্যাদার ব্যাপারটা বুঝবেন আরেকজন মর্যাদাসম্পন্ন সামরিক অফিসার। আত্মসমর্পণ যদি করতেই হয়, তাহলে করতে হবে ইন্ডিয়ানদের কাছেই। তিনি কী করবেন? তার কী করা উচিত?

উপর থেকে অস্পষ্ট সব নির্দেশ আসছে। একবার বলা হলো, নিজের অবস্থানে শক্ত হয়ে বসে থাকে। তারপর বলা হলো, পশ্চাদ অপসারণ করে ঢাকায় চলে এসো। ঢাকা রক্ষা করতে হবে। এখন ঢাকা রক্ষা মানেই পূর্ব পাকিস্তান রক্ষা।

তিনি ঢাকায় কীভাবে যাবেন? ঢাকা যাবার কোনো উপায় নেই। প্রতিটি ব্রিজ মুক্তিবাহিনী ভেঙে ফেলেছে। এতে অবশ্যি একটা সুবিধা হয়েছে, ইন্ডিয়ান সেনাবাহিনীও ঢাকায় যেতে পারছে না। তাদেরকেও পায়ে হেঁটে যেতে হবে।

ব্রিগেডিয়ার কাদির খান ডিনার করতে বসলেন রাত দুটায়। কয়েকটা শুকনা রুটি, এক বাটি ঠাণ্ডা গরুর মাংস। সেই মাংস সিদ্ধ হয় নি। পাথরের মতো শক্ত। সময় যখন খারাপ হয়, তখন সবদিক থেকেই খারাপ হয়। রসুইখানায় রান্না হয় নি। রসদের সমস্যা কিংবা অন্যকিছু হবে। তিনি এই নিয়ে ভাবতে চান না। এখন তাঁর একমাত্ৰ চিন্তা–কীভাবে কোন পথে ঢাকায় পৌঁছানো যায়? এবং কত দ্রুত পৌঁছানো যায়।

কাদির খান মাংস ছাড়াই রুটি মুখে দিলেন, আর তখন তার কাছে একটা সুসংবাদ এলো। এত বড় সুসংবাদ তিনি তার দীর্ঘজীবনে পান নি। বিদেশী সাহায্য চলে এসেছে। ঝাঁকে ঝাঁকে চাইনিজ প্যারটুপার নামছে। টাঙ্গাইলে নামছে।

ব্রিগেডিয়ার কাদির খান বললেন, আলহামদুলিল্লাহ। শেষপর্যন্ত তাহলে তাদের দেখা পাওয়া গেল?

সংখ্যায় কত?

অসংখ্য। শুধু নামছেই।

আমার তরফ থেকে তাদের অভ্যর্থনার ব্যবস্থা করে। তাদের পরিকল্পনা কী আমার জানা দরকার। আমার ধারণা তারা ইচ্ছা করে টাঙ্গাইল নেমেছে, যাতে শুরুতেই কাদের সিদ্দিকীকে শায়েস্তা করতে পারে।

হতে পারে স্যার।

হতে পারে না, এটাই সত্য। হেড কোয়ার্টারের সঙ্গে যোগাযোগ করে চাইনিজ প্যারাষ্ট্ৰপার নামার সুসংবাদ দাও। এবং যে-কোনো ভাবেই হোক তাদের সঙ্গে আমার যোগাযোগের ব্যবস্থা কর।

কাদির খান অতি তৃপ্তির সঙ্গে ডিনার শেষ করলেন। মদ্যপানের মতো মানসিক অবস্থা তার এই কদিন ছিল না। আজ এক বোতল রাম নিজে একা শেষ করলেন।

চাইনিজ প্যারাষ্ট্ৰপারদের অভ্যর্থনা জানাতে এগিয়ে যাওয়া কাদির খানের বাহিনীর সবাই মারা পড়ল, কারণ এরা চাইনিজ প্যারাষ্ট্ৰপার ছিল না। এরা ছিল ইন্ডিয়ান প্যারাট্র্যপার।

ভাগ্যের পরিহাস টাঙ্গাইল পাকবাহিনীর সেক্টর অধিনায়ক ব্রিগেডিয়ার কাদির খান ধরা পড়েন। কাদের সিদ্দিকীর হাতেই। তখন তার সঙ্গে ছিলেন দুজন কর্নেল, তিনজন মেজর এবং একজন লেফটেনেন্ট। তার সব সৈন্য কালিহাতি এলেঙ্গায় ধ্বংস হয়ে গেছে। এই কজনই শুধু জীবন নিয়ে পালাবার চেষ্টা করছিল।

কাদের সিদ্দিকী ব্রিগেডিয়ার কাদির খানের প্রতি কোনো অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন নি। তিনি বন্দিকে ইন্ডিয়ান সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেন।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *