বরিশালের বানিয়াপাড়ায় একটি বড় দোতলা লঞ্চের দোতলায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন জানে রসুল শুকনা মুখে বসে আছেন। লঞ্চে ত্ৰিশজন সৈনিক, পাঁচজন পশ্চিম পাকিস্তানি পুলিশ এবং কিছু রাজাকারকে উঠানো হয়েছে। জানে রসুলকে একটি বিশেষ উদ্দেশ্যে পাঠানো হচ্ছে। হেমায়েত বাহিনীকে শেষ করে দেয়া। হেমায়েত বাহিনী বর্তমানে কোথায় আছে কীভাবে আছে–সেই তথ্য নিয়ে একজন ইনফরমার এসেছে। ইনফরমারের নাম কয়েস আলি। তার বয়স চল্লিশের নিচে। থুতনিতে ছাগলাদাড়ি। মাথায় বেতের গোলটুপি। তিনি চোখে সুরমা দিয়েছিলেন। এক চোখের সুরমা কী কারণে জানি লেস্টে গিয়েছে। এখন তাকে দেখে মনে হচ্ছে মারামারি করে তিনি চোখে কালশিটা ফেলেছেন।
ক্যাপ্টেন জানে রসুল এই ইনফরমারের উপর খুবই বিরক্ত হচ্ছেন। তাঁর কথাবার্তা থেকে তেমন কিছুই উদ্ধার করা যাচ্ছে না। বরং উল্টা সন্দেহ হচ্ছে, এই লোক আসলে হেমায়েত বাহিনীরই একজন স্পাই। এর কথায় লঞ্চ নিয়ে কোথাও উপস্থিত হওয়া মানে বিপদে পড়া। অথচ উপর থেকে নির্দেশ এসেছে অভিযানে বের হতে হবে। নদীপথের অভিযানের দায়িত্ব নৌবাহিনীর। তারা গানবোট নিয়ে বের হবে। কাজ শেষ করে গানবোট নিয়ে ফিরে আসবে। এইসব জায়গায় স্থলবাহিনীকে লক্কর লঞ্চে করে পাঠানোর মানে কী? ক্যাপ্টেন জানে রসুলের ধারণা–সেনাবাহিনী এখন চলছে হুজুগের উপর। উপরের লোকজনের যার মাথায় যা আসছে তাই করছে। ওয়ারলেস অর্ডার পাঠিয়ে দিয়ে খালাস।
কয়েস আলি পাঞ্জাবির পকেট থেকে পানের ডিব্বা বের করে দুটা পান একসঙ্গে মুখে দিয়ে বলল, মেজর সাব এখন কী করবেন ঠিক করলেন? কথাগুলি সে বলল, কাজ চালাবার মতো উর্দুতে। এটা ভালো। অনেক ইনফরমার আছে যারা উর্দু বলতে পারে না। বুঝতেও পারে না। তাদের সঙ্গে কথা বলতে হয় দোভাষির মাধ্যমে। দোভাষিরা সব সময় নিজেদের কিছু কথাবার্তাও ঢুকিয়ে দেয়।
তোমার নাম কয়েস আলি?
জি জনাব।
উর্দু কোথায় শিখেছ?
আমি কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে পাঁচ বছর চাকরি করেছি।
কী চাকরি?
কিচেনে হেলপার।
চাকরি চলে গেল কেন?
রিজিকের মালিক আল্লাহ। তিনি মিলিটারি থেকে রিজিক উঠায়ে নিয়েছেন বলে চাকরি চলে গেছে।
তুমি হেমায়েত বাহিনীকে চেন?
কেন চিনব না? দূরসম্পর্কের আত্মীয়তা আছে।
কার সঙ্গে আত্মীয়তা?
হেমায়েতউদিনের সঙ্গে। উনার স্ত্রীর নাম হাজেরা খাতুন। যুদ্ধের সময় গুলি খেয়ে মারা গেছে। সে এক হিন্দু মেয়েরে দ্বিতীয় বিবাহ করেছে। তার নাম সোনেক রাণী রায়। তার বড় ছেলের নাম হাছিবউদ্দিন, ডাকনাম পাঞ্ছ।
তুমি হেমায়েতউদ্দিনকে ধরিয়ে দিতে চাও?
অবশ্যই।
কারণ কী?
পাকিস্তান টিকয়ে রাখতে হবে না?
শুধু পাকিস্তান টিকায়ে রাখার জন্যে তাকে ধরিয়ে দেবে?
অন্য কারণও আছে। পারিবারিক।
হেমায়েতউদ্দিন কোথায় আছে তুমি জানো?
অবশ্যই।
সেখানে গেলে আমরা তাকে পাব?
সে হইল শুশুক। এইটা বিবেচনায় রাখতে হবে।
শুশুক কী?
শুশুক থাকে পানিতে। ভুস কইরা ভাইসা উঠে আবার ড়ুব দেয়।
সে এখন যেখানে আছে–সেখানে পথ দেখিয়ে আমাদের নিয়ে যেতে পারবে?
আমারে সারেঙ্গের সাথে বসায়ে দেন, আমি নিয়া যাব। তবে খালে ঢুকতে হবে। জোয়ার-ভাটা বিবেচনা করে চলতে হবে।
নদীতে জোয়ার-ভাটা আছে না-কি?
কী যে বলেন, আমরার এইটা জোয়ার-ভাটার দেশ। নদীপথে চলতে হলে নদীর হিসাবে চলতে হবে।
নদীর হিসাবে চলতে হলে কখন রওনা দিতে হবে?
আরো এক ঘণ্টা পরে।
ঠিক আছে তুমি এখন যাও, এক ঘণ্টা পরে রওনা দেব।
ক্যাপ্টেন জানে রসুল বরিশাল এলাকার একটা ম্যাপ বের করে সামনের টেবিলে রাখলেন। ম্যাপ দেখে কোনো কিছুই বোঝার উপায় নেই। মাকড়শার জালের মতো চারদিকে নদী-নালা। অতি দুৰ্গম অঞ্চল। এই অঞ্চল যে চেনে না–তার জন্যে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাওয়া পুরোপুরি অসম্ভব। একটা ব্যাপার। এই রকম অবস্থায় তাকে অভিযানে যেতে হচ্ছে এমন একজনকে শায়েস্তা করতে–যার সম্পর্কে তেমন কোনো তথ্য তার কাছে নেই। এই লোক সেকেন্ড ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের হাবিলদার ছিল। দীর্ঘদিন এবোটাবাদ সেনাবাহিনী স্কুলে প্রশিক্ষক ছিল। এখন সে মুক্তি হয়েছে। বিদের হাডিড হয়েছে। ভারতের কোনো রকম সাহায্য ছাড়াই নাকি বিশালবাহিনী তৈরি করেছে। এই বাহিনী কোনো রকম ভয়ভীতি ছাড়াই সরাসরি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করছে। ঢুশঢাশ কয়েকটা গুলি করে পালিয়ে যাওয়া টাইপ যুদ্ধ না। সরাসরি সম্মুখ যুদ্ধ। পাকিস্তান সেনাবাহিনী এদের গুণতির মধ্যে ধরছে–এটাও এক বিস্ময়কর ঘটনা।
ব্যাটা এখন আবার হিন্দু বিয়ে করেছে। স্ত্রীর নাম সোনেকা রাণী রায়। হিন্দু বিয়ে তো করবেই, এরা এমনিতেই হাফ হিন্দু। ক্যাপ্টেন জানে রসুলের কাছে খবর আছে, পূর্বপাকিস্তানের মুসলমানরা বেশির ভাগ সময় মুসলমানি করায় না।
এক ঘণ্টার জায়গায় লঞ্চ ছাড়ল দেড় ঘণ্টা পরে। লঞ্চের নাম এমডি যমুনা। কয়েস আলি সারেঙের পাশে বসে তাকে পথ দেখিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। তারা যাচ্ছে বানারিপাড়া থেকে স্বরূপকাঠির দিকে। হেমায়েত বাহিনীর মূল লক্ষ্য শর্ষিনার পীরসাহেবের আস্তানায় যে মিলিটারি ক্যাম্প আছে সেখানে আক্রমণ করা। তারা সময় এবং সুযোগের অপেক্ষায় আছে। ক্যাপ্টেন জানে রসুল কয়েস আলিকে ডেকে পাঠালেন। তথ্যগুলি ভালোমতো আবারো যাচাই করে নেয়া দরকার।
হেমায়েত বাহিনী যেখানে লুকিয়ে আছে, সেই জায়গাটা তুমি চেন?
অবশ্যই। বিরাট পেয়ারা বাগান। জংলার মতো সেইখানে আছে।
হেমায়েতউদ্দিন নিজেও কি দলের সঙ্গে আছে?
উনি নিজে সব অপারেশনে থাকেন। তার স্ত্রীও থাকেন। স্ত্রী হিন্দু। নাম সোনেকা রাণী। রায় বংশ।
তার স্ত্রী যে হিন্দু এটা একবার বলেছ। নতুন কিছু থাকলে বলে।
তার স্ত্রীও যুদ্ধ করে। রাইফেল চালাইতে পারে। এলএমজি চালাইতে পারে। এইটা অবশ্য শোনা কথা। আমি নিজে দেখি নাই। স্যার কি একটা পান খবেন?
আমি পান খাই না।
কয়েস আলি দুটা বড় পান মুখে দিয়ে তৃপ্তির সঙ্গে চাবাতে চাবাতে বলল, আমি সারেঙের সাথে বসি। এর বাড়ি চিটাগাং, এই অঞ্চল সম্পর্কে কিছুই জানে না।
যাও।
কয়েস আলি চলে যাবার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই লঞ্চের ইঞ্জিন থেমে গেল। একটু পর পর ঘটং ঘটাং শব্দ ছাড়া আর কোনো শব্দ নেই। লঞ্চ থেমে আছে মাঝনদীতে। তবে এখানে নদী তেমন চওড়া না। মাছধরার নৌক চোখে পড়ছে। ইলিশের মরসুম। জেলেরা প্ৰাণের ভয় তুচ্ছ করে মাছ মারতে বের হয়। শুধু গানবোটের বিশেষ শব্দ কানে এলে নৌকা নিয়ে দ্রুত কোনো খালে ঢুকে পড়ে।
এমভি যমুনাকে দেখে তারা সাধারণ লঞ্চই মনে করছে। লঞ্চ সাজানো হয়েছে সেইভাবেই। সৈন্যরা লুকিয়ে আছে এক তলায়। তাদেরকে বলা হয়েছে কেউ যেন জানোলা দিয়ে মুখ বের না করে। কেউ যেন তাদের দেখতে না পারে। একতলা দোতলা দুটাই মালে বোঝাই। নারিকেল, পেয়ারা, কাউফল। আলাদা করে মাল বোঝাই করতে হয় নি। মিলিটারিরা মাল বোঝাই এই লঞ্চ রিক্রুট করেছে।
ক্যাপ্টেন জানে রসুল খবর নিয়ে জানলেন, লঞ্চের ইঞ্জিনে কী না-কী সমস্যা হয়েছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই ইঞ্জিন ঠিক হবে। একঘণ্টা পরে জানানো হলো, ইঞ্জিন ঠিক করা যাচ্ছে না, তবে খুব কাছেই এক লঞ্চ মেকানিকের বাড়ি। ক্যাপ্টেন সাহেব অনুমতি দিলে সারেং সেই লঞ্চ মেকানিককে নিয়ে আসতে পারবে। মেকানিককে বাড়িতে না পাওয়া গেলেও অসুবিধা নেই, তার বাড়ি থেকে কয়েকটা রেঞ্জ নিয়ে এলে সে নিজেই ঠিক করতে পারবে।
জানে রসুল অত্যন্ত বিরক্ত হয়ে বললেন, কতক্ষণ লাগবে?
সারেং জানাল, যেতে আসতে যতক্ষণ লাগে। ঊর্ধ্বে একঘণ্টা।
ক্যাপ্টেন অনুমতি দিলেন। অনুমতি না দিয়ে তার উপায়ও ছিল না। দ্বিতীয় কোনো বিকল্প তার হাতে নেই। অন্য কোনো লঞ্চ নিয়ে তিনি যে ফিরে যাবেনসেই উপায়ও নেই। নদীপথে এখন লঞ্চ চলাচল করে না বললেই হয়। তার সঙ্গে ওয়্যারলেস সেট নেই। কারো সঙ্গে যোগাযোগ করে সাহায্য চাওয়ার উপায় নেই।
একঘণ্টার মধ্যে সারেঙের ফেরার কথা। দুঘণ্টার কাছাকাছি হয়ে গেল সারেঙের খোঁজ নেই। বেলা হয়েছে। পাঁচটার উপর বাজে। দিনের আলো কমে এসেছে। আকাশে মেঘ জমতে শুরু করেছে। মেজর জানে রসুল কয়েস আলিকে ডেকে পাঠালেন। কয়েস আলি বিনীত মুখে সামনে এসে দাঁড়াল। জানে রসুল বিরক্ত মুখে বললেন, ঘটনা কী?
কয়েস আলি উদাস গলায় বলল, ঘটনা ভালো না।
ঘটনা ভালো না মানে কী?
সারেঙ লঞ্চ ফালায়ে তার হেলপার নিয়ে পালায়ে গেছে বলে মনে হয়।
এরকম মনে হবার কারণ কী?
হাবেভাবে বুঝলাম। দুই আর দুই-এ মিল করে চার বের করলাম। সহজ হিসাব, জটিল হিসাব তো না।
জটিল হিসাব না?
জি-না। আপনাকে আগেই বলেছি। সারেঙের বাড়ি চিটাগাং, এই অঞ্চলের কিছুই সে চিনে না। সে কীভাবে মেকানিক ধরে আনবে?
এটা আমাকে আগে বলো নি কেন?
একবার ভাবলাম বলি। পরে ভাবলাম মানুষরে এত সন্দেহ করা ঠিক না। সে লঞ্চ নিয়া এই অঞ্চলেই চলাফেরা করে। মেকানিকের বাড়ি চিনতেও পারে।
সারেঙ যদি সত্যি সত্যি পালিয়ে গিয়ে থাকে, তাহলে আমাদের করণীয় কী?
জনাব, এই বিষয়ে আমি গভীর চিন্তায় আছি। একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। অনুমতি দিলে বলি।
বলো।
আমার মন বলতেছে লঞ্চের ইঞ্জিন ঠিক আছে। ব্যাটা ইচ্ছা কইরা লঞ্চ চড়ায় উঠায়ে দিয়েছে।
লঞ্চ কি চড়ায় বেধে আছে?
জি। শিকারপুরে ছোট লঞ্চ আছে। আপনি যদি আমার সঙ্গে কোনো লোক দেন। আমি নৌকাযোগে শিকারপুর যাব। সেখান থেকে লঞ্চ নিয়ে ফিরব। জায়গাটা ভালো না। রাতে এখানে লঞ্চে আটকা পড়লে বিপদ আছে। হেমায়েত বাহিনী শক্ত জিনিস।
তুমি শিকারপুর থেকে লঞ্চ নিয়ে আসতে চাও?
শিকারপুরের দুই-একজন লঞ্চ মালিকের সঙ্গে আমার পরিচয় আছে। তবে আপনি যদি অন্য কাউকে পাঠাইতে চান, পাঠাইতে পারেন। আমার একটাই কথা, সন্ধ্যার পর এই অঞ্চলে থাকা অতি বিপদজনক। আমি সারেঙের ঘরে আছি। কোন সিদ্ধান্ত হয় আমাকে জানাবেন। আছরের নামাজ পড়ব। আমি সব নামাজ কাজ পড়তে রাজি আছি, আছরের নামাজ কাজ পড়তে রাজি না। ক্যাপ্টেন সাহেব কি জানেন রোজকেয়ামত হবে আছরের ওয়াক্তে?
ক্যাপ্টেন জানে রসুল জবাব দিলেন না। সরু চোখে মানুষটার দিকে তাকিয়ে রইলেন। তার এখন সন্দেহ হচ্ছে, লঞ্চ মাঝনদীতে এনে চড়ে আটকে ফেলার পেছনে এই লোকটার ভূমিকা আছে। বেশ বড় ভূমিকা। এই লোক কাজ করছে তার পরিকল্পনা মতো। সারেঙের সঙ্গে পরামর্শ করে লঞ্চ আটকানোর ব্যবস্থা করেছে। নদীর দুপাশে ঘন নারিকেল বন। নারিকেল বনের কভার নিয়ে হেমায়েত বাহিনী সহজ যুদ্ধ করবে। তিনি লঞ্চ নিয়ে খোলা জায়গায় আছেন, তার কোনো কভার নেই।
তোমার নাম কয়েস আলি?
জি স্যার।
বিয়ে কবেছ?
জি স্যার।
ছেলেমেয়ে আছে?
দুই ছেলে এক মেয়ে। ছেলে দুইজনকেই মাদ্রাসায় ভর্তি করায়ে দিয়েছি। হাফেজিয়া মাদ্রাসা। তালা কোরান মজিদ মুখস্থ করতেছে। ছোট ছেলের পাঁচ পারা মুখস্থ হয়েছে। বড়টার এক পাড়া। বড়টার মাথার তেজ কম।
আমার ধারণা তুমি হেমায়েত বাহিনীরই একজন। ইচ্ছা করে আমাদের এখানে এনে ফেলেছি।
আপনি যা চিন্তা করতেছেন তা ঠিক না।
আমি তোমার সঙ্গে তর্ক-বিতর্কে যাব না। আমি তোমাকে এখন লঞ্চের ছাদে নিয়ে তুলব। সেখানে গুলি করে ডেডবডি নদীতে ফেলে দেব।
আপনি আপনার বিবেচনা মতো কাজ করবেন, তবে হায়াত মাউতের মালিক আল্লাহপাক। আমার মৃত্যু যেমন হতে পারে, আপনাদের সবার মৃত্যুও এখানে হতে পারে। একটা লঞ্চ এখানে আটকা পড়ে আছে আর হেমায়েত বাহিনী এই খবর জানবে না তা কি হয়? যে সারেং পালেয়ে গেছে–খবর তার মাধ্যমেই চলে গেছে।
তুমি ছাদে চল।
কয়েস আলি বলল, জি আচ্ছা। মৃত্যুর আগে একটা পান খাওয়ার সুযোগ দিয়েন জনাব। জর্দা দিয়া ভালোমতো একটা পান খাইয়া নেই।
মাথায় গুলি করলেন। গুলি করার আগমুহুর্তে কয়েস আলি পানের পিক ফেলতে ফেলতে বলল, আপনাদের আজরাইল আসতাছে। বেশি দেরি কিন্তু নাই।
সন্ধ্যার পর পরই হেমায়েত বাহিনী দক্ষিণ দিক থেকে লঞ্চ আক্রমণ করল।
তখনো কয়েস আলির মৃতদেহ লঞ্চের আশেপাশেই আছে। জোয়ারের টান শুরু হয় নি বলে মৃতদেহ ভেসে যায় নি।*
—————–
* অসীম সাহসিকতাপূর্ণ কর্মকাণ্ডের জন্যে মোঃ হেমায়েতউদ্দিনকে বাংলাদেশ সরকার বীরবিক্রম সম্মানে সম্মানিত করেন। কয়েস আলি সম্মান স্বীকৃতি কোনোটাই পান নি। সমগ্র দেশের পক্ষ থেকে আমি এই লেখার মাধ্যমে তাঁর প্রতি সম্মান জানালাম। (কয়েস আলি নামটি ঠিক না। আসল নাম আমি ভুলে গেছি। কোনো পাঠক মূল নামটি জানালে পরবর্তী সংস্করণে ঠিক করে দেব।) আরেকটি তথ্য যোগ করার লোভ সামলাতে পারছি না। স্বাধীনতা যুদ্ধে খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা গ্রন্থে মোঃ আব্দুল হান্নান লিখছেন– যুদ্ধকালিন সময়ে মুজিবনগর সরকার মোঃ হেমায়েতউদ্দিনকে সুবেদার পদ প্রদান করেন। এবং তার ডাকনাম দেয়–হিমু।