৬৩. গতরাত্রে আগুন যখন জ্বলেছিল

 তেষট্টি

ঈশ্বরপুকুরে গতরাত্রে আগুন যখন জ্বলেছিল তখনও মানুষের বোধ হয় এতটা উত্তেজনা হয়নি। ন্যাড়া ছুটে গিয়েছিল অনিমেষের কাছে। অনিমেষ তখন উনুনের কারখানায় বসে বয়স্কদের সঙ্গে কথা বলছিল। ন্যাড়া গিয়ে চিৎকার করল, ‘অক্কাদাকে ধরে নিয়ে গেল।’

‘ধরে নিয়ে গেল?’ অনিমেষ চমকে উঠল, ‘কে ধরল?’

‘পুলিস।’ কথাটা বলে ন্যাড়া ছুটে গেল ভেতরের দিকে।

অনিমেষ ক্রাচদুটো আঁকড়ে ধরল। তারপর তড়িঘড়ি চলে এল গলির মুখে। তখন ভ্যান আটকেছে তিন নম্বরের মানুষেরা। পুলিস অফিসার হুমকি দিচ্ছেন, সরে না গেলে ফলাফল খারাপ হবে। অনিমেষ ভ্যানের পাশে এসে জিজ্ঞাসা করল চেঁচিয়ে, ‘ওকে ধরলেন কেন?’

পুলিস অফিসার কোন জবাব দিল না। সেই সময় অর্ক তারের জানলার কাছে মুখ এনে বলল, ‘বাবা, ওদের সরে যেতে বল।’

বোধ হয় ওই কথাটা শুনতে পেয়েছিল মানুষগুলো। ভ্যানটা চলে গেল।

তিন নম্বরে চিৎকার চেঁচামেচি শুরু হয়ে গেল। রাগের মাথায় কেউ লাইট পোস্টের বাল্ব ভাঙ্গছে। সরকারি দুধের ডিপোর খাঁচা নিয়ে টানাটানি করছে কেউ। এই সময় সতীশদা ছুটে এল আবার। চিৎকার করে সে বলল, ‘আপনারা শান্ত হন। পুলিসের এই অত্যাচারের বিরুদ্ধে নিশ্চয়ই আমরা প্রতিবাদ করব। কিন্তু তারও একটা পদ্ধতি আছে। প্রথমে জানতে হবে কেন অর্ককে অ্যারেস্ট করা হল। যদি তার কোন যুক্তিযুক্ত কারণ না থাকে তাহলে নিশ্চয়ই আমরা আন্দোলনে নামব।’ কিন্তু এই প্রথম, সতীশদার কথার ওপর তিন নম্বরের মানুষ কথা বলল, ‘কোন কথা শুনতে চাই না। অর্ককে ছেড়ে দিতে হবে।’ প্রায় অপমানিত হয়ে সতীশদা ফিরে গেল।

অনিমেষ বুঝতে পারছিল না সে কি করবে। অর্ককে কেন ধরে নিয়ে গেল তাই তার মাথায় ঢুকছিল না। অর্ক তো খুন করেনি। লোকটা মারা গেছে ওদেরই সঙ্গীর গুলিতে। অর্ক অবশ্য সবার সামনে বলেছে, আমি ওকে যেতে দিইনি। কিন্তু তার মানে এই নয় যে সে লোকটাকে খুন করেছে।

এই সময় মাধবীলতাকে দেখা গেল। ধীরে ধীরে সে গলির মুখে এসে দাঁড়িয়ে উত্তেজিত মানুষগুলোকে দেখল। ওকে দেখা মাত্র মানুষগুলো চুপ করে গেল। মাধবীলতা অনিমেষকে বলল, ‘ওরা এসে একটা ছেলেকে খুন করল, বাড়ি পোড়াল আর খোকাকে ধরে নিয়ে গেল। তুমি কি কিছুই বুঝতে পারছ না? আমি থানায় যাব।’

‘থানায়? বেশ চল।’ অনিমেষ ওর পাশে এসে দাঁড়াল।

সঙ্গে সঙ্গে তিন নম্বরের মানুষ চিৎকার করে উঠল, ‘আমরা থানায় যাব।’

মাধবীলতা পা বাড়াতে অনিমেষ ইতস্তত করল, ‘লতা, তুমি হেঁটে যেও না, আমি বরং একটা রিকশা ডাকি।’

‘কেন?’ মাধবীলতা অবাক হয়ে মুখ তুলে তাকাতেই অনিমেষ চমকে উঠল। হঠাৎ, অনেক অনেক বছর পরে তার স্মৃতিতে একটা দৃশ্য চলকে উঠল। শান্তিনিকেতনে সেই রাত্রে ওই ঘটনাটি ঘটে যাওয়ার পর সে যখন বলেছিল, ‘লতা, কিছু মনে করো না,’ ঠিক তখন এই রকম ভঙ্গী ও গলায় মাধবীলতা প্রশ্ন করেছিল, ‘কেন?’ খুব ছোট হয়ে গিয়েছিল সেদিন।

এই সময় আলুথালু বেশে ছুটে এল বিলুর মা, ‘মাস্টারনি, আমি তোমার সঙ্গে যাব। আমি যাব।’

‘আপনি?’ মাধবীলতা অবাক হয়ে গেল। একটু আগেও মহিলা শোকে পাথর হয়ে পড়েছিলেন। বিলুর মা বলল, ‘হ্যাঁ। আমার ছেলেকে ওরা খেয়েছে। কিন্তু তোমার ছেলেকে খেতে দেব না। ও যে এই কদিনে আমাদের বাপ হয়ে গিয়েছে। বাপের বিপদে মেয়ে কি ঘরে থাকে?

তারপর ঈশ্বরপুকুর লেনে একটি অবিশ্বাস্য দৃশ্য দেখা গেল। আড়াই তিনশ মানুষ এগিয়ে যাচ্ছিল থানার দিকে। প্রথমে তিন নম্বরের সমস্ত শিশু এবং মহিলা। যে যা অবস্থায় ছিল সেই অবস্থায় বেরিয়ে পড়েছে। তারপরে প্রত্যেকটি পুরুষ। কোন রকম রাজনৈতিক প্রচার কিংবা সংগঠন ছাড়াই মানুষগুলো নীরবে হেঁটে যাচ্ছিল। খবরটা তখন সমস্ত বেলগাছিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। একটি ছেলেকে মিথ্যে খুনের দায়ে গ্রেপ্তার করেছে পুলিস। ছেলেটা পঞ্চাশটি পরিবারকে দুর্দশা থেকে বাঁচিয়ে স্থিতিশীল করতে চলেছিল। সেইসব পরিবারের মেয়ে এবং শিশুরা বুঝেছিল এই ছেলে তাদের মানুষের মত বাঁচার সুযোগ করে দিচ্ছে। তাই আজ তারা বেরিয়ে পড়েছে প্রতিবাদ জানাতে। বেলগাছিয়ার কৌতূহলী মানুষেরাও নিজের অজান্তে ওই মিছিলে শামিল হল। কোন ফেস্টুন নেই, প্লাকার্ড নেই, শ্লোগান নেই এমনকি কোন পরিচিত নেতার তৃপ্ত মুখ মিছিলে নেই।

ট্রাম রাস্তায় পৌঁছানোর পর মাধবীলতার মাথায় যন্ত্রণা শুরু হল। ঘাম হচ্ছে খুব। শরীর সিরসির করছে। সে নিজেকে বোঝাল এটা সাময়িক দুর্বলতা। একনাগাড়ে শুয়ে থাকার জন্যে এমনটা হচ্ছে। মাধবীলতার পাশে যিনি হাঁটছেন সেই মহিলা বললেন, ‘জানো মাস্টারনি, দুবেলা খাওয়া জুটতো না। ছেলেমেয়েগুলোকে কি দেব এই নিয়ে পাগল হয়েছিলাম। অর্ক আমাকে বাঁচিয়েছে। ওরা ওকে ধরে নিয়ে যাওয়া মানে আবার আমাকে মেরে ফেলা। ষড়যন্ত্র, ওরা আমাদের মেরে ফেলার ষড়যন্ত্র করেছে। এ হতে দেব না, কিছুতেই না।’

কথাটা যেন অমৃতের কাজ করল। মাধবীলতার শরীর থেকে মুহূর্তেই সমস্ত ক্লান্তি উধাও হয়ে গেল। তার মনে হল, অর্ক এই মুহূর্তেই আর তার একার ছেলে নয়।

খবরটা আগেই পৌঁছে গিয়েছিল। থানার সামনে জনাকুড়ি পুলিস লাঠি হাতে দাঁড়িয়ে। তাদের ওই ভঙ্গী দেখে মিছিল যেন খেপে উঠল আচমকা। একসঙ্গে গর্জিত হল, ‘মুক্তি চাই, অর্কর মুক্তি চাই।’

একজন পুলিস অফিসার হুকুম দিতে সেপাইরা লাঠি ছড়িয়ে মিছিলটাকে আটকে দিল। লোকগুলো একটু ঘাবড়ে গিয়েছে মনে করে অফিসার চিৎকার করে বললেন, ‘কেন এসেছেন আপনারা?’

‘অর্কর মুক্তি চাই।’ জনতা চেঁচাল।

‘বিচার হবে তারপর মুক্তি। আপনারা একটা খুনীকে ছেড়ে দিতে বলছেন? দেশে কি আইন কানুন থাকবে না?’

‘অর্ক খুনী নয়।’ জনতা জবাব দিল।

এই সময় আর একজন অফিসার বেরিয়ে এসে বললেন, ‘জিজ্ঞাসা করো কোন পার্টি অর্গানাইজ করেছে ওদের।’

প্রথম অফিসার রিলে করলেন, ‘কোন পার্টির লোক আপনারা। নেতা কে?’

অনিমেষ ক্রাচ নিয়ে এগিয়ে এল কর্ডনের সামনে, ‘এটা অরাজনৈতিক মিছিল।’

‘সি পি এমের কেউ আছেন?’

‘না।’

‘কংগ্রেসের কেউ?’

‘না।’

‘তাহলে এই মিছিল বেআইনি, আনঅথরাইজড। পাঁচ মিনিট সময় দিলাম আপনারা চলে যান। থানার সামনে একশ চুয়াল্লিশ ধারা জারি আছে।’

অনিমেষ চিৎকার করল, ‘না, অর্ককে না ছাড়লে আমি যাব না।’

‘যাব না। যাব না।’ জনতা চিৎকার করল, ‘মুক্তি চাই।’

জনতা থানা ঘেরাও করল। তারা রাস্তায় বসে পড়ল। পুলিস অফিসার ভেবে পাচ্ছিলেন না তাঁরা কি করবেন প্রথমজন দ্বিতীয়জনকে বললেন, ‘কি করা যায়। এরা এখনও শান্তিপূর্ণ। এদের ওপর লাঠিচার্জ করলে খবরের কাগজ ছেড়ে দেবে না। পলিটিক্যাল পার্টি হলে ওপর মহল থেকে একটা ব্যবস্থা করা যেত।’

দ্বিতীয়জন বললেন, ‘ঠিক আছে। লেট দেম স্টে। কতক্ষণ থাকতে পারে দেখা যাক। জোর করে ধরে নিয়ে এসেছে ওর বাপ মা। একটু বাদেই সব যে যার ধান্দায় কেটে পড়বে। পলিটিক্যাল মিছিলে এসে সব চিড়িয়াখানা দেখতে যায় হে। কত দেখলাম।’

কিন্তু এবার হিসেবটা ভুল হল। দুপুর শেষ। বিকেলের ছায়া জমেছে। কিন্তু একটি মানুষও তার নিজের জায়গা ছেড়ে ওঠেনি। বরং যত বেলা বেড়েছে তত মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। শান্তি কমিটি থেকে সুবল এসে অনিমেষের পাশে বসেছে। বসে বলেছে, ‘ইটস প্রিপ্লানড। অর্ককে কারা ধরিয়ে দিয়েছে তা আমি জানি।’

‘কারা?’

‘যারা ভেবেছিল অর্ক থাকলে তিন নম্বরের কয়েকশ ভোট পেতে মুশকিল হবে। কত রকমের স্বার্থ থাকে মানুষের।’

‘অর্ক ভোট দেবে কি? ওর তো ভোটের বয়সই হয়নি।’

‘কিন্তু দেখছেন তো ওকে তিন নম্বরের মানুষ কি রকম ভালবাসে।’

সন্ধ্যের একটু আগে একজন অফিসার এগিয়ে এলেন, ‘আপনারা যদি কথা বলতে চান তাহলে একজন আসুন, এনি অফ ইউ।’

অনিমেষ ক্রাচ দুটো টেনে উঠতে যাচ্ছিল, সুবল বাধা দিল, ‘আপনি থাকুন। আমি কথা বলছি।’

অনিমেষ মাথা নাড়ল, ‘না। আমাকে যেতে দাও।’

কিন্তু সে দাঁড়াবার আগেই মাধবীলতা এগিয়ে গেছে। অনিমেষ বিস্ময়ে চিৎকার করল, ‘লতা, তুমি যেও না। আমি যাচ্ছি।’

কথাটা যেন মাধবীলতার কানে ঢুকল না। দৃঢ় পায়ে সে পুলিস অফিসারের সঙ্গে থানায় ঢুকল।

ও সি বসেছিলেন টেবিলের ওপারে। একজন মহিলা এসেছেন দেখে তিনি অবাক হয়ে অফিসারকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘কোন পুরুষ এল না?’

‘আমি আসায় আপনার কোন অসুবিধে হচ্ছে?’

ও সির মুখ বিকৃত হল, ‘না। কি চাইছেন আপনারা? আমাদের কাজ করতে দিতে চান না? আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন? জানেন, আমি ইচ্ছে করলে পেঁদিয়ে বিষ ঝেড়ে দিতে পারি!’

মাধবীলতা শান্ত গলায় বলল, ‘ভদ্র ভাষায় কথা বলুন।’

‘আই সি।’ ও সি ছোট চোখে দেখলেন, ‘আপনি কে?’

‘তিন নম্বর ঈশ্বরপুকুরে থাকি।’

‘তা তো বুঝলাম। অর্কর সঙ্গে কি সম্পর্ক?’

মাধবীলতা চোখ বন্ধ করল। তারপর হেসে বলল, ‘ও আমাদের আশা।’

‘আশা মানে?’

‘বেঁচে থাকার।’

‘কি হেঁয়ালি করছেন? শুনুন, ওর বিরুদ্ধে দুটো চার্জ আছে। একটা ঠাণ্ডা মাথায় মানুষ খুন। ও যে ছুরি দিয়ে খুন করেছে তাতে ওর হাতের ছাপ পাওয়া গেছে। তাছাড়া ওখানকার লোকই বলেছে সে ভিক্টিমের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল।’

‘কিন্তু লোকটা তো গুলিতে মারা যায়।’

‘গুলিটা কে ছুঁড়েছিল তা বোঝা যাচ্ছে না।’

‘অর্ক রিভলভার পাবে কোথায়?’

‘সেটা কে জানে?’

মাধবীলতা ফুঁসে উঠল, ‘এসব মিথ্যে কথা। ওরা এসে বিলুকে খুন করে গেল, ঘর পোড়াল তার কি অ্যাকশন নিয়েছেন?’

‘চেষ্টা হচ্ছে। একজন সমাজবিরোধী যে কোন সময় খুন হতে পারে।’

‘বিলু সমাজবিরোধী?’

‘ইয়েস। প্রমাণ আছে। অর্ক ওকে শেল্টার দিয়েছিল।’

‘দ্বিতীয় চার্জ কি?’

‘আজ থেকে কিছুদিন আগে জলপাইগুড়ি শহরে একটা গহনার দোকানে ডাকাতি হয়। ওটা উগ্রপন্থী কিছু ছেলে অর্কর সাহায্যে করেছে।’

‘মিথ্যে কথা। সম্পূর্ণ মিথ্যে কথা।’

‘প্রমাণ আছে। এসব আদালতে বিচার হবে। আপনারা চলে যান। থানার সামনেটা পরিষ্কার করে দিন।’

‘আমি একবার অর্কর সঙ্গে কথা বলতে চাই।’

ও সি মাধবীলতার মুখের দিকে তাকালেন। তারপর সেপাইকে ডেকে বললেন, ‘একে দুমিনিটের জন্যে নিয়ে যাও আসামীর কাছে।’

থানার হাজতে অর্ক বসেছিল। সেখানে আরও কিছু বন্দী। তাদের চেহারা দেখে বোঝা যায় চরিত্র কি ধরনের। মাধবীলতা এসে দাঁড়াতেই অর্ক উঠে এল, ‘মা।’

‘ওরা ষড়যন্ত্র করছে খোকা, তোর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।’

‘জানি। কিন্তু আমি ভয় পাইনি।’

‘ঠিক। একদম ভয় পাবি না। তুই হলি সূর্য। সূর্যের কোন ভয় নেই। আমি যদি নাও থাকি তুই এই কথাটা কখনও ভুলিস না।’

‘মা।’

‘আমি তোকে নিয়ে খুব ভয় পেতাম। পড়াশুনা করতিস না বলে মন খারাপ হত। আর আমার ভয় নেই খোকা। আমি জানি তোকে ওরা ধরে রাখতে পারবে না। রাহু কখনও সূর্যকে ঘিরে ফেলতে পারে না।’

অর্ক বলল, ‘মা, আমি যতদিন না ফিরছি ততদিন তুমি ওদের দেখো। লোকগুলো খুব কষ্ট পাচ্ছিল এত দিন। কিন্তু এখন যেন সবাই পাল্টে গিয়েছে।’

‘দেখব। আমি তোর বাবার রাজনীতি থেকে অনেক দূরে ছিলাম, কখনও তার পাশে দাঁড়াইনি। মনে হত ওদের পথ ঠিক নয়। কিন্তু কোনদিন ওকে বাধা দিইনি। আজ কিন্তু তোর পাশে থাকব। একটাই তো জীবন, বাজে খরচ করাও যা না খরচ করাও তা। তোক দেখে এটুকু বুঝেছি আমি।’

অফিসার বললেন, ‘চলুন। পাঁচ মিনিট হয়ে গেছে।’

মাধবীলতা হাসল, ‘খোকা দ্যাখ, কত সহজে পাঁচ মিনিট হয়ে গেল। আমরা কেউ সময়টাকে ধরে রাখতে পারি না। কিন্তু তুই তো একটা ধাক্কা দিলি, একটা দাগ কেটে গেলি পঞ্চাশটা পরিবারের মনে। আমি আশীর্বাদ করছি তুই জয়ী হবি।’

হঠাৎ অর্ক কেঁদে ফেলল, ‘মা এমন করে কথা বলো না। এভাবে কখনও তুমি আমায় বলোনি।’

‘দূর বোকা! চোখের জল মোছ। মোছ। শক্ত হ। সোজা হয়ে দাঁড়া। বাঃ, এই তো চাই।’

অফিসারের পাশাপাশি মাধবীলতা বেরিয়ে এল বাইরে। সে একবারও পেছন ফিরে তাকাল না। তার অনুভূতি বলছিল অর্কর মুক্তি নেই। ওরা ওকে অনেককালের জন্যে অন্ধকারে রেখে দেবে। কিন্তু সেজন্যে তার একটুও কষ্ট হচ্ছিল না। আজ ওই বন্দীশালায় সে একটা শক্ত মানুষকে দেখে এসেছে। মাধবীলতার শরীর টলছিল। চোখের সামনেটা ক্রমশ ঝাপসা। অজস্র মানুষের উদ্বিগ্ন মুখগুলো ঘোলাটে হয়ে যাচ্ছিল।

কোন রকমে সোজা হয়ে সে বলল, ‘আপনারা বাড়ি চলুন। অনেক কাজ বাকি আছে।’

জনতা চেঁচাল, ‘অর্কর মুক্তি চাই।’

চোখ বন্ধ করে হাসল মাধবীলতা। তারপর বিড়বিড় করল নিজের মনে, ‘অর্ক মানে কি ওরা জানে? সূর্যকে কি কেউ বন্দী করতে পারে?’

অদ্ভুত শান্তি নিয়ে মাধবীলতার শরীর পৃথিবীর মাটির গায়ে নেমে আসছিল। যেমন করে পাখিরা টানটান ডানা মেলে বাসায় ফিরে আসে নিশ্চিন্তিতে।

***

4 Comments
Collapse Comments

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *