৬২
জাহানারা ইমাম একা খোঁজখবর করেন আর সব শহীদের মায়ের, সময়ের চাকা ঘুরছে, পৃথিবী ঘুরছে, জীবনের চক্রে পড়ে কোথায় ছিটিয়ে পড়ছেন শহীদ জুয়েলের মা, শহীদ বদির মা, শহীদ বাকেরের মা, কত কত শহীদ এই দেশে, তাদের কতজনের মা, অভিযোগহীন, দুঃখ সয়ে পাথর হয়ে যাওয়া কখনো উচ্চবাচ্য না করা একেকজন মা!
চৌধুরী আবার প্রস্তাব পাঠান সাফিয়া বেগমকে বাসায় নিয়ে যেতে, কাকুতি-মিনতি করেন, তাঁর নিজেরও শরীর ভেঙে আসছে, তিনি দীর্ঘশ্বাস ফেলেন নিজের অতীত আনন্দময় সুখের জীবনের কথা ভেবে ভেবে, কিন্তু সাফিয়া বেগম রাজি হন না, রাজি হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না৷ ইতিমধ্যে আরো বিয়ে করেছেন চৌধুরী, চট্টগ্রামে পেতেছেন আরেক সংসার, তার কাছে যাওয়ার চিন্তাও তো অবান্তর৷ এখনও ইস্কাটনের বাসা সাফিয়া বেগমেরই নামে, ফরাশগঞ্জের বাসা, এবং ঢাকায় আরো অনেক জমাজমি…
জুরাইনের এক ঘোরতর বস্তিঘরে গিয়ে ওঠেন মা৷ সেখানে একদিন গিয়ে হাজির হয় সৈয়দ আশরাফুল হক৷
‘মা, তুমি এইসব জায়গা খুঁইজা বাইর করো কেমনে ? এইসব জায়গায় আসা যায় ?’
‘এসো না৷’
‘না, আসুম না তো৷ তুমি এমন জায়গায় থাকবা যাতে আসা না যায়, আসুম ক্যান ? চলো আইজকাই তোমারে নিয়া যামু৷ কাম অন৷ স্টে উইথ মি৷’
‘তোমাকে আসতেও হবে না, নিয়ে যেতেও হবে না৷ এখন তো তুমি এভাবেই কথা বলবে৷ অন্য সবাই যেভাবে কথা বলে, তুমিও যদি সে রকমই বলো… এসো না…’
সাফিয়া বেগম মৃদু হেসে তাকিয়ে থাকেন সৈয়দ আশরাফুলের চোখের দিকে৷ এরপর আর তাঁকে কিছু বলা যায় ?