2 of 2

৬১. বেইরুটে প্লেন এগারো ঘণ্টা লেট

বেইরুটে প্লেন এগারো ঘণ্টা লেট। প্রথম তিন ঘণ্টা এক্ষুনি ছাড়বে, এক্ষুনি ছাড়বে স্তোকবাক্য দিয়ে সব যাত্রীদের বসিয়ে রাখা হলো এয়ারপোর্টে, তারপর বিমানের কলকজার বড় রকমের গণ্ডগোল সমর্থিত হলে সবাইকে পাঠিয়ে দেওয়া হলো হোটেলে। এয়ারপোর্টের পাশেই সমুদ্র, শহরের মধ্যে বিলাসিতা ও টুরিস্ট মনোরঞ্জনের উগ্র রংচং, শব্দ এবং গন্ধ।

তুতুলের মন খারাপ হয়ে গেছে। এতদিন পর বাড়ি ফিরছে, মাঝপথে এরকম বাধা! হোটেলে এসেও তো কিছু করার নেই, আলম জিজ্ঞেস করলো, কিছু শপিং করতে যাবি নাকি রে? এখানে পারফিউম নাকি সস্তা!

তুতুল দু’দিকে মাথা নাড়লো। এখন তার দোকানবাজারে যেতেও ইচ্ছে করছে না। তার দুর্বল শরীর যেন ঠিক ধরে রাখতে পারছে না তার অস্থির মনটাকে। দু’মাস আগেই তুতুল আর আলমের কলকাতায় যাওয়ার কথা ছিল, টিকিট রিজার্ভেশানও হয়ে গিয়েছিল, হঠাৎ তুতুল আবার অসুস্থ হয়ে পড়লো। হাসপাতালেও যেতে হলো। যে-ডাক্তার তুতুলের অপারেশান করেছিলেন, তিনি বেশ চিন্তিত হয়ে পড়লেন। রক্তচাপ পাগলের মতন দ্রুত ওঠা-নামা করছিল, কথা বলতে গেলে তুতুলের জিভ জড়িয়ে যাচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত অবশ্য ডাক্তারকে দ্বিতীয়বার ছুরি কাঁচি চালাতে হয়নি, ওষুধেই কাজ হয়েছে। ডাক্তারটি তুতুলকে পছন্দ করেন, তিনি ওকে এখনো পুরোপুরি সুস্থতার সার্টিফিকেট দেননি, আরও দু’এক মাস পরে দেশে ফেরার পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু তুতুল এবার প্রায় জেদ করেই প্লেনে উঠেছে।

তার শরীরে অবশ্য অসুস্থতার ছাপ নেই, মুখখানায় শুধু পাতলা পাতলা ছায়া, চোখ দুটি আবার বেশি উজ্জ্বল মনে হয়। সে চুলে খোঁপা বাঁধে না, লন্ডনে সে প্যান্ট পরতে অভ্যস্ত হলেও মেমসাহেবদের মত চুল কাটেনি, তার কোমর পর্যন্ত ছড়ানো গভীর কালো চুলের দিকে অনেকেই ফিরে ফিরে তাকায়।

হাসপাতালের ক্যাবিন আর হোটেলের ঘরে বিশেষ তফাত নেই, সব একরকম। পাঁচ তলার ওপরে ওদের যে ঘরখানা দেওয়া হয়েছে, তার জানলার কাছে দাঁড়ালে শহরের একটা টুকরো দেখা যায়, শুধু বাড়ি ঘর আর রাস্তা, গীর্জা আর মসজিদের চূড়া, গাছপালা প্রায় চোখেই পড়ে না। বিকেলের আকাশ বারুদ বর্ণ।

আলম তার পাশে এসে কাঁধে হাত দিয়ে একটু চমকে উঠলো। কপালে হাত ছুঁইয়ে বললো, তোর আবার জ্বর আসছে নাকি রে? ইয়েস, একটু টেমপারেচার আছে।

তুতুল আলমের হাতটা সরিয়ে দিয়ে জোর দিয়ে বললো, না, জ্বর নেই। আমি কিছু ফিল করছি না।

আলম বললো, খানিকক্ষণ বালিশে মাথা দিয়ে রেস্ট কর। এই শালারা হয়তো মাঝরাত্তিরে এয়ারপোর্টে দৌড় করাবে।

তুতুল জানলা থেকে সরে এসে একটা চেয়ারে বসে বললো, আমি এক কাপ চা খাবো।

আলম ততক্ষণে তার হ্যান্ডব্যাগ ঘেঁটে ব্লাড প্রেসার মাপার যন্ত্রটি বার করে ফেলেছে। ঠোঁটের ঝুলন্ত সিগারেটটি অ্যাশট্রেতে গুঁজে সে খানিকটা হালকাভাবে বললো, শুয়ে পড়লে দেখতে সুবিধে হতো। তুই ডাক্তারি পাস করে যে রোগিণী হয়েই থাকলি সব সময়।

হাসি-ঠাট্টা করার মতন মেজাজ নেই এখন তুতুলের। সে পরিপূর্ণ চোখে চেয়ে বললো, তুমি ওসব করতে পারবে না এখন। আমি তো বলছি, আমি এখন ভালো আছি।

আলম কাছে এসে তুতুলের ঠোঁটে প্রায় জোর করেই একটা চুমু দিল, এবং চুমুটা দীর্ঘস্থায়ী হলো। তারপর বললো, আমার থার্মোমিটার লাগে না আমি ওষ্ঠ দিয়েই বুঝি, টেমপারেচার অন্তত এক শো। ও কিছু না! ডায়াস্টোলিক আর সিস্টোলিকটা একটু দেখতে দে।

তুতুলের বাহুতে পট্টি জড়াতে জড়াতে আলম অবার বললো, এত সুন্দর দেখাচ্ছে তোকে আজ, পৃথিবীতে তোর মতন সুন্দরী রোগিণী আর একটাও নাই। এই হলদে শাড়িটাতে তোকে মানিয়েছে খুব। চীয়ার আপ!

তুতুল তবু চুপ করে রইলো।

আলম বললো, তুই আমাকে একটা খোঁচা দেবার চান্স মিস করলি। ঐ যে কইলাম আমার থার্মোমিটার লাগে না, তুই উল্টা চার্জ করতে পারতি, সব ফিমেল পেশেন্টদেরই আমি ওষ্ঠ দিয়া জ্বর মাপি কি না!

এই কথাতেও তুতুল হাসলো না, সে জিজ্ঞেস করলো, কত?

আলম কান থেকে স্টেথোস্কোপ খুলতে খুলতে বললো, একটু নীচের দিকে, সিক্সটি–হান্ড্রেড টেন, তেমন অবনমাল কিছু না।

তুতুল বললো, এইটাই আমার নমাল। বললুম না, আমি ভালো আছি!

আলম বললো, ঠিক, ভালোই তো আছিস। এতদিন পর বাড়ি ফিরে মায়ের সাথে দেখা হবে, তোর এখন শরীরের জোর, মনের জোর আনতে হবে। দাঁড়া, এবার চা আনতে বলি।

হঠাৎ দরজায় খটখট শব্দ হলো। আলম গিয়ে দরজা খুলে দিতেই তাদের বিমানের একজন। সহযাত্রী ঝলমলে মুখে উত্তেজিত ভাবে বললো, মিঃ আলম, খবর শুনেছেন?

লোকটির নাম রমেন হালদার, বীরভূমের সিউড়িতে বাড়ি, তুতুলদের ঠিক সামনের সীটে বসে এসেছে লন্ডন থেকে, সেই সময় আলাপ হয়েছে।

আলম বললো, ভেতরে আসুন না। কী খবর?

রমেন বললো, শোনেননি? হোটেলের লবিতে টি ভি আছে, এইমাত্র একটা নিউজ বুলেটিনে বললো, ইন্ডিয়া-পাকিস্তান ওয়ার শেষ হয়ে গেছে! সকাল থেকেই সীজ-ফায়ার।

আলম খুশি হওয়ার বদলে ভয় পেয়ে বললো, সীজ ফায়ার? তার মানে কি রাষ্ট্রসঙ্ঘ ইন্টারভিন করলো?

রমেন বললো, না, না, বললো যে পাকিস্তান সারেণ্ডার করেছে ঢাকায়।

আর কথা বাত নয়, আলম আর তুতুল দু’জনেই ছুটে গেল হোটেলের লবিতে। টিভি-তে তখন অবশ্য খবরের বদলে দুবোধ্য ভাষায় নাটক শুরু হয়েছে। অনেক লোক জমায়েত হয়েছে। সেখানে, কেউ কেউ ট্রানজিস্টার রেডিও-তে বি বি সি ধরার চেষ্টা করছে। এক ঘণ্টার মধ্যে টিভি-তে আবার খবর পড়লো, এর মধ্যে গলফ নিউজ নামে একটা খবরের কাগজও এসে। গেছে। বাংলাদেশ স্বাধীন!

তুতুল আর আলম ঘরে ফিরলো একেবারে ডিনার খেয়ে। নীচে বেশ মজা হচ্ছিল। বি ও এ সি’র এই ফ্লাইটের যাত্রীদের মধ্যে বেশ কিছু ভারতীয় এবং বেশ কিছু পাকিস্তানী রয়েছে। হোটেলের লবিতে দু’দলে ঝগড়া বেঁধে গিয়েছিল। যেন বেইরুটেই আবার একটা ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ লেগে যাবে। তুতুল আর আলম অবশ্য সে ঝগড়ায় যোগ দেয়নি, তারা হাসছিল দূরে দাঁড়িয়ে।

ঘরের দরজা বন্ধ করে আলম বিরক্তির সঙ্গে বললো, কোনো মানে হয়? দেশ স্বাধীন হয়ে গেল, আর আমরা এখনো পড়ে আছি এই গড় ড্যাম বেইরুটে। এই হারামজাদারা কখন প্লেন ছাড়বে তার এখনো ঠিক নাই!

তুতুল এর মধ্যে উৎফুল্ল হয়ে উঠেছে। সে বললো, সত্যি, এখানে যেন আমাদের বন্দী করে রেখেছে!

আলম বললো, এখন ঢাকায়, কলকাতায় কী দারুণ উৎসব হচ্ছে ভেবে দ্যাখো! আমাদের ফ্লাইট রাইট টাইমে গেলে আমরা বিকালেই পৌঁছে যেতাম!

তুতুল গা থেকে চাঁদরটা খুলে ফেলে আলমের গলা জড়িয়ে মুচকি হেসে বললো, আমার আনন্দ হচ্ছে তোমার থেকেও বেশি! কেন জানো? আমার একটা স্বার্থপর কারণ আছে। কী বলো তো?

আলম বললো, কী?

তুতুল দুষ্টমীর সুরে বললো, বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে গেল। তোমাকে আর যুদ্ধে যেতে হলো। না। তোমার জন্য আমার ভয় ছিল। আমার ভাগ্যটা তো খুব খারাপ। আমার খালি মনে হতো, তুমি একবার যুদ্ধের মধ্যে ঢুকে পড়লে তোমাকে আমি আর ফিরে পাবো না। এবার আর একটা সত্যি কথা বলি? দ্বিতীয়বার আসলে আমার অসুখ হয়নি। তোমাকে আটকাবার জন্য আমি অসুখের ভান করেছিলুম।

আলম তুতুলকে বুকে টেনে নিয়ে বললো, ওরে পাজী, পাজী রে!

আলম ভালো করেই জানে, তুতুলের এ কথাটা সত্যি নয়। সে নিজে ডাক্তার, লন্ডনের নাম করা সার্জেন তুতুলকে নিয়মিত দেখেছেন, তাঁর কাছে তুতুলের অসুখের ভান করা সম্ভব নয়। যন্ত্র তো আর মিথ্যে বলবে না। ইচ্ছে করে কেউ ব্লাড প্রেসার এমন ফ্লাকচুয়েট করাতে পারে না।

পূর্ব পাকিস্তানকে স্বাধীন বাংলাদেশ করার জন্য আলম খাটছে ছেষট্টি সাল থেকে। তারপর যখন সত্যিই বাংলাদেশে স্বাধীনতার যুদ্ধ শুরু হলো, তাতে সে প্রত্যক্ষ অংশ নিতে পারলো না, এ জন্য তার মনে যে একটা দুঃখ ছিল, তা সে তুতুলকে একবারও বুঝতে দেয়নি। কিংবা, তুতুল হয়তো ঠিকই বুঝেছিল। সে দু’একবার আলমকে চলে যেতে বলেছিল, কিন্তু এ বছরের গোড়া থেকেই তুতুল অসুস্থ, অত বড় অপারেশান হলো তার, এক সময় বাঁচার আশাই ছিল না। সেই অবস্থায় তুতুলকে ফেলে রেখে সে কোথায় যাবে?

অবশ্য স্বাধীনতা যুদ্ধের জন্য লন্ডনে বসেই অন্য অনেক রকম সাহায্য করেছে আলম। পাকিস্তানীদের অত্যচারের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরে আমরা প্রচুর লিফলেট, বুকলেট ছাপিয়ে বিলি করেছে। ইংল্যান্ডের বিভিন্ন জায়গায় সভাসমিতি, জলসার আয়োজন করেছে, টাকা তুলে পাঠিয়েছে মুক্তিসংগ্রামীদের জন্য। এখনও আলমের সঙ্গে আছে পাঁচ হাজার পাউন্ড, সে ভেবেছিল যুদ্ধ আরও অনেকদিন চলবে।

পুরোপুরি সুস্থ, না হয়েও যে তুতুল এবার দেশে ফেরার জন্য জেদ ধরেছিল, সেটাও আলমের কথা চিন্তা করেই। সে বুঝতে পারছিল আলমের ছটফটানি। নিজের বউয়ের জন্য আলম মুক্তিযুদ্ধের মতন একটা মহান ঘটনায় অংশ নিতে পারছে না, এজন্য তার মনে একটা ক্ষোভ বা অভিমান দানা বাঁধছে নিশ্চয়ই। অন্তত কলকাতায় পৌঁছলেও আলম সীমান্তে গিয়ে হাসপাতাল খুলতে পারতো।

তুতুল বললো, যুদ্ধ যদি না থামতো, আমিও তোমার সঙ্গে ফ্রন্টে যেতুম। আমি হাসপাতালে সাহায্য করতে পারতুম না?

আলম বললো, যুদ্ধ থেমে গেছে, এখন তো চিন্তার কিছু নেই। তুলতুলি, আমাদের প্ল্যানটা এবার একটু চেইঞ্জ করতে হবে। তোমাকে কলকাতায় নামিয়ে দিয়ে আমি ঢাকায় চলে যাবো!

তুতুল আহত বিস্ময়ের সঙ্গে বললো, আমাকে কলকাতায় নামিয়ে দেবে মানে? আমি একলা থাকবো?

আলম বললো, একলা থাকবি কেন, পাগলী, কলকাতায় তোর মা আছে, অন্য আত্মীয়স্বজন। আছে। ঢাকায় যাওয়ার জন্য আমার মন ছটফট করছে। বন্ধু বান্ধবরা কে কেমন আছে জানি না।

তুতুল আবার বললো, আমাকে ফেলে তুমি একা ঢাকায় চলে যাবে? কয়েকদিন পরে গেলে হয় না।

আলম বলো, বাঃ, পরে গেলে চলবে কেন? আমার সঙ্গে এতগুলান টাকা রয়েছে, সেটা পৌঁছে দিতে হবে।

–ঐ টাকা হোত এখন আর যুদ্ধের কাজে লাগবে না। বাংলাদেশ সরকারকে দেবে। দুদিন পরে দিলে কী ক্ষতি হয়? টি ভির খবরে বললো, চট্টগ্রামের দিকে এখনো গুলিগোলা চলছে। যুদ্ধ থামলেও সব দিক শান্ত হয়নি।

–ওতে কিছু আসে যায় না। আমায় ঢাকায় যেতেই হবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব। তা হলে এক কাজ করো, তুমিও চলো আমার সঙ্গে।

–আমি সোজা ঢাকায় চলে যাবো, কলকায় না থেমে? মায়ের সঙ্গে দেখা করেও যাবো?

–সেও তো একটা কথা বটে। তুমি মায়ের সাথে দেখা না করেই বা কী করে যাবে? তাইলে তো আমাকে একলাই ঢাকায় এগিয়ে যেতে হয়! তুমি পরে এসে আমাকে জয়েন করবে।

–তুমি একটা দিনও কলকাতায় থেকে যেতে পারো না?

–আমার মা নাই বটে, কিন্তু অন্য আত্মীয়-স্বজন আছে, ভাই আছে, তাদের দেখার জন্য আমারও তো মন ছটফট করতে পারে।

–ও হ্যাঁ, তা ঠিক!

–তুমি রাগ করলে?  

–নাঃ, রাগের কী আছে। এটাই ঠিক অ্যারেঞ্জমেন্ট। আমি কলকাতায় নেমে যাবো, তুমি ঢাকায় চলে যাবে।

আর কোনো কথা না বলে তুতুল বাথরুমে ঢুকে গেল। তার কান্না শুনতে পেল না আলম। তুতুলের মনের মধ্যে গেঁথে আছে একটা অযৌক্তিক ভয়, আলম একবার তার চোখের আড়াল হলেই সে আর তাকে ফিরে পাবে না। তুতুলকে যারা ভালোবাসে, তারা হারিয়ে যায়।

পঁয়তাল্লিশ মিনিট বাদে বাথরুম থেকে বেরিয়ে তুতুল নিঃশব্দে শুয়ে পড়লো। দু’জনের কেউই ঘুমোলো না। তাদের ফ্লাইট অ্যানাউন্সমেন্ট হলো মাঝরাত্তিরে।

কলকাতায় এসে ওরা পৌঁছলো পরদিন বেলা দশটায়। বিমানবন্দরে কেউ ওদের রিসিভ করতে আসেনি। আগেরবার বাড়িতে ফেরার কথা জানিয়ে তুতুল চিঠি দিয়েছিল, পরে আবার টেলিগ্রাম পাঠিয়ে জানাতে হয়েছিল যে সে আসতে পারছে না। এবারে আর তুতুল কিছু লেখে

নিজের দেশে ফেরা, অথচ বিমানবন্দরে একজনও চেনা নেই, কেউ হাত নেড়ে স্বাগত জানাচ্ছে না। এতে একটা অদ্ভুত অনুভূতি হয়। অন্যসব যাত্রীদের জন্য কত মানুষ এসেছে, কেউ কেউ আনন্দে কেঁদে ফেলছে। ভিড়ের মধ্যে একটি যুবকের হাতছানি দেখে তুতুলের ঠোঁট বুক কেঁপে উঠেছিল। ঠিক যেন বাবলু! কিন্তু বাবলু এখানে কী করে আসবে, সে তে বোস্টনে। কোনো কারণে বাবলু হয়তো দেশে ফিরে এসেছে, কোনো রহস্যময় উপায়ে তুতুলের ফেরার খবর পেয়েছে! তুতুল ভালো করে দেখলো, অনেকটা মিল থাকলেও সে ছেলেটি বাবলু নয়, সে হাত নাড়ছে তুতুলের পেছনের একজন যাত্রিণীর দিকে।

কাস্টমস বেরিয়ার পেরিয়ে এসে আলম ঢাকার ফ্লাইটের খবর নিল। আজ কলকাতা-ঢাকা তিনটে স্পেশাল ফ্লাইট যাবে, তারমধ্যে একটা বিদেশীদের জন্য। আলমের ব্রিটিশ পাশপোর্ট, তার টিকিট পেতে কোনো অসুবিধে হবে না। সে ফ্লাইট ছাড়বে দেড় ঘণ্টা পরে। এর মধ্যে তুতুলকে শহরে পৌঁছে দিয়ে আলম ফিরে আসতে পারবে না।

আলম জিজ্ঞেস করলো, তুমি ট্যাক্সি নিয়ে যেতে পারবে?

তুতুল মাথা ঝুঁকিয়ে বললো, হ্যাঁ।

আলম বললো, চলো, আমি তোমাকে আগে ট্যাক্সিতে তুলে দিয়ে আসি, তারপর আমার টিকিটের ব্যবস্থা করবো।

লন্ডনের তুলনায় এখানকার শীত কিছুই না, তবু বাইরে এসে তুতুল যেন শীতে কেঁপে উঠলো। তার কাঁধে ভারি ব্যাগ। আলম নিজের সুটকেসটা এক জায়গায় দাঁড় করিয়ে রেখে তুতুলের সুটকেসটা বয়ে নিয়ে আসছে।

দরাদরি করে একটা ট্যাক্সি ঠিক হলো, দরজা খুলে তুতুল বসলো ভেতরে। জানলার কাছে ঝুঁকে দাঁড়িয়ে আলম বললো, চিন্তার কিছু নেই। তুমি তোমার মায়ের কাছে যেকয়দিন ইচ্ছা থাকো, তারপর চলে এসো ঢাকায়। এখান থেকে টেলিফোন করা যায় না। একটা টেলিগ্রাম করে দেবে, আমি এয়ারপোর্ট থেকে তোমায় নিয়ে যাবো। ঠিক আছে?

তুতুল মাথা ঝুঁকিয়ে বললো, হ্যাঁ।

আলম বললো, লক্ষ্মী হয়ে থেকো। প্রথমেই বেশি ঘোরাঘুরি করো না। তোমার শরীরটার রেস্ট দরকার। তোমার মাকে আমার নমস্কার জানিও। ওষুধগুলা সব ঠিক ঠাক খেও, কেমন? ও হ্যাঁ, ব্লাড প্রেসারের ওষুধটা, ভুলেই গেছিলাম…

কোটের পকেট থেকে একটা ওষুধের শিশি বার করে আলম দিল তুতুলকে। তুতুল সেটা ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে বললো, আমি কিছু ওষুধ খাবো না। তোমার তো দেখবার দরকার নেই! চলিয়ে ট্যাক্সি।

তারপরই সে নুয়ে পড়লো কান্নায়।

আলম বললো, পাগলী আর কাকে বলে! ড্রাইভার সাব, ঠারিয়ে, ঠারিয়ে, এক মিনিট ঠারিয়ে।

তারপর ভেতরে মাথা ঝুঁকিয়ে সে তুতুলের বাহু ছুঁয়ে বললো, এই, তুই অত কান্নাকাটি করলে আমি যাই কী করে? একবার হাসি মুখে আমাকে কিছু বল।

তুতুল আলমের হাত ধরে টেনে ক্ষ্যাপাটে গলায় বললো, না, তুমি যাবে না। তোমাকে যেতে দেবো না। তুমি কিছুতেই আমাকে ফেলে যেতে পারবে না।

আলম দৌড়ে গিয়ে নিজের সুটকেসটা নিয়ে এসে ভেতরে উঠে পড়ে বললো, ঠিকই তল, একদিন পরে ঢাকায় গ্যালে কী ক্ষতি হয়! কলকাতার বাংলাদেশ মিশানে সব খবর পাওয়া যাবে!

ট্যাক্সি ড্রাইভার জিজ্ঞেস করলো, কিধার জায়গা সাব?

আলম বললো, গ্র্যান্ড হোটেল।

তুতুল বললো, আমরা হোটেলে থাকবো?

আলম বললো, আগে একটা হোটেলে গিয়ে উঠি। স্নান-টান করি। তুমিও তো বলেছো, তোমার মায়ের বাসায় থাকার জায়গা নেই। খবর না দিয়ে বাক্সপ্যাটরা নিয়ে সেখানে কি যাওয়া যায়?

তুতুল চিন্তা করতে লাগলো। মামার বাড়িতে সত্যিই তো মোটে নাকি তিনখানা ঘর। টুনটুনিও থাকে ওখানে।

আলম বললো, হোটেলে ওঠা যাক। তারপর ধীরে সুস্থে গিয়ে দেখা করবে, তোমার মা যদি তোমাকে ওখানে থাকতে বলেন তো তুমি থেকে যাবে।

তুতুল চুপ করে গেল।

আলম আশা করেছিল কলকাতার রাস্তাঘাটে একটা যুদ্ধ জয়ের উৎসব দেখতে পাবে। কাগজের ফুলের মালা, ব্যান্ড পাটি, লোকেরা চিৎকার করে জয়ধ্বনি দিচ্ছে, ট্যাঙ্ক নিয়ে ফিরছে সোলজাররা, মেয়েরা তাদের দিকে ছুঁড়ে ছুঁড়ে দিচ্ছে মালা!

সেসব কিছু নেই। কোনো উন্মাদনা, কোনো মিছিলও চোখে পড়ে না। অতি সাধারণ একটা দিন। বাসে ঝুলে ঝুলে যাচ্ছে মানুষ। রিকশা, লরি, ষাঁড়, ঠেলাগাড়িতে মাঝে মাঝে জট পাকিয়ে আছে ট্রাফিক, গাড়ির হর্নের শব্দে কানে তালা লেগে যায়।

গ্র্যান্ড হোটেলে একটাও ঘর নেই। ট্যাক্সি নিয়ে আরও দু’তিন জায়গায় ঘুরে শেষ পর্যন্ত ওরা থিয়েটার রোডের একটা মাঝারি হোটেলে কোনোক্রমে একটি ডাবল বেড রুম পেল। কাউন্টারে খাতায় নাম টাম লেখার পর ঘরের চাবিটা হাতে পেয়ে আলম বললো, চলো!

তুতুল একটা মূর্তির মতন স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আলমের দু’তিনবার ডাকেও সে কোনো সাড়া দিল না। তারপর আচ্ছন্ন গলায় বললো, হোটেলে থাকবো?

কলকাতায় এসে, মায়ের সঙ্গে দেখা না করে একটা হোটেলের ঘর ভাড়া করে থাকার মধ্যে কেমন যেন একটা রুচিহীনতা অনুভব করছে তুতুল। এই কলকাতা শহরে তার জন্ম, তার মা আর প্রতাপমামা কত কষ্ট করে তাকে পড়িয়েছেন। গুনে গুনে ট্রামবাসের পয়সা হিসেব করে তুতুল প্রতিদিন কলেজে গেছে। একবার রাস্তায় চটি ছিঁড়ে গিয়েছিল, সেটা সারাবার পর্যন্ত পয়সা ছিল না, ব্লাউজ থেকে একটা সেফটিপিন খুলে চটিতে আটকে নিয়েছিল। সেই তুতুল এখন বিলেত-ফেরত ডাক্তার হয়েছে, তার স্বামী বেশ অবস্থাপন্ন, তারা কলকাতায় এসে হোটেলে উঠছে? সবারি কাকে আর বলে!

তুতুল আস্তে আস্তে বললো, আমি আগে বাড়ি যাবো!

আলমও তুতুলের মনের ভাব বুঝতে পারলো খানিকটা। ঢাকাতে গিয়ে সে নিজে অবশ্য হোটেলেই ওঠে। কিন্তু তুতুলের সঙ্গে তর্ক করে লাভ নেই, সে বললো, চলো, তোমাকে আমি পৌঁছে দিয়ে আসছি। আমি হোটেলে থাকলে তোমার আপত্তি নেই তো? একই শহরে তো থাকবো?

নিজের সুটকেসটা ওপরে পাঠাবার নির্দেশ দিয়ে আলম তুতুলের জিনিসপত্র নিয়ে আবার ট্যাক্সিতে উঠলো। এক্ষুনি সিগারেট শেষ করেছে, আবার সে সিগারেট ধরালো একটা।

হঠাৎ তুতুল বেশ স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে। সে আলমকে রাস্তা চেনাতে লাগলো। কলকাতার। চোদ্দ পনেরো বছর বয়েসে আলম একবার এখানে এসেছিল, এই শহর সে ভালো। করে চেনে না। সে পথচারিদের দিকে তাকিয়ে চেনা মানুষ খুঁজছে। সে শুনেছিল, ঢাকার শিক্ষিত লোকজনদের মধ্যে অনেকেই কলকাতায় এসে আশ্রয় নিয়েছে এই ক’মাস। চেনা লোক চোখে পড়ছে না বটে, তবে কিছু কিছু লোককে দেখে আলম বুঝতে পারছে, তারা ঐ পারের বাঙালী। চেহারায় পোশাকে কিছু একটা থাকে, যাতে বোঝা যায়। জিপে চড়ে হৈ হৈ করতে করতে চলে গেল একদল যুবক, তারা নিশ্চিত মুক্তিযোদ্ধা।

গড়িয়াহাটের মোড়ের কাছে এসে তুতুল হাসিমুখে বললো, আমি জানি, তুমি কেন আমাদের বাড়ি যেতে চাইছিলে না। তুমি আমার মাকে ভয় পাচ্ছো। তুমি আমার মায়ের চিঠি পড়েছিলে!

আলমও জোর করে ফিকে ভাবে হেসে বললো, মোছলমান জামাইরে শাশুড়ি ঝাঁটা পেটা করে যদি প্রথমেই?

তুতুল বললো, আমরা গরিব হয়ে গেলেও আমার মা বড় ঘরের মেয়ে, বনেদী বাড়ির বউ ছিলেন, নিজের হাতে কোনোদিন ঝাটা ধরেননি!

আলম বললো, জিভের ঝাঁটার মারে আসল ঝাঁটার থেকে লাগে বেশি! প্রথম দিনটা থাক। আজ আমি তোমাকে গেটের সামনে নামিয়ে দিয়ে আসবো। তুমি কথা টথা বলে দ্যাখো, যদি লাইন ক্লিয়ার দ্যাখো, আমি তারপর না হয় যাবো!

তুতুল বললো, মা যদি অবুঝ হয়, মানে, আমার মা যতই আমাকে বকুনি দিক, আমি তো আমার মাকে ছাড়তে পারবো না কখনো।

আলম বললো, তাহলে বুঝি আমাকে ছাড়বে?

আলমের দিকে কয়েক পলক স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে তুতুল বললো, মাঝে মাঝে তুমি এমন বোকার মতন কথা বলো! আমার কথাটা শেষ করতে দাও। আমি বলছি, আমার মাকে আমি ছাড়তে পারবো না, কিন্তু মা যদি তোমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে, আমি আর কোনোদিন তোমাকে আমাদের বাড়িতে আসতে বলবো না। তখন কলকাতায় এলে অন্য কোনো বাড়িতে কিংবা হোটেলে থাকতেও আমার খারাপ লাগবে না। মাঝে মাঝে আমি একা মায়ের সঙ্গে দেখা করে যাবো।

আলম বললো, দ্যাটস ফাইন ফর মি! কিন্তু পরীক্ষাটা কি আজই হবে? আজ আমার সত্যিই ইচ্ছে করছে না। আজ আমি হোটেলে ফিরে যাই? প্লিজ তুতুল!

তুতুল বললো, এখন যে বাড়িতে যাচ্ছি, এ বাড়িতে আমি কখনো থাকিনি। এই দিককার রাস্তাও আমি ভালো চিনি না।

আলম বললো, আমি তোমাকে ঠিকানা খুঁজে পৌঁছে দিচ্ছি। তুমি বিকেলবেলা একবার চলে এসো হোটেলে। ট্যাক্সি নিয়ে চলে আসতে পারবে।

ঠিকানা বিশেষ খুঁজতে হলো না, সেলিমপুরের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছেন প্রতাপ, একজন বৃদ্ধের সঙ্গে কথা বলছেন। তুতুল চেঁচিয়ে বলে উঠলো, ঐ তো! আমার মামা!

আলম তুতুলের উরুতে মৃদু চাপ দিয়ে বললো, এখন আমার পরিচয় দিও না। তুমি নামো, আমি সুটকেসটা নামিয়ে দিচ্ছি। এই ট্যাক্সি নিয়েই আমি চলে যাবো!

বৃদ্ধ ব্যক্তিটি উঠে গেলেন আর একটি গাড়িতে। মুখ তুলে প্রতাপ তুতুলকে দেখলেন। অবাক হয়েছেন নিশ্চয়ই, কিন্তু কোনোরকম উচ্ছাস দেখানো তাঁর স্বভাবে নেই। তিনি যেন অতিকষ্টে মুখে একটু হাসি এনে বললেন, এসেছিস! ভালো করেছিস। তোর মায়ের শরীরটা ভালো নেই। এই তো এইমাত্র ডাক্তার চলে গেলেন।

তুতুল প্রতাপকে প্রণাম করে জিজ্ঞেস করলো, কী হয়েছে মা’র?

প্রপ বললেন, সেটাই তো ঠিক ধরা যাচ্ছে না। অবস্থা দিন দিন খারাপ হচ্ছে রে!

তুতুল মুখটা ঘুরিয়ে স্নান গলায় বললো, ডাক্তার চলে গেলেন? আমি জিজ্ঞেস করতুম। আলম, আমার মা খুব অসুস্থ।

আলমকে এবার নামতেই হলো। সে প্রতাপকে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করতে যেতেই প্রতাপ তাকে ধরে ফেলে বুকে জড়িয়ে বললেন, এসো বাবা, ভেতরে এসো!

খাটের মাথায় তিনটে বালিশে ভর দিয়ে আধ-শোওয়া হয়ে রয়েছেন সুপ্রীতি, এক পাশে বসে আছেন মামুন, অন্যদিকে মমতা। একটা মুগার চাঁদর দিয়ে তাঁর শরীর ঢাকা। সুপ্রীতি কী যেন বলছেন মামুনকে, তাঁর গলার স্বর খসখসে, অর্ধেক কথা বোঝা যাচ্ছে না। শরীরটা ছোট্ট হয়ে গেছে। প্রথম পলক মাকে দেখেই, তুতুলের মনে পড়ে গেল জয়দীপের কথা!

কতদিন ধরে তুতুল স্বপ্ন দেখেছে, বাড়ি ফিরেই মায়ের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়বে একটা বাচ্চা মেয়ের মতন। মায়ের কোলে মুখ ওঁজে আদর খাবে। সেরকম কিছুই হলো না, সে বিছানার পাশে এসে দাঁড়িয়ে, মায়ের পায়ে হাত রেখে আস্তে আস্তে জিজ্ঞেস করলো, তোমার কী হয়েছে, মা?

সুপ্রীতির মুখখানা আলোকিত হয়ে উঠলো। কিন্তু তিনি তুতুলকে কিছু বলার আগে গলা উঁচু করে দরজার কাছে দাঁড়ানো আলমকে দেখে জিজ্ঞেস করলেন, ঐ বুঝি জামাই? ও মামুন, দ্যাখো, আমার জামাইকে দ্যাখো, কেমন সুপুরুষ! ভালো জামাই হয়েছে না? ও কি আমিন চৌধুরীর বাড়ির ছেলে?

মামুন আলমকে চেনেন না। তিনি বললেন, খুব সুন্দর জামাই হয়েছে। ও দিদি, তোমার মেয়ে-জামাই এসে পড়েছে, আর তোমার চিন্তা কী! আজ সকলেরই আনন্দের দিন!

সুপ্রীতি বললেন, দেশ তো স্বাধীন হয়ে গেছে। ও তুতুল, শুনেছিস, হিন্দুস্থান পাকিস্তান আবার এক হয়ে গেছে। চল, আমরা সবাই মিলে একবার বাড়ি যাই।

মামুন বললেন, হ্যাঁ, দিদি, যাবো, আমরা নিশ্চয়ই যাবো। আর কয়েকটা দিন যাক। তুমি একটু সুস্থ হয়ে নাও। মালখানগরে গেলে নৌকো থেকে একটু হাঁটতে হবে, তোমার মনে আছে?

সুপ্রীতি বললেন, হ্যাঁ, আমি ঠিক হাঁটতে পারবো। জানো মামুন, আমার মা, মনে আছে তো আমার মাকে? দেওঘরে মা শেষনিঃশ্বাস ফেলার আগে কতবার খোকনকে বললেন, ও খোকন, আমারে একবার বাড়ি নিয়ে যা! খোকন কিছুতেই নিয়ে গেল না। তুমি আমাকে নিয়ে যাবে। আমার জামাই এসেছে, সে নিয়ে যাবে।

প্রতাপ দেওয়ালে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন চুপ করে।

তুতুল একবার তাকালো আলমের দিকে। তারা দু’জনেই বুঝেছে যে সুপ্রীতির ক্যানসার হয়েছে। সুপ্রীতির কথাবার্তাও অসংবদ্ধ তুতুলের চোখ জলে ভরে গেল। মমতা তার মাথায় হাত রাখলেন।

আলম এসে দাঁড়ালো সুপ্রীতির শিয়রের কাছে। সুপ্রীতি তার একখানা হাত ধরে বললেন, তুমি আমিন চৌধুরীর বড় ছেলে, বড় ভালো ছেলে। আমার তুতুল তোমার অযোগ্য হবে না, দেখো। তবে, মেয়েটা বড় অভিমানী। ও কখনো অভিমান করলে তুমি ভুল বুঝো না যেন। বাবা।

আলম বললো, না মা, ওকে আমি ভুল বুঝবো না।

সুপ্রীতি চোখ বড় বড় করে বললেন, কী বললে? মা বললে? তুমি আমিন চৌধুরীর বড় ছেলে, তুমি মাকে আম্মা বলো না? মালখানগরে ওরা সবাই আম্মা বলতো।

আলম বললো, আম্মাও বলি, মা-ও বলি। আপনাকে আমি মা বলবো।

সুপ্রীতি তার চুলে হাত দিয়ে বললেন, অনেক বড় বাড়ি, সকলে এক সঙ্গে থাকবো, বড় উনুনে রান্না হবে, উত্তরের বারান্দায় লাইন করে আসন পাতা হবে। ইস, মা দেখলে কত খুশি হতো! নতুন জামাই এসেছে, মা দেখলো না!

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *