একষষ্টিতম অধ্যায় – দেবীপূজার কর্তব্যতা
ঔর্ব কহিলেন;-হে নৃপশ্রেষ্ঠ! পুনর্বার ভগবান্ মহাদেব বেতাল ও ভৈরবের নিকট যে বিষয়ের বর্ণন করিয়াছিলেন, এক্ষণে সেই প্রস্তুত বিষয়ের বর্ণন করিতেছি শ্রবণ কর। ১
ভগবান্ বলিলেন;–ভগবতী অষ্টদশভুজা উগ্রচণ্ডা নামে যে মূর্তি ধারণ করিয়াছিলেন, উহা পূর্বে, সূৰ্য্য কন্যারাশিগত হইলে কৃষ্ণপক্ষের নবমীতে কোটি যোগিনীর সহিত প্রাদুর্ভূত হয়। ২
আষাঢ় মাসের পূর্ণিমাতিথিতে প্রজাপতি দক্ষ, দ্বাদশ বার্ষিক যজ্ঞ করিতে আরম্ভ করে; ঐ যজ্ঞে সমুদয় দেবগণকে বরণ করা হইয়াছিল। ৩
ঐ যজ্ঞে দক্ষ, আমাকে কপালী বলিয়া বরণ করে নাই এবং আমার পত্নী বলিয়া তাহার নিজের কন্যা সতীকেও বরণ করেন নাই। ৪
তখন সতী, ক্রোধ-পরবশ হইয়া নিজের দেহত্যাগ করিয়াছিলেন এবং দেহত্যাগ করিয়া চণ্ডমূর্তি ধারণ করেন। ৫
অনন্তর, দ্বাদশ-বার্ষিক যজ্ঞ প্রবৃত্ত হইলে, কন্যারাশি কৃষ্ণপক্ষে নবমী তিথিতে সতীরূপ পরিত্যাগ করিয়া যোগনিদ্রা চণ্ডরূপধারিণী মহামায়া কোটি যোগিনীর সহিত যজ্ঞভঙ্গ করিয়াছিলেন। ৬-৭
মহাদেবের সমুদয় গণের সহিত এবং সাক্ষাৎ মহাদেবের সহিত দেবী স্বয়ং মহাত্মা দক্ষের যজ্ঞভঙ্গ করেন। ৮
অনন্তর দেবীর সেই নিদারুণ ক্রোধ অপগত হইলে সমস্ত দেবগণ, পূর্ব কথিত বিধান-অনুসারে দেবীর অতুলা পূজা করিয়াছিলেন। ৯
দুঃখহানির নিমিত্ত দেবগণ পূর্বোক্ত বিধান অনুসারে দেবীর পূজা করিয়া অতিশয় শান্তি প্রাপ্ত হইয়াছিলেন। ১০
এইরূপ অতুল বিভূতি লাভের নিমিত্ত অপর ব্যক্তিরও দেবীর চতুৰ্বর্গপ্রদ পূজন করা উচিত। ১১।
হে ভৈরব! যে ব্যক্তি মোহবশতই হউক, আলস্যবশতই হউক, দম্ভ অথবা দ্বেষবশতই হউক, মহোৎসবকালে ভগবতী দুর্গাদেবীর পূজা না করে, দেবী ভগবতী তাহার উপর ক্রুদ্ধ হইয়া তাহার অভিলষিত কামনাসকল নষ্ট করেন এবং পরে সে দুর্গার বলিরূপে জন্মগ্রহণ করে। ১২-১৩
অষ্টমীর দিবস রুধির, মাংস, সুগন্ধি মহামাংস, নানাজাতীয় বলি, সিন্দুর, পট্টবাস, নানাবিধ বিলেপন, অনেক জাতীয় পুষ্প এবং বহুবিধ ফল দ্বারা দেবীর পূজা করিবে। ১৪
পুত্রবান ব্যক্তি মহাষ্টমীর দিবস উপবাস করিবে না। এবং ব্ৰতশালীও সর্ব প্রকারে পূতাত্মা হইয়া দেবীর পূজা করিবে। ১৬
মহাষ্টমীর দিন পূজা করিয়া, নবমীর দিবস বহুবিধ বলি প্রদানপূর্বক পূজা করিয়া, দশমীর দিবস শ্রবণানক্ষত্রে শাবরোৎসবের সহিত দেবীর বিসর্জন করিবে। ১৭
যে দশমী তিথির দিবাভাগে শ্রবণার শেষ পাদ হইবে, সেই দশমী তিথিতেই দেবীর বিসর্জন করিবে। ১৮
রাগনিপুণ কুমারী ও বেশ্যা এবং নর্তকগণ সঙ্গে লইয়া শঙ্খ, তুরী মৃদঙ্গ এবং পটহের শব্দ করিতে করিতে নানাবিধ বস্ত্রের ধ্বজা উড়াইয়া খই এবং ফুল ছড়াইতে ছড়াইতে ধূলি-কর্দম নিক্ষেপ করত নানা ক্রীড়া-কৌতুক ও মঙ্গলা চরণপূর্বক ভগ-লিঙ্গাদি বাচক গ্রাম্যশব্দ উচ্চারণ ও তাদৃশ শব্দবহুল গান এবং তাদৃশ অশ্লীল বাক্যালাপ করিয়া বিসর্জন সময়ে ক্রীড়া করিবে। ১৯-২১
সেই দিবস যদি কোন মনুষ্য, নিজের উপর অপর কর্তৃক অশ্লীল ব্যবহার করা না ভালবাসে এবং অপরের উপর অশ্লীল ব্যবহার করিতে না চাহে, তবে ভগবতী ক্রুদ্ধ হইয়া তাহাকে শাপ প্রদান করিয়া গমন করেন। ২২
যে নবমীর নিশাভাগে শ্রবণার আদিপাদ হইবে, সেই নবমীর রাত্রিকালেই দেবীর সমূত্থান করিবে; দিবাভাগে নহে। ২৩
যে নবমীর রাত্রিকালে শ্রবণার অন্ত পাদ হইবে, সেই নবমীরই দিবাভাগে দেবীর সমুত্থান করিবে। ২৪
হে ভৈরব! দেবীর প্রতিমা জলে রাখিয়া বিভূতির নিমিত্ত বক্ষ্যমাণ মন্ত্র দ্বারা বিসৰ্জন করিবে। ২৫
হে দেবি! চামুণ্ডে! আমার শুভ পূজা গ্রহণ করিয়া উত্থান করুন এবং অষ্ট শক্তির সহিত আমার কল্যাণ করুন। ২৬
হে দেবি! আপনার সেই শ্ৰেষ্ঠস্থানে গমন করুন এবং আমার পূজা পরিপূর্ণ হউক। ২৭
আপনি স্রোতোজলে গমন করুন অথচ আমার গৃহে থাকিয়া ঐশ্বৰ্য্য প্রদান করুন। আপনি এই বেগশালী জলে পত্রিকাকে সঙ্গে লইয়া নিমগ্ন হউন। ২৮
পুত্র, আয়ুঃ ও ধনের বৃদ্ধির নিমিত্ত আমি তোমাকে জলে স্থাপন করিতেছি। সৰ্ব্বলোকের হিত এবং বিভূতির নিমিত্ত এই মন্ত্র পাঠ করিয়া দেবীকে জলে স্থাপন করিবে। ২৯-৩০
মহামায়ার মহোৎসব সময়ে ভদ্রকালী এবং উগ্রচণ্ডা এই উভয়কেই দুর্গা তন্ত্রমন্ত্র দ্বারা পূজা করিবে। ৩১
সকল প্রকার যোগিনী এবং মূলমূর্তি–ইহাদের সকলের পূজাতেই নেত্র বীজ উক্ত হইয়াছে। ৩২
হে ভৈরব! তুমি উগ্রচণ্ডার পৃথক মন্ত্র শ্রবণ কর। উপান্তে নেত্ৰবীজ মন্ত্রের আদ্যদ্বয় অন্তরে অন্ত্যস্বর ও চন্দ্রবিন্দুযুক্ত বহ্নিবীজ বিন্যস্ত হইলে উগ্রচণ্ডার মন্ত্র হয়। দ্বিরাবর্তিত নেত্রবীজের দ্বিতীয় অক্ষর ভদ্রকালীর মন্ত্র; ইহা ধর্ম, কাম এবং অর্থের সাধন। ৩৩-৩৫
যখন মহামায়া জগন্ময়ী বৈষ্ণবী দেবীর পূজা করা হয়, তখন অষ্টযোগিনীও পূজ্য বলিয়া উক্ত হইয়াছে। ৩৬
হে ভৈরব! পূৰ্বকল্পে সেই অষ্ট যোগিনী, শৈলপুত্রী প্রভৃতি। আর দুর্গা-তন্ত্রের অষ্ট যোগিনী উগ্রচণ্ডাদি, ইহা কীর্তিত হইয়াছে। ৩৭
ভদ্রকালীর তন্ত্র দ্বারা ভদ্রকালীর পূজাকালে ঐশ্বৰ্য-বৃদ্ধির নিমিত্ত বক্ষ্যমাণ অষ্টযোগিনীর পূজা করিবে। ৩৮
জয়ন্তী, মঙ্গলা, কালী, ভদ্রকালী, কপালিনী, দুর্গা; শিব, ক্ষমা এবং ধাত্রী,–এই অষ্ট যোগিনীকে অষ্টদলে পূজা করিবে। ৩৯
যখন উগ্রচণ্ডা মন্ত্র দ্বারা সেই দেবীর পূজা করিবে, হে ভৈরব! তখন অপর অষ্ট যোগিনীর পূজা করিবে। তাহাদের নাম–কৌশিকী, শিবদূতী, হৈমবতী, ঈশ্বরী, শাকম্ভরী, দুর্গা এবং মহোদরী এই সাত এবং উগ্রচণ্ডা। ৪০-৪১
হে ভৈরব! সৌম্য-মূর্তি উমার মন্ত্র শ্রবণ কর। প আদি, সমাপ্তি সহিত ফট্ অন্তে অথবা অন্তে ফট্ শূন্য এই একাক্ষর অথবা ত্র্যক্ষর উমা মন্ত্র। ৪২
উমা সুবর্ণসদৃশী গৌরবর্ণা, দ্বিভুজা, বামহস্তে নীলারবিন্দু-ধারিণী শুক্ল চামর ধারণ করিয়া শিবের দক্ষিণ অঙ্গে দক্ষিণ হস্ত বিন্যাস করিয়া অবস্থিত, এইরূপে চিন্তা করিবে। ৪৩-৪৪
ভক্ত, মহাদেবের সঙ্গ ব্যতীতও কেবল সুবর্ণ-সদৃশী গৌরাঙ্গী, পদ্মচামর ধারিণী, দ্বিভুজা এবং সর্বদা ব্যাঘ্র-চৰ্ম্মস্থিত পদ্মে পদ্মাসনে উপবিষ্ট রুদ্রাণীকেও চিন্তা করিতে পারো। ৪৫
হে ভৈরব! এই উমার পূজাকালে যে অষ্টযোগিনী ও নায়িকার পূজা কর্তব্য, তাহাদের প্রত্যেকের নাম শ্রবণ কর। ৪৬
জয়া, বিজয়া, মাতঙ্গী, ললিতা, নারায়ণী, সাবিত্রি, স্বধা এবং স্বাহা এই আটজন। ৪৭
পূর্বকালে মহাসত্ত্ব, মহাকায়, প্রবল পরাক্রান্ত হস্তীর মত দুর্মদ, দৈত্য শুম্ভ এবং নিশুম্ভ নামে অন্ধকের দুই পুত্র জন্ম গ্রহণ করিয়াছিল। ৪৮
মহাসূর অন্ধক আমাকর্তৃক নিহত হইলে সেই দুই ভ্রাতা সৈন্য এবং বাহনের সহিত পাতালতলে আশ্রয় গ্রহণ করে। ৪৯
অনন্তর সেই অসুরদ্বয় অতি তীব্র তপস্যার অনুষ্ঠান করিয়া ব্ৰহ্মাকে সম্পূর্ণ রূপে সন্তুষ্ট করে। ৫০
ব্রহ্মা প্রীত হইয়া তাহাদিগকে বর প্রদান করেন। সেই দানবদ্বয় ব্রহ্মার বরে অত্যন্ত গর্বিত হইয়া ত্রিজগৎ অধিকার করিয়া শুম্ভ, ইন্দ্রত্ব এবং নিশুম্ভ চন্দ্ৰত্ব করিতে থাকে। ৫১
শুম্ভ স্বয়ং নিখিল দেবগণের যজ্ঞভাগ অপহরণ করে এবং নিশুম্ভ দিকপাল দিগের অধিকার গ্রহণ করে। ৫২
অনন্তর ইন্দ্রের সহিত নিখিল দেবগণ হিমালয়ে গমন করিয়া গঙ্গাবতরণ স্থানের সমীপে মহামায়ার স্তব করিয়াছিলেন। ৫৩
তখন দেবী দেবগণ কর্তৃক বারংবার সংস্তুত হইয়া মাতঙ্গের স্ত্রীর রূপ ধারণপূর্বক দেবগণকে জিজ্ঞাসা করিয়াছিলেন। ৫৪
হে অমরগণ! তোমরা এখানে আসিয়া কোন স্ত্রীর স্তব করিতেছ এবং তোমরা এই মাতঙ্গের আশ্রমেই বা কি নিমিত্ত আগমন করিয়াছ? ৫৫
সেই মাতঙ্গী এইরূপ বলিতেছেন, এমন সময়ে একটি দেবী তাহার শরীর কোষ হইতে নির্গত হইয়া বলিলেন যে, দেবগণ আমারই স্তব করিতেছেন।
শুম্ভ ও নিশুম্ভ নামে দুই জন দানব, সমস্ত দেবগণকে বাধা দিতেছে। সেই হেতু তাহাদের বধের জন্য দেবগণ আমারই স্তব করিতেছেন। ৫৭
মাতঙ্গীর শরীর হইতে সেই দেবী নিঃসৃত হইলে পর, সেই হিমাচলাশ্রিত গৌরবর্ণা মাতঙ্গী তৎক্ষণাৎ দলিত অঞ্জন-সদৃশ কৃষ্ণবর্ণা হইলেন এবং কালিকা নামে প্রসিদ্ধ হইলেন। ৫৮
মনীষী ঋষিগণ, তাঁহাকে উগ্রতারা নামে অভিহিত করেন। কারণ, সেই অম্বিকা ভক্তগণকে সর্বদা উগ্রভয় হইতে রক্ষা করেন। ৫৯
বীজক্ৰমে প্রথমেই ইহার বীজ কথিত হইয়াছে। ইহার একটি জটা আছে বলিয়া ইহার নাম একজটা। ৬০
হে বেতাল ও ভৈরব। যেরূপ ধ্যান করিলে ভক্তের অভিলষিত লাভ হয়, এক্ষণে ইহার সেই ধ্যান শ্রবণ কর। ৬১
উগ্রতারা–চতুর্ভূজা কৃষ্ণবর্ণা মুণ্ডমালা বিভূষিতা; ইহার দক্ষিণদিকের ঊর্ধ্বহস্তে খড়্গ ও অধোহস্তে চামর। ৬২
বামদিকের উৰ্দ্ধহস্তে কাতারী ও অধোহস্তে খর্পর; ইনি মস্তকে আকাশ ভেদকারিণী একটি জটা দ্বারা শোভিতা। ৬৩
সমস্ত মস্তক ও গ্রীবাদেশে মুণ্ডমালা এবং বক্ষঃস্থল নাগ-হারে অলঙ্কৃতা, রক্তনেত্রা। ৬৪
কৃষ্ণবস্ত্রধরা, ইহার কটিদেশ ব্যাঘ্রচৰ্ম্মে শোভিত, বামপাদ শবের হৃদয়ে এবং দক্ষিণপাদ সিংহের পৃষ্ঠে স্থাপিত; ইনি স্বয়ং শবদেহ লেহনে নিযুক্তা। ৬৫
অট্টহাস্যশালিনী অতিঘোর-শব্দ-কারিণী এবং স্বয়ং অতি ভীষণস্বরূপা। সুখাভিলাষী ভক্তগণ উগ্রতারাকে এইরূপে চিন্তা করিবে। ৬৬
ইহার যে আটজন যোগিনী আছেন, আমি তাহাদিগের বিষয়ও কীর্তন করিতেছি। ৬৭
মহাকালী, রুদ্রাণী, উগ্র, ভীমা, ঘোরা, ভ্রামরী, মহারাত্রি এবং ভৈরবী এই আটটী যোগিনী; ইহাদিগেরও পূজা করিবে। ৬৮
হে ভৈরব! কালিকার কায়কোষ হইতে যে দেবী নির্গত হইয়াছেন, সেই সুচারুরূপসম্পন্না মনোহরা দেবী কৌশিকীনামে বিখ্যাত। ৬৯
ঐ চণ্ডিকা, কালিকা দেবীর হৃদয় হইতে রসনাগ্র দ্বারা নিঃসৃত হইয়া ছিলেন; তত্তুল্য সুন্দর রূপ আর কাহারও নাই। ৭০
ত্রিভুবনে শরীর-কান্তিতে ইহার সদৃশ আর কেহই নাই, কারণ যিনি যোগ নিদ্রা, মহামায়া এবং মূল প্রকৃতি, এই দেবী কৌশিকী তাহারই প্রাণস্বরূপ। ৭১
নেত্ৰবীজ ইহারও বীজরূপে কীর্তিত হইয়াছে, এক্ষণে মনুষ্যের সর্বকামপ্রদ ইহার মন্ত্র বলিতেছি। ৭২
সমাপ্তিতে নান্ত দান্ত ষষ্ঠবর্গের আদি-ষষ্ঠস্বর এবং চন্দ্রবিন্দুযুক্ত এই কয়েকটী মিলিত হইয়া কৌষিকীমন্ত্র হয়, ইহা মনুষ্যের ধর্ম, কাম এবং অর্থপ্রদ। ৭৩।
হে ভৈরব! আমি জগতের আহ্লাদকারক ইহার মূর্তি এবং রূপের কথা বলিতেছি, একমনা হইয়া শ্রবণ কর। ৭৪
মস্তকে কবরীবন্ধন, তাহার নীচে অধোমুখী চন্দ্রকলা, কেশের অন্তে একটা উৰ্দ্ধমুখ তিলক, গণ্ডস্থল মণিকুণ্ডল দ্বারা সংসৃষ্ট, মস্তকে মুকুট। ৭৫
কর্ণ সমুজ্জ্বল কর্ণপূরনামক কর্ণভূষণ দ্বারা অলঙ্কৃত; সুবর্ণ, মণিমাণিক্য এবং নাগহারে বিরাজিত। ৭৬
নিয়ত-সুগন্ধ অম্লান পদ্মদ্বারা অতি-সৌন্দর্য্যের আরও বৃদ্ধি হইয়াছে। গ্রীবাদেশে মালা, কেয়ূর-রত্ননিৰ্মিত। ৭৭
মৃণালসদৃশ কোমল আয়ত অথচ গোল গোল সুন্দর বাহুনিচয়ে সুশোভিত শরীর-কঞ্চুক দ্বারা আবৃত, পয়োধর পীন এবং উন্নত। ৭৮
মধ্য ক্ষীণ ত্রিবলী-ভূষিত, বস্ত্র পীতবর্ণ। ৭৯
দক্ষিণদিকের হস্তনিচয় দ্বারা উৰ্দ্ধ হইতে যথাক্রমে নীচে নীচে শূল, বজ্র, বাণ, খড়গ এবং শক্তি ধারণ করিয়া আছেন। ৮০
ঐরূপ বামদিকের হস্তনিকর দ্বারা উর্ধ্বাধঃক্রমে গদা, ঘণ্টা, চাপ এবং চর্ম ধারণ করিয়া আছেন। ৮১
সিংহের উপরে আস্তীর্ণ ব্যাঘ্রচর্ম উপবিষ্ট হইয়া কৌষিকী অতুলরূপে সুর এবং অসুরকে বিমোহিত করিতেছেন। ৮২
হে বৎস! ইহার সহিত পূজ্য অষ্টযোগিনীগণের নাম শ্রবণ কর। তাহারা পূজিত হইয়া মনুষ্যকে চতুর্বর্গ প্রদান করেন। ৮৩
ব্ৰহ্মাণী, মাহেশ্বরী কৌমারী, বৈষ্ণবী, বারাহী, নারসিংহী, ঐন্দ্রী এবং শিবদূতী। এই কামপ্রদায়িনী যোগিনীগণ সৰ্ব্বদা পূজ্য। ৮৪
দেবীর ললাট হইতে নিষ্ক্রান্ত হইয়া যিনি কালী নামে খ্যাত হইয়াছেন; হে ভৈরব! তাহার কামপ্রদ মন্ত্র কীৰ্ত্তন করিতেছি, শ্রবণ কর। ৮৫
“ক্রীঁ ফট্” ইহা ধর্ম-কামার্থ-সাধক কালীমন্ত্র। হে বৎস! আমি ইহার মূর্তি বর্ণন করিতেছি, একাগ্রমনে শ্রবণ কর। ৮৬-৮৭
ইনি নীলোৎপলদলের মত শ্যামবর্ণা চতুর্ভূজা। দক্ষিণদিকের হস্তদ্বয়ে উর্ধ্বাধঃক্রমে খট্বাঙ্গ ও চন্দ্রহাস। ৮৮
বামদিগের হস্তদ্বয়ে সেইরূপ চর্ম ও পাশ ধারণ করিতেছেন। গলদেশে মুণ্ডমালা, পরিধানে ব্যাঘ্রচর্ম। ৮৯
কৃশাঙ্গী, দীর্ঘদংষ্ট্রা, অতিদীর্ঘ এবং ভীষণাকার; জিহ্বা লক লক করিতেছে; চক্ষুঃ অতিশয় লাল, তাহাতে মূর্তি আরও ভয়ঙ্কর হইয়াছে। ১০
কবন্ধ বাহনে আসীন এবং শ্রবণ ও আনন অতি বিস্তার; ইনি তারা ও চামুণ্ডা বলিয়াও অভিহিত হন। ৯১
ইহার সহিত অষ্টযোগিনীর পূজা এবং ধ্যান করিবে। ত্রিপুরা, ভীষণা, চণ্ডী, কর্ত্রী, হন্ত্রী, বিধায়িনী, করালা, শূলিনী এই আটটি যোগিনী কীর্তিত হইয়াছে। এই দেবী অতিশয় কাম প্রদায়িনী এবং সর্বদা জড়তাবিনাশিনী। ইহার সদৃশ কামপ্রদায়িনী দেবী আর নাই। ৯২-৯৩
কৌষিকীর ধ্যান করিতে করিতে হরির হৃদয় হইতে যে দেবী নিঃসৃত হইয়াছেন। যিনি শিবদূতী নামে বিখ্যাত শত শত শৃগালবৃন্দে আবৃত। ৯৪
ইহার ধর্ম কাম এবং অর্থ-প্রদ মন্ত্র কীৰ্ত্তন করিতেছি, যাহা শুনিয়া সাধক, দুর্লভ শিবমন্দিরে গমন করে। ৯৫
এই মন্ত্র দ্বারা মনুষ্য শিবস্বরূপিণী শিবদূতীর আরাধনা করিয়া অচির কালের মধ্যে সকল অভীষ্ট লাভ করে এবং সর্বজয়ী হয়। ১৬
ক্ষং ইত্যাদি শিবদূতীর মন্ত্র; ইহা বলিলাম। শিবদূতী জয়দায়িনী; এক্ষণে ইহার রূপের বর্ণনা করিতেছি, একমন হইয়া শ্রবণ কর। ৯৭-৯৯
চতুর্ভূজা, মহাকায়া, দ্যুতি সিন্দুর সদৃশ, রক্তদন্ত, জটাজূট, মুণ্ডমালা এবং অর্ধচন্দ্র দ্বারা মস্তক শোভিত। ১০০
নখগুলি সমুজ্জ্বল, পরিধানে ব্যাঘ্রচর্ম, দক্ষিণদিকের হস্তদ্বয়ে উর্ধ্বাধঃক্রমে শূল ও খড়্গ। ১০১
বাম দিকের হস্তদ্বয়ে পাশ ও চৰ্ম্ম ধারণ করিয়াছে। বক্ত্র স্থূল, পীন ওষ্ঠ, মূর্তি উচ্চ ও তুঙ্গ এবং দেখিতে অতি ভয়ঙ্কর। ১০২
দক্ষিণ চরণ শবের বক্ষে এবং বামচরণ শৃগালের পৃষ্ঠে বিন্যস্ত; শত শত ফেরুগণে পরিবেষ্টিত। ১০৩
শিবদূতীর এইরূপ বিভীষণমূৰ্তি বিভূতি লাভাৰ্থ চিন্তা করিবে। মনুষ্য কেবল ইহার ধ্যান করিলেই শুভফল প্রাপ্ত হয়। আর পূজা করিলে ত দেবী অচির কামধ্যে সমুদয় অভিলষিত প্রদান করেন। ১০৪
যে সাধক, শিবার শব্দ শুনিয়া ভক্তিপূর্বক শিবদূতীর পূজা করে, সমুদয় কামনা তাহার হস্তগত। ১০৫
যৎকালে মহাদেবী, মহামায়া জগতের হিতের নিমিত্ত রক্তবীজের সংহার করেন। ১০৬
সেই সময় যে অম্বিকামূৰ্তি তাহার শরীর হইতে নিঃসৃত হইয়া শিবকে দূত করিয়া শুম্ভের নিকট প্রেরণ করেন, তিনিই সমস্ত দেবগণ কর্তৃক শিবদূতীনামে গীত হইয়াছেন। ১০৭
ক্ষেমঙ্করী, শান্তা, বেদমাতা, মহোদরী, করালা, কামদা, ভগাখ্যা, ভগমালিনী, ভগোদরী, ভগারোহা, ভগজিহ্বা এবং ভগা এই দ্বাদশটী যোগিনী সৰ্ব্বদাই শিবদূতীর সঙ্গে সঙ্গে ভ্রমণ করেন। ১০৮-১০
যোগিনীগণ সখীস্বরূপ। অন্যান্য মূর্তির ন্যায় চণ্ডিকার যোগিনীও পরিকীর্তিত হইয়াছে। ১১১
হে বেতাল-ভৈরব! তোমাদিগের নিকট অঙ্গমন্ত্র সকল কীৰ্ত্তন করিলাম, এক্ষণে কামাখ্যা দেবীর মাহাত্ম্য, পূজাকল্প এবং মন্ত্রের বিষয় কীৰ্ত্তন করিব। ১১২
একষষ্টিতম অধ্যায় সমাপ্ত। ৬১