ষষ্টিতম অধ্যায় – কাত্যায়নীর আবির্ভাব
ভগবান্ বলিলেন;–রাজা-রাজারা শরৎকালে মহানবমীতে দুর্গা-মন্ত্র-তন্ত্র দ্বারা দুর্গার মহোৎসব এবং বলিদান করিবে। ১
আশ্বিন মাসের যে শুক্লপক্ষীয় অষ্টমী তিথি, তাহা দেবীর অতিশয় প্রীতিকরী ‘মহা অষ্টমী’ নামে বিখ্যাত। ২।
তৎপরবর্তী মহানবমী বলে। সেই তিথি শিবপ্রিয় এবং সর্বলোক পূজনীয়; হে ভৈরব! প্রতিবর্ষে ঐ তিথিদ্বয়ে দুর্গাপূজার বিশেষ ফল শ্রবণ কর। ৩
হে বৎস! মহাদেবী দুর্গা যেমন ভিন্ন ভিন্ন বিভূতি প্রদানের নিমিত্ত ভিন্ন ভিন্নরূপে পূজা গ্রহণ করেন; সেইরূপ রবি, কন্যারাশি গত হইলে শুক্ল প্রতিপদ হইতে আরম্ভ করিয়া ভিন্ন ভিন্ন তিথিতে ভিন্ন ভিন্ন বিভূতি দানের নিমিত্ত পূজাগ্রহণ করেন। ৪-৫
অনাহারী, নক্তাহারী, একাহারী অথবা বায়ুভোজী হইয়া প্রাতঃস্নান, ইন্দ্রিয়জয় এবং ত্ৰৈকালিক-শিবপূজা, জপ ও হোম করত কুমারিকা ভোজন করাইবে এবং ষষ্ঠীর দিবস বিল্বশাখা ও ফলে দেবীর পূজা করিবে। ৬-৭
সপ্তমীর দিবস সেই বিল্বশাখা আহরণ করিয়া পুনরায় পূজা করিবে। ৮
পুনৰ্বার অষ্টমীর দিন বিশেষ উপচারের সহিত পূজা করিবে, স্বয়ং বলি দান করিবে এবং মহানিশাতে জাগরণ করিবে। ৯
নবমীতে যথেষ্ট বলিদান করিবে, দশভুজা দেবীর ধ্যান করিবে এবং দুর্গা তন্ত্র মন্ত্র উচ্চারণপূর্বক পূজা করিবে। ১০।
দশমীতে শার্বরোৎসব-পূর্বক বিসৰ্জন করিবে। বিসৰ্জন করিয়া রাত্রে পূর্ববৎ আচরণ করিবে। যখন দুর্গা-তন্ত্র-মন্ত্রদ্বারা মহামায়ার ষোড়শভুজা মূর্তি পূজা করিবে, তৎকালিক বিশেষবিধি শ্রবণ কর। ১১-১২
কন্যাস্থ-রবিতে কৃষ্ণপক্ষীয় একাদশীর দিন উপবাসী হইয়া দ্বাদশীতে একাহার এবং পরদিবস নক্ত করিবে। ১৩
চতুর্দশীতে গীত ও বাদ্যের শব্দ করিয়া নানাবিধ নৈবেদ্য দান ও বন্দনাপূর্বক দেবীর বোধন করিবে এবং পরদিন উপবাস করিবে। ১৪
নবমী পর্যন্ত এইরূপ ব্রতের অনুষ্ঠান করিবে। ১৫
জ্যেষ্ঠা-নক্ষত্রে পূজা আরম্ভ করিয়া মূলা ও উত্তরাষাঢ়া নক্ষত্রে পূজা করিয়া শ্রবণার শেষে বিসর্জন করিবে। ১৬
যখন অষ্টাদশভুজা মূর্তির দুর্গা-তন্ত্র-মন্ত্রদ্বারা পূজা করিবে, হে ভৈরব! সে বিষয়েও বিশেষ বিধি শ্রবণ কর। ১৭
কন্যারাশির কৃষ্ণপক্ষে আর্দ্রানক্ষত্রযুক্ত নবমীর দিবাভাগে গীত ও বাদ্যের শব্দ করিয়া দেবীর বোধন করিবে। ১৮
শুক্লপক্ষের চতুর্থীতে দেবীর কেশমোচন করিয়া পঞ্চমীর দিন প্রাতঃকালেই সুগন্ধি জলদ্বারা স্নান করাইবে। ১৯
সপ্তমীর দিন পত্রিকা পূজা, অষ্টমীতে উপবাস এবং নবমীতে বিধিপূর্বক পূজা জাগরণ ও বলি প্রদান করিবে। ২০
দশমীতে ক্রীড়া-কৌতুক ও মঙ্গলাচরণ করিয়া বিসর্জন করিবে। দশমীতে নিরাজন করিলে অতিশয় বল বৃদ্ধি হয়। ২১
হে ভৈরব! যখন জগন্ময়ী মহামায়া বৈষ্ণবী দেবীকে পূজা করিবে, তাৎকালিক বিশেষ বিশেষ বিধি শ্রবণ কর। ২২
কন্যারাশিস্থিত রবিতে যে পূজনীয় শুক্লাষ্টমী তিথি, তাহার রাত্রিকালে অতিশয় বিভব বিস্তারপূর্বক পূজা করিবে। ২৩
নবমীতে যথাবিধি বলিদান করিবে এবং বিভূতির নিমিত্ত বিধিপূর্বক জপ ও হোম করিবে। ২৪
মনুষ্য অষ্ট পুষ্পিকাদ্বারা মহামায়ার পূজা করিবে। পূর্বে রামের প্রতি অনুগ্রহ এবং রাবণের বধের নিমিত্ত ব্রহ্মা রাত্রিকালে এই মহাদেবীর বোধন করিয়াছিলেন। ২৫-২৬
অনন্তর মহাদেবী প্রবোধিত হইয়া রাবণের বাস-ভূমি লঙ্কায় গমন করিয়া ছিলেন। ২৭
সেই লঙ্কা নগরে গমন করিয়া স্বয়ং অন্তর্হিত হইয়া রাম এবং রাবণকে যুদ্ধে প্রবৃত্ত করিয়াছিলেন। ২৮
ঐ যুদ্ধে রাক্ষস এবং বানরদিগের মাংসও ভক্ষণ করত রাম-রাবণের যুদ্ধ সপ্তাহ স্থায়ী করিয়াছিলেন। ২৯
সপ্তরাত্ৰ অতীত হইলে নবমীতে জগন্ময়ী মহামায়া রামের দ্বারা রাবণের বিনাশ করেন। ৩০
যে সপ্তরাত্রি দেবী আনন্দের সহিত তাহাদের দুজনের যুদ্ধক্ৰীড়া দর্শন করিয়াছিলেন, সেই সপ্তরাত্ৰ সমুদয় দেবগণ তাহাকে পূজা করিয়াছিলেন। ৩১
রাবণ নিহত হইলে, নবমীতে পিতামহ ব্রহ্মা, নিখিল দেবগণের সহিত দেবীর বিশেষ পূজা করিয়াছিলেন। ৩২
তাহার পর দশমীতে সেই দেবী ভগবতী, শার্বরোৎসবের সহিত বিসর্জিত হইয়াছিলেন। ৩৩
অনন্তর ইন্দ্রও দেব-সৈন্যের শান্তির নিমিত্ত এবং দেব-রাজ্যের বৃদ্ধির নিমিত্ত দেবসেনারও নীরাজন করিয়াছিলেন। ৩৪
স্বাতি-নক্ষত্র-যুক্ত তৃতীয়া তিথিতে রামরাবণের সেই ভয়প্রদ বাণযুদ্ধ দেখিয়া লঙ্কার পূৰ্বোত্তর দিকে অবস্থিত সুমহৎ সুরসৈন্যকে ভীত দেখিয়া দেবরাজ ইন্দ্রের বচনানুসারে তাহাদের ভয় নিবারণার্থ দেবী স্বয়ং রক্ষা করিয়াছিলেন। ৩৫-৩৬
অনন্তর শ্রবণা-যুক্ত দশমীতে শুভদায়িনী চণ্ডিকা দেবীকে বিসর্জন করিয়া ইন্দ্র, শান্তির নিমিত্ত স্বসৈন্যের নীরাজন করিয়াছিলেন। ৩৭
শচীপতি ইন্দ্র স্বসৈন্যের নীরাজনান্তে তত্রন্থিত রাম ও লক্ষণের সহিত সম্ভাষণ করিয়া দেবগণের সহিত স্বর্গে গমন করিয়াছিলেন। ৩৮
পূর্বকালে স্বায়ম্ভুব মনুর অন্তরে দেবী ভগবতী, দেবগণের হিতের নিমিত্ত দশভুজা রূপে প্রাদুর্ভূত হইয়াছিলেন এইরূপ ইতিবৃত্ত আছে। ৩৯
উহা মনুষ্যদিগের ত্রেতাযুগের আদিতে জগতের হিতের নিমিত্ত সংঘটিত হয়। পূর্বকল্পে যেরূপ ঘটিয়াছিল, প্রতিকল্পেই সেইরূপ ঘটিয়া থাকে। প্রতি কল্পেই দৈত্যদিগের নাশের নিমিত্ত দেবী স্বয়ং প্রবৃত্ত হন এবং রাবণ-রাক্ষস ও রামও প্রতি কল্পে উৎপন্ন হন। ৪০-৪১
প্রতিকল্পে এ উভয়ের সেইরূপ যুদ্ধ হয় এবং পূর্বের মত দেবতাদিগের সহিতও রামের সঙ্গ হয়। ৪২
এইরূপ হাজার হাজার রাম ও হাজার হাজার রাবণ পূৰ্বে হইয়া গিয়াছে এবং ভবিষ্যতেও হইবে; ভূত ও ভবিষ্যতে দেবীরও একইরূপ প্রবৃত্তি। ৪৩
সকল দেবগণ কল্পে কল্পে দেবীর পূজা ও স্বসৈন্যের নীরাজন করেন; অতএব মনুষ্যদিগেরও যথাবিধি দেবীর পূজা করা উচিত। ৪৪
রাজগণ, শক্তির বৃদ্ধির নিমিত্ত নিজ দিব্যালঙ্কার-ভূষিত কামিনীগণ দ্বারা নিজ নিজ সৈন্যের নীরাজন করাইবে এবং নৃত্য গীত ক্রীড়া কৌতুক ও মঙ্গল কার্য্যের অনুষ্ঠান করিবে। ৪৫-৪৬
মোদক, পিষ্টক, পেয়, অনেক প্রকার ভক্ষ্য, ভোজ্য, কুষ্মাণ্ড, নারিকেল, খর্জুর, পনস, দ্রাক্ষা, আমলক, শাণ্ডিল্য, প্লীহ, করুণ, কশেরু, ক্রমুক, মূল, লাজ, জম্বু এবং তিন্দুক আদি ফল, আর গব্য, গুড়, মাংস, মদ্য, মধু, ইক্ষুদণ্ড, শর্করা, লবলী, নারঙ্গক, ছাগল, মহিষ, মেষ, নিজের শোণিত, পক্ষী আদি পশু, নয় প্রকার মৃগ–এই সকল উপকরণ দ্বারা নিখিল জগতের ধাত্রী মহা মায়ার পূজা করিবে, এবং এত পরিমাণে বলিদান করিবে, যাহাতে মাংস ও শোণিতের কর্দম হয়। ৪৭-৫০
শত্রুর নাশ-নিমিত্ত এবং দুর্গার প্রীতি ইচ্ছা করিয়া পিষ্টকের পুতুল নির্মাণ করিয়া রাত্রে স্কন্দ ও বিশাখের পূজা করিবে। ৫১
তিল ও মাংসের সহিত আজ্য দ্বারা হোম করিবে এবং উগ্রচণ্ডাদি শুভ দায়িনী অষ্ট যোগিনীর পূজা করিবে। ৫২
চতুঃষষ্টি যোগিনী এবং কোটি যোগিনীরও পূজা করিবে। সর্বদা দেবীর সন্নিহিত শুভদায়িনী জয়ন্তী প্রভৃতি নবদুর্গারও গন্ধ পুষ্প দ্বারা পূজা করিবে, যেহেতু তাহারা দেবীর মূর্তিভেদ-মাত্র। ৫৩-৫৪
মহিষাসুরমর্দিনী দেবীর সমুদয় অস্ত্র এবং অঙ্গ ও প্রত্যঙ্গে স্থিত সমুদয় ভূষণ এবং বাহন সিংহকেও ভূতির নিমিত্ত সর্বদা পূজা করিবে। ৫৫
পূর্বকল্পে স্বায়ম্ভুব মনুর অধিকারে মনুষ্যদিগের ত্রেতাযুগের আদিতে মহিষাসুরের বিনাশ এবং জগতের নিমিত্ত যোগনিদ্রা জগদ্ধাত্রী জগন্ময়ী মহাদেবী মহামায়া-সমুদয় দেবগণকর্তৃক সংস্তুত হইয়াছিলেন। ৫৬-৫৭
অনন্তর তিনি ক্ষীরোদ সমুদ্রের উত্তরতীরে অতিবিপুল শরীর ধারণ করিয়া ষোড়শভুজারূপে আবির্ভূত হইয়া ভদ্রকালী নামে আবির্ভূত হন। ৫৮
তৎকালে তাহার বর্ণ অতসী পুষ্পের মত হইয়াছিল, কর্ণে উজ্জ্বল কাঞ্চনের কুণ্ডল ছিল এবং মস্তক জটাজূট, অর্ধচন্দ্র এবং মুকুটে ভূষিত ছিল। তাহার গলদেশে নাগহারের সহিত সুবর্ণের হার বিরাজ করিয়াছিল। ৫৯
তিনি দক্ষিণ বাহুসমূহে শূল, খড়্গ, শঙ্খ, চক্র, বাণ, শক্তি, বজ্র এবং দণ্ড ধারণ করিয়াছিলেন; তাহার দাঁতগুলি সমুজ্জ্বলরূপে বিকাশিত হইয়াছিল। ৬০-৬১
তাহার বামহস্ত-নিচয়ে খেটক, চৰ্ম্ম, চাপ, পাশ, অঙ্কুশ, ঘণ্টা, পরশু এবং মূষল শোভিত ছিল। ৬২
তিনি সিংহের উপর আরোহণ করিয়াছিলেন এবং রক্তবর্ণ নয়ন-ত্রয়ে উজ্জ্বলিত হইয়াছিলেন। সেই জগন্ময়ী পরমেশ্বরী দেবী মহিষকে বামপাদের দ্বারা আক্রমণ করিয়া শূলের দ্বারা তাহার শরীর ভেদ করিয়াছিলেন। ৬৩-৬৪
তখন দেবগণ, পরমেশ্বরীর সেই মূর্তি এবং মহিষাসুরকে নিহত দেখিয়া কিছুই বলিতে পারেন নাই অর্থাৎ বিস্ময়াবেশে স্তম্ভিত হইয়াছিলেন। ৬৫
অনন্তর সেই ঈষৎ-হাস্যনিঃসৃত-সমুজ্জ্বল-দন্তকিরণাবলি দেবী পরমেশ্বরী, ব্ৰহ্মাদি দেবগণকে বলিয়াছিলেন। ৬৬
হে সুরগণ! তোমরা সকলে জম্বুদ্বীপে হিমালয় পর্বতের নিকটবর্তী কাত্যায়নমুনির আশ্রমে গমন কর। সেই স্থানেই তোমাদিগের কাৰ্য্য সিদ্ধ হইবে, তাহাতে সংশয় নাই। ৬৭
সেই মহাদেবী এই কথা বলিয়াই সেই স্থানে অন্তর্হিত হইলেন। ৬৮
দেবগণও তাহাকে নমস্কার করিয়া বিস্ময়াবিষ্টচিত্তে কাত্যায়নমুনির আশ্রমে গমন করিয়াছিলেন। ৬৯
যাহার নিধনের জন্য আমরা জগদ্ধাত্রী জগন্ময়ী মহাদেবীর স্তব করিয়া ছিলাম; সেই মহিষাসুর আমাদের সম্মুখে নিহত হইয়াছে। ৭০
তবে কি জন্য সেই মহাদেবী আমাদিগকে কাত্যায়নের আশ্রমে যাইতে আদেশ করিলেন? আমাদের আর কি অভিলষিত কাৰ্য্য বাকী আছে? ৭১
সেই দেবগণ, পরস্পর এইরূপ বলিতে বলিতে হিমালয়ের সহিত কাত্যায়ন মুনির আশ্রমে গমন করিলেন। ৭২
সেই স্থানে ইন্দ্রের সহিত দিকপালগণ এবং ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও শিব–ইহরা দুর্গার দর্শনে অভিলাষী হইয়া প্রীতিসহকারে সেই স্থানে অবস্থান করিয়া ছিলেন। ৭৩
তাহার পর রুদ্রগণ আসিয়া মহিষাসুরের চেষ্টা এবং দেবতাদিগের পরাভব কীৰ্ত্তন করিয়াছিলেন। ৭৪
এই কথা শুনিয়া ব্রহ্মা, বিষ্ণু এবং শিব আদি দেবগণ অত্যন্ত ক্রোধযুক্ত হইয়া বলিতে লাগিলেন;-মহিষ অসুরকে ত দেবী হত করিয়াছেন; তদ্ভিন্ন অন্য আর মহিষ কে আছে? যে এই জগতের অত্যন্ত ধ্বংস করিতে প্রবৃত্ত হইয়াছে। ৭৫
তাহারা এইরূপে কোপ করিলে তাহাদের প্রত্যেকের শরীর হইতে তৎক্ষণাৎ পৃথক পৃথক্ তেজ নির্গত হইয়াছিল। ৭৬।
সেই তেজোরাশি হইতে উপজাতশরীরা দেবী কাত্যায়ন কর্তৃক প্রথমে সন্ধুক্ষিত এবং পূজিত হইয়াছিলেন বলিয়া তাহাকে কাত্যায়নী বলা হয়। ৭৭
তাহার পর সেই দশভুজা জগদ্ধাত্রী জগন্ময়ী মহাদেবী, মহিষাসুরকে নিহত করিয়াছিলেন। ৭৮
সেই মহাদেবী দেবগণ কর্তৃক সংস্তুত এবং প্রবোধিত হইয়া, আশ্বিন মাসে কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশীর দিনে প্রাদুর্ভূত হইয়াছিলেন। ৭৯
সুশোভন শুক্লপক্ষের সপ্তমীর দিবস দেবগণের তেজে সেই দেবীমূর্তি ধারণ করিয়াছিলেন। অষ্টমীতে দেবগণ নানাবিধ অলঙ্কার দ্বারা সজ্জিত করিয়া ছিলেন। ৮০
নবমীতে দেবী নানাবিধ উপহার দ্বারা পূজিভ হইয়া মহিষাসুরকে নিহত করেন এবং দশমীতে দেবগণ কর্তৃক বিসৃষ্ট হইয়া অন্তর্ধান করিলেন। ৮১
মার্কণ্ডেয় বলিলেন;–মহারাজ সগর, দেবীর এইরূপ উত্তম চরিত শ্রবণ করিয়া, সংশয় অপনোদনের নিমিত্ত পুনৰ্বার ঔর্বকে জিজ্ঞাসা করিয়াছিলেন। ৮২-৮৩
যদি মহাদেবী পশ্চাৎই মহিষাসুরকে বধ করিয়াছিলেন, তবে ভদ্রকালীরূপে যে মহিষ বধ করিয়াছিলেন উক্ত হইয়াছে, উহা কি? ৮৪
দেবগণ যখন সেই ভদ্রকালী-মূর্তি দর্শন করিয়াছিলেন, তখন মহিষকে দেবীর পাদদ্বারা আক্রান্ত এবং হৃদয়ে শুল বিদ্ধ দেখিয়াছিলেন। ৮৫
হে মুনিশ্রেষ্ঠ। আপনি আমার এই সংশয় চ্ছেদন করুন। ৮৬
ও বলিলেন;–হে মহারাজ! যেরূপে মহিষের সহিতই মহাভাগা ভদ্রকালী প্রাদুর্ভূত হইয়াছিলেন, তদ্বিষয় কীর্তন করিতেছি শ্রবণ কর। ৮৭
ঐ বীর মহিষাসুর, রাত্রে পর্বতে নিদ্রা যাইতে যাইতে অতি নিদারুণ ভয়ঙ্কর স্বপ্ন দেখিয়াছিল। ৮৮
সে স্বপ্নে দেখিল,–যেন মহামায়া ভদ্রকালী অতি ভীষণরূপে আস্য বিস্তার পূর্বক খড়্গদ্বারা তাহার শিরচ্ছেদ করিয়া তাহার রক্তপান করিয়াছেন। ৮৯
অনন্তর প্রাতঃকালে সেই দৈত্য মহিষাসুর অত্যন্ত ভীত হইয়া আপনার অনুচরবর্গের সহিত সেই দেবীরই পূজা করিয়াছিল। ৯০
অনন্তর দেবী মহিষাসুর কর্তৃক আরাধিত হইয়া ষোড়শভুজা ভদ্রকালীরূপে আবির্ভূত হন। ৯১
তাহার পর অসুর মহিষ, ভক্তিসহযোগে নম্ৰশরীরে সেই জগন্ময়ী মহামায়াকে প্রণাম করিয়া বলিয়াছিল। ৯২
হে দেবি! আমি সত্যই স্বপ্নে দেখিয়াছি, আপনি আমার শিরচ্ছেদ করিয়া রুধিরপান করিতেছেন। ৯৩
তাহাতে আমি নিশ্চয় জানিতে পারিয়াছি যে, আপনি আমার রুধিরপান করিবেন। অতএব এক্ষণে আমাকে একটি বরদান করুন। ৯৪
হে পরমেশ্বরি! আমি যে আপনার বধ্য, সে বিষয়ে কোন সংশয় নাই, আমারও তাহাতে দুঃখ নাই; কারণ নিয়তিকে কে লঙ্ঘন করিতে সমর্থ হয়?
কিন্তু আমার পিতা আমার নিমিত্তই পূর্বে আপনার সহিত শম্ভুকে আরাধনা করিয়াছিলেন, অনন্তর আমার জন্ম হয়। ৯৬
আমিও শম্ভুর আরাধনা করিয়া অভীষ্ট বরলাভ করিয়াছি। আমি তিন মন্বন্তরকাল ব্যাপিয়া নিষ্কণ্টকে শ্রেষ্ঠ অসুররাজ্য ভোগ করিয়াছি, আমার কিছুই অনুতাপ নাই। ১৭
শিষ্যের নিমিত্ত কাত্যায়নমুনি আমাকে পাপ দিয়াছেন যে, স্ত্রীজাতি তোমাকে নিহত করিবে, সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নাই। ৯৮
পূর্বে কাত্যায়নমুনির শিষ্য রৌদ্রাশ্বনামে একটি অতিশয় সাধুচরিত্র ঋষি হিমালয় পর্বতের নিকট তপস্যা করিতেছিলেন। ৯৯
আমি কৌতুক-বশে অতুলসৌন্দৰ্যশালী দিব্য স্ত্রীরূপ ধারণ করিয়া সেই ঋষিকে মোহিত করি। ঋষি, বিমূঢ় হইয়া তৎক্ষণাৎ তপস্যা হইতে বিরত হন। ১০০
কাত্যের পুত্র অর্থাৎ কাত্যায়ন ঋষি সেই স্থানের অনতিদূরে অবস্থান করিতেছিলেন। আমার সেই মায়া জানিতে পারিয়া তাহার ক্রোধানল প্রজ্বলিত হইল, তিনি শিষ্যের মঙ্গলের নিমিত্ত আমাকে শাপ দিলেন। ১০১
যেহেতু তুমি স্ত্রীরূপ ধারণ করিয়া আমার শিষ্যকে মোহিত করিয়া তপস্যাচ্যুত করিলে, সেই হেতু স্ত্রীজাতি তোমার বধসাধন করিবে। ১০২
পূৰ্বে মুনি কাত্যায়ন, এইরূপে আমাকে অভিশাপ দিয়াছিলেন। সেই শাপের ফলপ্রাপ্তির সময় উপস্থিত হইয়াছে। ১০৩
আমি দেবেন্দ্রত্ব প্রাপ্ত হইয়াছি এবং অখণ্ড ত্রিভুবনরাজ্য নিৰ্ব্বিবাদে ভোগ করিয়াছি। আমার ইহলোকে এমন কোন বাঞ্ছনীয় নাই, যাহার অপ্রাপ্তি হেতু অনুতাপ করিতে হয়। ১০৪
এই নিমিত্ত আমি তোমার আশ্রয় লইয়াছি। হে দেবি দুর্গে! তুমি পুনর্বার আমার জন্মের শেষ প্রার্থনা পূরণ কর, আমি তোমাকে বারংবার নমস্কার করি। ১০৫
দেবী বলিলেন;–হে মহাসুর। তোমার অভিলষিত বর কি, তাহা আমাকে শ্রবণ করাও। তুমি যে বর প্রার্থনা করিবে, আমি তাহাই প্রদান করিব; সে বিষয়ে কোন সংশয় নাই। ১c৬।
মহিষ বলিল;–আমি আপনার অনুগ্রহে যজ্ঞভাগ ভোগ করিতে ইচ্ছা করি। অতএব নিখিল যজ্ঞে যাহাতে আমি পূজ্য হই, সেইরূপ করুন। ১০৭
যে পর্যন্ত সূৰ্য্যদেব বর্তমান থাকিবেন, সেকাল পর্যন্ত আমি তোমার পদ সেবা ত্যাগ করিব না। যদি আমাকে বর দেওয়া আপনার উচিত বলিয়া বিবেচনা হইয়া থাকে, তবে এ বরটীও প্রদান করুন। ১০৮
দেবী বললেন;-পূৰ্বেই এক একটি করিয়া সমুদয় যজ্ঞের ভাগ দেবতা দিগের মধ্যে বন্টিত হইয়াছে। যজ্ঞের এমন একটী ভাগ নাই, যাহা এক্ষণে আমি তোমাকে দিতে পারি। ১০৯
কিন্তু হে মহিষাসুর! আমাকর্তৃক যুদ্ধে নিহত হইয়াও তুমি আমার চরণ কোন কালে ত্যাগ করিবে না, এ বিষয়ে কোন সংশয় নাই। ১১০
আর হে দানব! যেখানে যেখানে আমার পূজা হইবে, সেই সেই স্থানেই তোমার এই শরীরের পূজা হইবে, সে বিষয়েও কোন সন্দেহ নাই। ১১১
দেবীর এই বাক্য শুনিয়া মহিষাসুর, বর লাভে অত্যন্ত হৃষ্ট এবং প্রসন্নবদন হইয়া বলিল। ১১২
হে উগ্রচণ্ডে! ভদ্রকালি! দেবি! দুর্গে! আপনাকে নমস্কার করি। আপনার মূর্তি অনেক; এই জগতের সমুদয় বস্তুই আপনার মূর্তিভেদ। ১১৩
অতএব হে পরমেশ্বরি! আমি যজ্ঞে আপনার কোন্ কোন্ মূর্তির সহিত পূজ্য হইব। যদি আমার উপর আপনার কৃপা হইয়া থাকে, তবে ইহা কীর্তন করুন। ১১৪।
দেবী বলিলেন;–হে মহিষাসুর! তুমি আমার যে নামগুলির কীর্তন করিলে, তুমি ঐ সকল মূর্তিতে আমার পাদলগ্ন পূজ্য হইবে। ১১৫
উগ্রচণ্ডা–এই মূৰ্ত্তি; ভদ্রকালী মূৰ্ত্তি–যে মূর্তি ধারণ করিয়া আমি তোমাকে দ্বিতীয় সৃষ্টিতে নিহত করি; এবং দুর্গা বলিয়া আমার যে মূর্তি কীৰ্তিত হয়,–এই তিন মূর্তিতে তুমি সর্বদা আমার পাদলগ্ন হইয়া মনুষ্য, দেব এবং রাক্ষসগণেরও পূজ্য হইবে। ১১৬-১১৭
আদি সৃষ্টিতে আমি উগ্রচণ্ডা রূপে তোমাকে নিহত করিয়াছি। দ্বিতীয় সৃষ্টিতে আমি ভদ্রকালীরূপে তোমাকে বিনাশ করি। ১১৮
এক্ষণে দুর্গারূপে অনুচরবর্গের সহিত তোমাকে বধ করিব। কিন্তু পূর্ববর্তিতে আমি নিজ চরণতলে তোমাকে গ্রহণ করি নাই। এক্ষণে তোমার বর প্রার্থনা অনুসারে ঐ উভয় মূর্তিতেও তোমাকে গ্রহণ করিলাম এবং তোমার যজ্ঞভাগের উপভোগের নিমিত্ত দুর্গা মূর্তিতেও তোমাকে গ্রহণ করিব। ১১৯-১২০
মহামায়া এই সকল কথা বলিয়া তৎকালে মহিষাসুরকে নিজের উগ্রচণ্ডা মূর্তি দর্শন করাইয়াছিলেন। ১২১
যাদৃশ ষোড়শভুজা মূর্তি ভদ্রকালী নামে বিখ্যাত, তাদৃশ মূর্তিতে আর দুইটী বাহু, অধিক যুক্ত হইলে উগ্রচণ্ডা মূর্তি হয়। ঐ অতিরিক্ত বাহুদ্বয়ের মধ্যে দক্ষিণদিকের হস্তে একটী গদা ও বামদিকের হস্তে সুরা পানপাত্র এবং মন্তকে মুণ্ডমালা ধৃত হইয়াছে। ১২২-২৩
ঐ মূর্তির প্রভা দলিত-অঞ্জন-সদৃশ; মূর্তি দেখিতে প্রচণ্ড এবং সিংহবাহিনী, নেত্র রক্তবর্ণ, শরীরের আয়তন অতি বৃহৎ এবং অষ্টাদশ বাহুযুক্ত। ১২৪
মহিষ, ভদ্রকালী দেবীর সেই উগ্রচণ্ডা মূর্তি দর্শন করিয়া বিস্ময়াবিষ্টচিত্তে তৎক্ষণাৎ প্রণাম করিল। ১২৫
অনন্তর পূর্বে যেমন চরণদ্বারা আক্রমণ করিয়া মহিষাসুরকে বধ করিয়া ছিলেন, দেবী তৎকালেও নিজ চরণতলে তাহাকে সেইরূপে গ্রহণ করিলেন। ১২৬
তখন হৃদয় শূল দ্বারা ভিন্ন মহিষ-রূপ ছিন্নমস্তক, দেবীকর্তৃক কেশে গৃহীত এবং মহিষ শরীর হইতে নির্গত-অন্ত্র-দ্বারা ভূষিত, রক্তস্রাবকারী এবং অতি বৃহৎ আয়তন মহিষ আপনার পূর্ব শরীরকে এইরূপে অবস্থিত দেখিয়া ভয়ে ভীত হইয়া যুগপৎ শোক এবং মোহ প্রাপ্ত হইল। ১২৭-১২৮।
অনন্তর সেই দানব মহিষাসুর আপনাকে সুস্থির করিয়া এবং দেবীকে প্রণাম করিয়া গদগদস্বরে বলিতে লাগিল! ১২৯
হে দেবি! যদি আমার উপর প্রসন্ন হইয়াছেন, এবং আমার নিমিত্ত যজ্ঞ ভাগেরও কল্পনা করিয়াছেন, তবে যেন আমি পুনরায় আর এরূপ না হই। ১৩০
হে দেবি! যাহাতে আমি আর দেবগণের সহিত কোনরূপ বৈর উৎপাদন করি, আর যাহাতে পুনরায় আমার আর জন্ম না হয়, তাহা করুন। ১৩১
দেবী বলিলেন, তুমি আমার আরাধনা করিয়াছ, আমি তোমাকে বরদান করিয়াছি তুমি আমারই বধ্য, সে বিষয়ে কোন বিচার করিও না। ১৩২
তুমি যে প্রার্থনা করিয়াছ, দেবগণের সহিত তোমার আর বিরোধ না হউক–তাহাই হইবে। ১৩৩।
হে দানব! আমার পাদতল-সংস্পর্শে তোমার শরীর যজ্ঞভাগ গ্রহণের নিমিত্ত বিশীর্ণ হইবে না। ১৩৪
হে মহাসুর! মহাদেবের পাদসংস্পর্শে তোমার প্রাণসকল কেবল তোমার জীবাত্মার সহিত অবস্থান করিবে। ১৩৫
হে মহিষাসুর! একশত অষ্টাধিক ত্রিশ সহস্র কোটি কল্প পৰ্যন্ত তোমার পুনৰ্বার জন্ম হইবে না। ১৩৬
দেবী মহিষাসুরকে এইরূপ বর প্রদান করিলে, সে মস্তক অবনত করিয়া তাহাকে প্রণাম করিল এবং দেবীও অন্তর্হিত হইলেন। ১৩৭
হে নৃপ! মহিষও নিজস্থানে গমন করিল, কিন্তু মায়াদ্বারা মোহিত হইয়া পুনৰ্বার পূর্বের মত অসুরভাব প্রাপ্ত হইল। ১৩৮
সগর বলিলেন, ভগবতী মহামায়া লোকের বিভূতির নিমিত্ত অনেক দৈত্যকে নিহত করিয়াছেন, কিন্তু কাহাকেও তিনি গ্রহণ করেন নাই এবং কাহাকেও তিনি বর দান করেন নাই। ১৩৯
হে দ্বিজোত্তম! কি কারণে দেবীকর্তৃক এই মহিষাসুর গৃহীত হইল এবং কেনই বা তিনি তাহাকে বরদান করিলেন, ইহা আমার নিকট সম্যকরূপে কীর্তন করুন। ১৪০
ঔর্ব বলিলেন, রম্ভনামে দৈত্য বহুকাল তপশ্চরণ করিয়া মহাদেবেরে আরাধনা করে, মহাদেব তাহার তপস্যায় প্রীতি-লাভ করেন। ১৪১
অনন্তর মহাদেব সন্তুষ্ট হইয়া তাহার প্রত্যক্ষ হইয়া বলিলেন; হে রম্ভ। আমি তোমার উপর প্রীত হইয়াছি; তুমি অভীপ্সিত বর গ্রহণ কর। ১৪২
এইরূপে উক্ত হইয়া রম্ভ অসুর মহাদেবকে বলিল, হে মহাদেব। আমি অপুত্র, আপনার যদি আমার উপর অনুগ্রহ হইয়া থাকে, আমার তিন জন্মে আপনি আমার পুত্র হউন এবং আমার পুত্র হইয়া সকল প্রাণীর অবধ্য, দেব গণের জেতা, চিরায়ু, যশস্বী, লক্ষ্মীবান্ এবং সত্য প্রতিজ্ঞ হউন। ১৪৩-৪৪
দৈত্যকর্তৃক এইরূপে উক্ত হইয়া মহাদেব তাহাকে বলিলেন; তোমার এই বাঞ্ছিত সিদ্ধ হউক, আমি তোমার পুত্র হইব। ১৪৫
এই কথা বলিয়া মহাদেব সেই স্থানে অন্তর্হিত হইলেন এবং রম্ভাসুরও হর্ষোৎফুল্ল-লোচনে আপনার স্থানে গমন করিল। ১৪৬
পথে যাইতে যাইতে রম্ভ একটি তিন বৎসর-বয়স্ক ঋতুমতী বিচিত্রবর্ণা সুন্দরী মহিষীকে দেখিতে পাইল। ১৪৭
সেই মহিষীকে দেখিয়া সে কামে মোহিত হইয়া তাহাকে হস্তদ্বারা ধারণ করিয়া তাহার সহিতই রতিক্রীড়া করিল। ১৪৮
এইরূপে তাহাদের উভয়ের সুরত সম্পূর্ণ হইলে রম্ভের তেজে মহিষী গর্ভ ধারণ করিল এবং সেই গর্ভ হইতেই মহিষাসুরের জন্ম হয়। ১৪৯
সেই মহিষীর সঙ্গমেই মহাদেব, রম্ভের পুত্ররূপে জন্মগ্রহণ করেন। এবং জন্ম হইতে মহিষাসুর শুক্লপক্ষের চন্দ্রের মত প্রতিদিন বৃদ্ধি প্রাপ্ত হইয়াছিল। ১৫০
সেই মহিষাসুরকে শিষ্যানুগ্রহকারী কাত্যায়ন মুনি শিষ্যের প্রতি অত্যাচার করায় শাপ দিয়াছিলেন। ১৫১
মহিষাসুর কাত্যায়ন-কর্তৃক শপ্ত দেখিয়া চন্দ্রশেখর মহাদেব, চণ্ডিকাকে প্রণয়পূর্বক বলিয়াছিলেন। ১৫২
হে দেবি জগন্ময়ি! কাত্যায়ন-মুনি, মহিষাসুরকে এই বলিয়া শাপ দিয়াছেন যে স্ত্রীজাতি তোমার বিনাশ-কর্ত্রী হইবে। ১৫৩
ঋষির বাক্য যে সফল হইবে, সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নাই। হে জগন্ময় দেবি! যোগযুক্ত মহিষ শরীর আমারই; উহা বরাবর পূর্বেও তোমা কর্তৃক হত হইয়াছে এবং পরেও হত হইবে। ১৫৪
এক্ষণে ভগবান্ হরি, একা সিংহরূপে তোমাকে বহন করিতে অক্ষম, আমার এই মহিষ-শরীরই তোমার বাহক হইবে। ১৫৫
পূর্বকালে মহাদেব, দেবীর নিকট এইরূপ প্রার্থনা করিয়াছিলেন, তাহাতেই দেবী মহিষাসুররূপী মহাদেবকে গ্রহণ করিয়াছিলেন। ১৫৬
ভগবান হর, তিন জন্মে রম্ভাসুরের পুত্র হইয়া জন্ম গ্রহণ করেন। রম্ভাসুর ঐ তিন বার রম্ভ নামেই জন্মগ্রহণ করে। ১৫৭
রম্ভাসুর জন্মত্ৰয়েই অতি নিদারুণ তপস্যা করিয়া পুত্রের নিমিত্ত ভগবান শম্ভুর আরাধনা করে এবং শম্ভুও তাহাকে পূর্ববৎ বর প্রদান করেন। ১৫৮
পূর্বের মত সুরতোৎসুক হইয়া রম্ভ, মহিষীর অনুসরণ করে এবং মহিষীর গর্ভে মহিষাসুর দৈত্যের জন্ম হয়। ১৫৮
প্রতি জন্মেই মহিষাসুরকে ভগবান কাত্যায়ন-মুনি শাপ প্রদান করেন; কারণ, পূর্ব এবং পরজন্মে মহিষেরও তাহার শিষ্যকে ভুলাইবার প্রবৃত্তি হয়। ১৫৯
কল্পে কল্পে তৃতীয় জন্মে মহিষও দেবীর পূজা করিবার বর প্রার্থনা করে এবং অভিলষিত বর প্রাপ্ত হয়। ১৬০
“আর যেন ইহলোকে আমার জন্ম না হয়” এইরূপ বর প্রার্থনা করে। ১৬১
হে নৃপ! সেই জন্য ঐ অসুর দেবীর পদতলে সংলগ্ন হইয়া আছে। তাহার আর অনেক কল্পান্ত অবধি জন্ম হইবে না। ১৬২
এইরূপ দেবীর প্রসাদে মহাদেবাঙ্গ-সম্ভব মহিষাসুর নিত্য উৎকৃষ্ট প্রতিপত্তি লাভ করিয়াছে। ১৬৩
হে রাজন্! সেই মহিষাসুর দেবীর পদতল প্রাপ্ত হইয়া যেরূপ অদ্যাপি আনন্দ ভোগ করিতেছে, তাহা তোমার নিকট কীর্তিত হইল। হে নৃপোত্তম। এক্ষণে তোমার নিকট প্রস্তুত বিষয়ের কীৰ্ত্তন করিতেছি শ্রবণ কর। ১৬৪
মার্কণ্ডেয় বলিলেন, ঔৰ্বের সহিত মিলিত হইয়া মহারাজ সগর যেরূপে দেবী ও মহিষের সংবাদ ভুবনে প্রচার করিয়াছিলেন, তাহা তোমাদিগের নিকট কীৰ্তিত হইল। ১৬৫
পুনর্বার মহর্ষি ঔর্ব, মহারাজ সগরের নিকট যে কথার উল্লেখ করিয়াছিলেন, সেই অতি গোপনীয় কথা বলিতেছি, হে মুনি-শ্রেষ্ঠগণ! আপনারা শ্রবণ করুন। ১৬৬
ষষ্টিতম অধ্যায় সমাপ্ত। ৬০