সমস্ত সকালটাই সে কেমন ‘থম্ব’ অর্থাৎ অসাড় হয়ে বসে রইল। সমস্ত পাড়াটা এখনও নিঝুম। বাসি ভজো অর্থাৎ ভাঁজোর পরদিন এমন নিঝুম কোনো কালে হয় না। কিন্তু কাল রাত্রে ওই। রমণের ঘরের ভিজে চালে আগুন লাগায় পাড়ার লোক ভয়ে যেন অভিভূত হয়ে পড়েছে। মদের নেশাকে যতক্ষণ আমোদের মাতন দিয়ে ঠেকিয়ে রাখা যায় ততক্ষণ আমোদে বেশ মেতে থাকে। কাহারেরা, কিন্তু মাতন বন্ধ হলেই অচেতন হয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। মদ খেয়ে পালকি কাঁধে চলে দশ ক্রোশপালকি কাধ থেকে নামিয়ে গামছা পেতে শুলেই আসে মরণ-ঘুম।
পাড়ার সকলেই প্রায় সেই কাণ্ডের পর ঘুমিয়ে পড়েছে। বনওয়ারীর চোখের উপর এখনও স্বপ্নের মত ভাসছে অন্ধকারে রাত্রির মধ্যে রমণের চালের রক্তরাঙা দগদগে আগুন। আর কানের পাশে বাজছে নিজের কণ্ঠস্বরসাবোধানসাবোধান!
তারপর মনে পড়ছে, সে গিয়েছিল বাবাঠাকুরের থানের দিকে—সেই গভীর রাত্রে। স্পষ্ট মনে পড়ছে, কে যেন তাকে ঘাড়ে ধরে নিয়ে গিয়েছিল।
বাবাঠাকুর বললেন সাবোধান।
বনওয়ারী বলেছিল বাবাকে-ভরা কলি বাবা, একালে মানুষকে মানুষ মানে না। তুমি নিজে মাহাত্ম্য দেখাও বাবা। হাক মার বাবা। বাঁচিয়ে তোল তোমার বাহনকে, তাকে বল বাবা, আকাশে তুলুক ফণা করালীর, এই পাপ করালীর কোঠাঘরের মাথা নিশ্বেসে জ্বালিয়ে দিক বাবা, আর জ্বালিয়ে দাও পরমের ঘর, ওই ঘরে আছে সর্বনাশী কালোবউয়ের প্রেতাত্মা।
বাবাঠাকুর বলেছেন—হবে হবে। একে একে হবে।
কিন্তু পরমের ঘর না জ্বালিয়ে রমণের ঘর জ্বালালে কেন বাবাঠাকুর?
গরুগুলি ডাকতে শুরু করেছে। মায়েরা ডাকছে, ছায়েরা সাড়া দিচ্ছে, মায়ের স্তনে দুধ। জমে উঠেছে, বাটগুলি টনটন করছে, মায়েরা তাই ডাকছে। অথবা বাচ্চাগুলির ক্ষিদে পেয়েছে—তারা ডাকছে, মায়েরা সাড়া দিচ্ছে। বনওয়ারী এই ডাকে সচেতন হয়ে উঠল। টলতে টলতেই উঠে দাঁড়াল।
মাতব্বরের দায় অনেক। পাড়াকে জাগাতে হবে। ভজো সুন্দরী শালুক ফুলের মালা গলায়। সিঁদুরের টিপ পরে পায়ে মল বাজিয়ে কোপাইয়ের জলের তলা দিয়ে স্বস্থানে গেলেন, কাহারপাড়ার লোকের আর তো শুয়ে থাকলে চলবে না, উঠতে হবে। ঘর আছে, দোর আছে, গরু বাছুর ছাগল ভেড়া হাঁস মুরগি আছে, ঘরদোর নিকুতে হবে, গরুর দুধ দুইতে হবে, ছাগল ভেড়া হাঁস মুরগি ঘর থেকে ছেড়ে দিতে হবে। দুধের যোগান দিয়ে আসতে হবে চন্ননপুরে বাবু মহাশয়দের বাড়িতে। মাঠে সবুজবরন ধান ডাক দিচ্ছে—আমার আশেপাশে আগাছা জমেছে, তুলে দাও, নিড়িয়ে দাও। জাঙলের সদ্গোপ মনিব মহাশয়েরা রাগে দাঁত কিস-কিস করছেন। ভাদ্র মাসে এই ভজো পরবের উপর তাদের ভয়ানক রাগ; চাষের সময় ঢোল বাজিয়ে মদ খেয়ে ধেই ধেই করে নেচে গোটা একটা দিন কামাই তারা কোনোমতেই সইতে পারেন না। একদিন গোটা কামাই গিয়েছে, আবার আজ কামাই হলে আর রক্ষে থাকবে না। মারধর গালমন্দকে তত ভয় করে না কাহারেরা, ভয় হল পেটের, মনিব যদি ধান ‘বাড়ি’ অর্থাৎ ধার দেওয়া বন্ধ করেন, তবে সর্বনাশ হবে!
সে প্রথমেই ডাকল গোপালীকে।বড়কী, ওঠ-ওঠ বড়কী।
গোপালীর তবু কোনো সাড়া নাই। একেবারে বেশ হয়ে গিয়েছে। কি বিপদ! গাই দুইতে হবে, গরু ছাড়তে হবে। তার নিজের অনেক কাজ, সায়েবডাঙার জমিতে গিয়ে এবার পড়তেই হবে, নইলে আর নিড়ান দেওয়া হবে না। একে ভাঙা মাঠ, তার উপর নতুন জমি, জল শুকুচ্ছে হু-হু করে। আকাশের মেঘ এবার ধরবে। ভাদ্র মাসে ইন্দ্ররাজা পনের দিন দেন চাষীকে অর্থাৎ রিমঝিমি জল দেন, আর পনের দিন দেন চর্মকারকে অর্থাৎ পনের দিন দেন কাঠফাটা রোদ, সেই রোদে তারা বর্ষাকালে সংগ্রহ করা চামড়া শুকিয়ে নেয়। রোদ উঠলে দিন পনের-কুড়ি ভীষণ রোদ হবে। সায়েবডাঙার জল আগে শুকুবে, তখন আর আগাছা টেনে তুলবার উপায় থাকবে না। বনওয়ারীকে সায়েবডাঙায় যেতেই হবে।
বনওয়ারী এবার এগিয়ে এসে গোপালীর গায়ে ঠেলা দিয়ে ডাকলে—বড় কী?
গায়ে হাত দিয়ে সে চমকে উঠল ইস, গা পুড়ে যাচ্ছে যে! এত উত্তাপ যে মনে হয়, গায়ে ধান পড়লে ফুটে খই হয়ে যাবে।
বনওয়ারী ডালে-বড়কী! গোপালী।
গোপালী রক্তরাঙা চোখ মেললে—অ্যাঁ! তারপর সে হঠাৎ বলে উঠল—সাবোধান! শুনে চমকে উঠল বনওয়ারী। সে বললে—কি বলছ? গোপালী ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রইল তার দিকে।
বনওয়ারী আবার বললেজ্বর হছে। উঠে ঘরে শো। সুবাসী! সুবাসী।
সুবাসী ওদিকের ঘর থেকে বেরিয়ে এল কাপড় ছেড়ে।।–কি?
–ধর, গোপালীর বেজায় জ্বর।
—জ্বর! সুবাসী মুখ বেঁকিয়ে বললে হবে না, যে মদ খাওয়ার ধুম! পাগলাপিরীত—এমনি বটে।
বনওয়ারী ধমক দিল তাকে।—যা বলছি তাই শো! ধরঘরে শোয়ায়ে দিয়ে দুধ আজ তুই দুয়ে ফেল। অমনকাকাকে বল—গরু মাঠে নিয়ে যাক।
-–উঁ-উঁ! তোর গায়ে বাস উঠছে কিসের? আঁ? গোপালীকে শুইয়ে দিয়েই বনওয়ারী জিজ্ঞাসা করলে।
সুবাসী বললে–গন্ধ কিসের উঠবে! মরণ! মদের গন্ধ উঠছে নিজের শরীর থেকে।
–না, মদের গন্ধ লয়। সুবাস উঠছে।
—তুমি ক্ষেপেছ?
–না।
–হ্যাঁ। তুমি ক্ষেপেছ! কাল এতে কি করেছ মনে আছে? না পেলে ওই করে লোকে, না এমুনি বলে—সুবাস উঠছে তোর গা থেকে?
স্থির দৃষ্টিতে চেয়ে রইল বনওয়ারী সুবাসীর মুখের দিকে।
সুবাসী বললে—কাল এতে তুমি অমনকাকার ঘর পুড়িয়ে দিলে?
চমকে উঠল বনওয়ারী।
–জয় বাবাঠাকুর জয় বাবাঠাকুর—কালোবউ, অপরাধ নিয়ে না, বাবাঠাকুরের হুকুম।–বলে বিড়বিড় করে বকছিলে, সব শুনেছি।
বনওয়ারীর চোখে অদ্ভুত দৃষ্টি ফুটে উঠল। স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল সে সুবাসীর দিকে, মনে হচ্ছিল, চোখ দুটো তার ঠিকরে বেরিয়ে আসবে।
সুবাসী ভয়ে পিছিয়ে গেল।
বনওয়ারী ঘাড় নাড়তে লাগল–না না না।
ঘরের মধ্যে কাতরাচ্ছিল গোপালী-বিড়বিড় করে বকছে জ্বরের ঘোরে।
সুবাসী বললে—যাও, যেখানে যাবে যাও। ভয় নাই। হাসতে হাসতে সে সতীনের ঘরে গিয়ে ঢুকল।
বনওয়ারীর মনে হল, আবার যেন বাবাঠাকুর তার ঘাড়ে ভর করতে চাচ্ছেন। হাত-পা কাঁপছে, কপালে ঘাম দেখা দিচ্ছে, চিৎকার করতে ইচ্ছা হচ্ছে সাবোধান, সাবোধান। বনওয়ারী ধীরে ধীরে নিজেকে সামলে নিলে, তারপর চলল পাড়ার ভিতর। কিন্তু সুবাসটা। কিসের?
ভাঁজোতলায় পাগল একলা বসে বায়েন ভাইয়ের ঢোলখানা নিয়ে কাঠির বদলে আঙুলের টোকা দিয়ে বাজিয়ে গুনগুন করে গান করছে। বায়েনটা গাছতলায় পড়ে আছে। এখানে ওখানে শুয়ে অকাতরে ঘুমাচ্ছে কাহার পুরুষেরা। মেয়েরা ঘুমাচ্ছে ঘরের দাওয়ায়। মেয়েদের মধ্যে নয়ানের মা জেগে বসে রয়েছে দাওয়ার খুঁটিতে ঠেস দিয়ে। এখনও সে সমানে গাল দিয়েই চলেছে—হে বাবাঠাকুর! তোমার বাহনকে মারলে যারা, তাদের বাড়বাড়ন্ত কেন বাবা? এ কি তোমার বিচার! একবার ক্ষেপে ওঠ বাবা! গায়ের মধ্যে কোঠাঘরের মটকায় আগুন জ্বালো বাবা!
মধ্যে মধ্যে বনওয়ারীর ইচ্ছে হয়, এই মেয়েটার টুটি দুই হাতে টিপে ধরে তাকে চুপ করিয়ে দেয়। শুধু এই মেয়েটি সম্পর্কেই নয়, ঝগড়াটে মেয়েদের সম্বন্ধেই তার এই ইচ্ছে হয়। কিন্তু আজ সে ইচ্ছে হল না। করালীকে অভিসম্পাত করছে করুক। ওই জন্যই তাকে সে ক্ষমা করলে।
***
হাঁসুলী বাঁকের উপকথায় যা কিছু হঠাৎ ঘটে, তাই দৈব। দেবতার রোষ বিনা অপরাধে হয়। না—এই কথা শাস্ত্রে আছে, সেই কথাই তারা বিশ্বাস করে। দেবতাদের রোষ হলে জানতে হবে, অপরাধ হয়েছে, সে তুমি জেনেই করে থাক আর অজান্তেই করে থাক। আবার সঙ্গে সঙ্গেই এ কথাও বিশ্বাস করে—‘কে করলে ব্ৰহ্মহত্যে কার প্রাণ যায়!’
গোপালীবালা ওই অসুখে হঠাৎ তিন দিনের দিন মারা গেল। ওই কথাগুলির সবগুলিই বললে লোকে। সকলকেই বললে হঠাৎ মিত্যু আর এমন ‘সাবোধান সাবোধান করে চেঁচাতে চেঁচাতে মিত্যু যখন, তখন দেবরোষ! দেবরোষের সাক্ষাৎ প্রমাণ–অভদ্রা বর্ষাকালে ভাঁজোর রাত্রে যে ঘরে মানুষ নাই, সেই ঘরের চাল জ্বলে ওঠা। বাবাঠাকুরের ক্রোধ হয়েছে। কিন্তু সে ক্ৰোধ গোপালীর উপর পড়ল কেন? কেউ বললে যখন পড়েছে, তখন নিশ্চয় অপরাধ আছে। বৈকি! কেউ বললে—বনওয়ারীর অপরাধ কেউ দিতে পারবে না। অপরাধ আর কারুর।
নয়ানের মা শুধু কাকে যেন বলছেনয়ানের ঘর ভেঙে পাখীর সঙ্গে করালীর বিয়ে দেওয়া অধৰ্ম্ম লয়, অপরাধ লয়? একশোবার, হাজারবার অপরাধ। তাই দিলেন বাবাঠাকুর ওরও পাতানো ঘর ভেঙে। এ নিশ্চয়, এ নিচ্চয়।
কিন্তু ঘর ভাঙল কই! গোপালী গেল, সুবাসী আছে। বনওয়ারীর দুঃখ অল্পস্বল্প হবে, কিন্তু দুই সতীনের হাঙ্গামা থেকে তো বাঁচল। অনেক ভেবেচিন্তে তারা বললে—সুবাসীর কপাল, চার চৌকস সুখের কপাল।
নয়ানের মা তার উত্তরে বলেছে—এসব আমি মানি না। আমি যা বলছি তাই ঠিক। রাবণের মা নেকষার মত বসে আছি আমি বেটার মাথা খেয়ে, আমি যে দেখতি পেছি সব। এই তো কলির পেথম সনজে। এই তো আরম্ভ। গোপালী বউ ছিল ভাগ্যবতী, তাই সে আগেভাগে ড্যাঙডেঙিয়ে চলে গেল। সাবোেধান সাবোধান করে সে শেষকাল পর্যন্ত চেঁচিয়ে গেল কেনে তবে? বাবার বাহনকে মেরেছে যে তার সাজা হবে না? পাড়ার মাতব্বর তাকে সাজা দিলে না, মাতব্বরের সাজা হবে না?
হাঁসুলী বাঁকের উপকথায় সবচেয়ে বুড়ি হল সুচাঁদ। করালী আর পাখীর জন্য বসনসুচাঁদের এখন বনওয়ারীর সঙ্গে ঝগড়া নয়; বনওয়ারী পাড়ার মাতব্বর, তার সঙ্গে ঝগড়া করে কাহারপাড়ায় কে বাস করতে পারে? করালী যে করালী, সে নাকি পল্টনী পোশাক পরে জুতো পায়ে খটমট করে বেড়ায় মাথায় বেঁকিয়ে টুপি পরে, পকেটভরা যার রোজগার, সে পারলে বাস করতে এখানে? ঘরখানা আছে, মাঝে মাঝে আসে, দু দণ্ড থাকে, পরবে পার্বণে এক আধদিন এসে থেকে যায়, তাকে কি বাস করা বলে? বাস করে না বনওয়ারীর ভয়ে। সুতরাং বনওয়ারীর সঙ্গে পুরো ঝগড়া বসন-সুচাঁদের নাই। বনওয়ারীও তা করে না, মাতব্বরেরও একটা ধর্ম আছে, সে তা লঙ্ঘন করে না। তবুও মনের মিল নাই। আর প্রতি কাজে বনওয়ারী সুষ্ঠাদের পরামর্শ নেয় না। সুদও আসে না আগেকার মত হাঁকডাক ছেড়ে প্রতিটি কাজে। বলে না—তু তো কালকের ছোঁড়া রে, আমার বুকে দুধ ছিল তাই পরানে বেঁচেছিল। আজ কিন্তু সুচাঁদ-বসন দূরে থাকতে পারলে না, সুচাঁদই সর্বাগ্রে ছুটে এল বুক চাপড়ে কাদবার জন্য। সে কাদলে বুক ভাসিয়ে, বলল কিসের পাপ, কিসের অপরাধ! কিসের শাপ, কিসের শাপান্ত রে! পুণ্যবতী ভাগ্যবতী সিথের সিঁদুর নিয়ে ভরা ভর্তি ভাদর মাসে ড্যাঙড্যাঙিয়ে চলে গেল রে! হাসতে হাসতে চলে গেল রে! ছ মাস সতীন-কাটার দুখ ভোগ করলে না রে! আর আমি পড়ে অইলাম রে!
বনওয়ারী চুপ করে বসে শুনছিল। কারুর কোনো কথাই সে অবিশ্বাস করতে পারছিল না। সবই মেনেই নিচ্ছে। নয়ানের মায়ের কথা গভীরভাবেই তার মনকে আচ্ছন্ন করেছিল। সত্যই তো, অপরাধ যদি না থাকবে, তবে এমনভাবে মরল কেন গোপালীবউ? ভাদ্ৰ আশ্বিন মাসে পিত্তি পড়ে, অম্বল হয়, জ্বরে পড়ে কাহারপাড়ার লোকেরা। বৈদ্যেরা বলে পুরাতন জ্বর; ডাক্তারে বলে—‘ম্যালেয়ারী’। কম্প দিয়ে জ্বর আসে, গলগল করে পিত্তি বমি করে, ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ে, আবার আসে। ‘কুনিয়ান’ খায়, পাঁচ দিন সাত দিন পর পথ্য পায়, বিছানা ছেড়ে ওঠে, আবার পনেরবিশ দিন পর পড়ে। এ কিন্তু তা নয়। জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে বিকার। বিকার নয়, বাবাঠাকুরের আদেশ–‘সাবধান সাবোেধান’ বলে চিৎকার করলে শেষ পর্যন্ত। বনওয়ারীর মনে পড়ে, ভঁজোর রাত্রের সেই কথা ‘মন্দ স্বপনের কথার মত। সমস্ত শরীর শিউরে ওঠে। সঙ্গে সঙ্গে যেন মনে পড়ে সুবাসীর কথা। রাগে সর্বাঙ্গ রিরি করে। কিন্তু ভয়ে কিছু বলতে পারে না।
আবার সুচাঁদ যখন কেঁদে বলে পুণ্যবতী ভাগ্যবতী! তখন তাও সে মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে; সত্যই তো, ড্যাঙড্যাঙ করে চলে গেল! কপালে এক কপাল সিঁদুর, পায়ে আলতা দিলে, তার সবচেয়ে ভাল কাপড়খানি পরে চলে যাচ্ছে গোপালীবউ; চারিদিক ভরাভর্তি ভদ্রের শেষ আকাশে রোদ ঝলমল করছে, গোটা হাঁসুলী বাঁকের মাঠে সবুজবরন ধান দলমল করছে, বাঁশবনের পাতায়, গাছপালার ডালে পল্লবে সবুজ থমথম করছে, রোদের ছটায় ঝলক মারছে, পুকুরগুলিতে পদ্মপাতা পদ্মফুল ফুটেছে, আঙিনাতে স্থলপদ্ম ফুটেছে, শিউলি ফুল ঝরছে শিউলিতলায়, কোপাইয়ের জলের রঙ ফিরছে-লাল জল কাচকরন হয়ে এসেছে। হাঁসুলীর ব্যাক সবুজ হয়েছে, তাই সোনার হাঁসুলী রুপোর বরন নিচ্ছে শোভার জন্যে। নদীর কূলে কূলে কাশ ‘ফুলিয়েছে’ অর্থাৎ ফুল ফুটেছে। জাঙলে চন্ননপুরে বোধনের ঢাক বেজেছে। লক্ষ্মী সরস্বতী কার্তিক গণেশ সিংহ অসুর সঙ্গে নিয়ে মা-দুর্গা আসছেন। পুজোর উ্যুগ চলেছে, খামার পরিষ্কার হচ্ছে; সঙ্গে সঙ্গে আউশ ধান উঠবে-আউশের সবুজ রঙ ফিকে হয়ে ‘লালি’ অর্থাৎ লালচে আভা ধরেছে। এই ভরাভর্তি হাঁসুলী বাঁকে স্বামীকে রেখে সতীনকে ফাঁকি দিয়ে চলে গেল। লোকে ধন্য ধন্য করবে বৈকি।
পাগল প্রহ্লাদ রতন—এরাই সকলে শ্মশানে নিয়ে যাবার উদ্যোগ করলে। বসন এগিয়ে এসে। আলতা পরিয়ে দিলে। বললে—তুমি ভাগ্যিমানী। আঃ, আমার পেরমায় নিয়ে যদি তুমি বাঁচতে আর আমি যেতাম।
বনওয়ারীর ভারি ভাল লাগল বসনের এ কথাগুলি। বসন বড় ভাল মেয়ে। কিন্তু করালীর জন্য বসন পর হয়ে গেল।
নসুবালাও এসেছিল। সেও মেয়েদের দলে মিশে কাঁদছে;আঃ আঃ হায় হায় গো! গোপালীকাকি আমার মাটির মানুষ, সোনার পিতিমে গো! মুখে ঝরত আমিত্তি, কথা শুনে পরান জুড়াত, হাতে ছিল কোপাইয়ের ঠাণ্ডা পরশ, বুলিয়ে দিলে রঙ্গ জুড়িয়ে যেত। আঃ, কোথা গেলি মা গো-পাড়ার নক্ষ্মী মা রে!
সুবাসী এক পাশে দেওয়ালে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। হঠাৎ নবালাই বললে—আঃ সুবাসী, তোর বাছা করণ দেখে শরীলটা রি-রি করছে আমার। বলি দে, সিঁদুর ঢেলে দে সতীনের মাথায় সিঁদুর দে, ব—সোয়ামীর দাবি ছেড়ে দাও, তোমাকে আমি সিঁদুর দিলাম, আমার সিঁদুর তুমি বজায় একো।
পাগল ডাকলে—বনওয়ারী!
–কি?
–একখানা নতুন কাপড় চাই যে শ্মশানে লাগবে। তা বাজারে তো মিলল না। বলে— কাপড় নাই।
বসন বললে—একটা কথা বলব বনওয়ারীদাদা? করালীর কাছে লোক পাঠাও, সে ঠিক বার করবে কাপড়। কোম্পানির দোকান আছে কিনা—
–না। বনওয়ারী ঘাড় নেড়ে বললে—কাপড় দরকার নাই। জাঙলে গিয়ে তাঁতিদের থেকে গামছা কিনে আন।
‘যেমন কলি তেমনি চলি’। উপায় কি? কাল যুদ্ধ লেগেছে। বনওয়ারী একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেললে। গতবার যুদ্ধ লেগেছিল, কাপড়ের দাম চড়েছিল—পাঁচ টাকা সাত টাকা জোড়া দাম হয়েছিল। এবার যুদ্ধে কাপড়ই নাই, মিলছেই না। গামছা পরেই যাক গোপালী। তাই যাক। কি করবে বনওয়ারী! এ দুঃখ তার মরলেও যাবে না।
দাহ শেষ করে ফিরবার পথে সাতবার সাত জায়গায় কাঁটা দিতে হয়। প্ৰেতাত্মা পিছনে পিছনে আসে যে! ঘর-সংসারের মমতা মরলেই কি ছাড়া যায়? বনওয়ারী বড় বড় বাবলা-কাটা দিলে পথে। মনে মনে বললে গোপালীবউ, তুমি তো পাপ কিছু কর নাই, স্বগ্গে তোমার ঠাঁই হবে। ঘরের লোভ তুমি ছাড়। তোমার জন্যে আমার অনেক দুঃখ। কিন্তু আমার এখন অনেক কাজ। কাহারপাড়া-আটপৌরে-পাড়ার মাতব্বরি আমার ঘাড়ে। আমার–
মাথার উপর গোঙাতে গোঙাতে উড়ে আসছিল একঝাক উড়োজাহাজ। চলল বোধহয় নতুন উড়োজাহাজের আস্তাবলে চন্ননপুরের কারখানার পাশে–করালী হারামজাদার এলাকায়! হ-হ- হ-হ। বুকের ভিতরটা গুরগুর করছে।
গ্রামে ঢুকবার পথে বাবাঠাকুরের থানে সে উপুড় হয়ে শুয়ে মনে মনে বললে—গোপালীর দৃষ্টি থেকে অক্ষে কর বাবা। আমার এখন অনেক কাজ। কিন্তু ওটা কে? পাখী নয়? হা, সেই ততা! গ্রামের বাইরে সেই কালোবউয়ের সঙ্গে দেখা-হওয়া বটগাছতলায় দাঁড়িয়ে কয়েকজন অল্পবয়সী ছোকরার সঙ্গে খুব কথাবার্তা বলছে। খুব হাত-পা নাড়ছে। কি কথা এত?
যাক, মরুক, যা বলবে বলুক, বনওয়ারীর এখন ওদিকে দৃষ্টি দেবার মত মনের অবস্থা নয়।
একা বনওয়ারীর নয়, শববাহক দলের সকলেরই দৃষ্টি পড়েছিল। পাগল বললে—আঃ, পাখী দেখি কলকলিয়ে বুলি বলছে।
পানা বললো, হ্যাঁ, করালী পড়িয়েছে ভাল, সেই বুলি বলছে! ভাঁজোর আত্তিরে চন্ননপুরে কাজের কথা বলেছে করালী। ছোঁড়ারা চুলবুল করছে সেইদিন থেকে। সেইসব কথা হচ্ছে। নিজে আসে নাই, পাখীকে পাঠিয়েছে।
বনওয়ারী কোনো কথা বললে না। যত সে বাড়ির কাছে আসছে, ততই মনে পড়ছে। গোপালীবউকে। গোপালীবউ যে তার জীবনটা জুড়ে বাস করত, তাই গোটা জীবনটাই আজ খালি বলে মনে হচ্ছে। যে যা করবে করুক, আজ আর কোনো কথা বলতে তার ইচ্ছে হচ্ছে না।
বাড়িতে ঢেকবার মুখেই কিন্তু সে আর চুপ করে থাকতে পারলে না। করালী বসে রয়েছে। তার বাড়ির উঠানে। বনওয়ারী চমকে উঠল। দূর থেকেই সে বেশ দেখতে পাচ্ছে শরৎকালের শেষবেলার রোদ পশ্চিম মাঠের ঘন সবুজ ধানের উপর পড়ে দ্বিগুণ ছটা নিয়ে পড়েছে তার আঙিনার দাওয়ার উপর খানিকটা গিয়ে পড়েছে খোলা দরজার মুখে ঘরের মধ্যে। সেইখানে বসে আছে সুবাসী। বড়ই চতুর সে। ‘সান কেড়ে’ অর্থাৎ ঘোমটা দিয়ে বসেছে বিনা কারণে। একদৃষ্টে চেয়ে রয়েছে করালীর দিকে। করালী বনওয়ারীর দিকে পিছন ফিরে রয়েছে, সে তার দিকে তাকাচ্ছে কি না দেখতে পাচ্ছে না, কিন্তু মনে মনে বেশ বুঝেছে, সেও সুবাসীর দিকে তাকাচ্ছে। ছোকরা খুব আসর জমিয়ে রেখেছে। চন্ননপুরের শোনা গালগল্প জুড়ে দিয়েছে। সায়েব লোকে যুদ্ধ লাগিয়েছে—ইংরাজ আর জার্মানিতে। কামান বন্দুক বোমা, জার্মানি জিতছে, ইংরেজরা হারছে। উড়োজাহাজের লম্বা-চওড়াই গল্প করছে। তার কলকারখানা, ডানা, লেজ হরেক রকম কথা।
ওরে হারামজাদা! যুদ্ধ জানে বনওয়ারী। ঘোষেদের বাড়িতে সেও শুনেছে। আরও একবার যুদ্ধ লেগেছিল বাংলা একুশ সালে—সেকাল দেখেছে। যুদ্ধ লেগেছে তো তোর বাবার কি? হাঁসুলী বাঁকে তার কিসের গাল-গল্প? ধানচাল আক্রা হবে, কাপড়ের দর চড়বে। হয় হবে, চড়ে চড়বে। ‘খানিক-আধেক’ দুঃখকষ্ট হবে। মাথায় ধর্মকে রেখে পিতিপুরুষের ‘গোনে গোনে’ অর্থাৎ পথে পথে সাবধানে বার মাসে এক এক পাক খেয়ে যে ক বছর যুদ্ধ চলে কাটিয়ে দেবে। কাঠাকুর রক্ষা করবেন। তাঁর আশীর্বাদে কেটে যাবে কাল সুখে-দুঃখে। হালীর বাঁকের মাঠে মা-লক্ষ্মীর পায়ের ধুলো নিলেই সকল অভাব ঘুচে যাবে।
বনওয়ারী ঘরে ঢুকে গম্ভীরভাবে বললে—করালীচরণ মহাশয় নাকি?
করালী বললেহা মামা। মামির মিত্যুর খবর শুনলাম। তা ছুটি না হলে তো আসতে পেলাম না। এই এলাম খবর করতে।
—তা বেশ করেছ। তাতে মানা নাই, এসব তো করবার কথাই; করতে হয়। কিন্তু বাপু যুদ্ধমুদ্ধ এখানে কেনে? কোথা কোন্ দ্যাশে যুদ্ধ লেগেছে তা হাঁসুলীর বাঁকে বাঁশ-আদাড়ের ভেতরে কাহারপাড়ার কাহারদের কি? উ সব গল্পে তাক লাগিয়ে মেয়েছেলের মনে অঙ ধরানো। যায়, কিন্তু উ সব এখানে চলবে না বাপু!
করালী ভুরু কুঁচকে তার দিকে চেয়ে বললে—তার মানে? এসব কি বলছ তুমি?
বলছি ঠিক, তুমি বুঝছ ঠিক। তোমার পরিবার আসছে, ছেলে-ছোকরার কানে মন্তর দিচ্ছে—পিতিপুরুষের কুলকস্ম ছেড়ে জাতনাশা কারখানায় চল মজুর খাটতে। তুমি আসছ মেয়েদের মনে–
করালী চেঁচিয়ে উঠল—ভাল হবে না বলছি ব্যানোমামা।
বনওয়ারী বললে—জাতনাশা! বেজাত কোথাকার! তোর লজ্জা নাই, তোর মা ওই নাইনে। কাজ করতে গিয়ে চলে গেল ফুল ভাসিয়ে দেশ ছেড়ে, আর তুই ওই নাইনে কাজ করছিস? আবার পাড়ার ছোকরাদের মাথা খারাপ করতে এসেছিস? পয়সার গরমে কোট পেণ্টল পরে মেয়েদের কাছে দেখাতে এসেছিসকত বড় মরদ তু!
করালী উঠে দাঁড়াল, বললেজাত কার আছে? কোন্ বেটার কোন্ বাবার আছে এখানে? ওই সুচাঁদ বুড়ি বসে রয়েছে, বলুক, ওই বলুক, শুনি। জাত! লজ্জাও নাই তোমাদের! সজাতেরভদ্দলোকের পা চেটে পড়ে থাক, তারা তোমাদের ভাতে মারে, জাতে মারে। পিঠের উপর জুতো মারে, তোমরা চুপ করে মুখ বুজে সহ্য কর। লজ্জা! লজ্জার ঘাটে মুখ ধুয়েছ। তোমরা? জাত! কুলকৰ্ম্ম! কুলকন্ম তো জাঙলের চাষীদের মান্দেরি কৃষাণ রাখালি? তাতেই রথে। চড়ে স্বগে যাবা! পেটে ভাত জোটে না, পরনে কাপড় জোটে না। কুলকৰ্ম্ম! কুলকৰ্ম্ম! তোমার কি? তুমি মাতব্বর, গুছিয়ে নিয়েছ, জমি করেছ, ধান বেঁধেছ, বুড়ো বয়সে বিয়ে করেছ, লোককে তুমি ধৰ্ম্ম দেখাচ্ছ। লজ্জা! বুড়ো বয়সে বিয়ে করতে তোমার লজ্জা নাই? মাতব্বর। লোকে গতরে খেটে পেট ভরে খাবার মত পরবার মত রোজকার করবে, তাতে তুমি ধৰ্ম্ম দেখাও! কেনে মানবে তোমার সে কথা লোকে? কেনে মানবে? আমি হাক দিয়ে বলে যাচ্ছি। যে যাবে কারখানায় খাটতে, আমি কাজ করে দেব। দিন পাঁচ সিকে মজুরি। কোম্পানি দেবে সস্তা চাল, সস্তা ডাল, সস্তা কাপড়। যার খুশি চলে আয়। ওই বুড়োর কথা মানিস না।
—খবরদার! হাঁক মেরে উঠল বনওয়ারী। বনওয়ারী লাফ দিয়ে পড়ল এবার, অনেকক্ষণ সে হতভম্ব হয়ে শুনেছিল করালীর কথা, করালীর যুক্তি। এমন ধারা মুখের ওপর কথা কেউ কখনও বলে নাই, আর এমন অন্যায় অথচ এমন আশ্চর্য যুক্তির কথাও সে কখনও শোনে নাই, তাই সে হতভম্ব হয়ে গিয়েছিল। ‘ওই বুড়োর কথা মানিস না’ বলতেই সে সচেতন হয়ে রাগে ফেটে পড়বার মত হয়ে চিৎকার করে উঠল—খবরদার! সঙ্গে সঙ্গেই লাফ দিয়ে করালীর সামনে এসে খপ করে চেপে ধরলে তার লম্বা চুলের মুঠো। চুলের মুঠো ধরে সে তার মাথাটা টানতে লাগল মাটির দিকে। টেনে মাটিতে তার মাথাটা ঠেকিয়ে দিয়ে জানিয়ে দেবে, মাথা ঝুঁকি দিয়ে কপালে চোখ তুলে কাহারপাড়ার বনওয়ারী মাতব্বরের সঙ্গে কথা বলার আইন নাই। বললে মাথা এমনিভাবে মাটিতে ঠেকে যায়। নিষ্ঠুর আকর্ষণে টানতে লাগল বনওয়ারী। কিন্তু করালী চন্ননপুরের কারখানায় কাজ করে, মাটিতে মাথা ঠেকিয়ে প্রণাম করা ভুলে গিয়ে সোজা মাথায় সেলাম করা অভ্যাস করেছে, তার উপর সেও লম্বা চওড়া জোয়ান, গাঁইতি-হাতুড়ি পিটে শরীর হয়েছে পাথরের মত শক্ত; যন্ত্ৰণা সহ্য করেও করালী ঘাড় শক্ত করে মাথা সোজা করে রাখলে, কিছুতেই নোয়বে না সে তার মাথা।
দাঁতে দাতে টিপে টানলে বনওয়ারী, করালী তবু নোয়াবে না মাথা, ঘাড় যেন লোহার মত। কঠিন হয়ে উঠেছে। সে বললে—ছেড়ে দাও মাতব্বর। ছেড়ে দাও বলছি।
বনওয়ারী হুঙ্কার দিয়ে উঠল–না।
বসন চিৎকার করে উঠল—ব্যানাদাদা! দাদা!
সুচাঁদ হাউমাউ করতে আরম্ভ করলে; নসুবালা বুক চাপড়ে ‘হায় হায়’ করতে লাগল হায় হায় গো, কি অমানুষের পুরী। ছাড়িয়ে দাও গো, ছাড়িয়ে দাও! ওগো, তোমরা ছাড়িয়ে দাও।
সুবাসীর মাথা থেকে ঘোমটা খসে পড়েছে, সে বিস্ফারিত চোখে দেখছে। ঠিক এই মুহুর্তে ছুটে এল পাখী। সে প্রায় পাগলের মত বনওয়ারীর উপর ঝাপিয়ে পড়ে নিষ্ঠুর আক্ৰোশে কামড়ে ধরলে বনওয়ারীর বাহুমূল।
লোকে হতভম্বর মত দাঁড়িয়ে আছে। সবিস্ময়ে তারা দেখছে বনওয়ারীর আক্রোশ, করালীর শক্তির পরিচয়। অবাক হয়ে গিয়েছে তারা। পাগল কোথায় ছিল, সে এল এতক্ষণে। সে এল, এসেই ছুটে গিয়ে বনওয়ারীর হাত ধরে বললে—বনওয়ারী! ছি! ছেড়ে দে, ছেড়ে দে। তোর বাড়িতে তত্ত্ব করতে এসেছে, ততাকে জোড়হাত করতে হয়। করছিস কি? বনওয়ারী!
বনওয়ারীর হাতের মুঠো শিথিল হয়ে এল। করালীর চুল ছেড়ে দিয়ে বললে–যা। ফিরেবারে আর জানে রাখব না তোকে।
করালীর ঘাড় সোজাই ছিল, সে মাথায় ঝাকি দিয়ে মাথার লম্বা চুলগুলোকে পিছনের দিকে। ফেলে দিয়ে তিক্ত হাসি হেসে বললে—ফিরেবারে তোমাকেও আর খাতির করব না আমি। আজ আমি সয়েই গেলাম। তুমি মাতব্বর, তোমাকে আমার এই শেষ খাতির। তাও করতাম না। কি বলব, আজ তুমি শোকাতাপা হয়ে রয়েছ। আয় পাখী।
পাখীর দাতে ঠোঁটে রক্তের দাগ লেগেছে। বনওয়ারীর হাত কেটে তার দাঁত বসে। গিয়েছিল। পাখীর হাত ধরে যাবার সময় সে আবার হেঁকে বলে গেলচন্ননপুর কারখানায় যারা কাজ করবি, তারা আসিস। আমি বলে গেলাম।