৫.৬ পঞ্চম কাণ্ড। ষষ্ঠ প্রপাঠক

পঞ্চম কাণ্ড। ষষ্ঠ প্রপাঠক

প্রথম অনুবাক

মন্ত্র- হরিণ্যবর্ণাঃ শুয়ঃ পাবকা যাসু জাতঃ কশ্যপো যান্ত্রিঃ। অগ্নিং যা গর্ভং দধিরে বিরূপান্তা ন আপঃ শং সোনা ভবন্তু। যাসাং রাজা বরুণো যাতি মধ্যে সত্যানুতে অবপশ্যঞ্জনানা। মধুশ্চতঃ শুয়ো যাঃ পাৰকান্ত ন আপঃ শং স্যোনা ভবন্তু। যাসাং দেবা দিবি কৃন্তি ভক্ষং যা অন্তরিক্ষে বহুধা ভবন্তি। যাঃ পৃথিবীং পয়সোন্দস্তি শুক্ৰাস্তা ন আপঃ শঃ স্যোনা ভবন্তু। শিবেন মা চক্ষু পশ্যতাইপঃ শিবয়া তনুবোপ স্পশত ত্বং মে। সৰ্বাং অগ্নীংরষদো হুবে বো ময়ি বর্চো বলমোজো নি ধত্ত। যদদঃ সম্প্রয়তীরহানদতা হতে। তস্মাদা নদ্যো নাম স্থ তা বো নামানি সিন্ধবঃ। যৎ প্রেষিতা বরুণেন তাঃ শীভং সমবগত। তদাপোদিত্রো বো যতীস্তম্মাদাপো অনু সুন। অপকামাং স্যন্দমানা অবীবরত ৰা হিকম্।। ইন্দ্রো বঃ শক্তিভিৰ্দেবীস্মার্ণাম বো হিতম। একো দেব অপ্যতিষ্ঠৎ স্যজমানা যথাবশ। উদানিৰ্মহীরিতি তস্মাদুদকমুচ্যতে। আপো ভদ্রা ঘৃতমিদাপ আসুক্ষ্মীযোমৌ বিভ্রত্যাপ ইত্তাঃ। তীব্রা রসো মধুপচাম্ অরঙ্গম আ মা প্রাণেন সহ বচ্চসা গন্। আদিৎ পশ্যামিত বা শৃণোমা মা ঘোযো গচ্ছতি বা আসা। মন্যে ভেজানো অমৃতস্য তহি হিরণ্যবর্ণা অতৃপং যদা বঃ। আপো হি ষ্ঠা ময়োভুবন্তা ন উর্জে দধাতন। মহে রণায় চক্ষসে। যো বঃ শিবতমো রসস্য জয়তেহ নঃ।। উশতীরিব মাতরঃ। তম্মা অরং গমাম বো যস্য ক্ষয়ায় জিম্বথ। আপো জনয়থা চ নঃ দিবি অয়স্বান্তরিক্ষে যতম্ব পৃথিব্যা সম্ভব । ব্ৰহ্মবর্ডসমসি ব্ৰহ্মবéসায় ত্ব॥১॥

[সায়ণাচার্য বলেন যে, এই অনুবাকের ত্রয়োদশ সংখ্যক মন্ত্রে কুন্তেষ্টিকা আমন্ত্রণের কথা বিবৃত হয়েছে।]

মর্মার্থ– যাঁরা নির্মলত্বের কারণে হিরণ্যবর্ণা অর্থাৎ স্বর্ণের ন্যায় উজ্জ্বলবর্ণশালিনী, যাঁরা স্নান ইত্যাদির দ্বারা স্বয়ং শুদ্ধা ও সদাচারিণী, যাঁদের হতে কশ্যপ, প্রজাপতি ও ইন্দ্রও উৎপন্ন হয়েছেন এবং যাঁরা অগ্নিকে গর্ভে ধারণ করেছেন, সেই হেন জলদেবীগণ (আপঃ) আমাদের সুখপ্রাপ্ত করুন।– বরুণ নামে আখ্যায়িত রাজা বা অধিপতি জলদেবীগণের মধ্যে গূঢ়ভাবে সঞ্চরণ করে থাকেন। (কি করেন তিনি? না,) তিনি জনগণের যথাশাস্ত্র স্নান-পান ইত্যাদি আচরণ সবই লক্ষ্য করেন। সেই জলদেবীগণ মধুর রস ক্ষরণ করে থাকেন। সেই হৈন শুদ্ধা ও সদাচারিণী জলদেবীগণ আমাদের সুখপ্রাপ্ত করুন। দুলোকে দেবগণ যে জল-সম্বন্ধি সার নিজেদের ভোজ্য পীযুষ বা অমৃত রূপে গ্রহণ করেছেন, যে জল অন্তরীক্ষলোকে বহুপ্রকার হয়ে থাকে, যে জল পৃথিবীকে নিজে আর্দ্র করে, সেই নির্মল জল আমাদের সুখপ্রাপ্ত করুক। হে জলদেবীগণ! আপনারা শান্ত দৃষ্টিতে আমাকে অবলোকন করুন; আপনাদের শান্ত শরীরের দ্বারা আমাকে স্পর্শ করুন। আমি জলের মধ্যে স্থিত সকল অগ্নিকে হোমের দ্বারা তৃপ্ত করছি (তপয়ামি)। আপনাদের কান্তি, বল ও ওজও আমাতে স্থাপন করুন (স্থাপয়ত)। হে জলদেবীগণ (হে আপো মূয়ম)! দুলোক হতে সম্যক্ প্রকর্ষের সাথে আপনারা গমন করে থাকেন। মেঘ নামে অভিহিত হয়ে আপনারা নাদ (শব্দ) করে থাকেন। (অর্থাৎ প্রবাহকালে পাষাণসদৃশ মেঘে জলাঘাতের দ্বারা শব্দ সৃষ্টি হয়)। এই নাদ (শব্দ) করার নিমিত্ত সকল স্থানে আপনারা নদী নামে পরিচিত হয়ে থাকেন (নদীতি নামধেয়ং প্রাপ্ত)। হে সিন্ধবঃ অর্থাৎ স্যন্দনশীলা (ক্ষরণশীলা) জলদেবীগণ! আপনাদের নির্বাচনসাধ্য সেইরকম কতকগুলি নাম বিদ্যমান। হে আপো (জগদেবীগণ)! যখন বরুণের দ্বারা প্রেরিত হয়ে আপনারা সম্যক আনন্দে নৃত্য করছিলেন, তখন উৎসুক ইন্দ্রদেব আপনাদের দর্শনপূর্বক আপ্যায়িত (প্রীত) হয়েছিলেন, সেই কারণেও আপনারা আপ নাম প্রাপ্ত হন। আপনারা সকলের অনুকুলা হোন। হে জলদেবীগণ (দেবীর্যে আপো)! স্বভাবত (অর্থাৎ প্রয়োজন না থাকলেও) প্রবহমান আপনাদের দর্শনে পরিতুষ্ট ইন্দ্র আপনাদের বরণ করেছেন। আপনাদের প্রবাহের নিমিত্ত অপর কোন শক্তির প্রয়োজন হয় না (অর্থাৎ আপনাদের প্রবাহ অপর কোন শক্তির অপেক্ষা করে না), আপনারা আপন শক্তিতেই প্রবাহিত হয়ে থাকেন। (জল আপন শক্তিতেই ক্ষরিত হয়, এটি সর্বলোক-প্ৰসিদ্ধ)। ইন্দ্রের দ্বারা বৃত (বরিত) হওয়ার কারণে আপনাদের বারি নাম নিম্পাদিত হয়েছে। স্বেচ্ছায় স্যন্দমানা (ক্ষরিত বা প্রবাহমানা) জলসমূহকে ইন্দ্রদেবও আপন অধীন করেছিলেন। ইন্দ্র কর্তৃক অধিষ্ঠিত হয়ে জলসমূহ প্রভূত রূপে উল্কর্ষতা লাভের জন্য চেষ্টিত হয় (উদানিযুরুকর্ষেণ চেষ্টিতবত্যা); সেই কারণে তারা উদক নামেও কীর্তিত হয়। এই কল্যাণরূপা জলরাশি গাভীর শরীর হতে (ঘৃতমাসুগোশরীর দ্বারা) ঘৃতরূপে পরিণত হয়েছে; সেই হেন জলরাশি এইভাবে অগ্নি ও সোমদেবকে ধারণ করেছে। সোমকে ধারণের কারণে এই জলের রস (অর্থাৎ সার) মাধুর্যযুক্ত হয়ে সর্বজনের পক্ষে পুষ্টিকর হয়েছে। সেই হেন রস প্রাণ ও বলের সাথে আমাতে আগত হোক। যাবৎকাল জলের রস অন্ন ইত্যাদিরূপে শরীরে অবস্থান করে, তাবৎকাল প্রাণ বিগত হয় না এবং বলও বিনষ্ট হয় না। জলের সার বা রস যাবৎকাল আমাতে (আমার শরীরে) স্থিত থাকে, তাবৎকাল আমার চক্ষু দর্শনে সমর্থ হয় এবং আমার কর্ণও শ্রবণে সমর্থ হয়। জলের নাদ (শব্দ) আগত হয়ে আমাদের শরীরে স্থিত হয়। সেই নাদই আমাদের বাক্ (অর্থাৎ কথা)। হে হিরণ্যবর্ণ তেজস্বী জলরাশি! যে সময়ে আমি তোমাদের সেবায় তৃপ্ত হই (অর্থাৎ জলপান করি) তখনই মনে করি যে আমি যেন অমৃত পান করছি। হে জলরাশি বা জলদেবীগণ! আপনারা আমাদের সুখদাত্রী হোন, (অর্থাৎ স্নান-পান ইত্যাদির হেতুভূত সুখে উৎপাদকত্বের নিমিত্ত জল প্রসিদ্ধ); আপনাদের সেই হেন রস আমাদের অনুভব করান; অধিকন্তু মহীত রমণীয়া দর্শনের নিমিত্ত আমাদের যোগ্য করুন। (আমরা যাতে পরতত্ত্ব সাক্ষাৎকারের অর্থাৎ পরম ব্রহ্মকে জ্ঞাত হওয়ার যোগ্য হতে পারি, তেমন করুন)। আপনাদের যে শান্ততম সুখৈকহেতুকর রস আছে তা আমাদের প্রাপ্ত করান, যেমন প্রীতিযুক্তা মাতা শিশুকে আপন স্তন্যরস পান করিয়ে থাকেন, সেইভাবে। হে জলদেবীগণ! আপনারা যে রসের নিবাসে প্রীত হয়ে থাকেন, আমরা যেন সেই রস অতিশয়যুক্ত প্রাপ্ত হই (ভূশং প্রামঃ)। অধিকন্তু, হে জলদেবীগণ! আপনারা আমাদের প্রজাগণের উৎপাদক করুন। (অর্থাৎ আমরা যাতে প্রজাগণের উৎপাদক হতে পারি, তেমন করুন)। হে নৈবারচর! তুমি দুলোকে আশ্রিত হও, অন্তরীক্ষেও প্রযত্নবান হও, পৃথিবীতে সংযুক্ত হও। তুমি ব্ৰহ্মতেজঃস্বরূপ হও (ব্রহ্মাবচসমসি); (অর্থাৎ তুমি ব্রহ্মসাধনত্বের রূপ)। অতএব আমি তোমাকে এই ব্রহ্মতেজে স্থাপন করছি (ব্রহ্মবৰ্চসায় ত্বমত্রোপদধামি) ॥১॥

[সায়ণাচার্য বলেন–দ্বিতীয়ে ইষ্টকোপধান বিধত্তে। অর্থাৎ–এই দ্বিতীয় অনুবাকে ইষ্টকা-উপধান বা ইষ্টকার স্থাপন বিষয়ক ব্রতের কথা ব্যক্ত হয়েছে।]

.

দ্বিতীয় অনুবাক

মন্ত্র- অপাং গ্রহান্ গৃত্যেতদ্বাব রাজসু যদেতে গ্রহাঃ সবোইগ্নিৰ্বরুণসবো রাজসূয়মগ্নিসবশ্চিত্যস্তাভ্যামেব সুয়তেহথো উভাবে লোকাভি জয়তি যশ্চ রাজয়েনেজানস্য যশ্যাগ্নিচিত আপো ভব্যাপো বা অগ্নের্জাতৃব্যা যদপোহগ্নেরধস্তাদুপদধাতি ভ্রাতৃব্যাভিভূত্যৈ ভবত্যাত্মনা পরাহস্য ভ্রাতৃব্যো ভবত্যমৃতম বা আপস্তম্মাদপ্তিরবতান্তমভি ফিঞ্চন্তি নাহর্তিচ্ছতি সৰ্বমায়ুরেতি যস্যৈতা উপধীয়ন্তে য উ চৈনা এবং বেদান্নং বা আপঃ পশব আপোহন্নং পশবোহয়াদঃ পশুমান ভবতি স্যৈ উপধীয়ন্তে য উ চৈনা এবং বেদ দ্বাদশ ভবন্তি দ্বাদশ মাসাঃ সম্বৎসরঃ সম্বৎসরেণৈরাস্মৈ অনুমব রুন্ধে পাত্ৰাণি ভবন্তি পাত্রে বা অনুমদ্যতে সযোন্যেবামব রুহ্ম আ স্বাদশাৎ পুরুষাদমত্তথথা পাত্ৰান্ন ছিদ্যতে যস্যৈতা উপধীয়ন্তে য উ চৈনা এবং বেদ কুম্ভাশ্চ কুম্ভীষ্ণ মিথুনানি ভবন্তি মিথুনস্য প্রজাত্যৈ প্ৰ প্ৰজয়া পশুভিৰ্ম্মির্থনৈজ্জায়তে যস্যৈ উপধীয়ন্তে য উ চৈনা এবং বেদ শূথা অগ্নিঃ সোহফঁং যজমানং প্রজাঃ শুচাহপঁয়তি যদপ উপদধাতি শুচমেবাস্য শময়তি নাহর্তিমাচ্ছত্যধ্বযূর্ন যজমানঃ শাম্যন্তি প্রজা যত্ৰৈতা উপধীয়ন্তেহপাং বা এতনি হৃদয়ানি যতো আপো যতো অপ উপদধাতি দিব্যাভিরেবৈনাঃ সং সৃজতি বকঃ পর্জন্যঃ ভবতি যো বা এতাসামায়তনং কৃপ্তিং বেদাহয়তনবান্ ভবতি কল্পতেই অনুসীতমুপ দত্যেতা আসামায়তনমেষা কৃপ্তি এবং বেদাহয়তনবান্ ভবতি কল্পতেইস্মৈ দ্বন্যা উপদধাতি চতম্রো মধ্যে বৃত্যা অন্নং বা ইষ্টকা এতৎ খলু বৈ সাক্ষাদন্নং যদেষ চরুদেতং চরুমুপদধাতি সাক্ষাৎ এবাশ্ম অনুমব রুন্ধে মধ্যত উপ দধাতি মধ্যত অন্নং দধাতি তম্মাম্মধ্যাহনুমদ্যতে বাম্পত্যো ভবতি ব্ৰহ্ম বৈ দেবানাং বৃহস্পতিব্রহ্মণৈবাশ্ম অনুমব রুন্ধে ব্ৰহ্মবéসমাস ব্ৰহ্মবসায় ত্বেত্যাহ তেজখী ব্ৰহ্মৰ্ব্বসী ভবতি যস্যৈষ উপধীয়তে য উ চৈনমেবং বেদ ॥২॥

মর্মার্থ- যে পাত্রে জল গ্রহণ করা হয়, সেই পাত্রকে গ্রহ বলা হয়; অর্থাৎ গ্রহ হলো জলাধার পাত্র, যা কুম্ভ ও কুম্ভী। সেই পাত্রগুলি জলের দ্বারা পূর্ণ হওয়ার নিমিত্ত জলের গ্রহ, কুম্ভ ও কুম্ভীরূপ; সেগুলি গ্রহণ কর্তব্য। গ্রহণের দ্বারা উপধান লক্ষিত হচ্ছে। এই কুম্ভ কুম্ভীরূপ জলের পাত্রদ্বয় রাজসূয়স্বরূপ–অর্থাৎ ফলের দিক হতে তার মতো। চীয়মান (অর্থাৎ যে অগ্নিকে চয়ন করা হচ্ছে, এমন) অগ্নি হলেন সবঃ (যজ্ঞ), অর্থাৎ যেস্থানে অভিষেচন করা হয়। (অর্থাৎ যজমান এখানে অভিষেকযুক্ত হয়ে থাকেন বলে যজ্ঞ সবঃ নামে অভিহিত; এই অগ্নিও তারই মতত)। এবং যা রাজসূয় নামে আখ্যাত কর্ম, তা এই বরুণসবঃ। বরুণ দেবতাও কোনও কালে রাজসূয় যজ্ঞ অনুষ্ঠান করলে সেখানে অভিষিক্ত হয়েছিলেন। যা চিত্য, তা এই অগ্নি; এই অগ্নিতেও অভিষেক বিদ্যমান। অতএব কুম্ভীষ্টকার উপধানের দ্বারা বরুণ ও অগ্নির সৌজন্যে যজমান অনুষ্ঠান পরায়ণ হন (অনুষ্ঠিতবান্ ভবতি)। আরও, রাজসূয়ের দ্বারা কিংবা অগ্নিচয়নের দ্বারা যে লোকপ্রাপ্তি ঘটে, ইষ্টকা উপধানের দ্বারাও সেই লোক জয় করা যায়। জলের দ্বারা অগ্নিকে শান্ত করা হয়, সেই কারণে জল ও অগ্নির মধ্যে শত্রুতা। অতএব চয়মান অগ্নির অবোস্থ ভূমিতে কুম্ভ কুম্ভিগত জলের উপধান করলে শত্রুগণ অভিভূত হবে এবং উপধাতা (অর্থাৎ যে যজমান উপধান করবেন, তিনি) স্বয়ং ঐশ্বর্যবান্ হবেন; শত্রুগণ পরাভূত হবে। অধিকন্তু, উদক হতে উৎপন্ন হওয়ার কারণে জল অমৃতরূপ; যে কারণে অত্যন্ত গ্লানিমাপন্ন বা মূৰ্ছিত জনের মূৰ্ছা নিবারণের নিমিত্ত শীতল জলে তাকে সিঞ্চন করতে করা হয়ে থাকে। যিনি এই তথ্য বিদিত হয়ে ইষ্টকার উপধান করেন, তিনি কোনভাবে আর্ত হন না, বরং পূর্ণ আয়ু লাভ করেন। অন্ন উদক হতে উৎপন্ন হওয়ার কারণে অন্ন হলো জলের স্বরূপ; জলের দ্বারা পুষ্টিপ্রাপ্ত হওয়ার কারণে পশুগণ জলের স্বরূপ; দুগ্ধ ইত্যাদি অন্নের হেতুভূত হওয়ায় পশুগণও অনুরূপ (পশুনামপ্যন্নত্ব। যে উপধাতা এই তথ্য বিদিত হন (অর্থাৎ যিনি এই তথ্য বিদিত হয়ে ইষ্টকার উপধান করেন), তিনি অন্নবা ও পশুশালী হয়ে থাকেন।–(উপধানের নিমিত্ত জলাধারের বা জলপাত্রসমূহের বিধি)-জলপাত্ৰসমূহ কুম্ভ-কুম্ভীরূপ। কাংস্য (কাসার) ইত্যাদি নির্মিত পাত্রে লোকে (অর্থাৎ জনে) অন্ন পাক করে ও ভক্ষণ করে। অতএব পাত্র হলো অন্নের যোনি (অর্থাৎ উৎপত্তিস্থল); তার সহায়তাতেই অন্নপ্রাপ্তি ঘটে। সেই নিমিত্ত ইষ্টকার উপধাতা ও উপধান-বেত্তা (উপধান সম্বন্ধে যিনি সম্যক বিদিত) পাত্রের সংখ্যা অনুসারে পুত্র পৌত্র ইত্যাদি দ্বাদশ পুরুষ পর্যন্ত সমৃদ্ধ হয়ে থাকেন। আরও, পাত্র ইত্যাদি ও গৃহের উপকরণসমূহের মধ্যে সংঘাতের নিমিত্ত কখনও সেগুলি হতে বিচ্যুতি ঘটে না। কুম্ভ হলো পুরুষ-সদৃশ প্রবৃদ্ধ ঘট, কুম্ভী হলো নারী-সদৃশা ক্ষুদ্রা; অতএব এই মিথুন সম্পত্তির দ্বারা প্রজা উৎপাদিত হয়ে থাকে; উপধাতা ও উপধান-বেত্তা মিথুনরূপ প্ৰজা উৎপাদন করে থাকেন। এই অগ্নি সন্তাপের হেতু; অতএব সেই অগ্নি অধ্বর্য প্রভৃতিকে সন্তাপের দ্বারা যোজিত করে। জল উপধানের দ্বারা অগ্নির সন্তাপহেতুত্ব প্রশমিত হয়। যে কর্মে (অর্থাৎ যজ্ঞে) এই ইষ্টকার উপধান করা হয় (উপধীয়ন্তে), সেই স্থানে অধ্বর্য এবং যজমানেরও মৃত্যু হয় না; এবং প্রজাগণও সকল প্রতিবন্ধকতা হতে নিবৃত্তি লাভ করে। এই পাত্রগত যে জল, তা অন্য দেবতার হৃদয়স্থানীয়। এই ইষ্টকার উপধাতা দিব্য জলের দ্বারা সংযযাজিত হন (অর্থাৎ দিব্য জল প্রাপ্ত হয়ে থাকেন)। মেঘও বর্ষণশীল হয়। যিনি এই ইষ্টকাসমুহের আয়তন (অর্থাৎ স্থান) ও কুপ্তি (অর্থাৎ সামর্থ্য) উভয়ই জ্ঞাত আছেন, তিনি বিশাল গৃহ ইত্যাদি স্থান লাভ করেন এবং সর্ব ভোগ্যজাত সামগ্রীতে সমৃদ্ধবান্ হন। ইষ্টকা অন্নের হেতুত্বের নিমিত্ত অনুরূপ, চরু হলো সাক্ষাৎ অন্নসম্মত; এতএব চরু উপধানের দ্বারা মুখ্য অন্ন প্রাপ্ত হওয়া যায়। ইষ্টকার মধ্যে চরু স্থাপন করলে যজমানের মধ্যে (অর্থাৎ উদরে) অন্ন স্থাপিত হয়ে থাকে। তিনি মধ্যে বয়সে প্রভূত অন্নের ভক্ষণকারী হয়ে থাকেন (ভুয়িষ্টমন্নমদ্যতে)। ব্রহ্মবৰ্চসমসি ব্রহ্মবৰ্চসায় ইত্যাদি, অর্থাৎ তুমি ব্ৰহ্মবর্চ, ব্রহ্মবর্চ লাভের নিমিত্ত তোমার উপধান করছি,–এই মন্ত্রে ব্রহ্মবৰ্চস শব্দদ্বয়ের তাৎপর্য প্রসঙ্গে বলা হয়েছে–ব্রহ্মবৰ্চস বা ব্রহ্মতেজঃ শব্দের তেজঃ হলো কান্তি এবং ব্রহ্মবৰ্চস শব্দের বর্চ হলো অধ্যয়ন ইত্যাদি সম্পত্তি। (অর্থাৎ ব্রহ্মবৰ্চস শব্দের দুটি অর্থ-ব্রহ্মতেজ ও বেদাধ্যয়নজনিত সম্পদ) ॥২॥

[সায়ণাচার্য বলেন-তৃতীয়ে ভূতেষ্টকাদিকমুচ্যতে। অর্থাৎ–এই তৃতীয় অনুবাকে ভূতেষ্টকা ইত্যাদির বিষয় কথিত হয়েছে।]

.

তৃতীয় অনুবাক

মন্ত্র- ভূতেষ্টকা উপ দত্যত্ৰাত্ৰ বৈ মৃত্যুজ্জায়তে যত্ৰত্রৈব মৃত্যুজ্জায়তে তত এবৈনমব যজতে তস্মাদগ্নিচিৎ সৰ্বমায়ুরেতি সৰ্ব্বে হ্যস্য মৃত্যবোহবেষ্টান্তস্মাদগ্নিচিন্নাভি চরিতবৈ প্রত্যগেন মভিচারঃ স্তণুতে সুয়তে বা এষ যোহগ্নিং চিনুতে দেবসুবা মেতানি হবীংষি ভবন্ত্যেতাবন্তো বৈ দেবানাং সবাও এব অস্মৈ সবান প্র যচ্ছন্তি ত এনং সুবন্তে সবোইগ্নিৰ্বরুণসবো রাজসূয়ং ব্রহ্মসৰশ্চিত্যো দেবস্য ত্বা সবিতুঃ প্রসব ইত্যাহ সবিতৃপ্রসূত এবৈনং ব্ৰহ্মণা দেবতাভিরভি ফিঞ্চতন্নস্যামস্যাভিষিঞ্চ ত্যন্নস্যামস্যাবরুদ্ধ্যৈ পুরস্তাৎ প্রত্যঞ্চমভিষিঞ্চতি পুরন্তাদ্ধি প্রতীচীনমন্নমদ্যতে শীর্ষতোহভি ফিঞ্চতি শীর্ষতো হ্যন্নমদ্যত আ মুখাদবশ্রাবয়তি মুখত এম্মা অন্নাদ্যং দত্যগ্নেস্থা সাম্রাজ্যেনাভি যিঞ্চামীতাহৈষ বা অগ্নেঃ সবস্তেনৈবৈনমভি ফিঞ্চতি বৃহস্পতে সাম্রাজ্যেনাভি যিঞ্চামীত্যাহ ব্ৰহ্ম বৈ দেবানাং বৃহস্পতি ব্রহ্মণৈবৈনমভি ঞ্চিতীন্দ্রস্য ত্বা সাম্রাজ্যেনাভি ফিঞ্চমীত্যাহেন্দ্রিয়মেবাস্মিনুপরিষ্কাধাত্যেৎ বৈ রাজসূয়স্য রূপং য এবং বিদ্বানগিং চিনুত উভাবেব লোকাভি জয়তি যশ্চ রাজসুয়েনেজানস্য যশ্চাগ্নিচিত ইন্দ্রস্য সুযুবাণস্য দশধেন্দ্ৰিয়ং বীৰ্যং পরাহ পতওবোঃ সৌভ্রামণ্যা সমভরুৎসুয়তে বা এষ যোহগ্নিং চিনুতেহগ্নিং চিত্বা সৌভ্রামণ্যা যজেতেন্দ্রিয়মেব বীৰ্য্যং সত্যাহঅন্ধত্তে ॥৩৷৷

মর্মার্থ- দেশ, কাল ও নিমিত্ত বিশেষে অপমৃত্যুর ব্যাপ্তি ঘটে। সর্প, ব্যাঘ্র ও চোর অধ্যুষিত দেশ বা স্থান মৃত্যুর কারণ (হেতবঃ)। সন্ধ্যা, মধ্যরাত্রি ইত্যাদি সময় যক্ষ রাক্ষস ইত্যাদি প্রযুক্ত (অর্থাৎ ঐ সময়ে যক্ষ-রাক্ষসদের প্রাদুর্ভাব হওয়ার কারণে, ঐ কাল) মৃত্যুকাল। দুষ্ট (দোষযুক্ত) খাদ্য আহার-ভোজন ইত্যাদি মৃত্যুর নিমিত্ত (কারণ)। ভূতেষ্টকা উপধানের দ্বারা সেই দেশ, কাল ও নিমিত্ত প্রযুক্ত (সম্পর্কিত) সরকম মৃত্যু হতে যজমান পরিত্রাণ প্রাপ্ত হন (অর্থাৎ মৃত্যু দুরীভূত হয়)। অতএব অগ্নিচয়নকারী নিজের পূর্ণ আয়ু প্রাপ্ত হন; তার ফলে সকল অপমৃত্যুও বিনাশিত হয়। অধিকন্তু এই অগ্নিচয়নকারী কোন আভিচারিক কর্মের বিষয়ীভূতও হন না। সেইরকম যে মূর্খ অতিচার কর্ম করে, এমন মূর্খ সেই অভিচারের দ্বারা পশ্চিমাভিমুখ (প্রত্যঙ্গুখো) হয়ে অর্থাৎ বিমুখতায় বিনাশ প্রাপ্ত হয়। যে যজমান অগ্নিচয়ন করেন, তিনি দেবগণ কর্তৃক প্রেরিত হন। অগ্নয়ে গৃহপতয়ে পুরোডাশম–অর্থাৎ গৃহপতি অগ্নির উদ্দেশে পুরোডাশ ইত্যাদি রাজসূয় যজ্ঞে কথিত মন্ত্রে অগ্নি প্রমুখ দেবতাগণ এই যজমানের প্রেরক। অভিষেকযুক্ত যাগের নাম সব–এই হেতু কথিত হয়, এবং তা দুরকম–বরুণ-সব ও ব্রহ্ম-সব। রাজা কর্তৃক অনুষ্ঠেয় রাজসূয় হলো বরুণ-সব; কারণ বরুণ হলেন রাজাভিমানী দেবতা। কিন্তু চিত্য (অর্থাৎ চয়িত বা চয়নকৃত) অগ্নি ব্রাহ্মণের দ্বারাও অনুষ্ঠিত হয়; সেই কারণে তা (অর্থাৎ অগ্নিচয়ন) ব্রহ্মসব; যেহেতু অগ্নি হলেন ব্রাহ্মণাভিমানী দেবতা। অতএব সব-দ্বয় (যাগদ্বয়) অভিষেকের যোগ্য। দেবস্য ত্বা সবিতুঃ প্রসব–অর্থাৎ সবিতাদেবের প্রেরণায় (বা উৎপত্তিতে)–এই ব্ৰহ্মমন্ত্রের দ্বারা সবিতা ইত্যাদি দেবতাগণের অভিষেকের বিষয় প্রতিপাদিত হয়েছে। এই অভিষেক চিত্য অগ্নির রাজসূয়ের স্বরূপ–এইরকম বিজ্ঞাত হয়ে যিনি অগ্নিচয়ন করেন, তিনি বরুণযাগ ও ব্রহ্মযাগ উভয় যাগের ফলস্বরূপ উভয় তোক জয় করে থাকেন (উভয়ফলং ভবতি) ॥৩॥

[সায়ণাচার্য বলেন–চতুর্থে হোমো বিধীয়তে। অর্থাৎ–এই চতুর্থ অনুবাকে হোমের বিধি কথিত হয়েছে]

.

চতুর্থ অনুবাক

মন্ত্র- সজুরদোহবভিঃ সজুরুষা অরুণীভিঃ সজুঃ সূর্য এতশেন সজোষাবশ্বিনা দংসোভিঃ সজুরগ্নির্বৈশ্বানর ইড়াভিধৃতেন স্বাহা সম্বৎসরো বা অজো মাসা অযাবা উষা অরুণীঃ সূৰ্য্য এতশ ইমে অশ্বিনা সম্বৎসরোহগ্নিব্বৈশ্বানরঃ পশব ইড়া পশবো ঘৃতং সম্বৎসরং পশবোহনু প্র জায়ন্তে সম্বৎসরেণৈবান্মৈ পশূ প্র জনয়তি দৰ্ভস্তম্বে জুহোতি যৎ বা অস্যা অমৃতং যদ্বীং তর্ভান্তস্মিন্ জুহোতি বৈ জায়তেহন্নাদো ভবতি যস্যৈবং জুহুত্যেতা বৈ দেবতা অগ্নেঃ পুরস্তাভাগাস্তা এব প্রীণাত্যবো চক্ষুরেবাগে পুরস্তাৎ প্রতি দত্যনন্ধো ভবতি য এবং বেদাহপো বা ইদমগ্রে সলিলমাসীৎস প্রজাপতিঃ পুষ্করপর্ণে বাতো ভূতোহলেলায়ৎ সঃ প্রতিষ্ঠাং নাবিন্দত স এতদপাং কুলায়মপশ্যস্মিন্নগ্নিমচিনুত তদিয়মভবততা বৈ স প্রত্যতিষ্ঠদ্যাং পুরস্তাদুপাদখাচ্ছিরোহভবৎ সা প্রাচী দিগ্যাং দক্ষিণত উপাদধাৎ স দক্ষিণঃ পক্ষোহভবৎ সা দক্ষিণা দিগ্যাং পশ্চাদুপাদধাত্তৎপুচ্ছমভবৎ সা প্রতীচী দিগ্যামুত্তরত উপাদৎ স উত্তরঃ পক্ষোহভবৎ সোদীচী দিগ্যামুপরিদুপাদধাত্তৎপৃষ্ঠমভবৎ সোদ্ধা দিগিয়ং বা অগ্নিঃ পঞ্চেষ্টকস্তস্মাদ্যদস্যাং খনন্ত্যভীষ্টকাং তুন্দত্যভি শর্করাং সর্ষা বা ইয়ং বয়োভ্যো নক্তং দৃশে দীপ্যতে তম্মাদিমাং বয়াংসি নক্তং নাধ্যাসতে য এবং বিদ্বানগ্নিং চিনুতে প্রত্যেক তিষ্ঠত্যভি দিশো জয়ত্যাগ্নেয়ো বৈ ব্রাহ্মণস্তস্মাদ্রাহ্মণায় সৰ্বাসু দিম্পূর্ধক স্বামেব তদিশমন্বেত্যপাং বা অগ্নিঃ কুলায়ং তস্মাদাপোহগ্নিং হারুকাঃ দ্বামেব তদ্যোনিং প্র বিশস্তি ॥৪॥

মর্মার্থ– অব্দ হলো সম্বৎসর। অবা হলো মাসসমূহ। এবং সম্বৎসরের সাথে মাসসমূহের সমান প্রীতি (সজু) লক্ষ্যণীয়। সজু অর্থে সমান প্রীতিযুক্ত। এখানে সকল মন্ত্রে ঘৃতেন স্বাহা অর্থাৎ ঘৃতের দ্বারা স্বাহা মন্ত্রে-এই কথা সংযুক্ত করণীয়। যেমন, মাসের সাথে সম্বৎসরের উদ্দেশে ঘৃত-দ্রব্যের দ্বারা স্বাহা মন্ত্রে আহুতি প্রদান করছি (মাসসহিতায় সম্বৎসরায় ঘৃতেন দ্রব্যেণ স্বাহা জুহোমি)। [মন্ত্রগুলির অর্থ শুক্ল যজুর্বেদের ১২শ অধ্যায়ের ৭৪তম মন্ত্রে প্রাপ্তব্য]।

 [সায়ণাচার্য বলেন–পঞ্চমে কানিচিদ্ধবীংষি বিধীয়ন্তে। অর্থাৎ–এই পঞ্চম অনুবাকে হবিঃ-দান সম্পর্কিত বিষয় উক্ত হয়েছে]

.

 পঞ্চম অবাক

 মন্ত্র- সম্বৎসমুখ্যং ভূত্বা দ্বিতীয়ে সম্বৎসর আগ্নেয়মষ্টাকপালং নিৰ্বপেদৈন্দ্রমে কাদশকপালং বৈশ্বদেবং দ্বাদশকপালং বাম্পত্যং চরুং বৈষ্ণবং ত্ৰিকপালং তৃতীয়ে সম্বৎসরেহভিজিতা যজেত যদষ্টাকপালো ভৰত্যষ্টাক্ষরা গায়ত্রাগ্নেয়ং– গায়ত্ৰং প্রাতঃসনং প্রাতঃসবনমেব তেন দাধার গায়ত্ৰীং ছন্দো যদেকাদশকপালে ভবত্যেকাদশারা ব্রিগেন্দ্ৰং ত্রৈভং মাধ্যন্দিনং সবনং মাধ্যন্দিনমেব সবনং তেন দাধার ত্রিভং ছন্দো যদ্বাদশকপালো ভবতি : দ্বাদশাক্ষরা জগতী বৈশ্বদেবং জাগতং তৃতীয়সবনং তৃতীয়সবনমেব তেন দাধার জগতীং ছন্দো যদ্বাম্পত্যশ্চরুতি ব্ৰহ্ম বৈ দেবানাং বৃহস্পতিব্রহ্মেৰ তেন দাধার যদ্বৈষ্ণবস্ত্রিকাঁপালো ভবতি যজ্ঞো বৈ বিষ্ণুৰ্যমেব তেন দাধার যতীয়ে সম্বৎসরেহভিজিতা যজতেহভিজিত্যৈ যৎসম্বৎসমুখ্যং বিভৰ্ত্তমমেব তেন লোকং শৃণোতি যদ্বিতীয়ে সম্বৎসরেইয়িং চিনুতেহরিক্ষমেব তেন স্মৃণোতি বক্তৃতীয়ে সম্বৎসরে যজ্ঞতেইমুমেব তেন লোকং সৃণোত্যেতং বৈ পর আণারঃ কক্ষীবাং ঔশিজো বীতহব্যঃ শ্ৰায়সসদস্যঃ পৌরুকুৎস্যঃ প্রজাকামা অচিম্বত ততো বৈ তে সহস্রং সহস্রং পুত্ৰানবিলন্ত প্রথতে প্ৰজয়া পশুভিস্তাং মাত্ৰামাপপাতি যাং তেহগচ্ছন্য এবং বিদ্বানেতমগ্নিং চিনুতে ॥৫

মর্মার্থ– পূর্ববর্তী প্রপাঠকে সম্বৎসর অর্থাৎ দ্বাদশ মাস ব্যাপী, এ্যহ অর্থাৎ তিন দিবস ব্যাপী, ষড়হ অর্থাৎ ছয় দিন ব্যাপী ও দ্বাদশাহ অর্থাৎ দ্বাদশ দিন ব্যাপী সাধ্য চারটি যাগে অগ্নিধারণ বিষয় কথিত হয়েছে। এখানে উল্লেখিত কালব্যাপী সাধ্য সত্রের অঙ্গভূত চয়নে সেই সেই কালব্যাপী উখা ধারণ ও সংশ্লিষ্ট দেবতাগণের উদ্দেশে নির্ধারিতসংখ্যক কপালে হবিঃ নির্বপণের কথা বলা হয়েছে। বলা বাহুল্য এইগুলি সবই পূর্ব পূর্ব কাণ্ডের বিভিন্ন প্রপাঠকে উক্ত হয়েছে ॥৫॥

[সায়ণাচার্য  বলেন–ষষ্ঠে পূর্বপ্রকরণণাক্তানেব বিধী কানিচিদনুদ্য প্রশংসতি। অর্থাৎ–এই ষষ্ঠ অনুবাকে পূর্ববর্তী প্রকরণের বা প্রসঙ্গের কোন কোন বিধির প্রশংসা করা হয়েছে]।

.

ষষ্ঠ অনুবাক

মন্ত্র- প্রজাপতিরগ্নিমচিনুত স ক্ষুরপবির্ভূত্বাহতিষ্ঠত্তং দেবা বিভাতোনোপাহয়ন্তে ছন্দোভিরাত্মানং ছাদয়িত্বোপহয়ন্তচ্ছন্দসাং ছন্দং ব্রহ্ম বৈ ছন্দাংসি ব্ৰহ্মণ এতক্ৰপং যৎকৃষ্ণাজিনং কাষ্ণী উপানহাবুপমুঞ্চতে ছন্দোভিরোবাহআনং ছাদয়িত্বাইগ্নিমুপ চরত্যাত্মনোহহিংসায়ৈ দেবনিধিবা এষ নি ধীয়তে যদগ্নিঃ অন্যে বা বৈ নিধিমগুপ্তং বিন্দন্তি ন বা প্রতি প্র জানাত্যুত্থামা ক্রামত্যাত্মানমেবাধিপাং কুরুতে গুপ্ত্যা অথো খহুর্নাহক্ৰম্যেতি নৈঋখা যদাক্রামেন্নিঋত্যা আত্মানমপি দধ্যাত্তস্মাহম্যা পুরুষশীর্ষপদধাতি গুপ্ত্যা অথো যথা বুয়াদেতন্মে গোপায়েতি তাদগের তৎ প্রজাপতিৰ্বা অথৰ্বাহগ্নিবেব দধ্যঙঙাথৰ্বণস্তস্যেষ্টকা অস্থান্যেতং হ বাব তদৃষিরভ্যনুবাচেন্দ্রো দধীচে অস্থভিরিতি যদিষ্টকাভিগ্নিং চিনোতি সাত্মানমেবাগ্নিং চিনুতে সাত্মাহমুন্মিল্লোঁকে ভবতি য এবং বেদ শরীরং বা এতদগ্নের্যচ্চতা আত্মা বৈশ্বানররা যচ্চিতে বৈশ্বানরং জুহোতি শরীরমে সংস্কৃত্য অভ্যারোহতি শরীরং বা এতদ্যজমানঃ সস্কুরুতে যদগ্নিং চিনুতে যচ্চিতে বৈশ্বানরং জুহোতি শরীরমেব সংস্কৃত্যাহাত্মনাহভ্যারোহতি তন্মাত্তস্য নাব দ্যন্তি জীবশ্লেব দেবানপ্যেতি বৈশ্বানৰ্য্যৰ্চা পুরীষমুপ দধাতীয়ং বা অগ্নির্বৈশ্বানরস্তস্যৈ চিত্যিৎপুরীষমগ্নিমেব বৈশ্বানরং চিনুত এষা বা অগ্নেঃ প্রিয়া তনুর্যশোনঃ প্রিয়ামেবাস্য তনুবমব রুন্ধে ॥৬॥

মর্মার্থ- (পূর্বকালে) প্রজাপতি যখন অগ্নিচয়ন করেছিলেন, তখন সেই অগ্নি ক্ষুরপবি হয়ে (অর্থাৎ ক্ষুরধারাসমান উগ্র বজ্রের ন্যায়) অবস্থান করেছিলেন। সেই হেন অগ্নিকে দর্শন করে সকল দেবতা ভীতিগ্রস্ত হয়ে তার সমীপস্থ হতে পারলেন না। অতঃপর তার প্রতিকারের উপায় বিবেচনা করে তারা ছন্দোযুক্ত মন্ত্রের দ্বারা আপনাপন শরীর আচ্ছাদন করে অর্থাৎ মন্ত্রজপের দ্বারা। রক্ষাবিধান পূর্বক বহ্নির সমীপে আগমন করলেন। ছাদন অর্থাৎ আচ্ছাদন হতে ব্যুৎপত্ত্য হওয়ার কারণে ছন্দ নাম সম্পন্ন হয়েছে। এবং ছন্দ অন্তর্ভূত হওয়ার কারণে বেদ হলো ছন্দোরূপ  (তদ্রূপ)। এবং কৃষ্ণাজিন অর্থাৎ কৃষ্ণসার মৃগের চর্ম হলো বেদের স্বরূপ। সেই কারণে কৃষ্ণসার মৃগের চর্মে নির্মিত পাদুকা (উপানহ) গ্রহণের নির্দেশ প্রদত্ত হয়েছে। সেই রকম, ছন্দের দ্বারা আপন শরীর আচ্ছাদন পূর্বক অগ্নির নিকটে গমন করলে তিনি অগ্নির দ্বারা হিংসিত হন না ৷৬৷৷

[সায়ণাচার্য  বলেন-সপ্তমে দীক্ষাবিকল্পান্বিধাতু প্রস্তেীতি। অর্থাৎ–এই সপ্তম অনুবাকে দীক্ষা কালের বিকল্প বিধান প্রসঙ্গে বলা হয়েছে]

.

 সপ্তম অনুবাক

মন্ত্র- অগ্নের্বৈ দীক্ষয়া দেবা বিরাজমান্ধুবন্তিম্রো রাত্রীদীক্ষিতঃ স্যাত্রিপদা বিড়ি রাজমাপ্নোতি ষড্রাত্রীদীক্ষিতঃ স্যাৎ ষড় ঋতবঃ সম্বৎসরঃ সম্বৎসররা, বিরাড়িরাজমাখোতি দশ রাত্রীদীক্ষিতঃ স্যাশাক্ষরা বিড়িরাজমাপ্লেতি দ্বাদশ রাত্রীদীক্ষিতঃ স্যাদ্বাদশ মাসাঃ সম্বৎসরঃ সম্বৎসরো বিরাড়িরাজমাপগতি ত্রয়োদশ রাত্রীদীক্ষিতঃ স্যাক্রয়োদশ মাসাঃ সম্বৎসরঃ সম্বৎসরোঃ বিরাড়িরাজমাপোতি পঞ্চদশ রাত্রীদক্ষিতঃ স্যাৎ পঞ্চদশ বা অর্ধমাসস্য রাত্ৰয়োহদ্ধর্মসশঃ সম্বৎসর আপ্যতে সম্বৎসরো বিরাড়িরাজমাপ্লেতি সপ্তদশ রাত্রীদীক্ষিতঃ স্যাদ্বাদশ মাসাঃ পঞ্চৰ্ত্তবঃ স সম্বৎসরঃ সম্বৎসরো বিরাডুবিরাজমাপোতি চতুর্বিংশতিং রাত্রীদীক্ষিতঃ স্যাচ্চতুর্বিংশতিরর্ফমাসাঃ সম্বৎসরঃ সম্বৎসর বিরাজিমাগ্লোতি ত্রিংশতং রাত্রীদীক্ষিতঃ স্যাৎ ত্রিংশদক্ষরা বিড়িরাজমাগোতি মাসং স্যাচ্চতুরো বা এতং মাসোসবোহবিভরুন্তে মাপোতিচতুরো মাসো দীক্ষিতঃ দীক্ষিতঃ স্যাদ্যো মাসঃ স সম্বৎসরঃ সম্বৎসররা বিরাবিরাজ-পৃথিবীমাহজয় গায়ত্ৰীং ছন্দোহন্তেী। রুদ্রাহেন্তরিক্ষমাহজয়ন্ত্রিভং ছন্দো দ্বাদশাহদিত্যাস্তে দিবমাহজয় জগতীং ছন্দস্ততো বৈ তে ব্যাবৃতমগচ্ছঞ্জৈষ্ঠ্যিং দেবানাং তস্মাদ্বাদশ মাসো ভূত্বহগ্নিং চিন্বীত দ্বাদশ মাসাঃ সম্বৎসরঃ সম্বৎসরো-ইগ্নিশ্চিত্যস্তস্যাহোরাত্ৰাণীষ্টকা আপ্তেষ্টকমেনং চিনুতেহথো ব্যাবৃতমেব গচ্ছতি শ্রৈষ্ঠ্যং সমানানাম্ ॥৭।

মর্মার্থ– চীয়মান অগ্নির দীক্ষার দ্বারা দেবগণ বিরাট লাভ করেছিলেন। এখানে মৌন ইত্যাদি নিয়ম স্বীকারকে দীক্ষা বলা হয়েছে। বিরাট শব্দে শ্রেষ্ঠ ছন্দোবিশেষ বোঝায়, এই কারণে এখানে বিশিষ্ট রাজ্য অর্থটি উপলক্ষিত হয়েছে; অর্থাৎ দেবগণ রাজ্য লাভ করেছিলেন এইরকম বোধিতব্য হয়েছে। বিরাট নামক ছন্দ দশাক্ষর তিনপাদের দ্বারা মিলিত। অতএব তিন সংখ্যার সহযোগে তার প্রাপ্তি,–অর্থাৎ তিন রাত্রি দীক্ষা বা নিয়ম স্বীকারের দ্বারা দেবগণ কর্তৃক বিরাট ছন্দ লব্ধ হয়েছিল। এইভাবে দীক্ষাকালের বিকল্পের দ্বারা সর্বত্র বিরাট প্রাপ্তি বোধিতব্য হয়। যেমন ষড়রাত্রি দীক্ষা বা নিয়ম স্বীকারের দ্বারা ষড়ঋতু সম্বন্ধী সম্বৎসরে বিরাট প্রাপ্তি, দশরাত্রি দীক্ষা বা ১ নিয়ম স্বীকারের দ্বারা দশাক্ষরা বিরাট প্রাপ্তি, দ্বাদশ রাত্রি দীক্ষা বা নিয়ম স্বীকারের দ্বারা দ্বাদশমাস ও সম্বন্ধী সম্বৎসরে বিরাট প্রাপ্তি, ত্রয়োদশ রাত্রি দীক্ষা বা নিয়ম স্বীকারের দ্বারা একাধিক দ্বাদশ মাস সম্বন্ধী সম্বৎসরে বিরাটু প্রাপ্তি, ইত্যাদি যোজনীয় ॥৭॥

 [সায়ণাচার্য বলেন-অষ্টমেহম্বারোহণাদিকমুচ্যতে। অর্থাৎ–এই অষ্টম অনুবাকে অম্বারোহণ (পশ্চাতে আরোহণ) ইত্যাদির কথা উক্ত হয়েছে।]

.

অষ্টম অনুবাক

মন্ত্র- সুবৰ্গায় বা এষ লোকায় চীয়তে যদগ্নিস্তং যারোহে সুবর্গাল্লোকাদ্যজমানো হীয়েত পৃথিবীমাহমিষং প্রাণে মা মা হাসীদন্তরিক্ষমাইক্ৰমিষং প্রজা মা মা হাসীদ্দিমাইক্ৰমিষং সুবরগন্মেত্যাহৈষ বা অগ্নেরম্বারোহস্তেনৈনৈম্বারোহতি সুবৰ্গস্য লোস্য সমস্ত্যৈ যৎপক্ষসম্মিতাং মিনুয়া কনীয়াংসং যজ্ঞক্রতুমুপেয়াৎ পাপীয়স্যস্যাত্মনঃ প্রজা স্যাৰ্ঘেদিসম্মিত্যাং মিনোতি জ্যায়াংসমেব যজ্ঞক্রতুমুপৈতি নাস্যাত্মনঃ পাপীয়সী প্রজা ভবতি সাহং চিন্বীত প্রথমং চিনঃ সহস্ৰসম্মিতো বা অয়ং লোক ইমমেব লোকমভি জয়তি দ্বিহং চিন্বীত দ্বিতীয়ং চিন্বনো দ্বিহস্রং বা অন্তরিক্ষমন্তরিক্ষমেবাভি জয়তি ত্রিযাহং চিৰীত তৃতীয়ং চিন্বানঃ ত্রিশাহম্রো বা অসৌ লোকোহমুমেব লোকমভি জয়তি জানুয়ং চিন্বীত প্রথমং চিন্মাননা গায়ত্রিয়ৈবেমং লোকমব্যায়োহতি নাভিদষ্মং চিৰীত দ্বিতীয়ং চিনস্ৰিষ্ট্রভৈ বান্তরিক্ষমভ্যারোহিত গ্রীবাদং চিন্বীত তৃতীয়ং চিন্বনো জগত্যৈ বামুং লোকমভ্যারোহতি নাগ্নিং চিত্বা রামামুপেয়াযোনৌ রেতো ধাস্যামীতি ন দ্বিতীয়ং চিত্বাহন্যসা খ্রিয় উপেয়ান্ন তৃতীয়ং চিত্বা কাং চনোপেয়াদ্রেততা বা এতন্নি ধত্তে যদগ্নিং চিনুতে যদুপেয়াদ্রেতসা বৃধ্যেতাঘো খাহুরপ্রজস্যং তদ্যশ্নেপেয়াদিতি যত্ৰেতঃসিচাবুপদধাতি তে এব যজমানস্যরেত বিভৃতস্তম্মাদুপেয়াদ্রেত সোহস্কন্দায় খ্রীণি বাৰ রেংসি পিতা পুত্রঃ পৌত্রঃ যদ্ধে রেতঃসিচাবুপদধ্যা দ্রোেহস্য বিচ্ছিন্দ্যাক্তি উপ দধাতি রেতসঃ সস্তত্যা ইয়ং বাব প্রথমা রেতঃসিশ্বাশ্বা ইয়ং তস্মাৎ পশ্যম্ভীমাং পশ্যন্তি বাচং বদন্তমীরিক্ষং দ্বিতীয়া প্রাণো বা অন্তরিক্ষংতম্মান্নান্তরিক্ষং পশ্যন্তি ন প্ৰাণমসৌ তৃতীয়া চক্ষুব্বা অসৌ তস্মাৎ পশ্যন্ত্যমূং পশ্যন্তি চক্ষুর্যজুষেমাং চ অমূং চাপ দধাতি মনসা মধ্যমামেং লোকানাং কুপ্ত্যা অথো প্রাণানামিষ্টো যজ্ঞো ভৃগুভিরাশীৰ্দা বসুভিস্তস্য ত ইষ্টস্য বীতস্য দ্রবণেহ ভক্ষীয়েত্যাহ স্তুতশস্ত্রে এবৈতন দুহে পিতা মাতরিশাহচ্ছিদ্রা পদা ধা অচ্ছিদ্ৰা উশিজঃ পদাহনু তক্ষুঃ সোমো বিশ্ববিগ্নেতা নেষদবৃহস্পতি রুকথামদানি শংসিষদিত্যাপৈহতদ্বা অগ্নেরুথং তেনৈবেনমন্ত শংসতি ॥৮

মর্মার্থ- সুবর্গলোক বা স্বর্গলোক প্রাপ্তির নিমিত্ত অগ্নিচয়ন কর্তব্য। সেই চয়নের পরে অনু-আরোহণের অভাবে সুবর্গলোকে হতে যজমানকে পতিত হতে হয়। সেই নিমিত্ত পৃথিবী ইত্যাদি ক্ৰমে অনু-আরোহণের বিধি উল্লিখিত হয়েছে। এর মন্ত্র–যজমানোহহং পৃথিবীং পাদেনাইক্ৰমিষমতঃ প্রাণো মাং মা পরিত্যজতু, অর্থাৎ–আমি যজমান, পদের দ্বারা পৃথিবী আক্রমণ (অর্থাৎ আরোহণ বা অক্রিম) করতে ইচ্ছা করছি, প্রাণ আমাকে যেন পরিত্যাগ না করে। অন্তরিক্ষাক্রমণেন পুত্ৰাদিজা মা পরিত্যজতু, অর্থাৎ–অন্তরীক্ষ আক্রমণের দ্বারা (ফলে) পুত্র ইত্যাদি প্রজাগণ যেন আমাকে পরিত্যাগ না করে।–দিব আক্রমণেন স্বর্গং প্রাপ্নমঃ, অর্থাৎ দ্যুলোক আক্রমণের দ্বারা আমি স্বর্গলোক প্রাপ্ত হবে। এই মন্ত্রপাঠ হলো অগ্নির অনু-আরোহণের হেতুঃ, তার দ্বারা স্বর্গপ্রাপ্তি হয়ে থাকে। ইত্যাদি । ৮।

[সায়ণাচার্য বলেন–নবম আসন্দাদিকমভিধীয়তে। অর্থাৎ–এই নবম অনুবাকে আসন্দীতে (আসনে) উখা স্থাপন সম্পর্কে বলা হয়েছে।]

.

নবম অনুবাক

মন্ত্র- সূয়তে বা এযোহপ্পানাং য উখায়াং প্রিয়তে যদধঃ সাদয়ের্ভাঃ প্রপাদুকাঃ স্যুরথো যথা সবাৎ প্রত্যবরোহতি তাদৃগেৰ তদাসী সাদয়তি গর্ভাণাং ধৃত্যা অপ্রপাদায়াথো সবমেবৈনং কয়রাতি গর্ভো বা এষ যদুখ্যো যোনিঃ শিক্যং যচ্ছিক্যাদুখাং নিরুহেদ্যোনেৰ্গৰ্ভং নিণ্যাং ষড়দ্যামং শিক্যং ভবতি যোঢ়াবিহিতো বৈ পুরুষ আত্মা চ শিশ্চ চত্বাৰ্যঙ্গান্যাত্মম্নেবৈনং বিভৰ্ত্তি প্রজাপতিৰ্বা এষ যদগ্নিস্তস্যোযা চোলুখলং চ স্তনৌ তাবস্য প্রজা উপ জীবন্তি যদুখাং চোলুখলং চোপদধাতি তাভ্যামেব যজমানোহনুষ্মিল্লোঁকেইগ্নিং দুহে সম্বৎসরো বা এষ যদগ্নিস্তস্য ত্রেধাবিহিতা ইষ্টকাঃ প্রাজাপত্য বৈষ্ণবীঃ বৈশ্বকৰ্ম্মণীরহোরাত্রা ণ্যেবাস্য প্রাজাপত্যা যদুখ্যং বিভর্তি প্রাজাপত্যা এব তদুপ ধত্তে যৎসমিধ আদধাতি বৈষ্ণবা বৈ বনস্পতয়ো বৈষ্ণবীরেব তদুপ ধত্তে যাদষ্টকাভিগ্নিং চিনোতীয়ং বৈ বিশ্বকর্মা বৈশ্বকৰ্মণীরেব তদুপ ধত্তে তম্মাদাহুস্ত্রিবৃদগ্নিরিতি তং বা এতং যজমান এব চিন্বীত যদস্যান্যশ্চিনুয়াদ্যত্ত্যং দক্ষিণাভিন রাধয়েদগ্নিমস্য। বৃঞ্জীত যোহস্যাগিং চিনুয়াত্তং দক্ষিণাভী রাধয়েদগ্নিমেব তৎ সৃণোতি ॥৯৷

মর্মার্থ- যে অগ্নি উখাতে ধারণীয় (বা স্থাপনীয়) হয়, সেই অগ্নি অন্যান্য অগ্নির মধ্যে অভিষিক্ত ঈশ্বরত্ব (শ্রেষ্ঠত্ব) প্রাপ্ত হন। যদি এই অগ্নিকে অধোভাগে অর্থাৎ ভূমিতে স্থাপন করা হয়, তা হলে প্রাণীগণের গর্ভ ভূমিতে পতিত হয়ে থাকে। অবধোভাগে অগ্নিস্থাপনের ফল হলো ঐশ্বর্য হতে ভ্রষ্ট হওয়া। অতএব অগ্নিকে মহতী আসন্দীতে বা আসন্দীরূপা উখাতে স্থাপন কর্তব্য; এবং তার ফলে অর্থাৎ সেই স্থাপনের ফলে প্রাণীগণের গর্ভধারণ হবে ও তা পতনরহিত হবে। (এতচ্চ সাদনবিধিসমীপ এব দ্রষ্টব্য–অর্থাৎ এই মন্ত্রগুলি সাদন-বিধির সমীপে দ্রষ্টব্য) ॥৯॥

 [সায়ণাচার্য বলেন–দশমে চয়নং বহুধা প্রশস্যতে। অর্থাৎ–দশমে অগ্নিচয়নের বহুরকম প্রশংসা উক্ত হয়েছে]

.

দশম অনুবাক

মন্ত্র- প্রজাপতিরগ্নিমচিনুতভিঃ সম্বৎসরং বসন্তেনৈবোস্য পূর্বান্ধম চিনুত গ্রীষ্মেণ দক্ষিণং পক্ষং বর্ষাভিঃ পুচ্ছং শরদোত্তরং পক্ষং হেম স্তন মধ্যং ব্ৰহ্মণা বা অস্য তৎপূৰ্বাৰ্দ্ধমচিনুত ক্ষণে দক্ষিণং পক্ষং পশুভিঃ পুচ্ছং বিশোত্তরং পক্ষমাসযা মধ্যং য এবং বিদ্বানগ্নিং চিনুত ঋতুভিরেবৈনং চিনুতেহথো এতদেব সৰ্ব্বমব রুন্ধে শৃত্যেনমগ্নিং চিক্যানমত্ত্যন্নং রোচত ইয়ং বাব প্রথমা চিতিরোষধয়ো বনস্পতয়ঃ পুরীষমন্তরিক্ষং দ্বিতীয়া বয়াংসি পুরীষমসৌ তৃতীয়া নক্ষত্রাণি পুরীষং যজ্ঞশ্চতুর্থী দক্ষিণ পূরীষং যজমানঃ পঞ্চমী প্রজা পুরীষং যচিতীকং চিন্বীত যজ্ঞং দক্ষিণামাত্মানং প্রজামন্তরিয়াত্তস্মাৎ পঞ্চচিতীকশ্চেতব্য এতদেব সৰ্বং সৃণোতি যত্তিশ্চিতয়ঃ ত্রিবৃদ্ধ্যগ্নির্যদদ্ধে দ্বিপাদ্যজমানঃ প্রতিষ্ঠিত্যৈ পঞ্চ চিতয়ো ভবন্তি পাত্তঃ পুরুষ আত্মানমেব সৃণোতি পঞ্চ চিতয়ো ভবন্তি পঞ্চভিঃ পুরীষৈরভূহতি দশ সং পদ্যন্তে দশাক্ষরো বৈ পুরুষো যাবানে পুরুষস্তং স্পণোত্যথো দশাক্ষরা বিরাডম্নং বিরাড় বিরাজ্যেবান্নাদ্যে প্রতিতিষ্ঠতি সম্বৎসরো বৈ ষষ্ঠী চিতিঋতবঃ পুরীষং ষট্‌চিতয়ো ভবন্তি ষটপুরীষাণি দ্বাদশ সং পদ্যন্তে দ্বাদশ মাসাঃ সম্বৎসরঃ সম্বৎসর এব প্রতি তিষ্ঠতি ॥১০৷৷

মর্মার্থ- (বসন্ত ইত্যাদি ঋতুর দ্বারা প্রশংসা) ঋতুর দ্বারা যেমন সম্বৎসর নিম্পাদিত হয়, সেই রকমে প্রজাপতি ঋতুর দ্বারা অগ্নিচয়ন করেছিলেন (তথাইগ্নিমপ্যতুভিঃ প্রজাপতিরচিত)। ঋতুময়োইয়ং যজ্ঞ অর্থাৎ ঋতুময় এই যজ্ঞ–এই সঙ্কল্প হলো চয়ন। সেখানে বসন্তু ঋতু হলো এর শিরোভাগ, গ্রীষ্ম ঋতু হলো এর দক্ষিণ পক্ষ, বর্ষা হলো এর পুচ্ছ, শরৎ হলো উত্তর বা বাম পক্ষ ও হেমন্ত হলো মধ্যভাগ।–(ব্রাহ্মণ ইত্যাদি রূপ সঙ্কল্পের দ্বারা প্রশংসা)–ব্রাহ্মণ এর উধ্বভাগ চয়ন করেছিলেন; ক্ষত্রিয় এর দক্ষিণ পক্ষ, পশুগণ এর পুচ্ছ, বৈশ্বগণ এর বাম পক্ষ এবং আশা অর্থাৎ মানস তৃষ্ণা ইত্যাদি এবং মধ্যভাগ চয়ন করেছিল।–(জ্ঞানের দ্বারা প্রশংসা)–যে যজমান বসন্ত ইত্যাদির ও ব্রাহ্মণ ইত্যাদির দ্বারা চয়নের কথা বিদিত হয়ে সর্বদা অগ্নিচয়ন করেন, তিনি প্রজাপতির ন্যায় সেই বসন্ত ইত্যাদি ঋতু ও ব্রাহ্মণ ইত্যাদির দ্বারা যুক্ত হয়ে থাকেন।–(অতঃপর চিতি পঞ্চক ও পুরীষপঞ্চকের দ্বারা, আদ্য চিতিত্রয় ও উত্তরদ্বয়ের বিভাজনের দ্বারা, সমুহরূপের দ্বারা অগ্নিচয়নের প্রশংসা করা হয়েছে। এগুলি সবই মূল মন্ত্রের মধ্যে পাওয়া যাবে) ১০।

অতঃপর ১১শ অনুবাক থেকে ২৩শ অনুবাক পর্যন্ত মন্ত্রগুলিতে আমেধিক পশুর (পশবো আমেধিকা) কথা উক্ত হয়েছে। দেবতা ও বিভিন্ন বর্ণ বা চিহ্নশালী পশুর নাম এই এয়োদশ সংখ্যক অনুবাকের মধ্যে পাওয়া যাবে। এতৎ ব্যতীত শুক্ল যজুর্বেদের ২৪শ অধ্যায়েও এগুলির উল্লেখ আছে।

.

একাদশ অনুবাক

মন্ত্র- রোহিতো ধুরোহিতিঃ কর্কন্ধুরোহিতন্তে প্রাজাপত্যা বরুণ বড়ুঃ শুকবভ্রস্তে রৌদ্রাঃ শ্যেতঃ শ্যেতঃ শ্যেতাক্ষঃ শ্যেগ্ৰীবস্তে পিতৃদেবত্যাস্তিঃ কৃষ্ণ বশা বারুণ্যস্তিঃ শ্বেতা বশাঃ সৌৰ্য্যো মৈত্রাবাহাস্পত্যা ধূম্বললামাপরাঃ ॥১১।

.

দ্বাদশ অনুবাক

মন্ত্র- পৃশ্নিস্তিরশ্চীনপৃশ্নিরূৰ্দ্ধবৃশ্নিস্তে মারূতাঃ ফলোহিতোণী বলক্ষী তাঃ সারস্বতঃ পৃষতী স্থূহপৃষতী ক্ষুদ্রপৃষতীতা বৈশ্বদেব্যাস্তিস্রঃ শ্যামা বশাঃ পৌষ্টিয়স্তিম্রো রোহিণীৰ্ব্বশ মৈত্রীয় ঐন্দ্রাবাস্পত্যা অরুণললমাপরাঃ ॥১২।

.

ত্রয়োদশ অনুবাক

মন্ত্র- শিতিবাহুরন্যতঃশিতিবাহুঃ সমণিতিবাহুস্ত ঐন্দ্রয়বাঃ শিতিরন্ধোহন্যতঃশিতিরহ সমস্তশিতিস্তে মৈত্রাবরুণাঃ শুদ্ধবালঃ সৰ্ব্বশুদ্ধবালো মণিবাল আশ্বিনাস্তিঃ শিল্প বশা বৈশ্বদেবস্তিঃ শ্যেনী পরমেষ্ঠিনে সোমাপৌষ্ণাঃ শ্যামললামাপরাঃ ॥ ১৩৷

.

চতুর্দশ অনুবাক

মন্ত্র- উন্নত ঋষভো বা নস্ত ঐন্দ্রাবরুণা শিতিককুচ্ছিতিপৃষ্ঠঃ শিতিভস ঐন্দ্রাবাম্পত্যাঃ শিতিপাচ্ছিতোষ্ঠঃ শিতিভ্রস্ত ঐন্দ্রাবৈষ্ণবাস্তিঃ সিধা বশা বৈশ্বকৰ্ম্মণ্যস্তিম্রো ধাত্রে পৃষোদরা ঐন্দ্রাপৌষ্ণাঃ শ্যেতললামাপরাঃ ॥১৪৷

 .

পঞ্চদশ অনুবাক

মন্ত্র- কর্ণাস্ত্রয়ো যামাঃ সৌম্যায়ঃ খিতিঙ্গা অগ্নয়ে যবিষ্ঠায় এখোনকুলান্তিম্রো রোহিণী স্ত্রব্যস্তা বসুনাং তিম্রোহরুণা দিতৌহাস্তা রুদ্রাণাং সোমন্দ্রা বললামাপরাঃ। ১৫

.

ষোড়শ অনুবাক

মন্ত্র- শুষ্ঠায়ো বৈষ্ণবা অধীলোধকর্ণাস্ত্রয়ো বিষ্ণব উরুক্রমায় লক্ষ্মদিনস্ত্রয়ো বিষ্ণব উরুগায়ায় পঞ্চাবীন্তি আদিত্যানাং ত্রিবৎসাস্তিস্রোহঙ্গিরামৈন্দ্রাবৈষ্ণবা গৌরললামাপরাঃ ॥১৬৷

.

সপ্তদশ অনুবাক

মন্ত্র- ইন্দ্রায় রাজ্ঞে এয়ঃ শিতিপৃষ্ঠা ইন্দ্রায়াধিরাজায় এয়ঃ শিতিককুদ ইন্দ্রায় স্বরাজ্ঞে ত্রয়ঃ শিতিভসদস্তিস্রস্তুৰ্যেীহ্য সাধ্যানাং তিঃ পঠোঁহ্যো বিশ্বেষাং দেবানামাগোঃ কৃষ্ণললামাপরাঃ ॥১৭।

.

অষ্টাদশ অনুবাক

মন্ত্র- আদিত্যৈ এয়ো রোহিতৈতা ইন্দ্রাণ্যৈ ত্রয়ঃ কৃষ্ণেতাঃ কুহুৈ ত্রয়োহরুণৈতাস্তিস্রোধেনবো রাকায়ৈ এয়োহনড়াহঃ সিনীবাল্যা আগ্নবৈষ্ণবা রোহিতললামাপরাঃ ॥১৮

.

ঊনবিংশ অনুবাক

মন্ত্র- সৌম্যায়ঃ পিণঙ্গাঃ সোমায় রাজ্ঞে এয়ঃ সারঙ্গাঃ পাজ্জন্যা নভোরূপান্তিম্রোহজা মহা ইন্দ্রাণ্যৈ তিম্রো মেষ্য আদিত্যা দ্যাবাপৃথিব্যা মালঙ্গাপরাঃ ॥১৯৷

.

বিংশ অনুবাক

মন্ত্র- বারুণাস্ত্রয়ঃ কৃষ্ণললামা বরুণায় রাজ্ঞে এয়ো রোহিতললামা বরুণায় রিশাদসে এয়োহরুণললামঃ শিল্পায়ো বৈশ্বাদেয়ঃ পৃগয়ঃ সৰ্ব্বদেবত্যা ঐন্ত্রাসূরাঃ শ্বেতললামাপরাঃ ॥২০৷

.

একবিংশ অনুবাক

মন্ত্র- সোমায় স্বরাহেনোবাহানাহাবিন্দ্রাগ্নিভ্যামোজোদাভ্যামুষ্টারাবিন্দ্রাগ্নিভ্যাং বলদাভ্যাং সীরবাহাববী দে ধেনু ভৌমী দিগভ্যো বডবে দ্বে ধেনু ভৌমী বৈরাজী পুরুষী দে ধেনু ভৌমী বায়ব আরোহণবাহানড়বাহৌ বারুণী কৃষ্ণে বশে আরডৌ দিব্যাবৃষভৌ পরিমরৌ । ২১।

.

দ্বাবিংশ অনুবাক

মন্ত্র- একাদশ প্রাতব্যাঃ পশব আ লভ্যন্তে ছগলঃ কল্মষঃ কিকিদীবিব্বিদী গয়স্তে ত্বাাঃ সোরীব শ্বেতা বশা অনূবন্ধ্যা ভবস্ত্যাগ্নেয় ঐন্দ্রাগ্ন আশ্বিনস্তে বিশালঘূপ আ লভ্যতে ॥ ২২।

.

ত্রয়োবিংশ অনুবাক

মন্ত্র- পিশঙ্গাস্ত্রয়ো বাসন্তাঃ সারঙ্গাস্ত্রয়ো গ্রৈন্থাঃ পৃষন্তস্ত্রয়ো বার্ষিকাঃ পৃশ্নয়স্ত্রয়ঃ শারদাঃ পৃশিসস্ত্রয়ো হৈমন্তিকা অবলিপ্তায়ঃ শৈশিরাঃ সম্বৎসরায় নিবক্ষসঃ ॥২৩৷৷

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *