জয় বাবাঠাকুর! শাঙন পার হল। চাষ ভাল। ভালয় ভালয় কেটে যাচ্ছে, বিপদ আসছে, কাটছে। এর চেয়ে আর ভাল কি হবে? ভাদ্র এল। ভাদুরে রোদে চাষী বিবাগী হয়। প্রচণ্ড রোদে জমজমাট ধানক্ষেতের মধ্যে সারা অঙ্গ ড়ুবিয়ে হামাগুড়ি দিয়ে ক্ষেতের এ মাথা থেকে ও মাথা পর্যন্ত আগাছা নিড়িয়ে বেড়াতে হয়; ধানের চারার রকরে পাতার ঘর্ষণে সারা দেহ মেজে যায়, ফুলে ওঠে, ধানচারার ভিতরে ওই রোদের ভাপসানিতে শরীরে গলগল করে ঘাম ঝরে। তখন মনে হয়, বাড়িঘর কাজকর্ম ছেড়ে বিবাগী হয়ে চলে যায় কোনো দিকে।
হাঁসুলী বাঁকের উপকথায় ‘পিথিমীর’ সব জায়গার মতই আষাঢ় যায়, শাঙন যায়, ভাদ্র আসে। আষাঢ় শাঙন যে কেমন করে কোন দিক দিয়ে যায় তা কাহারেরা জানতে পারে না। কাদায় জলে হাঁসুলী বাঁকের ক্ষেতে বুক পেড়ে পড়ে থাকে, মাথার উপরে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামে, গুরু গুরু শব্দে মেঘ ডাকে। শাঙন শেষ হলে খেয়াল হয়, ক্ষেতে রোয়ার কাজ শেষ হল। রোয়া শেষ হলে বাবাঠাকুরকে প্রণাম করে, আর আয়োজন করে বাবাঠাকুরতলায় ইদপুজোর। হ্রদ হলেন ইন্দ্ররাজা, যিনি বর্ষায় জল দিলেন, তাঁর স্বৰ্গরাজ্যের রাজলক্ষ্মীর এক অংশ পাঠিয়ে দিলেন। ‘ভোমণ্ডলে’ অর্থাৎ ভূমণ্ডলে। ইদপুজোর ব্যবস্থা করেন জমিদার, খেটেখুটে যা দিতে হয় তা কাহারেরা দেয়, মাতব্বরি করেন জাঙলের জোতদার মণ্ডল মহাশয়েরা। জমিদার দেন পাঠা, বাতাসা, মণ্ডা, মুড়কী, দক্ষিণে দু আনা; মণ্ডল মহাশয়েরা পাঠার ‘চরণ’ অর্থাৎ ঠ্যাং বৃত্তি পান, বাতাসা-মণ্ডার প্রসাদ পান, কাহারেরা শেষ পর্যন্ত বসে থাকে, ইদরাজার পুজোর শেষে থানটির মাটি নিয়ে পাড়ায় ফেরে। ওই মাটিতে পড়ার মজলিসের থানটিতে বেদি বাধে, জিতাষ্টমীর দিন ভজো সুন্দরীর পুজো হয়। ভজো সুন্দরীর পুজোতে কাহারপাড়ায় ‘অঙখেলার চব্বিশ প্রহর হয়ে থাকে, সে মাতনের হিসেবনিকেশ নাই। ভজো সুন্দরীর বেদি তৈরি করে তার ফুলে সাজিয়ে আকণ্ঠ মদ খেয়ে মেয়েপুরুষে মিলে গান কর নাচ। রাত্রে ঘুমোতে নাই, নাচতে হয়, গাইতে হয়,জাগরণ হল বিধি। পিতিপুরুষের কাল থেকে দেবতার হুকুম ‘অঙে’র গান—‘অঙের খেলা যার যা খুশি করবে, চোখে দেখলে বলবে না কিছু কানে শুনলে দেখতে যাবে না। ওই দিনের সবকিছু মন থেকে মুছে ফেলবে।
হারামজাদা করালী এবার আঁক করে চন্ননপুর থেকে এসে নিজের উঠানে কাহারপাড়ার পুরনো ভঁজের সঙ্গে আলাদা করে ভজো পাতলে। হেঁকে বললে ঘর ভাঙলে থানাতে নালিশ করেছিলাম, ভজো ভাঙলে মিলিটারি কোর্টে নালিশ করব। দুজনা লালমুখখা সাহেব—সেই ওর ‘ম্যান’রা এল করালীর সঙ্গে। ফটোক তুললে। তারাও ঠ্যাং ছুঁড়ে ছুঁড়ে নাচলে! তারা চলে গেল। চোলাই মদও খেয়ে গেল বোধহয়। সায়েবে ঘেন্না ধরে গেল বনওয়ারীর করালী সাহেব দেখালে বটে।
ওরে বেটা, বনওয়ারী ওসব দেখে ভয় পায় না। সাহেব! থুঃ!
বনওয়ারীও হুকুম দিলে—লাগাও জোর ধুমধাম ভজোতে। এবার মাঠে প্রচুর ধান হয়েছে। কোনোরকমে আশ্বিনে একটা মোটা বৰ্ষণ হলেই আর ভাবনা নাই। যুদ্ধের বাজারে ধানের দর চড়ছে, বিশেষ করে শাঙন মাসে। চন্ননপুরে, দেশ-দেশান্তরে স্বদেশীবাবুরা ‘অ্যাললাইন তোলাতুলির পর থেকে বাজার আরও লাফিয়ে চড়ছে। তা চড়ুক, তাতে কাহারেরা ভয় পায় না। নুন ভাত খাওয়া অভ্যেস আছে। তাইবা খাবে কেন? মাঠে মাছ হয়েছে এখন, মাছ আর ভাত, শাক পাতেরও অভাব নাই। মাঠের জল শুকালে পুকুরে বিলে মা-কোপাইয়ের গর্ভে আছে শামুক গুগলি কাছিম ঝিনুক। ঘেঁড়া কাপড় পরাও অভ্যেস আছে, সুতরাং যুদ্ধের আক্ৰাগণ্ডায় হাঁসুলী বাঁকের ভাবনা নাই। বরং ধান এবার বেশি হবে কাহারেরা ভাগেও বেশি পাবে, দর চড়লে লাভ হবে তাদের। সুতরাং করালীর সঙ্গে পাল্লা দিতে লেগে যাও বুক ঠুকে। আগে পাল্লা হত আটপৌরে-পাড়ার সঙ্গে। এখন হবে করালীর সঙ্গে। বাবাঠাকুর বোধহয় সদয়। হাসছেন বেশি, রোষ করলে সে ভুরুততলা রোষ। ভাদরের মেঘ-রোদের খেলার মত। এইবার কাটবে মেঘ। কালারুদ্র গাজনে এবারও বনওয়ারী হয়েছিল ভক্ত, লোহার কঁটামারা চড়কপাটায় চেপেছিল, বাবার মাথায় আগুনের ফুল চড়িয়েছিল; সেসব কি বৃথাই যাবে?
বাবা পুজো হাসিমুখেই নিয়েছেন। তারই ফলে কাহারপাড়ার এবার সময় ভাল।
মোট কথা, ওদিক দিয়ে অনেকটা নিশ্চিন্ত হয়েছে বনওয়ারী। হাতি নেমে বাঁশবাঁদির ক্ষতি করে নাই, উড়োজাহাজ ভেঙে পড়েছে। এই দুটি কারণে ওদিক দিয়ে তার ভয় কেটেছে। তবে আছে একটা ভয়—সেই কালোশশীর ভয় ও ভয়ও ভুলেছিল বনওয়ারী, কিন্তু রমণের বউকে। মেরে যে আবার ভয় ধরালে নতুন করে। তাও হাতে আছে মা-কালী বাবা ‘কালারুদ্দু’ কর্তাঠাকুরের মাদুলি। ভয় কাটার সঙ্গে এবারের এই মাঠভরা ধানের ভরসা তাকে সাহস দিয়েছে। অনেক। একথাও তার মনে উকিঝকি মারছে যে, মন্দ তার এখন হতেই পারে না; এইটাই তার চরম ভালর সময়, কপাল তার ফিরছে। সাহেবডাঙার ‘আচোট মাটির জমিতে এবার সবুজ ধান দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। যাকে বলে ‘চৌকস’ ধান, তাই হয়েছে। ঘোষেদের ভাগের জমিতেও ধান খুব ভাল। এরই মধ্যে একবার ধানের পাতা কাটাতে হয়েছে। ধানের গোছা হয়েছে মহিষের পায়ের গোছার মত। বনওয়ারীকে এবার খামার বাড়াতে হবে। খামার বাড়বে, একটা মরাইও করবে শক্ত করে। আর চাই ‘পুতু’ সন্তান, ওইটি হলেই তার বাসনা পূর্ণ হয়। বাচতে হবে অনেক দিন। ছেলেকে ডাগর করে, মাতব্বরির গদিতে বসিয়ে তবে বনওয়ারী নিশ্চিন্ত হয়ে চোখ। বুজতে পারবে। এদিক দিয়ে ভয় তার করালীকে। এই যুদ্ধের বাজারে কলে ‘ওজগার করছে। দু হাতে, আর গায়েও ক্ষমতা আছে, বুকেও আছে দুর্দান্ত সাহস। সে যদি ছেলেকে ছোট রেখে মরে, তবে করালী জোর করে চেপে বসবে মজলিসের মাতব্বরির পাথরে। হয়ত মেরেও ফেলতে পারে কলে-কৌশলে। ওই কারখানার কাজের লোভ দেখিয়ে নিয়ে গিয়ে দেবে কলের মুখে ঠেলে। তাকে অনেক দিন বাচতে হবে। কাহারপাড়ার মঙ্গল করতে হবে, তাদের দুঃখে। কষ্টে বুক দিয়ে পড়তে হবে, পর্বে পার্বণে প্রচুর আনন্দ দিতে হবে। প্রচুর আনন্দ।
বড়লোক মহাশয়েরা, জাঙলের সদূগোপেরা, বাউরি হাড়ি ডোম এদের বলেন ছোটলোকের জাত। সদাশয়েরা বলেন-গরিব দুঃখী, দুঃখ মেহনত করে খায়। দুটো কথাই সত্যি। গরিব দুঃখীরা আন ভালবাসে-আনন্দ পেলেই ছুটে যায়। আবার ছোট মনেরও পরিচয় দেয়, চিরকাল যেখানে আনন্দ করে আসছে, সেখানের চেয়ে আজ অন্যখানে নতুন করে বেশি আনন্দের ব্যবস্থা হলে—চিরকালের স্থান ছেড়ে সেইখানে ছুটবে! করালী আজ তাই করতে চাইছে। রোজকারের গরমে ভজো পেতেছে নিজের ‘আঙনেতে’ অর্থাৎ আঙিনায়। আলো আনবে ভাড়া করে; বেহালাদার আনবে, ‘হারমনি আনবে; চন্দনপুরের যত জাত-খোয়ানো মেয়েদের আনবে, তারা নাচবে নসুবালার সঙ্গে। সিধু আসবে, পাখী তো আসবেই। আরও কতজন আসবে।
আসুক। বনওয়ারীও আলো ভাড়া করেছে। খুব ভাল ঢোল সানাই কাঁসি ভাড়া করেছে। হুকুম দিয়েছে—বেবাক ‘যোবতী’ অর্থাৎ যুবতী কাহার-কন্যে-বউকে নাচতে হবে। সবুজ লাল হলদে রঙ এনে দিয়েছে, কাপড় ছুপিয়ে রঙিয়ে নাও। সুবাসীও নাচবে। সুবাসীকে একখানা রঙিন শাড়িই কিনে দিয়েছে সে। গোপালীবালাও নাচবে। তাকেও কাপড় কিনে দিয়েছে সে। ছোকরাদের হুকুম দিয়েছে—তুলে আন বেবাক পুকুরের পদ্ম আর শালুক ফুল। সাজাও ভাঁজোর বেদি। ঐ সমস্তের ভার দিয়েছে পাগল কাহারকে। সেই চাষের সময় পালিয়েছিল, হঠাৎ কাল ভাঁজোর আগের দিন সে ঠিক এসেছে। ভর্তি দুপুরে মাথায় আট-দশটা ডাঁটিসুদ্ধ শালুক ফুল জড়িয়ে মাঝখানে একটা কাঁচা কাশফুল খুঁজে বুড়ো-ছোকরা গান গাইতে গাইতে হাঁসুলী বাঁকে ফিরেছে—
কোন্ ঘাটেতে লাগায়েছ ‘লা’ ও আমার ভাঁজো সখি হে!
আমি তোমায় দেখতে পেছি না।
তাই তো তোমায় খুঁজতে এলাম হাঁসুলীরই বাঁকে–
বাঁশবনে কাশবনে লুকাছ কোন ফাঁকে!
ইশারাতে দাও হে সখি সাড়া
তোমার আঙা পায়ে লুটিয়ে পড়ি গা
ও আমার ভাজো সখি হে!
পাগল-সাঙাতের বলিহারি আছে।
কুড়ু তাং-কুড়ু তাং-তাক্-তাক্-তাক্-তাক্ শব্দে ভজো পরবের ঢোল বেজে উঠল। মাঠের কাজ নাই আজ, মনিববাড়ি নাই আজ, কাহারেরা কেউ আজ আজা’রও প্রজা নয়, মহাজনেরও খাতক নয়; কোপাইয়ের পুলের উপর দিয়ে গাড়ি যাওয়ার সময়সঙ্কেতের দিকেও কেউ কান দেবে না; উঠানে সূর্যঠাকুরের রোদ কোন্ সীমানা পার হচ্ছে, সেদিকেও কেউ তাকাবে না। দুধোল গাইগরুর বাছুরগুলকে আগেকার কালে এই দিনটিতে বাধাই হত না। ওরা পেট ভরে দুধ খেত। আজকাল চােররাত্রে দুধ দুইয়ে নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। ওদের ছেড়ে দাও হাঁসুলী বাঁকের ধারে-চরভূমিতে। ইচ্ছামত চরে খাক। তাতে দু-চারখানা জমির ধান খেয়ে নেয়—নিতে দাও। হাঁড়ি-হাড়ি মদ ‘রসিয়ে উঠেছে ভাদুরে গরমে-ঢাকনি খুলতেই বাতাসে গন্ধ বেরিয়েছে। কাহারপাড়ার মাথার উপরে ওই গন্ধে কাকের দল কলরব করছে, মাটির দিকে চেয়ে দেখপচা ভাতের কুটির জন্য পিপড়েরা সার ধরেছে, কুকুরগুলো ঘুরঘুর করে ঘুরে বেড়াচ্ছে। পাগল ঢোলের বাজনার বোলকে নিজের মনের মত করে পাল্টে নিয়ে বলছে ‘কাজকাম’ ‘পাটকাম’ থাক্ থাক্ থাক্ থাক্! নাচ না কেনে মেয়েরা, নাচ না কেনে গো! চল, কোপাইয়ের ঘাট থেকে ঘট ভরে আনি, নে ‘পাঁচ আঁকুড়ি’র সরা মাথায় নে। ‘পাঁচ আঁকুড়ি অর্থাৎ পঞ্চাঙ্কুর।
বনওয়ারী নিজে মদ হুঁকতে বসেছে। ‘মাতা’ অর্থাৎ পচুই-ঘঁকা পচা ভাতগুলো ফেলে দিচ্ছে কুকুরগুলোকে; ডাব বেঁধে কতক দিচ্ছে ছেলেদের হাতে দিয়ে আয় গরুগুলোর মুখের কাছে, বলদ গাই বাছুর সবাইকে দিবি। খাক, আজকের দিনে সবাই খাবে। ভেড়া হাঁস মুরগি–ওদিকেও দে।
এইবার আয় তোরা, বসে যা। লে ঢাকাটক, লে ঢাকাঢ়ক। মেয়েরা, লে গো, তাদের ভাগ তোরা লিয়ে যা। লে ঢাকাঢ়ক। বায়েনরা লাও ভাই। বাজাও, বেশ মধুর করে বাজাও! সানাইদার, দেখব তোমার এলেম—করালী হারামজাদা বেহালা হারমনি এনেছে, কানা করে দিতে হবে। লে ঢকাক।
“ভাঁজো লো সুন্দরী, মাটি লো সরা
ভাঁজোর কপালে অঙের সিঁদুর পরা।
আলতার অঙের ছোপ মাটিতে দিব,
ও মাটি, তোমার কাছে মনের কথা বলিব,
পঞ্চ আঁকুড়ি আমার ধর লো ধরা”
এইটুকু গান হল—মন্তরের মত। সব দলকেই গাইতে হবে এটুকু। ওদিকে নসুবালার দল বার হয়েছে। করালী নিজে বাঁশের বাঁশি বাজাচ্ছে। কাপড়চোপড়ের ঘটা খুব ওদের। সব ‘নতুন’ কাপড়। চন্ননপুরের পাপের পয়সা যে, হবে না কেন? কিন্তু তবু রঙের ছটা কাহারপাড়ার মেয়েদের কাপড়েই বেশি। নতুন করে রঙ-করা পুরনো কাপড়গুলি রঙের গাঢ়তায় ঝকমক। করছে।
কোপাইয়ের ঘাটে একদফা গালাগালি হয়ে গেল দুই দলে। গানে গানে গালাগালি। চিরকাল হয়ে আসছিল কাহারপাড়ায়-আটপৌরে-পাড়ায়। এবার হচ্ছে কাহারপাড়ার আর করালীর দলের মধ্যে। একদিকে পাগল, অন্যদিকে নসুবালা। এই ভাঁজোর দিনে ন পাগলের কথায় ক্ষ্যাপে না, ভয় করে না। সমান মাতনে মাতে। মুখে মুখে গান বেঁধে গায় গালাগালি-যে কোনো গালাগালি। তবে তার মধ্যে শাপ-শাপান্ত নাই। ‘অঙে’র গাল—‘অসে’র গাল।
তারপর ঘাট থেকে ফিরে আরম্ভ হল আপন আপন এলাকায় নাচ আর গান। প্রথমেই নিয়মচিরকালের নিয়ম বয়সওয়ালা মেয়েরা নাচতে আরম্ভ করবে। চিরকাল এ নাচ আরম্ভ করে সুচাঁদ। এবার সুচাঁদ গিয়েছে করালীর দলে। এখানে কে নাচবে?
পাগল ছুটে গিয়ে ধরে নিয়ে এল গোপালীবালাকে। গোপালীবালার নেশা ধরেছে, তবুও লাজুক মানুষ, বলছেন না। তার উপর পাগলের তাকে সাঙা করতে চাওয়ার কথা মনে করে সে বেশি লজ্জা পাচ্ছে। মুখে ‘অঙ ধরেছে লজ্জাতে। সকলে খুব হেসে উঠল।—বলিহারি ভাই—বলিহারি ভাই!
বনওয়ারীর মন কিন্তু উদাস হয়ে গিয়েছে। মনে পড়ছে কালোশশীকে। তবু সে হাসছে, না হাসলে চলবে কেন? হঠাৎ তার নজরে পড়ল ওপাশে দাঁড়িয়ে আছে নয়ানের মা। বড় মায়া হল তার উপর। আহা, সব হারিয়ে নিরানন্দ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে! মনে পড়ে গেল সব কথা। সে এগিয়ে গিয়ে ধরলে তার হাত। বললে—এস, তুমি আমি আগে নাচব।
‘ভাঁজোর পরব’ সুখের দিন। মদের নেশায় মাথা ছমছম করছে, আকাশে মেঘ কেটেছে, নীলবরন আকাশের তলায় ঝাকবলি সাদা দুধবরন বক উড়ে চলেছে। নীলের বাঁকে ‘গোরাকান্দার’ মাঠে পদ্মশালুক ফুটেছে, পদ্মপাতার উপর জলের টোপা টলমল করে রোদের ছটায় ঝলছে যেন মানিক-মুক্তোর মত, শিউলি ফুল ফুটে টুপটাপ করে ঝরে পড়ছে। স্থলপদ্ম গাছগুলিতে ফুল ফুটেছে কাহারপাড়া আলো করে, কোপাইয়ের বুকের বান নেমে গিয়েছে, ঘোলা জল সাদা হয়ে এসেছে; তবু নয়ানের মায়ের সুখ কোথায়? আউশধানে থোড় হয়েছে, দশ মাসের পোয়াতির মত থমথম করছে আউশের মাঠ, পুকুরে পুকুরে শোলমাছেরা ঝাকবন্দি বাচ্চা নিয়ে বেড়াচ্ছে, ডালে ডালে পাখিরা কচি বাচ্চাদের ছাড়ান দিচ্ছে—যাও, তোমরা উড়ে বেড়িয়ে চরে খাও গিয়ে, জাঙলে চন্ননপুরে মা-দুর্গার কাঠামোয় মাটি পড়েছে; কাল গিয়েছে জিতেষষ্ঠী। আজ কি নয়ানের মা নয়ানকে ভুলতে পারে? নয়ান যেদিন করালীর হাতে মার খেয়ে হাঁপাচ্ছিল, সেদিনও তার মনে পড়েছিল পুরনো কথা। সেদিনও যে বনওয়ারীর হাত ধরে টেনেছিল বাঁশবনের আঁধার রাজ্যের দিকে। কিন্তু আর না—আর না। সে বনওয়ারীর হাত ছাড়িয়ে ছুটে চলে গেল নিজের ঘরের দিকে। তারপরে প্রথমে সে ডাকলে নয়ানকে।—ফিরে আয়, সবাই নাচছে, তুই নাই শুধু। ফিরে আয়। তারপর আরম্ভ করলে সে গোটা কাহারপাড়াকে অভিসম্পাত দিতে।
বনওয়ারী স্তম্ভিত হয়ে গেল। এ কি হল!
পাগল তার হাত ধরে টেনে বললে—কিছু নয়। ওদিকে কান দিস না। নাচ। সে টেনে। নিয়ে এল সুবাসীকে। মদের নেশায় সুবাসী টলমল করছে পদ্মপাতায় জলের টোপার মত। চোখে যেন আধখানা চাদ নেমেছে; গায়ে যেন জ্বরের মতন তাপ।
বাঁশের বাঁশি কে বাজায় রে? কে?
বনওয়ারী দেখলে, করালী কখন এসে দাঁড়িয়েছে তাদের ভজোতলায়, তার আর সুবাসীর। নাচ দেখে হাসছে, গানের সঙ্গে বাঁশি বাজাচ্ছে। ইয়া টেরি, পোশাকের বাহার কত, গায়ে খোসবয় উঠছে।
বনওয়ারী বুক ফুলিয়ে এগিয়ে এল। কিন্তু পাগল ধরলে তাকে।–খবরদার! তু কত বড়। মানুষ মনে আকিস। পিতিপুরুষের বাক্যি মনে কর্। আজ অঙের দিন—চোখ থাকতে দেখোনা, কান থাকতে শুনো না, পরান যা চায় তা অমান্যি করো না। লে লে, বাজা বাঁশি, করালি বাজা বাঁশি।
করালী সুবাসীর দিকে চেয়ে রয়েছে। পাগল তাকে দিলে খেচা।—বাজা না কেনে? দেখিস কি? সকলে হো-হো করে হেসে উঠল। পানা হাসছে সবচেয়ে বেশি। কাসার বাসনের আওয়াজের মত তার খনখনে আওয়াজের হাসি। সুবাসীও হেসে উঠল খিলখিল করে। সঙ্গে সঙ্গে হাতের কাচের চুড়িগুলোও ঝুনঝুন করে বাজল।
বনওয়ারীর সারা অঙ্গ নিশপিশ করছে। গায়ে তাপ বেরুচ্ছে। কিন্তু উপায় নাই, পিতিপুরুষের বারণ। তবে সেও যাবে নাকি করালীর ভাজোতলায়? পাখীও তো নাচছে সেখানে। ছি-ছি-ছি! হে বাবাঠাকুর! হে ধরম রাখার মালিক, তুমি রক্ষা কর।
যার সঙ্গে ভাব নাই তার সঙ্গে কাহারেরা হাসে না। কিন্তু করালী চন্ননপুরের কারখানায় গিয়ে অন্য রকম হয়েছে। চন্ননপুরের বাবুরা ভাব না থাকলেও হাসেন। মুখুজ্জেবাবুরা এবং চাটুজ্যেবাবুরা চিরকাল মামলা-মকদ্দমা দাঙ্গা-হাঙ্গামা করে আসছেন, কিন্তু বাইরে থেকে দেখে। বুঝবার যো নেই। এ-বাবুরা ও-বাবুর বাড়ি যাচ্ছেন সকালে, বিকালে ও-বাবুরা এ-বাবুদের বাড়ি আসছেন, হাসিখুশি রঙ-তামাশা গাল-গল্প গান-বাজনা করছেন। দেখে অবাক হয়ে যায় বনওয়ারী। করালীও দেখা যাচ্ছে তাই শিখেছে। বনওয়ারীকে বললে ও—একবার আমার ভাঁজোর থানে এসে মামা। পাকী মদ–
বনওয়ারী রূঢ়ভাবে মধ্যপথেই বললে–না।
করালী হাসতে হাসতেই চলে গেল। সে হাসি দেখে সর্বাঙ্গ জ্বলে গেল বনওয়ারীর। হারামজাদা চলে গেল কত রঙ্গ করে, শিস দিতে দিতে সারা ভজোতলায় একটা সুবাস ছড়িয়ে দিয়ে। বাবুদের মত ‘আতর খোসবাই’ মেখেছে!
পানা ছড়া কেটে উঠল—“ভাদোরে না নিড়িয়ে ভুঁই কাঁদে ‘রবশ্যাষে’–অজাতে পুষিলে ঘরে সেই জাতি নাশে!”
বনওয়ারী রুক্ষ দৃষ্টিতে তাকালে পানার দিকে, পানা আজ কিন্তু ভয় পেলে না। আসরটাই আজ ভয় পাবার আসর নয়, ভজো সুন্দরীর আসর, ‘অঙের আসর, আনন্দের আসর, আজ ছোট বড় নাই; তার উপর পেটে মদ পড়েছে প্রচুর। পা টলছে, মন চনচন করছে। সাহস বেড়েছে। পানা বনওয়ারীর রূঢ় দৃষ্টিকে উপেক্ষা করেই বললে—আমার দিকে তাকালে কি হবে বল? জাত আর থাকবে না, অজাত ঢুকেছে ঘরে। বানের জল ঘরে ঢোকালে—ঘরের জলও তার সাথে মিলে। বেরিয়ে যায়। দেখ গা, করালীর আসরে বেবাক ছেলে-ছোকরারা জুটে যেয়েছে।
বনওয়ারী স্তম্ভিত হয়ে গেল। কিছুক্ষণ স্তম্ভিতভাবে বসে থেকে সে উঠল; উঠে গিয়ে মদের জালার কাছে বসে একটা ভাড় নিয়ে গলগল করে গলায় মদ ঢালতে লাগল। দেখতে দেখতে। পিথিমী যেন ঘুরতে লাগল-নাচতে লাগল তার চোখের সম্মুখে। মনে মনে সে ডাকতে লাগল। বাবাঠাকুরকে। সুবাসী নাচছে, গোপালী নাচছে, প্রহ্লাদের মেয়ে, গুপীর বেটার বউ নাচছে, পাগল গান গাইছে। বনওয়ারী কিন্তু তা দেখছেও না। তার দৃষ্টি বাবাঠাকুরের থানের দিকে। শুক্লানবমীর চাদ অনেকক্ষণ ড়ুবে গিয়েছে, বাবাঠাকুরতলায় অন্ধকার থমথম করছে। কিন্তু বনওয়ারী দেখতে পাচ্ছে, বাবাঠাকুর বেলগাছটির ডালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন।
বাবা, শুধু দাঁড়িয়ে থেকে না। একবার হক মেরে বল—সাবোধান–সাবোন! নইলে ইশারা দাও। জানান দাও। চমকিয়ে দিয়ে সকলকে সাবোধান করে দাও। চিরকাল দিয়ে এসেছ বাবা, আজ এই সঙ্কটের সময় তুমি চুপ করে থেকো না। হাঁসুলীর বাঁকের উপকথায় অনেক নজির আছে। সুচাঁদ বলে—আটপৌরে-পাড়ার দল যে-বারে ডাকাতি করতে গিয়ে ধরা। পড়েছিল, সে-বারে বাবা সাবোধান করে দিয়েছিলেন।
-আনার ঘুরঘুট্টি আত, শাওন মাস, আকাশে অল্প ছিলছেলানি মাঘ। আটপৌরেরা ডাকাতি করতে বার হল। অ্যাই অ্যাই জোয়ানা লাটি ঘোরাচ্ছে যেন বন-বন, ব-বন্। তার। আগুতে বাবাঠাকুরের হুকুম হয়েছে—চুরি ছাড়, চাষ কর। কাহারেরা চাষ ধরলে; আটপৌরেরা অক্তের ত্যাজে, মাথার গরমে মানলে না। একবার ডাকাতি, দুবার ডাকাতি, তিনবার-চারবার ক্ষমা করলেন, তাঁচবারের বার শাওন মাসে যেই ফের বার হবে—এই দুখানা মাঠ পেরাছে, অমুনি কড়কড় করে বাজ পড়ল বাবার দহের ধারে শিমুলগাছের পাশে তালগাছের মাথায়। তবু মানলে না, না মেনেই যেই যাওয়া, অমুনি পিতিফল হাতে হাতে। তিন জনা আটপৌরে ধরা পড়ে গেল।
চৌধুরী মহাশয়দের, যে-বারে জাঙল বাঁশবাঁদি মহল নিলাম হয়, সে-বারে চৌধুরীদের নাচগানের আসরে আটচালার চালে আগুন জ্বলে উঠেছিল তোমার ইশারায়; যে আলো চিরকাল আসরে জ্বলত পঞ্চাশ বাতি আলো, সেই আলোই জ্বলছিল, সেই আলোর শীষ গিয়ে লাগল দড়িতে, দড়ি বেয়ে আগুন লাগল চালে, পঞ্চাশ বাতি আছাড় খেয়ে পড়ল। ‘কেরাচিনির’ তেল ছড়িয়ে পড়ল, জ্বলতে লাগল। বাবা ইশারা দিয়েছিলেন সাবোধান। মা-লক্ষ্মী চঞ্চল হয়েছেন—নাচ গান মদ-মাতালির সময় নয় এখন। কিন্তু কাকে বলছ? কে শুনছে? চৌধুরীরা শোনে নাইছ মাসের মধ্যে নিলাম হয়ে গেল সব।
তেমনি করে সাবধান করে দাও। জ্বলে উঠুক করালীর ঘরের চাল, নইলে যারা গিয়ে জুটেছে ওই জাতনাশার আসরে—তাদের চালে। আমাদের ভাঁজোর আসরে আজই সাবধান করে দাও বাবা সকলকে। না না বাবা, গায়ের ভেতরে আগুন ফ্ৰেলো না বাবা। তাতে কাজ নাই। গরিবের সর্বনাশ হবে বাবা। গায়ের ধারে তালগাছের মাথায় ওই পরমার ঘরের কানাচে ওই সবচেয়ে উঁচু গাছটার মাথায় বাজ ফেলে দাও। না হয়, পরমার ঘরখানা পতিত পড়েছে,–পরমা ফেরার, কালোবউ মরেছে–ওই ঘরটায় আগুন জ্বলে তো জ্বলুক। হ্যাঁ বাবা, তাই জ্বলুক।
পাগল বললে—আর মদ খাস না বনওয়ারী। উঠে আয়। গোপালীবউকে ঘর নিয়ে যা, বে-এার হয়েছে।
নাচতে নাচতে মাতাল হয়ে গোপালীবালা মাটিতে শুয়ে পড়েছে, বমি করছে।
বনওয়ারী উঠে দাঁড়াল। চোখ দুটো তার লাল হয়ে উঠেছে, মদ খেয়ে চোখ অবশ্য সকলেরই লাল হয়েছে, কিন্তু বনওয়ারীর চোখে যেন লালের সঙ্গে ভর চেপেছে।
পাগল ভয় পেলে, ভয়ের সঙ্গেই ডাকলে—বনওয়ারী।
বনওয়ার চোখের ইঙ্গিত করে একটা আঙুলে নিৰ্দেশ দিয়ে কি দেখালে, বললে-কত্তাবাবা, বাবাঠাকুর।
—কি? কি বলছিস?
–সাবোধান!—বাবা বলছে। বনওয়ারী টলতে টলতে চলে গেল বাবাঠাকুরের ‘থানের দিকে। সুবাসী নাচতে নাচতে থেমে গেল। বনওয়ারীর পিছনে পিছনে খানিকটা গিয়ে থমকে দাঁড়াল। একটুখানি দাঁড়িয়ে থেকে সে ফিরল, কিন্তু ভজোতলার দিকে নয়। ওদিকে ভজোতলার সকলে শঙ্কিত হয়ে উঠেছিল। পাগল বললে—ভাগ শালো, বেজায় মদ খেয়েছে! লে—লে, সব গান কর। আমি গোপালীবউকে বাড়িতে শুইয়ে দিয়ে আসি। উঁহুঁ, ও পেল্লাদের বউ, তুমি যাও ভাই, গোপালীবউকে তুমিই ধরে নিয়ে যাও।
পেল্লাদের বউ মুচকে হাসল।—কেনে হে? ভয় নাগছে নাকি? অঙের ভয়? পাগলও হাসল, সঙ্গে সঙ্গে গান ধরলে–
যে অঙ আমার ভেসে গেল
কোপাই নদীর জলে হে!
সে অঙ যেয়ে লেগেছে সই
লালশালুকের ফুলে হে!
(কোপাই নদীর জলে হে!)
সেই শালুকে মন মানালাম
সকল দুখখা পাসরিলাম
তোমার মনের অঙের মলা
তুমিও দিয়ে ফেলে হে
(কোপাই নদীর জলে হে!)
নিত্য নতুন ফোটে শালুক
বাসি ঝরে গেলে হে
(কোপাই নদীর জলে হে!)
গান চলতে লাগল। মেয়েরা নাচছে। গোপালীবউ যেমন পড়ে ছিল, পড়েই রইল। ঘরে। ধরে নিয়ে যাবার কথা সকলে ভুলে গেল মুহূর্তে।
ওদিকে করালীর আসর খুব জমেছে। ওদের গান হলফ্যাশানের গান। কলের গানের ‘র্যাকডে’র গান। বাঁশের বাঁশি-বাশেরো বা-শি, বাশেরো বা-শিখুব গাইছে মেয়েগুলো নসুবালার সঙ্গে। কিন্তু করালীর বাঁশি শোনা যাচ্ছে না।
হঠাৎ বনওয়ারী চিৎকার করতে করতে ফিরে এল সাবোধান! সাবোধান? ওই দেখৃ ওই দেখ্।
বাঁশবাঁদির চারিপাশে রাত্রির অন্ধকার ঘন ঘুরঘুট্টি হয়ে রয়েছে, তার মধ্যে এক জায়গায় জ্বলজ্বল করে আগুন জ্বলছে। ধোঁয়ার গন্ধ আসছে। ভাদ্র মাসের ভিজে খড়-পোড়া ধোঁয়ার গন্ধ। আগুন! আগুন! বনওয়ারী ধড়াস করে পড়ে গেল ভূতগ্ৰস্তের মত। গোপালী উঠে বসল হঠাৎ। সে মদের নেশায় রাঙা চোখে বিভ্রান্তের মত চেয়ে রইল বনওয়ারীর দিকে।
পুরুষেরা সকলেই ছুটে গিয়ে পড়ল আগুনের ধারে। আটপৌরে-পাড়ার পরমের ঘরে নয়, রমণের ঘরে। রমণের ঘরও শূন্য পড়ে আছে, সে থাকে বনওয়ারীর বাড়িতে। বউ মরার পর থেকেই সে অসুস্থ হয়ে শয্যা নিয়েছে বনওয়ারীর দাওয়ায়।
আগুন কিছুক্ষণের মধ্যেই নিবে গেল। ছোট ঘরের চালে অল্প কিছু খড় তাও ভিজে, তাতেই আগুন লেগেছে, এদিকে কাহারপাড়া ও আটপৌরে-পাড়ায় মরদের দল অনেক। আগুন নিবিয়ে আবার সব ফিরল ভজোতলায়।
নয়ানের মা তীব্রস্বরে গাল দিচ্ছে—হে বাবা, সব পুড়িয়ে ছারখার করে দাও, যে আগুনে তোমার বাহনকে পুড়িয়েছে, সেই আগুনে সব শ্যাম্যাশ করে দাও।
পাখী বললে—সে কই? সে? মানে করালী।
নসু বললে-তাই তো! সে আবার গেল কমনে?
করালী ফিরল আরও কিছুক্ষণ পরে। কারও কোনো প্রশ্নের জবাব দিলে না, নাচতে লাগল, সে কি নাচ! পাখীকে টেনে নিলে সঙ্গে।
বনওয়ারীর চেতনা হল সকালবেলায়। মাথার মধ্যে খুব যন্ত্রণা আর একটা আতঙ্ক। গোপালীবালা কেশবেশ এলিয়ে অগাধ ঘুমে অসাড় হয়ে শুয়ে আছে ঘরের দাওয়ায়। সকালবেলায় ভজো ভাসিয়ে স্নান করে ঢুকল সুবাসী। যুবতী মেয়ে, শক্ত শরীর, মদ খেয়েও সে একেবারে অচেতন হয়ে পড়ে নাই। বনওয়ারী তার দিকে একবার তাকালে, কিন্তু কোনো কথাই বললে না। তার মাথার মধ্যে ঘুমুচ্ছে যেন একটা ভয়।
সুবাসী তার দিকে তাকিয়ে হাসলে একটু।
স্নান করে এলেও সুবাসীর অঙ্গ থেকে একটা মৃদু সুবাস উঠছে যেন। কিন্তু বনওয়ারীর নাকের কাছে ভনভন করে মাছি উড়ে বেড়াচ্ছে—মদের গন্ধ উঠছে তার সর্বাঙ্গ থেকে।