2 of 2

৫.১২ মানবেন্দ্রনাথ ও নবমানবতাবাদ

মানবেন্দ্রনাথ ও নবমানবতাবাদ

মানবেন্দ্রনাথের সঙ্গে যখন আমার ব্যক্তিগত পরিচয় ঘটে তখন তিনি মার্ক্সবাদ ত্যাগ করে নবমানবতাবাদের দিকে যাত্রা শুরু করেছেন। এই যাত্রাপথে কয়েকটি ছোটো স্টেশন। তিনি দ্রুত অতিক্রম করে যান। পাশ্চাত্য সমাজতান্ত্রিক বা সোশ্যাল ডেমক্র্যাটিক মতবাদের সারাৎসার নিয়ে কিছু দিন তাঁকে বিচার-বিবেচনা করতে দেখি। ইতালীর দুই নেতা সারাগাত ও নেন্নিকে নিয়ে আলোচনা হয়। কিন্তু এইসব কোনো মতবাদেই তাঁর বুদ্ধি বিশ্রামস্থান খুঁজে পায়নি। নবমানবতাবাদে এসে তবেই তিনি শান্তি লাভ করেন। এর কিছু কারণ আছে।

(ক)

মানবেন্দ্রনাথ কর্মে ও চিন্তায় দুঃসাহসিক ছিলেন। প্রথম জীবনে কর্মের দুঃসাহসিকতাই বিশেষভাবে চোখে পড়ে। এক্ষেত্রে তিনি উল্লেখযোগ্য, তবু অতুলনীয় নন। জীবনমৃত্যু-পায়ের-ভৃত্য এইরকম একটা ভাব স্বাধীনতাসংগ্রামের অগ্নিযুগে আরো বহু স্মরণীয় মানুষের ভিতর দেখা গেছে। অবশ্য রায়ের অক্লান্ত পৃথিবী পরিক্রমার সঙ্গে নির্ভীকতার সংযোগে উনিশ শ তিরিশ সাল পর্যন্ত তাঁর জীবন একটা বিশেষ চরিত্র লাভ করেছিল যেটা অবিস্মরণীয়। তবু স্বীকার করা আবশ্যক যে, ভূ-পরিক্রমাই নয়, একালে যেটা ক্রমেই সহজ হয়ে উঠেছে, বরং সেই সঙ্গে মননের দুঃসাহসিকতাই মানবেন্দ্রনাথকে অনন্য করে তুলেছে। মানুষের ভিতর দিয়ে একটি অক্লান্ত সৃজনশীল চেতনার শক্তি দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে চলেছে, একথা ইতিহাসের পাতা থেকে আমরা জানি। সেই শক্তিকে আমারই যৌবনে একটি ব্যক্তির ভিতর দিয়ে, সীমাবদ্ধ সময়ের রঙ্গমঞ্চে, এমন অসাধারণ ভূমিকায় এত কাছে থেকে দেখবার সুযোগ পেয়েছিলাম, এটাকে সৌভাগ্য বলেই মানি।

তরুণ বয়সে জাতীয়বাদের অগ্নিমন্ত্রে দীক্ষিত হয়েছিলেন নরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। তিনিও শিখেছিলেন দেশকেঁদেবীরূপে পুজো করতে, তাঁরও চেতনায় তরঙ্গ তুলেছিল বলে মাতরম্ সঙ্গীত। অথচ পরবর্তী কালে নরেন্দ্রনাথের শুধু নামেরই পরিবর্তন হয়নি, চিন্তা ও বিশ্বদর্শনেরও এমনই রূপান্তর ঘটল যে, মানবেন্দ্রনাথ হয়ে উঠলেন জাতীয়তাবাদের এক শক্তিমান সমালোচক। বলা বাহুল্য, মার্ক্সবাদের প্রভাবে তাঁর চিন্তার এই বিকাশ সম্ভব হয়। সে যুগে মার্ক্সবাদীদের ভিতরও উল্লেখযোগ্য বিভিন্ন গোষ্ঠী ছিল। এই সব গোষ্ঠীর ভিতর জার্মানিতে এবং অন্যত্র যারা জাতীয়তাবাদের প্রভাব থেকে সব চেয়ে মুক্ত, তাদের। সঙ্গে মানবেন্দ্রনাথের বিশেষ পরিচয় ঘটে। ইউরোপে তখন চলেছে নাটকীয় পটপরিবর্তনের যুগ। বিভিন্ন ঘটনার ভিতর দিয়ে মানবেন্দ্রনাথ জাতীয়তাবাদের বিপদ সম্বন্ধে তীক্ষ্ণভাবে সচেতন হয়ে ওঠেন। এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য জার্মানিতে নাৎসী আন্দোলনের অভ্যুত্থান। ভারতের নানা ঘটনাতেও তাঁর এই নতুন বিচারধারা পুষ্টিলাভ করে।

মনে রাখা ভালো যে, এ-দেশের আরো একজন মহান পুরুষ প্রথম মহাযুদ্ধের পরবর্তী যুগে জাতীয়তাবাদের সমালোচনা করেন, দেশে ও বিদেশে, সুস্পষ্ট ভাষায়। তিনি স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ। তাঁর তৎকালীন যে-সব বক্তৃতা Nationalism নামে পুস্তকে প্রকাশিত হয় তা থেকে এ-বিষয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ থাকে না। রবীন্দ্রনাথ মার্ক্সবাদী ছিলেন না, বরং উপনিষদের বাণীর স্পর্শ আছে তাঁর বিশ্বচেতনায়। কিন্তু তাঁরও চিন্তার এক উত্তরণ দেখি-১৯০৫ সালের উন্মাদনা ও স্বপ্নময়তা থেকে অন্য এক স্বচ্ছতায়। আর এখানেও প্রভাব আছে কিন্তু তৎকালীন অভিজ্ঞতার রক্তক্ষয়ী বিশ্বযুদ্ধ, জাপানের আগ্রাসী অভিযান, ভারতে সংকীর্ণ বিদেশীবিদ্বেষ, পৃথিবীময় সাম্রাজ্যবাদী ক্রুরতা।

রবীন্দ্রনাথের দৃষ্টিতে patriotism বা স্বদেশের প্রতি ভালোবাসা এক বস্তু, আর nationalism বা জাতীয়তাবাদ অন্য বস্তু। প্রতিবেশীর প্রতি প্রীতি, দেশের মাটির জন্য মমতা, প্রকৃতিপ্রেম, এই সব মানুষের চেতনার সঙ্গে জড়িত প্রাচীনকাল থেকে। জাতীয়তাবাদের যোগ আধুনিক রাষ্ট্রের সঙ্গে। রাষ্ট্রের লক্ষ্য ক্ষমতা। জাতীয়তাবাদের নামে সমাজকে সংগঠিত করে তোলা হয়েছে ক্ষমতালাভের জন্য, ক্ষমতার বিস্তারের জন্য, জাতিতে জাতিতে দ্বন্দ্বের জন্য। সমাজের ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে রাষ্ট্রের সর্বময় কর্তৃত্ব। যে স্বাভাবিক প্রীতি সমাজের মৌল বন্ধন তারই সঙ্গে যোগ স্বদেশপ্রেমের। ক্ষমতার সঙ্গে যোগ আধুনিক জাতীয়তাবাদের।

জাতীয়তাবাদ সম্বন্ধে তাঁর চিন্তা মানবেন্দ্রনাথ লাভ করেননি রবীন্দ্রনাথের কাছ থেকে। তবুও এঁদের চিন্তার মিল এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য। জাতীয়তাবাদে আশ্রয় পায়। এক ধরনের সামষ্টিক অহংকার। যুদ্ধের প্রস্তুতির জন্য জাতি হয়ে ওঠে বৃহ্যবদ্ধ। বৃহ্যবদ্ধ অহংকারের ভিতর দিয়ে জন্মলাভ করে সেই অসহিষ্ণুতা, স্বাধীন চিন্তার পক্ষে যা বিপজ্জনক বেড়ে ওঠে সেই বিজাতিবিদ্বেষ, বিশ্বশান্তির পক্ষে যা ধ্বংসাত্মক। জাতীয়তাবাদের নামে এই সংঘবদ্ধ সমষ্টির পুজো মানবেন্দ্রনাথের কাছ সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য মনে হল। জীবনের এক পর্যায়ে যিনি ছিলেন নিজে জাতীয়তাবাদী, পরিণত বয়সে তিনিই হয়ে। উঠলেন সেই বহুবন্দিত মতাদর্শের কঠোর সমালোচক। এর ফলে তিনি বহু লোকের কাছে নিন্দিত হয়েছেন, কারণ জাতীয়তাবাদী চিন্তাধারাই সেদিন প্রবল ছিল, আজও তাই। তবু সত্যকে তিনি যখন যেভাবে উপলব্ধি করেছেন সেইভাবেই তাকে ভয়শূন্য চিত্তে। উচ্চারণ করেছেন।

এই শতাব্দীর বিশের দশকে ভারতে মার্ক্সবাদী চিন্তার প্রসারে মানবেন্দ্রনাথের ভূমিকা ছিল অতুলনীয়। কিন্তু এখানেও তাঁর মধ্যযৌবনের চিন্তাকে তিনি অতিক্রম করে গেছেন প্রৌঢ়তার প্রান্তে এসে। জাতীয়তাবাদ যদি অগ্রাহ্য হয় সমষ্টির পুজো বলে, শ্রমিকশ্রেণীকেই তবে পতাকা ও সঙ্গীত সহ পুজো করা যাবে কোন যুক্তিতে? স্বদেশপ্রেম আর জাতীয়তাবাদ যেমন এক বস্তু নয়, দরিদ্রের প্রতি আত্মীয়তাবোধ আর মার্ক্সবাদও তেমনি অভিন্ন নয়। জাতির মতোই শ্ৰেণীও একটি সমষ্টিবিশেষ। শ্রমিকশ্রেণী এর ব্যতিক্রম নয়। মার্ক্সবাদের নামে এই সমষ্টিকে সংঘবদ্ধ করা হয়েছে, এর যোগ ঘটেছে ক্ষমতার দ্বন্দ্বের সঙ্গে। এখানেও গড়ে উঠেছে এক বৃহবদ্ধ স্বার্থপরতা, অহংকার, অসহিষ্ণুতা। সমষ্টির সর্বগ্রাসী দাবির চাপে ব্যক্তির স্বাধীনতা আবারও বিপন্ন। শ্রেণীসংগ্রামের নামে এক যৌথ উত্তেজনাকে স্থাপন করা হয়েছে যুক্তির উর্ধ্বে, তাকে চালনা করা হচ্ছে রাষ্ট্র কিংবা দলবিশেষের স্বার্থে। মানবেন্দ্রনাথ ক্রমে এই সিদ্ধান্তে এসেছিলেন।

মার্ক্সবাদ ত্যাগ করবার পর ইউরোপীয় সোশ্যাল ডেমক্র্যাটিক চিন্তাধারাকে যে তিনি। গ্রহণ করতে পারেননি তার কারণও নিহিত এইখানেই। তাঁর মনে হয়েছিল, পশ্চিম ইউরোপের সমাজতান্ত্রিক দলগুলি তত্ত্বগতভাবে মার্ক্সবাদের বাইরে যেতে পারেনি, শ্ৰেণীতত্ত্বের সীমানার মধ্যেই তারাও ঘুরপাক খাচ্ছে। এই ধরনের সামষ্টিক চিন্তার সঙ্গে গণতন্ত্রকে মেলানো যাবে না। গণতন্ত্রের তাত্ত্বিক ভিত্তি সুদৃঢ় করতে হলে জাতীয়তাবাদ এবং মার্ক্সবাদ দুয়েরই সমালোচনা চাই। সেই সঙ্গে সমাজতন্ত্রকেও অতিক্রম করে যেতে। হবে। প্রচলিত সমাজতন্ত্র আবদ্ধ হয়ে আছে রাষ্ট্রতন্ত্র আর শ্রেণীভিত্তিক তত্ত্বের শৃঙ্খলে।

এইভাবে নিজেরই চিন্তার জাল থেকে নিজেকে মুক্ত করতে করতে মানবেন্দ্রনাথ পথ তৈরি করেছেন। এরই ফলে তিনি সমভাবে ধিকৃত হয়েছেন জাতীয়তাবাদী ও মার্ক্সবাদী মহলে। জাতীয়তাবাদ তাঁকে আকৃষ্ট করেনি এমন তো নয়। তবু সেই আকর্ষণ তাঁকে বাঁধতে পারেনি। মার্ক্সবাদী তাত্ত্বিক হিসেবে তিনি উচ্চ স্বীকৃতি লাভ করেছিলেন। তবু সেই স্বীকৃতিকে পিছনে ফেলে তিনি এগিয়ে গেছেন। প্রশংসা অথবা ধিক্কার নয়, সত্যের সন্ধানকে তিনি প্রধান বলে জেনেছিলেন। এইখানে স্মরণীয় তাঁর জীবনের শেষ পর্বে TOSTO (573 song “Quest for freedom and search for truth constitute the basic urge of human progress.” স্বাধীনতা ও সত্যের সন্ধানই মানুষের অগ্রগতির মূল প্রেরণা। সেই প্রেরণাকে তিনি প্রত্যক্ষ করেছিলেন শুধু বাইরের ইতিহাসে নয়, নিজেরই চেতনার গভীরে।

(খ)

জাতি অথবা শ্রেণীবিশেষের প্রতি আনুগত্য রক্ষা করাই যদি আমাদের উচ্চতম কর্তব্য না হয় তবে একটা প্রশ্ন নতুন করে ফিরে আসে। আমাদের আদর্শ ও আনুগত্যের সর্বশেষ ভিত্তি কোথায়? ধার্মিক তার আনুগত্য স্থাপন করে ঈশ্বরে। রায়ের দৃষ্টিকোণ ভিন্ন। একদিকে ব্যক্তি আর অন্যদিকে মনুষ্য প্রজাতি বা মানবতাই হতে পারে আমাদের আদর্শ ও আনুগত্যের সর্বশেষ ভিত্তি ও আধার। এখানে কিছুটা আলোচনা প্রয়োজন।

ব্যক্তির মূল্য নিয়ে আলোচনা শুরু করা যাক। রায় লিখেছেন “A political system and an economic experiment which subordinate the man of flesh and blood to an imaginary collective ego, be it the nation or a class, cannot possibly be the suitable means for the attainment of the goal of freedom. It is not freedom to sacrifice the individual at the altar of an imaginary collective ego. Any social philosophy or scheme of social reconstruction which does not recognise the sovereignty of the individual…can have no more than a very limited progressive and revolutionary significance.’’ অর্থাৎ, ব্যক্তিসত্তার বিকাশকে স্থান দিতে হবে সব রাজনীতিক ব্যবস্থা, সব আর্থিক পরিকল্পনার কেন্দ্রে। জাতিই হোক শ্রেণীই হোক, কোনো কাল্পনিক যৌথ অহং-এর কাছেই ব্যক্তিকে বিসর্জন দিয়ে অগ্রসর হওয়া যাবে না মানুষের স্বাধীনতার লক্ষ্যের দিকে। ব্যক্তিকে উপেক্ষা করে পূর্ণ হবে বা কোনো বৈপ্লবিক আদর্শ। আমাদের অনিবার্যভাবে মনে পড়ে যায় মার্ক্সের সেই স্মরণীয় উক্তি যেখানে তিনি চেয়েছেন এক নতুন সমাজ, “an association in which the free development of each is the condition for the free development of all.” 7695 মুক্তির শর্ত বলে যেখানে স্বীকৃত প্রত্যেকের মুক্তি। স্বাধীনতা সম্বন্ধে অনুরূপ কথা বলেছেন গান্ধীও তাঁর ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে “No society can possibly be built on a denial of individual freedom.” ব্যাক্তির মুক্তিকে বিসর্জন দিয়ে কোনো সৎ সমাজ সম্ভব নয়।

ব্যক্তির স্বাধীনতার মূল্যর এই-যে স্বীকৃতি একে একটি নির্ভরযোগ্য সমাজদর্শন ও বিশ্বদর্শনের ওপর প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলেন মানবেন্দ্রনাথ রায়। দর্শনের ক্ষেত্রে অবশ্য শেষ উত্তর পাওয়া কঠিন। তবু কিছু প্রশ্ন যদি আমাদের চেতনায় জাগে তবে সেটাই। লাভ। সচেতনতাই হয়ে ওঠে স্বাধীনতার রক্ষাকবচ। ব্যক্তিস্বাধীনতা মূল্যবান কেন? এই সরল প্রশ্ন উপেক্ষণীয় নয়। মনে রাখা প্রয়োজন, ব্যক্তিই চেতনার আধার। সুখ অথবা দুঃখ তো শব্দমাত্র নয়, বিমূর্ত ধারণা নয়। ব্যক্তি থেকে বিচ্ছিন্ন কোনো অনুভূতি নেই। যুক্তি অথবা বিবেক সম্বন্ধেও একই কথা। ব্যক্তিকে আশ্রয় করেই যুক্তি ও বিবেকের প্রকাশ ঘটে। অতএব স্বাধীনতা বলতে বুঝতে হবে ব্যক্তিচেতনায় বিধৃত স্বাধীনতা। তা যদি না হয় তবে বহু অত্যাচারকেই কোনো কাল্পনিক সত্তার গৌরব রক্ষার্থে সমর্থনযোগ্য মনে হবে আর অত্যাচারিত মানুষ পরাধীনতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ভাষাই হারিয়ে ফেলবে।

রাষ্ট্রের উৎপত্তি নিয়ে নানা ধরনের ব্যাখ্যা বা থিওরী আছে। এই রকমের এক থিওরীতে বলা হয়েছে রাষ্ট্রের উৎপত্তি এক সামাজিক চুক্তি থেকে। এই ব্যাখ্যার ঐতিহাসিক সত্যতা নিয়ে তর্ক নিষ্প্রয়োজন। তবে এর ভিতর দিয়ে একটা ভাব ফুটে উঠেছে। কথাটা এই যে, স্বাধীনভাবেই যদি চুক্তি সম্পাদিত হয়ে থাকে তবে স্বাধীনভাবে আলোচনার ভিতর দিয়ে তার পরিবর্তনও ন্যায়সঙ্গত। রাষ্ট্রই হোক অথবা অন্য যে-কোনো ব্যবস্থাই হোক, মানুষই তার স্রষ্টা, মানুষের স্বার্থকে ভিত্তি করেই তার যৌক্তিকতা। আছে বলেই সমর্থনযোগ্য নয় কোনো সামাজিক নিয়ম, সব কিছুই বিচার করে দেখা যেতে পারে। যে-নিয়মের স্রষ্টা মানুষ, তাকে পরিবর্তন করবার স্বাধীনতাও মানুষেরই আছে। এই রকম একটা দৃষ্টিভঙ্গীই মানবেন্দ্রনাথ গণতান্ত্রিক সমাজের পক্ষে আবশ্যক মনে করেছিলেন।

স্বাধীন আলোচনার ভিতর দিয়ে নিয়ম ও প্রতিষ্ঠান গঠন করবার কাজটা শুরু করতে হবে একেবারে তলা থেকে। তলার প্রয়োজনে ধাপে ধাপে গড়ে উঠবে ওপরের প্রতিষ্ঠানগুলি। সংবিধান ও আর্থিক পরিকল্পনার ক্ষেত্রে এইরকম একটা ছবি মানবেন্দ্রনাথ সকলের সামনে তুলে ধরেছিলেন। যে-সমাজে আমরা বস্তুত বাস করি তার চরিত্র কিন্তু অনেক পরিমাণেই এর বিপরীত। ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত ওপরতলায়। সেখান থেকেই নিয়ম চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে তলার মানুষের জন্য। অধিকাংশ মানুষকে এসবই বাধ্য হয়ে মেনে নিতে হয়। স্বাধীন আলোচনার ভিতর দিয়ে তার পরিবর্তনের পথ খোলা নেই। মানবেন্দ্রনাথ এই ব্যবস্থাটা পালটাতে চেয়েছিলেন। ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ, গণতান্ত্রিক সংগঠন, সমবায়ের পথ,এইসব তাঁর কাম্য ছিল। এ পথে অগ্রসর হতে সময় লাগতে পারে। তবু এটাই পথ। এটাকেই পথ বলে মানুষ যদি চিনে নিতে পারে তবে স্বাধীনতা সুনিশ্চিত।

তা নইলে স্বাধীনতা বিপন্ন। পুরনো বৈপ্লবিক পথে কাজ হবে না। মানবেন্দ্রনাথ 67650 “Freedom does not necessarily follow from the capture of political power in the name of the oppressed and exploited classes and abolition of private property in the means of production.” শোষিত নিপীড়িত জনগণের নামে কোনো দল ক্ষমতা দখল করতে পারলেই অথবা উৎপাদন ব্যবস্থা রাষ্ট্রায়ত্ত করলেই স্বাধীন। সমাজের লক্ষ্যে গিয়ে পৌঁছবে মানুষ, এ ধারণা নির্ভুল নয়। এর প্রমাণ ছড়িয়ে আছে এ যুগের ইতিহাসে। বিপ্লবের ধ্বংসস্তূপ থেকে জন্মলাভ করেছে নতুন আমলাতন্ত্র, ক্ষমতা। কেন্দ্রীভূত হয়েছে দলের হাতে, আবারও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে অত্যাচারের যন্ত্র, স্বাধীনতার স্বপ্ন অবাস্তব থেকে গেছে, মানবেন্দ্রনাথের জীবনকালেই এই সব তিনি দেখে গেছেন। এই সব থেকে তিনি শিক্ষা গ্রহণ করেছেন, কিন্তু আশা হারান নি।

জাতি নয় শ্রেণী নয়, স্বাধীনতার মূলাধার ব্যক্তি। সমাজকে গড়ে তুলতে হবে তলা থেকে। এগোতে হবে সমবায় ও গণতন্ত্রের পথে। এই কথাগুলি বলা হল। এবার ফিরে আসতে হবে মানবতার প্রত্যয়ে। আসলে ব্যক্তি থেকে শুরু করলে তবেই মানবতায় পৌঁছনো যায়। তা নইলে মানুষ আটকে পড়ে জাতি, সম্প্রদায়, শ্রেণী এই সবের বন্ধনে। ব্যক্তিসত্তায় ফিরে গিয়ে তবেই আরোহণ করা যায় বিশ্বমানবের পরিচয়ে। এইরকম মানবেন্দ্রনাথ বিশ্বাস করতেন। এই শতাব্দীর সংঘবদ্ধ হিংসার দ্বন্দ্ব থেকে রবীন্দ্রনাথ আমাদের দৃষ্টিকে আকর্ষণ করতে চেয়েছিলেন মানুষের ধর্ম-এর প্রতি। আর মানবেন্দ্রনাথ হয়ে উঠেছিলেন নবমানবতাবাদের ব্যাখ্যা।

মানুষের মুক্তির কিছু সাংস্কৃতিক পূর্বশর্ত আছে। এবিষয়ে মানবেন্দ্রনাথ সচেতন হয়ে উঠেছিলেন তাঁর নবমানবতাবাদী দৃষ্টিভঙ্গী রূপগ্রহণের আরো অনেক আগে থেকেই। বিশের দশকে ইউরোপে বসে যখন তিনি ভারতের পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করছিলেন, বিপ্লবের কর্মপন্থা নিয়ে চিন্তা করছিলেন, তখনই একটা জিনিস তিনি বিশেষভাবে লক্ষ করেন। ভারতের নরমপন্থীদের সঙ্গে তো রায়ের মতামতের মিল ছিল না স্বাভাবিক কারণেই। কিন্তু চরমপন্থীদের ক্ষেত্রেও তিনি শংকিত হবার কিছু বড় কারণ দেখতে পান। হিংসা-অহিংসার প্রশ্নে কিংবা দেশ থেকে বিদেশী শাসন উৎখাত করবার ব্যাপারে যাঁরা বৈপ্লবিক বলে চিহ্নিত তাঁরাও কিন্তু সাংস্কৃতিক ধ্যানধারণার বিচারে অনেকেই ছিলেন প্রতিক্রিয়াশীল। রায় লক্ষ করলেন যে, সাংস্কৃতিক প্রশ্নে নরমপন্থীদের চেয়েও চরমপন্থীরা আরো বেশি অতীতমুখী, চিন্তার গোঁড়ামিতে আবদ্ধ। এঁদের হাতে ক্ষমতা যদি আসে তবু দেশে সাংস্কৃতিক অতএব সামাজিক মুক্তি আসবে না।

ইউরোপের পরিস্থিতিতেও একই সমস্যা অন্য রূপে দেখা দিয়েছিল। জার্মানিতে স্বৈরতন্ত্রী সামরিক ঐতিহ্য নাৎসী আন্দোলনকে সাহায্য করেছিল। লেনিনের নেতৃত্বে ক্যুনিস্ট দল ক্ষমতায় এসেছিল এমন এক দেশে যেখানে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি উল্লেখযোগ্যভাবে দুর্বল। এসবই মানবেন্দ্রনাথ লক্ষ করেছিলেন গভীর উদ্বেগের সঙ্গে। ক্রমে তিনি এই সিদ্ধান্তেই এসেছিলেন যে, ক্ষমতা দখলের রাজনীতি প্রধান কথা নয়, বরং সাংস্কৃতিক ও বৌদ্ধিক বিপ্লবই সমাজের স্থায়ী উন্নতির মৌল শর্ত তাঁর জীবনের শেষ। ভাগে এদিকেই তিনি বিশেষভাবে মনোযোগ দিয়েছিলেন।

মানবতাবাদের বিকাশ ও বৃদ্ধির জন্য একদিকে যেমন চাই স্বয়ংশাসিত বিকেন্দ্রিত ও সমবায়ী সমাজ, অন্যদিকে তেমনি প্রয়োজন মানুষের সৃজনীশক্তিতে বিশ্বাস, যুক্তিনির্ভরতা ও নৈতিক বোধ। সেই সঙ্গে বাঞ্ছনীয় হচ্ছে রাজনীতিরও একটা রূপান্তর।

(গ)

লেনিনের সঙ্গে মানবেন্দ্রনাথের কিছুটা মতবিরোধ ঘটেছিল তৎকালীন রাজনীতির একটা প্রশ্নকে কেন্দ্র করে। প্রশ্নটা এই, বুর্জোয়া নেতৃত্বাধীন জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের সঙ্গে শ্রমিক শ্রেণীর আন্দোলনের সম্পর্ক কী হবে? এই তর্কের অনুপুঙ্খ পর্যালোচনায় আমরা প্রবেশ করব না। তবে এ বিষয়ে দু-একটি কথা বলে নেওয়া দরকার।

জাতীয়তাবাদী স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে সাম্যবাদী শ্রমিক আন্দোলনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপনের সপক্ষে অন্তত দুই ধরনের যুক্তি ছিল। প্রথম কথা, জাতীয় সংগ্রাম সাম্রাজ্যবাদবিরোধী সেদিক থেকে এই সংগ্রাম প্রগতিশীল অতএব সমর্থনযোগ্য। দ্বিতীয় কথা, জনগণের ভিতর জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের প্রভাব ব্যাপক ও গভীর। সাম্যবাদী দল এই আন্দোলন থেকে বিচ্ছিন্ন হলে বস্তুত জনগণ থেকেই বহু পরিমাণে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে।

অন্য পক্ষেও বলবার মতো কিছু কথা ছিল। প্রথম মহাযুদ্ধের পর মানবেন্দ্রনাথ পরিস্থিতির বিশ্লেষণ করে এই সিদ্ধান্তে আসেন যে, ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ আর আগের অবস্থায় নেই। বিদেশী ঔপনিবেশিক শক্তি ক্রমশ হটে যাচ্ছে। আজ হোক কাল হোক, দেশী ধনিকশ্রেণীর হাতে ক্ষমতা তুলে দিয়ে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ শাসকের ভূমিকা থেকে বিদায় নেবে। ১৯৪৭ সালে ক্ষমতার হস্তান্তর তাই মানবেন্দ্রনাথের কাছে একেবারেই অপ্রত্যাশিত ছিল না, বরং তাঁর প্রত্যাশার সঙ্গে এর আশ্চর্য মিল স্বীকার করতে হয়।

ক্ষমতার হস্তান্তরের আগেই ভারতে শ্রমিক শ্রেণীকে কী করে তার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গী সম্বন্ধে যথেষ্ট সচেতন আর সাংগঠনিক দিক থেকে যথাসম্ভব শক্তিশালী ও আত্মনির্ভর করে তোলা যায়, এটাই ছিল মানবেন্দ্রনাথের কাছে সেই বিশের দশক থেকেই প্রধান। প্রশ্ন। শ্রমিক আন্দোলন জাতীয় সংগ্রাম থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে, এই রকম কোনো বিপদ তিনি বড় করে দেখেননি। বরং বুর্জোয়া জাতীয়তাবাদের প্রভাবে শ্রমিক শ্রেণীর বুদ্ধি ও চেতনা আচ্ছন্ন হয়ে থাকবে, বৃহত্তর সামাজিক মুক্তির সংগ্রামের জন্য সে প্রস্তুত হবে না, এটাই ছিল মানবেন্দ্রনাথের দুশ্চিন্তা। তিনি জোর দিয়েছিলেন চেতনা গঠনের ওপর। শেষ পর্যন্ত এটাই তাঁর কাছে মৌল কাজ বলে মনে হয়েছে।

লক্ষ করা যেতে পারে যে, স্বাধীনতা লাভের পরও ঐ পুরনো তর্ক খানিকটা নতুন আকারে এদেশের বামপন্থী আন্দোলনে অদ্যাবধি থেকেই গেছে। কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন জাতীয়তাবাদী শক্তির সঙ্গে ক্যুনিস্ট দলের সম্পর্ক কীরকম হবে, সেই প্রশ্নের উত্তরে। এখনো বামপন্থীদের ভিতর মতবিরোধ আছে। এক দল মনে করে যে, কংগ্রেসের সরাসরি বিরোধিতা করাটাই উচিত কাজ, তা নইলে জনগণের মনে কংগ্রেস সম্বন্ধে মোহ থেকেই। যাবে। অন্য দল মনে করে, কংগ্রেসের ভিতর যারা প্রগতিশীল তাদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে। সংগ্রাম চালাতে হবে রক্ষণশীলদের বিরুদ্ধে, সরাসরি কংগ্রেসের বিরোধিতা করতে গেলে রাজনীতির চালে ভুল হবে, জনগণের কাছ থেকে সাম্যবাদী শক্তি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। দুই দলের ভিতর মিল চোখে পড়ে এক জায়গায়। জাতিভেদ ও অন্যান্য যেসব কুসংস্কার জনগণের ভিতর ব্যাপ্ত সেই সবের বিরুদ্ধে জোরালো আন্দোলন চালাবার চেষ্টা নেই কম্যুনিস্ট কার্যক্রমে, এটাই বাস্তব রাজনীতি।

জাতীয়তাবাদী ও সাম্যবাদী দলের ভিতর সম্পর্ক নিয়ে এই-যে তর্ক, এটা প্রধানত রাজনীতির কৌশল নিয়ে তর্ক। আসলে লেনিনবাদের অনেকটাই রণনীতি ও কৌশল নিয়ে চিন্তাভাবনা। মানবেন্দ্রনাথ এককালে এই চিন্তাভাবনার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিলেন। সম্ভবত সেটাই ছিল অনিবার্য। কিন্তু ক্রমে তাঁর মনে সন্দেহ জমে উঠল। প্রত্যেক সৎ সাম্যবাদীই যাত্রা শুরু করে একটা বড় লক্ষ্য নিয়ে, সেটা মানুষের মুক্তির লক্ষ্য। দলীয় হারজিতটাই শেষ কথা নয়। এই হারজিতের খেলার একটা উন্মাদনা আছে। সেটাই যখন বুদ্ধিকে আচ্ছন্ন করে, তখন সমাজের সামনে দেখা দেয় নতুন এক বিপদ। বিপন্ন হয় মানুষের মুক্তির লক্ষ্য।

দলীয় রাজনীতির প্রধান কথা ক্ষমতার জন্য লড়াই। যদিও প্রতিটি দলের ইস্তাহারে বড় বড় আদর্শ ও প্রতিশ্রুতি উচ্চারিত হতে থাকে অবিরাম, তবু প্রত্যেকেরই প্রধান উদ্দেশ্য সরকারি শাসনযন্ত্রের ওপর কর্তৃত্ব। আমাদের যুগে একদিকে যেমন ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ বেড়ে চলেছে, অন্যদিকে তেমনি ক্ষমতা দখলের লড়াই নানাবিধ দুর্নীতির সঙ্গে পাকে পাকে জড়িয়ে পড়েছে। রাজনীতি থেকে ধর্মকে বিচ্ছিন্ন করবার কথা বলা হয়েছে, তার সপক্ষে জোরালো যুক্তিও আছে। কিন্তু সমস্যা এই যে, রাজনীতি থেকে সাম্প্রদায়িকতা বিদায় নেয়নি, বিদায় নিয়েছে নীতিবুদ্ধি বা নৈতিকতা। এই নিয়ে নতুন করে চিন্তা করবার। সময় এসেছে। কিছু মৌল চিন্তা ধীরে ধীরে দেখা দিচ্ছে। বিকেন্দ্রিত সমাজ ও মানুষের মুক্তির সঙ্গে সামঞ্জস্য রক্ষা করে রাজনীতিরও পূনর্গঠন আবশ্যক।

মানবেন্দ্রনাথ শেষ জীবনে দলীয় রাজনীতিতে বিশ্বাস হারিয়েছিলেন। বিশ্বাস স্থাপন করেছিলেন নির্দলীয় গণতন্ত্রে। লক্ষ করতে হবে যে, বহুদলীয় গণতন্ত্রের বদলে যাঁরা। একদলীয় ব্যবস্থা চান তিনি তাঁদের সঙ্গে একমত নন। নির্দলীয়তাকেই তিনি বিকল্প হিসেবে তুলে ধরেছিলেন। অনেকের মনে হয়েছে, এটা অবাস্তব চিন্তা। পথ কোথায়? গান্ধীজীও শেষজীবনে এইরকমই একটা বিকল্পের কথা ভেবেছিলেন। বিষয়টা বিচার করে দেখা দরকার।

রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার যে কেন্দ্রীকরণের উল্লেখ করা হয়েছে কিছুক্ষণ আগে, সেটা ঘটে নানাভাবে। দলীয় সংগঠন ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণের অন্যতম উপায়। গণতান্ত্রিক কেন্দ্রীয়তার কথা বলা হয় বটে, তবে গণতন্ত্র দুর্বল আর কেন্দ্রীয়তা প্রবল এই ঝোঁকটাই প্রধান। দল যদি হয় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের যন্ত্র তবে সেই লড়াইয়ের ভিতর দিয়ে অতিকেন্দ্রিকতার দিকে ঝোঁকটাই বার বার দেখা গেছে, অন্য কিছু আশা করা অবাস্তব। একই সঙ্গে বেড়ে ওঠে আরো এক বিপদ। ক্ষমতার লড়াইয়ের ভিতর দিয়ে ঘটে নৈতিকতার অবক্ষয়। দল হয়ে ওঠে দুর্নীতির বাহন। প্রতিটি দলই বিপক্ষের দুর্নীতিগ্রস্ততাকে ধিক্কার দেয়, আর তারই অনুকরণ করে চলে। দলীয় রাজনীতির বাস্তব অবস্থা, দুর্নীতিপরায়ণতা। দলাদলির আতিশয্যে ঘটে যুক্তির বিকাশ নয়, বরং যুক্তির বিকার।

এইসব স্বীকার করে নিয়েও অনেকে মনে করেন, দলীয় ব্যবস্থা অনিবার্য, এমন কি স্বাভাবিক। মার্ক্সবাদীরা বলেন, সমাজ যেহেতু শ্রেণীবিভক্ত অতএব তারই প্রতিফলন হিসেবে বহুদলীয় ব্যবস্থাই স্বাভাবিক। শ্রেণীসংগ্রাম প্রতিফলিত হয় দলীয় প্রতিদ্বন্দ্বিতায়।

এ বিষয়ে মানবেন্দ্রনাথের চিন্তার একটা মূল সিদ্ধান্ত আমরা আগেই আলোচনা করেছি। শ্রেণীর যে বৃহবদ্ধ সংগ্রামী চেহারা মার্ক্সবাদী ধারণায় প্রগতির সহায়ক, আসলে তার সঙ্গে বেশি দূর পর্যন্ত গণতন্ত্রের সামঞ্জস্য নেই। মানবেন্দ্রনাথ ফিরে গিয়েছিলেন ব্যক্তির মৌলতায়।

যে-কোনো গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাতেই মতামতের পার্থক্যের স্থান থাকবে, নয় তো সেটা গণতন্ত্রই নয়। কিন্তু মতের বৈচিত্র্য এক জিনিস আর দলীয়তা অন্য জিনিস। বন্ধুসমিতিতেও মতের পার্থক্য থাকে। কিন্তু তাতে দলীয়তা দেখা দেয় না। কোনো একটি প্রশ্নে সভ্যগণ একভাবে বিভক্ত, অন্য এক প্রশ্নে অন্যভাবে বিভক্ত। এটাই স্বাভাবিক। এক শ্রেণীভুক্ত সব মানুষই একই মতাবলম্বী হবে এটা স্বাভাবিক নয়।

আয়কর সম্পর্কিত কোনো প্রশ্নে যারা একমত তারাই যে আবার বিবাহবিচ্ছেদ সংক্রান্ত অন্য এক প্রস্তাবেও একমত হবে এমন কি কোনো স্থিরতা আছে? সম্পত্তির উচ্চতম সীমা নিয়ে যাদের ভিতর মতের মিল আছে তাদের ভিতরও ধর্মসংক্রান্ত প্রশ্নে, যেমন আস্তিক্য আর নাস্তিকের আলোচনায়, মতের পার্থক্য ঘটতেই পারে। সংসদে শাসক দলের ভিতর যে মতামতের ঐক্য দেখা যায় সেটা অনেক সময় স্বাধীন বা স্বতঃস্ফূর্ত নয়, বরং জোর করে চাপানো। দলের স্বার্থে এটা প্রয়োজন হতে পারে, কিন্তু এটাই যে গণতন্ত্রের জন্য আবশ্যক এমন কথা মেনে নেওয়া যায় না। বিকল্প গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার কথা মানবেন্দ্রনাথ ভেবেছিলেন।

এই গণতন্ত্রের ভিত্তিতে থাকবে ___ বা ____ । নির্দলীয় গণতন্ত্রের আবশ্যিক শর্ত ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ। ছোটো পরিধির পল্লী ও মণ্ডলের ভিত্তিতে গঠিত হবে তলাকার লোকসমিতি। ঐসব নির্দলীয় সমিতির সঙ্গে জনগণের নানা ধরনের ঘনিষ্ঠ যোগরক্ষার ব্যবস্থা করাও কঠিন হবে না। ধাপে ধাপে সংগঠিত হবে শাসনব্যবস্থার ওপরের স্তরগুলি। গণতান্ত্রিক আলোচনার স্থান থাকবে সর্বস্তরে। অনুমান করা যায় যে, বিশেষ বিশেষ প্রশ্নে সাময়িকভাবে গঠিত হবে নানা গোষ্ঠী। কিন্তু ক্ষমতা নিয়ে যেন-তেন-প্রকারে দলবদ্ধ লড়াইয়ের কোনো সদর্থ থাকবে না এই সংগঠিত গণতন্ত্রে। জোর পড়বে শিক্ষার ওপর। এর সঙ্গে যোগ রেখে গড়তে হবে নতুন সমাজের আর্থিক ব্যবস্থা। মানবেন্দ্রনাথ চেয়েছিলেন সামবায়িক দৃষ্টিভঙ্গীর প্রাধান্য। শিক্ষিত জনমত ও সংগঠিত গণতন্ত্রই সমাজ ও অর্থনীতিকে সমবায়ী ব্যবস্থার দিকে নিয়ে যাবে বলে আশা করা যায়।

বিশেষ ও তিরিশের দশকে এমন কি চল্লিশের গোড়াতেও মানবেন্দ্রনাথ ছিলেন গান্ধীর কঠোর সমালোচক। শেষজীবনে গান্ধীর প্রতি তাঁর বিরূপতা ক্রমে ক্ষয় হয়ে আসে। এটা। আকস্মিক নয়। রাজনীতি ও অর্থনীতির যে-পরিকল্পনা মানবেন্দ্রনাথ তুলে ধরেন তার। সঙ্গে গান্ধীর অনেকটাই মিল ছিল। দুজনেই সমাজকে গড়ে তুলতে চেয়েছেন তলা থেকে। রাজনীতিতে নৈতিকতার আবশ্যক আছে, এই গভীর প্রত্যয়েও দুজনের ভিতর শেষ বয়সে একটা সেতু তৈরি হচ্ছিল। তবে একই সঙ্গে কিছু অমিলও থেকে গেছে।

(ঘ)

মানুষ নীতি মেনে চলবে কেন? নৈতিকতার ভিত্তি কোথায়? মানবেন্দ্রনাথের মনে নৈতিকতার ভিত্তি যুক্তিতে। প্রাচীনপন্থীদের মতে নৈতিকতার ভিত্তি ধর্মে বা ঈশ্বরবিশ্বাসে। কতটা গুরুতর এই পার্থক্য?

এমন অনেকে আছে যারা বলে, জ্ঞানী মানুষ হয়তো যুক্তির আলোতেই সদাচারের মূল নীতিগুলি বুঝতে পারে, কিন্তু সাধারণ মানুষ তেমন পারে না। সাধারণের জন্য ধর্ম বা ঈশ্বরবিশ্বাস চাই, তা নইলে নীতি রক্ষা পাবে না। মানবেন্দ্রনাথের কাছে এই যুক্তি সম্পূর্ণ অগ্রাহ। তিনি এখানেই দেখবেন বিপদের আরম্ভ। কী সেই বিপদ?

বিপদটা শুরু হয় ব্রাহ্মণতন্ত্র বা পুরোহিততন্ত্র থেকে। তারপর আরো গভীরভাবে সংক্রামিত হয় সমাজে ও সংস্কৃতিতে। নীতির ভিত্তি যদি নিহিত থাকে এমন কোথাও যেখানে পৌঁছতে পারবে না সাধারণ মানুষ, ভালোমন্দের বিচারে যদি ব্রাহ্মণ বা ধর্মযাজকের অধিকার বিনা প্রশ্নে মেনে নিতে হয়, তবে তো জনসাধারণের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হয় তাদের আত্মবিশ্বাস। আর সেই সঙ্গে তৈরি হয়ে যায় সমাজের ওপর এক বিশেষ গোষ্ঠীর স্বৈরতান্ত্রিক শাসনের শাস্ত্রীয় অনুমোদন। যাজকশ্রেণী এই শাস্ত্রানুমোদিত ক্ষমতার অপব্যবহার করবে না এমন কথা বিশ্বাস করবার কি কোনো কারণ আছে? ইতিহাসের সাক্ষ্য কি এই নয় যে, ক্ষমতার অপব্যবহার করেছে পুরোহিততন্ত্র, আর নিঃশব্দে দণ্ডভোগ করেছে সাধারণ মানুষ? মানুষ স্বার্থপর হয়, এতে আশ্চর্য কিছু নেই। পুরোহিতশ্রেণী স্বার্থপর হবে না এইরকম আশা করাই ভুল। এক্ষেত্রে বিপদ আরো বড়। শাসন ও শোষণ যখন শাস্ত্রের অনুমোদন নিয়ে চলে তখন তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা আরো কঠিন হয়। নীতিবিচারের অঙ্গিকার থেকে সাধারণ মানুষকে বঞ্চিত করবার এই ফল। যুক্তিতে অধিকার আছে সব মানুষের। যুক্তিই মানুষের সাধারণ ধর্ম। মানবেন্দ্রনাথ নৈতিকতার বিচারে যুক্তি ছাড়া আর কিছুই মেনে নিতে রাজী নন।

যারা ধর্মে বিশ্বাসী তারা যুক্তিতে বিশ্বাস রাখে না, একথা সব সময় ঠিক নয়। এটা অতিসরলীকরণ। যেমন ধরা যাক রামমোহন রায়ের কথা। তিনি নাস্তিক ছিলেন না, কিন্তু তিনি যুক্তিতে বিশ্বাসী ছিলেন। ধর্ম এবং যুক্তি দুয়েতেই তিনি বিশ্বাস রক্ষা করেছিলেন। অথবা ধরা যাক গান্ধীর কথা। তিনি ধর্ম ত্যাগ করেননি। যুক্তিকেও কিন্তু তিনি তাঁর নিজস্ব চিন্তায় একটা বিশেষ স্থান দিয়েছিলেন। একথাটা আমরা অনেক সময় মনে রাখি না, কাজেই একটা উদ্ধৃতি দেওয়া যাক। গান্ধী বলেছেন “My belief in the Hindu Scriptures docs not require me to accept every word and every verse as divinely inspired. …I decline to bc bound by any interpretation, however learned it may be, if it is repugnant to reason or moral sense.” arte, groen ধর্মগ্রন্থের প্রতি যদিও তাঁর শ্রদ্ধা ছিল তবু তিনি ধরে নিতে রাজী নন যে শাস্ত্রের প্রতিটি বাক্য অভ্রান্ত। তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলছেন যে, শাস্ত্রের কোনো নির্দেশ যদি যুক্তিবিরোধী বা নীতিবিরুদ্ধ হয় তবে সেই নির্দেশ তিনি মেনে নিতে রাজী নন।

মানবেন্দ্রনাথ জড়বাদী দর্শনে বিশ্বাসী ছিলেন। রামমোহন বা গান্ধীর মতো তিনি একই সঙ্গে ধর্ম ও যুক্তিতে বিশ্বাস স্থাপন করতে রাজী নন। তর্কের ধারাটা এখানে লক্ষ করা দরকার। গান্ধী শাস্ত্রের নির্দেশ অগ্রাহ্য করবেন যদি সেটা যুক্তিবিরোধী হয়। তাই যদি হয় তবে শাস্ত্রের প্রয়োজন কোথায়? যুক্তির উপর নির্ভর করাই কি যথেষ্ট নয়। রামমোহন অথবা গান্ধীর কাছে কিন্তু এই উত্তরটাও শেষ কথা নয়। কেন নয়? শাস্ত্রে যা কিছু আছে সবই একই স্তরের কথা নয়। রামমোহনের কাছে উপনিষদের কিছু কথা বিশেষ শ্রদ্ধেয়, আবার কিছু কথা তেমন নয়। শাস্ত্রে একদিকে আছে বহু শতাব্দীর মহত্তম আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতার সঞ্চয়, যাকে প্রকাশ করা হয়েছে কালোত্তীর্ণ ভাষায়। তাকে উপেক্ষা করা ভুল। আবার অন্য দিকে আছে যুগবিশেষের কুসংস্কার এবং সংকীর্ণ স্বার্থে চিহ্নিত কিছু মতামত। তাকে মেনে নেওয়া ভুল।

এই দৃষ্টিভঙ্গীর সপক্ষে রামমোহন তুলে ধরেছিলেন শাস্ত্রেরই এক বিখ্যাত বচন। “কেবলং শাস্ত্রমাশ্ৰিত্য না কর্তব্যে বিনির্ণয়ঃ।/ যুক্তিহীনবিচারেণ ধর্মহানিঃ প্রজায়তে।” কেবল শাস্ত্র আশ্রয় করে সিদ্ধান্তে আসা কর্তব্য নয়। বিচার যুক্তিহীন হলে ধর্মহানি ঘটে। কিন্তু একথাও তিনি বিশ্বাস করতেন যে, শাস্ত্রের যেটা শ্রেষ্ঠ ভাগ তার প্রতি অশ্রদ্ধা নিয়ে যুক্তির উপর নির্ভর করতে গেলে তাতেও বিপথে যাবার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

যুক্তিবর্জিত ধর্ম যে বিপজ্জনক একথা স্বীকার করা গেল। রামমোহন, রবীন্দ্রনাথ, গান্ধী কেউই এ বিষয়ে দ্বিমত হবেন না। কিন্তু ধর্মবর্জিত যুক্তি, আধ্যাত্মিক অনুভব থেকে বিচ্ছিন্ন যুক্তি, নিরাপদ নয়, একথাটা কি মেনে নেওয়া যায়? মানবতাবাদের সঙ্গে এই প্রত্যয়ের কি মৌল বিরোধ আছে? তর্কটা অবশেষে এইখানে এসে ঠেকে।

মানুষের সঙ্গে মানুষের স্বার্থের সম্পর্কের ভিতর একটা দ্বৈত আছে। অন্যকে না হলে আমার চলে না, আবার অন্যে আমার প্রতিযোগী। অতএব মানুষে-মানুষে যে-সম্পর্ক তাতে সহযোগিতা ও প্রতিযোগিতা একই সঙ্গে বর্তমান। সুনীতির নিয়মগুলি তৈরি হয় সহযোগিতার প্রত্যয়ের ওপর। যুক্তি দিয়ে বোঝানো যায় যে, সহযোগিতার কিছু নিয়ম আছে যাতে সমাজের সামগ্রিক হিতসাধন হয়। এইরকম একটি নিয়ম, সত্যবাদিতা। আবার যুক্তি দিয়ে একথাও বোঝা যায় যে, এই সব নিয়ম ভেঙে, অন্যের স্বার্থের হানি। ঘটিয়ে, ব্যক্তিবিশেষ নিজের স্বার্থসিদ্ধি করে নিতে পারে। এটাকেই আমরা দুর্নীতি বলি।

যেমন, মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে কেউ নিজের স্বার্থ গুছিয়ে নিতে পারে। সেই প্রতারণা যদি ধরা না পড়ে তবে সাংসারিক অর্থে প্রতারক শাস্তিলাভ করে না। অন্যের ক্ষতিকে যদি কেউ নিজেরই ক্ষতি বলে মনে করে তবে সে প্রতারণার পথ থেকে নিবৃত্ত হবে। এখন প্রশ্ন এই, অন্যের ক্ষতিতে নিজেরই ক্ষতি এ-কথাটা কি শুধু যুক্তি দিয়ে বোঝানো যায়? পারস্পরিক প্রতারণার পথে অগ্রসর হলে অবশেষে সমগ্র সমাজেরই ক্ষতি অনিবার্য, এই কথাটা অবশ্য যুক্তিসিদ্ধ। কিন্তু ব্যক্তিবিশেষের কাছে তার এই মুহূর্তের লাভ বড় মনে হতে পরে। জাতির সঙ্গে জাতির সম্পর্কের ক্ষেত্রেও একই সমস্যা দেখা যায়। এক জাতিকে লুণ্ঠন করে অন্য জাতি ধনবান হয়। মানবজাতির সামগ্রিক স্বার্থের দিক থেকে এটা সমর্থনযোগ্য না হতে পারে। কিন্তু জাতিবিশেষের লাভটাই যদি সেই জাতির কাছে। বিবেচনার যোগ্য মনে হয় তবে যুক্তি দিয়ে কি অন্য কিছু বোঝানো যাবে? প্রশ্ন ওঠে।

এসব নিশ্চয়ই যুক্তিকে বর্জন করবার যুক্তি নয়। বরং এইরকম প্রশ্নের ভিতর দিয়ে আমরা পরীক্ষা করে দেখতে পারি যুক্তির কার্যকারিতার কোনো বিশেষ সীমা আছে কি না। স্বীকার করা প্রয়োজন যে, যুক্তির ভিতরই একটা সর্বজনীন ভাব আছে, সাধারণীকরণের দিকে অনিবার্য ঝোঁক আছে। এক ব্যক্তির সুখ মূল্যবান আর অপর ব্যক্তির সুখ মূল্যবান নয়, এমন কথা শুদ্ধ যুক্তি মানতে চাইবে না। কিন্তু শুদ্ধ মুক্তির এই সর্বমানবিক পরামর্শকে কার্যকরী করতে হলেও কি যুক্তির অধিক আরো কিছু প্রয়োজন হয়ে পড়ে না?

যুক্তির অতিরিক্ত একটি বস্তু অবশ্য প্রকৃতিই মানুষের ভিতর স্থাপন করেছে, তাকে আমরা বলি সহানুভূতি অথবা ভালোবাসা। কিন্তু প্রকৃতির সহজ দান হিসেবে মানুষ যে সহানুভূতি অথবা প্রেমের শক্তি লাভ করে তারও তো সীমা আছে। কত সহজে সেই সহানুভূতি কুঁকড়ে যায়। ভয়ে লোভে কুসংস্কারে পঙ্গু হয়ে পড়ে। তবু আশা রক্ষা করতে হয়। বিশ্বাস রাখতে হয় যে, যুক্তি ও সহানুভূতি পরস্পর হাত ধরাধরি করে মানুষকে সীমাভাঙার পথে ধীরে ধীরে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে।

মানবতার দিকে এই রকমই একটা অগ্রগতি নিশ্চয়ই রামমোহন ও মানবেন্দ্রনাথ, গান্ধী ও রবীন্দ্রনাথ, সকলেই নিজ নিজ ভাবে চেয়েছিলেন। সত্যকে এঁরা সবাই ঠিক একই চোখে দেখেননি, একই নামে ডাকেননি। আর এটাই তো স্বাভাবিক। মানুষের ভিতর যে-শক্তি তাকে মুক্তির পথে, বিশ্বমানবতার অভিমুখে নিয়ে যায় তাকে কী নামে ডাকা। যায়? সে কি প্রেম? সে কি যুক্তি? সে কি এমনই এক শক্তি নয় যাতে যুক্তি ভালোবাসা সবই মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়? মানবেন্দ্রনাথ তাকে যুক্তি বলেছেন, মুক্তির আকাঙ্ক্ষা বলেছেন। তিনিও তো মাঝে মাঝেই এমন ভাষা ব্যবহার করেছেন যার পর আর তর্ক চলে না। দূরদৃষ্টিতে দেখেছেন তাঁর আদর্শ পূর্ণতা লাভ করবে, “by the collective endeavour of spiritually emancipated moral men.”

তিনি বলেছেন, আত্মিক শক্তিতে সমৃদ্ধ এই সব মানুষেরা যুক্ত হবে এক মুক্ত পৃথিবী গড়বার প্রতিজ্ঞায়। এর পর তর্ক বৃথা। লক্ষ্য ঠিক থাকলেই হল।

এক জীবনে মানবেন্দ্রনাথ বহু পথে ঘুরেছিলেন। তবু লক্ষ্য ঠিক ছিল। স্বাধীনতার তীব্র আকাঙ্ক্ষা নিয়ে কৈশোরে তিনি যাত্রা শুরু করেছিলেন। তারপর সারাজীবন পথ চলেছিলেন, তাঁরাই ____ ____ ____ search of freedom,” মুক্তির সন্ধানে এক বেদনার্ত আত্মা। দ্বন্দ্ব ও উত্তরণ (১৯৮৯)

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *