গান্ধী ও রবীন্দ্রনাথ
গান্ধীর ভাষায় একটি পরিচিত শব্দ ফিরে ফিরে আসে, অহিংসা। রবীন্দ্রনাথের বাণীতে সেই শব্দটি, আনন্দ। এইখানে তাঁদের পার্থক্য। আবার এখানেই তাঁদের মিলও বটে। অহিংসারও মূলে আছে আত্মার যোগ। তাই থেকে আনন্দ। যে হেতু এদের জীবনের। অভিজ্ঞতায় বহু বৈসাদৃশ্য, একজনের কর্মের ধারা আশ্রম থেকে প্রবাহিত হয়েছে রাজনীতির দিকে, অন্যজন রাজনীতিকে আশ্রমের বাইরে রাখতেই চেয়েছেন, চিন্তা করেছেন এরা নিজ নিজ পথে স্বাধীনভাবে, সে জন্য এদের ধ্যানধারণায় অমিল অপ্রত্যাশিত নয়। আশ্চর্য হতে হয় এঁদের চিন্তার সাদৃশ্যে। রবীন্দ্রনাথ ও গান্ধীর চারিত্র ও কণ্ঠস্বর স্বাতন্ত্রে চিহ্নিত। সত্যের উচ্চারণ স্বভাবত বৈচিত্র্যে বিধৃত। কোথাও সাদৃশ্যে কোথাও-বা পরিপূরকতায় গান্ধী ও রবীন্দ্রনাথের চিন্তা ও কর্ম আমাদের পরম সম্পদ।
.
১
একটা মিল প্রথমেই চোখে পড়ে। রবীন্দ্রনাথ ও গান্ধী দুজনেরই নির্বাচিত কর্মক্ষেত্র ছিল পল্লীর প্রাঙ্গণে। সেইখানে তাঁরা বিশ্বকে আহ্বান করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথের জন্ম সেই কলকাতা মহানগরীতে, ভারতের তদানীন্তন রাজধানী এবং ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম নগর বলে যার খ্যাতি ছিল সেইকালে। গান্ধী তাঁর প্রথম যৌবনের কয়েকটি বছর। কাটিয়েছিলেন লন্ডনে ও ভারতের পশ্চিমপ্রান্তের বৃহত্তম নগরে। অর্থাৎ, কলকাতা এবং বোম্বাই যদি রবীন্দ্রনাথ ও গান্ধীর প্রধান কর্মস্থান হত তবে সেটা স্বাভাবিক বলে মেনে নেওয়া যেত। কিন্তু জীবনের ঠিক মধ্যবিন্দুতে এসে রবীন্দ্রনাথ তাঁর আশ্রম ও কর্মক্ষেত্র হিসেবে বেছে নিলেন শান্তিনিকেতন এবং সুরুলের গ্রাম। শিক্ষা, সংস্কৃতি ও সমাজসংগঠন নিয়ে বীরভূমের ঐ পল্লীপরিবেশে চলল চল্লিশ বৎসরব্যাপী তাঁর অক্লান্ত সাধনা। দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে স্থায়ীভাবে ভারতে প্রত্যাবর্তনের পর গান্ধী তাঁর আশ্রম স্থাপন করলেন প্রথমে সবরমতিতে, পরে সেবাগ্রামে। যদিও রাজনীতির স্বাভাবিক কেন্দ্র রাজধানী, তবু গান্ধী তাঁর কর্মের কেন্দ্রকে প্রতিষ্ঠিত করলেন গ্রামে।
আরো একটা মিল এই সঙ্গে উল্লেখযোগ্য। এঁদের আশ্রম ছিল না শুধু শাস্ত্রচর্চা ও যোগাভ্যাসের জন্য। রবীন্দ্রনাথ একদা বলেছিলেন, “শিক্ষাসংস্কার এবং পল্লীসঞ্জীবনই আমার জীবনের প্রধান কাজ। “ যাঁরা তাঁকে প্রধানত কবি ও সঙ্গীতকার বলেই জানেন তাঁদের কাছে এই উক্তি মনে হবে বিস্ময়কর। কিন্তু একথা স্বীকার্য যে, শিক্ষা ও গ্রামোন্নয়ন বিষয়ে গান্ধী ও রবীন্দ্রনাথ দীর্ঘদিন ধরে গভীরভাবে চিন্তা করেছিলেন। উভয়েরই কর্মে ও আদর্শচিন্তাতে এ বিষয়টি একটা বড় স্থান অধিকার করে ছিল।
রবীন্দ্রনাথ যাকে চিহ্নিত করেছিলেন পল্লীসঞ্জীবন শব্দটি দিয়ে, সে-বিষয়ে তাঁর চিন্তার একটা সংক্ষিপ্ত পরিচয় এখানে দিয়ে নেওয়া যেতে পারে।
ভারতীয় সমাজ ও সভ্যতার কিছু মূল বৈশিষ্ট্যের কথা রবীন্দ্রনাথ বার বার বলেছেন। এই সব বৈশিষ্ট্য বহুপরিমাণে ভারতের প্রাচীন ইতিহাস থেকে প্রাপ্ত। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তার পরিবর্তন অনিবার্য। তবু অতীতের সঙ্গে যোগ রেখেই বর্তমান ও ভবিষ্যতের বিবর্তন ঘটে। রবীন্দ্রনাথ সেই ঐতিহাসিক সূত্রটিকে গুরুত্ব দিয়েছিলেন। যদিও তাঁর নিজের চিন্তাও স্থির হয়ে থাকেনি তবু তাতেও একটা অন্তঃস্রোত এবং ধারাবাহিকতা আছে। রবীন্দ্রনাথ নিজেই বলেছেন, “কোনো বাঁধা মত একেবারে সুসম্পূর্ণভাবে কোনো এক বিশেষ সময়ে আমার মন থেকে উৎপন্ন হয়নি, জীবনের অভিজ্ঞতার সঙ্গে সঙ্গে নানা পরিবর্তনের মধ্যে তারা গড়ে উঠেছে। সেই সমস্ত পরিবর্তন পরম্পরার মধ্যে নিঃসন্দেহে একটা ঐক্যসূত্র আছে।” অনুরূপ বাক্য গান্ধীর লেখা থেকেও উদ্ধার করা যায়।
রবীন্দ্রনাথের দৃষ্টিতে ভারতীয় ইতিহাসের একটা বৈশিষ্ট্য এই যে, এখানে রাষ্ট্রনীতি এবং সমাজনীতির মধ্যে একটা দূরত্ব ছিল, রাষ্ট্র সমাজকে গ্রাস করতে পারেনি। রাজ্য নিয়ে যুদ্ধ চলেছে, এক রাজবংশের পতন এবং অন্য বংশের অভ্যুত্থান ঘটেছে, রাজধানীতে পালাবদল দেখা গেছে, দেশী বিদেশী নানা জাতি নানা শক্তি সেখানে পর্যায়ক্রমে প্রভুত্ব করেছে। কিন্তু এসবই উপরতলার ইতিহাস। রাষ্ট্রনীতির নাটকীয়তা ইতিহাসের কাহিনী হিসেবে যতই চাঞ্চল্যকর ও আকর্ষণীয় হোক না কেন, ভারতীয় সমাজের স্থায়িত্ব অথবা তার মূল সংগঠন এবং ভারতীয় সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্য বুঝতে হলে আমাদের দৃষ্টিপাত করতে হবে অন্যত্র।
রবীন্দ্রনাথ এই যে ‘রাষ্ট্রতন্ত্র’ ও ‘সমাজতন্ত্রের মধ্যে পার্থক্য করেছিলেন এবং বিষয়টার উপর গুরুত্ব দিয়েছিলেন, এর একটা বিশেষ কারণ ছিল। তিনি দেখেছিলেন যে, মধ্যবিত্তসহ সাধারণ ভারতবাসী ক্রমেই সরকারের মুখাপেক্ষী হয়ে পড়ছে। এতেই আমরা প্রকৃত অর্থে এদেশীয় ঐতিহ্য থেকে বিচ্যুত হচ্ছি এবং আমাদের আত্মনির্ভরতা, আত্মবিশ্বাস, সম্মানবোধ সবই নষ্ট হচ্ছে, এই উপলব্ধি তাঁর ভিতর দৃঢ় হয়ে উঠেছিল। তিনি লিখেছিলেন, “সরকার বাহাদুর-নামক একটা অমানবিক প্রভাব ছাড়া আমাদের অভাব-নিবারণের আর কোনো উপায় আমাদের হাতে নেই, এই রকম ধারণা মনে বদ্ধমূল হতে দেওয়াতেই আমরা নিজের দেশকেই যথার্থভাবে হারাই। “ এরই বিরুদ্ধে দেশবাসীকে তিনি সতর্ক করতে চেয়েছিলেন তাঁর সেই বিখ্যাত ভাষণ ও প্রবন্ধে, ‘স্বদেশী সমাজ” নামে যেটি পরিচিত। বাংলা ১৩১১ (ইংরেজী ১৯০৪ সালে রচিত সেই প্রবন্ধটির মূল চিন্তা যে তাঁকে শুধু সাময়িকভাবে অধিকার করেনি বরং এটা যে তাঁর একটি স্থায়ী ভাবনা তার প্রমাণ পাওয়া যায় যখন দেখি যে আরও পঁচিশ বছর পরে, বার্ধক্যে উপনীত হয়েও, তিনি সেই যৌবনকালের চিন্তার মর্মকথা আবারও নিবেদন করেছেন। “রাষ্ট্রপ্রধান দেশে রাষ্ট্রতন্ত্রের মধ্যেই বিশেষভাবে বদ্ধ থাকে দেশের মর্মস্থান; সমাজ প্রধান দেশে দেশের প্রাণ সর্বত্র ব্যাপ্ত হয়ে থাকে। পাশ্চাত্য রাজার শাসনে এইখানে ভারতবর্ষ আঘাত পেয়েছে। গ্রামে গ্রামে তার যে সামাজিক স্বরাজ পরিব্যাপ্ত ছিল, রাজ্য শাসন তাকে অধিকার করলে।” যদিও রবীন্দ্রনাথ সেদিনের একটা বিশেষ পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র’র ভিতর পার্থক্য করেছিলেন তবু তার সার্থকতা সে-কালেই সীমাবদ্ধ নেই। আমাদের সমকালীন বিচার-বিশ্লেষণেও এর ব্যবহার অসঙ্গত হবে না।
গ্রামীণ সমাজের দারিদ্র্য, শিক্ষার অভাব এবং চিত্তের খর্বতার সঙ্গে গান্ধী ও রবীন্দ্রনাথ। দু’জনেই ঘনিষ্ঠভাবে পরিচিত ছিলেন। তবু তাঁরা পল্লীতেই প্রত্যক্ষ করেছিলেন ভারতীয় সমাজ-আদর্শের মূলসূত্রটি, মূল্যবান বলে তাকে জানাতে চেয়েছিলেন। এর কারণ আমাদের বুঝতে চেষ্টা করতে হবে। মূল কথাটা রবীন্দ্রনাথ স্বদেশী সমাজ প্রবন্ধেই পরিষ্কারভাবে বলেছেন। “মানুষের সঙ্গে মানুষের আত্মীয় সম্বন্ধ-স্থাপনই চিরকাল ভারতবর্ষের সর্বপ্রধান চেষ্টা ছিল। আমরা যে-কোন মানুষের যথার্থ সংস্রবে আসি, তাহার সঙ্গে একটা সম্বন্ধ নির্ণয় করিয়া বসি। ইহার ভালমন্দ দুই দিকই থাকিতে পারে, কিন্তু ইহা আমাদের দেশীয়, এমনকি তদপেক্ষাও বড়–ইহা প্রাচ্য। “ পল্লীসমাজ মানেই হল আত্মীয়সমাজ অথবা প্রতিবেশিসমাজ। প্রতিতুলনায় রাষ্ট্র একটি হৃদয়হীন যন্ত্র। যখন এই যন্ত্রের কাছ থেকে কিছু সহায়তা লাভের সম্ভাবনা থাকে তখনও সে যন্ত্রই। এই উপলব্ধি ছিল গান্ধীরও। তিনি বলেছিলেন, “The individual has a soul, but the state is a soulless machine. ব্যক্তির হৃদয় আছে, আত্মা আছে, রাষ্ট্রের আত্মা নেই। নগরে যোগ হয়েছে রাষ্ট্রশক্তির সঙ্গে বণিকশক্তির। রবীন্দ্রনাথের ভাষায়, “নগরগুলি দেশের শক্তির ক্ষেত্র, গ্রামগুলি প্রাণের ক্ষেত্র।”
মানুষের সঙ্গে মানুষের কিছু সম্পর্ক থাকে যাকে বলা চলে প্রয়োজনের সম্পর্ক অথবা ব্যবসায়িক সম্বন্ধ। সেখানে এক মানুষ অন্য মানুষের কাছে মূলত একটি কার্যসাধনের কল’। আবার অন্য এক সম্বন্ধ আছে যাতে প্রয়োজনও হয়তো মেটে, কিন্তু প্রয়োজনের অধিক কিছু পাওয়া যায়। অপর মানুষকে যখন আমরা ব্যক্তি বলে মানি অতএব তার সঙ্গে হৃদয়ের যোগ অনুভব করি, অপরের দুঃখে নিজের দুঃখ এবং গেীরবে গৌরব বোধ করি, তখন লোকসংগ্রহের অন্য এক প্রতিষ্ঠাভূমিকে স্বীকার করা হয়। নগরের কর্মক্ষেত্রে ব্যবসায়িক সম্বন্ধটাই প্রধাম। পল্লীতে আত্মীয়সম্বন্ধ বড় হয়ে ওঠে। স্বদেশী সমাজে আত্মীয়সম্বন্ধের প্রাধান্য। “প্রয়োজনের সম্বন্ধকে আমরা হৃদয়ের সম্বন্ধ-দ্বারা শোধন করিয়া লইয়া তবে ব্যবহার করিতে পারি।” রবীন্দ্রনাথ এইভাবে ভারতীয় সমাজকে চিহ্নিত করেছিলেন। এই সমাজের অন্যান্য ত্রুটি যাই থাকুক না কেন এর একটা বিশেষ মূল্য তিনি স্বীকার করেছিলেন। যেহেতু পল্লীজীবনে এই মূল্যবান মানবিক সম্পর্ক দারিদ্র ও অশিক্ষায় বিকৃত, অতএব শিক্ষার সংস্কার ও গ্রামোন্নয়নকে রবীন্দ্রনাথ তাঁর জীবনের বড় কাজ রূপে গ্রহণ করেছিলেন। আত্মীয়-এবং-প্রতিবেশী সম্পর্ককে ভিত্তি করে যে ঘনিষ্ঠ সমাজ, আদর্শগতভাবে তারই নাম পল্লীসমাজ। একে সম্পূর্ণ ধ্বংস হতে দিলে “মানবসম্বন্ধের মাধু” অন্য কোনো আধারে রক্ষা করা যাবে না। এই ছিল রবীন্দ্রনাথের বিশ্বাস। তাঁর দৃষ্টিতে “মাতৃভূমির যথার্থ স্বরূপ গ্রামের মধ্যেই। “ গ্রাম্যজীবনের মালিন্যের প্রতি অবজ্ঞাবশত যদি আজ পল্লী সমাজের শ্রীবৃদ্ধির জন্য আমরা সচেষ্টা না হই, তবে নতুন প্রযুক্তির বাহনে চেপে লক্ষ্মী কখনও আমাদের সংসারের দুয়ারে এসে দাঁড়ালেও আমাদের ঘরের ভিতর তাঁর জন্য আমরা আসন পেতে দিতে পারব না।
এ থেকেই এসে যায় দ্বিতীয় প্রশ্ন, পল্লীসমাজের শ্রীবৃদ্ধি কী করে সম্ভব? একদিন ছিল যখন গ্রামের সম্পন্ন ব্যক্তিরা গ্রামত্যাগী হতেন না, পল্লীই তাঁদের বাসস্থান ছিল। ধনীর একটা দায়িত্ব সেদিন ধর্মে স্বীকৃত ছিল। ধর্মের সেই অনুশাসন সকলে সমানভাবে মানতেন এমন নয়। তবু গ্রামসমাজে যাঁরা বিত্তবান তাঁদের বিত্ত নানাপ্রকার দানের ভিতর দিয়ে সমাজের সেবায় নিযুক্ত হত। যেমন ধনীর ধনদান তেমনি যাঁরা বিদ্বান তাঁদের বিদ্যাদানের একটা দায়িত্ব ছিল। গৃহীর দায়িত্ব ছিল নিজ নিজ সাধ্যানুযায়ী দক্ষিণা দেবার। রাজধর্ম এই ব্যবস্থারই পরিপোষক ছিল। কিন্তু রাজার উপর গ্রামের সমাজ একান্তভাবে নির্ভরশীল ছিল না। “যাহারা সমস্ত দেশকে বিনা বেতনে বিদ্যাশিক্ষা ধর্মশিক্ষা দিয়া আসিয়াছেন, তাঁহাদিগকে পালন করা, পুরস্কৃত করা যে রাজার কর্তব্য ছিল না তাহা নহে; কিন্তু কেবল আংশিকভাবে, বস্তুত সাধারণত সে কর্তব্য প্রত্যেক গৃহীর। রাজা যে প্রজাদের জন্য দীর্ঘিকা খনন করিয়া দিতেন না তাহা নহে, কিন্তু সমাজের সম্পন্ন ব্যক্তিমাত্রই যেমন দিত তিনিও তেমনই দিতেন। রাজা অমনোযোগী হইলেই দেশের জলপাত্র রিক্ত হইয়া যাইত না। “ এইভাবে দেশের সমাজের অভ্যন্তরেই সেই ব্যবস্থা ছিল যার দ্বারা সমাজ নিয়ত রক্ষা পেত এবং পুষ্ট হত। রাজশক্তির উপর সেই সমাজ অত্যন্ত নির্ভরশীল ছিল না।
আধুনিক যুগের দুয়ারে পৌঁছে অবস্থার পরিবর্তন দেখা গেল। যাঁরা ধনবান ও বিদ্বান তাঁরা গ্রামত্যাগী হতে শুরু করলেন। এবার তাঁরা হলেন শহরবাসী। গ্রামের উদ্বৃত্ত ধন আর গ্রামে নিযুক্ত রইল না, পুঞ্জীভূত হল শহরে। এইখানেই গ্রামসমাজের দুর্দশার সূচনা। এই দুঃখ অন্তরে বহন করেই রবীন্দ্রনাথ পল্লীতে প্রত্যাবর্তন করেছিলেন। তিনি অবশ্য জানতেন যে এই প্রত্যাবর্তনই যথেষ্ট নয়। গ্রামোন্নয়নের একটা স্থায়ী উপায় তিনি খুঁজছিলেন, এ নিয়ে তাঁর চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছিল শান্তিনিকেতনে বিদ্যালয় স্থাপনের পূর্বেই।
ব্রিটিশ আমলে জমিদারেরা যখন দলে দলে নগরবাসী হলেন তখন আমাদের পুরনো ব্যবস্থার একটা দুর্বলতা প্রকট হয়ে পড়ল। সেকালে দান দাক্ষিণ্যের প্রথা থাকাতে এদেশের সাধারণ গ্রামবাসী নিজেদের সমবেত শক্তির উপর নির্ভর করবার জন্য কখনও যথেষ্ট প্রস্তুত হয়নি। পল্লীর সংকট নিয়ে চিন্তা করতে গিয়ে এই অভাবটাই রবীন্দ্রনাথ তীব্রভাবে অনুভব করলেন। কোনো দয়াদাক্ষিণ্যে অথবা শুধু সরকারি সহায়তায় গ্রামের দুর্দশা দূর করা যাবে না। শীনিকেতন প্রতিষ্ঠার কিছুকাল পরে তিনি লিখলেন “আজ ধনীরা শহরে এসে ধনভোগ করছে বলেই গ্রামের সাধারণ লোকেরা আপন ভাগ্যের কার্পণ্য নিয়ে হাহাকার করছে। তাদের বাঁচবার উপায় যে তাদেরই নিজের হাতে একথা বিশ্বাস করবার শক্তি তাদের নেই। সমবায়নীতির দ্বারা এই সত্যকে সাধারণের মধ্যে প্রচার করা আমাদের আজকের দিনের কর্তব্য।” বস্তুত সমবায় শব্দটিকে রবীন্দ্রনাথ একটা বৃহৎ অর্থে গ্রহণ করেছিলেন। সেটা নিয়ে একটু আলোচনা প্রয়োজন।
ভারতীয় সমাজের ভিত্তিতে চাই স্বনির্ভর গ্রাম, শহরের শোষণ থেকে গ্রামকে মুক্ত করতে হবে এবং সেজন্য গ্রামবাসীর কাছে তুলে ধরতে হবে সমবায়ের পথ, এই কথাগুলি রবীন্দ্রনাথ এবং গান্ধী দু’জনের চিন্তাতেই সমানভাবে উপস্থিত। এটাকে তাঁরা বলেছিলেন সত্যের পথ। সত্য শব্দটার বিশেষ ব্যবহার দুজনের লেখাতেই চোখে পড়ে। ভারতবর্ষে সমবায়ের বিশিষ্টতা’ বিষয়ে লিখতে গিয়ে রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, “দারিদ্র্য হোক, অজ্ঞান। হোক, মানুষ যে গভীর দুঃখ ভোগ করে তার মূলে সত্যের ত্রুটি।” মানুষকে মানুষের কাছ থেকে যা কিছু বিচ্ছিন্ন রাখে তাতে পূর্ণ সত্য নেই। সেই দৃষ্টি সত্যদৃষ্টি যার সাহায্যে বিচ্ছিন্ন মানুষ বৃহত্তর যোগের ভিতর দিয়ে সার্থকতা অর্জন করতে পারে।
রবীন্দ্রনাথ পশ্চিমের দিকে তাকালেন। সেখানে দেখলেন যে, একদিকে রাষ্ট্রতন্ত্র আর জঙ্গী জাতীয়তাবাদ দেশে দেশে বিরোধ সৃষ্টি করে দাঁড়িয়ে আছে, অন্যদিকে জ্ঞানবিজ্ঞানের চচায় রাষ্ট্রের সীমানা অতিক্রম করে বিশ্বময় একটা মহাযজ্ঞ চলছে। সবদেশের জ্ঞানীগুণীরা যেখানে মিলিত হচ্ছেন সেইখানে মানুষের যথার্থ অগ্রগতি ঘটছে। রাষ্ট্রনীতিতে তিনি দেখলেন সত্যের ত্রুটি, জ্ঞানের ক্ষেত্রে সত্যের পূর্ণ।
বিশ্বের জন্য যে কথা সত্য গ্রামের জন্যও তাই! আত্মশক্তিতে তখনই বিশ্বাস স্থাপন করা সহজ হবে সমবায়ের শক্তি যখন গ্রামবাসীকে আকৃষ্ট করবে। বিচ্ছিন্নভাবে যারা ক্ষুদ্র ও দুর্বল তারাও নিজ নিজ শক্তিকে সমবেত করতে পারলে তাদের এগিয়ে যাবার পথ তৈরি হয়। “সমবায়নীতি মনুষ্যত্বের মূলনীতি, মানুষ সহযোগিতার জোরেই মানুষ। হয়েছে। গ্রামে গ্রামে যদি দারিদ্র্যের অবসান ঘটাতে হয়, গ্রামের মানুষকে যদি স্বাধীন ভাবে সমাজজীবনের দৃঢ়তর ভিত্তির উপর দাঁড়াতে হয়, তবে যেমন জ্ঞানে তেমনি কর্মে বিচ্ছিন্নতা ত্যাগ করতে হবে। জ্ঞান-বিজ্ঞানের ধারাকে গ্রামের ভিতর প্রবাহিত হতে দিতে হবে। কৃষি হোক, স্বাস্থ্য হোক, আনন্দের উপায় হোক, সমস্যার সমাধানের জন্য মনের ভিতর মিলনের একটা ক্ষেত্র প্রস্তুত করা প্রয়োজন। সমবায়নীতির অন্য একটা দিক আছে যেটা প্রধানত ব্যবসায়িক কর্মসম্বন্ধীয়, অর্থাৎ ক্রয় বিক্রয় এবং উৎপাদন প্রক্রিয়ার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। এজন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষার ভিতর দিয়ে নানা রকম প্রতিষ্ঠান, নানা ব্যবস্থা, উদ্ভাবিত হয়েছে। রবীন্দ্রনাথ বলছেন, “সমবায়তত্ত্ব একটা আইডিয়া, একটা আচার নয়; এইজন্য বহু কর্মধারা এর থেকে সৃষ্ট হতে পারে।” সহযোগিতার উদ্দেশ্যটাই প্রধান, প্রতিষ্ঠানের নানা রূপভেদ সম্ভব। কর্মের প্রকৃতি অনুযায়ী সমবায়ের সংগঠন ও পরিধির স্তরভেদ হয়। যেমন “কতকগুলি পল্লী নিয়ে এক একটি মণ্ডলী স্থাপন করা দরকার।” অর্থাৎ, একটি গ্রাম নিয়ে কাজ শুরু হলেও তাকে বৃহত্তর বৃত্তের সঙ্গে যুক্ত করা আবশ্যক।
অনুপুঙ্খের আলোচনা ছেড়ে দিয়ে মূল কথাতে ফিরে আসা যাক। রবীন্দ্রনাথের ভাষায় মোট কথাটা এই, “যেমন জ্ঞানের ক্ষেত্রে তেমনি ভাবের ক্ষেত্রে তেমনি কর্মের ক্ষেত্রে সর্বত্রই সত্যের উপলব্ধি ঐক্যবোধে নিয়ে যায় এবং ঐক্যবোধের দ্বারাই সকল প্রকার ঐশ্বর্যের সৃষ্টি হয়। “
.
২
গ্রামোন্নয়ন অথবা পল্লী সংগঠনের প্রশ্নে গান্ধী ও রবীন্দ্রনাথের বক্তব্যের গভীর সাদৃশ্য সত্ত্বেও বক্তব্যের ঝোঁকে খানিকটা পার্থক্য ছিল, সেটা এবার আলোচনার ভিতর আনা যেতে পারে। আত্মনির্ভরতা এক জিনিস, স্বয়ম্ভরতা অন্য জিনিস। প্রথমটি দুজনেই সমানভাবে চেয়েছেন। দ্বিতীয়টির ব্যাপারে গান্ধীর বক্তব্যে কিছু বৈশিষ্ট্য ছিল।
রবীন্দ্রনাথ একদিকে আত্মশক্তির উপর জোর দিয়েছেন, অন্যদিকে বাইরের জগতের সঙ্গে দেবার এবং নেবার পথ উন্মুক্ত রাখবার আকাঙ্ক্ষা ছিল তাঁর। গান্ধী সেই পথ বন্ধ করতে চেয়েছেন এমন নয়। তিনিও তো বলেছেন, গ্রাম নিজেকে দেশের জন্য সমর্পণ করবে, দেশ বিশ্বের জন্য। তিনিও জানালা খোলা রাখতেই আগ্রহ দেখিয়েছেন। তবু ফিরে ফিরে তাঁর কথার অন্য একটা ঝোঁক স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। আমাদের জীবনধারণের যে সব উপকরণ অত্যাবশ্যক সে সবের জন্য আমাদের স্বয়ম্ভর হতে হবে। একথা তিনি বলেছেন শুধু দেশের কথা ভেবেই নয়, গ্রামের কথা মনে রেখেও। কয়েকটি গ্রামের সমষ্টি রূপে যে মণ্ডলী স্থাপনের কথা রবীন্দ্রনাথের মনে ছিল তাকে তিনি দেখেছিলেন গ্রামীণ স্বায়ত্তশাসনের স্তম্ভ হিসেবে। গান্ধীর মনেও একই কথা ছিল। কিন্তু গ্রামসমষ্টিকে আর্থিকভাবে যথাসম্ভব স্বয়ংসম্পূর্ণ করবার উপর বেশি করে জোর দিয়েছিলেন গান্ধী।
আরো তলিয়ে ভাবতে গেলে কথাটা দাঁড়ায় এই রকম। গান্ধী দেখেছিলেন যে, রাষ্ট্রযন্ত্র এবং বণিকতন্ত্রের মধ্যে বাঁধা পড়ে গেছে গ্রাম। জীবনধারণের অত্যাবশ্যক সামগ্রীর জন্য গ্রাম যদি বাইরের মুখাপেক্ষী থাকে, আবদ্ধ হয়ে যায় কোনো জটিল সম্পর্কে, তবে শ্বাসরোধকারী সরকারী যন্ত্রতন্ত্র এবং বণিকের অধীনতা থেকে গ্রামকে মুক্ত রাখা যাবে না। এই রকম গান্ধীর মনে হয়েছিল। কাজেই তিনি চেয়েছিলেন যে, বাইরের সম্বন্ধটা গড়তে হবে এমনভাবে যেন হঠাৎ আক্রমণ এলে, অন্যায়ের প্রতিরোধের চেষ্টায় বাইরের সম্পর্ক কাটিয়ে গ্রামসমাজ নিজের পায়ে নিজে দাঁড়াতে পারে। সারা দেশের বেলায় আমরা যেমনভাবে চিন্তা করে থাকি, অর্থাৎ বাইরের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগের নানা সূত্র থাকবে তবু অর্থনীতিটা এমন হওয়া চাই যে যুদ্ধের সময় দেশ অত্যাবশ্যক উপকরণের জন্য বিদেশের উপর নির্ভর করবে না, গ্রামের ক্ষেত্রেও গান্ধী অনেকটা ঐভাবেই চিন্তা করেছেন। রবীন্দ্রনাথের ধ্যানধারণায় ঝোঁকটা অন্যদিকে। যেমন দেশ তেমনি গ্রামসমাজ প্রাচীর তুলে বিশ্ব থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করবে, এমনি করে মানবসমাজ নিজেকে খণ্ডক্ষুদ্র করে রাখবে, এই বিপদটাই রবীন্দ্র-চেতনায় বড় হয়ে দেখা দিয়েছে।
উনিশ শ’ বিশের কাছাকাছি বছরগুলিতে গান্ধী ও রবীন্দ্রনাথের এই পার্থক্য স্পষ্ট হয়ে ওঠে একটা বিশেষ কারণে। আসলে ঐ সময়ে তাঁদের কর্মক্ষেত্রের ভিন্নতাই বিপরীতদিকে দুজনকে আকর্ষণ করেছিল। গান্ধী তখন দেশকে প্রস্তুত করছেন বিদেশী শাসনের বিরুদ্ধে অসহযোগ আন্দোলনের জন্য। আর রবীন্দ্রনাথ তখন তৈরি হচ্ছেন এমন একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য যেখানে ভারত এবং বিশ্ব একটা অবারিত আতিথ্যের মধ্যে মিলিত হতে পারবে। গান্ধী-রবীন্দ্রনাথের তৎকালীন মতভেদের ভিতর বিশুদ্ধ নীতির দ্বন্দ্ব খুঁজতে গেলে একটু ভুল থেকে যায়, পরিস্থিতিগত পার্থক্যটাও বিবেচনার ভিতর রাখা আবশ্যক।
বিজ্ঞান ভাবনার ক্ষেত্রেও এই দুই সার্থক মানুষের দৃষ্টিভঙ্গীতে পার্থক্য উল্লেখযোগ্য। রবীন্দ্রনাথ বার বার বিজ্ঞানশিক্ষার উপর জোর দিয়েছেন। পল্লী প্রকৃতিতে তিনি বলছেন, “বিজ্ঞান মানুষকে মহাশক্তি দিয়েছে। সেই শক্তি যখন সমস্ত সমাজের হয়ে কাজ করবে তখনই সত্যযুগ আসবে।” লোকশিক্ষা গ্রন্থমালার বিজ্ঞপ্তিতে তিনি লিখেছিলেন “বুদ্ধিকে মোহমুক্ত ও সতর্ক করবার জন্য প্রধান প্রয়োজন বিজ্ঞানচচার।” দুটি কথা লক্ষ করবার মতো। এদেশের মানুষের মনে এমন অনেক কুসংস্কার আছে যার ফলে একদিকে আসে মিথ্যা ভেদাভেদ, সামাজিক যোগসাধনের পথে যেটা বাধা, আর অন্যদিকে মানুষ নানা দুবোধ দুর্বিপাকের ভয়ে অন্তরের তেজ হারিয়ে ফেলে। কৃষির উন্নয়নের কাজে রবীন্দ্রনাথ আরো বুঝেছিলেন যে, উৎপাদনের শক্তি বাড়াতে হলে বিজ্ঞানের সহায়তা অত্যাবশ্যক। বিজ্ঞানের প্রয়োজন জীবনের নানা স্তরে। বিজ্ঞান একই সঙ্গে মানুষকে নিয়মের দ্বারা শাসিত এবং আশার দ্বারা আশ্বস্ত করে।
এবার গান্ধীর কথায় আসা যাক। আধুনিক বিজ্ঞানের একটা প্রধান বৈশিষ্ট্য, পরীক্ষা-নিরীক্ষার দিকে ঝোঁক। গান্ধীর স্বভাবে ঐ গুণটি ছিল। কোনো কথা যখন তাঁর কাছে মূল্যবান মনে হয়েছে তখন তিনি সেটা নিয়ে বেশি দার্শনিক তর্কে না গিয়ে সেটাকে প্রয়োগের দ্বারা পরীক্ষা করে দেখতে চেয়েছেন। বারবারই ছোটবড় নানা ব্যাপারে এটা তাঁর জীবনে দেখা গেছে। একটি উদাহরণ দেওয়া যাক। রাসকিনের বই, Unto This Last, পড়ে ভালো লাগলো গান্ধীর। ঘটনাটি তিনি আত্মজীবনীতে লিপিবদ্ধ করেছেন। প্রথমেই বইটির প্রায়োগিক তাৎপর্য তিনি তিনটি সূত্রের আকারে লিখে ফেললেন। তারপর বেশি বাক্যব্যয় না করে তিনি ঐ চিন্তা কর্মে পরিণত করতে উদ্যোগী হলেন। সংক্ষেপে তিনি লিখেছেন “I arose with the dawn, ready to reduce these principles to practice,” এটা ছিল তাঁর জীবনের একটা বড় পরীক্ষা। তাঁর সারা জীবন জুড়েই ছিল ছোট বড় আরো নানা পরীক্ষা।
একথা বলা হয়েছে যে, গান্ধী ছিলেন যন্ত্রের বিরোধী। কথাটা পুরোপুরি ঠিক নয়, আবার ভুলও নয়। তিনি নিজে বলেছেন, যন্ত্রের বিরোধী হব কী করে! মানুষের দেহটাই। তো হল এক অতি সূক্ষ্ম যন্ত্র। তবে একথাও তিনি যোগ করেছেন, যন্ত্র যখন মানুষের উপর চেপে বসে তখন আমি যন্ত্রের বিরোধী। ঐটাই গান্ধীর দৃষ্টিভঙ্গীর মূল কথা। রবীন্দ্রনাথও ছিলেন যান্ত্রিকতার বিরোধী। তবু এ ব্যাপারে দুজনের আবারও ঝোঁকের। একটা পার্থক্য আছে। আধুনিক যন্ত্র বৃহৎ যন্ত্র ও বৃহৎ শিল্প–এমন এক সমাজ তৈরি করতে চলেছে যেখানে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হচ্ছে নগরে, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে, শাসনযন্ত্রে। এতে মানবিক সম্পর্কগুলি গুঁড়িয়ে যাচ্ছে, মানুষ নিজেই হয়ে যাচ্ছে একটা যন্ত্র অথবা যন্ত্রের দাস। এ অবস্থায় আধুনিক প্রযুক্তিবিদ্যাকে শুধু তার শক্তিতে মুগ্ধ হয়ে গ্রহণ করাটা মানুষের কর্তব্য নয়, বরং মনুষ্যত্বের আদর্শের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে যন্ত্র ও প্রযুক্তিকে নতুনভাবে নির্মাণ করাই জরুরী। গান্ধী এই ভাবে চিন্তা করেছিলেন। এই চিন্তা ক্রমশ প্রভাব বিস্তার করছে। এতোদিন প্রযুক্তি এগিয়ে গেছে নিজ অন্ধগতিতে, আর সমাজ নিজেকে বদলে নিয়েছে তারই সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে। আজ কিছু মানুষ প্রশ্ন তুলছেন, সমাজের আদর্শ কেন পাবে না অগ্রাধিকার? প্রযুক্তিকে কেন নিয়ন্ত্রণ করা হবে না তারই সঙ্গে মিল রক্ষা করে? এই নতুন চিন্তায় আছে গান্ধীর প্রভাব। তাঁর মূল চিন্তা ও আশংকাকে আজ শুধু অতীতমুখী বলে সরিয়ে রাখা যায় না।
জীবনযাত্রায় সরলতা ও সংযমের কথা গান্ধী ও রবীন্দ্রনাথ দুজনই বলেছেন। শান্তিনিকেতনের আশ্রম-জীবনে একদিন এইসব গুণের প্রশ্নাতীত প্রাধান্য ছিল। এই শতাব্দীর প্রারম্ভে রবীন্দ্রনাথ ধর্মের সরল আদর্শ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেছিলেন, “ব্রহ্মকে পাইবার জন্য সোনা পাইবার মতো চেষ্টা না করিয়া আলোক পাইবার মতো চেষ্টা করিতে হয়। সোনা পাইবার মতো চেষ্টা করিতে গেলে নানা বিরোধ বিদ্বেষ-বাধাবিপত্তির প্রাদুর্ভাব হয়, আর আলোক পাইবার মতো চেষ্টা করিলে সমস্ত সহজ সরল হইয়া যায়।” বিশ বছর। পর তাঁকেই বলতে শুনি, “মানুষের মনে ধনভোগ করার ইচ্ছা আছে, সেই ইচ্ছাকে কৃত্রিম উপায়ে দলন করে মেরে ফেলা যায় না। সেই ইচ্ছাকে বিরাটভাবে সার্থক করার দ্বারাই তাকে তার সংকীর্ণতা থেকে মুক্ত করা যেতে পারে। বলা বাহুল্য, আধুনিক যুগের আন্তরিক বাসনার সঙ্গে এই দ্বিতীয় উদ্ধৃতিটিরই সামঞ্জস্য বেশি। তবে মনে রাখা ভালো। যে, রবীন্দ্রনাথ এই উক্তিটি করেছিলেন সমবায়নীতি নিয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে। অর্থাৎ ধনীর নয়, দরিদ্র সমবায়ীর উন্নত জীবনযাত্রার ইচ্ছাটাকেই এখানে সমর্থন করা হয়েছে।
দারিদ্র্যকে গান্ধীও আদর্শ করে তোলেননি। তাঁর সেই স্মরণীয় উক্তি উদ্ধৃত করার প্রয়োজনও হয় না, ক্ষুধার্তের কাছে ঈশ্বরও দেখা দিতে পারেন শুধু অন্নদাতৃরূপে। তিনি সেই গ্রামই চেয়েছিলেন যেখানে সকলের জন্য শ্রমের সুযোগ আছে, অন্নবস্ত্র আশ্রয় শিক্ষা ও আরোগ্যের উপায় আছে। কিন্তু ভোগের বাসনার সপক্ষে কোনো উক্তি গান্ধীর লেখায় খুঁজে পাওয়া কঠিন হবে।
গান্ধী এবং রবীন্দ্রনাথের দৃষ্টিভঙ্গীতে আবারও এখানে কিছুটা ভিন্নতা দেখা যায়। আধুনিক প্রযুক্তি ও সভ্যতা মানুষের হাতে যে শক্তি দিয়েছে, বাহ্যপ্রকৃতির উপর যে কর্তৃত্ব দিয়েছে, তার ফলে শক্তি নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা আর অপরিমিত ভোগের ইচ্ছা বেড়ে চলেছে। ভোগের কোনো উপকরণই আর মানুষকে স্থায়ীভাবে তৃপ্ত করে না, আরো নতুন উপকরণের জন্য শুরু হয় কাড়াকাড়ি। গান্ধীর দৃষ্টিতে এটা আধুনিক সভ্যতার একটা বিষম ব্যাধি। ভোগের বৃদ্ধির দ্বারা এর নিরাময় সম্ভব নয়, সংযমের দ্বারাই সম্ভব। প্রেম এবং ভোগর মধ্যে একটা বিরোধ আছে। ভোগের দৃষ্টিতে সবই উপকরণ; মানুষকে ভোগের দৃষ্টিতে দেখলে সেও হয়ে ওঠে একটা উপকরণবিশেষ। সভ্যতা যখন ভোগের। তৃষ্ণাকে প্রবল করে তোলে তখন তাতে মানুষের সঙ্গে মানুষের আত্মার যোগ খর্ব হয়, ভালোবাসাও পরিণত হয় পণ্যে। তা ছাড়া পৃথিবীতে যতদিন দারিদ্র অবশিষ্ট আছে ততদিন প্রয়োজনের অধিক ভোগের মধ্যে একটা কুশ্রীতাও আছে। এইসব কথা রবীন্দ্রনাথের কাছেও গ্রাহ্য ছিল। কিন্তু গান্ধী তাঁর বাক্যে ও জীবনে এই কথাগুলি ব্যক্ত করেছেন অনেক বেশি প্রবলতার সঙ্গে। রবীন্দ্রনাথ ভোগের বাসনাকে সংযত করতে চেয়েছেন প্রধানত সৌন্দর্যবোধের দ্বারা, গান্ধী নৈতিকতার দ্বারা। তবে গান্ধীর নৈতিকতাও ছিল না শুনীতিবোধ, তার উৎস ছিল প্রেমের শক্তিতে।
এই প্রেমের শক্তিতে বিশ্বাসের উচ্চারণে গান্ধী ও রবীন্দ্রনাথের ভিতর বিস্ময়জনক মিল লক্ষ করা যায়। এক অবিশ্বাসী যুগের কাছে একই প্রত্যয় তাঁরা প্রকাশ করেছেন প্রায় একই ভাষায়। হিংসা ও বিশ্বাসঘাতকতায় অভ্যস্ত মানুষকে তাঁরা বলেছেন, সৃষ্টি যে। আজও ধ্বংস হয়ে যায়নি, মানুষ যে বেঁচে আছে, এতেই প্রমাণিত হয় যে প্রেমের শক্তি পরাস্ত হয়নি। রবীন্দ্রনাথের ভাষায় কথাটা শোনা যাক।
“The perpetual process that is going on in the world around us is a struggle for the victory of love…if victory were not always being achieved by goodness and beauty, then long before this, everything would have been devastated. We are then faced with this great fact of the existence of the Universe. This one fact, that there is still life, proves that life can be and is victorious over death… This great idea of love, always fighting the sin we have in the heart of our humanity, is the reason why we should not despair over sin.”
এই কথাগুলি রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন আর্জেন্টিনাতে ১৯২৪ সালে। অপ্রেমের সঙ্গে সংগ্রাম চলেছে প্রেমের। বিশ্বের অস্তিত্বই প্রমাণ করে যে মৃত্যু এখনও জয়ী হয়নি। এরই পাশে রাখা যাক গান্ধীর কয়েকটি বাক্য
“The fact that there are so many men still alive in the world shows that it is based not on the force of arms but on the force of truth or love. Therefore, the greatest and most unimpeachable evidence of the success of this force is to be found in the fact that, in spite of the wars of the world, it still lives on…Little quarrels of millons of families in their daily lives disappear before the exercise of this force…History does not and cannot take note of this fact.”
এই শেষ বাক্যটি লক্ষ করবার মতো। জগতে যত কলহ, রাজায় রাজায় যুদ্ধ, জাতিতে জাতিতে সংঘর্ষ, সেই সব লিখিত থাকে ইতিবৃত্তে। যে স্নেহ, প্রীতি, সহযোগিতা নিঃশব্দে মানুষের সমাজকে রক্ষা করে চলেছে তার ইতিহাস নেই, হতে পারে না। কথাগুলি আছে গান্ধীর হিন্দ স্বরাজ-এ, রবীন্দ্রনাথের স্বদেশী সমাজ-এর বছর পাঁচেক পরেই যার। রচনাকাল।
গান্ধীর এক প্রিয় শিষ্যা রবীন্দ্রনাথকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, দুজনের ভিতর পার্থক্য কোথায়? সেটা ১৯২৯ সালের শেষ দিকের কথা। রবীন্দ্রনাথ চিঠিতে উত্তর দিয়েছিলেন। তিনি লিখেছিলেন According to the Upanishad the reconciliation of the contradiction between tapasya and ananda is at the root of creation and Mahatmaji is the prophct of tapasya and I am the poet of ananda.”
প্রেমের প্রকাশ কখনও তপস্যায়, কখনও আনন্দে। এদের অভিন্ন বলা ভুল, এদের ঐক্য অস্বীকার করাও ভুল। সত্যের এই দুই ভিন্ন প্রকাশ।
.
৩
যদিও গান্ধী ও রবীন্দ্রনাথ পল্লীসংগঠনের উপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছিলেন তবু আদর্শসমাজে নগরেরও প্রয়োজন আছে একথা তাঁরা অস্বীকার করেননি। গান্ধী বলেছিলেন,
“In my picture of the rural economy the cities would take their natural place,”
পল্লীভিত্তিক সমাজেও নগরের একটা স্বাভাবিক স্থান থাকবে। রবীন্দ্রনাথের কথা, “আমি যখন ইচ্ছা করি যে আমাদের দেশের গ্রামগুলি বেঁচে উঠুক, তখন কখনও ইচ্ছে করি নে যে, গ্রাম্যতা ফিরে আসুক। গ্রাম্যতা হচ্ছে সেই রকম সংস্কার..যা গ্রামসীমার বাইরের সঙ্গে বিযুক্ত।”
বস্তুত নগরের পরিবেশে এমন কিছু চিন্তা ও আদর্শ গড়ে উঠেছে যাকে প্রয়োজন মতো শোধন করে যত্নের সঙ্গে মানবজাতির ক্রমবর্ধমান ঐতিহ্যের অন্তর্ভুক্ত করে নেওয়া আবশ্যক। এর কিছু পাওয়া যাবে বিজ্ঞান শিক্ষায়, যার খানিকটা আলোচনা আগেই করা গেছে। আরো কিছু আছে ব্যক্তিস্বাতন্ত্রের ধারণায়, যাকে স্বার্থসর্বস্বত্র থেকে উদ্ধার করে রক্ষা করা প্রয়োজন। ব্যক্তির বহুমুখী সম্ভাবনা সম্বন্ধে নগরই আমাদের বিশেষভাবে সচেতন করে তুলেছে। আমরা জেনেছি যে, মানুষের বৃত্তি অথবা বিশ্বাসের জগতের সীমানা একান্তভাবে নির্ধারিত হয়ে যায় না জন্মসূত্রে। নিজের অভিজ্ঞতার ভিতর দিয়ে ব্যক্তিকে অর্জন করতে হয় তার স্বকীয় সত্যানুভূতি।
এইসব কথা রবীন্দ্রনাথ ও গান্ধীর দৃষ্টিভঙ্গীতেও খুঁজে পাওয়া যায় স্মরণীয় রূপে।
প্রথম যৌবনে রবীন্দ্রনাথকে আদি ব্রাহ্মসমাজের সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করতে হয়েছিল। সে দায়িত্ব তিনি কিছুকাল যথাসাধ্য সুচারুভাবে পালন করেছিলেন। কিন্তু এই দায়িত্ব পালনের ভিতর দিয়েই আবার তিনি নিজের অন্তঃপ্রকৃতির সঙ্গে আরো গভীরভাবে পরিচিত হন। ক্রমেই তাঁর কাছে একথা সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, কোনো বাইরের ধর্মই তাঁর অন্তরের ধর্ম হতে পারে না। ব্যক্তি তাঁর নিজস্ব পথে সত্যকে লাভ করে, সত্যোপলব্ধির। অন্য কোনো যথার্থ উপায় নেই। শিল্পের ক্ষেত্রেও একই কথা। ঐতিহ্যশাসিত প্রাচীন সমাজে শিল্পীর প্রায়শ কোনো স্বতন্ত্র পরিচয় ছিল না, শিল্পকর্ম ছিল ঐতিহ্যের একান্ত অনুবর্তী। রবীন্দ্রনাথের কাছে কিন্তু শিল্পকর্ম সর্বোপরি শিল্পীর নিজস্ব ব্যক্তিত্বেরই প্রকাশ।
ছবিটা এবার এইভাবে তুলে ধরা যেতে পারে। সমাজের ভিত্তিতে থাকবে স্বায়ত্তশাসিত গ্রাম। বিজ্ঞান ও সমবায়কে ভিত্তি করে তৈরি হবে গ্রামের আর্থিক উন্নয়নের পথ। গ্রামের সঙ্গে যোগ থাকবে শহরের, কিন্তু সেই যোগ হবে না আধিপত্য ও অধীনতার, শোষক ও শোষিতের। সেই যোগের ভিতর দিয়ে অবিরত চেষ্টা চলবে এক নতুন সমম্বয়ের। গ্রামের ভিত্তিতে আছে মানুষের সঙ্গে মানুষের প্রত্যক্ষ হৃদয়ের যোগ। দারিদ্র্যের মলিন স্পর্শ থেকে মুক্ত করে একে রক্ষা করতে হবে। শহরের স্বার্থের দ্বন্দ্ব। থেকে বাঁচিয়ে গ্রহণ করতে হবে বিজ্ঞানের আগ্রহ আর ব্যক্তিস্বাতন্ত্রের মূল্য। একটা ঐক্যের মধ্যে এইসব উপাদানকে সংগ্রহ করা কঠিন কাজ। কিন্তু এটাই আগামী যুগের যথার্থ কাজ, তার ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক দায়িত্ব।
ব্যক্তিস্বাতন্ত্রের মূল্য রবীন্দ্রনাথ স্বীকার করেছিলেন প্রধানত শিল্পীর দৃষ্টি নিয়ে, আর গান্ধী বিবেকী মানুষের বিচারবুদ্ধি নিয়ে। তাই রবীন্দ্রনাথের ‘একলা চলো রে’ গানটি ছিল গান্ধীর একান্ত প্রিয়। সমাজের সেবা করা ব্যক্তির কর্তব্য। কিন্তু সেই সেবার পথ বেছে নেবে ব্যক্তি নিজে। যদি সে পথ স্বেচ্ছায় নির্বাচিত না হয় তবে তার কোনো নৈতিক মূল্যই নেই। ব্যক্তির স্বাধীনতাকে বিসর্জন দিয়ে কোনো আদর্শ সমাজ একেবারেই সম্ভব। নয়। হরিজন পত্রিকার পাতায় তিনি দ্বিধাশূন্য ভাষায় বলেছিলেন, ব্যক্তিস্বাধীনতার কোনো বিকল্প নেই। কথাটা তাঁর ভাষাতেই শোনা যাক “If the individual ceases to count, what is left of society? Individual freedom alone can make a man voluntarily surrender himself completely to the service of society…No society can possibly be built on a denial of individual freedom.”
ব্যক্তি তার বিবেকের অনুসরণ করবে। এজন্য যদি তাকে সমাজের ঐকমত্যের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হয় তবে সেটাই হবে তার কর্তব্য। একই সত্য কি তবে ভিন্ন ভিন্ন রূপে ভিন্ন ভিন্ন মানুষের কাছে দেখা দিতে পারে? গান্ধীর উত্তরে আবারও কোনো দ্বিধা নেই। তিনি বলেছেন, “Does not God Himself appear to different individuals in different aspects?…there is nothing wrong in everyone following– h according to his lights. Indeed it is his duty to do so.”
আসল প্রশ্ন, সত্যের জন্য আমরা কতটা মূল্য দিতে রাজি আছি? ব্যক্তির সততার সর্বশেষ পরিচয় তার বিদ্বেষমুক্ত নির্ভীকতায়, তার দুঃখবরণের আগ্রহে। সর্ববিধ ভয় জয় করা ছিল গান্ধীর জীবনের তপস্যা, যেমন জীর্ণতাকে জয় করাতেই ছিল রবীন্দ্রনাথের আনন্দ। এই দুই পথে ঘটেছিল দুজনের ব্যক্তিত্বের আশ্চর্য উন্মোচন।
গান্ধী ও রবীন্দ্রনাথের ভিতর বহুবার মতবিরোধ ঘটেছে। প্রতিবার তাঁদের ভিন্নতাকে তাঁরা প্রকাশ করেছেন অকপটভাবে, সুস্পষ্ট ভাষায়, অথচ পরস্পরের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা রক্ষা করে। এমন বিদ্বেষহীন বিরোধের উদাহরণ কোনো দেশেই বড় দেখা যায় না। নাগরিকতার শ্রেষ্ঠ ফল যে-ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য তাকে রক্ষা করেই এঁরা গ্রামের সেবায় আত্মনিয়োগ করেছিলেন। সমস্ত সাময়িক দ্বন্দ্বের উর্ধ্বে স্থান দিয়েছিলেন সত্যের প্রতি আগ্রহকে। এ আমাদের বিরল সৌভাগ্য যে, এঁদের আমরা পেয়েছিলাম একই কালে। তা নইলে সত্যের ভিন্নমুখী আহ্বানের এমন শশাভন সহাবস্থান আমাদের দেখা হত না। যেখানে এঁরা ভিন্ন আর যেখানে অভিন্ন, দুয়ের ভিতর দিয়েই সত্যকে আমরা পাই আরো সমগ্রভাবে।
আমৃত্যু রক্ষা করে গেছেন দুজনই মানুষের প্রতি মৃত্যুহীন বিশ্বাস। গান্ধী বলেছিলেন–
“There are chords in every human heart. If we only know how to suike the right chord, we bring out the music.”‘
আর রবীন্দ্রনাথের সেই বিখ্যাত উক্তির সঙ্গে তো আমরা সবাই পরিচিত; “মানুষের প্রতি বিশ্বাস হারানো পাপ”। এখানেও কথার সুরে একটু পার্থক্য আছে। একজন যেন ব্যক্তিকে উদ্দেশ করে বলছেন, তুমি বাজাতে শেখো। অন্যজন বলছেন বিশ্বকে উদ্দেশ করে, শৃন্বন্তু বিশ্বে অমৃতস্য পুত্রাঃ। শোনার যোগ্য বাণী রেখে গেছেন দুজনই। আমরা যদিও তাঁদের কতবার ব্যর্থ নমস্কারে বিদায় দিয়েছি, তবু তাঁরা বার বার আমাদের হৃদয়ের। দুয়ারে এসে দাঁড়িয়েছেন। তাঁদের সেই বিশ্বাসের কী প্রত্যুত্তর আমরা দেব?
গান্ধী ও রবীন্দ্রনাথ (১৯৮৬)