৫. সফরের নামায
সফরে রসূল (ফরয) দুই রাকাত পড়তেন
রসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁর রিসালাতকালে মোটামুটি চার প্রকার সফর করেছেন। সেগুলো হলো:
১. হিজরতের সফর।
২. আল্লাহর পথে জিহাদের সফর। এসফরই সবচেয়ে বেশি করেছেন।
৩. উমরার সফল।
৪. হজ্জের সফর।
রসূলুল্লাহ (ﷺ) যখন সফরে রওয়ানা করতেন, তখন সফর শেষে মদীনায় ফিরে আসা পর্যন্ত চার রাকাতের নামায সমূহ কসর (হ্রাস) করে দুই রাকাত পড়তেন।
সফরে তিনি চার রাকাত পুরো পড়েছেন বলে প্রমাণ নেই। তবে এ সম্পর্কে আয়েশা রা. থেকে একটি বর্ণনা আছে যে, রসূল (ﷺ) সফরে কখনো কসর করতেন, আবার কখনো পুরো পড়তেন। কিন্তু এই বর্ণনাটি বিশুদ্ধ নয়। ইমাম ইবনে তাইমিযা বলেছেন, এটি লোকদের মনগড়া হাদিস। আয়েশা রা. কী করে রসূল (ﷺ) এবং সকল সাহাবায়ে কিরামের কার্যধারার বিপরীত কোনো বর্ণনা করতে পারেন? [রসূল (ﷺ) ও তাঁর সাহাবিগণ কিভাবে নামায পড়তে, সে স্যক্রান্ত কয়েকটি হাদিস এখানে উল্লেখ করা হলো:
ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত : আল্লাত তা’আলা তোমাদের নবীর মাধ্যমে আবাসে চার রাকাত এবং প্রবাসে (সফরে) দুই রাকাত নামায ফরয করেছেন। তাছাড়া আল্লাহ পাক সন্ত্রাসকালে এক রাকাত নামায ফরয করেছেন। (সহীহ মুসলিম)
আবদুল্লাহ ইবনে উমর এবং আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. উভয় থেকে বর্ণিত, তাঁরা বলেছেন: রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সফরে দুই রাকাত নামায পড়ার নিয়ম প্রবর্তন করেছেন। এই দুই রাকাত মূলত পূর্ণ নামায, হ্রাসকৃত নয় (বরং আবাসের নামায দুই রাকাত বৃদ্ধি করা হয়েছে। তাছাড়া নবী করীম (ﷺ) সফরে বিতির নামাযও পড়তেন। (ইবনে মাজাহ)
আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমরা রসূলুল্লাহ (ﷺ) –এর সাথে মক্কা রওয়ানা করি। আমরা মক্কা থেকে মদীনায় ফিরে আসা পর্যন্ত তিনি (চার রাকাতের) নামায দুই রাকাত পড়েছেন। (বুখারি ও মুসলিম)। ইমরান ইবনে হুসাইন রা. থেকে বর্ণিত, আমি রসূলুল্লাত (ﷺ) –এর সাথে অনেক যুদ্ধে শরীক হয়েছি। মক্কা বিজয়কালও আমি তাঁর সাথে ছিলাম। এসময় তিনি মক্কায় আঠার রাত অবস্থঅন করেন, এ সময় তিনি নামায দুই রাকাত করে পড়েছেন। (আবু দুউদ)]
প্রমাণিত হাদিস থেকে জানা যায়, আল্লাহ তা’আলা প্রথমত, প্রতি ওয়াক্ত নামাযিই দুই রাকাত করে ফরয করেছেন। অতপর রসূলুল্লাহ (ﷺ) যখন হিজরত করে মদীনায় এলেন, তখন আবাসে নামাযের রাকাত সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়। আর প্রবাসের (সফরের) নামায পূর্ববৎ বহাল রাখা হয়।
রসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁর সকল সফরেই সব নামাযের দুই রাকাত করে পড়েছেন, তিনি কোনো ওয়াক্তে চার রাকাত পড়েছেন বলে কোনো প্রমাণ নেই। তাঁর ব্যাপারে কিী করে এ সন্দেহ করা যেতে পারে যে, তিনি রীতি বহির্ভূত কার করেছেন? মুসলমানরা তাঁর সফর সঙ্গী ছিলেন। তাঁরা কেউই তাঁকে সফরে চার রাকাত নামায পড়তে দেখেননি। আয়েশার বক্তব্যের ব্যাপারে ইবনে আব্বাস রা. বলেছেন “আয়েশার নিজস্ব একটি ব্যাখ্যা ছিলো, যেমন নিজস্ব একটি ব্যাখ্যা ছিলো হযরত উসমানের।” [এ সংক্রান্ত হাদিস নিম্নরূপ:
উরওয়া ইবনে যুবায়ের থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, (আমার খালা) আয়েশা রা. বলেছেন: নামায দুই রাকাত করেই ফরয হয়। অতপর রসূলুল্লাহ (ﷺ) –এর হিজরত করার পর চার রাকাত ফরয করা হয়, তবে সফরের নামায আগের মতোই দুই রাকাত ফরয থাকে।” ইমাম যুহরী বলেন, আমি উরওয়াকে জিজ্ঞাসা করলাম: তবে আপনার খালা আয়েশা রা. কেন সফরে চার রাকাত পড়তেন? জবাবে উরওয়া বলেন: এ ব্যাপারে তাঁর একটি ব্যাখ্যা ছিলো, মেযন হয্ত উসমানের একটি ব্যাখ্যা ছিলো। (বুখারি ও মুসলিম)
ব্যাখ্যা : হযরত আয়েশার ব্যাখ্যা ছিলো এই যে, তিনি মনে করতেন, সফরে ভয় ও সন্ত্রাসের সম্মুখীন হলেই নামায কসর করত হবে, নতুবা নয়।
হযরত উসমান একবার হজ্জের সময় মিনায় চার রাকাত নামায পড়েন। এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন: আমি এখানে এসে বিয়ে করেছি। আর রসূল (ﷺ) বলেছেন কেউ সফরে গিয়ে কোথাও বিয়ে করলে, সে সেখানে মুকীম হয়ে যাবে এবং পূর্ণ নামায পড়বে।]
বলা হয়ে থাকে, হযরত আয়েশার ধারণা ছিলো, নামায কসর করার জন্যে সফল শর্ত এবং সফরে সাথে ভয় ও আক্রমণের আশংকা থাকও শর্ত। তাই তাঁর মতে যে সফরে ভয়ের কারণ থাকেনা এবং আক্রমণের আশংকা থাকেনা, সেই সফরে নামায কসর করারও কারণ থাকেনা।
এই ব্যাখ্যা একেবারেই ভুল। তাছাড়া এ ব্যাখ্যা রসূল (ﷺ) –এর রীতির খেলাফ। কারণ সাহাবায়ে কিরাম থেকে একথা সুপ্রমাণিত যে, রসূল (ﷺ) নিরাপদ ফরেও সর্বদা নামায কসর করতেন।
এ সম্পর্কে হযরত উমরের বর্ণনা খুবই চমৎকার। তিনি বলেন নিরাপদ সফরে রসূল (ﷺ) –কে নামায কসর করতে দেখে আমি বিস্ময়বোধ করি এবং তাঁকে কসরে আয়াতটি উল্লেখ করে জিজ্ঞাসা করি: আল্লাহ তাঁ’আলা তো বলেছেন তোমরা যদি আশংকা করো, কাফিররা তোমাদেরকে বিপদে ফেলবে, তবে তোমরা নামায কসর করেতে পারো।” আমরা তো এখন নিরাপদ সফর করছি, তবু আপনি নামায কসর করলেন, এর কারণ কি? জবাবে রসূল (ﷺ) বলেণ: এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে তোমাদের প্রতি একটি দান (অবকাশ, অনুগ্রহ), সুতরাং তোমরা তাঁর দেয়া এই দান (অবকাশ ও অনুগ্রহ) গ্রহণ করো। [এ সংক্রান্ত আরেকটি হাদিস এখানে উল্লেখ করা হলো: হারেছা বিন ওহাব খুযায়ী রা. থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাদের নিয়ে মিনায় (চার রাকাতের স্থলে দুই রাকাত নামায পড়েছেন, অথচ এ সময় আমরা ছিলাম সকল ভয়ভীতি তেকে সম্পূর্ণ নিরাপদ। (বুখারি, মুসিলম)] (সহীহ মুসলিম)
এ থেকে বুঝা গেলো, কোনো আয়াতের নিজস্বভাবে তাৎপর্য বুঝা উম্মতের দায়িত্ব নয়, বরং রসূল (শরীয়ত প্রণেতা) (ﷺ) কোনো আয়াত দ্বারা যে বিধান নির্ণয় করেন, তা মান্য করাই উম্মতের কর্তব্য।
একবার উমাইয়া ইবনে খালিদ আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. –কে বললেন: কুরআনে তো আমরা কেবল মুকীম অবস্থায় এবং ভয়কালীন নামাযের কথা দেখতে পাই, সফরের নামাযের কোনো কথা তো কুরআনে নেই। তাহলে সফরের নামায এলো কোত্থেকে? জবাবে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর বলেন হে আমার ভাই! আমরা তো কিছুই জানতাম না। আল্লাহ পাক মুহাম্মদ (ﷺ) –কে আমাদের জন্যৌ নবী বানিয়ে পাঠালেন। অতএব আমরা তাই করি, যা তাঁকে করতে দেখেছি।
হযরত আয়েশার বর্ণনা সম্পর্কে ইমাম ইবনে তাইমিয়া বলেছেন, ঐ হাদিসটি মনগড়া। কেউ সেটি রচনা কের হযরত আয়েমার নামে চালিয়ে দিয়ে থাকবে। কারণ সাহাবোগণের যাবতীয় বর্ণনায় থেকে এটা সুপ্রমাণিত যে, সফরে রসূল (ﷺ) দুই রাকাতই পড়তেন, চার রাকাত পড়তেন না। হযরত উসমান মিনায় চার রাকাত পড়েছেন বিয়ের কথা বলে।
রসূল (ﷺ) সফরে সুন্নত পড়তেন না
রসূল (ﷺ) সফরে চার রাকাতের ফরয নামায হ্রাস করে দুই রাকাত পড়তেন। সফরে তিনি বিতির এবং ফজরের সুন্নত ছাড়া ফরয নামাযের আগে পরের আর কোনো সুন্নত নামায পড়েছেন বলে প্রমাণ নেই। হ্যাঁ, বিতির এবং ফজরের সুন্নত তিনি আবাসে প্রবাসে সব সময়ই পড়তেন।
সফরে সুন্নত পড়া সম্পর্কে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমরকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন: আমি সব সময় রসূলুল্লাহ (ﷺ) –এর সফর সঙ্গী থেকেছি। কিন্তু তাঁকে তাসবীহ (সুন্নত নাময) পড়তে দেখিডিন। তিনিই আমাদের আদর্শ এবং অনুসরণীয়। আল্লাহ তা’আলা বলেন: (আরবী*******************)
অর্থ: অবশ্যি আল্লাহর রসূলের মধ্যে রয়েছে তোমাদের জন্যে উত্তম আদর্শ।”
বুখারি ও মুসিলমে ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে: রসূল (ﷺ) সফরে বিতির এবং রাত্রের নফল নামায সোয়ারীর পিঠে ইশারা করে পড়তেন। তবে ফরয নামায সোয়ারীর পিঠে পড়তেন না।
ইমাম শাফেয়ী রহ. বলেছেন: রসূলুল্লাহ (ﷺ) –এর আমল থেকে একথা প্রমাণিত যে, তিনি সফরে নামায কসর করতনে, রাত্রে নফল নামাযও পড়তেন।
বুখারি ও মুসলিমে আমের ইবনে রবীয়া রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে সফরকালে রাত্রিবেলায় সোয়ারীর পিঠে সবে নফল নামায পড়তে দেখেছি। আসলে এটা ছিলো কিয়ামুল লাইল বা তাহাজ্জুদ নামায।
ইমাম আহমদকে সফরে নফল পড়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন: আমি আশা করি সফরে নফল পড়লে কোনো দোষ হবেনা।
হাসান রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রসূলুল্লাহ সাহাবিগণকে সফরে ফরয নামাযের আগে পরে নফল নামায পড়তেন। উমর, আলী, ইবনে মাসউদ, জাবির, আনাস, ইবনে আব্বাস, আবু যর রাদিয়াল্লাহু আনহুম অনুরূপ করতেন বলে বর্ণিত হয়েছে।
তবে আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. সফরে ফরয নামাযের আগে পরে কোনো সুন্নত নামায পড়তেন না। কেবল শেষ রাত্রে বিতির ও তাহাজ্জুদ পড়তেন। রসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর রীতি এই ছিলো যে, তিনি সফরে ফরয নামায কসর করতেন এবং ফরযের আগে পরে আর কোনো নামায পড়তেন না। তবে ফরযের আগে পরে নফল পড়তে নিষেধও করতেন না। অবশ্য এগুলো ছিলো সাধারণ নফল, ফরয নামাযের সাথে সম্পর্কিত নয়। কারণ মুসাফিরর সুবিধার জন্যে যে ফরয নামাযই হ্রাস করে দুই রাকাত করা হয়েছে, সেখানে ফরযের আগে পরে সুন্নত নামাযের রীতি চালু রাখার তো কোনো যৌক্তিকতা থাকতে পারে না। এমনটি হলে তো ফরয নামায পূর্ণ করাই উত্তম ছিলো। এজন্যেই আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. বলেছেন: সফরে ফরযের আগে পরে সুন্নত নামায পড়ার দরকার হলে তার চাইতে ফরয নামাযই (কসর না করে) পূর্ণ করতাম।
রসূলুল্লাহ (ﷺ) যুহরের আগে চার রাকাত আর যুহরের পরে দুই রাকাত নামায কখনো ছাড়তেন না বলে হযরত আয়েশার যে বর্ণনাটি রয়েছে, তা আবাসের নামাযের জন্যে প্রযোজ্য, প্রবাসের নামাযের জন্যে নয়।
তিনি যানবাহনে নামায পড়েছেন
রসূলুল্লাহ (ﷺ) এর রীতি ছিলো যে, তিনি যখন সোয়ারী বা যানবাহনে ভ্রমণরত থাকতেন, তখন বাহনের উপরই নফল নামায পড়তেন। [এ সম্পর্কে বুখারি ও মুসলিম সহ অন্যান্য গ্রন্থে ইবনে উমর, জাবির, আমের প্রমুখ রাদিয়াল্লাহু আনহুম থেকে অনেক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। ফরয নামাযের জন্যে যেহেতু রসূল (ﷺ) জামাত কায়েম করতেন আর তখন কার বাহন পমুর পিঠে জামাত কায়েম করা সম্ভব ছিলনা, তাই ফরয নামাযের সময় বাহন থেকে নেমে জামাত কায়েম করতেন।] বাহন যেদিকেই চলতো, ঘরতো, স্বাভাবিকভাবে তিনি সেদিকে ফিরেই নামায পড়তেন। এসময় তিনি ইশারায় মাথা নুইয়ে রুকূ সাজদা করতেন। তবে রুকূর চাইতে সাজদায় মাথা বেশি নোয়াতেন।
মুসনাদে আহম এবং আবু দাউদে আনাসরা. থেকে একটি বর্ণনা উদ্ধৃতি হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, তাবীরে হারীমার সময় তিনি বাহনকে কিবলামুখী করে নিতেন। তারপর বাকি নামায বাহন যেদিকে যেতো সেদিকে ফিরেই পড়তেন।
-এ হাদিসটি বির্কিত। কারণ, অনেকগুলো সহীহ হাদীসের বক্তব্যের সাথে এ হাদীসের বক্তব্য মিলেনা।
রসূলুল্লাহ (ﷺ) –এর বাহনে নামায পড়ার বিষয়ে অন্য যারা বর্ণনা করেছেন তাদের সকলের বর্ণনার মধ্যে মিল আছে। তাঁরা সকলেই বলেছেন: রসূলুল্লাহ (ﷺ) বাহনে নামায পড়েছেন এবং বাহন যে মুখী হতো, তিনিও সে মুখীই নামায পড়তেন।” এসব বর্ণনায় তারা এমন কোনো কথা উল্লেখ করেননি যে, তাবীরে তাহরীমার সময় রসূল (ﷺ) বাহনকে কিবলামুখী করে নিতেন। এসব হাদিস বর্ণনা করেছেন আমের ইবনে রবীয়া, আবদুল্লাহ ইবনে উমর, জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহুম। এই হাদিসগুলো আনাস রা. বর্ণিত উক্ত হাদিস থেকে অধিকতর সহীহ-শুদ্ধ। (আল্লাগই অধিক জানেন)
বৃষ্টির সময় এবং কাদামাটির স্থানে রসূলুল্লাহ (ﷺ) সাহাবিগণকে সাথে নিয়ে ফরয নামাও যানবাহনে পড়েছেন। অবশ্য এ বিষয়ে একাধিক সূত্রের বর্ণনা নেই। কেবল একজন সাহাবিই এ সম্পর্কে বর্ণনা করেছেন। এই হাদিসটি মুসনাদে আহমদ, তিরমিযি ও নাসায়ীদে বর্ণিত হয়েছে। হাদিসটি হলো: একবার রসূলুল্লাহ (ﷺ) সাহাবিগণকে নিয়ে একট অপ্রশস্ত জায়গায় উপনীত হন। সেখানে তঁঅদের উপর থেকে বৃষ্টি হচ্ছিল আর নিচে ছিলো কাদামাটি। এমন সময় নামাযের ওয়াক্ত হয়। রসূলুল্লাহ (ﷺ) –এর নির্দেশে মুয়াযযিন আযান এবং ইকামত দিলো। রসূল (ﷺ) নিজের বাহনে করে সবার সামনে চলে গেলেন এবং ইমাম হিসেবে সাহাবিগণকে সাথে নিয়ে নামায পড়েন।
তাঁরা সবাই নিজ নিজ বাহন থেকে নামায পড়েন। রসূল (ﷺ) ইশারায় রুকূ-সাজদা করেন। তবে রুকূর চাইতে সাজদায় মাথা অধিকতর নিচু করেন।”
– ইমাম তিরমিযি বলেছেন হাদিসটি গরীব। অর্থাৎ এক পর্যায়ে হাদিসটির বর্ণনাকারী মাত্র একজন ছিলেন। এক পর্যায়ে উমর ইবনে ডিরমাহ একাই হাদিসটির বর্ণনা করেছেন। অবশ্য হযরত আনাস বাহনে ফরয নামায পড়েছেন বলে প্রমাণ আছে। [হাদিসটি একক সূত্রে বর্ণিত হলেও যুক্তিগসংগত। কারণ, বাহন থেকে নেমে যমীনে জামাত কায়েম করার ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দিলে বাহনে নামায পড়াটাই যুক্তিসংগত। আধুনিককালে যানবাহনের ক্ষেত্রে হাদিসটি খুবই প্রযোজ্য, যেমন লঞ্চ।]
তিনি দুই ওয়াক্ত একত্রে পড়েছেন।
রসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর রীতি ছিলো, তিনি যদি সূর্য হেলার আগে সফরে বেরোতেন তাহলে যুহর নামাযকে আসরের ওয়াক্ত পর্যন্ত বিলম্বিত করতেন। অতপর আসরের সময় যুহর ও আসর একত্রে পড়তেন। যদি সূর্য হেলার পর সফরে রওয়ানা করতেন, তাহরে যুহর ও আসর একত্রে পড়ে রওয়ানা করতেন।
যদি মাগরিবের সময় তাড়াহুড়া করে যাত্রা শুরু করতেন, তাহলে মাগরিবের নামাযকে বিলম্বিত করে এশার সময় মাগরিব ও ইশা একত্রে পড়তেন।
রসূলুল্লাহ (ﷺ) –এর তবুক সফল সম্পর্কে বর্ণিত হাদিস থেকে এর প্রমাণ পাওয়া যায়। তাতে বলা হয়েছে: তবুক সফরে কোনো মনযিল থেকে রওয়ানা করার প্রাক্কালে রসূল (ﷺ) যদি সূর্য হেলাপর পরে ওয়ানা করতেন, তবে যুহরের সময় ও আসর একত্রে পড়ে রওয়ানা করতেন। যদি সূর্য হেলার পূর্বে যাত্রা করতেন, তবে যুহরকে বিলম্বিত করে আসরের সময় যুহর ও আসর একত্রে পড়তেন। মাগরিব এবং ইশার ক্ষেত্রেও অনুরূপ করতেন। এই হাদিসটির ব্যাপারে মতপার্থক্য সৃষ্টি হয়েছে:
-কেউ কেউ বলেছেন হাদিসটি সহীহ (বিশুদ্ধ)।
-কেউ কেউ বলেছেন হাদিসটি হাসান (উত্তম)।
-কেউ কেউ বলেছেন হাদিসটি ত্রুটিপূর্ণ।
কিন্তু আমরা সার্বিক বিচার-বিশ্লেষণ করে দেখেছি, এই বক্তব্য সংক্রান্ত হাদিসে কোনো ত্রুটি নেই। যেমন, একই বক্তব্য সংক্রান্ত যে হাদিস হাকিম তাঁর মুসতাদরক গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, সেটির সূত্র (সনদ) সহীহ হবার সকল শর্ত পূর্ণ করেছেন।
হাকিম বলেছেন, আমার কাছে আবু বকর ইবনে মুহাম্মদ ইবনে আহমদ বালূবিয়া বর্ণনা করেছেন, তাঁর কাছে বর্ণনা করেছেন মূসা ইবনে হারুণ, তার কাছে বর্ণনা করেছেন কুতাইবা ইবনে সায়ীদ, তাঁর কাছে বর্ণনা করেছন লাইছ ইবনে সা’আদ, তিনি শুনেছেন ইয়াযীদ ইবনে আবি হাবিব থেকে, তিনি শুনেছেন আবু তুফাইল থেকে, তিনি মুয়ায ইবনে জাবাল রা. থেকে। মুয়ায রা. তাঁর কাছে বর্ণনা করেছেন: তবুক যুদ্ধের সফরে রসূলুল্লাহ (ﷺ) যখনই (কোনো মনযিল থেকে) সূর্য হেলার পূর্বে রওয়ানা করতেন, তখন যুহর ও আসর একত্রে পড়তেন। যদি সূর্য হেলার পরে রওয়ানা করতেন, তবে (যুহরে সময়) যুহর ও আসর একত্রে পড়ে রওয়ানা করতেন। যদি সূর্যাস্তের পূর্বে রওয়ানা করতেন, তবে মাগরিব নামাযকে ইশা পর্যন্ত বিলম্বিত করতেন এবং ইশার সময় মাগরিব ও ইশা একত্রে পড়তেন। যদি সূর্যাস্তের পরে রওয়ানা করতেন তবে ইশাকে এগিযে এনে মাগরিবের সময় মাগরিব ও ইশা একত্রে পড়ে রওয়ানা করতেন।”
-হাকিম বলেছেন, এই হাদিসটি একদল বিশস্ত (হাদিসের) ইমাম বর্ণনা করেছেন। হাদিসটিতে কোনো প্রকার ত্রুটি কিংবা দুর্বলতা নেই। [হাদিসটি আবু দাউদ এবং তিরমিযিতেও বর্ণিত হয়েছে।] যারা হাদিসটিতে ত্রুটি আছে বলে উল্লেখ করেছেন, তারা মূলত এই হাদিসের একজন রাবির ব্যাপারে কথা তুলেছেন। সেই রাবি সম্পর্কে তাঁরা ভুলবশতই সমালোচনা করেছেন। ইমাম মুসলিমসহ হাদিসের ইমামগণ তার বর্ণনা গ্রহণ করেছেন।
এছাড়া হাদিসটির বক্তব্য যে সঠিক তার প্রমাণ আরো অনেকগুলো হাদিস থেকে পাওয়া যায়। [সহীহ বুখারিতে ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন: রসূলুল্লাহ (ﷺ) সফরে থাকাকালে যুহর ও আসর নাময একত্রে পড়তেন এবং মাগরিব আর ইশা একত্রে পড়তেন।”
বুখারিতে আনাস রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে: রসূল (ﷺ) সফরে মাগরিব ও ইশা একত্রে পড়তেন। বুখারিতে আনাস রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে: রসূল (ﷺ) সূর্য হেলার পূর্বে যাত্রা করলে যুহরকে আসর পর্যন্ত বিলম্বিত করতেন এবং আসরের সময় যুহর ও আসর একত্রে পড়তেন। বুখারিতে সালিম থেকে বর্ণিত, সফরের কষ্টের কারণে রসূল (ﷺ) মাগরিব ও ইশার নাময একত্রে পড়তেন।] ইবনে আব্বাস রা. থেকেও অনুরূপ বক্তব্য সম্বলিত হাদিস বিভিন্ন সূত্রে বর্ণিত হয়েছে।
ইমাম ইবনে তাইমিয়া দুই নাময একত্রে পড়ার হাদিস সমূহ বিশ্লেষণ করে বলেছেন, সফরে কোনো স্থানে অবস্থানের সময়, যখন কষ্ট থাকেনা, তখনো দুই নামায একত্রে পড়া বৈধ। কেননা রসূলুল্লাহ (ﷺ) আরাফায় অবস্থানকালে যুহর ও আসরত একত্রে পড়েছেন। তাছাড়া সফরে যদি কষ্ট এবং প্রয়োজন দেখা দেয়, সে অবস্থায় দুই নামায একত্র পড়া তো উত্তম কাজ।
ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহ, ইমাম শাফেয়ী রহ. ও ইমাম মালিক রহ. বলেছেন, দুই নাময একত্রে করার বিষয়টি সাধারণভাবে সফরের সাথে জড়িতে। কোনো বিশেষ ধরনের সফরের সাথে দুই নাময একত্র করার বিষয়টি খাস (নির্দিষ্ট) নয়।
ইমাম আবু হানীফা রহ. একত্র করার বিষয়টি শুধু আরাফার জন্যে খাস বলে মনে করেন।
উম্মতের অধিকাংশ পূর্বসূরীগণ (সালফে সালেহীন) সব ধরনের ছোট বড় সফরেই নামায কসর ও একত্র করতেন।
নামায করস ও একত্র করার জন্যে সফরের দূরত্ব
রসূলুল্লাহ (ﷺ) সফরের দুরত্বের কোনো সীমা রেখা নির্ধারণ করে দেননি। সাহাবিগণও কোনো সীমা রেখার কথা বলেননি। কতোটা দূরের সফল হলে নামায কসর করা যাবে, একত্র করা যাবে, (ফরয) রোজা স্থগিত করা যাবে- এসবের কিছুই রসূল (ﷺ) উল্লেখ করেননি। রসূল (ﷺ) এবং তাঁর সাহাবিগণ সাধারণবাবে সফর শব্দ ব্যবহার করেছেন।
কেউ কেউ মক্কা ও জিদ্দার ব্যবধান ও মক্কা ও তায়েফের ব্যবধানকে (অর্থাৎ ৪৮ মাইলকে) সফরে ন্যূনতম স্ট্যান্ডার্ড ধরেছেন। কিন্তু রসূল (ﷺ) এবং সাহাবিগণ এমন কিছু নির্ধারণ করে দেননি। তাঁরা সফর কথাটি বলেছেন। সুতরাং যে দূরত্বকে সাধারণভাবে সফর বলা হয়, সেটাই সফর। মাইল নির্ধারণ করা আমাদের দায়িত্ব নয়।
তাই ‘সফর’ বলা হয় এমন ছোট বড় সব সফরেই কসর, একত্র, রোযা স্থগিত করণ, তাইয়াম্মুম ইত্যাদি বৈধ।
শত্রু ভীতিকালীন নামায
একই সংগে সফর ও শত্রু আক্রমণ-ভীতি যোগ হলে সেই অবস্থায় আল্লাহ তা;আলা নামাযের আরকান এবং রাকাত সংখ্যা উভয়টাই সংক্ষেপ করার অনুমতি দিয়েছেন।
নির্বিঘ্নে (শত্রু আক্রমণের ভয়হীন) সফরকালে শুধু রাকাত সংখ্যা সংক্ষেপ করার অনুমতি দিয়েছেন।
আর সফরবিহীন ভীতিকর পরিস্থিতিতে শুধু নামাযের আরকান সংক্ষেপ করার অনুমতি দিয়েছেন।
-এটাই ছিলো রসূল (ﷺ) কর্তৃক প্রবর্তি নামায কসর (সংক্ষেপ) করার নিয়ম। কুরআনের কসর সংক্রান্ত আয়াতের ভিত্তিতেই তিনি এই কৌশল অবলম্বন করেন। [কুরআন মজীদে দুটি সূরায় এ সম্পর্কে আলোচনা হয়েছে। একটি হলো সূরা আল বাকারা; ২৩৮ ও ২৪৯ আয়াতক এবং আরেকটি হলো সূরা আন নিসা: ১০১ ও ১০২ আয়াত। এখানে উভয় সূরায় আয়াতগুলো উল্লেখ করা হলো:
(আরবী*******************)
অর্থ: সমস্ত নামাযকে হিফাযত করো, বিশেষ করে মধ্যম নামাযকে। আর আল্লাহর উদ্দেশ্যে বিনয় সহকারে দাঁড়াও। তবে অশান্তি ও গোলযোগের আশংকা থাকলে পায়ে হেঁটে অথবা বাহনে চড়ে যেভাবেই সম্ভব নামায পড়ো। আর নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টি হয়ে গেলো আল্লাহকে সেই পদ্ধতিতে স্মরণ করো (নামায পড়ো), যা তিনি তোমাদের শিক্ষা দিয়েছেন- ইতিপূর্বে –যা তোমাদের অজ্ঞাত ছিলো। (সূরা আল বাকারা: ২৩৮-২৩৯)
সূরা নিসায় বলা হয়েছে: (আরবী**************************)
অর্থ: আর যখন তোমরা সফরে বের হও, তখন নামায সংক্ষেপ করো নিলে কোনো ক্ষতি নেই। (বিশেষ করে) যখন তোমাদের আশংকা হয় যে, কাফিররা তোমাদের কষ্ট দেবে। কারণ তরা প্রকাশ্যে তোমাদের শত্রুতা করার জন্যে উঠে পড়ে লেগেছে। আর হে নবী। যখন তুমি মুলমানদের মধ্যে থাকো এবং (যুদ্ধাবস্থা) তাদেরকে নামায পড়ারবার জন্যে দাঁড়াও, তখন তাদের মধ্যে একটি দলের তোমার সাথে দাঁড়িয়ে যাওয়া উচিত এবং তারা অস্ত্রশস্ত্র সংগে নেবে। তারপর তারা সাজদা করে নিলে পেছনে চলে যাবে এবং দ্বিতীয় দলটি, যারা এখনো নামায পড়েনি, তারা এসে তোমার সাথে নামায পড়বে। আর তারাও সতর্ক থাকবে এবং নিজেদের অস্ত্র শস্ত্র বহন করবে। কারণ কাফিররা সুযোগের অপেক্ষায় আছে। তোমরা নিজেদের অস্ত্রশস্ত্র ও জিনিসস পত্রের দিক থেকে সামান্য গাফিল হলেই তরা তোমাদের উপরে অকস্মাৎ ঝাঁপিয়ে পড়বে। তবে যদি তোমরা বৃষ্টির কালে কষ্ট অনুভব করো, অথবা অসুস্থ থাকো, তাহলে অস্ত্র রেখে দিলে কোনো ক্ষতি নেই। কিন্তু তবুও সতর্ক থাকো। (সূরা আন নিসা: ১০-১০২)]
শত্রুভীতি কালীন পরিস্থিতিতে রসূলুল্লাহ (ﷺ) –এর নামাযের পদ্ধতি ছিলো এই যে, শত্রু যদি তাঁর কিবলার মাঝে অবস্থান করতো, তাহলে তাঁর সংগি সাথি সকল মুসলমানকে তাঁর পিছে নামাযে দাঁড় করাতেন। তিনি তাকবীর বলতেন, তাঁরাও সবচাই তাকবীর বলতো। তিনি রুকুতে যেতেন, তারাও সবাই রুকূতে যেতো। তিনি রুকূ থেকে মাথা উঠিয়ে দাঁড়াতেন, তারাও সবাই মাথা তুলে দাঁড়াতো। তারপর তিন যখন সাজদায় যেতেন, তখন তাঁর নিকটবর্তী (অর্থাৎ – সামনের) সফ তাঁর সাথে সাজদায় যেতো আর পেছনের সফ শত্রুমুখী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতো। এভাবে যখন তিন পয়লা রাকাত শেষ করতেন এবং দ্বিতীয় রাকাতের জন্যে সোজা হয়ে দাঁড়াতেন, তখন পিছের কাতারে লোকেরা সামনে চলে যেতো আর সামনের লোকেরা পিছের কাতারে চলে আসতো। পিছের কাতারের লোকেরা যাতে ইমামের সাথে দ্বিতীয় রাকাতে দুটি সাজদা করতে পারে, সেজন্যেই তারা সামনে আসতো, যেমনটি পয়লা রাকতের সামনের কাতারের লোকেরা করেছিল। এভাবে ইমামের সাথে উভয় নামায সমান হতো।
অতপর রসূলুল্লাহ (ﷺ) যখন দ্বিতীয় রাকাতের রুকূতে যেতেন, তখন পয়লা রাকতের মতো সামনে-পিছের সকলেই তাঁর সাথে রুকূতে যেতো। কিন্তু তিনি যখন দ্বিতীয় রাকাতের সাজদায় যেতোন, তখন সামনের কাতারে লোকেরা তাঁর সাথে সাজদায় যেতো, আর পিছনের কাতারের লোকেরা শত্রুর মোকাবিলায় দাঁড়িয়ে থাকতো। অতপর তিনি যখন তাশাহুদের জন্যে বসতেন, তখন পিছের কাতারে লোকরো দুটি সাজদা সেরে নিতো এবং তাঁর সাথে তাশাহুদের শরীক হতো। অতপর সবাইা একত্রে তাঁর সাথে সালাম ফিরাতো।
শত্রু যদি কিবলার দিকে না হয়ে অন্য কোনো দিকে হতো, তাহলে তিন সাথিদের দুই গ্রুপে ভাগ করে নিতেন। একটি গ্রুপ শত্রুর মোকাবেলায় প্রস্তুত (stand by) থাকতো। অপর গ্রুপটি তাঁর সাথে এক রাকাত নামায পড়ে শত্রুর মোকাবেলায় দাঁড়িয়ে থাকা গ্রুপের স্থলে গিয়ে দাঁড়াতো এবং দাঁড়িয়ে থাকা গ্রুপটি এসে তাঁর সাথে দ্বিতীয় রাকাতে শামিল হয়ে এক রাকাত নামায পড়তো। অতপর তিনি সালাম ফিরাতেন আর তারা উভয় গ্রুপ পালাক্রমে নিজস্তভাবে এক রাকাত করে পড়ে নিতো।
শত্রু কিবলার দিকে না হয়ে অন্য দিকে হলে আবার কখনো তিনি সাথিদের দুই গ্রুপ করে নিয়ে প্রথম গ্রুপকে নিয়ে পয়লা রাকাত পড়ে দ্বিতীয় রাকতে দাঁড়াতেন। তাঁর এই দাঁড়ানো থাকা অবস্থাতেই প্রথম গ্রুপ নিজেরা আরেক রাকাত পড়ে নিতো এবং সালাম ফিরিয়ে চলে যেতো। এ সময় দ্বিতীয় গ্রুপ এসে তাঁর সাথে দ্বিতীয় রাকাতে শরীক হতো। এদের নিয়ে দ্বিতীয় রাকাত পড়ে যখন তিনি তাশাহহুদের জন্যে বসতেন তখন তরা উঠে দাঁড়েোত এবং রয়ে যাওয়া এক রাকাত নিজেরা পুরা করে নিতো। এসময় তিনি তাঁদের এক রাকাত শেষ করার জন্যে তাশাহুদদের বৈঠকে অপেক্ষা করতে থাকতেন। অতপর তাদেরও তাশাহুদ শেষ হলে তিনি তাদের নিয়ে একত্রে সালাম ফিরাতেন।
আবার কখনো এমনটি করতেন যে, একটি গ্রুপকে নিয়ে দুই রাকাত পড়ে তাশাহুদের জন্যে বসতেন। এসময় সে গ্রুপটি নিজেরা সালাম ফিরিয়ে চলে যেতো এবং তাদের স্থলে অপর গ্রুপটি আসতো। তখন তিনি তাশাহহুদের বৈঠক থেকে দাঁড়িয়ে এদেরকে সাথে নিয়েও দুই রাকাত পড়াতেন অতপর সালাম ফিরাতেন।
-এ পদ্ধতিতে তাঁর হতো চার রাকাত আর সাহাবাগণের হতো দুই রাকাত করে।
আবার কখনো তিনি একটি গ্রুপকে সাথে নিয়ে দুই রাকাত পড়ে সালাম ফিরিয়ে ফেলতেন। পুণরায় আরেকটি গ্রুপকে সাথে নিয়ে দুই রাকাত পড়ে সালাম ফিরাতেন।
-এ পদ্ধতিতে তাঁর নামায হতো দু’বার।
কখনো তিনি একটি গ্রুপকে নিয়ে এক রাকাত পড়তেন। এ গ্রুপটি এক রাকাত পড়েই চলে যেতো। দ্বিতীয় রাকাত এরা পড়তোনা। অতপর আরেকটি গ্রুপ এসে তাঁর সাথে দ্বিতীয় রাকাত পড়তো।
-এ পদ্ধতিতে তাঁর হতো দুই রাকাত এবং সাহাবাগণ মাত এক রাকাত এক রাকাত পড়তেন।
শত্রু কর্কৃক আক্রমণের আশংকা কালে এসবগুলো পদ্ধতিতেই নামায পড়া বৈধ। ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল বলেছেন, এইসব পদ্ধতিই রসূল (ﷺ) থেকে প্রমাণিত, তাই অনুরূপ পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে এই সব পদ্ধতিতেই নামায পড়া জায়েয।
এছাড়াও আরো কিছু পদ্ধতির কথা বর্ণিত হয়েছে। তবে এখানে উল্লেখিত পদ্ধতিগুলোই সঠিক।
ইবনে আব্বাস, জাবির ইবনে আবদুল্লাহ, তাউস, মুজাহিদ, হাসান বসরি, কাতাদা, হাকাম ও ইসহাক ইবনে রাহুইয়া রাদিয়াল্লাহু আনহুমের মাযহাব হলো, প্রত্যেক গ্রুপ এক রাকাত এক রাকাত করে পড়বে।