৫. শব্দার্থতত্ত্ব

পঞ্চম অধ্যায় – শব্দার্থতত্ত্ব

১. শব্দের অর্থচাঞ্চল্য

এতক্ষণ শব্দের বাহ্যরূপ লইয়া আলোচনা হইল। এই অধ্যায়ে শব্দের যাহা মূল আন্তর শক্তি, অর্থাৎ অর্থবহত্ব, সেই বিষয়ে আলোচনা করিব। ভাষার পরিবর্তন শুধু ধ্বনির এবং পদের পরিবর্তনেই (অর্থাৎ শব্দ ও ধাতু রূপেই) শেষ হয় না, শব্দের অর্থপরিবর্তনও ঘটায়। সুতরাং শব্দার্থতত্ত্ব বা শব্দার্থপরিবর্তন (Semantics) ভাষাবিজ্ঞানের একটি বিশেষ আলোচনার বিষয়। তবে শব্দার্থতত্ত্ব ঠিক ব্যাকরণের অঙ্গ নয়। তবে ভাষাবিজ্ঞানের আলোচনায় ইহা আবশ্যিক অনুষঙ্গ।

সুদূর প্রাচীন কাল, যাহার চিহ্নমাত্র এমন কি হাড়ের টুকরা কিংবা ইটের খণ্ডটুকুও বিদ্যমান নাই, সেকালের একটু আধটু ইতিহাসের আভাস শব্দার্থতত্ত্বের সাহায্যেই পাওয়া যায়। উদাহরণ পরে মিলিবে।

সুদূর অতীত ইতিহাসের জীর্ণোদ্ধারেই নয় বর্তমান কালের প্রাত্যহিক ব্যবহারেও শব্দার্থতত্ত্বের প্রয়োজনীয়তা প্রকট। সাহিত্য সভ্য মানুষের মনের খাদ্যভাণ্ডার। সাহিত্যের প্রধান কাজ বাক্‌শিল্প সৃষ্টি। সে সৃষ্টির প্রাণ হইল অলঙ্কার। অলঙ্কার শব্দার্থেরই বিষয়।

শব্দের অর্থপরিবর্তনকাহিনী বিচিত্র এবং মনোরম। ইহা হইতে মানবমনের চিন্তাধারার বিবিধ ও বিচিত্র বিসর্পণের নির্দেশ পাওয়া যায়।

অভিধানে লব্ধ শব্দের অর্থ নির্দিষ্ট এবং সুস্পষ্ট। কিন্তু মাতৃভাষায় শব্দ সাধারণত অভিধান হইতে সংগৃহীত হয় না (বাঙ্গালার মতো কথ্যভাষায় আভিধানিক শব্দ অল্পই ব্যবহৃত হয়।) বিদেশি ভাষা শিক্ষাতেও শুধু অভিধানের উপর নির্ভর করা চলে না, বিশেষ করিয়া যেখানে সে ভাষাটি আধুনিক কথ্যভাষা। অবশ্য সংস্কৃত গ্রীক লাটিন প্রভৃতি প্রাচীন ও বহুকাল-অপ্রচলিত ভাষার পক্ষে অভিধানের আশ্রয় ছাড়া গত্যন্তর নাই। কানে শুনিয়াই মাতৃভাষা এবং ভালো করিয়া শিখিতে গেলে যে-কোনো কথ্যভাষা শিখিতে হয়। এইরূপে কানে যে শব্দ শিখি তাহার অধিকাংশের অর্থ সমগ্র বাক্যের তাৎপর্য হইতে নিষ্কালিত হয়, কেহ বলিয়া দেয় না। একই শব্দ বিভিন্ন বাক্যে ব্যবহৃত হইয়া যে সব অর্থ জ্ঞাপন করে, ভাষা ব্যবহারকারীর মনে সেই শব্দের সঙ্গে সেই সেই অর্থসমষ্টির অচ্ছেদ্য জোড় লাগিয়া যায়। ‘অঙ্কে তার মাথা নাই। মেয়েটির মাথায় একরাশি চুল। ছেলেটা মাথায় কিছু রাখতে পারে না। রাম তার গুরুকে মাথায় ক’রে রেখেছে। হরিবাবু গ্রামের মাথা। তোমার কি মাথা ধরেছে? মাথা নেই তার মাথা-ব্যথা! তার কথার কোন মাথা নেই। গাছের মাথায় একটা লোক উঠেছে। তার দেনা সম্পত্তির মাথায় মাথায় হয়েছে। সে ট্রেন ছাড়বার মাথায় স্টেশনে গেল। মোড়ের মাথায় কে যে দাঁড়িয়ে রয়েছে। তে-মাথায় ট্রাফিক পুলিশ আছে। “দইয়ের মাথা ঘোলের শেষ।” ঝোকের মাথায় কাজ করতে নেই। আমার মাথা খাও (নারীর ভাষায়’)—ইত্যাদি বাক্যের প্রসঙ্গ হইতে ‘মাথা’ শব্দের ভিন্ন ভিন্ন দ্যোতনা বুঝিতে পারি। এই অর্থসমষ্টিকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। একটি (দৈবাৎ একাধিক) অর্থ মুখ্য, বাকি সব গৌণ। তবে সব অর্থই আসিয়াছে মুখ্য অর্থ হইতে। কিন্তু কালক্রমে গৌণ অর্থসমূহ হয়ত এমন প্রাধান্য লাভ করিতে পারে যে, শেষে মুখ্য অর্থের সঙ্গে গৌণ অর্থের সম্বন্ধ খুঁজিয়া পাওয়া দায়। উপরের উদাহরণগুলিতে [মাথা] শব্দের বিভিন্ন গৌণ অর্থ হইতেছে “প্রবণতা, মাথার খুলির উপরিভাগ, স্মরণশক্তি, শরীরাঙ্গ, সম্মান, প্রধান, চিন্তাশক্তি, অর্থ, শীর্ষ, সমান, মুহূর্ত, সম্মুখ ভাগ, পথের সংযোগস্থল, ঘন অংশ, ভর”, ইত্যাদি। এইসব অর্থই আসিয়াছে মুখ্য অর্থ “শরীরের উর্ধ্বতম অঙ্গ ( =মস্তক)” হইতে।

একাধিক অর্থ নাই এমন শব্দের সংখ্যা খুবই কম। বৈজ্ঞানিক দার্শনিক পরিভাষা ব্যতিরেকে সকল শব্দই প্রসঙ্গ অনুযায়ী কিছু না কিছু নূতন ব্যঞ্জনা লাভ করিতে পারে। [ভাত] শব্দটির মৌলিক অর্থ একটিই কিন্তু “হাতে মারে না ভাতে মারে; ডালভাতের ব্যবস্থা”—এই দুই বাক্যে ‘ভাত’ শব্দটি ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হইয়া—শুধু সিদ্ধ অন্ন নয়, সমস্ত সংসার সামগ্রী বুঝাইতেছে।

কোনো কোনো শব্দের মুখ্য অর্থ লুপ্ত হইয়া গৌণ অর্থগুলি প্রাধান্য লাভ করিয়া থাকে। এইরূপ স্থলে বাক্যমধ্যে বা বাক্যের প্রসঙ্গে পদের প্রকৃত অর্থ অনেক সময় ধরা পড়ে না। বক্তার শ্রোতার অথবা ক্রিয়ার কর্তার প্রসঙ্গ হইতে তাহা বুঝিয়া লইতে হয়। He is playing today—এই বাক্যে [play] বলিতে “গান করা, অভিনয় করা, ফুটবল ইত্যাদি খেলা করা” প্রভৃতি অনেক কিছুই বোঝায়। কিন্তু ঠিক কোন্‌ অর্থটি বুঝাইবে, তাহা প্রসঙ্গের উপর নির্ভর করিতেছে।

পূর্বে সমরূপ শব্দের উদাহরণ দেওয়া হইয়াছে। এমন শব্দ কোনো কথ্যভাষায় খুব বেশি থাকিতে পারে না, কেননা তাহাতে ভাবপ্রকাশে অসুবিধা হয়। সেইজন্য, এইরকম শব্দের বাহুল্য ঘটিলে, হয় একটি শব্দ লোপ পায়, নয় বিশিষ্ট প্রত্যয় যুক্ত হয়। দুই স্বরের মধ্যবর্তী একক স্পৃষ্ট ব্যঞ্জনধ্বনির লোপের ফলে প্রাকৃতে একদা সমরূপ শব্দের বাহুল্য ঘটিয়াছিল। সংস্কৃত ‘গত, গদ, গজ’ এই তিনটি শব্দ একদা প্রাকৃতে দাঁড়াইয়াছিল ‘গঅ’। ইহার মধ্যে ক্রিয়াপদ বলিয়া প্রথমটির প্রয়োগ বেশি ছিল, তাই হয়ত এটিকে পৃথক করিবার জন্য ইহাতে ‘ইল্ল’ প্রত্যয় যোগ করিয়া ‘গইল্ল’ রূপ দেওয়া হইয়াছিল॥

২. বাক্যাংশের অর্থসংহতি

অনেক সময় দেখা যায় যে, বাক্যাংশ সংক্ষেপ করিবার প্রচেষ্টায় বাক্যাংশের সমগ্র অর্থ একটিমাত্র পদে সংহত। এইরূপে কখনো কখনো বিভক্তিযুক্ত পদ বিভক্তিহীন নূতন শব্দে পরিণত হয়। আধুনিক বাঙ্গালায় “খাইবার জিনিষ” অর্থে [খাবার] প্রচলিত। যদিও শব্দটি আসলে ‘খাইবা’ এই শব্দের যষ্ঠীবিভক্তিযুক্ত পদ, তবুও এখন ইহা পৃথক শব্দে পরিণত হওয়ায় ইহা হইতে আবার নূতন করিয়া ষষ্ঠীবিভক্তির পদ তৈয়ারী হইয়াছে—‘খাবারের’। “জবাব অর্থে [উত্তর] আসিয়াছে ‘উত্তর (অর্থাৎ প্রশ্নের পরবর্তী) বাক্য’ এই প্রয়োগ হইতে (তুলনীয়, “শল্যঃ প্রাহোত্তরং বচঃ”)। আবেস্তীয় ‘অইরিয়ানাম্‌ বএজো’ (অর্থাৎ “আর্যদের দেশ”) হইতে দ্বিতীয় পদটির লোপের ফলে ‘ইরান’ নামের উদ্ভব। বাঙ্গালা ‘ভোটান >ভুটান’ শব্দ আসিয়াছে সংস্কৃত ভোটানাং (বিষয়ঃ), অর্থাৎ “ভোট দিগের (দেশ)”, হইতে। এইরূপে বিশেষণযুক্ত বিশেষ্যের লোপের ফলে বিশেষণ বিশেষ্যে পরিণত হয়। যেমন, স্থূল (বা স্থবির) হস্ত>উড়িয়া থোর ( =শুড়); শীতল ভোগ>শীতল; দণ্ডবৎ (অর্থাৎ দণ্ড বা লাঠির মতো ঋজু) প্রণাম>দণ্ডবৎ; ক্ষৌর কর্ম> কর্ম> বাঙ্গালায় (দাড়ি ইত্যাদি) কামানো; ক্ষুদ্ৰ শস্য>ক্ষুদ্র>খুদ; আহ্নিক-কৃত্য>আহ্নিক; পানিতাভাত>পান্তা (“নুন আনতে পান্‌তা ফুরোয়”)।

‘খাবার’ শব্দের মতো ষষ্ঠীবিভক্তিযুক্ত পদের স্বতন্ত্র শব্দ হিসাবে প্রয়োগ বাঙ্গালায় নিতান্ত বিরল নয়। বিশেষ্য উহ্য থাকিলে অনেক সময় সম্বন্ধপদ প্রাতিপদিকের মতোই বিভক্তি ও প্রত্যয় গ্রহণ করে। যেমন, ‘আমার বইটা এখানে রয়েছে, তোমারটা কই’; এখানে ‘তোমার বইটা’ এই অর্থে ‘তোমারটা’ হইয়াছে। ইহার অনুরূপ প্রয়োগ পাই ব্যক্তিনামের বহুবচনে। যেমন “রামেরা আসিয়াছে’; এখানে ‘রামেরা’ পদের অর্থ হইতেছে “রাম এবং তাহার আত্মীয়পরিজন”॥

৩. শব্দার্থ ও অলঙ্কার

এমন কোনো শব্দ বা পদ নাই যাহার অর্থের এতটুকুও বিচ্যুতি নাই ‘গোরু’ বলিলে ‘মূর্খ’ বুঝাইতে পারে, নিরীহ ব্যক্তি বুঝাইতে পারে। এমন কি সর্বনাম পদেরও অর্থ অনমনীয় নয়। পথে দুই দলের দেখা, একদল বলিল, ‘আমরা খেতে যাচ্ছি, তোমরা কোথায়?’ উত্তরে অপর দল বলিল, ‘যাচ্ছিলুম বেড়াতে, তা থাক, এস আমরা সবাই খেতেই যাই। এই দুই উক্তির মধ্যে ‘আমরা’ শব্দ আছে, কিন্তু একই অর্থে নাই। প্রথম বাক্যে ‘আমরা’ দ্বিতীয় দলের মর্যাদা (exclusive) অর্থে, দ্বিতীয় বাক্যে ‘আমরা’ প্রথম দলের অভিবিধি (inclusive) অর্থে। সুতরাং দেখিতেছি যে শব্দের প্রধান অর্থের সঙ্গে কিছু অবান্তর অর্থ আনুষঙ্গিকভাবে থাকিয়া যায়, এবং কালক্রমে তাহার মধ্যে কোনো একটি প্রাধান্য লাভ করে। যেমন বৈদিক ‘বর’ শব্দের অর্থ ছিল “কন্যানির্বাচনকারী”, তাহার পরে হইল “কন্যা-নির্বাচনকারী বিবাহার্থী”, তাহা হইতে “বিবাহার্থী”; আধুনিক বাঙ্গালায় শব্দটির অর্থ হইতেছে বিবাহার্থী, সদ্যোবিবাহিত ব্যক্তি, পতি। শব্দার্থের এইরূপ আদানপ্রদানেই বাক্‌শিল্পের অলঙ্কার বিস্তারিত।

কোন শব্দ যে-বিষয়ে যথার্থভাবে প্রযোজ্য, তাহা ঘুরাইয়া অন্যত্র প্রয়োগ করিলে বাক্যে চাতুর্য অথবা বর্ণনায় অভিনবত্ব প্রকাশ পায় এবং বক্তব্য সরস হয়। অর্থালঙ্কারের ইহাই মূল কথা। সাধারণত উপমা রূপক সমাসোক্তি অতিশয়োক্তি ব্যাজস্তুতি উৎপ্রেক্ষা ইত্যাদি অলঙ্কারের দ্বারা অথবা লক্ষণার সাহায্যে শব্দের স্থায়ী অর্থপরিবর্তন ঘটিতে পারে। যেমন, শ্বাপদ (মৌলিক অর্থ “কুকুরের মতো যাহার পা”), কীর্তিকলাপ (মৌলিক অর্থ “ময়ূরপুচ্ছের মতো সাজানো ও বিচিত্রবর্ণ কীর্তি”), সন্ধ্যামণি (ফুল), উদর (“জলপাত্র”), পেট (মূলে “বস্তা”, তু পুটুলি; মারাঠী পোট), হরতাল<হড়তাল < হটতাল (“হাটে তালা”), উদ্বেল (“ব্যাকুল”, মৌলিক অর্থ “বেলাভূমি অতিক্রান্ত”), স্তম্ভিত (“বিস্মিত”, মৌলিক অর্থ “স্তম্ভত্ব-প্রাপ্ত”), অবাক্‌ (“বিস্ময়ে বাক্যহীন”), ‘এক ঘটি তেষ্টা পেয়েছে’ (ঘটি অর্থে “ঘটি ভরা জল”), ‘সে দু’পাতা ইংরেজী (অর্থাৎ “দুই-একখানা বই”) পড়েছে’ ইত্যাদি। উপমাগর্ভিত শব্দে তদ্ধিত-প্রত্যয়ও যুক্ত হয়। যেমন, গঙ্গাজলি, (=গঙ্গাজলের মতো রঙ), বেগুনে ( <বাইগনিয়া), পেঁয়াজি, হলদে, আশমানি (=আশমানের মতো রঙ), ইত্যাদি।

সব ভাষাতেই এইরকম অলঙ্কার চাপানো হয়, ফলে অর্থপরিবর্তনের অজস্র উদাহরণ সব ভাষাতেই আছে। প্রাচীনকালের রূপক-অলঙ্কার প্রলেপের ফলে অনেক শব্দের মৌলিক অর্থ একেবারে লোপ পাইয়াছে। অনেক সময়, এই সকল শব্দের অর্থ যে রূপক-অলঙ্কারের প্রয়োগ হইতে আসিয়াছে, তাহা সহজে বোঝা যায় না। ‘বনস্পতি’ শব্দের মৌলিক অর্থ “বনের পতি” অর্থাৎ বনের “বৃহত্তম বৃক্ষ”। তাহা হইতে “বৃহৎ বৃক্ষ”। ‘দারুণ’ মৌলিক অর্থে “দারুনির্মিত”, তাহা হইতে “দারুনির্মিত দ্রব্যবৎ কঠিন”, অবশেষে “অত্যন্ত কঠিন > অত্যন্ত” ইত্যাদি। ‘মধুর’ শব্দের মৌলিক অর্থ ছিল “মধুযুক্ত”, তাহা হইতে যথাক্রমে “মধুবৎ সুস্বাদু, রমণীয়, চমৎকার” ইত্যাদি অর্থ আসিয়াছে। ‘গবাক্ষ’-এর মৌলিক অর্থ “গোরুর চোখ”। প্রাচীনকালে গোরুর চোখের মতো ঘুলঘুলি জানালা থাকিত, তাহাই আধুনিক অর্থের মূল। সেইরূপ ‘গোষ্ঠী’ “যেখানে অনেক গোরু থাকে” > “সমূহ”। ‘সগোত্র’—আসল মানে “এক গোয়ালের গোরু”। “হস্তের মতো অঙ্গ (অর্থাৎ শুড়) যাহার আছে” এমন জন্তুর নাম “হস্তী”। “হাতের মতো তৈজস” অর্থে বাঙ্গালায় “হাতা”; “হাঁড়ির মতো বৃহৎ” অর্থে হাঁড়িয়া > ‘হেঁড়ে’ (মাথা)। “জলবৎ তরল বা স্বাদহীন” অর্থে ‘জলুয়া >জ’লো। এইভাবে রূপকারূঢ় শব্দে বাঙ্গালায় [-আ ( <আক)] প্রত্যয়ও দেখা যায়। যেমন, ছাত—ছাতা; হাত—হাতা; পা—পায়া; মুখ—মুখা; চোখ—চোখা; ভাত—ভাতা; কান—কানা; খড়জাঠি—খড়জাঠিয়া (শব্দটি চৈতন্যভাগবতে আছে; অর্থ “যে কখনো দাঁতে খড় নেয় কখনো বা লাঠি ধরে”; অর্থাৎ যখন-যেমন তখন-তেমন বা “শক্তের ভক্ত, নরমের গরম)”॥

৪. শব্দার্থ ও ইতিহাস-উপাদান

শব্দের অর্থপরিবর্তনের মধ্যে ভাষাসম্প্রদায়ের অতীত ইতিহাসের ও চিন্তাধারার আভাস-ইঙ্গিত লুকানো থাকে। তাই শব্দের অর্থপরিবর্তনের ইতিহাস আলোচনা করিয়া আমরা প্রাচীন রীতিনীতি বস্তুব্যবহার প্রভৃতি বিষয়ে এমন অনেক কিছু জানিতে পারি যাহা অন্যথা মিলে না। ‘কলম’ শব্দের মূল অর্থ “শর”, “খাগ”; শরের বা খাগের লেখনীর নাম হইল ‘কলম’। ইংরেজী ‘পেন’ (pen) শব্দের অর্থও “কলম” তবে তাহা ‘যে-কোনো বস্তুনির্মিত বা যে-কোনো ধরনের হোক না কেন”। কিন্তু পূর্বে এই শব্দের লাটিন রূপ penna-র অর্থ ছিল “পালক”। ইউরোপে পালকের কলম প্রচলিত ছিল বলিয়া pen শব্দের অর্থ হইল “পালকের কলম”। আমরা বাঙ্গালায় বলি ‘পেন কলম’ বা ‘পেনের কলম’। পরে যখন ষ্টীল নিবের ব্যবহার আসিল তখনও শব্দটি রহিয়া গেল অর্থপরিবর্তিত করিয়া। সংস্কৃত ‘পশু’ শব্দের মূল অর্থ “গো অশ্ব মেষ প্রভৃতি গৃহপালিত প্রাণী”। ইংরেজীতে এই শব্দের সগোত্র ‘ফী’ (fee) আকার ধারণ করিয়াছে, অর্থ হইয়াছে “বুদ্ধিজীবীর পারিশ্রমিক”। এই অর্থপরিবর্তনের ইতিহাস আলোচনা করিলে বুঝিতে পারি যে, এক কালে পশু ছিল মানুষের ধনসম্পদ, পশুর বিনিময়েই ক্রয়-বিক্রয় চলিত। সুতরাং “গৃহপালিত প্রাণী” হইতে অর্থ দাঁড়াইল “বিনিময় মূল্য” এবং তাহা হইতে “মূল্য, অর্থ”, পরিশেষে “বুদ্ধিজীবী ব্যক্তির পরিশ্রমের নির্দিষ্ট মূল্য”। ইন্দোইরানীয় যুগে অর্থাৎ ১৫০০ খ্রস্টপূর্বাব্দের দিকে ‘দইব’ শব্দটির অর্থ ছিল “দেবতা”। সংস্কৃত শব্দটি ‘দেব’ হইয়াছে এবং প্রাচীন অর্থ ত্যাগ করে নাই। ইরানে দেব-উপাসনার বিরুদ্ধে জরথুশ্‌ত্র নিজের ধর্ম প্রচার করিয়াছিলেন। সেই ধর্মের প্রভাবে ইরানে শব্দটির অর্থ প্রথমে হইল “উপদেবতা”, তাহার পরে “দৈত্য, রাক্ষস” (যেমন সংস্কৃত ‘অসুর’ শব্দে হইয়াছে।) ফারসীতে শব্দটি “দৈত্য” অর্থেই প্রচলিত। ঠিক এমনি হইয়াছে ইংরেজী demon শব্দে। গ্রীকে ‘দেমন’ অর্থ “দেবতা”, খ্রীস্টধর্মের প্রচারকদের কাছে হইল “উপদেবতা”, এখন “দৈত্য, রাক্ষস”।

অনেক শব্দার্থে উপমা-রূপক-উৎপ্রেক্ষা এমনভাবে লুকাইয়া আছে যে সহজে বুঝিবার যো নাই। এইরকম অথালঙ্কারের ব্যবহারে বিভিন্ন ভাষার মধ্যে যে মিল দেখা যায় তাহাতে মানবসংস্কৃতির মূল ধারা ও মানবপ্রকৃতির মৌলিক প্রবণতা ধরা পড়ে। যেমন, বইয়ের ব্যাপারে আমরা দেখি উদ্ভিদের মাহাত্ম—book, biblos, papyrus; পত্র, কাণ্ড, পর্ব, পল্লব, শাখা, স্কন্ধ, লম্বক, সর্গ (=অঙ্কুর), কলম; ইত্যাদি।

অতি প্রাচীনকালে বিবাহ ব্যাপার নারীর দিক দিয়া যতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল, পুরুষের দিক দিয়া ততটা নয়। সেইজন্য সেকালে বিবাহসংক্রান্ত অধিকাংশ শব্দের ব্যবহার ছিল নারীর তরফে। ‘বিবাহ’ কথাটির মৌলিক অর্থ হইতেছে “চুক্তি করিয়া লইয়া যাওয়া”। বরের তরফে ব্যাপারটি ছিল ‘আবাহ’ অর্থাৎ “চুক্তি করিয়া ঘরে আনা”। ‘শ্বশুর, শ্বশ্রূ’ শব্দের এখন অর্থ হইতেছে “পতি অথবা পত্নীর পিতা ও মাতা”, কিন্তু পূর্বে অর্থ ছিল শুধু, “পতির-ই পিতা ও মাতা”।

সংস্কৃতে ‘রথ্যা’র অর্থ “প্রশস্ত পথ, যে পথ দিয়া রথ যাইতে পারে”। শব্দটি প্রাকৃতে ‘রচ্ছা’ বা ‘লচ্ছা রূপ ধারণ করিয়া বাঙ্গালায় হইল ‘নাছ’ এবং অর্থ হইল “বড় রাস্তার উপর গৃহের দরজা, সদর-দরজা।” সদর-দরজা ছিল অন্তঃপুরিকাদের অগম্য, তাঁহাদের গমনাগমন হইত খিড়কি-দুয়ার দিয়া, সুতরাং তাঁহাদের পক্ষে ইহাই প্রশস্ত পথ ‘নাছ’ বা ‘নাছ-দুয়ার’। তাহা হইতে আসিল ‘নাছ’ শব্দের বর্তমান অর্থ “খিড়কি দরজা”। এখানে শব্দের অর্থ বিপরীত হইয়া পড়িয়াছে। ‘তুরুক (তুড়ুক)’ অথবা ‘তুরুক সওয়ার’ অর্থে এখন বোঝায় “অশ্বারোহী বা পদাতিক সৈনিক”, কিন্তু শব্দটি আসিয়াছে জাতিবাচক ‘তুর্ক>প্রাকৃত ‘তুরস্ক’ ‘তুলক্ক’ শব্দ হইতে। এদেশে মুসলমানদের আগমনের প্রথম যুগে তুর্কী সৈনিক বিভীষিকার পাত্র ছিল। তাহাতে শব্দটির অর্থ হইল “লুণ্ঠনকারী বিদেশি সৈন্য” এবং অবশেষে মধ্য-বাঙ্গালায় “মুসলমান”॥

৫. সুভাষণরীতি

অকল্যাণসূচক অথবা নিন্দিত বা কুৎসিত অর্থকে কল্যাণবাচকরূপে বা ভদ্রভাবে প্রকাশ করিবার জন্য সব ভাষাতেই সুভাষণ (Euphemism) রীতির আশ্রয় লওয়া হয়। যেমন, ‘মরণ অর্থে সংস্কৃত ‘পঞ্চত্বপ্রাপ্তি’, বাঙ্গালায় ‘স্বর্গলাভ’ ইত্যাদি।

সুভাষণে কখনো কখনো বিপরীতার্থ শব্দও ব্যবহৃত হয়। যেমন, বিদায় (অতএব অবাঞ্ছনীয় ঘটনা)-জ্ঞাপক ‘যাই’ অর্থে ‘আসি’। বাঙ্গালায় নারীর ভাষায় একদা সুভাষণের উদাহরণ প্রচুর মিলিত। একটি উৎকৃষ্ট প্রয়োগ এখন সাধারণ ভাষায় চলিয়া গিয়াছে কিন্তু তাহার মর্ম আমাদের সহসা বোধগম্য নয়। —‘তাহার যদি ভালো-মন্দ হয় তবে’ ইত্যাদি। এখানে আসল অর্থ হইতেছে “তাহার যদি ‘মন্দ’ (অর্থাৎ “মৃত্যু”) হয়।” ভালো বিশেষণটি দিয়া ‘মন্দ’কে সুভাষিত করা হইয়াছে। আমাদের কাছে এখন ‘ভালোমন্দ’ বোঝায় “কোনো কিছু ঘটা”। একদা সাধুভাষায় বিদায় দিতে ‘শুভ কর’ (<শুভ যাত্রা কর) প্রচলিত ছিল।

কুৎসিত অর্থকে ভদ্রভাবে প্রকাশ করিলেও অনেক সময় দেখা যায় যে, কিছুকাল পরেই তাহাও ভদ্ৰব্যবহারে অচল হইয়া পড়িতেছে। তখন আবার অর্থটির নূতনতর ভদ্রবেশের প্রয়োজন হয়। এখানে দেখি যে, শব্দ অর্থপরিবর্তন না করিয়া অর্থই যেন শব্দ-পরিবর্তন করিতেছে। বাঙ্গালায় ‘নাগর’ শব্দের মূল অর্থ (“নগরের লোক, অর্থাৎ বিদগ্ধ ব্যাক্তি”) প্রচলিত নাই, এখন অর্থ “অবৈধপ্রণয়ী”। সংস্কৃত ‘প্রীতি, প্রীত’ হইতে উৎপন্ন ‘পিরীত’ শব্দটি বাঙ্গালায় হীনার্থক হইয়াছে। ব্যক্তিবাচক ‘রাম’ শব্দ বাঙ্গালায় যখন বিশেষণ হিসাবে “বড়” অর্থে প্রযুক্ত হয় তখন ইহা হীনার্থক। যেমন, ‘রাম বোকা’, ‘রাম থোকা’। ‘ব্রহ্মডাঙ্গা’, ‘ব্রহ্মদৈত্য’ ইত্যাদি প্রয়োগে ‘ব্রহ্ম’ শব্দও হীনার্থক। হীনার্থব্যঞ্জনা ব্যতিরেকেও “বৃহৎ” অর্থে সংস্কৃতে “রাজন্‌ এবং বাঙ্গালায় ‘হাতি’ ও ‘ঘোড়া’ শব্দের ব্যবহার আছে। “বড় (?) তালগাছ” অর্থে কালিদাস ‘রাজতালী’ লিখিয়াছেন। এইরকম রাজপথ, রাজহংস, ঘোড়ানিম, ঘোড়ামুগ, হাতিপাড় (কাপড়); ইংরেজী horse laugh, dog tired ইত্যাদি।

সুভাষণের বিপরীত রীতি অর্থাৎ ভালোকে মন্দরূপে প্রকাশ করা হইলে দুর্ভাষণ (Pejoration) বলে । দুর্ভাষণের ব্যবহার হয় আদর জানাইতে, অপদেবতার দৃষ্টি এড়াইতে অথবা বিনয় প্রকাশে। যেমন পুত্র অর্থে ‘বেটা’ (আসল মানে, বিনামাহিনার মজুর); ‘অমন্দ’ বা মন্দ নয় (ভালো বুঝাইতে); ইত্যাদি॥

৬. শব্দার্থ পরিবর্তনের ত্রিধারা

শব্দের অর্থ পরিবর্তনের ধারা মোটামুটি তিন রকমের (ক) অর্থবিস্তার (বা অর্থপ্রসার), (খ) অর্থসঙ্কোচ, (গ) অর্থসংক্রম (বা অর্থসংশ্লেষ)।

শব্দের অর্থ কখনো কখনো রূপকের অথবা অতিশয়োক্তির আবরণে দীর্ঘকাল থাকিয়া মূল বস্তুনিরপেক্ষ হইয়া পড়ে এবং তাহার প্রসার বাড়িয়া যায়। ইহাই অর্থপ্রসার। ব্যক্তি বা বস্তু বিশেষের ধর্ম ও গুণ তখন বস্তুটির গণ্ডী ছাড়াইয়া বহু বস্তুর সাধারণ ধর্ম ও গুণ প্রকাশ করিতে থাকে। বৈদিক ‘বৃত্র’, অসুরের নাম, কিন্তু কখনো কখনো সাধারণ শত্রুবাচক শব্দরূপেও ব্যবহৃত হইত। তখন তাহাতে অতিশায়নে [-তর] প্রত্যয় যোগ করিয়া ‘বৃত্ৰতর’ (“অধিক বলবান্ শত্রু”) পদ সিদ্ধ ছিল। এইরূপে ‘ইন্দ্র’ হইতে ‘ইন্দ্রতম’ (“সর্বশ্রেষ্ঠ বীর”)। ‘স্ত্রীতরা’ (“যে নারী দুইজনের মধ্যে বেশি মেয়েলি”), ইত্যাদি। ‘শরৎ’ শব্দের মূল অর্থ ছিল শীত (কাল)। প্রাচীন যুগে শীতকালের কঠোরতা অসহ্য ছিল বলিয়া বৎসরের মধ্যে এই কালটিই মুখ্য গণ্য ছিল। এইহেতু বৈদিক ‘শরৎ’ এবং প্রাচীন পারসীক তৎসগোত্র ‘র্থদ্‌’ শব্দ “বৎসর” অর্থে ব্যবহৃত হইত। ফারসী হইতে বাঙ্গালায় গৃহীত ‘সাল’ শব্দের মূলে রহিয়াছে এই প্রাচীন পারসীক শব্দটি। সংস্কৃতে “বৎসর” অর্থে ‘বর্ষ’ শব্দের মূল অর্থ হইতেছে “বর্ষাকাল”, যেহেতু বর্ষা ভারতবর্ষের বিশিষ্ট ঋতু। পূর্বে প্রায়শ্চিত্ত অথবা অন্য কারণে আত্মোৎসর্গ করিতে হইলে অনেকে ‘জতুগৃহ’-প্রবেশ করিত। সংস্কৃত ‘জতুগৃহ’ প্রাকৃত ‘জৌহর’ এবং বাঙ্গালায় ‘জহর’ রূপ ধরিয়াছে, আর অর্থও “জতুগৃহে পুড়িয়া মরা” হইতে “পুড়িয়া মরা” এবং তাহা হইতে “আত্মসম্মান রক্ষার্থ যে-কোনো উপায়ে আত্মহত্যা” অর্থ দাঁড়াইয়াছিল, এমন কি “বিষ” অর্থও। সংস্কৃত ‘যবাগূ’, পালি ‘য্‌বাগু’ “যবের মণ্ড”>বাঙ্গালা জাউ “পানীয় মণ্ড” (যেমন, খুদের জাউ)। ‘পরশ্বঃ’ সংস্কৃতে “আগামী কল্যের পরদিন”, কিন্তু বাঙ্গালায় ‘পরশু’.“আগামী কল্যের পরদিন” এবং “গত কল্যের পরদিন” দুই-ই বোঝায়। ‘গুণ’ শব্দের অর্থ “গোসম্বন্ধীয়”; তাহা হইতে হইল “গরুর নাড়ীভুড়ির তাঁত”, তাহার পর অর্থবিস্তারে হইল “দড়ি” (যেমন গুণ-টানা, গুণ-ছুঁচ)। ‘ধন্য’ শব্দের মৌলিক অর্থ “ধনশালী”, অর্থসম্প্রসারণে “সর্বসৌভাগ্যবান”। এইরূপ ‘অরি’, “অদাতা, দরিদ্র”>“শত্রু”; ‘সাঙ্গ’ “অঙ্গসমেত”>“সম্পূর্ণ”>“সমাপ্ত”; পদার্থ “পদের মানে”>“পদের সারাংশ”>“সার বস্তু”>“ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বস্তু”, ‘বস্তু’ “বিক্রয় বা বদলযোগ্য দ্রব্য” (ব্যুৎপত্তিগত অর্থ)>“মূল্যবান্‌ বা সার দ্রব্য, সারাংশ”; ইত্যাদি।

অর্থবিস্তারের ফলে অনেক সময় অর্থ প্রতীকস্থানীয় (symbolic) হইয়া পড়ে। যেমন, ‘ভাত’=সিদ্ধ চাউল>জীবিকাসংস্থান; ‘কড়ি’=কপর্দক>ধনসম্পত্তি; ‘বদন’=যে অঙ্গ বাক্য বলে> মুখ (আদর অর্থে)।

অর্থবিস্তারের ফলে ব্যক্তিনাম সাধারণ বিশেষ্যে এবং সাধারণ বিশেষ্য গুণবাচক বিশেষ্যে পরিণত হইতে পারে। সংস্কৃত ‘গঙ্গা’ হইতে বাঙ্গালায় ‘গাঙ’ আসিয়াছে। কিন্তু ‘গাঙ’ শব্দের অর্থ গঙ্গা নদী নয়, যে-কোনো নদী, অধুনা যে-কোনো নদীর শুষ্ক খাত। ‘লক্ষ্মী’ এখন শান্তশিষ্ট অর্থে স্ত্রীলিঙ্গ-পুংলিঙ্গনির্বিশেষে সাধারণ বিশেষণে পরিণত (“লক্ষ্মী ছেলে”)। ‘হিন্দু’ আসিয়াছে ‘সিন্ধু’ নদী হইতে। ‘বসীঠ’ (=দূত) আসিয়াছে ঋষি ‘বশিষ্ঠ’, হইতে। ব্যক্তিনাম ‘সুরদাস’ এখন কথ্য হিন্দীতে অন্ধ ভিখারী বোঝায়।

অর্থবিস্তারের ফলে বিশেষণ পদ বিশেষ্যে পরিণত অথবা বিশেষ্যরূপে ব্যবহৃত হয়। যেমন, বুড়া, ভালো, ‘মনের কালো’, ‘নোনা লেগেছে’, রাস্তা (মূল অর্থ ঋজু, তাহা হইতে পথ)।

দ্রব্যবিশেষের উৎপত্তিস্থলের নাম অথবা উদ্ভাবয়িতার নিজের নাম অথবা তাহার প্রদত্ত নাম দ্রব্যনামে পরিণত হইতে পারে। যেমন ইংরেজীতে sandwich, macintosh (“বর্ষাতি”), বয়কট (boycott); বাঙ্গালায় লেডিকেনি (Lady Canning)। এখানেও অর্থবিস্তারের রকমফের পাইতেছি। অনেক সময় ছোটখাট কাহিনীর মধ্যে নামটুকু শুধু রহিয়া যায় বিশেষ কোন অর্থে। বাঙ্গালায় প্রহার অর্থে ‘ধনঞ্জয়’ শব্দ আসিয়াছে “প্রহারেণ ধনঞ্জয়ঃ”—শ্লোকে উদ্দিষ্ট গল্প হইতে। গোঁয়ার অর্থে ‘ষণ্ডামার্ক’ শব্দের মূল পাই পৌরাণিক প্রহ্লাদ উপাখ্যানে। ভগবান্‌ রামচন্দ্রের পবিত্র নাম ‘এক’ সংখ্যায় (ব্যাপারীর গণনায়) এবং বৃহত্ত্বসূচক বিশেষণে (যেমন রাম ছাগল, রাম দা ইত্যাদিতে) পরিণত। চৈতন্যের মতাবলম্বী বৈষ্ণবেরা শিখা রাখিতেন বলিয়া শিখার নামান্তর ‘চৈতন’। এইরূপে ‘গদাই-লস্করি (চাল)’, ‘নব (বা বুড়ো) কার্তিক’, ‘গোবরগণেশ’। ফারসী ‘বুৎ’ (=দেবদেবীর মূর্তি)—আসিয়াছে ‘বুদ্ধ’ অর্থাৎ বুদ্ধ-মূর্তি বা প্রতিমা হইতে। দেশের নাম হইতে আসিয়াছে ‘চিনি’ (<চীন), সংস্কৃত ‘মুদ্রা’ ও বাঙ্গালা ‘মিছরি’ (<মিশর), ‘বাঙ্গালা’ (এক ধরনের খড়ের ঘর), ‘বেনারসী’, ‘ভোট?’ (কম্বল), ‘ওড়’ (ফুল,<ওড্র জাতি বিশেষ), ‘মার্কিন’ (মোটা কোরা কাপড়, <আমেরিকান)। অনেক রাগরাগিণীর নামও দেশের নাম হইতে উৎপন্ন। চলিত কথায় ‘উদো’ (=বোকা)—আসিয়াছে ‘উদ্ধব’ নাম হইতে। কৃষ্ণ উদ্ধবকে ব্রজে দূত করিয়া পাঠাইয়াছিলেন। গোপীরা উদ্ধবকে উপলক্ষ্য করিয়া কৃষ্ণকে র্ভৎসনা করিয়াছিল, উদ্ধব নীরবে তা সহ্য করিয়াছিল। কীর্তন গান হইতে এই অর্থে উৎপত্তি অনুমান করি। (তু° হিন্দি “আওয়ে উধো বেগর মাধো।”)

একই স্থান-নাম একাধিক ভিন্ন ভিন্ন বস্তু বুঝাইতে পারে। যেমন বাঙ্গালায় ‘চিনি’ (=মিষ্ট চূর্ণ) ও ইংরেজী china (মসৃণ পোড়ামাটির বাসনপত্র) একই দেশনাম হইতে আগত। হাজার দুইয়েক বছর আগে ভারতবর্ষের একটি বড় বন্দর ছিল সুর্পারক (বা শূর্পারক) পশ্চিম উপকূলে, অধুনা নগণ্য সোপারা। এই বন্দরে দ্বীপান্তর ও বিদেশ হইতে দ্রব্যাদি আসিত। সেই কারণে এই স্থাননামটি আমরা অন্তত তিনটি বস্তু বুঝাইতে পাই। (১) বাঙ্গালায় ‘সুপারি’ (=পানের সঙ্গে খাইবার শুষ্ক ফল), (২) ওড়িয়ায় ‘সুপুরি’ (=আনারস) এবং বাঙ্গালা উপভাষায় ‘সোঁপুরে’ (=লঙ্কা)। ‘লঙ্কা’ও স্থান নাম হইতে আগত। মানে, নেই-পুরী অর্থাৎ কল্পিত স্থান।

শব্দের অর্থসমষ্টির কোন-একটি প্রধান হইয়া উঠিলে অপর অর্থগুলি ক্রমশ ক্ষীণ হইয়া বিলুপ্ত হইতে পারে। এইরূপে অর্থসঙ্কোচ ঘটিয়া থাকে। সংস্কৃত ‘অন্ন’ শব্দের অর্থ খাদ্য, বাঙ্গালায় বিশিষ্ট খাদ্য—ভাত। সংস্কৃতে ‘প্রদীপ’ শব্দের অর্থ সাধারণ দীপ অথবা আলো, বাঙ্গালায় বোঝায় বিশেষ আকৃতির পাত্রে তৈলদাহ্য দীপ। সেকালের লোক আত্মীয়কুটুম্বের ‘তত্ত্ব’ বা ‘সন্দেশ’ অর্থাৎ কুশলবার্তা লইবার উপলক্ষ্যে মিষ্টান্ন উপহার পাঠাইত। তাহা হইতে এইরূপ মিষ্টান্ন উপহারের সাধারণ নাম হইল ‘তত্ত্ব’ বা ‘সন্দেশ’। এই অর্থে ‘তত্ত্ব’ শব্দ এখনো চলিত আছে, কিন্তু ‘সন্দেশ’ শব্দের অর্থ আরও সঙ্কুচিত হইয়া ছানা-চিনি সংযোগে প্রস্তুত মিষ্টান্ন বিশেষ দাঁড়াইয়াছে। ‘ভাত’, ‘তত্ত্ব’, ‘সন্দেশ’—এই উদাহরণগুলিতে অর্থ ভাববাচকতা (abstract) হইতে বস্তুবাচকতায় (concrete) পরিবর্তিত হইয়াছে। সাধারণ (general) হইতে বিশেষ (special) অর্থ পরিবর্তনের উদাহরণ—‘দিন-মজুর’ অর্থে পশ্চিম বঙ্গে ‘জন, মুনিস’ (<মেনুষ্য), পূর্ববঙ্গে ‘গাভুর’ (<গৰ্ভরূপ= ছোকরা)। বিশেষ হইতে সাধারণ অর্থ পরিবর্তনের উদাহরণ—‘সিধা’, মূল অর্থ সিদ্ধ অর্থাৎ রন্ধন করিয়া খাইবার দ্রব্যাদি, এখন অর্থ চাল, ডাল, ঘি, নুন, কাঁচকলা ইত্যাদি শুদ্ধাচারী ব্রাহ্মণের অপক্ক খাদ্যসম্ভার; ‘জলপানি’, মূল অর্থ লঘু আহার, জল-খাবার, এখন অর্থ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ মেধাবী ছাত্রের বৃত্তি; ইত্যাদি।

অর্থের ক্রমান্বিত প্রসার ও সঙ্কোচের ফলে অনেক সময় এমন অবস্থা হয় যে, মধ্যবর্তী অর্থের লোপ হইয়া শব্দটির যে অর্থ দাঁড়ায় তাহার সহিত মৌলিক অর্থের যোগ দুর্লক্ষ্য হইয়া পড়ে। এইভাবে অর্থসংক্রম ঘটিয়া থাকে। ‘সহসা’ ‘হঠাৎ’ এই দুই শব্দের মৌলিক অর্থ ছিল “সবলে”। সাধারণত বলপ্রয়োগের মধ্যে বুদ্ধিবৃত্তিচালনার অভাব দেখা যায়, সুতরাং অর্থের মধ্যে চিন্তাহীনতার বা অবিমৃষ্যকারিতার ভাব সহজেই আসিয়া পড়ে। অবিমৃষ্যকারিতা হইতে আরো সহজে আকস্মিকতায় পৌঁছানো যায়। তাহার পর অবিমৃষ্যকারিতা—এই মধ্যবর্তী অর্থ লোপ পাইয়া শব্দ দুইটির বাঙ্গালায় অর্থ হইল আকস্মিক ভাবে। এই অর্থের সহিত আদিম অর্থের যোগ সহজে বোঝা যায় না। সংস্কৃতে ‘ঘর্ম’ শব্দের মূল অর্থ ছিল গরম, বাঙ্গালায় হইয়াছে ‘ঘাম’। ‘গরম’ হইতে ‘শরীরের উপর গরমের ফল’ তাহা হইতে স্বেদ—এই অর্থ দাঁড়াইয়াছে। নেপালীতে ‘ঘাম’ সূর্য অর্থে প্রচলিত আছে। ‘পাষণ্ড’ শব্দের মৌলিক অর্থ ছিল ধর্মসম্প্রদায়, তাহা হইতে—বিরুদ্ধ ধর্মসম্প্রদায় > বিরুদ্ধ ধর্মের উপাসক > ধর্মজ্ঞানহীন, অত্যাচারী। ‘পাত্র’, মূল অর্থ পান করিবার আধার > আধার (অর্থপ্রসার) >কন্যাসম্প্রদানের আধার অর্থাৎ বর (অর্থসঙ্কোচ)। *দীব্য, মূল অর্থ জুয়াখেলায় পণ > পণ (অর্থপ্রসার), বাঙ্গালায় ‘দিব্য’, ‘দিব্যি’ শপথ। বাঙ্গালায় ‘উজবুক’ (বা ‘অজবুক’) শব্দ আসিয়াছে, তুর্কী ‘উজবেগ’ (জাতিবিশেষের নাম) হইতে। বাঙ্গালায় মধ্যযুগে মুসলমান সৈনিকদের একশ্রেণী ছিল এই জাতির লোক। ইহাদের শারীরিক শক্তির খ্যাতি যতটা ছিল বুদ্ধিবৃত্তির খ্যাতি ততটা ছিল না। সেই কারণে বাঙ্গালায় অর্থ হইয়াছে মুর্খ গোঁয়ার। (এই অর্থপরিবর্তনে ‘অজ’ ও ‘বোকা’ শব্দের প্রভাবও আছে। ) অবাচীন সংস্কৃতে এবং বাঙ্গালায় রহস্যচ্ছলে গলাধাক্কার অর্থে “অর্ধচন্দ্র” প্রচলিত আছে। গলাধাক্কা দিতে গেলে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ এবং তর্জনীর মধ্যবর্তী স্থান অর্ধচন্দ্রের আকার ধারণ করে। (অর্ধচন্দ্রাকৃতির একরকম অস্ত্রও ছিল।) তাহা হইতেই অর্থ আগত। অর্থ সংক্রমের বা বিস্তারের ফলে আধেয় বস্তুর একদম বদল সাধারণত হয় না। ‘ভাত’ শব্দের মূল অর্থ বরাদ্দ খাদ্যের প্রাপ্য অংশ (সং ‘ভক্ত’), তাহা হইতে খাদ্য, বিশিষ্ট খাদ্য, সিদ্ধ চাউল ইত্যাদি। অর্থ বিস্তারিত হইলেও আধেয় বস্তু তাহার মধ্যে বিলুপ্ত নয়। দৈবাৎ তাহাও হয়। একটি ভালো উদাহরণ হইল ‘ঘড়ি’। মূল অর্থ—ছোট ঘড়া বা সেই রকম পাত্র। সেকালে অত্যন্ত সরু ডমরুমধ্য পাত্রে বালুকা (অথবা জল) রাখিয়া সেই বালুকার (অথবা জলের) নিম্নে পতন সময় ধরিয়া কাল (time) গণনা হইত। সেই ‘ঘটিকা’ যন্ত্র হইল পুরানো বাঙ্গালার ‘ঘড়ি’। কোন কোন উপভাষায় ছোট ঘড়া বা ঘটি অর্থেও ‘ঘড়ি’ প্রচলিত আছে বটে কিন্তু সর্বসাধারণে ‘ঘড়ি’ বলিতে সময়জ্ঞাপক যন্ত্র বোঝে এবং এ যন্ত্রের সহিত ছোট ঘড়ার দূরতম সম্পর্কও এখন নাই, ‘হাতঘড়ি’র বেলায় তো কথাই নাই। এখানে অর্থই যেন শব্দ পরিবর্তন করিয়াছে।

এই প্রসঙ্গে ‘ঘড়িয়াল’ শব্দটির অর্থ বিচারযোগ্য। আধুনিক কালে ‘ঘড়িয়াল >ঘড়েল’ বলিতে বোঝায় (১) চতুর, সতর্ক ব্যক্তি, (২) একশ্রেণীর কুমীর। ঘড়িয়াল আসিয়াছে ‘ঘটিকাপাল’ (watchman) হইতে, যে ব্যক্তি ঘটিকাযন্ত্রের দিকে নজর রাখে এবং উপযুক্ত সময়ে দণ্ড প্রহর জ্ঞাপক ঘন্টা বাজায় ইহা হইতে—সতর্ক, চতুর ব্যক্তি ও ঘাটে ওঁতপাতা চতুর কুমীর এইসব অর্থ আসিয়াছে।

শব্দার্থ ধ্বনিপরিবর্তন-নিরপেক্ষ, একথা সত্য। তবে ধ্বনিপরিবর্তন সব সময় শব্দার্থ পরিবর্তন-নিরপেক্ষ নাও হইতে পারে। যেমন ‘ভোগ করা’ ও ‘ভুগা’। ‘ভোগ করা’ এই যৌগিক ধাতুটি ভালো মন্দ দুই বিষয়েই চলে। কিন্তু ‘ভুগা’ ধাতুটি (যেখানে ‘ভো’ হইয়াছে ‘ভু’) কেবল মন্দ বুঝাইতেই ব্যবহৃত। যথা, ‘সে অনেকদিন ধরে ম্যালেরিয়ায় ভুগছে’।

বিপরীতমুখ অর্থ বিশ্লেষের ফলে দৈবাৎ পুরানো আকারে নূতন শব্দ দেখা দেয় অথবা পুরানো শব্দের বদল হয়। যেমন ‘মিল’ ও ‘মেল’ ধাতু দুইটি প্রাচীন বাঙ্গালায় একই ধাতু ছিল, অর্থ মিলিত হওয়া। মধ্য বাঙ্গালায় সুভাষণ রীতির ফলে ‘বিচ্ছেদ’ অর্থে ধাতুটি ব্যবহারসিদ্ধ হইয়া গেল, তবে দুই অর্থেই ধাতুটির রূপ ছিল ‘মিল’ অথবা ‘মেল’। এই ধাতু হইতে উৎপন্ন ‘মেলানি’ শব্দটির আসল অর্থ ছিল আত্মীয়স্বজন মিলিত হইলে তাহাকে দেয়-প্রাপ্য যৌতুক। সাধারণত বিদায় কালেই এই যৌতুকি দেওয়া হইত। এই সূত্রে ‘মেলানি’-র অর্থ হইল বিদায়। আধুনিক বাঙ্গালায় ধাতুটি কাছে আনা বা মিলন অর্থে ‘মিল’ (যেমন—“মিলেছি আজ মায়ের ডাকে”) আর দূরে ফেলা অর্থাৎ বিস্তার অর্থে ‘মেল’ (‘নয়ন মেলিয়া দেখিনু চাহিয়া”)। তবে ‘মেলা’ বিশেষ্য শব্দটিতে মিলন অর্থ রক্ষিত আছে। বিশেষণে অর্থ “প্রচুর”।

‘চাবি তালা’ অর্থে অনেক ‘কুঁজি তালা’ বলেন। শেষের প্রয়োগটি পুরানো, আসিয়াছে প্রাচীন বাঙ্গালা ‘কোঞ্চা তাল’ হইতে। আসলে শব্দদ্বয় আসিয়াছে ‘কুঞ্চিক তাড়ক’ (অর্থ, কোঁচকানো পেরেক ঠুকিয়া তালি দেওয়া) থেকে। সেকালে দুইদিকে বাঁকানো হুক ঠুকে তালি দিয়েই চাবি দেওয়ার কাজ হইত। পরে যখন পোর্তুগীসদের (?) মার্ফৎ padlock ও key প্রচলিত হইল তখন padlock হইল তালা স্বভাবতই, আর key হইল কুঁজি কাজে কাজেই। চাবি (চাপ দেওয়া) আর তালা (তাড় ‘আঘাত করা) সমার্থক। অতএব চাবিতালা সমার্থক সমাস॥

১. তুলনীয় পহ্‌লবী, ‘শাহানশাহ এরান উৎ অনোরান্‌’ এবং গ্রীক, ‘আরিয়ানোন্‌ কাই আনারিয়ানোন’—অর্থাৎ ‘রাজার রাজা ইরানের ও ইরান ছাড়া (দেশের)”।

২. শব্দটি সম্ভবত* ‘পানীয়ত্যক’, (মানে জলে রাখা) শব্দের তদ্ভব রূপ।

শব্দটি বহ্‌ ধাতু হইতে আসে নাই, আসিয়াছে বধ্‌ ধাতু অর্থ চুক্তিবদ্ধ করা হইতে। তুলনীয় সংস্কৃত বধূ এবং অশোক অনুশাসনে আবাধ (=সং আবাহ)।

আমাদের দেশে অন্ন এবং অন্নের মুখ্য উপকরণ চাল-ধান কমিয়া যাইতেছে এই কথা বলা গৃহস্থের পক্ষে অকল্যাণসূচক, তাই এই অর্থে সুভাষণ অলঙ্কারের সাহায্যে বৃধ ধাতুর ব্যবহার বরাবর চলিত আছে। প্রথমে এই প্রয়োগ শুধু নারীর ভাষায় ছিল। পালিতে ‘অন্নং বড্‌ঢেত্বা’, বাঙ্গালায় ‘ভাত বাড়া’, ‘ধান চাল বাড়ন্ত’।

Women’s Dialect in Indo-Aryan (কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, Joumal of the Department of Arts, Vol. XXVIII; জিজ্ঞাসা কতৃর্ক পূনঃপ্রকাশিত ১৯৭৮) দ্রষ্টব্য।

বিশেষ করিয়া বহুবচনে, তখন শব্দটি ক্লীবলিঙ্গ হইত। (“তেন বৃত্রাণি জিঘ্নতে”)।

২. ইহা (ফারসী হইতে নেওয়া) ‘সর্দি’ শব্দেরও মূল।

৩. যেমন মধ্য-বাঙ্গালায় “বড় গঙ্গা পদ্মাবতী”, “আদ্যের গঙ্গা দামোদর”।

১. ওড়িয়া শব্দটি ‘রসপুরী’ হইতেও আসিতে পারে, যদি এমন আদি র-কার লোপের আরও উদাহরণ ঐ ভাষায় থাকে।

১. এইরকমে দ্বিমুখ ধ্বনি-ও অর্থ পরিবর্তনের বশে যমজ (Doublet) শব্দের উৎপত্তি হয়। পূর্বে দ্রষ্টব্য।

১. ইংরেজী departure অর্থে ‘মেলানি’ শব্দের ব্যবহার কবিকঙ্কণের কাব্যে প্রচুর আছে।

২. কানে ‘তালা’ লাগায়—এখানে তালার এই প্রাচীন অর্থের রেশ আছে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *