রহমান সাহেব পত্রিকা অফিসে এসেছেন।
সব ক’টি পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেবেন। পুতুলের ছবিসহ বিজ্ঞাপন। ছবি এবং বিজ্ঞাপনের কপি তৈরি করেই এসেছেন।
নগদ এক লক্ষ টাকা
পুরস্কার
পুতুল নামের এই ছেলেটির কোনো সন্ধান দিতে পারলে এই পুরস্কারের ব্যবস্থা তৎক্ষণাৎ করা হবে। পুতুল ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র। বাড়ির নাম ঠিকানা জানে। বাংলা এবং ইংরেজি দু’টি ভাষাতেই কথা বলতে পারে। তার কপালে একটি কাটা দাগ আছে। সন্ধানপ্রার্থী।
এক লক্ষ টাকা পুরস্কারের ঘোষণা সম্পর্কে রহমান সাহেবের খানিকটা দ্বিধা ছিল। টাকার পরিমাণ বেশি–দ্বিধা সেই কারণে নয়। তিনি ভেবেছেন পুরস্কারের লোভে অন্য কোনো ঝামেলা হয় কি না। তবু পুরস্কারের ঘোষণা দিতে হয়েছে তাঁর স্ত্রীর জন্যে।
পুতুলের মা’র ধারণা গুণ্ডাপাণ্ডা ধরনের লোকজন পুতুলকে চুরি করে নিয়ে গেছে। বড় রকমের পুরস্কারের ঘোষণা দেখলে গুণ্ডাদের দলেরই লোক হয়তো-বা খবর দিয়ে যাবে। টাকার লোভে মানুষ অনেক কিছুই করে।
পুলিশ খুব খোঁজখবর শুরু করেছে। পুলিশের আই জি নিজে ব্যাপারটায় অতিরিক্ত রকমের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। কারণ হোম মিনিস্ট্রি থেকে তাকৈ পুতুলের কথা বলা হয়েছে।
ঢাকা শহরের সন্দেহজনক জায়গা সব কটিই দেখা হয়েছে। এখন আবার হচ্ছে। বিশেষ করে বস্তি এলাকাগুলো। কোথাও পুতুল নেই।
নিমতলির পীরসাহেবকে আবার ডেকে আনা হয়েছে। পীরসাহেব পুতুলের শার্ট,বই-খাতা এবং ফুটবল একের পর এক নাকের সামনে ধরছেন। জেসমিন তার সামনে বসে আছেন। অনবরত তাঁর চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। সকাল থেকে এখন পর্যন্ত তিনি এক ফোঁটা পানি মুখে দেন নি।
জেসমিন পীরসাহেবের দিকে তাকিয়ে ধরা গলায় বললেন, কিছু বুঝতে পারছেন?
হ!
কী বুঝতে পারছেন বলুন।
ফরিদপুর শহরে যায় নাই। তার আগেই বাস থাইক্যা নাইম্যা পড়ছে। সাথে আছে ঐ বুড়া কিসিমের লোক।
কোথায় আছে এখন?
একটা ভোলা টেরাকের উপরে আছে।
সেকি! ওর তো শরীর খুব খারাপ। ঠাণ্ডা লেগে যাবে তো। ও কী করছে?
ঝিমাইতাছে। মনে হয় জ্বর আইছে।
জেসমিন হাউ মাউ করে কেঁদে ফেললেন।