৫ মে, বৃহস্পতিবার ১৯৭১
রুমী আগামীকাল রওনা হবে। ওর প্যান্টের কোমরের কাছে ভেতর দিকের মুড়ির সেলাই খুলে সেখানে কয়েকটা একশো টাকার নোট লম্বালম্বি ভাঁজ করে রেখে আবার মুড়ি সেলাই করে দিলাম। পকেট ওয়ালেটে শদুয়েকের বেশি রাখবে না, কারণ পথে খানসেনারা হাতিয়ে নিতে পারে।
কাপড়-জামা রাখার জন্য রুমী সঙ্গে নিচ্ছে একটা ছোট আকারের এয়ারব্যাগ। তাতে দুসেট কাটাকাপড়, তোয়ালে, সাবান, স্যান্ডেল আর দুটোবই–জীবনানন্দের শ্রেষ্ঠ কবিতা ও সুকান্ত সমগ্র।
যে বন্ধু দুজনের সঙ্গে যাবে, তাদের নাম অবশেষে বলেছে রুমী–মধু আর শিরাত। সেই সঙ্গে এটাও বলেছে যে, নাম দুটো কাল্পনিক।
রাতে শোবার সময় রুমী বলল, আম্মা আজকে একটু বেশি সময় মাথা বিলি করে দিতে হবে কিন্তু।
জামী বলল, মা, আজ আর আমার মাথা বিলি করার দরকার নেই। ওই সময়টাও তুমি ভাইয়াকেই দাও।
ছোট বয়স থেকে ঘুমোবার সময় দুভাইয়ের মাথার চুলে হাত বুলিয়ে দিতে হয়। মাঝে-মাঝে এনিয়ে দুভাইয়ে ঝগড়াঝাটিওবাধে। রুমী বলে আম্মা তুমি জামীর কাছে
বেশিক্ষণ থাকচ্ছ। জামী বলল, মা তুমি ভাইয়ার মাথা বেশি সময় বিলি দিচ্ছ।
আমি রুমীর মাথার চুলে বিলি কেটে দিতে লাগলাম, রুমী একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি গানটার সুরে আস্তে আস্তে শিস দিতে লাগল।