৪১.
যেসব পুরুষ এবং অতিথি বোতল বাজিয়ে ছন্দ তুলছিল তারা দেখতে পেল, আগুনের ধারে একজন তরুণী নগ্ন হয়ে আছে। তারা হাততালি দিতে লাগল। তারপর হাতে হাত ধরে গান গাইতে থাকে। মাঝে মাঝে গানে নরম সুর ভেসে আসে, মাঝে মাঝে বুনো সুরের উন্মাদনা। কেউ জানে না এই ছন্দটা কে ঠিক করে দিয়েছে। লোকজন বোতল বাজিয়ে এ রকম সুর তুলেছে, হাততালির কারণে এমন উন্মাদনা নাকি সংগীতের মূছনায়। তাদের দেখে মনে হচ্ছে, কী ঘটতে চলেছে এ ব্যাপারে সবাই অবগত, কিন্তু এই মুহূর্তে, কেউ একজন যদি এই ছন্দের তাল ভঙ্গ ঘটায়, তাহলে ওরা সবাই মিলে এই তাল ভঙ্গ হতে দেবে না। অনুষ্ঠানের এই পর্যায়ে, একজন শিক্ষকের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো ওদের নিশ্চিত করান, যে কেউ বুঝতে পারছে না তারা মোহাবিষ্ট অবস্থায় আছে। তাদের এ রকম বোঝানো দরকার, তারা সবাই নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আছে, এমনকি যদিও তারা তা নেই। উইক্কা একটা আইন লঙ্ঘন করছে না। ব্যতিক্রমের কারণে রীতিনীতির সাজা আছে। অন্যের ইচ্ছা শক্তিকে প্রভাবিত করা। কারণ এখানে যারা আছে তারা সবাই জানে, তারা ডাইনিদের সাথে এসেছে। আর ডাইনিদের জন্য জীবন মানেই জগতের সাথে সংযোগ।
পরে, এই রাত যখন সবার কাছে স্মৃতি হয়ে যাবে, এসব লোকের কেউ বলতে পারবে না তারা কী দেখেছিল। এ রকম করার কোনো প্রাথমিক নিয়ম নেই। কিন্তু তারা সবাই অনুভব করবে, তারা শক্তিশালী শক্তির উপস্থিতি টের পেয়েছে। রহস্যময় পবিত্র শক্তি, যা এড়িয়ে যাওয়ার সাহস কোনো মানুষের নেই।
ঘুরে দাঁড়াও! গোড়ালি পর্যন্ত লম্বা কালো আলখাল্লা পরিহিত মহিলা বলল। সেই একমাত্র মহিলা যে এখনো পুরোপুরি সব পোশাক পরে আছে। বাকি সবাই নগ্ন হয়ে হাততালি দিয়ে ঘুরে ঘুরে নৃত্য করছে।
একজন পুরুষ মানুষ মহিলার পাশে কাপড়চোপড়গুলো স্কুপ করে রাখতে লাগল। তিনটি পোশাক এই প্রথমবারের মতো পরা হবে। আর দুটো পোশাক স্টাইলের দিক দিয়ে খুব এক রকম। একই ঐশ্বরিক শক্তির মানুষ এরা। এ রকম পোশাকের স্বপ্ন প্রতিটি মহিলাই দেখে।
এখন আর উইক্কার তালি দেয়ার কোনো দরকার নেই। অন্যরা তা চালিয়ে যাচ্ছে। তারা এ রকমভাবে ছন্দ বজায় রেখেছে যেন এখনো সে তালি দিচ্ছে।
উইক্কা হাঁটু গেড়ে বসল। হাতের বুড়ো আঙুল মাথার ওপর চাপ দিতে লাগল। তারপর শক্তির কাজ শুরু করল।
চাঁদের রীতির শক্তি, সময়ের প্রজ্ঞার শক্তির উপস্থিতি ওখানে। খুব উচ্চমাত্রার বিপজ্জনক শক্তি, ডাইনিরা শিক্ষকতার কাজ করলে তখনই শুধু এই শক্তি ব্যবহার করতে পারে। উইক্কা জানে কীভাবে এই শক্তির ব্যবহার করতে হয়। কিন্তু এখনো প্রথমে প্রথমে তার শিক্ষকের রক্ষার ব্যাপারটা জেনে নেয়।
এই শক্তি প্রজ্ঞার সময় নিয়ে কাজ করে। জ্ঞানী প্রভু, সাপ আছে। শুধু কুমারীরাই পায়ের গোড়ালি দিয়ে সাপের মাথা চূর্ণবিচূর্ণ করতে পারে। তো উইক্কা কুমারী মেরি মাতার কাছে প্রার্থনা করতে লাগল। আত্মার পবিত্রতায় যেন তার হাত শক্ত অবস্থানে থাকে, তার আলখাল্লার পবিত্রতা রক্ষা করতে পারে, যাতে তার সামনের মহিলাটির ওপর সে শক্তি নামিয়ে আনতে পারে। আর তাতে অন্য কেউ প্রভাবিত না হয় বা কারো ক্ষতি না হয়।
উইক্কা আকাশের দিকে মুখ তুলে তাকালো। তার কণ্ঠস্বর স্থির এবং দৃঢ়। সে সেইন্ট পলের পর্ভূক্তি আবৃত্তি করতে লাগল:
যদি কোনো মানুষ ঈশ্বরের ঘরকে অবজ্ঞা করে, ঈশ্বর তাকে ধ্বংস করবেন। ঈশ্বরের ঘর পবিত্র, তা যে ঘরই হোক না কেন।
কোনো মানুষ তাকে প্রতারিত করতে পারবে না। যদি তোমাদের মধ্যে সে রকম কোনো মানুষ থাকে, জগতের মধ্যে অনেক জ্ঞানী, তাকে মূর্খ হতে দাও, তাতেই সে জ্ঞানী হয়ে উঠবে।
এই জগতের সমস্ত প্রজ্ঞাই ঈশ্বরের কাছে বোকামিস্বরূপ। লিখিত আছে, তিনি সমস্ত জ্ঞানকে তাদের কাছ থেকে নিয়ে নিয়েছেন।
আবার, ঈশ্বর জ্ঞানীদের চিন্তাভাবনাগুলোকে জানেন, যে কারণে সেগুলোর কোনো মূল্য নেই।
সে কারণে, মানুষের কোনো অর্জন মানুষের নয়। সব কিছুই ঈশ্বরের দান।
.
৪২.
কয়েকবার হাত নাড়িয়ে উইক্কা হাততালির ছন্দ ধীর গতির করে নিল। লোকজনের ওয়াইনের বোতলের বিট ধীর হয়ে এলো। মহিলারাও ধীরগতির হয়ে ঘুরে ঘুরে নাচতে লাগল। উইক্কা শক্তিকে নিজের নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। গোটা অর্কেটা বেশ ভালোভাবেই কাজ করছে। উচ্চস্বরের হর্ন থেকে নিচ লয়ের ভায়োলিন। এগুলো অর্জন করতে শক্তির সহায়তার দরকার হয়েছে, কিন্তু পুরোপুরি শক্তির কাছে আত্মসমর্পণ করেনি।
উইক্কা হাততালি দিল। প্রয়োজনীয় ইঙ্গিত করল। ধীরে ধীরে, সবাই খেলা আর নাচ বন্ধ করল। ডাইনিরা উইক্কার কাছে এলো। তাদের পোশাকগুলো তুলে নিল। শুধু তিনজন মহিলা নগ্ন রয়ে গেল। এই সময়ে এক ঘণ্টা আটাশ মিনিট এই শব্দ বজায় থাকবে। যদিও সব কিছুই এই অনুষ্ঠানের অংশ। শুধু তিনজন নগ্ন মহিলা ছাড়া। এক মুহূর্তের জন্য, তারা কী করছে অথবা কী করতে যাচ্ছে তার কোনো ধারণা নেই।
নগ্ন তিনজন, এখনো যেভাবেই হোক ট্রেন্স বা মোহাবেশের মধ্যে আছে। উইক্কা আনুষ্ঠানিক ছুরি বের করেছে। সমস্ত জড়ো হওয়া শক্তি তাদের দিকে প্রবাহিত করছে।
তাদের ঐশ্বরিক ক্ষমতা খুব শিগগিরই দৃশ্যমান হবে। এ পদ্ধতিতে তারা পৃথিবীকে সেবা করে। অনেক দীর্ঘ আর যন্ত্রণাকাতর পথ পাড়ি দিয়ে এসেছে ওরা, পৃথিবী সাম্ভাব্য সব পথেই তাদের পরীক্ষা করেছে। তারা যা অর্জন করেছে তার যোগ্য কেবল তারাই। দৈনন্দিন জীবনে, তারা তাদের এসব কাজকর্ম বজায় রাখতে পারে। তাদের ছোট ছোট কর্মের মাধ্যমে দয়া অথবা নিষ্ঠুরতা দেখাতে পারে। যন্ত্রণা আর আনন্দ একসাথে থাকে।
যাই হোক, নির্দিষ্ট সময়ে, তারা শিখতে পারবে প্রত্যেক মানুষই তাদের নিজের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু বহন করে। নির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে, তাদের নির্দিষ্ট ঐশ্বরিক শক্তি ধারণ করে। ঈশ্বর প্রত্যেক মানুষের হাতে একটি করে ঐশ্বরিক শক্তি দিয়ে পাঠিয়েছেন। যে শক্তি মানুষ নিজেই উঘাটন করে জগতের মানুষকে সাহায্য করতে পারবে। ঈশ্বর মানুষকে সাহায্য করার জন্য এই পন্থা বেছে নিয়েছেন।
কেউ কেউ তাদের ঐশ্বরিক শক্তির ব্যাপারে সূর্যের রীতি নিয়ে আসে, অন্যরা চাঁদের রীতিতে কাজ করে থাকে। কিন্তু তারা সবাই ঘটনাক্রমে তাদের ঐশ্বরিক শক্তির ব্যাপারে বুঝতে পারে।
উইক্কা কেলটিক পুরোহিতদের রাখা বিশাল পাথরের পাশে গিয়ে দাঁড়াল। ডাইনিরা কালো আলখাল্লা পরিহিত সামনে অর্ধবৃত্তাকারে দাঁড়িয়ে আছে অবস্থায় উইক্কার সামনে।
উইক্কা তিনজন নগ্ন মহিলার দিকে তাকালো। ওদের চোখ জ্বলজ্বল করছে।
এখানে এসো।
নগ্ন মহিলা তিনজন হেঁটে অর্ধ বৃত্তাকারের মাঝখানে এলো। উইক্কা তাদের মুখ মাটির দিকে রেখে শুয়ে পড়তে বলল। হাত দুটো একটা ক্রসের মতো করে বাড়িয়ে রাখতে বলল।
ম্যাগাস লক্ষ করলেন ব্রাইডা মাটির দিকে মুখ করে শুয়ে পড়ল। তিনি শুধু ব্রাইডার জ্যোতির দিকে মনোযোগ দিলেন। কিন্তু তিনি একজন পুরুষ। আর পুরুষ সব সময় মেয়েদের শরীরের দিকে নজর দেয়। আর নগ্ন নারী শরীর হলে তো কথাই নেই।
তিনি মনে করতে চান না। তিনি যন্ত্রণা পাচ্ছেন কি না সে সমন্ধে ভাবতে চান না। তিনি শুধু একটা ব্যাপারেই সচেতন– তার মিশনে আত্মার সঙ্গী তার পাশেই আছে।
ওর সাথে এত অল্প সময় কাটানোটা খুব লজ্জার ব্যাপার। কিন্তু তিনি তেমনটি ভাবতে পারছেন না। সময়ের কোথাও না কোথাও, তারা একই শরীর শেয়ার করেছে, একই রকম যন্ত্রণা ভোগ করেছে, একই আনন্দে দুজন সুখী হয়েছে, একইসাথে বনের মধ্য দিয়ে একই পথ অতিক্রম করেছে। রাতে একই উজ্জ্বল তারা দেখেছে। তিনি শিক্ষকের ভাবনায় হেসে উঠলেন। তার শিক্ষক তাকে এত দীর্ঘ সময় জঙ্গলের মধ্যে নিঃসঙ্গতায় কাটাতে বলেছে, যাতে সে বুঝতে পারে আত্মার সঙ্গীর গুরুত্ব কতটুকু।
সূর্যের রীতিতে এভাবেই সব কিছু অন্তর্হিত থাকে। প্রত্যেক মানুষকে যা শিখতে হবে, তা শিখতে হয়। সে যা শিখতে চায় তা নয়। তার পুরষ হৃদয় দীর্ঘদিন ধরে কাঁদতে পারে, কিন্তু তার জ্ঞানী হৃদয়, জঙ্গলের প্রতি কৃতজ্ঞ।
উইক্কা পায়ের কাছে শুয়ে থাকা নগ্ন তিন নারীর দিকে তাকালো। ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানালো, এতজন মানুষকে নিয়ে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে পেরেছে। চাঁদের রীতির কারণে তা সম্ভব হয়েছে। অনেক আগে কেলটিক পুরোহিতরা জঙ্গলের এই তৃণভূমিতে একত্র হয়েছিল। তাদের সেই উপাসনা যজ্ঞের খুব কমই অবশিষ্ট আছে। শুধু যে পাথরের সামনে সে দাঁড়িয়ে আছে, এই পাথরটা টিকে আছে। বিশাল পাথর। এত বড় যে মানুষের পক্ষে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় নাড়ানো সম্ভব নয়। কিন্তু সেই প্রাচীন পুরোহিতরা জানত কীভাবে জাদুকরী ক্ষমতায় পাথর এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় স্থানান্ত রিত করতে হয়। তারা পিরামিড নির্মাণ করেছে। বাতিঘর। দক্ষিণ আমেরিকার পাহাড়ে গোটা শহর গড়ে তুলেছে, এসব শুধু চাঁদের রীতির শক্তিতে সম্ভব হয়েছে। এ রকম জ্ঞান আর মানুষের দরকার নেই। সময়ের সাথে সাথে তা মুছে গেছে। শুধু তা-ই নয়, নির্ভেজাল কৌতূহলের বশে উইক্কা জানতে চায় তারা কীভাবে এসব করেছিল।
মাত্র কয়েকটা কেলটিক আত্মা উপস্থিত আছে। উইক্কা তাদের অভিবাদন জানালো। তারা দীক্ষা দানের অনুষ্ঠানের শিক্ষক ছিল। আর এখন জগতের গোপন কর্তৃত্বের অংশ হিসেবে আছে। তাদের ছাড়া, তাদের জ্ঞানের শক্তি ছাড়া, এই গ্রহ তার পথ হারাতে পারে। তৃণভূমির বাম দিকে ওপরের গাছপালায় সেই কেলটেক শিক্ষকরা বাতাসে অবস্থান করছে। সাদা আলোর জ্যোতি তাদের চারদিকে ঘিরে আছে। শতাব্দী ধরে, তারা প্রতিটি ইকুইনিক্সের বসন্ত উৎসবে এসেছে। চাঁদের রীতি পুরোপুরি মেনে চলা হচ্ছে, এটা নিশ্চিত হতে এসেছে। হ্যাঁ, উইক্কা বেশ গর্বের সাথে বলতে পারে ইকুনিক্সে সব কিছুই মেনে চলা হচ্ছে। জগতের পুঁথিগত ইতিহাসে কেলটিক সংস্কৃতি মুছে ফেলা হলেও তারা মেনে চলছে। কারণ একমাত্র ঈশ্বর ছাড়া কেউ চাঁদের রীতিকে ধ্বংস করতে পারে না।
উইক্কা কিছুক্ষণ ধরে পুরোহিতদের লক্ষ করতে লাগল। আজ মানুষগুলোর প্রতি তাদের কী প্রতিক্রিয়া হবে? তারা কি আগেকার দিনে তাদের আগমন নিয়ে নস্টালজিয়ায় পতিত হচ্ছে? ঈশ্বরকে সহজ আর সোজাসুজি যোগাযোগের মাধ্যমে পাওয়া যায়, উইক্কা তা ভাবছে না। তার সহজাত প্রবৃত্তি নিশ্চিত। ঈশ্বরের বাগান মানবিক আবেগের অনেক ঊর্ধ্বে। এ রকম কিছু ঘটলে মানুষ দীর্ঘ সময় ধরে বেঁচে থাকতে পারত। বিভিন্ন বয়সে বিভিন্ন রীতিতে অভ্যস্ত হয়ে যেত। জগতের বাকি সব কিছু এবং মানুষ, তার অভিযোজিত পথ অনুসরণ করে এসেছে। প্রতিটি দিন আগের দিনের চেয়ে ভালো অবস্থানে যায়। এমনকি যদি আগের দিনের শিক্ষা ভুলে যায়, যদি সে কোনো অভিযোগ করে, জীবনটা ভুল বলে।
স্বর্গরাজ্য বীজের মতো, যা একজন মানুষ জমিতে রোপণ করে। মানুষ ঘুমায়, জেগে ওঠে। দিনের পর দিন, রাতের পর রাত এ রকম চলতে থাকে। কীভাবে বীজ বড় হতে থাকে মানুষ তা জানতেও পারে না। এমনকি এই শিক্ষা জগতের আত্মার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। মানবতার ওপরে অস্তিত্ব বিরাজ করে। ব্যাপারটা গুরুত্বপূর্ণ, এখানে এখনো এ রকম লোক এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত আছে, যারা অন্ধকার রাত্রির আত্মার ব্যাপারে ভয় পায় না। সেইন্ট জনের পঙক্তিমালার ক্রসে যেমন বর্ণনা করা হয়েছে, সে রকম জ্ঞানী। প্রতিটি পদক্ষেপ, প্রতিটি কর্ম বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে গোটা মানবজাতিকে পরিত্রাণ দেয়। যত দিন পর্যন্ত লোকজন তা জানতে পারে, ঈশ্বরের চোখে, মানুষের সমস্ত জ্ঞানই পাগলামির শামিল, জগৎ আলোর পথে একাকী যাত্রা করতে পারে।
উইক্কা তার লোকজন নিয়ে গর্ববোধ করে। পুরুষ আর নারী, যারা পৃথিবীকে একটা স্বস্তির জায়গা বানিয়ে দেয়ার প্রমাণ দিয়েছে। একটা নতুন জগৎ গড়ার জন্য ব্যাখ্যা দিয়েছে।
উইক্কা আবার মাটিতে হাত প্রসারিত করে রাখা তিনজন নগ্ন নারীর দিকে তাকালো। তাদের দিকে তাকিয়ে ওদের জ্যোতি দেখার চেষ্টা করল। ওরা এখন সময়ের সাথে পরিভ্রমণ করছে। অনেক হারানো আত্মার সঙ্গীর সাথে দেখা হচ্ছে। ওই তিন মহিলা সেই রাত্রি থেকে এই মিশনের অপেক্ষা করছে। একজনের বয়স অন্তত ষাট বছরের কাছাকাছি, কিন্তু এখানে বয়সটা কোনো গুরুতুপূর্ণ নয়। ব্যাপারটা হলো শেষ পর্যন্ত তারা তাদের ভাগ্যের মুখোমুখি হয়েছে। এখন থেকে তারা এগুলোকে নিরাপদে ব্যবহার করতে পারবে। ঈশ্বরের বাগানে তাদের রোপণকৃত চারা বড় হয়ে উঠেছে। এখানে যারা এসেছে প্রত্যেকেই ভিন্ন ভিন্ন কারণে এসেছে। ব্যর্থ ভালোবাসার সম্পর্ক, দৈনন্দিন জীবনের সমস্যা অথবা শক্তির খোঁজে। তারা ভয়ের সাথে লড়াই করে এসেছে। অনেক হতাশার পথ পাড়ি দিয়ে এই যাদুর পথ অনুসরণ করেছে। এবং তাদের যে জায়গায় পৌঁছানো দরকার সেখানে পৌঁছে গেছে। যারা বিশ্বাসের সাথে এই পথে ভ্রমণ করে, ঈশ্বর তাদের জন্য হাত বাড়িয়ে দেন।
চাঁদের রীতি এদের মুগ্ধ করেছে। শিক্ষকদের আর আচার অনুষ্ঠানের কিন্তু আরেকটা রীতিও আছে। ম্যাগাস ভাবলেন। তার চোখ এখনো ব্রাইডার ওপর নিবদ্ধ। উইক্কার ওপর কিছুটা ঈর্ষা বোধ করতে থাকেন। দীর্ঘদিন ধরে তার পাশেই ছিল উইক্কা। অনুসরণ করার জন্য অন্য রীতিটা অনেক বেশি কঠিন। কারণ এটা খুব সাধারণ। সাধারণ জিনিস সব সময় জটিল হয়। এর শিক্ষকরা এ জগতেই বাস করে। সব সময় যা শেখাচ্ছেন তা বোঝাটা তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নয়। কারণ এই শিক্ষা শুধু আগ্রহ বাড়িয়ে দেয়া ছাড়া আর কিছু নয়। তারা কার্পেন্টার, কবি, গণিত শিক্ষক, সব পেশার লোকজন আর জীবনের পথে হেঁটে চলা মানুষ; যারা জগতের সর্বত্র ছড়িয়ে আছে। মানুষগুলোর হঠাৎ কারো সাথে কথা বলার দরকার হয়ে পড়ে, নিজেদের অনুভূতি প্রকাশের দরকার হয়, যা তারা বুঝতে পারে না। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রেখে দেয়াও তাদের জন্য অসম্ভব। আর এভাবেই সূর্যের রীতি জ্ঞানকে বাঁচিয়ে রাখে। আর এ আবেগটাই সৃষ্টিশীলতা।
যেখানেই মানুষজন থাকে, সেখানেই সূর্যের রীতি চিহ্ন রেখে যায়। কখনও এটা একটা ভাস্কর্য, কখনও একটা টেবিল, অথবা একটা কবিতার কয়েকটা লাইন; প্রজনের পর প্রজন্ম চলে আসছে। এরা একটা নির্দিষ্ট দলে বা উপগোষ্ঠীতে অবস্থান করে। সূর্যের রীতির লোকেরা এমনভাবে কথা বলে, যেভাবে অন্যরা কথা বলে। একদিন সকালে বা একদিন সন্ধ্যায় জগতের দিকে তাকিয়ে মহৎ কোনো কিছুর উপস্থিতি দেখতে পায়। তারা অঘোষিতভাবে অজানা সাগরে পাড়ি জমায়। তবে বেশির ভাগ সময়েই, তা করে না তারা। প্রত্যেকে, অন্ততপক্ষে একবার তার দেহধারণে জগতের গোপনীয়তা ধারণ করে।
তারা নিজেদের ধীরে ধীরে অন্ধকার রাত্রির মধ্যে নিমজ্জিত হতে দেখে। কিন্তু উপযুপরি আত্মবিশ্বাসের অভাবে খুব কম মানুষই ফিরে আসতে পারে। পবিত্র হৃদয় ভালোবাসা, শান্তি আর আবেগের দ্বারা গড়ে ওঠে।
উইক্কা খুশি সে চাঁদের রীতির একজন শিক্ষক। তার কাছে যারাই আসে তারা সূর্যের রীতিনীতি শিখতে আগ্রহী থাকে। বেশির ভাগই জীবন তাদের কী শিক্ষা দিয়েছে, তা থেকে স্থায়ী কিছু শিখতে চায়।
সেটা কোনো ব্যাপার নয়। উইক্কা ভাবল। কারণ অলৌকিকের যুগ আবার ফিরে আসছে। এখানে কেউ আর ভিন্ন নয়। জগৎ অভিজ্ঞতার আলোকে বদলে যেতে শুরু করেছে। কয়েক বছরের মধ্যে, সূর্যের রীতি তার আপন শক্তিমত্তা নিয়ে অপূর্বভাবে নিজেকে উন্মোচিত করবে। যারা এখনো নিজেদের পথ বেছে নেয়নি তারা নিজেদের মধ্যে অসন্তোষ বোধ করতে পারে। জোর করে কোনো একটা পছন্দ করে নিতে হতে পারে। তাদের হতাশা যন্ত্রণার মধ্যে, হয় একটা অনুশীলনকে বেছে নিতে হবে অথবা বুঝতে হবে সবাই সুখী হওয়ার জন্যই জন্মায়। তাদের পছন্দের ব্যাপারটা পরিবর্তন করার আর কোনো সুযোগ থাকবে না। কঠিনতম লড়াই শুরু হয়ে যাবে।
.
৪৩.
হাতের সুনির্দিষ্ট মুভমেন্টের মাধ্যমে উইক্কা হাতের ছুরি দিয়ে বাতাসে একটা বৃত্ত তৈরি করল। সেই অদৃশ্য বৃত্তের মধ্যে সে পাঁচটা তারা আঁকল। ডাইনিদের ভাষায় ওটাকে পেন্টাগ্রাম বলা হয়। পেন্টাগ্রাম হচ্ছে মানবতার জন্য কাজ করার প্রতীক। এর মাধ্যমে মাটিতে শুয়ে থাকা মহিলারা এখন জগতের আলোর সাথে যোগাযোগ করতে পারবে।
তোমাদের চোখ বন্ধ করো। উইক্কা বলল।
তিনজনই আদেশ মান্য করল।
প্রত্যেকের মাথার ওপর ছুরি ঘুরিয়ে আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করল উইক্কা।
এখন তোমাদের আত্মার চোখ খোলো।
.
৪৪.
ব্রাইডা আত্মার চোখ খুলল। সে এখন মরুভূমিতে অবস্থান করছে। জায়গাটা খুব পরিচিত মনে হচ্ছে তার কাছে।
মনে পড়ে গেল এখানে এর আগে এসেছিল সে।
তখন জাদুকর ম্যাগাস তার সাথে ছিল।
ব্রাইডা চারদিকে তাকালো। কিন্তু ম্যাগাসকে দেখতে পেল না। যদিও সে এখন ভীত নয়। নিজেকে বেশ শান্ত আর সুখী মনে হতে থাকে। জানে সে কে, আর কোথায় বাস করত। জানে একই সময়ে অন্য কোথাও একটা পার্টি চলছে। কিন্তু কোনোটাই কোনো ব্যাপার নয়। কারণ তার সামনে প্রকৃতি অপরূপ, দূরে ওই পর্বতশ্রেণী আর বিশাল একটা পাথর…
স্বাগতম। একটা কণ্ঠস্বর বলল।
তার পাশে একজন ভদ্রলোক দাঁড়িয়ে আছে। ভদ্রলোক এমন পোশাক পরেছে যেমনটি তার দাদু পরতেন।
আমি উইক্কার শিক্ষক। তুমি যখন শিক্ষক হবে তোমার ছাত্রছাত্রীরা উইক্কাকে এখানে দেখতে পাবে। এ রকমটি প্রজন্মের পর প্রজন্ম চলতে থাকবে যদি জগতের আত্মারা শেষ পর্যন্ত তাদের ইশতেহার খুঁজে না পায়।
আমি ডাইনি হওয়ার জন্য আচার পালন করেছি। ব্রাইডা বলল, সাব্বাথ।
শিক্ষক হেসে উঠলেন।
তুমি তোমার পথ খুঁজে পেয়েছ। খুব সামান্য লোকেরই এমনটি করার সাহস রয়েছে। তারা এ রকম একটা পথ পছন্দ করে, যা তাদের নিজেদের পথ নয়। প্রত্যেকেরই ঈশ্বর প্রদত্ত ক্ষমতা আছে কিন্তু তারা তা দেখতে পায় না। তুমি তোমারটা গ্রহণ করেছ। তোমার ঐশ্বরিক ক্ষমতাকে বাধা দেয়ার অর্থ জগতের সাথে তোমার বিরুদ্ধাচরণ করা।
কিন্তু কেন?
যাতে তুমি ঈশ্বরের বাগানে গাছ লাগাতে পারো।
আমার সামনে গোটা একটা জীবন পড়ে রয়েছে। ব্রাইডা বলল, আমি সেই জীবন যাপন করতে চাই। যে রকমভাবে সাধারণ মানুষ যাপন করে। আমি ভুল করতে চাই। স্বার্থপর হতে চাই। ভুলের মধ্যে পড়তে চাই।
শিক্ষক হাসলেন। তার ডান হাতের দিকে হঠাৎ করে নীল আলখাল্লা পরা কারো আবির্ভাব হলো।
তুমি শুধু মানুষের কাছাকাছি যেতে পারবে, যখন তুমি তাদের একজন হবে।
ব্রাইডার চারদিকের দৃশ্যপট বদলে গেল। সে এখন আর মরুভূমিতে নেই। একধরনের তরলের মধ্যে ডুবে আছে। সেখানে নানা রকম প্রাণী সাঁতার কাটছে।
জীবনটা ভুলের সমষ্টি। শিক্ষক বললেন, সহস্রাধিক বছর ধরে কেউ ভুল না করা পর্যন্ত কোষগুলো নিজেদের বিভাজিত করে। পুনরাবৃত্তির ক্ষেত্রে কীভাবে বদলে যায়।
ব্রাইডা সাগরের দিকে তাকিয়ে বিস্মিত হলো। কীভাবে তা ঘটল তা জিজ্ঞাসা করল না। শুধু শিক্ষকের কণ্ঠস্বর শুনছিল সে। সে শুধু একই রকম ভ্রমণের ব্যাপারে ভাবতে পারে। যা গমের ক্ষেতে শুরু হয়েছিল।
এ রকম ভুলের জন্য জগৎক্টা চলমান হয়ে আছে। শিক্ষক বললেন, কখনো ভুল করতে ভয় পেয়ো না।
কিন্তু আদম আর হাওয়াকে স্বর্গ থেকে বিতাড়িত করা হয়েছিল।
আর তারা একদিন সেখানে ফিরে যাবে। স্বর্গ আর জগতের অলৌকিকত্ব জেনেই তারা যাবে। ঈশ্বর জানেন তিনি কী করছেন। ভালো আর খারাপের জ্ঞান তিনি তাদের মনোযোগ আকর্ষণ করেই এনেছিলেন। তারা ও ফল খাক যদি তিনি না চাইতেন, তিনি তাহলে কখনো তা উল্লেখ করতেন না।
তো সে কারণে তিনি তা করেছিলেন, তাহলে?
জগৎটাকে পরিক্রমশীল রাখার জন্যই করেছিলেন।
দৃশ্যটা আবার মরুভূমি আর পাথরে বদলে গেল। সকাল বেলার দৃশ্য। দিগন্তে গোলাপি আলোর আভা ফুটে উঠছে। শিক্ষক আলখাল্লা গায়ে তার দিকে এগিয়ে এলেন।
এই মুহূর্তে আমি তোমাকে ঈশ্বরের সেবায় উৎসর্গ করছি। তোমার ঐশ্বরিক ক্ষমতা ঈশ্বরের হাতিয়ার, তুমি নিজেকে প্রমাণ করতে পারবে।
.
৪৫.
উইক্কা তিনজন মহিলার মধ্যে সবচেয়ে তরুণীর পোশাকটা তুলে নিয়ে দুই হাতে বাড়িয়ে ধরলেন। তিনি কেলটিক পুরোহিতদের উদ্দেশে সিম্বোলিক উৎসর্গের নিদর্শন দিলেন। তারা গাছের ওপর থেকে সব কিছু লক্ষ করছে। উই তরুণী মেয়েটির দিকে ঘুরল।
উঠে দাঁড়াও। উইক্কা বলল।
ব্রাইডা উঠে দাঁড়াল। আগুনের ছায়ায় তার নগ্ন শরীর কেঁপে উঠল। আরেকটা শরীর এ রকম আগুনের সামনে কেঁপে উঠেছিল একবার। কিন্তু সেই সময় শেষ হয়ে গেছে।
তোমার হাত উত্তোলিত করো।
ব্রাইডা হাত উত্তোলিত করল। উইক্কা পোশাকটা পড়িয়ে দিল।
আমি নগ্ন ছিলাম। ব্রাইডা শিক্ষককে বলল, যখন সে তাকে আলখাল্লাটা পরিয়ে দিতে লাগল। আর তাতে আমি একটুও লজ্জা পাচ্ছিলাম না।
যদি তা লজ্জার ব্যাপার না হতো, ঈশ্বর কখনো আবিষ্কার করতে পারতেন না আদম আর হাওয়া আপেল খেয়ে ফেলেছে।
শিক্ষক সূর্যোদয় দেখছিলেন। তাকে দেখে অমনোযোগী মনে হলো। কিন্তু তিনি তা নন। তা জানে ব্রাইডা।
কখনো লজ্জিত হয়ো না। শিক্ষক বললেন, জীবন তোমাকে যা দিয়েছে তা গ্রহণ করো। জীবনের প্রতিটি চুমুক পান করতে চেষ্টা করো। সব রকমের পানীয়র স্বাদ নিতে হবে। কিছু শুধু চুমুক দেয়ার জন্য কিন্তু বাকিটুকুর গোটা বোতল পান করতে হবে।
আমি কীভাবে জানতে পারব কোনটা কী?
স্বাদ গ্রহণ করে। তুমি শুধু ভালো ওয়াইনের স্বাদ বুঝতে পারবে, যদি প্রথমে খারাপটার স্বাদ নাও।
.
উইক্কা ব্রাইডার দিকে ঘুরে আগুনের দিকে তাকালো। তারপর পরবর্তী ক্রিয়ার জন্য এগিয়ে গেল। আগুন ব্রাইডার ঐশ্বরিক শক্তি তুলে নিল, যাতে এটা তার ইশতেহার হতে পারে। সেই মুহূর্তে ব্রাইডা সূর্যোদয়ের দৃশ্য দেখছিল। তারপর থেকে সূর্য তার বাকি জীবনটা আলোকিত করবে।
এখন তুমি অবশ্যই যাবে। সূর্য উঠে গেলে শিক্ষক বললেন।
আমি আমার উপহার নিয়ে ভীত নই। শিক্ষককে বলল, ব্রাইডা কোথায় যাচ্ছি তা জানি। আর কী করতে যাচ্ছি তাও জানি। আমি জানি কেউ একজন আমাকে সেখানে পৌঁছানোর ব্যাপারে সাহায্য করবে।
আমি আগে সেখানে গিয়েছিলাম। লোকেরা নাচছিল সেখানে। চাঁদের রীতিনীতির উৎসব পালনের জন্য একটা গোপন মন্দির তৈরি হচ্ছিল।
শিক্ষক কিছুই বললেন না। তার দিকে তাকালেন তিনি। ডান হাত দিয়ে একটা সংকেত দিলেন।
তুমি গৃহীত হবে। হয়তো তোমার পথ শান্তির পথে ধাবিত হবে। শান্তির সময় শান্তির পথে যাবে। যুদ্ধের সময় যুদ্ধের পথে। কখনো একটার সাথে আরেকটা গুলিয়ে ফেলবে না।
শিক্ষকের আকৃতি মুছে যেতে শুরু করল। মরুভূমি আর পাথরের মাঝে মিলিয়ে গেল। শুধু উদীয়মান সূর্য রয়ে গেল। কিন্তু সূর্য আকাশের একটা বিন্দুর মতো হতে থাকে। তারপর আকাশ অন্ধকার হয়ে আসে। সূর্য আগুনের শিখার মতো হয়ে যেতে থাকে।
.
৪৫.
ব্রাইডা ফিরে এসেছে। এখন সব কিছু মনে করতে পারছে সে। ওই গুঞ্জন, হাততালির শব্দ, নৃত্য, মোহাবিষ্টতা। লোকজনের সামনে গায়ের কাপড়চোপড় খুলে নগ্ন হওয়ার কথা মনে পড়ে গেল। এখন সে বেশ সচেতন। কিন্তু শিক্ষকের সাথে সাক্ষাতের কথাও স্মরণ করতে পারল। সে তার অনুভূতির জগৎটাকে লজ্জা, ভয় আর উত্তেজনার মধ্যে বজায় রাখতে চেষ্টা করল। তারা সব সময় তার সাথে থাকতে পারে। ওদের অবশ্যই ব্যবহার করা শিখতে হবে।
উইক্কা দীক্ষা নেয়া তিনজনকে মহিলাদের অর্ধবৃত্তের ঠিক মাঝখানে দাঁড়াতে বলল। ডাইনিরা হাতে হাত রেখে একটা বৃত্ত তৈরি করল।
তারা এ রকম গান গাইতে লাগতে যাতে কেউ সঙ্গ দেয়ার সাহস করল না। শব্দটা তাদের খোলা ঠোঁটের মধ্য দিয়ে অদ্ভুত কম্পন সৃষ্টি করে বের হতে লাগল। গানের শব্দ এত বেশি তীক্ষ্ণ, যেন মনে হতে লাগল কয়েকটা উন্মত্ত পাখি কেঁদে চলেছে। ভবিষ্যতে কীভাবে এই শব্দ করতে হয় তা শিখে যাবে ব্রাইডা। শিক্ষক হওয়া পর্যন্ত সে আরো অনেক কিছু শিখে যাবে। অন্য নারী পুরুষ তার কাছ থেকে চাঁদের রীতিতে দীক্ষা নেবে।
এই সব কিছু যাই হোক, নির্দিষ্ট মুহূর্তে ঘটবে। তার সামনে অনেক সময় পড়ে আছে। এখন সে আবার তার গন্তব্য খুঁজে পেয়েছে। কেউ তাকে সাহায্য করবে। স্বর্গীয় ক্ষমতা তার হাতের মুঠোয়।
সবাই তাদের চারপাশে অদ্ভুত সব রঙের খেলা দেখতে পেল। ব্রাইডা কিছুটা হতবুদ্ধ অবস্থায় আছে। জগন্টা আগে যেমন ছিল তেমন থাকলেই যেন ভালো হতো।
ডাইনিরা গান গাওয়া বন্ধ করল।
চাঁদের রীতিতে দীক্ষা নেয়া পুরোপুরি শেষ হয়েছে। উইক্কা বলল, জগৎটা এখন তোমাদের জন্য শস্যক্ষেত্রের মতো। তোমরা সেখানে খুব ভালো ফসল উৎপাদনের জন্য নিশ্চিতভাবে কাজ করবে।
আমার অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে। একজন দীক্ষিত বলল, সব কিছু ঝাপসা লাগছে।
তুমি যা দেখতে পাচ্ছ তা তোমার চারপাশে ঘিরে রাখা শক্তির প্রবাহ। আমরা একে জ্যোতি বলে ডাকি। মহৎ রহস্যময়তায় শামিল হওয়ায় এটাই তো একাকী প্রথম পথ। এই ঝাপসাব খুব শিগগিরই মুছে যাবে। পরে আমি তোমাদের কীভাবে এটাকে জাগিয়ে তুলতে হয় তা শেখাব।
খুব দ্রুততার সাথে উইক্কা উপাসনার ছুরিটা মাটিতে পুঁতে ফেলল। এত দ্রুততার সাথে করল যে শক্তির প্রবাহে ছুরির হাতলটা তখনো কাঁপছিল।
অনুষ্ঠান এখানেই শেষ। উইক্কা বলল।
.
৪৬.
ব্রাইডা লরেন্সের কাছে গেল। লরেন্সের চোখ জ্বলজ্বল করছিল। ব্রাইডার মনে হলো লরেন্স তাকে নিয়ে বেশ গর্ববোধ করছে। লরেন্স তাকে খুব ভালোবাসে। তারা একসাথে বড় হয়ে উঠবে। জীবন যাপনের নতুন পদ্ধতি সৃষ্টি করবে। গোটা জগৎটাকে আবিষ্কার করবে। তাদের মতো সাহসী লোকজনের জন্য অপেক্ষা করবে।
কিন্তু আরেকজন মানুষও আছে। উইক্কার শিক্ষকের সাথে কথা বলার সময় তার পছন্দ বেছে নিতে হয়েছিল। কারণ আরেকজন কঠিন মুহূর্তে তার সঙ্গী হওয়ার সামর্থ্য রাখে। বিশ্বাসের অন্ধকার রাস্তায় অভিজ্ঞতা আর ভালোবাসার মাধ্যমে পথ দেখিয়ে নিয়ে যেতে পারে। সে মানুষটাকে ভালোবাসতে শিখতে পারে। মানুষটার প্রতি তার ভালোবাসা শ্রদ্ধার মতোই মহৎ হতে পারে। তারা জ্ঞানের একই পথে দুজন হাঁটতে পারে। মানুষটার কারণেই আজ সে এখানে এসে পৌঁছেছে। তার সাথে সে একদিন সূর্যের রীতিনীতি শিখতে পারে।
এখন জেনে গেছে সে একজন ডাইনি। তাকে ডাইনিবিদ্যার কলাকৌশল শিখতে হবে, যা শতাব্দীর পর শতাব্দী চলে আসছে। ডাইনিরা যেখান থেকে এসেছে তা জানতে হবে। সেই রাতের পর থেকে, প্রজ্ঞা আর জ্ঞান তার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস হয়ে উঠবে।
আমরা এখন চলে যেতে পারি। ব্রাইডা লরেন্সকে বলল। লরেন্স পা পর্যন্ত মোড়া কালো আলখাল্লা পরিহিত মেয়েটার দিকে সপ্রশংস দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। ব্রাইডা যেভাবেই হোক বুঝতে পারল, ম্যাগাস আগাগোড়া নীল পোশাকে মোড়া দেখছে তাকে।
ব্রাইডা তার ব্যাগ থেকে অন্য পোশাক বের করল।
তুমি সামনে এগিয়ে গিয়ে দেখ আমাদের লিফট দেয়ার মতো কোনো কিছু পাও কি না। আমার একজনের সাথে একটু কথা বলা দরকার।
লরেন্স ব্যাগ হাতে নিল। কিন্তু একটুখানি সামনে হেঁটে গিয়ে জঙ্গলের পথে দাঁড়াল। অনুষ্ঠান শেষ হয়ে গেছে। তারা এখন বাস্তব জগতে ফিরে যাবে। ফিরে যাবে ভালোবাসার মানুষের কাছে। তাদের ঈর্ষা আর জয়ের লড়াইয়ে শামিল হওয়ার চেষ্টা করবে।
আবার ভয়টা চলে এলো। ব্রাইডা অদ্ভুত আচরণ করছে।
আমি জানি না ঈশ্বরের অস্তিত্ত আছে কি না। লরেন্স তার আশপাশের গাছগুলোকে বলল। আর আমি এখনো তা ভাবতে পারছি না। কারণ আমিও এই রহস্যের মুখোমুখি হয়েছি।
লরেন্সের মনে হলো সে একটু অন্যভাবে কথা বলছে। অদ্ভুত আত্মবিশ্বাস ফিরে এসেছে, যেমনটি আগে হয়নি। কিন্তু এই মুহূর্তে, সে বিশ্বাস করছে গাছগুলো তার কথা শুনছে।
এখানকার লোকজন হয়তো আমাকে বুঝতে পারবে না। তারা হয়তো আমার শক্তিকে অবহেলা করবে। কিন্তু আমি জানি আমিও ওদের মতো সাহসী। কারণ আমি ঈশ্বরকে বিশ্বাস না করলেও ঈশ্বরকে খুজি। যদি ঈশ্বরের অস্তিত্ব থাকে, তাহলে তিনি সাহসীদের ঈশ্বরই হবেন।
লরেন্স লক্ষ করল তার হাত কাঁপছে। রাত শেষ হতে চলেছে। এখানে কী ঘটেছে তার কিছুই সে বুঝতে পারছে না। জানে সে একটা মোহাবেশে চলে গিয়েছিল, কিন্তু সেটাই সব নয়। যাই হোক, হাতের এই কাঁপুনির ক্ষেত্রে কিছুই করার নেই, ব্রাইডা যেমনটি বলেছিল, অন্ধকার রাতে ঘটে থাকে।
লরেন্স আকাশের দিকে তাকালো। এখনো মেঘের আনাগোনা। ঈশ্বর সাহসীদের ঈশ্বর। সে ঈশ্বরকে বুঝতে পারবে, কারণ সাহসীরা তাদের ভয়কে পাশ কাটিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। শয়তানকে প্রতি পদক্ষেপেই তাদের পথ থেকে সরিয়ে দিতে পারে। প্রতিটি কাজে উদ্বিগ্নতাকে সামাল দিতে হবে, তাই ভুল হোক আর ঠিক থোক। আগুনের পাশে নেচে যাওয়া অলৌকিক বিশ্বাসী ডাইনিরা এমনটা বিশ্বাস করে।
ঈশ্বর হয়তো ওই তরুণীর মাধ্যমে তাকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছেন। তরুণীটি এখন আরেকজন পুরুষের কাছে হেঁটে যাচ্ছে। যদি ও চলে যায়, তাহলে সম্ভবত ঈশ্বর তাকেও চিরদিনের জন্য ছেড়ে যাবেন। ব্রাইডাই তার সৌভাগ্য। কারণ ব্রাইডা ভালোবাসার মাধ্যমে ঈশ্বরের কাছে নিমজ্জিত হওয়ার উপায় জানে। ওকে ফিরিয়ে আনার সুযোগটাকে সে কখনো হাতছাড়া করতে চায় না।
লরেন্স গভীরভাবে শ্বাস নিল। শীত শীত লাগছে। জঙ্গলের স্নিগ্ধ নির্মল বাতাস ফুসফুস ভরিয়ে দিচ্ছে। সে ঈশ্বরের কাছে প্রতিজ্ঞা করল।
ঈশ্বর সাহসীদের ঈশ্বর।
ব্রাইডা ম্যাগাসের কাছে হেঁটে গেল। তারা আগুনের পাশে দেখা করল। কথাবার্তা স্পষ্ট শোনা বেশ কঠিন।
ব্রাইডা নীরবতা ভঙ্গ করল।
আমরা একই পথের পথিক।
ম্যাগাস মাথা নুইয়ে সম্মত হলেন।
তো চলুন আমরা একসাথে তা অনুসরণ করি।
কিন্তু তুমি আমাকে ভালোবাসো না। ম্যাগাস বললেন।
আমি আপনাকে ভালোবাসি। আমি এখনো আমার প্রতি আপনার ভালোবাসার কথা জানি না। কিন্তু আমি আপনাকে ভালোবাসি। আপনি আমার আত্মার সঙ্গী।
ম্যাগাস এখনো দূরে তাকিয়ে আছেন। তিনি সূর্যের রীতিনীতির ব্যাপারে ভাবছিলেন। সূর্যের রীতিনীতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাই হচ্ছে ভালোবাসার দৃশ্যমান আর অদৃশ্যমান জগতের সেতুবন্ধ হিসেবে একমাত্র ভালোবাসাই কাজ করে। ভালোবাসার ভাষাই পৃথিবীর মানুষকে প্রতিদিন ভালোবাসতে শেখায়।
আমি কোথাও যাচ্ছি না। ব্রাইডা বলল, আমি আপনার সাথে থাকছি।
তোমার বয়ফ্রেন্ড অপেক্ষা করছে। ম্যাগাস উত্তর দিলেন। আমি তোমার ভালোবাসাকে আশীর্বাদ করব।
ব্রাইডা ম্যাগাসের দিকে তাকালো। হতবাক।
আমরা ওই সন্ধ্যায় যে সূর্যাস্ত দেখেছিলাম কেউ ও রকম সূর্যাস্ত ধারণ করতে পারে না। ম্যাগাস বলে চললেন, যে রকমটি কেউ কখনো জানালার গায়ে পড়া বিকেলের বৃষ্টির ফোঁটাকে ধারণ করতে পারে না। যেমন ধারণ করতে পারে না ঘুমন্ত শিশুর মুখে সরলতা। অথবা পাথরের গায়ে আছড়ে পড়া স্রোতের সেই জাদুকরী মুহূর্ত। জগতের সবচেয়ে সুন্দর জিনিসগুলো কেউ ধরে রাখতে পারে না। কিন্তু আমরা জানি ওগুলোকে আমরা ভালোবাসি। ঈশ্বর মানুষের সামনে এ রকম অপূর্ব মুহূর্ত উন্মোচন করে দিয়েছেন।
আমরা সূর্যের প্রভু নেই। সোনাঝরা বিকেল অথবা স্রোতের জাদুকরী আছড়ে পড়া, এমনকি ঈশ্বরের দৃষ্টিতে, কিছু দেখতে পারি না। কারণ আমরা নিজেদের ধারণ করতে পারি না।
ম্যাগাস ব্রাইডার দিকে হাত বাড়িয়ে দিলেন। ব্রাইডাকে একটা ফুল দিলেন।
যখন আমাদের প্রথম দেখা হয়েছিল- যদিও দেখে মনে হচ্ছিল আমি সব সময় তোমাকে জানতাম, কারণ তার আগের পৃথিবীকে আমি স্মরণ করতে পারি না আমি তোমাকে অন্ধকার রাত্রি দেখিয়েছিলাম। আমি তোমাকে দেখাতে চেয়েছিলাম তুমি তোমার নিজের সীমাবদ্ধতার মুখোমুখি হও। আমি জানতাম তুমিই আমার আত্মার সঙ্গী। আমার যা কিছু শেখার দরকার তা তুমি আমাকে শেখাতে পারবেঈশ্বর কেন নারী-পুরুষ বিভেদ সৃষ্টি করেছেন।
ব্রাইডা ফুল স্পর্শ করল। তাকে দেখে মনে হলো বিগত মাসের মধ্যে সে এই প্রথম ফুল দেখছে। বসন্তকাল এসে গেছে।
লোকজন উপহার হিসেবে ফুল দেয় কারণ ফুল ভালোবাসার প্রকৃত অর্থ বহন করে। যে ফুলের সৌন্দর্য ধারণ করার চেষ্টা করে, সে এর সৌন্দর্য তিরোহিত হতে দেখতে পায়। কিন্তু তুমি যদি মাঠের মধ্যে সাধারণভাবে ফুল দেখ, তাহলে তা চিরদিনের জন্য তোমার স্মৃতিতে থেকে যাবে, কারণ ওই ফুল সেই অপূর্ব সন্ধ্যার, সূর্যাস্তের আর মাটির গন্ধ মাখা দিগন্তের মেঘমালার মিলিত সৌন্দর্য।
ব্রাইডা ফুলের দিকে তাকাতে লাগল। ম্যাগাস ফুলটা ব্রাইডার হাত থেকে নিয়ে জঙ্গলের দিকে ফিরিয়ে দিলেন।
ব্রাইডার চোখ জলে ভরে উঠল। সে তার আত্মার সঙ্গীকে নিয়ে গর্বিত হল।
জঙ্গল আমাকে এই শিক্ষা দিয়েছে। তুমি কখনো আমার হবে না। এ কারণেই আমি কখনো তোমাকে হারাতে চাই না। আমার নিঃসঙ্গতার দিনগুলোতে তুমি আশার প্রদীপ হয়ে জ্বলবে। আমার সন্দেহের মুহূর্তে তুমি উদ্বিগ্নতা দূর করবে। আমার বিশ্বাসের মুহূর্তে তুমি নিশ্চয়তা দেবে।
আমি জানতাম আমার আত্মার সঙ্গী একদিন না একদিন আসবে। আমি নিজেকে সূর্যের রীতিনীতি শেখাতে উৎসর্গ করলাম। জানলাম যে আমার বেঁচে থাকার জন্য তোমার অস্তিত্বের প্রয়োজন।
ব্রাইডা চোখের জল ধরে রাখতে পারল না।
তারপর তুমি এলে, সব কিছু বুঝতে পারলে। আমি যে দাসত্ব নিজে সৃষ্টি করেছি, তুমি এসে তা থেকে আমায় মুক্ত করে দিলে। বললে, আমি সেই জগতে ফিরে যেতে পারি। যা কিছু দরকার তার সব কিছু বুঝতে পারলাম। আমি যেসব মেয়েকে আজ পর্যন্ত চিনি, তাদের সবার চেয়ে তোমাকে অনেক অনেক বেশি ভালোবাসি। যে মেয়েটি আমাকে অরণ্য থেকে বের করে এনেছে তাকেই আমি বেশি ভালোবাসি। আমি এখন থেকে সব সময় মনে রাখব, ভালোবাসা হচ্ছে স্বাধীনতা। এই শিক্ষা শিখতে আমার বহু বছর লেগে গেছে। এ শিক্ষাই আমাকে নির্বাসিত করে পাঠিয়েছে। এখন আবার নিজেকে মুক্ত করেছে।
আগুনের শিখা চিড়চিড় করে উঠল। কয়েকজন একে অন্যকে বিদায় জানাতে লাগল। কিন্তু চারদিকে কী ঘটছিল ব্রাইডা তার কোনো কিছুই শুনছিল না।
ব্রাইডা! অনেক দূর থেকে ভেসে আসা কণ্ঠস্বর শুনতে পেল।
তোমাকে খুঁজছে। ম্যাগাস বললেন, পুরনো সিনেমার প্রচলিত ডায়ালগ থেকে নিয়ে। তিনি খুশি, কারণ সূর্যের রীতিনীতির আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ে অবস্থান করছেন। তিনি তার শিক্ষকের উপস্থিতি অনুভব করছেন। তার নতুন শিক্ষার জন্য যিনি এই রাতটা বেছে নিয়েছেন।
আমি সব সময় তোমাকে মনে রাখব। তুমি আমাকে মনে রাখবে। ওই সন্ধ্যার কথা যেমনটি মনে রেখেছিলে। জানালার গায়ে বৃষ্টির ফোঁটা আর যেসব জিনিসকে আমরা ধারণ করতে পারি না।
ব্রাইডা! লরেন্স আবার ডাক দিল।
শান্তির পথে যাও। ম্যাগাস বললেন, চোখের জল মুছে ফেল। অথবা তাকে বলল, আগুনের ধোঁয়া তোমার চোখের মধ্যে ঢুকে গেছে। আমাকে কখনো ভুলো না।
তিনি জানতেন এ কথা বলার কোনো দরকার ছিল না। কিন্তু তিনি তারপরও বললেন।
.
উইক্কা লক্ষ করল কয়েকজন তাদের জিনিসপত্র এখানে ফেলে গেছে। সে তাদের ফোন করে এখানে এসে এগুলো নিয়ে যেতে বলতে পারে।
আগুন খুব তাড়াতাড়িই নিভে যাবে। উইক্কা বলল।
ম্যাগাস চুপ করে রইলেন। তখন আগুনের কয়েকটা ফুলকি দেখা যাচ্ছিল। তিনি তখনো তাদের চলে যাওয়ার দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে রেখেছেন।
আমি একবার তোমার প্রেমে পড়েছিলাম। তার জন্য কোনো দুঃখ করি না। উইক্কা বলে চলল।
আমিও করি না। ম্যাগাস উত্তর দিলেন।
উইক্কার ব্রাইডা সম্পর্কে কথা বলতে খুব ইচ্ছা করছিল, কিন্তু সে কিছুই বলল না। তার পাশে দাঁড়ানো মানুষটার চোখ শ্রদ্ধা আর প্রজ্ঞায় উদ্ভাসিত হয়ে উঠেছে।
আমি তোমার আত্মার সঙ্গী নই, ব্যাপারটা খুব লজ্জার। উইক্কা যোগ করল। আমরা খুব ভালো দম্পতি হতে পারতাম।
কিন্তু উইক্কা কী বলছে ম্যাগাস তার কোনো কিছুই শুনছিল না। তার সামনে বিশাল জগৎ পড়ে আছে। কত কী করার আছে বাকি। তিনি ঈশ্বরের বাগানের বীজ রোপণে সাহায্য করতে পারেন। তিনি লোকজনকে শিক্ষা দিতে পারেন। অন্য কোনো নারীর সাথে দেখা হতে পারে, তার প্রেমে পড়তে পারেন। এ রকম অনুষ্ঠানে আবারও আসতে পারেন। এই রাত তার অস্তিত্বের একটা ধাপ পূর্ণ করেছে। একটা নতুন অন্ধকার রাত্রি তার সামনে পড়ে আছে। কিন্তু পরবর্তী ধাপ আরো বেশি উপভোগ্য আর আনন্দদায়ক হতে পারে, স্বপ্নের খুব কাছাকাছি আসতে পারে তার। তিনি তা জানেন। কারণ এই ফুল, এই অরণ্য আর তরুণী মেয়েদের আগমন ঈশ্বরের হাতে। তিনি জানেন না, তার ভাগ্য নির্ধারণ করার কিছু আছে কিনা। চাঁদ আর সূর্যের রীতি থেকে তিনি তা জেনে নেবেন।