৫. দেশ প্রেম, রাজনীতি আর ধর্মের উর্ধ্বের ধর্ম
I do not care for liberation, I would rather go to a hun dred thousand hells, doing good to others (silently) like the spring, this is my religion.
–Swami Vivekananda
নিয়মিত হাঁটা আমার জীবনের অংশ হয়ে গেছে। যেখানেই যাই না কেন প্রতিদিন ভোরে উঠে আমি অন্তত পাঁচ কিলোমিটার হাঁটি। সূর্যোদয়ের সৌন্দর্য দর্শনের সংগে আমি যেন নিজেকে বেঁধে ফেলেছি। এ গ্রহের আরেকটি সকালকে স্বাগত জানাতে পাখিগুলো যখন গেয়ে ওঠে, তখন সে সুরে যেন আমার শ্রবণেন্দ্রিয় নতুন করে সঞ্জীবিত হয়।
প্রশান্ত বাতাস, পাখির গান, সূর্যোদয়–প্রকৃতির উপাদানগুলো প্রতিদিন উপভোগ করি আর ভাবি প্রকৃতি কী নিখুঁতভাবে এগুলোর সমন্বয় করে এমন একটি শান্তির মুহূর্ত উপহার দিয়েছে। আমি ভাবতে থাকি আর আল্লাহকে ধন্যবাদ জানাই।
আমি খুব ভাগ্যবান এ কারণে যে আমার কাজের কারণেই আমাকে বহু জায়গায় যেতে হয়েছে। এসকল সুন্দর সুন্দর জায়গা উপভোগের অভিজ্ঞতা আমার মনের দুয়ার খুলে দিয়েছে।
এমনই একটি মোহময়ী সুন্দর জায়গা উড়িষ্যার চন্ডিপুর। কলকাতা থেকে বালাসোরের দূরত্ব ২৩৪ কিলোমিটার আর বালাসোর থেকে মাত্র ১৬ কিলোমিটার দূরেই চন্ডিপুর।
চন্ডিপুর মানেই হলো দুর্গা বা চন্ডিদেবীর অধিষ্ঠান ক্ষেত্র। এখানকার সমুদ্র সৈকত নিঃসন্দেহে ভারতের অন্যান্য সৈকতগুলোর চেয়ে সুন্দর। মৃদু জোয়ারের সময় তটসংলগ্ন প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকা জোয়ার প্লাবিত হয়ে পড়ে।
নির্জন সৈকত, সৈকতসংলগ্ন তমরীক্ষ গাছের পাতার মর্মরধ্বনি, আর মৃদুমন্দ বাতাস এক অনন্য নৈঃশব্দতার সৃষ্টি করে। সুবর্ণরেখা নদীটি সাগরের যেখানে এসে মিশেছে তার পাশের তটভূমি দিয়ে আমি বহুবার হেঁটেছি।
বড় বড় ঢেউগুলো যখন তীরে এসে আছড়ে পড়তো তখন আমি মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে যেতাম। মনে হতো ঈশ্বরের আশীর্বাদ যেন ঝরে ঝরে পড়ছে।
ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অরগানাইজেশন– আইএসআরওর শ্রীহরিকোটা রেঞ্জ থেকে আমরা আমাদের ক্ষেপণাস্ত্রের উৎক্ষেপন পরীক্ষা চালানো শুরু করি। কিন্তু আমাদের আলাদা একটি স্থায়ী মিসাইল টেস্ট রেঞ্জ দরকার ছিল।
ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপন, রকেট ও নভোযান উৎক্ষেপনের স্থায়ী পরীক্ষাক্ষেত্র আইটিআর (ইনটেরিম টেস্ট রেঞ্জ) প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৮৯ সালে।
বহুমুখী ক্ষেপণাস্ত্র ত্রিশুল, একাধিক লক্ষ্যে আঘাত হানতে সক্ষম ক্ষেপণাস্ত্র আকাশ, ট্যাংক বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র নাগ মিসাইল, ভূমি থেকে ভূমিতে আঘাত করতে সক্ষম পৃথ্বী এবং দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র অগ্নিসহ বিভিন্ন শ্রেণীর ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা হয়েছে এখানে।
ইন্দো-রুশ যৌথ উদ্যোগে বানানো সুপারসনিক ক্রুজ মিসাইল ব্রাহমোস এর পরীক্ষা হয়েছে এই টেস্ট রেঞ্জে। এছাড়াও আইটিআর-এর সহায়তায় মাল্টিব্যারেল রকেট লঞ্চার পিনাকা ও পাইলটবিহীন এয়ার ক্র্যাফট লক্ষ্যর পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপন হয় এখানেই।
সর্বাধুনিক প্রযুক্তিতে আইটিআরকে এমনভাবে সজ্জিত ও সক্ষম করে তোলা হয়েছে যে এখন সেখানে যে কোন ধরনের এয়ারবর্ণ উইপনের পরীক্ষা করা সম্ভব।
এখানে পরীক্ষীত হয় দূরপাল্লার মিসাইল, এয়ার ডিফেন্স মিসাইল সিস্টেম, হাল্কা যুদ্ধ বিমানের সমরাস্ত্র প্রযুক্তি ও মাল্টি টার্গেট উইপনস্ সিস্টেম।
সমুদ্র উপকূল থেকে সমুদ্রের দিকে ১৭ কিলোমিটার দূরবর্তী এলাকা জুড়ে আইটিআরের ব্যাপ্তি। এই বিশাল এলাকার বিভিন্ন জায়গায় বসানো হয়েছে ট্র্যাকিং সিস্টেম বা সমরযানের পথ চিহ্ন শণাক্তকারী প্রযুক্তি। তাছাড়া উৎক্ষেপিত নভোযানের ফ্লাইট পথ বা উডডয়ন রেখা শনাক্ত করার যন্ত্রপাতিও এখানে স্থাপন করা হয়েছে। আইটিআরে যেসব প্রয়োজনীয় যন্ত্র বসানো হয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো– মোবাইল অ্যান্ড ফিক্সড ইলেক্ট্রো অপটিক্যাল ট্র্যাকিং সিস্টেম, মোবাইল এস ব্যান্ড ট্র্যাকিং রাডার, ফিক্সড সিব্যান্ড ট্র্যাকিং রাডার, রেঞ্জ কম্পিউটার, ফটো প্রসেসিং সিস্টেম, মেটিওরোলজিক্যাল সিস্টেম এবং রেঞ্জ সেফটি সিস্টেম। রকেট অথবা অন্য কোন নভোযান উৎক্ষেপনের সময় নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে সহায়তা করার জন্য সেখানে আরও আধুনিক প্রযুক্তির নিরাপত্তা যন্ত্রপাতি বসানো হচ্ছে।
আইটিআর ধীরগতিতে হলেও নিশ্চিতভাবে বিশ্বমানের রেঞ্জ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
১৯৯৫ সালের জুলাই মাসের কোন এক নাতিশীতোষ্ণ রাতে ভূমি থেকে ভূমিতে আঘাত হানতে সক্ষম ক্ষেপনাস্ত্র পৃথ্বীর সফল উৎক্ষেপনের পর সবাই খুব খোশ মেজাজে। প্রায় ১২শ টিম মেম্বারের ৩০ জন প্রতিনিধি আমরা। খুব গর্বভরে ভাবছিলাম–এর পরের প্রকল্প কী?
আর্টিলারির মহাপরিচালক লে. জেনারেল রমেশ খোশলা জানালেন, ভূমি থেকে ভূমিতে আঘাত করতে সক্ষম ক্ষেপণাস্ত্রের আসল পরীক্ষা করতে হবে যে পরীক্ষার মাধ্যমে চূড়ান্ত লক্ষ্যে আঘাতের পর চারপাশের ১৫০ মিটার জায়গায় কী প্রভাব পড়ে তা জানা যাবে। টেকনিক্যাল টার্ম অনুযায়ী এটাকে বলা হয়, সিইপি (সার্কুলার এরর প্রোবাবিলিটি)।
ভূমির ওপর দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা আগে হয়নি। (ভূমি থেকে ভূমিতে আঘাত হানতে সক্ষম ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা এর আগে করা হয়েছে সমুদ্রের ওপর)।
আমরা উপযুক্ত পরীক্ষা ক্ষেত্র খোঁজার জন্য ভারতের ভৌগলিক মানচিত্র নিয়ে বসলাম। ম্যাপে দেখলাম আইটিআরের ৭০ থেকে ৮০ কিলোমিটারের মধ্যে বেশ কয়েকটি বিন্দুর মত দ্বীপ দেখা যাচ্ছে। এগুলো আসলে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দ্বীপ মিলে একটি ছোট দ্বীপপুঞ্জ। অনিবার্য কারণেই এ পরীক্ষার জন্য আমরা রাজস্থানের মরুভূমিতে যেতে পারছি না। আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপও আইটিআর থেকে অনেক দূরে। রাত দুটোয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হল এই ছোট দ্বীপপুঞ্জের কোন একটি দ্বীপেই আমাদের মিসাইল ইমপ্যাক্ট টেস্ট হবে। সবচেয়ে ভাল পরীক্ষা উপযোগী দ্বীপ খোঁজা শুরু হল।
একটি হেলিকপ্টার পাঠানো হল এলাকা পর্যবেক্ষণের জন্য। কেউ একজন প্রস্তাব করলো জেলেদের গাইড হিসেবে নিয়ে দ্বীপগুলো সশরীরে দেখে আসা যায়।
লোকেশন সার্ভে করার প্রাথমিক দায়িত্ব পড়লো আমার দুই সহকর্মী সরসবাত ও সালবানের ওপর। তারা দুজন উড়িষ্যার ধর্ম নামের একটি জায়গায় গাড়িতে চড়ে গেলেন। সেখান থেকে সারাদিনের জন্য আড়াইশ টাকায় মাঝিসহ নৌকা ভাড়া করে ওই দ্বীপে পৌঁছলেন। কিন্তু দ্বীপে পৌঁছতেই রাত হয়ে গেল। সালবান যাত্রাপথে খাওয়ার জন্য সংগে কিছু ফল নিয়েছিলেন। তাই দিয়েই রাতের খাবার সারতে হল। দ্বীপে রাত কাটানো ছাড়া বিকল্প কোন পথ নেই। এদিকে দুজনের কেউই সাগর অথবা মরুভূমির সংগে পূর্ব-পরিচিত নন। ফলে সারারাত ভয়ে ভয়ে নৌকোয় শুয়ে কাটিয়ে দিলেন। ভোরে উঠেই তারা ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ৮শ মিটার প্রশস্ত দ্বীপটি সার্ভে করা শুরু করলেন। হঠাৎ তারা দেখলেন দ্বীপের পূর্ব পাশে একটা গাছের ওপরে বাংলাদেশের পতাকা উড়ছে। তার নিচে বেশ কয়েকটা কুঁড়ে ঘর। এটা সম্ভবত প্রতিবেশী বাংলাদেশ থেকে আসা জেলেদের কাণ্ড। আমার বন্ধুরা তাড়াতাড়ি সে পতাকা সরিয়ে ফেললেন।
ওরা দুজন ফিরে এসে দ্বীপটিকে পরীক্ষার উপযোগী হিসেবে রিপোর্ট করার পর পরবর্তী পদক্ষেপগুলো খুব দ্রুত নেওয়া হল। বন ও পরিবেশ কর্মকর্তারাসহ জেলাকর্তৃপক্ষ দ্বীপটি পরিদর্শন করে এলেন। খুব সহজেই দ্বীপটি অধিগ্রহণের ব্যাপারে প্রতিরক্ষামন্ত্রীর অনুমোদন পাওয়া গেল।
বাকি থাকলো উড়িষ্যা সরকার ও বন মন্ত্রণালয়ের আনুষ্ঠানিক হস্তান্তর প্রক্রিয়ার কাজ। উড়িষ্যার মুখ্যমন্ত্রীর ডেস্কে যাতে আমাদের ফাইলটি দ্রুত পাঠানো হয় সেজন্য আমি তার অফিসের কর্তব্যরত কর্মকর্তাদের সংগে ব্যক্তিগতভাবে দেখা করলাম। এছাড়া আমার জবানবন্দীতে মুখ্যমন্ত্রী বরাবরে একটি চিঠি লিখে দিলাম। ডিআরডিওর কোন কোন কাজের জন্য দ্বীপগুলো আমাদের তা চিঠিতে উল্লেখ করলাম। চিঠিতে আমি খোলাখুলিভাবেই তাকে জানালাম যে ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার জন্য রেঞ্জ হিসেবে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে আমাদের দ্বীপটি প্রয়োজন।
মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদনের আগেই আমরা যাবতীয় প্রস্তুতিমূলক কাজ শেষ করে রেখেছিলাম। আমাদের কাজের ব্যাপারে ছোটখাটো কিছু প্রশ্ন উঠবে জানতাম। যেমন দ্বীপগুলোর পাশে মাছ ধরা হয়, সেটা রেঞ্জ হিসেবে ব্যবহৃত হলে জেলেদের মাছ ধরা বন্ধ হয়ে যাবে। এছাড়া কচ্ছপদের চলাচলেও বিঘ্ন সৃষ্টি হবে। তাছাড়া দ্বীপের মূল্য তো চাওয়া হতেই পারে। যাহোক, ১০ দিনের মাথায় মুখ্যমন্ত্রীর সংগে দেখা করার সুযোগ পাওয়া গেল। আমি ইতিপূর্বেই মুখ্যমন্ত্রী বিজু পাটনায়েক সম্পর্কে মোটামুটি জানতাম। বিশেষ করে তার পাইলট জীবন ও ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট সুকর্নের সংগে তার বন্ধুত্বের কথা আগেই শুনেছিলাম।
মেজর জেনারেল কে, এন, সিং এবং সালবানকে সংগে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর চেম্বারে ঢুকতেই তিনি আমাদের সাদরে অভ্যর্থনা জানালেন। তিনি প্রচ্ছন্ন উচ্ছ্বাসে বললেন, কালাম, আমার বন্ধু, ড. সারাভাই থেকে এপর্যন্ত আমি সব সময় তোমার কাজের খোঁজ খবর রাখি। তুমি যা চাইবে আমি তাই দেব।
আমাদের সামনেই তিনি উড়িষ্যার চারটি দ্বীপই ডিআরডিও তাদের পরীক্ষার কাজের জন্য রেঞ্জ হিসেবে ব্যবহার করতে পারবে–এই মর্মে সরকারী অনুমোদনপত্রে সই করে দিলেন। তিনি আমার দিকে চেয়ে বললেন, কালাম, তুমি আমার কাছে যা চাইলে তা তোমাকে দিয়েছি। আমি জানি তুমি এর সদ্ব্যবহার করবে। তোমার মিশন–এই মিসাইল প্রোগ্রাম এখন দেশের জন্য সাংঘাতিক জরুরী হয়ে পড়েছে। তোমার কাজে লাগবে উড়িষ্যার এমন সব কিছু এখন থেকে তোমার। একথা বলে তিনি গভীর আবেগে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন। তিনি আব্দারের স্বরে বললেন, কালাম, আমাকে তোমার প্রতিশ্রুতি দিতেই হবে আর এ জাতিকে আশ্বস্ত করতেই হবে যে তুমি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ভারতকে উপহার দেবে। যেদিন ভারত নিজে আইসিবিএম তৈরী করবে সেদিন একজন ভারতীয় হিসেবে আমি নিজেকে অনেক বেশী শক্তিশালী মনে করবো।
কয়েক মুহূর্ত আমিসহ সবাই নিশ্চুপ হয়ে গেলাম। আমি জানতাম বিজু পাটনায়েক অসাধারণ ব্যক্তিত্বসম্পন্ন এবং জনপ্রিয় একজন নেতা। দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়েই তিনি রাজনীতিতে নেমেছিলেন।
আমি তার চোখের দিকে সরাসরি দৃষ্টি রেখে বললাম, স্যার, আপনার উদ্দেশ্য পূরণের জন্য অবশ্যই আমরা কাজ করব। আমি আপনার ইচ্ছের কথা দিল্লিকে জানাব।
যে সময়ের কথা বলছি তখন থেকে ৪০ বছর আগে অসমসাহসী বিজু পাটনায়েক কলিঙ্গ এয়ারওয়েজের পাইলট ছিলেন। ওই সময়ে প্রেসিডেন্ট সুকর্নের সংগে তার পরিচয় হয়। সুকর্নের স্ত্রী সবেমাত্র একটি কন্যাসন্তান প্রসব করেছেন।
সুকর্ণ পরিবার কন্যার জন্য ভালো একটি নাম খুঁজছেন। এমন সময় বিজুদা ওই পরিবারের সংগে দেখা করেন।
সুকর্ন এই সমস্যার সমাধানের ভার দিলেন ভারতীয় নাগরিক বিজুকে। বিজু পাটনায়েক দেখলেন আকাশে ঘন মেঘ জমেছে। এই মেঘগুলো যেন নবজাতককে স্বাগত জানাবার জন্যই হাজির হয়েছে। তিনি মেঘের সংস্কৃত প্রতিশব্দের সংগে কন্যার নাম দিলেন মেঘবতী।
সুকর্নের মেয়ের নাম মেঘবতীই স্থির হল। আর এভাবেই ১০০ভাগ মুসলিম দেশের প্রধান নেতার কন্যাশিশু একটি হিন্দু নামে পরিচিত হয়ে উঠলো। যারা মহান, যারা বড়, তাদের কাছে ধর্ম হলো বন্ধুত্ব সৃষ্টির এক মধুর পন্থা। ক্ষুদ্র মানসিকতার লোকরাই ধর্মকে হানাহানির অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে।
বহু বছর পরে অনেক রাজনীতির চড়াই উত্রাই পেরিয়ে সেদিনের সেই মেঘবতী সুকর্ণপুত্রী প্রথমে ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং পরে ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন।
আমার বন্ধুরা, আমাদের এই সকল অনন্য রাজনীতিবিদরা দেশ থেকে, সমাজ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে দেখে আমাদের বিলাপ করা উচিত। যে ভারতের আজ বিশ্বে নেতৃত্ব দেবার কথা ছিল আজও সেই ভারত অন্ধ বিবর থেকে বেরিয়ে আসতে পারছে না। অথচ এদেশের রয়েছে ১শ কোটি মানুষের বিপুল জনশক্তি, অসংখ্য সম্ভাবনাময় শিল্প-কারখানা, রয়েছে অসংখ্য বিজ্ঞানী। এমনকি পারমাণবিক শক্তিধর দেশ হওয়া সত্ত্বেও ভারতকে যেভাবে উচিত ছিল সেভাবে উন্নত দেশগুলো বিবেচনা করছে না। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারতকে যেভাবে দমিয়ে রাখার চেষ্টা হয়েছে তা পৃথিবীর কোন দেশের ক্ষেত্রে হয়নি।
পোখরানে দ্বিতীয় দফা পারমাণবিক পরীক্ষার পর পশ্চিমা দেশগুলো ভারত ও পাকিস্তানকে এক পাল্লায় মাপা শুরু করলো। এতে কি আমাদের জাতীয়ভাবে প্রতিবাদ করা উচিত নয়। আমাদের কি বিশ্ব সম্প্রদায়ের সামনে বিক্ষোভ করে বলা উচিত নয় যে পাকিস্তানের বাইরেও আমাদের চ্যালেঞ্জ করার ক্ষমতা রয়েছে; আমরা পাকিস্তানের চেয়ে বহুগুণে সবদিক থেকে উন্নত এবং স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধাশীল?
২০০২ সালের মার্চ মাসে আন্না ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়ে শেষ বর্ষের প্রায় ১শ ছাত্রের মধ্যে ক্লাস নিচ্ছিলাম। প্রযুক্তি ও তার ব্যাপ্তি এ বিষয়ে পর দশদিন ক্লাস নিলাম। শেষের দিনে প্রযুক্তির দ্বিমুখী ব্যবহার বিষয়ে শিক্ষার্থীদের সংগে বিস্তারিত আলোচনা শুরু হল। ওদের মধ্য থেকে একটি ছাত্র দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো, স্যার, সম্প্রতি আমি ড. অমর্ত্য সেনের একটি বিবৃতি পড়েছি যাতে তিনি বলেছেন ১৯৯৮ সালের মে মাসে পারমাণবিক পরীক্ষা চালানোয় ভারতের ভাবমূর্তি ক্ষুণ হয়েছে। অমর্ত্য সেন নোবেল বিজয়ী একজন বিরাট অর্থনীতিবিদ। উন্নয়ন পরিকল্পনাকারী হিসেবে সারাবিশ্বে তাকে শ্রদ্ধার চোখে দেখা হয়। তার মত একজন ব্যক্তির এ মন্তব্য মোটেই উপেক্ষা করা যায় না। তার এ মন্তব্য সম্পর্কে আপনার দৃষ্টিভঙ্গি কেমন?
আমি বললাম, অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে আমি ড. অমর্ত্য সেনের বিশালত্বকে শ্রদ্ধা করি এবং প্রাথমিক শিক্ষাকে দ্রুত অগ্রসর করার ক্ষেত্রে তিনি সরকারকে যে পরামর্শ দিয়েছেন আমি তার অকুণ্ঠ প্রশংসা করি। ঠিক একইভাবে আমার মনে হয় ড. অমর্ত্য সেন ভারতকে দেখেছেন পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে। তার মতে ভারতের উচিত সব দেশের সংগে সদ্ভাব বজায় রাখা যাতে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটে। আমি তার সংগে একমত, তবে একই সংগে অতীতের ভারতের পূর্ব অভিজ্ঞতাও মন থেকে মুছে ফেলতে পারি না। পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরু জাতিসংঘে পরমাণু অস্ত্র বিস্তারের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়েছিলেন এবং সমস্ত দেশের পারমাণবিক অস্ত্র বিলুপ্ত করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। এর ফলাফল কি হয়েছিল আমরা তা দেখেছি। আমরা দেখেছি তার এ জানে কোন দেশ সাড়া দেয়নি। আমেরিকার মাটিতে এখন ১০ হাজার পারমাণবিক ওয়ারহেড, রাশিয়ার মাটিতে আরও ১০ হাজার। এছাড়া ব্রিটেন, চীন, ফ্রান্স, পাকিস্তানসহ আরও বহু দেশে রয়েছে হাজার হাজার ওয়ারহেড। STSART-II এবং প্রত্যেকের ২ হাজার ওয়ারহেড ধ্বংস করার ব্যাপারে রাশিয়া ও আমেরিকার মধ্যে যে চুক্তি হয়েছিল তা থেকেও তারা পিছিয়ে এসেছে।
ওয়ারহেড হ্রাসের ব্যাপারে কেউ এখন পর্যন্ত কোন জোরালো পদক্ষেপ নেয়নি। আমাদের মনে রাখা দরকার যে আমাদের পার্শ্ববর্তী দুটি দেশ ক্ষেপণাস্ত্র ও পারমাণবিক অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে আছে। এসব দেখেও কি ভারত নিরব দর্শক হয়ে বসে থাকবে?
গত ৩ হাজার বছর ধরে ব্রিটিশ, ফরাসী, ডাচ, পর্তুগীজসহ আরও বহু জাতির দ্বারা ভারত উপনিবেশিকতার শিকার হয়েছে।
এদের কেউ এসেছে তাদের রাজ্যসীমা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে, কেউ এসেছে ধর্মীয় মতাদর্শ সম্প্রসারণের ফিকির নিয়ে, আবার কেউ এসেছে ভারতবর্ষের সম্পদ চুরি ও লুটপাট করে নিয়ে যাবার উদ্দেশ্যে। কিন্তু ভারত কেন কোনদিন অন্যদেশে উপনিবেশ গড়েনি? এর কারণ কি এটা যে আমাদের রাজ্য শাসকরা সাহসী ছিলেন না? না। এর মূলকারণ ভারতবাসী চিরকালই একটি সহিষ্ণু জাতি। তারা কোন কালেই অন্য দেশে অভিযান চালিয়ে পরভূমে উপনিবেশ গড়তে চায়নি।
কিন্তু সুদীর্ঘ সংগ্রামের পর যখন আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি, যখন ভারতের মানুষ এক হয়েছে, যখন আমরা একটি ভৌগলিক সীমারেখা সৃষ্টি করতে পেরেছি তখন শুধুমাত্র অর্থনৈতিক উন্নয়নকেই কি আমাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য হিসেবে স্থির করতে পারি। আমাদের এদেশের শক্তি প্রদর্শনের একটিই পথ খোলা আছে। সেটি হল আমাদের প্রমাণ করতে হবে আত্মরক্ষার পূর্ণ সামর্থ্য আমাদের রয়েছে।
বলবান চিরকাল বলবানকেই সম্মান করে, দুর্বলকে নয়। রাষ্ট্রীয় শক্তি মানেই সামরিক সক্ষমতা ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সিদ্ধান্ত ও পলিসি সেই সব দেশের সেবায় নিয়োজিত যারা পারমাণবিক অস্ত্রধারী দেশ। ইতিপূর্বে কেন আমাদের নিরাপত্তা পরিষদের আসন দেওয়া হয়নি আর কেনই বা এখন বিভিন্ন দেশ ভারতকে নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য বানানোর জন্য নিরন্তর সুপারিশ করে যাচ্ছে?
এ প্রসংগে আরেকটা ঘটনার কথা বলি। আমার বন্ধু অ্যাডমিরাল এল, রামদাস, নৌ-বাহিনীর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যিনি অবসর নিয়েছেন, তিনি তার সমর্থকদের একটি দল নিয়ে ১৯৯৮ সালের মে মাসে ভারতের পারমাণবিক পরীক্ষার বিরুদ্ধে পার্লামেন্টের সামনে বিক্ষোভ করতে চেয়েছিলেন। আমি তাকে বলেছিলাম তারা যেন ভারতীয় পার্লামেন্ট ঘেরাও করার আগে হোয়াইট হাউস এবং ক্রেমলিন ঘেরাও করেন, সেখানে বিপুল পরিমাণ পারমাণবিক ওয়ারহেড ও আইসিবিএমের পাহাড় গড়ে তোলা হয়েছে।
আমি আমার দেশের জনগণকে জেগে উঠতে বলি। আমার এ আহ্বান সমস্ত ভারতবাসীর প্রতি। তারা যেন তাদের সর্বোচ্চ শক্তি-সামর্থ্য দিয়ে উঠে দাঁড়ায়। কোন শক্তি একটি জাতির উত্থান অথবা পতন ঘটায় এবং কোন বিষয়গুলো একটি দেশকে শক্তিশালী করে গড়ে তোলে? এটা আমাদের ভাবতে হবে।
আমার বিবেচনায় তিনটি বিষয় একটি জাতিকে সুদৃঢ় ও সংহত করে : বিগত সাফল্যের গৌরব, একতাবদ্ধতা এবং যৌথভাবে পদক্ষেপ গ্রহণের সক্ষমতা।
একটি জনগোষ্ঠী অথবা জাতিকে উন্নতির শীর্ষ চূড়ায় আরোহন করতে হলে অবশ্যই তাদের অতীতের মহান নায়কদের মনে রাখতে হবে; অতীতের গৌরবময় আন্দোলন ও বিজয়কে মনে রাখতে হবে। ব্রিটিশ জাতি যদি উন্নতির চরম শিখরে উঠে থাকে তাহলে তা সম্ভব হয়েছে লর্ড নেলসন অথবা ডিউক অব ওয়েলিংটনের মত নেতাদের গৌরবময় সাফল্য ধরে রাখার আকক্ষার কারণে। জাতীয়তাবোধের দৃষ্টান্ত দিতে গেলে জাপানের নাম এক নম্বরে উঠে আসে। জাপানীরা এক মানুষ, একদেশ, এক সংস্কৃতিতে বিশ্বাসী একটি জাতি। শুধু এই জাতীয়তাবোধের কারণেই তারা একটি চরম অপমানজনক সামরিক পরাজয়কে আজ অর্থনৈতিক বিজয় হিসেবে রূপ দিতে পেরেছে।
পৃথিবীতে যত জাতিই উন্নতি লাভ করেছে তাদের সবাই একটি লক্ষ্যে সব সময় সচেতন থেকেছে। জাপানের মত জার্মানিদের মানুষও তাদের লক্ষ্যে অবিচল ছিল। মাত্র তিন দশকের মধ্যে জার্মানি দুদুবার ধ্বংস হয়েছে।
কিন্তু জার্মানদের উন্নতির লক্ষ্য থেকে তারা সরে আসেনি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভস্মাবশেষ থেকে জার্মানি আবার অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক শক্তিশালী দেশ হিসেবে উত্থিত হয়েছে। জার্মানি যদি এত বিপদ কাটিয়ে উন্নত দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারে তাহলে ভারত পারবে না কেন?
ভারতের দুর্ভাগ্য, ইতিহাস ও ঐতিহ্যের শক্তি ভারতবাসীকে তাদের অতীত সহস্রাব্দের গৌরবময় ইতিহাসকে তুলে আনবার মত সুযোগ সন্ধানী চেতনা দেয়নি। গত পঞ্চাশ বছরে তাদের ভেতরে ঐতিহাসিক চেতনা কেন্দ্রীভূত করার উল্লেখযোগ্য কোন প্রচেষ্টা করা হয়নি।
হাইস্কুলে ভর্তি হবার পর থেকে গত ৭০ বছর ধরে আমাদের দেশের বিভিন্ন ধর্মের মৌলিক শিক্ষা গ্রহণের সৌভাগ্য আমার হয়েছে। এর মাধ্যমে আমি একটা বিষয় বুঝতে পেরেছি যেকোন ধর্মেরই মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হলো মানুষের আত্মিক উন্নয়ন সাধন করা।
বস্তুত, আমাদের বুঝতে হবে আমাদের আধ্যাত্মিক চেতনা থেকেই ভারতে ধর্ম নিরপেক্ষতার ভিত্তি গড়তে হবে। কারণ জাতীয় লক্ষ্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে আমাদের জাতীয় চেতনা জাগ্রত করা প্রয়োজন। এজন্য ধর্মের সমন্বিত ও ধর্মীয় সহিষ্ণুতা দিয়ে ধর্ম নিরপেক্ষ এক একতাবদ্ধ সমাজ গড়তে হবে। আমরা যদি অতীতের গৌরবময় ঐতিহ্যকে ধারণ না করে ইতিহাসের দিকে না তাকাই, যদি অনিবার্য সাফল্যের বিশ্বাস নিয়ে ভবিষ্যতের দিকে না তাকাই তাহলে হতাশা, দুঃখ, অভাব আর নৈরাশ্য ছাড়া আমাদের জন্য আর কি অপেক্ষা করতে পারে?
ভারতের মূলসংস্কৃতি সময়কে অতিক্রম করেছে। ইসলামের আবির্ভাবে এ সংস্কৃতি সমৃদ্ধ হয়েছে। খ্রিস্ট ধর্মের আগমনে এ সংস্কৃতি সমৃদ্ধ হয়েছে। কেরালায় বসবাসরত বহু পূর্বে আসা সিরিয়ার খ্রিস্টানরা অত্যন্ত সম্ভ্রমের সংগে ভারতীয় সংস্কৃতিকে গ্রহণ করেছে।
তাদের বিবাহিত নারীরা মঙ্গলসূত্র পরার কারণে, তাদের পুরুষেরা কেরালা স্টাইলে ধুতি পরার কারণে কি তাদের খ্রিস্টানত্ত্ব খাটো হয়ে গেছে? কেরালার মুখ্যমন্ত্রী এ.কে, অ্যান্টনি নব্য তান্ত্রিক নন কারণ তিনি এবং তার সম্প্রদায়ের লোকজন এখন কেরালার সংস্কৃতির অংশ হয়ে গেছেন। খ্রিস্টান হওয়ায় তিনি সেখানে ম্লেচ্ছ হয়ে যাননি। বরং এটা তার ভারতীয়ত্বে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এ আর রহমান একজন মুসলমান হতে পারেন কিন্তু তিনি যখন গেয়ে ওঠেন বন্দে মাতরম্ তখন তার সে সংগীত ভারতের প্রত্যেকটি মানুষের মনে অনুরণনের সৃষ্টি করে, তা তিনি যে ধর্মেরই হোন না কেন।
কিন্তু আমাদের একতাবদ্ধতার চেতনা ও লক্ষ্য অর্জনের চেতনার ক্ষেত্রে সেই সকল মতাবলম্বীরা সবচে বড় বাধা যারা মানুষের মধ্যে বিভেদ ঘটাতে চায়। প্রত্যেকটি নাগরিককে সমান নিরাপত্তার ছত্রছায়ায় রাখার অঙ্গীকার নিয়ে ভারতের সংবিধান প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু এখন ধর্মীয় চেতনার অপব্যবহার করে গণমানুষে বিভাজন তৈরীর যে চেষ্টা লক্ষ্য করা যাচ্ছে তা সত্যিই উদ্বেগজনক। কিন্তু কেন আমরা সংস্কৃতিকে (ধর্মকে নয়) আমাদের ঐতিহ্যের খাতিরে ধারণ করে একতাবদ্ধ হচ্ছি না? বিভেদ ভুলে যাবার সময় এখন আমাদের সামনে। এখন আমাদের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত কী করে আমরা এক হতে পারব তার উপায় খুঁজে বের করা।
আমাদের গৌরবময় অতীত আমাদের সংগে প্রবহমান। এটি আমাদের শুদ্ধ বিশ্বাসে পরিচর্যা করতে হবে। রাজনৈতিক হীনস্বার্থ চরিতার্থ করতে গিয়ে তা ধ্বংস করলে চলবে না।
উন্নত ভারতের লক্ষ্য শহরে শহরে এ দেশটা ছেয়ে ফেলা নয়। বরং প্রযুক্তিকেন্দ্রীক টেলিমেডিসিন, টেলিএডুকেশন আর ই-কমার্স চালুর মাধ্যমে এ গ্রামগুলোকে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির আওতায় নিয়ে আসা।
কৃষিবিজ্ঞান ও শিল্পোন্নয়ন এবং জৈবপ্রযুক্তি ও জৈববিজ্ঞানের সমন্বয় থেকে নতুন ভারতের উদ্ভব হবে। সে ভারতে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এই চেতনা ধারণ করে তাদের কাজ করবে যে ব্যক্তি ও রাজনৈতিক দলের স্বার্থের চেয়ে জাতীয় স্বার্থ অনেক বড়। এতে গ্রাম ও শহরের বৈষম্য হ্রাস পাবে। গ্রামে আধুনিক তথ্য ও প্রযুক্তি সুবিধা পৌঁছে গেলে শহরপ্রিয় মানুষও গ্রামের উন্নত দ্রব্য সামগ্রীর জন্য গ্রামের দিকে মনোযোগী হবে।
এই লক্ষ্য অর্জনে এখন সবচেয়ে বড় প্রয়োজন রাজনৈতিক নেতৃত্বে গঠনমূলক পরিবর্তন আনা এবং উন্নয়নকামী রাজনীতিক তৈরী করা যাদের ভবিষ্যত উন্নয়নের স্বপ্ন রয়েছে। ভারতে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের, বিভিন্ন ধর্মের প্রায় ১শ কোটি লোক বাস করে। বিচিত্র ভৌগলিক সমাজ কাঠামো ও বিভিন্ন দর্শনে বিশ্বাসী এখানকার মানুষ। কিন্তু এটা আমাদের জন্য নেতিবাচক নয়। এই বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষেই এক অসাম্প্রদায়িক একতাবদ্ধ ভারত গড়ে তুলতে হবে।