দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে। চোখের পাতা কেউ নামিয়ে নিচ্ছে না। এটা যেন একটা খেলা, চোখের পাতা যে আগে নামিয়ে নেবে সে হেরে যাবে।
পরাজিত হল বারসাত। সে চোখ নামিয়ে নিয়ে কোমল গলায় বলল, কেমন আছ ঐ?
ঐ মানে?
ঐন্দ্রিলাকে সংক্ষেপ করে ঐ বললাম।
মীরু বলল, তোমার কি হয়েছে? তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে তুমি এইডস-এর রুগী। সপ্তাহ খানেকের মধ্যে মারা যাবে। এত দিন কোথায় ছিলে?
বারসাত বলল, বাহ তুমি তো অবিকল বনলতা সেনের মত প্রশ্ন করলে— এতদিন কোথায় ছিলেন? এতদিন আমি ছিলাম বিম্বিষার অশোকের ধূসর জগতে।
মীরু বিরক্ত গলায় বলল, ধোয়াটে ভাবে কথা বলা বন্ধ কর। সরাসরি কথা বল। তুমি কোথায় ছিলে?
বারসাত সিগারেট ধরাতে ধরাতে বলল, সিকোয়েন্স বাই সিকোয়েন্স বলি। সিকোয়েন্স ওয়ান-– কাজীর অফিস থেকে আমি চলে গেলাম মামার। বাগান বাড়িতে। বাগান বাড়িটা কালিয়াকৈরে। বাগানবাড়ির নাম পদ্ম। সিকোয়েন্স টু বাগান বাড়িতে পা দিয়েই আমি জ্বরে পড়লাম। যাকে বলে উল্টা জ্বর।
উল্টা জ্বর মানে?
যে জ্বরে পৃথিবী উল্টা হয়ে যায় সেই জ্বরকে বলে উল্টা জ্বর। আমার পৃথিবী গেল উল্টা হয়ে। তোমার কাছে অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে, কবিতাগুলি পর্যন্ত আমার মাথায় উল্টা করে আসতে শুরু করেছিল। বলা যেতে পারে আমি মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছি।
মীরু বলল, মৃত্যুর মুখ থেকে পুরোপুরি ফিরে এসেছ, এমন বলা ঠিক হবে না। তেমাকে দেখে মনে হচ্ছে তুমি এখনও মৃত্যুর মুখে বাস করছ।
আমরা সবাই তাই করছি মীরু। আমরা সবাই মৃত্যুর মুখে বাস করছি।
ফিলসফি কপচাবে না।
বারসাত হাসতে হাসতে বলল, ফিলসফি তো কপচাতেই হবে। মীরু তুমি ভুলে গেছ আমি ফিলসফির ছাত্র। খুবই খারাপ ছাত্র। তাকে কি? বিষয় তো ফিলসফি।
তোমার স্বাস্থ্য যে কতটা খারাপ হয়েছে তাকি তুমি জানো? তোমাকে টুথপিকের মত দেখাচ্ছে। শরীর কি এখন ঠিক হয়েছে?
হুঁ।
আমার তো মনে হয় না তোমার শরীর ঠিক হয়েছে। তুমি সিগারেট ধরিয়ে দুটা টান দিয়ে সিগারেট ফেলে দিলে। শরীর ঠিক থাকলে সিগারেট ফেলে দিতে না। তুমি নিঃশ্বাস নিচ্ছ হা করে। একমাত্র মাছেরাই ডাঙ্গায় এইভাবে নিঃশ্বাস নেয়। তুমি তো মাছ না।
বারসাত হাসল।
মীরু বলল, তোমার হাসিও বদলে গেছে। হাসির মধ্যেও অসুস্থ ভাৰ চলে এসেছে। হাসিতে কোন প্রাণ নেই।
বারসাত বলল, চা খাবে?
মীরু বলল, হ্যাঁ খাব।
বারসাত বলল, আমার চৌকির নিচে কেরোসিনের চুলা আছে। চিনি, চা পাতা সবই আছে। শুধু দুধ নেই। দুকাপ লিকার চা বানাও। লিকার চায়ে না কি এন্টি-অক্সিডেন্ট থাকে। শরীরে এন্টি-অক্সিডেন্ট ঢুকিয়ে দেখি কিছু করা যায় কি-না।
মীরু চা বানাতে বসল। বারসাত দেয়ালে হেলান দিয়ে চৌকিতে পা ছড়িয়ে বসেছে। সে কৌতূহলী চোখে মীরুর চা বানানো দেখছে।
মীরু বলল, ঐ দিন আমি কেন যথাসময়ে উপস্থিত হইনি তা কি তুমি জানতে চাও না?
না।
জানতে চাও না কেন?
বারসাত শান্ত গলায় বলল, জানতে ইচ্ছা করছে না।
ইচ্ছা করছে না কেন?
ইচ্ছা করছে না কারণ আমি জানি তুমি কেন আসনি এটা শোনার পর। আমার মন খারাপ হয়ে যাবে। এম্নিতেই শরীর খারাপ তার সঙ্গে মন খারাপ যুক্ত হলে আর দেখতে হবে না।
মীরু বলল, তোমার ধারণা আমি কি জন্যে আসিনি?
তুমি আসনি কারণ শেষ মুহূর্তে তোমার মনে হয়েছে কাজটা ঠিক হচ্ছে। বিয়ে কোন ছেলেখেলা ব্যাপার না। হুট করে বারসাত আলিকে বিয়ে করা যায় না। বিয়ের পর স্ত্রীকে কোথায় নিয়ে তুলবে যে লোক এটা জানে। না তাকে বিয়ে করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
মীরুর চা বানানো হয়ে গেছে। সে এক কাপ চা বারসাতকে দিয়ে। নিজে এক কাপ নিয়ে খাটের উপর আরাম করে বসতে বসতে বলল, এ রকম কিছু যদি আমার মনে আসত তাহলে তোমাকে জানাতাম। না। জানিয়ে ডুব দিতাম না। আমার স্বভাবের মধ্যে ডুব দেয়া ব্যাপারটা নেই।
বারসাত চায়ে চুমুক দিয়ে বলল, এটা ঠিক। তুমি ডুবুরি কন্যা না। তুমি ভাসন্ত কন্যা।
মীরু বলল, আমি ঐ দিন সময় মত আসিনি কারণ বাবা অসুস্থ ছিলেন। তাঁর হার্ট এটাক হয়েছিল। তাকে নিয়ে হাসপাতালে ছিলাম। তবে আমি বিকেল সাড়ে পাঁচটায় কাজি অফিসে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে। তোমার মেসে গিয়েছিলাম।
সত্যি?
হ্যাঁ সত্যি। তুমি খুব ভাল করেই জানো এটা সত্যি। আমি তোমার সঙ্গে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম কখনো তোমার সঙ্গে মিথ্যা কথা বলব না।
সব সময় সত্যি কথা বললে জীবন হয়ে যাবে ডিসটিলড ওয়াটারের মত। সিদ্ধ করা পানি টেস্টলেস।
হোক টেস্টলেস। প্রতিজ্ঞা যখন করেছি প্রতিজ্ঞা রাখব।
বারসাত গম্ভীর গলায় বলল, প্রতিজ্ঞাবতী নাম আজ আমি তোমাকে দিলাম।
মীরু উঠে দাঁড়াল। বারসাত বলল, তুমি চলে যাচ্ছ না কি?
মীরু বলল, হ্যাঁ যাচ্ছি। বিশেষ কিছু বলতে চাইলে পাঁচ মিনিটের জন্যে বসতে পারি। বিশেষ কিছু বলার আছে?
আছে।
বল। আমি বসলাম।
বারসাত বলল, আগামীকাল তোমার সময় হবে? বেশিক্ষণ লাগবে না। এই ধর আধঘণ্টা। বেশি হলে পঁয়তাল্লিশ মিনিট।
না আগামীকাল সময় হবে না। সারাদিন আমি গাজীপুরে থাকব। শালবনে ইউনিভার্সিটি পিকনিক।
আমার ধারণা ছিল তুমি ইউনিভার্সিটি থেকে পাস করে বের হয়ে গেছ।
ধারণা ঠিকই আছে। পাস করে বের হবার পরেও ল্যাজ আটকে আছে। পিকনিক যাবার দাওয়াত পেয়েছি। তিনশ টাকা চাঁদা দিয়েছি। চাঁদার টাকা তোলার জন্যে হলেও পিকনিকে যেতে হবে। পঁয়তাল্লিশ মিনিট সময় তোমার কি জন্যে দরকার?
কাজি অফিসের ঝামেলাটা সেরে ফেলার জন্যে দরকার।
মীরু বলল, পঁয়তাল্লিশ মিনিট সময় এখন দিতে পারি।
এখন?
হ্যাঁ এখন। আমি যতদূর জানি কাজি অফিসে নটা-পাঁচটা অফিস টাইম বলে কিছু নেই। রাতেও সেখানে বিয়ে হয়।
বারসাত বিস্ময়মাখা গলায় বলল, এখন যাবে?
মীরু বলল, হ্যাঁ যাব। বিয়ে রেজিষ্ট্রেশনের জন্যে ফী লাগে। সেই টাকা। কি আছে?
বারসাত কিছু বলল না। অদ্ভুত চোখে তাকিয়ে রইল। যেন তার মধ্যে ঘোর লেগে গেছে। মাথায় কিছু ঢুকছে না।
মীরু বলল, তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে তুমি হঠাৎ গভীর সমুদ্রে পড়েছ। কোন সমস্যা?
বারসাত বিড়বিড় করে বলল, বিয়ের দিন পরব বলে যে পাঞ্জাবি ঠিক করে রেখেছিলাম সেই পাঞ্জাবি কালিয়াকৈরে ফেলে এসেছি। এটাই হল সমস্যা। গভীর সমুদ্রে পড়ার মতই সমস্যা।
নতুন পাঞ্জাবি পরাটা কি খুব ইম্পর্টেন্ট?
হ্যাঁ ইম্পর্টেন্ট। আমি গরিব মানুষ তারপরেও আঠারশ টাকা খরচ করে পাঞ্জাবিটা কিনেছিলাম। বিয়েতে পরব বলে কিনেছিলাম। বিয়ে তো আমি তিন-চারবার করব না। একবারই করব। তুমি হাসছ কেন?
তুমি সত্যি সত্যি পাঞ্জাবির শোকে কাতর হয়ে পড়েছ এটা দেখে হাসছি। আচ্ছা দেখ তো আমার শাড়িটা কেমন? সুন্দর না? সাদার ওপর লাল সবুজের খেলা। শাড়িটা কি চিনতে পারছ?
পারছি। এটাই তো তোমার বিয়ের শাড়ি।
হ্যাঁ।
তার মানে কি দাঁড়ায়? তুমি কি ইচ্ছা করে আজ এই শাড়ি পরে এসেছ?
হুঁ। তুমি জানতে আজই কাজি অফিসে যাওয়া হবে?
হুঁ।
দুজন আবারো দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে। শুরু হয়েছে তাকিয়ে থাকার খেলা। কেউ আগে চোখ নামাবে না। যে নামাবে সে হেরে যাবে। তাকিয়ে থাকা খেলায় কথাও বলা যায় না। যে আগে কথা বলবে সে হেরে যাবে।
প্রথম হার মানল বারসাত। সে চোখ নামিয়ে নিল এবং কথাও বলল, প্রায় ফিসফিস করে বলল, মীরু তোমাকে নিয়ে আমার মাথার মধ্যে একটা। কবিতা তৈরি হয়েছে।
কি কবিতা?
কবিতাও ঠিক না। ছড়া। হালকা টাইপ বিষয়। শুনলে তুমি হয়তোবা রাগ করবে।
রাগ করব না। শুনি।
ঐ
ও আমার সই
তুমি গেলা কই
ঐ ঐ ঐ
চিকা চিকা ভুম ভুম ভুম।
মীরু গম্ভীর গলায় বলল, চিকা চিকা ভুম ভুম মানে কি?
বারসাত বলল, কোন মানে নেই। এই লাইনটা ফুর্তির। বারসাত হাত পা নেড়ে খুবই মজা করে কবিতা আবৃত্তি করছে। মীরু হাসছে। হাসির বেগ ক্রমেই বাড়ছে। সে কিছুক্ষণ হাসি আটকানোর চেষ্টা করল। শেষে চেষ্টা বাদ দিল।
মেসের দুএকজন বোর্ডার উঁকি দিয়ে দেখছে। দেখুক। মীরু যদি এখন হাসতে হাসতে বারসাতের গায়ের ওপর পড়ে যায় তাহলেও কিছু যায়। আসে না। কারণ কিছুক্ষণের মধ্যেই তারা বিয়ে করবে। একজন স্ত্রী স্বামীর কথা শুনে হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়বে (স্বামীর ওপরই পড়বে। এতে লজ্জার কিছু নেই।)
মীরু বলল, দেরি করছ কেন। চল যাই।
বারসাত বলল, দুদিন পরে যাওয়া যাক। আজ বাদ থাক।
মীরু বলল, আজ বাদ থাকবে কেন?
বারসাত বলল, তুমি যেমন আগে ঠিক করে রাখা বিয়ের শাড়ি পরে বিয়ে করবে আমিও তাই করব। আমার ঠিক করে রাখা পাঞ্জাবিটা পরব।
মীরু বলল, পাঞ্জাবিটাই কি একমাত্র কারণ? আমার ধারণা পাঞ্জাবি ছাড়াও অন্য কারণ আছে।
বারসাত বলল, তোমার ধারণা ঠিক পাঞ্জাবি ছাড়াও আরেকটা কারণ আছে। সেই কারণটা তোমাকে বলব না।
বলবে না কেন?
যদি বলি তাহলে দেখা যাবে তুমি মত পাল্টে ফেলেছ। আমাকে বিয়ে করার ব্যাপারে তোমার আগ্রহ কমে গেছে।
কারণটা বল আমি শুনব।
বলব না।
মীরু কঠিন গলায় বলল, অবশ্যই বলবে। তুমি প্রতিজ্ঞা করেছিলে আমার কাছে কিছু গোপন করব না।
বারসাত বলল, আমরা প্রতিজ্ঞা করেছিলাম বিয়ের পর কেউ কারোর কাছে কিছু গোপন করব না। আমাদের এখনো বিয়ে হয়নি। আচ্ছা আচ্ছা। এত মন খারাপ করতে হবে না বলছি–বিয়ের রেজিস্ট্রেশনের টাকাটা আমার সঙ্গে নেই। টাকাটা খরচ করে ফেলেছি। ডাক্তার-ফাক্তার ওষুধপত্র। এই টেস্ট, সেই টেস্ট।
এই সামান্য কথাটা বলতে অস্বস্তি বোধ করছিলে কেন?
বারসাত বলল, একটা ছেলে বিয়ে করতে যাচ্ছে তার হাতে কোন টাকা-পয়সা নেই এটা কোন সামান্য ব্যাপার না। যাই হোক পরশু আঠারো তারিখ সকাল এগারোটায় কাজি অফিসে চলে আসবে।
পরশু?
হ্যাঁ পরশু। সকাল এগারোটায়। বিয়ের পর পর তবারুক হিসেবে মিনি সিঙাড়া খাওয়ানো হবে। তারপর আমরা চলে যাব বাগানবাড়ি পদ্মতে। আগে থেকে বেহালাবাদক ঠিক করা থাকবে। আমরা হাত ধরাধরি করে বাড়িতে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে তারা বাজাবে—
লীলাবালি লীলাবালি
বড় যুবতী কন্যা কি দিয়া সাজাইবাম তোরে।
মীরু তাকিয়ে আছে। উৎসাহ এবং আনন্দে বারসাত ঝলমল করছে। তার চেহারায় যে অসুস্থ ভাব ছিল সেটা এখন আর নেই। বারসাতের ঝলমলে মুখ দেখতে ভাল লাগছে।
বারসাত বলল, পদ্ম নামের ঐ বাড়িতে যে ছবির একটা এক্সিবিশনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে এটা কি তুমি জানো?
আমার কি জানার কথা?
তোমার জানার কথা না। কারণ এটা রাখা হয়েছিল তোমাকে চমকে দেবার জন্যে। সারপ্রাইজ আইটেম। আমি বিভিন্ন সময়ে তোমার যে কয়টা স্কেচ করেছি সবগুলির একটা প্রদর্শনী। প্রদর্শনীর নাম এ এবং ঐ। দর্শক মাত্র দুজন। তুমি আর আমি। আমি এ তুমি ঐ। ছবির সংখ্যা কত শুনলে তুমি আঁৎকে উঠবে। ছবির সংখ্যা একশ সাত। ওয়ান জিরো সেভেন।
মীরু বিস্মত হয়ে বলল, বল কি? এত ছবি কখন এঁকেছ?
যখনই তোমার সঙ্গে দেখা হয়েছে— মেসে ফিরে সঙ্গে সঙ্গে একটা ছবি এঁকে ফেলেছি।
সত্যি?
তোমার কি মনে হয় মিথ্যা?
না মিথ্যা মনে হয় না।
মীরু আবারও বারসাতের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। চোখে চোখে তাকিয়ে থাকার পুরানো খেলা। এই খেলায় সে আজ হেরে যাবে কারণ তার চোখে পানি জমতে শুরু করেছে। চোখ ভর্তি পানি নিয়ে নিষ্পলক তাকিয়ে থাকা যায় না।
বারসাত বিস্মিত হয়ে বলল, কাঁদছ কেন ঐ?
মীরু বলল, তোমার সঙ্গে আমার আরো একটা চুক্তি হয়েছিল, সেই চুক্তির শর্ত ছিল আমি যদি কখনো কাঁদি তুমি জিজ্ঞেস করতে পারবে না কেন কাদছি। কান্নাটাই একটা লজ্জার ব্যাপার। কেন কাঁদছি তা ব্যাখ্যা করা আরো লজ্জার। এ রকম হা করে তাকিয়ে আছ কেন?
বারসাত বলল, আমি তোমার অনেক ছবি এঁকেছি, এখন লক্ষ্য করলাম সবচে সুন্দর ছবিই আঁকিনি। চোখে চকচক করছে অশ্রু এই ছবি। তুমি চুপ করে পাঁচটা মিনিট বস তো। জানালার দিকে তাকিয়ে বস। টেবিলের ড্রয়ারে দেখ কাগজ আছে পেনসিল আছে। দাও আমাকে। অবতীর ছবি একে দিচ্ছি।
মীরু সঙ্গে সঙ্গে উঠে দাঁড়াল। বারসাতের দিকে তাকিয়ে বলল, আমি পরশু এগারোটায় উপস্থিত থাকব। সঙ্গে করে একজন সাক্ষী নিয়ে আসব। একজনের খুব শখ আমার বিয়েতে সাক্ষী হিসেবে থাকা।
বারসাত বলল, মীরু তুমি চাইলেও এখন যেতে পারবে না। কারণ বৃষ্টি নেমেছে। ঝুমঝুমান্তি বৃষ্টি।
কি বৃষ্টি।
ঝুমঝুমান্তি বৃষ্টি। যে বৃষ্টিতে ঝুমঝুম করে নুপূরের শব্দ হয় সেই বৃষ্টির নাম ঝুমঝুমান্তি বৃষ্টি।
তুমি যে খুব সুন্দর করে কথা বল এটা কি তুমি জানো?
জানি।
বিয়ের পরেও কি তুমি এত সুন্দর করে কথা বলবে?
বুঝতে পারছি না।
মীরু বলল, তোমার শরীর যদি খুব বেশি খারাপ না লাগে তাহলে উঠ!
কোথায় যাব?
আমার ক্ষিধে লেগেছে। মিনি সিঙাড়া খাব।
এই বৃষ্টিতে?
গরম গরম সিঙাড়া তো বৃষ্টিতেই খেতে ভাল লাগবে।
সত্যি সত্যি ঝুমঝুমান্তি বৃষ্টি। আজ মনে হচ্ছে ঢাকা শহর বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যাবে। বারসাত ফুর্তিমাখা গলায় বলল, সিঙাড়া খাবার পর আমরা ঢাকা শহরে রিকশায় করে ঘুরে বেড়াব। বর্ষা যাপন করব।
মীরু বলল, আমার সঙ্গে টাকা আছে। সিঙাড়া খেয়ে আমরা কাজি অফিসে যাব। তুমি কি দুজন সাক্ষী জোগাড় করতে পারবে না? সিঙাড়ার কারিগরকে যদি বলি সে কি আমাদের বিয়েতে সাক্ষী হবে?
বারসাত বলল, OK. আজ আমাদের বিয়ে।
রিকশাওয়ালা তাকালো পেছন দিকে। বারসাত বলল, ভাই আপনার নামটা কি শুনি।
রিকশাওয়ালা বলল, আমার নাম মজনু।
বারসাত বলল, অসম্ভব সুন্দর নাম। লাইলী নামের মেয়েটির খুব পছন্দের নাম। ভাই শুনুন, আমরা দুজন আজ বিয়ে করতে যাচ্ছি। আপনি একজন সাক্ষী। অসুবিধা আছে?
রিকশাওয়ালা জবাব দিল না। বৃষ্টির পানিতে রাস্তা ডুবে গেছে। তাকে খানাখন্দ এড়িয়ে রিকশা চালাতে হচ্ছে। প্যাসেঞ্জারের খেজুরে আলাপ শোনার সময় নাই।
বারসাত বলল, মীরু আমাকে মনে করিয়ে দিও তো আমি আবহাওয়া অফিসে খোঁজ নেব আজ কত ইঞ্চি বৃষ্টি হল।
মীরু বলল, বৃষ্টি কত ইঞ্চি হয়েছে তার খোঁজের দরকার কি?
বারসাত বলল, আজ একটা বিশেষ দিন। আজ আমাদের বিয়ে। বিয়ের দিন কত ইঞ্চি বৃষ্টি হল আমরা জানব না?
মীরুদের বিয়ে হল না। প্রধান কাজি গিয়েছেন ফরিদপুরে মেয়ের বাড়িতে। দ্বিতীয় কাজি কোথায় যেন বিয়ে পড়াতে গেছেন। কখন ফিরবেন কেউ বলতে পারে না।