৫. ইহুদি সোসাইটি ও ইহুদি রাষ্ট্র

৫. ইহুদি সোসাইটি ও ইহুদি রাষ্ট্র

নেগোশিয়োরাম জেস্টিও (ব্যবসা ব্যবস্থাপনা) [২৫]

এই পুস্তিকা আইনজীবীদের উদ্দেশে লেখা নয়। যে কারণে রাষ্ট্রের আইনগত ভিত্তি সম্পর্কে আমার এই তত্ত্বে আমি অন্য অনেক বিষয়ের মতোই এ বিষয়টিও কেবল দ্রুততার সঙ্গে উল্লেখ করেছি।

তারপরও, আমাকে আমার নতুন তত্ত্বের ওপর কিছু চাপ দিতে হবে, যা এমনকি আইনশাস্ত্রে পারদর্শী লোকজনের সঙ্গে আলোচনার সময়ও বজায় রাখতে হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।

এখন সেকেলে হয়ে যাওয়া রুশোর (ফরাসি দার্শনিক জ্যঁ জ্যাক রুশো ) ধারণা অনুসারে রাষ্ট্র গঠিত হয় সামাজিক চুক্তির মাধ্যমে। রুশো মনে করেন যে, ‘চুক্তির প্রকৃতির দ্বারা এই চুক্তির শর্তগুলো এতই সুনির্দিষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে যে, সামান্যতম পরিবর্তনও তাদের বাতিল ও অকার্যকর করে তুলবে। এর পরিণতি হলো, এমনকি যেখানে সেগুলো স্পষ্টভাবে বলা হয়নি, সেখানেও সেগুলো পুরোপুরি একই এবং সর্বত্র উহ্যভাবে গৃহীত ও স্বীকৃত, ইত্যাদি।

রুশোর এই তত্ত্বের যৌক্তিক ও ঐতিহাসিক খণ্ডন কখনোই কঠিন ছিল না এবং এখনো নেই। যদিও এটির সম্ভবত ভয়ানক ও সুদূরপ্রসারী প্রভাব ছিল। সংবিধান প্রণয়নের আগে ‘শর্তগুলো সুস্পষ্টভাবে বলা হয়নি, তবুও অপরিবর্তনীয়’সহ একটি সামাজিক চুক্তি বিদ্যমান ছিল কি না, এই প্রশ্নটিতে আধুনিক সরকার ব্যবস্থার অধীনে রাষ্ট্রগুলোর জন্য কোনো প্রায়োগিক স্বার্থ নেই। সরকার ও নাগরিকের মধ্যে আইনি সম্পর্ক এখন যেকোনো ক্ষেত্রেই স্পষ্টতই সুপ্রতিষ্ঠিত।

কিন্তু সংবিধান প্রণয়নের আগে এবং একটি নতুন রাষ্ট্র গঠনের সময় এই নীতিগুলো অত্যন্ত বাস্তবিক গুরুত্ব বহন করে। আমরা জানি এবং নিজেরাই দেখছি যে এখনো রাষ্ট্র গঠিত হচ্ছে। উপনিবেশগুলো মূল দেশ থেকে আলাদা হয়ে যাচ্ছে। অধীনস্তরা অধীনতা থেকে পৃথক হয়ে যাচ্ছে; নতুন মুক্ত অঞ্চলগুলো অবিলম্বেই স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন করছে। এটা সত্য যে, ইহুদি রাষ্ট্রকে অনির্দিষ্ট ভূখণ্ডে একটি অদ্ভুত আধুনিক কাঠামো হিসেবে ধারণা করা হয়। কিন্তু এক টুকরো জমি দিয়ে রাষ্ট্র হয় না, বরং রাষ্ট্র গঠিত হয়, সার্বভৌম শাসনের অধীনে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মানুষের একত্রিত হওয়ার মাধ্যমে।

জনগণ হলো একটি রাষ্ট্রে কর্তৃবাচক ভিত্তি, ভূমি সেখানে কর্মবাচক বা বস্তুগত ভিত্তি এবং দুটির মধ্যে কর্তাবাচক ভিত্তিই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। উদাহরণ হিসেবে এমন একটি সার্বভৌমত্বের কথা বলা যায়, যার কোনো বস্তুগত ভিত্তি নেই; কিন্তু সেটি সম্ভবত বিশ্বে সবচেয়ে সম্মানিত সার্বভৌমত্ব। আমি পোপের সার্বভৌমত্বের কথা বলছি।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানে বর্তমানে স্বীকৃত তত্ত্বগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে যৌক্তিকতার তত্ত্ব। রাষ্ট্র গঠনের ন্যায্যতা প্রমাণের জন্য এই তত্ত্বই যথেষ্ট এবং সামাজিক চুক্তির তত্ত্বের মতো ঐতিহাসিকভাবে এটিকে খণ্ডন করা যায় না। আমার চিন্তা যখন কেবল ইহুদি রাষ্ট্র গঠন নিয়ে, তখন আমি যৌক্তিকতার তত্ত্বের সীমার মধ্যেই থাকছি; কিন্তু আমি যখনই রাষ্ট্রের আইনি ভিত্তি নিয়ে কথা বলছি তখনই আমি সেই সীমা অতিক্রম করেছি। ঐশ্বরিক প্রতিষ্ঠানের তত্ত্ব কিংবা উচ্চতর ক্ষমতা বা সামাজিক চুক্তির তত্ত্ব এবং পিতৃতান্ত্রিক (প্যাট্রিয়ার্কাল) ও ব্যক্তিতান্ত্রিক (প্যাট্রিমনিয়াল) তত্ত্বগুলো আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। একটি রাষ্ট্রের আইনগত ভিত্তি পুরুষদের হাতে থাকে (পিতৃতান্ত্রিক তত্ত্ব, উচ্চতর শক্তি এবং চুক্তির তত্ত্ব), কিংবা থাকে তাদের চেয়ে অনেক ওপরে কারো হাতে (ঐশ্বরিক প্রতিষ্ঠান), অথবা তাদের চেয়ে অনেক নিচে কারো হাতে {উদ্দেশ্যমূলক (নৈর্ব্যক্তিক) ব্যক্তিতান্ত্রিক তত্ত্ব}। যৌক্তিকতার তত্ত্ব এই প্রশ্নটিকে সুবিধাজনকভাবে এবং সাবধানে উত্তরহীন রাখে; কিন্তু যে প্রশ্ন আইনশাস্ত্রের সর্বোচ্চ উপাধিধারীদের গুরুত্বের সঙ্গে সর্বযুগে দখল করে রেখেছে, তা একেবারে নিষ্ক্রিয় থাকতে পারে না। প্রকৃতপক্ষে মানব এবং অতিমানবীয় মিশ্রণে গঠিত হয় রাষ্ট্র। কিছুটা নিপীড়নমূলক সম্পর্কের ব্যাখ্যার জন্য কিছু আইনি ভিত্তি থাকা জরুরি, যেখানে জনগণও কখনো কখনো শাসকদের পক্ষে দাঁড়ায়। আমি বিশ্বাস করি যে, নেগোশিয়োরাম জেস্টিওতে তা আছে, যেখানে নাগরিকদের সংগঠন ডমিনাস নেগোটিয়োরামের প্রতিনিধিত্ব করে এবং সরকার জেস্টরের প্রতিনিধিত্ব করে।

রোমানরা তাদের বিস্ময়কর ন্যায়বিচারের ধারণার সঙ্গে নেগোশিয়োরাম জেস্টিওর এই মহৎ ধ্রুপদী ধারণাও তৈরি করেছিল। নির্যাতিত ব্যক্তির সম্পদ যখন ঝুঁকিতে পড়ে, তখন যেকোনো মানুষ তা রক্ষায় এগিয়ে যেতে পারে। এই লোকটিই হলো জেস্টর। যদিও বিষয়গুলোর অধিকর্তা লোকটি নিজে কিছুতেই নয়। সে কোনো হুকুমনামা পায়নি, অর্থাৎ কোনো মানবিক আদেশ নেই; উচ্চতর বাধ্যবাধকতাগুলো তাকে এই কাজ করার অনুমতি দেয়। রাষ্ট্রের জন্য এই উচ্চতর বাধ্যবাধকতাগুলো নানাভাবেই তৈরি হয় এবং ক্রমবর্ধমান সাধারণ বোধগম্য শক্তির দ্বারা অর্জিত সংস্কৃতির পৃথক মাত্রায় সাড়া দেয়। জেস্টিও ডোমিনাসের ভালোর জন্য কাজ করতে চেয়েছে— কাজ করতে চেয়েছে সেই লোকদের জন্য, জেস্টর নিজেই যাদের অন্তর্গত।

জেস্টর যৌথ মালিকানাধীন সম্পত্তি পরিচালনা করে। যৌথ মালিকানা তাকে শেখায় যে কী ধরনের জরুরি পরিস্থিতিতে সে হস্তক্ষেপ করতে পারবে এবং শান্তি বা যুদ্ধে সে নেতৃত্ব দাবি করতে পারবে; কিন্তু কোনো অবস্থাতেই যৌথ মালিকানায় তার একক কর্তৃত্ব বৈধ নয়। অসংখ্য যৌথ-মালিকের সম্মতি এমনকি সবচেয়ে অনুকূল অবস্থার মধ্যেও একটি অনুমিত বিষয়।

রাষ্ট্র গড়ে ওঠে একটি জাতির অস্তিত্বের সংগ্রামের মাধ্যমে। এ ধরনের যেকোনো সংগ্রামে পরিস্থিতিগত ধরনে আগে থেকে যথাযথ কর্তৃপক্ষ পাওয়া অসম্ভব। প্রকৃতপক্ষে, সংখ্যাগরিষ্ঠের কাছ থেকে নিয়মিত সিদ্ধান্ত পাওয়ার আগাম কোনো প্রচেষ্টা সম্ভবত শুরুতেই উদ্যোগটিকে নস্যাৎ করে দেবে। কারণ অভ্যন্তরীণ বিভেদ বাইরের বিপদে জনগণকে অরক্ষিত করে তুলবে। আমরা সবাই এক মনের হতে পারি না; জেস্টর তাই নেতৃত্ব তার হাতে তুলে নিয়ে মিছিলের সামনে থাকবে।

সাধারণ কারণটি ঝুঁকিতে পড়লে রাষ্ট্রের জেস্টরের পদক্ষেপকে যথেষ্টভাবে নিশ্চিত করা হয় এবং ডোমিনাসকে নিজের স্বার্থে ইচ্ছামতো কিংবা অন্য কোনো কারণে কাজ করার ক্ষেত্রে বাধা দেওয়া হয়; কিন্তু জেস্টর তার হস্তক্ষেপের মাধ্যমে ডমিনাসের সমান হয়ে ওঠে এবং কুয়েসাই এক্স কন্ট্রাক্ট চুক্তির[২৬] দ্বারা আবদ্ধ থাকে। এটি আগে থেকে বিদ্যমান আইনি সম্পর্ক, অথবা, আরো সঠিকভাবে বললে, রাষ্ট্রের সঙ্গে একযোগে তৈরি।

[২৬ কুয়েসাই এক্স কন্ট্রাক্ট: ‘কুয়াসি কন্ট্রাক্ট’ আদালত স্বীকৃতি এক ধরনের উহ্য চুক্তি। অন্যের ক্ষতি করে কারো ধনী হওয়া উচিত নয়, রোমান আইনের এই প্রধান মতবাদ থেকে অনুপ্রাণিত এই চুক্তি এখনও কোনো কোনো আইনি ব্যবস্থায় প্রচলিত। এক্ষেত্রে চুক্তিতে উল্লেখ না থাকলেও কেউ অন্যায় ও অন্যায্যতার শিকার হলে আইনি সুবিধা পেতে পারে। কোনো গ্রহীতা পক্ষ যদি প্রদত্ত পক্ষের প্রদত্ত সুবিধা দ্বারা অন্যায়ভাবে সমৃদ্ধ হওয়ার চেষ্টা করে তবে আইনের আশ্রয় নেওয়া যায়।]

জেস্টর এভাবে সব ধরনের গাফিলতির ক্ষেত্রে জবাবদিহির আওতায় চলে আসে, এমনকি বাণিজ্যিক চুক্তি কিংবা গভীরভাবে সংশ্লিষ্ট তেমন কোনো বিষয় কিংবা ইত্যাকার অবহেলার জন্যও। নেগোশিয়োরাম জেস্টিও নিয়ে আলোচনা আর বাড়াব না, বরং এটিকে রাষ্ট্রের হাতে ছেড়ে দেব, অন্যথায় এটি আমাদের মূল বিষয়বস্তু থেকে অনেক দূরে নিয়ে যাবে। শুধু একটি মন্তব্য, ‘মালিকের দ্বারা অনুমোদিত হলে বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপনা ততটাই কার্যকর, ঠিক যতটা হয়ে থাকে মূল কর্তৃপক্ষ দ্বারা পরিচালিত হলে।’

এসব কিছু কীভাবে আমাদের ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে?

ইহুদি জনগণের নিজেদের রাজনৈতিক বিষয়গুলো নিজেরা পরিচালনার ক্ষেত্রে বর্তমান বাধা হচ্ছে ডায়াস্পোরা। এ ছাড়া বিশ্বের অনেক স্থানেই তারা কমবেশি মারাত্মক দুরবস্থার মধ্যে রয়েছে। সর্বোপরি তাদের দরকার একজন জেস্টর। এই জেস্টর অবশ্যই কেবল একক কোনো ব্যক্তি হতে পারে না। এ ধরনের ব্যক্তি হয় নিজেকে হাস্যকর করে তোলে, অথবা দেখা যায় যে, তার নিজের স্বার্থের জন্য কাজ করছে এবং ঘৃণ্য ব্যক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।

তাই ইহুদিদের জেস্টর হবে অবশ্যই একটি বডি কর্পোরেট। [২৭]

আর সেটা হলো ইহুদি সোসাইটি।

[২৭ বডি কর্পোরেট: সরকারি কোনো প্রতিষ্ঠান, কোম্পানি কিংবা সংস্থা। যেটির নিজস্ব আইনি অধিকার ও দায়িত্ব-কর্তব্য আছে। এ ধরনের প্রতিষ্ঠানকে বডি কর্পোরেট বলে।]

ইহুদিদের জেস্টর

জাতীয় আন্দোলনের এই অঙ্গ, যেটির ধরন ও কার্যাবলি কেমন হবে, তা নিয়ে আমরা শেষপর্যন্ত কাজ করছি, সেটি প্রকৃতপক্ষে সবকিছুর আগে গড়ে তুলতে হবে। এর গঠন একেবারে সহজ। এটি সেই উদ্যমী ইহুদিদের নিয়ে একটি কাঠামোগত রূপ পাবে, যাদের আমি লন্ডনে আমার পরিকল্পনা দিয়েছিলাম (১৮৯৫ সালের ২৪ নভেম্বর হার্ৎজেল ম্যাকাবিয়ান ক্লাবের একটি সভায় ভাষণ দেন, যেখানে সভাপতি ছিলেন ইসরায়েল জ্যাংউইল)।

ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য সোসাইটির বৈজ্ঞানিক ও রাজনৈতিক কাজ থাকবে। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির প্রয়োগগত দিক মেনে নিয়ে আমি যেমনটি কল্পনা করি। প্রাচীন যুগের আদিম পদ্ধতিতে আমরা আজ মিসর ভ্রমণ করতে পারি না। আগে আমাদের সংখ্যা ও শক্তির একটি সঠিক হিসাব করতে হবে। আধুনিক অপেরার মধ্যে যেমন প্রাচীনকালে কিছু বিস্ময়কর মেলোডি থেকে যায় তেমনি আদিমকালের ইহুদিদের সেই মহান ও প্রাচীন জেস্টরও একই সম্পর্কের মধ্য দিয়ে আমাদের মধ্যে থাকবে। আরো অনেক বেহালা, বাঁশি, হার্প, চেলো ও বেস ভায়োল সহযোগে; বৈদ্যুতিক আলো, সজ্জা, গায়কদল ও সুন্দর পোশাক সহযোগে এবং তাদের সময়ের প্রথম গায়কদের সঙ্গে সেই একই মেলোডি বাজাচ্ছি আমরা।

ইহুদি প্রশ্নে একটি সাধারণ আলোচনা শুরু করাই এই পুস্তিকার উদ্দেশ্য। বন্ধু ও শত্রুরা এই আলোচনায় অংশ নেবে; কিন্তু তা আর আমি আশা করি, হিংসাত্মক অপব্যবহার বা আবেগপ্রবণ সমর্থন বা খণ্ডনের দিকে যাবে না, বরং তা হবে ব্যবহারিক, বৃহৎ, আন্তরিক ও রাজনৈতিক বিতর্ক।

ইহুদি সোসাইটি শীর্ষ রাজনীতিবিদ, সংসদ, ইহুদি সম্প্রদায় এবং বিভিন্ন সমাজ বক্তৃতা ও লেখায়, সভা, সংবাদপত্র ও বইপুস্তকে যা বলেছে সেগুলোর সম্ভাব্য সবকিছু সংগ্রহ করবে।

সোসাইটি এভাবে প্রথমবারের মতো খুঁজে বের করবে যে ইহুদিরা সত্যিই প্রতিশ্রুত দেশে যেতে চায় কি না এবং তাদের সেখানে যেতে হবে কি না। বিশ্বের প্রতিটি ইহুদি সম্প্রদায় ইহুদি পরিসংখ্যানের একটি ব্যাপক সংগ্রহ গড়ে তোলার জন্য সোসাইটিকে তথ্য-উপাত্ত দিয়ে অবদান রাখবে।

এ ছাড়া আরও কাজ আছে। যেমন নতুন দেশের বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে অনুসন্ধান, প্রাকৃতিক সম্পদের অন্বেষণ, অভিবাসন ও বসতিস্থাপনের অভিন্ন পরিকল্পনা, আইন প্রণয়ন এবং প্রশাসন, ইত্যাদি। এই কাজগুলো মূল পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে যৌক্তিকভাবে বেরিয়ে আসবে।

বাহ্যিকভাবে, সোসাইটি চেষ্টা করবে, যেমনটি আমি আগে সাধারণ অংশে ব্যাখ্যা করেছি, রাষ্ট্র গঠনকারী একটি শক্তি হিসেবে স্বীকৃত হতে। অনেক ইহুদি অবাধ সম্মতি এটিকে সরকারের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কর্তৃত্ব প্রদান করবে।

অভ্যন্তরীণভাবে, অর্থাৎ, ইহুদি জনগণের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে সোসাইটি সব ধরনের প্রথম অত্যাবশ্যক প্রতিষ্ঠানগুলো গড়ে তুলবে; সোসাইটি হবে নিউক্লিয়াস (একেবারে কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠান) যা থেকে পরবর্তীতে ইহুদি রাষ্ট্রের সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো গড়ে উঠবে

আমাদের প্রথম উদ্দেশ্য হলো, যেমনটি আমি আগেই বলেছি, বিশ্বের একটি অংশের ওপর আধিপত্য, যা আন্তর্জাতিক আইনের মাধ্যমে নিশ্চিতকৃত এবং আমাদের ন্যায্য প্রয়োজনের বিবেচনায় যথেষ্ট বড়।

পরবর্তী পদক্ষেপ কী?

ভূমি অধিগ্রহণ বা দখল

মনুষ্য জাতিগুলো যখন ঐতিহাসিক সময়ে বিচরণ করত, তখন তাদের সুযোগ ছিল নিজেদের বহন করার, নিজেদের টেনে নিয়ে যাওয়ার, নিজেদের এদিক-ওদিক ধাবিত করার। পঙ্গপালের ঝাঁকের মতো তারা উদাসীনভাবে যে কোথাও বসতি স্থাপন করত। ঐতিহাসিক সময়ে পৃথিবী মানুষের কাছে পরিচিত ছিল না; কিন্তু ইহুদিদের এই আধুনিক অভিবাসন অবশ্যই বৈজ্ঞানিক নীতিমালা মেনে হতে হবে।

চল্লিশ বছরেরও কম সময় আগেও অতিশয় আদিম পদ্ধতিতে খননের মাধ্যমে স্বর্ণ আহরণের কাজ পরিচালিত হয়েছে। কী দুঃসাহসিক দিন ছিল ক্যালিফোর্নিয়ায়! একটি প্রতিবেদন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের বেপরোয়াদের সেখানে একত্রিত করেছিল; তারা জমির খণ্ডগুলো চুরি করেছিল, একে অপরের সোনা লুট করেছিল এবং অবশেষে জুয়া খেলে তারা তা হারিয়েও ছিল। ডাকাতরা যা করে আর কি!

কিন্তু এখন! এখন ট্রান্সভালে[২৮] সোনা আহরণ কেমন? দুঃসাহসী ভবঘুরেরা সেখানে নেই; শান্ত ভূতাত্ত্বিক ও প্রকৌশলীরা নিজেরাই কেবল সেখানে আছে, সেখানকার স্বর্ণ-শিল্প নিয়ন্ত্রণ করছে এবং শিলায় ঘেরা মূল্যবান ধাতুকে আলাদা করার জন্য দুর্দান্ত সব যন্ত্রপাতি প্রয়োগ করছে। সেখানে এখন আগের সেই সুযোগ আর নেই।

[২৮ ট্রান্সভাল: ১৯৯৪ সাল দক্ষিণ আফ্রিকার একটি প্রদেশ, এখন তা চারটি প্রদেশে বিভক্ত।]

এভাবে সব ধরনের আধুনিক সুযোগ-সুবিধার মাধ্যমে আমাদের অবশ্যই তদন্ত ও অনুসন্ধান করতে হবে এবং নতুন ইহুদি দেশটির দখল নিতে হবে।

ভূমি নিশ্চিত করার পরপরই আমরা সোসাইটি, কোম্পানির এবং স্থানীয় গোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি জাহাজ পাঠাব, যারা এক ধাক্কায় দখলকৃত ভূমিতে প্রবেশ করবে।

এই ব্যক্তিদের তিনটি কাজ করতে হবে: ১. দেশের সব প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যাপারে একটি সঠিক ও বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান চালাতে হবে; ২. কঠোরভাবে কেন্দ্রীভূত প্রশাসনের একটি সংগঠন গড়তে হবে; ৩. জমি বন্টন করতে হবে। এই কাজগুলো পরস্পর সংশ্লিষ্ট এবং এখনকার পরিচিত বস্তুকে সামনে রেখে সব কাজ সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে সম্পন্ন করা হবে।

একটা বিষয় ব্যাখ্যা করার বাকি আছে, তা হচ্ছে— স্থানীয় গোষ্ঠীগুলোর মতে ভূমি দখলের এই কাজ কীভাবে করা হবে।

আমেরিকায় নতুন উন্মোচিত অঞ্চলের দখল নেওয়া হয়েছে অনেকটাই আদিম রীতিতে। বসতি স্থাপনকারীরা সীমান্তে জড়ো হয় এবং নির্ধারিত সময়ে তারা তাদের নিজেদের অংশের দিকে একযোগে হিংসাত্মকভাবে ছুটে যায়।

আমরা এভাবে ইহুদিদের নতুন দেশে এগোব না। প্রদেশ ও শহরে প্লটগুলো নিলামে বিক্রি করা হবে। অর্থের মাধ্যমে নয়, তা হস্তান্তর করা হবে কাজের বিনিময়ে। রাস্তা, ব্রিজ, ওয়াটারওয়ার্ক ইত্যাদি ঠিক করা, যা যাতায়াতের জন্য প্রয়োজনীয়, তাই হবে প্রাথমিক পরিকল্পনা। এগুলোকে প্রদেশগুলোতে একত্রিক করা হবে। প্রদেশগুলোতে শহরের জন্য স্থানগুলো একইভাবে নিলামে বিক্রি করা হবে, স্থানীয় গোষ্ঠীগুলো ব্যবসায়িক সম্পত্তি ঠিকঠাকভাবে বিতরণের অঙ্গীকার করবে এবং স্ব-আরোপিত মূল্যের মাধ্যমে ব্যয় নির্বাহ করবে। সোসাইটি বিচার করার অবস্থানে থাকবে যে স্থানীয় গোষ্ঠীগুলো অর্থের জন্য খুব বেশি ত্যাগের উদ্যোগ নিচ্ছে না। বড় সম্প্রদায়গুলো তাদের কার্যকলাপের জন্য বড় স্থানগুলো পাবে। এইভাবে বিশ্ববিদ্যালয়, কারিগরি বিদ্যালয়, একাডেমি, গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মহান ত্যাগের প্রতিদান দেওয়া হবে। সরকারি এই প্রতিষ্ঠানগুলো রাজধানীতে কেন্দ্রীভূত করা হবে না, সারা দেশে ছড়িয়ে রাখা হবে।

যে জমিগুলো নেওয়া হবে, সেগুলোতে যথাযথভাবে কাজ হচ্ছে কি না ক্রেতাদের ব্যক্তিগত আগ্রহ এবং প্রয়োজনে স্থানীয় মূল্যায়নের তা নিশ্চিত হবে। একইভাবে, আমরা যেটা পারি না এবং প্রকৃতপক্ষে তা করতে চাইও না- প্রত্যেক ব্যক্তির স্বাতন্ত্র্য বহাল রাখা হবে, যাতে স্থানীয় গোষ্ঠীগুলোর স্বাতন্ত্র্যও ঠিক থাকে। সবকিছু বেশ স্বাভাবিকভাবেই একটা নিজস্ব কাঠামো লাভ করবে। অর্জিত সব অধিকার সুরক্ষিত করা হবে এবং প্রতিটি নতুন উন্নয়নে পর্যাপ্ত সুযোগ দেওয়া হবে।

আমাদের জনগণকে এসব বিষয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে অবহিত করা হবে।

আমরা কারো অজান্তে বা কাউকে বিভ্রান্ত করে নেব না, এমনকি যদি নিজেদের প্রতারিতও করি।

সবকিছু আগে থেকেই পদ্ধতিগতভাবে ঠিকঠাক করা আব্যশক। আমি শুধু এই পরিকল্পনাটির ব্যাপারে ইঙ্গিত দিলাম। আমাদের প্রখর চিন্তাবিদরা সবাই মিলে এটিকে আরো সম্প্রসারিত করবেন। আমাদের সময়ের এবং আগামীদিনের প্রতিটি সামাজিক এবং প্রযুক্তিগত অর্জন, যা আমার পরিকল্পনার ধীরগতির বাস্তবায়নের আগেই সম্পন্ন হবে, তা তার লক্ষ্যের জন্য নিযুক্ত হওয়া আবশ্যক। এভাবে একটি দেশ গঠন করা যেতে পারে এবং একটি রাষ্ট্র এমনভাবে প্রতিষ্ঠিত করা যেতে পারে, যা ইতিহাসে এখনো অজানা এবং সাফল্যের সম্ভাবনা নিয়ে তা করা যেতে পারে যা আগে কখনো ঘটেনি।

সংবিধান

রাষ্ট্রীয় আইনবিদদের একটি কাউন্সিল গঠন করতে হবে। এটি হবে বৃহত্তম কমিশনগুলোর একটি। সোসাইটি এই কমিশনকে নিয়োগ করবে। এই কমিশনকে অবশ্যই সর্বোত্তম, অর্থাৎ সর্বোত্তম আধুনিক সংবিধান প্রণয়ন করতে হবে। আমি বিশ্বাস করি যে, একটি ভালো সংবিধান মধ্যমপন্থার স্থিতিস্থাপক প্রকৃতির হওয়া উচিত। অন্য একটি কাজে আমি বিশদভাবে ব্যাখ্যা করেছি যে, কোন ধরনের সরকারকে আমি শ্রেষ্ঠ বলে মনে করি। আমি মনে করি, গণতান্ত্রিক রাজতন্ত্র এবং অভিজাত প্রজাতন্ত্র একটি রাষ্ট্রের সর্বোত্তম রূপ, কারণ তাদের মধ্যে রাষ্ট্রের রূপ এবং সরকারের নীতি একে অপরের বিরোধী এবং এইভাবে ক্ষমতার একটি সত্যিকারের ভারসাম্য রক্ষা হয়। আমি রাজতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর একজন কট্টর সমর্থক, কারণ এগুলো একটি চলমান নীতিকে অনুমতি দেয় এবং একটি ঐতিহাসিকভাবে বিখ্যাত পরিবারের জন্মের ব্যাপারে আগ্রহ দেখায় এবং শিক্ষিতদের শাসন করতে দেয়, যার আকাঙ্ক্ষা রাষ্ট্রের সংরক্ষণ দ্বারা আবদ্ধ। কিন্তু অযৌক্তিকতার অভিযোগে নিজেদের উন্মোচিত না করেই প্রাচীন সাংবিধানিক রূপের প্রত্যক্ষ ধারাবাহিকতা বজায় রাখার চেষ্টা করার জন্য আমাদের ইতিহাস অনেক দীর্ঘ সময় বাধাগ্রস্ত হয়ে থেকেছে।

সার্বভৌমের বিপরীত ভারসাম্যপূর্ণ বল ছাড়া একটি গণতন্ত্র প্রশংসা ও নিন্দার দিক থেকে চরম; সংসদে নিষ্ক্রিয় আলোচনার প্রবণতা রাখে এবং সেই আপত্তিকর শ্রেণির মানুষ-পেশাদার রাজনীতিবিদ তৈরি করে। জাতিগুলো বর্তমানে সীমাহীন গণতন্ত্রের জন্য আসলে উপযুক্ত নয় এবং ভবিষ্যতে তারা আরও অনুপযুক্ত হবে। একটি বিশুদ্ধ গণতন্ত্রের জন্য সাধারণ নীতির প্রাধান্য আগে থেকেই অনুমান করে নেওয়া হয়। রীতিনীতিগুলো বাণিজ্যের উন্নয়ন এবং সংস্কৃতি সমৃদ্ধির ফলে দিন দিন আরও জটিল হচ্ছে। বিজ্ঞ মন্টেস্কিউ[২৯] বলেছেন, ‘গণতন্ত্রের অবলম্বন হলো পুণ্য (গুণ, উৎকর্ষ)।’ আর এ নৈতিক উৎকর্ষ, বলতেই হয় যে তা রাজনৈতিক উৎকর্ষ, কোথায় মিলবে? আমি আমাদের রাজনৈতিক উৎকর্ষে বিশ্বাস করি না; প্রথমত, কারণ আমরা আধুনিক মানবতার বাকি অংশের চেয়ে ভালো নই এবং দ্বিতীয়ত, স্বাধীনতার কারণে আমাদের প্রথমত দেখাতে হবে যে, আমাদের যুদ্ধ করার সক্ষমতা আছে। আমি গণভোটের মাধ্যমে কোনো প্রশ্নের নিষ্পত্তিকে অসন্তোষজনক মনে করি, কারণ রাজনীতিতে এমন কোনো সহজ প্রশ্ন নেই, যার উত্তর হ্যাঁ বা না দিয়ে দেওয়া যেতে পারে। ভিন্নমতের মাধ্যমে জনসাধারণের পথভ্রষ্ট হওয়ার প্রবণতা পার্লামেন্টের চেয়েও বেশি। জোরালো গালভরা বক্তৃতায় তারা বিভ্রান্ত হবে। জনপ্রিয় গণপরিষদে (অ্যাসেম্বলিতে) বিচক্ষণ অভ্যন্তরীণ বা বাহ্যিক নীতি প্রণয়ন অসম্ভব।

[২৯ মন্টেস্কিউ: ১৭ শতকের ফরাসি দার্শনিক। আইন, সংবিধান ও রাজনৈতিক মতাদর্শের জন্য বিখ্যাত।]

রাজনীতি কাঠামোগত রূপ পাবে ওপরের স্তরে এবং কাজ করতে হবে নিচের দিকে। ইহুদি রাষ্ট্রের কোনো সদস্যই নিপীড়িত হবে না। প্রত্যেক মানুষই হবে সক্ষম এবং তারা এই রাষ্ট্রের মধ্যে মাথা তুলে দাঁড়াতে চাইবে। এই ধরনের মহান ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা আমাদের জনগণের মধ্যে প্রবাহিত হবে। নিজেকে উন্নীত করার মাধ্যমে প্রত্যেক ব্যক্তি পুরো নাগরিকদের উন্নীত করবে। তাদের এই আরোহন বা উন্নয়ন একটা স্বাভাবিক কাঠামো লাভ করবে, তা রাষ্ট্রের জন্য উপযোগী হবে এবং জাতীয় আদর্শের কাজে লাগবে।

এ কারণেই অভিজাত একটি প্রজাতন্ত্রের দিকেই আমার ঝোঁক। এটি আমাদের জনগণের উচ্চাভিলাসী চেতনাকে সন্তুষ্ট করবে। যেটি এখন একেবারে তুচ্ছ অসাড়তায় পরিণত হয়েছে। ভেনিসের অনেক প্রতিষ্ঠানের কথাই আমার মনে থাকে; কিন্তু যেসব কারণে ভেনিস ধ্বংস হয়েছে সেগুলোকে অবশ্যই সতর্কতার সঙ্গে এড়িয়ে যেতে হবে। ঠিক যেভাবে আমরা আমাদের ভুল থেকে শিক্ষা নিই, ঠিক সেভাবেই আমরা অন্যদের ঐতিহাসিক ভুল থেকে শিক্ষা নেব; কারণ আমরা একটি আধুনিক জাতি এবং বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে আধুনিক হতে চাই। আমাদের জনগণ, সোসাইটির কাছ থেকে যারা নতুন একটি দেশ গ্রহণ করছে, তারা অবশ্যই সোসাইটি যে সংবিধান দেবে তাও ধন্যবাদের সঙ্গে গ্রহণ করবে। সোসাইটি তার কার্যক্রমের চর্চাকে অদূরদর্শী ও অনান্তরিক ব্যক্তিদের দ্বারা ব্যাখ্যা করার অনুমতি দিতে পারে না।

ভাষা

প্রস্তাব করা যেতে পারে যে আমাদের একটি সাধারণ বর্তমান ভাষার দাবি অসুবিধার সৃষ্টি করবে। আমরা হিব্রুতে একে অপরের সঙ্গে কথা বলতে পারি না। আমাদের মধ্যে এমন কে আছে যে হিব্রু ভাষায় রেলের টিকিট চাওয়ার মতো যথেষ্ট দক্ষ? তেমনটি হতে পারে না। তবুও এই অসুবিধা খুব সহজে অতিক্রম করা যায়। প্রতিটি মানুষই সেই ভাষা সংরক্ষণ করতে পারে যে ভাষা তার চিন্তা-চেতনার গৃহ। সুইজারল্যান্ড ভাষাগুলোর একটি ফেডারেশনের সম্ভাবনার একটি চূড়ান্ত প্রমাণ দেয়। আমরা এখন যে নতুন দেশে আছি সেখানেই থাকব এবং আমরা যে জন্মভূমি থেকে বিতাড়িত হয়েছি তার স্মৃতিকে দুঃখের সাথে লালন করা থেকে বেরিয়ে আসতে পারব না।

আমরা সেই দুর্ভাগ্যজনক অবিকশিত শব্দগুচ্ছ, সেই ঘেটো ভাষাগুলো ব্যবহার করা ছেড়ে দেব যা আমরা এখনও ব্যবহার করি, কারণ এগুলো ছিল বন্দিদের গোপন ভাষা। আমাদের জাতীয় শিক্ষকরা এ বিষয়ে যথাযথ মনোযোগ দেবেন; এবং যে ভাষা নিজেকে সাধারণ সামাজিক আদান- প্রদানের জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ উপযোগী বলে প্রমাণিত হয়, তা কোনো ধরনের বাধ্যবাধকতা ছাড়াই আমাদের জাতীয় ভাষা হিসেবে গ্রহণ করা হবে। আমাদের জাতিগত সম্প্রদায়টি অদ্ভুত ও অনন্য, কারণ আমরা কেবল আমাদের পিতাদের বিশ্বাস দ্বারা একত্রে আবদ্ধ।

ধর্মতন্ত্র

আমরা কি ধর্মতন্ত্রের মাধ্যমে সমাপ্তি টানব? আদৌ তা নয়। বিশ্বাস আমাদের একত্রিত করে, জ্ঞান আমাদের স্বাধীনতা দেয়। তাই আমরা আমাদের যাজকত্বের পক্ষ থেকে যে কোনো ধর্মতান্ত্রিক প্রবণতাকে সামনে আসতে বাধা দেব। আমরা আমাদের পুরোহিতদের তাদের মন্দিরের সীমানার মধ্যে রাখব যেভাবে আমরা আমাদের পেশাদার সেনাবাহিনীকে তাদের ব্যারাকের সীমানার মধ্যে রাখব। সেনাবাহিনী এবং যাজকরা তাদের মূল্যবান কার্যাবলির জন্য প্রাপ্য হিসাবে উচ্চ সম্মান পাবেন; কিন্তু তাদের অবশ্যই রাষ্ট্রের প্রশাসনিক ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করা উচিত হবে না। এতে তাদের আলাদা মর্যাদা বজায় থাকবে। অন্যথায় তারা বাইরে ও ভিতরে অসুবিধা সৃষ্টি করবেন।

প্রতিটি মানুষ তার বিশ্বাস বা অবিশ্বাসে তার জাতীয়তার মতো স্বাধীন ও অবিচল থাকবে। যদি এমন হয় যে অন্য ধর্মের এবং বিভিন্ন জাতীয়তার মানুষ আমাদের মধ্যে বসবাস করতে আসে, তাহলে আইনগতভাবে তাদের সম্মানজনক সুরক্ষা এবং সমতা প্রদান করা উচিত। আমরা ইউরোপে সহনশীলতা শিখেছি। আজকের ইহুদি-বিদ্বেষের কারণ খুব কম স্থানেই প্রাচীন ধর্মগুলোর অহিষ্ণুতার জন্য হয়েছে, এটা শুধু ব্যঙ্গ করে বলা ব্যাপার নয়। এটি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সভ্য জাতিগুলোর মধ্যে একটি আন্দোলন, যার মাধ্যমে তারা তাদের নিজেদের অতীতের ভূত তাড়ানোর চেষ্টা করে।

আইন

যখন রাষ্ট্রের ধারণাটি বাস্তবে রূপ নিতে থাকবে, তখন ইহুদি সোসাইটি আইন প্রণয়নের প্রস্তুতি নিতে আইনবিদদের একটি কাউন্সিল গঠন করবে। অন্তর্বর্তীকালে এই কাউন্সিল প্রত্যেক অভিবাসী ইহুদি যে দেশ থেকে এসেছে সেই দেশের প্রচলিত আইনে বিচার-বিবেচনার আওতায় আসবে। আইনবিদরা অবশ্যই পূর্ববর্তী ব্যবস্থার সর্বোত্তম অংশগুলোর ওপর ভিত্তি করে একটি আধুনিক আইন প্রণয়ন করার জন্য এই বিভিন্ন আইনের একীকরণের চেষ্টা করবেন। এই আইনসংগ্রহ হয়ে উঠতে পারে একটি সাধারণ কোডিফিকেশন[৩০], যা বর্তমান সময়ের ন্যায়সঙ্গত সামাজিক দাবিকে মূর্ত করে তুলবে।

[৩০ কোডিফিকেশন: সুপরিকল্পিত পদ্ধতি ও প্রক্রিয়ায় একই বিষয়ে বিভিন্ন ধরনের আইন শ্রেণীবদ্ধ ও বিধিবদ্ধকরণ।]

সেনাবাহিনী

ইহুদি রাষ্ট্রকে নিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবে ভাবা হয়েছে। তাই অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিকভাবে শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য কেবল একটি পেশাদার সেনাবাহিনী থাকবে। এই সেনাবাহিনী অবশ্যই আধুনিক যুদ্ধের জন্য প্রয়োজনীয় সব সরঞ্জামে সুসজ্জিত হবে।

পতাকা

আমাদের কোনো পতাকা নেই এবং আমাদের একটি পতাকা দরকার। অনেক মানুষের নেতৃত্ব দিতে গেলে অবশ্যই আমাদের মাথার ওপর একটি প্রতীক তুলে ধরতে হবে।

আমি সাতটি সোনার তারাসহ একটি সাদা পতাকার প্রস্তাব করব। পতাকার সাদা জমিন আমাদের বিশুদ্ধ নতুন জীবনের প্রতীক; তারাগুলো হলো আমাদের কাজের দিনের সাতটি সোনালি ঘণ্টা। কারণ আমরা সম্মানের ব্যাজ বহন করে প্রতিশ্রুত দেশে যাত্রা করব।

আদান-প্রদান নীতি এবং প্রত্যর্পণ চুক্তি

বিশ্বে যাতে আমাদের ভবিষ্যৎ সম্মানজনক হয় সেজন্য নতুন ইহুদি রাষ্ট্র সঠিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হতে হবে। তাই পুরোনো দেশ থেকে প্রস্থান করার আগে দেশত্যাগের যা যা বাধ্যবাধকতা থাকবে সেগুলো অবশ্যই খুব বিচক্ষণতার সঙ্গে পূরণ করতে হবে। যারা ছেড়ে যাওয়া দেশের স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে নেওয়া সরকারি প্রশংসাপত্র (যাতে উল্লেখ থাকবে যে তারা দেশত্যাগের আগে সবকিছু ভালোভাবে সম্পন্ন করে এসেছে) উপস্থাপন করতে পারবে ইহুদি সোসাইটি এবং ইহুদি কোম্পানি কেবল তাদেরই সহজ দেশান্তরণ এবং বসতিস্থাপনের বন্দোবস্তের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কিছু সুবিধা দেবে।

অন্য যেকোনো স্থানের চেয়ে বরং ইহুদি রাষ্ট্রে ছেড়ে আসা দেশগুলোতে উদ্ভূত প্রতিটি ব্যক্তিগত ন্যায়সঙ্গত অভিযোগ অধিকতর গুরুত্বের সঙ্গে শোনা হবে। এক্ষেত্রে আমরা দুই দেশের পারস্পরিক আদান-প্রদানের নীতির জন্য অপেক্ষা করব না; আমরা আমাদের নিজেদের সম্মানের জন্য খাঁটিভাবে কাজ করব। এভাবে আমরা সম্ভবত পরবর্তীতে দেখব যে, সেসব দেশের আইন- আদালত আমাদের অভিযোগগুলো শুনতে আরও বেশি আগ্রহী হচ্ছে, যেটা এখন কিছু জায়গায় দেখা যাচ্ছে।

পূর্ববর্তী মন্তব্য থেকে এই সিদ্ধান্ত করা হবে যে, আমরা অন্য যেকোনো রাষ্ট্রের চেয়ে ইহুদি অপরাধীদের আরও দ্রুত হস্তান্তর করব, যতক্ষণ না আমরা আমাদের দণ্ডবিধিকে অন্য সব সভ্য জাতির মতো একই নীতিতে প্রয়োগ করতে পারি। এর জন্য একটি অন্তবর্তী সময় থাকবে, যে সময়ে আমরা আমাদের অপরাধীদের উপযুক্ত শাস্তি ভোগ করার পরেই গ্রহণ করব। তবে, দণ্ডবিধি এবং এ সংক্রান্ত প্রক্রিয়া ঠিক হওয়ার পরে তাদের কোনো ধরনের বিধিনিষেধ ছাড়াই গ্রহণ করা হবে, কারণ আমাদের অপরাধীদেরও একটি নতুন জীবনে প্রবেশ করতে হবে।

এভাবে দেশত্যাগ অনেক ইহুদির জন্য একটি সুখের সমস্যা নিয়ে একটি সংকট হয়ে উঠতে পারে। খারাপ বাহ্যিক পরিস্থিতি, যা অনেক চরিত্রকে নষ্ট করে দেয়, তা অপসারণ করা হবে এবং এই পরিবর্তনের অর্থ হতে পারে পথভ্রষ্ট অনেকের জন্য পরিত্রাণ।

এখানে আমি সংক্ষেপে উইটওয়াটার্সর‍্যান্ডের[৩১] সোনার খনিগুলোর একটি গল্প সংযুক্ত করতে চাই। একদিন এক লোক র‍্যান্ডে এসে বসতি স্থাপন করল। সোনার খনির কাজ ছাড়া নানা কিছু করার চেষ্টা করল সে। শেষপর্যন্ত সে একটি বরফের কারখানা প্রতিষ্ঠা করল। তাতে সে ভালো করছিল। শিগগিরই সে তার ভদ্রতা দিয়ে সবার কাছে সম্মান অর্জন করেছিল; কিন্তু কয়েক বছর পরে সে হঠাৎ গ্রেপ্তার হলো। ফ্রাঙ্কফোর্টে সে ব্যাংকার হিসেবে তহবিল তছরুপের কিছু ঘটনা ঘটিয়ে সেখান থেকে পালিয়ে গিয়েছিল এবং একটি নতুন নাম নিয়ে নতুন জীবন শুরু করেছিল; কিন্তু যখন তাকে বন্দি করে নিয়ে যাওয়া হয়, তখন সেখানকার সবচেয়ে সম্মানিত লোকেরা স্টেশনে উপস্থিত হন, তাকে সৌহার্দ্যপূর্ণ বিদায় জানান এবং ফিরে আসার আশাবাদ ব্যক্ত করেন— কারণ সে ফিরে আসবে তা ছিল নিশ্চিত।

[৩১ উইটওয়াটার্সর‍্যান্ড: সোনার খনির জন্য বিখ্যাত দক্ষিণ আফ্রিকার একটি শৈলশ্রেণী। ১৮৫২ সালের পর থেকে এই শৈলশ্রেণী ঘিরে শুরু হয় স্বর্ণসন্ধানীদের অভিযান। এই সূত্রেই জন্ম হয়েছে আজকের অন্যতম শহর জোহানেসবার্গের।]

এই গল্প কতটা প্রকাশ করে! একটি নতুন জীবন এমনকি অপরাধীদেরও পুনরুজ্জীবিত করতে পারে এবং আমাদের অবশ্য এ ধরনের সদস্যের সংখ্যা আনুপাতিক হারে কম। এই বিষয়ে পড়ার মতো কিছু আকর্ষণীয় পরিসংখ্যান আছে বার্লিনের ডক্টর পি নাথানের রিপোর্টে। ‘জার্মানিতে ইহুদিদের অপরাধ’ শিরোনামের ওই রিপোর্ট দাপ্তরিক নথিপত্রের ওপর ভিত্তি করে প্রস্তুত করা হয়েছিল। ‘ইহুদিবিদ্বেষ বিরোধী প্রতিরক্ষা সমিতি’র পক্ষ থেকে পরিসংখ্যানের একটি সংগ্রহ তৈরি করার জন্য পি নাথানকে এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। এটা সত্য যে অনেক পরিসংখ্যানে পরিপূর্ণ এই পুস্তিকাটিও অন্য অনেক ‘প্রতিরক্ষা’র মতোই যুক্তিসঙ্গত আপত্তির মাধ্যমে খণ্ডনযোগ্য ইহুদিবিদ্বেষ দ্বারা উন্নীত। আমরা সম্ভবত আমাদের দোষের জন্য যতটা অপছন্দের ততটাই অপছন্দের আমাদের গুণের জন্যও।

ইহুদিদের দেশান্তরের সুবিধা

আমার মনে হয় সরকারগুলো স্বেচ্ছায় কিংবা ইহুদিবিদদের চাপে এই প্রকল্পের দিকে নির্দিষ্ট মনোযোগ দেবে। তারা সম্ভবত এটিকে এখানে- সেখানে সহানুভূতির সঙ্গে নেবে এবং তা তারা ইহুদি সোসাইটিকেও দেখাবে।

দেশত্যাগের জন্য, যা আমি পরামর্শ দিচ্ছি, অর্থনৈতিক কোনো সংকট তৈরি হবে না। ইহুদি-নিগ্রহের ফলে সর্বত্র যে ধরনের সংকট দেখা দেয় তা বরং আমার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে প্রতিরোধ করা যাবে। যে দেশগুলো এখন ইহুদিবিদ্বেষী সেগুলোতে সমৃদ্ধির একটি চমৎকার সময় শুরু হবে। কারণ সেখানে, যেমনটি আমি বারবার বলেছি, ইহুদিদের ছেড়ে যাওয়া স্থানে খ্রিস্টান নাগরিকদের একটি অভ্যন্তরীণ অভিবাসন ধীরে ধীরে এবং পদ্ধতিগতভাবে স্থান নেবে। আমরা কেবল ভুক্তভোগী না হলে বরং প্রকৃতপক্ষে এটি করতে সহায়তা পাই, তবে এই গমনাগমনের সাধারণভাবে উপকারী একটি প্রভাব থাকবে। অনেক ইহুদির প্রস্থানকে দেশগুলোর দারিদ্র্যের কারণ হিসেবে দেখা একটি সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি, যা থেকে প্রত্যেকের নিজেকে মুক্ত করা উচিত। নিপীড়ন-নির্যাতনের ফলে দেশত্যাগের চেয়ে এটি আলাদা, কারণ তেমন পরিস্থিতিতে সম্পত্তি প্রকৃতপক্ষে ধ্বংস হয়, ঠিক যেমনটা হয়ে থাকে যুদ্ধের বিভ্রান্তিতে। এক্ষেত্রে ঔপনিবেশিকদের শান্তিপূর্ণ স্বেচ্ছা প্রস্থান আবার ভিন্ন, যেখানে সবকিছু অর্জিত অধিকারের বিষয়গুলো যথাযথ বিবেচনার সঙ্গে মেনে এবং আইনের সঙ্গে সম্পূর্ণ সঙ্গতি রেখে প্রকাশ্যে এবং দিনের আলোতে, কর্তৃপক্ষের চোখের সামনে, জনমতের ভিত্তিতে পরিচালিত হয়। ইহুদিদের প্রস্থানের কারণে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে খ্রিস্টান প্রলেতারিয়েতদের দেশত্যাগ বন্ধ করা যাবে।

রাষ্ট্রগুলোর বিপুল পরিমাণে রপ্তানি বাণিজ্য বাড়ানোর সুযোগও থাকবে; কারণ, যেহেতু ‘সেখানে’ ইহুদিরা দীর্ঘ সময় ধরে ইউরোপীয় পণ্যের ওপর নির্ভরশীল থাকবে, তাদের প্রয়োজনের কারণেই আমদানি করতে হবে। স্থানীয় গোষ্ঠীগুলো কেবল ভারসাম্য বজায় রাখবে। প্রয়োজনীয় পণ্যগুলো দীর্ঘ সময় ধরে গ্রাহকদের অভ্যস্ত জায়গাগুলো থেকেই সরবরাহ করতে হবে।

আরেকটি, সম্ভবত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সুবিধাগুলোর মধ্যে একটি আসন্ন সামাজিক স্বস্তি। ইহুদিদের দেশত্যাগের কারণে আগামী বিশ বা তার বেশি সময়ে যে সামাজিক অসন্তোষ হতে পারত তা প্রশমিত হবে। পুরো অন্তবর্তীকালে যেকোনোভাবেই হোক তা শমিত থাকবে।

সামাজিক প্রশ্নটি কী রূপ নেবে তা পুরোপুরি নির্ভর করে আমাদের টেকনিকাল রিসোর্সগুলোর ওপর। বাষ্পশক্তির কারণে আমাদের পুরুষদের পুরো মনোযোগ ছিল কারখানাগুলোর মেশিনারিতে। সেখানে তারা অতি মাত্রায় ভিড় করেছিল এবং অতিরিক্তি ভিড়ের কারণে জায়গাগুলোকে তারা একে অপরের জন্য দুর্বিষহ করে তুলেছিল। বর্তমানে আমাদের বিপুল, অবিচক্ষণ ও বিশৃঙ্খল উৎপাদনের হার ক্রমাগত গুরুতর সংকটের কারণ, যা নিয়োগকর্তা এবং কর্মচারী উভয়কেই ধ্বংস করে। বাষ্প মানুষকে একত্রিত করে ভিড় সৃষ্টি করেছিল; বিদ্যুৎ সম্ভবত তাদের আবার ছত্রভঙ্গ করে দেবে এবং সম্ভবত শ্রমবাজারের আরও সমৃদ্ধ অবস্থা নিয়ে আসবে। যাই হোক না কেন আমাদের প্রযুক্তির উদ্ভাবকরা, যারা মানবতার প্রকৃত হিতৈষী, তারা ইহুদিদের দেশত্যাগ শুরু হওয়ার পরেও তাদের কাজ অব্যাহত রাখবে এবং তারা এমন সব বিস্ময়কর জিনিস আবিষ্কার করবে যা আমরা আগে দেখেছি, কিংবা এর চেয়েও বিস্ময়কর কিছু করবে যা আমরা আগে কখনো দেখিনি।

কারিগরি বিজ্ঞানের শব্দভান্ডারে ‘অসম্ভব’ শব্দটি আর নেই। গত শতাব্দীতে বসবাসকারী একজন মানুষ যদি পৃথিবীতে ফিরে আসতেন, তাহলে তিনি আজকের জীবনকে ধারণাতীত জাদুতে পূর্ণ দেখতে পেতেন। যেখানেই আধুনিকতা আমাদের উদ্ভাবন নিয়ে হাজির হচ্ছে সেখানেই আমরা মরুভূমিকে একটি বাগানে রূপান্তরিত করছি। আগে যেখানে একটি শহর গড়ে তুলতে অনেক শতাব্দী লাগত সেখানে আমাদের এই সময়ে একটি শহর তৈরি করতে আমাদের লাগছে মাত্র কয়েক বছর। এক্ষেত্রে আমেরিকা অন্তহীন উদাহরণ উপস্থাপন করছে। দূরত্ব এখন আর বাধা হতে পারছে না। আমাদের যুগের চেতনা তার ভান্ডারে অবিশ্বাস্য সব ধনরত্ন মজুদ করছে। প্রতিদিনই এই ধন-সম্পদ বাড়ছে। পৃথিবীর প্রতিটি বিন্দুতে লাখো মস্তিষ্ক কল্পনা ও গবেষণায় নিবদ্ধ, এবং যে কেউ কিছু আবিষ্কার করলে তা পরের মুহূর্তে হয়ে যাচ্ছে সারা বিশ্বের। আমরা নিজেরাও আমাদের ইহুদি রাষ্ট্রে প্রতিটি নতুন প্রচেষ্টা প্রয়োগ করব এবং অব্যাহত রাখব। আমরা যেভাবে মানবতার কল্যাণের জন্য সাত ঘণ্টা কর্মদিবসকে একটি পরীক্ষামূলক পদক্ষেপ হিসেবে প্রবর্তন করব, তেমনিভাবে আমরা একই মানবিক চেতনায় অন্য সবকিছুতে এগিয়ে যাব, নতুন ভূমিকে পরীক্ষা-নিরীক্ষার দেশ এবং একটি আদর্শ রাষ্ট্রে পরিণত করব।

ইহুদিরা চলে যাওয়ার পরও তারা যেখানে যে উদ্যোগ নিয়েছিল সেগুলো সেখানেই থাকবে। যেখানে লোকেরা স্বাগত জানাবে সেখানে সেই উদ্যোগগুলোর ইহুদি চেতনা ব্যর্থ হবে না। ইহুদি পুঁজিপতিরা খুশি হয়ে সেখানেই বিনিয়োগ করবেন যেখানে তারা পারিপার্শ্বিক অবস্থার সাথে পরিচিত। নিপীড়নের কারণে যেসব জায়গা থেকে ইহুদিদের অর্থ দেশগুলোর বাইরে পাঠানো হয়েছিল এবং বেশিরভাগ দূরবর্তী বিদেশি উদ্যোগে ঢেলে দেওয়া হয়েছিল, শান্তিপূর্ণ এই সমাধানের ফলে তা আবার ফিরে আসবে এবং ইহুদিদের ছেড়ে যাওয়া দেশগুলোর আরও অগ্রগতিতে অবদান রাখবে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *