2 of 2

৫৯. জনৈক মুক্তিযোদ্ধার চিঠি

ত্রিপুরার বাংলাদেশ হাসপাতাল থেকে পাঠানো
মায়ের কাছে লেখা জনৈক মুক্তিযোদ্ধার চিঠি

৭৮৬

পাক জনাবেষু আম্মাজান,

পত্রে আমার শতকোটি ছালাম জানিবেন। দাদিজান এবং দাদাজানের কদম মোবারকেও আমার শতকোটি ছালাম। বাড়ির অন্য সকলের জন্যে শ্রেণীমতো ছালাম ও দোয়া।

পর সমাচার এই যে, আমি ভালো আছি। আপনারা আমার যে মৃত্যুসংবাদ শুনিয়াছেন ইহা সত্য নহে। আমার দুই পায়ে মর্টারের শেল লাগিয়াছিল। যথাযথ চিকিৎসা হইয়াছে। এখন আমি হাসপাতালে আছি, সুস্থ হইয়া উঠিতেছি, ইনশাআল্লাহ। অনেক বিশিষ্ট মানুষ আমাকে দেখিতে আসিয়াছে। আহত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় আমার নাম উঠিয়াছে। ইহা বিরাট সুসংবাদ। দেশ স্বাধীন হইলে আমি সারাজীবন সরকার হইতে ভাতা পাইব।

এখন একটি দুঃসংবাদ দিতেছি, শুভপুরের গফুর ভাই এবং মিশাকান্দির এনায়েত (এনায়েতকে আপনি চিনিবেন না। অতি সাহসী মুক্তিযোদ্ধা। পরহেজগার আদমি। যুদ্ধের সময়ও উনি কোনো নামাজ কাযা করেন নাই।) মিলিটারির হাতে ধরা পড়িয়াছেন। তাঁহাদের ভাগ্যে কী ঘটিয়াছে আমরা জানি না। এখনো কোনো খবর নাই। আমি যখন আহত হইয়া বিরামপুরের মাঠে পড়িয়া ছিলাম, তখন গফুর ভাই আমাকে পিঠে নিয়া তিন মাইলের বেশি দৌড়াইয়াছিলেন। আমাকে ক্যাম্পে রাখিয়া তিনি আবার যুদ্ধে যান এবং মিলিটারির হাতে ধরা পড়েন। ইহাকেই বলে নিয়তির পরিহাস। গফুর ভাইয়ের কথা মনে উঠিলেই আমি অশ্রু সামলাইতে পারি না।

আম্মাজান, এখন আপনাকে একটা দুঃসংবাদ দিব। আপনাকে আল্লাহর দোহাই লাগে, আপনি অধিক কান্নাকাটি করিবেন না। আল্লাহ যা করেন মঙ্গলের জন্যে করেন। এই কথাটি মনে রাখিবেন। ডাক্তাররা আমার দুইটা পা হাঁটুর নিচ হইতে কাটিয়া বাদ দিবার সিদ্ধান্ত নিয়াছেন। ডাক্তাররা বলিতেছেন, ইহা ব্যতীত আমার জীবন রক্ষা করা সম্ভব। হইবে না। দাদিজানের কাছে এই সংবাদ লুক্কায়িত রাখিবেন। তিনি বৃদ্ধ মানুষ, এই সংবাদে তিনি অত্যধিক কষ্ট পাইবেন। শেষে তাহার ভালো-মন্দ কিছু হইয়া যাইবে।

আম্মাজান, আমি গত পরশু দিবাগত রাতে আকবাজানকে খোয়াবে দেখিয়াছি। তিনি সাদা রঙের একটা বড় পাঞ্জাবি পরিধান করিয়া আমার বিছানার পাশে বসিয়া আছেন। এবং আমার গায়ে মাথায় হাত বুলাইয়া আমাকে আদর করিতেছেন। তাঁহার সহিত আমার কিছু টুকটাক সাংসারিক আলাপ হয়। আফসোস, কী আলাপ হয় তাহার কিছুই মনে নাই। অনেকদিন পরে আব্ববাজানকে খোয়াবে। দেখিয়া মনে অতীব আনন্দ পাইয়াছি।

আম্মাজান, আমি ভালো আছি। আমাকে নিয়া কোনো দুশ্চিন্তা করিবেন না।

ইতি
আপনার অতি আদরের সন্তান
আব্দুল গণি
পুনশ্চ : অপারেশনের তারিখ এখনো নির্ধারণ হয় নাই।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *