একটা নদীর বাঁধের ওপর দাঁড়িয়ে আছে বাবুল চৌধুরী। কাদামাখা খালি পা, হাঁটু পর্যন্ত গোটানো টাউজার্স, নানা জায়গায় ছেঁড়া, গায়ে কোনো জামা নেই, শুধু একটা হাতকাটা হলুদ সোয়েটার, তার কাঁধের কাছে শুকনো রক্তের কালো ছোপ, সেটা যেন একটা বড় মাকড়সার ছবি। গত সাত মাস সে চুল-দাড়ি কাটেনি। তার গৌরবর্ণ দীর্ঘ শরীরটি এখন একটা মরচে-পড়া লোহার দণ্ডের মতন। হাতে একটা এল এম জি, কোমরে গুলির বেল্ট, সে একদৃষ্টিতে চেয়ে আছে আকাশের দিকে। শীতের বিকেল প্রায় শেষ হয়ে এসেছে তবে আলো পুরোপুরি মিলিয়ে যায়নি।
তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে তের-চোদ্দ বছরের কিশোর শফি, তারও হাতে একটা রাইফেল। ওপরের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে সে চাপা গলায় জিজ্ঞেস করলো, বাবুল ভাই, অরা চীনা?
বাবুল কোনো উত্তর দিতে পারলো না। তার বুকের মধ্যে যেন ঝড় বইছে, প্রচণ্ড আবেগে কাঁপছে ঠোঁট। সে নিজে এখনও বিশ্বাস করতে পারছে না। প্রায় দশ বারোটি বিমান গম্ভীর গর্জনে অনেক নিচে নেমে এসে চক্কর দিচ্ছে, তার থেকে নেমে আসছে ছত্রী সৈন্য বাহিনী। সত্যিই কি চীন তা হলে পাকিস্তানের সমর্থনে সসৈন্যে এগিয়ে এলো? কদিন ধরেই এরকম জোর গুজব! বাবুলের মন ভেঙে যাচ্ছে। দুনিয়ার নিপীড়িত মানুষের আশার প্রতীক চীন, তৃতীয় বিশ্বের বিপ্লবী চেতনার প্রধান প্রেরণা চীন, সেই চীন পাকিস্তানী সেনা বাহিনীর সঙ্গে হাত মিলিয়ে বাংলাদেশের মানুষ মারবে? চীনা সৈন্যের সঙ্গে শেষপর্যন্ত যুদ্ধ করতে হবে বাবুলকে? রাষ্ট্রপুঞ্জে চীন পাকিস্তানীদের পক্ষে ওকালতি করেছে, মার্কিনীদের সঙ্গে গলা মিলিয়ে মাঝপথে। যুদ্ধ থামাবার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু শেষপর্যন্ত যুদ্ধেও যোগ দেবে?।
শফি বললো, বাবুল ভাই, হানাদাররা অগো দিকে গুলি ছোঁড়ে না! চীন তাইলে আইস্যা পড়লো!
বাবুল শফির কাঁধটা শক্ত করে চেপে ধরলো।
টাঙ্গাইলের সাদা রঙের সার্কিট হাউসের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে পাকিস্তানী মেজর জেনারেল কাদির। আশা-নিরাশায় তার বুকটা ধকধক করছে। তা হলে শেষ পর্যন্ত এসে পড়লো বহু প্রতীক্ষিত সেই সাহায্য। রাওয়ালপিণ্ডি থেকে ঢাকায় জেনারেল নিয়াজীকে বারবার চীনা সহযোগিতার সময়সীমা পিছিয়ে দেওয়া হচ্ছিল, কিন্তু আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল যে চীনারা আসবেই। এর মধ্যে মৈমনসিং ও জামালপুর দুর্গের পতন হয়েছে, মেজর জেনারেল কাদিরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে পিছিয়ে আসার। এক মাইন দুর্ঘটনায় আহত হয়ে লেফটেনান্ট কর্নেল সুলতানও কোনোক্রমে এসে পৌঁছেছে টাঙ্গাইলে, তার দুর্ধর্ষ ৩১ নং বালুচ বাহিনী ছিন্নভিন্ন। ঢাকা-টাঙ্গাইল রাস্তাটি মাইনে কণ্টকিত। ভারতীয়রা ঘিরে আসছে চতুর্দিক থেকে, মুক্তিযোদ্ধারা পলায়নপর পাকিস্তানী বাহিনীর ওপর অতর্কিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে ক্ষয়ক্ষতি করে দিচ্ছে প্রচণ্ড।
রেলিং ধরে ঝুঁকে পড়ে জেনারেল কাদির চেঁচিয়ে এক মেজরকে জিজ্ঞেস করলো, ওরা। কারা? খবর নিয়েছো? ওরা কালিহাতির দিকে নামছে!
মেজর সারওয়ার বললো, স্যার, সবাই বলছে ওরা চাইনিজ!
জেনারেল কাদির ধমক দিয়ে বললো, ওরা বলছে মানে কারা বলছে? প্লেনগুলো কাদের চিনতে পারছো? এগিয়ে গিয়ে দেখ!
মিনিট দশেকের মধ্যে হঠাৎ জ্বলে-ওঠা আশার মশালটি হঠাৎই নিবে গেল। চীনে নয়, ওরা ভারতীয়! বাংলার আকাশে এখন ভারতীয় বিমানবাহিনীর একচ্ছত্র আধিপত্য। চীনে বিমানদের এত সহজে তারা এতখানি ভেতরে আসতে দেবে কেন? ভারতীয় মিগ-২১ বিমানগুলি এখন। স্পষ্ট চেনা যাচ্ছে। মিগগুলি ঘুরে ঘুরে পাহারা দিচ্ছে আর অন্য বিমান থেকে নামছে ছত্রী সৈন্যরা। তাদের বাধা দেবার জন্য একটিও পাকিস্তানী বিমান নেই।
প্যারাসুটগুলো খুব কাছে আসার পর দেখা যাচ্ছে তাদের বহন করা অস্ত্রশস্ত্র। জেনারেল কাদির-এর পাশে দাঁড়ানো একজন অফিসার কপাল চাপড়ে বলে উঠলো, হায় আল্লা, ওটা কী। আসছে, ৩.৭ ইঞ্চি কামান?
অতবড় কামান এই পিছিয়ে আসা পাক বাহিনীতে নেই। টাঙ্গাইল রক্ষা করার কোনো ব্যবস্থাও নেই। অক্ষম ক্রোধে জেনারেল কাদির একটা স্টেনগান তুলে নিয়ে সেই প্যারাসুটগুলোর দিকে এক ম্যাগাজিন খালি করে দিলেন। একটাও লাগলো না, প্যারাসুট বাহিনী এখান থেকে গুলির সীমার অনেক বাইরে।
টাঙ্গাইলের একটা বিরাট বটগাছের নিচে দাঁড়িয়ে আছে কাদের সিদ্দিকী আর তার দলবল। আকাশের দিকে তাকিয়ে তাদের চোখমুখ উদ্ভাসিত, কয়েকজন হাতিয়ার নিয়ে লাফাচ্ছে উল্লাসে। তাদের কাছে আগেই খবর এসেছিল যে আজই ভারতীয় ছত্রীসেনা নামবে, আজই শুরু হবে টাঙ্গাইল শহর দখলের চুড়ান্ত লড়াই।
মিগ-২১ বিমানগুলি চক্কর দিতে দিতে খুব নিচু হয়ে দেখিয়ে গেল বাংলাদেশের পতাকা। তলা থেকে মুক্তিযোদ্ধারা লতা-পাতায় আগুন জ্বালিয়ে ধোঁয়ার কুণ্ডলীতে সংকেত জানালো।
প্রথমে মনে হলো প্লেন থেকে খসে পড়ছে কাগজের টুকরো। ভারতীয় বিমান এরই মধ্যে বাংলাদেশের সর্বত্র পাকিস্তানী সৈন্যদের আত্মসমর্পণ করার জন্য আহ্বান জানিয়ে প্রচুর লিফলেট ছড়িয়েছে, এও যেন তাই। ক্রমেই সেই কাগজের টুকরোগুলো বড় হয়ে ফুলের মতন দেখায়, যেন আকাশ থেকে পুষ্পবৃষ্টি হচ্ছে। প্রথমে ফুলের কুড়ি, তারপর হঠাৎ তা পাপড়ি মেলে, প্যারাসুট গুলো খুলে গিয়ে ছাতার মতন সেগুলি আস্তে আস্তে দুলতে থাকে। দুটি ফাইটার বিমান ঘুরে ঘুরে তাদের পাহারা দিচ্ছে। কালিহাতি আর পুংসির মাঝামাঝি তারা নামছে, সেখানে শত্রুপক্ষের কোনো কামান নেই, সে খবর আগেই পাওয়া গেছে। দূর থেকে ছত্রীবাহিনীকে আকাশপথে নামতে দেখেও এগিয়ে গিয়ে আক্রমণ করার সাধ্য এখানকার পাকিস্তানী বাহিনীর নেই, তারা এখন পশ্চাৎ অপসরণে ব্যস্ত।
মধুপুর, গোপালপুর, কালিহাতি থেকে শোলাকুরা পর্যন্ত পাকা সড়ক কাদের সিদ্দিকীর মুক্তিবাহিনী সম্পূর্ণ মুক্ত করে ফেলেছে। পাক বাহিনী তাড়াহুড়ো করে পিছু হটছে, যেসব জায়গায় সেতু ভাঙা, সেখানে রাশি রাশি পাটের বস্তা ফেলে কোনোক্রমে পার করাচ্ছে গাড়ি, প্রত্যেকটা গাড়ি মালপত্র এবং মানুষে এত ভর্তি যে জোরে যেতেও পারছে না। রাজাকার, আল বদর, আল শামস ও শান্তি কমিটির পাণ্ডারাও এখন প্রাণভয়ে সেনাদলের পিছু পিছু পালাতে চায়, কিন্তু গাড়িতে জায়গা নেই তাদের জন্য। তারা কেউ কেউ জোর করে গাড়িতে ওঠার চেষ্টা করলে পাক সৈন্যরা লাথি মেরে কিংবা রাইফেলের বাঁট দিয়ে ঠেলে ফেলে দিচ্ছে তাদের। বিশ্রী গালাগাল করছে। দেশের মানুষের বিরুদ্ধে যারা দালালি করেছিল, এই তাদের পুরস্কার।
রাস্তার ধারে ধারে ওত পেতে আছে মুক্তিবাহিনীর ছেলেরা, সুযোগ পেলেই গুলিবর্ষণ করছে এই পলায়নপর দলের ওপর।
ভারতীয় ব্রিগেডিয়ার ক্লের তাঁর বাহিনী নিয়ে জামালপুর দখল করে ব্রহ্মপুত্র পার হয়ে এসেছেন। তিনি এগোতে লাগলেন মধুপুরের দিকে। সেই বাহিনী, মুক্তি বাহিনী এবং ছত্রী বাহিনী তিন দিক থেকে আক্রমণ করলো টাঙ্গাইল শহর।
টাঙ্গাইল রক্ষার আর কোনো উপায় নেই দেখে পাকিস্তানী ব্রিগেডিয়ার কাদির পালাতে লাগলেন কালিয়াকৈর-এর দিকে। ৯৩ ব্রিগেডের আর একদল সৈন্য ছত্রী বাহিনীর হাতে মার খেয়ে সেদিকেই আসছে। বড় সড়কের ওপরে এসে তারা বিভ্রান্ত হয়ে গেল। মাথার ওপর যখন তখন এসে ভারতীয় বিমান মেশিনগানের গুলিবর্ষণ করে যাচ্ছে, মুক্তি বাহিনী ও ভারতীয় বাহিনী কখন কোন দিক থেকে এসে ঝাঁপিয়ে পড়বে তার ঠিক নেই, রাস্তায় মাঝে মাঝে মাইন বিস্ফোরণে উড়ে যাচ্ছে এক একটা গাড়ি। এরকম চল্লিশটা গাড়ি রাস্তায় উল্টে পড়ে আছে। টাঙ্গাইলের ব্যবসায়ী অজিত হোমের বেডফোর্ড গাড়িখানা পাক সেনারা জোর করে দখল করে নিজেরা ব্যবহার করছিল, প্রচণ্ড মাইন বিস্ফোরণে সে গাড়ির ইঞ্জিন উড়ে গিয়ে আটকে আছে একটা বড় গাছে।
যাদের আর লড়াই করার মতন মনোবল নেই, যারা পালাতেই ব্যস্ত, তাদের পক্ষে এতবড় দল নিয়ে চলাফেরা করা বিপজ্জনক, তাই ব্রিগেডিয়ার কাদির সবাইকে ছড়িয়ে পড়তে বললেন। আল্লার নাম নিয়ে যে-রকমভাবে পারে ঢাকায় পৌঁছবার চেষ্টা করুক। কাদির নিজের সঙ্গে রাখলেন মাত্র আটজন অফিসার ও আঠারো জন সৈনিক। এদের নিয়ে তিনি পাকা সড়ক ছেড়ে রাতের অন্ধকারে নেমে পড়লেন মাঠের মধ্যে।
গ্রাম্য রাস্তা মুক্তিবাহিনীর নখদর্পণে। ভারতীয়রাও মুক্তি বাহিনীর সাহায্য নিয়ে গ্রামের রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতে পারে, কিন্তু পাকিস্তানীরা জলকাদার মধ্যে নেমে দিকভ্রান্ত হয়ে গেল। গ্রামের মানুষের কাছ থেকেও কোনো সাহায্য পাবার আশা নেই, বরং তারা পাক সৈন্যদের দেখলেই মুক্তিবাহিনীকে খবর দিয়ে দেয়। তাই ছত্রভঙ্গ পাক সৈন্যরা পাগলের মতন এদিক ওদিক ছুটতে লাগলো, যে কোনো মানুষ দেখলেই তারা এলোপাথারি গুলি চালায়, অনর্থক সাধারণ মানুষ মরে। কিন্তু তারা গাড়ি ছেড়ে চলে এসেছে, তাদের গুলির স্টক অফুরন্ত নয়, তাদের গোলাগুলি ফুরিয়ে যেতেই গ্রামের সাধারণ মানুষ তাদের তাড়া করে, শাবল-কোদাল বাঁশ দিয়ে পিটিয়ে পিটিয়ে মারে। এক সময় যারা নিরীহ গ্রামবাসীদের ওপর যখন-তখন অত্যাচার করেছিল, এখন তাদের হাতেই এইসব সৈন্যদের প্রাণ দিতে হয়। যাদের ভাগ্য ভালো, তারা যৌথ কমান্ডের সামনে পড়ে গিয়ে হাত তুলে চেঁচিয়ে বলে, আমাদের ধরো! আমাদের ধরো! যৌথ কমান্ডের হাতে বন্দী হয়ে তারা প্রাণে বেঁচে যায়।
ব্রিগেডিয়ার কাদিরের ছোট্ট দলটি পল্লীবাংলার জলকাদার মধ্যে এসে পড়ে সম্পূর্ণ বিভ্রান্ত হয়ে যায়। কোন দিকে কালিয়াকৈর? রাতের অন্ধকারে তারা অনির্দিষ্ট লক্ষ্যে পথ চলে, দিনের বেলা কোনো জঙ্গলে কিংবা ভাঙা বাড়িতে লুকিয়ে থাকে। এরকমভাবে দু’দিন কেটে গেল। সঙ্গে কোনো খাবার নেই, পানীয় জল পর্যন্ত নেই। এদো পানা-পুকুরের নোংরা জল খেতে গা ঘিনঘিন করে, কিন্তু উপায় নেই।
খালি পেটে পুকুরের জল চুমুক দিয়ে খেতে খেতে ব্রিগেডিয়ার কাদিরের বারবার বমি হতে লাগলো। দুর্বল শরীর নিয়ে আর হাঁটতে পারছেন না। বড় সড়কে না উঠলে ঢাকায় পৌঁছানোর কোনো উপায় নেই, কিন্তু সেই প্রধান রাস্তা এখন শত্রুর দখলে। কালিয়াকৈর-এ তাঁদের একটা বাহিনীর অপেক্ষা করার কথা, সেই দলটাকে পেলে প্রাণপণ লড়াই করে কোনোক্রমে শত্রুর ব্যুহ ভাঙার শেষ চেষ্টা করা যায়। কিন্তু কালিয়াকৈর কতদূর?
অবসন্ন, পরিশ্রান্ত হয়ে ব্রিগেডিয়ার কাদির একটা বড় ঝোঁপের মধ্যে গিয়ে বসলেন। তৃষ্ণায় গলা শুকিয়ে এসেছে। অভিমানে অশ্রু এসে যাচ্ছে তাঁর চোখে। তিনি সৈনিক, যুদ্ধ করতে ভয় পান না। যদি শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে কাফের ও গদ্দারদের বিরুদ্ধে লড়ে প্রাণ দিতে হতো, তাতেও তিনি গৌরব বোধ করতেন। কিন্তু হাইকমান্ডের একি উল্টোপাল্টা নির্দেশ! কেন তাঁদের হঠাৎ পিছিয়ে আসার হুকুম দেওয়া হলো? এয়ার কভার ছাড়া, ট্যাঙ্ক বাহিনীর সহায়তা ছাড়া পিছিয়ে আসা যায়! নিয়াজী চাইছেন যে-কোনো উপায়ে ঢাকাকে রক্ষা করতে, কিন্তু কাদিরের বাহিনীর কাছে ঢাকা এখন মরীচিকা।
একজন অফিসার একটা গাছের ডাল ভেঙে এনে বললো, স্যার, এই পাতাগুলো চিবিয়ে দেখুন, একটু গলা ভিজবে।
কাদির সন্দিগ্ধভাবে বললেন, কী গাছ? যদি বিষাক্ত হয়?
অফিসারটি বললো, আমি আগে খেয়ে দেখেছি স্যার। টক টক খেতে।
কাদির হাত বাড়িয়ে সেই ডালটা নিয়ে তেতুলপাতা চিবোতে লাগলেন। কাদার মধ্যে থেবড়ে বসে তেতুলপাতা খাওয়াই তার নিয়তিতে ছিল।
আস্তে আস্তে তিনি বললেন, আমাদের দু-তিনজনকে যে-কোনো উপায়েই হোক ঝুঁকি নিয়ে খানিকটা এগিয়ে দেখতে হবে, ৯৩ ব্রিগেডের কোনো অংশ এদিকে আছে কিনা! তাদের সঙ্গে যোগাযোগ না করতে পারলে আমরা এই অবস্থায় কদিন বাঁচবো? কে কে যেতে রাজি আছো?
প্রথম কেউ কোনো কথা বললো না, তারপর জাফর নামে একজন মেজর হাত তুলে বললো, আমি রাজি আছি স্যার। এ ছাড়া সত্যি আর উপায় নেই। ইনসানাল্লা,তাদের খুঁজে বার করবোই।
কাদির বললেন, তুমি পাঁচজন জওয়ানকে সঙ্গে নিয়ে যাও! খুদা হাফেজ।
মেজর জাফর জওয়ানদের সঙ্গে নিয়ে গুঁড়ি মেরে সেই ঝোঁপ থেকে বেরুলো। ঝিঁঝির ডাক ছাড়া আর কোনো শব্দ শোনা যাচ্ছে না। সামনেই একটা জলাভূমি, তারা নেমে পড়লো সেই ঠাণ্ডা কনকনে পানির মধ্যে। সেটা খুব গভীর নয়। সেটা পেরিয়ে এসে একটা মাঠ, কাছাকাছি কয়েকটা অর্ধ-দগ্ধ বাড়ি, জনমনুষ্য নেই। একটা তীব্র পচা গন্ধ নাকে এলো, ওখানে নিশ্চয়ই কয়েকটা লাশ পড়ে আছে। টর্চের আলো ফেলে দেখা গেল, একটা বাড়ির উঠোনে একটি মাঝবয়েসী উলঙ্গ স্ত্রীলোক, দুটি শিশু আর একজন বৃদ্ধ মুখ থুবড়ে পড়ে আছে, অন্তত চার-পাঁচ দিনের বাসী মড়া। এই পথ দিয়ে পাকবাহিনী যাওয়ার নির্ভুল চিহ্ন।
মাঠের অর্ধেকটা আসতেই দূরে একটা ক্ষীণ শব্দ পাওয়া গেল, কোনো গাড়ির হেডলাইটের একঝলক আলো। ঐখানে কোনো রাস্তা আছে, ঐ পর্যন্ত যেতেই হবে।
মাঠের মাঝখানে কয়েকটা ঝুপসি গাছ। তার কাছাকাছি আসতেই হঠাৎ কান ফাটানো শব্দ, ছুটে এলো একঝাঁক বুলেট। সঙ্গে সঙ্গে জাফরের দলটা উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ে পজিশান নিল। একজন জওয়ান এর মধ্যেই মারা গেছে, একজন কাতরাচ্ছে।
দু’পক্ষের গুলি বিনিময় হলো পাঁচ মিনিট ধরে। জাফরের দলটা খোলা মাঠের মধ্যে, অন্যরা গাছের আড়ালে থাকার সুবিধে পেয়েছে। জাফরদের এখন পেছন ফিরে পালাবারও কোনো উপায় নেই, তবু দু’জন জওয়ান মাথাখারাপের মতন উঠে দাঁড়িয়ে দৌড়োবার চেষ্টা করতেই ফুড়ে গেল গুলিতে। আরও একজন আগে মারা গেছে। একটা মৃতদেহকে আড়াল করে জাফর চেঁচিয়ে উঠলো, আই সারেন্ডার!
গাছের আড়াল থেকে লাইট মেশিনগান নিয়ে বেরিয়ে এলো বাবুল চৌধুরী আর শফি। মাত্র দেড়জন!
বাবুল এখন মুক্তিবাহিনীর কোনো বিশেষ সেক্টরে নেই। একটা গ্রাম থেকে কুড়িয়ে পাওয়া ছেলে শফিকে নিয়ে সে একাই ঘোরে। পলাতক সৈন্যদের খুঁজে খুঁজে ধরাই তার কাজ। মাঝে মাঝে যখন তার গোলাবারুদ ফুরিয়ে যায় তখন মুক্তিবাহিনীর কোনো দলে এসে দু-তিন দিনের জন্য যোগ দেয়। তার কাছে খালেদ মশারফের দেওয়া পরিচয়পত্র আছে।
মাত্র দেড়জনকে দেখে মেজর জাফরের হাত কামড়াতে ইচ্ছে করলো। আর একটু সাবধান হলে কি এদের খতম করা যেত না? হঠাৎ ঘাবড়ে গিয়ে একসঙ্গে এত ফায়ারিং করা মূখামি হয়ে গেছে। জাফরের কাছে আর গুলি নেই। সে মাথার ওপর হাত তুলে দাঁড়িয়ে আছে, তার সারা শরীর কাঁপছে। ইন্ডিয়ান আর্মি নয়, মুক্তিবাহিনীর লোক, এরা বন্দী রাখে না।
শফি বেশি উৎসাহে আগে এগিয়ে এসেছে, মেজর জাফর এক লাফ দিয়ে তার গলা চেপে। ধরে কাছে টেনে নিল। কোমর থেকে একটা ছুরি তুলে বললো, খবরদার, আমাকে ধরলে এই বাচ্চাটাকে শেষ করে দেবো!
পরিষ্কার জ্যোৎস্না রাত। পাঁচটা মৃত সৈনিক এদিক ওদিক ছড়ানো। বিশাল শক্তিশালী মেজর জাফর শফির গলা চেপে ধরেছে, জ্যোৎস্নায় চকচক করছে ছুরির ফলা। এল এম জি-টা হাতে নিয়ে কয়েক মুহূর্ত স্থিরভাবে দাঁড়িয়ে রইলো বাবুল, তারপর কঠিন গলায় বললো, কিল হিম! কিল হিম! তোমরা পঁচিশ-তিরিশ লাখ বাঙালীকে মেরেছো, আরও একটা বাচ্চাকে মারবে, তাতে আর এমন বেশি কী হবে? শফি, তুই মরতে ভয় পাস?
শফি তার কৈশোরের সদ্য ভাঙা গলায় চেঁচিয়ে বললো, না বাবুল ভাই। ও আমারে মারুক, তারপর তুমি অরে কুত্তা দিয়া খাওয়াইও। জয় বাংলা! জয় বাংলা!
এল এম জি-টা উঁচু করে বাবুল বললো, ওর কথার মানে বুঝলে?
মেজর জাফর কুত্তা শব্দটা বুঝেছে। তারচেয়েও বাবুলের কণ্ঠস্বর তাকে ক্ষণেকের জন্য উন্মনা করে দিল। তারপরই সে শফিকে ঠেলে দিয়ে আবেগের সঙ্গে চেঁচিয়ে উঠলো, চৌধুরী সাব! বাবুল চৌধুরী? ম্যায় মেজর জাফর…
বাবুল এবার এগিয়ে এসে ওর পেটে এক লাথি মেরে বললো, মেজর জাফর! ইদ্রিসের বাচ্চা! বল হারামজাদা, মনিরা কোথায়?
মাটিতে ছিটকে পড়ে জাফর বললো, আমাকে বাঁচাও, আমাকে বাঁচাও, আমাকে বাঁচাও!
বাবুল তার কপালের ওপর এল এম জি র নলটা ঠেকিয়ে বললো, আগে বল, মনিরা কোথায়। আমার বাড়ি থেকে যে মেয়েটিকে তার লোকেরা ধরে নিয়ে গিয়েছিল…
জাফর বললো, আমি জানি না! আল্লার কশম, আমি জানি না। তারা অন্য লোক, আমি তো তোমাকে বলেছিলাম…
বাবুল বললো, আমি ঠিক তিন গুনবো!
সে জাফরের বুকের ওপর একটা পা দিয়ে দাঁড়ালো।
পেছন দিক থেকে পাওয়া গেল অনেক পায়ের শব্দ। গোলাগুলির আওয়াজ শুনে। যৌথবাহিনীর একটি দল ছুটে এসেছে। মুক্তিযোদ্ধাদের একজন বাবুলকে চিনতে পেরেছে, সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, সে উল্লাসে ফেটে পড়ে বললো, স্যার, আপনি একা এই সবকটাকে খতম করেছেন?
ইন্ডিয়ান কমান্ডার জাফরকে মারতে দিল না, অন্যদের সরিয়ে দিয়ে সে জাফরকে মাটি থেকে তুলে তার র্যাংক দেখে নিল। তারপর গম্ভীরভাবে বললো, মুক্তির ছেলেরা তোমাকে খুন করতে চায়। আন্তজাতিক আইন অনুযায়ী আমি তোমাকে যুদ্ধবন্দী হিসেবে রাখতে পারি, যদি তুমি দেখিয়ে দাও তোমার সঙ্গীরা কোথায় আছে। তাতে যদি রাজি না থাকে, তা হলে আমি তোমাকে মুক্তিদের হাতে তুলে দিয়ে অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে থাকবো!
একেবারে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসে মেজর জাফর এমনই বিহ্বল হয়ে গেছে যে সে কোনো কথাই বলতে পারছে না। সে ইন্ডিয়ান কমান্ডারের হাত শক্ত করে চেপে ধরেছে।
বাবুল বললো, কমান্ডার, ওকে আমার হাতে দিন। আমি ওকে ধরেছি। ওর সঙ্গে আমার। পার্সোনাল স্কোর মেটাবার আছে!
জাফর সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠলো, না, না, আমি পথ দেখিয়ে নিয়ে যাচ্ছি!
একজন জাফরের পিঠে একটা স্টেনগানের নল চেপে ঠেলতে লাগলো। জলাভূমির মাঝখানে এসে যৌথবাহিনীর সৈন্যরা ছড়িয়ে পড়লো ঝোঁপটার চারদিকে, জাফরকে দিয়ে বলানো হলো সারেন্ডার করতে।
তার উত্তরে ছুটে এলো একঝাঁক বুলেট!
ভারতীয় কমান্ডারটি তবু নিজের দলকে আক্রমণ করতে নিষেধ করে চিৎকার করে বললো, পাকিস্তানী সিপাহীলোগ, হাতিয়ার ডাল দো! ইউ আর সারাউন্ডেড!
এবার ঝোঁপের মধ্য থেকে একজন কেউ সঙ্গীদের নির্দেশ দিল, স্টপ ফায়ারিং! স্টপ ফায়ারিং।
মুক্তিযোদ্ধারাই আগে অকুতোভয়ে ছুটে গেল ঝোঁপের মধ্যে। পলাতক পাকিস্তানী দলটির অস্ত্রগুলো কেড়ে নিয়ে তাদের চড় লাথি মারতে লাগলো রাগের চোটে!
ইন্ডিয়ান কমান্ডারটি জোরালো টর্চ ফেলে ব্রিগেডিয়ার কাদিরকে দেখে আনন্দে শিস দিয়ে উঠলো। পোশাকের তারকা দেখলেই চেনা যায় ব্রিগেডিয়ার। এত উঁচু র্যাঙ্কের বন্দী পাওয়া ভাগ্যের কথা!
তেঁতুলগাছের নিচে রক্তশূন্য মুখে দাঁড়িয়ে আছেন ব্রিগেডিয়ার কাদির। মুক্তিবাহিনীর ছেলেরা তাঁকেও কয়েকটা চড় মেরেছে। একবার তিনি ভেবেছিলেন রিভলভারটা দিয়ে আত্মহত্যা করবেন। করাচীতে স্ত্রী-পুত্র-কন্যার মুখ মনে পড়ে গেল। ইন্ডিয়ান আর্মির হাতে ধরা পড়লে তবু বেঁচে থাকার আশা থাকে।
রিভলভারটা ইন্ডিয়ান কমান্ডারের পায়ের কাছে ছুঁড়ে দিয়ে ব্রিগেডিয়ার ধরা গলায় বললেন, আমাকে মুক্তির হাতে দিও না! যদি মারতে হয় তুমি মারো!
ইন্ডিয়ান কমান্ডার বললো, তুমি জেনিভা কনভেনশন অনুযায়ী সবরকম সুযোগ সুবিধে পাবে। আমাদের জেনারেল মানেক শ’র ঘোষণা রেডিওতে শোনোনি?
শফি জাফরকে দেখিয়ে বললো, এই হারামজাদাটা আমারে ছুরি মারতে আসছিল। এরে শাস্তি দিবেন না?
বাবুল বুঝিয়ে বললো, এই কাপুরুষটি একটি বাচ্চার গলায় ছুরি চেপে ধরেছিল।
ভারতীয় কমান্ডারটি শফিকে কাছে টেনে এনে তার চুলে হাত দিয়ে আদর করতে করতে বাবুলকে বললো, এত ছোট বাচ্চাকে এই যুদ্ধের মধ্যে এনেছেন কেন? আপনারা আমরা লড়াই করছি, তাই কি যথেষ্ট নয়?
বাবুল বললো, এই ছেলেটির কোনো বাড়ি নেই। এর বাবা-মাকে এই শয়তানরা খুন করেছে। এরপর ওর লড়াই করা ছাড়া আর কি উপায় আছে বলো? ও রাইফেল চালাতে জানে!
শফি জাফরের একটা চোখের ওপর থুঃ করে একদলা থুতু ফেললো।
বাবুল তাকে টেনে সরিয়ে নিয়ে গেল। তারপর বন্দীদের সার বেঁধে নিয়ে যাওয়ার যখন ব্যবস্থা হচ্ছে তখন সে আর শফি নিঃশব্দে সরে গেল মল দল থেকে।
এখন যেতে হবে কালিয়াকৈর। সেখান থেকে ঢাকা। সবাই জেনে গেছে যে শেষ লড়াইটা হবে ঢাকায়। সেখানে পথে পথে যুদ্ধ চলবে। বাবুল যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সেখানে পৌঁছোতে চায়।
তারা আগে ফিরে গেল মাঠের মধ্যে সেই ঝুপসি গাছতলায়। এখানে বাবুলের কাঁধের ঝোলাটা পড়ে আছে। গাছতলায় বসে সে ঝোলা থেকে একটা পাঁউরুটি বের করে অর্ধেকটা ছিঁড়ে দিল শফিকে। গত দু দিন ধরে তারা বাসী, শুকনো পাঁউরুটি খেয়ে যাচ্ছে।
খেতে খেতে বাবুল জিজ্ঞেস করলো, কী রে শফি, এখন হাঁটতে পারবি, না একটু ঘুমিয়ে নিবি?
শফির সত্যি ঘুমে চোখ টেনে এসেছে, তবু সে বললো, না, হাঁটতে পারমু! দিনের বেলা ঘুমাবো।
বাবুল বললো, এক কাজ কর, ঘণ্টাখানেক ঘুমিয়ে নে। আমি পাহারা দিচ্ছি।
শফি বললো, তাইলে তুমি আগে ঘুমাও, আমি পাহারা দেবো।
কিছু একটা শব্দ পেয়ে বাবুল শফির মুখটা চেপে ধরলো। এমন ফটফটে জ্যোৎস্নার মধ্যে কেউ নিজেকে সম্পূর্ণ লুকোতে পারে না। পাকা সড়কের দিক থেকে অন্তত পাঁচজন লোক মাঠের মধ্য দিয়ে বুকে হেঁটে এই দিকেই এগোচ্ছে। মৃদু ছড় ছড় শব্দ হচ্ছে মাটিতে।
এরা শত্রু না মিত্র সেটাই বোঝা শক্ত। মাঝে মাঝে এই ভুল হচ্ছে, ইন্ডিয়ান আর্মির সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের গুলি বিনিময় হয়ে যাচ্ছে।
শফিকে নিয়ে বাবুল গাছের আড়ালে চলে গিয়ে নিঃসাড়ে দাঁড়ালো। ওদের সে আরও কাছে আসতে দিতে চায়। ওরা এই গাছতলাতেই পৌঁছোতে চেষ্টা করছে।
যখন ওরা প্রায় পঞ্চাশ গজের মধ্যে এসে পড়েছে, তখন বাবুল নিঃসন্দেহ হলো যে এরা দলছুট পাকিস্তানী সৈন্য। প্রত্যেকেই লম্বা চওড়া, ইন্ডিয়ান আর্মির এ রকম মাত্র পাঁচ জন বুকে হেঁটে মাঠ দিয়ে আসবে না।
বাবুল একঝাঁক বুলেট বর্ষণ করলো। শফিও তার রাইফেল চালালো।
প্রতিপক্ষ উত্তর দেবার কোনো চেষ্টাই করলো না। একজন লাফিয়ে উঠে দু হাত উঁচু করে চ্যাঁচাতে লাগলো, সারেন্ডার! সারেন্ডার!
ধপাধপ করে তারা তাদের রাইফেল ও একটা স্টেনগান ছুঁড়ে দিল সামনে। বাবুল তবু ঝুঁকি নিল না। সে গাছের আড়াল থেকেই হুকুম দিল, সবাই মাথার ওপর হাত তুলে এগিয়ে এসো!
তিনজন এগোতে লাগলো সেইভাবে, দু’জন উঠতে পারলো না। যে তিনজন বেঁচে আছে, তাদের মধ্যে একজন পাকিস্তানী ক্যাপ্টেন। তারা কাছাকাছি আসতেই বাবুল আবার হুকুম দিল, এবার মাটিতে হাঁটু গেড়ে বসো।
এবার বাবুল আর শফি গাছের আড়াল থেকে বেরুতেই সেই পাকিস্তানীরা বিস্ফারিত চোখে দেখলো দেড়জনক। একজন পেছন ফিরে পাগলের মতন দৌড়োলো হাতিয়ার কুড়িয়ে নেবার জন্য। শফিই নির্ভুল টিপে তাকে ফেলে দিল মাটিতে। ক্যাপ্টেনের পাশের লোকটি দারুণভাবে আহত, সে বসে থাকতে পারলো না, গড়িয়ে গেল মাটিতে। ক্যাপ্টেন হাতজোড় করে বললো, বাঁচাও, আমাকে বাঁচাও!
বাবুল এগিয়ে এসে তাকে একটা লাথি কষিয়ে বললো, বল মনিরা কোথায়?
ক্যাপ্টেনটি হতভম্ব হয়ে বললো, কে? আমি তো জানি না মনিরা কে!
বাবুল তবু তাকে আর একটা লাথি মেরে বললো, শুয়ারের বাচ্চা, আগে বল মনিরাকে কোথায় লুকিয়ে রেখেছিস?
একসময় বাবুল ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে যাতায়াত করতো। আগের মেজর জাফরের সঙ্গে তার পরিচয় ছিল। কিন্তু এই ক্যাপ্টেনটি সম্পূর্ণ অচেনা, তবু তাকে সে বারবার জিজ্ঞেস করতে লাগলো মনিরার কথা।
লোকটি মার খেয়ে হাউ হাউ করে কেঁদে কেঁদে বলতে লাগলো, বাঁচাও, বাঁচাও!
বাবুল দাঁতে দাঁত চেপে বললো, শয়তান, আগে যখন বাঙালীরা এইভাবে দয়া চেয়েছে, তখন কারুকে ছেড়েছিস?
সঙ্গে একটা বন্দী নিয়ে যাওয়ার অনেক ঝামেলা। একে ছেড়ে দেওয়ারও কোনো মানে হয় না, একজনকে ছাড়া মানেই ঢাকায় আর একজন শত্ৰু বৃদ্ধি। নিজের বুলেট আর খরচ না করে সে শফিকে বললো, এই লোকটাই তোর বাবা-মাকে মেরেছে। একে শেষ করে দে!
শব্দটা হওয়ার পর বাবুল শফির কাঁধে হাত দিয়ে বললো, এখন আর ঘুম হবে না, চুল। একেবারে ঢাকায় পৌঁছে লড়াই শেষ করে ঘুমোবো।