ঊনষষ্টিতম অধ্যায় – অঙ্গমন্ত্রের বিশেষ বিবরণ
ভগবান বলিলেন, আমি শক্তি সকলের বিশেষ করিয়া চণ্ডিকার সেই অঙ্গ মন্ত্র সকলের কীর্তন করিতেছি। দেবী গৌরী ইহা দ্বারা আরাধিতা হইয়া চতুৰ্বর্গ প্রদান করেন। ১
অন্তে তালব্য বর্ণ, ষষ্ঠ স্বর আদি ও চন্দ্রবিন্দুযুক্ত, কিংবা উপাত্ত পূর্বোক্ত বর্ণযুক্ত অথবা আদি বাগভব বীজ। ২
এই তিনটি চণ্ডিকার নেত্ৰবীজ। এই তিনটি নেত্রবীজ যথাক্রমে বাম ললাট এবং দক্ষিণ চক্ষুতে বিন্যস্ত। ৩
ইহা ধর্ম, অর্থ, কাম ও মোক্ষের কারণ হয়। এই মন্ত্র অতিশয় গুহ্য এবং দুৰ্গাবীজ নামে বিখ্যাত। ৪।
যখন দেবী মহামায়া কাত্যায়ন-মুনির আশ্রমে দেবগণ কর্তৃক স্তুত হইয়া দেবতাদিগের তেজে শরীর ধারণ করিয়াছেন, দেবী নেত্ৰত্ৰয় বিশিষ্ট মূল মূর্তিতেই অবতীর্ণ হইয়াছিলেন। ৫
সেই তেজোময়ী জগদ্ধাত্রী মহিষাসুরনাশিনী দেবী নিখিল দেবগণের তেজে শরীর ধারণ করেন। ৬
দেবগণ কর্তৃক একে একে দত্ত অস্ত্রসকল গ্রহণ করিয়া ব্ৰহ্মাদি দেবগণ কর্তৃক সংস্তুত হইয়া সগণ, সানুবন্ধ এবং অমাত্য বল ও বাহনের সহিত বর্তমান মহিষাসুরকে বধ করেন।
মহিষাসুর নিহত হইলে দেবগণ এই মন্ত্র দ্বারাই দেবীর পূজা করেন এবং সেই দেবীও লোকে সেই মহিষমর্দিনী মূর্তিতে বিখ্যাত হন। ৮
সেই অবধি সর্বত্র সেই সকল লোক সেই মূর্তিরই পূজা করে। মূল মূর্তি এক্ষণে অন্তর্হিত, এই মহিষমর্দিনী মূর্তিই প্রসিদ্ধ হইয়াছে। ৯
দেবতাদিগের বর দানহেতু এবং ব্ৰহ্মাদির উপযোগ হেতু ঐ মূর্তিকে সকলে পূজা করে, হে ভৈরব! আমি সেই মূর্তির বর্ণনা করিতেছি, শ্রবণ কর। ১০
মস্তকে জটাজুটসমাযুক্ত এবং অর্ধচন্দ্র শেখরস্বরূপ বিরাজমান, তিন লোচনে শোভিত এবং পূর্ণচন্দ্ৰতুল্য দীপ্তিমান্। ১১
বর্ণের আভা তপ্তকাঞ্চন তুল্য, তিনি সুপ্রতিষ্ঠিতা এবং সুলোচনা, তাহার শরীর নবীন যৌবন সম্পন্ন এবং সকল আভরণে বিভূষিত। ১২
দন্তগুলি অতি মনোহর, স্তনদ্বয় পীন এবং উন্নত, তাহার শরীরসংস্থান ত্রিভঙ্গক্রমে স্বয়ং মহিষমর্দিনী। ১৩
মৃণালসদৃশ কোমল অথচ আয়ত দশবাহুযুক্ত, ঐ দশ বাহুর মধ্যে দক্ষিণ পাঁচ বাহুতে যথাক্রমে এই সকল অস্ত্র আছে–দক্ষিণের সর্বোপরি বাহুতে ত্রিশূল, তাহার নীচে ক্রমে ক্রমে খড়্গ, চক্র। ১৪
তীক্ষ্ণবাণ এবং শক্তি; পাঁচ বাম বাহুতেও যথোর্ধ খেটক, পূর্ণচাপ, পাশ ও অঙ্কুশ। ১৫
অধস্থ বাহুতে ঘণ্টা বা পরশু। দেবীর নীচে ছিন্নশির মহিষ দেখিতে পাওয়া যায়। ১৬
মহিষের শিরচ্ছেদ হওয়াতে উহা হইতে একটি খড়্গপাণি দানব উৎপন্ন হইয়াছে। তাহার বক্ষঃস্থল শূলদ্বারা বিদ্ধ এবং সর্বশরীর মহিষের অন্ত্রে বিভূষিত। ১৭।
মহিষের রক্তে তাহার শরীর রক্তবর্ণ এবং চক্ষুদ্বয়ও আরক্ত, নাগপাশ তাহাকে বেষ্টন করিয়া আছে এবং তাহার মুখ ভ্রুকুটিতে কুটিল হইয়াছে। ১৮
তাহার কেশ একত্র করিয়া দুর্গা বাম হস্তে ধারণ করিয়াছেন। তাহার মুখ দিয়া রক্ত বমন হইতেছে। এইরূপ অবস্থায় দেবী সিংহকে তাহার প্রতি ধাবিত করিয়াছেন। ১৯
ঐ সিংহের উপর দেবীর দক্ষিণ পাদ বিন্যস্ত, বামপাদ একটু ডিঙ্গামারা ভাবে, কিন্তু তাহার অঙ্গুষ্ঠ মহিষের উপর। ২০
উগ্রচণ্ডা, প্রচণ্ডা, চণ্ডোগ্রা, চণ্ডনায়িকা, চণ্ডা, চণ্ডবতী, চামুণ্ডা এবং চণ্ডিকা সর্বদা এই অষ্টশক্তিতে পরিবেষ্টিত; সেই ধর্ম, কাম, অর্থ এবং মোক্ষদায়িনী দেবীকে এইরূপে সর্বদা চিন্তা করিবে। ২১-২২
এই দেবীর অঙ্গমন্ত্রই দুর্গাতন্ত্র নামে বিখাত। ঐ ধর্ম, কাম এবং অর্থের সাধন মন্ত্রকে একমনা হইয়া শ্রবণ কর। ২৩
অন্তে বহ্নি-ভাৰ্য্যা, তৎপূর্বে ঢন্তে, (ণ) চ কার হইতে আদি ষষ্ঠস্বর (ই), তৎপূর্বে হান্ত (ক্ষ), তৎপূৰ্বে অগ্নি। তাহার পূর্বে দুর্গে দুর্গে এবং ওঙ্কার ইহাই দুর্গামন্ত্র নামে খ্যাত; তবেই হইল “ওঁ দুর্গে দুর্গে রক্ষণি স্বাহা”। ২৪
সূর্য্য, মকর রাশি হইলে যে শুক্লপক্ষের পঞ্চমী হইবে, তাহাতে এই মন্ত্র দ্বারা বিধিপূর্বক সেই মঙ্গলময়ী দেবীকে বিধানানুসারে পূজা করিবে। ২৫
তাহার পর সেই মহাদেবীকে শুক্ল অষ্টমীতে যথাবিধি পূজা করিয়া নবমী দিবস প্রভূত বলিদান করিবে। ২৬
সন্ধ্যাকালে আপনার গাত্রের রক্তে প্রলিপ্ত বলি প্রদান করিবে। এইরূপ করিলে নিত্য কল্যাণযুক্ত হইয়া প্রমুদিত হয়। ২৭
পুত্র, পৌত্র, ধন ও ধান্যে সম্পূর্ণ হয় এবং দীর্ঘায়ু হইয়া ইহলোকে শুভ প্রাপ্ত হয়। ২৮
চৈত্র মাসের শুক্ল পক্ষের অষ্টমীতে তৎকাল-সম্ভূত অন্যান্য পুষ্প এবং অশোক পুষ্পদ্বারা এই মন্ত্র উচ্চারণপূর্বক যে দেবীর পূজা করে, তাহার শোক রোগ অথবা কোনরূপ দুর্গতি হয় না। ২৯
জ্যৈষ্ঠ মাসের শুক্ল পক্ষে অষ্টমীতে উপবাসী হইয়া নবমীর দিন, তিল রম্য যাবক, মোদক, ক্ষীর, আজ্য, মধু, শর্করা, পিষ্টক, নানাবিধ পশুর রুধির ও মাংস দ্বারা পূজা করিবে। ৩০-৩১
তাহার পর শুক্লাদশমীতে তিলমিশ্রিত জল দ্বারা এই দুর্গাতন্ত্র মন্ত্র উচ্চারণ পূর্বক তিনবার অঞ্জলি দান করিবে। ৩২
দশমীর দিন এইরূপ করিলে দশজন্মর্জিত যাবতীয় পাপের নাশ হয় এবং সে ব্যক্তি দীর্ঘায়ু হয়। ৩৩
আষাঢ় ও শ্রাবণ মাসের শুক্ল পক্ষের অষ্টমীর দিবস দেবীর পরম প্রীতিকর পবিত্ৰারোহণ করিবে। ৩৪
উক্ত দুর্গাতন্ত্র মন্ত্রদ্বারা পবিত্ৰারোহণ করিবে। বিশেষতঃ শ্রবণা হইতে দেবীর পবিত্ৰ নিৰ্মাণ করিবে। ৩৫
আষাঢ় বা শ্রাবণ মাসে সমুদয় দেবতারই পবিত্ৰারোহণ করিবে, তাহা হইলে সংবৎসর শুভ ফল হইবে। ৩৬
ধনদ অর্থাৎ কুবেরের পবিত্ৰারোহণের জন্য প্রতিপৎ তিথি উক্ত হইয়াছে এবং তিথির মধ্যে শ্রেষ্ঠ তিথি দ্বিতীয়া লক্ষ্মীদেবীর পবিত্ৰারোহণে উক্ত। ৩৭-৩৮
ভবতারিণী (ভামিনী) দেবীর তৃতীয় এবং তাহার পুত্রের চতুর্থী। সোম রাজের পঞ্চমী এবং কার্তিকেয়ের ষষ্ঠী। ৩৯
ভাস্করের সপ্তমী, দুর্গার অষ্টমী, মাতৃকাদিগের নবমী এবং বাসুকির জন্য দশমী নির্দিষ্ট। ৪০
ঋষিদিগের পবিত্ৰারোহণের জন্য একাদশী শ্রেষ্ঠ তিথি, চক্রপাণির জন্য দ্বাদশী, অনঙ্গের ত্রয়োদশী এবং আমার চতুর্দশী। ৪১
ব্রহ্মা এবং দিকপালগণের পবিত্ৰারোহণ নিমিত্ত পৌৰ্ণমাসী তিথি নির্দিষ্ট। যে মনুষ্য দেবতাগণের পবিত্ৰারোহণ কার্যের অনুষ্ঠান না করে, কেশব তাহার সংবৎসরকৃত পূজার ফল হরণ করেন। এই নিমিত্ত শ্রেষ্ঠ পরিত্ৰারোহণ কাৰ্য্য যত্নপূর্বক অনুষ্ঠান করিবে। ৪২-৪৩
এই পবিত্রারোহণ কার্য করিলে, অনেক লাভ হয় এবং পূজা সফল হয়। বিজ্ঞ ব্যক্তি যে সূত্ৰদ্বারা পবিত্ৰ নিৰ্মাণ করিবে, হে ভৈরব! আমার কথামত তাহা শ্রবণ কর। ৪৪
প্রথমে দর্ভসূত্র, তাহার পর পদ্ম সূত্র, অনন্তর সুপবিত্ৰ ক্ষৌম, তদভাবে কার্পাস। পট্টসূত্র এবং অন্যান্য সূত্র দ্বারা পবিত্ৰ নিৰ্মাণ করিবে না। ৪৫-৪৬
পবিত্র সকল যত্নপূৰ্ব্বক বিচিত্ররূপে নিৰ্মাণ করিবে এবং গন্ধ ও সুরভি মাল্যদ্বারা পবিত্রদিগের যথোচিত অর্চনা করিবে। ৪৭
কন্যা অথবা পতিব্রতা সচ্চরিত্রা প্রমদা, পবিত্রের সূত্ৰ কৰ্ত্তন করিবে; বিধবা দুঃশীলা রমণী পবিত্রের সূত্ৰ কৰ্তন করিবে না। ৪৮
সূচিভিন্ন, দগ্ধ ভস্ম বা ধূম দ্বারা অবগুণ্ঠিত–এইরূপ সূত্ৰ পবিত্ৰনিৰ্মাণ বিষয়ে যত্নপূর্বক ত্যাগ করিবে। ৪৯।
উপভুক্ত, মূষিকদষ্ট, মধ্যে রক্তাদি দ্বারা দূষিত, মলিন এবং নীলি-রাগযুক্ত এই সকল সূত্র যত্নপূর্বক পরিত্যাগ করিবে। ৫০
সূত্র দ্বারা কনিষ্ঠ, উত্তম এবং মধ্যম এই তিন প্রকার পবিত্র নির্মাণ করিবে। সাতাইশ খেয়া সূত্ৰদ্বারা যে পবিত্র প্রস্তুত হয়, উহা কনিষ্ঠ। ৫১
চুয়ান্ন খেয়া সূত্র দ্বারা যাহা নির্মিত হয় উহ মধ্যম এবং মর্ত্যলোকে যশ, কীর্তি, সুখ এবং সৌভাগ্যের বর্ধন। এক শত আট খেয়া সূত্ৰদ্বারা যাহা নির্মিত হয়, তাহার নাম উত্তম। ৫২-৫৩
উহা দিব্যভোগের উৎপাদক পবিত্র, স্বর্গ ও মোক্ষের সাধক; এই উত্তম পবিত্র মহাদেবীকে দান করিয়া মনুষ্য শিবের সাযুজ্য প্রাপ্ত হয়। সাধক, যদি বাসুদেবকে উত্তম পবিত্র দান করে, তাহা হইলে সে বিষ্ণুলোকে গমন করে, সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নাই। ৫৪-৫৫
অষ্টোত্তরসহস্র সূত্র দ্বারা নির্মিত পবিত্রকে রত্নমালা বলে। এইরূপ পবিত্র, মহাদেবীর প্রতি ভক্তি ও মুক্তিপ্রদায়ক। ৫৬।
যে মনুষ্য মহাদেবীকে রত্নমালাসংজ্ঞক পবিত্র প্রদান করে, সে কোটি সহস্র কল্প স্বর্গে থাকিয়া অন্তে শিবত্ব প্রাপ্ত হয়। ৫৭
এইরূপ অষ্টোত্তর সহস্র তন্তুদ্বারা মহাদেবের নিমিত্ত যে মনোহর পবিত্র নির্মিত হয়, উহাকে নাগ-হার বলে। ৫৮
যে মনুষ্য এইরূপ পবিত্র আমাকে দান করে, সে যতগুলি সূত্র দ্বারা ঐ পবিত্র নির্মিত হইয়াছে, তত সহস্র কল্প আমার লোকে প্রমুদিত হয়। ৫৯
এইরূপ অষ্টোত্তর সহস্র তন্তু দ্বারা হরির নিমিত্ত যে পবিত্র নির্মিত হয়, তাহার বনমালা; তাহা প্রদান করিলে বিষ্ণু-সাযুজ্য প্রাপ্ত হয়। ৬০
পূর্বে যে কনিষ্ঠ নামে পবিত্র উক্ত হইয়াছে, উহাকে নাভি পর্যন্ত লম্বমান এবং আপন পরিমাণ অনুসারে দ্বাদশ-গ্রন্থি-যুক্ত করিবে। ৬১
মধ্যম পবিত্ৰও ঊরু পর্যন্ত লম্বমান, উহাকে আত্মপরিমাণানুরূপ চতুর্বিংশতি গ্রন্থিযুক্ত করিবে। ৬২
হে ভৈরব! উত্তম পবিত্র জানু পর্যন্ত লম্বমান, উহাকেও আত্মপরিমাণানু সারে ছত্রিশ গ্রন্থি যুক্ত করা কর্তব্য। ৬৩
নাগহার-নামক পবিত্রে যথাবিধি অষ্টোত্তর শত গ্রন্থি করা কর্ত্তব্য। তাদৃশ আর যে সকল পবিত্র উক্ত হইয়াছে, তৎসমুদায়েও ঐ পরিমাণে গ্রন্থি করিবে। ৬৪
যেরূপ সূত্র দ্বারা পবিত্র নির্মাণ করা হইবে, গ্রন্থি সকল তাহার অন্যবর্ণ সূত্র দ্বারা সুলক্ষণান্বিতরূপে নিৰ্মাণ করিবে। কনিষ্ঠ পবিত্রে সপ্তবেষ্টনের পর একটি গ্রন্থি করিবে। ৬৫
মধ্যম বেষ্টন তাহার দ্বিগুণ। এবং উত্তমের বেষ্টন তাহার দ্বিগুণ। পবিত্র সকলের পূর্বদিন অধিবাস করিয়া পর দিবস তাহাতে মন্ত্রের ন্যাস করিবে। ৬৬
ব্রাহ্মণ, দুর্গার বীজ মন্ত্র দ্বারা উহাতে মন্ত্রের ন্যাস করিবে এবং অপর লোকও উহাতে বৈষ্ণবীতন্ত্র-মন্ত্র দ্বারা ন্যাস করিতে পারে। ৬৭-৬৮
বিচক্ষণ ব্যক্তি প্রতিগ্রন্থিতে নিজে মন্ত্র ন্যাস করিবে। এই মালায় সমুদয় গ্রন্থিতে অঙ্গুষ্ঠের অগ্রভাগ দ্বারা মন্ত্রজপ করিয়া মন্ত্রন্যাস করিবে। ৬৯
এইরূপ মন্ত্ৰন্যাস করিয়া ঐ পবিত্র–দেবীর অংশে যোজিত করিয়া দুর্গাতন্ত্র মন্ত্রের বিন্যাস করিবে। ৭০
একটি যজ্ঞপাত্রে সমুদয় পবিত্র স্থাপন করিয়া সেই স্থানে শোভন গন্ধ ও পুষ্পাদি স্থাপিত করিবে। ৭১
হে ভৈরব! তদনন্তর উহাতে অঙ্গুলীর অগ্রভাগ দ্বারা তত্ত্বন্যাস করিবে। মূলমন্ত্র দ্বারা বিষ্ণুর তত্ত্বন্যাস করিবে। মন্ত্ৰন্যাস-কালে দ্বিজাতিগণ ‘ইদং বিষ্ণু’ এই মন্ত্র পাঠ করিবে। ৭২
মন্ত্রবিন্যাসকালে শূদ্রেরা দ্বাদশার মন্ত্র উচ্চারণ করিবে এবং প্রাসাদ মন্ত্র দ্বারা আমার তত্ত্বন্যাস করিবে। ৭৩
ঐ মন্ত্র দ্বারা আমার মন্ত্ৰন্যাসও করিবে এবং দানও করিবে। পবিত্র সকল–কুঙ্কুম, ঊশীর, কর্পূর এবং চন্দনাদি বিলেপন দ্বারা লিপ্ত করিয়া তাহাতে তত্ত্বন্যাস করিবে। ৭৪
হে ভৈরব! মনুষ্য প্রযত হইয়া বৈষ্ণবী তন্ত্রমন্ত্র অথবা দুর্গাতন্ত্র দ্বারা মণ্ডলে দেবীর পূজা করিয়া দুর্গাবীজ দ্বারা দেবীর মস্তকে পবিত্র প্রদান করিবে। ৭৫-৭৬
যে যে দেবতার যেরূপ যেরূপ পদক্রম, যেরূপ যেরূপ মণ্ডল, যেরূপ যেরূপ ধ্যান এবং পূজন, সেই সেই দেবতাকে সেইরূপ মন্ত্রাদি দ্বারা যত্নপূর্বক পূজা করিয়া তাহারই বীজ এবং মন্ত্র দ্বারা তাঁহার মস্তকে পবিত্র দান করিবে। ৭৭-৭৮
হে ভৈরব! সকল দেবেরই পূজা সমাপনার্থ পবিত্র সময়ে দেবতাদিগকে পবিত্র দান করিবে। ৭৯
অগ্নি, ব্ৰহ্মা, ভবানী, গণেশ, অনন্ত, স্কন্দ, সূৰ্য্য, মাতৃগণ, দিকপাল এবং নব গ্রহ–ইহাদের প্রত্যেককে ঘটে পূজা করিয়া সমাহিত চিত্তে প্রত্যেকের মস্তকে পবিত্র দান করিবে। ৮০-৮১
পঞ্চগব্য চরু নিৰ্মাণ করিয়া উহা দ্বারা তিনবার দেবীর হবন করিয়া তথা বিধি বিষ্ণু ও শম্ভুরও হবন করিবে। ৮২
সাধক, কেবল আজ্য দ্বারা অষ্টোত্তর শত তিল ও আজ্য দ্বারা অষ্টোত্তর শত আহুতি দেবীকে ও আমাকে অর্পণ করিবে। ৮৩
বৈষ্ণব ব্যক্তি ধর্ম, কাম এবং অর্থের সিদ্ধির নিমিত্ত এইরূপ বিধানে বিষ্ণু প্রভৃতিরও পবিত্ৰারোহণ করিবে। ৮৪
নানাবিধ নৈবেদ্য, পেয়, অনেক প্রকার পিষ্টক, মোদক, কুষ্মাণ্ড, নারিকেল, খর্জুর, পনস, আম্র, দাড়িম্ব, কর্কন্ধু, দ্রাক্ষাদি বিবিধ ফল, সকল প্রকার ভক্ষ্য ও ভোজ্য, মদ, মাংস, ওদন, গন্ধ পুষ্প, মনোহর, ধূপ, দীপ, বসন ও ভূষণ এই সকল উপচার দ্বারা সাধক দেবীর পূজা করিবে। ৮৫-৮৭
এবং রাত্রিকালে নট, নর্তক ও বেশ্যা দ্বারা নৃত্য গীত করাইয়া আনন্দিত হইয়া জাগরণ করিবে। ৮৮
দ্বিজাতিগণের সহিত ব্রাহ্মণ, জ্ঞাতি কুটুম্বদিগকে ভোজন করাইবে। পবিত্রারোহণ সম্পন্ন হইলে সুবর্ণ, গো, ধেনু, তিল, বসন বা অশোক বৃক্ষ দক্ষিণারূপ দান করিবে। অনন্তর, সাধক, বক্ষ্যমাণ মন্ত্র পাঠ করিবে। ৮৯
মণি, বিদ্রুম মালাদ্বারা এবং মন্দার পুষ্প দ্বারা তোমার এই বাৎসরিক পূজা হইতে থাকুক। ৯১।
তাহার পর পূজা এবং প্রতিপত্তিপূর্বক দেবীর বিসর্জন করিবে। এইরূপে যথাবিধি দেবীর পবিত্ৰ-দান সম্পন্ন হইলে বাৎসরিক পূজা সম্পূর্ণ হয়। এই কার্য্যের অনুষ্ঠান করিয়া মনুষ্য একশত কোটি কল্প দেবীর গৃহে বাস করে এবং সেই স্থানে তাহার অতুল-সুখ সৌভাগ্য ও সমৃদ্ধি লাভ হয়। ৯২-৯৪
ঊনষষ্টিতম অধ্যায় সমাপ্ত। ৫৯