কলিমউল্লাহর বাবুর্চি বাচ্চু মিয়া ভোল পাল্টে বিহারি হয়ে গেছে। বিহারি হবার জন্যে তাকে খুব বেশি পরিশ্রম করতে হয় নি–মাথার চুল ছোট ছোট করে কাটতে হয়েছে, একটা সানগ্লাস কিনতে হয়েছে, গলায় বাঁধার জন্যে বাহারি রুমাল। প্যান্টের পকেটে রাখার জন্যে মুখ বন্ধ চাকু।
প্রতিদিনই ঢাকা শহরে সে কিছুক্ষণের জন্যে ঘুরতে বের হয়। তখন মুখ ভর্তি থাকে পান, হাতে সিগারেট। তার গা থেকে ভুরতুর করে আন্তরের গন্ধ বের হয়।
লোকজন তার দিকে ভীত চোখে তাকায়। বাচ্চু মিয়ার বড় ভালো লাগে। যে-কোনো পান-সিগারেটের দোকানের সামনে সে যখন দাড়াম, দোকানি তটস্থ হয়ে পড়ে। কীভাবে খাতির করবে বুঝতে পারে না। বাচ্চু মিয়া পানের পিক ফেলে ঢেকুরের মতো শব্দ করে (ঢেকুরের শব্দ করাটা সে সম্প্রতি আয়ত্ত করেছে। এই শব্দেও লোকজন চমকায়। চমকানি দেখেও তার বড় ভালো লাগে।) এবং পিক করে পানের পিক ফেলে। বিহারিদের পানের পিক ফেলা বাঙালিদের মতো নয়। তারা আয়োজন কয়ে পিক ফেলে। এই কায়দাও এখন সে জানে। দোকানি যখন আতঙ্কে অস্থির হয়ে যায়, তখন সে বলে, তুমি সাচ্চা পাকিস্তান? (গলা গম্ভীর।)
দোকানি ক্রমাগত হ্যাঁ-সূচক মাথা নাড়তে থাকে। তখন বাচ্চু মিয়া দ্বিতীয় দফায় পানের পিক ফেলে বলে, সিগ্রেট নিকালো। (গলা আগের চেয়েও গম্ভীর।)
দোকানি তৎক্ষণাৎ এক প্যাকেট সিগারেট (বেশিরভাগ সময় ক্যাপস্টান, এক একটা শলার দাম দশ পয়সা, সহজ ব্যাপার না) বের করে এগিয়ে দেয়।
পান খিলাও। জর্দা ডবল। চুনা কম।
দোকানি অতি দ্রুত পান বানাতে বসে। পান বানাতে শুরু করে। ভয়ে যখন তার হাত কাঁপতে শুরু করে, তখন বাচুর মায়া হয়। সে নিচু গলায় বলে, ভাইজান, এত ডরাইতেছেন কী জন্যে? আমি বিহারি না, বাঙালি। বিহারির ভাব ধরছি।
দোকানির ভয় তাতেও কাটে না। তার চোখে তখন সন্দেহ। নতুন কোনো ফাঁদ নিশ্চয়ই।
ডর খাইয়েন না ভাইজান। আল্লাহর কসম আমি বাঙালি। বাচ্চু মিয়া নাম। খালি যে বাঙালি এইটাও ঠিক না, আমি মুক্তি। (এখন গলার স্বর চাপা।)
দোকানির চোখ বড় বড় হয়ে যায়।
বাচ্চু মিয়া ফিসফিস করে বলে, দিনে বিহারি সাইজা ঘুরি। মিলিটারির খোঁজ-খবর নেই। রাইতে বুম বুম বোমা। রাইতে আমরার বোমার আওয়াজ পান না?
পাই।
কাইল রাইতে পাইছিলেন? ইয়াদ কইরা দেখেন।
জি।
কয়বার পাইছেন বলেন দেখি? তিনবার। সইন্ধ্যা রাইতে দুইবার। এগারোটার সময় একবার। রাইত এগারোটার অপারেশনে আমি ছিলাম। সইন্ধ্যা রাইতে ছিলাম না। এগারোটার অপারেশনে মিলিটারি মারা পড়েছে তিনটা।
এই পর্যায়ে দোকানির বিশ্বাস ফিরে আসে। তার চোখ-মুখ থেকে ভয় কেটে যায়। মুখ হাসি হাসি হয়ে যায়। সে আনন্দিত গলায় বলে, ভাই, চা খাইবেন?
আপনার দোকানে চায়ের ব্যবস্থা কই?
ব্যবস্থা নাই, আনায়ে দেই।
আচ্ছা আনান। তার আগে সিগ্রেটের দামটা নেন। আমরা মুক্তি। জোরজবরদস্তি কইরা জিনিস নেওয়া আমরার নিষেধ আছে।
দোকানি প্রায় চেচিয়ে বলে, কী সর্বনাশ। আপনের কাছ থাইক্যা সিগারেটের দাম নিমু? আমি কি বেজন্মা?
মুক্তি সেজে গল্প করতে বাচ্চু মিয়ার ভালো লাগে। তখন নিজেকে মুক্তিই মনে হয়।
ভাইসব, আপনাদের অপারেশন চলতেছে কেমন?
রাইতে বোমা শুনেন না?
অবশ্যই শুনি। মাঝে মধ্যে দিনেও শুনি।
রাইত-দিন বইল্যা এখন আমরার কিছু নাই। সব সময় শুনবেন। আমরার দলের লোকজন আরো আসতেছে। প্ৰতিদিনই আসে।
আলহামদুলিল্লাহ।
মিলিটারির পাতলা পায়খানা শুরু হয়ে গেছে। বুঝতেছেন না?
অবশ্যই বুঝতেছি।
চরমপত্র শুনেন?
আরে কী বলেন? এইটা না শুনলে চলে? চরমপত্র আর ঢাকা শহরে বোমার শব্দ–এই দুইটা না শুনলে আমার আর আমার পরিবারের ঘুম হয় না।
যতই দিন যাচ্ছে বাচ্চু মিয়ার সাহস ততই বাড়ছে। এখন সে মাঝে-মধ্যে মিলিটারির কোনো দল দেখলে এগিয়ে যায়। মিলিটারিরাও বিহারি দেখলে মনে ভরসা পায়। বাচ্চু মিয়া, তাদের দিকে সিগারেটের প্যাকেট বাড়িয়ে দিতে দিতে বলে–ভাই হালত কিয়া? মিলিটারিদের সঙ্গে তার ভালোই কথাবার্তা হয়।
পানের পিক ফেলতে ফেলতে সে গম্ভীর গলায় বলে, সব মুক্তি ফিনিস করডো। বাঙালি খতম করো। সব খতম।
তার উর্দু ঠিক হয় না। তাতে সমস্যা নেই। বিহারিরাও ভালো উর্দু বলতে পারে না। বিহারিদের চেনার উপায় হলো–বাংলা উর্দুর মিকচার ভাষা। এই ভাষা বাচ্চু মিয়া জানে।
সন্ধ্যার আগে আগে বাচু ঘরে ফিরে আসে। চাল-ডালের খিচুড়ি বসিয়ে দেয়। রান্না ভালো হবে না খারাপ হবে–এটা নিয়ে চিন্তা করার কিছু নাই। সে একা মানুষ। কাঁচা চাল-ডাল চিবায়ে খেলেও কারো কিছু বলার নেই। একা থাকার এই মজা। সে কলিমউল্লাহর বাসাতেই আছে। মাঝে-মাঝে লোকটাকে নিয়ে তার চিন্তা হয়। দশ টাকা হাত খরচ দিয়ে মানুষটা যে গেল, আর তার খোঁজ নেই। মারা যায় নি তো? আজকাল মরে যাওয়া কোনো ব্যাপারই না। ঘর থেকে বের হলে মৃত্যু, ঘরে বসে থাকলেও মৃত্যু। ঢাকা শহরে আজরাইলের কোনো বিশ্রাম নাই।
বাচ্চু মিয়া খাওয়া-দাওয়া শেষ করে রেডিও কানের কাছে নিয়ে শুয়ে পড়ে। স্বাধীন বাংলা বেতারের কোনো কিছুই যেন বাদ না পড়ে। বিশেষ করে চরমপত্র। চরমপত্র যখন হয় তখন বাচু চরমপত্রের লোকটার মতো গলা করে বলে, দে দে গাববুইরা মাইর দে।
চরমপত্ৰ শোনার সময় তার মনে হয়, ইস যদি সত্যি মুক্তি হতে পারতাম তাহলে গাবুইরা মাইর দিতাম। মিলিটারি বুঝত মাইর কী জিনিস। বাঙালি কী জিনিস!
এক শুক্রবারে দরজার কড়া নড়ছে। কড়া নড়ার ভঙ্গি ভালো না। খারাপ কিছু না তো? কোনো বাঙালি এখন এত জোরে কড়া নাড়ে না। বাঙালি কড়া নাড়ে ভয়ে ভয়ে। লালমুখা মিলিটারি?
শুয়োরের বাচ্চারা এখন বাড়ি বাড়ি তালাশ শুরু করেছে। জোয়ান ছেলে সব ধরে নিয়ে যায়। এরা ফিরত আসে না। জোয়ান হওয়ার এই এক বিপদ হয়েছে। বড় পীর গাউসুল আযমের নাম নিয়ে বাক্ষু মিয়া দরজা খুলল। দরজা খুলে হতভম্ব! কলিউমউল্লাহ দাঁড়িয়ে আছেন। দাড়ি, মাথায় টুপি, ইন্ত্রি করা পাঞ্জাবি।
কলিমউল্লাহ বলল, কিরে তুই এখনো আছিস? পালায়ে যাস নাই?
বাচ্চু মিয়া কদমবুসি করতে কবতে বলল, আমি যামু কই? আপনে খরচ বরচ কিছুই দিয়া যান নাই। খায়া না খায়া আছি। আপনি ছিলেন কই?
কলিমউল্লাহ তীক্ষ্ণ চোখে ঘর-দুয়ার দেখতে দেখতে বলল, জিনিসপত্র বিক্রি করেছিস না-কি? খালি খালি লাগছে।
হিসাব মিলাইয়া দেখেন।
চা বানা। চা খাই। ভালো কথা, তুই কি আমার বিছানায় শুয়ে ঘুমাস নাকি? বিছানা দেখে তো সে রকমই লাগে।
বাচ্চু মিয়া জবাব না দিয়ে চা বানাতে গেল। ঘটনা সত্যি।
সে আগে মেঝেতে ঘুমাতো। এখন স্যারের বিছানাতেই ঘুমায়। যুদ্ধের বাজারে সব সমান। আম কাঠ সেগুন কাঠের একই দর। সে কেন বিছানায় ঘুমাবে না?
কলিমউল্লাহ চায়ে চুমুক দিয়ে কিছুটা শান্ত হলো। বাচ্চু মিয়া যে ঘর বাড়ি ফেলে পালিয়ে যায় নি–এটা বড় ব্যাপার। চুরি অবশ্যই করেছে। টুকটাক চুরি তো করবেই।
স্যার, আপনে ছিলেন কই?
কলিমউল্লাহ বলল, বিয়ে করলাম। এই নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম।
বাচ্চু মিয়া অবাক হয়ে বলল, বিবাহ করেছেন?
হুঁ।
ভাবিসাব কই?
আছে। অন্য একটা বাড়িতে তুলেছি।
উনার নাম কী?
নাম দিয়ে তুই কী করবি? ফাজিলের মতো কথা।
উনার সাথে পরিচয় হবে না?
তুই এত বড় তালেবর যে পরিচয় করায়ে দিতে হবে? তুই এই বাড়িতে যে রকম আছিস, সে রকম থাকিবি। বাড়ি পাহারা দিবি। বুঝেছিস?
বুঝলাম।
আমি মাঝে-মধ্যে এসে দেখে যাব। খরচ দিয়া যাব। জিনিস বিক্রি বন্ধ।
বাচ্চু মিয়া নিজের জন্যেও চা বানিয়ে এনেছে। বেয়াদবি যেন না হয়। সে জন্যে অন্যদিকে তাকিয়ে চায়ে চুমুক দিচ্ছে। স্যার বিবাহ করেছেন শুনে ভালো লাগছে। যে বাড়িতে মেয়েছেলে নাই, সে বাড়িতে কাজ করে মজা নাই।
স্যার, দেশ স্বাধীন হইব কবে?
স্বাধীন তো হয়েই আছে। নতুন করে কী হবে? উল্টা পাল্টা কথা বন্ধ।
জি, আচ্ছা বন্ধ।
তুই চাকর, চাকরের মতো থাকিবি। তোর কাজ ভাত রান্দা, বুঝেছিস?
জি, বুঝলাম। তয় এখন অবশ্য ভাত রান্দনের সময় পাই না। কাজকর্মে ব্যস্ত থাকতে হয়।
কলিমউল্লাহ তীক্ষ্ণ গলায় বলল, কী কাজকর্ম?
বাচ্চু মিয়া উদাস গলায্য বলল, মুক্তি হয়েছি স্যার।
কী হয়েছিস?
মুক্তি।
কলিমউল্লাহ অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। স্যারের অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকার দৃশ্যটা বাচ্চু মিয়ার বড় ভালো লাগছে। এখন সে আর ভাত রান্দা চাকর না। সে মুক্তি! মুক্তি কোনো সহজ জিনিস না।
তুই মুক্তি হয়েছিস?
জি। দিনে ঘুমাই, রাইতে অপারেশন। আইজ রাইতেও অপারেশন আছে। দোয়া রাইখেন। চা কি আরেক কাপ খাইবেন? বানাই?
কলিমউল্লাহ হ্যাঁ না কিছু বলল না। বাচ্চু মিয়া চা বানাতে গেল। তার বড় ভালো লাগছে যে স্যার তার কথা পুরোপুরি বিশ্বাস করেছে। যুদ্ধের বাজার বলেই এটা সম্ভব হয়েছে। যুদ্ধের বাজারে মিথ্যা কথাকে সব সময় সত্যি মনে হয়। এইটাই হলো যুদ্ধের বাজারের মজা।
চায়ের কাপ কলিমউল্লাহর হাতে দিতে দিতে বাচ্চু মিয়া বলল, স্যার, একটু দোয়া রাইখেন আইজি আমরার বিরাট অপারেশন আছে। জীবন নিয়া ফিরতে পারব কি-না। আল্লাহ মান্বুদ জানে। মনে হয় না।
অপারেশন কোথায়?
এইটা বলা নিষেধ আছে।
বাচ্চু মিয়া!
জি স্যার।
আমার সঙ্গে ফাজলামি না করলে ভালো হয়। কয়েকদিনের জন্যে বাইরে ছিলাম, এর মধ্যে তুই মুক্তি হয়ে গেছিস?
বাচ্চু মিয়া কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, ধরছেন ঠিক। তয় স্যার মুক্তিতে ঢুকতেছি। কথাবার্তা চলতেছে।
চুপ!
জি আচ্ছা চুপ করলাম। স্যার গোসল করবেন? পানি গরম করি?
না।
গায়ে তেল ডলে দেই? আরাম পাবেন। তেল ডলার পরে গোসলে মজা আছে। দিব?
কলিমউল্লাহ উদার গলায় বলল, দে।
আরামে কলিমউল্লাহর চোখ বন্ধ হয়ে আসছে। তার কাছে মনে হচ্ছে, বাচ্চু মিয়ার শরীর ম্যাসাজেব এই গুণটি তুচ্ছ করার মতো না। মাঝে-মাঝে এই বাড়িতে এসে গা ম্যাসাজ করালে খারাপ হবে না। ম্যাসাজে রক্ত চলাচল ভালো হয়। শরীর ঠিক থাকে। শরীর ঠিক থাকা মানেই মেজাজ ঠিক থাকা।
বাচ্চু মিয়া!
জি স্যার।
এত ভালো ম্যাসাজ তুই শিখেছিস কার কাছে?
আমার ওস্তাদ মনু মিয়া বাবুর্চির শইল ডালতে ডালতে শিখছি।
তোর কাজ যুদ্ধও না, রান্দাও না। তোর কাজ শইল ডলা। বুঝেছিস?
জি স্যার।
যুদ্ধ বিষয়ে একটা পাঞ্জাবি শের শুনবি? জোহর সাহেবের কাছ থেকে শুনে নোট করে রেখেছিলাম। শেরাটা হলো
সুলেহ, কীতিয়ান ফাতেহ যি বাতাবে
কমর জং তি মূল না কাসেয়ে নি
এর অর্থ হলো, যদি শান্তি বিজয় আনে, তাহলে যুদ্ধ করো না। কবিতাটা সুন্দর না?
কলিমউল্লাহ স্যারের ঘাড় ম্যাসাজ করতে করতে বাচু বলল, যুদ্ধ ছাড়া আমরার গতি নাই। বিনা যুদ্ধে পাঞ্জাবি যাবে না। খাবিস জাত।
চুপ থাক।
জি আচ্ছা।
বাঙালি যুদ্ধ করার জাত না। বুঝেছিস?
জি বুঝেছি। তয় মনে একটা বিরাট শখ ছিল যুদ্ধ করব। একটা পাঞ্জাবি মারতে পারলেও জীবন সার্থক হইত।
আর কথা না চুপ।।
জি আইচ্ছা।
ম্যাসাজ অতি আরামের হচ্ছে। কলিমউল্লাহ ঘুমিয়ে পড়েছে। এই সুযোগে বাচ্চু মিয়া তার মনের কথা বলে যাচ্ছে—
স্যার, ধরেন যুদ্ধ করা যদি কপালে নাও থাকে, একটা অপারেশন যদি খালি দেখতে পারতাম! একদিকে গুলি করতাছে মুক্তি আরেক দিকে পাকিস্তান। পাকিস্তান মইরা সাফ, এরা আমরার মুক্তির বালটাও ছিঁড়তে পারল না। এমন একটা দৃশ্য যদি দেখতে পারতাম— দেখি আল্লা কী করে। কপালে থাকলে দেখব। আপনে কী বলেন স্যার? আপনে কি ঘুমে?
কলিমউল্লাহ পুরোপুরি ঘুমে— এই বিষয়ে নিশ্চিত হবার পরেই বাচ্চু মিয়া তার পকেট থেকে দশ টাকার একটা নোট সরিয়ে ফেলল। যুদ্ধের বাজারে চুরি দোষের মধ্যে পড়ে না।
পরম করুণাময় মানুষের সমস্ত ইচ্ছা পূরণ করেন বলেই হয়তো বাচ্চু মিয়ার ইচ্ছাও পূর্ণ করলেন। সে চোখের সামনে মুক্তিদের একটা বড় অপারেশন দেখার সুযোগ পেল। সে বাংলা মোটরের কাছে বিহারি সেজে কয়েকজন পশ্চিম পাকিস্তানি পুলিশ, কালো পোশাকের মিলিটারি এবং সেনাবাহিনীর একজন সেকেন্ড লেফটেনেন্টের সঙ্গে গল্প করছিল। এমন সময় দেখল একটা কালো রঙের টয়োটা গাড়ি তাদের কাছে এসে হঠাৎ যেন ব্রেক করে থামল। মুহুর্তেই গাড়ির জানালা থেকে প্রবল গুলি বর্ষণ হতে লাগল। একটি গ্রেনেড উড়ে এলো গাড়ির ভেতর থেকে।
গাড়ি যেমন উড়ে এসেছিল ঠিক তেমনিভাবে উড়ে চলে গেল। বাচ্চু মিয়া মারা গেল চোখের সামনে ঢাকা শহরের গেরিলাদের ভয়াবহ একটি আক্রমণ দেখে। মৃত্যুর আগ মুহূর্তে খুব কম মানুষের মনই আনন্দে অভিভূত থাকে। তারটা ছিল।