সপ্তপঞ্চাশ অধ্যায় – অঙ্গ–মন্ত্র কথন
মার্কণ্ডেয় বলিলেন;–মহারাজ সগর বেতাল ও ভৈরবের সহিত ভর্গের এই সংবাদ শ্রবণ করিয়া পুনর্বার ঔৰ্বকে জিজ্ঞাসা করিলেন। ১
হে দ্বিজসত্তম! আপনি আমাকে সাবয়ব অঙ্গি-মন্ত্র বলিলেন, এক্ষণে অঙ্গমন্ত্র সকল কীৰ্ত্তন করুন। ২।
তাহাদের যেরূপ তন্ত্র, যেরূপ পূজাসন, যেরূপ পরিশিষ্ট মন্ত্র এবং যেরূপ কবচ এই সকল পৃথক পৃথক্ করিয়া নির্দেশ করুন। ৩
ভগবান উমাপতি বেতাল ও ভৈরবের নিকট যে মন্ত্র এবং রহস্যের সহিত কামাখ্যা দেবীর মাহাত্ম্য বর্ণন করিয়াছেন, তাহাও আমার নিকট বিস্তার পূর্বক কীৰ্ত্তন করুন। ৪-৫
এই মহদদ্ভুত কথা শ্রবণ করিয়া আমার তৃপ্তি হইতেছে না, আপনি যতই বলিতেছেন, ততই আমার কৌতূহল বৃদ্ধি পাইতেছে। ৬
ঔর্ব বলিলেন –হে রাজশার্দূল। ভগবান উমাপতি পুত্রদ্বয়ের নিকট যে মহৎ আখ্যান বলিয়াছিলেন, আমি এক্ষণে তাহা কীত্তন করিতেছি শ্রবণ কর। ৭
ইহা একটি পরম পবিত্র পাপনাশক রহস্য, ইহা মনুষ্যদিগের একটি শ্রেষ্ঠ স্বস্ত্যয়ন এবং গর্ভকালে ইহা পুংবসবনের কাৰ্য্য করে। ৮
ইহা কল্যাণকারক মঙ্গলময় এবং চতুৰ্বৰ্গফল প্রদান করে। শঠ, চঞ্চল চিত্ত, নাস্তিক, অজিতেন্দ্রিয়, দেব দ্বিজ এবং গুরুর সহিত মিথ্যা নিৰ্ব্বন্ধকারী, পাপিষ্ঠ, অভিশস্ত, খঞ্জ কাণাদি রোগ-বিশিষ্ট এবং শ্রদ্ধাহীন ব্যক্তিকে বলিবেও না এবং দিবেও না। ৯-১২
ভগবান উমাপতি বেতাল ও ভৈরবের নিকট মহামায়ামন্ত্ৰকল্প কবচের কীর্তন করিয়া পুনৰ্বার বলিলেন,–আমি তোমাদের নিকট প্রধান মন্ত্র বলিতেছি, ইহাকে সৰ্ব্ব-পূজা-সঙ্গত এবং প্রথম বলিয়া জানিও। ১৩
দেব-পূজাকালে বিধিপূর্বক স্নান ও আচমন করিয়া শুদ্ধ হইয়া পূজা-বেদীর বাহিরে আনুমানিক চতুৰ্হস্ত দূরে গৃহের চত্বর দেশে থাকিয়া মনে মনে গুরুকে, অভীষ্ট দেবতাকে এবং দিকপালগণকে প্রণাম করিবে। ১৪
পূর্বে সেই দিবসে বা অন্য দিবসে যে সকল পাপ অর্জিত হইয়াছে, মনে মনে সেই সকল পাপ স্মরণ করিয়া প্রায়শ্চিত্ত দ্বারা তাহার খণ্ডন করিবে। ১৫
সেই সকল পাপের অপনোদনাৰ্থ বক্ষ্যমাণ মন্ত্রদ্বয়ের পাঠ করিবে। ১৬
হে দেবি! আমার প্রাকৃত-চিত্ত পাপ দ্বারা আক্রান্ত হইয়াছে, আপনি আমার চিত্ত হইতে সেই পাপ দূরীভূত করুন হূঁং ফট্ তোমাকে নমস্কার করি। ১৭।
সূৰ্য্য, চন্দ্র, যম, কাল এবং পঞ্চ মহাভূত এই নয়জন ইহলোকে শুভ এবং অশুভ কর্মের সাক্ষিস্বরূপ। ১৮
তাহার পর ক্রোধপূর্ণ দৃষ্টি দ্বারা হূঁং ফট্ এই মন্ত্র উচ্চারণপূর্বক আপনার পার্শ্বদ্বয় উৰ্দ্ধ এবং অধোদেশ নিরীক্ষণ করিয়া সুস্থির হইবে। ১৯
এইরূপ পাপোদ্ধারণ কাৰ্য্য করিলে দৃঢ়তর পাপ সকলও দূরে অবস্থান করে। ২০
পূজা শেষ হইলে তাহারা পুনর্বার আসিয়া আপনার স্থান প্রাপ্ত হয়, আর অল্প অল্প পাপ সকল একেবারেই নাশ প্রাপ্ত হয়। ২১
তাহার পর ও অঃ ফট্ এই মন্ত্র উচ্চারণ করিয়া পূজা-বেদীর নিকট গমন করিবে। পাপ-রহিত মনুষ্যের পূজন সময়ে ক্ষণকালের মধ্যে ইষ্ট লাভ হয়। ২২
তাহার পর নারাচ-মুদ্রা প্রদর্শনপূর্বক সমীপবর্তী স্থান অবলোকন করিবে এবং হ্রীঁ হূঁ ফট্ এই মন্ত্র দ্বারা পুষ্প, নৈবেদ্য এবং গন্ধাদি অবলোকন করিবে। ২৩-২৪
যদি পুষ্পাদির অস্পৃশ্যম্পৰ্শন, কোন অন্যায়রূপে অর্জিত হওন, নিম্মল্য স্পর্শ বা দুষ্ট কীটাদির আহরণ প্রভৃতি দূষণ নিজের সম্যকৃরূপে অজ্ঞাত থাকে, নৈবেদ্যাদির অবলোকন দ্বারাই উক্ত দোষসকল বিনষ্ট হয়। ২৫-২৬
তাহার পর রং এই মন্ত্র উচ্চারণ করিয়া দীপশিখা স্পর্শ করিবে। এইরূপ করিলে সেই শুভপ্রদ দীপ ক্ৰব্যাদতা শূন্য হইয়া সাধকের পূজার শুভফল প্রদান করে। ২৭
পতঙ্গ, কীট এবং কেশাদির দাহনহেতু দীপের ক্রব্যাদতা প্রাপ্তি হয় এবং যজ্ঞাদির উপযোগী নিহত পশুর বসা, মজ্জা ও অস্থি সংসর্গেও দীপের ক্রব্যাদতা হইয়া থাকে, ঐ সকল অজ্ঞাত দোষও বিনষ্ট হয়। ২৮-২৯
তাহার পর যাজক, ঘট-মধ্যস্থিত জল বীক্ষণ এবং অভ্যুক্ষণ করিয়া নরসিংহ মন্ত্র উচ্চারণপূর্বক দেবতীর্থ দ্বারা স্পর্শ করিবে। ৩০
বাম-পার্শ্ব-স্থিত জলঘট বামহস্ত দ্বারা ধারণ করিয়া আধার মন্ত্র উচ্চারণ পূর্বক পাত্রসংস্কার করিয়া জল স্পর্শ করিবে। ৩১
অজ্ঞান-বশত জলে যদি কোন প্রকার দূষণ হয়, জলাশয়ে অধমের স্পর্শ বা স্নানহেতু যে দূষণ হয়, ঐ সকল দূষণ দেবপূজাকালে বিনষ্ট হয়। ৩২-৩৩
প্রজাপতিযুক্ত হকারান্ত প্রান্তভাগে স্বর-সমন্বিত এবং চন্দ্ৰাৰ্ধবিন্দু-সংযুক্ত যে মন্ত্র, তাহার নাম নারসিংহ মন্ত্র। ৩৪
স্ব সংজ্ঞক আদ্যক্ষর বিন্দু এবং চন্দ্ৰাৰ্দ্ধমুক্ত মন্ত্রকে সাধক, আধারমন্ত্র বলিয়া জানিবে। উহা সৰ্ব্বকার্য্যের সিদ্ধির নিমিত্ত হয়। ৩৫
তদনন্তর আধারমন্ত্র উচ্চারণ করিয়া হস্তদ্বয় দ্বারা নিজের আসন গ্রহণ করিয়া যথাস্থানে স্থাপনপূর্বক পুনর্বার তৎক্ষণাৎ সেই আসন এক হস্ত দ্বারা স্পর্শ করিয়া আত্মমন্ত্র উচ্চারণপূর্বক সেই শ্রেষ্ঠ আসনে উপবেশন করিবে। ৩৬-৩৭
মন্ত্র পাঠপূর্বক আসনে উপবেশন করিলে আসনের দুঃশিল্পি রচিতত্ব বা অন্য কোনরূপ দোষ এবং অজ্ঞান, বিলয় প্রাপ্ত হয়। ৩৮
প্রথমে স্বসংজ্ঞক অক্ষর অর্ধচন্দ্র ও বিন্দু-বিশিষ্ট মন্ত্রকে সাধক, আত্মমন্ত্র বলিয়া জানিবে। ৩১
তদনন্তর বিচক্ষণ সাধক, স্বীয় শরীরে মাতৃকা মন্ত্র দ্বারা নাদ ও বিযুক্ত মাতৃকা-ন্যাস করিবে। ৪০
মাতৃকা মন্ত্র সকল ন্যস্ত হইয়া মন্ত্রোচ্চারণ করিলে কর্মে যে সকল বিধি অজ্ঞাত থাকে এবং যে মাত্রাদি ভ্রষ্ট দোষ এবং যাহা অস্পষ্ট রূপে প্রতীয়মান হয়, যেই সকল সৰ্ব্বদা বিনষ্ট হয়। ৪১
সমুদয় ব্যঞ্জনবর্ণ এবং বিষ্ণু আদিস্বর ইহারা সকলে চূড়া অর্থাৎ মস্তকে বিন্দু দ্বারা বিভূষিত হইয়া মাতৃকা মন্ত্র বলিয়া গণ্য হয়। ৪২
সমুদয় অঙ্গ-মন্ত্রের ন্যাস কার্যে যদি কিছু ন্যূনতা থাকে, মাতৃকাগুলি মন্ত্রবিধিতে সুসঙ্গত হইয়া সেই ন্যূনতার পূরণ করে। ৪৩
একমাত্র বর্ণকে হ্রস্ব, দ্বিমাত্র বর্ণকে দীর্ঘ এবং ত্রিমাত্র বর্ণকে প্লুত বলা হয়। বর্ণ সকল এইরূপে ব্যবস্থিত হইয়াছে। ৪৪
সকল বর্ণেরই মাত্রা-দেবতা শিবদূতী প্রভৃতি মাতৃকা; অতএব ঐ সকল–বর্ণের বিন্যাস করিলে ঐ মাতৃকাগণ শরীরে অবস্থান করেন। ৪৫
ঐ সকল মাতৃকাগণ ন্যূনতা পূরণ করেন, অচিরকালে চতুৰ্বর্গ প্রদান করেন এবং দেবপূজন কালে রক্ষার বিধান করেন। ৪৬
এই মাতৃকান্যাস চতুৰ্বর্গপ্রদ, সৰ্ব্বকাম-ফলপ্রদ এবং সর্বদা তুষ্টি ও পুষ্টির প্রদায়ক। ৪৭
যে সাধক, মাতৃকান্যাস করে, সে দ্বারপূজা না করিলেও তাহা হইতে চারিজাতীয় ভূতগণ সৰ্ব্বদা ভীত হয়। ৪৮
সেই মহাতেজস্বী পুরুষকে দেখিবার নিমিত্ত দেবগণও কামনা করেন। সে, সকলকে নিজের বশীভূত করে এবং কখনও পরাভব প্রাপ্ত হয় না। ৪৯
সাধক, হস্ত শোধন নিমিত্ত অঙ্গুলীর অগ্রভাগ দ্বারা বিষ্ণুমন্ত্র উচ্চারণপূর্বক বিমর্দনার্থ একটি ফুল গ্রহণ করিবে। ৫০
উপান্তভাগ অর্ধচন্দ্ররঞ্জিত বিন্দুযুক্ত এবং অন্তে ও উপরিভাগে রুদ্রসংস্পৃষ্ট মন্ত্রকে বিষ্ণুমন্ত্র বলে। ৫১
সাধক প্রাসাদমন্ত্র উচ্চারণপূর্বক অঙ্গুলীর অগ্রভাগদ্বারা পুষ্প গ্রহণ করিয়া হস্তদ্বয় দ্বারা উহার মর্দন করিবে। ৫২
তাহার পর কামবীজ উচ্চারণ করিয়া উহাকে নির্মঞ্ছন, হস্তের পৃষ্ঠভাগে রক্ষা করিবে এবং ব্রাহ্মবীজ দ্বারা উহার আঘ্রাণ লইবে। অনন্তর পুনর্বার প্রাসাদমন্ত্র উচ্চারণ করিয়া ঈশান কোণে উহাকে পরিত্যাগ করিবে। ৫৩
এইরূপ প্রক্রিয়া করিলে করের সম্পূর্ণ বিশুদ্ধি হইবে। হস্তের শোধন দ্বারা জলৌকা (জোঁক) এবং গূঢ়পাদ আদি অস্পৃশ্য জন্তুর স্পর্শ জন্য দোষ নষ্ট হয়। ৫৪
দুর্গন্ধ এবং উচ্ছিষ্টবস্তু স্পর্শে হস্তদ্বয়ের যে অত্যন্ত দোষ হয়, করশোধন করিলে সে সকল বিনষ্ট হয়। ৫৫
পুষ্পের গ্রহণেই অঙ্গুলির অগ্রভাগ বিশুদ্ধ হয় এবং মর্দনদ্বারা তলদ্বয়ের শুদ্ধি হয়। নিৰ্ম্মঞ্ছনদ্বার হস্তের পৃষ্ঠভাগ বিশুদ্ধ হয়। ৫৬
ঘ্রাণ দ্বারা নাসিকার অগ্রভাগ পবিত্র হয়। এবং সমুদায় তীর্থ নাসিকার অগ্রভাগ এবং হস্তদ্বয়ে আসিয়া উপস্থিত হয়। ৫৭
অতএব হে ভৈরব! এই সকল কার্যের যত্নপূর্বক অনুষ্ঠান করিবে। প্রান্ত এবং আদিভাগ বাসুদেববর্ণে সংযুক্ত ও অর্ধচন্দ্র ও বিন্দুর সহিত মিলিত মন্ত্রকে প্রাসাদ মন্ত্র বলা হয়। ৫৮-৫৯
বাসুদেব মন্ত্র চন্দ্রবিন্দুযুক্ত আদ্য এবং অন্ত্যবর্গের পূর্ব দন্ত্যবর্ণযুক্ত বীজকে কামবীজ বলা হয়। আদ্য এবং অন্ত্য দন্ত্যবর্ণযুক্ত প্রণবকে ব্রহ্মবীজ বলা হয়, ইহা সমুদয় পাপ নাশক। ৬০-৬১
প্রথম মুখশুদ্ধির নিমিত্ত দীর্ঘ প্রণব উচ্চারণ করিয়া পরে বাসুদেব বীজদ্বারা প্রাণায়াম করিবে। ৬২
যে দেবতার যাদৃশ রূপ, যাদৃশ ভূষণ এবং বাহন, পূরকাদি মন্ত্রদ্বারা তাহার সেইরূপ চিন্তা করিবে। ৬৩
বৈষ্ণবীতন্ত্র মন্ত্রের কণ্ঠ্যাদ্য যার পুরঃসর, উহাই বাসুদেবের বীজ, দেখিতে পূর্ণচন্দ্রসদৃশ; প্রথম অর্ঘ্যপাত্ৰাপিত জলে ধেনু মুদ্রাদ্বারা গঙ্গাবতার বীজদ্বারা অমৃতীকরণ করিবে। ৬৪-৬৫
বল বীজযুক্ত কণ্ঠের পঞ্চ চন্দ্রবিন্দুযুক্ত হইলে গঙ্গাবতার মন্ত্র হয়, উহা সৰ্ব্ব পাপ-প্রণাশক। মায়া বীজদ্বয় ও বিষ্ণুমন্ত্রের নাম বলবীজ। ৬৬-৬৭
অমৃতীকরণ করিবার যে জল দেওয়া হয়, তাহা পূজাকালে অমৃত হইয়া দেবতার প্রীতির নিমিত্ত গমন করে। ৬৮
গঙ্গাও স্বয়ং পূজাপাত্রের জলে আগমন করেন, অতএব সকল কৰ্ম্ম এবং অর্থের সিদ্ধির নিমিত্ত অমৃতীকরণ করিবে। ৬৯
স্বস্তিক, গোমুখ, পদ্ম, অর্ধস্বস্তিক এবং পর্য্যঙ্ক–অভীষ্ট দেবপূজন কালে ইহার অন্যতম আসন আশ্ৰয় করিতে হয়। ৭০
এই আসন পাদমন্ত্র এবং সমুদয় যন্ত্রের শ্রেষ্ঠ, অতএব পণ্ডিত, বরাহ-বীজ উচ্চারণ করিয়া ঐ আসন গ্রহণ করিবে। ৭১
অগ্নিবীজের যাহা আদি, সমাপ্তির সহিত চতুর্থ ষষ্ঠস্বরের উপরিস্থ চন্দ্রবিন্দু যুক্ত–ইহার নাম বরাহ-বীজ। ৭২
অভীষ্ট-দেবতা বরাহ-বীজ সংশুদ্ধ যন্ত্রকে পদদ্বয়ে কৃত দেখিয়া পাদদোষ সকলের উপর দৃষ্টি করেন না। ৭৩
দেবতা পূজার সময় অন্য প্রকারে পাদদর্শন যুক্তিযুক্ত নয়। যন্ত্র দ্বারাই অভীষ্ট লাভ হয়, এই জন্য পাদদ্বয় যন্ত্রযুক্ত করিবে। ৭৪
তাহার পর সাধক, কূর্মমন্ত্রদ্বারা পাণি কচ্ছপাকার করিয়া তাহাতে সংস্কৃত পুষ্পদ্বারা আপনার শরীর পূজা করিবে। ৭৫
সেই পুষ্পদ্বারা আপনাকে পূজা করিলে নিজের দেবত্ব উৎপন্ন হয়। ৭৬
চন্দ্রবিন্দু-সংযুক্ত দ্বিতীয় বৈষ্ণবীতন্ত্রের বীজ ষষ্ঠস্বরের উপর অবস্থিত হইলে কুৰ্ম্মবীজ হয়। ৭৭
সাধক, দহন ও প্লাবনের পূর্বে প্রণবমন্ত্র দ্বারা দশম রন্ধ্রের ভেদ করিবে। ৭৮
পূর্বে প্রতিপাদিত প্রাণ সহিত বীজ, বাসুদেব-বীজদ্বারা আকাশে সন্নিবেশিত করিবে। ৭৯
মণ্ডলস্থান মার্জনা করিলে অজ্ঞাতাশৌচ অশুচি বস্তু এবং সংসর্গ-দুষিত বস্তু বিশুদ্ধ হয়। পৃথিবী মধু ও কৈটভের মাংসসমূহ দ্বারা দৃঢ়তা প্রাপ্ত হওয়ায় সৰ্ব্বদা দেবপূজায় অশুদ্ধ। ৮০
এই নিমিত্ত অদ্যাবধি দেবতাগণ পাদদ্বারাও পৃথিবীকে স্পর্শ করেন না এবং আপনাদের শরীরচ্ছায়াও পৃথিবীতে নিক্ষেপ করেন না। ৮১-৮২
এই দোষের মোচনের নিমিত্ত পৃথিবীতে মন্ত্রবীজ লিখিবে। প্রোক্ষণ ও বীক্ষণ দ্বারা পৃথিবী শুদ্ধা হয়। ৮৩
ধর্মবীজ উচ্চারণ করিয়া স্থণ্ডিলের বীক্ষণ করিবে। ৮৪
মস্তকে বিন্দুযুক্ত বলবীজসমন্বিত দান্ত মন্ত্র ধর্মবীজ, উহা সকল প্রকার কাম ও অর্থের সাধন। ৮৫
গ্রহণ, ধারণ, সংস্থান, পূজন, জলদ্বারা পূরণ, গন্ধপুষ্পের নিক্ষেপ, মণ্ডল ব্যাস, পুনৰ্বার পুষ্পক্ষেপ এবং অমৃতীকরণ-পাত্রের এই নয়টি প্রতিপত্তি অর্থাৎ ক্রিয়াবিশেষ। ৮৬
অনিরুদ্ধ মন্ত্রদ্বারা গ্রহণ, অস্ত্রমন্ত্রের দ্বারা ধারণ এবং বাগ্বীজের দ্বারা পাত্রে মণ্ডল ন্যাস করিয়া যোগ করিবে। ৮৭
বিন্দুদ্বয়োত্তর আদ্যাক্ষর হইলে অনিরুদ্ধ বীজ হয় এবং অনিরুদ্ধ বীজের অন্তে ফট থাকিলে অস্ত্র হয়। ৮৮
আদিতে কাং, প্রান্তে বল, তাহার পূর্বে সং (স) ইহারা সকলে মিলিত হইয়া পরস্পরে পূর্বে বিন্দুর সহিত সমাপ্ত্যন্ত হইবে। ৮৯
তৃতীয় বাগবীজ সকল, উহা নিষ্কল নামে অভিহিত হয়। চন্দ্রবিন্দুযুক্ত চতুর্থ স্বরের নাম সকল। ৯০
আদ্য বর্ণের আদি অক্ষর দ্বিতীয় বাগবীজ–ইহাকে কামবীজও বলা হয়, ইহা ধর্ম কাম এবং অর্থের সাধন। ৯১
কুণ্ডলী এবং শক্তিসংযুক্ত এবং বাসুদেব বীজের সহিত মিলিত মনোভব বীজকে প্রথম বাগবীজ বলা হয়। ৯২
আদ্য বাগবীজ সারস্বত নামে প্রসিদ্ধ, ইহা যখন এক একটি পৃথক হইয়া থাকে, তখন কামবীজাদি নামে খ্যাত হয় এবং তিনটি মিলিত হইলে ত্রিপুরা নামে অভিহিত হয়। ৯৩
বর্ণের আদি অক্ষর চন্দ্রবিন্দুযুক্ত তৃতীয় স্বরে অলঙ্কৃত হইলে মদনের মন্ত্র হয়, উহা কাম এবং ভাগের প্রদায়ক। ৯৪
উপরি ন্যস্ত যন্ত্র ভাঙ্কর তুল্য, ঔকারের নাম কুণ্ডলীশক্তি। ৯৫
যাজক পূর্বোক্ত মন্ত্রদ্বারা ভূতদিগের অপসারণ করিবে। ঐ মন্ত্র উচ্চারণ করিলে পূজার সময় ঐ স্থানস্থিত ভূতসকল দূরে পলায়ন করে ৯৬
সেই স্থানে যদি ভূতসকল অবস্থান করে, তাহা হইলে ঐ লুব্ধ ভূত সকল নৈবেদ্য এবং মণ্ডল দূষিত করে, দেবতা আর উহা গ্রহণ করিতে পারেন না। এই নিমিত্ত যত্নপূর্বক ভূতদিগের অপসারণ করা কর্তব্য। অস্ত্র মন্ত্রের সহিত বক্ষ্যমাণ মন্ত্র পাঠ করিয়া ভূতাপসারণ করিবে। ৯৭-৯৮
যে সকল ভূত এই ভূমির পালক, তাহারা দূরে গমন করুন, আমি ভূত দিগের অবিরোধে এই পূজাকৰ্ম্ম করিতেছি। ৯৯
সাধক এই মন্ত্র পাঠ করিয়া দিগবন্ধন দ্বারা দিঙ্মণ্ডল হইতে তাহাদিগকে অপসারিত করিবে। ১০০
বিষ্ণুবীজের অন্তে ফট উচ্চারণ করিয়া দিগবন্ধন করিবে। ১০১
হাতে তুড়ি দিয়া চারিদিক্ বেষ্টন করার নাম দিগবন্ধন। অনন্তর আত্মপূজা করিলে কৰ্মারম্ভে অধিকার হয়। ১০২
পূজিত আসন, যোগপীঠের সদৃশ পবিত্র। এই পঞ্চভূতাত্মক শরীর সর্বদা স্বাভাবিক অশুদ্ধ। ইহা মল এবং পূতিগন্ধযুক্ত, শ্লেষ্ম ও বিণ্মূত্রে ব্যাপ্ত। ১০৩
রেতঃ ও অনবরত গলিত নিষ্ঠীবন-লালায় অপরিষ্কৃত। এই দেহের বীজ পঞ্চমহাভূত। ১০৪
সেই দেহ সঙ্গী বীজরূপ বায়ু, তেজঃ, পৃথিবী জল এবং আকাশ এই ভূত সকলের শুদ্ধির নিমিত্ত ক্রমশঃ দেহের শোষণ, দহন, ভস্মোৎসারণ, অমৃতবর্ষণ এবং অমৃতদ্বারা আপ্লাবন কর্তব্য; ঐ সকল ক্রিয়ার মনে মনে চিন্তামাত্রই শুদ্ধির হেতু। ১০৫-১০৬
প্রথমে অণ্ডাকার বিশ্বের চিন্তা করিয়া তাহার ভেদ করিবে, তন্মধ্যে দেবতার চিন্তা করিলে সর্বপ্রকারে স্বকীয় ইষ্টদেবেরই চিন্তা হইবে। ১০৭
(সোহহং) সেই আমি সর্বদা এইরূপ চিন্তা দ্বারাই নিজের ইষ্টদেবের সারূপ্য হয়। তদনন্তর পুষ্পদানদ্বারা সংস্কার জন্মায়। ১০৮
পুষ্পগন্ধাদি যে সকল নৈবেদ্য বস্তু সকলই আত্মদেব-স্বরূপ এইরূপ চিন্তা করিলে পূজার উপকরণসকলেরও দেবত্ব জন্মে। ১০৯।
দেবতার আধারও আত্মদেবতাস্বরূপ। দেবতার নিমিত্ত দেবতাকে যোজিত করিবে, এইরূপে সকলের দেবত্ব সৃষ্টি হইলে শুদ্ধতা উৎপন্ন হয়। ১১০
প্রাণায়াম দ্বারা মন ও জীবাত্মার শুদ্ধি হয়। এবং অন্তর্গত সমুদায় মলেরই বিশুদ্ধি হয়। ১১৯
যদি গৃহমধ্যে দেবতার পূজা করে, তাহা হইলে আদিত্যবীজদ্বারা দেবতার প্রতিমা এবং চতুঃপার্শ্ব অবলোকন করিবে। ১১২
সমাপ্তিযুক্ত হকারান্ত, উপান্তে চতুর্থ-স্বরযুক্ত জ, তাহার পর স–এইরূপ বীজকে আদিত্য-বীজ বলা হয়, ইহা সকল রোগের নাশক। ইহা ধর্ম, অর্থ, কাম এবং মোক্ষের কারণ তোষপ্রদ। ১১৩-১৪
ইহা দ্বারা অবলোকন করিলে অশুদ্ধপক্ষীর সংযোগ, পক্ষীর বিষ্ঠা, মূষিকের লাঙ্গুলসস্পর্শ এবং কৃমি কীটাদির সংসর্গ জন্য গৃহের দোষসকল বিনষ্ট হয়। তাহার পর প্রথমে যোগপীঠের ধ্যান করিবে। ১১৫-১৬
ধ্যানমাত্রই যোগগীঠ, মণ্ডলে আসিয়া প্রবেশ করে। পীঠে নিখিল বস্তু অবস্থান করে এবং সকল বস্তুই যোগপীঠময়। ১১৭
যোগপীঠ-সদৃশ শ্রেষ্ঠ আসন আর নাই। যাহার ধ্যানদ্বারা চর অচর ও মনুষ্য সহিত নিখিল জগন্মণ্ডল ব্যাপ্ত, তাহার চিন্তন-মাহাত্ম্য কে বলিতে সক্ষম হয়? ১১৮
ইহার চিন্তামাত্রেই সমুদায় শোকের নাশ হয় এবং ধারণ করিলে চতুৰ্বর্গ প্রাপ্তি হয়। ১১৯
যোগপীঠের ধ্যান-যথা, যোগপীঠ শুদ্ধস্ফটিকসঙ্কাশ, চতুষ্কোণ, চতুরাবৃত্তি আধারশক্তি সূৰ্য্যতুল্য দীপ্তিমান্। ১২০
যাহার ধারণাৰ্থ আগ্নেয়াদি চারি কোণে যথাক্রমে ধর্ম, জ্ঞান, ঐশ্বৰ্য্য এবং বৈরাগ্য অবস্থিত এবং পূৰ্বাদি চারি দিকে যথাক্রমে অধর্ম, অজ্ঞান, অনৈশ্বৰ্য্য এবং অবৈরাগ্য অবস্থিত। ১২১-২২।
ইহার উপর জলরাশি, ঐ জলরাশিতে ব্রহ্মাণ্ড অবস্থিত। ব্রহ্মাণ্ডের মধ্যে জল, সেই জলের উপরে কুৰ্ম্ম। ১২৩
কূর্মের উপর অনন্ত, অনন্তের উপর পৃথিবী। অনন্তের গাত্রে পাতালগামী একটি নাল আছে। ১২৪
পৃথিবী তাহার মধ্যস্থিত পদ্মের স্বরূপ, দিক সকল ঐ পদ্মের পাপড়ি এবং পৰ্বত কেশর-স্বরূপ। তাহার আট দিকে দিকপালগণ বিরাজমান; মধ্যস্থলে স্বর্গ। ১২৫
তাহার কর্ণিকাভাগে ব্ৰহ্মলোক এবং তাহার অধোভাগে মহর্লোক-আদি। স্বর্গে গ্রহনক্ষত্র প্রভৃতি জ্যোতির্গণ, দেবগণ এবং চারিবেদ বর্তমান। ১২৬
সত্ত্ব, রজঃ এবং তমঃ এই প্রকৃতি-সম্ভূত গুণত্রয় এবং পরতত্ত্ব অর্থাৎ চৈতন্য ঐ পদ্মমধ্যে বর্তমান। ১২৭
সেই স্থানে আত্মতত্ত্বও অবস্থিত, উপরে উৰ্দ্ধাচ্ছাদন এবং অথোভাগে অধশ্ছাদন। ১২৮
কেশরের অগ্রভাগে পদ্মাকার গোলপীঠের মণ্ডল, ঐ পদ্মমধ্যে ক্রমশঃ সূৰ্য্য, অগ্নি, চন্দ্র এবং বায়ুগণের মণ্ডল চিন্তা করিবে। যোগপীঠে পর পর শবাসন (বীরাসন), তাহার পর সুখাসন। ১২৯
তাহার পর আরাধ্যাসন এবং বিমলাসনের চিন্তা করিবে। তাহার মধ্যে চরাচরাত্মক জগন্মলের চিন্তা করিবে। ১৩০
উহাকে ত্রিভাগ করিয়া এক একটি ভাগে অবস্থিত ব্রহ্মা বিষ্ণু এবং শিবের চিত্তন করিবে। সেইস্থানে আত্মাকে এবং উপস্থিত পূজনকে চিন্তা করিবে। ১৩১
যোগপীঠ মণ্ডলাকার, তাহার মধ্যে একটি পদ্মের চিন্তা করিবে। তাহার মধ্যে শবাদি আসন চতুষ্টয়ের চিন্তা করিবে। ১৩২
যোগপীঠের পৃথক্ ধ্যান করিয়া উহার মণ্ডলের সহিত উহার ঐক্য সম্পাদন করিয়া ধ্যান করিবে, তাহার পর আসন পূজা করিবে। ১৩৩।
যোগপীঠের ধ্যান করিলে পর যে সকল জল, নৈবেদ্য, পুষ্প ও ধূপাদি বস্তু দেবতাকে দেওয়া হয়, সেই সকল বস্তু নিজেই দেবতার নিকট পৌঁছে। ১৩৪
যোগপীঠের পূজা করিলে সকল দেবগণ, গন্ধৰ্ব্বগণ, চর, অচর এবং গুহ্যক সমূহ–ইহারা সকলে চিন্তিত এবং পূজিত হয়। ১৩৫
অভীষ্ট-দেবতার পূজা বিনাও কেবল যোগপীঠের চিন্তা করিলে, সাধকের চতুৰ্বর্গ প্রাপ্তি হয় এবং তাহার তুষ্টি ও পুষ্টি জন্মে। ১৩৬
অনন্তর পূজক করতলদ্বয় উত্তান করিয়া অন্তরের সহিত মধ্যে ফাঁক রাখিয়া ঊর্ধ্বদিকে উত্তোলন করিবে। ১৩৭
অধোদিকে নামাইয়া নিরন্তর অর্থাৎ পরস্পর সংযুক্ত করিবে। তাহার পর গণেশের বীজ দ্বারা ঐ হস্ত তল অবতারিত করিবে। ১৩৮
এইরূপ বারংবার করিলে, দেবতাদিগের প্রীতি জন্মে। নাসিকাবায়ুর নিঃসারণ হেতু দেবতা আকাশে অবস্থান করেন; কিন্তু উক্তরূপ প্রক্রিয়া করিলে মণ্ডল-মধ্যে তাহার অবস্থান হয়। ১৩৯
খান্ত এবং অর্ধচন্দ্র বিন্দুযুক্ত বীজের নাম হেরম্ব বীজ। ইহা সমূদয় বিগ্নের নাশন এবং ধর্ম কাম ও অর্থের সাধন। ১৪০
গন্ধ, পুষ্প, ধূপ, দীপ, নৈবেদ্য, অন্যান্য বস্ত্র, অলঙ্কারাদি যৎকিঞ্চিৎ দ্রব্য দেবতাদিগকে দেওয়া হয়। ১৪১
ঐ সকল বস্তুর দৈবত উচ্চারণ করিয়া তাহার প্রেক্ষণ এবং অর্চনা করিবে। তাহার পর মূলমন্ত্র দ্বারা উৎসর্গ করিয়া সেই সেই বস্তুর নাম গ্রহণপূর্বক নিবেদন করিবে। ১৪২
বরুণের বীজের দ্বারা দেবদেয় বস্তুসকলের প্রাণ করিবে। ১৪৩
অভীষ্ট দেবতার মূল মন্ত্রদ্বারা উহাদের উৎসর্গ এবং নিবেদন করিবে। অর্থচন্দ্র এবং বিন্দুযুক্ত লান্ত বীজের নাম বরুণবীজ। ১৪৪।
মালাজপ কার্যে এক একটি করিয়া বিলোকন, পূজন এবং আদান–এই তিন প্রকার ক্রিয়াকে প্রতিপত্তি বলে। ১৪৫
মূল মন্ত্রদ্বারা মালার প্রোক্ষণ করিবে। অনন্তর গাণপত বীজ উচ্চারণ করিবে। ১৪৬
“হে মালে! তুমি আমার বিঘ্নধ্বংস কর” এই বলিয়া মালা গ্রহণ করিবে। জপের অবসানে মালা মস্তকোপরি স্থাপিত করিবে। মালাকে হস্তদ্বারা গ্রহণ করিয়া শ্ৰীবীজ উচ্চারণপূর্বক ঐ কাৰ্য্যের অনুষ্ঠান করিবে। ১৪৭
অন্তে দন্ত্যবর্গের অন্ত্যবর্ণযুক্ত অন্তের আদিতে ম, প্রথমে চ, তাহার পর চবর্গের তৃতীয় এবং চতুর্থ-বর্ণযুক্ত এই সকল বর্ণ পরে পরে বিন্যস্ত এবং অর্ধচন্দ্র ও বিন্দুযুক্ত মন্ত্রের নাম শ্রীবীজ। ১৪৮
মস্তক হইতে যখন মালার অবতারণ করিবে, তখন হস্তদ্বয় দ্বারা ঐ মালা গ্রহণ করিয়া সারস্বত বীজ উচ্চারণ করিয়া ঐ মালার অবতারণ করিবে। ১৪১
শ্ৰীবীজের এক একটি আদ্য অক্ষর অর্ধচন্দ্র ও বিন্দুযুক্ত হইলে, যে চারিটি বীজ হয়, তাহাকে সারস্বতবীজ বলে। ১৫০
পৌরাণিক বা বৈদিক মন্ত্রদ্বারা ধৰ্ম্মাদির সাধন প্রদক্ষিণ ও প্রণাম করিবে। ১৫১
প্রথমে ক্ষিতি বীজদ্বারা ভূমিকে বীক্ষণ এবং অভ্যুক্ষণ করিয়া, মস্তকদ্বারা ভূমি স্পর্শ করত অভীষ্ট দেবতাকে প্রণাম করিবে। ১৫২
অন্ত্যাক্ষরহীন এবং অর্ধচন্দ্র ও বিন্দুযুক্ত বরাহবীজকে ক্ষিতিবীজ বলা হয়, ইহা চতুৰ্বর্গের প্রদানকারী। ১৫৩
অনন্তর, দর্পণ, ব্যজন, ঘন্টা ও চামরের প্রেক্ষণ করিবে। হে ভৈরব! পূর্বোক্ত নৈবেদ্যালোকনমন্ত্র দ্বারাই ঐ কাৰ্য্য করিবে। ১৫৪
ইহাদিগের নামাক্ষরের আদ্য আদ্য অক্ষরের অন্তে অনুস্বার ও অর্ধচন্দ্র যোগ করিয়া উহা প্রথমে উচ্চারণ করত ‘তস্মৈ নমঃ’ অর্থাৎ চং চামরায় নমঃ, ঘং ঘণ্টায়ৈ ইত্যাদি রূপে উহাদিগের অর্চনা করিবে এবং ইষ্ট অর্থাৎ মূলমন্ত্রদ্বারা উহাদিগের নিবেদন করিবে। ১৫৫
হে ভৈরব! দ্বিতীয় বাগ্বীজ অথবা কামবীজ দ্বারা মুদ্রার বন্ধন করিবে এবং মূলমন্ত্র দ্বারা উহার প্রদর্শন করিবে। ১৫৬।
তারা মন্ত্রদ্বারা মুদ্রার পরিত্যাগ করিবে। প্রান্ত ও আদিতে অনুস্বার ও চন্দ্রবিন্দুযুক্ত এবং ষষ্ঠস্বর-সমন্বিত মন্ত্রকে তারাবীজ বলা হয়। ১৫৭
উহা ধর্ম, কাম এবং অর্থের সাধন। দেবতাকে পরম প্রীতিদান করে বলিয়া উহার নাম মুদ্রা। মুদ্রা প্রদর্শিত হইলে, পূজা সমাপ্তি হয়। ১৫৮-৫৯
পূজা সমাপনান্তে গমনে উৎসুক দেবতা মুদ্রা দর্শনে পরম প্রীতিযুক্ত হইয়া সাধককে শীঘ্র কাম, মোক্ষ, ধর্ম এবং অর্থ দান করেন। ১৬০
মুদ্রা দর্শনান্তে ছয়টি বক্ষ্যমাণ মহামন্ত্রের উচ্চারণ করিবে। ১৬১
কেবল ভক্তিপূর্বক আমি যে কিছু পত্র, পুষ্প, ফল, জল ও নৈবেদ্য দান করিয়াছি, হে দেবি। আপনি দয়াপরবশ হইয়া উহা গ্রহণ করুন। ১৬২
আমি আপনার আবাহনও জানি না, বিসর্জনও জানি না এবং পূজা ভাবও জানি না। হে পরমেশ্বরি! তুমিই একমাত্র আমার গতি। ১৬৩
আমার কর্মের, মনের ও বাক্যের তোমা ভিন্ন আর কোন গতি নাই। হে পরমেশ্বরি! আপনি ভূতসকলের অন্তশ্চর হইয়া সৃষ্টি করিতেছেন। ১৬৪
হে অচ্যুতে। আমি যে হাজার হাজার যোনিতে ভ্রমণ করিব, সেই সকল যোনিতেই তোমার প্রতি যেন অচ্যুত ভক্তি থাকে। ১৬৫
দেবতাই দাতা, দেবতাই ভোক্তা, দেবতাই এই সমুদয় জগৎ ব্যাপিয়া অব স্থিত। সর্বত্র দেবতাই প্রধানভাবে অবস্থান করিতেছেন, দেবতা ও আমি অভিন্ন। ১৬৬
এই পূজা কাৰ্যে যে অক্ষর পরিভ্রষ্ট হইয়াছে, অথবা মাত্রাহীন হইয়াছে, আপনি তাহা সহন করুন, হে দেবি! কাহার মন না স্খলিত হয়? ১৬৭
হে ভৈরব! এই সকল মন্ত্র পাঠ করিলে দেবতা স্বয়ং প্রসন্ন হইয়া অচির কাল মধ্যেই সাধককে চতুৰ্বর্গ প্রদান করেন। ১৬৮
তাহার পর বিসর্জনের জন্য নির্মাল্য-ধারিণীর পূজার নিমিত্ত ঈশানকোণে দ্বারপদ্মহীন একটি মণ্ডল করিবে। ১৬৯
নিৰ্মাল্য-ধারিণীর ধ্যান করিয়া এবং পাদ্যাদির দ্বারা পূজা করিয়া সেই মণ্ডল মধ্যে নির্মাল্য নিঃক্ষেপপূর্বক বক্ষ্যমাণ মন্ত্র দ্বারা বিসর্জন করিবে। ১৭০
হে দেবি। সেই পরমশ্রেষ্ঠ নিজস্থানে গমন কর, সেই পরমস্থানের স্বরূপ ব্ৰহ্মাদি দেবগণও জানিতে পারেন না। ১৭১
এই মন্ত্র দ্বারা বিসর্জন করিয়া সাধক পূরকদ্বারা ধ্যান করত দেবতাকে আপনার হৃদয়ে এই মন্ত্র পাঠ করিয়া স্থাপিত করিবে। হে দেবি। আপনার এই শ্ৰেষ্ঠস্থানে অবস্থান কর, আমার হৃদয়ের ঐ স্থানে ব্ৰহ্মাদি দেবগণ অবস্থান করিতেছেন। ১৭২।
তাহার পর একজটামন্ত্র দ্বারা ইষ্টদেবকে মনে মনে স্মরণ করত ধর্ম, কাম এবং অর্থের সাধন নির্মাল্য মস্তকে গ্রহণ করিবে। ১৭৩
হে ভৈরব! তাহার পর বিশুদ্ধির নিমিত্ত জলের প্রতিপত্তি করিবে। সকল অঙ্গুলির অগ্রভাগদ্বারা ক্ষিতিবীজ উচ্চারণপূর্বক অষ্টদলান্বিত পদ্মাকার মণ্ডল স্পর্শ করিবে। ১৭৪
তাহার পর মূলমন্ত্র বা সৰ্ববশ্য মন্ত্রদ্বারা অনামিকার অগ্রভাগদ্বারা আপনার ললাট স্পর্শ করিবে। প্রান্তে সমাপ্তি সহিত, তাহার পর তারাবীজ। ১৭৫-১৭৬
তাহার পর বিসর্গযুক্ত বসুবীজ, ইহার পরপর অবস্থিত হইলে একজটাবীজ হয়, ইহা ধর্ম, কাম এবং অর্থের সাধন। ১৭৭
অনন্তর অচ্ছিদ্রাবধারণের নিমিত্ত একজটা বীজের সহিত ভাস্করবীজ উচ্চারণ করিয়া সূৰ্য্যকে একটি অর্ঘ্য দান করিবে। ১৭৮
হে ব্ৰহ্ম সবিতঃ! আপনি বিবস্বান্, ভাস্বান, বিষ্ণুতেজঃ-সম্পন্ন, জগতের প্রসবকারী, শুচি অর্থাৎ নিৰ্ম্মল এবং কর্মের প্রবর্তক, আপনাকে নমস্কার করি। ১৭৯
তাহার পর কৃতাঞ্জলিপুটে পূর্বোক্ত মন্ত্র পাঠ করিয়া একাগ্রমনে অচ্ছিদ্র অবধারণ করিবে। ১৮০
যজ্ঞচ্ছিদ্র, তপস্যার ছিদ্র এবং আমার পূজা কাৰ্যে যে ছিদ্র ঘটিয়াছে, ভগবান্ সূর্যের প্রসাদে সে সকল অচ্ছিদ্র হউক। ১৮১
তদনন্তর পুষ্প, নৈবেদ্য এবং তোয়পাত্রাদি সমস্ত বস্তু দেবীবীজ উচ্চারণ করিয়া পুনৰ্বার অবলোকন করিবে। ১৮২
হস্ত দ্বারাই হউক, আর চক্ষু দ্বারাই হউক, পূর্বে যেখানে যেখানে মন্ত্রন্যাস করা হইয়াছিল জল দ্বারা সেই সকল স্থানের বিমাৰ্জন করিবে। ১৮৩
প্রান্তাদিতে পঞ্চম, বহ্নিবীজ ও ষষ্ঠ স্বরযুক্ত এবং উপান্তে আদ্যবাগ্বীজ মিলিত হইয়া দুর্গাবীজ হয়। ১৮৪
সাধক বিভূতির নিমিত্ত স্থণ্ডিলে অগ্নিতে, জলে সূৰ্যকিরণে, বিশুদ্ধ প্রতিমায়, শালগ্রাম শিলায়, শিবলিঙ্গে এবং শিলাখণ্ডে দেবতার পূজা করিবে। ১৮৫
সাধক, একত্রে মানসে পূর্বোক্ত স্থণ্ডিলাদি সমুদয় স্থলেই যোগপীঠ বীজ দ্বারা মণ্ডলের ন্যাস করিবে। ১৮৬
বিদ্বান সাধক-বাসুদেব, রুদ্র, ব্রহ্মা এবং সূৰ্য্য এই সকল দেবতার পূজাতে উক্ত প্রতিপত্তিগুলির অনুষ্ঠান করিবে। ১৮৭
উক্ত প্রতিপত্তিসমূহ দ্বারা যে, বিষ্ণুর পূজা করে, ভগবান হরি, অচিরকাল মধ্যেই তাহাকে চতুর্থ প্রদান করেন। ১৮৮
শিব, সূৰ্য্য এবং লম্বোদর গণেশ প্রভৃতি অন্যান্য সমুদায় দেবগণই উক্ত বিধানানুসারে পূজা হইলে প্রসন্ন হন। ১৮৯
বিশেষ মহামায়া জগন্ময়ী মহাদেবী ভূতলে সৰ্ব্বদাই এইরূপ প্রতিপত্তির অভিলাষ করেন। ১৯০
এইরূপ বিধানানুসারে যে পূজা করে, সে সম্যক্ ফলভাপী হয়। যে পূজা উত্তমরূপ বিধানবিহীন, তাহা হইতে অল্পমাত্ৰ ফল হয় না। ১৯১
যেরূপ অঙ্গহীন পুরুষ যজ্ঞকর্মের অধিকারী হয় না, সেইরূপ অঙ্গহীন পূজা সর্বপ্রকারে ফলপ্রদ হয় না। ১৯২
ইহা–পরম রহস্য, শ্রেষ্ঠ স্বস্ত্যয়ন, বেদমন্ত্র স্বরূপ, শুদ্ধ এবং সমুদয় পাপের বিনাশন। ১৯৩।
যে মনুষ্য, শ্রাদ্ধ, যজ্ঞ এবং পূজা কালে ব্রাহ্মণের নিকট ইহা শ্রবণ করে, সে পূজা না করিয়া কৰ্ম্মের সমগ্র ফল লাভ করিয়া অনন্তকাল অবধি ভোগ করে। ১৯৪
সপ্তপঞ্চাশ অধ্যায় সমাপ্ত। ৫৭