পঞ্চপঞ্চাশ অধ্যায় – বলিদান
ভগবান বলিলেন, তাহার পর দেবীর প্রমোদজনক বলি প্রদান করিবে। কেননা, শাস্ত্রে উক্ত হইয়াছে সাধক, মোদক দ্বারা গণপতিকে, ঘৃতদ্বারা হরিকে, নিয়মিত গীত বাদ্যদ্বারা শঙ্করকে এবং বলিদান দ্বারা চণ্ডিকাকে সর্বদা সন্তুষ্ট করিবে। ১-২
(১) পক্ষী (২) কচ্ছপ (৩) কুম্ভীর (৪) নবপ্রকার মৃগ যথা–বরাহ, ছাগল, মহিষ, গোধা, শশক, বায়স, চমর, কৃষ্ণসার, শশ এবং (৫) সিংহ, মৎস্য (৬) স্বগাত্র-রুধির (৭) এবং ইহাদিগের অভাবে হয় এবং (৮) হস্তী এই আট প্রকার বলি শাস্ত্রে নির্দিষ্ট হইয়াছে। ৩-৪
ছাগল, শরভ এবং মনুষ্য ইহারা যথাক্রমে বলি, মহাবলি এবং অতিবলি নামে প্রসিদ্ধ। ৫
পুষ্প, চন্দন এবং বন্দনদ্বার বলিকে স্থাপিত করিয়া সাধক বারংবার বলিদানোক্ত মন্ত্র দ্বারা দেবীর পূজা করিবে। ৬
সাধক, স্বয়ং উত্তরাভিমুখ হইয়া এবং বলিকে পূর্বমুখ স্থাপিত করিয়া তাহার দিকে দৃষ্টিপাত করত বক্ষ্যমাণ মন্ত্র পাঠ করিবে। ৭
তুমি শ্রেষ্ঠ জীব, আমার ভাগ্যে বলিরূপে উপস্থিত হইয়াছ, অতএর সর্বস্বরূপ বলিরূপী তোমাকে আমি ভক্তিপূর্বক প্রণাম করি। ৮
হে বলে। তুমি চণ্ডিকার প্রীতি উৎপাদন করিয়া দাতার আপৎ সকল বিনাশ কর, বৈষ্ণবীর বলিরূপী তোমাকে নমস্কার। ৯
ব্ৰহ্মা, স্বয়ং যজ্ঞের নিমিত্ত সকল প্রকার বলির সৃষ্টি করিয়াছেন, এই নিমিত্ত আমি তোমাকে বধ করি, এই জন্যে যজ্ঞে পশুবধ হিংসার মধ্যে গণ্য নয়। ১০
হে ভৈরব! সেই বলিকে কামরূপী চিন্তা করিয়া ওঁ ঐঁ হ্ৰীঁ শ্ৰীঁ এই মন্ত্র দ্বারা তাহার মস্তকে পুষ্পদান করিবে। ১১
তাহার পর দেবীর উদ্দেশে আপনার কামনা নির্দেশ করিয়া বলিকে অভিষিক্ত করিয়া করবালের পূজা করিবে। ১২
হে খড়্গ! তুমি চণ্ডিকার রসনাস্বরূপ এবং সুরলোকের সাধক এই বলিয়া ধ্যান করিয়া ওঁ ঐঁ হ্ৰীঁ শ্ৰীঁ এই মন্ত্রদ্বার খড়্গকে পূজা করিবে। ১৩।
তাহার পর কালরাত্রিস্বরূপ উগ্রমূর্তি রক্তাস্য রক্তনয়ন রক্তমাল্যানুলেপন রক্তবস্ত্রধর পাশহস্ত সকুটুম্ব রুধিরপায়ী মাংসভোজী কৃষ্ণবর্ণ পিনাকীপাণিরও পুজা করিবে। ১৪-১৫
হে খড়্গ। তোমার নাম অসি, বিশসন, তীক্ষ্ণধার, দুরাসদ, শ্রীগর্ভ, বিজয় এবং ধর্মপাল, তোমাকে নমস্কার করি। ১৬
তাহার পর আঁং হ্রীং ফট্ এই মন্ত্র দ্বারা খড়্গকে পূজা করিয়া সেই বিমল খড়্গ গ্রহণ করিয়া বলিচ্ছেদ করিবে। ১৭
তাহার পর ছিন্ন বলির রুধির-জল, সৈন্ধব, সুস্বাদু ফল, মধু, গন্ধ ও পুষ্পের দ্বারা সুবাসিত করিয়া ওঁ ঐঁ হ্ৰীঁ শ্ৰীঁ কৌশিকি এই রুধির দ্বারা প্রীতিলাভ কর, এই মন্ত্র বলিয়া যথাস্থানে রুধির নিক্ষেপ করিয়া ছিন্ন মস্তকের উপর প্রদীপ জ্বালাইয়া রাখিবে, এইরূপে সাধক, বলির পূর্ণ ফল প্রাপ্ত হইবে। ১৮-২০
কোন বিষয় ন্যূনতা হইলে ফলেরও ন্যূনতা হয় এবং বিপৰ্যয় হইলে কর্ম একবারে নিষ্ফল হয়। ২১
হে বেতাল ও ভৈরব। দুর্গার সকল প্রকার বলিদানে এই একই বিধি জানিবে এবং পণ্ডিতগণ ইহারই অনুষ্ঠান করিবেন। ২২
তাহার পর পূর্বের মত ধ্যানতৎপর হইয়া জপ আরম্ভ করিবে। হস্তে মালা গ্রহণ করিয়া মনে মনে দুর্গাদেবীর চিন্তা করিবে। ২৩-২৪
গুরুবর্ণাদি যেরূপ হইবে, সেইরূপে গুরুকে মস্তকে চিন্তা করিবে, কণ্ঠে পীতবর্ণ হিরন্ময় মন্ত্রের ধ্যান করিবে। ২৫
হৃদয়ে মহামায়ার ধ্যান করিবে এবং আপনাকে গুরুপদে বিলীন বিবেচনা করিবে। ২৬
তাহার পর সুষুম্না-পথ দিয়া গুরু, মন্ত্র, আত্মা এবং দেবীর একতা চিন্তা করিবে। তাহার পর তত্ত্বস্বরূপ একটি ষটচক্রকে আশ্রয় করিবে। ২৭
বিচক্ষণ সাধক ঐ ষটচক্রেও ক্ষণকাল মহামায়ার ধ্যান করিয়া মূলমন্ত্র, আদি ষোড়শচক্রে আশ্রয় করিবে। ২৮
আদি-ষোড়শ চক্র-স্থিত, সাধকদিগের আনন্দকারিণী দেবীকে চিন্তা করিয়া সাধক জপকর্ম আরম্ভ করিবে। ২৯
ভ্রূর উপরিভাগ নাড়ীত্রয়ের প্রান্তভাগ বলিয়া প্রসিদ্ধ। সেই প্রান্তভাগ ত্রিপথ ষটকোণ এবং চতুরাঙ্গুলপরিমিত। রক্তচন্দন-যোগজ্ঞ ব্যক্তিগণ ঐ স্থানকে আজ্ঞাচক্ৰ বলিয়া অভিহিত করেন। ৩০
মনুষ্যদিগের কণ্ঠে সুষুম্না, ইড়া ও পিঙ্গলা এই নাড়ীত্রয়ের ষড়ঙ্গুলিপরিমিত ষটকোণ, একটি বেষ্টন আছে। উহাও একটি ষটচক্র, উহা কণ্ঠের মধ্যস্থিত এবং শুক্লবর্ণ। ৩১-৩২
হৃদয়ে তিনটি নাড়ীর একত্ৰ মিলন হইয়াছে, ঐ স্থান সপ্তাঙ্গুল প্রমাণ এবং ষোড়শার নামে বিখ্যাত। ৩৩
যোগজ্ঞ পণ্ডিতগণ ঐ আদি ষোড়শচক্রকে পীতবর্ণ বলিয়া নির্দেশ করেন। যেহেতু ধ্যান, মন্ত্র-চিন্তনের এবং জপের হৃদয় আদ্য স্থান, এই নিমিত্ত হৃদয় আদি নামে অভিহিত হয়। ৩৪
জপের প্রথমে জল দ্বারা যত্নপূর্বক মালা ধৌত করিয়া মণ্ডলের মধ্যে অথবা বামহস্তে রক্ষা করিয়া তাহার পূজা করিবে। ৩৫
হে মালে। তুমি মহামায়া সৰ্বশক্তিস্বরূপা, তোমাতে চতুৰ্বর্গ ন্যস্ত হইয়াছে, তুমি আমার সিদ্ধিপ্রদা হও। ৩৬
হে ভৈরব! এইরূপে মালার পূজা করিয়া দক্ষিণ হস্তে তর্জনী ত্যাগ করিয়া অনামিকা ও কনিষ্ঠার সহিত মিলিত মধ্যমার মধ্যভাগে ঐ মালা গ্রহণ করিয়া সেই স্থানে মালা ধারণ করিয়া এক একটি বীজ স্পর্শ করিয়া জপ করিবে। ৩৭
প্রতিবার ধীরে ধীরে মন্ত্র পাঠ করিবে; ওষ্ঠ চালিত করিবে না, মালার এক একটি বীজ গণনা করিয়া জপ করিবে, একদা উভয় বীজ স্পর্শ করিবে না। ৩৮
হে ভৈরব! পূর্ব জপে প্রযুক্ত অঙ্কুষ্ঠের অগ্রভাগ দ্বারা পূর্ববীজ জপ করত পর বীজ স্পর্শ করিবে না, ঐরূপ করিলে তাহার সেই জপ নিষ্ফল হইবে। ৩৯
যে ব্যক্তি মালাকে হৃদয়ের সন্নিহিত করিয়া দক্ষিণ হস্তদ্বারা ধারণপূর্বক দেবীকে চিন্তা করত জপ করে, তাহাকে পাপ স্পর্শ করে না। ৪০
স্ফটিক, ইন্দ্রাক্ষ, রুদ্রাক্ষ, পুত্ৰঞ্জীব-সমুদ্ভব বীজ, সুবর্ণ, মণি, প্রবাল অথবা পদ্মের বীজ ইহার একতরের দ্বারা দেবীর পরম প্রীতিকর অক্ষমালা নির্মাণ করিবে। কুশ-গ্রন্থিযুক্ত হস্তদ্বারা সর্বদা অনুচ্চ স্বরে জপ করিবে। ৪১
সমুদয় মালাবীজের মধ্যে রুদ্রাক্ষ আমার প্রিয় অপেক্ষাও প্রিয়; যেহেতু রুদ্রের প্রীতি উৎপাদন করে, এই জন্য উহার নাম রুদ্রাক্ষ। ৪২
প্রবালের অষ্টাবিংশতি বা পঞ্চপঞ্চাশৎ বীজদ্বারা মালা রচনা করিবে, ইহা অপেক্ষা অধিক বা ন্যূন সংখ্যা দ্বারা করিবে না। ৪৩
রুদ্রাক্ষ, ইন্দ্রাক্ষ, বা স্ফটিক দ্বারা যদি জপমালা প্রস্তুত করে, তাহা হইলে উহার মধ্যে পুত্ৰঞ্জীবাদি অন্য কিছু মিশ্রিত করিবে না। ৪৪
জপকর্মে মালার মধ্যে যদি অন্য কিছু মিশ্রিত করে, তাহা হইলে প্রিয়ঙ্করী দেবী তাহাকে কাম বা মোক্ষ দান করেন না। ৪৫
সে জন্মান্তরে বেদবেদাঙ্গ-পারগ হইয়া জন্মগ্রহণ করে; কিন্তু পরে পাপ কৰ্ম্মবশে চণ্ডালদিগের সহিত মিশ্রভাব প্রাপ্ত হয়। ৪৬
মালার মূলে একটী পূৰ্ব্বাপেক্ষা স্থূলবীজ গ্রন্থন করিবে, তাহার পর ক্রমশঃ অপেক্ষাকৃত কৃশ বীজের বিন্যাস করিবে। ৪৭
এইরূপ ক্রমে মালা নিৰ্মাণ করিবে, যাহাতে সেটি একটি সর্পাকারে পরিণত হয়। প্রতিবীজ যথাস্থিত ব্রহ্মগ্রন্থি-যুক্ত করিবে। ৪৮
গ্রন্থিশূন্য দৃঢ় রজ্জু-যুক্ত করিবে। যে গ্রন্থির মধ্যদেশে ত্রিরাবৃত্তি, অন্তদেশে অৰ্ধাবৃত্তি এবং দক্ষিণাবৰ্ত্ত হয়, তাহার নাম ব্ৰহ্মগ্রন্থি। ৪৯
মালা স্বয়ং যোজিত করিবে, মন্ত্র উচ্চারণ না করিয়া যোজনা করিবে না। এরূপ দৃঢ় সূত্রের যোজনা করিবে যাহাতে জপ করিতে ত্রুটিত না হয়। ৫০
এইরূপ দৃঢ় করিয়া মালা ধরিবে, যাহাতে জপ করিতে করিতে হস্ত হইতে চ্যুত না হয়। মালা হস্ত হইতে চ্যুত হইলে বিঘ্ন হয় এবং ছিন্ন হইলে মরণ হয়। ৫১
আমার কথানুসারে যে ব্যক্তি মালা প্রস্তুত করে এবং জপ করে, তাহার অভীপ্সিত সিদ্ধ হয়; কোন বিষয়ে হীন হইলে বিপরীত ফল হয়। ৫২
অন্য সময়েও অভীষ্ট দেবকে স্মরণ করিয়া মালা জপ করিবে। পূর্বে যেরূপ উপদেশ করা গেল, সাধক, তদনুসারেই জপ করিবে; কখনও অন্যরূপ করিবে না। ৫৩
যথাশক্তি সংখ্যাপূর্বক যত্ন করিয়া জপ করিবে, সংখ্যাহীন জপ নিষ্ফল হয়। ৫৪
জপ সমাপন করিয়া মালা শিরোদেশে অথবা উচ্চ স্থানে স্থাপন করিবে। তাহার পর আপনার মনোগতভাব নিবেদন করিয়া স্তুতি পাঠ করিবে। ৫৫
স্তুতি একটি মহামন্ত্র সৰ্ব্বকর্মের সাধক। হে মহাভাগদ্বয়। তোমাদের দুজনকে সেই সর্বসিদ্ধিপ্রদায়ক স্তুতির কথা বলিতেছি। ৫৬
হে সৰ্বমঙ্গলমঙ্গল্যে শিবে। হে সৰ্বার্থসাধিকে! হে শরণ্যে। ত্র্যম্বকে। গৌরবর্ণে! নারায়ণি! তোমাকে নমস্কার করি। ৫৭
সাধক এই স্তুতি পাঠ করত সপ্তবার প্রদক্ষিণ করিবে। তাহার পর ঐং হ্রীং শ্রীঁ এই মন্ত্র দ্বারা পাঁচবার প্রাণায়াম করিবে, অথবা অন্য কার্যের পরে আপনার ইচ্ছায় অধিকবারও প্রাণায়াম করিতে পারে। ৫৮
তাহার পর যোনিমুদ্রা দেখাইয়া বিসর্জন করিবে। ৫৯
দুইটি হস্ততল বিস্তার করিয়া ঊর্ধ্বদিকে অঞ্জলি করিবে। দুই কনিষ্ঠার অগ্রভাগে দুইটি অঙ্কুষ্ঠের অগ্র সংযোজিত করিবে। ৬০
বাম হস্তের অনামিকার সম্মুখে তাহার কনিষ্ঠার বিন্যাস করিবে, এইরূপ দক্ষিণ হস্তের অনামিকার সম্মুখভাগে তাহার কনিষ্ঠার বিন্যাস করিবে। ৬১
দুই হস্তের দুইটি তর্জনীর অগ্রভাগ কনিষ্ঠার অগ্রভাগের সহিত যুক্ত করিবে। ৬২
এইরূপ করিলে একটি যোনিমুদ্রা হইবে, এই যোনিমুদ্রা দেবীর অতিশয় প্রীতিকরী। ৬৩
সাধক প্রতিমার সম্মুখে তিনবার যোনিমুদ্রা প্রদর্শন করাইবে। ঐ মুদ্রা মস্তকে স্থাপিত করিয়া পরে মণ্ডলের অগ্রভাগে স্থাপন করিবে।৬৪
তাহার পর দ্বারপদ্ম পরিত্যাগ করিয়া ঈশানকোণে ঐ যোনিমুদ্রার অগ্রভাগ করিয়া সেই স্থানে রক্তচণ্ডাকে নমস্কার করিবে। ৬৫
তদনন্তর সাধক হ্ৰীঁ শ্ৰীঁ এই মন্ত্র উচ্চারণপূর্বক রক্তচণ্ডায়ৈ নমঃ এই বলিয়া নিৰ্মাল্য নিক্ষেপ করিবে। ৬৬
তাহার পর জলেই হউক, অথবা বৃক্ষমূলেই হউক, নিৰ্মাল্যের বিন্যাস করিবে। এইরূপ বিধানে যে মনুষ্য সেই মঙ্গলদায়িনী দেবীর পূজা করে, সে সর্বপ্রকার বাঞ্ছিত ফল প্রাপ্ত হয়। ৬৭
সাধক, প্রথমে অর্ধ লক্ষ জপ করিয়া বিশেষ নৈবেদ্য দান করিয়া পুরশ্চরণ করিবে। ৬৮
শুক্লপক্ষে অষ্টমীর দিবস উপবাস করিয়া মণ্ডল তুল্য একটি কুণ্ড করিবে। নবমীর দিবস পঞ্চবর্ণের গুঁড়ি দিয়া পিতা এবং গুরুকে নিকটে রাখিয়া পূর্বের ন্যায় একটি মণ্ডল করিবে। ৬৯
পূর্বোক্ত বিধানে চণ্ডিকা দেবীর পূজা করিয়া বিল্বপত্র সহিত তিলের দ্বারা অষ্টোত্তর শতবার হোম করিয়া তিন সহস্রবার জপ করিবে। ৭০
নৈবেদ্য, গন্ধপুষ্প, প্রিয়বস্তু, পূর্বোক্ত অন্যান্য বস্তু এবং পায়স দেবীকে দান করিবে। ৭১
পূজার অবসানে ত্ৰিজাতীয় তিনটি বলি প্রদান করিবে। তাহার পর সিন্দুর, স্বর্ণ, রত্নাদি স্ত্রীদিগের ভূষণ সকল এবং শক্তি অনুসারে ভূরি পরিমাণে পুষ্পমালা প্রদান করিবে। ৭২
নবমীর দিবস শালি অন্ন সহিত মহাশক্ত, ব্যঞ্জনযুক্ত দ্রব্য এবং সন্ধ্যাকালে ঘৃতের সহিত বলি দেবীকে দান করিবে। ৭৩
গুরুকে সুবর্ণ, গাভী এবং তিল দক্ষিণা দান করিবে। ৭৪
অভিশপ্ত, অপুত্র, নিন্দনীয়, ক্রিয়াহীন, অকল্পজ্ঞ, বামন, গুরুনিন্দক, এবং সৰ্ব্বদা মৎসরযুক্ত এইরূপ গুরুর নিকট মন্ত্র গ্রহণ করিবে না। ৭৫
গুরু,–মন্ত্রের মূল, যেহেতু মূল শুদ্ধ হইলে তৎসম্বন্ধীয় অঙ্গ সকল সফল হয়, এই নিমিত্ত তাহাকে যত্নপূর্বক পরীক্ষা করিবে। ৭৬
শাস্ত্রে কোন একটি ভাল মন্ত্র দেখিয়া তাহা শাঠ্যদ্বারা, ক্রোধ-প্রদর্শনপূর্বক মোহ উৎপাদন করিয়া, সম্পত্তির লোভ দেখাইয়া, অথবা ছলনাপূর্বক গুরুর মুখ হইতে গ্রহণ করিবে না। ৭৭।
সেই-মন্ত্র-চৌর্য-রূপ পাপে মনুষ্য মন্বন্তর-ত্রয় নরকে বাস করিয়া পাপ যোনিতে জন্মগ্রহণ করে। ৭৮
যেমন নিবিড় অরণ্য মধ্যে সুশস্যের বীজ বপন অনুচিত, সেইরূপ শঠ, ক্রূর, মূর্খ, ছলনাকারী, অভক্ত এবং দূষিত ব্যক্তিকে মন্ত্র দান করা উচিত নয়। ৭৯
পুরশ্চরণপূর্বক একলক্ষবার মন্ত্র জপ করিলে অভীষ্ট সিদ্ধ হয়; কারণ পুরশ্চরণ কাৰ্য্য দ্বারা সকল পাপ বিনষ্ট হয়। ৮০
হে নরশ্রেষ্ঠদ্বয়। প্রতিদিন ত্রিসন্ধ্যা বীজসংপুট করিয়া দ্বিলক্ষ বার মন্ত্র জপ করিলে মনুষ্য–কবি, বাগ্মী, পণ্ডিত এবং যশস্বী হয়। ৮১
হে সাধকদ্বয়। ইহার পর সাধকদিগের শ্রেষ্ঠ পূজা-স্থান শ্রবণ কর। ৮২
যে মনুষ্য, যে কোনরূপ নির্জন স্থানে পূজা করে, দেবী স্বয়ং তাহার দত্ত পত্র, পুষ্প, ফল এবং জল গ্রহণ করেন। ৮৩।
পূজা বিষয়ে শিলা, স্থণ্ডিল এবং নির্জন স্থান–সর্বাপেক্ষা প্রশস্ত এবং সকল প্রকার জপের মধ্যে উপাংশু জপই সর্ব প্রধান বলিয়া পরিকীর্তিত হইয়াছে। ৮৪
অশুচি মনুষ্য, কদাপি মহামায়ার পূজা করিবে না। কিন্তু তাহার অন্তরে যদি ভক্তি থাকে, তবে অবশ্য মন্ত্রের স্মরণ করিতে পারে। ৮৫
দম্ভ হইতে রক্ত নির্গত হইলে স্মরণ নিষিদ্ধ। ঐ অবস্থায় কোন প্রকার মন্ত্রের স্মরণ করিলেই নরকে গতি হয়। ৮৬
জানুর ঊর্ধ্বে ক্ষত হইলে কখনও নিত্যকর্মের অনুষ্ঠান করিবে না; জানুর অধোদেশে যদি রক্তস্রাব হয়, তাহা হইলে নৈমিত্তিক কর্মের অনুষ্ঠান করিবে। ৮৭
ক্ষৌরকর্ম বা মৈথুনে লোম বা কেশ হইতে রক্ত বিগলিত হইলে ধূমোগদার অর্থাৎ চোঁয়া-ঢেকুর উঠিলে বা বমন হইলে নিত্যকর্ম সকল পরিত্যাগ করিবে। ৮৮
কোন দ্রব্য ভোজন করিয়া অজীর্ণ হইলে অথবা কোন বস্তু ভোজন করিয়া–মনুষ্য নিত্য কর্ম করিবে না। জননাশৌচ বা মরণাশৌচ হইলেও নিত্য কৰ্ম্মের পরিত্যাগ করিবে। ৮৯
হে নরশ্রেষ্ঠ। পত্র, পুষ্প এবং তাম্বুল যাহা ঔষধরূপে পরিকল্পিত হইয়াছে, সেই ঔষধ ভিন্ন যে কোন দ্রব্য, ফল অথবা জলও ভোজন করিয়া কোন নিত্য বা নৈমিত্তিক কর্মের অনুষ্ঠান করিবে না। ৯০-৯১
জলৌকা, গূঢ়পাদ, কৃমি এবং গণ্ডুপদাদি জীবকে ইচ্ছাপূর্বক হস্তদ্বারা স্পর্শ করিলে নিত্যকর্মের অধিকার থাকে না। ৯২
বিশেষ মৃত-পিতৃক মনুষ্য এক বৎসর পর্যন্ত শিবপূজা এবং দুর্গাদেবীর মানসিক হইলে এক বৎসর যাবৎ কোন কাম্য কর্মের অনুষ্ঠান করিবে না। ৯৩
ঋতুতে কর্তব্য যজ্ঞ, ব্ৰহ্মষজ্ঞ, শ্রাদ্ধ এবং কোন প্রকার দেবকাৰ্য্যও করিবে। ৯৪
হে ভৈরব! গুরুর নিন্দা করিলে, স্বহস্তে ব্রাহ্মণকে প্রহার করিলে এবং রেতঃপাত করিলে নিত্যকর্ম সকলের অনুষ্ঠান করিবে না। ৯৫
মনুষ্য, ভগ্ন আসন বা অর্ঘ্যপাত্র গ্রহণ করিয়া পূজা করিবে না। এবং ঊষর অর্থাৎ ক্ষার ভূমিতে, কৃমিযুক্ত স্থানে অথবা অমার্জিত স্থানেও পূজা করিবে না। ৯৬
হে ভৈরব! নীচ আসনে উপবেশনে করিয়া শুচি এবং পবিত্রমানস হইয়া চণ্ডিকাদেবী এবং অন্য দেবতাকে অর্চনা করিবে। ৯৭
সমুদয় দিকের মধ্যে কৌবেরী (উত্তর) দিক চণ্ডিকার প্রীতিকারিণী, এই নিমিত্ত সর্বদা উত্তরমুখে আসীন হইয়া চণ্ডিকার পূজা করিবে। ৯৮
কীট-ভিন্ন, বিশীর্ণ, ভগ্ন, স্বয়ংপতিত, কেশযুক্ত এবং মূষিকা-চৰ্বিত পুষ্প যত্নপূর্বক পরিত্যাগ করিবে। ৯৯
এইরূপ বিশীর্ণ, ভগ্ন, উদগত, কেশযুক্ত এবং মূষিকা-ধৃত দীপ ও আসনও পরিত্যাগ করিবে। ১০০
যে সকল বস্তু যাচিত, যা পরকীয় বা পর্যুষিত অর্থাৎ বাসি, অথবা অন্ত্যজ জাতিস্পৃষ্ট অথবা পদদ্বারা সৃষ্ট এ সকল বস্তু বহু যত্নপূর্বক পরিত্যাগ করিবে। ১০১
হে ভৈরব! যে মনুষ্য উক্তরূপ বিধান অনুসারে চণ্ডিকা দেবীর পরম মনোরম পূজন করে, সে ইহলোকে সমুদয় বাঞ্ছিত প্রাপ্ত হইয়া অচিরকাল মধ্যে চণ্ডিকার ভবনে গমন করে। ১০২
পঞ্চপঞ্চাশ অধ্যায় সমাপ্ত। ৫৫