চতুঃপঞ্চাশ অধ্যায় – পূজা-পারিপাট্য
ভগবান কহিলেন;–তাহার পর সেই অর্ঘ্যপাত্রে সেই মন্ত্র অষ্টবার আবৃত্তি করিয়া জপ করিবে। ১
পরে সেই জল দ্বারা পুষ্পাদি সকল ও আপনার মণ্ডল আসন ও পূজো পকরণ স্বয়ং অভ্যুক্ষিত করিবে। ২
ওঁ ঐঁ হ্ৰীঁ শ্ৰীঁ এই মন্ত্রদ্বারা অস্ফুট স্বরে দ্বারপাল ও দেবীর আসনগুলি পূজা করিবে। ৩
নন্দীভৃঙ্গী মহাকাল গণেশ দ্বারপাল–ইহাদিগকে উত্তরাদিক্ৰমে এবং আধারশক্তি হইতে হেমাদ্রি পর্যন্ত মধ্য ক্ৰমে পূজা করিবে। ৪
হে ভৈরব! সৰ্ব্ব তন্ত্রের পূজা প্রকরণে প্রসিদ্ধ দশ দিকপাল ধর্ম ও অধর্ম ইত্যাদি গ্রহগণ মণ্ডলের অগ্নিকোণ হইতে পূজা করিবে। ৫।
তাহার পর সূৰ্য্য, অগ্নি, চন্দ্র, পবন ও সকল মণ্ডল পদ্ম, সত্ত্ব, রজঃ, তমঃ, যোগপীঠ, গুরুপদ, সারদাদি ভদ্রপীঠ–ইহাদিগকে সাঙ্গোপাঙ্গরূপে পূজা করিবে। ৬
তাহার পর ব্রহ্মাণ্ড, স্বর্ণডিম্ব, ব্ৰহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বর, সকল সমুদ্র, সপ্তদ্বীপ, সমণ্ডপ স্বর্ণ দ্বীপ ও পর্য্যঙ্ক, রক্তপদ্ম, রত্নস্তম্ভ, সিংহ এই সকলের পূজা মণ্ডল মধ্যে অবশ্য করিবে। ৭-৮
হ্রীঁ এই মন্ত্র দ্বারা পূর্বোক্ত নিয়মে, হস্ত কুৰ্ম্ম-পৃষ্ঠাকারে বদ্ধ করিয়া পূৰ্বোক্ত মন্ত্রপূত আসনে সমাসীন হইয়া দেবীকে পূর্ববৎ পূজা করিবে। ৯
তাহার পর হৃৎপদ্মে স্বর্ণদ্বীপ ও উত্তম পর্য্যঙ্কখানি চিন্তা করিবে। ১০
অনন্তর তাহাকে যেন প্রত্যক্ষ করিতেছি, এইরূপভাবে একাগ্রচিত্তে দেবীকে স্মরণ করিবে। ১১
ইহার পর ঘোড়শপ্রকার উপচার দ্রব্যে হৃদয়স্থ দেবীকে মনে মনে পূজা করিবে। ১২
হে ভৈরব! তাহার পর বায়ু বীজের দ্বারা নাসিকার দক্ষিণপুট দ্বারা বায়ু নিঃসারণ করিয়া সেই কুৰ্ম্মমুদ্রাবদ্ধ হস্ত হইতে দেবীকে পদ্মমধ্যে স্থাপন করিবে। ১৩
যাবৎকাল না স্থাপন হইবে, তাবৎকাল হস্তবন্ধন ত্যাগ করিবে না। ১৪
কৃৰ্ম্মমূদ্রা-বদ্ধ হস্ত যদি পুষ্পবিযুক্ত করিয়া উপাসনা করা হয়, তাহা হইলে গন্ধৰ্ব্ব–সেই পূজার ফলপ্রাপ্ত হন, পূজক তাহা প্রাপ্ত হন না। ১৫
তাহার পর “মহামায়ায়ৈ বিদ্মহে চণ্ডিকায়ৈ ধীমহি ধিয়ে যো নঃ প্রচোদয়াৎ” এই গায়ত্রী দ্বারা আহ্বান করিবে। ১৬
তাহার পর “ওঁ হ্রীং শ্রীং নমঃ” এই কথা বলিয়া লক্ষণাক্রান্ত স্নানীয়োদক প্রদান করিবে। ১৭
মূলমন্ত্র দ্বারা গন্ধ, পুষ্প, ধূপ, দীপ, পায়স, মোদক, শর্করা, গুড়, দধি, ক্ষীর, ঘৃত, নানাবিধ ফল, রক্তপুষ্প–মালা, সুবর্ণ, রজত, অতি উত্তম নৈবেদ্য, দেবীর আনন্দজনক পক্ক নাগরঙ্গ ফল, বহু কুষ্মাণ্ড ফল, হরীতকী ফল, নাগরঙ্গ মেখলা, বালকপ্রিয় আর আর দ্রব্য সকল, নারিকেল জল এই গুলি দেবীকে যত্নপূর্বক প্রদান করিবে। ১৮-২১
দেবীকে রক্তবর্ণকৌষেয় বস্ত্র দিবে, কখন নীলবর্ণের বস্ত্র দিবে না। ২২
বকুল, নাগকেশর, কুন্দ, মন্দার, বজ্র ধনুহী পুষ্প অথবা তিল পুষ্প, করবীর, কুরুন্ট (ঝিন্ট), অর্কপুষ্প (আকন্দ), শাল্মলী (শিমুল), সুকোমল দূৰ্ব্বাঙ্কুর, কুশমঞ্জরী, কুশ, বন্ধুক, পদ্ম, বিল্বপত্র, রক্তপদ্ম এই সকল বস্তু দেবীর প্রিয়। ২২-২৫
হে ভৈরব! পুষ্পের মধ্যে বন্ধুক, কুন্দ, বকুল বিল্বপত্ৰ এইগুলি বিশেষ প্রিয়। দ্রব্যের মধ্যে পায়স ও মোদক বিশেষ প্রীতিকর। ২৬
যে ব্যক্তি সহস্র বকুল, বন্ধুক, করবীর, কুন্দপুষ্পের মালা দেবীকে প্রদান করেন, সে ব্যক্তি সকল অভীষ্ট কামনা লাভ করিয়া আমার লোকে (শিব লোকে) আগমনপূর্বক আনন্দভোগ করেন। ২৭
কালীয়কযুক্ত চন্দন ও কুঙ্কুম এই দুইটী বস্তু লেপন-দ্রব্যের মধ্যে শ্রেষ্ঠ; অতএব দেবীকে ইহা যত্নপূর্বক দিবে। ২৮
কর্পূর, কুসুম্ভ পুষ্প, সুগন্ধ মৃগনাভি, কালীয়, গন্ধদ্রব্যের মধ্যে এইগুলি দেবীর প্রীতিকর। ২৯
তীব্রগন্ধী যক্ষধূপ (ধুনা) সুগোল পিণ্ড ধূপ, অগুরু সিন্ধুবার এই সকল ধূপ দেবীর অভিলষিত। ৩০
অঙ্গরাগের মধ্যে সিন্দুর দেবীর আমোদজনক; মধু মাংসযুক্ত সুগন্ধিশালি তণ্ডুলোৎপন্ন, অপূপ (পিষ্টক), পায়স, ক্ষীর এই ভোজনদ্রব্যগুলি দেবীর পক্ষে প্রশস্ত। ৩১
সকর্পূর রতোদক, পিণ্ডীতক (ময়না), কুমার (বরুণ), রোচন, এই সকলের পুষ্পমিশ্রিত জল দেবীর স্নানীয়। ৩২
দীপের মধ্যে ঘৃতপ্রদীপই সুপ্রশস্ত। এই সকল দ্রব্য, দেবীকে প্রদান করিয়া পরে মূল মন্ত্রদ্বারা পুস্পাঞ্জলিত্রয় উত্তমরূপে প্রদান করিবে। ৩৩
ইত্যবসরে কামেশ্বরী বিন্ধ্যকন্দর-বাসিনী, গুপ্তদুর্গা, মাতঙ্গী, ললিতা, দুর্গা, সিদ্ধিদ, ভৈরবী, বলপ্রমথিনী, চণ্ডী, চণ্ডোগ্রা, চণ্ডনায়িকা, চণ্ডা, উগ্রচণ্ডা,কোটীশ্বরী, দীর্ঘিকা, উগ্রা, ভীম, শিবা, শান্তা, জয়ন্তী, কালিকা, মঙ্গলা, ভদ্রকালী, শিবা, ধাত্রী, কপালিনী, স্বাহা, স্বধা, অপর্ণা, পঞ্চ-পুষ্করিণী, সৰ্ব্বভূতদমনী, মনঃপ্রোৎসাহকারিণী–এই সকল দেবীকে পূজা করিয়া, হৃদয়, মস্তক, শিখা, কবচ, নেত্র, বাহু, চরণ–মন্ত্রদ্বারা এই সকল অঙ্গ পূজা করিবে। ৩৪-৩৭
মূল মন্ত্রের প্রথম তিন অক্ষরের দ্বারা প্রথমোক্ত অঙ্গের পূজা কর্তব্য, পরে মন্ত্রের এক একটি অক্ষর বাড়াইয়া পর পর এক একটী অঙ্গ পূজা করিবে। ৩৮
সিদ্ধ সূত্র ও খড়্গ মূল মন্ত্রদ্বারা পূজা করিবে। তাহার পর পদ্মের অষ্টদলে অষ্ট যোগিনী পূজা করিবে। ৩৯
পূৰ্বাদি চতুর্দিকে শৈলপুত্রী, চণ্ডঘণ্টা, স্কন্দমাতা ও কালরাত্রির পূজা করিবে। ৪০
অগ্নিকোণাদি চতুষ্কোণে চণ্ডিকা, কুষ্মাণ্ডী, কাত্যায়নী ও মহাগৌরী এই দেবী কয়েকটিকে পূজা করিবে। ৪১
পদ্মমধ্যে “মহামায়াং নমামি” ও মূল মন্ত্রদ্বারা মহামায়া অর্চনা করিবে। ইহার পর বলিদান। ৪২
হে ভৈরব! যে সময় এইরূপ কল্পাদিক্রমে কামদেবী পূজিত হন, তখন তিনি স্বয়ং মণ্ডলে আসিয়া ভক্তের দেয় পদার্থ গ্রহণ করেন এবং ভক্তের অভিলাষ সম্যক্ পূরণ করেন। ৪৩
চতুঃপঞ্চাশ অধ্যায় সমাপ্ত। ৫৪