দ্বিপঞ্চাশ অধ্যায় – মন্ত্রোপদেশ আরম্ভ
ঔর্ব কহিলেন,-মহাদেব এইরূপ উপদেশ দিলে তখন বেতাল ও ভৈরব হর্ষোৎফুল্ল-লোচনে ব্যোমকেশকে কহিলেন। ১
হে ভগবন! আমরা পার্বতীর ধ্যান, মন্ত্র, অর্চন-ক্ৰম, কিছুই জানি না, কিরূপে তাহাকে আরাধনা করিব, তদ্বিষয়ে সম্যক উপদেশ দিন। ২
ভগবান কহিলেন, হে বৎস! আমি মহামায়ার বিধি, মন্ত্র ও কল্প সকলই তোমাদিগকে যথার্থরূপে উপদেশ দিতেছি, তাহাতেই তোমাদিগের সকল সিদ্ধ হইবে। ৩
ঔর্ব কহিলেন,–হে নরপতে! এই কথা বলিয়া মহাদেব তখন মহামায়ার ধ্যান, মন্ত্র এবং বিধি তাহাদিগকে উত্তমরূপে বলিলেন। ৪
মহাদেব পার্বতীপূজার পশ্চাল্লিখিত অষ্টাদশ পটলের দ্বারা নির্ণয়পূর্বক বিধি কল্প রচনা করিয়াছেন। ৫
সগর রাজা কহিলেন,-পূৰ্বে শঙ্কর কিরূপ মন্ত্র, বেতাল ও ভৈরবকে কহিয়াছিলেন, যে মন্ত্র দ্বারা মহামায়াকে আরাধনা করিয়া তাহারা গণেশত্ব লাভ করেন। আমি সেই কল্প, সেই মন্ত্র, সম্পূর্ণরূপে শ্রবণ করিতে উৎসুক হইয়াছি। অষ্টাদশ পটলের দ্বারা মহাদেব, যে মন্ত্র ও যে কল্প গ্রহণ করিয়াছেন। ৬
ঔর্ব কহিলেন,–হে নৃপোত্তম। মহাদেব যে সকল মন্ত্রাদির বিষয় বলিয়াছেন, তাহা অতি বিস্তৃত; সম্পূর্ণ বলিতে গেলে অনেক সময় লাগিবে; অতএব সেই সকলের সারভাগ উদ্ধৃত করিয়া বলি শ্রবণ কর। ৭
যখন বেতাল ও ভেরব পাৰ্ব্বতী-মন্ত্র জিজ্ঞাসা করিলেন, তখন মহাদেব কহিলেন, তোমরা পাৰ্বতীমন্ত্র ও পার্বতীকল্প শ্রবণ কর। ৮
ভগবান কহিলেন,–আমি মহামায়া বৈষ্ণবীর মহোৎসবদায়ক; গুহ্য হইতে অতি গুহ্যতম অষ্টাক্ষর মন্ত্র বলিতেছি, তাহা শ্রবণ কর। ৯
এই বৈষ্ণবী মন্ত্রের ঋষি নারদ, দেবতা শম্ভু, ছন্দঃ অনুষ্টুপ এবং সৰ্ব-অর্থ সাধনাৰ্থ ইহার প্রয়োগ হয়। ১০
হাস্তান্ত (ষ), মান্ত (য), নান্ত (প), ণান্ত (ত), কৈকাদশ (ট), আদিষষ্ঠ (চ), খান্ত (ক), বিষ্ণু (অ), ইহা বামাবৰ্তে পাঠ করিলে “অ ক চ ট ত প য য” এই মন্ত্র হয়। ১১
এই অষ্টাক্ষর দ্বারা ঐ মন্ত্র নিষ্পন্ন হয়, উহার রক্তপদ্ম সদৃশ প্রভা; পূর্বে প্রণব উচ্চারণ করিয়া সাধকগণ উহার জপ করিবে। ১২
ইহা একটি অতি গুহ্য মহামন্ত্র, ইহার নাম বৈষ্ণবী মন্ত্র; ইহা কলেবর বিশিষ্ট বলিয়া উহাকে অঙ্গিমন্ত্র বলা হয়। ১৩
মহাদেবের ঊর্ধ্বমুখ এবং প্রণবের বীজই ইহার বীজ এবং যকার ইহার শক্তি। ১৪
হে ভৈরব! সবীজ মন্ত্র কথিত হইল, এক্ষণে পূজার কল্প শ্রবণ কর। ১৫।
তীর্থে, নদীতে, দেবখাতে, গর্তে, প্রস্রবণাদিতে এবং পরকীয় জল ভিন্ন যে কোন জলাশয়ে প্রথমে স্নান করিবে। ১৬।
স্নানানন্তর আচমন করিয়া শুদ্ধ হইয়া আসনে উপবেশন করিয়া উত্তরাভিমুখে স্থণ্ডিলের মার্জনা করিবে। ১৭
‘যুং সঃ ক্ষিত্যা’ এই মন্ত্র এবং ‘ওঁ হ্রীং স’ এই আশাপূরণক মন্ত্র দ্বারা ভূতাপসরণের নিমিত্ত হস্তে জল লইয়া উহা দ্বারা পূজাস্থানের অভ্যুক্ষণ করিবে। ১৮
অনন্তর শুচি সাধক, বাম হস্ত দ্বারা স্থণ্ডিল গ্রহণ করিয়া সুবর্ণশলাকা বা যাজ্ঞিক কুশ দ্বারা উহাতে মন্ত্র লিখিবে। ১৯
“ওঁ বৈষ্ণব্যৈ নমঃ” এই মন্ত্র অথবা মন্ত্ররাজ অঙ্কিত করিবে। অনন্তর উহার সহিত সমরেখায় একটি মণ্ডল অঙ্কিত করিবে। ২০
নিত্য পূজায় পঞ্চবর্ণগুড়ি দ্বারা মণ্ডল অঙ্কিত করিবার আবশ্যক নাই, কাম্য পূজায় বা পুরশ্চরণাদিতে ঐরূপ করিবে। ২১
তাহার পর পশ্চিমে এবং তদনন্তর দক্ষিণে রেখা অঙ্কন করিবে; সর্বশেষে পূর্বভাগে রেখা অঙ্কন করিবে। ২২
দ্বার এবং দল অঙ্কন করিবার এইরূপ ক্রম জানিবে। ‘ওঁ হ্রীং স’ এই মন্ত্র দ্বারা মণ্ডলের পূজা করিবে। ২৩
অনন্তর মণ্ডল হস্তদ্বারা ধারণ করিয়া পূর্বোক্ত ফটু-অন্ত দিগ্বন্ধন মন্ত্র দ্বারা যথাক্রমে দশ দিক্ বন্ধন করিবে এবং স্বহস্ত দ্বারাই দিগ্বন্ধন করিবে। ২৪
আটটি যবের দ্বারা একটি অঙ্গুলি হয়, অদীর্ঘ অর্থাৎ বিস্তারভাগে যোজিত চতুর্বিংশতি-অঙ্গুলি দ্বারা একটি হস্ত হয়। ২৫
এই প্রমাণ হস্তের নিজের এক হস্ত-পরিমিত মণ্ডল করিবে। উহাতে বিতস্তিপরিমিত পদ্ম এবং অর্থ বিতস্তি-পরিমিত কর্ণিকার করিবে। ২৬
পদ্মের দলগুলিকে পরস্পর-সংলগ্ন, : আয়ত ন্যূনাধিকভাব-শূন্য এবং বহির্বেষ্টনযুক্ত করিয়া নিৰ্মাণ করিবে। ২৭
উহার ঠিক মধ্যভাগে ন্যূন বা অধিক ভাগে নহে- একটী দ্বার করিবে। ২৮
সেই মণ্ডলকে বর্তুলাকার রক্তবর্ণ চিন্তা করিবে। ২৯
যে ব্যক্তি উক্ত লক্ষণহীন একটা কিম্ভুতকিমাকার-রূপ মণ্ডল দেবীর পূজার্থ অঙ্কিত করে, সে পূজার ফল ও নিজের অভিলষিত প্রাপ্ত হয় না, অতএব যথাবিধি মণ্ডল অঙ্কিত করিবে। ৩০
দ্বিপঞ্চাশ অধ্যায় সমাপ্ত। ৫২