অধ্যায় : ৫১ অধিকারসমূহ
ধারা ১২৬৩
হক () আরবী শব্দ, যাহার আভিধানিক অংশ প্রাপ্য বিশ্বাস, মখার বিপরীভকাশ পাওয়া অধিকার ইত্যাঙ্কি এবংপরিভাষায় ৰূল্পা হয় অধিকারকে।
কামূস (wwali)-এ উল্লেখ আছে, সুকুমালের প্রতি, মালিকের প্রতি এবং উভয়ের প্রতি প্রযোজ্য এবং হক বলিতে এমন বিষয়কে বুঝায় যাহা নিঃসন্দেহে সংঘটিত।
কেন? Bক? জুরজানী () বলিয়াছিহক ভ্রমন বিষয়ষ্ণেলী ইয়র্ষহ অস্বীকার করার কোন উপায় নাই।
। চিকীত pp-? (ক) উসূলে ফিকহবিদদের মতে হক দুই অন্ধ্যহত হয় প্রধঃ হক অর্থাৎ “হুকুম” বা নির্দেশ। আল্লাহ পাক কর্তৃরাঁদে প্রতি নির্দেশসমূহহেকবলে। ফখরুল ইসলাম আল-বাযদাবী বলিয়াছেন, আল্লাহ পাকের এই নির্দেশসমূহ চার প্রকারঃ (১) শুধুমাত্র আল্লাহ্ পার্কের হকসমূহ, (২) শুধুমাত্র বান্দাদের হক, (৩) যাহার মধ্যে আল্লাহর ব্যাব হক যৌথভাবে সামিল কিন্তু আল্লাহরুকে প্রাধান্য #8ে )যুহার মধ্যে উভয়ের হুক রিদম বান্দার হকের প্রাধান্য থাকে।
আত্মউ বুান্ধীরলিয়াকেহিকাল্লিমেন মিয়র্কে বুঝায় যাহার অস্তিত্ব্যারাগারে কোন হেরঙ্গকাকাইফোয়াদু।অঙ্কিত্ব প্রতিষ্ঠিত, অমুক ব্যক্তির যিম্মায় অমুকের হক প্রতিষ্ঠিত হয় ইত্যাদি চুক্তিনিজ
৭৬০
বলিয়াছেন, আল্লাহর হক সমগ্র পৃথিবীর উপকারের জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য, কোন ব্যক্তিবিশেষের জন্য নির্দিষ্ট নহে। আর বান্দার হক, ব্যক্তিবিশেষের উপকারের জন্য নির্দিষ্ট, যেমন বান্দার মাল অপরের জন্য অন্যায় দখল হারাম হওয়া, ইহা ব্যক্তিবিশেষের উপকারের জন্য।
কুরাফী বলিয়াছেন, আল্লাহর হক হইতেছে তাঁহার নির্দেশ ও নিষেধসমূহ।
দ্বিতীয় প্রকার? হক-এর দ্বিতীয় অর্থ হইতেছে ফেল বা কাজ অর্থাৎ হক বলিতে কাজকে বুঝায়, শুধু নিষেধ বা নির্দেশকে নহে। তাফতানী বলিয়াছেন, হক-এর অর্থ হইল, আল্লাহ তায়ালা বান্দাদের প্রতি যে সকল নির্দেশ প্রদান করিয়াছেন সেই অনুযায়ী কাজ করা।
অধিকাংশ ফিকবিদের মতে, “হক” বলিতে সাধারণত মানুষের অধিকারকে বুঝায়। এই অধিকার মাল-সম্পদ অথবা মাল-সম্পদ ছাড়াও হইতে পারে। যেমন কেহ নগদ মূল্য প্রদানের শর্তে মাল বিক্রয় করিয়া উহা পরবর্তীতে বাকিতেও প্রদান করিতে পারে, ইহা তাহার অধিকার।
এই আলোচনায় আমরা “হক” শব্দটিকে “মানুষের প্রাপ্য অধিকার” অর্থে ব্যবহার করিয়াছি।
ধারা-১২৬৪
হক-এর রুকনসমূহ হক-এর রুকনসমূহ সাধারণত তিন শ্রেণীভুক্ত – (ক) হক -এর অধিকারী। (খ) যাহার উপর হক প্রযোজ্য। (গ) হক-এর স্থান ( ৩১)।
বিশ্লেষণ
প্রথম রুকন হকের অধিকারী (52। ..) হকের অধিকারী বান্দাও হইতে পারে। যেমন আনুগত্যের দিক দিয়া স্ত্রীর প্রতি স্বামীর হক। আবার হকের অধিকারী আল্লাহও হইতে পারেন। যেমনঃ নামায, রোযা ইত্যাদি আল্লাহর হক। ইহার মধ্যে কাহারও কোন প্রকারের অধিকার নাই। কেহ আল্লাহর কোন অধিকারকে রহিত করিতে পারে না।
৭৬১
দ্বিতীয় রুকন যাহার উপর হক প্রযোজ্য (stle ১) : যেমন আল্লাহ পাকের নির্দেশ বান্দার উপর প্রযোজ্য। তৃতীয় রুকূন হক-এর স্থান (as ) : যেমন বিবাহের পর স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে ব্যবহার করা।
ধারা-১২৬৫
হক-এর শ্রেণীবিভাগ হক দুই প্রকার – (ক) হক লাযিম বা বাধ্যতামূলক অধিকার; (খ) হক জায়েয বা বৈধ অধিকার।
বিশ্লেষণ
হক বিভিন্নভাবে বিভিন্ন প্রকারে বিভক্ত হইয়াছে। এখানে সর্বপ্রথম হক-কে দুই ভাগে বিভক্ত করা হইয়াছে। প্রথমত, হক লাযিম বা বাধ্যতামূলক হক। বাধ্যতামূলক হক বলিতে এমন হক-কে বুঝায় যাহা শরীয়াত কর্তৃক দৃঢ়ভাবে নির্ধারিত।
দ্বিতীয় প্রকারঃ হক জায়েয বা যে হক বাধ্যতামূলক নহে। যেমন শরীয়াত কর্তৃক ধার্যকৃত কোন মূবাহ বা মুস্তাহাব কাজ, যাহা পালন করিলে নেকী পাওয়া যায় কিন্তু পালন না করিলে কোন গুনাহ হয় না অর্থাৎ যাহা পালন করা বাধ্যতামূলক নহে, উহাকে হক্ক জায়েয বলে।
ধারা-১২৬৬
হক-এর ভিন্নতর শ্রেণীবিভাগ উপকার ও বিশেষ উপকার হিসাবে হক চার প্রকার – (১) শুধুমাত্র আল্লাহর হক, (২) শুধুমাত্র বান্দার হক, (৩) যেখানে উভয় হক উপস্থিত, তবে আল্লাহর হক অগ্রগণ্য, (৪) যেখানে উভয় হক উপস্থিত তবে বান্দার হক অগ্রগণ্য।৫
বিশ্লেষণ
আল্লাহর হক যাহা সমগ্র বিশ্বের জন্য ব্যাপক উপকার রাখে এবং যে উপকারের সহিত কোন ব্যক্তিবিশেষ সম্পৃক্ত নহে, বরং সমগ্র মানব সন্তান সম্পৃক্ত। যেমন
পৃ৬২
বিবি ইসলামী আইন
ঝাইতুল্লার হুম্রাত সমগ্র বিশ্বের জন্য অর্থাৎ সমগ্র বিশ্বের কেল্লা হিসাবে তাহাদের নামায পড়িবার জন্য এবং যেমন, যেনা ব্যভিচার-এর হারামের মধ্যে সমগ্র মানব জাতীর কল্যাণ নিহিত। এ সকল বিষয়ের মধ্যে শুধুমাত্র আল্লাহর হক রহিয়াছে।
দ্বিতীয় প্রকার? যেখানে শুধুমাত্র বান্দার হক রহিয়াছে। যেমন দিয়াতের অধিকার, শুধুমাত্র ব্যক্তিবিশেষের জ্য-নির্ধারিত, গসবকৃত মাল উহার মালিককে ফেরৎ প্রদান করা ইত্যাদি।
কাকি চ…
তৃতীয় প্রকার? যেখানে আল্লাহর হক ও বান্দার হক উভয়ই উপস্থিত্ব-তবে আল্লাহর হক প্রাধান্য, যেমন হচ্ছে কায়ফু ও বান্দার হকুও রহিয়াছে এবং আল্লাহর হকও বহিয়াছে তবে কায়াফ (ধারা- দ.)-এর ক্ষেত্রে মিথ্যা অপবাদদাতাকে শাস্তি প্রদান করা আল্লাহর হক এবং ইহার গুরুত্ব এইজন্য যে, যাহাতে সমাজে শান্তি-শৃংখলা বজায় থাকে। ইহা আল্লাহক হওয়ার কারণে কেহ চাহিলেও শাস্তি হইতে রেহাই পাইবে না এবং কেহ ইচ্ছা করিলে উহা ক্ষমাও করিতে পারিবে না,
এ ক) SAF) যা কি?
“ .. এইজন্যই আল্লাহর হকের প্রাধান্য রহিয়াছে। “ক”
“ss * 1 s21: $ $ :: চতুর্থ প্রকার যাহার মধ্যে আল্লাহ্ন এবং বান্দা উভয়েরুহকু রহিয়াছে, তবে
বান্দার হক অগ্রগণ্য। যেমন হত্যাকারী হইতে কিসাস গ্রহণ করা। এইখানে যদিও আল্লাহর হুকু রহিয়াছে তুরে বান্দার হক অগ্রগণ্য। কেননা হত্যাকারী তাহার ঝুঁচিয়া থাকার অধিকার অবৈধভাৱেহরণ করিয়াছে। এইখানে বান্দার হক-এইজন্য প্রান্ত পাইয়াছে যেহেতু নিহত ব্লজির উত্তরাধিকারীষ্মণহত্যার বিচার চাহিতেও প্রাঙ্কো আবার ক্ষমাও প্রদর্শন করিতে পারে। তাই এক্ষেত্রে বান্দার হক্ক-এ প্রাধান বিদ্যমান।
~~-~-চি
ভিচা5ধান২৬৭ FB (2} – আল্লাহর হক-এর মণবভাগ v চুকি! তর্জাহকটর }(১) খালেছ ইবাদত (২) এক্ষিন হাত যাহার মধ্যে স্মায়ুন রহিয়াছে, ৩)ঐমন মায়ুনী ‘খাহার মধেইবাদত রহিয়াছে, ৪) এমন মায়ুনা যাহার মধ্যে সাজা রহিয়াছে, (স্থ)মন ই যাহার মধ্যে ইবাদত এবং সাজা ) উভয়ই রহিয়াছে। (৬) খালেছ বাজী, ()নাকে it}): সাজা এবং (৮):4মন হকায়াহা প্রথম হইতেই আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট। ft;;; :: শচীন : তুE
“
“
।
বিধিবদ্ধ ইসলামী ফ্রাই
–
–
–
–
বিশ্লেষণ
:: : : :
খালেছ ইবাদত (যেমন নামায রোযা ইত্যাদি)শ্মিহা প্রত্যেক দ্বালেগ্যক্তির উপর ফরয। হানাফী মাযহাব মতে যাকাত প্রদানওঁ খালেছ ইবাদত হিসাবে গ্য। কেননা ইহার উল্লেখ রাসূলুল্লাহ (সা) নামায এবং রোযার সহিত করিয়াছেন এবং ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ হিসাবে ঘোষণা করিয়াছেন। রাসূলুল্লাহ (সা) বলিয়াছেন? &v 2, hi। ট্রাক + Ly। s:/N* কি লিৗগুচা
ও ছিল, কল্পনা, T?: ) চাচীঃta.ত চাকরি করা হচেক”
“ইসলাম পাঁচটি জিনিসের উপর প্রতিষ্ঠিত : (১) এই সাক্ষ্য প্রদান করা যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নাই এবং মুহাম্মাদ (সা) আল্লাহর রাসূল, নামায কায়েম করা, যাকাত আদায় করা, হজ্জ আদায় করা ও রমযানের রোযা রাখা”।৭
দ্বিতীয় প্রকার ক্ষন ইব্রাদত আহার মধ্যে মায়ুন (সাহায্য-সহযোগিতা) রহিয়াছে, যাহার দ্বারা গরীব-মিসকীন উপকৃত হয়।যথা সঁদাকাঙ্গালুফেতরা, যাকাইজাদিস শর্ট! 52, ল ভ $! : 2015
‘তৃতীয় প্রকার : এম মামুন্নাহার মধ্যে ইবাদত রহিয়াছে, বৈমম ফল-ফলাদির যাকাত ৰ্মায়ুক্কাইহিকোয়ে, উহার ফসলং -ফলের উপর নির্ধারিতপরিমাণ ধার্য রহিয়াহ্নেয়াহদান করিতে হয়। আল্লাহ পাকেশুকরিয়াস্বপ্ন এবংইবাদত-এইহিঙ্গাকে ফেইহাধুমুলমন ব্যক্তির ক্ষেযোজ্য, কোন অমুসলিমের উপর নহে। এরইহাধুমাত্র যাকাতেরাআরিফের হকার যজ্জিদের জুনাইহা:বৈধ নহের চাকা তা ) Fভ চা5 : ৯ : “চতুর্থ প্রকার মনমায়ূনাযৗহারমধ্যে সাজারহিয়াছে; যেমন!জমিনের উপর রোজআরোলিত হওয়ায় চীফ »e ভিড় স্টীচ। ভাড়
পঞ্চম প্রকার ও এমন হকসমূহ খাই ইবাদত এবং সার্জার মধ্যে সমানবে প্রযোজযেমনকাফফারাসমূহঃ ক্লেয়ার কাফফারাকসমের কাফফারা ইত্যাদি। কাফফারাশান্তি।এইহিসেৰেযে অঙ্গীকার ভাঙ্গের কারণে উহাশাস্তিস্বরূপ আরোপ করা হয় এক ইবাদত এই হিসাবে যে!কাফফারা কখনো কখনোইবাদতের ন্যায় আদায়যোগ্য হইয়া থাকে কয়েন রোযা অপরকোখাওয়ানোর মাধ্যমে গোলামমুক্ত করিবার মাধ্যমে। >> : 31}{ d? >ি}} চতন: চাযষ্ঠ প্রকার নিছক সাজল, যেমনহসমূহ, চুরির সাজা; যুেনাজা, মদনের সাজা ইত্যাদি নাত,….?: ৎ;
।
*
;
৭৬৪
সপ্তম প্রকার ও অসঙ্কন সাজা।
অষ্টম প্রকার? এমন হক্ক যাহা প্রথমত এমনিতেই আল্লাহর জন্য নির্ধারিত। যেমন গণীমতের মালের এক-পঞ্চমাংশ।
ধারা-১২৬৮ আল্লাহর একাধিক হক একত্র হইলে আল্লাহর একাধিক হক একত্রে পাওয়া গেলে এবং সবগুলি একই সাথে আদায় করা অসম্ভব হইলে একটিকে অপরটির উপর অগ্রাধিকার দেওয়া যায়।
বিশ্লেষণ
ইমাম যামাখশারী (র) বলিয়াছেন, যে ক্ষেত্রে আল্লাহর একাধিক হক একত্রে পাওয়া যায় সেক্ষেত্রে উহা আদায়ের কয়েকটি শ্রেণী রহিয়াছে।
প্রথমতঃ আল্লাহর দুইটি হক যখন একত্রে পাওয়া যাইবে তখন উহাদের মধ্যে যেইটি সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ হক বলিয়া বিবেচিত হইবে সেইটিকে প্রাধান্য প্রদান করিয়া প্রথমে আদায় করা যায়। যেমন কোন ব্যক্তির উপর রমযানের একাধিক মাসের রোযা কাযা রহিয়াছে। সে যে কোন রমযানের রোযা কাযা আদায় করিতে পারিবে, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আদায়ের প্রয়োজন নাই। কিন্তুরমযান মাসও উপস্থিত হইলে আগে এই রোযাকে অগ্রাধিকার দিতে হইবে।
দ্বিতীয় ও অনুরূপভাবে যে ব্যক্তি দুইটি ছাগল ছানা মান্নত মানিয়াছে, সে দুইটি ছানার যে কোন একটিকে প্রথম এবং অপরটিকে পরে আদায় করিতে পারিবে। অনুরূপভাবে যে ব্যক্তি হজ্জ ও ওমরা করিবার মান্নত মানিয়াছে, সে চাহিলে প্রথমে হজ্জও করিতে পারে, চাহিলে ওমরাও করিতে পারে ইত্যাদি।
তৃতীয়ঃ যদি আল্লাহর একাধিক এমন হক একত্রে পাওয়া যায় যাহাদের মধ্যে পার্থক্য রহিয়াছে, তবে সেক্ষেত্রে প্রাধান্য প্রদান করা যায়। যেমন যে ছাগল ছানাটির মধ্যে ওয়াজিব যাকাত এবং ইহরামের ওয়াজিব দম একত্রে পাওয়া যায় সেক্ষেত্রে যাকাত প্রদান করাই উত্তম হইবে। অনুরূপভাবে কোন মালে ব্যবসার যাকাত এবং ফেতরা একত্র হইলে উক্ত মালে ফেতরা প্রদান করা উত্তম।
চতুর্থ : যে ক্ষেত্রে আল্লাহর এমন দুইটি হক একত্র হয় যাহার একটিকে অপরটির উপর প্রাধান্য প্রদান করার মধ্যে মতভেদ রহিয়াছে।১০ যেমন বস্ত্রহীন
৭৬৫
অবস্থায় দাঁড়াইয়া নামায পড়া উত্তম না বসিয়া নামায পড়া উত্তম এ বিষয়ে ফকীহদের মতভেদ রহিয়াছে। দাঁড়াইয়া নামায পড়িলে রুকু-সিজদা পূরণ করিবে। আর বসিয়া পড়িলে ইশারায় রুকু-সিজদা করিবে। এই দুইয়ের মধ্যে প্রথমটাই অর্থাৎ দাঁড়াইয়া নামায পড়াই উত্তম হইবে। কেননা ইহার মধ্যে নামাযের অন্যতম আরকান রুকু-সিজদার সংরক্ষণ সম্ভব হয়।
অনুরূপভাবে যদি কোন ব্যক্তি এমন স্থানে থাকে যে স্থান সম্পূর্ণ নাপাক এবং তাহার নিকট পাক কাপড় থাকে, তাহা হইলে এমতাবস্থায় সে কি কাপড় বিছাইয়া বস্ত্রহীন অবস্থায় নামায আদায় করিবে, না কি ঐ কাপড় পরিধান অবস্থায় নাপাক স্থানে নামায আদায় করিবে? উত্তম হইল, কাপড় পরিধান করিয়া নামায আদায় করিবে। অনুরূপভাবে যদি একাধিক বস্ত্রহীন মানুষ একত্র হয় তবে সেক্ষেত্রে পৃথক পৃথক নামায আদায় করা উত্তম।১১
ধারা-১২৬৯ আল্লাহর ও বান্দার হক একত্রীত হইলে আল্লাহর হক ও বান্দার হক একত্র হইলে তিনটি অবস্থা রহিয়াছে? প্রথম, আল্লাহর হক প্রাধান্য পাইবে। দ্বিতীয়, বান্দার হক প্রাধান্য পাইবে। তৃতীয়, আল্লাহর হক অথবা বান্দার হক প্রাধান্য পাইতে পারে।
বিশ্লেষণ
আল্লাহর হক ও বান্দার হক একত্র হইলে উহা আদায়ে তিনটি অবস্থা রহিয়াছে।
প্রথমতঃ যেখানে শুধু আল্লাহর হক প্রাধান্য, যেমন রোযা ইত্যাদি। সর্বাবস্থায় বান্দা আল্লাহর হককে প্রাধান্য প্রদান করিবে। যেহেতু ইহার মধ্যেই বান্দার
পরকালের মঙ্গল নিহিত রহিয়াছে।
দ্বিতীয়ঃ যেখানে শুধুমাত্র বান্দার হক প্রাধান্য, যেমন জরবদস্তীমূলক কেহ বাধ্য হইয়া কুফরী কথা বলিলে উহা তাহার জন্য বৈধ। এমতাবস্থায় বান্দা নিজের প্রাণ বাঁচাইবার জন্য কুফরী কথা বলিতে পারে।১২
অনুরূপভাবে যদি অসুস্থতা বাড়িয়া যাওয়ার আশংকা থাকে তবে সেক্ষেত্রে উযুর পরিবর্তে তায়াম্মুম করাকে অর্থাৎ বান্দার হককে প্রাধান্য প্রদান করা হইবে এবং বৈধ কারণ থাকিলে নামায, রোযা, জিহাদ সব কিছুই বান্দার জন্য মাফ হইয়া যায়।
‘
।
‘
***
‘
।
।
–
–
T;
লি
‘
:
–
~
=
1
At 0
=
.
তৃতীয় যেখানে আল্লাহর এবং বান্দার হক প্রাধান্য দেওয়ার ক্ষেত্রে স্বত্বভেদ রহিয়াছে। যেমন মৃত ব্যক্তির উপর যদি আকাবাকী ঘার্কে এৱং অন্য মানুষের কর্জও বাকী থাকে তকে সেক্ষেত্রে তিনটি মত পাওয়া যায়ূ (১) যাকাত দেওয়া প্রাধান্য পাইকৈ ২ কর্জ পরিশোধ প্রাধান্য পাইবে, ৩)উভয় বরাবর উত্তম হইলে আল্লাহর হক যাকাতকে প্রাধান্য দেওয়াও কত কী- নাচ’
১. ক
৩ : ১, ১ : F! » « ল্পী : স -!!6. ১ ট ক ক ক লা চত 15 $- $=;”>>• র : ২৪ :TF < সর? সাধুচjC » চু?। চাচা। বি: ফেহকবান্দাপানুকরিতে বাধ্য কত কি!!! #}> যে হক শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট এবং যে হকের মধ্যে সর্বসাধারণের সার্বিক মঙ্গল নিহিত রহিয়াছে, বান্দা উহা পালন করিতে বাধ্য।
৯. বিশ্লেষণ
এমন কতকগুলি হক রহিয়াছে ফাহা শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট, তাহা কোন বান্দা ইচ্ছা করিলে ক্ষমা বা রহিত করিতে পারে না। যেমন যাকাত ইত্যাদি ইবাদত। সাজাসমূহ (susas), হুদূদ অথবা উভয়ের সংমিশ্রণ, যেমন কাফফারাসমূহ অথবা অন্য অধিকার, যেমন মাতৃত্ব বা পিতৃত্বের অধিকার এবং সন্তানের অধিকার তাহার পিতার বংশ পরিচয়ের জন্য। আল্লাহর এ সকল অধিকার কোন বান্দা রহিত করিতে পারে না বা অস্বীকারও করিতে পারে না, অস্বীকার করিলে তাহাদের সহিত যুদ্ধ করা বৈধ। যেমন হযরত আবু বা (রা) যাকাত অস্বীকারকারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করিয়াছেন।১৪
আল্লাহর হক ছাড়াও যদি রাসূলের সুন্নাত যাহার মধ্যে দীন প্রকাশ পায় এবং ইসলামের অবিচ্ছেদ্য অংশ বলিয়া গণ্য হয়, যেমন ‘আযান’, যদি গোটা শহরের মানুষ আযান রহিত করিবার ব্যাপারে একমত হয় তবুও তাহাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা বৈধ হইবে”।১৫
অনুরূপভাবে কোন ইবাদত রহিত হওয়ার জন্য কোন হিলা বা বাহানা সৃষ্টি করাও বৈধ নহে। যেমন কোন ধনী ব্যক্তি যাহার উপর হজ্জ ফরয হইয়াছে, যদি তাহার মাল কাহাকেও এইজন্য দান করিয়া দেয় যাহাতে তাহার উপর হজ্জ ফরয না হইতে পারে, ইহা বৈধ নহে।
৭৬৭
অনুরূপভাবে নামাযের সময় উপস্থূিতাহইলে কেহ যদি ঘুমের ঔষধ খাইয়া দ্রিা যায় এবং নামাযের সময়ও অতিবাহিত হইয়া যায় এবং সে ন্দ্রিায় মগ্ন থাকে তবে ইহাওবৈধ নহে;১৬ ৭:৩* র চ = {1: * } $4Fচ ১৯৯৪ সাত
হ’বহিত করিতে পারে না, বরং এমন হক রহিত হওয়ার জন্য
::
??
কেহ রাহত করতে পার চIC :১. ১; 5
[ { a . সুপারিশও করা
ৰে নহে। যেমন হদ্দ আৰু
Rি এমন হক রাহত ই য়ার জন্য ১।: Eী? তাছ
Tসুতরাং’হদ রাহত
গন্য হব
১
:}…
آتشفع في حد من حدود الله :
হওয়ার জন্য সুপারিশ করা বৈধ নহে। জনৈক নারীর চুরির ব্যাপারে যখন রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নিকট সুপারিশ করা হইয়াছিল তখন তিনি রাগান্বিত হইয়া ধলিয়ছিলেন
• ki। ১১১ : “তুমি কি আল্লাহ নির্ধারিত হদ্দের ব্যাপারে সুপারিশ করিতেছ”?১৭ অনুরূপভাবে তালাকপ্রাপ্তা মহিলা তাহার ইদ্দত পালন করা পর্যন্ত স্বামীর ঘরে অবস্থান করিবে, ইহা আল্লাহর হক। কোন ব্যক্তি ইচ্ছা করিলেইঞ্জহাকে স্বামীর ঘর হইতে বাহির করিয়া দিতে পারিবে না। এমনকি স্ত্রীও ইচ্ছা করিলেশমীর ঘর ত্যাগ কুব্লিতে পারি না। কেননা ইহা আল্লাহর হক্ক। আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলিয়াছেন
;
;
ঢ
*
ولا تخرجوهن من بيوتهن ولا يخرجن.
با وجود
“তোমরা তাহাদেরকে তাহাদের ঘর হইতে বহিষ্কার করিও না এবং তাহারা (স্ত্রীরা) হইতে বাহির হইবে না” (৬৫ঃ১)।
অনুরূপভাবে খিয়ারে রুয়াত (3J,L), ইহা আল্লাহর হক, বান্দা ইচ্ছা করিলেই ইহা বাতিল করিতে পারিবে না। সুতরাং না দেখিয়া বেচা-কেনা অনুষ্ঠিত হইলে মাল দেখিবার পর ক্রেতার মাল গ্রহণ করা বা না করার স্বাধীনতা থাকিবে। কেননা রাসূলুল্লাহ (সা) বলিয়াছেন।
من اشترى شيئا لم يره قله الخيار اذا راه .
“যে ব্যক্তি না দেখিয়া কোন মাল ক্রয় করে, উক্ত মাল দেখিবার পর তাহার এখতিয়ার থাকিবে”।১৮
ধারা-১২৭১
নির্ধারিত হক নির্ধারিত হক বলিতে এমন হক বুঝায় যাহা শরীআত কর্তৃক অথবা মানুষ কর্তৃক নির্ধারিত।
৭৬৮
বিশ্লেষণ
আল্লাহ অথবা রাসূলুল্লাহ (সা) কর্তৃক অথবা মানুষ পরস্পর লেনদেনের মাধ্যমে যে পরিমাণ অধিকারকে নির্দিষ্ট করিয়া লয় উহাকে নির্ধারিত হক বলে। যেমন আল্লাহ মালে নির্ধারিত পরিমাণ যাকাত প্রদান অথবা মানুষে পরস্পরে ক্রয়-বিক্রয়ের মাধ্যমে যে পরিমাণ মূল্য অথবা যে পরিমাণ মাল নির্দিষ্ট করিয়া লয় উহা তাহাদের জন্য পরস্পরের নির্ধারিত হক বা অধিকার বলিয়া গণ্য।
ধারা-১২৭২
নির্ধারিত হকের হুকুম নির্ধারিত হক (১) অবশ্যই আদায়যোগ;
(২) প্রদানে যিনি বাধ্য অর্থাৎ যাহার উপর হক ধার্য রহিয়াছে উহা তাহার যিম্মায় এক প্রকার বাধ্যবাধকতা হিসাবে গণ্য হইবে;
(৩) আদায় করা ছাড়া যিম্মা মুক্ত হওয়া যায় না;
(৪) আদায়ে নিচুপ থাকিলে অথবা দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হইলে উহা আদায়ের অধিকার রহিত হইয়া যায় না;
(৫) আদায়ে পরস্পরের সম্মতি অথবা সরকারী নির্দেশ অথবা পরস্পর সমঝোতা কোন কিছুর প্রয়োজন পড়িবে না;
(৬) যদি আল্লাহর হয় তবে শরীয়াতের বৈধ কোন কারণ পাওয়া গেলে উহা রহিত হইতে পারে;
(৭) বান্দার প্রাপ্য হইলে এবং বান্দা উহা নিজের পক্ষ হইতে মাফ করিয়া দিলে উহাও রহিত হইয়া যাইবে।১৯
ধারা-১২৭৩
অনির্ধারিত হক অনির্ধারিত হক বলিতে এমন হককে বুঝায় যাহার পরিমাণ শরীয়াত কর্তৃক অথবা মানুষ কর্তৃক নির্ধারিত নহে।
৭৬৯
বিশ্লেষণ
যে হকের কোন পরিমাণ আল্লাহ অথবা তাহার রাসূল কর্তৃক অথবা মানুষ কর্তৃক নির্দিষ্ট নাই তাহাকে অনির্ধারিত হক বলে। যেমন সাধারণ দান-খয়রাত, আল্লাহর রাস্তায় খরচ করা, নিকট আত্মীয়-স্বজনের জন্য খরচ করা, বিপদগ্রস্তদের সাহায্য করা ইত্যাদি হকসমূহকে বুঝায়, যাহার কোন পরিমাণ শরীয়াত কর্তৃক অথবা মানুষ কর্তৃক নির্ধারিত নহে, বরং সময় এবং প্রয়োজনীয় চাহিদা মোতাবেক এই সকল হক পূরণ করা হয়।
ধারা-১২৭৪
অনির্ধারিত হকের হুকুম অনির্ধারিত হক – (১) আদায়যোগ্য;
(২) কাহারও যিম্মায় অবশ্য আদায়যোগ্য নহে অর্থাৎ ইহা আদায় বাধ্যতামূলক নহে;
(৩) যদিও আদায়ের কোন বাধ্যবাধকতা নাই তবুও যদি পরস্পর আদায়ে সম্মতি প্রদান করে অথবা আদায়ের ব্যাপারে কোন প্রকারের সমঝোতা হইয়া থাকে অথবা ইহা প্রদানের ব্যাপারে সরকারী কোন নির্দেশ থাকে তবে উহা প্রদান করা বাধ্যতামূলক হইয়া যাইবে;
(৪) অতীত কালের হইলে তাহা আদায়যোগ্য নহে;
(৫) সম্বন্ধে যদি কোন প্রকারের চাহিদা না থাকে অর্থাৎ এই অধিকার আদায়ে নীরবতা অবলম্বন করা হয় অথবা দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হইয়া যায় তবে সেক্ষেত্রে এই হক রহিত হইয়া যাইবে ২০
ধারা-১২৭৫ যে হক নির্ধারিত বা অনির্ধারিত নহে এমন কিছু হক আছে যাহা নির্ধারিতও নহে, অনির্ধারিতও নহে।
বিশ্লেষণ
ইহা এমন এক প্রকার হক যাহা কিছুটা নির্ধারিত আবার কিছুটা অনির্ধারিত হকের মত অর্থাৎ যাহার নির্ধারিত এবং অনির্ধারিত হওয়ার মধ্যে ফকীহদের
૧૧૦
মতভেদ রহিয়াছে। যেমন স্ত্রীর খরচাদি (a ai)। মালিকী, শাফিঈ ও হাম্বলী মতে ইহা নির্ধারিত এক প্রকার হক যাহা স্বামীর দায়িত্বে অর্পণ করা হইয়াছে। কোন অবস্থায় ইহা রহিত হওয়ার যোগ্য নহে।২১
হানাফী মতে স্ত্রীর খরচাদি (a2i) স্বামী কর্তৃক বাধ্যতামূলকভাবে প্রদেয় নহে। ইহার আদায় জরুরী বিষয় নয়। তবে সরকার যদি উহা আদায়ে বাধ্য করে তবে তখন উহার আদায় বাধ্যতামূলক হইবে।২২
ধারা-১২৭৬
বাঁচিয়া থাকিবার অধিকার প্রত্যেক মানুষের বাঁচিয়া থাকিবার অধিকার রহিয়াছে, বৈধ কোন কারণ ছাড়া মানুষকে এই অধিকার হইতে বঞ্চিত করা যায় না।
বিশ্লেষণ
এই পৃথিবীতে প্রত্যেক মানুষের স্বাধীনভাবে বাঁচিয়া থাকিবার অধিকার আছে। ইসলাম মানব জীবনকে একান্তই সম্মানের বিষয় হিসাবে স্বীকৃতি প্রদান করিয়াছে এবং একটি মানুষের জীবন সংহারকে সমগ্র মানব গোষ্ঠীর হত্যার সমতুল্য সাব্যস্ত করিয়া জীবনের নিরাপত্তার গুরুত্বের প্রতি জোর দিয়াছে। মহান আল্লাহ পাক বলেনঃ
من قتل نفسا بغير نفس أو فساد في الأرض فكانما قتل الناس جميعا
ومن أحياها فكأنما أحيا الناس جميعا . (المائدة : ۳۲) .
“নরহত্যা অথবা পৃথিবীতে ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপের অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তি ব্যতিরেকে কেহ কাহাকে হত্যা করিলে সে যেন পৃথিবীর সমগ্র মানব জাতিকে হত্যা করিল। আর কেহ কাহারও প্রাণ রক্ষা করিলে সে যেন পৃথিবীর সমগ্র মানবজাতিকে প্রাণে রক্ষা করিল” (৫ঃ ৩২)।
ولا تقتلوا النفس التي حرم الله الا بالحق .
“আল্লাহ যে প্রাণ হত্যা নিষিদ্ধ করিয়াছেন যথার্থ কারণ ছাড়া তাহা হত্যা করিও “ (১৭ঃ ৩৩)।
কতল বিল-হক (বৈধ কারণে হত্যা) ছয়টি ক্ষেত্রে প্রযোজ্য :
১) ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যার অপরাধীকে তাহার অপরাধের প্রতিশোধস্বরূপ হত্যা করা (কিসাস)।
৭৭১
(২) জিহাদের ময়দানে সত্য দীনের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারীদের হত্যা করা।
(৩) ইসলামের রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার পতনের চেষ্টায় লিপ্তদের হত্যা করা। (৪) বিবাহিত নারী-পুরুষকে যেনা বা ব্যভিচারের অপরাধে হত্যা করা। (৫) ডাকাতির (623) অপরাধে হত্যা করা। (৬) মুরতাদ্দ হওয়ার কারণে হত্যা করা।
বর্ণিত ছয়টি কারণ ছাড়া অন্য কোন কারণে মানুষকে হত্যা করা বৈধ নহে। বর্ণিত পাঁচটি কারণের উল্লেখ আল্লাহ পাক সূরা আনআমের ১৫২ নং আয়াতে, বাকারার ১৭৮ ও ১৭৯ নং আয়াতে এবং সূরা ফুরকানের ৬৮ নং আয়াতে বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করিয়াছেন। মহান আল্লাহ অবৈধ হত্যাকে এমন গুরুতর ও জঘন্য অপরাধ হিসাবে গণ্য করিয়াছেন যে, এইরূপ হত্যার শাস্তি পৃথিবীতে কিসাসের মাধ্যমে ভোগ করিবার পরও অপরাধীর পরকালে স্থায়ীভাবে জাহান্নামে থাকিবার ঘোষণাও প্রদান করিয়াছেন। উপরন্তু সে ব্যক্তি মহান আল্লাহর চরম অভিসম্পাতের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হইবে। আল্লাহ পাক বলেন
ومن قتل مؤمنا متعمدا فجزاؤه جهنم خلدا فيها وغضب الله عليه ولعنه
وأعد له عذابا عظيما .
“এবং কেহ ইচ্ছাকৃতভাবে কোন মুমিন ব্যক্তিকে হত্যা করিলে তাহার শাস্তি জাহান্নাম। সেখানে সে স্থায়ী হইবে এবং তাহার প্রতি আল্লাহর অভিসম্পাত এবং তিনি তাহার জন্য মহাশাস্তি প্রস্তুত রাখিয়াছেন” (৪ : ৯৩)।
রাসূলুল্লাহ (সা) হত্যা সম্পর্কে বিদায় হজ্জের ঐতিহাসিক ভাষণে ঘোষণা করিয়াছিলেন : “হে লোকসকল! তোমাদের জান, মাল ও ইজ্জত-আবরুর উপর হস্তক্ষেপ তোমাদের উপর হারাম করা হইল। তোমাদের আজিকার এই দিন, এই (যিলহজ্জ) মাস এবং এই শহর (মক্কা শরীফ) যেমন পবিত্র ও সম্মানিত, অনুরূপভাবে উপরোক্ত জিনিসগুলিও সম্মানিত ও পবিত্র। সাবধান! আমার পরে তোমরা পরস্পরের হন্তা হইয়া কাফেরদের দলভুক্ত হইয়া যাইও না”।২৩
রাসূলুল্লাহ (সা) বলিয়াছেন, “কোন মুসলিম ব্যক্তির নিহত হওয়ার তুলনায় সমগ্র পৃথিবীর পতন আল্লাহর দৃষ্টিতে অতি তুচ্ছ ব্যাপার” (২৪ “
যে ব্যক্তি চুক্তিবদ্ধ কোন অমুসলিমকে হত্যা করিল সে কখনও জান্নাতের সুগন্ধি পাইবে না”। ২৫
११३
ধারা-১২৭৭ ব্যক্তিগত স্বাধীনতা, সমমর্যাদা এবং সমান অধিকার। প্রত্যেক মানুষ স্বাধীন, সমমর্যাদা সম্পন্ন এবং সমান আশ্রয় পাইবার অধিকারী।
বিশ্লেষণ
মানুষ স্বাধীনভাবে জন্মগ্রহণ করে। ইহার অর্থ জন্মগতভাবেই মানুষের স্বাধীনতা রহিয়াছে। স্বাধীনতা বলিতে সাধারণত নিজের ইচ্ছামত কোন কিছু করিবার বা না করিবার অবাধ অধিকারকে বুঝায়। সুতরাং অধীনতামুক্ত অবস্থাকেই স্বাধীনতা বলা যায়। স্বেচ্ছাচারিতা এবং স্বাধীনতা এই দুইটি বিষয় এক নহে। স্বেচ্ছাচারিতা হইতেছে আইনহীন অরাজক অবস্থার নাম। আসলে স্বাধীনতা হইতেছে, আইন কর্তৃক নিয়ন্ত্ৰণযুক্ত অবস্থায় জীবন যাপনের অধিকার। একজনের স্বাধীনতা
অন্যজনের অধিকার দ্বারা সীমিত। আইন-কানুন স্বাধীনতার পরিপন্থী নহে, বরং স্বাধীনতার সহায়ক। বস্তুত, স্বাধীনতা মানে যাহা ইচ্ছা তাহাই করিবার অবাধ অধিকারও নহে, আবার অন্যের স্বেচ্ছাচারমূলক নিয়ন্ত্রণও নহে। স্বাধীনতা হইতেছে অপরের অধিকারে হস্তক্ষেপ না করিয়া নিজের ব্যক্তিত্ব বিকাশের অধিকার। মানুষ পরস্পর সমমর্যাদা সম্পন্ন এবং সমান অধিকার লাভের দাবিদার। ইসলাম মানুষের এই সম্মানকে জোরালোভাবে প্রকাশ করিয়াছে। বলা হইয়াছে, যদি কাহারও প্রাধান্য থাকিয়া থাকে তাহা হইলে ইহা নির্ধারিত হইবে চরিত্র ও নৈতিকতার মাপকাঠিতে। এ ব্যাপারে কুরআনের ঘোষণা হইতেছে।
ایها الناس انا خلقناكم من ذكر وأنثى وجعلناكم شعوبا وقائل لتعارفوا
ان أكرمكم عند الله اتقكم.
“হে মানুষ! আমরা তোমাদিগকে একজন পুরুষ এবং একজন নারী হইতে সৃষ্টি করিয়াছি এবং তোমাদিগকে বিভিন্ন গোষ্ঠী ও গোত্রে এইজন্য বিভক্ত করিয়াছি যাহাতে তোমরা পরস্পরকে চিনিতে পার। তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি সর্বাধিক খােদাভীরু সে আল্লাহর নিকট সর্বাধিক সম্মানিত” (৪৯ : ১৩)।
এই আয়াতে প্রথম কথা বলা হইয়াছে, গোটা মানবজাতি একই মূল হইতে উৎসারিত, বংশ, বর্ণ, ভাষা ইত্যাদির পার্থক্য মানব জগতে ভাগাভাগির জন্য মূলত কোন যুক্তিযুক্ত কারণই নয়।
৭৭৩
দ্বিতীয় কথা বলা হইয়াছে, আমরা এই জাতিগত বণ্টন শুধুমাত্র পরিচয় লাভের জন্য কারিয়াছি। অন্য কথায় এক গোষ্ঠী, এক গোত্রের এবং এক জাতির লোকদের অন্যদের উপর এমন কোন শ্রেষ্ঠত্ব নাই যে, তাহারা নিজেদের অধিকারের তালিকা দীর্ঘায়িত করিবে এবং অন্যদের তালিকা সংকুচিত করিবে। আল্লাহ পাক এই যে পার্থক্য করিয়াছেন, পরস্পরের দৈহিক কাঠামো ভিন্ন ভিন্ন বানাইয়াছেন, ভাষায় পার্থক্য রাখিয়াছেন, এসব কিছু গৌরব ও অহংকারের জন্য নহে, বরং পারস্পরিক স্বাতন্ত্রও সৃষ্টি করিবার জন্যই তাহা করিয়াছেন। যদি সমস্ত মানুষ একই রকম হইত তাহা হইলে পার্থক্য করা যাইত না। এদিক হইতে এই বিভক্তি প্রকৃতিগত, কিন্তু অন্যদের অধিকার আত্মসাত করা এবং অনর্থক শ্রেষ্ঠত্ববােধ প্রতিষ্ঠার জন্য নহে। সম্মান ও গৌরবের ভিত্তি নৈতিক অবস্থার উপর প্রতিষ্ঠিত। এই সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সা) বলিয়াছেন?
لا فضل لعربي على أعجمي ولا لاعجمي على عربى ولا حمر على أسود
ولا لأسود على أحمر ا بالقوى ولا فضل للأنساب :
“কোন অনারবের উপর কোন আরবের শ্রেষ্ঠত্ব নাই এবং কোন আরবের উপরও কোন অনারবের শ্রেষ্ঠত্ব নাই। কালোর উপর সাদার এবং সাদার উপর কালোর কোন শ্রেষ্ঠত্ব নাই। কিন্তু তাকাওয়ার ভিত্তিতে শ্রেষ্ঠ হইতে পারে, ৰংশের ভিত্তিতেও কোন শ্রেষ্ঠত্ব নাই”।
অর্থাৎ দীনদারি, সততা ও তাকওয়ার ভিত্তিতেই শ্রেষ্ঠত্ব নির্ণীত হয়। এমন তো নহে যে, কোন ব্যক্তিকে রূপা দ্বারা, কোন ব্যক্তিকে পাথর দ্বারা, আর কোন ব্যক্তিকে মাটি দ্বারা তৈরি করা হইয়াছে, বরং সমস্ত মানুষ সমান এবং সমমর্যাদার ভিত্তিতেই বাঁচিয়া থাকিবার অধিকারী।ফেরাউনী ব্যবস্থাকে কুরআন মজীদে যে সকল কারণে বাতিল সাব্যস্ত করিয়াছে তাহার অন্যতম কারণ হইল এই বৈষম্য যে, তাহার শাসন মানুষে মানুষে পরস্পর বৈষম্য সৃষ্টি করিয়াছিল। আল্লাহ পাক বলেন?
ان فرعون علا في الأرض وجعل أهلها شيعا يستضعف طائفة منهم .
“নিশ্চয় ফেরাউন যমীনের বুকে দুর্বিনীত হইয়া পড়িয়াছিল এবং দেশের জনগণকে দলে-উপদলে বিভক্ত করিয়া দিয়াছিল। তাহাদের এক দলকে সে এতটা দুর্বল করিয়া দিয়াছিল” (২৮৪)।
৭৭৪
ধারা-১২৭৮ মালের মালিকানা লাভের অধিকার শরীয়ত সম্মত বৈধ পন্থায় যে কোন ব্যক্তি যে কোন মালের মালিকানা লাভ করিতে পারে এবং বৈধ কোন কারণ ছাড়া তাহাকে উক্ত অধিকার হইতে বঞ্চিত করা যায় না।
বিশ্লেষণ
মাল বা সম্পত্তি বলিতে এমন বস্তু বা বিষয়কে বুঝায় যাহার উপযোগিতা রহিয়াছে এবং যাহার উপর মানুষের অধিকার শরীয়াত ও সমাজ কর্তৃক স্বীকৃত। বস্তুগত মাল হইতেছে ঘর-বাড়ী-দালানকোঠা, ভূমি দ্রব্যসামগ্রী ইত্যাদি। আর অবস্তুগত সম্পত্তির মধ্যে রহিয়াছে সকল প্রকারের সৃজনশীলতা, শিল্পকর্ম ইত্যাদি। মাল বা সম্পত্তির বিষয়বস্তু অবশ্যই ব্যক্তি বা সমষ্টির মালিকানায় থাকিবে। মালিকানায় বা অধিকারে থাকিবে এই কারণে যে, ঐ মাল বা সম্পত্তির উপযোগিতা রহিয়াছে এবং ব্যক্তি বা সমষ্টি ব্যবহার করিয়া ইহার মাধ্যমে তাহার প্রয়োজন মিটায়। সাধারণত সকল মালেরই বিনিময় মূল্য থাকে। তবে এই বিনিময় মূল্য নির্ভর করিবে মালের মালিকানা, যোগান, উপযোগিতা ও হস্তান্তর যোগ্যতার উপর। মালকে সাধারণত শরীরি ও অশরীরি এই দুই ভাগে ভাগ করা হইয়াছে। প্রথমোক্ত শ্রেণীর মাল স্পর্শ দ্বারা বােধগম্য এবং শেষোক্ত শ্রেণীর মাল স্পর্শ দ্বারা বােধগম্য নহে। স্থাবর-অস্থাবর এই দুই ভাগেও মালকে ভাগ করা যায়। বাস্তব মাল বা সম্পত্তি স্থাবর, আর ব্যক্তিগত মাল অস্থাবর। মালিকানার দিক বিবেচনা করিয়া সরকারী ও ব্যক্তিগত এই দুই ভাগে ভাগ করা যায়। বস্তুত ধরা ছোঁয়া যাক বা না যাক, যাহা কিছু মানুষের প্রয়োজনে আসে অভাব মেটায় তাহার সবই মাল।
মালিকানা ও মালিকানা শব্দের অর্থ হইতেছে অধিকার সম্বন্ধীয় দাবি। মালের মালিকানা অর্থ হইতেছে মালের অধিকার। কোন মাল দখলে রাখিবার, ব্যবহার করিবার, ভোগ করিবার, দান করিবার, বিক্রয় করিবার অধিকারকেই মালিকানা বলে। মাল মানব জীবনের অপরিহার্য ও অবিচ্ছেদ্য অংগ, জীবনের সহিত ইহার সম্পর্ক খুব ঘনিষ্ঠ বলিয়াই বিভিন্ন ভাষায় এই শব্দটি জীবনের সহিত মিশিয়া গিয়াছে। যেমন জান-মাল, জীবন ও সম্পদ, লাইফ এন্ড প্রপার্টি ইত্যাদি। মাল যেহেতু জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংগ সেহেতু জীবনের মতই ইহার গুরুত্ব। মানুষের
৭৭৫
জীবনের অধিকার যেমন, তেমনি অধিকার মালের। জীবনের নিরাপত্তার জন্য চাই মালের নিরাপত্তা। তাই একই সাথে জান-মালের নিরাপত্তার কথা আসে। মালের অধিকার বলিতে বুঝায় মালের মালিক হওয়ার অধিকার। প্রত্যেক মানুষ চায় মালের মালিক হইতে, জীবন যাপন, পরিবারের ভরণ-পোষণ, সন্তানের শিক্ষা, ভবিষ্যতের নিরাপত্তা, রোগে-শোকে চিকিৎসা ইত্যাদির জন্য মানুষ মালের মালিকানা লাভ করিতে চায়।
মালের মালিকানা দুই প্রকার হইতে পারে। যথা ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত। সমষ্টিগত মালিকানার মধ্যে রহিয়াছে সরকারী সম্পত্তি, সমবায় বা যৌথ অংশীদারী কারবার, শিল্প প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি। শরীয়াতে প্রত্যেক ব্যক্তির অধিকার রহিয়াছে ব্যক্তিগতভাবে মালের মালিক হওয়ার, আবার ইচ্ছা করিলে যৌথভাবে মালের মালিক হওয়ার।
বৈধ কোন কারণ ছাড়া মালের মালিকানা লাভের এই অধিকার হইতে কেহ কাহাকেও বঞ্চিত করিতে পারে না। মাল হইতে বঞ্চিত হইবার অর্থ হইতেছে মালের মালিকানা হইতে বঞ্চিত হওয়া, মালের অধিকার হইতে উৎখাত হওয়া, বিতাড়িত হওয়া ইত্যাদি। বিভিন্ন কারণে মানুষ তাহার মালিকানা স্বত্ব হারাইতে পারে। যেমন বিক্রয়ের মাধ্যমে মালের মালিকানা হইতে বঞ্চিত হওয়া। চুক্তি বা সমঝোতার কারণেও মালের মালিকানা লুপ্ত হইতে পারে। দান বা হেবার মাধ্যমেও মালিকানা রহিত হইতে পারে। ইসলামী রাষ্ট্রে হালাল পন্থায় অর্জিত ব্যক্তিগত মালের মালিকানা স্বীকৃত, তবে এক্ষেত্রে শরীয়াত নির্ধারিত সমস্ত অধিকার ও কর্তব্য, যেমন যাকাত, দান-খয়রাত, মাতা-পিতা, স্ত্রী-পুত্র ভাই-বােন, অন্যান্য নিকট আত্মীয়ের লালন-পালন ও যত্নের ব্যয়ভার ও দায়িত্ব বহন করিতে হইবে।২৬
উত্তরাধিকার স্বত্ব ক্রয়-বিক্রয়ের অধিকার এবং রাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা, প্রশাসন ব্যবস্থা, জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠানসমূহ, জরুরী অবস্থা, যেমন যুদ্ধ-বিগ্রহ, দুর্ভিক্ষ, প্লাবন, ভূমিকম্প, মহামারী ইত্যাদি খাতের ব্যয়ভার বহনের জন্য রাষ্ট্র কর্তৃক ধার্যকৃত বিভিন্ন কর পরিশোধ করিতে হইবে। অধিকন্তু এই মাল হারাম ও অবৈধ খাতসমূহে ব্যয় করা যাইবে না। এই সকল শর্তাধীনে রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ হইতে সম্পদের মালিকানা সম্পূর্ণ নিরাপদ থাকিবে।
৭৭৬
ধারা-১২৭৯ মালের উপর মালিকের ভোগ-দখলের অধিকার (ক) ভোগ-ব্যবহারের অধিকার;
(খ) অধিক মুনাফা অর্জনের জন্য ব্যবসা-বাণিজ্যে বিনিয়োগ করিবার অধিকার;
(গ) সম্পদের মালিকানা হস্তান্তরের অধিকার; (ঘ) মালিকানা স্বত্ব রক্ষা করিবার অধিকার।২৭
বিশ্লেষণ
এই প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ পাক ঘোষণা করেন?
ولا تأكلوا أموالكم بينكم بالباطل .
“তোমরা পরস্পরের মাল অন্যায়ভাবে গ্রাস করিও না” (২৪ ১৮৮)।
সরকার কাহারও ব্যক্তিগত সম্পত্তি সামগ্রিক স্বার্থে অধিগ্রহণের সত্যিকার প্রয়োজন মনে করিলে মালিককে উপযুক্ত মূল্য প্রদানের মাধ্যমে তাহা গ্রহণ করিতে পারিবে। মদীনায় মসজিদে নববী নির্মাণের সময় রাসূলুল্লাহ (সা) যে স্থানটি নির্বাচন করিলেন তাহা ছিল দুই ইয়াতীম বালকের মালিকানাধীন। তাহারা তাহাদের মালিকানাধীন জমি খণ্ডটি বিনামূল্যে মসজিদের জন্য দান করিতে সম্মত হইয়াছিল। কিন্তু রাসূলুল্লাহ্ (স) অনুমান পূর্বক মূল্য নির্ধারণ করাইলেন এবং তঙ্কালীন বাজার দর অনুযায়ী উহার মূল্য পরিশোধ করিয়া দিয়াছিলেন। ২৮
হুনায় যুদ্ধের প্রাক্কালে তিনি সাফওয়ান ইবন উমাইয়ার নিকট হইতে কয়েকটি বর্ম গ্রহণ করিলেন। সে যখন বলিয়াছিল, হে মুহাম্মাদ! ইহা কি বলপূর্বক লওয়া হইল”? বিনিময় মূল্য ব্যতিরেকেই লইবার অভিপ্রায়ে? উত্তরে রাসূলুল্লাহ (সা) বলিলেন, “বরং ধারারূপে গ্রহণ করিলাম। ইহার কোন একটি ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হইলে উহার ক্ষতিপূরণ দেওয়া হইবে”।২৯
কাযী আবু ইউসুফ (র) বলিয়াছেন, ইমাম (সরকার) কোন প্রতিষ্ঠিত আইনগত অধিকার ছাড়া কোন ব্যক্তির মালিকানা হইতে তাহার কোন মাল লইতে পারেন
।
রাসূলুল্লাহ (সা) আরও বলিয়াছেন, “যে ব্যক্তি নিজের সম্পদ রক্ষা করিতে গিয়া নিহত হয় সে শহীদ”।৩১
৭৭৭
ধারা-১২৮০। ইজ্জত-আব্রুর হেফাজতের অধিকার প্রত্যেক মানুষের ইজ্জত-আব্রুর হেফাজতের অধিকার রহিয়াছে।
বিশ্লেষণ
প্রত্যেক নাগরিকের মান-সম্মান ও ইজ্জতের হেফাজত করিবার অধিকার শরীয়াত প্রদান করিয়াছে। সূরা হুজুরাতে এই অধিকারের বিস্তারিত বর্ণনা মওজুদ রহিয়াছে। যেমন আল্লাহ পাক বলেন? :
ايها الذين آمنوا لا يسخر قوم من قوم على أن يكونوا خيرا منهم ولا نساء من نساء عسى أن يكن خيرا منهن ولا تلموا أنفسكم ولا تنابزوا
•……… . “হে মুমিনগণ! কোন পুরুষ যেন অপর কোন পুরুষকে উপহাস না করে। কেননা যাহাকে উপহাস করা হয় সে উপহাসকারী অপেক্ষা উত্তম হইতে পারে। এবং কোন নারী অপর কোন নারীকেও যেন উপহাস না করে। কেননা যাহাকে উপহাস করা হয় সে উপহাসকারিনী অপেক্ষা উত্তম হইতে পারে। তোমরা একে
অপরের প্রতি দোষারোপ করিও না এবং তোমরা একে অপরকে মন্দ নামে ডাকিও
। ঈমানের পর মন্দ নামে গর্হিত কাজ, যাহারা তওবা না করে তাহারই জালিম” (৪৯ ও ১১)।
يأيها الذين آمنوا اجتنبوا كثيرا من الظن ان بعض الظن اثم ……..
“হে মুমিনগণ! তোমরা বহুবিধ অনুমান হইতে দূরে থাক, কারণ অনুমান কোন ক্ষেত্রে পাপ এবং তোমরা একে অপরের গোপনীয় বিষয় সন্ধান করিও না এবং একে অপরের গীবত করিও না। তোমাদের মধ্যে কি কেহ তাহার মৃত ভ্রাতার গোশত খাইতে চাহিবে? তোমরা তো ইহাকে ঘৃণ্যই মনে কর। তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। আল্লাহ তওবা গ্রহণকারী পরম দয়ালু” (৪৯ : ১২)।
সূরা নিসাতে আল্লাহ পাক পারস্পরিক বাক্য বিনিময়ে অশ্লীল ভাষণ কঠোরভাবে নিষেধ করিয়াছেন।
لا يحب الله الجهر بالسوء من القول الأ من ظلم .
“অশ্লীলভাষী হওয়া আল্লাহ পছন্দ করেন না, তবে যাহার উপর যুলুম করা হইয়াছে” (৪ : ১৪৮)।
૧૧
এই আয়াতে একদিকে যেমন অসদাচরণের প্রতি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হইয়াছে, অপরদিকে জালিমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হওয়ার অনুমতি দেওয়া হইয়াছে। সূরা নূরে আল্লাহ পাক বলেন :
قل للمؤمنين يغضوا من أبصارهم ويحفظوا فروجهم .
“(হে রাসূল) মুমিনদের বলুন, তাহারা যেন নিজেদের চক্ষু সংযত রাখে এবং তাহাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে” (২৪ : ৩০)।
وقل للمؤمنات يغضضن من أبصارهن ويحفظن فروجهن .
“এবং (হে নবী)! মুমিন মহিলাদিগকে বলুন, তাহারা যেন নিজেদের চক্ষু সংযত রাখে এবং তাহাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে” (২৪ : ৩১)।
উল্লিখিত আয়াতে সরাসরি মুসলমানদেরকে সম্বােধন করিয়া কিছু বলা হয় নাই, বরং রাসূলুল্লাহ (সা)-এর মাধ্যমে এই নির্দেশ দেওয়া হইয়াছে। ইহার তাৎপর্য হইতেছে, যেইখানে মুসলমানরা ব্যক্তিগতভাবে এইগুলির উপর আমল করিবে সেইখানে ইসলামী রাষ্ট্রও এই সবের পৃষ্ঠপোষকতা করিবে, কিন্তু যেইখানে ইহার বিরুদ্ধাচরণ হইতে থাকিবে সেইখানে ইহার প্রভাব প্রতিহত করিবে। ইহাতে প্রতীয়মান হইতেছে যে, নাগরিকদের মান-ইজ্জত রক্ষা করিবার পরিপূর্ণ সতর্ক ব্যবস্থা অবলম্বন করা এবং অশ্লীলতার বিস্তার রোধ করাও ইসলামী রাষ্ট্রের দায়িত্ব।
পবিত্র কুরআন ছাড়াও রাসূলুল্লাহ্ (সা) তাঁহার অসংখ্য হাদীসে মানুষের মানসম্মান ও ইজ্জত রক্ষা করিবার অধিকার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করিয়াছেন। তিনি বলিয়াছেন, “মুসলমানদের পৃষ্ঠদেশ সম্মানিত (তাহাকে মারধর করা যাইবে না), বিনা কারণে কোন মুসলমানকে মারপিট করিলে আল্লাহ মারপিটকারীর উপর ভয়ানক অসন্তুষ্ট হন”।৩২।
“কোন ব্যক্তি কোন মুসলমানকে অপমানিত লাঞ্ছিত অথবা সম্মানহানি হইতে দেখিয়াও যদি তাহার সাহায্য না করে তাহা হইলে আল্লাহ তায়ালা এমন জায়গায় তাহাকে সাহায্য ত্যাগ করিবেন যেখানে সে নিজে আল্লাহর সাহায্যপ্রার্থী হইবে। আর যে ব্যক্তি তাহার মুসলমান ভাইকে অপমানিত, লাঞ্ছিত অথবা বেইজ্জতি ও হেয় হইতে দেখিয়া তাহার সাহায্যে আগাইয়া আসিবে আল্লাহ পাক তাহাকে এমন স্থানে সাহায্য করিবেন যেখানে সে আল্লাহর সাহায্যের মুখাপেক্ষী হইবে।৩।
“যে বক্তি অন্য কোন লোকের মানহানি করে অথবা অন্য কোন প্রকারের জুলুম করে, তবে সেই দিন আসিবার পূর্বেই তাহার ক্ষমা চাওয়া উচিত যে দিন তাহার না থাকিবে ধন-সম্পদ আর না অন্য কিছু”।৩৪
৭৭৯
“কোন মুসলমানের উপর অন্যায়ভাবে হামলা করা জঘন্যতম অত্যাচার”। ৩
ইসলামে মানুষের মান-সম্মানের প্রতি আঘাত করিবার যতগুলি পন্থা রহিয়াছে তাহার সবই নিষিদ্ধ ঘোষিত হইয়াছে। শরীয়াতে পরিষ্কারভাবে বলিয়া দেওয়া হইয়াছে, কোন ব্যক্তি চাই উপস্থিত থাকুক বা না থাকুক তাহাকে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করা যাইবে না। তাহাকে নিকৃষ্ট উপাধি দেওয়া যাইবে না এবং তাহার দোষ চর্চা (গীবত) করা যাইবে না। প্রত্যেক ব্যক্তির আইনগত অধিকার রহিয়াছে যে, কেহ তাহার ইজ্জতের উপর হস্তক্ষেপ করিতে পারিবে না এবং হাতের দ্বারা অথবা যবানের দ্বারা তাহার উপর কোন প্রকারের বাড়াবাড়ি করিতে পারিবে না। রাসূলুল্লাহ (সা) বলিয়াছেনঃ
المسلم من سلم المسلمون من لسانه ويده ……
“সেই প্রকৃত মুসলমান যাহার জবান এবং হাত হইতে অন্য সকল মুসলমান। নিরাপদ থাকে”।৬
ধারা-১২৮১
গোপনীয়তা রক্ষার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের ব্যক্তিগত, পারিবারিক এবং গৃহাভ্যন্তরের গোপনীয়তা রক্ষা করিবার অধিকার রহিয়াছে।
বিশ্লেষণ
ইসলামী রাষ্ট্রে নাগরিকদের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনের পরিপূর্ণ নিরাপত্তার গ্যারান্টি দেওয়া হইয়াছে। ইসলামে কোন ব্যক্তির ব্যক্তিগত বিষয়ের উপর অনুচিত হস্তক্ষেপ কিংবা শক্তি প্রয়োগের কোন অবকাশ নাই। কোন অজুহাতে ব্যক্তিগত
গোপনীয়তায় অবশ্যই বিঘ্ন সৃষ্টি করা যাইবে না। এই প্রসংগে আল্লাহ পাক বলেনঃ
.
اجتنبوا كثيرا من الظن أن بعض الظن اثم ولا تجسسوا .
“তোমরা অতিরিক্ত অনুমান হইতে বিরত থাকিও। নিশ্চয় কোন কোন অনুমান পাপজনক এবং তোমরা পরস্পরের গোপন বিষয় সন্ধান করিও না” (৪৯ ও ১২)।
বর্ণিত আয়াতে আল্লাহ পাক অনুমান বা সন্দেহ বা গুপ্তচর বৃত্তি ইত্যাদিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করিয়াছেন। অনুমান বা সন্দেহ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভিত্তিহীন; নিন্দনীয় অপরাধ। কারণ সন্দেহের কারণে অনেক সময় নিরপরাধ মানুষের উপর
৭৮০
মারাত্মক অবিচার হইতে পারে। অপরের একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়ে হস্তক্ষেপ, গোয়েন্দাগিরি, গুপ্তচরবৃত্তি ইত্যাদির মানেই হইতেছে সন্দেহ সৃষ্টি। এই সন্দেহ প্রবণতাও পাপ। ব্যক্তিগত নিরাপত্তা অর্থাৎ গোপনীয়তা রক্ষা করিয়া চলিবার বিষয়ে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ পাক বলেন?
يأيها الذين آمنوا لا تدخلوا بيوتا غير بيوتكم حتى تستأنسوا وسلموا على أهلها ذلكم خير لكم لعلكم ترون . فان لم تجدوا فيها أحدا قلا تدخلوها حتى يؤذن لكم وان قيل لكم ارجعوا فارجعوا هو أزكى لكم .
“হে, মুমিনগণ! তামরা নিজ গৃহ ব্যতীত অন্য কাহারও গৃহে গৃহবাসীদের অনুমতি না লইয়া এবং তাহাদিগকে সালাম না করিয়া প্রবেশ করিও না। ইহাই তোমাদের জন্য শ্রেয়, যাহাতে তোমারা উপদেশ গ্রহণ কর। যদি তোমরা গৃহে কাহাকেও না পাও তাহা হইলে উহাতে প্রবেশ করিবে না, যতক্ষণ না তোমাদিগকে অনুমতি দেওয়া হয়। যদি তোমাদিগকে বলা হয়, ফিরিয়া যাও, তবে তোমরা ফিরিয়া যাইবে। ইহাই তোমাদের জন্য উত্তম। তোমরা যাহা কর সে সম্বন্ধে আল্লাহ সবিশেষ অবিহত” (সূরা নূর ও ২৭-২৮)।
রাসূলুল্লাহ (সা) তাঁহার সাহাবাগণকে এই উপদেশ প্রদান করিতেন যে, কাহারও নিজের ঘরে আকস্মিকভাবে গোপনীয়ভাবে প্রবেশ করা উচিত নহে। ঘরে এমনভাবে প্রবেশ করিবে যে, গৃহবাসী যেন বুঝিতে পারে যে, কেহ ঘরে প্রবেশ করিতেছে। কাহারও ঘরে প্রবেশের পূর্বাভাষ পাইয়া গৃহবাসী যেন সতর্ক হইয়া যাইতে পারে। কারণ গৃহাভ্যন্তরে মানুষ আগোছালো অবস্থায় থাকিতে পারে। সে দৃশ্যটি অন্যের না দেখাই শ্রেয়। তবে যে বাড়ীতে লোকবসতি নাই তাহা এই কঠোর নির্দেশের আওতা বহির্ভূত। আল্লাহর পাক এরশাদ করেন?
ليس عليكم جناح آن تدخلوا بيوتا غير مسكونة فيها متاع لكم والله يعلم
ما بدون وما تكتمون .
“যে গৃহে কেহ বাস করে না তাহাতে তোমাদের জন্য দ্রব্যসামগ্রী থাকিলে সেখানে তোমাদের প্রবেশে কোন পাপ নাই এবং আল্লাহ জানেন যাহা তোমরা প্রকাশ কর এবং যাহা তোমরা গোপন কর” (সূরা নূর ও ২৯)।
অফিস-আদালত, সরকারী আশ্রয়কেন্দ্র, হােটেল, সরাইখানা, অতিথিশালা, দোকানপাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ ইত্যাদি এইসব স্থানের আওতায় পড়ে। রাসূলুল্লাহ
৭৮১
(সা) বলিয়াছেন, অন্যের ঘরে উঁকি মারিবার অধিকার কোন ব্যক্তির নাই। কেহ কাহারও ঘরের অভ্যন্তরে উঁকি মারিলে তাহার চক্ষু ক্ষত-বিক্ষত করিয়া দাও”।
যে কোন ব্যক্তির আইনগত অধিকার রহিয়াছে যে, সে তাহার নিজ ঘরে অপরের শোরগোলের উঁকিঝুকি এবং অনুপ্রবেশ হইতে নিরাপদ থাকিবে। তাহার সংসারে শান্তি-শৃংখলা ও পর্দা-পুশিদা রক্ষা করিবার অধিকার তাহার রহিয়াছে, এমনকি কোন ব্যক্তির চিঠিপত্রের উপর অন্য ব্যক্তির দৃষ্টি নিক্ষেপ করিবার অধিকারও নাই, পড়াতো দূরের কথা। ইসলাম মানুষের ব্যক্তিগত গোপনীয়তার পূর্ণরূপে হেফাজত করে এবং পরিষ্কারভাবে নিষেধ করিয়া দেয় যে, অন্যের ঘরের মধ্যে উঁকিঝুকি মারা যাইবে না। কাহারও ডাক বা চিঠিপত্র দেখা যাইবে না। কিন্তু কোন ব্যক্তি সম্পর্কে যদি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায় যে, সে ধ্বংসাত্মক কাজে জড়িত রহিয়াছে, তাহা হইলে স্বতন্ত্র কথা। অন্যথায় কাহারও পিছনে অহেতুক গোয়েন্দাগিরি করা ইসলামে বৈধ নহে।
মুসলমানদেরকে অনুমতি ছাড়া অন্যের ঘরে প্রবেশ না করিবার নির্দেশ দেওয়ার সাথে সাথে এই কথাও বলিয়া দেওয়া হইয়াছে যে, তাহারা যেন অন্যের অন্দর মহলে ঘন ঘন প্রবেশ না করে। ঘরে আসিবার অনুমতির তাৎপর্য এই নহে যে, ধর্না দিয়া সেখানেই বসিয়া থাকিবে এবং গৃহস্বামীকে তাহার ঘরে ইচ্ছামাফিক ও পরিকল্পনা অনুযায়ী সময় কাটাইবার সুযোগ দিবে না। এ সম্পর্কে আল্লাহ পাক সূরা আহযাইবের ৫৩ নম্বর আয়াতে বলেন :
ايها الذين آمنوا لا تخلوا بيوت البى الا أن يؤذن لكم الى طعام غير نظرين إنه ولكن إذا عيثم فادخلوا فاذا طعمتم فانتشروا ولا مستأنسين
• (০r c=11) •••••••••• >
“হে মুমিনগণ! তোমাদিগকে অনুমতি দেওয়া না হইলে তোমরা আহার্য প্রস্তুতির জন্য অপেক্ষা না করিয়া ভোজনের জন্য নবী গৃহে প্রবেশ করিও না, তবে তোমাদিগকে আহবান করিলে তোমরা প্রবেশ করিও এবং ভোজন শেষে তোমরা চলিয়া যাইও। তোমরা কথাবার্তায় মশগুল হইয়া পড়িও না। কারণ তোমাদের এই আচরণ নবীকে পীড়া দেয়। সে তোমাদিগকে উঠাইয়া দিতে সংকোচবােধ করে, কিন্তু আল্লাহ সত্য কথা বলিতে সংকোচবােধ করেন না” (৩৩ : ৫৩)।
অন্যের বাড়িতে প্রবেশ করিয়া শুধুমাত্র প্রয়োজন মাফিক সময় কাটাইবার প্রসঙ্গে এই কথাও বলিয়া দেওয়া হইয়াছে যে, যদি ঘরের দরজায় দাঁড়াইয়া থাকিয়া
৭৮২
কোন জিনিস গ্রহণের প্রয়োজন দেখা দেয় তাহা হইলে পর্দার আড়াল হইতে তাহা চাহিয়া লইতে হইবে। এই বিষয়ে আল্লাহ পাক বলেন?
التموهن متاع
واذا اموهن متاعا فاستوهن من وراء حجاب ذلك أطهر لقلوبكم
وقلوبهن
“তোমরা তাহার পত্নীদিগের নিকট হইতে কিছু চাহিলে পর্দার অন্তরাল হইতে চাহিবে। এই বিধান তোমাদিগের ও তাহাদিগের হৃদয়ের জন্য অধিকতর পবিত্র” (৩৩ ৪ ৫৩)।
রাসূলুল্লাহ (সা) বলিয়াছেন, তোমরা যদি মানুষের গোপনীয় বিষয়াদি উদঘাটনে লাগিয়া যাও, তবে তোমরা তাহাকে বিগড়াইয়া দিবে কিংবা অন্তত বিগড়াইবার পর্যায়ে পৌঁছাইয়া দিবে।
রাসূল (সা) আরও বলিয়াছেন যে, ব্যক্তি অন্যের দোষত্রুটি দেখিয়া তাহা গোপন রাখিল সে যেন একজন জীবন্ত সমাহিত ব্যক্তিকে রক্ষা করিল।
ধারা—১২৮২ ব্যক্তিগত স্বাধীনতা সংরক্ষণের অধিকার কোন ব্যক্তির অপরাধ প্রকাশ্য আদালতে প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত তাহাকে গ্রেপ্তার বা আটকের মাধ্যমে তাহার ব্যক্তিগত স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা যাইবে না।
বিশ্লেষণ
ইসলামী রাষ্ট্রে কোন নাগরিকের অপরাধ প্রকাশ্য আদালতে প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত তাহাকে আটক করা যাইবে না। শুধুমাত্র সন্দেহ বা অনুমান বশত লোকদের গ্রেপ্তার করা কিংবা আদালতের বিচার ব্যবস্থা কার্যকর করা ব্যতিরেকে কাহাকেও কারারুদ্ধ করা বৈধ্য নহে। কুরআনুল করীমের সুস্পষ্ট নির্দেশ, আল্লাহ তাঁহার বান্দাকে যে স্বাধীনতা প্রদান করিয়াছেন, কোন সাধারণ শাসক তো দূরের কথা, খােদ আল্লাহর রাসূলও তাহা খর্ব করিতে পারেন না। আল্লাহ পাক বলেন?
ونوا
ما كان لبشر أن يؤتيه الله الكتاب والحكم والوة ثم يقول للناس عبادا لى من دون الله ولكن كونوا ربنين بما كنتم تعلمون الكتاب وبما كنتم
০
(V৭ : 1/501) •
৭৮৩
“আল্লাহ কোন ব্যক্তিকে কিতাব, হিকমত ও নবুওয়াত দান করিবার পর সে মানুষকে বলিবে, আল্লাহর পরিবর্তে তোমরা আমার দাস হইয়া যাও, ইহা তাহার জন্য সঙ্গত নহে। বরং সে বলিবে, তোমরা রব্বানী হইয়া যাও, যেহেতু তোমরা কিতাব শিক্ষাদান কর এবং যেহেতু তোমরা অধ্যয়ন কর” (৩ঃ ৭৯)?
غير الله ابتغى حكما وهو الذي أنزل اليكم الكتاب مفص؟ .
“বল! তবে কি আমি আল্লাহ ব্যতীত অন্যকে সালিস মানিব—যদিও তিনিই তোমাদের প্রতি সুস্পষ্ট কিতাব অবতীর্ণ করিয়াছেন” (৬ : ১১৪)।
এতসম্পর্কিত বিষয়ে ইসলামের চিন্তাধারা এই যে, যতদূর সম্ভব শাস্তি পরিহার করিতে হইবে এবং কারণসমূহ ও সাক্ষ্য-প্রমাণ শাস্তির জন্য নহে, বরং মুক্তির জন্য অনুসন্ধান করিতে হইবে। রাসূলুল্লাহ (সা) বলিয়াছেন, “যতদূর সম্ভব মুসলমান (নাগরিক)-কে শাস্তি হইতে অব্যাহতি দাও, সুযোগ থাকিলে তাহাকে ছাড়িয়া দাও। অপরাধীকে ভুলবশত ক্ষমা করিয়া দেওয়া ভুলবশত শাস্তি দেওয়া হইতে উত্তম”। (তিরমিযী)। রাসূলুল্লাহ্ (স) আরও বলিয়াছেন, “রেহাই দেওয়ার কোন পথ পাওয়া গেলে মানুষকে শাস্তি হইতে মুক্তি দাও” (ইবন মাজা)।
. একদা রাসূলুল্লাহ (সা) মসজিদে খুতবা দিতেছিলেন, এমন সময় একজন দাঁড়াইয়া বলিল, হে আল্লাহর রাসূল! কোন অপরাধের জন্য আমার প্রতিবেশীদের গ্রেফতার করা হইয়াছে? রাসূলুল্লাহ (সা) লোকটির প্রশ্ন শুনিয়াও স্থিরভাবে বক্তৃতা দিতেছিলেন। সে পুনরায় দাঁড়াইয়া জিজ্ঞাসা করিল, কিন্তু ইহার পরও তিনি উত্তর প্রদান না করিয়া বক্তৃতা দিতেছিলেন। লোকটি তৃতীয়বারের মত উঠিয়া দাঁড়াইয়া একই প্রশ্ন করিল। ঘটনাক্রমে যে পুলিশ অফিসার কর্তৃক সংশ্লিষ্ট লোকদিগকে গ্রেফতার করা হয় তিনিও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তিনি যে পর্যন্ত না গ্রেপ্তার করিবার কোন কারণ অবহিত করিতে পারেন এবং সতর্কতামূলকভাবে এ সম্পর্কে ইসলামী আইনের দৃষ্টিতে স্পষ্ট ধারণা দিতে পারেন সে পর্যন্ত নিশ্ৰুপ ছিলেন। ইহার
পর রাসূলুল্লাহ (সা) গ্রেপ্তারকৃত লোকটিকে মুক্তি প্রদানের নির্দেশ দিলেন।৩৯
হযরত উমার (রা)-এর খেলাফতকালে ইরাক হইতে জনৈক ব্যক্তি আসিয়া বলিল, হে আমীরুল মুমিনীন! আমার দেশে মিথ্যা সাক্ষ্য দানের বেসাতি আরম্ভ হইয়া গিয়াছে। এই কথা শুনিয়া উমার (রা) বলিলেন, তুমি নিশ্চিত থাক, আল্লাহর শপথ! ইসলামী রাষ্ট্রে কাহাকেও বিনা বিচারে আটক করা যায় না।৪০
৭৮৪
ধারা-১২৮৩ একজনের অপরাধের জন্য অপরজন দায়ী নহে একজনের অপরাধের জন্য অপরজনকে দায়ী করিয়া শাস্তি প্রদান করা বৈধ নহে।
বিশ্লেষণ
রাষ্ট্রে প্রত্যেক নাগরিকের এই অধিকার রহিয়াছে যে, তাহাকে অন্যের অপরাধের জন্য দোষী সাব্যস্ত করিয়া গ্রেপ্তার বা আটক করা যাইবে না। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক বলেনঃ
ولا تكسب كل نفس الا عليها ولا تزر وازرة وزر أخرى .
“প্রত্যেক ব্যক্তি যাহা সে অর্জন করে তাহা তাহার নিজের জন্যই। কেহ কাহারও বােঝা বহন করিবে না” (সূরা আনআম : ১৬৪)।
فلا عدوان الا على الظلمين .
“জালিমদের ব্যতীত অপর কাহারও উপর হস্তক্ষেপ করা চলিবে না” (২: ১৯৩)।
ইসলামের এই সকল স্পষ্ট বিধিমালা থাকা অবস্থায় অপরাধীর পরিবর্তে তাহার পিতা, পুত্র, মা, বােন অথবা অন্য কোন বন্ধু-বান্ধবদেরকে গ্রেপ্তার করা বা কোন প্রকার শাস্তি প্রদান করা বা হয়রানি করা সম্পূর্ণ অবৈধ। হাজ্জাজ ইবন ইউসুফ ছিল অত্যন্ত জালেম ও নির্দয় শাসক। কিন্তু তাহার সমস্ত খবরাদি সত্ত্বেও প্রতিপক্ষের আত্মীয়-স্বজনদের প্রাণনাশের ঘটনা সংঘটিত হয় নাই। তাহার শাসনকালের একটি ঘটনা এখানে উল্লেখ করা হইতেছে। একদা তিনি কাতারী ইবনে ফুজাআহ্ নামক জনৈক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করিলেন এবং বলিলেন, আমি তোমাকে অবশ্যই হত্যা করিব। কাতারী জিজ্ঞাসা করিল, কোন অপরাধের কারণে আপনি আমাকে হত্যা করিবেন? হাজ্জাজ বলিলেন, তোমার ভাই আমার বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করিয়াছে, এইজন্য। কাতারী বলিল, আমার নিকট আমীরুল মুমিনীনের লিখিত ফরমান রহিয়াছে। আমার ভাইয়ের অপরাধে আপনি আমাকে গ্রেপ্তার করিতে পারেন না। হাজ্জাজ বলিলেন, সে ফরমান দেখাও? কাতারী বলিল, আমার নিকট তো ইহার চাইতেও অবশ্য পালনীয় পত্র রহিয়াছে। আল্লাহ পাক বালিয়াছেন?
لا تزر وازرة وزر أخرى ..
এই জবাব হাজ্জাজের পছন্দ হইল এবং খুশি হইয়া তাহাকে মুক্তি দিলেন।৪১
৭৮৫
ধারা-১২৮৪ অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের অধিকার যে কোন ধরনের অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করিবার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের রহিয়াছে।
বিশ্লেষণ
প্রত্যেক ব্যক্তির অত্যাচার ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করিবার পূর্ণ অধিকার রহিয়াছে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ পাক মুমিনদের গুণাবলী প্রসংগে বলিয়াছেন?
وتنهون عن المنكر .
“তোমরা অসৎ কাজে বাধা প্রদান করিবে” (৩ ৪ ১১০)। বনূ ইসরাঈলের অধঃপতন সম্পর্কে আল্লাহ পাক বলেনঃ
كانوا لا يتناهون عن منكر فعلوه .
“তাহারা যে সকল গর্হিত কাজ করিত তাহা হইতে একজন অপরজনকে বারণ করিত না” (৫ঃ ৭৯)।
সূরা নিসাতে আল্লাহ পাক বলেন, “অশ্লীলভাষী হওয়া আল্লাহ পছন্দ করেন না, তবে যাহার উপর জুলুম করা হইয়াছে তাহার কথা স্বতন্ত্র” (৪ : ১৪৮)।
অশ্লীলতা অত্যন্ত খারাপ কাজ, আল্লাহ ইহা পছন্দ করেন না। কিন্তু অন্যায় যখন সীমা ছাড়াইয়া যায়, ধৈর্য সহিষ্ণুতার বাধ ভাঙ্গিয়া যায়, সম্পূর্ণ অপারগ অবস্থায় জবান হইতে মন্দ ও অশ্লীল কথা বাহির হইয়া পড়ে তখন উচ্চতর নৈতিক শিক্ষা সত্ত্বেও আল্লাহর নিকট এই সর্বশেষ অবস্থা ক্ষমাযোগ্য। নির্যাতিত ব্যক্তির অধিকার রহিয়াছে যে, সে অভিযোগ বাক্য উচ্চারণ করিতে পারিবে। এইরূপ করিতে গিয়া সে ভাবাবেগে কথাবার্তার সৌজন্য রক্ষা করিতে অপারগ হইয়া পড়িলে সে এজন্য
অভিযুক্ত হইবে না।
রাসূলুল্লাহ (সা) এই সম্পর্কে বলিয়াছেন, জালেম শাসকের সম্মুখে ন্যায্য কথা বলা সর্বোত্তম জিহাদ।৪২ মানুষ যদি অত্যাচারীর অত্যাচার ও জুলুম দেখিয়াও তাহাকে প্রতিহত না করে তাহা হইলে আল্লাহর ব্যাপক শাস্তি তাহাদের উপর নাযিল হইবে।৪৩ রাসূলুল্লাহ (সা) আরও বলিয়াছেনঃ
أنصر أخاك ظالما أو مظلوما .
“তোমার ভাইকে সাহায্য কর সে জালিম হউক কিংবা মাজলুম”।৪৪
৭৮৬
من راء منكم منكرا فليغيره بيده فان لم يستطع فبلسانه فان لم يستطع
فبقلبه وذلك أضعف الإيمان .
“তোমাদের মধ্যে যখন কেহ অন্যায় কিছু দেখিবে তখন সম্ভব হইলে উহা হাত দ্বারা শক্তিবলে প্রতিহত করিবে। আর যদি হাত দ্বারা প্রতিহত করা সম্ভব না হয় তাহা হইলে জবানে প্রতিহত করিবে। যদি তাহাও সম্ভব না হয় তবে অন্তরে অন্যায় কাজকে ঘৃণা করিবে এবং ইহা সবচেয়ে দুর্বল ঈমানের পরিচয়”।৪৫
বদর যুদ্ধের সময় রাসূলুল্লাহ (সা) একটি ধনুকের সাহায্যে সামরিক বাহিনীর কাতার সোজা করিতেছিলেন। হযরত সাওয়াদ ইবনে গাযিয়াহ্ (রা) কাতারে কিছুটা অগ্রভাগে ছিলেন। রাসূলুল্লাহ (সা) তীর দ্বারা টোকা দিয়া তাহাকে সমানভাবে দাঁড়াইতে বলিলেন। সাওয়াদ বলিলেন, ইহা রাসূলাল্লাহ! আপনি তো আমাকে ব্যথা দিলেন, অথচ আল্লাহ পাক আপনাকে পাঠাইয়াছেন ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করিতে। সুতরাং আপনি আমাকে বদলা বা প্রতিশোধ লইবার অনুমতি প্রদান করুন। রাসূলুল্লাহ (সা) তৎক্ষণাৎ তাঁহার পেট মুবারক উন্মুক্ত করিয়া বলিলেন, সাওয়াদ! তোমার বদলা নাও। সাওয়াদ দৌড়াইয়া আসিয়া পবিত্র দেহের সহিত জড়াইয়া পড়িয়া পবিত্র উদরে চুম্বন করিলেন।৪৬
ধারা-১২৮৫
মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা প্রত্যেক ব্যক্তির স্বাধীনভাবে স্বীয় মতামত প্রকাশের পূর্ণ অধিকার রহিয়াছে।
বিশ্লেষণ
ইসলামী রাষ্ট্রের ব্যক্তিগণ কেবলমাত্র শাসকদের অত্যাচার ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে বাকযুদ্ধই করিবে না, বরং রাষ্ট্রীয় বিষয়সমূহ ও সমস্যাবলী সম্পর্কেও সম্পূর্ণ নির্ভয়ে তাহাদের মতামত প্রকাশের অধিকার রাখে। মুমিনদের গুণাবলী সম্পর্কে
আল্লাহ পাক বলেন।
৩
كنتم خير أمة أخرجت للناس تأمرون بالمعروف وتنهون عن المنكر .
“তোমরা শ্রেষ্ঠ উম্মত, মানবজাতির জন্য তোমাদের আবির্ভাব হইয়াছে। তোমরা সৎকার্যের নির্দেশ দান কর এবং অসত্ত্বার্যে নিষেধ কর” (৩ঃ১১০)।
৭৮৭
মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা ব্যতিরেকে এই গুণ সৃষ্টি হইতে পারে না। উক্ত আয়াত হইতে শুধুমাত্র এই স্বাধীনতার গ্যারান্টিই পাওয়া যায় না, বরং সাথে সাথে উহার বাস্তব প্রয়োগের ধরন ও ভঙ্গীও নির্ধারিত হয়। তবে একজন মুসলমান সৎ ও ভালো কাজের প্রসারের জন্যই এই স্বাধীনতার ব্যবহার করিতে পারে। অসৎ ও মন্দ কাজের বিস্তারের জন্য তাহাকে এই স্বাধীনতা দেওয়া যাইতে পারে না। কেননা উহা মুনাফিকী।
المنفقون والمنفقت بعضهم من بعض يأمرون بالمنكر وينهون عن
المعروف ويقبضون أيديهم .
“মুনাফিক নর ও নারী একে অপরের অনুরূপ। উহারা অসকার্যের নির্দেশ দেয় এবং সৎকর্ম নিষেধ করে। উহারা হাতবদ্ধ করিয়া রাখে” (৪ঃ ১৩৫)।
বনী ইসরাঈলের অধঃপতনের একটি কারণ উল্লেখ করিয়া আল্লাহ্ পাক বলেনঃ
كانوا لا يتناهون عن منكر فعلوه .
“তাহারা যে সকল গর্হিত কাজ করিত উহা হইতে একে অপরকে নিষেধ করিত না” (৫ : ৭৯)।
মুসলমানদিগকে এইভাবে স্বাধীন মতামত প্রকাশের জন্য উৎসাহিত করা হইয়াছে এবং সত্য কথা প্রকাশ করিয়া দেওয়ার জন্য তাগিদও প্রদান করা হইয়াছে। যদি কেহ তাহা না করে তবে তাহাদিগকে আল্লাহ পাক সতর্ক করিয়া দিয়াছেন।
يأيها الذين آمنوا گووا قوامين بالقسط شهداء لله ولو على أنفسكم أو الوالدين والأقربين أن يكن غنيا أو فقيرا فالله أولى بهما فلا تتبعوا الهوى آن
فان الله كان بما تعملون خيرا .
تعدلوا وان تلوا أو تعرض
“হে মুমিনগণ! তোমরা ন্যায়বিচারে দৃঢ় প্রতিষ্ঠিত থাকিবে আল্লাহর সাক্ষীস্বরূপ; যদিও ইহা তোমাদের নিজেদের অথবা পিতা-মাতা এবং আত্মীয় স্বজনের বিরুদ্ধে হয়; সে বিত্তবান হউক অথবা বিত্তহীনই হউক আল্লাহ উভয়েরই যোগ্যতর অভিভাবক। সুতরাং তোমরা ন্যায়বিচার করিতে প্রবৃত্তির অনুগামী হইও
। যদি তোমরা পেঁচানো কথা বল অথবা পাশ কাটাই যাও তবে তোমরা যাহা কর আল্লাহ তাহার সম্যক খবর রাখেন” (৪ঃ ১৩৫)।
অর্থাৎ তোমরা যদি সত্য কথা বলিতে পিছপা হও অথবা চাপের মুখে কিংবা সন্ত্রাসের ভয়ে অথবা লালসার বশবর্তী হইয়া পেঁচানো কথা বলিয়া মুনাফিক সুলভ
৭৮৮
আচরণ অবলম্বন কর তাহা হইলে জানিয়া রাখ, দুনিয়ার শাস্তি হইতে রক্ষা পাইলেও আখেরাতে এহেন অপরাধের শাস্তি হইতে রেহাই পাইবে না।
রাসূলুল্লাহ (সা)-এর জীবদ্দশায় এবং তাহার ঘনিষ্ঠ সাহাবী, বিশেষত খােলাফায়ে রাশেদীনের আমলে মত প্রকাশের স্বাধীনতা অক্ষুন্ন ছিল। তাহারা নাগরিকদের স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের উপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করিতেন।
উহুদের যুদ্ধের সময় রাসূলুল্লাহ (সা) তাঁহার সাহাবাগণকে লইয়া পরামর্শ করিতেছিলেন। প্রবীণ সাহাবীগণ মদীনার অভ্যন্তরে থাকিয়া যুদ্ধ করিবার পক্ষপাতী ছিলেন, কিন্তু হযরত হামযা প্রমুখ তরুণ সাহাবীগণের মত ছিল মদীনার বাহিরে গিয়া যুদ্ধ করা। রাসূলুল্লাহ (সা) দেখিলেন, অধিকাংশ সাহাবীর মত হইল মদীনার বাহিরে গিয়া যুদ্ধ করা এবং সেটিই স্থির হইল। তিনি যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হওয়ার জন্য হুজরাতে চলিয়া যান। এদিকে প্রবীণ সাহাবীগণ তরুণদিগকে তিরস্কার করিতে থাকেন যে, তোমরা আল্লাহর রাসূলের মতের প্রতি ভ্রুক্ষেপ না করিয়া তাঁহাকে কষ্টের মধ্যে ফেলিয়া দিয়াছ। এই কথা শুনামাত্র তরুণরা আবেগাপ্লুত হইয়া ক্ষমা প্রার্থনা করিয়া রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর সামনে উপস্থিত হইলেন। তিনি তাহাদের আকুতি-মিনতি শুনিবার পর বলিলেন, দৃঢ় সংকল্প ও প্রস্তুতি শেষ হইবার পর অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জন ব্যতীত অস্ত্র সংবরণ করা নবীর জন্য শোভনীয় নহে। চল মদীনার বাহিরেই যুদ্ধ হইবে।৪৭
একদা তিনি গনিমতের মাল বণ্টন করিতেছিলেন। জনৈক ব্যক্তি বলিয়া ফেলিল, গনিমতের মাল বণ্টন আল্লাহর মর্জি মাফিক হইতেছে না। এই কথাটি নিতান্ত আপত্তিকর। কিন্তু তিনি তাহাকে কিছু না বলিয়া ক্ষমা করিয়া দিলেন। অন্য আর একজন অভিযোগ করিল, আপনি ন্যায়পরায়ণতার সহিত কাজ করেন নাই। রাসূলুল্লাহ (সা) মিষ্টি সুরে বলিলেন, আমি যদি ন্যায়বিচার না করি তাহা হইলে করিবে কে? অতঃপর অভিযোগ উত্থাপনকারীকে তিনি কোন প্রকার জেরা করেন নাই। হযরত যুবাইর (রা) ও জনৈক আনসারীর একটি বিবাদ রাসূলুল্লাহ (সা)-এর দরবারে উপস্থাপন করা হইল। তিনি যুবায়েরের পক্ষে রায় প্রদান করিলেন। ইহাতে আনসারী অসন্তুষ্ট হইয়া বলিল, আপনি তো আপনার ফুফাতো ভাইয়ের অনুকূলে রায় দিলেন। তিনি তাহার ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ উপেক্ষা করিলেন এবং কিছুই বলিলেন না।৪৮
তিনি মুসলমানদিগকে নির্দেশ দিলেন, অমুক অমুক স্থানে অবস্থান গ্রহণ করিতে হইবে এবং শিবির স্থাপন করিতে হইবে। একজন সাহাবী জানিতে
৭৮৯
চাহিলেন এই নির্দেশ কি ওহীর মারফত না আপনার ব্যক্তিগত অভিমত হইতে? তিনি বলিলেন, ইহা আমার ব্যক্তিগত অভিমত। সাহাবী আরজ করিলেন, এই স্থান তো উপযোগী নহে, বরং ওমুক ওমুক স্থান অধিকতর সুবিধাজনক হইবে। অবশেষে সাহাবীর এই অভিমত অনুযায়ী সিদ্ধান্ত গৃহীত হইল।৪৯
হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রা) তাঁহার খিলাফতের উদ্বোধনী ভাষণে যথারীতি সবাইকে নির্ভয়ে মতামত পেশের আহবান জানান। হযরত উমার (রা) খিলাফতের আসনে অভিষিক্ত হইবার পর হযরত আবু উবায়দাহ (রা) ও হযরত মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা) তাঁহার নিকট একটি যৌথ পত্র লিখিয়াছিলেন। এই পত্রে খেলাফতের দায়িত্ব ও কর্তব্য এবং পরকালের জবাবদিহিতা সম্পর্কে তাঁহাকে সজাগ করিয়া দেওয়া হইয়াছিল। পত্রে তাহারা লিখিয়াছিলেন, আমরা আল্লাহর নিকট পানাহ্ চাহিতেছি যে, আপনি আমাদের লিখিত পত্রের প্রকৃত মর্যাদা দিবেন না। আমরা শুধুমাত্র আপনার অন্তরঙ্গ বন্ধু ও হিতাকাংখী হিসাবেই এই পত্র লিখিয়াছি। হযরত উমার (রা) তাহাদের উভয়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাইয়া এক দীর্ঘ উত্তর লিখিয়াছিলেন। আপনাদের উভয়ের লেখাই বিশ্বস্ততা ও সততায় পরিপূর্ণ। এই ধরনের পত্রের আমার ভীষণ প্রয়োজন। কাজেই আপনারা আমাকে পত্র লেখার এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখিবেন।৫০ •
হযরত উমার (রা)-এর সিরিয়া সফরকালে এক মজলিসে তিনি খালিদ ইবন ওয়ালীদের পদচ্যুতির কারণ ব্যাখ্যা করিতেছিলেন। তখন জনৈক ব্যক্তি দাঁড়াইয়া হয়রত উমারের ব্যাখ্যার প্রতিবাদ করিয়া বলিল, হে উমার! আল্লাহর শপথ, আপনি ইনসাফ করেন নাই। আপনি মহানবী (সা) কর্তৃক নিয়োগকৃত কর্মকর্তাকে অপসারণ করিয়াছেন। আপনি রাসূলে করীম (সা)-এর উন্মুক্ত তরবারি খাপের মধ্যে নিক্ষেপ করিয়াছেন, আপনি আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করিয়াছেন, আপনি নিজের চাচাত ভাইয়ের প্রতি ঈর্ষান্বিত হইয়াছেন। হযরত উমর (রা) নীরবে সব কিছু শুনিতে থাকেন এবং প্রতিবাদকারীর কথা শেষ হওয়ার পর কোমল কণ্ঠে বলিলেন, তোমার ভাইয়ের সাহায্যার্থে তোমার রাগ আসিয়া গিয়াছে।১
মত প্রকাশের এই স্বাধীনতা কেবল খােলাফায়ে রাশেদীনের আমল পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকে নাই। ইহার দৃষ্টান্ত আমরা মুসলিম ইতিহাসের সর্বযুগেই দেখিতে পাই। তবে এই কথা সত্য যে, পরবর্তী কালের শাসকবৃন্দের মাঝে ভিন্নমত বরদাশত করিবার সেই প্রাণশক্তি অবশিষ্ট ছিল না যাহা খােলাফায়ে রাশেদীনের চরিত্রে আমরা দেখিতে পাই। কিন্তু এই ব্যাপারে পতন সত্ত্বেও স্বাধীন মতামত
৭৯০
প্রকাশের সাহসিকতা এবং বিরুদ্ধ মতের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের যে দৃষ্টান্ত আমাদের এখানে পাওয়া যায় তাহা এই কথারই প্রমাণ বহন করে যে, মুসলমানগণ তাহাদের অধিকার হইতে কখনও সম্পূর্ণরূপে বঞ্চিত হয় নাই।
ইসলামে মতামত প্রকাশের স্বাধীনতার সীমা নির্দেশ করিতে গিয়া আল্লামা শাওকানী লিখিয়াছেন, যাহারা ইমামের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করিবার ইচ্ছা রাখে শরীয়াত তাহাদিগকে হত্যা করিবার অনুমতি প্রদান করে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তাহারা তাহাদের ইচ্ছা ও সংকল্প বাস্তবায়নের জন্য কোন যুদ্ধে লিপ্ত না হয় কিংবা তাহার প্রস্তুতি শুরু
করে। কেননা রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন “সে যখন বিদ্রোহ ঘোষণা করিবে তখন তাহাকে হত্যা কর”।৫২
ধারা—১২৮৬
বিবেক ও বিশ্বাসের স্বাধীনতা
প্রত্যেক নাগরিকের নিজ বিবেক ও ধর্মবিশ্বাসের পূর্ণ স্বাধীনতা রহিয়াছে। ‘
বিশ্লেষণ
ইসলামী রাষ্ট্রে প্রত্যেক ব্যক্তির নিজ বিবেক ও ধর্মবিশ্বাসের পূর্ণ স্বাধীনতা ভোগের অধিকার রহিয়াছে। আল্লাহ পাক বলেনঃ
لا اكره في الدين قد تبين الرشد من الف .
“ধর্মে কোন প্রকারের জরবদন্তি নাই। সত্য পথ ভ্রান্ত পথ হইতে সুপথ হইয়া গিয়াছে” (২ঃ ২৫৬)।
অর্থাৎ সত্য পথ তো তাহাই যাহার দিকে ইসলাম মানবজাতিকে আহবান জানাইতেছে এবং সত্য-মিথ্যার মধ্যে পার্থক্য নিরূপণের ভ্রান্ত ধারণাসমূহকে ছাটাই করিয়া পৃথক করিয়া দিয়াছে। এখন আল্লাহর অভিপ্রায় ও মুসলমানদের প্রচেষ্টা তো ইহাই যে, সারা বিশ্ব যেন ইসলামের সত্যের আহবানকে গ্রহণ করিয়া লয়। কিন্তু এই ব্যাপারে কাহারও উপর বল প্রয়োগের কোন অবকাশ নাই। যাহার মন চায় তাহা যুক্তি-প্রমাণের ভিত্তিতে গ্রহণ করিবে এবং যাহার মন চাইবে না তাহাকে তাহা গ্রহণে বাধ্য করা যাইবে না। এই সম্পর্কে কুরআনুল করীমে রাসূলুল্লাহ্ (সা)-কে সম্বােধন করিয়া বলা হইয়াছে।
৭৯১
م من في الأرض كلهم جميعا فانت تكره الناس حتى
ث
ولو شاء
ملو
يكونوا مؤمنين .
“তোমার প্রতিপালক ইচ্ছা করিলে পৃথিবীতে যাহারা আছে তাহারা সকলে অবশ্যই ঈমান আনিত। তবে কি তুমি মুমিন হওয়ার জন্য মানুষের উপর বল প্রয়োগ করিবে” (১০ : ৯)?
অন্য স্থানে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর সত্যের দাওয়াত প্রসংগে তাঁহার যিম্মাদারি আল্লাহ পাক বলেন?
فذكر انما أنت نگر . لست عليهم بمصيطر .
“অতএব তুমি উপদেশ দাও। তুমি তো একজন উপদেশদাতা। তুমি উহাদের কর্ম নিয়ন্ত্রক নও” (৮৯ : ২১-২২)।
এই জাতীয় একই কথা আল্লাহ পাক পবিত্র কুরআনের সূরা কাফ-এর ৪৫ নম্বর আয়াতে, সূরা ইউনুসের ১০৮ নং আয়াতে, সূরা কাহূফের ২৯ নং আয়াতে, সূরা আনআমের ১০৭ নং আয়াতে, সূরা আনকাবূতের ৪৬ নং আয়াতে এবং সূরা যুমারের ৪১ নং আয়াতে উল্লেখ করিয়াছেন।
মানুষের হেদায়াত ও সুপথ প্রদর্শনের জন্য আল্লাহ পাক যত নবী-রাসূল প্রেরণ করিয়াছিলেন তাঁহাদের সকলের দায়িত্ব ও কর্তব্য ছিল যথারীতি সত্যের পয়গাম পৌছাইয়া দেওয়া, তাহারা স্বয়ং তাহাদের মিশন সম্পর্কে বলিয়াছেন?
وما علينا الا المبلغ المبين .
“স্পষ্টভাবে প্রচার করাই আমাদের দায়িত্ব” (৩৬ ও ১৭)। অনুরূপভাবে রাসূলুল্লাহ (সা)-কে সম্বােধন করিয়া বলা হইয়াছে?
فان تولوا فانما عليكم البلغ المبين .
“অনন্তর যদি তাহারা মুখ ফিরাইয়া লয়, তবে তোমার দায়িত্ব তো কেবল স্পষ্টভাবে বাণী পৌছাইয়া দেওয়া” (১৬ : ৮২)।
সূরা শূরায় রাসূলুল্লাহ (সা)-কে নির্দেশ প্রদান করা হইয়াছে তিনি যেন দীনের প্রতি মিথ্যারোপকারী কাফের মুশরিকদিগকে জানাইয়া দেন?
الله ربنا وربكم لنا أعمالنا ولكم أعمالكم لا حجة بيننا وبينكم .
“একমাত্র আল্লাহ পাকই আমাদের প্রতিপালক এবং তোমাদেরও প্রতিপালক। আমাদের কর্ম আমাদের জন্য এবং তোমাদের কর্ম তোমাদের জন্য। আমাদের ও তোমাদের মধ্যে কোন বিবাদ নাই” (৪২ : ১৫)।
৭৯২
পবিত্র কুরআন ছাড়াও সাহাবায়ে কিরামদিগের মধ্যে হযরত উমার (রা)-এর একটি ঘটনা উল্লেখ করিবার মত। হযরত উমার (রা)-এর গোলাম ওয়াসক রুমী নিজেই বর্ণনা করিয়াছেন : আমি হযরত উমার ইবনুল খাত্তাবের গোলাম ছিলাম। তিনি আমাকে প্রায় বলিতেন, মুসলমান হইয়া যাও। যদি তুমি ইসলাম গ্রহণ কর তাহা হইলে আমি তোমার উপর মুসলমানদিগের আমানতের কোন দায়িত্ব অর্পণ করিব। কেননা অ-মুসলমানকে মুসলমানের আমানতের কার্যে নিয়োগ করা আমার জন্য সংগত নহে। কিন্তু আমি ইসলাম কবুল করি নাই। ইহার পরে তিনি বলিতেন,। ১২। ২ (দীনে কোন জবরদস্তি নাই)। পরিশেষে তাঁহার ওফাতের পূর্বাহ্নে তিনি আমাকে মুক্ত করিয়া দেন এবং বলেন, তোমার যেইখানে মন চায় চলিয়া যাও।৫৩
হযরত উমার (রা) বাইতুল মুকাদ্দাসের গির্জার এক কোণে নামায পড়েন। অতঃপর তিনি ভাবিলেন, মুসলমানগণ আমার নামাযকে দলীল হিসাবে গ্রহণ করিয়া খৃস্টানদের হয়ত বহিষ্কার করিয়া দিতে পারে। তাই তিনি একটি বিশেষ প্রতিজ্ঞা লিপি লিখিয়া দূত মারফত পাঠাইয়া দেন, যাহাতে গির্জা খৃস্টানদের জন্য নির্ধারণের নির্দেশ ছিল এবং এই নিয়ম প্রবর্তন করা হইল যে, এই সময়ে মাত্র একজন মুসলমান গির্জায় প্রবেশ করিতে পারিবে বেশী নহে।৫৪
ধারা-১২৮৭
সম-অধিকার রাষ্ট্রের সকল মানুষ সম-মর্যাদার অধিকারী
বিশ্লেষণ
রাষ্ট্রের প্রত্যেক ব্যক্তি সমাজে সম-মর্যাদা ও সমান অধিকার লইয়া বসবাস করিবার অধিকার রাখে। এই অধিকার তাহার জন্মগত ও আল্লাহ প্রদত্ত। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ পাক বলেন :
ابنها الناس انا خلقكم من ذكر وأنثى وجعلنكم شعوبا وقبائل لتعارفوا
ان اكرمكم عند الله أتقكم .
“হে মানবজাতি! আমরা তোমাদের সকলকে একজন পুরুষ ও একজন নারী হইতে সৃষ্টি করিয়াছি। পরে তোমাদিগকে বিভক্ত করিয়াছি বিভিন্ন গোত্রে ও বংশে, যাহাতে তোমরা একে অপরের সহিত পরিচিত হইতে পার। আর তোমাদিগের মধ্যে সেই ব্যক্তিই সর্বাধিক মর্যাদা সম্পন্ন যে অধিক মুত্তাকী” (৪৯ ও ১৩)।
৭৯৩
মানুষের এই সমমর্যাদার অধিকার সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ্ (সা)-ও তাঁহার ঐতিহাসিক বিদায় হজ্জের ভাষণে উল্লেখ করিয়াছেন। তিনি বলিয়াছেন?
الأفضل لعربي على عجمي ولا عجمي على عربى ولا لأحمر على أسود
ولا لأسود على أحمر الا بالتقوى ولا فضل بالأنساب .
“কোন অনারবের উপর আরবের শ্রেষ্ঠত্ব নাই এবং আরবের উপর অনারবের শ্রেষ্ঠত্ব নাই। কোন কালোর উপর সাদার শ্রেষ্ঠত্ব নাই। আর না আছে সাদার উপর কালোর শ্রেষ্ঠত্ব, তাকওয়া ছাড়া বংশেরও শ্রেষ্ঠত্ব নাই”।
কুরআন মজীদ এবং রাসূলুল্লাহ (সা)-এর এই সকল বাণীর আলোকে ইসলামী রাষ্ট্রের সীমানায় বসবাসকারী সকল মানুষ আইনের দৃষ্টিতে সমান মর্যাদার
অধিকারী। সামাজিক জীবনেও তাহাদের মধ্যে তাকওয়া ব্যতিরেকে শ্রেষ্ঠত্ব নিরূপণের কোন মানদণ্ড নাই। রক্ত সম্পর্কের ভিত্তিতে ইসলাম সমগ্র মানব জাতিকে এক সমতার বন্ধনে আবদ্ধ করিয়াছে। আর ঈমান ও ধর্ম বিশ্বাসের ভিত্তিতে মুসলমানদিগকে পরস্পর ভাই ভাই হিসাবে স্বীকৃতি দিয়া তাহাদের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ ভ্রাতৃত্ব স্থাপন করিয়াছে। এ সম্পর্কে আল্লাহ পাক বলেন?
انما المؤمنون اخوة.
“নিশ্চয় মুমিনগণ পরস্পর ভাই ভাই” (৪৯ : ১০)। নবীযুগ, খােলাফায়ে রাশেদীনের আমল এবং পরবর্তী কালে আমরা এমন অনেক উদাহরণ পাই যেইখানে মনীব-গোলাম, শাসক-শাসিত, আমীর-ফকীর মুসলিম ও অমুসলিম নির্বিশেষে সকলের ক্ষেত্রে ইনসাফের বেলায় কঠোরভাবে সাম্যনীতি অনুসরণ করা হইয়াছে। অধিকার ও পারস্পরিক বিষয়াদির ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ (সা) সদা সর্বদা নিজেকে অপরের সমতুল্য মনে করিতেন। অভিজাত কুরাইশ বংশের ফাতিমা নাম্নী নারী চুরি করিয়া ধরা পড়িল। হযরত উসামা (রা) তাহাকে ক্ষমা করিয়া দেওয়ার সুপারিশ করিলে রাসূলুল্লাহ (সা) কঠোর ভাষায় বলিলেন, “হে উসামা! আল্লাহর নির্ধারিত শাস্তির ব্যাপারে সুপারিশ করিয়া তুমি অনধিকার চর্চা করিতেছ? সাবধান! আর কখনও এইরূপ ভুল করিবে না”।
অতঃপর বিলাল (রা)-কে নির্দেশ প্রদান করিলেন মসজিদে সবাইকে একত্র করিতে। মসজিদে সবাই একত্র হইলে তিনি তাহাদের উদ্দেশে বলিলেন? তোমাদের পূর্ববর্তী জাতিসমূহ এইজন্য ধ্বংস হইয়াছে যে, তাহারা সাধারণ লোকদিগের ক্ষেত্রে আইন অনুযায়ী শাস্তি কার্যকর করিত, কিন্তু বিশিষ্ট লোকদিগের
৭৯৪
ক্ষেত্রে শাস্তি কার্যকর করিত না। সেই মহান সত্তার শপথ যাহার নিয়ন্ত্রণে আমার জীবন! যদি মুহাম্মদের কন্যা ফাতিমাও এইরূপ করিত তবে তাহার হাতও আমি কাটিয়া দিতাম”।৫৫
মুসলমানদিগকে নির্দেশ প্রদান করিয়া আল্লাহ তাআলা বলেন :
ياها الذين آمنوا گونوا قوامين لله شهداء بالقسط ولا يجرمنكم شنان قوم على الأتغدوا إعدلوا هو أقرب للتقوى واتقوا الله ان الله خبير بما تعملون .
“হে মুমিনগণ! আল্লাহর উদ্দেশ্যে ন্যায় সাক্ষ্যদানে তোমরা অবিচল থাকিবে। কোন সম্প্রদায়ের প্রতি বিদ্বেষ তোমাদিগকে যেন কখনও সুবিচার বর্জনে প্ররোচিত না করে। সুবিচার করিবে, ইহা তাকওয়ার নিকটতর এবং আল্লাহকে ভয় করিবে। তোমরা যাহা কর নিশ্চয় আল্লাহ তাহার সম্যক খবর রাখেন” (
৫৮)। যদিও রাসূলুল্লাহ কখনও কাহারও প্রতি অন্যায় আচরণ করেন নাই কিন্তু তাহা সত্বেও আল্লাহ পাকের এই নির্দেশ ইসলামী সমাজে কার্যত বাস্তবায়ন করিবার ব্যাপারে তিনি এত অধিক সতর্ক ও যত্নবান ছিলেন যে, তিনি বারংবার লোকদিগকে বলিতেন : কাহারও সহিত অন্যায় আচরণ করা হইয়া থাকিলে সে যেন আমার নিকট হইতে প্রতিশোধ গ্রহণ করে। রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর জীবনে এমন অনেক ঘটনার সন্ধান পাওয়া যায় যাহাতে তিনি নিজকে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য পেশ করিয়াছিলেন। হযরত সাওয়াদ ইবনে উমার (রা) বলিয়াছেন, একবার আমি রঙিন পোশাক পরিধান করিয়া রাসূলুল্লাহ (সা)-এর খেদমতে উপস্থিত হইয়াছিলাম। তিনি আমাকে দূর হও দূর হও বলিয়া ছড়ি দ্বারা টোকা দিলেন। আমি আরজ করিলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি ইহার প্রতিশোধ গ্রহণ করি। তিনি তৎক্ষণাৎ তাঁহার পেট মুবারক আমার সামনে খুলিয়া দিলেন।৫৬
রাসূলুল্লাহ (সা)-এর এই সকল উপমার বরাত দিয়া হযরত উমার (রা) মিসরের গর্ভনর হযরত আমর ইবনুল আস (রা)-এর অভিযোগের জবাব দিলেন।
অভিযোগটি হইল?
হে আমীরুল মুমিনীন! মনে করুন, এক ব্যক্তি কোন এক অঞ্চলের শাসক এবং তিনি একজনকে শাস্তি দিয়াছেন, তাহা হইলে আপনিও তাহার হইতে প্রতিশোধ লইবেন? জবাবে তিনি বলিয়াছিলেন, সেই মহান সত্তার শপথ যাহার নিয়ন্ত্রণে আমার জীবন! আমি তাহার হইতেও মজলুমের পক্ষে প্রতিশোধ লইব।
৭৯৫
কেননা আমি রাসূলুল্লাহ (সা)-কে দেখিয়াছি যে, তিনি নিজেকে প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য মানুষের সামনে পেশ করিতেন।
সুতরাং তিনি তাহার দশ বছরের খেলাফতকালে এই সাম্যনীতির বাস্তবায়নে অত্যন্ত কঠোর ছিলেন। জাবালা ইবনে আওহাম গাসসানী যখন এক বৈদুঈনকে চাপটেঘাত করিবার কিসাস হইতে বাঁচিবার জন্য এই দলীল পেশ করিয়াছিল যে, হে আমীরুল মুমিনীন! উহা কিভাবে হইতে পারে? সে তো নগণ্য এক ব্যক্তি। আর আমি হইলাম বাদশাহ। হযরত উমার (রা) বলিয়াছিলেন, ইসলাম তো আপনাদের উভয়কেই ভাই ভাই করিয়া দিয়াছে। আপনি শুধুমাত্র তাকওয়ার ভিত্তিতে তাহার উপর শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করিতে পারেন, অন্য কোন পন্থায় নহে। ৫৮
হযরত উমার (রা) হযরত আবু মূসা আশআরী (রা), হযরত আমর ইবনুল আস (রা), তাহার পুত্র মুহাম্মাদ, হিমসের গভর্নর আবদুল্লাহ ইবন কুরত (রা) এবং বাহরাইনের গর্ভনর কুদামা ইবন মাযউন (রা)-এর বিরুদ্ধে শাস্তির বিধান এবং স্বয়ং আপন পুত্র আবদুর রহমানের উপর হদ্দের শরঈ শাস্তি কার্যকর করিয়া আইনের চোখে সাম্যের এমন বিরল উপমা স্থাপন করিলেন বিশ্বের ইতিহাসে যাহার নজির বিরল।
হযরত যায়েদ ইবন ছাবিত (রা)-এর আদালতে আসামীর কাঠগড়ায় বিবাদী হিসাবে তাহার উপস্থিতি, তাঁহাকে সম্মান প্রদর্শনে অসন্তোষ প্রকাশ এবং একথা বলা যে, ইহা তোমার প্রথম অন্যায়। মামলার বাদী হযরত উবাই ইবন কাব (রা)-এর সমপর্যায়ে বসা এবং সাক্ষ্য উপস্থিত না করিয়া শপথের উপর সম্মতি প্রকাশ করা, অতঃপর যায়দ ইবন ছাবিত (রা)-এর পরামর্শক্রমে উবাই ইবন কাবের ক্ষমা করিবার প্রতি রাগান্বিত হওয়া এবং এই কথা বলা যে, যায়েদ! যতক্ষণ পর্যন্ত একজন সাধারণ নাগরিক ও উমার তোমাদিগের কাছে সমান মর্যাদা সম্পন্ন না হইবে ততক্ষণ তুমি বিচারক পদের যোগ্য বলিয়া বিবেচিত হইতে পারিবে না।
অনুরূপভাবে হযরত আলী (রা) তাঁহার খেলাফত কালে লৌহবর্ম চুরির মামলায় ফরিয়াদি হিসাবে কাযী শুরায়হ-এর আদালতে উপস্থিত হন। আসামী ছিল একজন যিম্মী। কাযী শুরায়হ্ হযরত আলী (রা)-কে সম্বােধন করিয়া বলিলেন, হে আবু তুরাব! আপনি প্রতিপক্ষের সামনা সামনি বসুন। কাযী সাহেব বুঝিতে পারিলেন যে, এই কথাটি হযরত আলী (রা)-এর নিকট খারাপ লাগিয়াছে। তিনি বলিলেন, ওহে আবু তুরাব! সম্ভবত আমার কথা আপনার নিকট অপছন্দনীয় হইয়াছে। অথচ ইসলামের আইন ও আদালত সম্পৰ্কীয় সাম্যনীতির আবেদন হইতেছে ফরিয়াদি ও
৭৯৬
আসামীর একই সমতলে বসা। হযরত আলী (রা) বলিলেন, আমার প্রতিপক্ষের সমান স্তরে আমাকে উপবেশন করিবার নির্দেশ আমার নিকট অপ্রিয় মনে হয় নাই, বরং আমার নিকট যাহা অপ্রিয় মনে হইয়াছে তাহা এই যে, আপনি আমাকে সম্মান প্রদর্শন করিয়াছেন, ইহা তো আমার প্রতিপক্ষের সহিত আপনি স্পষ্ট অন্যায় করিলেন।৫৯
হযরত উমার (রা) পুরুষদিগকে নারীদের সহিত অবাধে চলাফেরা করিতে নিষেধ করিয়াছিলেন। এক ব্যক্তিকে তিনি মহিলাদের সহিত নামায আদায় করিতে দেখিয়া চাবুক লাগাইলেন। লোকটি বলিল, আল্লাহর শপথ! যদি আমি ভাল কাজ করিয়া থাকি তাহা হইলে আপনি আমার প্রতি যুলুম করিলেন। আর যদি আমি খারাপ কাজ করিয়া থাকি তবে আপনি ইহার পূর্বে উহা আমাকে জানান নাই। হযরত উমার (রা) তাহাকে বলিলেন, তুমি কি আমার নসীহত করিবার সময় মজলিসে উপস্থিত ছিলে না? লোকটি বলিল, না। এই কথা শুনিয়া হযরত উমার (রা) তাহার সামনে চাবুকটি রাখিয়া বলিলেন, তুমি আমার নিকট হইতে প্রতিশোধ গ্রহণ কর। লোকটি বলিল, আজ বদলা গ্রহণ করিব না। হযরত উমার (রা) বলিলেন, বেশ তাহা হইলে ক্ষমা করিয়া দাও। লোকটি বলিল, ক্ষমাও করিতেছি
। অতঃপর উভয়ে পরস্পর পৃথক হইয়া গেলেন। পরের দিন সাক্ষাত করিয়া লোকটি হযরত উমার (রা)-কে মলীন চেহারায় দেখিতে পাইল। লোকটি বলিল, হে আমীরুল মুমিনীন! সম্ভবত আমার কথায় আপনি ব্রিত বােধ করিয়াছেন? তিনি বলিলেন, হাঁ। সে বলিল, আমি আল্লাহকে সাক্ষী রাখিয়া বলিতেছি, আমি আপনাকে ক্ষমা করিয়া দিয়াছি।৬০
আল্লাহ পাক পবিত্র কুরআনে ফেরাউনের যে হীন অপকর্মের কথা উল্লেখ করিয়াছেন তাহার অন্যতম কারণ ছিল যে, সে তাহার জাতিকে উচু-নিচু ও আশরাফ-আতরাফের বিভিন্ন শ্রেণীতে বিভক্ত করিয়া রাখিয়াছিল। ইহাদের মধ্যে এক শ্রেণীকে সে তাহার জুলুম-নির্যাতন ও অত্যাচার-অবিচারের যাতাকলে বাঁধিয়া রাখিত এবং তাহাদিগকে অপমানিত ও লাঞ্ছিত করিত। আল্লাহ পাক বলেন :
في الأرض وجعل أهلها شيعا يستضعف طائفة منهم .
ان فرعون
“ফিরাউন দেশে পরাক্রমশালী হইয়াছিল এবং তথাকার অধিবাসীবৃন্দকে বিভিন্ন শ্রেণীতে বিভক্ত করিয়া উহাদের একটি শ্রেণীকে সে হীনবল করিয়াছিল” (২৮ : ৪)।
৭৯৭
হযরত উমার (রা)-কে যখন মক্কার শাসনকর্তা নাফে ইবনুল হারিস জানাইলেন, আমি মুক্তদাস ইবনুল বারাকে আমার স্থলাভিষিক্ত নিয়োগ করিয়া আসিয়াছি, তখন তিনি তাহার যোগ্যতার কথা শুনিয়া বলিলেন, কেন হইবে না! আমাদের নবী (সা) বলিয়া গিয়াছেন যে, আল্লাহ তাঁহার এই কিতাবের মাধ্যমে কতককে উপরে উঠাইবেন এবং কতককে নিচে নামাইয়া দিবেন।৬১
ধারা-১২৮৮
ন্যায়বিচার লাভের অধিকার প্রত্যেক ব্যক্তি সঠিক ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকারী।
বিশ্লেষণ
প্রত্যেক ব্যক্তি ন্যায়বিচার লাভের অধিকারী। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠাই ইসলামী রাষ্ট্রের অস্তিত্বের মুখ্য উদ্দেশ্য। এই ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্যই যুগে যুগে আল্লাহ পাক পৃথিবীতে নবী-রাসূলগণকে পাঠাইয়াছেন। সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মাদ (সা)-কে মূলত এই ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্যই পাঠানো হইয়াছে। কুরআনে বলা হইয়াছে?
وأمرت لأعدل بينكم.
“তোমাদের মধ্যে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য আমি আদিষ্ট হইয়াছি” (৪২ : ১৫)।
قل أمر ربي بالقسط
“বল, আমার প্রভু আমাকে ন্যায়বিচারের নির্দেশ দিয়াছেন” (৭ঃ ২৯)। যুগে যুগে এই পৃথিবীতে আল্লাহ পাক তাঁহার বান্দাদের মধ্যে ইনসাফ ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য অসংখ্য নবী ও রাসূল প্রেরণ করিয়াছেন। এ সম্পর্কে আল্লাহ পাক বলেনঃ
لقد أرسلنا رسلنا بالبينات وانزلنا معهم الكتاب والميزان ليقوم الناس
بالقسط.
“আমরা আমাদের রাসূলদিগকে প্রেরণ করিয়াছি সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলীসহ এবং তাহাদিগের সহিত অবতীর্ণ করিয়াছি কিতাব ও ন্যায়নীতি, যাহাতে মানুষ সুবিচারের উপর প্রতিষ্ঠিত হইতে পারে” (৫৭ঃ ২৫)।
৭৯৮
রাসূলুল্লাহ (সা)-কে এবং তাহার পরের মুসলমানদিগকে যে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার নির্দেশ প্রদান করা হইয়াছে তাহার মানদণ্ডেরও পরিপূর্ণ আলোচনা করা হইয়াছে, যাহাতে এই সুবিচার-এর মর্ম নির্ধারণে এবং আল্লাহ পাকের অভিপ্রায়কে যথার্থভাবে অনুধাবন করিতে কোন অস্পষ্টতা না থাকে। এ সম্পর্কে আল্লাহ পাক বলেন :
ايها الذين أمنوا كونوا قوامين بالقسط شهداء لله ولو على أنفسكم أو الوالدين والأقربين إن يكن غنيا أو فقيرا قاله اولی بهما فلا تتبعوا الهوى أن تعدلوا وان تلوا أو تعرضوا فان الله بما
• 1 :39Ls1
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা সুবিচারের পতাকাবাহী এবং আল্লাহর উদ্দেশে সাক্ষী হও যদিও তাহা তোমাদের নিজেদের অথবা পিতা-মাতা এবং নিকট আত্মীয়ের বিপক্ষে হয়। পক্ষদ্বয় বিত্তবান হউক অথবা বিত্তহীন, আল্লাহ উভয়ের যোগ্যতম অভিভাবক। সুতরাং তোমরা সুবিচার প্রতিষ্ঠায় প্রবৃত্তির অনুগামী হইও
। যদি তোমরা পেঁচানো কথা বল অথবা উপেক্ষা কর তাহা হইলে স্মরণ রাখিও, আল্লাহ তোমাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে সম্যক অবহিত” (৪ঃ ১৩৫)।
বর্ণিত আয়াতে শুধুমাত্র ন্যায়বিচারের কথাই বলা হয় নাই, বরং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার অপরিহার্য শর্তাবলীর কথাও উল্লেখ করা হইয়াছে। ইহার কোন একটি শর্ত বাদ পড়িলে উহাকে আর ন্যায়বিচার বলা যাইবে না। নিম্নে শর্তগুলির উল্লেখ করা হইল।
(১ম শর্ত) ন্যায়বিচার শুধুমাত্র প্রতিষ্ঠাই করিবে না, বরং উহার পতাকাও সমুন্নত রাখিবে। যেখানেই ন্যায়বিচার ভূলুণ্ঠিত হইতে দেখিবে সেখানেই উহা সমুন্নত করিবার সর্বশক্তি নিয়োগ করিবে।
(দ্বিতীয় শর্ত) মামলায় কোন পক্ষের হার-জিতের জন্য সাক্ষ্য নহে, বরং শুধুমাত্র আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি লাভের জন্যই সাক্ষ্য প্রদান করিবে। কেননা সত্য সাক্ষ্য ব্যতিরেকে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা সম্ভব নহে। সাক্ষ্য প্রদান করিলে যদি তোমাদের নিজেদের স্বার্থে আঘাত লাগে অথবা তোমাদের পিতা-মাতার প্রতিকূলে যায় কিংবা নিকট আত্মীয়-পরিজনের স্বার্থের ব্যাঘাত ঘটায় তবুও পরোয়া করিবে না।
৭৯৯
(তৃতীয় শর্ত) সাক্ষ্য প্রদানের সময় আত্মীয় সম্পর্ক ছাড়াও মামলার উভয় পক্ষের সামাজিক মর্যাদা এবং তাহাদের আর্থিক ও সামাজিক প্রভাব ইত্যাদির প্রতি কোন প্রকারের ভ্রুক্ষেপ করিবে না। কেননা তোমরা কাহারও জন্য আল্লাহর চাইতে অধিক শুভাকাঙ্খী হইতে পার না। সাক্ষ্যদানের ক্ষেত্রে স্বাতন্ত্র স্থাপন করা হিতাকাংখা নহে, বরং স্পষ্ট জুলুম ও অনিষ্টকামিতা।
(চতুর্থ শর্ত) সাক্ষ্য প্রদানের সময় প্রকৃত ঘটনা যথার্থভাবে বর্ণনা করিবে। ইহাতে নিজের প্রবৃত্তি ও কামনা-বাসনাকে মিশ্রিত করিবে না। প্রবৃত্তি ঘটনার প্রকৃত রূপ বিকৃত করিয়া দেয় এবং সাক্ষ্য গ্রহণকারী (বিচারক) ঘটনার গভীরে পৌঁছাইতে পারেন না এবং তাহা ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার অন্তরায়।
(পঞ্চম শর্ত) তোমরা যদি কোন এক পক্ষকে বাঁচাইবার জন্য কিংবা শায়েস্তা করিবার উদ্দেশ্যে উল্টাপাল্টা কথা বলিয়া প্রকৃত তথ্য গোপন রাখিয়া, নিজের পক্ষ হইতে কিছু তথ্য সংযোজন করিয়া এবং নির্ভেজাল ও নিরপেক্ষ সাক্ষ্য হইতে পিছু হটিয়া গিয়া ন্যায়বিচারের পরিবর্তে অবিচার ও জুলুমের মাধ্যম হইয়া যাও, তাহা হইলে এই কথা ভালভাবে স্মরণ রাখিবে যে, তোমাদের অভ্যন্তরীণ অবস্থা আল্লাহর নিকট গোপন নহে এবং তাঁহার সামনে উপস্থিত হইলে নিজেদের কৃতকর্মের শাস্তি হইতে রেহাই পাইবে না।
অন্য এক আয়াতে আল্লাহ পাক বলেন?
ولا يجرمنكم شنان قوم على اتعدلوا اعدلوا هو أقرب القوى .
“কোন সম্প্রদায়ের প্রতি বিদ্বেষ তোমাদিগকে যেন সুবিচার বর্জনে প্ররোচিত না করে, তোমরা সুবিচার করিবে। ইহা তো তাকওয়ার নিকটতর” (৫ঃ ৮)।
কুরআনুল করীমের এই আয়াতের নিরিখে হযরত উমার (রা) কাযী শুরায়হ -এর নামে এক ফরমান জারি করিয়াছিলেন। উহাতে তিনি উল্লেখ করিয়াছিলেন?
বিচার সভায় দর কষাকষি করিবে না, কাহারও সহিত বিবাদে লিপ্ত হইবে না। কোন প্রকারের বিকিকিনি করিবে না এবং তুমি রাগান্বিত অবস্থায় দুই পক্ষের মধ্যে বিচারের চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করিবে না।৬২
মোটকথা, আদালতের মর্যাদা অক্ষুন্ন রাখিবার অন্যতম শর্ত হইতেছে বাহিরের ও ভিতরের যাবতীয় প্রভাব হইতে বিচারককে মুক্ত থাকা, যাহাতে তাহার উপর কোন অবৈধ প্রভাব কার্যকর না হয়। আল্লাহ পাক বিচারকার্য অনুষ্ঠানের সময় তাহার পরিপূর্ণ হক আদায় করিবার তাগিদ দিয়াছেন।
৮০০
আল্লাহ পাক বলেন :।
واذا حكمتم بين الناس أن تحكموا بالعدل .
“যখন তোমরা মানুষের মাঝে বিচারকার্য পরিচালনা করিবে তখন ন্যায়পরায়ণতার সহিত বিচার করিবে” (৪ ও ৫৮)।
আল্লাহ পাক ন্যায়বিচারের কথা কুরআন মজীদের বিভিন্ন জায়গায় উল্লেখ করিয়াছেন। উহার মধ্যে সূরা শূরা : ৪০-৪৩, সূরা নাহল : ৯০, সূরা মাইদা ও ৪২, ৪৪-৪৫-৪৭, সূরা আনআম : ১৫২, সূরা নিসা : ৫৮ ইত্যাদি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
ধারা—১২৮৯
অর্থনৈতিক নিরাপত্তার অধিকার প্রত্যেক ব্যক্তির অর্থনৈতিক নিরাপত্তা লাভের অধিকার রহিয়াছে।
বিশ্লেষণ
কুরআন মজীদে ত্রিশের অধিক স্থানে নামায কায়েমের নির্দেশ দানের সাথে সাথে যাকাত আদায়ের উল্লেখ রহিয়াছে এবং সত্তরের অধিক স্থানে সম্পদ ব্যয়ের কথা রহিয়াছে। ইহা হইতে অতি সহজেই অনুমেয় যে, ইসলাম অর্থনৈতিক নিরাপত্তার কথা কত গুরুত্বের সহিত বিবেচনা করিয়াছে। রাষ্ট্রে প্রত্যেক ব্যক্তি যাহাতে সম্মানের সহিত বসবাস করিতে পারে সেই দিকে বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হইয়াছে। তাই আল্লাহ পাক ধনীদের মালের উপর গরিবদের অধিকারের কথা উল্লেখ করিয়াছেন।
وفي أموالهم حق للسائل والمحروم .
“এবং তাহাদের সম্পদে রহিয়াছে অভাবী ও বঞ্চিতের অধিকার” ৫১ : ১৯)।
সূরা বাকারার ১-৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহ পাক এই মাল খরচের কথা উল্লেখ করিয়াছেন এবং ইহাকে মুমিনগণের অন্যতম গুণ হিসাবে উল্লেখ করিয়াছেন।
এই সকল আয়াত সম্পর্কে চিন্তা করিলে স্পষ্টভাবে বুঝা যায় যে, আল্লাহর কিতাবের উপর এবং ইহাতে অদৃশ্য বিষয়াদি, যেমন আল্লাহর অস্তিত্ব, তাকদীর বিশ্বলোক সৃষ্টি, আম্দম, বেহেশত-দোযখ, পরকাল, জিন, ফেরেশতা ইত্যাদির উপর ঈমান আনয়নের সাথে সাথেই মানুষের উপর দুইটি অধিকার অনিবার্য হইয়া পড়ে।
৮০১
আল্লাহর এবং বান্দার মধ্যকার সম্পর্কের গণ্ডিতে সর্বপ্রথম অধিকার হইতেছে, বান্দা তাহার মাথা শুধুমাত্র আল্লাহর সামনে অবনত করিবে এবং নামায কায়েমের মাধ্যমে নিজের দাসত্ব ও আল্লাহর প্রভুত্বের স্বীকৃতি প্রদানের জন্য প্রত্যহ পাঁচবার নামায পড়া নিজের অপরিহার্য দায়িত্বে পরিণত করিয়া লইবে। নামাযের পরপরই ঈমানদারগণের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্য হইতেছে হক্কুল ইবাদত সম্পর্কিত অধিকার আদায়, যাহার নাম ইনফাক (অর্থ ব্যয়) অর্থাৎ আল্লাহ্ পাকের দেওয়া ধন-সম্পদ দ্বারা অভাবী ও দারিদ্র্য ক্লিষ্টদের লালন-পালন।
অধিকারের এই ক্রমবিন্যাস শুধু এই একটি মাত্র আয়াতেই সীমাবদ্ধ নহে, বরং সমগ্র কুরআনে নামাযের পরপরই যাকাতের প্রসঙ্গ আসিয়াছে। কুরআন মজীদ কোন কোন স্থানে অভাবীদের অভাব মোচনে উদাসীনতা ও শৈথিল্য প্রদর্শন করিলে নামাযীর নামায অর্থহীন বলিয়া ঘোষণা করা হইয়াছে। সূরা মাউনে আল্লাহ পাক বলিয়াছেনঃ
بالدين فذلك الذي يد اليتيم ولا يحض على طعام
اريت الذي يك المسكين فويل للمصلين الذين هم عن صلوتهم ساهون الذين هم يراون ويمنعون الماعون.
“তুমি কি দেখিয়া তাহাকে যে দীনকে প্রত্যাখান করে? সে তো সেই লোক যে ইয়াতীমকে রূঢ়ভাবে তাড়াইয়া দেয় এবং সে অভাবগ্রস্তকে খাদ্যদানে উৎসাহ দেয় না। সুতরাং দুর্ভোগ সেই সালাত আদায়কারীদের যাহারা নিজের সালাত সম্বন্ধে উদাসীন, যাহারা লোক দেখানোর জন্য উহা করে এবং গৃহস্থালীর প্রয়োজনীয় ছােটখাট সাহায্য দানে বিরত থাকে” (১০৭১-৭)।
বর্ণিত সূরা ইতিপূর্বে সূরা বাকারায় বর্ণিত সত্যকে আরও সুন্দরভাবে উপস্থাপন করিয়াছে। যে ব্যক্তি অদৃশ্যের উপর (পরকালে) ঈমান রাখে না তাহার দ্বারা না আল্লাহ পাকের হক নামায সঠিকভাবে আদায় হইতে পারে, না সে নিজের ধন-সম্পদ ব্যয় করিয়া তাহার ভাইদিগের অভাব-অনটন মোচন করে নামায পড়িলেও চরম শৈথিল্য ও উদাসীনতার সহিত এবং উহা কেবল লোক দেখানোর জন্যই। আর আল্লাহ পাকের দেওয়া সম্পদের উপর অবৈধ কবজা জমাইয়া রাখে। অনাথ, অসহায় ইয়াতীমকে ঘাড় ধরিয়া বিতাড়িত করিয়া দেয়। অভাবীদের নিজেরা তো পানাহার করায়ই না, এমনকি অন্যদিগকেও এ বিষয়ে উৎসাহ প্রদান হইতে বিরত রাখে। কোন অভাবী ব্যক্তি যদি সামান্য কোন জিনিস চায় তবে উহা প্রদানও
৮০২
অস্বীকার করে। এই প্রকারের কর্মপন্থা অবলম্বনকারীদিগকে অত্যন্ত কঠোরভাবে সাবধান করিয়া দেওয়া হইয়াছে। বলা হইয়াছে, তোমাদের এই নামায কোন কাজে আসিবে না, উহা তোমাদের মুখের উপর নিক্ষেপ করা হইবে এবং আল্লাহর সৃষ্টির অধিকার আদায় না করিবার অপরাধে তোমরা যে ধ্বংসের মুখামুখি হইবে, এই নামায তোমাদিগকে উহা হইতে বাঁচাইতে পারিবে না।
মানুষকে অর্থনৈতিক নিরাপত্তা প্রদানের জন্য আল্লাহ পাক ইসলামে সম্পদ ব্যয়ের উপর অত্যধিক গুরুত্বারোপ করিয়াছেন এবং এইজন্য কি কি উপায় অবলম্বন করা হইয়াছে এবং এই প্রসংগে ইসলামী রাষ্ট্রের উপর কি কি দায়িত্ব আরোপিত হয়, সম্পদ ব্যয়ের বিধানসমূহ এবং এই সম্পর্কে অনুপ্রেরণাদান সম্পর্কিত কয়েকটি আয়াত নিম্নে উল্লেখ করা হইল।
والان فى أموالهم حق للسائل والمحروم .
“আর যাহাদের (মুসলমানদের) সম্পদে নির্ধারিত হক’ রহিয়াছে সাহায্যপ্রার্থী ও বঞ্চিতদের” (৭০ঃ ২৪)।
واقيموا الصلوة وأتوا الكاة وأقرضوا الله قرضا حسنا
“আর তোমরা নামায কায়েম কর, যাকাত আদায় কর এবং আল্লাহকে উত্তম ঋণ দাও” (৭৩ ও ২০)।
وأتى المال على حبه ثوي القربى واليتمى والمسكين وابن السبيل
والسائلين وفي الرقاب واقام الصلوة واتى الزكاة .
“এবং নেকী হইল আল্লাহর ভালবাসায় নিজের প্রিয় সম্পদ নিকট আত্মীয়, ইয়াতীম, অভাবী, পর্যটক, সাহায্যপ্রার্থীদিগকে এবং দাসমুক্তির জন্য খরচ করা, নামায কায়েম ও যাকাত আদায় করা” (২ঃ ১৭৭)।
বর্ণিত আয়াতে আল্লাহ পাক ঈমানের যে সকল শর্ত উল্লেখ করিয়াছেন তাহার মধ্যে প্রিয় সম্পদ খরচের কথা নামায কায়েমের পূর্বে উল্লেখ করিয়াছেন।
কুরআন মজীদ আমাদিগকে বলে যে, ধন-সম্পদ ব্যয় (দান) করিলে কমে না, বরং বাড়ে। ইহা ক্ষতির নহে, বরং সম্পূর্ণ লাভের পণ্য। ইহা গ্রহণকারীর প্রতি নহে, বরং দাতার নিজের উপর অনুগ্রহ। কেননা চক্রবৃদ্ধি হারে ইহার লাভ তাহার নিকটেই ফিরিয়া আসিবে। আর আখেরাতে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নিজের সৌভাগ্যের উপায় হইয়া চিরস্থায়ী শান্তির সেই মহা পুরস্কারের যোগ্য করিয়া দিবে যাহা অর্জন
bou
করাই প্রত্যেক মুসলমানের জীবনের আসল উদ্দেশ্য। পক্ষান্তরে সম্পদ খরচ না করিয়া পুঞ্জীভূত করিয়া রাখিলে উহা দুনিয়া ও আখেরাতে উভয় স্থানে ধ্বংস ও বরবাদের কারণ হইয়া দাঁড়াইবে। এ সম্পর্কে কুরআন মজীদের কতিপয় আয়াত এইখানে উল্লেখ করা হইল :
ويطعمون الطعام على حبه مسكينا ويتيما وأسيرا . انما نطعمكم الوجه الله لا تريد منكم جزاء ولا شكورا. انا نخاف من ربنا يوما عبوسا قمطريرا. فوقهم الله شر ذلك اليوم ولم نضرة وسرورا .
“আহার্যের প্রতি আসক্তি সত্বেও তাহারা অভাবগ্রস্ত, ইয়াতীম ও বন্দীকে আহার্য দান করে এবং বলে, কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে আমরা তোমাদিগকে আহার্য দান করি, তোমাদের নিকট হইতে প্রতিদান চাহি না, কৃতজ্ঞতাও নহে। আমরা আশংকা করি আমাদিগের প্রতিপালকের নিকট হইতে এক ভীতিপ্রদ ভয়ংকর দিনের। পরিণামে আল্লাহ তাহাদিগকে রক্ষা করিবেন সেই দিবসের অনিষ্ট হইতে এবং তাহাদিগকে দিবেন উস্ফুল্লতা ও আনন্দ” (৭৬ ও ৮-১১)।
مثل الذين ينفقون أموالهم في سبيل الله كمثل حبة أثبتت سبع سنابل فی گل سنبلة مائة حبة والله يضعف لمن يشاء والله واسع عليه.
“যাহারা নিজেদের ধনৈশ্য আল্লাহর পথে ব্যয় করে তাহাদের উপমা একটি শস্যবীজ যাহা সাতটি শীষ উৎপাদন করে, প্রত্যেক শীষে এক শত শস্যদানা, আল্লাহ যাহাকে ইচ্ছা বহু গুণে বৃদ্ধি করিয়া দেন, আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ” (২ঃ ২৬৯)।
ومضى الذين ينفقون أموالهم ابتغاء مرضات الله وتثبيتا من أنفسهم مثل جثة بربوة أصابها وابلات أكلها ضعفين قان لم يصبها والقط والله بما تعملون بصير”.
“যাহারা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভার্থে ও নিজেদের আত্মা বলিষ্ঠ করণার্থে ধনৈশ্য ব্যয় করে তাহাদের উপমা কোন উচ্চ ভূমিতে অবস্থিত একটি উদ্যান, যাহাতে বৃষ্টি হয়, ফলে তাহার ফলমূল দ্বিগুণ জন্মে। যদি মুষলধারে বৃষ্টি না হয়, তবে লঘু বৃষ্টিই যথেষ্ট। তোমরা যাহা কর আল্লাহ তাহার সম্যক দ্রষ্টা” (২ : ২৬৫)।
৮০৪
والذين يكنون الأهب والفضة ولا ينفقونها في سبيل الله فبشرهم بعذاب أليم. يوم يحمى عليها في نار جهنم فتكوى بها جباههم وجوهم وظهورهم هذا ما تم إنفسكم فوقوا ماكنتم تكنزون.
“আর যাহারা স্বর্ণ ও রৌপ্য পুঞ্জীভূত করে এবং উহা আল্লাহর পথে ব্যয় করে উহাদিগকে মর্মন্তু শাস্তির সংবাদ দাও। যেদিন জাহান্নামের অগ্নিতে উহা উত্তপ্ত করা হইবে এবং উহা দ্বারা তাহাদিগের ললাট, পার্শ্ব ও পৃষ্ঠদেশে দাগ দেওয়া হইবে, সেদিন বলা হইবে, ইহাই উহা যাহা তোমরা নিজদিগের জন্য পুঞ্জীভূত করিতে। সুতরাং তোমরা যাহা পুঞ্জীভূত করিয়াছিলে তাহা আস্বাদন কর” (৯ ও ৩৪-৩৫)।
উপরে বর্ণিত আল-কুরআনের আয়াতসমূহে বিধৃত নির্দেশাবলী যেমন নৈতিক অধিকার তেমনি রাষ্ট্রের অধিকার। যখন আল্লাহ পাক বলেন যে, ধনীর মালের মধ্যে দরিদ্রের অংশ রহিয়াছে তখন কোন দরিদ্রের সেই অংশ নির্ধারণ করিয়া এবং আদায় করিয়া দেওয়ার দায়িত্ব রাষ্ট্রের উপর বর্তায়। যখন আল্লাহ পাক অসহায় অক্ষম মানব মণ্ডলীকে নানা ভাগে বিভক্ত করিয়া তাহাদের প্রত্যেকের জন্য সাহায্য-সহযোগিতার নির্দেশ দেন তখন সেই নির্দেশ বাস্তবায়নের দায়িত্ব স্বভাবত রাষ্ট্রের উপর আসিয়া পড়ে।
প্রত্যেক ব্যক্তির অর্থনৈতিক নিরাপত্তা এবং তাহাদের সুখ-স্বাচ্ছন্দের জন্য ইসলাম যে বাস্তব কর্মপন্থা গ্রহণ করিয়াছে উহা সংক্ষেপে উল্লেখ করা হইল :
১। সমাজের প্রতিটি সদস্যকে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে পূর্ণভাবে ও ব্যাপকভাবে অংশগ্রহণের জন্য শিক্ষা দেওয়া হইয়াছে যাহাতে সে অপরের গলগ্রহ না হয়। এ সম্পর্কে আল্লাহ পাক বলেন?
فاذا قضيت الصلوة فانتشروا في الأرض .
“সালাত শেষে তোমরা আল্লাহর জমিনে রিযিকের সন্ধানে বাহির হইয়া পড়” (৬২ঃ ১০)।
(২) অর্থাৎ হালাল পন্থায় রিযিকের সন্ধানে বাহির হইয়া পড়িবার জন্য আল্লাহ পাক উক্ত আয়াতে নির্দেশ প্রদান করিয়াছেন। মানুষের কত চেষ্টা করা। মহান আল্লাহ বলেনঃ
bor
ليس الانسان الا ما سعی .
“মানুষ তাহাই পায় যাহার জন্য সে শ্রম সাধনা করে” (৫৩ ৪ ৩৯)। অর্থাৎ মানুষ তাহাদের চেষ্টার ফল অবশ্যই লাভ করিবে।
(৩) হালাল-হারাম ও জায়েয নাজায়েযের সীমা নির্ধারণ করো, চেষ্টা-সাধনা ও কর্মের ক্ষেত্র বা গণ্ডি নির্দিষ্ট করিয়া দেওয়া হইয়াছে। সূদ-ঘুষ, শরাব, জুয়া, চুরি, ছিনতাই ও চরিত্র বিধ্বংসী জিনিসপত্রের আমদানী, নিষিদ্ধ দ্রব্যাদির ব্যবসা, অন্যান্য ভেজাল, ওজনে কম দেওয়া, চোরাচালান মজুতদারি এবং এই জাতীয় অন্যান্য তৎপরতার উপর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করিয়া সমাজ হইতে নৈতিকতা বিরোধী কার্যকলাপের মূলোৎপাটন করা হইয়াছে এবং অর্থনৈতিক শোষণের সকল পথ রুদ্ধ করিয়া দেওয়া হইয়াছে।
(৪) অর্জিত সম্পদ শরীয়াতের নিষিদ্ধ খাতসমূহে ব্যবহারের নিষেধাজ্ঞা, অপব্যবহারের নিষেধাজ্ঞা, বিলাসবহুল ভোগবিলাসিতার নিষেধাজ্ঞা এবং সম্পদ ধ্বংস করিবার নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে উহা ভুল পথে ব্যয়িত হওয়া রুদ্ধ করা হইয়াছে। উহার সঠিক গতি উহার প্রকৃত হকদারের দিকে ফিরাইয়া দিয়া তাহাদেরকে অধিকার বঞ্চিত হওয়া হইতে রক্ষা করা হইয়াছে।
(৫) প্রত্যেক ব্যক্তির উপার্জনে অপরের অংশ নির্ধারণ করিয়া উহাকে সমষ্টিগতভাবে লালন-পালন ব্যবস্থার সহায়ক শক্তিতে পরিণত করা হইয়াছে। শরীয়তের দৃষ্টিতে তাহার নির্ধারিত দায়িত্ব ও কর্তব্য নিম্নে উল্লেখ করা হইল।
(ক) অত্যাবশ্যকীয় ভরণপোষণ ও পিতা-মাতা, স্ত্রী-পুত্র-কন্যা, দাদা-দাদী, নানা-নানী, নাতি-নাতনী, পৌত্র-পৌত্রী, ভাইবােন, ফুফু, ভাইঝি এবং রক্ত সম্পর্কীয় নিকট আত্মীয়-স্বজনের ভরণপোষণ।
(খ) পবিত্র কুরআনে নির্দেশিত অভাবী ব্যক্তিদের সাহায্যের জন্য যাকাত আদায়। যাকাতের অর্থ দ্বারা ফকীর, মিসকীন ও যাকাতের অর্থ আদায়কারীদের প্রয়োজন মেটানো হইবে। নওমুসলিমকে সাহায্য করিতে হইবে। দুশমনের কবল হইতে নির্যাতিত মুসলিমকে মুক্ত করিতে হইবে, দুস্থ অথবা মৃত ব্যক্তির ঋণ পরিশোধে ব্যয় করিতে হইবে। আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারী সৈনিক, শিক্ষার্থী এবং অন্যান্য অভাবগ্রস্তদের অভাব মোচনে ব্যয় হইবে। আর যে সকল পথিকের কোন নির্দিষ্ট ঠিকানা নাই তাহাদের সাহায্য করিতে হইবে।
৮০৬
(গ) অধিক সম্পদ ব্যয় ও নিকট আত্মীয়-স্বজনের তত্ত্বাবধানে যাকাত আদায়ের পরও বিত্তবানদের দায়িত্ব রহিয়াছে। তাহারা দুস্থ ও অভাবীদের সাহায্যার্থে। দান-খয়রাত করিবে। এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন :
ان في المال حقا سوى الزكاة .
“যাকাত ছাড়াও তোমাদের সম্পদে আরও অধিকার রহিয়াছে”।৬৩ (ঘ) ধারকর্য দেওয়া ও বিত্তশালীদের প্রতি ইসলামের নির্দেশ এই যে, তাহারা যেন প্রয়োজনের সময় ভোলা মনে অভাবীদের ঋণ প্রদান করে এবং কোন জিনিস ধার চাহিলে উহা প্রদানে যেন অসম্মত না হয়। কোন মানুষের জন্য শোভনীয় নহে যে, তাহার নিকট ঋণ চাহিতে আসিলে ঋণ প্রদানের সামর্থ্য থাকা সত্বেও সে তাহাকে উহা প্রদান অস্বীকার করে। ৬৪
(ঙ) উত্তরাধিকারের মাধ্যমে, ওসিয়াতের মাধ্যমে, মোহরানার মাধ্যমে, স্ত্রী-পুত্র পরিজনের ভরণপোষণের মাধ্যমে সম্পত্তি অন্যের নিকট হস্তান্তরের মাধ্যম রহিয়াছে।
ধারা-১২৯০ সরকার কর্তৃক অর্থনৈতিক নিরাপত্তা প্রদান জনগণের অর্থনৈতিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সরকারের দায়িত্ব রহিয়াছে।
বিশ্লেষণ
(ক) অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করিতে রাষ্ট্রের দায়িত্ব সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সা) বলিয়াছেন।
أنا ولى من الأولى له.
“যাহার অভিভাবক নাই আমি তাহার অভিভাবক”। অন্যত্র বলা হইয়াছে, “যাহার অভিভাবক নাই রাষ্ট্রই তাহার অভিভাবক”।৬৫
এইভাবে তিনি মৃত ব্যক্তির ঋণ পরিশোধ এবং তাহার রাখিয়া যাওয়া অসহায় সন্তান-সন্ততির লালন-পালনের দায়িত্ব সরকারের উপর ন্যস্ত করিয়া দিয়াছেন। রাসূলুল্লাহ (সা) বলিয়াছেন, যে মুসলমান ব্যক্তি ঋণ রাখিয়া মৃত্যুবরণ করিয়াছে। উহা পরিশোধের দায়িত্ব আমার উপর এবং তাহার পরিত্যক্ত সম্পত্তির মালিক হইবে তাহার ওয়ারিসগণ।৬৬
৮০৭
(খ) যাকাতের বিধান কায়েম করিয়া যাকাত দাতাহাদের নিকট হইতে যাকাত আদায় করিয়া প্রাপকদের নিকট পৌছাইয়া দেওয়া কিংবা তাহাদের কল্যাণে আদায়কৃত অর্থ ব্যয় করা।
(গ) রাষ্ট্র জনগণকে আল্লাহর নির্দেশিত অধিকারসমূহ আদায়ের ক্ষেত্রে সহযোগিতা করিবে। পুত্র তাহার পিতা-মাতার ভরণপোষণের ব্যবস্থা করিতে অস্বীকার করিলে রাষ্ট্র আইন প্রয়োগ করিয়া তাহাকে এই দায়িত্ব পালনে বাধ্য করিবে। কোন স্বামী তাহার স্ত্রীর ভরণপোষণ, তাহার মোহরানা কিংবা সন্তানদের প্রাপ্য আদায়ে অস্বীকৃত হইলে তাহাকে এই সকল অধিকার আদায়ে বাধ্য করিবে। অর্থাৎ রাষ্ট্র যাহার যে অধিকার রহিয়াছে তাহা আদায়ের নিশ্চয়তা প্রদান করিবে।
(ঘ) সমাজে অবৈধ উপার্জনের সকল উৎস রাষ্ট্র বন্ধ করিয়া দিবে, হালাল উপার্জনের পথ সম্প্রসারিত করিবে এবং অর্থনৈতিক শিক্ষা সম্পর্কিত পরিকল্পনার মাধ্যমে প্রত্যেক নাগরিককে হালাল উপার্জনের জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের সুযোগ দান করিয়া অর্থনৈতিক প্রচেষ্টায় অংশগ্রহণের যোগ্য করিয়া তুলিবে।
অর্থনৈতিক নিরাপত্তার এই অধিকার শুধুমাত্র মুসলমানদের জন্য নির্দিষ্ট নহে, বরং অমুসলিম নাগরিকগণও ইহাতে সমানভাবে অংশীদার। হযরত উমার (রা) এক ইহূদীকে ভিক্ষা করিতে দেখিয়া তাহাকে নিজ বাড়ীতে ডাকিয়া আনিলেন। প্রথমে তিনি তাহাকে ব্যক্তিগতভাবে কিছু দান করেন, অতঃপর বাইতুল মালের কোষাধ্যক্ষকে ডাকিয়া আনিয়া তাহার এবং তাহার মত অন্যান্য অভাবীদের দৈনিক ভাতা নির্ধারণের নির্দেশ প্রদান করিলেন। তিনি বলিলেন : আল্লাহর শপথ! আমরা তাহাদের যৌবনকালে (অর্থাৎ কর্মক্ষম থাকাকালে) তাহাদের হইতে কর আদায় করিয়া ভোগ করিব এবং তাহাদের বার্ধক্যে তাহাদেরকে অসহায় ছাড়িয়া দিব ইহা কখনও সুবিচার হইতে পারে না।৬৭
হযরত উমার (রা) তাঁহার খিলাফতকালে নাগরিকদের অর্থনৈতিক অধিকার প্রসংগে নিম্নলিখিত প্রয়োজনগুলি পূরণের দায়িত্ব সরকারের উপর অর্পণ করেন।
(ক) ভরণপোষণের প্রয়োজনীয় সামগ্রী, (খ) শীতকালীন ও গ্রীষ্মকালীন পোশাক এবং (গ) হজ্জ গমন এবং যুদ্ধের বাহন।৬৮।
অর্থনৈতিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে হযরত উমার ইবন আবদুল আযীয (র)-এর উক্তি উল্লেখযোগ্য। তিনি বলেন : আল্লাহর শপথ! আমি যদি জীবিত থাকি তাহা হইলে সানআর পার্বত্য অঞ্চলে মেষ চালকও স্বস্থানে বসিয়া তাহার অংশ পাইয়া যাইবে তাহার চেহারায় বিষন্নতার ছাপ ব্যতিরেকে।
bob
হযরত উমার ইবন আবদুল আযীয (র) ইরাকের গভর্নর আবদুল হামীদ ইবন আবদুর রহমানকে উদ্দেশ্য করিয়া লিখিয়াছিলেন?
“জনগণকে তাহাদের ভাতা দিয়া দাও। ইহার জবাবে আবদুল হামীদ লিখিয়াছিলেন, আমি জনগণের নির্ধারিত ভাতা পরিশোধ করিয়াছি এবং ইহার পরও বাইতুল মালে অর্থ উদ্বৃত্ত রহিয়াছে। ইহার জবাবে আব্দুল আজিজ (র) লিখিয়াছিলেন : এখন ঋণগ্রস্ত ব্যক্তিদেরকে তালাশ কর। তাহারা কোন অপব্যয় কিংবা অসৎ কাজের জন্য ঐ ঋণ গ্রহণ না করিয়া থাকিলে, বাইতুল মালের উদ্বৃত্ত তহবিল হইতে তাহাদের ঋণ পরিশোধের ব্যবস্থা কর।
ইহার জবাবে আবদুল হামীদ খলীফাকে আবার লিখিয়া জানাইলেন, আমি এইরূপ ঋণগ্রস্ত ব্যক্তির ঋণ পরিশোধ করিয়া দিয়াছি। অথচ এখনও বাইতুল মালে যথেষ্ট অর্থ অবশিষ্ট রহিয়াছে। জবাবে উমার ইবন আবদুল আযীয (র) লিখিলেনঃ এখন এমন অবিবাহিত যুবকের তালাশ কর যাহারা নিঃসম্বল এবং তাহারা পছন্দ করে যে, তুমি তাহাদের বিবাহের ব্যবস্থা করিয়া দাও, তাহা হইলে তুমি তাহাদের বিবাহের ব্যবস্থা করিয়া দাও এবং তাহাদের দায়িত্বে “অবশ্য দেনমোহর আদায় করিয়া দাও। জবাবে আবদুল হামীদ লিখিলেন : আমি তালাশ করিয়া যত অবিবাহিত যুবক পাইয়াছি তাহাদের বিবাহের বন্দবস্ত করিয়াছি। ইহার পরও বাইতুল মালে প্রচুর অর্থ মজুদ রহিয়াছে। জবাবে উমার ইবন আবদুল আযীয লিখিলেন : এখন এমন সকল লোক তালাশ কর যাহাদের উপর কর ধার্য করা হইয়াছে এবং তাহারা তাহাদের জমি চাষাবাদ করিতে পারিতেছে না। এই সকল যিম্মীদেরকে এত পরিমাণ ঋণ দাও যাহাতে তাহারা তাহাদের জমি ভালভাবে চাষাবাদ করিতে পারে। কেননা তাহাদের সহিত আমাদের সম্পর্ক এক-দুই বৎসরের নহে।৬৯
ধারা-১২৯১ শরীয়াত পরিপন্থী কাজ হইতে বিরত থাকিবার অধিকার প্রত্যেক ব্যক্তির শরীয়াত পরিপন্থী কাজ হইতে বাঁচিয়া থাকিবার অধিকার রহিয়াছে।
বিশ্লেষণ
রাষ্ট্রে বসবাসকারী প্রত্যেক ব্যক্তির এই অধিকার রহিয়াছে যে, তাহারা শরীয়াত বিরোধী কোন আদেশ পালন করিতে বাধ্য নহে। এই ধরনের আদেশের আনুগত্যে
৮০৯
অস্বীকৃতি ইসলামী আইনের দৃষ্টিতে অপরাধ নহে, বরং এই ধরনের নির্দেশ পালন অপরাধ কর্মে সাহায্য করিবার সামিল। কেননা পাপাচারের নির্দেশদাতা খােদ সর্বশক্তিমান আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করিবার অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হইবে এবং তাহার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করা যাইতে পারে। আদালত শুধুমাত্র আনুগত্যে অস্বীকৃতি জ্ঞাপনকারীর আইনগত নিরাপত্তাই বিধান করিবে না, বরং সাথে সাথে পাপাচারের নিদের্শদাতার বিরুদ্ধেও যথােপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করিবে। আল্লাহ পাকের আনুগত্য সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে উল্লেখ করা হইয়াছে?
يأيها الذين أمنوا أطيعوا الله وأطيعوا الرسول وأولي الأمر منكم فان
تنازعتم في شيء فردوه إلى الله والرسول .
“হে মুমিনগণ! তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আনুগত্য কর রাসূলের এবং তোমাদের মধ্যকার কর্তৃত্বসম্পন্ন লোকদের। কোন বিষয়ে তোমাদের মধ্যে মতভেদ ঘটিলে উহা উপস্থাপিত কর আল্লাহ ও রাসূলের নিকট” (সূরা নিসা : ৫৯)।
রাসূলুল্লাহ (সা) বলিয়াছেন।
لا طاعة لمخلوق في معصية الخالق .
“সৃষ্টিকর্তার নাফরমানীতে কোন সৃষ্টির আনুগত্য নাই”।৭০ তিনি আরও বলিয়াছেন “আল্লাহ ও রাসূলের নাফরমানীর আদেশ না দেওয়া পর্যন্ত শাসকদের নির্দেশ পালন করা জরুরী। তবে যদি সে আল্লাহ ও তাঁহার রাসূলের অবাধ্যতামূলক নির্দেশ দেয় তখন তাহার নির্দেশ মানিবে না এবং শুনিবে
“ ৭১
ইসলামী রাষ্ট্রে শাসকের আনুগত্য শর্তহীন নহে, বরং শর্তসাপেক্ষ। আনুগত্যের শর্তাবলী ও সীমারেখা নিম্নে উল্লেখ করা হইল :
(ক) প্রকৃত আনুগত্য করিতে হইবে আল্লাহর এবং এই আনুগত্য রাসূলুল্লাহ (সা)-সহ সকল মুসলমানের উপর ফরজ।
(খ) অতঃপর আনুগত্য করিতে হইবে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর। প্রকৃতপক্ষে ইহা কোন পৃথক আনুগত্য নহে, বরং আল্লাহর আনুগত্যেরই বাস্তব রূপ। রাসূলুল্লাহ (সা)-এর আনুগত্য ছাড়া আল্লাহর আনুগত্য করিবার কোন পথ নাই। এইজন্য পবিত্র কুরআনে বলা হইয়াছে?
من يطع الرسول فقد أطاع الله.
“কেহ রাসূলের আনুগত্য করিলে সে তো আল্লাহরই আনুগত্য করিল” (৪ ও ৮০)।
৮১০
প্রথম প্রকার আনুগত্যের ন্যায় এই দ্বিতীয় আনুগত্য উচু নিচু সাধারণ নাগরিক ও সরকার প্রধান নির্বিশেষে সকল মুসলমানের উপর ফরজ। ‘
(গ) আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্যের পর তৃতীয় পর্যায়ে আনুগত্য হইতেছে সাহেবে আমর (২l usL০) অর্থাৎ শাসনকর্তার প্রতি। কিন্তু এই আনুগত্য উপরোক্ত দুই সত্তার (আল্লাহ ও রাসূলের) আনুগত্যের ন্যায় শর্তহীন নহে এবং উহা একটি মৌলিক শর্তের সহিত সংশ্লিষ্ট। উহা হইতেছে স্বয়ং শাসনকর্তাও সাধারণ নাগরিকদের সহিত প্রথমোক্ত দুই সত্তার আনুগত্য করিতে সমভাবে বাধ্য।
(ঘ) শাসনকর্তা ও সাধারণ মুসলমানের মধ্যে কোন বিষয়ে মতভেদ দেখা দিলে আল্লাহর কিতাব ও রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর সুন্নাহ মোতাবেক মীমাংসা করিতে হইবে। আনুগত্যের ব্যাপারে ইসলামের এই মৌলিক দফার সঙ্গেই মুসলমানদিগকে এই সুস্পষ্ট নির্দেশ দেওয়া হইয়াছে যে, তাহারা যেন নফসের দাস, বিপর্যয় সৃষ্টিকারী স্বৈরাচারি জালিম এবং সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধ-এর পরিপন্থী কাজে লিপ্ত ব্যক্তির আনুগত্য কখনও না করে। এই সম্পর্কে
আল্লাহ পাক পবিত্র কুরআনে স্পষ্টভাবে কয়েকটি আয়াতে উল্লেখ করিয়াছেন।
ولا تطع من أغفلنا قلبه عن ذكرنا واتبع هواه وكان أمره فرطا .
“তুমি তাহার আনুগত্য করিও না যাহার চিত্তকে আমার স্মরণে অমনোযোগী করিয়া দিয়াছি, যে তাহার খেয়াল-খুশির অনুসরণ করে ও যাহার কার্যকলাপ সীমা অতিক্রম করে” (১৮ঃ ২৮)।
ولا تطيعوا أمر المحترفين الذين يفسدون في الأرض ولا يصلحون .
. “এবং তোমরা সীমালংঘনকারীদিগের আদেশ মান্য করিও না, যাহারা
পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করে এবং শান্তি স্থাপন করে না” (২৬ : ১৫১-২)।
ولا تطع منهم إثما أو كفورا .
“এবং উহাদিগের মধ্যে যে পাপিষ্ঠ অথবা কাফির, তুমি তাহার আনুগত্য করিও না” (সূরা দাহর : ২৪)।
ولا تطع كل حلاف مهين . هماز مشاء بنميم. مماع للخير ممتد
بعد ذلك نيم . أن كان ذا مال وبنين . إذا تتلى عليه
اثيم. تم أيتنا قال أساطير الأولين
৮১১
“এবং তুমি অনুসরণ করিও না তাহার যে কথায় কথায় শপথ করে, যে লাঞ্ছিত, পশ্চাতে নিন্দাকারী, যে একের কথা অপরের নিকট লাগাইয়া বেড়ায়, যে কল্যাণের কাজে বাধা দান করে, যে সীমালংঘনকারী, পাপিষ্ঠ, রুঢ় স্বভাব এবং তদুপরি কুখ্যাত। সে ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে সমৃদ্ধশালী। উহার নিকট আমার আয়াতসমূহ আবৃতি করা হইল সে বলে, ইহা তো সেকালের উপকথা মাত্র” (সূরা কালাম : ১০-১৫)।
আমীর যখনই প্রথম দুই প্রকার আনুগত্য হইতে মুক্ত হইয়া নিজের মনমত কাজ করিবে তখনই তাহার আনুগত্য পাওয়ার অধিকার রহিত হইয়া যাইবে। মুসলমানদেরকে তাহার আনুগত্যের পরিবর্তে প্রকাশ্যভাবে তাহাকে প্রত্যাখ্যান করিতে হইবে। এইভাবে প্রকাশ্যে তাহাকে প্রত্যাখ্যান করা তাহাদের অপরিহার্য কর্তব্য। এই সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সা) স্পষ্ট ঘোষণা করিয়াছেন?
لا طاعة في المعصية.
পাপ কাজে কোন আনুগত্য নাই”।৭২ আনুগত্য লাভের অধিকার রহিত হইয়া যাওয়ার অর্থ হইতেছে শাসকের এখন আর নির্দেশ দানের কোন অধিকার নাই। তাহার যাবতীয় এখতিয়ার রহিত হইয়া গেল। তাহার কোন নির্দেশেরই এখন আর আইনগত মর্যাদা নাই। তাহাকে অপসারিত করিয়া অন্য কাহাকে নির্বাচিত করিয়া ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করিবার অধিকার জনসাধারণের রহিয়াছে। সে যদি বিদ্রোহ ও অবাধ্যতায় এতটা অগ্রসর হইয়া যায় যে, নামায পড়া পর্যন্ত ছাড়িয়া দিয়াছে, তবে তাহার বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করিবারও অনুমতি রহিয়াছে। হাদীসে উল্লেখ রহিয়াছে, তোমাদের উপর এমন লোকও শাসনকার্য পরিচালনা করিবে যাহাদের কিছু কাজ তোমরা ভাল দেখিবে আবার কিছু খারাপ কাজও দেখিবে। যাহারা তাহাদের খারাপ কাজের বিরুদ্ধে অসন্তোষ প্রকাশ করিবে তাহারা দায়িত্বমুক্ত এবং যাহারা সেগুলিকে অপছন্দ করিবে তাহারাও ক্ষমা পাইবে। কিন্তু যে সকল লোক উহাতে সন্তুষ্টি প্রকাশ করিবে এবং তাহার অনুসরণ করিবে তাহারা অপরাধী হিসাবে গণ্য হইবে। সাহাবায়ে কিরাম আরজ করিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! যখন এমন শাসকের আবির্ভাব হইবে তখন কি আমরা তাহার বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করিব না? উত্তরে রাসূলুল্লাহ (স) বলিলেন :
, যতক্ষণ পর্যন্ত তাহারা নামায কায়েম করিবে। ৭৩।
হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রা) খলীফা নির্বাচিত হওয়ার পর আনুগত্যের সীমারেখা স্মরণ করাইয়া দিয়া তাঁহার ভাষণে বলিয়াছিলেন, যতক্ষণ আমি আল্লাহর ও
৮১২
তাহার রাসূলের আনুগত্য করিব ততক্ষণ তোমরা আমার আনুগত্য করিবে। কিন্তু আমা হইতে এমন কোন আচরণ যদি প্রকাশ পায় যাহাতে আল্লাহ ও তাঁহার রাসূলের নাফরমানী হয়, তখন আমার আনুগত্য করা তোমাদের উপর জরুরী নহে।৭৪
হযরত উমার ফারুক (রা) তাহার এক ভাষণে উল্লেখ করিয়াছেন, “শাসকের সর্বপ্রধান কর্তব্য হইতেছে ও জনসাধারণ আল্লাহর অর্পিত দায়িত্ব ও কর্তব্য যথাযথ পালন করিতেছে কি না তাহার প্রতি লক্ষ্য রাখা। আমি তোমাদিগকে আল্লাহর আদেশ পালনের নির্দেশ দেই এবং সেই সকল বিষয় হইতে বিরত রাখিব যাহা হইতে আল্লাহ পাক বিরত থাকিতে বলিয়াছেন। আমি চাই আল্লাহর নির্দেশ দূরের ও নিকটের সকলেই মানিয়া চলুক।৭৫
হযরত উমার ফারুকের খিলাফতকালে ইরাক বিজয়ের পর অনেক লোক কুরআনে আহলে কিতাব নারীদের বিবাহ করিবার অনুমোদনের অধীনে খৃস্টান মেয়েদের বিবাহ করে। হযরত উমার (রা) হুযায়ফা ইবনুল ইয়ামান (রা)-কে লিখিয়া পাঠান, আমি ইহা পছন্দ করি না। জবাবে হযরত হুযায়ফা (রা) লিখিয়া পাঠান, ইহা কি আপনার ব্যক্তিগত অভিমত না শরীয়াতের নির্দেশ? উমার (রা) লিখিলেন, ইহা আমার ব্যক্তিগত অভিমত। হুযায়ফা (রা) লিখিয়া জানান, আপনার ব্যক্তিগত মতের আনুগত্য করা আমাদের জন্য জরুরী নহে।৭৬
হযরত আলী (রা) এক ভাষণে উল্লেখ করিয়াছেন, “আল্লাহর আনুগত্য করা অবস্থায় আমি তোমাদিগকে যে নির্দেশ প্রদান করি উহা পালন করা তোমাদের জন্য ফরজ, চাই উহা তোমাদের পছন্দ হউক বা না হউক। আল্লাহর অবাধ্য অবস্থায় কোন নির্দেশ দিলে পাপ কাজে আমার কোন আনুগত্য নাই। আনুগত্য শুধুমাত্র ন্যায় কাজে আনুগত্য শুধুমাত্র ন্যায় কাজে আনুগত্য শুধুমাত্র ন্যায় কাজে”।৭৭
উলিল আমর (শাসন কর্তৃপক্ষ)-এর এই শর্ত সাপেক্ষে আনুগত্বের দরুন আল্লাহ ও রাসূলের নির্ধারিত অধিকারসমূহের উপর হস্তক্ষেপ করিবার কোন অবকাশ তাহাদের নাই। তাহাদের আনুগত্য সেই সময় পর্যন্ত অপরিহার্য যতক্ষণ তাহারা এই অধিকারসমূহের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করিবে এবং ইহার পরিপন্থী কোন পদক্ষেপ গ্রহণ না করিবে। শাসক এই নীতি লংঘন করিলে জাতি তাহার আনুগত্য হইতে মুক্ত হইয়া যাইবে এবং তাহাকে খিলাফতের আসন হইতে অপসারণের অধিকারী হইবে। আনুগত্যের এই শর্তাবলী ও সীমারেখা শাসক শ্রেণীর মোকাবিলায় সাধারণ নাগরিকদের মৌলিক অধিকার সংরক্ষণের এক মজবুত নিশ্চয়তা প্রদান করে।
৮১৩
ধারা-১২৯২
সভা-সমিতির অধিকার প্রত্যেক ব্যক্তির স্বাধীনভাবে সভা-সমিতি করিবার অধিকার রহিয়াছে।
বিশ্লেষণ
রাষ্ট্রের প্রত্যেক ব্যক্তি “আমর বিল মারূফ ও নাহি আনিল মুনকার” (সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের প্রতিরোধ)-এর মৌলিক শর্তের অধীনে সভা-সমিতি করিবার অধিকারী। আল্লাহ পাক পবিত্র কুরআনে মানব জীবনের মুখ্য উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলেন?
كنتم خير أمة أخرجت للناس تأمرون بالمعروف وتنهون عن المنكر
وتؤمنون بالله .
. “তোমরা সর্বোত্তম জাতি, মানবজাতির হেদায়াত ও সংশোধনের জন্য তোমাদের আবির্ভাব ঘটানো হইয়াছে। তোমরা ন্যায়ের আদেশ দিবে, অন্যায়ের প্রতিরোধ করিবে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান রাখিবে” (৩ঃ১১০)।
ইহা হইতেছে সমগ্র মুসলিম জাতির সামষ্টিক দায়িত্ব। কিন্তু তাহারা যদি সম্মিলিতভাবে একাগ্র চিত্তে মনোযোগের সহিত এই দায়িত্ব পালন না করে, তাহা হইলে অন্তত তাহাদের মধ্যে এমন একটি প্রাণবন্ত ও দায়িত্বশীল দল বর্তমান থাকা উচিত যাহারা এই কাজের জন্য নিজদিগকে উৎসর্গ করিবে। এ সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ পাক বলেন?
ولتكن منكم أمة يدعون الى الخير ويأمرون بالمعروف وينهون
عن المنكر .
“তোমাদের মধ্যে অবশ্যই এমন একটি দল থাকা উচিত যাহারা কল্যাণের দিকে আহ্বান করিবে, সৎ কাজের নির্দেশ দিবে এবং অসৎ কাজের প্রতিরোধ
করিবে” (৩ঃ ১০৪)।
যদি ইসলামী রাষ্ট্রে কতিপয় লোক ন্যায়ের আদেশ ও অন্যায়ের প্রতিরোধের দায়িত্ব পালনের জন্য নিজেদেরকে কোন সুশৃংখল সংগঠনের সদস্য করিয়া লইতে চায় এবং ইহার নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের জন্য তাহারা সাংগঠনিক প্রয়োজনীয়তা অথবা
৮১৪
জনসাধারণের সহিত সম্পর্ক সৃষ্টির জন্য ঐক্যবদ্ধ হইতে চায়, তাহা হইলে তাহাদের সেই অধিকার থাকিবে। নিজেদের ন্যায়সংগত অধিকারের সংরক্ষণ, অভিযোগ খণ্ডন এবং সমস্যার সমাধানের জন্য প্রতিষ্ঠিত সংগঠন এবং সেই সংগঠনের সভা-সমাবেশের উপরও এই নীতি কার্যকর হইবে। তবে শর্ত থাকে যে, কল্যাণের বিস্তার ও অকল্যাণের প্রতিরোধ করাই সেই সাংগঠনিক তৎপরতা ও সভা-সমাবেশের মূল লক্ষ্য হইতে হইবে। আল্লাহ পাক পবিত্র কুরআনে আরও বলিয়াছেন?
الذين ان منهم في الأرض أقاموا الصلوة وأتوا الزكوة وامروا
بالمعروف ونهو عن المنكر .
* “আমরা ইহাদিগকে (মুমিনদিগকে) পৃথিবীতে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করিলে তাহারা নামায কায়েম করে, যাকাত দেয়, সৎ কাজের নির্দেশ দেয় এবং অসৎ কাজ হইতে বিরত রাখে” (২২ : ৪১)।
এই সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজে বাধা প্রদান করা সকলের নৈতিক দায়িত্ব হইলেও এই কাজের জন্য নিশ্চয় কিছু নিবেদিত ব্যক্তিগোষ্ঠী বা দল থাকিতে পারে। এই কথার দিকে ইশারা করিয়া আল্লাহ পাক ইতিপূর্বে বলিয়াছেন যে, তোমাদের মধ্যে নিশ্চয় এমন একটি দল থাকা উচিত যাহারা এই দায়িত্ব পালন করিবে। সুতরাং বুঝা যায় যে, প্রত্যেক ব্যক্তির সভা-সমিতি করিবার অধিকার রহিয়াছে।
ধারা-১২৯৩ রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের অধিকার প্রত্যেক ব্যক্তির রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের অধিকার রহিয়াছে।
বিশ্লেষণ
ইসলামের খিলাফত (রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়া) যেহেতু কোন বিশেষ ব্যক্তি, দল, গোত্র কিংবা শ্ৰেণীকে নহে, বরং সামষ্টিকভাবে সমগ্র মুসলিম উম্মাহকে দান করা হইয়াছে, তাই আল্লাহর প্রতিনিধি হওয়ার কারণে প্রত্যেক মুসলমানের রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের পূর্ণ অধিকার রহিয়াছে। এইজন্য ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থা পরিচালনার জন্য কুরআন মজীদ বিশেষ নীতিমালা স্থির করিয়াছে। এই বিষয়ে আল্লাহ পাক পবিত্র কুরআনে উল্লেখ করিয়াছেন?
৮১৫
وامرهم شوری بینهم.
“তাহাদিগের যাবতীয় কার্যকলাপ পারস্পরিক পরামর্শের ভিত্তিতে চলিবে” (৩ঃ১৫৯)।
রাসূলুল্লাহ (সা) যাহার উপর সর্বদা ওহী অবতীর্ণ হইত, তিনি কোন বিষয়ে কাহারও সহিত পরামর্শের জন্য বাধ্য না হওয়া সত্বেও আল্লাহ পাক তাঁহাকে অন্যের সহিত পরামর্শের নির্দেশ প্রদান করিয়াছেন?
وشاورهم في الأمر.
“কাজে কর্মে তুমি তাহাদের (মুসলিমদের) সহিত পরামর্শ কর” (৩ঃ ১৫৯)।
(ক) জনসাধারণের জনপ্রতিনিধিদের সমালোচনা, তাহাদের সহিত মতপার্থক্য ও মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকিবে।
(খ) দেশের সার্বিক অবস্থা ও বিভিন্ন সমস্যা যথার্থভাবে জনগণের সামনে তুলিয়া ধরিতে হইবে, যাহাতে তাহারা সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিতে পারে এবং সঠিক পরামর্শ প্রদান করিতে পারে।
(গ) রাসূলুল্লাহ (সা) স্বয়ং নিদের্শদাতা (শাসক) ছিলেন। তিনি সরাসরি আল্লাহর নির্দেশ লাভ করিতেন। সুতরাং তিনি কাহারও সহিত কোন বিষয়ে পরামর্শের জন্য বাধ্য ছিলেন না। কিন্তু তাঁহাকে যেহেতু পরবর্তী কালের শাসকদের জন্য আম্দর্শ নমুনা হিসাবে গণ্য করা হইবে, তাই তাঁহার মারফতে পারস্পরিক পরামর্শ গ্রহণের ঐতিহ্য কায়েম করা হইয়াছে। তিনি প্রায়ই ছােট বড় ব্যাপারে সাহাবীগণের সহিত পরামর্শ করিতেন। এই সুন্নাত স্বয়ং আল্লাহ পাকের এতটা পছন্দনীয় ছিল যে, কোন কোন বিষয়ে আল্লাহ পাক রাসূলুল্লাহ (স)-কে পথনির্দেশ দেওয়ার পূর্বে সাহাবায়ে কিরামের অভিমতের অপেক্ষা করিতেন এবং তাহাদিগের মধ্যে কাহারও মত পছন্দনীয় হইলে ওহী নাযিলের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট সাহাবীর সম্মান ও হিম্মত বাড়াইয়া দিতেন এবং তাহার মতের অনুকূলে অনুমোদন দিতেন। সুতরাং বদর যুদ্ধের বন্দীদের বিষয়, মুনাফিকের জানা প্রসঙ্গ, পর্দা, মাদক দ্রব্যের অবৈধতা, মাকামে ইবরাহীমকে মুসল্লা (নামাযের স্থান) বানানো এবং বিশ্রামকালীন বিনা অনুমতিতে ঘরে প্রবেশের নিষিদ্ধতা ইত্যাদি বিষয়ে হযরত উমার (রা)-র অভিমত অনুসারে আয়াতসমূহ নাযিল হইয়াছে। একদা রাসূলুল্লাহ (সা) হযরত আবু বাকর (রা) ও হযরত উমার (রা)-কে সম্বােধন করিয়া বলিয়াছিলেন, কোন সমস্যা সমাধানে তোমরা দুইজন ঐক্যমতে পৌছিলে আমি উহাতে মতানৈক্য করিব না।৭৬
৮১৬
হযরত আলী (রা) বলেন, আমি আরজ করিলাম, “হে আল্লাহর রাসূল! আপনার পরে যদি এমন কোন সমস্যার উদ্ভব হয় যে সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে কিছু নাযিল হয় নাই এবং আপনার নিকট হইতেও কোন কিছু শুনা যায় নাই? তিনি বলিলেন, আমার উম্মতের ইবাদতগোজার লোকদিগকে একত্র করিবে এবং তাহাদের পারস্পরিক পরামর্শের জন্য বিষয়টি উপস্থাপন করিবে। কোন এক ব্যক্তির মতের ভিত্তিতে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিবে না”।৭৭।
রাসূলুল্লাহ (সা) পরামর্শের গুরুত্ব সম্পর্কে বলিয়াছেন, যে ব্যক্তি কোন কাজের ইচ্ছা করিয়া উহাতে পরামর্শ গ্রহণ করে, আল্লাহ পাক তাহাকে সঠিক বিষয়ের দিকে হিদায়াত দান করেন। অর্থাৎ যে কাজের পরিণতি তাহার জন্য মঙ্গলজনক সেই কাজের দিকে তাহার মনের গতি ফিরাইয়া দিবেন।
এক হাদীস ইমাম বুখারী (র) আল-আদাবুল মুফরাদে হযরত হাসান হইতে বর্ণনা করিয়াছেন। উহাতে তিনি পরামর্শ সংক্রান্ত আয়াত তিলাওয়াতের পরে উল্লেখ করিয়াছেন?
ماتشاور قوم قط إلا هوا فضل ما بحضرتهم.
“যখন কোন সম্প্রদায় পরামর্শক্রমে কাজ করে তখন তাহাদিগকে অবশ্যই সঠিক পথনির্দেশ দান করা হয়”।৭৮
এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ্ (সা) বলিয়াছেন, যত দিন পর্যন্ত তোমাদের শাসনকর্তা হইবে তোমাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম ব্যক্তি, তোমাদের বিত্তশালীরা দানশীল হইবে এবং তোমাদের কাজকর্ম পারস্পরিক পরামর্শক্রমে সম্পন্ন হইবে তত দিন ভূপৃষ্ঠে তোমাদের বসবাস করা অর্থাৎ জীবিত থাকা উত্তম। পক্ষান্তরে যখন তোমাদের শাসকবর্গ তোমাদের মন্দ ব্যক্তি হইবে, তোমাদের বিত্তশালীরা কৃপণ হইবে এবং তোমাদের কাজকর্ম নারীদের হাতে ন্যস্ত হইবে, তাহারা যেভাবে ইচ্ছা কাজ করিবে, তখন তোমাদের বসবাসের জন্য ভূপৃষ্ঠ অপেক্ষা ভূগর্ভই শ্রেয় হইবে।
হযরত উমার (রা) বলিয়াছেন?
خلافة الأ عن مشورة .
“পরামর্শকরণ ব্যতীত খেলাফত হইতে পারে না”। আলোচনা ও পরামর্শ করাকে ইসলামী রাষ্ট্রের জন্য একটি মৌলিক বিষয় হিসাবে মর্যাদা দেওয়া হইয়াছে। এমনকি রাষ্ট্রপ্রধান যদি কোন সময় পরামর্শের উর্দ্ধে চলিয়া যায় কিংবা এমন ধরনের লোকের সহিত পরামর্শের প্রবৃত্ত হয় যাহারা
৮১৭
শরীয়াতের দৃষ্টিতে পরামর্শের যোগ্য নহে, তবে সেই জাতীয় শাসককে অপসারণ করা সকলের জন্য জরুরী। পরামর্শ অপরিহার্য হইবার কারণে ইসলামী রাষ্ট্র এবং তাহার অধিবাসীবৃন্দের যে সুফল লাভ হইবে উহার অনুমান এইভাবে করা যায় যে, রাসূলুল্লাহ (সা) পরামর্শকে “রহমত” বলিয়া অভিহিত করিয়াছেন। ইবন আদী ও বায়হাকী (র) হযরত ইবন আব্বাস (র) হইতে বর্ণনা করিয়াছেন যে, পরামর্শ সংক্রান্ত আয়াতটি যখন নাযিল হয় তখন রাসূলুল্লাহ (সা) বলিয়াছেন, আল্লাহ ও তাঁহার রাসূলের জন্য পরামর্শের কোন প্রয়োজন নাই। কিন্তু আল্লাহ পাক এই পরামর্শ আমার উম্মতের জন্য রহমত সাব্যস্ত করিয়াছেন।
হযরত উমার (রা) ভূমি বণ্টন সম্পর্কে নিম্নোক্ত ভাষণ দান করেনঃ “আমি আপনাদিগকে শুধু এইজন্য কষ্ট দিতেছি যে, আমার কাঁধে আপনাদের বিষয়ে যে গুরুদায়িত্বের ভার অর্পণ করা হইয়াছে তাহা পালনে আপনারা আমার হাতকে শক্তিশালী করিবেন। আমি তো আপনাদের মতই একজন সাধারণ মানুষ। আজ আপনাদের অধিকার নির্ধারণ করিতে হইবে। কেহ কেহ আমার সহিত ভিন্নমত পোষণ করিয়াছেন, আবার কেহ বা ঐক্যমত পোষণ করিয়াছেন। আমি ইহা চাই না যে, আপনারা সর্বাবস্থায় আমার সিদ্ধান্তই গ্রহণ করিবেন। আপনাদের নিকট রহিয়াছে আল্লাহর কিতাব যাহা সত্য কথা বলে। আল্লাহর শপথ! আমি কাজে পরিণত করিবার উদ্দেশ্যে যদি কোন কথা বলিয়া থাকি তাহা হইলে উহাতে সত্যের
অনুসরণ ব্যতীত অন্য কোন উদ্দেশ্য নাই।৭৯
হযরত উমার (রা) বলিয়াছেন, “যে ব্যক্তি মুসলমানদের সহিত পরামর্শ ছাড়া নিজের অথবা অন্য কাহারও নেতৃত্ব মানিয়া লইবার আহবান জানাইবে, তোমাদের জন্য তাহাকে হত্যা না করা বৈধ নহে”।৮০।
হযরত উসমান (রা)-র শাহাদতের পর কতিপয় লোক হযরত আলী (রা)-কে খলীফা মনোনীত করিয়ে চাহিলে তিনি বলিলেন, “তোমাদের এই ব্যাপারে কোন এখতিয়ার নাই। ইহা করিবার অধিকার রহিয়াছে শূরার সদস্যবৃন্দের এবং যাহারা বদরের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করিয়াছেন তাহাদের। আহলে শূরা ও আহলে বদর যাহাকে খলীফা মনোনীত করিবেন তিনিই খলীফা নির্বাচিত হইবেন। সুতরাং আমরা একত্র হইব এবং এই ব্যাপারে চিন্তা ভাবনা করিয়া দেখিব।৮১
হযরত আবু মূসা আশয়ারী (রা) এই পরামর্শকেই খিলাফত ও রাজতন্ত্রের মধ্যে পার্থক্য বলিয়া অভিমত ব্যক্ত করিয়াছেন। তিনি বলিয়াছেন, “ইমারত (খিলাফত) হইতেছে পরামর্শের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান, আর তলোয়ারের জোরে যাহা হাসিল করা হয় তাহা রাজতন্ত্র”। ৮২
৮১৮
পারস্পরিক এই পরামর্শের নীতি সংশ্লিষ্ট সকলের অভিমত প্রকাশের পূর্ণ অধিকার সুনির্দিষ্ট করিয়া দিয়াছে। এই পরামর্শকে শুধুমাত্র শূরার নির্দিষ্ট সদস্যদের মধ্যে সীমাবদ্ধ করিয়া রাখা হয় নাই, বরং একজন সাধারণ নাগরিকও কুরআন-সুন্নাহর দলীল পেশ করিয়া শূরা ও রাষ্ট্রপ্রধানের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করিতে পারে। একজন বৃদ্ধা মহিলা নিজের এই অধিকার ব্যবহার করিয়া হযরত উমার ফারূক (রা)-কে মোহরানার পরিমাণ সীমিত করিবার ভুল সিদ্ধান্তের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করিয়াছিলেন এবং তিনি তৎক্ষণাৎ তাহার নির্দেশ প্রত্যাহার করিয়া নিয়াছিলেন।
ধারা-১২৯৪ চলাফেরা এবং দেশ ও বিদেশে বসবাসের অধিকার প্রত্যেক ব্যক্তির স্বদেশের সীমানায় চলাচল, বসতি স্থাপন, দেশত্যাগ এবং স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের অধিকার রহিয়াছে।
বিশ্লেষণ
রাষ্ট্রের প্রত্যেক নাগরিকের তাহার পছন্দ মাফিক যে কোন স্থানে বসবাস করিবার, প্রয়োজনবােধে দেশত্যাগ এবং স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের পূর্ণ অধিকার রহিয়াছে। কুরআন মজীদে সাধারণ নাগরিকদেরকে তাহাদের ঘরবাড়ী হইতে উচ্ছেদ করাকে চরম অন্যায় বলিয়া ঘোষণা করা হইয়াছে। বনী ইসরাঈলের বিশ্বাসঘাতকতা এবং তাহাদের অপকর্মের বর্ণনা প্রসংগে আল্লাহ পাক বলেন?
:ab, kabi…/
ديارهم تظاهرون عليهم بالاثم والعدوان وان يوم أرى فو وهو محرم عليكم إخراجهم (سورة البقرة – ۸۰) .
“তোমরাই তাহারা যাহারা অতঃপর একে অন্যকে হত্যা করিতেছ এবং তোমাদের এক দলকে স্বদেশ হইতে বহিস্কৃত করিতেছ, তোমরা নিজেরা তাহাদের বিরুদ্ধে অন্যায় ও সীমালংঘন দ্বারা পরস্পরের পৃষ্ঠপোষকতা করিতেছ এবং তাহারা যখন বন্দীরূপে তোমাদের নিকট উপস্থিত হয় তখন তোমরা মুক্তিপণ দাও। অথচ তাহাদের উচ্ছেদ তোমাদের জন্য অবৈধ ছিল” (২ : ৮৫)।
৮১৯
অনুরূপভাবে বাসস্থান ত্যাগ ও অন্য স্থানে গমনের স্বাধীনতাও আল্লাহ পাক তাঁহার বান্দাদেরকে প্রদান করিয়াছে।
الم تكن أرض الله واسعه فتهاجروا فيها النساء ۲۸) .
“দুনিয়া কি এমন প্রশস্ত ছিল না যেথায় তোরা হিজরত করিতে”?
ومن هاجر في سبيل الله يجد في الأرض مراغما كثيرا وسع.
“কেহ আল্লাহর পথে হিজরত করিলে সে দুনিয়ার বহু আশ্রয়স্থল এবং প্রাচুর্য লাভ করিবে” (৪ঃ ১০০)।
জিহাদ সম্পর্কিত আয়াতসমূহ যেমন পবিত্র কুরআনে সর্বত্রই ছড়াইয়া রহিয়াছে, তেমনি হিজরতের বর্ণনাও কুরআন পাকের অধিকাংশ সূরায় একাধিকবার বিবৃত হইয়াছে। এই সকল আয়াত একত্র করিলে জানা যায় যে, হিজরত সম্পর্কিত আয়াতসমূহে তিন রকমের বিষয়বস্তু বর্ণিত হইয়াছে : (১) হিজরতের ফযীলাত, (২) হিজরতের ইহলৌকিক ও পারলৌকিক বরকত এবং (৩) সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও দারুল কুফুর হইতে হিজরত না করিবার কারণে শাস্তি বাণী। ৮৩ হিজরতের ফযীলাত সম্পর্কে আল্লাহ পাক বলেনঃ
إن النيين أموا والذين هاجروا وجهوا في سبيل الله أولئك
يرجون رحمة الله .
“যাহারা ঈমান আনিয়াছে ও হিজরত করিয়াছে এবং আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করিয়াছে তাহারা আল্লাহ তায়ালার অনুগ্রহপ্রার্থী” (২ঃ ২১৮)।
الذين امنوا وهاجروا وجهوا في سبيل الله بأموالهم
وانفسهم أعظم درجة عند الله وأولئك هم الفائزون .
“যাহারা ঈমান আনিয়াছে ও হিজরত করিয়াছে এবং আল্লাহর পথে জান ও মাল দ্বারা জিহাদ করিয়াছে, তাহারা আল্লাহর নিকট বিরাট পদমর্যাদার অধিকারী এবং তাহারাই সফলকাম” (সূরা তওবা ও ২০০)।
ومن يخرج من بيته مهاجرا إلى الله ورسوله ثم يدركه الموت
فقد وقع أجره على الله .
“যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁহার রাসূলের উদ্দেশ্যে নিজ গৃহ হইতে বাহির হইয়া পথেই মৃত্যুবরণ করে, তাহার সওয়াব আল্লাহর যিম্মায় সাব্যস্ত হইয়া যায়” (সূরা নিসা : ১০০)।
৮২০
তবে হিজরত একমাত্র আল্লাহর জন্যই হওয়া চাই, দুনিয়ার কোন উদ্দেশ্যে নহে। রাসূলুল্লাহ (সা) বলিয়াছেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁহার রাসূলের জন্য হিজরত করে তাহার হিজরত আল্লাহ ও তাঁহার রাসূলের জন্যই হইবে” অর্থাৎ ইহাই বিশুদ্ধ হিজরত, ইহার ফযীলাত ও বরকতই কুরআনে বর্ণিত হইয়াছে। ৮৪
হযরত আলী (রা) খারিজীদের স্বাধীনভাবে চলাফেরা সম্পর্কে বলিয়াছেন, তোমরা স্বাধীন, তোমরা মুক্ত, যেথায় ইচ্ছা বসবাস করিতে পার। অবশ্য আমাদের ও তোমাদের মধ্যে এই প্রতিশ্রুতি থাকিল যে, তোমরা অবৈধ পন্থায় কাহাকেও হত্যা করিবে না, বিপর্যয় সৃষ্টি করিবে না এবং কাহারও প্রতি অন্যায়-অত্যাচার চালাইবে না।
হিজরতের মূল উদ্দেশ্যে হইতেছে নির্যাতন হইতে বাঁচিবার জন্য ভিনদেশে রাজনৈতিক আশ্রয় লাভের অধিকার। রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা এবং ভোগের অধিকারের একটি পূর্বশর্ত হইতেছে নির্যাতন হইতে মুক্তি। স্বাভাবিক ও শান্তিপূর্ণ অবস্থায় ভিনদেশে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা ও ভোগের অধিকার থাকে না।
ইসলামের প্রথম যুগে হযরত মুহাম্মাদ (সা) যখন সবেমাত্র ইসলাম প্রচার আরম্ভ করিলেন তখনই মক্কার কায়েমী স্বার্থবাদীদের পক্ষ হইতে তাহার উপর নামিয়া আসিল চরম বিপর্যয়। শুধুমাত্র হযরত মুহাম্মাদ (সা)-এর উপরই নহে, বরং যাহারা ঈমান আনিয়াছিল তাহাদের সকলের উপর নির্যাতনের মাত্রা এতটা ভয়াবহ ছিল যে, উহা সহ্য করা কাহারও পক্ষে সম্ভব ছিল না। মক্কাতে ইসলামের প্রসারের সাথে সাথে তাহাদের উপর অত্যাচারের মাত্রাও বৃদ্ধি পাইতে থাকে। মক্কাবাসীদের জুলুম অত্যাচার হইতে খােদ নবী (সা) রেহাই পান নাই। মক্কাবাসীদের এই জুলুম-নির্যাতনের মাত্রা যখন সীমা ছাড়াইয়া গিয়াছিল তখনই মহানবী (সা) তাঁহার সঙ্গী-সাথীদেরকে হিজরত করিবার অনুমতি প্রদান করিলেন। নির্যাতিত নওমুসলিমগণ প্রথমে আবিসিনিয়া তথা বর্তমান ইথিওপিয়ায় হিজরত করেন। দ্বিতীয় দফায় মুসলমানরা হিজরত করেন ইয়াসরিব বা মদীনায়।
ইসলাম নির্যাতন হইতে মুক্তিলাভের জন্য রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা ও ভোগের অধিকারকে মূল্যবান অধিকার বলিয়া স্বীকৃতি প্রদান করিয়াছে। কারণ ইসলামের দৃষ্টিতে প্রত্যেক মানুষ এই বিশ্বের অধিবাসী। আবার প্রত্যেক মানুষ একটি অঞ্চলের অধিবাসী। এই অঞ্চল ভৌগোলিক হইতে পারে, যেমন এই পৃথিবী এখন সাতটি মহাদেশে বিভক্ত। এই অঞ্চল আবার রাজনৈতিকও হইতে পারে, যেমন বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তান। এই রাজনৈতিক অঞ্চলগুলি দেশ নামে পরিচিত।
৮২১
যেভাবেই অঞ্চল চিহ্নিত করা হউক না কেন এবং এই আঞ্চলিকতা যতই প্রয়োজনীয় হউক না কেন, মানুষ যে বিশ্বের অধিবাসী এই কথাকে অস্বীকার করা অসত্যকে প্রশ্রয় দেওয়ার সামিল।
ধারা-১২৯৫
জাতীয়তার অধিকার (ক) প্রত্যেক ব্যক্তিরই একটি জাতীয়তার অধিকার রহিয়াছে।
(খ) কোন ব্যক্তিকে যথেচ্ছভাবে তাহার জাতীয়তা হইতে বঞ্চিত করা যায় না।
বিশ্লেষণ
মানুষের মৌলিক এবং প্রধান পরিচয় হইতেছে তাহার জাতীয়তা। মানুষ বিশ্বমানব সম্প্রদায়ের অংশ। বিশ্বসভায় মানুষের পরিচয় হইতেছে তাহার জাতীয়তার মাধ্যমে। জাতীয় পরিচয়েই মানুষ আবির্ভূত হয় বিশ্বের দরবারে। এই পরিচয় হরণ করা হইলে মানুষের একটি প্রধান সত্তাকে হরণ করা হয়। জাতীয়তার অধিকারকে ইসলাম সম্মান প্রদর্শন করে। অর্থাৎ ইসলামের দৃষ্টিতে মানুষ হইতেছে মানবজাতির অন্তর্ভুক্ত। জাতীয়তা সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ পাক বলেন :
كان الناس أمة واحدة فبعث الله النبي مبشرين ومنذرين
وأنزل معهم الكتاب بالحق ليحكم بين الناس فيما أختلفوا فيه .
‘
“সমস্ত মানুষ ছিল একই উম্মতভুক্ত। অতঃপর আল্লাহ নবীগণকে সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেন। মানুষের মধ্যে যে বিষয়ে মদভেদ সৃষ্টি হইয়াছিল তাহার মীমাংসার জন্য তিনি তাহাদের সহিত সত্যসহ কিতাব অবতীর্ণ করেন” (২ ও ২১৩)।
ايها الاس انا خلقكم من ذكر وأنثى وجعلكم شعوبا
وقبائل لتعارفوا إن أكرمكم عند الله أتقكم إن الله عليم خبير”
“হে মানুষ! আমি তোমাদিগকে সৃষ্টি করিয়াছি এক পুরুষ ও এক নারী হইতে, পরে তোমাদিগকে বিভক্ত করিয়াছি বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে, যাহাতে তোমরা একে অপরের সাথে পরিচিত হইতে পার। তোমাদিগের মধ্যে সেই ব্যক্তিই আল্লাহর
৮২২
নিকট অধিক মর্যাদা সম্পন্ন যে অধিক মুত্তাকী। আল্লাহ সবকিছু জানেন সমস্ত খবর রাখেন” (৪৯ ও ১৩)।
ইসলামের দৃষ্টিতে সমগ্র মানবজাতি এক, তবে তাহাদের মধ্যে পরিচয় নির্দেশ করিবার জন্য বর্ণ, গোত্র ও জাতিগত বিভিন্নতা স্বাভাবিক ও যৌক্তিক। জাতীয়তার এই অধিকার সংরক্ষণের অধিকার সকলেরই রহিয়াছে। কেহ তাহা হরণ করিতে পারে না।
ধারা—১২৯৬ বিবাহ ও পরিবার গঠনের অধিকার সকল পুরুষ ও নারীর বিবাহ ও পরিবার গঠনের অধিকার রহিয়াছে।
বিশ্লেষণ
বিবাহ ও পরিবার গঠন প্রত্যেকের মৌলিক অধিকার। এই অধিকার সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে বলা হইয়াছে?
وأنكحوا الأيامى منكم والملحنين من عبادكم وامائكم إن
يكونوا فقراء يغنيهم الله من فضله والله واسع عليم (۳۲) .
“তোমাদের মধ্যে যাহারা “আয়্যিম” তাহাদের বিবাহ সম্পাদন কর এবং তোমাদিগের দাস ও দাসীদের মধ্যে যাহারা সৎ তাহাদিগেরও। তাহারা অভাবগ্রস্ত হইলে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাহাদিগকে অভাবমুক্ত করিয়া দিবেন। আল্লাহ তো প্রাচুর্যময় সর্বজ্ঞ” (২৪ : ৩২)।
Ly। শব্দটি -এর বহুবচন, অর্থ যে পুরুষের স্ত্রী নাই অথবা যে নারীর স্বামী নাই, উহারা অবিবাহিত, বিপত্নীক অথবা বিধবা যাহাই হউক না কেন।৮৬ বিবাহ সম্পর্কে আল্লাহ পাক বলেনঃ
وهو الذي خلق من الماء بشرا فجعله نسبا وصهرا وكان ر
• “এবং তিনিই মানুষকে সৃষ্টি করিয়াছেন পানি হইতে, অতঃপর তিনি তাহার বংশগত ও বৈবাহিক সম্বন্ধ স্থাপন করিয়াছেন। তোমার প্রতিপালক সর্বশক্তিমান” (২৫ : ৫৪)।
৮২৩
এই আয়াতে আল্লাহ পাক বলিয়াছেন, মানুষে মানুষে সম্বন্ধ এবং সম্পর্ক হয় দুই পদ্ধতিতে। ব্যক্তিগতভাবে সম্পর্ক হইতে পারে, যেমন ভাই বােনের সম্বন্ধ এবং বিবাহগতভাবে সম্বন্ধ হইতে পারে, যেমন স্ত্রী, শ্যালক-শ্যালিকা ইত্যাদি। বৈবাহিক সম্পর্ক তাই কুরআনের বিধানের উপর প্রতিষ্ঠিত।
هو الذي خلقكم من نفس واحدة وجعل منها زوجها ليشن الالماتشاها حملت حملا خفيفاقم به قلما أثقلت دعوا الله ربما لن أتيتنا صالحا لتكون من الشاكرين
: (\A৭ Gll) “তিনিই তোমাদিগকে এক ব্যক্তি হইতে সৃষ্টি করিয়াছেন ও উহা হইতে তাহার সংগীনি সৃষ্টি করেন, যাহাতে সে তাহার নিকট শান্তি পায়। অতঃপর যখন সে তাহার সহিত সংগত হয় তখন সে এক লঘু গর্ভধারণ করে এবং ইহা লইয়া সে অনায়াসে চলাফেরা করে। গর্ভ যখন গুরুভার হয় তখন তাহারা উভয়ে তাহাদের প্রতিপালক আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করে, যদি তুমি আমাদিগকে এক পূর্ণাঙ্গ সন্তান দাও তবে তো আমরা কৃতজ্ঞ থাকিবই” (৭ঃ ১৮৯)।
ومن أيته أن خلق لكم من أنفسكم ازوجا ل توا اليها وجعل
بينكم مودة ورحمة ان في ذلك لآيات لقوم يتفكرون (الروم – ۲۱).
“এবং তাঁহার নিদর্শনাবলীর মধ্যে রহিয়াছে, তিনি তোমাদিগের জন্য তোমাদিগের মধ্যে হইতে সৃষ্টি করিয়াছেন তোমাদের সংগিনীদিগকে যাহাতে তোমরা উহাদের নিকট শান্তি পাও এবং তোমাদিগের মধ্য পারস্পরিক ভালবাসা ও দয়া সৃষ্টি করিয়াছেন। চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য ইহাতে অবশ্যই বহু নিদর্শন রহিয়াছে”।
يامعشر
عن عبد الله بن مسعود قال قال رسول الله الشباب من استطاء منكم الباءة فليتزوج قائمه اغض للبصر وأحصن للفرج ومن لم يستطع فعليه بالصوم فانه له وجاء
• (ale ) “হযরত আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ (রা) হইতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) বলিয়াছেন, হে যুবক সম্প্রদায়! তোমাদের মধ্যে যে কেহ সামর্থ্য রাখে বিবাহের সে
৮২৪
যেন বিবাহ করে। কেননা উহা চক্ষুকে হেফাজত করে আর রক্ষা করে লজ্জাস্থান। আর যে ক্ষমতা রাখে না বিবাহের তাহার উচিত রোযা রাখা। কেননা উহা তাহার নিয়ন্ত্রণ শক্তি”।৮৭
على عثمان بن
عن سعد بن ابی وقاص قال رد رسول الله
مظعون التبل.
“সাদ ইবন আবু ওয়াক্কাস (রা) বর্ণনা করিয়াছেন, রাসূলুল্লাহ (সা) অনুমতি দিলেন না উসমান ইবনে মাযউনকে বিবাহ না করিবার এবং যদি তিনি অনুমতি দিতেন তাহাকে তবে আমরা নিশ্চয় খােজা হইতাম”।
لم تر للمتحابين مثل النكاح .
“যাহারা একে অপরকে ভালবাস তাহাদের জন্য তুমি বিবাহ অপেক্ষা উদ্ধৃষ্টতর কিছুই পাইবে না” (ইবন মাজা)।
اذا تزوج العبد فقداستكمل نصف الدين فليتق الله في
L1 A] “যখন কোন ব্যক্তি বিবাহ করিল তখন সে ধর্মের অর্ধেক পূর্ণ করিল। অতঃপর বাকী অর্ধেক পূরণের জন্য সে আল্লাহকে ভয় করুক” (বায়হাকী)।
قائه أغض للبصر وأحسن للفرج .
“নিশ্চয় বিবাহ কুদৃষ্টিকে উত্তমভাবে রোধ করে এবং লজ্জাস্থানকে (অপবিত্রতা হইতে) রক্ষা করে” (বুখারী)।
ধারা—১২৯৭
সুনাম রক্ষা করিবার অধিকার প্রত্যেক নারী ও পুরুষের নিজ নিজ সুনাম রক্ষা করিবার অধিকার রহিয়াছে।
বিশ্লেষণ
প্রত্যেক নারী ও পুরুষের অধিকার রহিয়াছে তাহাদের সুনাম রক্ষা করিবার, তবে নারীর সুনাম সর্বক্ষেত্রে কিছু বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাই ইসলামী আইন নারীর এই পবিত্র অধিকার সংরক্ষণের উপর বিশেষভাবে গুরুত্বারোপ করিয়াছে। কঠিন শাস্তি প্রদানের মাধ্যমে ইসলামী আইন ব্যবস্থা নারীর উপর হইতে অপবাদের
৮২৫
অশংকা দূর করিতে চাহিয়াছে। আল্লাহ পাক পবিত্র কুরআনে নারীর এই অধিকার সম্পর্কে ঘোষণা করিয়াছেন।
L
والذين يرون المحصنت ثم لم يأتوا بأربعة شهداء فاجلدوهم
منين جلده ولا تقبلوا لهم شهادة أبدا .
“যাহারা সতী রমনীর প্রতি অপবাদ আরোপ করে, অতঃপর সাক্ষী উপস্থিত করিতে ব্যর্থ হয়, তাহাদিগকে আশিটি বেত্রাঘাত করিবে এবং কখনও তাহাদের সাক্ষ্য গ্রহণ করিবে না” (২৪ ৪৪)।
إن الذين يرون المحصنت الغفلت المؤمنات لعنوا في النيا
والأخرة ولهم عذاب عظيم (۲۳-۲۶) .
“যাহারা সতী, নিরীহ ও বিশ্বাসী নারীর প্রতি অপবাদ আরোপ করে তাহারা ইহলোকে ও পরলোকে অভিশপ্ত এবং তাহাদিগের জন্য রহিয়াছে মহাশাস্তি” (২৪ : ২৩)।
ইসলামী আইনে অপবাদকারীদের জন্য তিন প্রকারের শাস্তির ব্যবস্থা রহিয়াছে। প্রথমত, তাহাকে বেত্রাঘাত করা হইবে। দ্বিতীয়ত, সে সারা জীবনের জন্য মিথ্যাবাদী বলিয়া সাব্যস্ত হইবে এবং আদালতে কখনও তাহার সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য হইবে না। তৃতীয়ত, পরকালে সে ফাসিক বলিয়া গণ্য হইবে। বর্ণিত আয়াতে এই শ্রেণীর অপবাদ রটনাকারীদের উপর দণ্ড প্রদানের ব্যবস্থা করা হইয়াছে। যদি কোন পুরুষ বা নারী কোন স্ত্রীলোক সম্বন্ধে যেনার অপবাদ রটনা করে তাহা হইলে তাহাকে চারজন প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী আদালতে উপস্থিত করিতে হইবে এবং তাহাদের দ্বারা যেনার অভিযোগ প্রমাণ করিতে হইবে। অন্যথায় আদালত অপবাদ রটনাকারীর প্রতি আশি বেত্রাঘাত করিবার হুকুম প্রদান করিবে। ইহাতেই শেষ হইল না, আল্লাহ পাক তাহাদিগকে ফাসিক বলিয়া ঘোষণা দেওয়ার পর নির্দেশ প্রদান করিতেছেন যে, এই শ্রেণীর লোকের সাক্ষ্য কখনও কোন আদালতে গ্রহণযোগ্য হইবে না। তবে যদি সে অন্তরের সহিত তওবা করে বা অনুতপ্ত হইয়া থাকে এবং নিজেকে সংশোধন করিয়া লইয়াছে বলিয়া জানা যায়, তাহা হইল আদালত এই নিষেধাজ্ঞা তুলিয়া নিতে পারিবে। ইহা ইমাম মালিক ও শাফিয়ী (র)-এর অভিমত। কিন্তু ইমাম আবু হানীফা (র) এবং অনেক বিশিষ্ট বিশিষ্ট তাবিয়ী (র)-এর মত হইল, তওবা বা অনুপ্তের মাধ্যমে তাহার ফাসিক’ নাম লোপ পাইবে, কিন্তু তাহার সাক্ষ্য কোন কালেও গ্রহণযোগ্য হইবে না। উল্লেখ্য যে, পুরুষ লোকের বিরুদ্ধে অপবাদ রটনার শাস্তিও একই। এ বিষয়ে ফকীহদের মাঝে কোন মতভেদ নাই।
৮২৬
ধারা-১২৯৮ স্বামী কর্তৃক সুনাম নষ্ট না হইবার অধিকার প্রত্যেক নারীর তাহার স্বামী কর্তৃক সুনাম নষ্ট না হইবার অধিকার রহিয়াছে।
বিশ্লেষণ
সাক্ষী ছাড়া শুধু স্বামী কর্তৃক স্ত্রী অপবাদের শিকার হইলে সে ক্ষেত্রে স্ত্রী তাহার সুনাম রক্ষা করিবার জন্য যে অধিকার লাভ করে সে সম্পর্কে আল্লাহ পাক বলেনঃ
والذين يرون أزواجهم ولم يممن لهم شهداء الأ أنفسهم شهادة أحدهم أربع شهدت بالله انه لمن الصادقين والخامسة آن
لعنة الله عليه ان كان من الكاذبين (۷-۲۶) .
“এবং যাহারা নিজদিগের স্ত্রীর প্রতি অপবাদ আরোপ করে অথচ নিজেরা ব্যতীত তাহাদিগের কোন সাক্ষী নাই, তাহাদিগের প্রত্যেকের সাক্ষ্য এই হইবে যে, ‘সে আল্লাহর নামে চারিবার শপথ করিয়া বলিবে যে, সে অবশ্যই সত্যবাদী’ এবং পঞ্চমবারে বলিবে, সে মিথ্যাবাদী হইলে হইলে তাহার উপর নামিয়া আসিবে আল্লাহর অভিশাপ” (২৪ : ৭)।
পুরুষের মত স্ত্রীও শপথ করিবে। বলা হইয়াছে।
ويدرؤا عنها العذاب أن تشهد أربع شهدت بالله انه لمن
الكذبين والخامسة أن غضب الله عليها ان كان من الدقين .
“তবে স্ত্রীর শাস্তি রহিত করা হইবে যদি সে চারিবার আল্লাহর নামে শপথ করিয়া সাক্ষ্য দেয় যে, তাহার স্বামীই মিথ্যাবাদী এবং পঞ্চম বার বলে, তাহার স্বামী সত্যবাদী হইলে তাহার নিজের উপর নামিয়া আসিবে আল্লাহর ক্রোধ” (২৪৯)।
স্বামী কর্তৃক নিজ স্ত্রীর বিরুদ্ধে যেনার অভিযোগ নানা কারণে সহজে সম্ভব হইতে পারে না। তাই ইহার জন্য এই প্রকারের হলফ করিবার বিশেষ ব্যবস্থা করা। হইয়াছে। কিন্তু স্বামী হলফ করিলেই স্ত্রী অপরাধী বলিয়া প্রতিপন্ন হইবে না, স্ত্রীকেও অনুরূপ হলফ করিবার সুযোগ দেওয়া হইয়াছে। সে যদি নিয়মমত হলফ করিয়া বলে যে, তাহার স্বামীর অভিযোগ মিথ্যা, তাহা হইলে তাহাকে অভিযোগ হইতে মুক্তি দেওয়া হইবে এবং এই অবস্থায় তাহাদের দাম্পত্য সম্পর্ক ছিন্ন হইয়া যাইবে।৮৯
ورا
با
•
وعن ابن عباس أن هلال ابن امي قذف امراته عند النبی صلى الله عليه وسلم
ة البيئة أو حدا في ظهرك فقال
بشريك بن سحماء …… فقال النبي یا رسول الله صلى الله عليه وسلم اذا رای احدنا على امراته رجلا ينطالق يلتمس البينة فجعل النبي لا يقول البيئة والأحدا في ظهرك فقال هلال والذي بعك بالحق إني لصادق فلتنزل الله ما يبرى ظهرى من الحد فنزل جبرائيل وانزل عليه والذين يرون أزواجهم فقرا حتی
يقول ان
بلغ إن كان من الصدقين فجاء هلال فشه والنبي الله يعلم أن احدكما گان؛ فهل منگما تائب ثم قامت وشهدت فلما كانت عند الخامسة وقفوها وقالوا انها موحبه قال ابن عباس فتلگت ونمت حتى ظننا ایها ترجع ثم قالت لانفض قومی سائر اليوم مضت وقال النبي صلى الله عليه وسلم أبصروها فان جائت به اكحل العين سايتم الاليتين لج الساقين فهو بشريك بن سحماء فجائت به كذالك فقال النبي ة لولا مامضى من كتاب الله لكان لي ولها شأن (رواه مسلم في باب حد القذف).
“ইবন আব্বাস (রা) বর্ণনা করিয়াছেন যে, হিলাল ইবন উমাইয়া রাসূলুল্লাহ (সা)-এর দরবারে আসিয়া নিজ স্ত্রীর বিরুদ্ধে শরীক ইবন সাহমার সহিত যেনার অপবাদ দেন। রাসূলুল্লাহ্ (সা) বলিলেন, সাক্ষী উপস্থিত কর অন্যথায় তোমার উপর হদ্দ জারী করা হইবে। সে বলিল, হে আল্লাহর রাসূল! যখন আমাদের কেহ তাহার স্ত্রীর সহিত অন্য পুরুষকে দেখে তখন কি সে সাক্ষীর সন্ধানে যাইবে? কিন্তু রাসূলুল্লাহ (সা) বলিতে লাগিলেন, সাক্ষী লইয়া আস অন্যথায় তোমার পিঠের উপর হদ্দ জারী করা হইবে। হেলাল বলিল, তাহার শপথ যিনি আপনাকে সত্য সহকারে প্রেরণ করিয়াছেন! নিঃসন্দেহে আমি সত্যবাদী। নিশ্চয় আল্লাহ পাক এমন কিছু অচিরেই নাযিল করিবেন যাহার দ্বারা আমার পিঠ হদ্দ জারী হইতে রক্ষা পাইবে। তখন জিবরাঈল অবতীর্ণ হইলেন এবং রাসূলুল্লাহ (সা)-এর প্রতি নাযিল করিলেন? “এবং যাহারা যেনার অপবাদ দেয় তাহাদের স্ত্রীদের বিরুদ্ধে… যদি সে সত্যবাদী হয়” পর্যন্ত। অতঃপর হেলাল আসিয়া “লিয়ান” করিলেন। তখন রাসূলুল্লাহ (সা)
৮২৮
বলিতে লাগিলেন, আল্লাহ জানেন নিশ্চয় তোমাদের মধ্যে একজন মিথ্যাবাদী। তবে কি তোমাদের মধ্যে কেহ তওবা করিবে? অতঃপর হেলালের স্ত্রী লিয়ান’ করিল এবং যখন সে পঞ্চম বার বলিতে উদ্যত হইল তখন লোকে তাহাকে নিবৃত্ত করিতে বলিল, উহা তো আল্লাহর লানতের কারণ হইবে। ইবন আব্বাস (রা) বলেন, তখন সে হতভম্ব হইয়া পিছনে হটিল, এমনকি আমরা ভাবিলাম, সে হয়ত ফিরিয়া যাইতেছে। অতঃপর সে বলিল, “আমি চিরকালের জন্য আমার গোত্রকে বদনাম করিব না এবং সে লিয়ান করিল। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সা) বলিলেন, “তোমরা লক্ষ্য রাখ উহার প্রতি, যদি সে এমন সন্তান প্রসব করে যাহার চক্ষু সুরমাই, নিতম্ব মোটা, জঙ্ মাংশল তবে উহা শরীক ইবন সাহমার হইবে। সে সেইরূপ প্রসব করিল। তখন রাসূলুল্লাহ (সা) বলিলেন, আল্লাহর হুকুম যাহা নাযিল হইয়াছে তাহা যদি না হইত তবে তাহার ও আমার মধ্যে সাংঘাতিক এক ব্যাপার ঘটিত”।
বর্ণিত আয়াত এবং হাদীসের দ্বারা এই কথা স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হইতেছে যে, স্বামীর পক্ষে নিজ স্ত্রীর বিরুদ্ধে যেনার অভিযোগ নানা কারণে সহজে সম্ভব হইতে পারে না। তাই তাহার জন্য এই প্রকার হলফ করার ব্যবস্থা করা হইয়াছে। কিন্তু স্বামী হলফ করিলেই স্ত্রী অপরাধী বলিয়া বিবেচিত হইবে না। বরং স্ত্রী হলফ করিবার অধিকারী হইবে। স্ত্রী স্বামীর বিরুদ্ধে হলফ করিলে সে অভিযোগ হইতে মুক্তি পাইবে।
ধারা-১২৯৯ বিধবা বা তালাকপ্রাপ্তা নারীর পুনর্বিবাহের অধিকার স্বামীর মৃত্যুর পর অথবা তালাক বা অন্যবিধ কারণে বিবাহ বন্ধন ছিন্ন হইবার পর প্রত্যেক নারীর পুনর্বিবাহের অধিকার রহিয়াছে।
বিশ্লেষণ
স্বামীর মৃত্যুর পর অথবা তালাক বা অন্যবিধ কারণে বিবাহ বন্ধন ছিন্ন হইলে প্রত্যেক বিধবা বা তালাকপ্রাপ্তা নারী পুনরায় বিবাহ করিতে পারিবে। ইসলাম শুধু বিধবাদেরকে দ্বিতীয় বিবাহের অধিকারই প্রদান করে নাই, বরং ইহার জন্য উৎসাহও প্রদান করিয়াছে। যে সকল পুণ্যবতী মহিলা রাসূলুল্লাহ (স)-এর স্ত্রী এবং সাথে সাথে মুমিনদের “মা” হইবার সৌভাগ্য অর্জন করিয়াছেন তাঁহাদের মধ্যে হযরত
৮২৯
খাদীজা, হযরত সাওদা, হযরত হাফসা, হযরত মায়মুনা, হযরত সাফিয়া এবং হযরত মরিয়ম (রা) সকলেই বিধবা নারী ছিলেন। আর হযরত জয়নব (রা) ছিলেন তালাকপ্রাপ্তা। আল-কুরআন বিধবা এবং তালাকপ্রাপ্তা নারীদের বিবাহ করিবার অধিকার দিয়াছে। ইহা তাহাদের মৌলিক অধিকার, ইহা হইতে কেহ তাহাদের বঞ্চিত করিতে পারে না। বিধবা বা তালাকপ্রাপ্তা হইবার পর তাহাদের গর্ভে সন্তান আছে কিনা যাচাইয়ের জন্য নির্দিষ্ট কাল অপেক্ষা করিতে হয়। অতঃপর তাহারা নিজেদের ইচ্ছায় যে কোন পুরুষকে বিবাহ করিতে পারে। এ সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ পাক বলেন?
ولا جناح عليكم فيما عرضتم به من خطبة النساء أو أكنتم في أنفسم علم الله أنكم سترونه ولكن تواعدوه سرا الأ أن تقولوا قولا معروفا ولا تعزموا عقدة النكاح حتى يبلغ الكتاب أجله واعلموا أن الله يعلم ما في أنفسكم فاتوه واعلموا أن حليم. الله غفور
سعود
“স্ত্রীলোকদের নিকট তোমরা ইংগিতে বিবাহের প্রস্তাব করিলে অথবা তোমাদের অন্তরে তাহা গোপন রাখিলে তোমাদের কোন পাপ নাই। আল্লাহ জানেন যে, তোমরা তাহাদের সম্বন্ধে আলোচনা করিবে, কিন্তু বিধিমত কথাবার্তা ব্যতীত গোপনে তাহাদের নিকট কোন অঙ্গীকার করিও না। নির্দিষ্ট কাল পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত বিবাহকার্য সম্পন্ন করিবার সংকল্পও করিও না এবং জানিয়া রাখ যে, আল্লাহ ক্ষমাপরায়ণ সহনশীল” (২ : ২৩৫)।
উক্ত আয়াতে বলা হইয়াছে, স্বামী বিয়োগের পর ইদ্দাত পালনরত নারীকে ইংগিতে বিবাহের প্রস্তাব প্রদানে দোষের কিছু নাই। তাহাকে বিবাহ করিবার আকাংখা কোন পুরুষ তাহার মনের মধ্যে লুকাইয়া রাখিলেও আপত্তির কিছু নাই। উল্লেখিত আয়াতে বুঝা যায় যে, স্বামীর মৃত্যুতে শোকাহত অবস্থায় বিবাহের প্রস্তাব করা যায় না, কিন্তু বিবাহের আকাংখা করা যায়। আয়াতে বলা হইয়াছে, নির্দিষ্ট কাল পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত বিবাহ কার্য সম্পন্ন করিবার সংকল্প করিও না। এই কথা হইতে সহজেই বুঝা যায় যে, নির্দিষ্ট কাল অর্থাৎ ইদ্দাতের পর বিধবার বিবাহের অধিকার রহিয়াছে। অপর এক আয়াতে বলা হইয়াছে।
واذا طلقتم النساء فبلغن أجلهن فلا تعضلوهن أن ينكحن ازواجهن اذا تراضوا بينهم بالمعروف ذلك يوعظ به من كان منكم
৮৩০
يؤمن بالله واليوم الآخر ذلكم ازكى لكم واطهير والله يعلم وأنتم
215 “তোমরা যখন স্ত্রীদিগকে তালাক দাও এবং তাহারা তাহাদের ইদ্দতকাল পূর্ণ করে, তাহারা যদি বিধিমত পরস্পর সম্মত হয়, তবে স্ত্রীগণ নিজেদের স্বামীদিগকে বিবাহ করিতে চাহিলে তোমরা তাহাদিগকে বাধা দিও না। ইহা দ্বারা তোমাদের মধ্যে যে কেহ আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করে তাহাকে উপদেশ দেওয়া হয়। ইহা তোমাদের জন্য শুদ্ধতম ও পবিত্রতম। আল্লাহ জানেন, তোমরা জান না” (২ঃ ২৩২)।
এই আয়াতে বলা হইয়াছে যে, নিয়মিতভাবে (এক বা দুই) তালাকপ্রাপ্তা রমণীর ইদ্দাত অতীত হইবার পর যদি স্বামী-স্ত্রী পরস্পর সম্মতিক্রমে পুনরায় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হইতে চায়, তবে সেক্ষেত্রে তাহাদেরকে বাধা দেওয়া উচিত নহে। কারণ নিয়মিতভাবে তালাকপ্রাপ্তা রমণী পুর্নবিবাহের স্বাধীনতা লাভ করিলেও এক তালাক বাকী থাকিবার জন্য শরীয়তের নির্দেশানুসারে পূর্বের স্বামীর সহিত তাহার বিবাহের পথ রুদ্ধ হইতে পারে না। বরং এই অবস্থায় ঐ রমণীর পক্ষে পূর্ব স্বামীর সহিত বিবাহ হওয়াই উত্তম। ইহাতে বাধা প্রদান করা উচিত নহে। কারণ ঐ অবস্থায় স্বামী-স্ত্রী পূর্ব পরিচয় এবং একত্র বাস নিবন্ধন তাহাদের মধ্যে প্রেম ও অনুরাগের যে আকর্ষণ অবশিষ্ট থাকিবে তাহার ফলে উভয়ের পক্ষে অন্য স্থানে বিবাহ করা অপেক্ষা এই বিবাহই প্রীতিকর ও কল্যাণপ্রসূ হওয়া সমধিক বাঞ্ছনীয়।
মালিক ইবন ইয়াসারের ভগিনী স্বীয় স্বামী জামিল ইবন আবদুর রহমান কর্তৃক তালাকপ্রাপ্তা হইবার পর প্রতীক্ষাকাল অতীত হইলে পূর্বানুরাগবশত পুনরায় উভয়ে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হইতে ইচ্ছুক হইল। কিন্তু মালিক ক্রুদ্ধ হইয়া ইহাতে প্রচণ্ড বাধা প্রদান করেন। অতঃপর এই আয়াত নাযিল হয়। ফলে মালিক আল্লাহর ফয়সালা গ্রহণ করিলেন এবং উভয়ে পুনরায় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। এই আয়াত দ্বারা স্পষ্টভাবে বুঝা যায় যে, তালাকপ্রাপ্তা নারীদের পুর্নবিবাহ করিবার অধিকার রহিয়াছে। অন্য আয়াতে বলা হইয়াছে।
والذين يتوفون منكم ويرون أزواجا يتربصن بأنفسهن ازبعة أشهر وعشرا فاذا بلغن أجلهن فلا جناح عليكم فيما فعلن في أنفسه بالمعروف والله بما تعملون خبيرا (۲۳۶-۲) .
৮৩১
“তোমাদের মধ্যে যাহারা স্ত্রী রাখিয়া মৃত্যুমুখে পতিত হয় তাহাদের স্ত্রীগণ চারি মাস দশ দিন প্রতীক্ষায় থাকিবে। যখন তাহারা তাহাদের ইদ্দতকাল পূর্ণ করিবে তখন তাহারা যথারীতি নিজেদের জন্য যাহা করিবে তাহাতে কোন অপরাধ নাই। তোমরা যাহা কর আল্লাহ সে সমন্ধে সবিশেষ অবহিত” (২ঃ ২৩৪)।
উক্ত আয়াতে বলা হইয়াছে যে, বিধবা ইদ্দাতকালে বিবাহ করিবে না, অতঃপর সে খােদমুখতার বিবাহ করিতে চাহিলে তখন স্বসন্দে তাহা পারিবে। এই আয়াত দ্বারা স্পষ্টভাবেই বুঝা যায় যে, বিধবা নারী তাহার নির্দিষ্ট কাল অতিবাহিত হইলে তাহার পুর্নবিবাহের অধিকার রহিয়াছে। কেহ এই অধিকারে হস্তক্ষেপ করিতে পারে না।
وعن المسور بن مخرمة أن سبعة الأسلمية نفست بعد وفات زوجها بليال فجاء نت النبی ة أن تنكح فاذن لها فنكحت
• (6,341 199) “মিসওয়ার ইবন মাখরমা (রা) বর্ণনা করিয়াছেন, শুবাইয়া আল-আসলামিয়া তাহার স্বামীর মৃত্যুর কিছু দিন পর সন্তান প্রসব করে। অতঃপর সে নবী করীম (সা)-এর নিকট আসিয়া বিবাহের অনুমতি প্রার্থনা করিল। তখন নবী করীম (সা) তাহাকে বিবাহের অনুমতি দেন এবং সে বিবাহ করে”।৯০
ধারা-১০০
বিবাহ ভঙ্গের অধিকার ন্যায়সঙ্গত ও বৈধ পন্থায় স্বামী-স্ত্রীর বিবাহ বিচ্ছেদের অধিকার রহিয়াছে।
বিশ্লেষণ
বিবাহের অধিকারের সাথে সাথে তালাকের এবং বিবাহ ভঙ্গের অধিকার ঘনিষ্ঠভাবে সংযুক্ত। তালাক বা বিবাহ বিচ্ছেদ ইসলামী আইনে খুব অভিপ্রেত কর্ম নহে। কিন্তু অভিপ্রেত না হইলেও ইসলামী আইন ইহার আবশ্যকতা স্বীকার করিয়াছে। তাই প্রয়োজনবােধে ন্যায়সঙ্গত ও বৈধ পন্থায় ইহার প্রয়োগের অধিকার ইসলাম প্রদান করিয়াছে। তালাক বা বিবাহ বিচ্ছেদ সম্পর্কে আল্লাহ পাক বলেন :
الذين يؤلون من نسائهم تربص اربعة أشهر فان اء وا فان الله
غفور رحيم
৮৩২
“যাহারা স্ত্রীর সহিত সংগম না হওয়ার শপথ করে তাহারা চার মাস অপেক্ষা করিবে। অতঃপর যদি তাহারা প্রত্যাগত হয় তবে আল্লাহ ক্ষমাশীল পরম দয়ালু” (২ঃ ২২৬)।
উক্ত আয়াতে সেইসব স্বামীর কথা বলা হইয়াছে যাহারা স্ত্রীর সহিত সহবাস না করিবার শপথ (ঈলা) (ধারা করে অথচ স্ত্রীকে তালাক দেয় না, তাহাদের উদ্দেশে বলা হইয়াছে যে, তাহারা চার মাসের মধ্যে তাহাদের বিবাদ মিটাইয়া ফেলিবে, অন্যাথায় বিবাহ ভঙ্গ করিবে। স্ত্রীকে অনির্দিষ্ট কালের জন্য ঝুলাইয়া রাখা যাইবে না। চার মাসের মধ্যে স্ত্রীর সহিত মিলিত হইতে হইবে নতুবা বিবাহ বন্ধন ছিন্ন করিতে হইবে। তালাক সম্পর্কে অপর আয়াতে আল্লাহ পাক বলেন?
وان عزموا الطلاق فان الله سميع عليم (۲۲۷-۲) .
“আর যদি তাহারা তালাক দেওয়ার সংকল্প করিয়া থাকে তবে আল্লাহ সর্বশ্রতা সর্বজ্ঞ” (২ঃ ২২৭)।
অর্থাৎ মীমাংসার সকল পথ বন্ধ হইয়া গেলে সব প্রয়াস ব্যর্থ হইলে কেবল তখন স্বামী স্ত্রীকে তালাক দিতে পারে। এই আয়াতে আরও বলা হইয়াছে, আল্লাহ সব কিছু শুনেন ও জানেন। অর্থাৎ বিনা কারণে স্বামী যদি স্ত্রীকে তালাক দেয় তবে মজলুম স্ত্রীর ফরিয়াদ আল্লাহর দরবারে পৌঁছে যাইবে। সুতরাং স্বামীগণ হুঁশিয়ার।
فان طلقها فلا تحل له من بعد حتی تنکح زوجا غيره فان طلقها فلا جناح عليهم أن يتراجعا إن ظنا أن يقيما حدود الله
• (Y-.) “অতঃপর যদি সে তাহাকে তালাক দেয়, তবে সে তাহার জন্য বৈধ হইবে না যে পর্যন্ত সে অন্য স্বামীর সহিত সংগত না হইবে। অতঃপর সে যদি তাহাকে তালাক দেয়, আর তাহারা উভয়ে যদি মনে করে যে, তাহারা আল্লাহ্র সীমারেখা রক্ষা করিতে সমর্থ হইবে, তবে তাহাদের পুনর্মিলনে কাহারও কোন অপরাধ হইবে
“ (২ঃ ২৩০)।
واذا طلقتم النساء فبلغن أجلهن فأمسكوهن بمعروف أو
سرحوهن بمعروف .
“যখন তোমরা স্ত্রীদেরকে তালাক দাও এবং তাহারা ইদ্দতকাল পূর্ণ করে, তখন তোমরা হয় যথাবিধি তাহাদিগকে রাখিয়া দিবে অথবা বিধিমত মুক্ত করিয়া দিবে” (২ ও ২৩১)।
ه ه
ه ه ه
ه ه
. .
. . ه
م تمسوه
ولا جناح عليكم ان طلقتم النيساء ما لم تمسوه او تقرضوا
لهن فريضه (۲۳۹-۲) .
“যে পর্যন্ত না তোমরা তোমাদের স্ত্রীদেরকে স্পর্শ করিয়াছ অথবা তাহাদের জন্য মোহরানা ধার্য করিয়াছ, তাহাদিগকে তালাক দিলে তোমাদের কোন পাপ নাই” (3850)
عن ابن عباس رضي الله عنه أن امرأة ثابت بن قیس اتت النبي له فقالت يا رسول الله ثابت بن قيس ما اعتب عليه في خلق ولا دین ولكني أكره الكفر على الإسلام فقال رسول الله له أتردين عليه حديقته فقالت نعم قال رسول الله لا اقبل الحديقة وطلقها تطليق (البخاری) .
“ইবন আব্বাস (রা) হইতে বর্ণিত যে, সাবিত ইবন কায়েসের স্ত্রী নবী (সা.)-এর নিকট আসিয়া বলিল, হে আল্লাহর রাসূল! সাবিত ইবন কায়েসের চরিত্র এবং ধার্মিকতা সম্পর্কে আমার কোন অভিযোগ নাই। কিন্তু ইসলামে থাকিয়া আমি কুফরী করিতে প্রস্তুত নই। রাসূলে করীম (সা) জিজ্ঞাসা করিলেন, তুমি তাহার <ifra fasl3at f f ( afala, 3
1 14 (51) 9ISI (S ) বলিলেন, বাগানটি গ্রহণ কর এবং তাহাকে এক তালাক দাও”।৯১
:
1
عن عبد الله بن عمر أنه طلق امراء ؛ له هي حائض فكر عمر
ثم قال ليرجعها ثم
الرسول الله فتظ
فيه رسول الله يمسكها حتى تطهر ثم تحيض فطهران بدا له ان يطلقها فليطلقها طاهرا قبل ان يمسها تمتلك العدة التي أمر الله أن تطلق لها النساء وفي رواية مره فليراجعها ثم ليطلقها طاهرا أو
حام” (متفق عليه) .
“আবদুল্লাহ ইবন উমার (র) হইতে বর্ণিত আছে যে, তিনি তাহার স্ত্রীকে হায়েয অবস্থায় তালাক দিয়াছিলেন। হযরত উমার (রা) রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নিকট তাহা উল্লেখ করিলে তিনি রাগান্বিত হইয়া বলিলেন, সে তাহাকে ফিরাইয়া লউক এবং হায়েযকাল শেষ না হওয়া পর্যন্ত ঘরে রাখুক। তারপর সে ঋতুবতী হইয়া আবার
৮৩৪
পবিত্র হইলে ইচ্ছা করিলে সহবাস করার পূর্বেই তাহাকে তালাক দিতে পারে। আল্লাহ স্ত্রীলোকের তালাকের জন্য যে ইদ্দাত নির্দিষ্ট করিয়াছেন ইহা তাহাই। অপর এক বর্ণনায় আছে? তাহাকে নির্দেশ দাও, সে যেন স্ত্রীকে ফিরাইয়া লয়, তারপর তাহার পবিত্র অবস্থায় বা গর্ভকালে তাহাকে তালাক দিতে বলো”।
স্ত্রীর পক্ষে তালাক দেওয়া সম্পর্কে সন্দেহ থাকিবার ফলে এই কথা স্পষ্ট করা কর্তব্য যে, প্রয়োজনবােধে স্ত্রীও তালাক দেওয়ার অধিকার রাখে। উহার তিনটি শ্ৰেণী রহিয়াছে। প্রথম ও বিবাহের চুক্তিপত্রে যদি স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার অধিকার অর্পণ করা হইয়া থাকে। দ্বিতীয় ও “খােলার মাধ্যমে স্ত্রী স্বামীকে তালাক দিতে পারেন। তৃতীয় ও স্ত্রী আদালতের সহায়তাও স্বামীকে তালাক দিতে পারে।
ধারা-১৩০১ জন্মের সুসংবাদ প্রচারিত হওয়ার অধিকার প্রত্যেকের জন্মের সুসংবাদ প্রচারিত হইবার অধিকার আছে।
বিশ্লেষণ
কাহারও ঘরে সন্তান ভূমিষ্ঠ হইলে তাহার উচিৎ আত্মীয়-স্বজন এবং প্রতিবেশীদেরকে সেই সুসংবাদ প্রদান করা এবং প্রতিবেশীর উচিৎ যাহার ঘরে সন্তান জন্মলাভ করিয়াছে তাহাকে মুবারকবাদ পেশ করা, ধন্যবাদ জ্ঞাপন করা। সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার সুসংবাদ ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ পাক বলেনঃ
لنا ابراهيم بالبشرى قالوا سلما قال سلم فما
لقد جاءت لبث أن جاء بعجل حنيذ قلما راء أيديهم لا تصل إليه نكرهم واوجس منهم خيفه قالوا تخف انا أرسلنا إلى قوم لوط . وامراه قائمه فضحكت فبشرتها باسحاق ومن وراء اسحق يعقوب.
• (V১-৭৭ 628) “আমার প্রেরিত ফেরেশতাগণ সুসংবাদ লইয়া ইবরাহীমের নিকট আসিল। তাহারা বলিল সালাম, সেও বলিল, সালাম। সে অবিলম্বে এক কাবাব করা
৮৩৫
গো-বৎস আনিল। সে যখন দেখিল তাহাদিগের হস্ত উহার দিকে প্রসারিত হইতেছে না, তখন তাহাদিগকে অবাঞ্ছিত মনে করিল এবং তাহাদিগের সম্বন্ধে তাহার মনে ভীতির সঞ্চার হইল। তাহারা বলিল, ভয় করিও না, আমরা লুতের সম্প্রদায়ের প্রতি প্রেরিত হইয়াছি। তখন তাহার স্ত্রী দাঁড়াইয়াছিল এবং সে হাসিল। অতঃপর আমি তাহাকে ইসহাকের ও ইসহাকের পরবর্তী ইয়াকূবের সুসংবাদ দিলাম” (১১ : ৬৯-৭১)।
زكريا انا بشر بقلم اسمه يخ لم نجعل له من قبل سميا.
“হে যাকারিয়া! আমি তোমাকে এক পুত্রের সুসংবাদ দিতেছি। তাহার নাম হইবে ইয়াহইয়া। এই নামে পূর্বে আমি কাহারও নামকরণ করি নাই” (১৯ : ৭)।
ধারা-১২০২
আযান-ইকামতের অধিকার প্রত্যেক শিশুর জনের সাথে সাথে আযান ইকামত দিতে হইবে।
বিশ্লেষণ
সন্তান ভূমিষ্ঠ হইবার সাথে সাথে তাহার যে কতকগুলি অধিকারের উল্লেখ রহিয়াছে উহার মধ্যে আযান এবং ইকামত প্রচারিত হওয়া অন্যতম। হযরত আবু রাফে (রা) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা)-কে দেখিয়াছি, যখন হাসান ইবন আলী (রা) ভূমিষ্ঠ হইয়াছিলেন তখন তিনি তাহার কানে আযান দিয়াছিলেন।৯২
ইমাম বায়হাকী হযরত হাসান ইবন আলী (রা) হইতে বর্ণনা করিয়াছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা) বলিয়াছেন, যাহার ঘরে সন্তান ভূমিষ্ঠ হয় সে যেন, তাহার ডান কানে আযান এবং বাম কানে ইকামত দেয়।৯৩
হযরত ইবনে আব্বাস (রা) বলেন, যখন হযরত হাসান ইবন আলী ভূমিষ্ঠ হন তখন রাসূলুল্লাহ (সা) তাহার ডান কানে আযান এবং বাম কানে ইকামত দিয়াছিলেন।৯৪
عن ابی رافع قال رائيت رسول الله صلى الله عليه وسلم ان في
أن الحسن بن على حين ولدته فاطمة .
হযরত আবু রাফে (রা) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা)-কে দেখিয়াছি, তিনি হাসান ইবন আলী (রা)-র কানে আযান দিয়াছেন যখন হাসান (রা) হযরত ফাতেমা (রা)-এর ঘরে জন্মগ্রহণ করেন।৯৫
৮৩৬
ধারা-১৩০৩ তাহনীক, মাথা মুণ্ডন ও নামকরণ প্রত্যেক নবজাতকের
(ক) খেজুর অথবা মিষ্টি জাতীয় কোন বস্তু দ্বারা তাহনীক করিতে হইবে;
(খ) মাথা মুণ্ডন করিতে হইবে; (গ) উত্তম নামকরণ করিতে হইবে; এবং (ঘ) আকীকা করিতে হইবে।
বিশ্লেষণ
জন্মের পর প্রত্যেক নবজাতকের মুখে খেজুর অথবা মিষ্টি জাতীয় কোন কিছু চিবিয়ে উহার দেওয়াকে তাহনীক বলে। তাহনীক করা সম্পর্কে শরীয়াতে স্পষ্টভাবে নিদের্শ দেওয়া হইয়াছে এবং ইহাকে নবজাতকের অধিকার বলিয়া উল্লেখ করা হইয়াছে। হযরত আবু বুরদা (র) হযরত আবু মূসা আশআরী (রা) হইতে বর্ণনা করেন যে, আমার ঘরে একটি সন্তান ভূমিষ্ঠ হইলে আমি তাহাকে লইয়া রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নিকট উপস্থিত হইলাম। রাসূলুল্লাহ (সা) তাহার নাম রাখিলেন ইবরাহীম এবং একটি খেজুর দিয়া তাহার “তাহনীক” করিলেন এবং বরকতের জন্য দোয়া করিলেন, অতঃপর তাহাকে আমার হাওয়ালা করিয়া দিলেন। ৯৬
عن عائشة أن رسول الله صلى الله عليه وسلم كان يوتي
بالصبيان فيبرك عليهم وينكهم (رواه مسلم) .
“হযরত আয়েশা (রা) হইতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা)-এর দরবারে নবজাতকদেরকে উপস্থিত করা হইলে তিনি তাহাদের জন্য বরকতের দোয়া করিতেন এবং তাহনীক’ করিতেন”।৯৭
জন্মের সপ্তম দিনে তাহার মাথা মুণ্ডন করিতে হইবে এবং চুলের ওজনের সম-পরিমাণ সোনা বা রূপা দরিদ্রদের মাঝে বণ্টন করা উত্তম।
ইমাম মালেক (র) তাহার কিতাব “মুআত্তা” ($) উল্লেখ করিয়াছেন যে, হযরত জাফর ইবন মুহাম্মাদ (র) তাহার পিতা হইতে করিয়াছেন যে, হযরত
৮৩৭
ফাতেমা (রা) হযরত হাসান, হুসাইন, জয়নব এবং হযরত উম্মে কুলসুম (রা)-এর মাথা মুণ্ডন করিয়া চুলের সমপরিমাণ (ওজন করিয়া) রৌপ্য দান করিয়াছিলেন। ৯৮
عن علي بن ابي طالب قال عق رسول الله صلى الله عليه وسلم عن
الحسن بشاة وقال يا فاطمة احلقي راسه .
“হযরত আলী (রা) বর্ণনা করিয়াছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা) হাসানের পক্ষে বকরী দ্বারা আকীকা করিলেন এবং স্বীয় কন্যা ফাতেমাকে নির্দেশ দিলেন হাসানের মাথা মুণ্ডানের জন্য”।৯৯
সমাজে প্রচলিত প্রথা ও নিয়মাবলীর মধ্যে সন্তানের জন্মলাভের পর তাহার পিতা-মাতা কর্তৃক তাহার নাম রাখা অন্যতম, যাহাতে সে সমাজের নিকট স্বীয় নামে পরিচিতি লাভ করে এবং এই নাম রাখা সন্তানের অধিকারসমূহের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ এক অধিকার। নাম রাখা সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সা) বলিয়াছেন?
عن سمرة قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم الغلام مرتهن بعقيقة تذبح عنه يوم السابع ويسمى ويحلق رأسه (رواه احمد والترمذي وابواداؤد والنسائی) .
“প্রত্যেক নবজাতক তাহার আকীকার সহিত বন্ধক থাকে, যাহা তাহার পক্ষে জন্মের সপ্তম দিনে জবাই করা হয় এবং নাম রাখা হয় এবং মাথা মুণ্ডল করা হয়” ১০০
সন্তানের নাম রাখিবার সময় প্রত্যেক অভিভাবকের উচিত সে যেন তাহার সন্তানের জন্য শ্রুতিমধুর এবং ভাল অর্থবহ নাম রাখে। কেননা ভাল নাম রাখা সন্তানের অন্যতম অধিকার এবং রাসূলুল্লাহ (সা) প্রত্যেক নবজাতকের জন্য ভাল নাম রাখিবার নির্দেশ প্রদান করিয়াছেন?
عن أبي الدرداء رضي الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم انكم تدعون يوم القيامة بأسمائكم وباسماء ابائكم فاحسنوا
“তোমাদের প্রত্যেককে কিয়ামতের দিন নিজ নিজ নামে এবং নিজ নিজ পিতার নামে ডাকা হইবে। সুতরাং তোমরা তোমাদের নামসমূহ সুন্দর করিয়া রাখ”।১০১
৮৩৮
হাদীসে উল্লেখ রহিয়াছে, কাহারও খারাপ নাম থাকিলে রাসূলুল্লাহ (সা) তাহার নাম পরিবর্তন করিয়া সুন্দর নাম রাখিতেন। ইমাম তিরমিযী হযরত আয়েশা সিদ্দীকা (রা) হইতে বর্ণনা করিয়াছেন?
كان في الاسم القبيح .
“তিনি খারাপ নাম পরিবর্তন করিয়া দিতেন”।১০২ আকীকার (aan ae) আভিধানিক অর্থ কর্তন করা, ছিন্ন করা ইত্যাদি। এইজন্য পিতা-মাতার সহিত নাফরমানী বা সম্পর্ক ছিন্ন করাকে উকুল ওয়ালেদাইন (usu sa) বলে। পরিভাষায় আকীকা (saic) বলা হয় সন্তান জন্মের সপ্তম দিনে তাহার পক্ষে পশু যহেব করাকে। আকীকা সম্পর্কে হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন :
مع الغلام عقيقة فأهريقوا عنه ما واميطوا عنه الأذى
(6 ) “সন্তান জন্মের পর আকাকা করা উচিত। সুতরাং তাহার পক্ষ হইতে রক্ত ঝরাও (অর্থাৎ পশু যবেহ কর) এবং তাহার সকল প্রকার অসুবিধা দূর কর”।১০৩
ইহা ছাড়াও আকীকা সম্পর্কে আবু দাউদ, নাসাঈ ও ইমাম তিরমিযী বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করিয়াছেন।১০৪ হাদীসে ছেলে সন্তানের পক্ষে দুইটি ছাগল এবং মেয়ে সন্তানের পক্ষে একটি ছাগল ছানা যবেহ করার উল্লেখ রহিয়াছে।১০৫ কোন কোন হাদীসে আবার ছেলে-মেয়ে উভয়ের পক্ষ থেকে একটি একটি ছাগল যবেহ করার কথাও উল্লেখ রহিয়াছে (মিশকাত, দেওবন্দ, পৃ. ৩৬২)।
ধারা-১৩০৪
খতনার অধিকার প্রত্যেক ছেলে সন্তানের যথা সময়ে খতনা করাইতে হইবে।
বিশ্লেষণ
খতনা ইসলামের অন্যতম নিদর্শন। খতনা সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (স)-এর অসংখ্য হাদীস বর্ণিত হইয়াছে। আলেমদের মধ্যে অনেকেই খতনাকে ওয়াজিব বা
৮৩৯
অবশ্য করণীয় কাজ বলিয়া মনে করেন। খতনা সম্পর্কে ইমাম তিরমিযী নিম্নোক্ত হাদীসে বর্ণনা করিয়াছেন?
عن أبي أيوب الأنصاري رضي الله عنه قال قال رسول الله له
اربع من سن المرسلين الختان والتعطر والسواك والكاح.
“হযরত আবু আইউব আনসারী (রা) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলিয়াছেন, চারটি জিনিস রাসূলগণের সুন্নাত ও খতনা করা, খােশবু ব্যবহার করা, মিসওয়াক করা এবং বিবাহ করা”।১০৬
من الفطرة المضمضة والاستنشاق وقص الشارب …. والاختتان
“ভাল ফেতরত (আম্দর্শ) হইল, কুলি করা, নাকের মধ্যে পানি দেওয়া, গোঁফ ছােট করা এবং খতনা করা”।১০৭।
খতনা ওয়াজিব না সুন্নাত এই বিষয়ে ফকীহদের মতভেদ রহিয়াছে। ইমাম আবু হানীফা, হাসান বসরী এবং কিছু সংখ্যক হাম্বলীদের অভিমত হইল, “খতনা” সুন্নাত। কেননা রাসূলুল্লাহ (সা) বলিয়াছেন।
الختان سنة للرجال ومكرمة للنساء .
“খতনা পুরুষদের জন্য সুন্নত এবং মহিলাদের জন্য তৃপ্তিদায়ক”।১০৮ ইহা ছাড়াও রাসূলুল্লাহ (সা) যখন সুন্নাতের বর্ণনা করিতেন তখন সেই তালিকায় খতনার প্রসঙ্গও উত্থাপন করিতেন, সুতরাং খাতনাও সুন্নাত।
ইমাম শাফিঈ, মালেক, আহমাদ, শাবী, রবীয়াহ, ইয়াহইয়া ইবন সাঈদ প্রমুখ ফকীহদের মতে খতনা “ওয়াজিব”। তাহাদের অভিমত হইল যে, খাতনা’ না করা পর্যন্ত ইমামতি করা বৈধ নহে এবং তাহার সাক্ষ্যও গ্রহণযোগ্য হইবে না। ইহাদের দলীল হইল, “হযরত উছাইম ইবন কালীব-এর দাদা (রা) যখন রাসূলুল্লাহ (সা)-এর দরবারে উপস্থিত হইয়া বলিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করিয়াছি। রাসূলুল্লাহ (সা) তাহাকে বলিলেন :
ألق عنك شعر الكفر واختتن .
“তোমার কুফরী অবস্থার মাথার চুল মুণ্ডন কর এবং খতনা কর”।১০৯ খতনা করিবার উপযুক্ত সময় হইল ছােটবেলা অর্থাৎ বালেগ হওয়ার পূর্বেই। যেমন ইমাম বায়হাকী হযরত জাবের (রা) হইতে বর্ণনা করিয়াছেন যে, রাসূলুল্লাহ
৮৪০
(সা) হযরত হাসান ও হুসাইন (রা)-র খতনা তাহাদের জন্মের সপ্তম দিনে করাইয়াছিলেন। ১১০
যদি কেহ শিশু অবস্থায় খতনা না করিয়া থাকে তবে বালেগ বা বড় হওয়ার পরেও খতনা করা কর্তব্য। যেমন বিভিন্ন হাদীসে বালেগ হওয়ার পরেও খতনা করিবার কথা উল্লেখ রহিয়াছে?
من أسلم قليختتن وان كان كبيرا .
“যে ব্যক্তি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে তাহার উচিত খতনা করা, যদিও প্রাপ্তবয়স্ক হয়”।১১১
কিতাবে আরও উল্লেখ রহিয়াছে যে, তৎকালীন কাফিরগণ ইসলাম গ্রহণের সাথে সাথে খতনা করিত। এই কথা হইতে বুঝা যায় যে, বালেগ হওয়ার পরেও খতনা করা যায়।১১২
ধারা-১৩০৫
মেহের অধিকার শিশুদের স্নেহ-ভালবাসা প্রদান করিতে হইবে।
বিশ্লেষণ
প্রত্যেক শিশু সন্তান তাহার অভিভাবকের স্নেহ-ভালবাসা পাওয়ার অধিকারী। হযরত আয়েশা সিদ্দীকা (রা) বলেন, এক বেদুঈন রাসূলুল্লাহ (সা)-এর দুবারে উপস্থিত হইয়া বলিল, আপনারা কি শিশুদেরকে চুম্বন করেন? আমরা তো এইভাবে চুম্বন করি না। রাসূলুল্লাহ (সা) বলিলেন, আল্লাহ পাক যদি তোমাদের হৃদয় হইতে মহব্বত, স্নেহ, ভালবাসা উঠাইয়া লইয়া থাকেন তবে আমার আর কি করিবার আছে?
ধারা-১৩০৬
চিকিৎসা পাওয়ার অধিকার প্রত্যেক সন্তানের জন্য চিকিৎসার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা করিতে হইবে।
বিশ্লেষণ
চিকিৎসা সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সা) বলিয়াছেন?
نعم ياعباد الله تدؤوا فان الله ع وجل لم يضع داء إلا وضع له
شفاء في داء واحد قالوا وما هو قال الهرم .
৮৪১
“হাঁ, হে আল্লাহর বান্দাগণ! তোমরা চিকিৎসা গ্রহণ কর। কেননা আল্লাহ পাক যত প্রকারের রোগ সৃষ্টি করিয়াছেন সাথে সাথে তাহার ঔষধও সৃষ্টি করিয়াছেন, শুধু একটি মাত্র রোগের কোন ঔষধ নাই। লোকেরা জিজ্ঞাসা করিল, কি সেই রোগ? রাসূলুল্লাহ (সা) বলিলেন “বার্ধক্য”।১১৩
ইহা ছাড়া এ সম্পর্কে ইমাম মুসলিম, আহমদ, তিরমিযী বিস্তারিত বর্ণনা করিয়াছেন।১১৪
ধারা-১৩০৭ সামরিক প্রশিক্ষণ লাভের অধিকার শিশুরের জন্য সামরিক প্রশিক্ষণ লাভের ব্যবস্থা করিতে হইবে।
বিশ্লেষণ
ইসলামের অন্যতম অপরিহার্য বিষয় হইল “জিহাদ” এবং জিহাদের জন্য সামরিক প্রশিক্ষণ জরুরী। ইসলামে তৎকালীন যে সকল প্রকার সামরিক প্রশিক্ষণের উল্লেখ পাওয়া যায় উহার মধ্যে অন্যতম হইল “ঘোড়াসওয়ারী বা অশ্বারোহণ”। ঘোড়াসওয়ার প্রশিক্ষণের উৎসাহ প্রদান করিয়া রাসূলুল্লাহ (সা) বলেনঃ
كل شئ ليس من ذكر الله فهو لهو أو سهر الأ أربع خصال مشى الرجل بين الغرضين وتايبه فرسه وملاعتبه أهله وتعليتمه
“যে সকল বস্তুর মধ্যে আল্লাহ পাকের যিকির নাই সেই সকল বস্তু হয় অনর্থক খেলাধুলা অথবা সময় অপচয়ের সামিল, তবে চারটি বিষয় ছাড়া কোন ব্যক্তির (১) তীর এবং ধনুকের প্রশিক্ষণ লাভের জন্য দুই নিশানার মাঝে চলা; (২) এবং ঘোড়াকে প্রশিক্ষণ দেওয়া; (৩) স্ত্রীর সহিত খেলাধুলা করা; (৪) সাতার প্রশিক্ষণ দেওয়া”।১১৫ সামরিক প্রশিক্ষণের অন্যতম দ্বিতীয় বিষয় তীর এবং ধনুক পরিচালনা করা। ইসলামে তৎকালীন সময়ের অত্যাধুনিক যুদ্ধাস্ত্রের মধ্যে এই তীর-ধুনকের ব্যবহার সবচেয়ে জনপ্রিয় ও কার্যকর ছিল। এই সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সা) সূরা আনফালের এই আয়াত পাঠ করেন?
৮৪২
وأعدوا لهم ما استطعتم من قوة .
“তোমরা শত্রুর মোকাবিলা করিবার জন্য সাধ্যমত শক্তি সঞ্চয় কর” (৮ ৬০) অতপর বলিলেন :
الا ان القوة الرمي الا ان القوة الرمي الا ان القوة الرمي.
“তোমরা জানিয়া রাখ! এই শক্তি হইল তীর ধনুকের প্রশিক্ষণ, তীর ধনুকের প্রশিক্ষণ, তীর ধনুকের প্রশিক্ষণ”।১১৬
রাসূলুল্লাহ (সা) আরও বলিয়াছেন?
عليكم بالرمی فائه من خير لهوم .
“তোমরা অবশ্যই তীর-ধনুকের (ক্ষেপণাস্ত্রের) প্রশিক্ষণ লাভ করিবে। কেননা ইহা তোমাদের জন্য সর্বোত্তম খেলা”।১১৭।
ধারা-১৩০৮ যুদ্ধাবস্থায় শিশুর সামরিক নিরাপত্তার অধিকার যুদ্ধক্ষেত্রে প্রত্যেক শিশুর সামরিক নিরাপত্তা লাভের অধিকার রহিয়াছে।
বিশ্লেষণ
যুদ্ধক্ষেত্রে শিশুরা থাকিলে তাহাদেরকে অবশ্যই সামরিক নিরাপত্তা প্রদান করিতে হইবে। রাসূলুল্লাহ (সা) তাহাদিগকে হত্যা না করিবার নির্দেশ প্রদান করিয়াছেন।
عن نافع أن عبد الله أخبره أن امرأة وجدت في بعض مغازی
انكر النبي ة قتل الصبيان والتاء وفي
البى له مقتول
له عن قتل النساء والصبيان.
رواية فنهى النبي
“হযরত নাফে (র) বর্ণনা করিয়াছেন, আমাকে হযরত আবদুল্লাহ (রা) বলিয়াছেন, কোন এক যুদ্ধে জনৈকা মহিলাকে নিহত অবস্থায় পাওয়া যায়। এই কথা জানিতে পারিয়া রাসূলুল্লাহ (সা) যুদ্ধে শিশু ও নারী হত্যা অপছন্দ করিলেন। অপর বর্ণনায় উল্লেখ রহিয়াছে, রাসূলুল্লাহ (সা) শিশু ও নারী হত্যা নিষিদ্ধ করিয়াছেন।১১৮
৮৪৩
ধারা-১৩০৯ নাবালেগের বিবাহ ভঙ্গের অধিকার যদি কোন ওয়ালী তাহার অধীনস্থ নাবালেগ বা নাবালেগার বিবাহ দিয়া থাকে, তবে বালেগ হইবার পর যথাযথ আদালতের মাধ্যমে সে উক্ত বিবহ ভঙ্গ করিতে পারিবে।
বিশ্লেষণ
যদি কোন ওয়ালী তাহার অধীনস্থ কোন শিশুকে (নাবালেগ-নাবালেগা) বিবাহ দিয়া থাকে, তবে উক্ত শিশুর এই অধিকার রহিয়াছে যে, সে বালেগ হইবার পর উক্ত বিবাহ ভঙ্গ করিতে পারিবে। তবে শর্ত থাকে যে, বিবাহ ভঙ্গের ক্ষেত্রে আদালতের নির্দেশ জরুরী। (L1 ali aj by1:)।১১৯ এক্ষেত্রে বিবাহ বাতিলের জন্য আদালতের সিদ্ধান্ত থাকা শর্ত।১২০ আরও বলা হইয়াছে?
يقع الفرقة ولا يبطل النكاح مالم يفسخ القاضي العقد
• “আদালত বিবাহ রদের নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উভয়ের বিবাহ বিচ্ছেদও হইবে না এবং বাতিলও হইবে না”।১২১
ধারা—১৩১০ যোগ্য অভিভাবক লাভের অধিকার কোন মুসলিম শিশুর (নাবালগের) অভিভাবকত্ব লাভের জন্য অভিভাবকের বুদ্ধিমান ও মুসলমান হওয়া জরুরী।
বিশ্লেষণ
মুসলিম শিশুর অভিভাবকের বুদ্ধিমান, বালেগ ও মুসলমান হওয়া জরুরী। সুস্থ বুদ্ধি রহিত অথবা নাবালেগ যেহেতু নিজের ব্যাপার সামলাইতে সক্ষম নহে এবং নিজের ব্যাপারসমূহ দেখিবার জন্য আইনগত অধিকারপ্রাপ্ত নহে, তাই সে অন্যের ব্যাপারে অভিভাবক হইতে পারে না। নাবালেগের অভিভাবক বা ওয়ালীকে মুসলমান হইতে হইবে, এ বিষয়ে আলেমগণ একমত। সুতরাং কোন কাফের
৮৪৪
ব্যক্তি শিশুর অভিভাবক হইতে পারিবে না। কেননা অভিভাবক বা ওয়ালী হইবার অধিকার জন্মে ওয়ারিস হইবার অধিকার হইতে। হাদীসে বলা হইয়াছে?
لا يتوارث أهل الملتين شيئا .
“দুইটি ভিন্ন মিল্লাতের অনুসারী পরস্পরের উত্তারাধিকারী হইতে পারিবে না”।
এইখানে দুইটি মিল্লাত বলিতে কুফর ও ইসলামকে বুঝানো হইয়াছে। অতএব কোন মুসলমানের উপর কাফেরের অভিভাবকত্ব নিষিদ্ধ করা হইয়াছে। বলা হইয়াছে।
أيها الذين آمنوا لا تتخذوا أبائكم واخوانكم أولياء ان استوا الكفر على الإيمان ومن يتولهم منم فأولئك هم
• ১ial “হে মুমিনগণ! তোমাদের পিতাগণ ও ভ্রাতাগণ যদি ঈমান অপেক্ষা কুফরকে শ্রেয় মনে করে তবে তোমরা তাহাদেরকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করিও না। তোমাদের মধ্যে যাহারা তাহাদেরকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করে তাহারাই জালিম” (৯ : ২৩)।
উক্ত আয়াত হইতে স্পষ্ট বুঝা যায় যে, কোন কাফের কোন মুসলমানের অভিভাবক বা ওয়ালী হইতে পারে না। মুরতাহাদের ক্ষেত্রেও এই বিধান প্রযোজ্য। সুতরাং মুরতাদ হইবার কারণে তাহার মুসলমানের উপর অভিভাকত্বের আইনগত অধিকার রহিত হইয়া যায়।
ধারা-১৩১১
ভরণ-পোষণের অধিকার পুত্র সন্তান বালেগ না হওয়া পর্যন্ত এবং কন্যা সন্তানের বিবাহ না হওয়া পর্যন্ত তাহাদের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব সামর্থ্য অনুযায়ী পিতার উপর বর্তায়।
বিশ্লেষণ
পুত্র সন্তান বালেগ না হওয়া পর্যন্ত এবং কন্যা সন্তানের বিবাহ না হওয়া পর্যন্ত তাহাদের পিতা তাহার সামর্থ্য অনুযায়ী ভরণ-পোষণের দায়িত্ব পালন করিতে বাধ্য। ইসলাম পরিবার-পরিজনের ভরণ পোষণের ব্যবস্থা করাকে ইবাদত বলিয়া ঘোষণা
৮৪৫
করিয়াছে এবং কোন ব্যক্তি তাহাদের জন্য যাহা ব্যয় করে তাহাকে দান খয়রাতের সমতুল্য সওয়াবের কাজ বলিয়াছে (ধারা (৩৮৯) ও উহার বিশ্লেষণ
দ্র.]।
ধারা-১৩১২
স্বীকৃতির অধিকার বিবাহের ভিত্তিতে জন্মলাভকারী প্রত্যেক শিশু সন্তানের জন্মের স্বীকৃতি লাভের অধিকার রহিয়াছে।
বিশ্লেষণ
সহীহ বিবাহের ভিত্তিতে জন্মলাভকারী সন্তানের পিতা-মাতার সহিত আইনগত সম্পর্ক বা বংশ পরিচয়ের স্বীকৃতির অধিকার রহিয়াছে। দাম্পত্য বন্ধনের বিশুদ্ধতা সম্পর্কে সন্দেহ সত্ত্বেও বংশ পরিচয় প্রমাণিত হইবে। অর্থাৎ বিবাহ অনুষ্ঠান (আ) এবং সহবাসের ক্ষেত্রে সন্দেহ সৃষ্টি হইলেও তাহার কারণে সন্তানের স্বীকৃতি বা বংশপরিচয়ের উপর কোন প্রকার প্রভাব পড়িবে না। ইহাতে দাম্পত্য সম্পর্কে বিপর্যয় সৃষ্টি হয় বটে কিন্তু এইভাবে যে সন্তান জন্মলাভ করে তাহার অবশ্যই স্বীকৃতি পাওয়ার অধিকার রহিয়াছে।
ধারা-১৩১৩ স্বামীর অবৈধ নির্দেশ প্রত্যাখ্যানের অধিকার স্বামীর অবৈধ আদেশ পালনে স্ত্রী বাধ্য নহে।
বিশ্লেষণ
স্বামী যদি তাহার স্ত্রীকে শরীয়াত পরিপন্থী কোন কাজের নির্দেশ প্রদান করে তবে স্বামীর সেই নির্দেশ স্ত্রীর অমান্য করিবার অধিকার রহিয়াছে। ইমাম বুখারী (র) এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর হাদীস উল্লেখ করিয়াছেন : গোনাহের কাজে স্ত্রী স্বামীর নির্দেশ পালন করিবে না”।১২২
w
عن عائشة أن امرأة من الأنصار زوجت ابنتها فتمط شعر رأسها فجاءت الى النبي ع فكرت ذالك له فقالت ان زوجها آمرني أن أصل في شعرها فقال لا انه قد لعن الموصلاته لاطاعة
৮৪৬
المخلوق في معصية الله اما الأطاعة في المعروف (مسلم ابوداؤد
والنسائی) .
“হযরত আয়েশা (রা) বর্ণনা করিয়াছেন যে, জনৈকা আনসারী মহিলা তাহার মেয়েকে বিবাহ দিয়াছিল এবং তাহার মেয়ের মাথার চুল অসুখের কারণে পড়িয়া গিয়াছিল। এই কথা সে রাসূলুল্লাহ (সা)-কে জানাইল এবং বলিল যে, মেয়ের স্বামী তাহার মাথায় কৃত্রিম চুলের সংযোজনের নির্দেশ প্রদান করিয়াছে। রাসূলুল্লাহ (সা) বলিলেন না, ইহা বৈধ নহে। বরং যাহারা কৃত্রিম চুল সংযোজন করে তাহারা অভিশপ্ত। আল্লাহর অবাধ্যচারণমূলক কাজে কোন সৃষ্টির আনুগত্য করা যাইবে না। আনুগত্য কেবল ন্যায়সংগত কাজে”।১২৩
ধারা-১৩১৪
একাধিক স্ত্রীর ক্ষেত্রে সমব্যবহার স্ত্রীগণ স্বামীর নিকট হইতে সমভাবে ইনসাফপূর্ণ ব্যবহার পাইবে।
বিশ্লেষণ
কাহারও একাধিক স্ত্রী থাকিলে তাহাদের প্রত্যেকের ক্ষেত্রে সকল বিষয়ে সম-ব্যবহার করিতে হইবে। কুরআন মজীদে বলা হইয়াছে?
ولن تستطيقوا أن تعدلوا بين النيساء ولو حرصتم فتميلوا محل الميل فترها كالمعتقة وان تصلوا وتتقوا فان الله كان غفورا رحيما .
“এবং তোমরা যতই ইচ্ছা কর না কেন তোমাদের স্ত্রীদের প্রতি সমান ব্যবহার করিতে কখন সক্ষম হইবে না। তবে তোমরা কোন একজনের দিকে সম্পূর্ণ ঝুঁকিয়া পড়িও না এবং অপরকে ঝুলানো অবস্থায় রাখিও না। যদি তোমরা নিজদিগকে সংশোধন কর ও সাবধান হও তবে আল্লাহ ক্ষমাশীল পরম দয়ালু” (৪ঃ ১২৯)। সমব্যবহার সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন :
كان يقسم بين نسائه
عن عائشة رضي الله عنها أن النبي فيعدل ويقول اللهم هذا قسمي فيما املك فلا تلمني فيما تملك و
• Ly
৮৪৭
“হযরত আয়েশা (রা) বর্ণনা করিয়াছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা) তাহার স্ত্রীদের মধ্যে ন্যায় ও ইনসাফের সহিত পালা বণ্টন করিতেন এবং বলিতেন : হে আল্লাহ! ইহা আমার বন্টন আমার সাধ্যমত। সুতরাং যাহাতে আমার সাধ্য নাই তাহাতে আমাকে তিরস্কার করিও না”।১২৪।
عن أبي هريرة رضي الله عنه عن البي ة قال اذا كانت عند
الرجل امرأتان فلم يعدل بينهما جاء يوم القيامة وشقه ساقط .
“হযরত আবু হুরায়রা (রা) হইতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন, যাহার দুইজন স্ত্রী রহিয়াছে সে যদি তাহাদের মধ্যে সমব্যবহার (ন্যায়) প্রতিষ্ঠা না করে, তবে কিয়ামতের ময়দানে সে এমনভাবে উঠিবে যে, তাহার শরীরের এক পার্শ্ব অবশ হইয়া থাকিবে”।১২৫
ধারা-১৩১৫
জ্ঞানার্জনের অধিকার প্রত্যেক নারীর জ্ঞানার্জন ও শিক্ষা লাভের অধিকার রহিয়াছে।
বিশ্লেষণ
পুরুষের ন্যায় প্রত্যেক নারীর সমানভাবে লেখাপড়ার অধিকার রহিয়াছে। ইসলামে নারী-পুরুষ সকলের উপর বিদ্যা অর্জন ফরজ করা হইয়াছে। কুরআন মজীদে বলা হইয়াছে?
اقرأ باسم ربك الذي خلق. خلق الإنسان من علق. اقرأ وربك
(১-r – Gull saw) fact: sd : ২ “পাঠ কর তোমার প্রতিপালকের নামে, যিনি সৃষ্টি করিয়াছেন, সৃষ্টি করিয়াছেন মানুষকে “আলাক” হইতে। পাঠ কর, আর তোমার প্রতিপালক মহা-মহিমান্বিত, যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়াছেন” (৩৯ : ৯)।
قل هل يستوي الذين يعلمون والذين لا يعلمون .
“বলুন, যাহারা জানে ও যাহারা জানে না তাহারা কি সমান হইতে পারে”(৩৯ : ৯)? ইবনে মাজা শরীফে উল্লেখ আছে?
৮৪৮
طلب العلم فريضة على كل مسلم.
“প্রত্যেক মুসলমানের উপর জ্ঞান অর্জন করা ফরজ”।১২৬
خرج ومعه بلال فظن انه لم
قال ابن عباس آشه على التى يسمع النساء فوعظهن. (رواه البخاری)
“হযরত ইবন আব্বাস (রা) বলেন, আমি প্রত্যক্ষ করিলাম যে, নবী (সা) রওয়ানা হইলেন এবং তাহার সহিত হযরত বিলাল (রা)-ও গমন করিলেন। নবী করীম (সা) ভাবিলেন, সম্ভবতঃ মহিলারা তাঁহার ভাষণ (ওয়াজ) শুনিতে পায় নাই। সুতরাং তিনি পৃথকভাবে মহিলাদের জন্য নসীহত (ওয়াজ) করিলেন”।১২৭
. ধারা-১৩১৬
নারীর ধর্ম প্রচারের অধিকার প্রত্যেক নারীর ধর্ম প্রচারের অধিকার রহিয়াছে।
বিশ্লেষণ
পুরুষের ন্যায় প্রত্যেক নারীরও দীনের তাবলীগ বা প্রচারের অধিকার রহিয়াছে। কুরআন মজীদে আল্লাহ পাক বলেন :
LL
والمؤمنون والمؤمنات بعضهم أولياء بعض يأمرون بالمعروف وينهون عن المنكر ويقيمون الصلوة ويؤتون الكاة ويطيعون الله ورسوله أولئك سيرهم الله إن الله عزيز حكيم
“মুমিন নর ও নারী একে অপরের বন্ধু। ইহারা সকার্যের নির্দেশ দেয় এবং অসৎ কার্য নিষেধ করে, সালাত কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও তাঁহার রাসূলের আনুগত্য করে। ইহাদিগকেই আল্লাহ কৃপা করিবেন এবং আল্লাহ পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময়” (৯ : ৭১)।
ধারা-১৩১৭ নারীর জিহাদে অংশগ্রহণের অধিকার নারী জিহাদে অংশগ্রহণ করিতে পারিবে।
৮৪৯
বিশ্লেষণ
ইবন হিশাম তাঁহার সীরাত গ্রন্থে উল্লেখ করিয়াছেন যে, উম্মে সা’দ বিনতে সা’দ ইবন রবীয়া হযরত উম্মে আম্মারাহ-এর নিকট গিয়াছিলেন। তখন আমি তাহাকে বলিলাম, খালাম্মা! আপনি আপনার উহুদ যুদ্ধের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করুন। তিনি বলিলেন, আমি সকালের দিকে ঘর হইতে বাহির হইলাম এবং দেখিতে লাগিলাম, মানুষেরা কে কি করিতেছে। আমার নিকট পানির পাত্র ছিল। আমি রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নিকটে গেলাম। তিনি সাহাবীদের সঙ্গে লইয়া যুদ্ধরত ছিলেন। তখন পর্যন্ত যুদ্ধ মুসলমানদের অনুকূলে ছিল। অতঃপর যখন মুসলমানরা পিছু হটিতে লাগিল তখন আমি রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নিকটবর্তী হইয়া যুদ্ধ করিতে লাগিলাম এবং তলোয়ারের সাহায্যে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর পক্ষে প্রতিরোধ গড়িয়া তুলিলাম। আমি তীরও চালাইতেছিলাম এবং শেষ পর্যন্ত আমি নিজেই আহত হইলাম।১২৮
পর্দার আয়াত নাযিল হওয়ার পরেও রাসূলুল্লাহ (সা)-এর স্ত্রীগণ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করিয়াছেন।১২৯ কাদেসিয়ার যুদ্ধে মহিলাগণ শহীদদের কবর খনন করিয়াছিলেন।১৩০
ধারা-১৩১৮ স্বামীর সহিত স্ত্রীর সফরসঙ্গী হওয়া স্ত্রী তাহার স্বামীর সফরসঙ্গী হইতে পারিবে।
বিশ্লেষণ
প্রত্যেক স্ত্রীর এই অধিকার রহিয়াছে যে, সে ইচ্ছা করিলে স্বামীর সহিত তাহার সফরসঙ্গী হইতে পারিবে। রাসূলুল্লাহ (সা) তাঁহার দেশ-বিদেশের প্রায় সকল সফরেই তাঁহার স্ত্রীদিগকে সঙ্গে লইতেন। তবে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর একাধিক স্ত্রী হওয়ার কারণে সফরের পূর্বে তিনি লটারীর মাধ্যমে নির্ধারণ করিতেন কে তাঁহার সফরসঙ্গী হইবেন। লটারীর মাধ্যমে নির্বাচিতা স্ত্রীকেই সফরসঙ্গী করিতেন। এই প্রসঙ্গে ইমাম বুখারী (র) বলেন :
القرعة بين النساء اذا اراد سفرا .
“একাধিক স্ত্রী থাকা অবস্থায় সফরের ইচ্ছা করিলে তাহাদের মধ্যে লটারী করা”। হযরত আয়েশা (রা) বলেন :
৮৫০
ان النبى صلى الله عليه وسلم كان إذا خرج اقرع بين نسائه .
“নবী করীম (সা) যখন কোথায়ও সফরের ইচ্ছা করিতেন তখন তিনি তাহার স্ত্রীদের মধ্যে লটারীর ব্যবস্থা করিতেন”।১৩১
ধারা-১৩১৯ স্ত্রীর ভরণ-পোষণ লাভের অধিকার স্ত্রী তাহার স্বামীর নিকট ভরণ-পোষণ পাইবে।
বিশ্লেষণ
প্রত্যেক স্ত্রী তাহার যাবতীয় খরচাদি তাহার স্বামী হইতে গ্রহণ করিবে এবং স্বামী তার স্ত্রীর এই খরচাদি প্রদানে বাধ্য (বিস্তারিত দ্র. ধারা-৩৮০ ও ইহার বিশ্লেষণ)।
ধারা-১৩২০ স্বামীর মাল হইতে স্ত্রীর খরচ করিবার অধিকার সাংসারিক প্রয়োজনবােধে স্ত্রী স্বামীর অজ্ঞাতসারে তাহার মাল হইতে ন্যায়সঙ্গতভাবে খরচ করিতে পারিবে।
বিশ্লেষণ
বিশেষ প্রয়োজনে স্ত্রীর এই অধিকার রহিয়াছে যে, সে স্বামীর অনুমতি ছাড়াও তাহার নিজের এবং সন্তানের জন্য স্বামীর মাল খরচ করিতে পারে। যেমন কাহারও স্বামী অত্যন্ত কৃপণ এবং সে তাহার স্ত্রী-সন্তানের প্রয়োজনীয় খরচাদি দেয় না, সে ক্ষেত্রে স্ত্রীর এই অধিকার থাকিবে।
ان ابا
عن عائشة أن هند بنت عتبة قالت يا رسول الله سفيان رجل شحيح وليس يعطيني ما يكفيني وولدى ا ما أخذت منه وهو لا يعلم فقال خذي ما يكفيك وولدك بالمعروف (بخاری) .
“হযরত আয়েশা (রা) হইতে বর্ণিত। হিন্দু বিনতে উত্মা বলিল, হে আল্লাহর রাসূল! আবু সুফিয়ান (আমার স্বামী) একজন কৃপণ লোক এবং সে আমাকে সেই পরিমাণ ভরণপোষণ দেয় না যাহা আমার ও আমার সন্তানদের জন্য যথেষ্ট হইতে
৮৫১
পারে। হাঁ (যথেষ্ট হয় তখন) যখন আমি তাহার অগোচরে তাহার মাল হইতে কিছু লই। রাসূলুল্লাহ (সা) বলিলেন, যতটা তোমার ও তোমার সন্তানদের জন্য যথেষ্ট হয় তাহা ন্যায়সঙ্গতভাবে নিয়া নাও”।১৩২
ধারা-১৩২১
নারীর স্বাধীনভাবে কাজ করিবার অধিকার প্রত্যেক নারীর স্বাধীনভাবে কাজ করিবার অধিকার রহিয়াছে।
বিশ্লেষণ
পুরুষের যেমন স্বাধীন সত্তা রহিয়াছে নারীরও তেমন স্বতন্ত্র ও স্বাধীন সত্তা রহিয়াছে। একজন পুরুষ যেমন স্বাধীনভাবে তাহার প্রতিপক্ষের সহিত চুক্তিবদ্ধ হইতে পারে, সম্পত্তি উপার্জন ও ক্রয়-বিক্রয় করিতে পারে, আর্থিক লেন-দেন করিতে পারে, তেমনি একজন নারীও স্বাধীনভাবে উক্ত কাজসমূহ করিতে পারে। এক্ষেত্রে স্বামী বা পিতা-মাতার সম্মতির প্রয়োজন হয় না। স্বামীর কর্মের জন্য স্ত্রী বা স্ত্রীর কর্মের জন্য স্বামী দায়ী নহে। যে যাহা করিবে সে জন্য দায়ী থাকবে। কুরআন মজীদে বলা হইয়াছে?
এ
ولا تكسب گنفس الأ عليها ولا تزر وازرة وزر أخرى .
“প্রত্যেকে স্বীয় কৃতকর্মের জন্য দায়ী এবং কেহ অন্য কাহারও ভার বহন করিবে না” (৮ : ১৬৪)।
ইহা ছাড়া সূরা বনী ইসরাঈল : ১৫, ফাতির : ১৮, যুমারঃ ৭, নাজম ও ৩৮ -এ বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হইয়াছে। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন :
الأكلكم راع وكلكم مسؤل عن رعيته .
“তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং তোমাদের প্রত্যেকেই নিজ নিজ দায়িত্ব সম্পর্কে জবাবদিহি করিতে হইবে”।
ধারা-১৩২২ নারী হয়রানি না হওয়ার অধিকার কোন নারীকে অযথা হয়রানি করা যাইবে না।
৮৫২
বিশ্লেষণ
কোন নারীর প্রতি অযথা হয়রানী বা নির্যাতন বৈধ নহে। আল্লাহ পাক পবিত্র কুরআন মজীদে বলিয়াছেন?
فأمسكوهن بمعروف أو فارقوهن بمعروف .
“তোমরা হয় ভালভাবেই তাহাদেরকে রাখ অথবা ভালভাবে তাহাদেরকে বিচ্ছিন্ন কর” (৬৫ ও ২)।
والتي تخافون شوزه فعظوه واهجروهن في المضاجع واضروه فان أطعتم فتبقوا عليه سبيلا و مسگون ضرارا عتوا .
“স্ত্রীদের মধ্যে তোমরা যাহাদের অবাধ্যতার আশংকা কর তাহাদিগকে সদুপদেশ দাও, তারপর তাহাদের শয্যা বর্জন কর এবং তাহাদিগকে প্রহার কর। যদি তাহারা তোমাদের অনুগত হয় তবে তাহাদের বিরুদ্ধে কোন পথ অন্বেষণ করিও না (তাহাদের অতীতের ভুলভ্রান্তি বা দোষত্রুটি অন্বেষণ করিয়া তাহাদেরকে অযথা নির্যাতন করিও না)” (৪ ও ৩৪; আরও দ্র. ২ঃ ২৩১)।
স্ত্রীকে প্রহারের ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (সা) তাহার বিদায় হজ্জের ঐতিহাসিক ভাষণে বলেন যে, “স্ত্রী অশ্লীল কর্মে (যেনা) লিপ্ত হইলেই কেবল তাহাকে হালকা মারধর করা যাইবে মারাত্মকভাবে নয়” (
c a L123AL) মুসলিম, কিতাবুল হজ্জ, বাব হাজ্জাতিন নাবিয়্যী (সা), নং ২৯৫০; তিরমিযী, কিতাবুর রিদা, বাব ১১, নং ১১০১; কিতাবুত তাফসীর, সূরা তওবা, নং ৩০২৫; আবু দাউদ, মানাসিক, বিদায় হজ্জের ভাষণ, নং ১৯০৫; ইবন মাজা, নিকাহ, বাব ৩, নং ৩০৭৪; দারিমী, মানাসিক, বাব বিদায় হজ্জ, নং ১৮৫০; ২য় খণ্ড; মুসনাদ আহমাদ, ৫খণ্ড, পৃ. ৭৩, নং ২০৯৭১)।
ধারা-১৩২৩
নারীর পুর্নবিবাহ প্রত্যেক তালাকপ্রাপ্তা ও বিধবা নারী ইদ্দাতশেষে তাহার পছন্দমত পুনর্বিবাহ করিতে পারিবে।
৮৫৩
বিশ্লেষণ
তালাকপ্রাপ্তা ও বিধবা নারী ইদ্দাত পালনশেষে পুনরায় বিবাহ করিতে পারিবে। ইহাতে বাধা প্রদান করা হারাম এবং নারীর অধিকারের পরিপন্থী। পবিত্র কুরআনে এসম্পর্কে বলা হইয়াছে?
واذا طلقتموا النيساء فبلغن أجله فلا تعضلوهن أن ينكحن أزواجهن اذا تراضوا بينهم بالمعروف ذالك يوعظ به من كان منكم يؤمن بالله واليوم الآخر ذالك أزكى لكم واطه والله يعلم وانتم
• ১৯৭১ “তোমরা যখন স্ত্রীদিগকে তালাক দাও এবং তাহারা তাহাদের ইদ্দতকাল পূর্ণ করে, তাহারা যদি বিধিমত পরস্পর সম্মত হয়, তবে স্ত্রীগণ নিজেদের স্বামীদিগকে বিবাহ করিতে চাহিলে তোমরা তাহাদিগকে বাধা দিও না। ইহা দ্বারা তোমাদের মধ্যে যে কেহ আল্লাহ্ ও পরকালে বিশ্বাস করে তাহাকে উপদেশ দেওয়া হয়। ইহা তোমাদের জন্য শুদ্ধতম ও পবিত্রতম। আল্লাহ জানেন তোমরা জান না” (২ ও ২৩২)।
ধারা-১৩২৪ নারীর নিজ সন্তানকে দুধ পান করানোর অধিকার প্রত্যেক মাতা তাহার সন্তানকে স্তন্যদান করিতে পারিবে।
বিশ্লেষণ
সন্তানকে দুধ পান করানোও নারীর একটি অধিকার। শিশুকে স্তন্যদান করা মাতার দায়িত্ব। আর মাতার ভরণপোষণ ও জীবন ধারণের অন্যান্য যাবতীয় খরচ বহন করা পিতার দায়িত্ব। কুরআন মজীদে বলা হইয়াছে?
والولدات يرضعن أولادهن حولين كاملين لمن أراد أن يتم
الرضاعة وعلى المولود له رزقهن وكسوتهن بالمعروف لا تكلف نفس الا وسعها لأضار واله بولدها و موو له بولده وعلى الوارث مثل ذالك .
৮৫৪
“যে স্তন্য পানকাল পূর্ণ করিতে চাহে তাহার জন্য জননীগণ তাহাদের সন্তানদিগকে পূর্ণ দুই বৎসর স্তন্য পান করাইবে। জনকের কর্তব্য যথাবিধি তাহাদের ভরণ পোষণ করা। কাহারও উপর তাহার সাধ্যাতীত কার্যভার দেওয়া হয় না। কোন জননীকে তাহার সন্তানের জন্য এবং কোন জনককে তাহার সন্তানের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত করা হইবে না এবং উত্তরাধিকারীগণেরও অনুরূপ কর্তব্য” (২ঃ ২৩৩)।
ধারা-১৩২৫ ইদ্দাতশেষে প্রস্তাবাদি আসিবার উদ্দেশ্যে
প্রদর্শনীমূলক সাজসজ্জার অধিকার বিধবা বা তালাকপ্রাপ্তা নারী ইদ্দাত পালনশেষে তাহার পুনর্বিবাহের প্রস্তাবাদি আসিবার উদ্দেশ্যে প্রদর্শনীমূলক সাজসজ্জা করিতে পারিবে।
বিশ্লেষণ
স্ত্রীদের বিবাহের উপযোগী রাখিয়া যদি কোন স্বামীর মৃত্যু হয় তবে ঐ যুবতী বিধবা নারী অন্যত্র পুনর্বিবাহের প্রস্তাব পাওয়ার আশায় সাধারণ সাজসজ্জা করিতে পারিবে। এ সম্পর্কে কুরআন মজীদে বলা হইয়াছে?
والذين يتوقون منكم ويرون أزواجا يتربصن بأنفسهن أربعة أشهر وعشرا فاذا بلغن أجلهن فلا جناح عليكم فيما فعلن في أنفسهن بالمعروف والله بما تعملون خبير”.
“তোমাদের মধ্যে যাহারা স্ত্রী রাখিয়া মৃত্যুমুখে পতিত হয় তাহাদের স্ত্রীগণ চারি মাস দশদিন প্রতীক্ষায় থাকিবে। যখন তাহারা তাহাদের ইদ্দাতকাল পূর্ণ করিবে তখন যথাবিধি নিজেদের জন্য (সাজসজ্জা) যাহা করিবে তাহাতে তোমাদের কোন অপরাধ নাই। তোমরা যাহা কর আল্লাহ সে সম্বন্ধে সবিশেষ অবহিত” (২ ও ২৩৪)।
ধারা-১৩২৬ পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনের পরিত্যক্ত
সম্পত্তিতে নারীর উত্তরাধিকার। প্রত্যেক নারী তাহার পিতা-মাতা, স্বামী ও অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনের পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে একটি নির্দিষ্ট অংশ পাইবে।
৮৫৫
বিশ্লেষণ
আত্মীয়-স্বজনের পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে পুরুষের ন্যায় নারীরও একটি নির্দিষ্ট অংশ রহিয়াছে। নারীর এই নির্দিষ্ট অংশ আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত। কুরআন মজীদে বলা হইয়াছে?
للرجال نصيب مما ترك الوالدان والأقربون ولاء نصيب مما
ترك الوالدان والأقربون مما قل منه أو كثر نصيبا مفروضا .
•
“পিতা-মাতা এবং আত্মীয়-স্বজনের পরিত্যক্ত সম্পতিত্তে পুরুষের অংশ আছে এবং পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনের পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে নারীরও অংশ আছে। উহা অল্পই হউক অথবা বেশীই হউক, এক নির্ধারিত অংশ” (৪৭)।
ইহা ছাড়াও সূরা নিসার ১১ ও ১২ নং আয়াতেও নারীর এই উত্তরাধিকার সম্পর্কে বিস্তারিত বিধান দেওয়া হইয়াছে।
ধারা-১৩২৭
নারীর হিজরতের অধিকার সামর্থ্যবান নারী পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে হিজরত করিতে পারে।
বিশ্লেষণ
যে সকল কারণে একজন পুরুষের প্রতি দেশত্যাগ (হিজরত) করা ওয়াজিব হয়, ঠিক তেমনিভাবে একজন নারীরও দেশত্যাগ করা ওয়াজিব হয়, যদি না তাহারা একান্তই অসহায় হয়। কুরআন মজীদে বলা হইয়াছে?
ان الذين توفهم الملائكة ظالمي أنفسهم قالوا فيما نتم
قالوا تا مستضعفين في الأرض قالوا ألم تكن أرض الله واسع
ف هاجروا فيها فأولئك مأواهم جهنم وساءت مصيرا الأ المستضعفين من الرجال والنساء والولدان لا يستطيعون حيلة ولا
.
يهتدون سب
“যাহারা নিজেদের উপর জুলুম করে তাহাদের প্রাণ গ্রহণের সময় ফেরেশতাগণ বলে, তোমরা কি অবস্থায় ছিলে? তাহারা বলে, দুনিয়া কি এমন প্রশস্ত ছিল না
৮৫৬
যেথায় তোমরা হিজরত করিতে? ইহাদেরই আবাস হইল জাহান্নাম। আর উহা কত মন্দ আবাসস্থল। তবে যেসব অসহায় পুরুষ-নারী ও শিশু কোন উপায় অবলম্বন করিতে পারে না এবং কোন পথও পায় না, আল্লাহ হয়ত তাহাদর পাপ মোচন করিবেন। কারণ আল্লাহ পাপ মোচনকারী ক্ষমাশীল” (সূরা নিসা : ৯৭-৯৮-৯৯)। ইহা ছাড়াও সূরা নিসার আয়াত নং ১০০; আল-আহযাব : ৫০; মুমতাহিনা : ১০-এ বিস্তারিত আলোচনা করা হইয়াছে।
وقد ورد عن ابن عباس قوله كنت وأمي من المستضعفين أنا
• (s, 199) L.:11 3 stul! “হযরত ইবন আব্বাস (রা) বর্ণনা করেন, মক্কার শিশুদের মধ্যে আমি ও মহিলাদের মধ্যে আমার মা অসহায় ও অপারগ লোকদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম”।১৩৪
হিজরত করিয়া আসা মহিলাদের এই বলিয়া শপথ করানো হইত, আমি শুধুমাত্র আল্লাহ ও তাঁহার রাসূল (সা)-এর মহব্বতে এবং ইসলামে আকৃষ্ট হইয়াই হিজরত করিয়াছি, ইহার পর তাহাদেরকে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নিকট বাইয়াত
গ্রহণের জন্য পেশ করা হইত। ১৫
ধারা-১৩২৮ নারীর আনুগত্যের শপথ গ্রহণের অধিকার প্রত্যেক নারী আনুগত্যের শপথ গ্রহণ করিতে পারিবে।
বিশ্লেষণ
পুরুষের যেমন আনুগত্যের শপথ গ্রহণের অধিকার রহিয়াছে, নারীদেরও তেমনি তাহা রহিয়াছে। কুরআন মজীদে বলা হইয়াছে?
০
১
ايفنك على أن يشرك بالله
ايها النبي اذا جاءت المؤمن شيئا ولا يشرق و يژنين ولا يقتل اولاده ولا يأتين ببهتان يفترينه بين أيديهن وأرجلهن ولا يعصين في معروف فبايعهن
الله ان الله غفور رحيم
واستنفرله
৮৫৭
“হে নবী! মুমিন নারীগণ যখন তোমার নিকট আসিয়া বাইয়াত করে এই মর্মে যে, তাহারা আল্লাহর সহিত কোন শরীক স্থির করিবে না, চুরি করিবে না, ব্যভিচার করিবে না, নিজদিগের সন্তান হত্যা করিবে না, সজ্ঞানে কোন যেনার অপবাদ রচনা করিয়া রটাইবে না এবং সকার্যে তোমাকে অমান্য করিবে না, তখন তাহাদিগের বায়আত গ্রহণ করিও এবং তাহাদিগের জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করিও। আল্লাহ তো ক্ষমাশীল পরম দয়ালু” (সূরা মুমতাহানা ও ১২)।
হাদীস হইতে প্রমাণিত হয় যে, এই শপথ কেবল হােদায়বিয়ার ঘটনার পরেই নহে, বরং বরাবর হইয়াছে, এমনকি মক্কা বিজয়ের দিনও রাসূলুল্লাহ (সা) পুরুষদের নিকট হইতে শপথ গ্রহণ করিয়া “সাফা” পর্বতের উপর নারীদের নিকট হইতে শপথ গ্রহণ করেন। পর্বতের পাদদেশে দাঁড়াইয়া হযরত উমার (রা) রাসূলুল্লাহ (সা)-এর বাক্যাবলী নিজে সমবেত মহিলাদের নিকট পৌছাইয়া দিতেন। তখন যাহারা আনুগত্যে শপথ গ্রহণ করিয়াছিল তাহাদের মধ্যে আবু সুফিয়ানের স্ত্রী হিন্দও ছিল। সে প্রথমে লজ্জাবশত নিজেকে গোপন রাখিতে চাহিয়াছিল, ইহার পর শপথের কিছু বিবরণ জিজ্ঞাসা করিয়া লইতে বাধ্য হইয়াছিল। সে একাধিক প্রশ্ন উত্থাপন করিয়াছিল।১৩৬
ইমাম বুখারী (র) উল্লেখ করিয়াছেন যে, পুরুষদের আনুগত্যের শপথ কখনো কখনো মেয়েদের শপথের ভাবানুযায়ী নেওয়া হইত। হযরত উবাদা ইবনুস সামেত (রা) হইতে বর্ণিত। একদা রাসূলুল্লাহ (সা)-এর চারিপাশে বেশ কিছু সাহাবী বসিয়া ছিলেন। তাহাদেরকে উদ্দেশ্য করিয়া তিনি বলিলেনঃ তোমরা আমার নিকট আসিয়া
আনুগত্যের শপথ গ্রহণ কর এই বলিয়া যে, তোমরা আল্লাহর সহিত কাহাকেও শরীক করিবে না, চুরি করিবে না, যেনা করিবে না, তোমাদের সন্তানদেরকে হত্যা করিবে না, তোমাদের সন্তানকে অন্যের সন্তান বলিয়া চালাইয়া দিবে না এবং আমার দেয়া যাবতীয় সকার্যের নির্দেশ অমান্য করবে না।১৩৭
ধারা-১৩২৯ নারীর স্বনামে উপহার বিনিময়ের অধিকার নারী স্বনামে অন্য যে কোন ব্যক্তিকে উপহার প্রদান করিতে অথবা কাহারও নিকট হইতে উপহার গ্রহণ করিতে পারে।
৮৫৮
বিশ্লেষণ
নারী তাহার নিজের নামে অপর ব্যক্তিকে উপহার-উপঢৌকন পেশ করিতে পারে। এ সম্পর্কে হাদীসে উল্লেখ আছে?
قالت أم سليم، يا انس اذهب بهذا الى رسول الله له فقل بعثت هذا اليك امي وهي تقرأ السلام وتقول ان هذا لك منا قليل يا
dr low) উম্মে সুলাইম (রা) বলেন, “হে আনাস! তুমি ইহা রাসূলুল্লাহ (সা)-এর খেদমতে লইয়া যাও এবং তাঁহাকে বল, আমার ‘মা’ এইগুলি আপনার নিকট পাঠাইয়াছেন এবং আপনাকে সালাম জানাইয়াছেন। তুমি আরও বলিবে, হে আল্লাহর রাসূল! ইহা আমাদের পক্ষ হইতে আপনার জন্য নগণ্য উপহার”।১৩৮
ধারা-১৩৩০ নারীর মসজিদে গমন ও জামাআতে নামায আদায়ের অধিকার
নারী মসজিদে গিয়া জামাআতের সহিত নামায আদায় করিতে পারিবে।
বিশ্লেষণ
প্রত্যেক নারী জামাআতে নামায আদায় করিবার জন্য মসজিদে গমন করিতে পারিবে। কেহ তাহাকে এ বিষয়ে বাধা প্রদান করিতে পারিবে না, এমনকি স্বামীও নহে। আতিকা বিনতে যায়েদ (রা) মহিলা সাহাবী তাহার স্বামীর নিষেধ সত্বেও মসজিদে গিয়া নামায আদায় করিয়াছেন। এ সম্পর্কে সহীহ বুখারীতে উল্লেখ রহিয়াছে?
قال لها ابن عمر لم تخرجين (الصلوة الصبح والعشاء) وقد تعلمين أن عمر يكره ذالك ويغار؟ قالت ومايمنه أن ينهانی قال
لا تمنعوا اماء الله مساجد الله .
يمنه قول رسول الله
“আবদুল্লাহ ইবন উমার (রা) তাহাকে বলিলেন, আপনি কেন ফজর ও এশার নামায পড়িতে মসজিদে যান? অথচ আপনি জানেন যে, হযরত উমার (রা) ইহা
৮৫৯
পছন্দ করেন না এবং ইহা তাহার আত্মমর্যাদায় বাঁধে। তিনি বলিলেন, উমার (রা) নিজে কেন আমাকে সরাসরি নিষেধ করেন না? ইবন উমার (রা) বলিলেন, রাসূলুল্লাহ (সা)-এর এই বাণীর কারণেই তিনি কিছু বলিতেছেন না যে, “তোমরা আল্লাহর দাসীদেরকে মসজিদে যাইতে বাধা দিও না”।১৩৯
হাফেজ ইবন হাজার আসকালানী বলেন, অপর এক বর্ণনায় রহিয়াছে যে, আতিকা (রা) উমার (রা)-কে বলিয়াছিলেন, আপনি নিজে আমাকে নিষেধ না করা পর্যন্ত আমি ইহা হইতে বিরত হইব না। ইমাম যুহরী বলিয়াছেন, হযরত উমার (রা) যখন আততায়ীর আক্রমণে আহত হইয়াছিলেন সে সময় আতেকা মসজিদেই ছিলেন।১৪০
ইহা ছাড়াও মুসলিম শরীফে ফাতেমা বিনতে কায়েস (রা) হইতে বর্ণিত রহিয়াছে যে, একদা লোকদিগকে aaa11 (নামাযের জন্য সমবেত হও) এই বলিয়া ডাক দেওয়া হইলে ফাতেমা বিনতে কায়েস (রা) বলেন, সাধারণ লোকদের সহিত আমিও সেখানে গিয়া উপস্থিত হইলাম। মহিলাদের প্রথম সারিতেই আমি ছিলাম অর্থাৎ পুরুষদের শেষ সারির পিছনেই ১৪১
ধারা-১৩৩১ নারীর পরামর্শ দেওয়ার অধিকার নারী যে কোন বিষয়ে পরামর্শ দিতে পারিবে।
বিশ্লেষণ
স্ত্রী তাহার স্বামীকে পরামর্শ প্রদান করিতে পারে। পরামর্শের গুরুত্ব সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে বলা হইয়াছে।
وامرهم شورى بينهم .
“তাহারা নিজেদের মধ্যে পরামর্শের ভিত্তিতে নিজেদের কর্ম সম্পাদন করে” (৪ : ৩৮)
পরামর্শের এই গুরুত্ব ব্যাপক হওয়ার সাথে সাথে পারিবারিক জীবনেও স্বামী-স্ত্রী একে অপরের সহিত পরামর্শের অধিকারী। স্বামীর মত স্ত্রীও যে কোন বিষয়ে স্বামীকে পরামর্শ দানের অধিকার রাখে। এ সম্পর্কে বুখারী ও মুসলিমে উল্লেখ রহিয়াছে?
৮৬০
عن عمر قال …………….فبينا أنا في أمر أتامره اذا قالت امرأتي لو ضعت كذا وكذا فقلت لها مالك ولما هاهنا فيما تكلفك في امر اريده فقالت عجبا لك يا ابن الخطاب ما تريد ان تراجع أنت وان ابنتك لتراجع رسول الله وفي روية قالت ولم تنكر ان اراجعك فوالله ان ازواج النبی صلی الله عليه وسلم يراجعه .
“হযরত উমার (রা) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একটি বিষয়ে আমি চিন্তা করিতেছিলাম। এমন সময় আমার স্ত্রী আসিয়া বলিল, আপনি কাজটি এইভাবে এইভাবে করিলে হইত। আমি তাহাকে বলিলাম, তুমি এইখানে কি চাও? যে বিষয়টি লইয়া আমি চিন্তা করিতেছি উহাতে তোমার নাক গলাইবার দরকার কি? সে বলিল, হে খাত্তাবের পুত্র! তোমার আচরণে আমি বিস্মিত হইলাম। তুমি চাও না তোমার সহিত কেহ বাদানুবাদ করুক। অথচ তোমার মেয়ে স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (সা)-এর সহিত তর্ক-বিতর্ক করে। ইহাতে তোমার অপছন্দের কি আছে? আল্লাহর শপথ! রাসূলুল্লাহ (সা)-এর স্ত্রীগণও তাহার সহিত বাদানুবাদ করে”।১৪২
ধারা-১৩৩২ নারীদের ঈদগাহে যাওয়ার অধিকার নারীগণ ঈদগাহে যাইয়া পুরুষদের সহিত জামাআতে ঈদের নামায পড়িতে পারিবে।
বিশ্লেষণ
প্রত্যেক নারী, সে যে বয়সেরই হউক না কেন, এমনকি ঋতুবতী মহিলাদেরও ঈদগাহে উপস্থিত হওয়ার অধিকার রহিয়াছে। এ সম্পর্কে হাদীসে উল্লেখ রহিয়াছে?
।
يقول تخرج العواتق
عن أم عطية سمعت رسول الله وذوات الخدور …… والحيض ويشهدن الخير ودعوة المؤمنين ويعتزل الحيض المصلى .
“হযরত উম্মে আতিয়া (রা) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা)-কে বলিতে শুনিয়াছি ও যুবতী ও পর্দানশীন এবং ঋতুবতী মহিলারা ঘর হইতে
৮৬১
ঈদের মাঠে বাহির হইবে, যাহাতে তাহারা কল্যাণকর কাজে ও মুমিনদের সমাবেশে দোয়ায় উপস্থিত হইতে পারে। কিন্তু ঋতুবতী মহিলারা সালাত আদায় হইতে বিরত থাকিবে”।১৪৩
হযরত হাফসা বিনতে সীরীন (র) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা যুবতীদেরকে ঈদের দিন বাহির হইতে নিষেধ করিতাম। কিন্তু উম্মে আতিয়া (রা)-কে এই সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হইলে তিনি বলিলেন, নিশ্চয় তাহারা বাহির হইবে। তিনি আরও বলিলেনঃ
كنا نؤمر أن نخرج يوم العيد حتى نخرج البكر من خدرها.
“আমাদেরকে ঈদের দিন বাড়ীর বাহিরে যাইতে নির্দেশ দেওয়া হইত। এমনকি আমরা যুবতীদেরকে পর্দার আড়াল হইতে বাহির করিয়া দিতাম”।১৪৪
ধারা-১৩৩ নারীর মেহমানদের খেদমত করার অধিকার নারী মেহমানদের মেহমানদারি করিতে পারিবে।
বিশ্লেষণ
স্ত্রী তাহার স্বামীর মেহমানদের খেদমত করিতে পারিবে। তবে শর্ত থাকে যে, স্ত্রীকে অবশ্যই শরঈ পর্দা মোতাবেক মেহমানদের সামনে উপস্থিত হইতে হইবে।১৪৫
لا اعرس ابو أسيد الساعدي دعا النبي له وأصحابه فما صنع لهم طعاما ولا قدم اليهم الا امرأته أم اسيد بلت تمرات في ثور من حجارة من الليل فلما فرغ النبي له من الطعام أمانته له قسقته تتحفه بذابك .
“আবু উসাইদ সায়েদী (রা) বিবাহ উপলক্ষে নবী করীম (সা) ও তাঁহার সাহাবীগণকে দাওয়াত করিলেন। এই উপলক্ষে রান্নাবান্না করিয়া খাবার প্রস্তুত করা ও উহা পেশ করিবার কাজ তাহার স্ত্রী উম্মে উসাইদ সম্পন্ন করিলেন। তিনি পাথরের একটি পাত্রে কিছু খেজুর রাত হইতে ভিজিবার জন্য রাখিয়া দিয়াছিলেন। রাসূলুল্লাহ
৮৬২
(সা)-এর খাওয়া শেষ হইলে তিনি উহা নিজ হাতে খুলিয়া রাসূলুল্লাহ (সা) তাঁহার কাছে তাহা পান করিবার জন্য তোহফাস্বরূপ পেশ করিলেন। ১৪৬
ধারা-১৩৩৪ নারীর নিজ বিবাহের প্রস্তাব পেশের অধিকার নারী তাহার নিজের বিবাহের জন্য পাত্রের নিকট সরাসরি প্রস্তাব পেশ করিতে পারিবে।
বিশ্লেষণ
কোন পুরুষের যোগ্যতা ও সততায় আকৃষ্ট হইয়া যে কোন নারী তাহার নিকট বিবাহের প্রস্তাব পেশ করিতে পারে। এ সম্পর্কে হাদীসে বলা হইয়াছে।
قال سمعت ثابت البنائي قال كنت عند انس وعنده ابنة له قال انس جاعت امرأة الى رسول الله له تعرض عليه نفسها قالت يا رسول الله ال بي حاجة فقالت بنت انس ما اقل حياءها واسواتاه واسوااه قال هى خيرمنك رغبت في النبي عليه فعرضت عليه نفسها (بخاري في باب عرض المرأة نفسها على الرجل الصالح
• (V\A
“ছাবেত আল-বুনানী (র) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আনাস (রা)-এর নিকট ছিলাম, তাহার নিকট তাহার এক কন্যাও ছিলেন। আনাস (রা) বলিলেন, এক মহিলা রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নিকট উপস্থিত হইয়া বলিল, হে আল্লাহর রাসূল! আমি নিজেকে আপনার খেদমতে সমর্পণ করিবার জন্য আসিয়াছি (বিবাহের প্রস্তাব দেওয়ার জন্য আসিয়াছি)। এই কথা শুনিয়া আনাসের কন্যা বলিয়া উঠিল, মহিলার লজ্জা কতই না কম, তাহার কাজটি খুবই জঘন্য, তাহার কাজটি খুবই নিন্দনীয়। আনাস (রা) বলিলেন, তোমার চাইতে সে মহিলা অনেক উত্তম। সে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর প্রতি আকৃষ্ট হইয়া তাহার খেদমতে বিবাহের প্রস্তাব দিয়াছে”।১৪৭
হাফেজ ইবন হাজার, ইবন দাকীক আল-ঈদ প্রমুখ বলিয়াছেন, এইভাবে বিবাহের প্রস্তাব দেওয়া বৈধ।১৪৮
ধারা-১৩৫ অর্থোপার্জনের জন্য নারীর বৈধ পেশা গ্রহণের অধিকার অর্থোপার্জনের জন্য নারী যে কোন বৈধ পেশা অবলম্বন করিতে পারিবে।
বিশ্লেষণ
হযরত আয়েশা (রা) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যয়নব আমাদের মধ্যে সবচাইতে বেশী দানশীলা ছিলেন। কারণ তিনি স্বহস্ত কাজ করিতেন ও সদাকা করিতেন।১৪৯
হযরত যয়নব (রা) হস্ত শিল্পে খুবই পারদর্শী ছিলেন তিনি চামড়া পাকা করিতেন এবং তাহা সেলাই করিয়া আল্লাহর রাস্তায় দান করিতেন। ১৫০
হযরত আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ (রা)-এর স্ত্রী যয়নব (রা) স্বহস্তে কাজ করিয়া নিজের স্বামী ও তাহার নিয়ন্ত্রণে লালিত-পালিত ইয়াতীমদের ভরণ-পোষণের ব্যবস্থা করিতেন। এই সম্পর্কে তিনি একদিন রাসূলুল্লাহ (সা)-ক জিজ্ঞাসা করিলেন, আমার স্বামী ও আমার তত্ত্বাবধানে পালিত ইয়াতীমের ভরণ-পোষণের জন্য যাহা দান করি উহা কি সদাকা হিসাবে আদায় হইবে? উত্তরে রাসূলুল্লাহ (সা) বলিলেন, হাঁ, যয়নবের জন্য দুইটি প্রতিদান রহিয়াছে, একটি হইল আত্মীয়তার হক আদায়ের সওয়াব এবং অপরটি হইল সদাকার সওয়াব। ১৫১
ধারা-১৩৩৬ স্বামীর সহিত দাওয়াতে অংশগ্রহণের অধিকার স্ত্রী তাহার স্বামীর সহিত পানাহার ইত্যাদির দাওয়াতে অংশগ্রহণ করিতে পারিবে।
বিশ্লেষণ
প্রত্যেক স্ত্রীর তাহার স্বামীর সহিত দাওয়াতে অংশগ্রহণের অধিকার রহিয়াছে। এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর দৃষ্টান্ত উল্লেখ করা যাইতে পারে। তিনি স্ত্রীকে সঙ্গে
লইয়া দাওয়াত গ্রহণ করিতে অস্বীকৃতি জানান। মুসলিম শরীফে উল্লেখ রহিয়াছেঃ
৮৬৪
فارسيا كان طيب المرق صنع
عن انس آن جار الرسول الله
ثم جاء يدعوه فقال رسول الله له وهذه لعائشة
الرسول الله فقال لا فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم لا عاد يدعوه فقال رسول الله له وهذه قال قال رسول الله ؟ لا فعاد يدعوه فقال رسول الله له وهذه قال نعم في الثالثة فقاما يتدافعان حتى اتيا
: (Lws) “হযরত আনাস (রা) হইতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা)-এর এক পারসিক প্রতিবেশী, যিনি ভাল গোশত রান্না করিতে পারিতেন, তাঁহার জন্য খাদ্য প্রস্তুত করিয়া তাহাকে দাওয়াত দিতে আসিলেন। রাসূলুল্লাহ (সা) হযরত আয়েশা (রা)-কে দেখাইয়া বলিলেন, এও কি আমার সহিত যাইবে? সে বলিল, না। রাসূলুল্লাহ (সা) বলিলেন, তাহা হইলে আমার যাওয়া হইবে না। ইহার পর লোকটি ফিরিয়া গিয়া পুনরায় তাঁহাকে ডাকিতে আসিলে রাসূলুল্লাহ (সা) বলিলেন, সেও কি আমার সঙ্গে যাইবে? লোকটি বলিল, না। তিনি বলিলেন, তাহা হইলে আমি যাইতে পারিতেছি না। লোকটি পুনরায় তাহাকে ডাকিতে আসিলে রাসূলুল্লাহ (সা) তাহাকে বলিলেন, আয়েশা কি আমার সহিত যাইবে? এইবার তৃতীয়বার লোকটি বলিল, হাঁ। ইহার পর তাহারা উভয়ে উঠিলেন এবং একে অপরের পিছনে সেই লোকটির গৃহ পর্যন্ত পৌঁছাইলেন।১৫২
ধারা—১৩৩৭ নারীর অভিনন্দন জ্ঞাপনের অধিকার
নারী পুরুষকে এবং পুরুষ নারীকে অভ্যর্থনা ও অভিনন্দন জ্ঞাপন করিতে পারিবে।
বিশ্লেষণ
সম্মানিত অতিথির সামনে নারী “অভিনন্দন বার্তা” পেশ করিতে পারিবে। এই সম্পর্কে হাদীসে উল্লেখ রহিয়াছে?
ان عائشة قالت جاءت هند بنت عتبة قالت يا رسول الله ماكان على ظهر الأرض من أهل خباء أحب الى ان يذلوا من أهل خباعك ثم
bbc
ما اصبح اليوم على ظهر الأرض أهل خباء احب الى ان يعثروا من أهل خاك قالت والذي نفسي بيده ………..
“হযরত আয়েশা (রা) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হিন্দ বিনতে উবা রাসূলুল্লাহ (সা)-কে অভিনন্দন জানাইয়া বলিলেন : ইয়া রাসূলাল্লাহ! পৃথিবীর বুকে আপনার পরিবার-পরিজন লাঞ্ছিত ও অপমানিত হউক এই বিষয়টি আমার নিকট সবচাইতে বেশি প্রিয় ছিল। কিন্তু আজ এমন হইয়াছে যে, আমার নিকট পৃথিবীর বুকে আপনার পরিবার-পরিজনের সম্মানিত ও মর্যাদাশালী হওয়ার ব্যাপারটি সবচাইতে বেশি প্রিয়। তিনি আরও বলেন, শপথ সেই সত্তার যাহার হাতে আমার
…. are
و
ধারা-১৩৩৮ পুরুষদের সহিত মত বিনিময়ের অধিকার নারী পুরুষের সহিত মত বিনিময় করিতে পারিবে।
বিশ্লেষণ
নারী যে কোন প্রয়োজনীয় বিষয়ে পুরুষের সহিত মত বিনিময় করিতে পারে। এ সম্পর্কে হাদীসে উল্লেখ রহিয়াছে?
ايا
عن قيس بن أبي حازم قال تل أبو بكر على امرأة من أحمس يقال لها زينب فرأها لاتام فقال ما لها لا تگلم قالواحجت مصمته فقال لها لمنى ان هذا لا يحل هذا من عمل الجاهلية فتكلمت فقالت من انتقال امرأ من المهاجرين قالت الى المهاجرين قال من قريش قالت من اى قريش انت قال انك لسؤل انا ابوبكر قالت مابقانا على هذا الامر الصالح الذي جاء لله به بعد الجاهلية قال بقائكم عليه مااستقامت بگم ائمتكم قالت وما الأمة قال اما كان لقومك رؤس واشراف يأمرونهم فيطيعونهم قالت بلی هم اولئك على الناس.
:
৮৬৬
“কায়েস ইবনে আবু হাযেম (র) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবু বাকর (রা) যয়নব নামী আহমাস গোত্রীয় এক মহিলার নিকট গিয়া দেখিলেন যে, সে কথা বলে
। তিনি জিজ্ঞাসা করিলেন, এই মহিলার কি হইয়াছে, কথা বলিতেছে না কেন? লোকেরা বলিল, এই মহিলা মান্নত করিয়াছে যে, হজ্জ পালনকালীন সময়ে কোন কথা বলিবে না। আবু বাকর (রা) বলিলেন, তুমি কথা বল, এইরূপ মান্নত বৈধ নহে। ইহা জাহিলী যুগের প্রথা। তখন মহিলা কথা বলিল। জিজ্ঞাসা করিল, আপনি কে? তিনি বলিলেন, আমি একজন মুহাজির। সে বলিল, কোন গোত্রীয় মুহাজির? বলিলেন, আমি কুরাইশ গোত্রীয় মুহাজির। বলিল, কুরাইশের কোন গোত্রভুক্ত আপনি? জবাব দিলেন, তুমি তো দেখিতেছি অধিক প্রশ্নকারিনী? আমি আবু বাকর (রা)। মহিলা বলিল, জাহিলী যুগের পরে আল্লাহ আমাদের যে সঠিক দীন দান করিয়াছেন তাহার উপর আমরা কত দিন টিকিয়া থাকিতে পারিব? তিনি বলিলেন, যত দিন তোমাদের নেতৃবর্গ সত্যের উপর শক্তভাবে প্রতিষ্ঠিত থাকিতে পারিবে। মহিলা বলিল, এই নেতৃবর্গ বলিতে আপনি কি বুঝাইতে চাহিতেছেন? তিনি বলিলেন, তোমার জাতির মধ্যে এমন লোক আছে না যাহাদের নির্দেশের সকলেই আনুগত্য করে? মহিলা বলিল, হাঁ আছে। তিনি বলিলেন, ইহারাই মানুষের নেতা”।১৫৪
ইহা ছাড়াও বুখারী ও মুসলিমে উম্মে ইয়াকুব (রা)-এর আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ (রা)-এর সহিত মত বিনিময়ের ঘটনারও উল্লেখ রহিয়াছে।১৫৫
ধারা-১৩৩৯ কুরআন ও হাদীস সম্পর্কে ব্যাখ্যা প্রদানে নারীর অধিকার নারী কুরআন ও হাসীদের ব্যাখ্যা প্রদান করিতে পারিবে।
বিশ্লেষণ
যে সকল নারীর কুরআন ও হাদীসের বিশেষ জ্ঞান রহিয়াছে তাহারাও পুরুষদের মত কুরআনের যে কোন আয়াত বা রাসূলুল্লাহ (সা)-এর হাদীস সম্পর্কে ব্যাখ্যা প্রদান করিতে পারিবেন। এ সম্পর্কে বুখারী ও মুসলিমে উল্লেখ রহিয়াছে?
قال عروة سالت عائشة فقلت لها ارأيت قول الله تعالى ان الصفا والمروة من شعائر الله فمن حج البيت أو اعتمر فلا جناح
৮৬৭
عليه أن يطوف بهما فوالله ما على احد جناح أن لا يطوف بالصفا والمرؤة قالت بئسما قلت يا ابن اخي ان هذه لوكانت کما اولتها عليه كانت لا جناح عليه ان لا يطوف بهما ولكنها انزلت في الانصار گائوا قبل أن يسلموا يهلون لمناة الطاغية التي كانوا يعبد ونهاعند المشكل فكان من اهل يتحرج أن يطوف بالصفا
عن ذلك قالوا يا رسول
والمروة فلما اسلموا سئلوا رسول الله
انتگرج ان نطوف بالصفا والمروة فانزل الله ان الصفا
الله انا
১
–
……….. . All at – 639lls “উরওয়া (র) হইতে বর্ণিত। তিনি হযরত আয়েশা (রা)-কে জিজ্ঞাসা করিলেন, মহান আল্লাহর এই বাণী সম্পর্কে আপনার অভিমত কি : “নিশ্চয় সাফা ও মারওয়া পাহাড়দ্বয়) আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং যে কেহ বাইতুল্লাহর হজ্জ বা উমরাহ করিবে তাহার কোন গুনাহ হইবে না যদি সে ঐ দুইটি পাহাড়ের মাঝে সাঈ করে”? অতএব আল্লাহর শপথ! মনে হয় সাফা ও মারওয়ার মাঝে তাওয়াফ না করিলে কাহারও কোন গুনাহ হইবে না। এই কথা শুনিয়া হযরত আয়েশা (রা) বলিলেন, তুমি অত্যন্ত খারাপ কথা বলিয়াছ। ভাতিজা! এই আয়াতের তুমি যে ব্যাখ্যা প্রদান করিলে যদি তাহা সঠিক হইত তাহা হইলে আয়াতটি হইত? “তাহার কোন গোনাহ নাই যদিও সে এই দুইটির মাঝে তওয়াফ না করে। কিন্তু প্রকৃত ব্যাপার তাহা নহে, বরং আয়াতটি আনসারদের সম্পর্কে নাযিল হইয়াছে। ইসলাম গ্রহণের পূর্বে তাহারা তাগুতি “মানাত” মূর্তির উদ্দেশ্যে ইহরাম বাঁধিত। “মুশাল্লালের নিকট স্থাপিত এই মূর্তিটিরই তাহারা পূজা করিত। সুতরাং (জাহিলিয়াতের যুগে) যে ব্যক্তি ইহরাম বাঁধিত সে সাফা ও মারওয়ার মাঝখানে ‘সাঈ করা খারাপ মনে করিত। তাই ইসলাম গ্রহণের পর তাহারা রাসূলুল্লাহ (সা)-কে এই সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। তাহারা বলে, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা সাফা ও মারওয়ার মাঝখানে সাঈ করা খারাপ মনে করিতাম। তখন আল্লাহ পাক নাযিল করিলেন : নিশ্চয় সাফা ও মারওয়া (পাহাড়দ্বয়) আল্লাহর নিদের্শনসমূহের অন্তর্ভুক্ত। ইহার পর আয়েশা (রা) বলিলেন, এই দুইটি পাহাড়ের মাঝখানে সাঈ করা রাসূলুল্লাহ (সা) অব্যাহত রাখিয়াছেন। সুতরাং এই পাহাড়দ্বয়ের মাঝখানে সাঈ ত্যাগ করিবার কোন এখতিয়ার কাহারও নাই। রাবী হযরত উরওয়া (র) বর্ণনা
৮৬৮
করিয়াছেন, ইহার পর আয়েশা (রা)-এর এই কথাগুলি আমি হযরত আবু বাকর ইবন আবদুর রহমানকে জানাইলে তিনি বলিলেন, ইহা তো সত্যিকার জ্ঞানের কথা, এইরূপ কথা তো আমরা (ইহার আগে) শুনি নাই”।১৫৬
কুরআনের ব্যাখ্যা ছাড়াও হযরত আয়েশা (রা)-সহ বিভিন্ন মহিলা সাহাবী রাসূলুল্লাহ (সা)-এর হাদীসেরও ব্যাখ্যা প্রদান করিয়াছেন। ১৫৭
ধারা-১৩৪০ স্বতন্ত্র নারী সংগঠন প্রতিষ্ঠার অধিকার নারীগণ স্বতন্ত্রভাবে ‘‘সংগঠন” প্রতিষ্ঠা করিতে পারিবে।
বিশ্লেষণ
রাসূলুল্লাহ (সা) ও সাহাবীদের যুগে বিভিন্ন সময়ে দীনি ও সামাজিক প্রয়োজনে নারীরা সমবেত হইয়াছেন। তাহারা সম্মলিত হইয়া বিভিন্ন বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করিয়াছেন এবং নিজেদের ধ্যান-ধারণা ও বাস্তব সমস্যাগুলি রাসূলুল্লাহ (সা)-এর সমীপে পেশ করিয়াছেন এবং এ সকল ক্ষেত্রে প্রথমে তাহারা তাহাদের মধ্যে নেত্রী নির্বাচন করিয়া তাহার মাধ্যমেই কথা বলিয়াছেন। যেমন হযরত যায়েদ (রা)-এর কন্যা হযরত আসমা (রা) নেত্রী হিসাবে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর খেদমতে উপস্থিত হইয়া বলিলেন :
انی رسول من ورای من جماعة النساء المسلمين لن يقلن
بقولي وعلى مثل رائی
‘আমার পশ্চাতে মুসলিম মহিলাদের যে দল রহিয়াছে আমি তাহাদেরই প্রতিনিধি হিসাবে উপস্থিত হইয়াছি। তাহাদের সকলেই আমার কথা বলিয়াছেন এবং আমি যে মত পোষণ করি তাহারাও সেই মতই পোষণ করে”।১৫৮
ধারা-১৩৪১ নারীর শাসক শ্রেণীকে উপদেশ প্রদানের অধিকার নারী শাসক শ্রেণীকে প্রয়োজনে উপদেশ ও পরামর্শ দিতে পারিবে।
৮৬৯
বিশ্লেষণ
নারীরাও সরকারকে বুদ্ধি ও পরামর্শ প্রদান করিয়া সহযোগিতা করিবে। এ সম্পর্কে হাদীসে বর্ণিত হইয়াছে : “মুয়াবিয়া (রা) হযরত আয়েশা (রা)-এর নিকট লিখিয়া পাঠাইলেন, আমাকে এমন একটি উপদেশ দিন যাহা আমি চিরদিন সামনে রাখিয়া চলিব। হযরত আয়েশা (রা) রাসূলুল্লাহ (সা)-এর একটি বাণী লিখিয়া পাঠাইলেন?
من التمس رضي الله بسخط الناس كفاه الله مؤنة الناس ومن
التمس رضي الناس بسخط الله وكله الله الى الناس (ترمذی)
“যে ব্যক্তি লোকজনকে অসন্তুষ্ট করিয়া আল্লাহকে সন্তুষ্ট করিতে চাহে, লোকেরা তাহার কোন ক্ষতি করিতে পারে না। কিন্তু যে ব্যক্তি আল্লাহকে অসন্তুষ্ট করিয়া লোকদেরকে সন্তুষ্ট করিতে চাহে, আল্লাহ পাক সেই ব্যক্তিকে সেই জনতার হাতে ছাড়িয়া দেন”।১৫৯
খাওলা বিনতে সালাবা নাম্নী মহিলা সাহাবী হযরত উমার ফারুক (রা)-কে পথিমধ্যে দাঁড় করাইয়া নসীহত করিতে লাগিলেন : হে উমার! তোমাকে অমি উকাজের মেলায় দেখিয়াছি তুমি ডাণ্ডা দিয়া ছােট ছেলে-মেয়েদেরকে ভয় দেখাইয়া বেড়াইতে। তখন তুমি ছােট ছিলে। সে সময় লোকেরা তোমাকে “উমাইর” বলিয়া ডাকিত। পরে তুমি যখন যুবক হইলে তখন তোমাকে উমার বলিয়া ডাকিতে আরম্ভ করিল। তারপর খুব বেশি দিন অতিবাহিত হইতে না হইতেই তুমি আমীরুল মুমিনীন হইয়া গিয়াছ। আল্লাহ পাক তোমাকে কোথা হইতে কোথায় কত উচু মর্যাদার স্থলে স্থান দিয়াছেন, তোমার ভাবিয়া দেখা উচিত। জনগণের উপর তোমার স্বভাব সুলভ কঠোরতা কখনও প্রয়োগ করিবে না এবং তাহাদের ব্যাপারে তোমার উচিত আল্লাহকে ভয় করা। তোমার মনে রাখা উচিত, যে লোক আল্লাহর আযাবকে ভয় করে সে কিয়ামতকে কখনও বহু দূর মনে করে না। হযরত উমার ফারুকের সাথী সঙ্গীরা বলিলেন, খাওলা! তুমি আমীরুল মুমিনীনকে অকারণে উপদেশ দানে বাড়াবাড়ি করিয়া ফেলিয়াছ। সঙ্গে সঙ্গে হযরত উমার তাহাদেরকে বাধা দিয়া বলিলেন, তোমরা জান না ইনি হইতেছেন হযরত খাওলা বিনতে সালাবা (রা) যাহার কথা আসমান হইতে শুনা হইয়াছে।১৬০
৮৭০
ধারা-১৩৪২ পারিবারিক দায়িত্ব পালনে সহায়তা করে এমন জাতীয়
কাজে নারীর অংশগ্রহণের অধিকার পারিবারিক ও সামাজিক দায়িত্ব পালনে সহায়ক কাজে নারীরা অংশগ্রহণ করিতে পারে।
বিশ্লেষণ
পারিবারিক ও সামাজিক দায়িত্ব পালনে নারীরাও ভূমিকা গ্রহণ করিতে পারে। এই সম্পর্ক হাদীসে বলা হইয়াছে?
عن جابر بن عبد الله قال طلقت خالتي فارادت ان تجد نخلها في فطرة العدة) فجرها رجل ان تخرج فاتت النبي ، فقال بلی
فجدی نخل فانك عسی ان تصدقي او تفعلی معروفا.
“হযরত জাবের ইবন আবদুল্লাহ (রা) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার খালাকে তালাক দেওয়া হইলে তিনি ইদ্দাত চলাকালে গাছ হইতে খেজুর কাটিতে চাহিলেন। কিন্তু একটি লোক তাহাকে ঘর হইতে বাহির হইতে নিষেধ করিলেন। তিনি রাসূলুল্লাহ (সা)-এর কাছে অভিযোগ করিলেন। রাসূলুল্লাহ (সা) বলিলেন, হাঁ, তুমি তোমার খেজুর কাটিতে পার। তুমি তো ঐগুলি অবশ্যই দান করিবে অথবা ভাল কাজে ব্যবহার করিবে”।১৬১
ধারা-১৩৪৩ নারীর হজ্জ আদায় করিবার অধিকার হজ্জ ফরজ হইয়াছে এমন নারী অবশ্যই হজ্জ আদায় করিতে পারিবে।
বিশ্লেষণ
যে সকল ধনাঢ্য মহিলা যাহাদের উপর হজ্জ ফরজ হয় তাহাদের হজ্জ আদায়ের অধিকার রহিয়াছে। স্বামী অথবা অন্য কেহ তাহাদের বাধা প্রদান করিতে পারিবে না।
৮৭১
عن ابن عباس قال لما رجع البيئة من حجته قال لام میلان
…………. • ৪২১ ০১ – G-15 1 L 24,LAY
“হযরত ইবন আব্বাস (রা) হইতে বর্ণিত। তিনি বলিয়াছেন, রাসূলুল্লাহ (সা) হজ্জ হইতে প্রত্যাবর্তন করিয়া উম্মে মিলান নামক জনৈকা আনসারী মহিলাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, তোমাকে হজ্জে যাইতে কে নিষেধ করিয়াছে? তিনি বলিলেন, অমুকের পিতা অর্থাৎ তাহার স্বামী। তখন রাসূলুল্লাহ (সা) তাহাকে বলিলেন, তুমি হজ্জ আদায় (পালন) করিবে”।১৬২
তবে মহিলাদেরকে হজ্জ আদায় করিতে হইলে তাহার স্বামী অথবা কোন মাহরাম পুরুষের সহিত উহা করিতে হইবে। কারণ রাসূলুল্লাহ (সা) বলিয়াছেন, কোন মহিলা মাহরাম পুরুষ ছাড়া সফর করিতে পারিবে না”।১৬৩
ধারা-১৩৪৪ নারী কর্তৃক “বদলী হজ্জ আদায়ের অধিকার নারী কোন পুরুষ বা মহিলার পক্ষে বদলী হজ্জ আদায় করিতে পারিবে।
বিশ্লেষণ
নারী যে কোন মৃত বা জীবিত ব্যক্তির পক্ষে বদলী হজ্জ আদায় করিতে পারিবে। জীবিত ব্যক্তি শারীরিক দুর্বলতার কারণে হজ্জ আদায়ে অক্ষম হইলে সেক্ষেত্রে যে কোন মহিলা তাহার পক্ষে হজ্জ আদায় করিতে পারিবে।
عن ابن عباس قال جاءت امرأة من خثعم عام حجة الوداع فقالت یارسول الله ان فريضة الله على عباده في الحج ادركت ابی شیا كبيرا لايستطيع ان يستوي على الراحلة فهل يقضي عنه ان الحج عنه قال نعم (وفي رواية افاحج عنه قال نعم).
“ইবন আব্বাস (রা) হইতে বর্ণিত। তিনি বলিয়াছেন, রাসূলুল্লাহ (সা)-এর বিদায় হজ্জের সময় খাছয়াম গোত্রীয় জনৈকা মহিলা জিজ্ঞাসা করিল, হে আল্লাহর রাসূল! আমার পিতার উপর হজ্জ ফরজ হইয়াছে। কিন্তু তিনি এত বৃদ্ধ হইয়া গিয়াছেন যে, সওয়ারীর উপর বসিতে সক্ষম নহেন। আমি কি তাহার পক্ষে হজ্জ
আদায় করিতে পারিব? তিনি বলিলেন, হাঁ, পারিবে”।১৬৪
৮৭২
মৃত ব্যক্তির পক্ষেও বদলী হজ্জ করা যায়। “হযরত ইবন আব্বাস (রা) হইতে বর্ণিত। জুহায়না গোত্রের এক মহিলা রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নিকট আসিয়া বলিল, আমার মা হজ্জ করিবার মান্নত করিয়াছিলেন। কিন্তু হজ্জ আদায় না করিয়াই তিনি মৃত্যুবরণ করিয়াছেন। আমি কি তাহার পক্ষ হইতে হজ্জ আদায় করিব? রাসূলুল্লাহ (সা) বলিলেন, হাঁ, তুমি তাহার পক্ষ হইতে হজ্জ আদায় কর”।১৬৫
ধারা-১৩৪৫ নারী কর্তৃক সরাসরি ফওয়া/ মাসআলা জানিবার অধিকার
নারী সরাসরি যে কোনো আলেম হইতে ফতওয়া বা মাসআলা জানিতে পারিবে।
বিশ্লেষণ
প্রয়োজনবােধে যে কোন নারী তাহার স্বামী অথবা কোন মাহরাম পুরুষ ছাড়াই সরাসরি নিজে আলেমের নিকট গিয়া ফতওয়া বা মাসআলাহ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করিতে পারিবে। এ সম্পর্কে হাদীসে উল্লেখ আছে?
“ফাতেমা বিনতে কায়েস (রা) হইতে বর্ণিত। তিনি আবু আমর ইবন হাফস ইবন মুগীরার স্ত্রী ছিলেন। তিনি বলেন, আবু আমর তাহাকে সর্বশেষ তালাকটিও দিয়া দিলে তিনি বাড়ী হইতে বাহির হইবার জন্য ফতওয়া জানিতে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নিকট আসিলেন। তিনি তাহাকে অন্ধ ইবন উম্মে মাকতূমের বাড়ীতে চলিয়া যাইতে নির্দেশ দিলেন”।১৬৬
হযরত আতা (র) হইতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা)-এর সময় জনৈক আনসারী সাহাবী রোযা অবস্থায় তাহার স্ত্রীকে চুমা দেয়। ইহার পর সে তাহার স্ত্রীকে এই বিষয়ে জানিবার জন্য রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নিকট পাঠাইলেন। তিনি বলিলেন, আল্লাহর রাসূলও এইরূপ করেন। তাহার স্ত্রী তাহাকে এই কথা জানাইলে সে বলিল, রাসূলুল্লাহ (সা) বেশ কিছু ব্যাপারে নিজের জন্য সহজ সুযোগ দিয়াছেন। তাই তাহার নিকট ফিরিয়া গিয়া আবার জিজ্ঞাসা করো। স্ত্রীলোকটি পুনরায় রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নিকট গিয়া বলিল, তাহার স্বামী বলিয়াছে যে, রাসূলুল্লাহ (সা) তাঁহার জন্য কিছু বিষয়ে সুবিধা পাইয়াছেন। রাসূলুল্লাহ (সা) বলিলেন, আমি তোমাদের মধ্যে সবচাইতে বেশী খােদাভীরু এবং আল্লাহর বিধিবিধান সম্পর্কে সবচেয়ে বেশী জানি।১৬৭।
৮৭৩
ধারা-১৩৪৬ স্ত্রী কর্তৃক স্বামীকে সান্ত্বনা প্রদানের অধিকার স্ত্রী তাহার স্বামীকে বিপদে-আপদে সান্ত্বনা প্রদান করিতে পারিবে।
বিশ্লেষণ
চরম বিপদের মুখে স্ত্রী তাহার মেধা, দৃঢ়তা ও বিচক্ষণতা দ্বারা স্বামীকে সান্ত্বনা প্রদান করিতে পারে। যেমন উম্মে সুলায়ম নামক (রা) জনৈকা আনসারী মহিলা তাহার সন্তান মারা যাওয়ার পর নিজ স্বামীকে অত্যন্ত বিচক্ষণতার সহিত উদাহরণের মাধ্যমে সান্ত্বনা দিয়াছেন। মুসলিম শরীফে উল্লেখ রহিয়াছে?
“উম্মে সুলায়ম (রা) নিজের সন্তান মারা যাওয়ার পর প্রবােধ দিতেছেন, হে আবু তালহা! যদি কেহ তাহার জিনিস কোন গৃহবাসীকে ধার দেয় এবং পরে আবার উহা ফিরাইয়া লয়, তাহা হইলে কি তাহারা তাহাকে বাধা দিতে পারে? তিনি বলিলেন, না। উম্মু সুলায়ম (রা) বলিলেন, তোমার ছেলের ব্যাপারটি সেইরূপ মনে কর”।১৬৮
রাসূলুল্লাহ (সা) উম্মে সুলায়েম সম্পর্কে বলিয়াছেন।
رایتنی دخل الجنة فاذا آنابالرميصاء امرأة ابي طلحة (بخاری
(Lw09 “আমি স্বপ্নে দেখিলাম, আমি বেহেশতে প্রবেশ করিয়াছি। সেইখানে আবু তালহার স্ত্রী রুমাইসা আমার সহিত রহিয়াছে”।১৬৯
ধারা-১৩৪৭ পুরুষদিগকে শিক্ষা দেওয়ার অধিকার নারী, পুরুষদেরকে শিক্ষা প্রদান করিতে পারিবে।
বিশ্লেষণ
নারীদের নিকট হইতে পুরুষগণ শিক্ষা গ্রহণ করিতে পারে। এই সম্পর্কে বুখারী ও মুসলিম শরীফে উল্লেখ রহিয়াছে : “হযরত আবু মূসা (রা) বলিয়াছেন, … আর আসমা বিনতে উমায়েস সাক্ষাতের জন্য রাসূলুল্লাহ (সা)-এর স্ত্রী হাফসার
৮৭৪
নিকট গেলেন। এই সময় হযরত উমার (রা)-ও হাফসার নিকট গেলেন। আমাকে দেখিয়া হযরত উমার (রা) জিজ্ঞাসা করিলেন, ইনি কে? হাফসা বলিলেন, আসমা বিনতে উমায়েস। উমার (রা) বলিলেন, হাবশায় হিজরতকারিনী আসমা, সমুদ্র যাত্রাকারিণী আসমা? আসমা বলিলেন, হাঁ। হযরত উমার বলিলেন, আমরা হিজরতের ব্যাপারে তোমাদের হইতে অগ্রগামী। সুতরাং তোমাদের চেয়ে আমরাই রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নৈকট্য লাভের বেশী হকদার। তারপর নবী (সা) আসিলে হযরত আসমা বলিলেন, হে আল্লাহর রাসূল! উমার এইসব কথা বলিয়াছেন। রাসূলুল্লাহ (সা) বলিলেন, তুমি তাহাকে কি বলিয়াছ? তিনি বলিলেন, আমি তাহাকে অমুক অমুক কথা বলিয়াছি। রাসূলুল্লাহ (সা) বলিলেন, তাহারা তোমাদের চেয়ে আমার নৈকট্য লাভের অধিক হকদার নহে। তাহার ও তাহার সঙ্গী-সাথীরা একবার মাত্র হিজরত করিয়াছে। কিন্তু তোমরা জাহাজে আরোহীগণ দুইবার হিজরত করিয়াছ। আসমা বলেন, আমি দেখিয়াছি, আবু মূসা ও জাহাজের আরোহীগণ এই হাদীসটি শুনিতে দলে দলে আমার নিকট আসিতেন।১৭০
ধারা-১৩৪৮ মতবিরোধের ক্ষেত্রে নারীর অভিমত পেশের অধিকার কোন বিষয়ে মতবিরোধ দেখা দিলে সে ক্ষেত্রে নারী নিজের মতামত দিতে পারিবে।
বিশ্লেষণ
বিরোধপূর্ণ যে কোন বিষয়ে সাধারণ পুরুষদের মত নারীরাও নিজেদের অভিমত পেশের অধিকারী। এক্ষেত্রে ইমাম বুখারী (র) হাদীস পেশ করিয়াছেনঃ
a
قال أخبرني ابو سلمة قال جاء رجل الى ابن عباس وابو هريرة جالس عنده فقال افتني في امرأة ولدت بعد (وفات زوجها باربعين اليله فقال ابن عباس اخر الاجلين قلت انا واولات الأحمال أجله ان يضعن حملهن قال ابوهريرة انا مع ابن اخي يعني اباسلمة فارسل ابن عباس غلامه كريبا الى ام سلمة يسئلها فقالت قتل زوج سبيعة الاسلمية وهي حبلى فوضعت بعد موته باربعين ليلة
৮৭৫
فخطبت فانكحها رسول الله له وكان أبو السنابل فيمن خطبها
:(s ) “আবু সালামা (রা) বলিয়াছেন, এক ব্যক্তি হযরত ইবন আব্বাসের নিকট আসিল। তখন আবু হুরায়রা (রা) তাহার নিকট বসা ছিলেন। লোকটি বলিল, স্বামীর মৃত্যুর চল্লিশতম রাত্রে যে মহিলা সন্তান প্রসব করিয়াছে তাহার সম্পর্কে আমাকে ফতওয়া দিন। ইবন আব্বাস (রা) বলিলেন, তাহাকে দীর্ঘতর সময়টির ইদ্দাত পালন করিতে হইবে। আমি বলিলাম, আল্লাহর বাণী a. 54J_.y sy,,
৫।… “গর্ভবতী মেয়েদের সন্তান প্রসব পর্যন্ত ইদ্দাত পালন করিতে হইবে” (৬৫ : ৪)। আবু হুরায়রা (রা) বলিলেন, আমি আমার ভাতিজার (আবু সালামা) কথা সমর্থন করি। ফলে ইবন আব্বাস (রা) তাহার খাদেম কুরাইবকে “উম্মে সালামার নিকট বিষয়টি সম্পর্কে জানিতে পাঠাইলেন। উম্মে সালামা (রা) বলিলেন, সুবাইয়া আসলামিয়া যখন গর্ভবতী তখন তাহার স্বামী নিহত হইলেন। স্বামীর মৃত্যুর চল্লিশতম রাত্রে সে সন্তান প্রসব করিল। তাহার নিকট বিবাহের প্রস্তাব আসিলে রাসূলুল্লাহ (সা) তাহাকে বিবাহ দিয়াছিলেন এবং বিবাহের প্রস্তাবকারীদের মধ্যে আবুস সানাবেলও ছিলেন”। ১৭১
ধারা-১৩৪৯ বেকার মানুষদের সমাজে প্রতিষ্ঠা লাভে
সহযোগিতা দানের অধিকার সমাজের অসহায় ও বেকার মানুষদের প্রতিষ্ঠালাভে নারী সহায়তা প্রদান করিতে পারিবে।
বিশ্লেষণ
সমাজের কর্মক্ষম বেকার মানুষদেরকে কাজের সুযোগ সৃষ্টি করিয়া তাহাদের প্রতিষ্ঠা লাভের ব্যাপারে নারীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখিতে পারে। “হযরত আসমা বিনতে আবু বাকর (রা) বলিয়াছেন, আমার নিকট এক লোক আসিয়া বলিল, হে আবদুল্লাহর মা! আমি একজন গরীব মানুষ। আমি আপনার বাড়ীর ছায়ায় বসিয়া কেনাবেচা করিতে চাই। তিনি বলিলেন, আমি তোমাকে অনুমতি দিলেও যুবায়ের তাহা অস্বীকার করিবে। শোননা! যুবায়েরের উপস্থিতিতে তুমি আমার নিকট উহা
৮৭৬
বলিবে। অতঃপর সেই ব্যক্তি আসিয়া বলিল, হে আবদুল্লাহর মা! আমি একজন গরীব মানুষ। আমি আপনার বাড়ীর ছায়ায় বসিয়া কেনা-বেচা করিতে চাই। আসমা (রা) বলিলেন, তুমি কি মদীনাতে আমার বাড়ী ছাড়া আর কোন বাড়ী পাও নাই। যুবায়ের তখন আসমাকে বলিলেন, কি ব্যাপার! তুমি একজন গরীব মানুষকে কেনাবেচা হইতে বাধা দিতেছ কেন? ইহার পর হইতে উক্ত গরীব মানুষটি ঐ বাড়ীর ছায়ায় বসিয়া কেনাবেচা করিত।১৭২
ধারা-১৩৫০ বৈধ খেলাধুলা উপভোগের অধিকার নারী বৈধ খেলাধুলা উপভোগ করিতে পারিবে।
বিশ্লেষণ
বিনোদনমূলক যে সকল খেলাধুলা অনুষ্ঠিত হয় এবং যাহা শরীয়াত অনুমোদিত, সে সকল খেলাধুলা নারী উপভোগ করিতে পারিবে। এ সম্পর্কে ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম উল্লেখ করিয়াছেন।
عن عائشة رضي الله عنها كان الحبش يلعبون بحرابهم فشرني رسول الله له واناانظر فما زلت انظر حتی کنت انا انصرف فاقدروا قدر الجارية الحديثة السن تسمع اللهو
(635) “হযরত আয়েশা (রা) বলিয়াছেন, হাবশী লোকেরা ঢাল বর্শা লইয়া খেলাধুলা করিত। (অন্য রেওয়ায়াতে আছে সে দিনটি ঈদের দিন ছিল। এই দিনটিতে সুদানীরা ঢাল ও বর্শা লইয়া খেলিত)। হয়ত আমি নিজে অথবা রাসূলুল্লাহ (সা) আমাকে বলিয়াছিলেন, তুমি কি খেলা দেখিতে চাও? আমি বলিলাম, হাঁ। তিনি আমাকে তাঁহার পিছনে দাঁড় করাইলেন। আমর গণ্ড তাহার গণ্ডের উপর স্থাপন করা ছিল। তিনি বলিতেছিলেন, হে বনী আরফেদাহ! খেলা চালাইয়া যাও। এমনকি ক্লান্ত হইয়া পড়িলে তিনি বলিলেনঃ তুমি কি তৃপ্ত? আমি বলিলাম, হাঁ। খেলাধুলার প্রতি আকৃষ্ট অল্প বয়স্কা একটি মেয়ের ব্যপারটি অনুমান করিয়া উপলব্ধি করো (অর্থাৎ সে কত দীর্ঘ সময় খেলা দেখিয়া থাকিতে পারে)।
হাফেজ ইবন হাজার হাদীসের ‘হে বনী আরফেদাহ! তোমরা খেলা চালাইয়া যাও’ কথাটি সম্পর্কে বলিয়াছেন, ইহার মধ্যে একদিকে যেমন এই জাতীয় কাজের
৮৭৭
অনুমতি রহিয়াছে, তেমনি রহিয়াছে উৎসাহ দান। তাহা ছাড়া ঈদের সময়ে আনন্দ প্রকাশ করা দীনেরই তাৎপর্যবহ নিদর্শন। আরও বুঝা যায়, যেসব খেলাধুলার গুনাহ নাই, উহা বৈধ ১৭৩
ধারা-১৩৫১ অমুসলিম নারী কর্তৃক মুসলিম পুরুষের সহিত
দেখা-সাক্ষাতের অধিকার অমুসলিম নারী মুসলিম পুরুষদের সহিত দেখা-সাক্ষাত করিতে পারিবে।
বিশ্লেষণ
যে কোন প্রয়োজনে অ-মুসলিম নারী মুসলিম পুরুষের সহিত দেখা-সাক্ষাত করিতে পারিবে। এ সম্পর্ক হাদীসে উল্লেখ রহিয়াছে।
عن عمران ابن حصين قال كنافی سفر مع النبی صلى الله عليه وسلم ……فاشتكى اليه الناس من العطس فنزل فدعا فلانا كان يسميه ابو رجاء ودعا عليا فقال اذهبا فابتغيا الماء فانطلقا فتلقيا امرأة بين مزادتين من ماء على بعيرها فقالا لها انطلقي اذا قالت الی این
..
قالا الي رسول الله له فجاء بها الى رسول الله
“ইমরান ইবন হুসাইন (রা) হইতে বর্ণিত। তিনি বলিয়াছেন, আমরা এক সফরে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর সহিত ছিলাম। লোকজন তাঁহার নিকট তাহাদের পিপাসার্ত হইবার কথা জানাইল। তিনি যাত্রা বিরতি করাইয়া একজনকে ডাকিলেন (তাহার নাম সম্ভবত আবু রাজা) এবং তাহার সহিত হযরত আলী (রা)-কেও ডাকিলেন। তিনি বলিলেন, তোমরা দুইজন গিয়া পানি খুঁজিয়া আন। তাহারা রওয়ানা হইয়া গিয়া পথিমধ্যে এক মহিলার সাক্ষাত পাইলেন। সে উটের পিঠে বড় দুইটি মশক ভর্তি করিয়া পানি নিয়া যাইতেছিল। তাহারা তাহাকে বলিলেন, আমাদের সহিত চল। সে বলিল, কোথায়? তাহারা বলিলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর নিকট। তাহারা তাহাকে লইয়া রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নিকট উপস্থিত করিলেন। রাসূলুল্লাহ (সা) একটি পাত্র লইয়া মশক দুইটির মুখ হইতে পানি ঢালিলেন। অতঃপর ঘোষণা
৮৭৮
দিয়া সবাইকে জানাইয়া দেওয়া হইল যে, তোমরা নিজেরা পান কর এবং অন্যদেরকেও পান করাও। আর মহিলার পানি দিয়া কি করা হইতেছিল, উহা দাঁড়াইয়া উপভোগ করিতেছিল। আল্লাহর শপথ! তিনি মশক হইতে বিরত রাখিলেন। আমাদের মনে হইতেছিল, যখন তিনি ঢালিতে আরম্ভ করিয়াছিলেন তখনকার চাইতে এখন অধিক পরিপূর্ণ। রাসূলুল্লাহ (সা) বলিলেন, তোমরা মহিলার জন্য (উপহার) সগ্রহ কর। মহিলার জন্য খেজুর, আটা, ছাতু ইত্যাদি বিভিন্ন রকম খাবার সগ্রহ করিয়া একটি কাপড়ে বাঁধিয়া তাহাকে উটের পিঠে তুলিয়া দিল এবং কাপড়ে বাধা খাদ্যসমূহ তাহার সামনে রাখিল। রাসূলুল্লাহ (সা) তাহাকে বলিলেন, আমরা তোমার পানি একটুও হ্রাস করি নাই এবং মহান আল্লাহই আমাদেরকে পানি পান করাইয়াছেন। মহিলা তাহার আপনজনদের নিকট ফিরিয়া গেল। কিন্তু ইতিমধ্যে তাহার বেশ দেরী হইয়া গিয়াছে বিধায় জিজ্ঞাসা করা হইল, হে অমুক! তোমার এত দেরী হওয়ার কারণ কি? সে বলিল, সে এক আশ্চর্য ব্যাপার। আমার সহিত দুইজন লোকের দেখা হইল। তাহারা আমাকে লইয়া যে লোকটিকে বেদীন বলা হয় তাহার কাছে গেল। অতঃপর উক্ত মহিলার নেতৃত্বে তাহার গোত্রের সবাই ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করিয়াছিল।১৭৪ অপর বর্ণনায় বলা হইয়াছে, আল্লাহ তায়ালা সেই মহিলার দ্বারা উক্ত কওমকে হিদায়াত দান করিলেন।১৭৫
ধারা-১৩৫২ আত্মরক্ষার্থে নারীর অস্ত্র রাখিবার অধিকার। নারী আত্মরক্ষার্থে নিজের কাছে অস্ত্র রাখিতে এবং প্রয়োজনে ব্যবহার করিতে পারিবে।
বিশ্লেষণ
প্রয়োজনীয় মুহূর্তে নারী তাহার আত্মরক্ষা করিবার জন্য বৈধ অস্ত্র সঙ্গে রাখিতে পারিবে। এই সম্পর্কে মুসলিম শরীফের এক হাদীসে উল্লেখ রহিয়াছে?
হযরত আনাস (রা) বলিয়াছেন, হুনাইন যুদ্ধের দিন হযরত উম্মে সুলাইম (রা) তাহার সঙ্গে ছুরি লইয়াছিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাহাকে বলিলেন, এই ছুরি তুমি কিজন্য সঙ্গে রাখিয়াছ? তিনি বলিলেন, আমি এই ছুরি এইজন্য সঙ্গে রাখিয়াছি যে, যদি কোন মুশরিক আমার দিকে আগাইয়া আসে তাহা হইলে আমি এই ছুরি দ্বারা তাহার পেট চিরিয়া ফেলিব। এই কথা শুনিয়া রাসূলুল্লাহ
৮৭৯
সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসালাম হাসিতে লাগিলেন।১৭৬ ইহা ছাড়াও নারীরা অপরের দেহরক্ষী হিসাবেও নিজের কাছে অস্ত্র রাখিতে পারে। যেমন উহুদ যুদ্ধে হযরত আমারাহ (রা) রাসূলুল্লাহ (সা)-কে রক্ষা করিবার জন্য সশস্ত্র লড়াই করিয়াছিলেন।১৭৭
ধারা-১৩৫৩
গনীমতের মালে নারীর অধিকার যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী নারী গনীমতের মালে অংশ লাভ করিবে।
বিশ্লেষণ
যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী নারী হউক অথবা পুরুষ, উভয়ে অর্জিত গনীমতের মালে অংশ লাভ করিবে। ইমাম বুখারী (র) এই সম্পর্কে বলিয়াছেন? ১/ cal
39J + ৬ ‘যাহারা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করিয়াছে তাহারা সকলেই গনীমতের অধিকারী”।১৭৮ এক্ষেত্রে নারী অথবা পুরুষের মধ্যে কোন পার্থক্য করা হয় নাই।
মুসলিম শরীফে উল্লেখ করা হইয়াছে : “হ্যরত ইবন আব্বাস (রা) বলিয়াছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহিলাদেরকে সঙ্গে লইয়া যুদ্ধাভিযানে যাইতেন এবং তাহাদেরকে গনীমতের অংশ দিতেন”।১৭৯
ধারা-১৩৫৪ কৃষিকাজে অংশগ্রহণে নারীর অধিকার নারী কৃষিকাজে অংশগ্রহণ করিতে পারিবে।
বিশ্লেষণ
যে কোন বৈধ পেশা গ্রহণে নারী সম্পূর্ণ স্বাধীন। ইসলামে বিভিন্ন যুগে নারী বিভিন্ন পেশা গ্রহণের মাধ্যমে সমাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখিয়াছিল। উহার মধ্যে কৃষিকাজেও নারীর অংশগ্রহণ ছিল। মুসলিম শরীফে নারীর কৃষিকাজে অংশগ্রহণ সম্পর্কে বলা হইয়াছে?
“হযরত জাবির (রা) বলিয়াছেন, রাসূলুল্লাহ (সা) উম্মে মুবাশশির আনসারী (রা)-এর খেজুর বাগানে প্রবেশ করিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, কে এই বাগান তৈরি করিয়াছে, মুসলিম না কাফের? উম্মে মুবাশশির (রা) বলিলেন, মুসলিম তৈরি
bbro
করিয়াছেন। তিনি বলিলেন : কোন মুসলমান যদি বৃক্ষ রোপণ করে কিংবা ফসল করে, আর কোন মানুষ, পশু বা অন্য কিছু উহার ফল খায়, উহাও তাহার জন্য সদাকা হিসাবে গণ্য হইবে”।১৮০
ধারা-১৩৫৫ চিকিৎসা পেশা গ্রহণে নারীর অধিকার নারী চিকিৎসা পেশা গ্রহণ করিতে পারিবে।
বিশ্লেষণ
নারী নার্সিং ও চিকিৎসামূলক সেবাজনিত পেশায় অংশগ্রহণ করিতে পারিবে। এই সম্পর্কে বুখারী শরীফে উল্লেখ রহিয়াছে?
عن عائشة قالت أصيب سعد يوم الخندق رماه رجل من قريش يقال له حبان بن العرقة فضرب النبي صلى الله عليه وسلم خيمه في المسجد ليعده من قريب
“হযরত আয়েশা (রা) বলিয়াছেন, খন্দক যুদ্ধে সাদ (রা) আহত হইলেন। তাহাকে হিব্বান ইবন এরাকাহ নামক জনৈক কুরাইশ তীর নিক্ষেপ করিয়াছিল। রাসূলুল্লাহ (সা) নিকট হইতে যাহাতে তাহার সেবাযত্ন তদারকি করিতে পারেন সেজন্য তাহার জন্য মসজিদে তাবু খাটাইয়াছিলেন”।১৮১
হাফেজ ইবন হাজর আসকালানী বলিয়াছেন, ইবন ইসহাক উল্লেখ করিয়াছেন যে, তাঁবুটি রুফাইদা আসলামিয়ার উদ্দেশ্যে খাটানো হইয়াছিল। তিনি একজন মহিলা চিকিৎসক ছিলেন। তিনি আহতদের চিকিৎসা করিতেন। রাসূলুল্লাহ (সা) বলিয়াছিলেনঃ সাদকে রুফাইদার তাঁবুতে রাখ, যাহাতে আমি নিকটে অবস্থান করিয়া তাহার দেখাশুনা করিতে পারি।১৮২
ধারা-১৩৫৬
রোগীদের সহিত দেখা-সাক্ষাতের অধিকার নারী পুরুষ রোগীর চিকিত্সা, খোঁজ-খবর ও কুশলাদি জিজ্ঞাসা করিতে পারিবে।
৮৮১
বিশ্লেষণ
মহিলা কর্তৃক পুরুষ রোগীর খোঁজ-খবর বা কুশলাদি জিজ্ঞাসা করা এবং তাহার চিকিৎসা করা বৈধ্য। এ সম্পর্কে হাদীসে উল্লেখ রহিয়াছে?
“হযরত আয়েশা (রা) বলিয়াছেন, রাসূলুল্লাহ (সা) মদীনায় আগমন করিবার পর হযরত আবু বাকর (রা) ও হযরত বিলাল (রা) জ্বরে আক্রান্ত হইলেন। আয়েশা (রা) বলেন, আমি তাহাদের উভয়কে দেখিতে গিয়ছিলাম। আমি আমার পিতাকে বলিলাম, আব্বাজান! আপনার কেমন লাগিতেছে? বিলাল (রা)-কে বলিলাম, আপনার কেমন লাগিতেছে? আয়েশা (রা) বলেন, আমার পিতা আবু বাকর (রা) জ্বরে আক্রান্ত হইলেই নিম্নোক্ত কবিতাটি আবৃতি করিতেন?
گل امرئی مصبح في اهله * والموت ادنی من شرك نعله.
“প্রত্যেকেই তাহার পরিবার-পরিজনের মধ্যে অবস্থান করিয়া তাহার সুখ ও সফল কামনার সম্ভাষণ শুনিতেছে, অথচ মৃত্যু তাহার জুতার ফিতার চাইতেও অধিক নিকটবর্তী”।
আর জ্বর হইতে সুস্থ হইয়া উঠামাত্র হযরত বিলাল (রা) উচ্চস্বরে নিম্নোক্ত কবিতাংশটি আবৃতি করিতেন।
الا ليت شعري هل ابتين ليلة * بواد وحولي اذخر وجليل …
“আহা! সেই উপত্যকায় (মক্কার) আমি একটি রাত কাটাইতে পারিব কিনা, যেখানে আমার চারিপাশে থাকিবে ইখির ও জালীল ঘাস তাহা যদি জানিতে পারিতাম। আর যদি জানিতে পারিতাম কোন দিন আমি মাজান্নার জলাশয়ে নামিতে পারিব কিনা কিংবা শাফা ও তুফাইল পাহাড় দুইটি দেখিতে পারিব কিনা”।১৮৩
ধারা-১৩৫৭ নারীর নিকট বৈধ সুপারিশ পেশ করা বৈধ সুপারিশের জন্য যে কোনো পুরুষ নারীর নিকট যাইতে পারিবে এবং নারী উক্ত বিষয়ে সিদ্ধান্ত প্রদান করিতে পারিবে।
৮৮২
বিশ্লেষণ
নারীর নিকট বৈধ সুপারিশের জন্য যাওয়া এবং উক্ত সুপারিশ গ্রহণের ব্যাপারে তাহাকে বুঝাইয়া সঠিক সিদ্ধান্তে পৌছিতে সহায়তা করা যাইতে পারে। এ ব্যপারে বুখারী শরীফে উল্লেখ রহিয়াছে?
آن عائشة حدثت أن عبد الله ابن الزبير قال في بيع او عطاء اعطته عائشة والله لتنتهين عائشة قالت أهبوهذا قالوا نعم قالت هؤلله على نذر ان لا اكلم ابن الزبير ابدا فاستشفع ابن الزبير اليها حين طالت الهجرة فقالت لا والله لا اشفع فيه ابدا ولا اتحث الي نذري فلما طال ذالك على ابن الزبير لما المسور ابن مخرمة وعبد الرحمن ابن الاسود ابن عبد يغوث ……….. فلما اكثروا على عائشة من التذكر والتحريج …….
“হযরত আয়েশা (রা) হইতে বর্ণিত। তাহার নিকট বর্ণনা করা হইল যে, তিনি কোন একটি জিনিস বিক্রয় অথবা দান করিয়াছিলেন। এই ব্যাপারে আবদুল্লাহ ইবন জুবায়ের বলিলেন, আল্লাহর শপথ! আয়েশাকে উহা হইতে বিরত থাকিতে হইবে অন্যথায় আমি তাহার প্রতি বিধিনিষেধ আরোপ করিব। এই কথা জানিতে পারিয়া আয়েশা (রা) বলিলেন, সেকি সত্যিই এই কথা বলিয়াছে? লোকেরা বলিল, হাঁ। আয়েশা (রা) বলিলেন, আমি আল্লাহর নামে শপথ করিয়া বলিতেছি, আমি কখনও ইবনে জুবায়েরের সহিত কথা বলিব না। এই বিচ্ছেদ দীর্ঘায়িত হইলে ইবন জুবায়ের আয়েশা (রা)-এর নিকট সুপারিশ পাঠাইলে আয়েশা (রা) বলিলেন, আল্লাহর শপথ! এই ব্যাপারে আমি কাহারও সুপারিশ গ্রহণ করিব না এবং আমার কসমও ভঙ্গ করি না। ইবন জুবায়েরের নিকট বিষয়টি কষ্টকর হইয়া দাঁড়াইলে তিনি বিষয়টি লইয়া মিসওয়ার ইবন মাখরামা ও আবদুর রহমান ইবনুল আসওয়াদ ইবন আবদে ইয়াগুছের সহিত আলোচনা করিলেন। তাহারা উভয়ে ছিল বনী যুহরাব লোক। তিনি তাহাদেরকে বলিলেন, তোমাদেরকে আল্লাহর দোহাই দিতেছি, তোমরা আমাকে আয়েশা (রা)-এর নিকট লইয়া চল। কেননা আমার সহিত সম্পর্ক ছিন্ন করিবার শপথ মানিয়া চলা তাহার জন্য বৈধ নহে। সুতরাং মিসওয়ার ও আবদুর রহমান গায়ে চাদর জড়াইয়া ইবন জুবায়েরকে সঙ্গে লইয়া আয়েশা (রা)-এর নিকট পৌছাইলেন। তাহারা তাহাকে সালাম দিয়া বলিলেন, আমরা কি ভিতরে আসিতে
৮৮৩
পারি? আয়েশা (রা) বলিলেন, হাঁ। তাহারা বলিল, আমরা সবাই কি আসিব? বলিলেন, হাঁ সবাই আসুন। কিন্তু তিনি জানিতেন না যে, তাহাদের সাথে জুবায়েরও রহিয়াছে। অবশেষে তাহারা হযরত আয়েশাকে তাহার কসম ভঙ্গের অনুরোধ জানাইল এবং শেষ পর্যন্ত তিনি ইবন জুবায়েরের সহিত কথা বলিলেন এবং আল্লাহর নামের শপথ ভঙ্গের কাফফারাও আদায় করিলেন। পরবর্তী সময়ে তিনি তাহার এই শপথের কথা স্মরণ করিয়া এত কাঁদিতেন যে, চোখের পানিতে তাহার ওড়না পর্যন্ত ভিজিয়া যাইত”।১৮৪
ধারা—১৩৫৮
অসুস্থ নারীর খোঁজ-খবর লওয়া নারী অসুস্থ হইলে যে কোনো পুরুষ তাহার খোঁজ-খবর ও কুশলাদি জিজ্ঞাসা করিতে পারিবে।
বিশ্লেষণ
যে কোন নারী মাহরাম হউক অথবা গায়রে মাহরাম, সে অসুস্থ হইলে তাহার অনুমতি লইয়া যে কোনো পুরুষ তাহার সহিত সাক্ষাত করিয়া তাহার কুশলাদি জিজ্ঞাসা করিতে পারিবে। এ সম্পর্কে ইমাম বুখারী (র) হাদীস পেশ করিয়াছেন?
قال حدثني ابن أبي مليكة قال استاذن ابن عباس قبیل موتها علی عائشة وهي مغلوبة قالت اخشى ان يثني على فقيل ابن عم رسول الله له ومن وجوه المسلمين قالت ائذنوا له فقال كيف تجدينك قالت بخير ان اتقيت قال فانت بخير ان شاء الله زوجة رسول الله له ولم ينكح بكرا غيرك …………
“আবু মুলাইকা (র) বলিয়াছেন, আয়েশা (রা)-র মৃত্যুর পূর্বে ইবন আব্বাস (রা) রোগশয্যায় তাহার সাক্ষাতের জন্য অনুমতি প্রার্থনা করিলেন। সে সময় আয়েশা (রা) কঠিন মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতর ছিলেন। তিনি বলিলেন, আমার আশংকা হয় যে, তিনি আমার প্রশংসা করিবেন। তাহাকে বলা হইল, তিনি রাসূলুল্লাহ (সা)-এর চাচাতো ভাই এবং একজন বিশিষ্ট মুসলমান। আয়েশা (রা) বলিলেন, তাহাকে অনুমতি দাও। ইবন আব্বাস (রা) তাহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, আপনি
৮৮৪
কেমন অনুভব করিতেছেন? তিনি বলিলেন, ভাল, যদি আল্লাহকে ভয় করিয়া থাকি। ইবন আব্বাস (রা) বলিলেন, ইনশাআল্লাহ আপনি কল্যাণ লাভ করিবেন। কারণ আপনি রাসূলুল্লাহ (সা)-এর স্ত্রী। রাসূলুল্লাহ (সা) আপনাকে ছাড়া আর কোন কুমারী মেয়েকে বিবাহ করেন নাই এবং আল্লাহ পাক ওহী নাযিলের মাধ্যমে আপনার নিষ্পাপ হইবার কথা জানাইয়া দিয়াছেন”।১৮৫
ধারা-১৩৫৯ নারীর নিকট উপহারাদি ও চিঠি প্রেরণ এবং নারী কর্তৃক
উহার জবাব দানের অধিকার
যে কোন পুরুষ নারীর নিকট উপহারাদি ও চিঠি প্রেরণ এবং নারী তাহার চিঠির জবাব দান ও উপহারাদির বিনিময়ে উপহার প্রদান করিতে পারিবে।
বিশ্লেষণ
এ সম্পর্কে ইমাম বুখারী তাহার আল আদাবুল মুফরাদ গ্রন্থে উল্লেখ করিয়াছেনঃ
عن عائشة بنت طلحة قالت لعائشة ولنا في حجرها وكان الناس ياونها من گل مصر فكان الشيوخ ينتابونی لمكاني منها وكان الشباب يتأخونی فيهدون الى ويكتبون من الأنصار فاقول لعائشة ياخاله! هذا كتاب فلان وهديته فتناقول عائشة اي بنية فاجيبيه واثيبه فان لم يكن عندك ثواب اعطيتك قالت فتعطيني.
“আয়েশা বিনতে তালহা (র) বলিয়াছেন, আমি যখন হযরত আয়েশা (রা)-র তত্ত্বাবধানে লালিত-পালিত হইতেছিলাম তখন বিভিন্ন অঞ্চল ও শহর হইতে লোকজন তাহার নিকট আসিত। আয়েশা (রা)-র সহিত আমার সম্পর্কের কারণে বৃদ্ধরা আমার নিকট আসিত এবং যুবকরা আমাকে বােন হিসাবে গ্রহণ করিত। সুতরাং সকলেই আমার নিকট উপহার প্রেরণ করিত এবং বিভিন্ন শহর অঞ্চল হইতে আমার নিকট চিঠি পাঠাইত। আমি আয়েশা (রা)-কে বলিতাম, খালা! ইহা অমুকের চিঠি ও উপহার। তিনি আমাকে বলিতেন, বেটি! তাহাদের পত্রের জবাব
৮৮৫
দাও এবং উপহারের বিনিময়ে উপহার পাঠাইয়া দাও। তোমার নিকট বিনিময় দেওয়ার মত কিছু না থাকিলে আমি দিব। আয়েশা বিনতে তালহা বলেন, তিনি আমাকে তাহা দিতেন”।১৮৬
ধারা-১৩৬০ নারী ও পুরুষের পারস্পরিক সালাম বিনিময় নারী ও পুরুষ পরস্পর সালাম বিনিময় করিতে পারিবে।
বিশ্লেষণ
পুরুষ কর্তৃক নারীদের সালাম দেওয়া এবং নারী কর্তৃক পুরুষদের সালাম দেওয়া বৈধ। এ সম্পর্কে ইমাম বুখারী (র) উল্লেখ করিয়াছেন?
انفرح يوم الجمعة قلت
عن ابی حازم عن أبيه عن سهل قال ولم قال كانت عجوز لنا ترسل الى بضاعة قال ابن مسلمة نخل بالمدينة فتاخذ من اصول السلق فتطرحه في قدر وتكركر حباب من شعير فاذا صلينا الجمعة انصرفنانسلم عليها فتقدمه الينافنفرح من اجله وماگنانقيل ولا نتغدى الا بعد الجمعة
( A.) “আবু হাযেম তাহার পিতা সাহল (রা) হইতে বর্ণনা করিয়াছেন, তিনি বলিয়াছেন, জুমআর দিনে আমাদের মন খুশিতে ভরিয়া উঠিত। আমি (আবু হযেম) সাহলকে বলিলাম, জুমআর দিন আপনাদের মন খুশিতে ভরিয়া উঠিত কেন? তিনি বলিলেন, এক বৃদ্ধা মহিলা ছিলেন। তিনি আমাদের জন্য বুদাআ নামক স্থানে চলিয়া যাইতেন এবং সেখান হইতে গাজর লইয়া আসিয়া ডেকচিতে চড়াইয়া চাউল সহযোগে তাহা ঘন্ট করিতেন। আমরা জুমআর নামায শেষে তাহার নিকট গিয়া সালাম দিতাম। তিনি আমাদেরকে তাহা পরিবেশন করিতেন। এই কারণে আমরা খুশি হইতাম। আমরা জুমআর নামাযের পূর্বে খাবার গ্রহণ করিতাম না অথবা ঘুমাইতামও না”।১৮৭
রাসূলুল্লাহ (সা) যখনই মেয়েদের পাশ দিয়া যাইতেন তখনই তাহাদের সালাম দিতেন।১৮৮ মক্কা বিজয়ের দিন উম্মে হানী (রা) রাসূলুল্লাহ (সা)-কে সালাম দিয়াছিলেন।১৮৯ রাসূলুল্লাহ (সা) উম্মে সুলায়মের মহল্লায় গেলে তাহার সহিত দেখা করিতেন এবং তাহাকে সালাম দিতেন।১৯০
৮৮৬
ধারা-১৩৬১ নারীর নফল নামায পড়িতে মসজিদে যাওয়ার অধিকার নারী নফল নামায আদায়ের জন্য মসজিদে যাইতে পারিবে।
বিশ্লেষণ
নারীগণ নফল নামায আদায়ের জন্যও মসজিদে যাইতে পারিবে। এই সম্পর্কে বুখারী ও মুসলিম শরীফে উল্লেখ করা হইয়াছে?
عن انس بن مالك قال دخل النبي صلى الله عليه وسلم فاذا حبل ممدود بين السيارتين فقال ما هذا الحبل قالواهذا حبل الزينب فاذا فترت تعلقت فقال النبي له لا خلوه ليصل احدكم نشاطه فاذا فتر فليقعد (بخاری).
“হযরত আনাস ইবন মালিক (রা) বলিয়াছেন, নবী (সা) মসজিদে প্রবেশ করিয়া দেখিতে পাইলেন, দুইটি খুঁটির মাঝখানে একটি রশি টাঙ্গানো রহিয়াছে। তিনি জিজ্ঞাসা করিলেন, এইখানে এই রশি কেন? সবাই বলিল, ইহা যয়নব (রা)-র জন্য বাঁধা রশি। নামায পড়িতে পড়িতে ক্লান্ত হইয়া পড়িলে তিনি এই রশির উপর ঝুলিয়া পড়েন। রাসূলুল্লাহ (সা) বলিলেন : না, এই রশি খুলিয়া ফেল। তোমাদের কেহ ততক্ষণ পর্যন্ত নামায পড়িবে যতক্ষণ সে ক্লান্তিহীন ও আলস্যহীন থাকিবে। ক্লান্তি ও আলস্যে আক্রান্ত হইলে বসিয়া পড়িবে”।১৯১
হাফেয ইবন হাজার বলেন, এই হাদীস প্রমাণ করে যে, মসজিদে মহিলাদের নফল নামায পড়া বৈধ।১৯২
আবু দাউদ কতৃক আবু যার (রা) হইতে বর্ণিত একটি হাদীসে বলা হইয়াছে, “অতঃপর তৃতীয় রাত হইলে (অর্থাৎ রমযান মাসের তিন রাত অবশিষ্ট থাকিতে) তাঁহার পরিবারের লোকজন, স্ত্রীগণ এবং অন্যান্য লোকের সমাগম হইলে তিনি আমাদের লইয়া নামাযে দাঁড়াইলেন এবং কিরাআত এত দীর্ঘ করিলেন যে, আমরা কল্যাণ হারাইয়া ফেলিবার আশংকা করিলাম”।১৯৩
নাসাঈ শরীফে উল্লেখ রহিয়াছে, রমযান মাসের তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকিতে তিনি তাহার কন্যা ও স্ত্রীগণকে ডাকিয়া পাঠাইলেন এবং লোকজন একত্র হইলে আমাদের সবাইকে লইয়া নামাযে দাঁড়াইলেন, এমনকি আমরা কল্যাণ হইতে বঞ্চিত হইবার আশংকা করিলাম। দাউদ বলেন, আমি জিজ্ঞাসা করিলাম, কল্যাণ কি? তিনি বলিলেন, সাহরী।১৯৪
৮৮৭
ধারা-১৩৬২ নারীর মহিলা জামাআতে ইমামতি করিবার অধিকার নারী মহিলা জামাআতে ইমামতি করিতে পারিবে।
বিশ্লেষণ
নারীর ইমামতি করিবার হাদীসে উল্লেখ রহিয়াছে যে, “উরওয়ার মাধ্যমে সাঈদ-মানসূর বর্ণনা করিয়াছেন যে, হযরত উমার (রা) রমযানে তারাবীর নামায পড়িবার জন্য লোকজনকে উবাই ইবন কাবের নিকট একত্র করিলেন। তিনি পুরুষদের (তারাবীহের) নামাযের ইমামতি করিতেন এবং তামীম আম্দ-দারী (রা) মেয়েদের (তারাবীহের) নামাযে ইমামতি করিতেন।১৯৫
ইমাম নববী (র) তাহার মাজমূ’ গ্রন্থে আরফাজাহ সাকাফী হইতে বর্ণনা করিয়াছেন, তিনি বলিয়াছেন, হযরত আলী ইবন আবু তালিব (রা) রমযান মাসে মানুষকে তারাবীহ পড়িবার নির্দেশ দিতেন এবং পুরুষদের জন্য একজন ইমাম ও মেয়েদের জন্য একজন ইমাম নিয়োগ করিতেন। আমি নিজে ছিলাম মেয়েদের ইমাম (বায়হাকী)।১৯৬ হযরত আয়েশা (রা) নিজেই ফরজ নামাযের ইমামতি করিয়াছেন। রীতা হানাফিয়া নাম্নী তাবিয়ী মহিলা বর্ণনা করিয়াছেন।
أمتنا عائشة قامت بينهن في الصلواة المكتوبة.
“হযরত আয়েশা (রা) আমাদের মহিলাদের ফরজ নামাযে ইমামতি করিয়াছেন। অবশ্য তিনি মহিলাদের মধ্যেই (কাতারে) দাঁড়াইয়াছিলেন”।
তাইমা বিনতে সালমা বলিয়াছেন, হযরত আয়েশা (রা) মাগরিবের ফরজ নামাযের ইমামতি করিয়াছেন। তিনি মহিলাদের সহিত কাতারে দাঁড়াইয়াছেন এবং উচ্চস্বরে কিরাআত পাঠ করিয়াছেন।১৯৭
ধারা-১৩৬৩
সাক্ষ্য প্রদানের অধিকার নারী সাক্ষ্য প্রদান করিতে পারিবে।
বিশ্লেষণ
নারীর সাক্ষ্য প্রদান সম্পর্কে পবিত্র কুরআন মজীদে বলা হইয়াছে : “সাক্ষীদের মধ্যে যাহাদের উপর তোমরা রাজী তাহাদের মধ্য হইতে দুইজন পুরুষ সাক্ষী
bbb
রাখিবে। যদি দুইজন পুরুষ না থাকে তবে একজন পুরুষ ও দুইজন স্ত্রীলোেক। স্ত্রীলোকদের মধ্যে একজন ভুল করিলে তাহাদের একজন অপরজনকে স্মরণ করাইয়া দিবে” (সূরা বাকারা : ২৮২)।
নারীর সাক্ষ্য প্রসঙ্গে ইমাম বুখারী (র) তাঁহার হাদীস গ্রন্থে পবিত্র কুরআনের ……… – 1st t; আয়াত উল্লেখ করিয়া •L.J . ৬ “নারীর সাক্ষ্য” নামক বিশেষ অনুচ্ছেদ উল্লেখ করিয়াছেন, দুধ-মাতার সাক্ষ্য নামক পৃথক অনুচ্ছেদ কায়েম করিয়াছেন। ১৯৮
হযরত আয়েশা (রা) হইতে বর্ণিত (অপবাদের ঘটনা প্রসংগে)। তিনি বলিয়াছেন, যখন আমার সম্পর্কে যাহা কিছু বলিবার তাহা বলা হইয়াছিল … রাসূলুল্লাহ (সা) আমার ঘরে আসিলেন এবং আমার কাজের মেয়েকে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করিলেন। সে বলিল, আল্লাহর কসম! আমি তাহার সম্পর্কে ইহা ছাড়া খারাপ কিছু জানি না যে, তিনি ঘুমাইয়া পড়িতেন আর বকরী আসিয়া আটার খামির খাইয়া ফেলিত। তাহার কোন সাহাবা মহিলাকে ধমক দিয়া বলিল, তুমি রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নিকট সত্য কথা বল। এমনকি তাঁহারা কাজের মেয়ের নিকট অপবাদের ঘটনা খুলিয়া বলিল, তখন সে বলিল সুবহানাল্লাহ! আল্লাহর কসম! একজ স্বর্ণকার তাহার খাঁটি স্বর্ণখণ্ড পরীক্ষা করিয়া যাহা জানে আমিও তাহার সম্পর্কে ততটুকু জানি।১৯৯
নারী সাক্ষ্য সম্পর্কে ফকীহদের অভিমত
ইবন হাযম লিখিত আল-মুহাল্লা গ্রন্থে উল্লেখ করা হইয়াছে, যেনা প্রমাণের ক্ষেত্রে চারিজন ন্যায়পরায়ণ মুসলমান সাক্ষী হইতে হইবে অথবা প্রতিজন পুরুষের পরিবর্তে দুইজন মুসলিম ন্যায়পরায়ণ মহিলা হইতে হইবে। যেমন তিনজন পুরুষ ও দুইজন মহিলা বা দুইজন পুরুষ ও চারিজন মহিলা অথবা একজন পুরুষ ও ছয়জন মহিলা বা শুধুমাত্র আটজন মহিলা। হদ্দ, কিসাস, অনুরূপভাবে বিবাহ, তালাকপ্রাপ্তা মহিলাকে ফিরাইয়া আনা, ধন-সম্পদ প্রভৃতি ক্ষেত্রে দুইজন ন্যয়াপরায়ণ মুসলমান পুরুষ অথবা একজন পুরুষ ও দুইজন মহিলা বা এককভাবে চারিজন মহিলার সাক্ষ্য বিদ্যমান থাকিতে হইবে। হুদূদ ছাড়া অপরাপর সকল ক্ষেত্রেই একজন ন্যায়পরায়ণ পুরুষ বা দুইজন মহিলার সাক্ষ্য শপথ সহকারে গ্রহণযোগ্য হইবে এবং দুধপানের সাক্ষ্য হিসাবে একজন ন্যায়নিষ্ঠ পুরুষ বা মহিলার সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য হইবে।২০০
৮৮৯
যে সকল ক্ষেত্রে এককভাবে মহিলাদের সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য তাহা এমন কতিপয় বিষয় যাহা সে স্বচক্ষে অবলোকন করে বা স্বহস্তে স্পর্শ করে বা নিজ কানে শ্রবণ করে। যেমন সন্তান প্রসব ও সাব্যস্তকরণ, দুধপান করানো, মাসিক ঋতু এবং গুপ্ত ক্রটিসমূহ।
ইবন কায়্যিম বলিয়াছেন, ন্যায়পরায়ণ মহিলা সত্যবাদিতা, বিশ্বস্ততা ও ধার্মিকতার দিক দিয়া পুরুষের মতই গণ্য। তবে হাঁ, যদি তাহার ব্যাপারে কোন ভুল-ভ্রান্তির আশংকা থাকে, তাহা হইলে তাহার সমান আরেকজন মহিলা দিয়া তাহার সাক্ষ্যকে শক্তিশালী করা হয়। দুইজন মহিলাযোগে সাক্ষ্যকে শক্তিশালীকরণের প্রক্রিয়াটি প্রদত্ত সাক্ষ্যকে কখনও কখনও এক একাধিক পুরুষ প্রদত্ত সাক্ষ্যের তুলনায় অধিক শক্তিশালী করিয়া দেয়। ২০১
ধারা-১৬৪ ইতিকাফরত স্বামী বা মাহরাম পুরুষের সহিত সাক্ষাত। নারী মসজিদে গিয়া ইত্তেকাফরত স্বামী বা মাহরাম পুরুষের সহিত দেখা-সাক্ষাত করিতে পারিবে।
বিশ্লেষণ
মসজিদে ইতিকাফরত স্বামী বা মাহরাম পুরুষের সহিত নারী যে কোনো প্রয়োজনে দেখা-সাক্ষাত করিতে পারিবে। এ সম্পর্কে বুখারী ও মুসলিমে বলা হইয়াছে?
عن صفية بنت حیی قالت انهاجاءت رسول الله صلى الله عليه وسلم تزوره في اعتكافه في المسجد في العشر الأواخر من رمضان فتحدثت عنده ساعة ثم قامت تنقلب فقام النبي ة معها يقلبها حتى اذا بلغت المسجد عند باب ام سلمة مر رجلان من
على
فقال لهماالنبی
الانصار فسلما على رسول الله رسلكما انما هي صفية بنت حيي فقالا سبحان الله یارسول الله وكبر عليهما فقال النبي ، أن الشيطان يبلغ من الانسان مبلغ الدم واني خشيت أن يقذف في قلوبكما شيئا .
৮৯০
“সাফিয়া বিনতে হুয়াই (রা) হইতে বর্ণিত। তিনি রমযানের শেষ দশকে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর সহিত সাক্ষাত লাভের জন্য মসজিদে গিয়াছিলেন। তখন রাসূলুল্লাহ (সা) মসজিদে ইতিকাফরত ছিলেন। তিনি কিছু সময় তাহার সহিত কথাবার্তা বলিয়া ঘরে ফিরিবার উদ্দেশ্যে দাঁড়াইলেন। রাসূলুল্লাহ (সা)-ও তাহার সহিত উঠিলেন। সাফিয়া (রা) যখন মসজিদে উম্মে সালামা (রা)-র দরজার নিকট পৌছাইলেন তখন সেইখান দিয়া দুইজন আনসার সাহাবী যাইতেছিলেন। তাহারা রাসূলুল্লাহ (সা)-কে সালাম দিলেন। তারপর রাসূলুল্লাহ (সা) তাহাদেরকে বলিলেন, ধীরে চল। সে হইতেছে সাফিয়া বিনতে হুয়াই (রা)। তখন তাহারা উভয়ে বলিয়া উঠিলেন, সুবহানাল্লাহ, হে আল্লাহর রাসূল! ব্যাপারটি তাহাদের নিকট অস্বাভাবিক মনে হইল। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সা) বলিলেন, নিশ্চয় শয়তান মানুষের শিরা-উপশিরায় চলাচল করে। তাই আমার আশংকা হইয়াছে, হয়ত সে তোমাদের অন্তরে খারাপ কিছুর উদ্রেক করিয়া দিবে”।২০২
ধারা-১৩৬৫ চন্দ্র ও সূর্যগ্রহণের সালাতে মহিলাদের অংশগ্রহণ নারী চন্দ্রগ্রহণ ও সূর্যগ্রহণের সময় আদায়কৃত নামাযে অংশগ্রহণ করিতে পারিবে।
বিশ্লেষণ
নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামায, জুমআ ও ঈদের নামায জামাআতে আদায় করা ছাড়াও নারী বিশেষ কোন সময়ে অনুষ্ঠিত জামাতের নামাযে পুরুষের সহিত অংশগ্রহণ করিতে পারিবে। যেমন সালাতুল কুসূফ ইত্যাদি। এ সম্পর্কে ইমাম বুখারী (র) উল্লেখ করিয়াছেন?
عن اسماء بنت ابي بكر قالت ايت عائشة زوج النبي له حين خسفت الشمس فاذا الناس قيام يصلون واذا هي قائما تصلى فقلت ما للناس فاشارت بيدها نحو السماء وقالت سبحان الله فقلت اية فشارت ای نعم فقمت حتى تجني الغشى فجعلت أسب فوق رأسي ماء فلما انصرف رسول الله ة حمد الله واثنی عليه
……… J8
৮৯১
“হযরত আসমা বিনতে আবু বাকর (রা) বলিয়াছেন, সূর্যগ্রহণের সময় আমি নবী সহধর্মিনী হযরত আয়েশা (রা)-এর নিকট আসিয়া দেখিতে পাইলাম, লোকেরা দাঁড়াইয়া নামায আদায় করিতেছে এবং তিনিও তাহাদের সহিত নামাযরত রহিয়াছেন। আমি জিজ্ঞাসা করিলাম, লোকদের কি হইয়াছে? তিনি হাত দ্বারা আকাশের দিকে ইশারা করিয়া সুবহানাল্লাহ বলিলেন। আমি তখন বলিলাম, ইহা কি কোন বিশেষ নিদর্শন? তিনি ইশারায় হাঁ বলিলেন। আমিও উক্ত নামাযে দাঁড়াইয়া গেলাম। দীর্ঘ সময় ধরিয়া দাঁড়াইয়া থাকায় আমার বেহুশ হইবার অবস্থা হইল। আমি মাথায় পানি ঢালিতে লাগিলাম। যখন রাসূলুল্লাহ (সা) নামায শেষ করিলেন, তখন আল্লাহর প্রশংসা করিয়া তিনি ভাষণ দিলেন এবং বলিলেন….”।২০৩
ধারা-১৩৬৬
নারীদের জানাযায় অংশগ্রহণ নারীগণ জানাযায় অংশগ্রহণ করিতে পারিবে।
বিশ্লেষণ
মহিলারাও জানাযার নামাযে অংশগ্রহণ করিতে পারে। এই সম্পর্কে মুসলিম শরীফে উল্লেখ রহিয়াছে :
عن عائشة أنها قالت لماتوقی سعد بن ابی وقاص ارسل ازواج النبي ع أن يمروا بجنازة في المسجد ليصلين عليه ففعلوا فوفق به على حجره يصلين عليه .
“হযরত আয়েশা (রা) হইতে বর্ণিত। তিনি বলিয়াছেন, যখন হযরত সাদ ইবন আবু ওয়াক্কাস (রা) ইন্তেকাল করিলেন, তখন নবী সহধর্মিনীগণ তাহার লাশ মসজিদে লইয়া আসিবার জন্য খবর পাঠাইলেন, যাহাতে তাহারা সালাতে জানাযা আদায় করিতে পারেন। লোকেরা তাহাই করিল। তাহাদের গৃহের সামনে লাশ রাখা হইল এবং তাহারা সালাতে জানাযা আদায় করিলেন”।২০৪
এমনিভাবে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর জানাযাতে মহিলারা অংশগ্রহণ করিয়াছিলেন। ইমাম নববী উল্লেখ করিয়াছেন যে, অধিকাংশ ফকীহর অভিমত এই যে, সাহাবায়ে কেরাম (রা) রাসূলুল্লাহ (সা)-এর জানাযা পৃথক পৃথকভাবে আদায় করিয়াছেন।
৮৯২
নিয়ম ছিল এই রকমঃ এক এক দল তোক ঢুকিয়া পৃথক পৃথকভাবে সালাতুল জানাযা আদায় করিয়া বাহির হইয়া আসিত। অতঃপর পর্যায়ক্রমে মহিলা ও শিশুরাও সালাত আদায় করিয়াছে।২০৫
ধারা-১৩৬৭ নারীর ইত্তিকাফে বসিবার অধিকার নারীগণ রমযান মাসে মসজিদে ইতিকাফে করতে পারিবে।
বিশ্লেষণ
পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও রমযানের শেষ দশ দিন মসজিদে ইতিকাফ করিতে পারিবে, এমনকি মুসতাহাজা’ (রক্তপ্রদরের) রোগিণী অবস্থায়ও মহিলারা ইতিকাফ করিতে পারিবে। এ সম্পর্কে বুখারী (র) উল্লেখ করিয়াছেন?
عن عائشة زوج النبي صلى الله عليه وسلم ان النبی ة كان يعتكف العشر الاواخر من رمضان حتى توفاه الله ثم اعتكف ازواجه من بعده
“নবী সহধর্মিনী হযরত আয়েশা (রা) হইতে বর্ণিত। নবী (সা) ইন্তেকালের পূর্ব পর্যন্ত রমযানের শেষ দশ দিন ইতিকাফ করিতেন। ইহার পর তাঁহার স্ত্রীগণও ইতিকাফ করিয়াছেন”।২০৬
عن عائشة قالت اعتكفت مع رسول الله ة امرأة من ازواجه
•….. LaLaw “হযরত আয়েশা (রা) হইতে বর্ণিত। তিনি বলিয়াছেন, রাসূলুল্লাহ (সা)-এর স্ত্রীদের একজন তাঁহার সহিত “মুসতাহাজা” অবস্থায় ইতিকাফ করিয়াছেন”।
কোন কোন বর্ণনামতে হযরত ইকরিমা (রা) হইতে বর্ণিত। তিনি বলিয়াছেন, উম্মে সালামা (রা) মুসতাহাজা অবস্থায় রাসূলুল্লাহ (সা)-এর সহিত ইতিকাফে বসিয়াছিলেন।২০৭
ধারা-১৩৬৮ নিজের মূল্যবান পোশাক অপরকে ধার দেওয়ার অধিকার নারী প্রয়োজনবােধে নিজের মূল্যবান পোশাক অপর মহিলাকে ব্যবহারের জন্য ধার প্রদান করিতে পারিবে।
বিশ্লেষণ
পারস্পরিক সহযোগিতা হিসাবে নারী তাহার মূল্যবান পোশাক-পরিচ্ছদ অপর মহিলাকে ব্যবহারের জন্য ধার দিতে পারে। এ সম্পর্কে বুখারী শরীফে উল্লেখ রহিয়াছেঃ
عن عبد الواحد بن ايمن قال حدثني ابي قال دخلت على عائشة
وعليها درع قطرثمنه خمسة دراهم فقالت ارفع بصرك الي جا ريتی انظر اليها فانها تراهی آن تلبسه في البيت وقد كان لي منهن درع على عهد رسول الله له فما كانت امرأة تقين بالمدينة الا ارسلت
• (542) ১৫al. “আবদুল ওয়াহেদ ইবন আইমান হইতে বর্ণিত। তিনি বলিয়াছেন, আমার পিতা আমাকে বলিয়াছেন, আমি হযরত আয়েশা সিদ্দীকা (রা)-এর নিকট গিয়াছিলাম। তিনি সুতি কাপড়ের একটি জামা পরিহিতা ছিলেন যাহার মূল্য ছিল পাঁচ দিরহাম। তিনি আমাকে লক্ষ্য করিয়া বলিলেন, আমার এই দাসীর দিকে তুমি তাকাইয়া দেখ। সে ঘরে এই ধরনের পোশাক পরিধান করিতে গর্ববােধ করে। রাসূলুল্লাহ (সা)-এর যুগে আমার এই ধরনের একটি জামা ছিল। মদীনায় কোন মহিলা সাজসজ্জা করিতে চাহিলে লোক পাঠাইয়া আমার জামাটি ধার চাহিত” ২০৮
ধারা-৪০৫
সন্তান হইতে সর্বোত্তম ব্যবহার প্রাপ্তি ‘মাতা হিসাবে নারী তাহার সন্তান হইতে সর্বোত্তম ব্যবহার লাভ করিবে।
৮৯৪
বিশ্লেষণ
মাতা হিসাবে নারীর অধিকার সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে বলা হইয়াছে?
وقضى ربك ألا تعبدوا الا اياه وبالوالدين احسانا اما يبلغن عندك الكبر أحدهما أو كلاهما فلا تقل لهما أف ولا تنهرهما وقل لهما قولا كريما . واخفض لهما جناح الث من الرحمة وقل رب ارحمهما گمارينئ صغيرا (بنی اسرئل ۲۳-۲۶) .
“তোমার প্রতিপালক আদেশ দিয়াছেন তিনি ব্যতীত অন্য কাহারও ইবাদত না করিতে এবং পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করিতে। তাহাদিগের একজন অথবা উভয়ে তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হইলে তাহাদিগকে “উহ” বলিও না এবং উহাদিগকে ধমক দিও না। তাহাদিগের সহিত বলিও সম্মানসূচক নম্র কথা। মমতাবশে তাহাদিগের প্রতি নম্রতার পক্ষপুট অবনমিত করিও এবং বলিও, “হে আমার প্রতিপালক! তাহাদিগকে দয়া কর, যেভাবে শৈশবে তাহারা আমাকে প্রতিপালন করিয়াছিলেন” (১৭ঃ ২৩-২৪)।
أن أشكر لي ولوالديك
“আমার শোকর কর এবং পিতা-মাতারও” (৩১ : ১৪)। উল্লেখিত আয়াতে মাতা-পিতার প্রতি সদ্ব্যবহারের জন্য সন্তানদের উপর কতিপয় নির্দেশ প্রদান করা হইয়াছে?
প্রথম ও তাহাদিগকে ‘উফ’-ও বলিবে না। হযরত আলী (রা) বলিয়াছেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন, “পীড়াদানের ক্ষেত্রে উফ’ বলিবার চাইতেও কম কোন স্তর থাকিলে তাহাও অবশ্য উল্লেখ করা হইত।
দ্বিতীয় ও তাহাদেরকে ধমক দিও না। তৃতীয় ও তাহাদের সহিত সম্মানসূচক ও নম্র কথা বলিবে। চতুর্থ : মমতাবশে তাহাদের প্রতি তার পক্ষপুট অবনত রাখিবে।
পঞ্চম ও তাহাদের জন্য দোয়া করিবে এবং বলিবে, হে আমার প্রতিপালক! তাহাদের প্রতি দয়া কর যেভাবে শৈশবে তাহারা আমাকে প্রতিপালন করিয়াছেন।
মায়ের প্রতি সন্তানের সদ্ব্যবহার সম্পর্কে বুখারী ও মুসলিমে উল্লেখ রহিয়াছে?
عن أبي هريرة عن النبي ة لم يتكلم في المهد الأ ثلاثة عيسى بن مريم وصاحب جريج وكان جريج رجلا عابدا فاتخذ
৮৯৫
صومعه خانت امه وهو يصلي فقالت ياجريج فقال يا رب امی وصلاتي فاقبل على صلاته فانصرفت فلما كان من الغد اتته وهو يصلي فقالت ياجريج فقال يارب امي وصلاتي فاقبل على صلاته فانصرفت فلما كان من الغد اتته وهو يصلي فقالت ياجريج فقال ای رب امي وصلاتي فاقبل على صلاته فقالت اللهم لا تمته حتى ينظر الى وجوه المومسات فتذاكر بنو اسرائيل جريجا وعبادته وكانت امرأة بغي يتمثل بحسنها فقالت ان شئتم لا فتنته لكم قال فتعرضت له فلم يلتفت اليها فاتت راعيا كان ياوي الى صومعته فامكنته من نفسها فوقع عليها فحملت فلما ولدت قالت هو بن جريج فاتوه فاستنزلوه وهدموا صومعته وجعلوا يضربونه فقال ماشامكم قالوا زنیت بهذه البغي فولدت منك ……..
“হযরত আবু হুরায়রা (রা) হইতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) বলিয়াছেন, শুধুমাত্র তিন ব্যক্তিই দোলনায় কথা বলিয়াছে। (তাহাদের দুইজন হইতেছেন) ঈসা ইবন মরিয়ম ও জুরাইজের সঙ্গী। জুরাইজ একজন আবেদ ব্যক্তি ছিলেন। তিনি একটি ইবাদতখানা তৈরি করিয়া সেখানে থাকিতেন। একদিন তাহার মাতা’ তাহার নিকট আসিলেন। তখন তিনি সালাতরত ছিলেন। তাহার মাতা তাহাকে বলিলেন, হে জুরাইজ! জুরাইজ বলিলেন, হে প্রভু! আমার মাতা এবং আমার সালাত। তিনি সালাতের দিকেই ফিরিলেন। তাহার মাতা ফিরিয়া গেলেন। পরের দিন তাহার মাতা পুনরায় আসিয়া তাহাকে সালাতে রত দেখিলেন এবং হে জুরাইজ বলিয়া ডাকিলেন। জুরাইজ এইবারও বলিল, হে প্রভু! আমার মাতা ও আমার সালাত। এই বলিয়া তিনি সালাতের দিকেই ফিরিয়া গেলেন। সেদিনও তাহার মাতা ব্যর্থ হইয়া ফিরিয়া গেলেন। পরের দিন তাহার মাতা আবারও আসিয়া তাহাকে সালাতে রত দেখিতে পাইলেন এবং ডাক দিলেন, হে জুরাইজ। জুরাইজ আগের মত বলিলেন, হে প্রভু! আমার মাতা এবং আমার সালাত। এই বলিয়া তিনি সালাতের দিকে মনোযোগ দিলেন। তাহার মাতা এইবার বিরক্ত হইয়া আল্লাহর নিকট দোয়া করিলেন, হে আল্লাহ! বেশ্যা রমণীদের চেহারা না দেখাইয়া তুমি তাহাকে মৃত্যু দিও
। জুরাইজ ও তাহার ইবাদত সম্পর্কে বনী ইসরাঈলের মধ্যে ব্যাপক জানাজানি হইয়া গেল। এক সুন্দরী বেশ্যা তাহাকে বিপদগ্রস্ত করিতে উদ্যত হইল এবং সে বনী ইসরাঈলের লোকদেরকে বলিল, তোমরা চাহিলে আমি তাহাকে বিপদে
৮৯৬
ফেলিয়া দিতে পারি। ইহার পরে সে তাহার নিকট গেল। কিন্তু জুরাইজ সেদিকে ভুক্ষেপ করিলেন না। ঐ ইবাদতখানার কাছাকাছি এক রাখাল আশ্রয় লইয়াছিল। মহিলা তাহার সহিত অবৈধ দেহিক সম্পর্ক স্থাপন করিল এবং উহাতে সে গর্ভবতী হইল এবং সন্তান প্রসব করিয়া বলিল, এই সন্তান জুরাইজের। লোকেরা জুরাইজকে ইবাদতখানা হইতে নামাইয়া মারধর করিতে লাগিল এবং তাহার ইবাদতখানা ভাঙ্গিয়া চুরমার করিয়া দিল। তিনি বলিলেন, তোমরা এইরূপ করিতেছ কেন? তাহারা বলিল, তুমি এই নারীর সহিত ব্যভিচারে লিপ্ত হইয়াছ, ফলে এই সন্তান জন্মগ্রহণ করিয়াছে …….”।২০৯
عن أبي هريرة رضي الله عنه قال جاء رجل إلى رسول الله ع فقال يارسول الله من احق الناس بحسن صحابتي قال امك قال ثم من قال امك قال ثم من قال أمك قال ثم من قال ابوك (بخاری).
“হযরত আবু হুরায়রা (রা) বলিয়াছেন, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নিকট আসিয়া জিজ্ঞাসা করিল, হে আল্লাহর রাসূল! আমার সদাচার পাওয়ার অগ্রাধিকারী কে? তিনি বলিলেন, তোমার মাতা’। লোকটি জিজ্ঞাসা করিল, তারপর কে? তিনি বলিলেন, তোমার মাতা। লোকটি আবার বলিল, তারপর কে? তিনি বললেনঃ তোমার মাতা। লোকটি চতুর্থবার জিজ্ঞাসা করিল, তারপর কে? এইবার তিনি বলিলেন : তোমার পিতা”।২১০
এই হাদীস দ্বারা মাতার অধিকার স্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হয়। উল্লেখ্য, মাতা মুসলমান না, ‘হইয়া বিধর্মী হইলেও মাতার এই অধিকার বহাল থাকিবে।২১১
ধারা-১৩৭০ নারীর মসজিদের খেদমতের অধিকার নারী মসজিদের খেদমত করিতে পারিবে।
বিশ্লেষণ
নারীর মসজিদের খেদমত করা সম্পর্কে ইমাম বুখারী ও মুসলিম উল্লেখ করিয়াছেনঃ
عن أبي هريرة أن رجلا أسود او مرأة سوداء كان يعم المسجد وفي رواية البخاري الا اراه الا امرأة) قما سأل النبي صلى الله
৮৯৭
عليه وسلم عنه فقالوا مات قال أقلا كنتم اذنتمونی به دلوني على فبره او قال فبرها فاتی قبرها وصلى عليها .
“হযরত আবু হুরায়য়া (রা) বলিয়াছেন, এক হাবসী পুরুষ কিংবা মহিলা মসজিদে নববীর ঝাড়ুদার ছিল। (ইমাম বুখারীর বর্ণনামতে ঝাড়ুদার মহিলাই ছিল)।২১২ ঝাড়ুদার মারা গেলে রাসূলুল্লাহ (সা) তাহার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করিলেন। লোকেরা তাহার মৃত্যু সংবাদ দিলে তিনি বলিলেন, তোমরা আমাকে আগে জানাও নাই কেন? আমাকে তাহার কবর দেখাইয়া দাও। অতঃপর তিনি তাহার কবরের নিকট আসিয়া সালাতে জানাযা আদায় করিলেন”।২১৩
অন্য বর্ণনায় রহিয়াছে?
ان امرأة سوداء كانت تقم المسجد ……فاتی رسول الله صلى
الله عليه وسلم قبرها فصلى عليها .
“এক কৃষ্ণকায় মহিলা মসজিদে নববীতে ঝাড় দিত। … সে মারা গেলে রাসূলুল্লাহ (সা) তাহার কবরের নিকট আসিয়া জানাযার নামায পড়িলেন”।২১৪
ধারা-১৩৭১ স্বামীর নিকট খােরপোষের অধিকার স্ত্রী স্বামীর নিকট খােরপোষের অতিরিক্ত দাবি করিতে পারিবে।
বিশ্লেষণ
স্বামীর নিকট হইতে খােরপোষের অতিরিক্ত কিছু দাবি জানানো সম্পর্কে উল্লেখ করা হইয়াছে।
عن جابر بن عبد الله قال دخل ابو بكر يستاذن على رسول الله صلى الله عليه وسلم فوجد الناس جلوسا ببابه لا يؤذن لأحد منهم قال فاذن لابی بکر قدخل ثم أقبل عمر فاستاذن فاذن له
وجد النبی ة جالسا حوله نساءه واجماساكا قال قال لاقول شيئا اضحك النبی ة فقال يارسول الله لو رأيت بنت خارجة سالتنى النفقة فقمت اليها فوجاعت عنقها قضحك النبی ة
৮৯৮
وقال هن حولي كماترى يسألنني النفقة فقام أبو بكر الى عائشة يجاء عنقها فقام عمر الى حفصة يجاء عنقها كلاهما يقول تسالن رسول الله ة ماليس عنده فقلن والله لا نسئل رسول الله له
• ১c v . .. “হযরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা) বলিয়াছেন, হযরত আবু বাকর (রা) রাসূলুল্লাহ (সা)-এর গৃহে প্রবেশের অনুমতি চাহিতে আসিলেন। তিনি দেখিলেন, তাঁহার গৃহদ্বারে বহু লোক বসিয়া আছে। তাহাদের কাহাকেও প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয় নাই। রাবী বলেন, অতঃপর আবু বাকর (রা)-কে অনুমতি দেওয়া হইল। তিনি প্রবেশ করিলেন। ইহার পর হযরত উমার (রা) আসিয়া অনুমতি চাহিলে তাহাকেও অনুমতি দেওয়া হইল। ঘরে ঢুকিয়া তাহারা রাসূলুল্লাহ (সা)-কে স্ত্রীদের দ্বারা পরিবেষ্টিত অবস্থায় বসিয়া থাকিতে দেখিতে পাইলেন। তাহাদের কেহই কোন কথা বলিতেছেন না। তখন হযরত উমার (রা) বলিলেন, আমি এমন কথা বলিব যাহাতে রাসূলুল্লাহ (সা) হাসিবেন। অতঃপর বলিলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি যদি খারিজার কন্যাকে দেখিতেন, সে শুধু আমার নিকট খরচ-খরচা চায়, তাই আমি তাহাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়াছি। এই কথা শুনিয়া রাসূলুল্লাহ (সা) হাসিয়া উঠিয়া বলিলেনঃ তুমি তো দেখিতে পাইতেছ। তাহারা কিভাবে আমার চারিদিক ঘিরিয়া রহিয়াছে আর ভাতা চাহিতেছে। ইহার পর আবু বাকর (রা) উঠিয়া আয়েশার ঘাড়ে ও হযরত উমার (রা) উঠিয়া হাফসার ঘাড়ে মৃদু আঘাত করিলেন, আর বলিলেনঃ তোমরা রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নিকট এমন জিনিস চাও যাহা তাঁহার নিকট নাই! তখন তাহারা বলিল, আল্লাহর শপথ! আমরা তাঁহার নিকট কখনও এমন কিছু চাহিব
যাহা তাঁহার নিকট নাই”।২১৫
এই হাদীস হইতে প্রমাণিত হয় যে, স্ত্রীগণ স্বামীর নিকট নানা কিছু দাবি করিতে পারে।
ধারা-১৩৭২
দান-খয়রাত করিবার অধিকার নারী স্বামীর মাল হইতে দান-খয়রাত করিতে পারিবে।
বিশ্লেষণ
দান-খয়রাত করা নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলেরই অধিকার। পবিত্র কুরআন মজীদের যতগুলি আয়াতে দান-খয়রাত সম্পর্কে আদেশ, নির্দেশ, উপদেশ,
৮৯৯
ফযীলাত ও উদ্বুদ্ধ করা হইয়াছে, ইহার সর্বত্র নারী ও পুরুষের মধ্যে কোন পার্থক্য করা হয় নাই। সুতরাং দান-খয়রাত করা যেমন পুরুষের অধিকার, ঠিক তেমনি নারীরও অধিকার। রাসূলুল্লাহ (সা) নারীদের দান-খয়রাত করার নির্দেশ প্রদান করিয়াছেন।
يوم الفطر
عن ابن عباس قال خرجت مع النبي صلى الله او اضحى فصلى ثم خطب ثم اتى النساء فوعظهن ونگره
• GelL-Als “হযরত ইবন আব্বাস (রা) বলিয়াছেন, আমরা ঈদুল ফিতর অথবা ঈদুল আযহার দিন রাসূলুল্লাহ (সা)-এর সহিত বাহির হইলাম। তিনি নামায আদায় করিলেন এবং বক্তৃতা (খুতবা) প্রদান করিলেন। অতঃপর মহিলাদের নিকট আসিয়া তাহাদের উদ্দেশ্যে উপদেশ দিলেন এবং তাহাদেরকে দান-খয়রাতের নির্দেশ প্রদান করিলেন”।২১৬
বুখারীর অপর এক রিওয়ায়াতে ইবন আব্বাস (রা) বলিয়াছেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা)-এর সহিত ঈদুল ফিতরের দিন উপস্থিত ছিলাম। অতঃপর তিনি পুরুষদের সারি ভেদ করিয়া অগ্রসর হইয়া মহিলাদের পর্যন্ত পৌছাইলেন। তাঁহার সহিত ছিলেন বিলাল (রা)। রাবী বলেন, তাহাদের অনেকেই দান করিল। ইহার পর বিলাল তাহার চাদর বিছাইয়া দিলেন, তারপর বলিলেনঃ অসিয়া দেখ, আমার পিতা-মাতা কোরবান হউক, এই মহিলারা বিলালের চাদরের উপর তাহাদের আংটি
ও বাজুবন্দ নিক্ষেপ করিয়াছে।২১৭
ধারা-১৩৭৩ পিতা-মাতার জীবদ্দশায় ও মৃত্যুর পর তাহাদের প্রতি সদ্ব্যবহারের
অধিকার নারী তাহাদের পিতা-মাতার জীবদ্দশায় ও মৃত্যুর পর তাহাদের প্রতি সদ্ব্যবহার করিবে।
বিশ্লেষণ
পিতা-মাতার জীবদ্দশায় ও তাহাদের মৃত্যুর পর পুরুষদের মত নারীগণ তাহাদের প্রতি সদ্ব্যবহার করিবে। যেমন মুসলিম শরীফে উল্লেখ রহিয়াছে, “হযরত ইবন বুরাইদা (র) তাহার পিতার সূত্রে বর্ণনা করিয়াছেন, তিনি বলিয়াছেন, একদা
৯০০
আমি রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নিকট বসা ছিলাম। এমন সময় এক মহিলা আসিয়া তাহাকে বলিল, আমি আমার মাকে একটি দাসী দান করিয়াছিলাম। এখন তিনি ইন্তিকাল করিয়াছেন। হাদীস বর্ণনাকারী (রাবী) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলিলেন, তোমার দানের প্রতিদান অবধারিত। তাহার উত্তরাধিকারী হিসাবে তুমি তাহা ফেরত পাইবে। সে বলিল, হে আল্লাহর রাসূল! তাহার এক মাসের রোযা বাকী আছে। আমি কি তাহা আদায় করিব? তিনি বলিলেন, হাঁ আদায় কর। সে বলিল, তিনি কখনও হজ্জ করেন নাই। তাহার পক্ষ হইতে আমি কি হজ্জ করিব। তিনি বলিলেন হ্যাঁ তাহার পক্ষ থেকে হজ্জ কর”।২১৮
عن ابن عباس أن امرأة من جهينة جاءت الى النبي صلى الله فقالت إن أمي نذرت أن تحج فلم تحج حتى ماتت افاحج عنها
•••• -১ এ। * 541 sil, 414 JUG “ইবন আব্বাস (রা) হইতে বর্ণিত। জুহায়না গোত্রের জনৈকা মহিলা রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নিকট আসিয়া বলিল, আমরা মা হজ্জ করিবেন বলিয়া মানত করিয়াছিলেন, কিন্তু উহা পালন করিবার পূর্বেই তিনি ইন্তিকাল করিয়াছেন। এখন আমি কি তাহার পক্ষ হইতে উহা আদায় করিব? তিনি বলিলেন : হাঁ, তাহার পক্ষ হইতে হজ্জ পালন কর। তোমার কি মনে হয়, যদি তোমার মা কাহারও কাছে ঋণী থাকিত তাহা হইলে তুমি কি তাহার ঋণ পরিশোধ করিতে না? সুতরাং আল্লাহর প্রাপ্য পরিশোধ কর। কেননা আল্লাহর প্রাপ্য অধিকতর পরিশোধযোগ্য”।২১৯
ধারা-১৩৭৪
সরকার নির্বাচনে নারীর অধিকার সরকার নির্বাচনে নারী অংশগ্রহণ করিতে পারিবে।
বিশ্লেষণ
রাষ্ট্র বা সরকার নির্বাচনে নারী অংশগ্রহণ করিতে পারে এবং পরামর্শ দ্বারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখিতে পারে। যেমন হযরত হাফসা (রা) পরবর্তী খলীফা নির্বাচনে উদ্বিগ্ন হইয়া স্বীয় মতামত তাহার ভাই হযরত আবদুল্লাহ ইবন উমার (রা)-কে প্রদান করিয়াছিলেন। এ সম্পর্কে মুসলিম শরীফে উল্লেখ রহিয়াছে?
৯০১
عن ابن عمر قال دخلت الى حفصة فقالت اعلمت ان اباك غير مستخلف قال قلت ما كان يفعل قالت انه فاعل قال فحلفت ان
……… এ5 – 4K “হযরত আবদুল্লাহ ইবন উমার (রা) বলিয়াছেন, একবার আমি হযরত হাফসা, (রা)-র ঘরে প্রবেশ করিলে তিনি বলিলেন, তুমি কি জান, তোমার পিতা (পরবর্তী) খলীফা মনোনীত করেন নাই? আমি বলিলাম, তিনি ইহা করিতে পারেন না। তিনি বলিলেন, অবশ্যই তিনি ইহা করিতে পারেন। ইবন উমার (রা) বলিলেন, ইহার পর আমি এই ব্যাপারে আব্বার সহিত কথা বলিব বলিয়া তাহাকে প্রতিশ্রুতি প্রদান করিলাম ……. ২২০
ধারা-১৩৭৫ স্বৈরাচারী শাসককে অস্বীকারের অধিকার নারী স্বৈরাচারী শাসককে অস্বীকার করিতে পারিবে।
বিশ্লেষণ
যে কোন জালেম ও স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করিবার অধিকার প্রত্যেক নারীর রহিয়াছে। যেমনিভাবে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর যুগে অথবা পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন মহিলা সাহাবী স্বৈরাচারী সরকারের কর্মকাণ্ডে বাধা প্রদান করিয়াছেন অথবা প্রতিবাদ জানাইয়াছেন, এ সম্পর্কে ইমাম মুসলিম তাহার গ্রন্থে উল্লেখ করিয়াছেন?
عن أبی نوفل قال ……. خل الحجاج بن يوسف الثقفى بعد عبد الله ابن الزبير على اسماء بنت ابی بکر فقال كيف رأيتني صنعت بعد والله قالت رأيت افسدت عليه دنياه وافسد عليك اخرتك اما ان رسول الله صلى الله عليه وسلم حدثنا ان في ثقيف كذابا ومبيرا فأما الكذاب فرأيناه واما المبيرق اخالك الا اياه قال فقام عنها ولم يراجعها .
“আবু নাওফাল (র) বলিয়াছেন, … হযরত আবদুল্লাহ ইবন যুবায়রের হত্যাকাণ্ডের পর হাজ্জাজ ইবন ইউসুফ আসমা বিনতে আবু বাকরের নিকট আসিল
৯০২
এবং তাহাকে জিজ্ঞাসা করিল, আল্লাহর শত্রুর সহিত আমি যে আচরণ করিয়াছি সে ব্যাপারে আপনার মন্তব্য কি? জবাবে তিনি বলিলেন, আমি মনে করি তুমি তাহার পার্থিব জীবন নষ্ট করিয়াছ, আর সে তোমার পরকালীন জীবন নষ্ট করিয়া দিয়াছে। রাসূলুল্লাহ (সা) বলিয়াছেন ও সাফীক গোত্রে এক চরম মিথ্যাবাদী ও এক ঘাতক রহিয়াছে। মিথ্যাবাদীকে আমরা দেখিয়াছি, আর ঘাতক হিসাবে তোকে ছাড়া আর কাহাকেও দেখিতেছি না। আবু নাওফাল বলেন, এই কথা শুনিয়া হাজ্জাজ তাহার প্রতিবাদ না করিয়া সেই স্থান ত্যাগ করিয়া উঠিয়া গেল”।২২১
ধারা-১৩৭৬ নারী কর্তৃক নিরাপত্তা প্রদানের অধিকার নারী যে কোন ব্যক্তিকে নিরাপত্তা প্রদান করিতে পারিবে।
বিশ্লেষণ
নারী যে কোন পুরুষকে নিরাপত্তা প্রদান এবং আশ্রয় দিতে পারে। এ সম্পর্কে ইমাম বুখারী উল্লেখ করিয়াছেন?
عن أم هانی بنت أبي طالب يقول ذهبت إلى رسول الله عام الفتح فوجدته يغتسل وفاطمة ابنته تستره فسلمت عيله فقال من هذه فقلت انا ام هانی بنت ابی طالب فقال مرحبا بام هانی قلما فرغ من غسله قام فصلي …… فقلت يا رسول الله زعم بن أمی على انه قاتل رجلا قد اجره فلان بن هبيرة فقال رسول الله له
•••••••••••••••UA / ৫৩= ১ / “উম্মে হানী বিনতে আবু তালিব (রা) বলিয়াছেন, আমি মক্কা বিজয়ের বৎসর রাসূলুল্লাহ (সা)-এর খেদমতে উপস্থিত হইয়া দেখিতে পাইলাম যে, তিনি গোসল করিতেছেন। রাসূলুল্লাহ (সা)-এর কন্যা হযরত ফাতেমা (রা) তাঁহাকে পর্দা করিয়া দাঁড়াইয়া আছেন। আমি তাঁহাকে সালাম দিলাম। তিনি জিজ্ঞাসা করিলেন, আপনি কে? আমি বলিলাম, আমি উম্মে হানী বিনতে আবু তালিব। তিনি বলিলেন, উম্মে হানী! স্বাগতম। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সা) গোসল সারিয়া নামায আদায় করিলেন। আমি বলিলাম, হে আল্লাহর রাসূল! হুবাইরার অমুক ছেলেকে আমি নিরাপত্তা
৯০৩
দিয়াছি। আমার ভাই আলী ইবন আবু তালিব তাহাকে হত্যা করিবার কথা বলিতেছে। তখন রাসূলুল্লাহ (সা) বলিলেন : হে উম্মে হানী! তুমি যাহাকে নিরাপত্তা দিয়াছ আমিও তাহাকে নিরাপত্তা দিলাম”।২২২
ধারা-১৩৭৭
মেহমানকে আপ্যায়নের অধিকার নারী মেহমানকে আপ্যায়ন করিতে পারিবে।
বিশ্লেষণ
নারীর মেহমান আপ্যায়নের অধিকার রহিয়াছে। এ সম্পর্কে হাদীসে বলা হইয়াছে?
عن فاطمة بنت قيس …وام شريك امرأة غنيمة من الانصاری
.
عظيمة النفقة في سبيل الله ينزل عليها الضيفان ………
“হযরত ফাতেমা বিনতে কায়স (রা) হইতে বর্ণিত। উম্মে শুরাইক (রা) একজন ধনাঢ্য আনসারী মহিলা ছিলেন। দান-সদকার ব্যাপারে তিনি খুবই উদারহস্ত ছিলেন। তাহার বাড়ীতে মেহমানের ভীড় লাগিয়া থাকিত”।২২৩
عن جابر قال انا يوم خندق نحفر فعرضت كدبة شديدة فجاء
له فقال هذه كدبة عرضت في الخندق فقال انا نازل ثم
وا النبي قام وبطنه معصوب بحجر وبثناثلثة ايام لا نذوق دواقا فاخذ النبي صلى الله المعول فضرب فعاد كثيا اهيل فقلت يا رسول الله له اذن لي الى البيت فقلت لامرأتي رأيت باك النبی
له شی مافی ذالك ضبر فعندك شيئ قالت عندي شعير وعناق فذيحت العناق وطبخت الشعيرحتي جعلنا اللحم في البرمة ثم
•…………. – 1 “হযরত জাবের (রা) বলিয়াছেন, খন্দক খননকালে খুঁড়িতে খুঁড়িতে একদা অত্যন্ত শক্ত একটি পাথর বাধিল। তখন সকলে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নিকট গিয়া বলিল যে, খন্দকের মধ্যে অত্যন্ত কঠিন একটি পাথর বাধিয়াছে। তিনি বলিলেন
৯০৪
আমি আসিতেছি। এই বলিয়া তিনি উঠিয়া দাঁড়াইলেন। তখন তাঁহার পেটে পাথর
• বাঁধা ছিল। সে সময় তিন দিন হইতে আমরা সকলেই অভুক্ত ছিলাম। রাসূলুল্লাহ (সা) কোদাল হাতে লইয়া শক্ত পাথরটিকে আঘাত করিলে উহা ধুলা-বালুতে পরিণত হইয়া গেল। অতঃপর আমি বলিলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে একটু বাড়ীতে যাওয়ার অনুমতি দিন। বাড়ীতে গিয়া আমি স্ত্রীকে বলিলাম, রাসূলুল্লাহ (সা)-কে যেমন ক্ষুধার্ত দেখিলাম তাহাতে আর ধৈর্য ধরা যায় না। তোমার কাছে খাবার কিছু আছে কি? সে বলিল, আমার কাছে গম ও একটি বকরী আছে। আমি বকরীটি যবেহ করিলাম আর স্ত্রী কিছু গম পিষিল। এইভাবে সব কিছু জোগাড় করিয়া একটি হাঁড়িতে গোশত রাখিয়া আমি রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নিকট গেলাম। তখন খাসী টুকরা টুকরা করা হইয়ছিল আর গোশতের হাঁড়িটি উনুনে ছিল। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সা) তাঁহার খন্দকের সকল সাথীকে সঙ্গে করিয়া জাবের (রা)-এর বাড়ীতে দাওয়াত খাইতে গেলেন এবং বলিলেন : তোমরা সকলে প্রবেশ কর কিন্তু ভিড় করিবে না”।২২৪
ধারা-১৩৭৮
নিরাপত্তা সাপেক্ষে একাকী নারীর সফরের অধিকার নিরাপত্তা সাপেক্ষে নারী একাকী সফর করিতে পারিবে।
বিশ্লেষণ
প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার ব্যবস্থা থাকিলে পুরুষের ন্যায় নারীরাও একা একা দূরের সফরে বাহির হইতে পারে। এ সম্পর্কে ইমাম বুখারী (র) নবী (সা)-এর হাদীস উল্লেখ করিয়াছেন।
عن عدي ابن حاتم قال بينا اناعندالنبی صلى الله عليه وسلم اذ اتاه رجل فشكا اليه الفاقة ثم جاءه اخرفشكا اليه قطع السبيل فقال يا عدى هل رأيت الحيرة قلت لم ارها وقد انبت عنها قال فان طالت بك حيواة لتيرين الظعينة ترتحل من الحيرة حتى تطوف بالكعبة لاتخاف احدا الا الله قلت فيما بيني وبين نفسي فابن دعار طى الذين قد سعروا البلاد ……. قال عدي فرأيت الظعينة ترتحل من الحيرة حتى تطوف بالكعبة لاتخاف الا الله تعالى (رواه
• (6)
৯০৫
“হযরত আদী ইবন হাতেম (রা) বলিয়াছেন, আমরা নবী (সা)-এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। ইতিমধ্যে এক ব্যক্তি উপস্থিত হইয়া তাঁহার নিকট দৃর্ভিক্ষের কথা জানাইল। ইহার পর আরও এক ব্যক্তি উপস্থিত হইয়া ডাকাতির অভিযোগ করিল। তখন নবী (সা) বলিলেন : হে আদী! তুমি কি হিরা শহর দেখিয়াছ? আমি বলিলাম, আমি হিরা শহর দেখি নাই, তবে ঐ শহর সম্পর্কে আমার জানা আছে। তিনি বলিলেন, তুমি যদি দীর্ঘজীবী হও তাহা হইলে অবশ্যই তুমি দেখিতে পাইবে যে, উটের হাওদাতে বসিয়া একজন মহিলা একাকী হিরা শহর হইতে যাত্রা করিয়া মক্কায় গিয়া কাবা ঘর যিয়ারত করিবে। (এই দীর্ঘ পথে) সে আল্লাহ ছাড়া আর কাহাকেও ভয় করিবে না। হাদীসের বর্ণনাকারী হযরত আদী ইবন হাতেম বর্ণনা করেন, আমি মনে মনে বলিলাম, তাই গোত্রের এই সকল চোর-ডাকাত ও সন্ত্রাসীরা তখন কোথায় থাকিবে, যাহারা বর্তমানে বিভিন্ন জনপথ ও শহরে সন্ত্রাসের আগুন জ্বালাইয়া রাখিয়াছে! হযরত আদী (রা) বর্ণনা করিয়াছেন, পরবর্তী সময়ে আমি উটের হাওদায় বসিয়া মহিলাদেরকে “হিরা” হইতে যাত্রা করিয়া (মক্কায় গিয়া) কাবা ঘর যিয়ারত করিতে দেখিয়াছি। পথিমধ্যে তাহারা আল্লাহ ছাড়া আর কাহারও ভয় করে নাই”।২২৫
ইমাম আহমাদ অন্য একটি সনদে হযরত আদী (রা) হইতে বর্ণনা করিয়াছেন যে,”মহিলারা কাহারও আশ্রয় বা নিরাপত্তা ছাড়াই একাকী “হিরা” হইতে (মক্কায় ) কাবা ঘর যিয়ারত করিবে” কথাটি উল্লেখ করিয়াছেন।২২৬
শাফিঈ মাযহাবের গ্রহণযোগ্য অভিমত হইল, শান্তি ও নিরাপত্তার পরিবেশে নারী কাফেলার মধ্যে থাকিয়া একাকী সফর করিতে পারে।২২৭
ধারা-১৩৭৯ সন্তানের পরিচয়ের ক্ষেত্রে মাতার নাম উল্লেখের অধিকার সন্তানের পরিচয় প্রদানের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র মাতার নাম উল্লেখ করা যাইবে।
বিশ্লেষণ
সন্তানদিগকে পিতা ছাড়া শুধুমাত্র মায়ের সহিত সম্পর্কিত করিয়া মাতার নাম উল্লেখ করা যায়। এ সম্পর্কে বুখারীতে উল্লেখ রহিয়াছে?
৯০৬
عن عبد الرحمن بن عوف اني لفي الصف يوم بدر اذ التفت فاذا عن يمني وعن يساري فتيان حديثا السن فگانى لم امن بهما اذا قال لي أحدهما سرا من اصحابه ياعم ارنی اباجهل فقلت يا ابن اخي وما تصنع به قال عاهدت الله ان اقتله او اموت دونه فقال الى الاخر سرا من أصحابه مثله قال فماسرني اني بين رجلين مكانهما فاشرت لهما اليه فشد عليه مثل الصقرين حتی ضرباه وهما ابنا عفراء (رواه البخاری) .
“হযরত আবদুর রহমান ইবন আওফ (রা) বলিয়াছেন, বদরের যুদ্ধের দিন আমি কাতারে ছিলাম। আমি তাকাইয়া দেখিলাম, আমার ডানে ও বামে দুইজন অল্প বয়স্ক কিশোর রহিয়াছে। ইহাদের কারণে আমি নিরাপত্তার অভাব বােধ করিতেছিলাম। তখন ঐ দুইজনের একজন আমার কানে কানে বলিল, যাহাতে অন্যজন শুনিতে না পায়, ওহে চাচা! আবু জেহেলকে দেখাইয়া দিন। আমি বলিলাম, তাহার সহিত তুমি কি করিবে? উত্তরে সে বলিল, আমি আল্লাহর সহিত অঙ্গীকার করিয়াছি, তাহাকে পাইলে হত্যা করিব অথবা তাহার সহিত যুদ্ধ করিয়া শাহাদত বরণ করিব। অন্য কিশোেরটিও ঠিক একইভাবে আমাকে ঐ কথা বলিল। রাবী বলেন, ঐ দুই কিশোরের স্থলে দুইজন সাহসী বয়স্ক সৈন্য না থাকায় আমি কোন অসুবিধা বােধ করি নাই। অতঃপর আমি তাহাদেরকে আবু জেহেলের প্রতি ইশারা করিয়া দেখাইয়া দিলাম। তখন তাহারা উভয়ে বাজপাখির মত তাহার উপর ঝাপাইয়া পড়িয়া আঘাত করিল। ঐ দুই কিশোর আফরা নামক এক মহিলার সন্তান ছিল”।২২৮
ধারা-১৩৮০ নারীর গুণাবলী পর্যালোচনার অধিকার নারীর গুণাবলী পর্যালোচনা করা যাইবে।
বিশ্লেষণ
অশ্লীলতা, অশালীনতা ও অসৎ উদ্দেশ্যমুক্ত হইলে নারীর গুণাবলী পর্যালোচনা করা যায়। এ সম্পর্কে বুখারী ও মুসলিম শরীফে উল্লেখ রহিয়াছে?
৯০৭
قال رسول الله له هاجر ابراهيم عليه السلام بسارة فدخل بها قرية فيها ملك من الملوك او جبار من الجبابرة فقيل دخل ابراهيم بامرأة فهي من احسن النساء (رواه البخاری ومسلم) .
“রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন, ইব্রাহীম (আ) হযরত সারাকে লইয়া হিজরত করিলেন। তিনি এমন একটি নগরে প্রবেশ করিলেন যেখানে ছিল এক অত্যাচারী বাদশাহ। বলা হইল, ইব্রাহীম তাহার সহধর্মিনীকে লইয়া প্রবেশ করিয়াছেন। তিনি ছিলেন অতি উত্তম নারী”।২২৯
عن أنس رضي الله عنه أن النبي له كان في سفر وكان غلام
) يقال له انجشة فقال النبي
يحدوبهن (ای ببعض نساء النبي
ه رويدك ياانجشة سوقك بالقوارير وفي رواية قال ابو فلابة فتكلم النبي ع بكلمة لو تكلم بها بعضكم لعبتموها عليه
• (Lw০ ১19) “হযরত আনাস (রা) হইতে বর্ণিত। নবী (সা) এক সফরে ছিলেন। এসময় একজন ক্রীতদাস (উট চালক) নবী (সা)-এর কোন কোন স্ত্রী ও উম্মে সুলাইমের গুণাবলী উল্লেখ করিয়া হুদি গান গাহিতেছিল। তাহার নাম ছিল আনজাশা। রাসূলুল্লাহ (সা) বলিলেন : হে আনজাশা! কাঁচের টুকরাগুলি লইয়া বাহন ধীরে চালাও। অপর বর্ণনায় উল্লেখ রহিয়াছে, আবু কিলাবা বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) এমন একটি শব্দ ব্যবহার করিলেন যাহা তোমাদের কেহ ব্যবহার করিলে তাহাকে তোমরা দোষারোপ করিতে”।২৩০
শায়খ ইবনুল বাদীস বলেন, নিজের ছাত্রদের নিকট মহিলাদের কোন কোন গুণাবলী সম্বলিত এ আলোচনাকে বাড়াবাড়ি ও অতিরঞ্জন হিসাবে অবৈধ বলা সম্পর্কে আবু কিলাবা যখন জানিতে পারিলেন, তখন তিনি তাহাদের প্রতিবাদ করিয়া রাসূলুল্লাহ (সা)-এর উচ্চারিত এই শব্দটি পেশ করিলেন, যাহা তাহাদের মধ্যে কেহ করিলে তাহাকে তাহারা দোষারোপ করিত। এই সঙ্গে তিনি তাহাদের সামনে স্পষ্ট করিয়া দিলেন যে, এই কথা বা এই ধরনের অন্য কোন কথা বলায় দোষ নাই, যাহা অশ্লীলতা ও অশালীনতার অর্থ দোষে দুষ্ট নহে এবং যাহার উল্লেখ অসৎ উদ্দেশ্যমুক্ত।২৩১
৯০৮
ধারা-১৩৮১ স্ত্রীর আত্মীয়-স্বজনের প্রতি সদ্ব্যবহার করা স্ত্রী তাহার আত্মীয়-স্বজনের প্রতি উত্তম আচরণ পাইবার অধিকারী।
বিশ্লেষণ
স্বামী তাহার স্ত্রীর আত্মীয়-স্বজন ও বান্ধবীদের সহিত ভাল ব্যবহার করিবে। এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর আম্দর্শ সবার জন্য পাথেয়। রাসূলুল্লাহ (সা) হযরত খাদিজাতুল কুবরা (রা)-এর আত্মীয়-স্বজন ও বান্ধবীদের সহিত ভাল ব্যবহারের কথা ইমাম মুসলিম (র) উল্লেখ করিয়াছেন?
।
হণ
عن عائشة رضي الله عنها قالت ماغرت على احد من النساء النبي ع ماغرت على خديجة وما رأيتها ولكن كان النبي عله يكثر ذكرها وربما ذبح الشاة ثم يقطعها اعضاء ثم يبعثها في صدائق خديجة فربما قلت له كانه لم يكن في الدنيا أرمرأة الأ خديجة فيقول انها كانت وكانت وكان لي منها ولد (بخاری ومسلم) .
“হযরত আয়েশা (রা) হইত বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি খাদীজা (রা)-র প্রতি যতটা ঈর্ষান্বিত, নবী (সা)-এর অপর সহধর্মিনীগণের প্রতি ততটা নহি। অবশ্য আমি তাহাকে দেখি নাই। কিন্তু রাসূলুল্লাহ (সা) তাহার কথা বড় বেশি স্মরণ করিতেন। কখনও কখনও তিনি বকরী জবাই করিয়া উহা কাটিয়া টুকরা টুকরা করিয়া খাদীজার বান্ধবী ও স্বজনদের নিকট পাঠাইয়া দিতেন। আমি অনেক সময় তাহাকে বলিতাম, মনে হয় খাদীজা ছাড়া পৃথিবীতে আর কোন নারী নাই। তিনি বলিতেন, সেই এই এই গুনের অধিকারী ছিল। আমার সবগুলি সন্তান তাহার গর্ভেই জন্মাইয়াছে”।২৩২।
ধারা-১৩৮২ পুরুষের সহিত পরিবহনে সওয়ার হইবার অধিকার নারী পুরুষের সহিত পরিবহনে সওয়ার হইতে পারিবে।
বিশ্লেষণ
প্রয়োজনে নারী যে কোন পুরুষের যানবাহনে তাহার সহিত সওয়ার হইতে পারে। এ সম্পর্কে বুখারীতে উল্লেখ রহিয়াছে?
৯০৯
عن اسماء بنت ابی بکرقالت تزوجني الزبير وماله في الأرض من مال ولا مملوك ……….وكنت انقل النوى من ارض الزبير التي
على راسي وهی منی علی ثلثي فرسخ
اقطعه رسول الله فجئت يوما والنوى على رأسي فلقيت رسول الله له ومعه نفر من الانصار فدعاني ثم قال اخ اخ ليحملنى خلفه فاستحيت ان اسير مع الرجال وذكرت الزبير وغيرته وكان اغير الناس فعرف رسول الله ع
………… – Lal 1 / “হযরত আসমা বিনতে আবু বাকর (রা) বলেন, যুবায়ের আমাকে বিবাহ করেন। কিন্তু তাহার তেমন কোন সম্পদ ছিল না। রাসূলুল্লাহ (সা) আমার বিবাহ উপলক্ষে যুবাইরকে জায়গির দান করিয়াছিলেন। আমি সেখান হইতে মাথায় করিয়া খেজুরের ছড়া বহন করিয়া আনিতাম। এ জমির দূরত্ব ছিল আমার বাড়ী হইতে প্রায় তিন মাইল। একদিন আমি মাথায়, করিয়া খেজুরের ছড়া বহন করিয়া
আনিতেছিলাম, এমন সময় পথে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর সহিত দেখা হইল। তাহার সহিত বেশ কয়েকজন আনসার সাহাবীও ছিলেন। তিনি আমাকে ডাকিলেন এবং তাঁহার উটের পিছনে আমাকে বসাইবার জন্য উটকে ই ই বলিলেন। যাহাতে সে বসে আর আমি তাহার পিঠে চড়িতে পারি। আমি পুরুষদের সহিত একত্রে বসিতে লজ্জাবােধ করিলাম। আমার মনে পড়িল যুবায়েরের আত্মমর্যাদাবােধের কথা। কারণ সে ছিল লোকদের মধ্য সবচেয়ে বেশি আত্মমর্যাদা সম্পন্ন। রাসূলুল্লাহ (সা) ইহা অনুভব করিয়া চলিয়া গেলেন”।২৩৩
ধারা-১৩৮৩
নারীর অন্যের সহিত আলোচনা নারী তাহার প্রয়োজনে অন্যের সহিত আলোচনা করিতে পারিবে।
বিশ্লেষণ
নারী তাহার প্রয়োজনের সময় সান্ত্বনা লাভের জন্য পুরুষের সহিত মত বিনিময় করিয়া ধৈর্য ধারণ করিবার উপায় খুঁজিতে পারে। এই সম্পর্কে ইমাম বুখারী রাসূলুল্লাহ (সা)-এর হাদীস উল্লেখ করিয়াছেন।
৯১০
عن انس قال أصيب حارثة يوم بدر وهو غلام فجائت أمه الى النبي صلى الله عليه وسلم فقالت يارسول الله قد عرفت منزلة حارثة منى فان يكن في الجنة اصبر واحتسب وان تك الاخرى تری ما اصنع فقال ويحك او هبطت او جنة واحده هي انها جنان كثيرة
• 94,all = 51s “হযরত আনাস (রা) বলেন, বদরের যুদ্ধের দিন হারিসা শহীদ হইল। সে ছিল ছােট কিশোর। তাহার মাতা রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নিকট আসিয়া বলিলেন, হে আল্লাহর রাসূল! হারিসা আমার হৃদয় কতটা দখল করিয়াছিল তাহা আপনি জানেন। তাহার স্থান যদি জান্নাতে হয় তবে আমি ধৈর্য ধারণ করিব এবং আল্লাহর নিকট প্রতিদান চাহিতে থাকিব। আর যদি অন্য রকম হয় তবে বলিয়া দিন, আমি কি করিব? অন্য রিওয়ায়াতে আছে, ইহা ছাড়া ভিন্ন কিছু হইলে আমি কাঁদিতে কাঁদিতে শেষ হইয়া যাইব। তিনি বলিলেন, দূর হও অথবা বলিলেন, তোমার বুদ্ধিশুদ্ধি কি লোপ পাইয়াছে? জান্নাত কি মাত্র একটি? জান্নাত তো অনেক। আর হারিসা ফিরদাওস নামক জান্নাতে রহিয়াছে”।২৩৪
ধারা-১৩৮৪ দুধ-মাতার সাক্ষ্য প্রদানের অধিকার দুধ-মাতা স্বয়ং দুধপান করাইবার ব্যাপারে সাক্ষ্য প্রদান করিতে পারিবেন।
বিশ্লেষণ
দুধ-মাতা যদি এই কথার সাক্ষ্য প্রদান করেন, আমি অমুক ব্যক্তিকে শিশু অবস্থায় দুধ পান করাইয়াছি, তাহা হইলে সেই ক্ষেত্রে দুধ-মাতার সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য হইবে এবং তাহার সাক্ষ্য দ্বারা দুধপান প্রসূত সম্পর্ক স্থাপিত হইবে। এ সম্পর্কে ইমাম বুখারী (র) রাসূলুল্লাহ (সা)-এর হাদীস পেশ করিয়াছেন?
عن عقبة بن الحارث قال تزوجت امرأة فجائتنا امرأه سوداء فقالت قد ارضعتگمافاتيت النبی ة فقلت تزوجت فلانة بنت فلان فجائتنا امرأة سوداء فقالت لي اني قد ارضعتكما وهي كاذبة
فاعرض عنه فاتيته من قبل وجهه فقلت انها كاذبة قال كيف بها و قد زعمت انها قد ارضعتكما دعها عنك .
“হযরত উকবা ইবনুল হারিস (রা) বলেন, আমি জনৈকা মহিলাকে বিবাহ করিলাম। অতঃপর এক কৃষ্ণকায় মহিলা আসিয়া বলিল, আমি তোমাদের উভয়কে দুধপান করাইয়াছি। আমি রাসূলুল্লাহ (সা)-এর খেদমতে হাযির হইয়া বলিলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি অমুকের মেয়ে অমুককে বিবাহ করিয়াছি। জনৈকা কৃষ্ণকায় মহিলা আসিয়া বলিতেছে যে, সে আমাদের উভয়কে দুধ পান করাইয়াছে। সে মিথ্যা কথা বলিতেছে। রাসূলুল্লাহ (সা) তাঁহার চেহারা মোবারক ফিরাইয়া নিলে আমি পুনরায় তাহার সামনে আসিয়া বলিলাম, মহিলাটি মিথ্যা কথা বলিতেছে। তখন রাসূলুল্লাহ (সা) বলিলেন, তুমি উক্ত মহিলার সহিত কিভাবে ঘর করিবে! কেননা সে মহিলাটি তাহার দাবি দৃঢ়ভাবে ব্যক্ত করিতেছে। তুমি তোমার স্ত্রীকে পৃথক করিয়া দাও”।২৩৫
ধারা১৩৮৫ পুরুষের সহিত ভোজে অংশগ্রহণের অধিকার নারী পুরুষের সহিত ভোজে অংশগ্রহণ করিতে পারিবে।
বিশ্লেষণ
পুরুষের সহিত নারী ভোজসভায় (পানাহারে) অংশগ্রহণ করিতে পারে। এ সম্পর্কে হাদীস উল্লেখ করা হইয়াছে?
عن عائشة أن امرأة اتت النبی ة فقرب اليه لحم فجعل يناولها قالت عائشة فقلت يا رسول الله لا تغمر يدك فقال النبي صلى الله عليه وسلم ياعائشة أن هذه كانت تاتينا ایام خديجة وان حسن العهد من الايمان (سلسلة الأحاديث الصحيحة) .
“হযরত আয়েশা (রা) বলিয়াছেন, এক মহিলা রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নিকট আসিল। সেই সময় তাঁহার সামনে গোশত পরিবেশন করা হইলে তিনি (পাত্র হইতে) গোশত উঠাইয়া উক্ত মহিলাকে দিতে থাকিলেন। আয়েশা (রা) বলেন, আমি বলিলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনার হাত এইভাবে ডুবাইবেন না। নবী (সা)
৯১২
বলিলেন, হে আয়েশা! খাদীজা জীবিত থাকিতে সে আমাদের কাছে আসিত। তাহা ছাড়া উত্তম আচরণ ঈমানের অঙ্গ”। ২৩৬
উম্মে উমারা বিনতে কাব (রা) হইতে বর্ণিত। নবী (সা) তাহার নিকট গেলে তিনি তাঁহার জন্য খাবার আনিলেন। তখন নবী (সা) তাহাকে বলিলেন, তুমিও খাও। উম্মে উমারা বলিলেন, আমি রোযা রাখিয়াছি।২৩৭ সহীহ মুসলিমে উল্লেখ রহিয়াছে, রাসূলুল্লাহ (সা), আবু তালহা (রা), তাহার স্ত্রী উম্মে সুলাইম (রা) এবং আনাস ইবন মালেক (রা) একত্রে আহার করিয়াছেন। ২৮
ধারা-১৩৮৬ শোক বা সমবেদনা জ্ঞাপনের অধিকার নারী শোক বা সমবেদনা জ্ঞাপন করিতে পারিবে।
বিশ্লেষণ
শোক অথবা সমবেদনা জ্ঞাপনের অধিকার সম্পর্কে ইমাম বুখারী উল্লেখ করিয়াছেনঃ
عن أنس رضي الله عنه قال لما ثقل النبي له جعل يتغشاه
فقالت فاطمة عليها السلام واکرب اباه فقال ليس على ابيك كرب بعد هذا اليوم فلما مات قالت يا أبتاه أجاب ربا دعاه – یا ابتاه من جنة الفردوس مأوا يا أبتاه الى جبرئيل ننعاه فلما دفن قالت فاطمة عليها السلام يا انس اطابت انفسكم أن تحثوا على رسول
له التراب (رواه البخاری) .
الله
“হযরত আনাস (রা) বলিয়াছেন, নবী (সা)-এর অসুস্থতা বৃদ্ধি পাইলে তিনি বেহুঁশ হইয়া পড়িতে থাকিলেন। তখন হযরত ফাতেমা (রা) বলিতে থাকিলেন, আহ! আমার আব্বার কি কষ্ট! নবী (সা) বলিলেন, আজিকার এই দিনের পর তোমার আব্বার আর কোন কষ্ট নাই। তিনি ইন্তিকাল করিলে হযরত ফাতিমা (রা) বলিতে থাকিলেন, আহ আমার আব্বা! প্রভুর ডাকে সাড়া দিয়াছেন। আহ আমার আব্বা! জান্নাতুল ফিরদাওস যাহার ঠিকানা। আহ আমার আব্বা! তাঁহার মৃত্যুর খবর আমি জিবরাঈলকে শুনাইব। রাসূলুল্লাহ (সা)-কে দাফন করা হইলে হযরত ফাতেমা (রা) বলিলেন, হে আনাস! রাসূলুল্লাহ (সা)-এর উপর মাটি চাপা দিয়া কি তোমাদের মন সন্তুষ্ট হইতে পারিল?
ধারা-১৩৮৭ নারীর মৃতকে গোছল ও কাফন দেওয়ার অধিকার কোন নারীর মৃত্যুর পর নারী কর্তৃক গোছল দানের ও কাফন পরিহিত হইবার অধিকার রহিয়াছে।
বিশ্লেষণ
নারী কর্তৃক মৃত নারীদিগকে গোছল ও কাফন দেওয়া সম্পর্কে বুখারী ও মুসলিমে উল্লেখ রহিয়াছে
عن أم عطية الانصارية رضي الله تعالی عنها قالت دخل علينا
حين توقيت ابنته فقال غسلنيها ثلا او خمسا او
رسول الله اكثر من ذالك ان رين ذالك بماء وسدر وجعلن في الاخرة كافورا او شيئا من كافور فاذا فرغت فاذني فلما فرغنا اذاه فاعطانا حقوه فقال اشعرينها اياه يعنی ازاره (بخاری) .
“উম্মে আতিয়া আল-আনসারী (রা) বলিয়াছেন, রাসূলুল্লাহ (সা)-এর এক কন্যার মৃত্যু হইলে তিনি আমাদের নিকট আসিয়া বলিলেন, প্রয়োজন মনে করিলে কুলপাতা দিয়া সিদ্ধ করা পানি দ্বারা তিন, পাঁচ অথবা আরো অধিকবার গোছল দাও এবং শেষ বারে উহাতে কপূর বা কপূর জাতীয় কিছু মিশাইয়া লও। এই কাজ শেষ হইলে আমাকে খবর দিও। আমরা এই কাজ শেষ করিয়া রাসূলুল্লাহ (সা)-কে
অবহিত করিলে তিনি নিজের পরিধেয় বস্ত্র আমাদিগকে দিয়া বলিলেন, এইটি তাহার গায়ে জড়াইয়া দাও। বুখারীর অন্য রিওয়ায়াতে উল্লেখ রহিয়াছে, ডান দিক হইতে আরম্ভ কর এবং উযুর স্থানগুলি প্রথমে ধুইয়া দাও”।২৪০
ধারা-১৩৮৮
জানাযায় অনুগমনের অধিকার নারী জানাযায় অনুগমন করিতে পারিবে।
বিশ্লেষণ
নারীর জানাযায় অনুগমনের অধিকার রহিয়াছে। এ সম্পর্কে ইমাম বুখারী; Li/ ১; L L. (জানাযায় নারীর অনুগমন) শীর্ষক অনুচ্ছেদে হাদীস উল্লেখ করিয়াছেন?
৯১৪
عن أم عطية رضي الله تعالی عنها أنها قالت نهينا عن اتباع
الجنائز ولم يعزم علينا .
“হযরত উম্মে আতীয়া (রা) বলিয়াছেন, আমাদেরকে জানাযায় অনুগমন করিতে নিষেধ করা হইয়াছে। কিন্তু কঠোরভাবে নিষেধ করা হয় নাই।২৪১ হাদীসে উল্লেখিত “ কিন্তু আমাদের কঠোরভাবে নিষেধ করা হয় নাই” এই উক্তির ব্যাখ্যায় হাফেজ ইবন হাজার আসকালানী (র) বলিয়াছেন, অর্থাৎ অন্যান্য নিষিদ্ধ বিষয় আমাদিগকে যেভাবে তাগিদ দিয়া কড়াকড়িভাবে নিষেধ করা হইত, এই নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে তাহা করা হয় নাই। উম্মে আতীয়া (রা) যেন বলিয়াছেন, হারাম বলিয়া নহে, বরং অপছন্দনীয় বলিয়া আমাদিগকে জানাযায় অনুগমন করিতে নিষেধ করা হইয়াছে। ইমাম কুরতবী বলিয়াছেন, উম্মে আতীয়া (রা) কর্তৃক বর্ণিত হাদীস হইতে এই কথা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত যে, এই ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা হইতেছে “মাকরুহ তানযিহী” পর্যায়ের। অধিকাংশ ইসলামী পণ্ডিশু এই মতই গ্রহণ করিয়াছেন এবং ইমাম মালেকও জায়েযের স্বপক্ষে তাঁহার আগ্রহ প্রকাশ করিয়াছেন। মদীনাবাসীগণও এই মতের সমর্থক। নিম্নে বর্ণিত হাদীস হইতেও নারীদের লাশের সাথে যাওয়ার বৈধতার প্রমাণ পাওয়া যায়?
أن رسول الله له كان في جنازة فرای عمر امرأه فصاح بها
فقال رسول الله له دعها ياعمر .
“রাসূলুল্লাহ (সা) একটি জানাযার সহিত ছিলেন। হযরত উমার (রা) সেই জানাযার সহিত এক মহিলাকে দেখিয়া তাহাকে চিঙ্কার করিয়া ডাকিলেন। তখন রাসূলুল্লাহ (সা) বলিলেন, হে উমার! তাহাকে থাকিতে দাও”। ইবন মাজা ও নাসায়ীও অনুরূপ রিওয়ায়াত বর্ণনা করিয়াছেন।২৪২
ইমাম মালেক (র) নারীদের জানাযায় গমনের পক্ষে অভিমত ব্যক্ত করিয়াছেন।২৪৩
ধারা-১৩৮৯
কবর যিয়ারতের অধিকার নারী কবর যিয়ারত করিতে পারিবে।
বিশ্লেষণ
নারীর কবর যিয়ারত করিবার অধিকার রহিয়াছে। এ সম্পর্কে ইমাম বুখারী উল্লেখ করিয়াছেন?
৯১৫
عن انس بن مالك قال مر النبي ل بامرأة تبكي عند قبر فقال
••••••••••• srals Ltd “হযরত আনাস ইবন মালেক (রা) বলিয়াছেন, রাসূলুল্লাহ (সা) কোথায়ও যাওয়ার কালে এক মহিলাকে কবরের পাশে বসিয়া কাঁদিতে দেখিয়া বলিলেন, আল্লাহকে ভয় কর এবং ধৈর্য ধারণ কর”।২৪৪
ইমাম মুসলিম একটি হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন এবং উহাতে কবর যিয়ারত সম্পর্কিত নিষেধাজ্ঞা বাতিলের বিষয়টি উল্লেখিত হইয়াছে। নবী (সা) বলেন
•••••••••• L১৪১ ১৪31 1,9544145 3 “ইতিপূর্বে আমি তোমাদিগকে কবর যিয়ারত করিতে নিষেধ করিয়াছিলাম। কিন্তু এখন তোমরা কবর যিয়ারত কর”।
ইমাম মুসলিম হযরত আবু হুরায়রা (রা) হইতে মারুফ সনদে একটি হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। মহানবী (সা) বলেন :
……… ৩৫-Jl 45 46 4-30 1913 “তোমরা কবর যিয়ারত কর। কারণ তাহা মৃত্যুর কথা স্মরণ করাইয় দেয়”।
কবর যিয়ারতের এই সাধারণ অনুমতির মধ্যে মহিলারাও অন্তর্ভুক্ত এবং ইহাই অধিকাংশ ফকীর মত। তবে শর্ত হইল অবশ্যই ফিতনা হইতে মুক্ত থাকিবার মত পরিবেশ বিদ্যমান থাকিতে হইবে। কবর যিয়ারতের অনুমতিতে যাহারা নারী-পুরুষ উভয়কে অন্তর্ভুক্ত করিয়াছেন, হযরত আয়েশা (রা) তাহাদের অন্যতম। ইবন আবু মুলাইকা হইতে হাকেম বর্ণনা করিয়াছেন যে, তিনি হযরত আয়েশা (রা)-কে তাহার ভাই আবদুর রহমান ইবন আবু বকরের কবর যিয়ারত করিতে দেখিয়াছেন। তাহাকে বলা হইল, রাসূলুল্লাহ (সা) কি এই কাজ করিতে নিষেধ করেন নাই? জবাবে তিনি বলিলেন, হাঁ, তিনি নিষেধ করিয়াছিলেন, কিন্তু পরে আবার অনুমতি দিয়াছেন। ইমাম নববী বলিয়াছেন, অধিকাংশ মনীষী “নারীদের কবর যিয়ারতের বৈধতার পক্ষে দৃঢ়ভাবে মত পোষণ করিয়াছেন।২৪৫
ধারা-১৩৯০ আদালতে অভিযোগ দায়েরের অধিকার স্ত্রী তাহার স্বামী বা অপরের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ দায়ের করিতে পারিবে।
৯১৬
বিশ্লেষণ
নারী যে কোন প্রকারের অভিযোগ আদালতে অথবা বৈধ কর্তৃপক্ষের নিকট পেশ করিতে পারে। এ সম্পর্কে ইবন মাজা হাদীস গ্রন্থে উল্লেখ করা হইয়াছে?
عن عائشة رضي الله عنها قالت اني لاسمع كلام خولة بنت
ثعلبة يخفى على بعضه وهي تشتكي زوجها الى رسول الله ع وهي تقول يارسول الله أكل شبابی ونثرت له بطني حتى ان كبرت سنی وانقطع ولد يظاهرمني اللهم اني اشكي اليك فما برحت حتی نزل جبرائيل بهؤلاء الايات قدسمع الله قول التي تجادلك في في
………. AL JIKi_113 434 “হযরত আয়েশা (রা) বলিয়াছেন, আমি যেন খাওলা বিনতে সালাবা -এর কথা এখনও শুনিতে পাই। যখন সে তাহার স্বামীর ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নিকট এই বলিয়া অভিযোগ করিতেছিল যে, হে আল্লাহর রাসূল! সে আমার যৌবন উপভোগ করিয়াছে এবং আমি আমার পেটকে ক্রমান্বয়ে তাহার জন্য ছড়াইয়া দিয়াছি, এমনকি যখন আমার বয়স বৃদ্ধি পাইয়াছে এবং সন্তান ধারণ ক্ষমতা রহিত হইয়াছে, তখন সে আমার সহিত “যিহার করিয়াছে। হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট আমার অভিযোগ পেশ করিতেছি। তিনি অবিরাম তাহার স্বামীর বিরুদ্ধে এই সকল অভিযোগ পেশ করিয়া যাইতেছিলেন। অবশেষে জিবরাঈল (আ) এই আয়াতগুলিসহ অবতীর্ণ হইলেন : “আল্লাহ অবশ্যই সেই মহিলার কথা শুনিয়াছেন, যে তাহার স্বামীর ব্যাপারে আপনার সহিত বাদানুবাদ করিয়াছে এবং আল্লাহর নিকট অভিযোগ করিয়াছে” (৫৮ : ১)।২৪৬
ধারা-১৩৯১ নারীর সরকারের নিকট সাহায্যের জন্য আবেদন
পেশের অধিকার নারী সরকারের নিকট সাহায্য প্রার্থনা করিতে পারিবে।
বিশ্লেষণ
নারী কর্তৃক সরকারের নিকট সাহায্য প্রার্থনা সম্পর্কে ইমাম বুখারী উল্লেখ করিয়াছেন?
عن زيد بن أسلم عن أبيه قال خرجت مع عمر بن الخطاب الى السوق فلحقت عمر امرأة شابة فقالت يا امير المؤمنين هلك
৯১৭
زوجي وترك صبي صغارا والله ماينضجون كراعا ولا لهم زرع ولاضرع وخشيت ان تاكلهم الضبع وانابنت خفاف بن ایماء الغفاري وقد شهد ابي الحديبية مع النبي ؛ فوقف معها عمر ولم يمض ثم قال مرحبا ينسب قريب ثم انصرف الى بعير ظهير كان مربوطا في الدار فحمل عليه غرارتين ملأهما طعاما وحمل بينهما نفقة وثيابا ثم ناولهابخطامه ثم قال اقتادييه فلن يفنی حتى ياتيكم الله بخير فقال رجل ياامير المؤمنين اكثرت لها قال عمر ثقلتك امك والله انسی لاری ابا هذه واخاها قد حاصرا حصنازمائا فانتحاه ثم اصبحنا نستفی سهمانهما فيه
• (
s ul 199) “হযরত যায়েদ ইবন আসলাম (রা) হইতে তাহার পিতার সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলিয়াছেন, আমি হ্যরত উমার ইবনুল খত্তাব (রা)-এর সহিত বাজারে গিয়াছিলাম। সেখানে এক যুবতী মহিলা তাহার নিকট আসিয়া বলিল, হে আমীরুল মুমিনীন! আমার স্বামী ছােট ছােট বাচ্চা রাখিয়া মৃত্যুবরণ করিয়াছেন, আল্লাহর শপথ! বাচ্চাদের খাওয়ার সংস্থান হইতে পারে তিনি এমন কিছুই রাখিয়া যান নাই কিংবা কোন কৃষিভূমি বা দুধেল উট-বকরী রাখিয়া যান নাই। আমার আশংকা, তাহাদেরকে হায়েনায় ভক্ষণ করিয়া ফেলিবে। আমি খুফাফ ইবন আশয়াম গিফারির কন্যা। আমার পিতা রাসূলুল্লাহ (সা)-এর সহিত হুদায়বিয়ার অভিযানে অংশগ্রহণ করিয়াছিলেন। উমার (রা) পথ চলা বন্ধ করিয়া তাহার নিকট দাঁড়াইয়া থাকিলেন। তারপর বলিলেন, তোমার জাতি-গোষ্ঠীকে ধন্যবাদ। তাহারা তো আমার নিকটের লোক। অতঃপর তিনি আস্তাবলে রক্ষিত উটের মধ্য হইতে বােঝা বহনে সক্ষম একটি উট আনিয়া দুইটি বস্তায় খাদ্য ভর্তি করিলেন এবং তাহার মধ্যে কিছু নগদ অর্থ ও কাপড়-চোপড় দিয়া মহিলার হাতে উহার লাগাম দিয়া বলিলেন, ইহার লাগাম ধরিয়া লইয়া যাও। এইগুলি নিঃশেষ হওয়ার আগেই আল্লাহ তায়ালা হয়ত ইহার চাইতেও উত্তম কিছু তোমাকে দান করিবেন। এক ব্যক্তি বলিল, হে আমীরুল মুমিনীন! আপনি তাহাকে অনেক বেশি দান করিলেন। উমার তাহাকে বলিলেন, তোমার মা তোমার জন্য কাঁদুক। আল্লাহর কসম! আমি জানি, এই
৯১৮
মহিলার পিতা ও ভাই দীর্ঘ দিন পর্যন্ত কাফেরদের একটি দুর্গ অবরোধ করিয়া রাখিয়াছিল এবং অবশেষে উহা দখলও করিয়াছিল। পরে আমরা (তাহাদিগকে গনীমতের অংশ প্রদানের পর) তাহা হইতে আমাদের গনীমতের অংশ পূর্ণরূপে গ্রহণ করিয়াছিলাম”।২৪৭
ধারা-১৩৯২ নারীদের প্রতি মিথ্যা অপবাদ আরোপ হইতে বিরত থাকা। উপযুক্ত সাক্ষ্য-প্রমাণ ছাড়া নারীদের প্রতি অপবাদ আরোপ করা যাইবে।
বিশ্লেষণ
উপযুক্ত সাক্ষ্য-প্রমাণ ছাড়া নারীদের প্রতি মিথ্যা অপবাদ আরোপের ভয়াবহতা সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে সূরা নূরে বলা হইয়াছে?
إن الذين يرمون المجئت الغفلت المؤمنات تعتوا في الدنيا
والآخرة ولهم عذاب عظيم .
“যাহারা স্বতী, সরলমনা ও বিশ্বাসী নারীদের প্রতি অপবাদ আরোপ করে তাহারা দুনিয়া ও আখেরাতে অভিশপ্ত এবং তাহাদিগের জন্য আছে মহাশাস্তি” (সূরা নূর : ২৩)
ইহা ছাড়াও সূরা নূরের ১২, ১৩, ১৪, ১৫ ও ১৬ নং আয়াতে বলা হইয়াছে? “এই কথা (অপবাদের কথা) শুনিবার পর মুমিন পুরুষ এবং নারীগণ কেন নিজদিগের বিষয়ে সৎ ধারণা করে নাই এবং বলে নাই, ইহা তো সুস্পষ্ট অপবাদ। তাহারা কেন এই ব্যাপারে চারিজন সাক্ষী উপস্থিত করে নাই? যেহেতু তাহার সাক্ষী উপস্থিত করে নাই, সেই কারণে তাহারা আল্লাহর বিধানে মিথ্যাবাদী। দুনিয়া ও আখেরাতে তোমাদিগের প্রতি আল্লাহর অনুগহ ও দয়া না থাকিলে তোমরা যাহাতে লিপ্ত ছিলে তজ্জন্য কঠিন শাস্তি তোমাদিগকে স্পর্শ করিত এবং তোমরা যখন ইহা (অপবাদ) শ্রবণ করিলে তখন কেন বলিলে না, এ বিষয়ে বলাবলি করা আমাদিগের উচিত নহে, আল্লাহ পবিত্র মহান, ইহা তো (মিথ্যা অপবাদ) এক গুরুতর অপরাধ”।
ধারা-১৩৯৩ দণ্ডপ্রাপ্তা নারী ভাল ব্যবহার পাইবার অধিকারী শরীয়ত কর্তৃক নির্ধারিত দণ্ডপ্রাপ্তা নারী ভাল ব্যবহার পাইবে।
বিশ্লেষণ
কোন কারণে যদি নারী দণ্ডযোগ্য অপরাধ করে এবং শরীয়াত কর্তৃক নির্ধারিত সাজাও ভোগ করে তাহা হইলে উক্ত সাজাপ্রাপ্তা নারীও সমাজের অন্যান্য নারীর মত উত্তম আচরণ লাভের অধিকারী। সাজার কারণে তাহার প্রতি বৈরি আচরণ করা বৈধ নহে। এ সম্পর্কে সহীহ বুখারীতে উল্লেখ রহিয়াছে?
عن عائشة رضي الله تعالى عنها أن قريشا اهمتهم المرأة
ومن يجترئ
المخزومية التي سرقت قالوا من يكلم رسول الله علية الا اسامة بن زيد حب رسول الله له فكلم رسول الله ، فقال اتشفع في حد من حدود الله ثم قام فخطب فقال يايها الناس اناضل من قبلكم انهم كانوا اذا سرق الشريف تركوه واذا سرق الضعيف فيهم اقاموا عليه الحدود وايم الله لو أن فاطمة بنت محمد سرقت لقطع محمد
• (৪২) 444 “হযরত আয়েশা (রা) বলিয়াছেন, (মক্কা বিজয় কালে) মাখযুম গোত্রীয় জনৈকা মহিলা চুরি করিলে কুরাইশ সবাই ভীত হইয়া পড়িল। তাহারা চিন্তা করিতে লাগিল, তাহার ব্যাপারে কে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর সহিত আলোচনা করিবে। অবশেষে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর প্রিয়পাত্র হযরত উসামা ইবন যায়দ (রা)-কে এই ব্যাপারে সুপারিশের জন্য পাঠাইল। উসামা উক্ত মহিলার পক্ষে সুপারিশ পেশ করিলে রাসূলুল্লাহ (সা) বলিলেন, তুমি কি আল্লাহর নির্ধারিত হদ্দসমূহের মধ্যকার একটি হদ্দ-এর ব্যাপারে আমার নিকট সুপারিশ করিতেছ? অপর এক বর্ণনায় আছে, এই কথা শুনিয়া হযরত উসামা (রা) বলিলেন, “হে আল্লাহর রাসূল! আপনি আমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সা) খুতবা দেওয়ার জন্য দাঁড়াইলেন এবং বলিলেন, “হে লোকসকল! তোমাদের পূর্ববর্তী লোকেরা এই কারণে ধ্বংস হইয়া গিয়াছে যে, তাহাদের মধ্যে কোন অভিজাত খান্দানের লোক চুরি করিলে তাহার বিচার করিত না কিন্তু কোন দুর্বল লোক চুরি ক র উপর হদ্দ
৯২০
(আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত শাস্তি) কার্যকর করিত। আল্লাহর শপথ! যদি মুহাম্মাদের কন্যা ফাতেমাও চুরি করিত তাহা হইলে আমি তাহার হাত কাটিয়া দিতাম”।২৪৮
বুখারীর অপর বর্ণনায় উল্লেখ আছে?
عن عائشة رضي الله تعالى عنها أن النبي صلى الله عليه وسلم قطع يد امرأة قالت عائشة وكانت تاتي بعد ذالك فارفع حاجتها الى النبي صلى الله عليه وسلم فتابت وحسنت توبتها (بخاری) .
“হযরত আয়েশা (রা) হইতে বর্ণিত। নবী (সা) এক মহিলার হাত কাটিয়া দিয়াছিলেন। আয়েশা (রা) বলেন, উক্ত মহিলা পরে বিভিন্ন সমস্যা লইয়া আমার কাছে আসিলে আমি তাহাকে নবী (সা)-এর নিকটে লইয়া যাইতাম। সে তওবা করিয়াছিল এবং উত্তম তওবা করিয়াছিল”।২৪৯
ধারা-১৩৯৪ বিবাহ অনুষ্ঠানে নারীর অংশগ্রহণের অধিকার নারী বিবাহ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করিতে পারিবে।
বিশ্লেষণ
নারী বিবাহ অনুষ্ঠানে যোগদান করিতে পারে। এই সম্পর্কে হাদীসে উল্লিখিত হইয়াছে?
عن انس بن مالك رضي الله تعالى عنه قال أبصر النبي غ نساء وصبيانا مقبلين من عرس فقام ممتنا فقال اللهم انتم من احب الناس الى (بخاری) .
“হযরত আনাস (রা) বলিয়াছেন, নবী (সা) নারী ও শিশুদিগকে এক বিবাহ অনুষ্ঠান হইতে ফিরিয়া আসিতে দেখিয়া দাঁড়াইয়া গেলেন এবং বলিলেন, আল্লাহর শপথ! মানুষের মধ্যে তোমরা আমার নিকট সবচাইতে বেশী প্রিয়”।২৫০
ধারা-১৩৯৫ স্তন্যদানের পারিশ্রমিক লাভের অধিকার তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রী তাহার সন্তানের স্তন্যদানের পারিশ্রমিক দাবি করিতে পারিবে।
৯২১
বিশ্লেষণ
তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রী গর্ভবতী হইলে এবং সন্তান প্রসব হইয়া গেলে তাহার ইদ্দাত পূর্ণ হইয়া যায়। তাই তাহার ভরণপোষণ প্রদান স্বামীর জন্য বাধ্যতামূলক নয়। কিন্তু প্রসূত সন্তানকে যদি তালাকপ্রাপ্তা মা স্তন্যদান করে তবে সে সন্তানের পিতার নিকট স্তন্যদানের বিনিময় দাবি করিতে পারিবে। এ সম্পর্কে কুরআন মজীদে বলা হইয়াছে?
فإن أرضن
لكم فأتوهن أجورهن وأتمروا بينكم بمعروف وان
تعاسم فسترضع له أخرى .
“যদি তাহারা তোমাদের সন্তানদিগকে স্তন্যদান করে তবে তাহাদেরকে প্রাপ্য পারিশ্রমিক দিবে এবং এই সম্পর্কে পরস্পর সংযতভাবে পরামর্শ করিবে। তোমরা যদি পরস্পর জিদ কর তবে অন্য নারী স্তন্যদান করিবে” (সূরা তালাক : ৬)।
ধারা-১৩৯৬ স্তন্যদানে নারীর অস্বীকারের অধিকার তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রী পূর্ব স্বামীর সংগে বনিবনা না হইলে তাহার সন্তানকে স্তন্যদান অস্বীকার করিতে পারিবে।
বিশ্লেষণ
তালাকপ্রাপ্তা মহিলা তাহার ইদ্দাতশেষে প্রসূত সন্তানকে স্তন্যদানে বাধ্য নহে। প্রয়োজনে সে তাহা অস্বীকার করিতে পারিবে। কুরআন মজীদে এই সম্পর্কে বলা হইয়াছে।
وأتمروا بينكم بمعروف وان تعاسرتم فسترضع له أخرى …
“এবং এই সম্পর্কে (স্তন্যদান ) পরস্পর সংযতভাবে পরামর্শ করিবে। তোমরা যদি পরস্পর জিদ করো তবে সে ক্ষেত্রে অন্য নারী স্তন্যদান করিবে” (সূরা তালাক : ৬)।
অর্থাৎ স্তন্যদান করিবার ব্যাপারটি যদি পারস্পরিক পরামর্শক্রমে মীমাংসা না হয় অথবা স্ত্রী যদি তাহার সন্তানকে পারিশ্রমিক গ্রহণের বিনিময়েও স্তন্যদান করিতে অস্বীকার করে তবে আইনত তাহাকে বাধ্য করা যাইবে না। বরং মনে করিতে হইবে যে, সন্তানের প্রতি জননীর সর্বাধিক মায়া-মমতা স্বত্বেও যখন অস্বীকার
৯২২
করিতেছে তখন নিশ্চয় কোন বাস্তব ওজর রহিয়াছে। কিন্তু যদি বাস্তবে কোন ওজর নাও থাকে কেবল রাগ বা গোস্বার কারণে অস্বীকার করে তবে আল্লাহর নিকট সে গুনাহগার হইবে। তবে বিচারক তাহাকে স্তন্যদানে বাধ্য করিতে পারিবেন না।২৫১
ধারা-১৩৯৭ গৃহের কাজে স্বামী হইতে স্ত্রীর সহযোগিতা
লাভের অধিকার প্রয়োজনে স্ত্রী তাহার স্বামী হইতে গৃহের কাজে সহযোগিতা লাভ করিবে।
বিশ্লেষণ
পেশাগত কাজের চাপ বেশী থাকিলে ঘরের কাজে স্ত্রীকে সাহায্য করা স্বামীর জন্য উত্তম। কিন্তু পেশাগত কাজটি যদি অত্যাবশ্যকীয় শ্রেণীর হয় সেক্ষেত্রে স্ত্রীকে সাহায্য করাও স্বামীর জন্য অত্যাবশ্যকীয়। এই সম্পর্কে বুখারীর বর্ণনায় উল্লেখ রহিয়াছে?
عن الأسود بن يزيد سالت عائشة رضي الله عنها ماكان النبي ة يصنع في البيت قالت كان يكون في مهنة اهله فاذا سمع الأذان
: ( A) – “হযরত আসওয়াদ ইবন ইয়াযীদ (র) বলিয়াছেন, আমি হযরত আয়েশা (রা)-কে জিজ্ঞাসা করিলাম, নবী (সা) বাড়ীতে কি কাজ করিতেন? তিনি বলন, তিনি পরিবারের কাজে সাহায্য করিতেন এবং আযান হইলে বাহির হইয়া যাইতেন”।২৫২
ইমাম বুখারী (র) নিজেই এই মতের প্রবক্তা ছিলেন যে, গৃহকাজে স্ত্রীদেরকে সাহায্য করা স্বামীর দায়িত্ব। মনীষিগণও এই বিষয়টি স্বীকার করিয়াছেন।
বর্ণিত হাদীসটি ইমাম বুখারী কয়েকটি অনুচ্ছেদের অধীনে বর্ণনা করিয়াছেন, যাহার শিরোনামগুলি হইতেছে (১) পরিবারে পুরুষের কাজ। ২৫৩ (২) যে ব্যক্তি তাহার পরিবারে কাজ করে। ২৫৪ (৩) একজন পুরুষ তাহার পরিবারে কমন হইবে।২৫৫ ইহা ছাড়াও মুসনাদে আহমাদে উল্লেখ রহিয়াছে যে, রাসূলুল্লাহ (সা) নিজেই তাহার বকরী দোহন করিতেন, নিজের কাজ নিজেই করিতেন,২৫৬ কাপড় সেলাই করিতেন, জুতা মেরামত করিতেন এবং অন্য পুরুষগণ বাড়ীতে যে কাজ করিয়া থাকে তিনি তাহাও করিতেন। ২৫৭ স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে (সংসারের কাজে) সাহায্য করিবার ব্যাপারটি কুরআনুল করীমের তিনটি আয়াত দ্বারাও প্রমাণিত ও প্রতিষ্ঠিত হয়।
৯২৩
تعاونوا على البر والتقوى (مائدة -۲)
“নেকী ও তাকওয়ার কাজে তোমরা পরস্পরের সহযোগিতা কর”।
ولهن مثل الذي عليهن بالمعروف (بقرة – ۲۲۸)
“নারীদেরও পুরুষের উপর ঠিক তেমনি অধিকার রহিয়াছে যেমন রহিয়াছে পুরুষের নারীদের উপর”(আল-বাকারা আয়াত নম্বর : ২২৯)।
لايكلف الله نفسا الا وسعها.
“কোন প্রাণসত্তার অধিকারীর উপর আল্লাহ তাহার সামর্থ্যের অতিরিক্ত দায়িত্ব অর্পণ করেন না” (বাকারা : ২৮৬)।
ধারা-১৩৯৮ নারী কর্তৃক “ফতওয়া” প্রদানের অধিকার নারী ‘ফতওয়া’ প্রদান করিতে পারিবে।
বিশ্লেষণ
ফতওয়া শব্দের পারিভাষিক অর্থ “কোন বিষয়ে আইনগত অভিমত” (Legal openion)। শরীয়াতের জ্ঞান সম্পন্ন নারী যে কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ব্যাখ্যা প্রদান তথা ফতওয়া দিতে পারিবে। এই সম্পর্কে ইমাম বুখারী উল্লেখ করিয়াছেন?
قال أخبرني أبو سلمة قال جاء رجل الى ابن عباس رضي الله عنه وابوهريرة جالس عنده فقال افتني في امرأة ولدت بعد زوجها باربعين ليله فقال ابن عباس اخر الاجلين قلت انا (ابو سلمة) واولات الأحمال اجلهن ان يضعن حملهن قال أبو هريرة انا مع ابن اخي يعني ابا سلمة فارسل ابن عباس غلامه كريبا الى ام سلمة يسألها فقالت قتل زوج سبيعة الاسلمية وهي حبلى فوضعت بعد موته باربعين ليلة فخطبت فانكحها رسول الله صلى الله عليه وسلم وكان أبو السنابل فيمن خطبها (رواه البخاری) .
“হযরত আবু সালামা (রা) বলিয়াছেন, এক ব্যক্তি হযরত ইবন আব্বাস (রা)-এর নিকট আসিল। তখন হযরত আবু হুরায়য়া (রা)-ও তাহার কাছে বসা
৯২৪
ছিলেন। লোকটি বলিল, আমাকে এমন এক মহিলা সম্পর্কে ফতওয়া দিন যে তাহার স্বামীর মৃত্যুর চল্লিশ দিন পরই সন্তান প্রসব করিয়াছে। জবাবে হযরত ইবন আব্বাস (রা) বলিলেন, দুইটি মেয়াদ (স্বামীর মৃত্যু জনিত ইদ্দতকাল চারি মাস দশ দিন এবং সন্তান প্রসব)-এর মধ্যে দীর্ঘতর মেয়াদ ইদ্দাত পালন করিবে। অর্থাৎ চারি মাস দশ দিন ইদ্দাত তাহাকে পালন করিতে হইবে। তখন আবু সালামা বলিলেন, “গর্ভবতী মেয়েদের ইদ্দতকাল সন্তান প্রসবের সময় পর্যন্ত” (৬৫ : ৪)। এই কথা শুনিয়া হযরত আবু হুরায়রা (রা) বলিলেন, আমি আমার ভাতিজা অর্থাৎ আবু সালামার সহিত একমত। তখন হযরত ইবন আব্বাস (রা) তাহার দাস কুরাইবকে উম্মে সালামা (রা)-র নিকট এই বিষয়ে “ফতওয়া জানিতে পাঠাইলেন। উম্মে সালামা (রা) বলিলেন, সুবাইয়া আসলামিয়ার স্বামী যখন মৃত্যুবরণ করে তখন সে গর্ভবতী অবস্থায় ছিল। স্বামীর মৃত্যুর চল্লিশ দিন পর সে সন্তান প্রসব করিল। অতঃপর তাহার বিবাহের প্রস্তাব আসিলে রাসূলুল্লাহ (সা) তাহাকে বিবাহ দিলেন। যাহারা তাহাকে বিবাহের প্রস্তাব দিয়াছিলেন তাহাদের মধ্যে আবুস সানাবেলও ছিলেন।২৫৮
সহীহ মুসলিমের অপর এক রিওয়ায়াতে উল্লেখ আছে, আবু বাকর ইবন আবদুর রহমান বলিয়াছেন, মারওয়ান তাহাকে উম্মে সালামা (রা)-র নিকট এই বিষয়ে ‘ফতওয়া” জিজ্ঞাসা করিতে পাঠাইলেন যে, কেহ ভোর পর্যন্ত নাপাক অবস্থায় থাকিলে রোযা রাখিবে কি না? জবাবে তিনি বলিলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) স্ত্রী সহবাসের কারণে, স্বপ্নদোষের কারণে নহে, গোসল ছাড়াই ভোর পর্যন্ত থাকিতেন। কিন্তু রোযা ভঙ্গ করিতেন না কিংবা কাযাও করিতেন না। ২৫৯
ধারা-১৪৯৯।
নারীর আপ্যায়নের অধিকার নারী সমাজের জ্ঞানী ও মর্যাদাবান ব্যক্তিদের আপ্যায়ন করিতে পারিবে।
বিশ্লেষণ
সমাজের জ্ঞানী শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তিবর্গের জন্য নারী তাহার বাড়ীতে মেহমানদারি করিতে পারিবে। এই সম্পর্কে সহীহ মুসলিমে উল্লেখ রহিয়াছে।
عن فاطمة بنت قيس …….وام شريك امرأة غنية من الأنصار عظيمة النفقة في سبيل الله ينزل عليها الضيفان ….. وفي رواية ينزل عليها المهاجر والسابقون (رواه المسلم) .
৯২৫
“হযরত ফাতিমা বিনতে কায়েস (রা) হইতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) আমাকে বলিলেন, তুমি উম্মে শরীকের নিকট চলিয়া যাও। উম্মে শরীক ছিলেন একজন ধনাঢ় মহিলা। তিনি আল্লাহর রাস্তায় প্রচুর দান-খয়রাত করিতেন। তাহার বাড়ীতে প্রচুর মেহমানের ভীড় লাগিয়া থাকিত। আমি বলিলাম, ঠিক আছে আমি তাহাই করিব। তিনি বলিলেন, তাহা করিবার দরকার নাই। কারণ উম্মে শরীক এমন একজন মহিলা যাহার নিকট সব সময় যথেষ্ট মেহমান আসা যাওয়া করে। ২৬০ অন্য একটি বর্ণনামতে উম্মে শরীকের নিকট মুহাজিরগণ এবং প্রথম পর্যায়ে ইসলাম গ্রহণকারীগণ মেহমান হইতেন।২৬১
ধারা-১৪০০ স্বেচ্ছায় রোগীর সেবা করিবার অধিকার নারী রোগীর সেবা করিতে পারিবে।
বিশ্লেষণ
সেবা করিবার অধিকার নারীর রহিয়াছে। এ সম্পর্কে ইমাম বুখারী উল্লেখ করিয়াছেনঃ
عن خادجة بن زيد بن ثابت ان ام العلاء امرأة من نسائهم بايعت النبی و اخبرته ان عثمان بن مظعون طارلهم في السكني حين قرعت الانصار على سكنى المهاجرين قالت ام العلاء فاشتكى عثمان عندنا فمرضته حتى توفي وجعلناه في
• (4,54 199) 44931 “হযরত খাদেজা ইবনে যায়েদ ইবনে সাবেত (র) বলিয়াছেন, উম্মুল আলা (রা) নামক আনসার মহিলা, যিনি রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নিকট বাইয়াত গ্রহণ করিয়াছিলেন, তাহাকে বলিয়াছেন যে, মুহাজিরদের বাসস্থানের ব্যাপারে আনসাররা লটারী করিলে উসমান ইবন মাউনের বাসস্থানের বিষয়টি তাহাদের ভাগে পড়িল। উম্মুল আলা বলেন, আমাদের নিকট থাকা অবস্থায় উসমান (রা) অসুস্থ হইয়া পড়িলেন। অসুস্থ অবস্থায় আমি তাহাকে দেখাশুনা করিতে থাকিলাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি ইন্তিকাল করিলেন। আমরা তাহার (ব্যবহার্য) কাপড় দ্বারা তাহাকে দাফন করিলাম”।২৬২
ধারা-১৪০১ প্রতিবেশীদের খেদমত করিবার অধিকার প্রয়োজনে নারী তাহার প্রতিবেশীদের খেদমত করিতে পারিবে।
বিশ্লেষণ
প্রয়োজন দেখা দিলে নারী তাহার প্রতিবেশীদের যে কোন প্রকারের বৈধ সেবা দ্বারা সহযোগিতা করিতে পারে। এই সম্পর্কে ইমাম বুখারী (র) হযরত আসমা বিনতে আবু বাকর (রা) হইতে হাদীস উল্লেখ করিয়াছেন।
عن أسماء بنت أبي بكر رضي الله عنه قالت تزوجني الزبير وماله في الأرض من مال ولامملوك ولاشئ غيرناضح وغير فرسه فكنت اعلف فرسه واستقى الماء واخرز غربه و اعجن ولم اكن احسن اخبز وكان تخبز جارات لى من الانصار وكن نسوة صدوق
: (
s uf 195).••••••• “হযরত আসমা বিনতে আবু বাকর (রা) হইতে বর্ণিত। তিনি বলিয়াছেন যুবায়ের (রা) যখন আমাকে বিবাহ করেন তখন একটি মাত্র পানি বাহক উট ও একটি ঘোড়া ছাড়া তাহার কোন প্রকারের জায়গা-জমি, অর্থ-সম্পদ বা দাস-দাসী কিছুই ছিল না। আমি তাহার ঘোড়াকে খাদ্য ও পানি দিতাম। তাহার পানির মশক ছিড়িয়া গেলে সেলাই করিতাম এবং আটার খামির তৈরি করিতাম। কিন্তু আমি ভাল করিয়া রুটি তৈরি করিতে পারিতাম না। আমার কয়েকজন আনসার প্রতিবেশিনী আমাকে রুটি তৈরি করিয়া দিতে সাহায্য করিতেন। তাহারা ছিলেন সবাই সত্যবাদিনী মহিলা।২৬৩
ধারা-১৪০২ নিরক্ষরতা দূরীকরণ ও শিক্ষাদানে অংশগ্রহণের অধিকার নারী নিরক্ষতা দূরীকরণ ও শিক্ষাদানে অংশগ্রহণ করিতে পারিবে।
বিশ্লেষণ
নারী সমাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসাবে বৈধ যে কোন সমাজ গঠণমূলক কাজে অংশ গ্রহণ করিতে পারে। এই সম্পর্কে মুসনাদে আহমাদ ও আবু দাউদে
৯২৭
নারী কর্তৃক নিরক্ষরতা দূরীকরণ ও শিক্ষাদানে অংশগ্রহণ সম্পর্কে হাদীস পাওয়া যায়, যাহা হযরত শেফা বিনতে আবদুল্লাহ হইতে বর্ণিত। তিনি বলিয়াছেন, আমি হাফসা (রা)-এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। এমন সময় রাসূলুল্লাহ (সা) আমাদের নিকট আসিলেন। তিনি আমাকে বলিলেন,
ألا تعلمين هذه رقة النملة كما علمتها الكتابة .
“তুমি যেভাবে তাহাকে লেখা শিখাইয়াছ, ঠিক তেমনিভাবে পাঁজরের ঘায়ের চিকিৎসা কি শিখাইয়া দিবে না” (মুসনাদে আহমাদ ও আবু দাউদ)?২৬৪
ধারা-১৪০৩। সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের অধিকার নারী সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করিতে পারিবে।
বিশ্লেষণ
নারীর সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ সম্পর্কে বুখারী ও মুসলিম ভিন্ন ভিন্নভাবে হাদীস উল্লেখ করিয়াছেন। এই সম্পর্কে ইমাম বুখারী উল্লেখ করিয়াছেন?
عن أبي سعيد قال جاءت امرأة الى رسول الله له فقالت يا رسول الله ذهب الرجال بحديثك فاجعل لنا من نفسك يوما ناتيك فيه تعلمنا مما علمك الله فقال اجتمعن في يوم كذا وكذا في مكان كذا وكذا فاجتمعن فاتاه رسول الله فعلمه مما علمه الله ثم قال مامنكن امرأة تقدم بين يديها من ولدها ثلثة الأكان لها حجابا من النار فقالت امرأة منهن يارسول الله اثنين قال فاعادتها مرتين ثم قال واثنين واثنين واثنين (رواه البخاری) .
“হযরত আবু সাইদ খুদরী (রা) বলিয়াছেন, এক মহিলা রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নিকট আসিয়া বলিল, হে আল্লাহর রাসূল! আপনার কথা শুনিবার সুযোগ তো শুধু পুরুষেরাই লাভ করিতেছে। কাজেই আপনার পক্ষ হইতে আমাদের জন্য পৃথক একটি দিন ধার্য করুন। সেই দিন আমরা আপনার নিকট আসিব। আর আল্লাহ আপনাকে যেই জ্ঞান দান করিয়াছেন তাহা হইতে আমাদেরকে শিক্ষা দিবেন। রাসূলুল্লাহ (সা) বলিলেন, তোমরা অমুক অমুক দিন অমুক অমুক স্থানে সমবেত
৯২৮
হও। তাহারা সমবেত হইল। রাসূলুল্লাহ (সা) তাহাদের নিকট আসিলেন এবং আল্লাহ পাক তাঁহাকে যে জ্ঞান দিয়াছেন তাহা হইতে শিক্ষা দিলেন। অতঃপর তিনি বলিলেন, তোমাদের মধ্য যে নারীই তাহার তিনটি সন্তানকে অগ্রে পাঠাইয়া দেয় (যাহার তিনটি সন্তান মৃত্যুবরণ করে এবং সে ধৈয্য ধারণ করে) ঐ সন্তানেরা তাহার জন্য দোযখের আগুন হইতে আড়াল তৈরি করিয়া দিবে। তাহাদের মধ্য হইতে একজন মহিলা বলিলেন, হে আল্লাহর রাসূল! দুইটি হইলেও কি তাহা হইবে? হাদীস বর্ণনাকারী বলেন যে, মহিলা তাহার প্রশ্ন দুইবার করিলেন। তখন রাসূলুল্লাহ (সা) বলিলেন, হাঁ দুইটি হইলেও দুইটি হইলেও দুইটি হইলেও” (বুখারী মুসলিম)।২৬৫
মুসলিমের অপর এক বর্ণনায় আছে, হযরত ফাতেমা বিনতে কায়েস (রা) বলিয়াছেন, অতঃপর আমি মসজিদে গিয়া রাসূলুল্লাহ (সা)-এর সহিত নামায আদায় করিলাম। রাসূলুল্লাহ (সা) নামায শেষে হাসিতে হাসিতে মিম্বরে বসিলেন। তিনি বলিলেন, প্রত্যেকেই নিজ নিজ নামাযের স্থানে বসিয়া থাক। তাহার পর বলিলেন, তোমরা কি জান আমি কেন তোমাদের সমবেত করিয়াছি? সবাই বলিল, আল্লাহ ও তাঁহার রাসূলই সর্বাধিক অবগত। তিনি বলিলেন, আল্লাহর শপথ। আমি তোমাদের কোন উৎসাহ ব্যঞ্জক বা ভীতিকর খবরের জন্য সমবেত করি নাই। বরং এই উদ্দেশ্যে সমবেত করিয়াছি যে, তামীমদারী নামক এক ব্যক্তি আসিয়াছে। সে ছিল একজন খৃস্টান। সে আমার নিকট এমন একটি ঘটনা বর্ণনা করিয়াছে যাহা আমি মাসীহ দাজ্জাল সম্পর্কে তোমাদের ইতিপূর্বে যে কথা বলিয়াছিলাম তাহার সহিত হুবুহু মিলিয়া যায়।২৬৬
ধারা-১৪০৪ মসজিদের উন্নয়ন কাজে সহযোগিতা করিবার অধিকার মসজিদের উন্নয়ন প্রকল্পে নারী সহযোগিতা করিতে পারিবে।
বিশ্লেষণ
মসজিদের উন্নয়ন প্রকল্পে নারী যে কোন প্রকারের সাহায্য-সহযোগিতা করিতে পারিবে। এই সম্পর্কে ইমাম বুখারী হযরত জাবের (রা) হইতে হাদীস পেশ করিয়াছেনঃ
৯২৯
عن جابر بن عبد الله ان امرأة من الأنصار قالت لرسول الله ة يارسول الله الا اجعل لك شيئا تقعد عليه فان لی غلامانجارا قال ان شئت قال فعملت له المنبر فلما كان يوم الجمعة قعد النبي صلى الله عليه وسلم على المنبر الذي صنع وفي رواية بعث رسول الله له الى فلانة امرأة قد سماها سهل ان مری غلام النجار يعمل لی اعوانا اجلس عليهن اذا كلمت الناس فامرته يعملها … … ثم جاء بهافار سلت الى رسول الله صلى الله عليه وسلم فامربها فوضعت فجلس عليها (رواه ابخاری).
“জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা) হইতে বর্ণিত। এক আনসারী মহিলা রাসূল (সা)-কে বলিল, হে আল্লাহর রাসূল! আমি কি আপনাকে এমন কিছু তৈরি করিয়া দিব যাহার উপর আপনি বসিবেন? আমার একজন দক্ষ কাঠমিস্ত্রি যুবক আছে। রাসূলুল্লাহ (সা) বলিলেন, যদি তুমি ইচ্ছা কর তবে দিতে পার। উক্ত মহিলা রাসূলুল্লাহ (সা)-এর জন্য মিম্বার তৈরি করিয়া দিলেন। পরে জুমুআর দিন রাসূলুল্লাহ (সা) ঐ মেম্বারের উপর বসিলেন। অপর এক বর্ণনামতে রাসূলুল্লাহ (সা) নিজেই এক মহিলার নিকট লোক পাঠাইলেন। মানুষেরা তাহাকে সাহলা বলিয়া ডাকিত। তাহাকে বলিলেন, তুমি তোমার কাঠমিস্ত্রি চাকরকে এমন কিছু সিড়ি (মিম্বার) তৈরি করিতে বল যাহার উপর বসিয়া আমি মানুষের সহিত কথা বলিতে পারি। সুতরাং উক্ত মহিলা তাহার কাঠমিস্ত্রিকে মিম্বার তৈরি করিতে নির্দেশ দিলেন এবং তাহা তিনি রাসূলুল্লাহ (সা)-এর মসজিদে দান করিয়াছিলেন।২৬৭
ধারা-১৪০৫ নাবালিকা ও যুবতী মহিলাদের দেশত্যাগের অধিকার নাবালিকা ও যুবতী মহিলারা হিজরত করিতে পারিবে।
বিশ্লেষণ
নাবালেগা ও যুবতী মহিলাদের হিজরত করিবার অধিকার রহিয়াছে। এই সম্পর্কে ইমাম বুখারী হাদীস উল্লেখ করিয়াছেন?
৯৩০
عن ام خالد بنت خالد قالت قدمت من ارض الحبشة واناجويرة
فكسانی رسول الله ة خميصة لها اعلام فجعل رسول الله يمسح الاعلام بيده ويقول سنا سناه قال الحميدی يعی حسن
‘ (
6 99) ~~ “হযরত উম্মে খালিদ (রা) হইতে বর্ণিত। তিনি বলিয়াছেন, যখন আমি হাবশা হইতে ফিরিয়া আসিলাম (পিতা-মাতার সহিত) তখন ছােট বালিকা ছিলাম। রাসূলুল্লাহ (সা) আমাকে নকশাদার রেশমী পরিধেয় পরাইয়া দিলেন। রাসূলুল্লাহ (সা) নকশাগুলি তাহার হাত দ্বারা স্পর্শ করিয়া দেখিতেছিলেন আর বলিতেছিলেন, সানাহ সানাহ। হুমায়দী বলেন, অর্থাৎ খুব সুন্দর, খুব সুন্দর। ২৬৮
অপর এক বর্ণনায় আছে, মারওয়ান ও মিসওয়ার ইবন মাখরামা (রা) হইতে বর্ণিত। সেই সময় (অর্থাৎ হুদাইবিয়ার সন্ধির পর) উম্মে কুলসুম বিনতে উকবা ইবন আবী মুঈত মক্কা হইতে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নিকট (মদীনায়) চলিয়া গিয়াছিলেন। তিনি ছিলেন যুবতী, তাহার পরিবারের লোকজন তাহাকে ফিরাইয়া নেওয়ার জন্য রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নিকট আসিলে তিনি তাহাকে ফিরাইয়া দিলেন
।২৬৯
ধারা-১৪০৬ নারীদের বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহণের অধিকার নারী বৈধ বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করিতে পারিবে।
বিশ্লেষণ
নারীর যে কোন বৈধ বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ সম্পর্কে ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীস উল্লেখ করিয়াছেন।
عن ربيع بنت معوذ قالت أرسل رسول الله عنه غداة عاشوراء الى قرى الانصار من اصبح مفطرا فليتبقية يومه ومن اصبح صائما فليصم قالت وا نصومه بعده ونصوم صبياننا ونجعل لهم اللعبة من العهن فاذا بکا احدهم على الطعام اعطيناه ذلك
حتى يكون عند الافطار (رواه البخاری) .
“হযরত রুবাই বিনতে মুআব্বি ইবন আফরা (রা) হইতে বর্ণিত। তিনি বলিয়াছেন, আশূরার দিন প্রত্যুশে রাসূলুল্লাহ (সা) আনসার জনপদে লোক পাঠাইয়া এই মর্মে ঘোষণা করিলেন, যাহারা সকালে আহার করিয়াছে তাহারা দিনের অবশিষ্টাংশে কিছু খাইবে না। আর যাহারা রোযা রাখিয়াছে তাহারা রোযা পূর্ণ করিবে। হাদীস বর্ণনাকারী রুবাই বিনতে মুআব্বি বলেন, ইহার পর হইতে আমরা রোযা রাখিতাম এবং আমাদের শিশু সন্তানদেরকেও রোযা রাখাইতাম। তাহাদেরকে আমরা রঙ্গীন পশমের খেলনা তৈরি করিয়া দিতাম। শিশুদের মধ্যে যদি কেহ ক্ষুধায় কান্নাকাটি করিত, তাহাদেরকে আমরা ঐ খেলনা দ্বারা ভুলাইয়া রাখিতাম, যাহাতে তাহাদের রোযা পূর্ণ হয়।২৭০
হযরত আয়েশা (রা) হইতে বুখারীর অপর এক বর্ণনায় উল্লেখ রহিয়াছে, তিনি বলেন, “ইহা ছিল ঈদের দিন। সেদিন হাবশীরা ঢাল ও যুদ্ধাস্ত্র লইয়া খেলিতেছিল। একবার হয়ত আমি নিজেই রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নিকট আবদার করিয়াছিলাম অথবা তিনি নিজেই আমাকে জিজ্ঞাসা করিয়াছিলেন, তুমি কি তাহাদের খেলা দেখিতে চাও? আমি বলিলাম, হাঁ, তখন তিনি আমাকে তাঁহার পিছনে এমনভাবে দাঁড় করাইলেন যে, আমার গণ্ডদেশ তাঁহার গণ্ডদেশের সহিত লাগিয়াছিল। তিনি তাহাদেরকে (হাবাশীদেরকে) বলিতেছিলেন, হে বনূ আরফিদা খেলা চালাইয়া যাও। পরিশেষে আমি ক্লান্ত হইয়া পড়িলে তিনি বলিলেন, তুমি কি পরিতৃপ্ত? আমি বলিলাম, হাঁ। তিনি বলিলেন, তাহা হইলে যাও। অন্য এক বর্ণনায় আছে, খেলাধুলার প্রতি কত আগ্রহ থাকিতে পারে তাহা অনুমান কর।২৭১
ধারা-১৪০৭ নারীদের সমাজকল্যাণমূলক কাজে অংশগ্রহণের অধিকার নারী সমাজকল্যাণমূলক যে কোন বৈধ কাজে অংশগ্রহণ করিতে পারিবে।
বিশ্লেষণ
সমাজের কল্যাণকর কাজের জন্য পুরুষের মত নারীকেও আহবান জানানো হইয়াছে। কুরআন মজীদে বলা হইয়াছে?
ايها الذين أهوا اركعوا واسجدوا و أبدوا ربكم وافعلوا
الخير لعلكم تفلحون .
৯৩২
“হে মুমিনগণ, তোমরা রুকূ কর, সিজদা কর, তোমাদের প্রতিপালকের ইবাদত কর ও সকর্ম কর, যাহাতে সফলকাম হইতে পার” (সূরা হজ্জ : ৭৭)।
ব্যক্তিগত পারিবারিক-সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় যে কাজই হােক, সকল কাজই তাহার যথার্থ গুরুত্ব ও নিয়ম মাফিক করা প্রয়োজন যাহাতে নারী গৃহ ও সন্তানের প্রতি তাহার দায়িত্ব এবং সমাজের প্রতি তাহার দায়িত্বের মাঝে সামঞ্জস্য বিধান করিয়া সামাজিক পুনরুজ্জীবনের ক্ষেত্রে তাহার ভূমিকা পালন করিতে পারে। কুরআন মজীদে অন্যত্র বলা হইয়াছে?
ومن يعمل من الملحت من ذكر أو أنثى وهو مؤمن..
“পুরুষ অথবা নারীর মধ্যে যে কেহ সৎ কাজ করিলে ও মুমিন হইলে তাহারা জান্নাতে দাখিল হইবে এবং তাহাদের প্রতি অণু পরিমাণও জুলুম করা হইবে না” (সূরা নিসা : ১২৪)।
بالمعروف
والمؤمنون والمؤمنت بعضهم أولياء بعض يأمر
وينهون عن المنكر .
“মুমিন নর ও নারী একে অপরের সহযোগী। ইহারা সকার্যের নির্দেশ দেয় এবং অসৎকার্যের নিষেধ করে” (সূরা তওবা : ৭১)।
আল্লামা রশিদ রেজা বলেন, এই আয়াতে নারী ও পুরুষের উপর “আমর বিল মারুফ ও নাহী আনিল মুনকার” (ভাল কাজে আদেশ ও মন্দ কাজ হইতে বিরত রাখা)-এর কাজ ফরয করিয়া দেওয়া হইয়াছে। কিভাবে এই দায়িত্ব পালন করিতে হইবে নারীরা তাহা শিখিত এবং সেই অনুপাতে কাজ করিত।২৭২ নারীরা যে আমর বিল মারূফ ও নাহী আনিল মুনকারের কাজ শিক্ষা লাভ করিত এবং সেই অনুপাতে আমল করিত তাহা দৃঢ়ভাবে সমর্থিত হইয়াছে, ইয়াহইয়া ইবন আবু সুলাইম হইতে তাবারানী বর্ণিত একটি রিওয়ায়াত দ্বারা। তিনি বর্ণনা করিয়াছেন, “আমি দেখিলাম, আমরা বিনতে নাহীক, তিনি রাসূলুল্লাহ (সা)-এর সহচর্য লাভ করিয়াছিলেন, মোটা কামিজ দোপাট্টা পরিধান করিয়া একটি ঝোলা হাতে মানুষকে শিষ্টাচার শিখাইতেছেন এবং ভাল কাজের আদেশ দিতেছেন এবং মন্দকাজ হইতে বিরত রাখিতে চেষ্টা করিতেছেন” (তাবারানী)।২৭৩
ধারা-১৪০৮ অমুসলিম কর্তৃক বিবাহ প্রস্তাবকারীর প্রতি ইসলামের
দাওয়াত দানের অধিকার কোন অমুসলিম নারীকে বিবাহের প্রস্তাব দিলে উক্ত মুসলিম নারী অমুসলিমকে ইসলামের দাওয়াত দিতে পারিবে।
বিশ্লেষণ
কোন অমুসলিম পুরুষ যদি মুসলিম নারীর নিকট বিবাহের প্রস্তাব পেশ করে সেই ক্ষেত্রে উক্ত মুসলিম নারী তাহার বিবাহের প্রস্তাবক অমুসলিম পুরুষকে ইসলাম গ্রহণের দাওয়াত দিতে পারিবে। যদি সে ইসলাম গ্রহণ করে কেবল তখনই উক্ত নারী তাহার সহিত বিবাহের ব্যাপারে আলোচনা করিতে পারে, অন্যথায় নহে। নারী কর্তৃক তাহার বিবাহের প্রস্তাবকারীকে ইসলাম গ্রহণের আহবান সম্পর্কে হাদীসে উল্লেখ আছে?
হযরত আনাস (রা) তিনি বলিয়াছেন “আবু তালহা, অমুসলিম অবস্থায় উম্মে সুলাইমকে বিবাহের প্রস্তাব দিলে তিনি বলিলেন, আল্লাহর কসম,”হে আবু তালহা! তোমার মত একজন লোকের বিবাহের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করা যায় না। কিন্তু তুমি একজন কাফের পুরুষ, আর আমি একজন মুসলিম নারী। তোমাকে বিবাহ করা আমার জন্য বৈধ নহে। তবে তুমি যদি ইসলাম গ্রহণ কর তাহা হইলে উহাই হইবে আমার মহরানা। আমি তোমার নিকট ইহা ছাড়া কিছুই চাহিব না”।
“ইবন সাদ তাহার তাবাকাত গ্রন্থে বর্ণনা করিয়াছেন যে, আবু তালহা হযরত উম্মে সুলাইমকে বিবাহের প্রস্তাব দিলে তিনি তাহাকে বলিলেন, হে আবু তালহা! তুমি কি জান না যে, তুমি যে উপাস্যের ইবাদত কর তাহা হইতেছে মাটি হইতে উৎপন্ন বৃক্ষ, যাহা অমুক হাবশী চিরিয়া ফেলিয়াছে? আবু তালহা! তুমি কি জান না, তুমি যে সকল উপাস্যের উপাসনা কর উহাতে যদি তুমি আগুন জ্বালাইয়া দাও তবে উহা ভষ্মীভূত হইয়া যাইবে? তুমি কি বুঝ না, তুমি যে পাথরের পূজা কর তাহা তোমার কোন ক্ষতি বা কল্যাণ করিতে পারে না”।২৭৪ নাসায়ীতে উল্লেখ আছে, আবু তালহা ইসলাম গ্রহণ করিলেন এবং ইহাই উম্মে সুলাইমের মোহরানা হিসাবে গণ্য হইল।২৭৫
৯৩৪
ধারা-১৪০৯ নারীর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহনের অধিকার নারী রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করিতে পারিবে।
বিশ্লেষণ
পুরুষদের মত নারীরও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের অধিকার আছে। এই সম্পর্কে বুখারী ও মুসলিমের বিভিন্ন হাদীসে প্রমাণ পাওয়া যায়। মুসলিম শরীফের এক বর্ণনায় আছে, হযরত আবদুল্লাহ ইবন রাফে (রা) হইতে বর্ণিত। তিনি বলিয়াছেন, রাসূলুল্লাহ (সা) যখন কোন রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে লোকদের সমবেত করিবার জন » « “হে মানব মণ্ডলী) বলিয়া সম্বােধন করিতেন, তখন হযরত উম্মে সালামা (রা) ও উক্ত সমাবেশে অংশগ্রহণ করিতেন। যদি কেহ তাহাকে সমাবেশে যোগদান করা হইতে এই বলিয়া নিষেধ করিত যে, JUL বলিয়া তিনি তো শুধু পুরুষদেরকে আহবান জানাইয়াছেন, মেয়েদেরকে আহবান করেন নাই, তখন তিনি তাহাদেরকে জবাব দিতেন, রাসূলুল্লাহ (সা) “হে মানব মণ্ডলী” বলিয়া সম্বােধন করিয়াছেন। আমিও মানবমণ্ডলীর অন্তর্ভুক্ত (এইখানে নারী ও পুরুষের মধ্যে কোন পার্থক্য নাই)।২৭৬
নারীর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ সম্পর্কে ইমাম বুখারী উল্লেখ করিয়াছেন, হযরত ফাতেমা বিনতে কায়েস (রা) বলিয়াছেন আমার ইদ্দাত পূর্ণ হইলে আমি
রাসূলুল্লাহ (সা) এর ঘোষকের ঘোষণা শুনিতে পাইলাম। তিনি ঘোষণা করিতেছেন,, Loj। (মুয়াজ্জিন আযানের সহিত আস-সালাতু জামেয়া বলিলে উহার অর্থ হইত নামাযের সহিত সাধারণ সমাবেশের ঘোষণা দেওয়া হইতেছে)। সুতরাং আমি মসজিদে চলিয়া গেলাম এবং রাসূলুল্লাহ (সা)-এর সহিত নামায আদায় করিলাম। আমি পুরুষদের কাতার সংলগ্ন মেয়েদের কাতারে ছিলাম। অপর এক বর্ণনায় আছে, আমি মসজিদে গমনকারী লোকদের সহিত মসজিদে গেলাম। মেয়েদের যে কাতারটি পুরুষদের সর্বশেষ কাতারের পিছনে ছিল আমি সেই কাতারে ছিলাম। নামায শেষে রাসূলুল্লাহ (সা) খুতবা দিলেন।২৭৭
হযরত জয়নাব বিনতে মোহাজির হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রা)-এর সহিত রাজনৈতিক আলাপ-আলোচনা করিতেন। তিনি হযরত আবু বাকর (রা)-কে
জিজ্ঞাসা করিলেন, জাহিলী যুগের অবসানের পর আল্লাহ আমাদের যে চমক্কার দীন দিয়াছেন তাহার উপর আমরা কত দিন টিকিয়া থাকিতে পারিব? তিনি বলিলেন, তোমাদের নেতারা যত দিন পর্যন্ত তাহার উপর অবিচল থাকিবেন তত দিন পর্যন্ত টিকিয়া থাকিতে পারিবে। সে বলিল, নেতা আবার কি? তিনি বলিলেন, তোমার কওমে কি এমন সব প্রধান ও সম্মানিত ব্যক্তিবর্গ নাই যাহারা আদেশ দিলে তাহারা মানিয়া লয়? সে বলিল, হাঁ, আছে। তিনি বলিলেন, তাহারাই জনগণের নেতা।২৭৮
ধারা-১৪১০ নারীর সামরিক ও রাজনৈতিক উপদেষ্টা হওয়ার অধিকার নারী সামরিক ও রাজনৈতিক উপদেষ্টা হিসাবে নিয়োগ লাভ করিতে পারিবে।
বিশ্লেষণ
সরকারের সামরিক ও রাজনৈতিক উপদেষ্টা হিসাবে নারী দায়িত্ব পালন করিতে পারে। নারীর সামরিক উপদেষ্টা হিসাবে সরকারে অংশগ্রহণ সম্পর্কে ইমাম মুসলিম উল্লেখ করিয়াছেন, “হযরত আনাস (রা) হইতে বর্ণিত। “উম্মে শুরাইক হুনাইন যুদ্ধের দিন বলিলেন” হে আল্লাহর রাসূল। আমাদের ছাড়া তোলাকাদেরকে কি (মক্কা বিজয়ের ইসলাম অহংকারীগণ) হত্যা করা হইবে? রাসূলুল্লাহ (সা) বলিলেন, হে উম্মে সুলাইম! আল্লাহই যথেষ্ট এবং তিনিই ইহসান করিয়াছেন। ২৭৯।
নারীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা (পরামর্শদাতা) নিয়োগ সম্পর্কে ইমাম বুখারী হুদায়বিয়ার সন্ধির দিন উম্মে সালামার ভূমিকার কথা উল্লেখ করিয়াছেন?
عن المسور بن مخرمة ومروان يصدق كل واحد منهاحديث صاحبه قالآ خرج رسول الله له من الحديبية فجاء سهيل بن عمرو فقال هات اكتب بيننا وبينكم كتابا فدعا النبي ع الكاتب
له اكتب بسم الله الرحمن الرحيم فقال سهيل اما
فقال النبي الرحمن فوالله ما أدري ماهو ولكن اكتب باسمك اللهم فقال المسلمون والله لا نكتبها الا بسم الله الرحمن الرحيم فقال له النبي عة على ان تخلو بيننا وبين البيت فنطوف به فقال سهيل
৯৩৬
والله لا تتحدث العرب انا اخذنا ضعطة ولكن ذالك من العام المقبل فكتب فقال سهيل وعلى انه لا ياتيك منا رجل و ان كان على دينك الا رددته اليناقال المسلمون سبحان الله كيف يرد الى المشركين وقد جاء مسلما فبينا هم كذالك ……………… قال عمر بن الخطاب فأتيت النبي صلى الله عليه وسلم فقلت الست نبي الله حقا قال بلى فقال السنا على الحق وعدونا على الباطل قال بلى قلت قلم نعطى النية في ديننا اذا قال ايها الرجل انه رسول الله
ة وليس يعصى ربه وهنا مره فاستمسك بغره فوالله انه على الحق قلت اليس كان يحدثنا انا سناتي البيت ويطوف به قال بلى افاخبرك ابك تاتيه العام قلت لا قال فانك اتية ومطوف به ……. قال لما فرغ من قضية الكتاب قال رسول الله له لأصحابه قوموا فانحر وا ثم احلقوا قال فوالله ما قام منهم رجل حتى قال ذالك ثلث مراة فلما لم يقم منهم احد دخل على ام سلمة فذكره لها مالقي من الناس فقالت أم سلمة يانبي الله اتحب ذلك اخرج ثم لاتكلم احدا منهم كلمة حتى تنحر بدنك وتدعو حالقك فيحلقك فخرج فلم يكلم أحدا منهم حتی فعل ذلك نحربدنه ودعا حالقه فحلقه فلمار ؤا ذالك قاموا فنحروا وجعل بعضهم يحلق بعضا (رواه البخاری) .
“মিসওয়ার ইবন মাখরামা ও মারওয়ান হইতে বর্ণিত। তাহাদের একজনের বর্ণনা অপরজনের বর্ণনাকে সমর্থন করে। তাহারা উভয়ে বলিয়াছেন হুদাইবিয়ার সন্ধির প্রাক্কালে রাসূলুল্লাহ (সা) যাত্রা করিলেন : ইহার পর সুহায়েল ইবনে আমর আসিয়া বলিল, আপনি আমাদের ও আপনাদের মধ্যে একটি সন্ধিপত্র লিখিবার ব্যবস্থা করুন। রাসূলুল্লাহ (সা) লেখক ডাকিলেন এবং বলিলেন লেখ, বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম। এই কথা শুনিয়া সুহায়েল বলিল আল্লাহর শপথ। রহমান কি আমি জানি না। আপনি বরং বিসমিকা আল্লাহুমা লিখিতে বলুন। তখন মুসলমানরা বলিল, আল্লাহর কসম! আমরা বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম ছাড়া
৯৩৭
কিছুই লিখিব না। রাসূলুল্লাহ (সা) বলিলেন, তোমরা আমাদের ও বাইতুল্লাহর মাঝে বাধা হইবে না যাহাতে আমরা তওয়াফ করিতে পারি। সুহায়েল বলিল, আল্লাহর কসম! এইরূপ হইলে আরববাসী বলিবে, আমরা বাধ্য হইয়া এই শর্ত মানিয়া লইয়াছি। আমরা বরং আগামী বৎসরের জন্য এই শর্ত মানিয়া লইতেছি। রাসূলুল্লাহ (সা) তাহাই লিখিলেন। সুহায়েল বলিল, আমাদের মধ্য হইতে কোন ব্যক্তি যদি আপনার নিকট (মদীনায়) চলিয়া যায়, সে আপনার দীনের অনুসারী হইলেও তাহাকে আমাদের নিকট ফেরত পাঠাইতে হইবে। মুসলমানেরা সকলেই (এই প্রস্তাবে) বলিয়া উঠিল, সুবহানাল্লাহ। যে মুসলমান হইয়া চলিয়া আসিবে তাহাকে কিভাবে প্রত্যর্পণ করা যাইবে? হযরত উমার ইবনুল খাত্তাব (রা) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নিকট গিয়া বলিলাম, আপনি কি সত্যই আল্লাহর নবী? তিনি বলিলেন, হাঁ। আমি সত্যিই আল্লাহর নবী! আমি বলিলাম, আমরা কি ন্যায় ও সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত নহি এবং আমাদের শত্রুরা বাতিলের উপর প্রতিষ্ঠিত নহে? তিনি বলিলেন, হাঁ। আমি বলিলাম। তাহা হইলে কেন আমরা আমাদের দীনের ব্যাপারে এত হীন শর্ত মানিয়া লইব? তিনি বলিলেন, আমি আল্লাহর রাসূল, আর আমি তাঁহার অবাধ্য হইতে পারি না। তিনি আমাকে অবশ্যই সাহায্য করিবেন। আমি বলিলাম, আপনি কি বলিলেন না যে, আমরা অচিরেই বাইতুল্লায় যাইব এবং তাওয়াফ করিব? তিনি বলিলেন, হাঁ বলিয়াছিলাম। তবে কি আমি বলিয়াছিলাম যে, আমরা এই বৎসরই তাহা করিব? তিনি বলিলেন, আমি বলিলাম, না। তিনি বলিলেন, তুমি অবশ্যই সেখানে যাইবে এবং বাইতুল্লাহ তাওয়াফ করিবে। চুক্তিপত্র লেখা শেষ করিয়া তিনি সাহাবাদেরকে বলিলেন, এখন গিয়া তোমরা কুরবানী কর এবং মাথা মুণ্ডন করিয়া লও। হাদীস বর্ণনাকারী বলেন, আল্লাহর কসম! কেহই উঠিল না, এমনকি তিনি তিনবার এই কথা বলিলেন। যখন তাহাদের কেহই উঠিল
তখন তিনি উম্মে সালামার নিকট গেলেন এবং তাহাকে সাহাবাদের আচরণ সম্পর্কে বিস্তারিত বলিলেন। উম্মে সালামা (রা) বলিলেন, “হে আল্লাহর নবী! আপনি যদি চাহেন তাহা হইলে কাহারো সহিত কোন কথা না বলিয়া গিয়া প্রথমে নিজের কুরবানীর পশু যবেহ করুন এবং ক্ষৌরকারকে ডাকিয়া মাথা মুণ্ডন করিয়া ফেলুন। ইহার পর তিনি চলিয়া গেলেন এবং কাহারও সহিত কোন প্রকারের কথা
বলিয়া উম্মে সালামা যাহা বলিয়াছিলেন তাহা করিলেন। তিনি নিজের কুরবানীর পশু কুরবানী করিলেন এবং ক্ষৌরকারকে ডাকিয়া মাথা মুণ্ডন করিলেন। তাহা দেখিয়া সবাই উঠিয়া নিজ নিজ কুরবানী করিল এবং পরস্পরের মাথা মুণ্ডন আরম্ভ করিল।২৮০ )
৯৩৮
বুখারীর অপর এক বর্ণনা উল্লেখ আছে, “হযরত আবদুল্লাহ ইবন উমার (রা) বলিয়াছেন, আমি একদিন উম্মুল মুমিনীন হাফসা (রা)-র নিকট গেলাম। সে সময় তাহার চুল হইতে পানি ঝরিতেছিল। আমি তাহাকে বলিলাম, আপনি তো দেখিতেছেন খেলাফতের বিষয়টি লইয়া লোকজন কি কাণ্ড করিতেছে। (হযরত আলী (র) হযরত আমীরে মুয়াবিয়াহ (রা) এর বিবাদের প্রতি ইংগিত) শাসন কর্তৃত্ব ও ইমারতের কিছুই আমাকে দেওয়া হয় নাই। হযরত হাফসা (রা) বলিলেন, তুমি গিয়া তাহাদের সহিত শরীক হও। তাহারা তোমার জন্য অপেক্ষা করিতেছে। তুমি নিজেকে তাহাদের হইতে দূরে সরাইয়া রাখিবার কারণে তাহাদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি হইতে পারে বলিয়া আমার আশংকা হয়। তিনি বারবার বলায় তিনি (আবদুল্লাহ ইবন উমার) যাইতে বাধ্য হইলেন।২৮১ ( আপনি তো দেখিতেছেন খেলাফতের বিষয়টি লইয়া লোকজন কি কাণ্ড করিতেছে? হাদীসের এই অংশের ব্যাখ্যায় হাফেজ ইবন হাজার আসকালানী বলিয়াছেন, ইহার অর্থ হযরত আলী ও মুয়াবিয়ার মধ্যে সিফফীন সংঘটিত যুদ্ধ, শাসন কর্তৃত্ব লইয়া মতভেদ হওয়ার কারণে যেখানে উভয়ের সমর্থনে লোকজন সমাবিষ্ট হইয়াছিল। এই বিষয়টি বিবেচনার জন্য তাহারা সমবেত হইবে বলিয়া প্রতিশ্রুতি দিয়াছিল। সেইখানে উপস্থিত হওয়া না হওয়ার ব্যাপারে আবদুল্লাহ ইবন উমার (রা) তাহার বােন হাফসা (রা)-র কাছে পরামর্শ চাহিলে তাহার সেখানে অনুপস্থিতি স্থায়ী ফেতনা সৃষ্টি করিতে পারে, এই আশংকা তাহাকে উক্ত গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক বৈঠকে উপস্থিত থাকিবার পরামর্শ দিয়াছিলেন।২৮২।
. ধারা-১৪১১
নির্বাচনে অংশগ্রহণের অধিকার নারী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করিতে পারিবে।
বিশ্লেষণ
নারী যে কোন প্রকারের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করিতে পারিবে। স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ের প্রতিনিধি নির্বাচনে পুরুষদের মত নারীরাও তাহাদের পছন্দমত প্রতিনিধি নির্বাচনের অধিকারী। ইসলামী সমাজ ব্যবস্থায় নারী দক্ষতার সহিত তাহার যোগ্যতানুসারে সর্বক্ষেত্রে অংশগ্রহণ করিতে পারে। সামাজিক, রাজনৈতিক, সামরিক অর্থনৈতিক সর্বক্ষেত্রেই নারী অংশগ্রহণ করিতে পারে। নারীর নির্বাচনে অংশগ্রহণ সম্পর্কে দামিশক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডঃ মুস্তাফা আস-সাবায়ীর মত
পেশ করা যাইতে পারে। তিনি বলেন, পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ হইতে বিষয়টি বিস্তারিতভাবে পর্যালোচনার পর আমরা দেখিতে পাইয়াছি যে, ইসলাম নারীকে এই অধিকার হইতে বঞ্চিত করে না। নির্বাচন হইতেছে জাতির প্রতিনিধিবৃন্দ বাছাই করিবার প্রক্রিয়া বিশেষ। এই সকল প্রতিনিধিত্ব আইন প্রণয়ন ও সরকারের কার্যাবলী পর্যবেক্ষণের ব্যাপারে জাতির প্রতিনিধিত্ব করে। সুতরাং নির্বাচন প্রক্রিয়া হইতেছে প্রতিনিধি বাছাইয়ের কার্যক্রম। সেক্ষেত্রে লোকে ভভাটকেন্দ্রে উপস্থিত হইয়া ভোট দানের মাধ্যমে প্রতিনিধি সভায় তাহাদের পক্ষ হইতে কথা বলা ও তাহাদের অধিকারসমূহ রক্ষার জন্য প্রতিনিধি বাছাই করে। তাই নারীকে তাহার অধিকারসমূহ সংরক্ষণ এবং তাহার পক্ষ হইতে বক্তব্য পেশের জন্য একজন উকিল বা প্রতিনিধি নিয়োগ করিতে বা নিয়োজিত হইতে ইসলাম বাধা দেয় না।২৮৩
ধারা-১৪১২ আইন সভায় মনোনয়ন লাভের অধিকার নারী আইন সভার সদস্যা হিসাবে মনোনয়ন লাভ করিতে পারিবে।
বিশ্লেষণ
নারীর আইন সভার (সংসদ) সদস্যা হিসাবে নিয়োগ লাভের অধিকার আছে। ইসলামের একটি মূলনীতি হইল : “প্রতিটি বস্তু বা বিষয়ই মূলত বৈধ, যতক্ষণ পর্যন্ত না তাহার হারাম হওয়ার পক্ষে অকাট্য প্রমাণ পাওয়া যায়। সুতরাং এই মূলনীতির ভিত্তিতে বলা যায়, যেহেতু নারীর আইন সভার সদস্য হিসাবে মনোনয়ন লাভের ব্যাপারে শরীয়াত প্রণেতার পক্ষ হইতে কোন নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হয় নাই, সুতরাং তাহার এই অধিকারকে মূলগতভাবে শরীয়ত সম্মত বলিয়া বিবেচনা করা যায়। নারীর আইন সভার সদস্য হিসাবে মনোনয়ন লাভের বিষয়ে ডঃ মুস্তাফা আস-সাবায়ী বলিয়াছেন, ইসলামের মূলনীতি যখন নারীকে ভোটার হইতে বাধ দেয়, তখন কি উহা তাহাকে প্রতিনিধি নির্বাচিত হইতে বাধা দিবে? নির্বাচিত প্রতিনিধির কাজ মূলত দুইটি। প্রথমত আইন প্রণয়ন আইন রচনা ও সংগঠন তৈরি করা। দ্বিতীয়টি হইল : পরিদর্শন ও পর্যবেক্ষণ, সরকারী নির্বাহী বিভাগ ও তাহার কাজকর্ম পরিদর্শন ও পর্যবেক্ষণ করা। আইন রচনার ক্ষেত্রে এমন কোন বিধান নাই যাহা নারীকে আইন রচয়িতা হইতে বাধা দেয়। কারণ আইন রচনার বিষয়টি সব কিছুর আগে সমাজের অপরিহার্য প্রয়োজন সম্পর্কে জ্ঞানের মুখাপেক্ষী। আর ইসলাম নারী-পুরুষ উভয়কে সমানভাবে জ্ঞান লাভের অধিকার দিয়াছে। ২৮৪
৯৪০
ধারা-১৪১৩ ব্যক্তিগত সম্পত্তির মালিকানার অধিকার নারী ব্যক্তিগত সম্পত্তির মালিকানা লাভ করিতে পারিবে।
বিশ্লেষণ
যে কোন নারী বৈধ পন্থায় পুরুষের মতই ব্যক্তিগতভাবে সম্পত্তির মালিক হইতে পারে এবং তাহার রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিবৃদ্ধির জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে পারিবে। তাহার সম্পদে তাহার সম্মতি ছাড়া তাহার পিতা, ভাই, স্বামী বা অন্য কেহই হস্তক্ষেপ করিতে পারিবে না। এই সম্পর্কে কুরআন মজীদে ও হাদীসে বিস্তারিতভাবে উল্লেখ আছে।
০
০
ولا تاكلوا أموالكم بينكم بالباطل وتدلوا بها الى الحكام لتاك
فريقا من أموال الناس بالاثم وأنتم تعلمون (سورة بقرة ۱۸۸)
“তোমরা নিজেদের মধ্যে একে অন্যের অর্থ-সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করিও এবং মানুষের ধন-সম্পত্তির কিয়দংশ জানিয়া শুনিয়া অন্যায়রূপে গ্রাস করিবার উদ্দেশ্যে উহা বিচারকগণের নিকট পেশ করিও না” (সূরা বাকারা, আয়াত নং ১৮৮; “অনুরূপভাবে সূরা নিসার ১৯ নং আয়াতেও একই বিষয় উল্লেখ আছে)।
বুখারী ও মুসলিমে উল্লেখ আছে, হযরত আবদুল্লাহ ইবন মাসউদের স্ত্রী হযরত জয়নাব ছিলেন ধনবতী। তিনি তাহার গরীব স্বামীর জন্য খরচ করিতেন।২৮৫ অনুরূপভাবে আবু দারদা (রা)-এর স্ত্রীও ধনবতী ছিলেন। তিনিও তাহার স্বামী ও সন্তানদের ভরণপোষণ করিতেন। তাহারা রাসূলুল্লাহ (সা)-কে এই দান সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করিলে তিনি সম্মতিসূচক জবাব দিলেন, কিন্তু একথা বলিলেন না যে, তোমার সম্পত্তির মালিক তোমার স্বামী এবং সে ইচ্ছা করিলে তাহার ইচ্ছামত উহা ভোগ করিতে পারিবে।
ধারা-১৪১৪
সন্তানের অধিকার কোন কারণে স্বামী-স্ত্রীর দাম্পত্য সম্পর্কের অবসান ঘটিলে সন্তান আট বত্সর বয়স পর্যন্ত মায়ের তত্ত্বাবধানে থাকিবে।
৯৪১
বিশ্লেষণ
স্বামী-স্ত্রীর দাম্পত্য সম্পর্কের অবসান ঘটিলে এবং তাহাদের শিশু সন্তান থাকিলে উক্ত শিশু সন্তান নিজের তত্ত্বাবধানের জন্য তাহার মায়ের নিকটই থাকিবে। ইসলামী আইনে সন্তানের অধিকারী পিতা-মাতা উভয়ে। পিতা-মাতা মারা গেলে সন্তান যেমন উভয়ের পরিত্যক্ত সম্পত্তির অধিকারী হয় তেমনি সন্তান মারা গেলে পিতা-মাতাও তাহার পরিত্যক্ত সম্পত্তির অংশীদার হয়। যেমন সূরা নিসার ৭ ও ১১ নম্বর আয়াতে আল্লাহ পাক উল্লেখ করিয়াছেন : “পিতা-মাতা এবং আত্মীয় স্বজনের পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে পুরুষের অংশ আছে এবং পিতা-মাতা ও নিকট আত্মীয়-স্বজনের পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে নারীরও অংশ আছে, উহা অল্পই হউক অথবা বেশিই হউক এক নির্ধারিত অংশ” (সূরা নিসা : ৭)।
কোন কারণে যদি স্বামী স্ত্রীর দাম্পত্য সম্পর্কের অবসান ঘটে এবং মাতা যদি তাহার শিশু সন্তানকে নিজের তত্ত্বাবধানে রাখিতে চাহে তবে উক্ত শিশু সন্তান আট বৎসর বয়স পর্যন্ত মায়ের তত্ত্বাবধানে থাকিবে, বালেগ হওয়া পর্যন্ত পিতার তত্ত্বাবধানে থাকিবে এবং বালেগ হওয়ার পর পিতা বা মাতা যাহার সহিত ইচ্ছা সে বসবাস করিতে পারিবে। সন্তান যাহার নিকটই থাকুক, সে অবাধে পিতা-মাতার সহিত দেখা সাক্ষাত করিতে পারিবে। এ ব্যাপারে কোন পক্ষেরই বাধা প্রদানের আইনত অধিকার নাই (বিস্তারিত জানিবার জন্য দ্রষ্টব্যঃ, ধারা নং ৩৯৭-৩৯৮, ৪০৬, ৪০৭)।
ধারা-১৪১৫ পুরুষের সহিত নারীর সাক্ষাতের নিয়মাবলী পুরুষের সহিত নারীর সাক্ষাত বৈধ হওয়ার নিয়মাবলী নিম্নরূপ – (ক) দৃষ্টি সংযম রাখা; (খ) দুই হাতের কবজী ও মুখমণ্ডল ছাড়া সমস্ত শরীর ঢাকিয়া রাখা। (গ) পুরুষের সহিত প্রয়োজনবােধে ও বলিষ্ঠ কণ্ঠে কথা বলা।
বিশ্লেষণ
নারী-পুরুষে পারস্পরিক সাক্ষাতে যে সকল নিয়ম-কানুন উল্লেখ করা হইয়াছে উহার মধ্যে প্রথম হইল দৃষ্টি সংযত রাখা। এই সম্পর্কে কুরআন মজীদে বলা হইয়াছে?
৯৪২
قل للمؤمنين يغضوا من أبصارهم ويحفظوا فروجهم ذالك أزكى لهم ان الله خبير بما يصنعون. وقن المؤمنات يغضضن
…..২১১৪ki,te > “মুমিনদিগকে বল, তাহারা যেন তাহাদের দৃষ্টি সংযত রাখে এবং তাহাদিগের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে। ইহা তাহাদিগের জন্য উত্তম। উহারা যাহা করে আল্লাহ সে বিষয়ে অবহিত। মুমিন নারীদিগকে বল, তাহারা যেন তাহাদের দৃষ্টিকে সংযত করে এবং তাহাদিগের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে। তাহারা যেন যাহা সাধারণত প্রকাশ পায় তাহা ব্যতীত তাহাদিগের আভরণ প্রদর্শন না করে, তাহাদিগের গ্রীবা বা বক্ষদেশ যেন মাথার কাপড় দ্বারা আবৃত করে। …….. তাহারা যেন তাহাদিগের গোপন আভরণ প্রকাশের উদ্দেশ্যে সজোরে পদক্ষেপ না করে” (সূরা নূর ও ৩০-৩১)।
পুরুষ কর্তৃক নারীর প্রতি দৃষ্টিপাত সম্পর্কে তাবারানী হযরত আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ (রা) হইতে বর্ণনা করিয়াছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন, আল্লাহ তায়ালা বলিয়াছেন : দৃষ্টিপাত শয়তানের একটি বিষাক্ত শর। যে ব্যক্তি মনের চাহিদা সত্বেও দৃষ্টি ফিরাইয়া লয় আমি তাহার পরিবর্তে সুদৃঢ় ঈমান দান করিব, যাহার মিষ্টতা সে অন্তরে অনুভব করিবে মাআরেফুল কোরআন, পৃ. ৯৩৭)। সহীহ মুসলিমে হযরত জারীর ইবন আবদুল্লাহ (রা) বাজালী (রা) হইতে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর উক্তি বর্ণিত আছে যে, ইচ্ছা ছাড়াই হঠাৎ কোন বেগানা নারীর উপর দৃষ্টি পতিত হইলে সেই দিক হইতে দৃষ্টি ফিরাইয়া লও (মাআরেফুল কোরআন, পৃ. ৯৩৭)।
নারী কর্তৃক পুরুষের প্রতি দৃষ্টিপাত সম্পর্কে ফকীহগণের মধ্যে মতভেদ রহিয়াছে। একদল ফকীহ বলেন, নারীও কোন পুরুষের প্রতি দৃষ্টিপাত করিবে না। তাহাদের দলীল হযরত উম্মে সালামা ও হযরত মায়মুনা (রা) কর্তৃক বর্ণিত হাদীস। রাসূলুল্লাহ (সা)-এর উপস্থিতিতে অন্ধ সাহাবী হযরত আবদুল্লাহ ইবন উম্মে মাকতূম প্রবেশ করিলে রাসূলুল্লাহ (সা) উম্মে সালামা ও মায়মূনা (রা)-কে পর্দা করিতে নির্দেশ দিয়াছিলেন। যাহারা নারী কর্তৃক পুরুষদের প্রতি দৃষ্টিপাত বৈধ বলেন, তাহার রাসূলুল্লাহ (সা) হযরত আয়েশাকে হাবশী যুকবদের ঈদের দিন সামরিক কুজকাওয়াজ দেখাইবার হাদীস দলীল হিসাবে পেশ করিয়াছেন।
৯৪৩
ধারা-১৪১৬ বিতর্ক অবসানে সহযোগিতা করিবার অধিকার নারী বিতর্ক অবসানে উদ্যোগ নিতে পারে।
বিশ্লেষণ
শরীয়াতের কোন বিষয় লইয়া যদি বিতর্ক সৃষ্টি হয় তবে উক্ত বিতর্ক অবসানকল্পে নারীও ভূমিকা রাখতে পারে। যেমন বুখারী ও মুসলিমে এ বিষয়ে উল্লেখ করা হইয়াছেঃ
عن أم الفضل بنت الحارث رضی الله عنها أن ناسا اختلفوا عندها يوم عرفة في صوم النبي ع فقال بعضهم هو صائم وقال بعضهم ليس بصائم فارسلت اليه بقدح لبن وهو واقف على بعيره
•443 “উম্মুল ফজল বিনতুল হারিস বলিয়াছেন, কতিপয় লোক আরাফার দিন রাসূলুল্লাহ (সা)-এর সওম পালন সম্পর্কে মতভেদ করিল। কেহ বলিল, তিনি সাওম অবস্থায় আছেন আবার কেহ তাহা অস্বীকার করিল। তখন আমি তাহার খেদমতে এক পেয়ালা দুধ পাঠাইয়া দিলাম। তিনি উটের পিঠে দাঁড়ানো অবস্থায় দুধ পান করিলেন”।২৮৫
ধারা-১৪১৭ স্বামীর সহিত তর্ক-বিতর্ক করিবার অধিকার স্ত্রী স্বামীর সহিত প্রয়োজনে বিতর্ক, আলোচনা এবং যুক্তি প্রদর্শন করিতে পারিবে।
বিশ্লেষণ
পারিবারিক অথবা যে কোন বৈধ প্রয়োজনে স্ত্রী তাহার স্বামীর সহিত বিতর্ক, আলোচনা এবং যুক্তি প্রদর্শন করিতে পারিবে। বুখারী ও মুসলিমে উল্লেখ আছে?
عن عمر بن الخطاب رضي الله عنه قال وكنا معشر قريش نغلب النساء فلما قدمنا على الانصار اذا قوم تغلبهم فطفق نساناياخذنا من ادب نساء الانصار فصخبت على امرأتي
৯৪৪
فراجعتنى فانكرت ان تراجعني قالت ولم تنكر ان اراجعك فوالله آن ازواج النبي له ليراجعنه وان احداهن لتهجره اليوم حتی
• 13 £5 JU “হ্যরত উমার (রা) হইতে বর্ণিত। তিনি বলিয়াছেন, আমরা কুরাইশগণ মেয়েদের উপর কর্তৃত্ব বজায় রাখিতাম। ইহার পর আমরা আনসারদের সংস্পর্শে আসিলাম। তাহাদের মেয়ে লোকেরা পুরুষদের উপর কর্তৃত্ব বজায় রাখিত। ফলে আমাদের মেয়েরাও আনসারদের মেয়েদের স্বভাব গ্রহণ করিতে আরম্ভ করিল। ইহার পর আমার স্ত্রী আমার সহিত তর্ক-বিতর্ক করিতে লাগিল, আর আমি ইহা অপছন্দ করিতে লাগিলাম। ইহাতে আমার স্ত্রী আপত্তি করিয়া বলিল, আপনি কেন ইহাকে অপছন্দ করিবেন? আল্লাহর শপথ! রাসূলুল্লাহ (সা)-এর স্ত্রীগণও তাঁহার সহিত তর্ক-বিতর্ক করেন। এমনকি তাহাদের একজন তো অভিমান করিয়া সারা দিন ধরিয়া কথাবার্তা বন্ধ করিয়া দিয়াছিল। হযরত উমার (রা) বলিলেন, এই ঘটনায় আমি খুবই শঙ্কিত হইলাম”।২৮৬
হাফেজ ইবন হাজার আসকালানী বলেন, হাদীসে নারীদের উপর অধিকতর চাপ প্রয়োগকে নিন্দা করা হইয়াছে। কেননা রাসূলুল্লাহ (সা) কুরাইশগণের নীতি বর্জন করিয়া স্ত্রীদের ক্ষেত্রে আনসারদের নীতি অবলম্বন করিয়াছিলেন। ২৮৭
বুখারীর অপর এক বর্ণনায় আছে : একদা আমি (উমার) কোন একটি বিষয়ে চিন্তা করিতেছিলাম। এমন সময় আমার স্ত্রী আসিয়া বলিল, আপনি যদি এই রকম করিতেন তবে ভাল হইবে না। আমি তাহাকে বলিলাম, তোমার এইখানে কি কাজ? আমার কাজে নাক গলাইবার কোন প্রয়োজন নাই। জবাবে সে বলিল, হে ইবন খাত্তাব! আপনার আচরণে আমি বিস্মিত হইলাম। আপনি চান না আপনার সহিত কেহ তর্ক বিতর্ক করুক। অথচ আপনার মেয়ে হাফসা রাসূলুল্লাহ (সা)-এর সহিত তর্ক-বিতর্ক করে, এমনকি তিনি কোন কোন দিন রাগ করেন।২৮৮
ধারা-১৪১৮ দুধমাতার সম্মান পাওয়ার অধিকার সন্তান হইতে দুধমাতার সম্মান প্রাপ্তির অধিকার রহিয়াছে।
বিশ্লেষণ
মাতার মত দুধমাতার প্রতিও সম্মান প্রদর্শন করিতে হইবে। এই সম্পর্কে আমরা রাসূলুল্লাহ (সা)-এর আম্দর্শ অনুসরণ করিতে পারি। রাসূলুল্লাহ (সা)-এর
৯৪৫
দুধমাতার প্রতি ভক্তি-শ্রদ্ধার কথা উল্লেখ করিয়া ইমাম বুখারী ও মুসলিম হাদীস পেশ করিয়াছেন :
عن انس ان الرجل كان يجعل للنبى ع النخلات حتى افتتح قريظة والنضير وان اهلی امرونی آن اتى النبي ع فاسئله الذي كانوا اعطوه او بعضه وكان نبي الله و قد اعطاه ام ایمن فجائت ام ایمن فجعلت الثوب في عنقي تقول كلا والذي لا اله الا هو
يقول لك كذالك وتقول
لايعطيكهم وقد اعطانيها والنبي كلا والله حتى اعطاها حسبت انها قال عشر امثاله (رواه البخاري والمسلم) .
“হযরত আনাস (রা) হইতে বর্ণিত। তিনি বলিয়াছেন, (মদীনায় আগমনের পর) রাসূলুল্লাহ (সা)-এর ব্যয়ভার বহনের জন্য হাদিয়া স্বরূপ লোকেরা খেজুর গাছ। প্রদান করিত। বনু কুরাইজা ও বনু নজীর গোত্রদ্বয়ের উপর বিজয় অর্জন পর্যন্ত এভাবে চলিতে থাকে। আমার পরিবার-পরিজনের পক্ষ হইতে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নিকট খেজুর গাছ ফেরত চাহিবার জন্য তাহারা আমাকে পাঠাইলেন। কিন্তু রাসূলুল্লাহ (সা) পূর্বেই সেগুলিকে উম্মে আয়মান (রা)-কে দান করিয়া দিয়াছেন। তখন উম্মে আয়মান (রা) আমার গলায় কাপড় জড়াইয়া বলিতে লাগিলেন, সেই মহান সত্তার শপথ যিনি ছাড়া আর কোন ইলাহ নাই! কখনও তিনি তাহা তোমাকে দিতে পারেন না। তিনি এগুলি আমাকেই দান করিয়াছেন। অপরদিকে রাসূলুল্লাহ (সা) উম্মে আয়মানকে বলিলেন, তোমাকে অনুরূপ জিনিস দিব। তিনি বলিলেন,
, তাহা কখনও হইতে পারে না। আনাস (রা) বলেন, আমার মনে হয় রাসূলুল্লাহ (সা) তাহাকে তাহার দশ গুণ দিব বলিলেন”।২৮৯
ইহা ছাড়াও হযরত (সা) তাহার দুধমাতা হযরত হালিমা সাদিয়ার প্রতিও যথার্থ সম্মান প্রদর্শন করিতেন। ইমাম আবু দাউদ হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন?
عن ابي الطفيل قال رأيت النبي ع يقسم لحما الجعرانة
ل فبسط لها رداءه
……… اذا افبلت امرأة حتى دنت الى النبي فجلست عليه فقلت من هي قالوا هذه أمه التي ارضعته .
“আবু তুফাইল (রা) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা)-কে জিরানায় গোশত বণ্টন করিতে দেখিলাম। এমন সময় এক মহিলা রাসূলুল্লাহ (সা)-এর খুব নিকটে
৯৪৬
আসিলেন। তখন তিনি তাহার সম্মানার্থে নিজের চাদর বিছাইয়া দিলেন এবং আগন্তুক মহিলা উহাতে বসিলেন। আমি জিজ্ঞাসা করিলাম, এই মহিলা কে? লোকেরা বলিল, ইনি তাঁহার দুধমাতা”।২৯০
ধারা-১৪১৯
সুপারিশ প্রত্যাখ্যানের অধিকার নারী সুপারিশ প্রত্যাখ্যান করিতে পারিবে।
বিশ্লেষণ
যেভাবে নারী সুপারিশ গ্রহণ করিতে পারে অনুরূপভাবে নারী সুপারিশ প্রত্যাখ্যানও করিতে পারে। এ সম্পর্কে আমরা রাসূলুল্লাহ (সা) কর্তৃক হযরত বারীরা (রা)-কে সুপারিশ করিবার ও বারীরা কর্তৃক তাহা প্রত্যাখানের উদাহরণ পেশ করিতে পারি। যেমন বুখারীতে উল্লেখ আছে?
عن ابن عباس ان زوج بريرة كان عبدا يقال له مغيث كانی انظر اليه يطوف خلفها يبكي ودموعه تسيل على لحيته فقال النبي عه لعباس ألا تعجب من حب مغيث بريرة ومن بغض بريرة مغيئا فقال النبي ة لو راجعته قالت يا رسول الله تأمرني قال انما اشفع قالت فلا حاجة لي فيه (رواه البخاری).
“হযরত আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস (রা) হইতে বর্ণিত। মুগীছ নামে একজন ক্রীতদাস বারীরার স্বামী ছিল। আমি যেন তাহাকে দেখিতে পাইতেছি সে বারীরার পিছনে কাঁদিয়া কাঁদিয়া ঘুরিতেছ এবং অশ্রুতে তাহার দাড়ি ভিজিয়া যাইতেছিল তখন রাসূলুল্লাহ (সা) আব্বাস (রা)-কে বলিলেন, আপনি বারীরার প্রতি মুগীছের ভালবাসা আর মুগীছের প্রতি বারীরার অনীহা দেখিয়া আশ্চর্য হইতেছেন না? তিনি বারীরাকে বলিলেন, তুমি যদি পুনরায় তাহাকে স্বামী হিসাবে গ্রহণ করিতে? বারীরা বলিলেন, ইহা কি আপনার নির্দেশ, হে আল্লাহর রাসূল? তিনি বলিলেন : না, বরং ইহা তোমার প্রতি আমার সুপারিশ। বারীরা বলিলেন, তাহার নিকট আমার কোন প্রয়োজন নাই”।২৯১
হাফেজ ইবন হাজার বলেন, বারীরার বক্তব্য “আপনি কি আমাকে আদেশ করিতেছেন” এই কথার দ্বারা ইহা প্রতীয়মান হয় যে, বারীরা জানিতেন যে,
৯৪৭
রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নির্দেশ শিরোধার্য ও অবশ্য পালনীয়। তিনি যখন প্রস্তাব পেশ করিলেন, বারীরা তখন ব্যাখ্যা চাহিলেন, ইহা কি আদেশ যাহা অবশ্য পালনীয়, না কি পরামর্শ যাহা গ্রহণ বা বর্জনের স্বাধীনতা রহিয়াছে। হাফেজ ইবন হাজার আরও বলিয়াছেন, অবশ্য পালনীয় ব্যাপার ছাড়া পরামর্শদাতার পরামর্শ প্রত্যাখ্যান করা বৈধ। যে ব্যাপারে কেবল ক্ষতি কিংবা সমস্যা নাই সে ব্যাপারে বিচারকের বাদী-বিবাদীর কাছে দয়া প্রদর্শনের সুপারিশ করা মুস্তাহাব। সুপারিশকারী যতই মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তি হউক না কেন, পরামর্শ গ্রহণ না করিলে তাহাকে তিরস্কার করা কিংবা ক্রোধ প্রকাশ করা যাইবে না।২৯২
ধারা-১৪২০
মত বিনিময়ের অধিকার। নারী পুরুষের সহিতমত বিনিময় করিতে পারিবে।
বিশ্লেষণ
যে কোন বিষয়ে নারী পুরুষের সহিত মত বিনিময় করিতে পারিবে। এই সম্পর্কে ইমাম বুখারী উম্মে ইয়াকূব ও হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা)-এর ঘটনার কথা উল্লেখ করিয়াছেন। হযরত ইবন মাসউদ (রা) এই কথার ঘোষণা দিলেন যে, যাহারা আল্লাহ প্রদত্ত চেহারাকে বিভিন্নভাবে বিকৃত করে তাহাদের উপর আল্লাহ্র লানত বর্ষিত হইবে। এই কথা যখন বনী আসাদ গোত্রীয় উম্মে ইয়াকুব নামক জনৈক মহিলার নিকট পৌঁছায় তখন উক্ত মহিলা হযরত ইবন মাসউদ (রা)-এর নিকট আসিয়া বলিল :
انه بلغني انك لعنت كيت وكيت فقال ومالي لا العن من لعن رسول الله ؟ ومن هو في كتاب الله فقالت لقد قرأت ما بين اللوحين فما وجدت فيه ما تقول قال لئن كنت قرأتيه لقد وجدتيه اما قرأت وما اتكم الرسول فخذوه ومانهكم عنه فانتهوا قالت بلى قال فانه قد نهى عنه قالت فانی أری اهلك يفعلونه قال فاذهبی فانظرى فذهبت فنظرت فلم تر من حاجتها شيئا فقال لو كانت
• (AJI o/30) ৭4: li4 “আমি জানিতে পারিয়াছি যে, আপনি এব্যাপারে লানত বর্ষণ করিয়াছেন। ইবন মাসউদ বলিলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) যাহার উপর লানত বর্ষণ করিয়াছেন এবং আল্লাহর
৯৪৮
কিতাবে যাহার প্রতি লানত বর্ষণ করা হইয়াছে, তাহার উপর আমি লানত বর্ষণ করিব না কেন? তখন মহিলাটি বলিলেন, আমি তো কুরআন মজীদ পাদ্যোপান্ত পড়িয়াছি। কিন্তু উহাতে তো আপনি যাহা বলিতেছেন তাহা পাই নাই। আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ বলিলেন, তুমি যদি মনোযোগ দিয়া তাহা পড়িতে তাহা হইলে তুমি অবশ্যই উহা পাইতে। তুমি কি কুরআন মজীদ পড় নাই : “রাসূল যাহা তোমাদেরকে দিয়াছেন, তাহা গ্রহণ কর এবং যাহা করিতে নিষেধ করিয়াছেন তাহা হইতে বিরত থাক (৫৯ : ৭)?” মহিলাটি বলিল, হাঁ, নিশ্চয়। ইবন মাসউদ (রা) বলিলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) ঐ কাজ করিতে নিষেধ করিয়াছেন। তখন মহিলাটি বলিল, আমার মনে হয় আপনার স্ত্রীও এই কাজ করেন। তিতি বলিলেন, তুমি আমার ঘরে গিয়া ভাল করিয়া দেখ। মহিলাটি গিয়া ঐসব কিছুই দেখিতে পাইল
। তখন আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ (রা) বলিলেন, যদি আমার স্ত্রী ঐসব করিত তাহা হইলে তাহার সহিত আমার বৈবাহিক সম্পর্ক থাকিত না”।২৯৩
হাফেজ ইবন হাজার আসকালানী বলিয়াছেন, প্রকৃতপক্ষে উক্ত মহিলা আবদুল্লাহ ইবন মাসউদের স্ত্রীকে অংকনকৃত অবস্থায় দেখিয়াছিলেন। কিন্তু ঘটনাটি এইভাবে ঘটিয়াছিল যে, হযরত আবদুল্লাহ্ স্ত্রীকে ঐ অবস্থায় দেখিয়া তাহার প্রতিবাদ করিয়াছিলেন। ফলে তাহার স্ত্রী তখনই অংকিত চিহ্নগুল মুছিয়া ফেলিয়াছিলেন। কাজেই উম্মে ইয়াকূব তাহা আর দেখিতে পান নাই। ২৯৪
ধারা-১৪২১
. ভুল শুধরানোর অধিকার নারীর অন্যের ভুল সংশোধনের অধিকার রহিয়াছে।
বিশ্লেষণ
কোন বিষয়ে যদি পুরুষের চেয়ে নারীর অধিক জ্ঞান থাকে তবে সেক্ষেত্রে জ্ঞানী নারী পুরুষদের ভুল শুধরাইয়া দিতে পারে। এই সম্পর্কে আমরা হযরত আয়েশা (রা)-এর উদাহরণ পেশ করিতে পারি। মুসলিম শরীফে উল্লেখ আছে, “উবাইদুল্লাহ ইবন উমাইর হইতে বর্ণিত। তিনি বলিয়াছেন, আয়েশা (রা)-র নিকট এই খবর পৌঁছাইল যে, আবদুল্লাহ ইবন আমর গোছল করিবার সময় মেয়েদের চুলের ঝুটি খুলিয়া ফেলিবার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলিলেন, ইবন আমরের ব্যাপারে অবাক হইতে হয়। তিনি গোসল করিবার সময় মেয়েদের চুলের ঝুটি
৯৪৯
খুলিয়া ফেলিবার নির্দেশ দিয়াছেন। তিনি কি মেয়েদের মাথা ন্যাড়া করিতে বলেন? অথচ আমি ও রাসূলুল্লাহ (সা) একসাথে গোসল করিতাম একই পাত্র হইতে পানি লইয়া এবং আমার মাথায় আমি তিনবারের বেশি পানি ঢালিতাম না”।২৯৫
আমরাহ বিনতে আবদুর রহমান বলিয়াছেন, যিয়াদ ইবন আবীহি হযরত আয়েশা (রা)-এর নিকট এই বলিয়া পত্র লিখিল যে, আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস বলিয়াছেন, যে ব্যক্তি কুরবানীর জন্তু (মক্কায়) প্রেরণ করিল, তাহা কুরবানী না করা পর্যন্ত ঐ ব্যক্তির জন্য সেসব কাজ করা হারাম যাহা হাজীদের জন্য হারাম। এই পত্র পাইয়া হযরত আয়েশা (রা) বলিলেন, ইবনে আব্বাস যাহা বলিয়াছেন প্রকৃত ব্যাপার তাহা নহে। আমি নিজ হাতে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর কুরবানীর পশুর কিলাদা (গলার মালা) পাকাইতাম এবং রাসূলুল্লাহ (সা) নিজ হাতে তাহা পশুর গলায় লটকাইয়া আমার পিতার সহিত (মক্কায় প্রেরণ করিয়াছেন। কিন্তু ইহার পরেও তাহা কুরবানী না করা পর্যন্ত আল্লাহর হালাল করা কোন জিনিস রাসূলুল্লাহ (সা)-এর প্রতি হারাম হয় নাই (বুখারী)।২৯৬
মুজাহিদ (র) বলেন, আমি এবং উরওয়া ইবন যুবায়ের মসজিদে প্রবেশ করিয়া দেখিতে পাইলাম, আবদুল্লাহ ইবন উমার (রা) হযরত আয়েশা (রা)-এর হুজরার পাশে বসিয়া আছেন। আর লোকজন মসজিদের মধ্যে চাশতের নামায আদায় করিতেছে। আমরা তাহাকে লোকদের নামায সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করিলাম। তিনি বলিলেন, বিদআতা উরওয়া তাহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, মহানবী (সা) কতবার উমরা করিয়াছেন? ইব্ন উমার (রা) বলিলেন, চারবার। উহার মধ্যে একবার রজব মাসে। আমরা তাহার এই কথার প্রতিবাদ করা পছন্দ করিলাম না। মুজাহিদ বলেন, আমরা কামরার মধ্যে উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশার দাঁতনের শব্দ শুনিতে পাইলাম। উরওয়া ডাকিলেন, হে আম্মাজান, হে উম্মুল মুমিনীন! আপনি আবু আবদুর রহমানের কথা শুনিয়াছেন? তিনি বলিলেন, কি বলিয়াছে? তিনি বলিলেন, ইবন উমার বলিতেছেন, রাসূলুল্লাহ (সা) চারবার উমরাহ করিয়াছেন এবং একবার রজব মাসেও উমরাহ করিয়াছেন। এই কথা শুনিয়া আয়েশা (রা) বলিলেন, আবু আবদুর রহমানের প্রতি আল্লাহ রহম করুন। রাসূলুল্লাহ (সা) এমন কোন উমরাহ পালন করেন নাই যাহার সহিত ইবনে উমার ছিলেন না। তবে তিনি রজব মাসে কখনও ‘উমরাহ করেন নাই।২৯৭
৯৫০
ধারা-১৪২২
নেতার বক্তব্য শুনিবার অধিকার নারীগণ নেতার বক্তব্য শ্রবণ করিতে পারিবে।
বিশ্লেষণ
সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় ইত্যাদি বিষয়ে নেতাহাদের বক্তব্য শুনিবার জন্য নারী তাহাদের অনুষ্ঠানে যোগদান করিতে পারে। এই বক্তব্য শ্রবণের অধিকার সম্পর্কে ইমাম মুসলিম হাদীস উল্লেখ করিয়াছেন?
“রাসূলুল্লাহ (সা)-এর স্ত্রী হযরত উম্মে সালামা (রা) বলেন, এক দিনের ঘটনা। এক মহিলা আমার চুল আচড়াইয়া দিতেছিল। এমন সময় আমি রাসূলুল্লাহ (সা)-কে মিম্বারে দাঁড়াইয়া ভাষণ দিতে শুনিলাম। তিনি বলিতেছেন? হে মানবমণ্ডলী! আমি তখন মহিলাকে বলিলাম, তুমি সরিয়া যাও। মহিলা বলিল, রাসূলুল্লাহ (সা) তো শুধু পুরুষদের ডাকিয়াছেন, নারীদের নহে। আমি বলিলাম,
আমিও তো মানবজাতির অন্তর্ভুক্ত” (২৯৮
বুখারীতে উল্লেখ আছে যে, হযরত উম্মে আতিয়া (রা) বলিয়াছেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা)-কে বলিতে শুনিয়াছি, সাবালিকা ও সম্রমশীলা ও ঋতুবতী মহিলারা ঈদগাহে যাইবে এবং নেক কাজ ও ঈমানদারদের দোয়ায় শরীক হইবে, তবে ঋতুবতী মহিলারা নামাযের স্থান হইতে দূরে থাকিবে। হাফেজ ইবন হাজার আসকালানী বলেন, বর্ণিত হাদীস হইতে বুঝা যায় যে, যুবতী ও ঋতুবতী মেয়েরা ঈদগাহে যাওয়ার মাধ্যমে বিরাট সমাবেশ করিবার উদ্দেশ্য ইসলামের পরিচয় ও প্রতীক তুলিয়া ধরা এবং নির্বিশেষে সবার কল্যাণ লাভ করা।২৯৯
হযরত জাবির ইবন আবদুল্লাহ (রা) বলিয়াছেন, রাসূলুল্লাহ (সা) ঈদুল ফিতরের দিন ঈদের নামায পড়িতেন। তিনি প্রথমে নামায পড়িলেন, তাহার পর খুবতা দিলেন, খুতবা শেষ করিয়া তিনি মহিলাদের নিকট গিয়া তাহাদেরকে উপদেশ দিলেন। সে সময় তিনি বিলালের উপর ভর দিয়াছিলেন। বিলাল তাহার কাপড় বিছাইয়া রাখিয়াছিলেন, আর মহিলারা তাহার মধ্যে সদাকার অর্থ ফেলিতেছিলেন।৩০০
হাফেজ ইবন হাজার সদাকার ক্ষেত্রে বলিয়াছেন, ঐ সকল মহিলা সমাবেশে অংশগ্রহণ করিয়া নেতার বক্তব্য শ্রবণ করিয়া উহাতে উদ্বুদ্ধ হইয়া দান-খয়রাত
করিয়াছিলেন। ইহাতে এই ইংগিত পাওয়া যায় যে, দীনের ক্ষেত্রে তাহাদের অবস্থান ছিল সুউচ্চ এবং রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নির্দেশ বাস্তবায়নের প্রতিও তাহাদের তীব্র
আকাংখা ছিল।৩০১
ধারা-১৪২৩
বিধর্মী মাতার অধিকার সন্তানের নিকট হইতে ভাল ব্যবহার পাইবার অধিকার যে কোন মাতার রহিয়াছে, বিধর্মী মাতারও।
বিশ্লেষণ
মাতা বিধর্মী হইলেও তাহার প্রতি খারাপ আচরণ করা যাইবে না। এই সম্পর্কে ইমাম মুসলিম (র) তাহার গ্রন্থে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর একটি হাদীস উল্লেখ করিয়াছেন।
عن أبي هريرة رضي الله عنه قال نت أدعو امي إلى الإسلام وهي مشركة فدعوتها يوما فأسمعتني في رسول الله ما اكره فأتيت رسول الله له وانا ابكي قلت يا رسول الله انی کنت ادعو امي الى الاسلام فتابی علی فدعوتها فاسمعتني فيك ما اكره فادعو الله أن يهدی ام ابي هريرة فقال رسول الله له اللهم اهد ام ابي هريرة فخرجت امي الباب ثم قالت يا أبا هريرة اشهد ان لا اله
…………… lows ১৭e L~ 49 4L২। “হযরত আবু হুরায়রা (রা) বলেন, আমার মাতা মুশরিক ছিলেন বলিয়া আমি তাহাকে ইসলাম গ্রহণের আহবান জানাইতাম। এমনিভাবে একদিন তাহাকে ইসলাম গ্রহণের দাওয়াত দিলে সে আমার সামনে রাসূলুল্লাহ (সা)-কে এমনভাবে গালিগালাজ করিল যাহা আমার নিকট ভীষণ খারাপ লাগিল। ইহার পর আমি ক্রন্দনরত অবস্থায় রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নিকট আসিয়া বলিলাম। “হে আল্লাহর রাসূল! আমি আমার মাতাকে ইসলাম গ্রহণের দাওয়াত দেই। আর সে তাহা প্রত্যাখ্যান করে। আজ আমি তাহাকে দাওয়াত দিলে সে এমনভাবে আপনাকে গালমন্দ করিল, যাহা আমার নিকট ভীষণ খারাপ লাগিয়াছে। তাই আপনি তাহার জন্য একটু দোয়া করিবেন যেন আল্লাহ তাহাকে হেদায়াত দান করেন। রাসূলুল্লাহ (সা) বলিলেন, হে আল্লাহ! আবু হুরায়রার মাতাকে তুমি হেদায়াত দান কর। মায়ের
৯৫২
জন্য রাসূলুল্লাহ (সা) -এর দোয়া শুনিয়া আমি খুশিমনে বাড়ীতে ফিরিয়া আসিলাম। আমি বাড়ীতে আসিলে আমার মা ঘরের দরজা খুলিয়া দিলেন এবং বলিলেন, হে আবু হুরায়রা! আমি সাক্ষ্য দিতেছি যে, আল্লাহ ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই। আমি আরও সাক্ষ্য দিতেছি যে, মুহাম্মাদ (সা) আল্লাহর বান্দা ও রাসূল”।৩০২
হযরত আসমা বিনতে আবু বাকর (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা)-এর যুগে আমার মা আমার ইসলাম গ্রহণের পর এক সময় আমার নিকট আসিলেন। তখনও তিনি মুশরিক ছিলেন। (তাহার সহিত কি ধরনের আচরণ করিতে হইবে তাহা জানিবার জন্য) আমি রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নিকট গিয়া বলিলাম, আমার মাতা আমার নিকট আসিয়াছেন। তিনি আমাকে অত্যন্ত স্নেহ করেন। সুতরাং আমি কি তাহার সহিত উত্তম আচরণ করিব? তিনি বলিলেন : হ, তাহার সহিত উত্তম আচরণ কর।৩০৩
ধারা-১৪২৪ বিবাহের পাত্র নির্বাচনের জন্য অপরকে ক্ষমতা
দেওয়ার অধিকার নারী তাহার নিজের বিবাহের পাত্র নির্বাচনের জন্য অপরকে ক্ষমতা প্রদান করিতে পারিবে।
বিশ্লেষণ
যে কোন বালেগা নারী তাহার বিবাহের পাত্র নির্বাচনের জন্য যে কোন ব্যক্তিকে ক্ষমতা প্রদান করিতে পারে। এই সম্পর্কে সহীহ মুসলিমে বলা হইয়াছে, “হযরত ফাতিমা বিনতে কায়েস (রা) বলেন, আমি বিধবা হওয়ার পর আবদুর রহমান ইবন আওফ কতিপয় (রা) সাহাবীর উপস্থিতিতে আমাকে বিবাহের প্রস্তাব দিলেন। অপরদিকে রাসূলুল্লাহ (সা) তাহার মুক্তগোলাম উসামা ইবন যায়েদের জন্য আমাকে বিবাহের প্রস্তাব দিলেন। ইহার আগেই আমার নিকট রাসূলুল্লাহ (সা)-এর হাদীস বর্ণনা করা হইয়াছে। তিনি বলিয়াছেন, যে ব্যক্তি আমাকে ভালবাসে উসামাকেও তাহার ভালবাসা উচিত। রাসূলুল্লাহ (সা) এই ব্যাপারে যখন আমার সহিত আলাপ-আলোচনা করিলেন, তখন আমি রাসূলুল্লাহ (সা)-কে বলিলাম, সেটি আপনার ব্যাপার, আপনি যাহার সহিত ইচ্ছা আমার বিবাহ দিতে পারেন। অন্য বর্ণনায় আছে, তিনি বলিলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) আমাকে বলিলেন, তোমার ইদ্দাত পালন শেষ হইলে তুমি আমাকে জানাইবে। তাই ইদ্দাতকাল শেষ হইলে আমি
তাঁহাকে জানাইলাম। তাহার পর মুআবিয়া (রা), আবুল জাহাম (রা) এবং উসামা ইবন যায়েদ (রা) ইহারা সকলেই পর্যায়ক্রমে তাহাকে বিবাহের প্রস্তাব দিলেন। রাসূলুল্লাহ (সা) বলিলেন, শোন, মুআবিয়া হইতেছে একজন নিঃস্ব মানুষ। তাহার সম্পদ বলিতে কিছু নাই। আর আবুল জাহম (তাহার অভ্যাস হইতেছে), সে স্ত্রীদের প্রহার করে। কিন্তু (সার্বিক বিবেচনায়) উসামা ইবন যায়েদই উত্তম। তাহার পর তিনি (ফাতিমা বিনতে কায়েস) আমতা আমতা করিয়া বলিলেন, উসামা, উসামা। রাসূলুল্লাহ (সা) তাহাকে বলিলেন, আল্লাহ ও তাঁহার রাসূলুল্লাহ (সা)-এর আনুগত্য করাই তোমার জন্য শ্রেয়। ফাতেমা বিনতে কায়েস বলেন, তাহার পর উসামা ইবন যায়েদের সহিত আমার বিবাহ হয় এবং অত্যন্ত সুখ-স্বচ্ছন্দেই দিন কাটিয়া যাইতেছে।৩০৪ অপর এক বর্ণনায় আছে। তারপর আমাকে উসামার সাথেই বিবাহ দেওয়া হইল এবং আল্লাহ আমাকে যায়েদের ছেলের মাধ্যমেই সম্মান ও মর্যদা দান করিলেন।০৫ অপর বর্ণনায় আছে, তারপর আমি তাহাকে বিবাহ করিলাম। আর ইহাতেই আল্লাহ পাক যথেষ্ট কল্যাণ ও স্বাচ্ছন্দ দান করিলেন।৩০৬
ধারা-১৪২৫ নিরাপত্তা কর্মী হিসাবে নিয়োগ লাভের অধিকার নারী নিরাপত্তা কর্মী হিসাবে নিয়োগলাভ করিতে এবং আত্মরক্ষার্থে নিজের সহিত অস্ত্র রাখিতে পারিবে।
বিশ্লেষণ
নারী নিরাপত্তা কর্মী হিসাবে যে কোন জিনিসপত্রের তত্ত্বাবধানের কাজে নিয়োজিত হইতে পারিবে। এ সম্পর্কে হাদীসে উল্লেখ আছে : “হযরত উম্মে আতীয়া (রা) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা)-এর সহিত সাতটি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করিয়াছি। আমি তাহাদের জিনিসপত্রের তত্ত্বাবধানের জন্য তাঁবুতে থাকিয়া যাইতাম এবং খাদ্য প্রস্তুত করিতাম।৩০৬
নিজের রক্ষার্থে নারীর অস্ত্র রাখা সম্পর্কে হাদীসে আছে “আনাস (রা) হইতে বর্ণিত। হুনাইন যুদ্ধের দিন উম্মে সুলাইম (রা) ছুরি সঙ্গে লইয়াছিলেন। রাসূলুল্লাহ (সা) তাহাকে বলিলেন, এই ছুরি কিজন্য? তিনি বলিলেন, আমি এইজন্য ছুরি সঙ্গে লইয়াছি যাহাতে কোন মুশরিক আমার দিকে আগাইয়া আসিলে আমি তাহার পেট এই ছুরি দ্বারা চিরিয়া ফেলিতে পারি। এই কথা শুনিয়া রাসূলুল্লাহ (সা) হাসিতে থাকিলেন।৩০৭
৯৫৪
ধারা-১৪২৬
নারীর নির্জনে থাকিবার অধিকার নারীর নির্জনে থাকিবার অধিকার রহিয়াছে।
বিশ্লেষণ
নারীর সহিত নির্জনে একাকী সাক্ষাত করিতে শরীয়াতে নিষেধ করা হইয়াছে। এই সম্পর্কে ইমাম বুখারী হাদীস উল্লেখ করিয়াছেন?
عن ابن عباس رضي الله عنه عن النبي ع قال لآيخلون رجل
بامرأة الآ مع ذي محرم (رواه البخاري ) .
“হযরত ইবন আব্বাস (রা) বলিয়াছেন, নবী (সা) বলেন, কোন মাহরাম পুরুষের উপস্থিতি ছাড়া কোন পুরুষ কোন মহিলার সহিত নির্জনে সাক্ষাত করিতে পারিবে না”।০৮।
হাফেজ ইবন হাজার আসকালানী বলিয়াছেন : বর্ণিত হাদীসটিতে গায়রে মাহরাম মহিলার সহিত নির্জনে সাক্ষাত করিতে নিষেধ করা হইয়াছে। এই ব্যাপারে
সবাই একমত।
عن انس بن مالك قال جاءت امرأة من الأنصار إلى النبي ع
فخلابها فقال انكم لأحب الناس الى.
“হযরত আনাস ইবন মালেক (র) বলিয়াছেন, এক আনসারী মহিলা রাসূলুল্লাহ (সা)-এর সহিত একাকী সাক্ষাত করিল। তিনি বলিলেন : আল্লাহর শপথ! মানুষের মধ্যে তোমরাই আমার নিকট সর্বাধিক প্রিয়”।৩০৯
হাফেজ ইবন হাজার বলিয়াছেন, কোন মহিলার সহিত কেহ এমনভাবে একাকী কথা বলিবে না যাহাতে তাহারা উভয়ে মানুষের চোখের আড়াল হইয়া যায়। তাহারা কোন কথা গোপন রাখিতে চাহিলে তাহা যেন শোনা না যায় এমনভাবে বলে। যেমন মহিলারা মানুষের সামনে অনেক কথা বলিতে লজ্জাবােধ করে। তিনি আরও বলিয়াছেন, হাদীস হইতে এই কথারও ইংগিত পাওয়া যায় যে, বিপর্যয়ের আশংকা
থাকিলে গায়রে মাহরামদের সহিত নিরিবিলি কথা বলিলে দীনের কোন ক্ষতি হয় না।৩১০
৯৫৫
দুইজন বা তিনজন পুরুষের কোন মহিলার সহিত সাক্ষাতও নিষিদ্ধ নির্জনের মধ্যে পড়িবে না। যেমন মুসলিম শরীফে উল্লেখ আছে, রাসূলুল্লাহ (সা) বলিয়াছেন, আজকের এই দিনের পরে যেন কোন ব্যক্তি একজন বা দুইজন পুরুষের সহিত ছাড়া স্বামীর অনুপস্থিতিতে কোন মহিলার নিকট না যায়।৩১১
একদল মহিলার সহিত একজন পুরুষের নিরিবিলি সাক্ষাত নিষিদ্ধ নির্জনের আওতায় পড়ে না। কেননা হাদীসে উল্লেখ আছে, একদল মহিলার উপস্থিতিতে একজন পুরুষ তাহাদের কাহাকেও লইয়া বিপর্যয়মূলক কাজ করিতে সক্ষম নহে।৩১২
ধারা-১৪২৭ স্বামীর উপস্থিতিতে সকলের সহিত সাক্ষাতের অধিকার স্বামীর উপস্থিতিতে স্ত্রীর সকলের সহিত সাক্ষাতের অধিকার রহিয়াছে।
বিশ্লেষণ
স্বামীর উপস্থিতিতে এবং তাহার সম্মতি সাপেক্ষে স্ত্রী ভিন্ন-পুরুষের সহিত দেখা সাক্ষাত করিতে পারিবে। স্বামী যখন উপস্থিত থাকে তখন তাহার অনুমতি লইয়া স্ত্রীর সহিত অন্য পুরুষলোক সাক্ষাত করিতে পারে। হযরত আমর ইবনুল আস (রা) হযরত আলী ইবনে আবী তালিব (রা)-র বাড়ীতে গিয়াছিলেন তাহার এক প্রয়োজনে। কিন্তু সেখানে তিনি হযরত আলী (রা)-কে পাইলেন না, কাজেই ফিরিয়া আসিলেন এবং আবার গেলেন কিন্তু দ্বিতীয়বারও তাহাকে পাইলেন না অথবা তৃতীয়বারও তাহাকে পাইলেন না। অতঃপর হযরত আলী (রা) আসিলেন এবং তাহাকে বলিলেন, তোমার প্রয়োজন যখন আমার স্ত্রীর সাথে ছিল, তখন তাহার নিকট গিয়া তাহা পূর্ণ করিলে না কেন? জবাবে হযরত আমর (রা) বলিলেন, স্বামীদের অনুমতি ছাড়া স্ত্রীদের নিকটে যাইতে আমাদেরকে নিষেধ করা হইয়াছে।৩১৩।
অনুরূপভাবে স্বামী যখন অনুপস্থিত থাকে তখন প্রয়োজন পূরণের জন্য স্ত্রীর নিকট অন্ধর বাড়িতে যাওয়ার অনুমতি না দেওয়ার প্রতিও অত্যধিক গুরুত্বারোপ করা হইয়াছে। হাদীসে বলা হইয়াছে?
لا يدخلن رجل بعد يومي هذا على مغيبة الأ معه رجل او اثنان
: (1 ) “আজিকার দিনের পর কোন ব্যক্তি একজন বা দুইজন পুরুষকে সঙ্গে না। লইয়া স্বামী কাছে নাই এমন স্ত্রীলোকের নিকটে যাইতে পারিবে না”।৩১৪
ধারা-১৪২৮ নারী কর্তৃক দূরাঞ্চলের মুসলমানদের খোঁজ-খবর
লইবার অধিকার নারী দূরাঞ্চলের মুসলমানের খোঁজ-খবর লইতে পারিবে।
বিশ্লেষণ
নারীর তাহার দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের লোকদের সম্বন্ধে সার্বিক খোঁজ-খবর লইবার অধিকার রহিয়াছে। “আবদুর রহমান ইবন শামাসাহ (র) বলিয়াছেন, আমি। একটি বিষয় সম্পর্কে হযরত আয়েশা (রা)-কে জিজ্ঞাসা করিয়া জানিতে আসিলে তিনি জিজ্ঞাসা করিলেন, তুমি কে? আমি বলিলাম, আমি মিসরের অধিবাসী। তিনি বলিলেন, তোমাদের এই লোককে (নূতন নিয়োগকৃত গভর্নর) তোমাদের বিভিন্ন প্রয়োজনে কেমন দেখিতে পাইতেছে? তিনি বলিলেন, আমরা তাহাকে খারাপ কিছু করিতে দেখিতেছি না। আমাদের কোন লোকের উট মারা গেলে তিনি তাহাকে উট দান করেন, ক্রীতদাস মারা গেলে ক্রীতদাস দান করেন এবং দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের অভাব দেখা দিলে তিনি তাহা পূরণ করিয়া দেন। হযরত আয়েশা (রা) বলিলেন, আমার ভাই মুহাম্মাদ ইবন আবু বাকরের সহিত তিনি উত্তম আচরণ করিয়াছেন তাহা সত্ত্বেও আমি আমার এই ঘরে বসিয়া রাসূলুল্লাহ (সা)-কে যে কথা বলিতে শুনিয়াছি তাহা তোমাকে শুনানো হইতে বিরত থাকিব না। তিনি বলিয়াছেন : হে আল্লাহ! যাহার উপর আমার উম্মতের কোন দায়িত্ব অর্পণ করা হইয়াছে সে যদি তাহাদের সহিত কঠোর আচরণ করে, তাহা হইলে তুমি তাহার প্রতি কঠোর হইও। আর যাহার উপর আমার উম্মতের কোন দায়িত্ব দেওয়া হইয়াছে সে যদি তাহাদের প্রতি কোমল আচরণ করে, তবে তুমিও তাহার প্রতি কোমল আচরণ করিও”।৩১৫
عن عائشة بنت طلحة قالت لعائشة وانا في حجرها وكان الناس ياتونها من كل مصر فكان الشيوخ ينتابونی لمكاني منها وكان الشباب يتاخوني فيهدون الى وتكبون الى من الأمصار فاقول العائشة باخالة هذا كتاب فلان وهديته فتقول لي عائشة اي بنته فاجيبيه واثيبه فان لم يكن عندك ثواب اعطتيك فقالت فتعطيني .
৯৫৭
“হযরত আয়েশা বিনতে তালহা (3) বলিয়াছেন, আমি যখন আয়েশা (রা)-র তত্ত্বাবধানে লালিত-পালিত হইয়াছিলাম। বিভিন্ন অঞ্চল ও শহর হইতে লোকজন তাহার নিকট আসিত। আয়েশা (রা)-এর সহিত আমার সম্পর্কের কারণে বৃদ্ধরা আমার নিকট আসিত এবং যুবকেরা আমাকে বােন ডাকিত। সুতরাং সকলেই আমার নিকট উপহার প্রেরণ করিত এবং বিভিন্ন শহর ও অঞ্চল হইতে আমাকে চিঠি লিখিত। আমি আয়েশা (রা)-কে বলিতাম, খালা! ইহা অমুকের চিঠি ও উপহার। তিনি আমাকে বলিতেন, বেটি! তাহাদের পত্রের জবাব দাও এবং উপহারের বিনিময়ে উপহার পাঠাইয়া দাও। তোমার নিকট বিনিময় দেওয়ার মত কিছু না থাকিলে আমি দিব। আয়েশা বিনতে তালহা (রা) বলেন, তিনি আমাকে তাহা দিতেন”।৩১৬
ধারা-১৪২৯ স্ত্রী কর্তৃক স্বামীর কর্মময় জীবন বৃত্তান্ত
বর্ণনার অধিকার স্ত্রী তাহার স্বামীর মহৎ ও অনুসরণযোগ্য কর্মময় জীবন বৃত্তান্ত বর্ণনা করিতে পারিবে।
বিশ্লেষণ
মহৎ ও অনুসরণযোগ্য বিশেষ বিশেষ ব্যক্তিবর্গের জীবনী তথা কর্মপদ্ধতি ও রীতিনীতি অনুসরণের জন্য তাহাদের জীবনের কাজকর্ম সম্পর্কে খোঁজ-খবর লওয়া বা অনুসন্ধান পরিচালনা করা যায় এবং পুরুষের নিকট হইতে যদি তাহাদের কর্মজীবন সম্পর্কে বিস্তারিত জানা সম্ভব না হয়, তবে সেক্ষেত্রে তাহাদের স্ত্রীগণের নিকট হইতে তাহাদের কর্মময় জীবন সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সগ্রহ করা যাইবে এবং তাহাদের স্ত্রীদের জানা সকল তথ্য প্রকাশ করিবার অধিকার থাকিবে। এ সম্পর্কে ইমাম বুখারী হাদীস উল্লেখ করিয়াছেন।
عن أنس بن مالله رضي الله عنه يقول جاء ثلثة رهط إلى بيوت
ازواج النبي صلى الله عليه وسلم ليسئلون عن عبادة النبي و
قد غفر
فلما اخبروا كانهم تقالوها وقالوا وأين نحن من النبي له ماتقدم من ذنبه وما تأخر قال احدهم اما انا فانی اصلى الليل ابدا وقال اخر انا اصوم الدهر ولا افطر وقال اخر انا اعتزل
৯৫৮
النساء فلا اتزوج ابدا فجاء رسول الله ع اليهم فقال انتم الذين قلتم كذا وكذا أما والله اني لأخشاكم الله واتقاكم له لكني أصوم وافطر واصلى وارقد واتزوج النساء فمن رغب عن سنتي فليس
• (৬১ ) • “হযরত আনাস ইবন মালেক (রা) বলিয়াছেন, তিন ব্যক্তির একটি দল নবী (সা)-এর ইবাদত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করিবার জন্য তাঁহার স্ত্রীদের নিকট আসিল। তাহাদেরকে তাঁহার ইবাদত সম্পর্কে অবহিত করা হইলে তাহারা যেন ইবাদতের এই পরিমাণ কম মনে করিল। কিন্তু (পরক্ষণেই আবার) তাহারা বলিল, আমরা রাসূলুল্লাহ (সা)-এর সমকক্ষ হই কি করিয়া? তাহার তো আগের ও পরের সকল গুনাহ ক্ষমা করিয়া দেওয়া হইয়াছে। তাহাদের একজন বলিল, আমি আজীবন সারারাত নামায পড়িব। একজন বলিল, আমি সারা বৎসর রোযা রাখিব, কখনও রোযা ভাঙ্গিব না। অপরজন বলিল, আমি সর্বদা নারী সংশ্রব হইতে দূরে অবস্থান করিব, কখনও বিবাহ করিব না। এমন সময় তাহাদের নিকট রাসূলুল্লাহ (সা) আসিলেন। তিনি বলিলেন, তোমারই সেই সকল লোক যাহারা এইরূপ কথা বলিতেছে। আল্লাহর শপথ! তোমাদের মধে আমিই আল্লাহকে বেশি ভয় করি। কিন্তু আমি রোযা রাখি এবং রোযা রাখায় বিরতিও দেই। রাতে নামায পড়ি আবার দ্রিাও যাই এবং বিবাহও করি। যাহারা আমার এই সকল রীতিনীতি হইতে বিরত থাকে তাহারা আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নহে”।৩১৭
হাফেজ ইবন হাজার আসকালানী (র) বলিয়াছেন, এই হাদীস হইতে জানা যায়, মহৎ ও অনুসরণযোগ্য বড় ব্যক্তিত্বের কর্মপদ্ধতি ও রীতিনীতির অনুসন্ধান চালানো যায় এবং পুরুষদের নিকট হইতে তাহা জানা সম্ভব না হইলে মহিলাদের নিকট হইতে জানিয়া লওয়া বৈধ”।৩১৮
عن علقمة قال سئلت أم المؤمنين عائشة قلت يا ام المؤمنين كيف كان عمل رسول الله له هل كان يخص شيئا من الأيام قالت
(مسلم) .
لا كان عمله ديم وایكم تستطيع عمل رسول الله
“আলকামা (র) বলিয়াছেন, আমি উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা (রা)-কে জিজ্ঞাসা করিলাম, হে উম্মুল মুমিনীন! রাসূলুল্লাহ (সা)-এর আমল কেমন ছিল? তিনি কি ইবাদত-বন্দেগীর জন্য কোন দিন নির্দিষ্ট করিয়া লইতেন? হযরত আয়েশা
৯৫৯
(রা) বলিলেন, না। তাহার ইবাদত হইত স্থায়ী ও বিরতিহীন। আর রাসূলুল্লাহ (সা) যাহা করিতে সমর্থ ছিলেন তোমাদের মধ্যে কে আছে যে, তাহা করিতে পারে”।৩১৯
ধারা-১৪৩০ সালাম ও অভ্যর্থনা জ্ঞাপনের অধিকার নারী ও পুরুষ পরস্পর পারস্পরিক সালাম ও অভ্যর্থনা জ্ঞাপন করিতে পারিবে।
বিশ্লেষণ
নারী কর্তৃক পুরুষকে এবং পুরুষ কর্তৃক নারীকে সালাম দেওয়া বৈধ। সাহল (রা) বলিয়াছেন, জুমআর দিন আমাদের মন খুশিতে ভরিয়া উঠিত। আমি (আবু হাশেম) সাহলকে বলিলাম, জুমআর দিন আপনাদের মন খুশিতে ভরিয়া উঠিত কেন? তিনি বলিলেন, এক বৃদ্ধা মহিলা ছিলেন, তিনি আমাদের জন্য “বুদআ নামক স্থানে চলিয়া যাইতেন এবং সেখানে হইতে গাজর লইয়া ডেকচিতে চড়াইতেন এবং চাউল সহযোগে উহা রন্দন করিতের। আমরা জুমআর নামায শেষে তাহার নিকট গিয়া তাহাকে সালাম দিতাম। তিনি আমাদেরকে তাহা পরিবেশন করিতেন। এই কারণে আমরা খুশি হইতাম। আমরা জুমআর নামাযের পূর্বে খাবার গ্রহণ করিতাম না বা ঘুমাইতামও না।৩২০
عن عائشة رضي الله عنها أن النبي ع قال لها يا عائشة هذا جبريل يقرأ عليك السلام فقالت قلت وعليه السلام ورحمة الله وبركاته ترى ما لا نری (رواه البخاری) .
“হযরত আয়েশা (রা) হইতে বর্ণিত। নবী (সা) তাহাকে বলিলেন, হে আয়েশা! জিবরাঈল তোমাকে সালাম জানাইতেছেন। আয়েশা (রা) বলিলেন, আমিও বলিলাম, ওয়াআলাইহিস সালাম ওয়ারাহমাতুল্লাহ ওয়া বারাকাতুহু (তাহার প্রতিও শান্তি, আল্লাহর রহমত ও কল্যাণ বর্ষিত হউক)। আপনি যাহা দেখিতে পান আমি তাহা দেখিতে পাই না”।৩২১
হাফেজ ইবন হাজার আসকলানী বলেন, “পুরুষ কর্তৃক নারীদের সালাম দেওয়া এবং নারী কর্তৃক পুরুষদের সালাম দেওয়া এই অনুচ্ছেদ শিরোনাম রচনার মাধ্যমে ইমাম বুখারী (র) বর্ণনা করিয়াছেন যে, “আমি এই মর্মে অবহিত হইয়াছি
৯৬০
যে, ইয়াহইয়া ইবন আবু কাছীর পুরুষ কর্তৃক নারীদেরকে সালাম দেওয়া এবং নারী কর্তৃক পুরুষদেরকে সালাম দেওয়া অপছন্দ করেন। কারণ বর্ণিত দুইটি হাদীস দ্বারা নারী-পুরুষ পরস্পরকে সালাম দেওয়া বৈধ প্রমাণিত হয়। [ সহীহ মুসলিমে উম্মে হানী বর্ণিত হাদীসে উল্লেখ আছে, আমি রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নিকট গেলাম। তিনি তখন গোসল করিতেছিলেন। আমি তাঁহাকে সালাম দিলাম।৩২২
ইবনে বাত্তাল মুহাল্লাব হইতে বর্ণনা করিয়াছেন, ফিতনার আশংকা না থাকিলে নারী-পুরুষ পরস্পর সালাম বিনিময় করা বৈধ। ইমাম মালেক যুবতী ও বৃদ্ধা মহিলার মধ্যে পার্থক্য করিয়াছেন শুধুমাত্র ফিতনার আশংকায়। ইমাম মালেকের দলীল হইল হযরত সাহল কর্তৃক বর্ণিত হাদীস। কারণ যে সকল লোক উক্ত মহিলার নিকট যাইতেন তাহাদের কেহই উক্ত মহিলার মাহরাম ছিলেন না।৩২৩
মুসনাদে আহমাদে উল্লেখ আছে, রাসূলুল্লাহ (সা) যখনই মহিলাদের পাশ দিয়া যাইতেন তখন তিনি তাহাদেরকে সালাম দিতেন।৩২৪
ধারা-১৪৩১
মানত মানিবার অধিকার নারী নজর বা মানত মানিতে পারিরে।
বিশ্লেষণ
নারী কর্তৃক বৈধ যে কোন ধরনের ন্যর বা মানত মানা বৈধ এবং উহা পূর্ণ করিবার অধিকার তাহার রহিয়াছে। যেমন নারী নযর বা মানতের নামায আদায় করিতে পারে, দান-সদকার নযর মানিতে পারে ইত্যাদি। হযরত ইবন আব্বাস (রা) বলিয়াছেন, এক মহিলা রোগাক্রান্ত হইয়া পড়িলে বলিল, আল্লাহ যদি আমাকে সুস্থতা দান করেন তাহা হইলে আমি বাড়ী ছাড়িয়া সফরে বাহির হইব এবং বাইতুল মুকাদ্দাসে নামায আদায় করিব। সে সুস্থতা লাভ করিলে সফরের প্রস্তুতি গ্রহণ করিল। অতঃপর সে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর স্ত্রী হযরত মায়মুনার নিকট উপস্থিত হইয়া তাহাকে সালাম দিয়া এই বিষয় অবহিত করিল। তিনি স্ত্রীলোকটিকে বলিলেন, তুমি এইখানেই থাকিয়া যাও, যাহা কিছু পাথেয় সগ্রহ করিয়াছ তাহা খাও এবং রাসূলুল্লাহ (সা)-এর মসজিদে নামায আদায় কর। কারণ আমি রাসূলুল্লাহ (সা)-কে বলিতে শুনিয়াছি, এই মসজিদে এক ওয়াক্ত নামায পড়া, মসজিদে হারাম ছাড়া অন্য যে কোন মসজিদে এক হাজার ওয়াক্ত নামায পড়ার চাইতে উত্তম।৩২৫
৯৬১
ধারা-১৪৩২
মসজিদে দ্রিার অধিকার নারী প্রয়োজনবােধে মসজিদে নিদ্রা যাইতে পারিবে।
বিশ্লেষণ
নারীর যেভাবে মসজিদে নামায আদায় ও ইতেকাফের অধিকার আছে, অনুরূপভাবে সে প্রয়োজনবােধে মসজিদে দ্রিাও যাইতে পারিবে।
عن عائشة رضي الله عنها أن وليده كانت سوداء لحي من العرب فاعتقوها فجائت الى رسول الله له فاسلمت فقالت عائشة فكان لها خباء في المسجد او حفش قالت فكانت تاتيني فتحدثت عندى (رواه البخاری) .
“হযরত আয়েশা (রা) বলিয়াছেন, আরবের একটি গোত্রের একটি কৃষ্ণাঙ্গ বাঁদী ছিল। সে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নিকট আসিয়া ইসলাম গ্রহণ করিল। হযরত আয়েশা (রা) বলেন, তাহার জন্য মসজিদে একটি তাঁবু অথবা পশমের তৈরি অনুচ্চ ছােট কক্ষ ছিল। সে আমার নিকট আসিত এবং আলাপ-আলোচনা করিত”।৩২৬
ইমাম বুখারী এই হাদীসটি “মসজিদে মহিলাদের নিদ্রা যাওয়া” অনুচ্ছেদ শিরোনামের অধীনে বর্ণনা করিয়াছেন। হাফেজ ইবন হাজার বলিয়াছেন, হযরত আয়েশা (রা) হইতে বর্ণিত হাদীস হইতে এ কথা বুঝা যায় যে, নারী অথবা পুরুষ যে সকল মুসলমানের ঘর বাড়ী নাই, ফিতনামুক্ত থাকিতে পারিলে তাহাদের জন্য মসজিদে দ্রিা যাওয়া বৈধ।৩২৭
ধারা-১৪৩৩
ইমামকে সতর্ক করিবার অধিকার নামাযের মধ্যে ইমামের কোন ভুল হইলে তাহা সংশোধনের জন্য মহিলারা ইমামকে সতর্ক করিতে পারিবে।
বিশ্লেষণ
নামাযের মধ্যে ইমামের পক্ষ হইতে কোন প্রকারের ভুল পরিলক্ষিত হইলে সেক্ষেত্রে ইমামকে সতর্ক করিয়া দেওয়ার অধিকার পুরুষদের যেমন রহিয়াছে,
৯৬২
অনুরূপ মেয়েদেরও রহিয়াছে। পার্থক্য হইল পুরুষেরা তাসবীহ পড়িয়া আওয়াজ দিবে। আর মহিলারা তাহাদের হাত চাপড়াইয়া শব্দ করিবে।
“হযরত সাহল ইবন সাদ সায়েদী (রা) বলিয়াছেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলিলেন : কি ব্যাপার, আমি দেখিতেছি তোমরা অধিক মাত্রায় হাত চাপড়াইয়া শব্দ করিতেছ? নামাযের মধ্যে কেহ কোন বিষয় দেখিলে তাসবীহ বলিবে। কারণ তাসবীহ বলিলে সেদিকে দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়। কেবল মহিলারাই হাত দ্বারা শব্দ করিবে”।৩২৮
ধারা-১৪৩৪ নামাযে মহিলাদের বিশেষ সুবিধা পাইবার অধিকার নামাযে মহিলাদের বিশেষ সুবিধা পাইবার অধিকার রহিয়াছে।
বিশ্লেষণ
নামায সংক্রান্ত বিষয়ে মহিলারা ইমাম হইতে দয়ার্দ্র আচরণ লাভের অধিকারী। কারণ রাসূলুল্লাহ (সা) এ বিষয়ে মহিলাদের প্রতি দয়া ও কোমলতা প্রদর্শণ করিয়াছেন।
له قال اني لادخل في الصلواة وانا
عن انس بن مالك أن النبي اريد اطالتها فاسمع بكاء الصبی فاتجوز في صلاتي مما اعلم من شدة وجد امه من بكائه وفي رواية كراهية أن أشق على أمه
: (s,All ol)) “হযরত আনাস ইবন মালেক (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলিয়াছেন, আমি নামায শুরু করিবার পর তাহা দীর্ঘায়িত করিতে চাই। কিন্তু শিশুদের কান্না শুনিয়া নামায সংক্ষিপ্ত করিয়া ফেলি। কারণ শিশুর কান্নায় তাহার মায়ের চরম কষ্টের কথা আমি জানি।৩২৯ অপর একটি বর্ণনায় আছে,তাহার মায়ের কষ্ট হইবে এই আশংকায়”।৩০ হযরত আয়েশা (রা) বলিয়াছেন, রাসূলুল্লাহ (সা) এশার নামায আদায় করিতে অধিক রাত করিলেন। শেষে হযরত উমার (রা) তাঁহাকে ডাকিয়া বলিলেন, নারী ও শিশুরা ঘুমাইয়া পড়িয়াছে। রাসূলুল্লাহ (সা) তখন বাহির হইয়া আসিয়া বলিলেন, পৃথিবীর অধিবাসীদের মধ্যে তোমরা ছাড়া এই নামাযের জন্য আর কেহ অপেক্ষা করিতেছে না।৩৩১
নামায সংক্রান্ত বিষয়ে রাসূলুল্লাহ (সা) মহিলাদের প্রতি বিভিন্নভাবে কোমলতা প্রদর্শন করিতেন। যেমন হযরত হিন্দু বিনতে হারেস (রা) হইতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা)-এর স্ত্রী উম্মে সালামা তাহাকে জানাইয়াছেন, রাসূলুল্লাহ (সা)-এর যুগে মহিলারা ফরয নামাযের সালাম ফিরাইবার পর উঠিয়া পড়িত এবং রাসূলুল্লাহ (সা) ও তাঁহার সহিত নামায আদায়কারী পুরুষ লোকেরা নিজ নিজ জায়গায় বসিয়া থাকিতেন। তিনি উঠিয়া পড়িলে অন্যরাও উঠিয়া পড়িতেন। ইবন শিহাব বলেন, ইহা এইজন্য ছিল যাহাতে আগে মহিলারা মসজিদ হইতে বাহির হইয়া যাইতে পারে।৩২
ধারা-১৪৩৫ মসজিদে আদান-প্রদানের অধিকার মসজিদের মধ্যে নারী ও পুরুষ পরস্পর আদান-প্রদান করিতে পারিবে।
বিশ্লেষণ
মসজিদে নামায আদায় ছাড়াও যেভাবে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে পরস্পরের কুশলাদি বিনিময় করিতে পারে, অনুরূপভাবে তাহারা পরস্পরের যে কোন বৈধ আদান-প্রদান করিতে পারে। এ সম্পর্কে ইমাম নাসায়ী তাহার গ্রন্থে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর একটি হাদীস উল্লেখ করিয়াছেন?
خرج رسول الله ه وبيده عصا وقد علق رجل قنوحشف فجعل يطعن في ذالك القنو ويقول لو شاء رب هذه الصدقة تصدق
: (L) /_9 – 1215 “রাসূলুল্লাহ (সা) বাহির হইলেন, তাহার হাতে ছিল একটি ছড়ি। এক ব্যক্তি মসজিদে অপুষ্ট শুকনা খেজুরের কাঁদি লটকাইয়া রাখিয়াছিল। তিনি ঐ কাদির মধ্যে ছড়ি প্রবিষ্ট করিয়া বলিতেছিলেন : এই সদাকা দানকারী চাহিলে ইহার চেয়ে উৎকৃষ্ট খেজুর দিতে পারিত”। অন্য বর্ণনায় আছে, রাসূলুল্লাহ (সা) প্রত্যেক বাগান হইতে এক কাঁদি খেজুর মসজিদে লইয়া লটকানোর নির্দেশ দিয়াছিলেন (অসহায় দরিদ্রের জন্য)। অপর একটি রিওয়ায়াতে উল্লেখ আছে, উক্ত খেজুর তত্ত্বাবধান ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব ছিল হযরত মুয়াজ ইবন জাবালের উপর।৩৩ আর এই অভাবীদের মধ্যে নারী-পুরুষ উভয়ে শরীক ছিল যাহারা তাহাদের প্রয়োজন মসজিদের ঐ খেজুর দ্বারা পূরণ করিত।
৯৬৪
ধারা-১৪৩৬ জ্ঞান অর্জনের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ পরস্পর
দেখা-সাক্ষাতের অধিকার জ্ঞান অর্জনে ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ পরস্পরে দেখা-সাক্ষাত করিতে পরিবে।
বিশ্লেষণ
জ্ঞান অর্জনের জন্য প্রয়োজনে পুরুষ নারীর নিকট এবং নারী পুরুষের নিকট গমন করিতে ও দেখা করিতে পারিবে। এ সম্পর্কে প্রচুর হাদীস আছে। (ক) হামদানের শাব গোত্রের আমের ইবন শুরহবী আশ-শাবী হইতে বর্ণিত। তিনি দাহহাক ইবন কায়েসের বােন এবং প্রথম হিজরতকারিনীদের অন্যতম ফাতেমা বিনতে কায়েসকে বলিলেন; আমাকে এমন একটি হাদীস বর্ণনা করুন যাহাতে আপনি সরাসরি রাসূলুল্লাহ (সা)-এর একটি হাদীস সরাসরি বর্ণনা করিলেন।৩৩৪
উবাইদুল্লাহ ইবন আবদুল্লাহ ইবন উবা বলিয়াছেন, মারওয়ান কুবাইস ইবন যুআইবকে একটি হাদীস সম্পর্কে জানার জন্য ফাতেমা বিনতে কায়েসের নিকট পাঠাইলেন। ফাতেমা তাহার নিকট হাদীসটি বর্ণনা করিলেন। মারওয়ান বলিল, আমরা একজন মহিলা ব্যতীত আর কাহারও হাদীসটি শুনি নাই।৩৩৫
– ধারা-১৪৩৭ . পুরুষদের সহিত তাওয়াফ করিবার অধিকার, মহিলারা পুরুষদের সহিত তাওয়াফ নির্বিশেষে হজ্জের সলক অনুষ্ঠান পালন করিতে পারিবে।
বিশ্লেষণ
মহিলারা পুরুষদের সহিত একসাথে তাওয়াফসহ হজ্জের সার্বিক অনুষ্ঠান পালন করিতে পারিবে।
ত
عن ابن جريج اخبرني عطا اذا منع ابن هشام النساء الطواف مع الرجال قال كيف تمنعهن وقد طاف نساء النبي عليه مع الرجال قلت بعد الحجاب او قبل قال ای لعمري لقد ادركته بعد الحجاب قلت كيف يخالطه الرجال قال لم يكن يخالطهن كانت عائشة
تطوف حجر من الرجال لا تخالطهم فقالت امرأة انطلقی نستلم يا ام المؤمنين قالت انطلقي عنك. وابت فكن يخرجن متنكرات بالليل فيطفن مع الرجال ولكنهن اذا خلن البنيت قمن حتى يدخلن واخرج الرجال وكنت اتي عائشة واناعبيد بن عمير وهي مجاورة في جوف ثبير قلت وماحجابها قال هي في قبة تركية لها غشاء وما بيننا وبينها غير ذالك وقرأت عليها درعا موردا (بخاری) .
“ইবনে জুরাইজ আতার মাধ্যমে ইবন হিশাম হইতে বর্ণনা করিয়াছেন যে, ইবন হিশাম পুরুষদের সহিত মহিলাদের তাওয়াফ করিতে নিষেধ করিলে আতা তাহাকে বলিলেন, কিভাবে আপনি তাহাদেরকে নিষেধ করিতেছেন? অথচ রাসূলুল্লাহ (সা)-এর স্ত্রীগণ পুরুষদের সহিত তাওয়াফ করিয়াছেন। আমি বললাম, ঘটনা পর্দার আয়াত অবতীর্ণ হইবার আগের না পরের? তিনি বলিলেন, আমার জীবনের শপথ! পর্দার আয়াত নাযিল হইবার পর আমি তাহাদেরকে এইরূপ করিতে দেখিয়াছি। আমি বলিলাম, মহিলারা কি পুরুষদের সহিত মিশিতে পারে? তিনি বলিলেন, তাহারা পুরুষদের সহিত একেবারে মিশিয়া একাকার হইয়া যাইত
। যেমন হযরত আয়েশা (রা) পুরুষদের হইতে দুধ অবস্থান করিয়া তাওয়াফ করিতেন এবং তাহাদের সহিত মিশিয়া যাইতেন না। এক মহিলা হযরত আয়েশা (রা)-কে বলিল, হে উম্মুল মুমিনীন! চলুন আমরা হাজরে আসওয়াদকে চুম্বন দেই। আয়েশা (রা) তাহাকে বলিলেন, তুমি যাও, তিনি নিজে যাইতে অস্বীকার করিলেন। রাসূলুল্লাহ (সা)-এর স্ত্রীগণ রাতের বেলা নিজেদেরকে আবৃত করিয়া বাহির হইতেন এবং পুরুষদের সহিত তাওয়াফ করিতেন। কিন্তু তাহারা বাইতুল্লায় প্রবেশ করিতে চাহিলে বাহিরে দাঁড়াইয়া অপেক্ষা করিতেন এবং পুরুষরা বাহির হইয়া যাওয়ার পর তাহারা প্রবেশ করিতেন। হযরত আয়েশা (রা) যখন “সাবীর” পর্বতের পাদদেশে অবস্থিত তাবুতে অবস্থান করছিলেন তখন আমি এবং উবাইদ ইবন উমায়ের তাহার নিকট গেলাম। আমি তাহাকে জিজ্ঞাসা করিলাম, সেই সময় তিনি কি দিয়া পর্দা করিতেছিলেন? তিনি বলিলেন, সেই সময় তিনি একটি তুর্কী তাঁবুতে অবস্থান করিতেছিলেন। ইহার দরজায় একটি পর্দা লটকানো ছিল। ইহা ছাড়া আমাদের ও তাহাদের মাঝে আর কোন পর্দা ছিল না। আর তিনি এইখানে গোলাপী রংয়ের একটি চাদর পরিহিতা ছিলেন”।৩৩৬
ধারা-১৪৩৮ দাবি আদায়ের জন্য সরকারের উপর
চাপ প্রয়োগের অধিকার বৈধ যে কোন দাবি আদায়ের জন্য নারী সরকারের উপর রাজনৈতিক চাপ প্রয়োগ করিতে পারিবে।
বিশ্লেষণ
সরকারের নিকট কোন বৈধ দাবি পেশ করিবার অধিকার সকল নাগরিকের রহিয়াছে। সুতরাং নারীও তাহার যে কোন বৈধ দাবি আদায়ের জন্য সরকারের উপর তাহার রাজনৈতিক প্রভাব ও চাপ প্রয়োগ করিতে পারিবে। এ সম্পর্কে ইমাম বুখারী হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন :
قال حدثنا ابو مريم عبد الله بن زياد الاسدي قال لماسار طلحة والزبير وعائشة الى البصره بعث على عمار بن يسار وحسن بن على فقدما علينا الكوفة فصعدا المنبر وكان الحسن بن على فوق المنبر في اعلاه وقام عمار اسفل من الحسن فاجتمعنا اليه فسمعت عمارا يقول ان عائشة قد سارت الى البصرة والله . انها لزوجة نبيكم له في الدنيا والاخرة ولكن الله ابتلاكم ليعلم اياه تطيعون ام هي (رواه البخاری).
“আবু মারয়াম আবদুল্লাহ ইবন যিয়াদ আল-আসাদী (র) বলিয়াছেন, (হযরত উসমানের হত্যাকারী হইতে কিসাসের দাবিতে) হযরত আয়েশা (রা), তালহা ও যুবায়ের (রা) বসরায় গেলে হযরত আলী (রা) আম্মার ইবন ইয়াসার ও হাসান ইবন আলীকে বসরায় পাঠাইলেন। তাহারা কুফায় আমাদের নিকট আসিলেন এবং মসজিদের মিম্বারে বক্তৃতা দেওয়ার জন্য উঠিলেন। হাসান ইবন আলী (রা) মিম্বারে উপরের অংশে এবং আম্মার ইবন ইয়াসীর (রা) মিম্বারের নিচের অংশে দাঁড়াইলেন। আমরা তাহাদের বক্তব্য শুনিবার জন্য সমবেত হইলাম। আমি হযরত আম্মারকে বলিতে শুনিলাম, হযরত আয়েশা (রা) বসরায় আগমন করিয়াছেন। আল্লাহর শপথ! তিনি দুনিয়া ও আখেরাতে তোমাদের নবী (সা)-এর স্ত্রী। আল্লাহ তোমাদের পরীক্ষা করিতেছেন। তোমরা তাহার আনুগত্য কর না আয়েশার
৯৬৭
আনুগত্য করো”।৩৩৭ ফাতহুল বারীতে বলা হইয়াছে, এই ক্ষেত্রে তালহা ও যুবায়ের (রা)-এর যুক্তি ছিল, তাহারা মানুষকে সংশোধন করিতে হযরত উসমান (রা)-এর হত্যাকারীদের প্রত্যেকের নিকট হইতে কিসাস গ্রহণ করিতে চাহিয়াছিলেন। অপরদিকে হযরত আলী (রা)-র বক্তব্য ছিল সকলেই আনুগত্য (শপথ গ্রহণ করুক (যাহাতে বিশৃংখলা দূরীভূত হয়) এবং হযরত উসমান (রা)-এর উত্তরাধিকারীগণ যথাযথভাবে হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে কিসাসের দাবি উত্থাপন করুক।
হযরত আলীর উপর হযরত আয়েশার এই রাজনৈতিক চাপ প্রয়োগ সম্পর্কে ইমাম মুসলিম হাদীস উল্লেখ করিয়াছেন : “হযরত সাঈদ ইবন হিশাম ইবন আমের (র) বলিয়াছেন, আমি আয়েশার উদ্দেশে রওয়ানা হইলাম এবং হাকীম ইবন আফলাহকে আমাকে সঙ্গে লইয়া তাহাকে হযরত আয়েশার নিকট যাইতে বলিলাম। তিনি বলিলেন, আমি তাহার নিকট যাইব না। কারণ আমি তাহাকে হযরত আলী (রা), তালহা ও যুবায়ের (রা)-এর অনুসারীদের ব্যাপারে কিছু বলিতে নিষেধ করিয়াছি। কিন্তু তিনি তাহা অস্বীকার করিয়া হযরত উসমানের হত্যাকারীদের হইতে কিসাসের দাবিতে তালহা ও যুবায়েরের সহিত বাহির হইয়াছেন। সাঈদ বলেন, আমি তাহাকে আল্লাহর শপথ দিলে তিনি সম্মত হইলেন। অতঃপর আমরা হযরত আয়েশার সহিত সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হইলাম এবং সেখানে অনুমতি চাহিলে তিনি আমাদেরকে প্রবেশের অনুমতি দিলেন। আমরা তাহার সামনে হাজির হইলাম। তিনি হযরত হাকিমকে দেখিয়া চিনিয়া ফেলিলেন এবং বলিলেন, কে, হাকীম? হাকীম বলিলেন, হাঁ”।৩৩৯
ধারা-১৪৩৯ রেশমীসহ সকল প্রকার কাপড় পরিধানের অধিকার। নারী রেশমী বস্ত্রসহ সকল প্রকার কাপড় পরিধান করিতে পারিবে।
বিশ্লেষণ
নারীর জন্য রেশমী কাপড়সহ সকল প্রকারের কাপড় ব্যবহার করা বৈধ এবং পুরুষদের জন্য রেশমী বস্ত্র হারাম।
عن علي قال کنساني النبي ة حلة سيراء فخرج فيها فرایت
الغضب في وجهه فشققتها بين نسائی (رواة البخای).
৯৬৮
“হযরত আলী (রা) বলিয়াছেন, নবী (সা) আমাকে রেশমের কাপড় উপহার দিয়াছিলেন। আমি উহা পরিধান করিয়া বাহির হইলে তাঁহার চেহারায় বিরক্তির ছাপ দেখিতে পাইলাম। অতঃপর আমি উহা টুকরা করিয়া আমার মহিলাদের মধ্যে বণ্টন করিয়া দিলাম।৩৪০
ইবন উমার (রা) বলিয়াছেন, হযরত উমার দেখিলেন যে, রেশমী কাপড় বিক্রয় হইতেছে। হযরত উমার বলিলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি উহা ক্রয় করুন এবং জুমআর দিন অথবা সাক্ষাপ্রার্থীদের সহিত সাক্ষাতের সময় উহা পরিধান করুন। রাসূলুল্লাহ (সা) বলিলেন, হে উমার! ইহা তাহারাই পরিধান করে যাহাদের পরকালে কোন অংশ প্রাপ্য নাই। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সা)-এর খেদমতে কিছু রেশমী বস্ত্র আনা হইলে তিনি উহা হযরত উমারকে দিলেন। উমার (রা) বলিলেন, আমি উহা কিভাবে পরিধান করিব, অথচ আপনি এ বিষয়ে এই ধরনের কথা বলিয়াছেন! রাসূলুল্লাহ (সা) বলিলেন, আমি তোমাকে উহা পরিধানের জন্য দেয় নাই। বরং তুমি কাহাকেও উহা দান করো অথবা বিক্রি করিয়া দাও সেইজন্য দিয়াছি।৩৪১
ধার—১৪৪০ স্বর্ণের অলংকারাদি ব্যবহারের অধিকার নারী স্বর্ণের অলংকারাদি ব্যবহার করিতে পারিবে।
বিশ্লেষণ
নারী স্বর্ণের যাবতীয় প্রকারের অলংকার ব্যবহার করিতে পারিবে। এ সম্পর্কে ইমাম বুখারী তাঁহার সহীহ আল-বুখারীতে দলীল পেশ করিয়াছেন?
‘
الخاتم للنساء وكان على عائشة خواتم ذهب .
“মহিলাদের আংটি ব্যবহার করা এবং হযরত আয়েশা (রা) স্বর্ণের আংটি ব্যবহার করিতেন।৩৪২
ধারা-১৪৪১
সাংবাদিক হইবার অধিকার নারী সাংবাদিকতার দায়িত্ব পালন করিতে পারিবে।
৯৬৯
বিশ্লেষণ
“নারী যে কোন বিষয়ে খবর পরিবেশন করিতে পারে এবং উহা গ্রহণ করিবার অধিকার মানুষের থাকিবে। এ সম্পর্কে ইমাম বুখারী হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন।
كان ناس من أصحاب النبي له فيهم سعد فذهبوا ياكلون من لحم فنادهم امرأة من بعض ازواج النبي له انه لحم ضب فامسكوا فقال رسول الله له كانوا واطعموا فائه حلال ولكنه ليس من طعامی (رواه البخاری).
“রাসূলুল্লাহ (সা)-এর কয়েকজন সাথী যাহাদের মধ্যে হযরত সাদ (রা)-ও ছিলেন, তাহারা সবাই খানা খাইতেছিলেন। এমন সময় রাসূলুল্লাহ (সা)-এর কোন স্ত্রী বলিলেন, ইহা গুই সাপের গোশত। তখন রাসূলুল্লাহ (সা) বলিলেন, তোমরা খাও, উহা হালাল। তবে ইহা আমার খাদ্য নহে”।৩৪৩
ধারা-১৪৪২ কর্মজীবি মহিলাদের শিক্ষালাভের অধিকার কর্মজীবি মহিলারা শিক্ষা লাভ করিতে পারিবে।
বিশ্লেষণ
পেশাজীবি বা কর্মজীবি মহিলাগণও শিক্ষালাভ করিতে পারিবে। অর্থাৎ যদি কাহারও অধীনস্থ কোন মহিলা কর্মচারী থাকে তবে মালিকের কর্তব্য হইবে উক্ত মহিলা কর্মচারীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া। এ সম্পর্কে ইমাম বুখারী হযরত আবু বুরদাহ তাহার পিতা হইতে হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন?
عن بردة عن أبيه قال قال رسول الله له ثلثة لهم أجران رجل من اهل الكتاب امن بنبيه وامن محمد ع والعبد المملوك اذا ادی حق الله وحق مواليه ورجل كانت عنده امة يطاها فادبها فاحسن تاديبها وعلمها فاحسن تعليمها ثم اعتقها فتزوجتها فله اجران –
“হযরত আবু বুরদাহ (র) তাহার পিতা হইতে বর্ণনা করিয়াছেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলিয়াছেন, তিন ব্যক্তির জন্য দ্বিগুণ হুওয়াব বা প্রতিদান রহিয়াছে। প্রথম, আহলে কিতাব যে তাহার নবীর উপর ঈমান আনিয়াছে অতঃপর মুহাম্মাদ (সা)-এর
৯৭০
উপরও ঈমান আনিয়াছে। দ্বিতীয় ঐ ব্যক্তি যে তাহার মালিকের কাজ যথার্থভাবে আদায় করে এবং আল্লাহর হকও যথার্থভাবে আদায় করে এবং তৃতীয় ঐ ব্যক্তি যে তাহার অধীনস্থ কর্মচারী মহিলাকে ভাল শিক্ষার ব্যবস্থা করিল এবং তাহাকে উপযুক্ত বানাইয়া মুক্ত করিয়া দিল এবং বিবাহ দিল” ৩৪৪
ধারা-১৪৪৩ কন্যা কর্তৃক পিতার সেবা করিবার অধিকার কন্যা তাহার পিতার সেবা করিতে পারিবে।
বিশ্লেষণ
পিতা অসুস্থ হইলে কন্যা তাহার সেবা-যত্ন করিতে পারিবে। এ সম্পর্কে ইমাম বুখারী হযরত আবু হাজেম হইতে হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। তিনি উল্লেখ করিয়াছেনঃ
عن أبي حازم سمع سهل بن سعد الساعدي وسأله الناس وما بيني وبينه احد بای شئ دووی جرح رسول الله ؟ فقال مابقی احد اعلم به منی کان على يجئ بترسه فيه ماء وفاطمة تغسل عن وجهه الدم فاخذ حصير فاحرق فخشی به جرحه (رواه البخاری
في المجلد الأول على صفح ۳۸)
“হযরত আবু হাযেম হইতে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাহল ইবনে সাদ আস-সায়েদী শুনিয়াছেন এবং তাহাকে লোকেরা জিজ্ঞাসা করিয়াছে এবং আমার ও তাহার মধ্যে অন্য কোন ব্যক্তি উপস্থিত ছিল না, কি জিনিস দ্বারা রাসূলুল্লাহ (সা)-এর আঘাতপ্রাপ্ত স্থানে ঔষধ ব্যবহার করা হইয়াছে? তিনি বলিলেন, এ সম্পর্কে আমার চেয়ে অধিক জ্ঞাত কোন মানুষ নাই। হযরত আলী (রা) তাহার ঢালে করিয়া পানি আনিতেন এবং হযরত ফাতেমা (রা) উহা দ্বারা পিতার চেহারা মোবারক ধৌত করিতেছিলেন। অবশেষে চাটাই জ্বালাইয়া তাহার ছাই ক্ষত স্থানে লাগাইলে রক্ত ঝরা বন্ধ হইয়া গেল”।
ধারা-১৪৪৪ ঋতুবতী মহিলার স্বামীর সহিত বসবাস করিবার অধিকার
যে কোন ঋতুবতী মহিলা তাহার স্বামীর সহিত বসবাস করিতে পারিবে।
৯৭১
বিশ্লেষণ
ঋতুবতী মহিলারা তাহাদের স্বামীর সহিত স্বাভাবিকভাবে বসবাস করিতে পারিবে। ইহাতে কোন প্রকারের বাধা-নিষেধ নাই। জাহিলী যুগে তাহাদেরকে স্বামীর সহিত বসবাসে বাধা দেওয়া হইত। এ সম্পর্কে ইমাম বুখারী তাহার গ্রন্থে হযরত আয়েশা (রা) হইতে হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন?
عن عائشة رضي الله عنها قالت كنت اغتسل انا والنبي ه من اناء واحد وكلان جنب وكان يامرني فاتزر فيباشرني وانا حائض وكان يخرج رأسه الى وهو معتكف فاغسله وانا حائض
‘(২৫ ° s ) “হযরত আয়েশা (রা) হইতে বর্ণিত। তিনি বলিয়াছেন, আমি ও রাসূলুল্লাহ (সা) একই পাত্রের পানি দিয়া একত্রে গোসল করিতাম এবং আমরা উভয়ে নাপাকি (জুনুবী) অবস্থায় ছিলাম। এবং তিনি আমাকে ইজার বাঁধিতে নির্দেশ দিতেন এবং আমরা উভয়ে রাত্রি যাপন করিতাম। অথচ আমি তখন ঋতুবতী অবস্থায় ছিলাম। রাসূলুল্লাহ (সা) ইতেকাফ অবস্থায় মসজিদ হইতে মাথা বাহির করিয়া দিতেন এবং আমি তাহার মাথা ধৌত করিয়া দিতাম। অথচ আমি তখন ঋতুবতী অবস্থায় ছিলাম (বুখারী, প্রথম খণ্ড)।
ধারা-১৪৪৫ ঋতুবতী মহিলার ঈদগাহে উপস্থিত হওয়ার অধিকার ঋতুবতী মহিলা ঈদগাহে উপস্থিত হইতে পারিবে।
বিশ্লেষণ
ঋতুবতী মহিলার ঈদগাহে উপস্থিত হওয়ার এবং দীনের তাবলীগ বা ধর্ম প্রচারের অধিকার রহিয়াছে। এ সম্পর্কে হাফসা (রা) হইতে হাদীস বর্ণিত আছে।
عن حفصة قالت كنا نمنع عواتقنا ان يخرجن في العيدين فقدمت امرأة فنزلت قصر بني خلف فحدثت عن اختها وكان زوج اختها غزا مع النبي ع ثنتي عشرة غزوة وكانت اختي معه في
.
৯৭২
ست قالت فكنا نداوي الكلمی وتقوم على المرضى فسالت اختی النبي ع اعلى احدنا بأس اذا لم يكن لها جلباب أن لا تخرج قال التلبسها صاحبتها من جلبابها ولتشهد الخير ودعوة المؤمنين فلما قدمت أم عطية سالتها أسمعت النبي و قالت بابی نعم وكانت لا يذكره الا قالت بابی سمتعه يقول يخرج العواتق وذاوات الخدور. الحيض فقالت اليست تشهد. عرفة وكذا وكذا
599 –
AL-94
-sjul sl9)………….
المؤمنين)
– “হযরত হাফসা (রা) হইতে বর্ণিত। তিনি বলিয়াছেন, আমরা যুবতী কুমারী মেয়েদেরকে ঈদগাহে যাইতে নিষেধ করিতাম। এমনি এক সময় জনৈকা মহিলার আগমন ঘটিল। সে তাহার বােন সম্পর্কে বলিতে লাগিল এবং তাহার বােনের স্বামী রাসূলুল্লাহ (সা)-এর সহিত ১২টি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করিয়াছে এবং আমার বােন তাহার স্বামীর সহিত ছয়টি যুদ্ধে শরীক ছিল। তাহার বােন বলিয়াছেন, আমরা আহতদিগকে তাহাদের ক্ষতস্থানে পট্টি বাঁধিয়া দিতাম এবং অসুস্থদিগকে সেবা করিতাম। আমার বােন রাসূলুল্লাহ (সা)-কে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করিল। আমাদের মধ্যে যে সকল যুবতীর ওড়না নাই তাহাদের কি কোন অসুবিধা আছে? তখন রাসূলুল্লাহ (সা) বলিলেন, তোমরা তোমাদের বান্ধবীদেরকে নিজেদের চাদর বা ওড়না ধার দিবে এবং তোমাদের উচিৎ তোমরা যেন ভাল মজলিসে উপস্থিত থাক এবং মুমিনদের দোয়ায় শরীক থাকে। অতঃপর যখন হযরত উম্মে আতিয়া (রা) উপস্থিত হইলেন তখন আমরা তাহাকে জিজ্ঞাসা করিলাম, আপনি কি রাসূলুল্লাহ (সা) হইতে এই জাতীয় কিছু শ্রবণ করিয়াছেন। উত্তরে তিনি বলিলেন, আমার পিতার কসম! আমি শুনিয়াছি এবং হযরত উম্মে আতিয়া যখনি এই হাদীস বর্ণনা করিতেন তখনি বলিতেন, আমার পিতার কসম! বলা হইয়াছে, আমাদের পর্দানসীন লজ্জাবতী যুবতী ও মহিলারাও যেন ভাল মজলিসে এবং মুমিনদের দোয়ায় ঈদগাহে উপস্থিত হয়। তবে ঋতুবতী মহিলারা নামাযের স্থান হইতে দূরে অবস্থান করিবে”।
৯৭৩
ধারা-১৪৪৬ ইতেকাফরত স্বামীর খেদমতের অধিকার স্ত্রী মসজিদে ইতেকাফরত স্বামীর খেদমত করিতে পারিবে।
বিশ্লেষণ
ইতিপূর্বে উল্লেখ করা হইয়াছে যে, মহিলারাও মসজিদে ইতেকাফ করিতে পারে। যেমন হযরত আয়েশা (রা) হইতে বর্ণিত হাদীসে প্রমাণিত হইয়াছে। তিনি বলিয়াছেন, রাসূলুল্লাহ (সা) তাঁহার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মসজিদে রমযানের শেষ দশ দিন ইতেকাফ করিতেন। রাসূলুল্লাহ (সা)-এর ইন্তেকালের পর তাঁহার স্ত্রীগণও ইতেকাফ করিতেন। মসজিদে যে স্বামী ইতেকাফরত আছে সেই স্বামীর খেদমত করা স্ত্রীর জন্য বৈধ। এ সম্পর্কে ইমাম বুখারী (র) হযরত আয়েশা (রা)-এর হাদীস উল্লেখ করিয়াছেন।
عن عائشة زرج النبی صلى الله عليه وسلم قالت كان النبي لا يصغي الى راسه
وهومجاور في المسجد فارجله وانا حائض۔
“হযরত আয়েশা (রা) হইতে বর্ণিত। তিনি বলিয়াছেন, রাসূলুল্লাহ (সা) তাঁহার মাথা আমার দিকে ঝুঁকাইয়া দিলেন এবং তখন তিনি মসজিদে ইতেকাফরত ছিলেন আমি তাঁহার মাথা আচড়াইয়া দিলাম এবং আমি তখন ঋতুবতী অবস্থায় ছিলাম”।
ধারা-১৪৪৭ ইতেকাফরত স্বামীর সহিত দেখা-সাক্ষাতের অধিকার মহিলারা তাহাদের ইতেকাফরত স্বামীর সহিত দেখা-সাক্ষাত করিতে পারিবে।
বিশ্লেষণ
মসজিদে গিয়া স্ত্রীরা তাহাদের ইতেকাফরত স্বামীর সহিত দেখা-সাক্ষাত করিতে পারিবে। এ সম্পর্কে ইমাম বুখারী (র) হযরত হাসান ইবন আলী (রা) হইতে হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন।
عن الحسن بن علي قال كان النبي له في المسجد وعنده ازواجه فرحن فقال الصفية بنت حيي لا تعجلی حتی انصرف معك
৯৭৪
وكان بيتها في دار اسامة فخرج النبي عله معها فلقيه رجلان من
ثم اجازا فقال لهما النبى لله تعالیا
الانصار فنظر الى النبي انها صفية بنت حیی فقالا سبحان الله یارسول الله فقال ان الشيطان يجري من الانسان جرى الدم واني خشيت أن يلقى في انفسكما شيئا (رواه البخاري في المجلد الأول على صفحه ۲۷۳)
“হযরত হাসান ইবন আলী (রা) হইতে বর্ণিত। তিনি বলিয়াছেন, রাসূলুল্লাহ (সা) মসজিদে ছিলেন এবং তাঁহার স্ত্রীগণও সঙ্গে ছিলেন। রাসূলুল্লাহ (সা) হযরত সাফিয়া বিনতে হুয়াইকে বলিলেন, তুমি ব্যস্ত হইও না যাহাতে আমি তোমার সহিত ফিরিতে পারি এবং হযরত সাফিয়ার ঘর উসামার ঘরের নিকটে ছিল। রাসূলুল্লাহ (সা) হযরত সাফিয়ার সহিত বাহির হইলেন। তিনি রাস্তায় দুইজন আনসারী পুরুষ লোকের সাক্ষাত পাইলেন। তাহারা রাসূলুল্লাহ (সা)-এর দিকে তাকাইলেন। অতঃপর পথ চলা আরম্ভ করিলেন। রাসূলুল্লাহ (সা) তাহাদেরকে ডাকিলেন এবং বলিলেন, এই মহিলা হইল সাফিয়া বিনতে হুয়াই। তাহারা সুবহানাল্লাহ বলিয়া উঠিল। রাসূলুল্লাহ (সা) বলিলেন, শয়তান মানুষের শিরা উপশিরায় রক্ত চলাচলের ন্যায় চলাচল করে। হয়ত শয়তান তোমাদের মনে খারাপ কোন ধারণা দিতে পারে এইজন্য”।
ধারা-১৪৪৮
ক্রয়-বিক্রয়ের অধিকার নারী বৈধ যে কোন জিনিস ক্রয়-বিক্রয় করিতে পারিবে।
বিশ্লেষণ
পুরুষের ন্যায় নারীরও বেচা-কেনার অধিকার আছে। নারী-পুরুষ একে-অপরের সহিত বেচা-কেনা করিতে পারে। এ সম্পর্কে ইমাম বুখারী অনুচ্ছেদ কায়েম করিয়াছেনঃ L. Jl= ৪১.ly /i “বেচাকেনা করা নারীর সহিত”। দলীল হিসাবে তিনি হযরত আয়েশা (রা)-এর হাদীস পেশ করিয়াছেন যাহাতে বলা হইয়াছে।
৯৭৫
قالت عائشة دخل على رسول الله صلى الله عليه وسلم فذكرت
ع
له فقال لها اشترى اعتقى فانما الولاء لمن أعتق ثم قام النبي من العشي فاثنى على الله بما هو اهله ثم قال امابعد مابال اناس ليشترطون شروطا ليس في كتاب الله من اشترط شرطا ليس في كتاب الله فهو باطل ولو اشترط مائة شرط …………… (رواه البخاري في المجلد الأول في اشري والبيع مع النساء)
“হযরত আয়েশা (রা) বলিয়াছেন, রাসূলুল্লাহ (সা) আমার নিকট আসিলেন। আমি তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন তিনি বলিলেন, খরিদ কর এবং মুক্ত কর। “কেননা কর্তৃত্ব তাহারই যে মুক্ত করিয়াছে”। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সা) ভাষণের জন্য দাঁড়াইলেন। প্রথমে আল্লাহ পাকের যথার্থ প্রশংসা করিলেন এবং বলিলেন, মানুষের কি হইয়াছে যে, তাহারা আজকাল এমন সব শর্ত (ক্রয়-বিক্রয়ে) আরোপ করিতেছে যাহা আল্লাহর কিতাবে নাই। যে ব্যক্তি এমন শর্ত করিল যাহা আল্লাহর কিতাবে নাই, তাহা বাতিল বলিয়া গণ্য হইবে, যদিও সে শতাধিক শর্তারোপ করে। (বুখারী), কিতাবুল বুয়ু “অনুচ্ছেদ ক্রয়-বিক্রয় করা নারীর সহিত, ১ম খণ্ড, পৃ. ২৮৮-২৮৯, সাহারনপুর, ভারত)।
‘ ধারা-১৪৫৯
নারীর উকিল নিয়োগের অধিকার নারী তাহার বিবাহ বা অন্য যে কোন বিষয়ে তাহার পক্ষে উকিল বা প্রতিনিধি নিয়োগ করিতে পারিবে।
বিশ্লেষণ
নারী তাহার বিবাহ বা অন্য কোন বিষয়ে তাহার পক্ষে ওকালতি বা প্রতিনিধিত্ব করিবার জন্য যে কোন ব্যক্তিকে উকিল নিয়োগ করিতে পারে। এ সম্পর্কে ইমাম বুখারী হযরত সাহল ইবন সাদ (রা) হইতে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর হাদীস পেশ করিয়াছেন?
عن سهل بن سعد قال جاءت امرأة الى رسول الله له فقالت یارسول الله اني قد وهبت لك نفسي فقال رجل زوجنيها يارسول الله فقال : وجناها معك من القران (رواه البخاری)
“হযরত সাহল ইবন সাদ (রা) হইতে বর্ণিত। তিনি বলিয়াছেন, জনৈকা মহিলা রাসূলুল্লাহ (সা)-এর খেদমতে উপস্থিত হইয়া বলিল, হে আল্লাহর রাসূল! আমি আপনার জন্য আমাকে উৎসর্গ করিলাম। এক ব্যক্তি উঠিয়া বলিল, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি তাহাকে আমার সহিত বিবাহ দিন। রাসূলুল্লাহ (সা) বলিলেন, আমি তাহাকে তোমার সহিত বিবাহ দিলাম, তোমার নিকট যে কুরআনের জ্ঞান আছে তাহার বিনিময়ে” (বুখারী)।
‘‘,
‘‘,
তথ্য নির্দেশিকা ১. মিসবাহুল মুনীর, আল-কামুস, লিসানুল আরাব, হক্ক’ শিরো.। ২. আল-বাহরুল রায়েক, ৬খণ্ড, পৃ. ১৪৭। ৩. আল-মাওসূআতুল ফিকহিয়্যা, ১৮ খণ্ড, পৃ. ১৩। ৪. ১১jtai.
t k ), পৃ. ২৪৩-২৪৪। ৫. ১- ২, ৪র্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা, ১৩৪। ৬. ১১:২, ৪র্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা, ১৩৫। ৭. বুখারী, ১ খণ্ড, পৃ. ৪৯; মুসলিম, ১খণ্ড, পৃ. ৪৫। ৮. আশ-শারহুল কবীর, ২খণ্ড, পৃ. ৪৫। ৯. আল-মাওসূআতুল ফিকহিয়্যা, ১৮ খণ্ড, পৃ. ১৮। ১০. waliall, ১৮তম খণ্ড, পৃ. ২২। ১১. a ll, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃ. ৬০-৬৩; ২.yel প্রথম খণ্ড, পৃঃ১৪৪। ১২. a l l ১৮তম খণ্ড, পৃ..২৩। :. .. ১৩. ial s ell, ১৮তম খণ্ড, পৃ. ২৩। ১৪. c.All il, ৭ম খণ্ড, পৃ. ৫৫; হিদায়া, ২য় খণ্ড, পৃ. ১১৩। ১৫. এLiallu, ২য় খণ্ড, পৃ. ৩৫। ১৬. 1, ১ম খণ্ড, পৃ. ১৪৩। ১৭. ফাতহুল বারী, ১২তম খণ্ড, পৃ. ৭৮। ১৮. Lalls তৃতীয় খণ্ড, পৃ. ১৫২; হিদায়া, ২ খণ্ড, পৃ. ৩২; দারু কুতনী, তৃতীয় খণ্ড, পৃ.
৪০২। ১৯. .0 leisualli, প্রথম খণ্ড, পৃ. ১৫৬-১৬১। ২০. a l Jell saily, প্রথম খণ্ড, পৃ. ১৫৬-১৬১; aus.gl/
১৮ তম খণ্ড, পৃ. ৩৪।
*
১।