কোন কোন ইয়াহুদী আলিমের মুনাফিকসুলভ ইসলামগ্ৰহণ প্রসঙ্গে
যে সব ইয়াহুদী আলিম তাকিয়া তথা আত্মরক্ষার কৌশল হিসাবে ইসলাম গ্ৰহণ করেছিল, এরপর ইবন ইসহাক উল্লেখ করেন, তলে তলে এরা ছিল কাফির। মুনাফিকী করে এরা ইসলামের অনুসারী সািজলেও মূলত এরা ছিল দুষ্ট-নিকৃষ্ট মুনাফিক। এদের মধ্যে ছিল সা’আদ ইবন হুনায়ফ এবং যায়দ ইবন লাসীত। রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর উট হারিয়ে গেলে সে বলেছিল? মুহাম্মদের ধারণা যে, তার কাছে আসমান থেকে খবর আসে, অথচ তার উটনীটি কোথায় তা-ও সে জানে না। মুনাফিকটির এ কথা শুনে আল্লাহর নবী বলেন :
و الله لا اعلم الاما علمنی الله، و قد دلنی الله علیها فهی فی لهذا الشعب قذ
আল্লাহ আমাকে এই মাত্ৰ জানালেন যে, আমার উটনীটি গিরিসঙ্কটের গাছের সঙ্গে তার লাগাম জড়িয়ে যাওয়ার কারণে আটকা পড়েছে।” রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর এ কথা শুনে কিছু লোক সেদিকে ছুটে যায় এবং উটনীটিকে সে অবস্থায় দেখতে পায়। তিনি আরো বলেন, নুমান ইবন আওফা, উছমান ইবন আওফা, রাফি’ ইবন হুরায়মিলা। এ লোকটি যেদিন মারা যায়, সেদিন আল্লাহর নবী বলেন :
قد مات اليوم عظيم من عظماء المنافقين – “আজকের দিনে একজন বড় মুনাফিকের মৃত্যু হলো।” রিফাআ ইবন যায়দ ইবন ত্যাবৃত। তাবুক থেকে রাসূল (সা)-এর প্রত্যাবর্তনকালে এ ব্যক্তির মৃত্যুর দিনে প্রচণ্ড বায়ু প্রবাহিত হলে রাসূলুল্লাহ্ (সা) বলেছিলেন :
انها هابت لموت عظیم من عظماء الكفار – “একজন বড় কাফিরের মৃত্যুতে এ বায়ু প্রবাহিত হয়েছে।”
তাঁরা মদীনায় ফিরে এসে জানতে পারেন যে, ঐ দিনই রিফাআর মৃত্যু হয়েছিল। আরো হল সিলসিলা ইবন বারহাম এবং কিনানা ইবন সূরিয়া। ইয়াহুদী মুনাফিকদের মধ্যে এরা ইসলাম গ্ৰহণ করেছিল। এসব মুনাফিক মসজিদে উপস্থিত হতো, মুসলমানদের কথাবার্তা শুনতো এবং তাদেরকে নিয়ে উপহাস করতো। একদিন তাদের কিছু লোক মসজিদে উপস্থিত হয়। রাসূলুল্লাহ্ (সা) দেখতে পান যে, তারা একে অপরের সঙ্গে নিচু স্বরে কথা বলছে। রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর নির্দেশে তাদেরকে মসজিদ থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয়। আবু আইউব দাঁড়িয়ে বনু নাজারের সদস্য আমর ইবন কায়সের পা ধরে টেনে. হেঁচড়ে তাকে বের করেন। এ লোকটি ছিল জাহিলী যুগে তাদের প্রতিমার তত্ত্বাবধায়ক। এ সময় সে বলছিল— হে আবু আইউব, তুমি আমাকে বনু ছালাবার খোয়াড় থেকে বের করে দিচ্ছ? এরপর আবু আইউব রাফি’ ইবন ওয়াদী আ নাজারীর দিকে এগিয়ে যান এবং কাপড়ে পেঁচিয়ে সজোরে টান দেন, মুখে কিল-ঘুষি দিয়ে তাকে মসজিদ থেকে এই বলতে বলতে বের করে দেন, ধিক তোমায়, পাপিষ্ঠ মুনাফিক। আর যায়দ ইবন আমরের দিকে এগিয়ে যান আম্মারা ইবন হাযম। লোকটি ছিল দীর্ঘ দাড়িধারী। দাড়ি ধরে টেনে-হেঁচড়ে তাকে মসজিদ থেকে বের করেন। এরপর আম্মারা তার দু’হাত একত্র করে তার বুকে প্ৰচণ্ড ঘুষি মারেন, যাতে সে মাটিতে পড়ে যায়। তখন সে বলছিল, হে আম্মারা! তুমি আমার বুকে আঘাত করলে? তখন আম্মারা বললেন— রে, মুনাফিক!! আল্লাহ তোকে দূর করুন, আল্লাহ তোর জন্য যে আযাব প্রস্তুত করে রেখেছেন, তা এর চাইতেও কঠোর। আর কখনো রাসূলের মসজিদের কাছেও আসবি না। আবু মুহাম্মদ মাসউদ ইবন আওস ইবন যায়দ ইবন আসরাম ইবন যায়দ ইবন ছালাবা ইবন গানাম ইবন মালিক ইবন নাজ্জার–ইনি ছিলেন বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সাহাবী। তিনি কায়স ইবন আমর ইবন সাহলের দিকে এগুলেন। সে ছিল যুবক এবং সে ছাড়া মুনাফিকদের মধ্যে আর কোন যুবক ছিল না। গলা ধাক্কা দিয়ে তিনি তাকে বের করে দেন। বনু খাদরার জনৈক ব্যক্তি হারিছ ইবন আমরের দিকে অগ্রসর হন। এ লোকটি ছিল দীর্ঘকেশী। তিনি তার চুল ধরে তাকে টেনে-হেঁচড়ে একেবারে ধরাশায়ী করে বের করেছেন। এ সময় সে মুনাফিকটি বলছিল, হে আবুল হারিছ। তুমি বড় কঠোর আচরণ করলে। তখন তিনি বললেন, এটা তোর পাওনা ছিল রে। আল্লাহর দুশমন! কারণ আল্লাহ তোর সম্পর্কে আয়াত নাযিল করেছেন। আর কখনো রাসূলুল্লাহর মসজিদের নিকটেও আসবি না, কারণ তুই অপবিত্র। বনী আমর ইবন আওফের জনৈক ব্যক্তি তার ভাই যাবী ইবন হারিছের দিকে অগ্রসর হন এবং শক্তভাবে তাকে মসজিদ থেকে বের করতে করতে নাকে হাত দিয়ে বলেন, তোর উপর শয়তান সওয়ার হয়েছে। এরপর ইমাম ইবন ইসহাক এ ব্যাপারে সূরা বাকারা ও সূরা তাওবার যেসব আয়াত নাযিল হয়েছে সেসবের উল্লেখ করে এর ব্যাখ্যায় ফলপ্রসূ ও কল্যাণকর আলোচনা করেছেন। আল্লাহ তার প্রতি রহম করুন।