পঞ্চম সর্গ
সারারাত্রি ধরে সেই নির্ভীক দেবদূত নির্ভয়ে উড়ে যেতে লাগল। অবশেষে রাত্রি প্রভাত হলেই কে যেন তার গোলাপী হাত দিয়ে আলোর দ্বার উন্মুক্ত করে দিল পূর্বাচলে।
ঈশ্বরের সিংহাসনের পাশে একটি গুহা ছিল। সেই গুহাতে আলো-অন্ধকার অনন্তকাল ধরে যাওয়া-আসা করে পালাক্রমে। সে গুহার এক দ্বারপথ দিয়ে আলো দেখা দিলে অন্যপথ দিয়ে অন্ধকার প্রবেশ করে।
একদিন প্রভাতকালে সেই গুহা থেকে আলো বেরিয়ে এসে আকাশে তা ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঈশ্বর তার সিংহাসন থেকে দূরে সমতলভূমির উপর অসংখ্য উজ্জ্বল রথ, সশস্ত্র সৈন্য ও অশ্বসমূহ দেখতে পেলেন। তিনি বুঝতে পারলেন তাঁর সুযোগ্য সেনাদল যুদ্ধশেষে সৈন্যসহ ফিরে আসছে। তিনি বুঝতে পারলেন, এ বিষয়ে যে সংবাদ তিনি আগেই পেয়েছিলেন তা সত্য।
তাই তিনি বেরিয়ে এলেন সেই পবিত্র পর্বতশিখরে। তাঁকে দেখার সঙ্গে সঙ্গে বিপুল হর্ষধ্বনি করে উঠল বিজয়ী সেনাদল। তারা যুদ্ধে শত্রুদের পরাজিত করে সকলেই অক্ষতদেহে ফিরে এসেছে।
সেই শিখরদেশে ইতস্তত সঞ্চরমান সোনানী মেঘমালার মধ্যে ঈশ্বরের কণ্ঠ ধ্বনিত হলো। তিনি বললেন, হে ঈশ্বরের সেবকবৃন্দ, তোমরা ভালভাবেই যুদ্ধ করেছ। তোমরা অসংখ্য বিদ্রোহী সেনাদের যুদ্ধক্ষেত্র হতে বিতাড়িত করে বীরের উপযুক্ত কার্যই করেছ। তারা এখন সকলের দ্বারা ধিকৃত। কৌশল ও পারদর্শিতার থেকে তাদের বাগাড়ম্বর বেশি। এবার সম্পূর্ণ ও চূড়ান্ত জয়ের পথ আরও সুগম হবে। মিত্রশক্তির সাহায্যে তোমরা আমাদের শত্রুদের আক্রমণ করে তাদের সম্পূর্ণরূপে দমন করে অধিকতর বিজয় গৌরবে ফিরে আসবে। তারা আমার বিধান মানে না, আমার পুত্রের রাজশক্তিকে স্বীকার করেন না।
যাও মাইকেল ও গ্যাব্রিয়েল, তোমরা দুজন হলে স্বর্গের সামরিক শক্তির দুই নেতা। তোমরা আমার হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ দেবসেনা নিয়ে সেই সব দণ্ডিত ঈশ্বরদ্রোহী বিদ্রোহীদের সম্পূর্ণরূপে নিৰ্জিত করার জন্য সঙ্গে যাও। বিভিন্ন আগ্নেয়াস্ত্র দ্বারা তাদের আক্রমণ করে স্বর্গলোক হতে বিতাড়িত ও অখণ্ড স্বর্গসুখ হতে চিরতরে বঞ্চিত করে নরকগহ্বরে নিক্ষেপ করো। এটাই হবে তাদের চরম শাস্তি। পতনশীল সেই সব বিদ্রোহীদের গ্রাস করার জন্য নরকগহর মুখ বিস্তার করে আছে।
এই বলে ঈশ্বরের কণ্ঠ নীরব হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কৃষ্ণকুটিল মেঘমালা ঘনীভূত হতে লাগল পাহাড়ের উপরে। ঈশ্বরের প্রচণ্ড রোষের প্রতীক হিসাবে অগ্নিগর্ভ ধোঁয়ার কুণ্ডলী উঠতে লাগল আকাশে। সমস্ত দেবসেনারা অভিযানের জন্য প্রস্তুত হয়ে সঙঘবদ্ধভাবে দাঁড়ালে রণবাদ্য বাজতে লাগল। সেই সব বাদ্যে ও রণভেরীতে বীরত্বব্যঞ্জক সুর ধ্বনিত হতে লাগল।
এরপর অসংখ্য দেবসেনা সমরনেতাদের পরিচালনায় সারিবদ্ধভাবে ঈশ্বর ও ঈশ্বরপুত্রের গৌরব ও সম্মান অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য অটল সংকল্পে দৃঢ় হয়ে আকাশপথে এগিয়ে চলতে লাগল। সে পথে পাহাড়, পর্বত, নদী বা সমুদ্রের কোন বাধা ছিল না। অনুকূল বাতাসে অব্যাহত ছিল তাদের অগ্রগতি।
অবশেষে অবিলম্বে স্বর্গলোকের উত্তর প্রান্তে এসে উপনীত হলো দেবসেনাদল।
এদিকে শয়তানও চুপ করে বসে ছিল না। প্রথম যুদ্ধে সে রণক্ষেত্র হতে পালিয়ে গিয়ে রাত্রির অন্ধকারে আশ্রয় নিলেও আবার সে নূতন রণোদ্যমে তার সেনাদল নিয়ে ভয়ঙ্কর অভিযানে এগিয়ে আসতে লাগল। অহঙ্কারী উচ্চাভিলাষী শয়তান ঈশ্বরের স্বর্গসিংহাসনে অধিষ্ঠিত করতে চেয়েছিল নিজেকে।
ক্রমে উভয়পক্ষ পরস্পরের নিকটবর্তী হলে উভয়পক্ষ হতে যুদ্ধের ধ্বনি উঠতে লাগল। শয়তানদের রাজা ঈশ্বরের সব কৃত্রিম মহিমায় নিজেকে সমুন্নত করে তার রথের উপর সিংহাসনে বসে ছিল। সে ছিল চেরাবিম জাতীয় বিদ্রোহী দেবসেনাদের দ্বারা পরিবৃত। তার পাশে ছিল সোনার বাঘ আর অস্ত্র। তার গায়ে ছিল সোনার কর্ম।
দুপাশের মাঝখানে যে উন্মুক্ত প্রান্তর বিস্তৃত হয়েছিল, রথ থেকে নেমে শয়তান ধীর পায়ে উদ্ধতভাবে এক রাজকীয় গাম্ভীর্যের সঙ্গে সেই দিকে এগিয়ে যেতে লাগল শত্রুপক্ষের সম্মুখীন হবার জন্য।
শয়তানের এই গর্বোদ্ধত ভাব দেখে সহ্য করতে পারল না এ্যাবিদিয়েল। সে তখন ঈশ্বরের মহান কর্মে ব্ৰতী হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। তার কাছে এটা ধর্মযুদ্ধ, এ যুদ্ধ করার অর্থ হলো ঈশ্বরেরই সেবা করা।
সে তখন নির্ভীক অদম্য অন্তরে আবেগের সঙ্গে বলল, হে ঈশ্বর! তোমার অনুরূপ। এক সর্বোচ্চ শক্তিতে ভূষিত হয়ে একটা শয়তান স্বর্গলোকের সীমানার মধ্যে বিচরণ করবে, এটা কখনই শোভা পায় না। যার মধ্যে কোন ঈশ্বরবিশ্বাস বা ঈশ্বরভক্তি নেই, যে ধর্মচ্যুত, যার গুণহীন অন্তরের অসারতা সাহসিকতার ছদ্মরূপে সকলের দৃষ্টিতে অজেয় হিসাবে প্রতীয়মান করে তুলেছে তাকে, সে কেন এমন এক ছলনাময় ঔদ্ধত্যে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে? সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের সহায়তার উপর বিশ্বাস রেখে আমি তার শক্তি পরীক্ষা করব। আমি তার অসার অসত্য যুক্তিগুলিকে এর আগেই মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছি। সত্যের বিতর্কে যে পাশবিক শক্তির বলে সকল যুক্তিকে নস্যাৎ করে তর্কযুদ্ধেও জয়ী হতে চায় তাকে তুমি এখনো কি করে সহ্য করছ?
আপন মনে এ্যাবদিয়েল এই সব বলার পর তার সহযোদ্ধাদের মধ্যে হতে এগিয়ে এসে শয়তানের সম্মুখীন হলো। তার পরম শত্রুর সামনে গিয়ে তার প্রতিরোধ করে বলল, শোন বলগর্বিত অহঙ্কারী, তোমার অভিলাষ কি পূর্ণ হয়েছে? তুমি ভেবেছিলে তোমার অন্যায় অসঙ্গত উচ্চাভিলাষ অবাধে সিদ্ধির সর্বোচ্চ শিখরে উন্নীত হবে। তুমি ভেবেছিলে, ঈশ্বরের অরক্ষিত স্বর্গসিংহাসনের গিয়ে বিনা বাধায় অনায়াসে উপবেশন করবে আর তোমার বাহুবল ও বাক্যবলের জন্য ঈশ্বরের পক্ষভুক্ত সকলে তাঁকে ত্যাগ করে পালিয়ে যাবে। নির্বোধ, এখন বোঝ, সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করার পরিণাম কি ভয়াবহ! এখন দেখ, সেই সর্বশক্তিমানের শক্তি কতখানি। কিভাবে তিনি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র শক্তি হয়ে এক বিরাট দুর্বার বাহিনীর উদ্ভব করে তোমার নিবুদ্ধিতার অসারতাকে ব্যর্থ করে দিয়েছেন। তিনি ইচ্ছা করলে একা কারো সাহায্য না নিয়েই শুধু নিজের হাতে তোমাকে ধ্বংস করে তোমার সমস্ত সেনাবাহিনীকে নরকের অন্ধকারে নিক্ষেপ করতে পারতেন।
এখন দেখতে পাচ্ছি, সকলেই তোমার দলভুক্ত নয়। সে দলের মধ্যে এমন একজনও অন্তত আছে যে ধর্ম ও ঈশ্বরবিশ্বাসকে সবচেয়ে বড় বলে মনে করে। তোমরা সকলেই যখন উদভ্রান্ত হয়ে ভুল পথে যাচ্ছিলে তখন আমি একা তোমাদের দল থেকে বেরিয়ে এসে সত্যের পথ অবলম্বন করি। এবার তাহলে বুঝতে পারছ হাজারজন ভুল করলেও
এ্যাবিদিয়েলের একথা শুনে তার পরম শত্রু শয়তান তখন বলল, হে দুবৃত্ত দেবদূত! আমার দল থেকে পালিয়ে ঠিক সময়েই আমার সামনে এসে পড়েছিস। তোর উপর আমি আমার প্রা প্রথম চরিতার্থ করতে চাই। এবার তোর এ কাজের উপযুক্ত পুরস্কার গ্রহণ কর। আমার উত্তেজিত দক্ষিণ হস্তের প্রথম আক্রমণ তোরই উপরে পতিত হোক। তুই-ই আমাদের সেই ধর্মসভায় তোর শানিত জিহ্বার দ্বারা আমাদের যুক্তিকে খণ্ডন করার দুঃসাহস দেখিয়েছিলি। আমরা যখন আমাদের দৈবশক্তিকে প্রতিষ্ঠিত করার প্রয়াস পাই, আমরা যখন আমাদের মধ্যে এক দৈবশক্তিকে অনুভব করি তখন কেন অন্য একজনকে সর্বশক্তিমান বলে মান্য করব? কিছুতেই তা করব
যাই হোক, এখন তুমি তোমার দলের সকলের থেকে আগে এগিয়ে এসেছ। তুমি আমার পাখা থেকে একটি পালক তুলে আমার গৌরবকে খর্ব করতে চাও, তোমার দলের ধ্বংসকে ডেকে আনতে চাও। তুমি উচ্চাভিলাষী। আমি প্রথমে ভেবেছিলাম স্বর্গে ব্যক্তিস্বাধীনতা এবং ঐশ্বরিক শক্তি এক ও অভিন্ন। কিন্তু এখন দেখছি তোমার মত যারা অপদার্থ তাদেরই কাছে ব্যক্তিস্বাধীনতার কোন মূল্য নেই। তোমাদের কাছে দাসত্ব আর স্বাধীনতার কোন ভেদ নেই। তোমরা শুধু পান-ভোজন বন্দনাগান গেয়েই খুশি।
এ্যাবিদিয়েল তখন তার উত্তরে বলল, হে দেবদূতপ্রধান, এখনো তুমি ভুল করছ এবং তোমার এ ভুলের আর শেষ হবে না কখনো। তোমার এই ভ্রান্ত পথ অন্যের– পথ হতে অনেক দূরে। ঈশ্বরসেবা করার কাজকে তুমি দাসত্বের নামে অন্যায়ভাবে কলুষিত করছ। এই সেবার কাজ প্রকৃতি ও বিধিনির্দিষ্ট। যিনি যোগ্যতম হিসাবে শাসন করেন, যিনি শাসিতদের থেকে সব দিক দিয়ে বড়, যিনি সর্বগুণান্বিত তার সেবা করাকে দাসত্ব করা বলে? বরং যে অবিজ্ঞ অজ্ঞানী, যে ঈর্ষাবশত তার থেকে যোগ্যতর জনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে তার সেবা করাই হলো দাসত্ব। যেমন তোমার অধীনস্থ যারা তোমার সেবা করে তারাই তোমার দাসত্ব করে। আসলে তোমারই কোন স্বাধীনতা নেই। তুমি প্রকৃত স্বাধীনতার মর্ম বোঝ না। তুমি তোমারই সকাম সত্তার দাস, নিজের কাছেই নিজে পরাধীন। তুমি নরকে গিয়ে সেখানকার রাজা হয়ে রাজত্ব করো। আমাকে স্বর্গে থাকতে দাও। আমি চিরকাল সুখে শান্তিতে স্বর্গবাস করে যিনি আমাদের মধ্যে যোগ্যতম, যিনি পরমেশ্বর তার সেবা করে ঐশ্বরিক আদেশ পালন করে ধন্য হতে চাই। শৃঙ্খলিত অবস্থায় আমি নরকবাস করতে চাই না। তুমি বলেছিলে আমি পালিয়ে এসেছি। এবার তোমার অধার্মিক মস্তকে আমার অভ্যর্থনা গ্রহণ করো।
এই বলে ঝড়ের বেগে এত তাড়াতাড়ি শয়তানের মাথায় আঘাত করল এ্যাবিদিয়েল যে শয়তান তা কল্পনাও করতে পারেনি। তার হাত সে আঘাতের প্রতিরোধ করতে পারল না। শয়তান সে আঘাত সহ্য করতে না পেরে দশ পা পিছিয়ে গিয়ে নতজানু হয়ে বসে পড়ল। মনে হলো, ঝড়-জলের প্রচণ্ড আঘাতে অসংখ্য পাইনগাছসহ একটি পাহাড়ের অর্ধেকটা ধসে গেল মাটির তলায়।
তাদের নেতার এই অবস্থা দেখে বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ হয়ে উঠল বিদ্রোহী সেনাদল।
এদিকে মাইকেল ও গ্যাব্রিয়েলের অধীনস্থ দেবসেনাগণ জয়ঢাক বাজিয়ে ঈশ্বরের জয়গান গাইতে লাগল। বিপক্ষ সেনাদল তখন প্রচণ্ড বিক্রমে যুদ্ধ শুরু করল। অজস্র অস্ত্রের ঝংকার নিনাদিত হতে লাগল সমগ্র রণক্ষেত্র জুড়ে। শাঁ শাঁ শব্দে তীর উড়ে যেতে লাগল লক্ষ্যাভিমুখে। রথের চাকাগুলি উন্মত্ত হয়ে ঘুরতে লাগল ক্রমাগত।
উভয় পক্ষের যুদ্ধ ঘোরতর হয়ে উঠল। তুমূল হয়ে উঠল সৈন্যদের চিৎকার ও রণধ্বনি। তখন যদি পৃথিবী থাকত তাহলে সে পৃথিবীর ভিত্তিমূল পর্যন্ত কাঁপতে থাকত। সে এক আশ্চর্যজনক ঘটনা। উভয় পক্ষের লক্ষ লক্ষ দেবদূত যুদ্ধ করতে লাগল। তারা পরস্পরকে একেবারে ধ্বংস করতে না পারলেও বিক্ষত করে তুলছিল বিশেষভাবে। এক একজন সৈন্যকে অনেক সৈন্য বলে মনে হচ্ছিল।
এইভাবে উভয় পক্ষের ক্ষিপ্ত যুদ্ধোন্মত্ত সেনাদল স্বর্গলোক ধ্বংস করে ফেলত। কিন্তু এমন সময় সর্বশক্তিমান সর্বজ্ঞ ঈশ্বর তার প্রাসাদদুর্গের মধ্যে থেকেই যুদ্ধের প্রকৃত অবস্থার কথা জানতে পেরে সৈন্যদের ক্ষমতা সীমায়িত করে দিলেন।
তবু কিন্তু পলায়ন বা পশ্চাদপসরণের কথা ভাবল না তারা। তারা কেউ ভয় পেল না। সকলে আবার অদম্য উদ্যমের সঙ্গে যুদ্ধ করে যেতে লাগল।
শয়তান সেদিন এমন প্রবল বিক্রমের সঙ্গে যুদ্ধ করতে লাগল যে মনে হতে লাগল সে যুদ্ধে তার কোন সমকক্ষ নেই। তবু সে দেখতে পেল অপরাজেয় মাইকেলের অস্ত্রাঘাতে তার সব সৈন্য ভূপতিত হচ্ছে। তা দেখে সে মাইকেলকে নিজে বাধা দেবার জন্য এগিয়ে এল। মাইকেলও তার ঘৃণ্য শত্রুকে বন্দী করে যুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটাতে চাইল। কিন্তু সে তখনই যুদ্ধে প্রবৃত্ত হলো না।
মাইকেল তখন তাকে বলল, হে অশুভ শক্তির জনক, তোমার দৃষ্ট স্বরূপ এই বিদ্রোহের আগে পর্যন্ত অবিদিত ছিল স্বর্গলোকে। এখন তোমার সেই অশুভ স্বরূপ ও পাপপ্রবৃত্তি এই জঘন্য দ্বন্দ্বের মধ্যে প্রকটিত। এখন তোমার মত তোমার অনুগামীরা সকলের ঘৃণার বোঝাভার বহন করছে তোমার এই হীন কাজের জন্য।
একবার ভেবে দেখ, স্বর্গের যে শাস্তি তোমার এই বিদ্রোহের আগে পর্যন্ত অক্ষুণভাবে বিরাজিত ছিল, সে শান্তিকে কিভাবে তুমি বিপন্ন করে তুলেছ, প্রকৃতি জগতের মধ্যে এনেছ কত বিশৃংখলা। একদিন যারা ছিল বিশ্বস্ত ও ন্যায়পরায়ণ সেই হাজার হাজার দেবদূতের মধ্যে হিংসা সঞ্চারিত করেছ। আজ তাদের অবিশ্বস্ততা প্রমাণিত সত্য। কিন্তু ভেবো না তুমি ঈশ্বরের শান্তি ও স্বর্গের পবিত্রতা বিনষ্ট করে তুলবে। ঐশ্বরিক বিধানে এই স্বর্গ হতে তুমি বিতাড়িত, স্বর্গের কোন অংশে আর তোমার স্থান হবে না। পরমসুখে ও অনন্ত শান্তিতে পরিপূর্ণ এই পবিত্র স্বর্গলোক কখনো কোনরূপ হিংসা, বলপ্রয়োগ বা যুদ্ধবিগ্রহ সহ্ করে না। সুতরাং এখন তুমি তোমার দুষ্ট অনুচরদের নিয়ে যত সব অশুভ শক্তির লীলাভূমি নরকে চলে যাও। সেখানে গিয়ে যত খুশি অশান্তি সৃষ্টি করো। যদি না যাও তাহলে প্রতিশোধবাসনায় উদ্ধত আমার এই তরবারি তোমার ধ্বংসসাধন করবে অথবা ঈশ্বরের কোন প্রতিহিংসামূলক উড়ন্ত অস্ত্রের আঘাত তোমার যন্ত্রণাকে দীর্ঘায়িত করবে।
মাইকেল এই কথা বললে তার প্রতিপক্ষ শয়তান বলল, যাকে তুমি এখনো পর্যন্ত কার্যত ভীত করে তুলতে পারনি কে ভেবেছ হাস্তা দিয়ে অর্থাৎ ফাঁকা কথা বলে ভয় দেখাবে? তুমি কি আমার সেনাদলের একজনকেও রণক্ষেত্র হতে পালাতে বাধ্য করেছ অথবা তার পতন ঘটাতে পেরেছ? বরং তারা এক অপরাজেয় বিক্রমের সঙ্গে আমার জন্য যুদ্ধ করতে প্রস্তুত। তাহলে কোন যুক্তিতে রাজকীয় মেজাজের সঙ্গে বলছ আমাকে তাড়িয়ে দেবে স্বর্গ থেকে? ভুলে যেও না এ যুদ্ধের গৌরব আমাদের পক্ষই লাভ করবে। আমরা জয়ী ঘ অথবা এই সমগ্র স্বর্গলোককে নরকে পরিণত করব। আমরা এখানে রাজত্ব করতে না পারলেও স্বাধীনভাবে বাস করতে চাই। আমাদের স্বাধীনতা যেন অবাধ য় এবং কেউ তাতে হস্তক্ষেপ করতে না পারে। যাই হোক, এখন তোমার সাহায্যের জন্য তোমাদের সর্বশক্তিমানকে ডাক। তাকে বল, তোমার পরম শত্রু আমি কিছুতেই পালাচ্ছি না। পালাব না। যুদ্ধে তোমাকে আহ্বান জানাচ্ছি।
এখানেই তাদের কথাবার্তা শেষ হলো। সম্মুখ যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হয়ে উঠল দুজনেই। তাদের সে যুদ্ধ অবর্ণনীয়। কোন মানুষ তা বর্ণনা করা তো দূরের কথা তা কল্পনাও করতে পারে না। তাদের গতিভঙ্গি, আকৃতি ও অস্ত্রশস্ত্রের দিক থেকে জনকেই দুই দেবতার মত মনে হচ্ছিল। মনে হচ্ছিল স্বর্গসাম্রাজ্য কোন পক্ষের অধিকারে থাকবে তা একমাত্র তারাই যেন স্থির করবে। বায়ুস্তর বিদীর্ণ করে তাদের তরবারি দুটি অর্ধবৃত্তাকারে সঞ্চালিত হতে লাগল। তাদের প্রকাণ্ড ঢালদুটি জ্বলন্ত সূর্যের মত দুদিকে দীপ্যমান হয়ে আছে। তাদের সেই যুদ্ধের কাছ থেকে অন্য সেনারা সরে যেতে লাগল ভয়ে।
যুদ্ধে তাদের সেই ক্ষোভ দেখে মনে হচ্ছিল প্রকৃতির নিয়ম ভেঙে জ্যোতিষ্কমণ্ডলী হতে দুটি বিশাল নক্ষত্র মধ্য আকাশে পরস্পরের দিকে পড়তেই তা দু খণ্ড হয়ে গেল। সেই সঙ্গে শয়তানের দক্ষিণ দেহের দিকে সে আঘাতে অনেকটা গভীর ক্ষত হয়ে গেল। জীবনে প্রথম আঘাতের যন্ত্রণা অনুভব করল শয়তান। সে যন্ত্রণায় সে ইতস্তত টলতে লাগল। সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারছিল না।
তবে স্বর্গজাত কোন ব্যক্তির কোন আঘাতে মৃত্যু হয় না বা কোন ক্ষত দীর্ঘস্থায়ী হয় না তার দেহের মধ্যে। তাই শয়তানের সেই ক্ষতস্থান থেকে লাল রক্ত বার হয়ে তার বর্ষটিকে ভিজিয়ে দিলেও তার ক্ষতস্থানটি অল্পক্ষণের মধ্যেই সুস্থ হয়ে উঠল।
সঙ্গে সঙ্গে শয়তানের সাহায্যে একদল বিদ্রোহী সেনা ছুটে এল। আর একদল তাকে ধরাধরি করে তার রথে নিয়ে গিয়ে চাপিয়ে দিল। যুদ্ধক্ষেত্র হতে কিছুটা দূরে ছিল সে রথ। সেখানে কিছুক্ষণ শুয়ে বিশ্রাম করল শয়তান। সেই আঘাতের যন্ত্রণার সঙ্গে সঙ্গে এক অন্তর্বেদনা আচ্ছন্ন করে তুলেছিল শয়তানের মনটাকে। এইভাবে আহত হওয়ায় লজ্জা পাচ্ছিল সে মনে মনে। শক্তিতে সে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের সমকক্ষ তার এই আত্মবিশ্বাস খর্ব হলো অনেকখানি।
তবে কিছুক্ষণের মধ্যে আবার সম্পূর্ণরূপে সুস্থ হয়ে উঠল শয়তান। স্বর্গের দেবদূতদের দেহে কখনো কোন আঘাত মরণশীল মানুষের দেরে মত মারাত্মক হয়ে ওঠে না। তারা ইচ্ছামত যে কোন দেহ ধারণ করতে পারে।
সেই রণক্ষেত্রের অন্য দিকে মাইকেলের মত গ্যাব্রিয়েলও তার অনুরূপ সামরিক শক্তির পরিচয় দিচ্ছিল। গ্যাব্রিয়েল তখন মলোক নামে এক বিদ্রোহী সেনাপতির দ্বারা সাজানো ব্যুহ ভেদকরেরথের দিকে অপ্রতিরোধ্য বেগে ধাবিত হলো। গ্যাব্রিয়েলের কোন কথাতেই সংযত হলো না মলোক। উপরন্তু সে এই বলে আস্ফালন করতে লাগল যে সে গ্যাব্রিয়েলকে তার রথের চাকায় বেঁধে টানতে টানতে নিয়ে যাবে। অথচ কিছুক্ষণের মধ্যেই গ্যাব্রিয়েলের অব্যর্থ আঘাতে তার পৃষ্ঠদেশে আঘাত পেয়ে যন্ত্রণায় হাঁপাতে হাঁপাতে পালিয়ে গেল নাস্তিক মলোক।
এদিকে ইউরিয়েল ও রাফায়েল, আামেকে ও আসমাদাই নামে দুই শত্রুকে পরাজিত করে তাদের পাখায় তাদের বেঁধে নিয়ে উড়ে যেতে লাগল। এ্যাবদিয়েলও বলছিল সেও এরিয়েল, এরিওক, ব্যামিয়েল প্রভৃতি নাস্তিক ঈশ্বরদ্রোহী শত্রুদের পরাভূত করেছে শোচনীয়ভাবে। তাদের সকল গর্ব খর্ব করল। সেই বিস্ময়কর যুদ্ধে বিদ্রোহী দেবতসেনারাও কম শক্তি ও সাহসের পরিচয় দেয়নি। শক্তি, বীরত্ব ও রণকৌশলে তারাও কম চমকপ্রদ ছিল না। কিন্তু তাদের শক্তি ধর্ম এবং ন্যায় ও নীতি হতে ভ্রষ্ট ছিল বলে তাদের সকল বীরত্ব ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয় এবং তার ফলে কোন খ্যাতি বা গৌরব লাভ করতে না পেরে নরকে নির্বাসিত হয় তারা। তলিয়ে যায় বিস্মৃতির চির অন্ধকারে।
বিদ্রোহী সেনাদলের শক্তিমান ও পরাক্রমশালী সেনাপতিরা একে একে পরাজিত ও আহত হওয়ায় যুদ্ধের গতি ফিরে গেল। ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ল তাদের সেনারা। ভগ্ন রথ ও অস্ত্রশস্ত্র ছড়িয়ে রইল সারা রণক্ষেত্র জুড়ে।
প্রতিরক্ষার আর কোন শক্তি রইল না শয়তানের সেনাদলের। ভয়ে, বিস্ময়ে, লজ্জায় ও বেদনায় বিমূঢ় হয়ে এক হীন পরাজয়ের গ্লানি মাথায় নিয়ে পালাতে লাগল তারা। এই পরাজয় ও বেদনাবোধের অভিজ্ঞতা জীবনে আজ প্রথম তাদের।
পাপ আর অবাধ্যতা তাদের জীবনে যে দুঃখ যে অভিশাপ নিয়ে এল সে দুঃখ বা অভিশাপ আগে ছিল না তাদের জীবনে। তারা সকলেই ছিল সাধু প্রকৃতির দেবদূত, সব দিক দিয়ে উন্নত, সকল শত্রুর কাছে অপরাজেয় অপ্রবৃষ্য। এই ঈশ্বরদ্রোহিতার আগে তারা কোন পাপ করেনি, কোন অবাধ্যতা ছিল না তাদের মধ্যে। ফলে যুদ্ধে তারা ছিল অক্লান্ত, কোন আঘাতের বেদনা সহ্য করতে হত না তাদের।
তারপর রাত্রি নেমে এল। অন্ধকারে আচ্ছন্ন হয়ে উঠল স্বর্গলোক ও সমগ্র আকাশমণ্ডল। স্তব্ধ হয়ে গেল যুদ্ধের সকল ধ্বনি। রাত্রির নিবিড় অন্ধকারে আশ্রয় গ্রহণ করল বিজেতা আর বিজিতের দল।
যুদ্ধশেষের সেই রণপ্রান্তরে মাইকেল তার দেবদূত-সেনাদের নিয়ে বিজয়ানন্দে শিবিরমধ্যে বিশ্রাম করতে লাগল। জ্বলন্ত মশাল হাতে প্রহরীরা পাহারা দিতে লাগল।
অন্যদিকে শয়তান তার বিদ্রোহী সেনাদের নিয়ে দূরে নিরাশ্রয় অবস্থায় অদৃশ্য হয়ে গেল অন্ধকারের মধ্যে। তারপর তার দলের প্রধানদের নিয়ে মন্ত্রণাসভায় বসল।
সে নির্ভীকভাবে বলতে লাগল, হে আমার প্রিয় সহচরগণ, তোমরা আজ যুদ্ধে তোমাদের যে বিক্রম ও সামরিক শক্তির পরিচয় দিয়েছ তা নির্জিত হয়নি এখনো শত্রুদের দ্বারা। তোমাদের এই শক্তি আজ এই কথাই প্রমাণ করে যে তোমরা শুধু স্বাধীনতার যোগ্য নও, সেই সঙ্গে সম্মান, রাজত্ব, গৌরব ও খ্যাতিরও অধিকারী। একদিনের যুদ্ধে যে শক্তির পরিচয় দান করেছ তোমরা, অনন্তকাল ধরে সে শক্তিতে সমৃদ্ধ কেন থাকবে না তোমরা? স্বর্গাধিপরি কি এমন সার্বভৌম ক্ষমতা আছে। যে তিনি তাঁর ইচ্ছার কাছে আমাদের মাথা নত করানোর জন্য আমাদের বিরুদ্ধে সেনাদল পাঠিয়ে তাঁর রাজক্ষমতা প্রয়োগ করেছেন? সে শক্তির প্রমাণ কি, পরিচয় কি দিয়েছেন তিনি? সে শক্তি তো এখনো প্রমাণিত হয়নি নিঃসংশয়িরূপে।
এখনো পর্যন্ত তিনি সর্বশক্তিমান হিসাবে পরিগণিত হলেও ভবিষ্যতে তাঁর পতন ঘটবেই। একথা সত্য যে, আমাদের অস্ত্রশস্ত্র অপ্রচুর আর অপ্রতুল থাকার জন্য যুদ্ধে কিছু অসুবিধায় পড়তে হয়েছে আমাদের এবং তার জন্য কিছু আঘাতজনিত ক্ষত ও ব্যথা-বেদনা সহ্য করতে হয়েছে। কিন্তু আগে যে সত্যটি আমরা জানতাম না তা আজ জানলাম। আজ আমরা একথা বাস্তব অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে জেনেছি যে আমাদের দৈব দেহাবয়ব মরণশীল জীবের মত কোন মারাত্মক আঘাতের অধীন নয়, কারণ আমরা অক্ষয় অমর। আমাদের দেহে কোন আঘাতজনিত ক্ষত হলেও সে ক্ষত আপন অন্তর্নিহিত শক্তিবলে আরোগ্য হয়ে ওঠে অল্পকালের মধ্যে।
সুতরাং যুদ্ধে আমাদের বিপদের ঝুঁকি যখন কম তখন সহজেই প্রতিকারের উপায় নির্ধারণ করতে পারি। আমরা যদি আরও উন্নত ধরনের অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে পরে শত্রুদের সম্মুখীন হই তাহলে আমাদের হয়ত ভাল হবে এবং শত্রুদের খারাপ হবে, অথবা উভয় পক্ষের শক্তির সমতা প্রমাণিত হবে। আর যদি আমাদের উপর তাদের শ্রেষ্ঠত্বের পিছনে কোন অজ্ঞাত কারণ থাকে তাহলেও আমরা আমাদের অক্ষুণ্ণ মনোবল ও অবিচল বুদ্ধির দ্বারা এ বিষয়ে উপযুক্ত অনুসন্ধান ও আলোচনা করে সে কারণকে প্রকাশ করব।
এই বলে সেই মন্ত্রণাসভায় বসে পড়ল শয়তানরাজ। তখন নিসরুক নামে এক প্রধান নেতা উঠে দাঁড়াল। তাকে খুবই রণক্লান্ত দেখাচ্ছিল। তার আহত ও ক্ষতবিক্ষত বাহুদুটির জন্য প্রচণ্ড ব্যথা নিয়ে যুদ্ধক্ষেত্র হতে পালিয়ে আসে সে। তার চেহারাটাকে স্নান দেখাচ্ছিল মেঘাচ্ছন্ন সূর্যের মত।
নিসরক বলতে লাগল, হে আমাদের পরিত্রাতা, আমাদের স্বাধীনতা ও স্বাধিকারের প্রবক্তা, এমন কি দেবতারা যে স্বাধীনতা, যে অধিকার ভোগ করতে পারে না আমরা যাতে সেই স্বাধীনতা ও অধিকার ভোগ করতে পারি তারই জন্য সংগ্রাম করছ তুমি। কিন্তু এই সংগ্রামে আমরা কি বুঝেছি? আমরা বুঝেছি ঈশ্বরের অনুগত দেবসেনাদের সমকক্ষ নই আমরা। অস্ত্রশস্ত্রের দিক থেকে অসম দুই পক্ষে কি যুদ্ধ সম্ভব? আমরা যারা আঘাত ও ব্যথা-বেদনার অধীন তারা কি যারা ব্যথা-বেদনার অতীত তাদের সঙ্গে মর্যাদাসহকারে যুদ্ধ করতে পারে? এর ফল অশুভ হতে বাধ্য আমাদের। এতে শুধু আমাদের আসন্ন সর্বনাশেরই সম্ভাবনা বিদ্যমান। যে ব্যথা যে বেদনা সকলকে প্রতিপক্ষের বশীভূত করে তোলে, শুধু পরাজয় আর পলায়নী মনোবৃত্তির জন্ম দেয় সেই ব্যথা-বেদনার অধীন হয়ে শুধু সাহস আর অতুলনীয় শক্তি নিয়ে কি করব আমরা? তার কি মূল্য আছে আমাদের কাছে? এতে শুধু সর্বশক্তিমানের হাতই শক্ত হবে। অবশ্য আমরা জীবনের সব আনন্দ হারিয়ে অনুতাপ বা অনুশোচনাহীন এক কৃত্রিম সন্তোষের মধ্যে মনপ্রাণকে কেন্দ্রীভূত করে শান্ত থাকতে পারি। কিন্তু যন্ত্রণার মত জীবনে দুঃখ আর নেই, এই যন্ত্রণা বেদনাই জীবনে সবচেয়ে অশুভ ও অবাঞ্ছিত ঘটনা। এই যন্ত্রণা যখন আতিশয্যে অসহনীয় হয়ে ওঠে তখন তা সকল ধৈর্য ও সহিষ্ণুতার বিচ্যুতি ঘটায়।
সুতরাং এখন কেউ যদি আমরা কিভাবে অধিকতর শক্তি সঞ্চয় করে ও উপযুক্ত অস্ত্রশস্ত্র সংগ্রহের দ্বারা শত্রুদের সমতুল প্রতিরক্ষার ব্যবস্থা করতে পারি এবং তার ফলে অপযুদস্ত শত্রুদের পযুদস্ত করতে পারি তার উপায় নির্ধারণ করতে পারেন তাহলে তিনিই হবেন আমাদের আকাঙিক্ষত মুক্তির মৃত প্রতীক।
একথা শুনে শয়তানরাজ তার স্থির দৃষ্টি নিবদ্ধ করে বলল, তুমি ঠিকই বলেছ। সে উপায় তো অনির্ধারিত বা অনাবিষ্কৃত নেই। বৃক্ষলতা, ফুল, ফল, মণিমুক্তা, স্বর্ণ প্রভৃতির দ্বারা পরিশোভিত আমাদের এই বাসভূমি স্বর্গলোকের উজ্জ্বল উপরিপৃষ্ঠটি আমাদের মধ্যে যারা দেখেছে তারা কিন্তু ভাবতে পারেনি, এই উপরিপৃষ্ঠের অন্তরালে এই ভূখণ্ডের গভীর অন্ধকার গর্ভে কত অজানিত অপরিজ্ঞাত সম্পদ লুকিয়ে আছে।
উপযুক্ত আলোকপাতের দ্বারা সেই সব সম্পদ আহরণ করে অগ্নির দ্বারা পরিশোধিত করে আমাদের কার্যসিদ্ধি করব। সেই সব সম্পদ থেকে অগ্নিগর্ভ বজ্রের মত এমন এক ভয়ঙ্কর ক্ষতিকারক অস্ত্র নির্মাণ করে তা শত্রুদের প্রতি নিক্ষেপ করব যা আমাদের সকল প্রতিপক্ষের অগ্রপ্রসারী ও আক্রমণোদ্যত শক্তিকে ছিন্নভিন্ন করে দেবে। তখন তারা বুঝতে পারবে তাদের বস্ত্রধারীর বজ্রকেও হার মানিয়েছি আমরা। এর জন্য দীর্ঘায়িত শ্রমের প্রয়োজন হবে না। রাত্রি প্রভাত হবার আগেই ফলবতী হয়ে উঠবে আমাদের অভিলাষ। সুতরাং ভয় ত্যাগ করে নূতন প্রাণশক্তিতে সঞ্জীবিত হয়ে ওঠ। এ কাজ মোটেই কঠিন বলে মনে করো না। হতাশার কিছু নেই।
শয়তানের কথা শেষ হবার সঙ্গে সঙ্গে তার সেনাদলের নিরানন্দ মন আনন্দে উজ্জ্বল হয়ে উঠল আবার। উদ্দীপিত হয়ে উঠল তাদের সকল আশা। সাফল্যের মূলমন্ত্রস্বরূপ সেই উপায় উদ্ভাবনের প্রশংসা করতে লাগল সকলে। তাদের দলের অনেকে ভাবল এ উপায় যখন পাওয়া গেছে তখন তা খুব সহজ এবং তাদের যে কেউ তা আবিষ্কার করতে পারে। আবার অনেকে ভাবল তা যখন এখনো কার্যকরী হয়নি তখন তা অসম্ভব।
হে মানবজাতি, ভবিষ্যতে হয়ত হিংসার বশবর্তী হয়ে আবার কোন শয়তানী বুদ্ধি ও কৌশলের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে মানবসন্তানদের ধ্বংস করার জন্য অনুরূপ এক অস্ত্র আবিষ্কার করবে। পাপযুদ্ধে পরস্পর পরস্পরকে বধ করবে।
শয়তানের কথামত সেই বিদ্রোহী সেনাদল মন্ত্রণাসভা ত্যাগ করে কর্মে প্রবৃত্ত হলো। কেউ কোন কথা বলল না, কেউ দাঁড়িয়ে রইল না আলস্যভরে। অসংখ্য হস্ত এগিয়ে এল কর্মে যোগদান করার জন্য। মুহূর্তমধ্যে তারা স্বর্গলোকের উপরিপৃষ্ঠের মাটি সরিয়ে তার গর্ভে দেখল প্রকৃতির মূল উপাদানের সঙ্গে সালফার ও নাইট্রোজেন দুটি ধাতু রয়েছে। তারা কৌশলে সেই দুটি ধাতু মিলিয়ে কাজে লাগাবার মত একরকম বস্তু তৈরি করে সেগুলি সঞ্চয় করে রাখল। তারপর আরও মাটি খুঁড়ে পৃথিবীর ভূগর্ভনিহিত ধাতব পদার্থের মত দাহিকাশক্তিসম্পন্ন এক পদার্থ দেখতে পেল। সামান্য অগ্নিসংযোগেই তা ভয়ঙ্কর ক্ষেপণাস্ত্রের রূপ ধারণ করবে। এইভাবে রাত্রি শেষ হবার আগেই গোপনে সকলের অলক্ষ্যে অগোচরে সর্ব কার্য সাধন করল।
তারপর পূর্বদিকের আকাশে প্রভাতের আলো দেখা দিলে বিজেতা দেবদূতেরা উঠে পড়ে অস্ত্র ধারণ করল। রণসজ্জায় সাজতে লাগল। যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হয়ে দলবদ্ধভাবে দাঁড়াল তারা। তাদের মধ্যে একটি দল প্রভাতকিরণমণ্ডিত পর্বতশীর্ষ হতে চারদিকে তাকিয়ে শত্রুদের খোঁজ করতে লাগল। শত্রুরা পালিয়ে গেছে না দূরে কোথায় আছে, তারা সচল না অচল অবস্থায় আছে তা লক্ষ্য করতে লাগল।
এমন সময় তারা দ্রুতগতিসম্পন্ন পাখা বিস্তার করে চেরাবিম জাতীয় দেবদূত জেফিয়েলকে উড়ে আসতে দেখল তাদের দিকে। মাঝপথে এসে শূন্য থেকে সে তাদের বলল, যোদ্ধারা অস্ত্র ধারণ করো। যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হও। যে শত্রুরা পালিয়ে গেছে ভেবেছিলাম সে সব শত্রুরা ঠিকই আছে, তাদের আর সন্ধান করতে হবে না কষ্ট করে। আমি তাদের মুখে দেখেছি এক বিষাদগম্ভীর সংকল্প আর দৃঢ় আত্মপ্রত্যয়ের ছাপ। সুতরাং তোমরা প্রত্যেকে বর্ম পরিধান করো, শিরস্ত্রাণ নাও মাথায় আর বাণগুলি শক্ত করে ধর। সে বাণগুলিকে উর্ধ্বে তুলে ধর। কারণ আমি বুঝতে পেরেছি আজ কোন গুঁড়িগুড়ি তীরবৃষ্টি নয়, আজ জ্বলন্ত তীরের ঝড় বয়ে যাবে।
এই বলে তার দলের সেনাবাহিনীকে সতর্ক করে দিল জেফিয়েল। সচেতন করে দিল তাদের কর্তব্যকর্ম সম্বন্ধে। দেবসেনাবাহিনীও সর্বতোভাবে প্রস্তুত হয়ে অগ্রসর হতে লাগল। অবিলম্বে তারা দেখল এক বিশাল শত্রুবাহিনী দ্রুতগতিতে এগিয়ে আসছে। সেই বিশাল বাহিনী তাদের মধ্যে নবোদ্ভাবিত আগ্নেয়াস্ত্রগুলিকে এমনভাবে ঢেকে আনছিল যাতে অপরপক্ষ দেখতে না পায়।
অগ্রসরমান শত্রুবাহিনী হঠাৎ থেমে গেল কিছুক্ষণের জন্য। তখন শয়তানরাজ তাদের সামনে এসে তাদের সম্বোধন করে বলতে লাগল, তোমরা ডাইনে-বাঁয়ে সরে গিয়ে মাঝখানটা ফাঁক করে দাও। যারা আমাদের ঘৃণা করে তারা দেখুক কি ধরনের শান্তি চাই আমরা। তাদের অভ্যর্থনা জানাবার জন্য প্রস্তুত হও। এবার এমনভাবে আমাদের আবিষ্কৃত আগ্নেয়াস্ত্রগুলি ছাড় যাতে ঈশ্বর নিজে তা দেখতে পান, যাতে সকলে তার আওয়াজ শুনতে পায়।
শয়তানের এইসব দ্ব্যর্থবোধক কথাগুলি শেষ হতে না হতেই তার সেনাদল দুভাবে বিভক্ত হয়ে ডাইনে-বাঁয়ে দুটি বিশেষ স্তম্ভের মত দাঁড়াল। মাঝখানটা ফঁক রইল। সৈন্যদের প্রত্যেকের হাতে ছিল একটি করে আগ্নেয়াস্ত্র অর্থাৎ অগ্নিময় বাণ। আমরা তা দেখে আশ্চর্যান্বিত হয়ে গেলাম। এরপর তারা সেই সব বাণ নিক্ষেপ করতে লাগল আমাদের লক্ষ্য করে। সহসা ধূমপরিবৃত জ্বলন্ত অগ্নিশিখায় আকাশ আচ্ছন্ন হয়ে গেল। তার থেকে নিঃসৃত গম্ভীর গর্জনে বিদীর্ণ হয়ে যেতে লাগল বিশুদ্ধ বায়ুস্তর। আমাদের নাড়িভূঁড়ি যেন ছিঁড়ে যেতে লাগল। বজ্র হতে নির্গত অগ্নিময় লৌহগোলকের মত অস্ত্রগুলি বিজেতা সৈন্যদলের উপর নিক্ষিপ্ত হতে লাগল। সেগুলি এমন ভয়ঙ্কর জোরের সঙ্গে আঘাত হানতে লাগল যে সে আঘাত পাবার সঙ্গে সঙ্গে কেউ দাঁড়াতে পারছিল না পায়ের উপর ভর দিয়ে। হাজার হাজার আমাদের দেবদূতসেনা পড়ে যেতে লাগল।
আমাদের অস্ত্রগুলি সব যেন বিকল হয়ে গেল। অস্ত্র থেকেও আমরা নিরস্ত্র হয়ে উঠলাম। আমরা যেন কি করব তা ভেবে পেলাম না। আমাদের সেনাদল যদি এইসব সত্ত্বেও এগিয়ে যায় তাহলে তাদের আবার ফিরে আসতে হবে। কারণ তাদের সেইসব ভয়ঙ্কর আগ্নেয়াস্ত্রের সামনে দাঁড়াতে পারবে না তারা। তারা তাহলে হাস্যাস্পদ হয়ে উঠবে শত্রুদের সামনে। দ্বিগুণ বেড়ে যাবে তাদের লজ্জা। কারণ দ্বিতীয় পর্যায়ে আর একঝাক সেই আগ্নেয়াস্ত্র যোগানোর জন্য প্রস্তুত হয়েছিল আর একটি দল।
শয়তান যখন আমাদের অবস্থা দেখে উপহাস করে তার দলের সেনাদের বলতে লাগল, বন্ধুগণ, ঐ সব দর্পিত বিজেতা সেনাদলের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ছ না কেন? আমরা তো ওদের উন্মুক্ত বক্ষে খোলা মন নিয়ে আহ্বান জানাচ্ছি। তবু ওরা কেন পিছিয়ে যাচ্ছে এবং পালাচ্ছে? ওরা দাঁড়াতে পারছে না, টলছে। যেন মনে হচ্ছে আমাদের শক্তির নমুনা দেখে আনন্দে উন্মত্ত হয়ে নৃত্য করছে। আমার মনে হচ্ছে আমাদের এই শান্তির প্রস্তাব যদি দ্বিতীয়বার ওরা শুনতে পায় তাহলে তার ফল খুব শীঘ্রই পাওয়া যাবে।
তখন বিলায়েল নামে ওদের এক সেনা তেমনি বিদ্রুপাত্মক স্বরে বলল, হে আমাদের প্রিয় নেতা, আমরা আমাদের শান্তিচুক্তির যে শর্তাবলী পাঠিয়েছিলাম তা যেমনি ভয়ঙ্কর তেমনি জ্বালাময়। তা সহ্য করতে না পেরে অনেকে পড়ে যায়। সেগুলি যাদের উপর পড়ে তাদের পা থেকে মাথা পর্যন্ত হাড়ে হাড়ে বুঝতে পারবে।
এইভাবে শত্রুরা আনন্দ করতে লাগল। তাদের জয় সম্বন্ধে আর কোন সন্দেহ রইল না তাদের মনে। অনেক উর্ধ্বে উঠে গেল তাদের চিন্তা। তারা বুঝতে পারল যে অস্ত্র তারা আবিষ্কার করেছে তা সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের শক্তির সমতুল। শুধু সমতুল নয়, আরও বড়। তারা ঈশ্বরের অমোঘ বজ্ৰাস্ত্রকেও হার মানিয়ে দিয়ে তাকে হাস্যাস্পদ করে তুলবে।
এইভাবে আমাদের সেনাদল শত্রুদের উপহাসের পাত্র হয়ে কিছুক্ষণ বিহ্বল হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। কিন্তু বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকল না। প্রচণ্ড ক্রোধ ও অপমানের জ্বালায় তারা অবশেষে শত্রুদের প্রতিরোধ করার মত এক অস্ত্র খুঁজে পেল। সর্বশক্তিমান ঈশ্বর তার দেবসেনাদের মধ্যে সহসা এক বিস্ময়কর শক্তি সঞ্চারিত করলেন।
আমাদের সেনারা তখন তাদের নিজেদের অস্ত্র ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে যে পাহাড়ের উপর তারা দাঁড়িয়ে ছিল সেই পাহাড়ের পাথরগুলোকে হাতে তুলে এনে ছুঁড়তে লাগল শত্রুদের লক্ষ্য করে।
বিদ্রোহী সেনারা ভয় পেয়ে গেল। তারা ভয়ে ভয়ে এগিয়ে এসে দেখল শত্রুরা পাথর তুলতে তুলতে গোটা পাহাড়টাকে যেন তার তলদেশ সমেত উপড়ে ফেলছে। ক্রমাগত পাথর বর্ষণের ফলে তাদের আগ্নেয়াস্ত্রগুলো সব বিকল হয়ে যাচ্ছে পাথরের চাপে। তাদের সমস্ত আত্মবিশ্বাস সেই সব পাথরের চাপে নিষ্পেষিত হয়ে যেতে লাগলো, প্রপীড়িত হতে লাগলো সশস্ত্র বিদ্রোহী সেনার দল।
তাদের দেহে বর্ষ থাকার জন্য তাদের কষ্ট আরও বেড়ে যেতে লাগল। কারণ পাথরের জোর আঘাতে লোহার বর্মগুলো ভেঙে খানখান হয়ে যাওয়ায় তাদের গাগুলো ছিঁড়ে-খুঁড়ে গেল এবং ক্ষতবিক্ষত হতে লাগল তাদের গাগুলো। যন্ত্রণায় আর্তনাদ করতে লাগল তারা।
যে পাহাড়ের উপর বিদ্রোহী সেনারা দাঁড়িয়ে ছিল সেই পাহাড়টার উপর দিকটা দেবসেনাদের দ্বারা পাথর নিক্ষেপের ফলে ভেঙে যেতে লাগল। বিদ্রোহী সেনারা তখন সে পাহাড় থেকে নেমে এসে শেষ চেষ্টা হিসাবে মরীয়া হয়ে যুদ্ধ করতে লাগল। উভয় পক্ষের চিৎকার-চেঁচামেচিতে তুমুল গোলমাল ধ্বনিত হতে লাগল। সে যুদ্ধে সমগ্র স্বর্গলোক বিকম্পিত হয়ে এক প্রবল ধ্বংসের সম্মুখীন হলো।
এমন সময় সর্বশক্তিমান পরম পিতা তার পবিত্র সিংহাসনে বসে তার অলৌকিক ঐশ্বরিক শক্তিবলে যুদ্ধের অবস্থার কথা সব জানতে পেরে তাঁর অনুগত অনুচরদের সঙ্গে পরামর্শ করতে লাগলেন। তিনি বললেন তার মহান উদ্দেশ্য সিদ্ধির জন্য তার পুত্র গিয়ে শত্রুদের উপর চরম প্রতিশোধ নিয়ে তার ঐশ্বরিক শক্তি ও যোগ্যতার পরিচয় দিক। তার সিংহাসনের উত্তরাধিকারী হিসাবে তার যোগ্যতাকে প্রমাণিত করুক।
পরম পিতা এবার তাঁর পুত্রকে বললেন, হে আমার প্রিয় পুত্র, আমার গৌরবের উজ্জ্বল প্রতীক মূর্তি আমার অদৃশ্য মুখমণ্ডল তোমার মুখের মধ্যেই হয়ে ওঠে পরিদৃশ্যমান। আমার পরেই তুমি দ্বিতীয় সর্বশক্তিমান। দুই দিন গত হয়ে গেল আমাদের হিসাবে। মাইকেল তার সেনাদলসহ অবাধ্য বিদ্রোহীদের দমন করতে গেছে। তারা ঘোরতর যুদ্ধে প্রবৃত্ত। তুমি জান ব্যাপারটা আমি তাদের উপরেই ছেড়ে দিয়েছিলাম। সৃষ্টির দিক থেকে সমস্ত দেবদূতই সমান, তারা সকলেই সমান শক্তিমান। শুধু পাপপ্রবৃত্তির ফলে শক্তিতে কিছুটা হীন হয়ে পড়ে বিদ্রোহী দেবদূতেরা। তবু তাদের জৈব দেহাবয়ব ধ্বংস হবে না কিছুতেই। যত যুদ্ধই হোক, শেষ পর্যন্ত জীবিত থাকবে তারা। সুতরাং কোন সমাধানই হবে না, নিষ্পত্তি হবে না এ যুদ্ধ ও বিরোধের।
একদিকে পাহাড়ের পাথর আর একদিকে আগ্নেয়াস্ত্র–এইভাবে দুপক্ষে যুদ্ধ চলছে। কিন্তু স্বর্গলোকে এই ধরনের বিধ্বংসী যুদ্ধ চলতে দেওয়া উচিত নয়। দু দিন তখন হয়ে গেছে। এখন তৃতীয় দিনে তুমি গিয়ে যুদ্ধের অবসান ঘটাবে। এটাই আমার বিধান। এ কাজ একমাত্র তোমার দ্বারাই সম্ভব। তোমার মধ্যে আমি এমন সব আলোকসামান্য গুণের গরিমা ও অতুলনীয় শক্তির মহিমা প্রভূত পরিমাণে সঞ্চারিত করেছি যাতে স্বর্গ ও নরকের সকলে সে গুণ ও শক্তির পরিচয় পেয়ে স্তম্ভিত হয়ে পড়ে। এই অন্যায় বিদ্রোহ দমন করে স্বর্গরাজ্যের একমাত্র উত্তরাধিকারী হিসাবে তোমার যোগ্যতাকে একান্তভাবে সপ্রমাণিত করবে তুমি।
সুতরাং পিতার শক্তিতে সর্বশক্তিমান হয়ে রথে চড়ে এখনি চলে যাও। আমার সৈন্যসামন্ত এবং ধনুর্বাণ ও বজ্র এই অমোঘ অস্ত্রটি নিয়ে যাও। তোমার কটিদেশে থাকবে তরবারি। দ্রুতগতিতে রথ চালনা করবে। সেই সব অপরিণামদশী বিদ্রোহীদের স্বর্গলোকের ত্রিসীমানা থেকে বিতাড়িত করে নরকের গভীর অন্ধকারে নিক্ষেপ করবে। সেখানে গিয়ে তারা বুঝতে পারবে ঈশ্বর ও তার পুত্রকে অবজ্ঞা করার পরিণাম কী ভীষণ।
ঈশ্বর এই কথাগুলি বললে তাঁর পুত্রের মুখমণ্ডলে এক স্থির জ্যোতি ফুটে উঠল। তিনি পরমপিতার কথাগুলি হৃদয়ঙ্গম করলেন যথাযথভাবে। তারপর পিতার প্রতি ভক্তিনম্র চিত্তে বললেন, হে স্বর্গাধিপতি, পরমপিতা, তুমি সর্বোচ্চ, সর্বোত্তম ও পবিত্রতম। তুমি সকল সময় তোমার পুত্রকে গৌরবান্বিত করতে চাও। আমিও স্বাভাবিক ও ন্যায়সঙ্গতভাবে তোমাকে গৌরবান্বিত করতে চাই। তোমার গৌরবেই আমার গৌরব, তোমার আনন্দেই আমার আনন্দ। তোমার ইচ্ছাপূরণ করাতেই আমার পরম সুখ। তুমি যে রাজদণ্ড, রাজক্ষমতা ও দায়িত্বভার অর্পণ করেছ আমাকে আমি তা সানন্দে বহন করে যাব। তুমি কিন্তু শেষ পর্যন্ত সর্বেসর্বা রয়ে যাবে। তুমি সর্বশক্তিমানই থাকবে এবং তোমার শক্তিতেই আমি হব শক্তিমান। তুমি যাদের ভালবাস তারা হবে আমার আশ্রিত। তুমি যাদের ঘৃণা করো আমিও তাদের ঘৃণা করব। তোমার করুণাময় মূর্তির মত তোমার ভীতিপ্রদ মূর্তিটিও মূর্ত আমার মধ্যে। সকল বিষয়েই আমি তোমার প্রতিরূপ। আমি তোমার শক্তিতে শক্তিমান হয়ে স্বর্গলোককে মুক্ত করব বিদ্রোহীদের কবল থেকে। তাদের কু-উদ্দেশ্যে নির্মিত দুর্গ হতে বিতাড়িত করে কীটকণ্টকিত নরকের অন্ধকারে নিক্ষেপ করব। এইভাবে অন্যায়কারী ঈশ্বরদ্রোহীদের শাস্তি দেব। বুঝিয়ে দেব তোমার প্রতি অকুণ্ঠ আনুগত্যেই আছে পরম সুখ। তারপর তোমার ভক্তবৃন্দের সঙ্গে সুর মিলিত করে স্তোত্রগান করব।
এই বলে তার আসন হতে রাজদণ্ড হাতে উঠে পড়ল ঈশ্বরপুত্র। তখন স্বর্গলোকে ছড়িয়ে পড়ল তৃতীয় দিনের পবিত্র প্রভাতের আলো। সঙ্গে সঙ্গে শুরু হলো অভিযান। পরম পিতার রথটি উজ্জ্বল আলোক বিকীর্ণ করতে করতে আপন বেগে এগিয়ে চলতে লাগল। সে রথে কোন অশ্ব যযাজিত ছিল না। স্বয়ংচালিত সেই রথে ঈশ্বরপুত্র ছাড়া ছিল চারজন চেরাবজাতীয় দেবদূত। তাদের মাথার উপর নীল শূন্যে নীলকান্তমণিখচিত সিংহাসনের উপর ঈশ্বরপুত্র আরূঢ় ছিলেন। তাঁর একপাশে ছিল ঈশ্বরের মত পাখাবিশিষ্ট বিজয়মূর্তি। তার একপাশে ছিল একটি বড় ধনুক আর একটি তুণের মধ্যে দ্বিমুখী বজ্র। তার চারপাশে ধূমায়িত অগ্নিশিখা হতে অসংখ্য ফুলিঙ্গ নির্গত হচ্ছিল। তিনি হাজার হাজার সাধুপ্রকৃতির দেবদূতদের দ্বারা পরিবৃত ছিলেন। তার পশ্চাতে ছিল অসংখ্য রথ।
দূর হতে অসংখ্য রথ সেনাসমভিব্যাহারে স্বচ্ছ আকাশপথে উজ্জ্বলভাবে আসতে দেখে মাইকেল যুদ্ধ বন্ধ করে পাহাড়ের পাথরগুলিকে সাজিয়ে রাখতে লাগল যথাস্থানে। ঈশ্বরপুত্রের আগমনের সঙ্গে সঙ্গে পাহাড়টি আবার পুষ্পিত গাছপালায় শোভিত হয়ে উঠল।
হতভাগ্য শত্রুরা তাঁকে দেখেও স্থির অনমনীয় হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। তারা কিছু না জেনেই হতাশা থেকে কোনরকমে আশা আহরণ করে তাদের সমস্ত শক্তিকে যুদ্ধের জন্য সংহত করল। কোন স্বর্গীয় আত্মার মধ্যে কখনো এই ধরনের বিকৃত প্রবৃত্তি থাকতে পারে না। কিন্তু যারা অহঙ্কারী, উদ্ধত ও ঈশ্বরদ্রোহী তারা স্বর্গবাসী হলেও কখনো কোন লক্ষণ থেকে কিছু শিক্ষা পায় না। কোন অলৌকিক আশ্চর্যজনক ঘটনা দেখেও তাদের অনমনীয় আত্মা নত হয় না।
ঈশ্বরপুত্রের অলৌকিক শক্তি ও ঐশ্বর্য দেখেও তারা পরিশুদ্ধ ও নত হওয়ার পরিবর্তে কঠোর হয়ে উঠল আরও। তাঁর সমুন্নত অবস্থা ও ঐশ্বর্য দেখে তাদের মধ্যে ঈর্ষা জাগল, প্রবল হয়ে উঠল তাদের অসঙ্গত উচ্চাভিলাষ। তারা আরও ভয়ঙ্করভাবে যুদ্ধ করার জন্য প্রস্তুত হয়ে উঠল। তারা স্থির করল মনে মনে হয় তারা তাদের শক্তি বা প্রতারণার দ্বারা ঈশ্বর ও তার পুত্রের উপর নিজেদের প্রভুত্বকে প্রতিষ্ঠিত করবে, হয় তারা জয়লাভ করবে আমরা শোচনীয় পতন বা সর্বনাশকে বরণ করে নেব। এইভেবে তারা শেষ যুদ্ধের জন্য সমবেত হলো।
ঈশ্বরপুত্র তখন তার দুদিকে সারিবদ্ধভাবে দণ্ডায়মান সেনাদলকে সম্বোধন করে বললেন, হে সশস্ত্র দেবদূতগণ ও সাধু আত্মাগণ, এখন সারিবদ্ধ ও সুশৃঙ্খলভাবে দাঁড়াও। আজ যুদ্ধ থেকে নিবৃত্ত থাক। তোমরা আজ ঈশ্বরের ন্যায়সঙ্গত উদ্দেশ্য সিদ্ধির জন্য যুদ্ধ করতে এসেছ। তোমাদের এই কাজ ঈশ্বরের দ্বারা সমর্থিত। তোমরা তাই অজেয় এ যুদ্ধে। কিন্তু অন্যদিকে এ সব অভিশপ্ত বিদ্রোহী সেনাদের চরম শাস্তি পেতেই হবে। তোমাদের সংখ্যা বা শক্তির পরিমাণ যাই হোক, তোমরা শুধু দেখ ঈশ্বরের রোষাগ্নি ঈশ্বরদ্রোহী নাস্তিকদের উপর আমার মধ্য দিয়ে কিভাবে ঝরে পড়ে। ওরা তোমাদের অবজ্ঞা বা তুচ্ছজ্ঞান করেনি, করেছে আমাকে। তারা আমার প্রতি ঈর্ষান্বিত ও ক্রুদ্ধ। কারণ ঈশ্বরের যা কিছু রাজক্ষমতা ও গৌরব আছে তা তিনি আমাকেই দান করেছেন। তার ইচ্ছামত প্রভূত সম্মানে ভূষিত করেছেন আমাকে।
তাই তাদের ধ্বংসসাধনের ভার আমারই উপর ন্যস্ত করেছেন পরম পিতা। তারা তাদের ইচ্ছাপূরণের জন্য আমার সঙ্গে যুদ্ধ করবে। আমার ও তাদের মধ্যে এ যুদ্ধে কে বেশি শক্তিশালী–এটাই দেখতে চায় কারণ শুধু শক্তির মাধ্যমেই সকলের সব মহত্ত্বকে যাচাই করতে চায়। অন্যান্য গুণের বিচার করতে চায় না তারা। সুতরাং আমি আমার শক্তিরই পরীক্ষা দিতে চাই তাদের সমক্ষে।
এই কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে ঈশ্বরপুত্রের মুখমণ্ডল এমন ভীতিপ্রদ হয়ে উঠল যে সেদিকে তাকানোই যায় না। এবার তার রোষকশায়িত কুটি শত্রুদের করলেন তিনি।
সঙ্গে সঙ্গে তার রথের উপর যে চারজন দেবদূত ছিল তারা তাদের নক্ষত্রখচিত পাখাগুলি মেলে ধরল। তার ফলে এক বিরাট ছায়া বিস্তৃত হয়ে ছড়িয়ে পড়ল চারদিকে। রথের চাকাগুলি বন্যা বা প্রবল জলোচ্ছাসের গর্জনের মত প্রচণ্ড শব্দ তুলে বিষাদের অন্ধকারে নিমজ্জিত শত্রুদের দিকে এগিয়ে যেতে লাগল। একমাত্র ঈশ্বরপুত্রের সিংহাসন ছাড়া রথের সব কিছুই কাঁপতে লাগল।
ক্রমে শত্রুসেনাদের মাঝখানে গিয়ে উপস্থিত হলো সেই রথ। ঈশ্বরপুত্রের ডান হাতে ছিল দশ হাজার বর্জ। সেগুলি নিক্ষেপ করার জন্য তুলে ধরলেন তিনি। তা দেখে বিস্ময়াভিভূত শত্রুসেনাদের সব প্রতিরোধক্ষমতা লুপ্ত হয়ে গেল। তারা সব সাহস হারিয়ে ফেলল। তাদের মনে হলো তাদের অস্ত্রগুলি সব বিকল হয়ে গেছে। মনে হলো, সে অস্ত্রপ্রয়োগে কোন কাজ হবে না। তারা ভেবেছিল তাদের উপর আগের মত আবার পাহাড় থেকে পাথর নিক্ষেপ করা হবে। কিন্তু পাথরের পরিবর্তে ঝড়ের বেগে অজস্র বজ্রবাণ বর্ষিত হতে লাগল তাদের উপর।
তখন রথের উপর সেই চারজন দেবদূতের চোখ হতে বিদ্যুতাগ্নি বিচ্ছুরিত হতে লাগল অভিশপ্ত সেনাদের উপর। মনে হলো চারজন দেবদূতের চারজোড়া চোখ অজস্র হয়ে উঠেছে সংখ্যায়। ফলে সব শক্তি হারিয়ে একেবারে হতোদ্যম হয়ে পড়ল বিদ্রোহীরা।
তথাপি ঈশ্বরপুত্র মাত্র অর্ধেক শক্তি প্রয়োগ করেছিলেন। এই যুদ্ধে তাঁর সব। শক্তি প্রয়োগ করলে একেবারে ধবংস হয়ে যেত বিদ্রোহী সেনারা। তাই তিনি বজ্রগুলি নিক্ষেপ করলেও মাঝপথে সেগুলিকে থামিয়ে দিলেন। শত্রুদের ধ্বংস করার কোন উদ্দেশ্য ছিল না তার। তাদের স্বর্গ থেকে উৎখাত ও বিতাড়িত করাই ছিল তাঁর একমাত্র উদ্দেশ্য।
বিদ্রোহী সেনারা আর যুদ্ধ করতে না পারলে ঈশ্বরপুত্র বজ্রাহত ম্রিয়মাণ মেষপালের মত তাদের তাড়িয়ে নিয়ে যেতে লাগলেন স্বর্গলোকের সীমান্তবর্তী প্রাচীরের দিকে।
বিদ্রোহীরা সেই প্রাচীরের নিকটে আসার সঙ্গে সঙ্গে সে প্রাচীর আপনা থেকে ভিতরে সরে এসে তার একটা বিস্তৃত অংশ উন্মুক্ত করে পথ করে দিল। কিন্তু সে প্রাচীরের ওপারে কোন পথ ছিল না। স্বর্গের প্রাচীর যেখানে শেষ হয়েছে তার পরেই এক শূন্য গহ্বর শুরু হয়ে অতল নরকপ্রদেশ পর্যন্ত নেমে গেছে।
সেই অতলান্তিক অন্ধকার শূন্য গহ্বরের পানে একবার তাকিয়েই ভয়ে কিছুটা পিছিয়ে এল বিদ্রোহীরা। কিন্তু পিছিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গেই আবার অজস্র বজ্রসহ তাড়া করলেন ঈশ্বরপুত্র। তারা তখন দেখল পতনের থেকে সেই বজ্রাগ্নির জ্বালা আরও ভয়াবহ। তাই আর তিলমাত্র অপেক্ষা না করে শেষ সীমানা থেকে অন্ধকার শূন্য গহুরে ঝাঁপ দিল বিদ্রোহীরা।
তখন ঈশ্বরপুত্র তাদের অনুসরণ না করলেও ঈশ্বরের রোষাগ্নির জ্বালা অনুভব করতে লাগল নরকপ্রদেশ পর্যন্ত। অধঃপতিত বিদ্রোহী নাস্তিকদের কাতর আর্তনাদে ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত হতে লাগল সমগ্র নরকপ্রদেশ। তারা বুঝতে পারল স্বর্গবাসীদের একটি দলই স্বর্গলোক ধ্বংস করে দেবার উপক্রম করেছিল। পরে যুদ্ধে পরাভূত হয়ে ঈশ্বরের বিধানে এই নরকের গভীরে শাস্তিভোগ করতে এসেছে। পুরো নয়দিন ধরে বিদ্রোহীদের পতন চলতে লাগল। প্রচুর গোলমাল ও চেঁচামেচি চলতে লাগল। নরকগহুর মুখ বিস্তার করে পাপাত্মা বিদ্রোহীদের গ্রাস করল সকলকে। তারপর সমস্ত বিদ্রোহী নরকপ্রদেশে প্রবেশ করলে নরকের মুখ বন্ধ হয়ে গেল। নরকদ্বার রুদ্ধ হলো। অনির্বাণ অগ্নিদ্বারা প্রজ্জ্বলিত, অন্তহীন দুঃখ ও যন্ত্রণার আধার নরকপ্রদেশই তাদের উপযুক্ত বাসস্থান।
এদিকে স্বর্গলোক বিদ্রোহীদের কবল হতে মুক্ত হয়ে আনন্দোৎসব করতে লাগল। যুদ্ধের জন্য স্বর্গলোকের যে সব জায়গা ভেঙেচুরে গিয়েছিল, সে সব জায়গা শীঘ্রই মেরামত হয়ে গেল। তার শত্রুদের স্বর্গের সীমানা থেকে সম্পূর্ণরূপে বিতাড়িত করে একমাত্র বিজয়ী হয়ে তার বিজয়রথ যুদ্ধক্ষেত্র হতে ঘুরিয়ে রাজধানীর অভিমুখে চালিত করতে লাগলেন ঈশ্বরপুত্র।
সর্বদশী সর্বশক্তিমান ঈশ্বর কিন্তু এতক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে দুর থেকে সব কিছুই প্রত্যক্ষ করছিলেন। অনুগত দেবদূতসেনারা যখন তালপাতা মাথায় দিয়ে ঈশ্বরের যোগ্যতম বিজয়ী বীরপুত্রের জয়গান গাইতে গাইতে আসছিল তখন তা দেখতে পেয়ে ঈশ্বর এগিয়ে গেলেন কিছুটা তাদের অভ্যর্থনা জানাবার জন্য।
স্বর্গলোকে স্থাপিত যে সিংহাসনে উপবিষ্ট ছিলেন ঈশ্বরপুত্র মেসিয়া সেদিকে এগিয়ে আসতে লাগলেন। ঈশ্বরও সাদরে বরণ করেছিলেন তাদের।
আমি তোমার অনুরোধে স্বর্গলোকে যা যা ঘটে গেছে তার বিষয় বলেছি যাতে তুমি অতীতের ঘটনাবলীর সম্বন্ধে সচেতন হয়ে শিক্ষা পেতে পার। কোন মানুষের পক্ষে যা জানা সম্ভব নয় তোমার কাছে তা ব্যক্ত করছি। স্বর্গে ঈশ্বরের সঙ্গে যে বিরোধ বাধে এবং যে যুদ্ধ হয় আর সেই যুদ্ধের ফলে উচ্চাভিলাষী দেবদূতদের পতন ঘটে তার কথা সব বলেছি তোমায়। যে শয়তান বিদ্রোহী দেবদূতদের নেতৃত্বদান করে ঈশ্বর ও ঈশ্বরপুত্রের বিরুদ্ধে সেই শয়তান তোমার সুখী অবস্থার প্রতি ঈর্ষান্বিত। সে এখন তুমি যাতে ঈশ্বরের প্রতি আনুগত্য ও ভক্তি হতে বিচ্যুত হয়ে স্বর্গসুখ হতে বঞ্চিত হও এবং তার মত নরকে গিয়ে শাস্তিভোগ করতে থাক অনন্তকাল ধরে তার জন্য সে চক্রান্ত করছে। প্ররোচিত করবে সে তোমাকে ঈশ্বরের বিরোধিতা করতে। সেটা করাই হবে তার সান্ত্বনা ও ঈশ্বরের উপর প্রতিশোধ গ্রহণ। সে তোমাদের তাদের দুঃখ ও যন্ত্রণার অংশভাগী করে খুশি হতে চায় কিন্তু তার প্রলোভনে যেন তুমি সাড়া দিও না কখনো। তোমার দুর্বলতর সাথীকে এ বিষয়ে সাবধান করে দিও। শয়তান তার অবাধ্যতা ও ঈশ্বরদ্রোহিতার প্রতিফলস্বরূপ যে শাস্তি পায় তার ভয়ঙ্কর দৃষ্টান্ত দেখে তুমি সাবধান হতে পার। মনে রাখবে যে যত শক্তিমানই হোক পতনকে ঠেকিয়ে রাখতে পারেনি সে। সুতরাং ঐশ্বরিক বিধান লঙ্ঘনের প্রতিফলের প্রতি সচেতন থাকবে।