৪.৫ চতুর্থ কাণ্ড। পঞ্চম প্রপাঠক

চতুর্থ কাণ্ড। পঞ্চম প্রপাঠক

প্রথম অনুবাক

মন্ত্র- নমস্তে রুদ্র মন্যব উতো ত ইষবে নমঃ। নমস্তে অস্তু ধম্বনে বাহুভ্যামুত তে নমঃ। যা ত ইষুঃ শিবতমা শিবং বভূব তে ধনুঃ। শিবা শরব্যা যা তব তয়া নো রুদ্র মৃড়য়। যা তে রুদ্র শিবা তনূরঘোরাহপাপকাশিনী তয়া নশুনুবা শম্ভময়া গিরিশস্তাভি চাকশীহি। যামিম গিরিশন্ত হস্তে বিভৰ্য্যস্তবে। শিবাং গিরিত্র তাং কুরু মা হিংসীঃ পুরুষং জগৎ। শিবেন বচসা ত্বা গিরিশাচ্ছা বদামসি। যথা নঃ সৰ্ব্বমিজ্জগদ্যক্ষ্মং সুমনা অসৎ। অধ্যবোচদধিবক্তা প্রথমো দৈব্যো ভিষ। অহংশ্চ সৰ্বান্ জয়ৎ সাশ্চ যাতুধান্যঃ। অসৌ যস্যাম্রো অরুণ উত বড়ুঃ সুমঙ্গলঃ। যে চেমাং বুদ্রা অভিতো দিক্ষু শ্রিতাঃ সহস্ৰশোহবৈষাং হেড় ঈমহে।। অসৌ যোহবসর্পতি নীলগ্রীবো বিলোহিতঃ। উতৈনং গোপা অনুশনুদৃশদহাৰ্য্যঃ উতৈনং বিশ্বা ভূতানি স দুষ্টো মৃড়য়াতি নঃ। নমো অস্তু নীলগ্রীবায় সহস্রাক্ষায় মীচুষে। অথো যে অস্য সত্নানোহহং তেভ্যোহকরং নমঃ। প্র মুঞ্চ ধন্বনমুভয়োরাৰ্নিয়োজ্জা। যাশ্চ তে হস্ত ইষবঃ পরা তা ভগবো বপ। অবত্য ধনুং সহস্রাক্ষ শতেষুধে। নিশীৰ্য্য শল্যানাং মুখা শিববা নঃ সুমনা ভব। বিজ্যং ধনুঃ কপর্দিনো বিশল্যা বাণবাহ্ উত। অনেশন্নস্যেষব আভুরস্য নিষঙ্গথিঃ। যা তে হেতির্মীচুম হস্তে বভূব তে ধনুঃ। তয়াহম্মাম্বিশ্বতত্ত্বমযক্ষ্ময়া পরি ভুজ। নমস্তে অায়ুধায়ানাততায় ধৃষ্ণবে। উভাভ্যাযুত তে নমো বাহুভ্যাং তব ধন্বনে। পরি তে ধন্বনো হেতিরস্মাণক্ত বিশ্বতঃ।। অথো য ইযুধিস্তবারে অস্মৃমি ধেহি তম্ ॥১॥

[সায়ণাচার্যের মতে–এই পঞ্চম প্রপাঠকটি রুদ্ৰাধ্যায় নামে খ্যাত। এর এই প্রথম অনুবাকে ভগবান রঞদেবতার স্তুতি উক্ত হয়েছে। এখানে পঞ্চদশ সংখ্যক ঋক্‌ উল্লেখিত]

 মর্মার্থ- হে রুদ্র! আপনার যে কোপ বা ক্রোধ (মনু) সেই কোপকে নমস্কার করি; (আপনার ক্রোধ আমাদের শত্রুগণকে পরাভূত করুক); অধিকন্ত আপনার বাণ ও ধনুকে নমস্কার করি; বাণ ও ধনুর ধারক আপনার বাহু বা হস্তদ্বয়কে নমস্কার করি। এর সবগুলিই আমার শত্রুর প্রতি প্রবর্তিত হোক, আমার প্রতি নয়। হে রুদ্র! আপনার যে ইষু (বাণ) আছে, তা শান্ততমা হোক, আপনার যে ধনু আছে, তা শান্ত হোক। আপনার সেই শান্ত শর ও ধনুর দ্বারা আমাদের সুখী করুন (নোহস্মামৃড়য়)। হে রুদ্র! আপনার যে অনুগ্রহকারিণী তনু আছে, তা যেন আমাদের প্রতি অঘোরা বা প্রচণ্ড হিংসিকা না হয়। (গিরিশ, অর্থাৎ কৈলাসে স্থিত হয়ে নিত্য প্রাণীগণকে যিনি শং বা সুখ, দান করেন, সেই হেন) হে গিরিশ বা রুদ্র! আপনার অতিশয় সুখকারিণী তনু আমাদের অভিলক্ষ্যে প্রকাশ করুন। (গিরিত্র অর্থাৎ কৈলাস নামে আখ্যাত গিরিকে যিনি ত্রাণ বা পালন করেন, সেই হেন) হে গিরিত্র বা রুদ্র! আপনার হস্তষ্কৃত যে বাণ, শত্রুর প্রতি নিক্ষেপের উদ্দেশ্যে প্রস্তুত, তা আমাদের নিমিত্ত শান্ত করুন; আপনার সেই বাণ আমাদের (অর্থাৎ মনুষ্যগণের) ও মনুষ্যব্যতিরিক্ত জঙ্গম বা গো ইত্যাদি পশুগণের প্রতি যেন হিংসা করে। হে গিরিশ! আপনাকে প্রাপ্তির নিমিত্ত মঙ্গলকারক স্তুতিরূপ বাক্যের দ্বারা আমরা প্রার্থনা করছি–যে কোন প্রকারে যেন আমাদের সকল মনুষ্য ও জঙ্গমজাত পশু ইত্যাদি রোগরহিত ও সৌমনস্যোপেত (অর্থাৎ শোভন মন) লাভ করে, তাই করুন। হে রুদ্র! সকলের অগ্রে ও সকলের অধিক আমাকে বক্তব্য বলুন। (কি বক্তব্য? না, দেবতাগণের মধ্যে আপনিই প্রথম বা মুখ্য এবং স্বয়ং দেবগণকে পালনে সক্ষম। আপনি ধ্যানমাত্র সর্বরোগের উপশমকারী চিকিৎসক। (কেমন করে? না,) সৰ্প ব্যাঘ্র ইত্যাদি ও রাক্ষসজাতীয়গণকে বিনাশ করে। যে রুদ্র মণ্ডলস্থ আদিত্যরূপ, তিনি উদয়কালে অত্যন্ত অরুণবর্ণ, অধিকন্তু উদয়ের পরে পরে নানা বর্ণে রঞ্জিত হয়ে অন্ধকার ইত্যাদির নিবর্তকরূপে অত্যন্ত মঙ্গলরূপ ধারণ করেন। এবং সেই মঙ্গলরূপ রুদ্রের সহস্র সহস্র (অনেক) রশ্মি পূর্ব ইত্যাদি দিকে বিস্তৃত; এবং এই আদিত্যের রশ্মিরূপ সকল (একাদশ) রুদ্রের ক্রোধসদৃশ তীক্ষ্ণত্বকে আমরা ভক্তিপূর্ণ নমস্কার ইত্যাদির দ্বারা নিবারণ করব। যে রুদ্র নীলগ্রীব অর্থাৎ কালকূট বিষ ধারণের নিমিত্ত নীলবর্ণ গ্রীবাশালী হয়েছেন, সেই রুদ্র লোহিত বর্ণরূপে মণ্ডলবর্তী হয়ে উদয় ও অস্ত প্রবর্তন করছেন। (রুদ্রের সেই মণ্ডলবর্তী স্বরূপ ধারণের প্রয়োজন এই যে,) সেই রুদ্রকে বেদশাস্ত্রসংস্কাররহিত গোপগণ (গোপালকগণ), জল আহরণকারিণী রমণীগণ, এমন কি গো-মহিষ ইত্যাদি সকল প্রাণীগণও দর্শন করতে পারে। সকলের দর্শনের নিমিত্ত রুদ্রের এই আদিত্যমূর্তি ধারণ; কারণ তার কৈলাসবর্তী রুদ্ররূপ কেবল বেদশাস্ত্রে অভিজ্ঞ জনেরাই দর্শন করে থাকে। সেই হেন রুদ্র আমাদের দর্শন দানপূর্বক সুখী করুন। সেই নীলগ্রীব, সেই ইন্দ্রমূর্তিধারী সহস্রাক্ষ, সেই পর্জন্যমূর্তিধারী বৃষ্টিকর্তা রুদ্রকে নমস্কার; আরও, সেই রুদ্রের যারা ভৃত্যরূপ প্রাণী, তাদের সকলকে নমস্কার করছি। পূজাবৎ মহৎ আশ্চর্যসম্পন্ন হে ভগব রুদ্র! ধনুর্ধারী (বন্ধন) আপনার ধনুকের জ্যা (মৌবী) মুক্ত করে দিন ও আপনার হস্তধৃত বাণটি পরিত্যাগ করুন। (শতসংখ্যক ইষুধি অর্থাৎ বাণস্থাপনকোশ বা তুণ যাঁর, তিনি শতেষুধি এবং ইন্দ্ররূপে সহস্ৰসংখ্যক অক্ষি বা চক্ষু যাঁর, তিনি সহস্রাক্ষ। সেই মতো–) হে সহস্রাক্ষ ও শতেষুধি রুদ্র! আপনার ধনুর জ্যা উন্মুক্ত করে (অর্থাৎ বাণাকর্ষণের অযোগ্য করে) বাণের লৌহনির্মিত তীক্ষ্ণমুখ ফলাগুলি শীর্ণ করে তুণের মধ্যে রক্ষা পূর্বক আমাদের প্রতি অনুগ্রহান্বিত হয়ে শান্ত হোন। অথবা, আপনার যে খুঙ্গ আছে, সেটিও আকর্ষণের অসমর্থ করে আপনার খঙ্গকোশে রক্ষাপূর্বক আমাদের প্রতি অনুগ্রহান্বিত হয়ে শান্ত হোন। (পরবর্তী তিনটি মন্ত্র শুক্লযজুর্বেদের ১৬শ অধ্যায়ে ব্যাখ্যাত। যথা–যা তে হেতিমীচুষ্ট ইত্যাদি মন্ত্রটি ঐ অধ্যায়ের একাদশ শ্লোকে ব্যাখ্যাত। তার পরেরটি চর্তুদশ শ্লোকে ব্যাখ্যাত এবং তার পরেরটি অর্থাৎ পরি তে ধন্বনো ইত্যাদি মন্ত্রটি দ্বাদশ শ্লোক ব্যাখ্যাত) ॥১॥

[সায়ণাচার্যের মতে–এই দ্বিতীয় অনুবাকে রুদ্রের জগৎ নির্বাহের হেতুস্বরূপ লীলাবিগ্রহ সমুহের স্তুতি উক্ত হয়েছে]

.

দ্বিতীয় অনুবাক

মন্ত্র- নমো হিরণ্যবাহবে সেনানন্য দিশাং চ পতরে নমো। নমো বৃক্ষেভ্যো হরিকেশেভ্যঃ পশুনাং পতয়ে নমো। নমঃ সস্পিঞ্জরায় ত্বিষীমতে পথীনাং পতয়ে নমো নমো বলুশায় বিব্যাধিনেহন্নানাং পতয়ে নমো। নমো হরিকেশায়োপবীতিনে পুষ্টানা পতয়ে নমো নমো ভবস্য হেত্যে জগড়াং পতয়ে. নমো। নমো রুদ্রায়াহতবিনে ক্ষেত্ৰাণাং পতয়ে নমো নমঃ সূত্যয়াহত্যায় বনানাং পতয়ে নমো। নমঃ রোহিতায় স্থপতয়ে বৃক্ষাণাং পতয়ে নমো নমো মন্ত্রিণে বাণিজায় কক্ষাণাং পতয়ে নমো। নমো ভুবন্তয়ে বারিবস্কৃতায়ৌষধীনাম পতয়ে নমো নমঃ উচ্চৈর্ঘোষায়াইক্ৰয়তে পত্তীনাং পতয়ে নমো নমঃ কৃৎস্নবীতায় ধাবতে সত্বনাং পতয়ে নমঃ ॥২॥

মর্মার্থ– হিরণ্য নির্মিত আভরণ যাঁর, তিনি হিরণ্যবাহু; সংগ্রামে সৈন্যগণকে যিনি নেতৃত্ব দেন, তিনি সেনানী বা সেনানায়ক;–এই হেন মূর্তিধর রুদ্রগণকে নমস্কার। যাঁরা দিকসমূহের পালক, সেই রুদ্রদেবগণের উদ্দেশে নমস্কার। হরিৎ বা সবুজ বর্ণের পত্র বা কেশবিশিষ্ট যে বৃক্ষ, সেই হরিকেশ বৃক্ষাকার রুদ্রমূর্তি সমূহকে নমস্কার; যে রুদ্র পশুগণের পালক, সেই রুদ্রবর্গকে নমস্কার। সম্পিঞ্জর অর্থাৎ কচি তৃণের মতো পিঞ্জর (অর্থাৎ পীতরক্ত মিশ্রিত বর্ণশালী), স্বল্প ) উদরবিশিষ্ট (অর্থাৎ সাধু) ও দীপ্তিমান যে রুদ্রমূর্তি, তাঁদের নমস্কার। শাস্ত্রোক্ত দক্ষিণোত্তর তৃতীয় মার্গের পালক যে রুদ্র, তাঁদের নমস্কার। (অবশিষ্ট মন্ত্রগুলির জন্য শুক্ল যজুর্বেদের ১৬শ অধ্যায় দ্রষ্টব্য) ॥২॥

[সায়ণাচার্যের মতে–এই তৃতীয় অনুবাকে অস্পষ্ট বা অদৃশ্য দ্বাদশ রুদ্রমূর্তির উদ্দেশে নমস্কার উক্ত হয়েছে।]

.

তৃতীয় অনুবাক

মন্ত্র- নমঃ সহমানায় নিব্যাধিন আব্যাধিনীনাং পতয়ে নমো নমঃ ককুভায় নিষঙ্গিণে স্তেনানাং পতয়ে নমো। নমো নিষঙ্গিণ ইষুধিমতে তস্করাণাং পতয়ে নমো নমো বঞ্চতে পরিবঞ্চতে স্তায়ুনাং পতয়ে নমো। নমো নিচেরবে পরিচরায়ারণ্যানা পতয়ে নমো নমঃ সৃকাবিভ্যো জিঘাংসদভ্যো মুষ্ণতা পতয়ে নমো। নমোহসিমদভ্যো নক্তং চরভ্যঃ প্রকৃন্তানাম্ পতয়ে নমো নম উষ্ণীষিণে গিরিচরায় কুলুঞ্চানাং পতয়ে নমো। নমঃ ইমদভ্যো ধাবিভ্যশ্চ বো নমো নম আতদানেভ্যঃ প্রতিদধানেভ্যশ্চ বো নমো। নম আষচ্ছদভ্যো বিসৃজভ্যশ্চ বো নমো নমোহস্যদভ্যো বিধ্যভ্যশ্চ বো নমো নম আসীনেভ্যঃ শয়ানেভ্যশ্চ বো নমো। নমঃ স্বপদভ্যা জাগ্রদভ্যেশ্চ বো নো নমস্তিষ্ঠদভ্যো ধাবদভ্যশ্চ বো নমো। নমঃ সভাভ্যঃ সভাপতিভ্যাশ্চ বো নমো নমো অশ্বেতভ্যাংশ পতিভ্যশ্চ বো নমঃ ॥৩৷৷

মর্মার্থ- অত্যন্ত বিরোধীরূপী ও তাদের বিদ্ধকারক যে রুদ্র, সেই রুদ্রকে নমস্কার। যিনি ককুভসদৃশ (ককুভ নামক ছন্দের ন্যায়) প্রধানভূত, যিনি খঙ্গহস্ত, সেই রুদ্রকে নমস্কার। যিনি স্তেনা বা গুপ্তচোরগণের পালক, সেই রুদ্রকে নমস্কার। যিনি লীলায় নটের (অর্থাৎ অভিনয়কর্তার) বেশ ধারণ করেন, সেই রুদ্রকে নমস্কার। যিনি নিষঙ্গ অর্থাৎ হস্তে বাণধারী ও ইষুধি অর্থাৎ পৃষ্ঠে বাণাধার বা তুণ বদ্ধকারী, এই উভয়যুক্ত রুদ্রকে নমস্কার। তঙ্কর অর্থাৎ প্রকট চোরগণের পালক রুদ্রকে নমস্কার। (অবশিষ্ট মন্ত্রগুলির জন্য শুক্ল যজুর্বেদের ১৬শ অধ্যায় দ্রষ্টব্য) ॥৩ ৷৷

[সায়ণাচার্যের মতে–এই চতুর্থ অনুবাকে স্ত্রী মূর্তিধারী রুদ্রশক্তির যজুঃসমূহ উক্ত হয়েছে।]

.

চতুর্থ অনুবাক

মন্ত্র- নম আব্যাধিনীভ্যো বিবিধ্যস্তভ্যশ্চ বো নমো নম উগণাভ্যস্তুম হতীভ্যশ্চ বো নমো। নমো গৃৎসেভ্যো গৃৎস্পতিভ্যশ্চ বো নমো নমো ব্রাতেভ্যো ব্রাতপতিভ্যশ্চ বো নমো। নমো গণেভ্যো গণপতিভ্যশ্চ বো নমো নমো বিরূপেভ্যো বিশ্বরূপেভ্যশ্চ বো নমো। নমো মহত্ত্যঃ ক্ষুল্লকেভ্যশ্চ বো নমো নমো রথিভ্যোহরথেভ্যশ্চ বো নমো। নমো রথেভ্যঃ রথপতিভ্যশ্চ বো নমো নমঃ সেনাভূঃ সেনানিভ্যশ্চ বো নমো। নমঃ ক্ষতৃভ্যঃ সংগ্রহীতৃভ্যশ্চ বো নমো নমস্তক্ষভ্যো থকারেভ্যশ্চ বো নমো। নমঃ কুলালেভ্যঃ কৰ্ম্মারেভ্যশ্চ বো নমো নমঃ পুঞ্জিষ্টেভ্যো নিষাদেভ্যশ্চ বো নমো। নম ইমুদ্ভো ধম্বকৃভ্যশ্চ বো নমো। নমো মৃগয়ুভ্যঃ স্বনিভ্যশ্চ বো নমো নমঃ শ্বভ্যঃ পতিভ্যশ্চ বো নমঃ ॥৪৷৷

মর্মার্থ- সমস্ত দিকে ব্যাপ্ত ও বিশেষ ভাবে বিদ্ধ করতে সামর্থযুক্ত আব্যাধিনী ও বিবিধ্যস্তী স্ত্রীমূর্তিধারিণী যে শক্তিগণ আছেন, রুদ্রের সেই শক্তিগণের উদ্দেশে নমস্কার। উৎকৃষ্ট গণরূপা (উগণা) যে ব্রাহ্মী ইত্যাদি সপ্তমাতৃকা আছেন, হিংসায় সমৰ্থা দুর্গা ইত্যাদি যে উগ্র দেবতাগণ আছেন, রুদ্রের সেই স্ত্রীমূর্তিধারণী দেবতার উদ্দেশে নমস্কার।–গৃৎসা অর্থাৎ বিষয়-লম্পটা এবং তাদের পালক রুদ্রকে নমস্কার।–নানাজাতীয় সঙ্চারিণী ও তাদের পালক (ব্রাতস্পতি) রুদ্রকে নমস্কার।–দেবতার অনুচরী ভূতবিশেষা (গণা) ও তাদের পালক রুদ্রকে নমস্কার।-বিরূপা বা বিকৃতরূপা (নগ্নমুণ্ডা) ও বিশ্বরূপা অর্থাৎ নানাবিধ রূপপারিণী রুদ্রের ভৃত্যাদের নমস্কার।–অণিমা ইত্যাদি ঐশ্বর্যক্তা মহতী ও ঐশ্বর্যরহিতা ক্ষুদ্রা (ক্ষুল্লকা) রুদ্রগণকে নমস্কার। রথে আরূঢ়া ও অরথা অর্থাৎ রথরহিতা রুদ্রদের নমস্কার। (এর পর রথ ও রথপতিরূপী, সেনা ও সেনাপতিরূপী, রথাধিষ্ঠাতা ক্ষত্রিয় ও অশ্বসংগ্রহকারী সারথিরূপী, শিল্পী ও সূত্ৰধাররূপী, কুম্ভকার ও কর্মকাররূপীপক্ষীপুঞ্জের ঘাতক ও নিষাদরূপী, বাণধারী ও ধনুর্ধারীরূপী, ব্যাধরূপী ও কুকুরের গলে বদ্ধ রঞ্জুর ধারকরূপী, কুকুর ও কুকুরের পালকরূপী-রুদ্রগণের উদ্দেশে নমস্কার জ্ঞাপন করা হয়েছে। এই সবই শুক্লযজুর্বেদের ১৬ শ অধ্যায়ে উল্লিখিত ॥৪॥

[সায়ণাচার্য বলেন-চতুর্থেহনুবাক উভয়তোনমস্কারাণি যজুংষি সমাপিতানি। অথ পঞ্চমমারভ্য নবমান্তেধনুবাকে নমস্কারোপক্রমাণ্যেব যজুংষ্যান্নয়ন্তে। অর্থাৎ চতুর্থ অনুবাক পর্যন্ত উভয়তঃ নমস্কার সমূহ সমাপ্ত হয়েছে। অতঃপর এই পঞ্চম অবাক থেকে আরম্ভ করে নবম অনুবাক পর্যন্ত রুদ্রদেবের বিভিন্ন মূর্তির উদ্দেশে নমস্কারের উপক্রমে যজুসমূহ কথিত হয়েছে।]

.

পঞ্চম অনুবাক

মন্ত্র- নমো ভবায় চ রুদ্রায় চ নমঃ শৰ্বায় চ পশুপতয়ে চ। নমো নীলগ্রীবায় চ শিতিকণ্ঠায় চ নমঃ কপর্দিনে চ ব্যপ্তকেশায় চ। নমঃ সহস্রাক্ষায় চ শতধন্বনে চ নমো গিরিশায় চ শিপিবিষ্টায় চ। নমো মীমায় চেষুমতে চ নমো হ্রদায় চ বামনায় চ নমো বৃহতে চ বর্ষীয়সে চ নমো বৃদ্ধায় চ সংবৃধ্বনে চ নমো অগ্রিয়ায় চ প্রথমায় চ। নম আসবে চাজিরায় চ নমঃ শীঘ্রিয়ায় চ শীভ্যায় চ। নম উম্মায় চাবস্কন্যায় চ নমঃ স্রোতস্যায় চ দ্বীপ্যায় ॥৫৷৷

মর্মার্থ- ভব (ভবন্তি প্রাণিনোইস্মাৎ), রুদ্র (রুদ্ৰোদনহেতুভূতং দুঃখং দ্রাবয়িতি), শর্ব (শৃণাতি হিনস্তি পাপ) পশুপতি (পশুসমানানজ্ঞানিন পুরুষা পালয়তি), নীলগ্রীব (কালকূট ধারণেন নীলবর্ণো গ্রীবৈকদেশশা যস্যা), শিতিকণ্ঠ (শ্বেতবর্ণোহবশিষ্টঃ কণ্ঠপ্রদেশশা যস্যা), ঝুপ্তকেশ (মুণ্ডিকেশো), কপর্দী (পাশুপতাদিবেষেণ), সহস্রাক্ষ (ইন্দ্রবেষেণ), শতধন্থা (সহস্রভুজাবতারিত্বেন শতসংখ্যাকৈৰ্ধনুভিরুপেতত্বম), গিরিশ (গিরো কৈলাসে শেতে তিষ্ঠতি), শিপিবিষ্ট (বিষ্ণুমূর্তিধারী), মীষ্ট (মেঘরূপেণাত্যন্তং বর্ষয়িতা), ইমান (বাণধারক), হ্রস্ব (শরীরেহল্পমান), বামন (অঙ্গুল্যাদ্যবয়সঙ্কোচাঘামনত্ব, বৃহৎ (আকারেণ প্রৌঢ়ো), বর্ষীয়ান্ (গুণৈঃ সমৃদ্ধো), বৃদ্ধ (বয়সাধিকো), সমৃদ্ধ (সম্যস্তুতিভিবর্ধিতঃ), অগ্রিয় (জগদুৎপত্তেঃ পূর্ববস্থিততা), প্রথম (সভায়াং মুখ্যঃ), আশবে (আশুব্যাপী), অজির (গমনকুশল), শীঘ্রিয় (শীঘ্রগামী), শীভ্য (উদকপ্রবাহবৎ অবস্থিত), উর্ম (তরঙ্গে স্থিত), অবস্বন্য (স্থিরজলেহবস্থিত), স্তোতস্য (প্রবাহে স্থিত), দ্বীপ (বারিমধ্যবর্তী ভূমৌ স্থিতঃ)–রূপী রুদ্রগণকে নমস্কার। (প্রতিটি যজুতে চতুর্থী অর্থাৎ কে পদ সংযুক্ত করে নমঃ শব্দ উচ্চারিতব্য; যেমন-নমো ভবায় অর্থাৎ ভবরূপধারী রুদ্রদেবগণকে নমস্কার ইত্যাদি)। (শুক্ল যজুর্বেদের ১৬শ অধ্যায়ে এই মন্ত্রগুলি ব্যাখ্যাত) ॥৫৷৷

 [পঞ্চম অনুবাকে সায়ণাচার্যের বক্তব্য দ্রষ্টব্য]।

.

ষষ্ঠ অনুবাক

মন্ত্র- নমো জ্যেষ্ঠায় চ কনিষ্ঠায় চ নমঃ পূৰ্ব্বজায় চাপরজায় চ। নমো মধ্যমায় চাপগভায় চ নমো জঘন্যায় চ বুধিয়ায় চ। নমঃ সোভ্যায় চ প্রতিসৰ্য্যায় চ নমো যাম্যায় চ ক্ষেম্যায় চ। নম উৰ্বৰ্য্যায় চ খল্যায় চ নমঃ শ্লোক্যায় চাবসান্যায় চ। নমো বন্যায় চ কক্ষ্যায় চ নমঃ এবায় চ প্রতিশ্রয় চ।। নম আশুষেণায় চাহশুরথায় চ নমঃ শুরায় চাবভিন্দতে চ। নমো বৰ্মিণে চ বরূথিনে চ।। নমো বিলিনে চ কবচিনে চ নমঃ ঞতায় চ ঞতসেনায় ॥৬৷৷

মর্মার্থ- বিদ্যা-ঐশ্বর্য ইত্যাদির আধিক্যে জ্যেষ্ঠ ও তার অল্পত্বে কনিষ্টরূপে স্থিত রুদ্রদেবকে। নমস্কার। জগতের আদিতে (সৃষ্টিকালে) হিরণ্যগর্ভরূপে স্থিত রুদ্রদেবকে নমস্কার। অপর অর্থাৎ জগতের অবসানকালে সংহারক কালাগ্নি ইত্যাদি রূপে উৎপন্ন রুদ্রদেবকে নমস্কার। মধ্যকালে দেবতির্য ইত্যাদিরূপে উৎপন্ন রুদ্রদেবকে নমস্কার। বুদ্ধিহীন বালকরূপে স্থিত রুদ্রদেবকে নমস্কার। গাভী ইত্যাদির পশ্চাৎ ভাগে বস ইত্যাদিরূপে স্থিত রুদ্রদেবকে নমস্কার। এইভাবে-বৃক্ষ ইত্যাদি মূল শাখা ইত্যাদি রূপে, পুণ্য-পাপের সাথে মনুষ্যলোকে নানাভাবে প্রকটিত রূপে স্থিত, বিবাহ ইত্যাদিতে হস্তে ধার্যমান রক্ষাবন্ধনরূপে, যমলোকে পাপী শিক্ষকরূপে উৎপন্ন, মঙ্গলময়রূপে আবির্ভুত, মহতী (প্রভূত) ধান্যবিশেষ উৎপন্নকারিণী উর্বরা ভূমিরূপিণী, মেঢ্য ইত্যাদি উৎপাদিকা (খলো) ঊষর ভূমিরূপিণী, বৈদিক মন্ত্র প্রতিপাদত্বরূপে স্থিত, বেদান্ত প্রতিপাদত্বরূপে স্থিত, বনে বৃক্ষ ইত্যাদিরূপে স্থিত, কক্ষে লতা ইত্যদিরূপে স্থিত (কক্ষ্য–রুদ্রবিশেষ), শব্দরূপে স্থিত, প্রতিধ্বনি রূপে স্থিত, শীঘ্রগামিনী সেনার পতিরূপে স্থিত, শীঘ্রগামী রথের পতিরূপে স্থিত, যুদ্ধে ধৈর্যবারূপে স্থিত, বৈরিগণের প্রহারকারীরূপে স্থিত, কঙুকোপেত অর্থাৎ বর্মরূপে যুক্ত, গৃহোপেত অর্থাৎ গৃহে উপগতরূপে স্থিত, শরীররক্ষক কবচধারীরূপে, বেদরূপে স্থিত, বেদে প্রসিদ্ধ সেনার অধিপতিরূপে স্থিত-রুদ্রগণকে নমস্কার। (প্রতিটি যজুতে কে পদ সংযুক্ত করে নমঃ শব্দ উচ্চারিতব্য। (শুক্লযজুর্বেদের ১৬শ অধ্যায়ে এই মন্ত্রসমূহের অনেকগুলিই ব্যাখ্যাত) ॥৬॥

[পঞ্চম অনুবাকে সায়ণাচার্যের বক্তব্য দ্রষ্টব্য]।

.

সপ্তম অনুবাক

মন্ত্র- নমো দুন্দুভ্যায় চ্যাহনন্যায় চ নমো ধৃষ্ণবে চ প্রশায় চ। নমো দাতায় চ প্রহিতায় চ নমো নিষঙ্গিণে চেষুধিমতে চ। । নমস্তীষেবে চায়ুধিনে চ নমঃ স্বায়ুধায় চ সুধম্বনে চ। নমঃ সুত্যায় চ পথ্যায় চ নমঃ কাট্যায় চ নীপ্যায় চ।। নমঃ সুদ্যায় চ সরস্যায় চ নমো নাদ্যায় চ বৈশস্তায় চ নমঃ কুপ্যায় চাবট্যায় চ। নমো বৰ্য্যায় চাবায় চ। নমো মেধ্যায় চ বিদত্যায় চ নম ইখ্রিয়ায় চাহতপ্যায় । নমো বাত্যায় চ রেমিয়ায় চ নমো বাস্তবায় চ বাস্তূপায় চ৷৭৷৷

মর্মার্থ– দুন্দুভি (দৈত্য বা রাক্ষস) ও তাড়নের নিমিত্ত উৎপন্ন দণ্ডরূপে যুদ্ধে পলায়নরহিত রূপে (ধৃষ্ণুযুদ্ধে), পরসৈন্যের বৃত্তান্ত সম্পর্কে পরামর্শকরূপে (প্রশঃ), পরসৈন্যের বৃত্তান্ত সম্পর্কে জ্ঞাপনকুশল দূতরূপে, প্রভু কর্তৃক প্রেরিত পুরুষরুপে (প্রহিত), খঙ্গযুক্তরূপে (নিষঙ্গী), বাণাধারযুক্ত রূপে (ইষুধিমান), তীক্ষ্ম বাণের ধারকরূপে, বহু আয়ুধধারীরূপে (আয়ুধী), শোভন ধনুর্ধররূপে (সুধন্থ), মাত্র পাদসঞ্চারের যোগ্য অর্থাৎ ক্ষুদ্র পথরূপে, রথ-অশ্ব ইত্যাদির সঞ্চারযোগ্য পথরূপে, অল্প প্রবাহযোগ্য জলরূপে, পর্বতের অগ্রভাগ হতে পতিত জলরূপ স্থানে, জলাকীর্ণ কদর্ম প্রদেশে, নদীগত জলরূপে, অল্পজলরূপে, কুপস্থ জলরূপে, অবটস্থ অর্থাৎ গহ্বরস্থ জলরূপে, বর্ষার জলরূপে, বর্ষানিরেপক্ষ (অর্থাৎ বর্ষা ব্যতীত অন্য ঋতুর) জলরূপে, মেঘে স্থিতরূপে,  বিদাঁতের সাথে বিচরণ রূপে, শারদীয় মেঘের নির্মল প্রকাশরূপে, রৌদ্রের সাথে বৃষ্টি রূপে (আতপ্য), বায়ুর সাথে বৃষ্টিরূপে (বাত্যঃ), প্রলয়কালে প্রাণীসমূহের বিনাশকল্পে পাষাণ ইত্যাদি সহ বৃষ্টির জলবিশেষরূপে (রেষ্মিয়), ধন বা গো-অশ্ব ইত্যাদি পদার্থরূপে ও তাদের দ্বারা কৃত কার্যরূপে স্থিত, গৃহনির্মাণের নিমিত্ত বাস্তুভূমির পালকরূপে স্থিত (বাস্তুপঃ)-রুদ্রগণকে নমস্কার। (পূর্ববর্তী অনুবাকের মতোই প্রতিটি যজু পঠিতব্য। মন্ত্রগুলির অধিকাংশই শুক্লযজুর্বেদের ১৬শ অধ্যায়ে প্রাপ্তব্য) ॥৭॥

[সায়ণাচার্যের বক্তব্য পঞ্চম অনুবাকে দ্রষ্টব্য]

.

অষ্টম অনুবাক

 মন্ত্র- নমঃ সোমায় চ রুদ্রায় চ নমস্তাম্ৰায় চারুণায় চ। নমঃ শঙ্গায় চ পশুপতয়ে চ নম উগ্ৰায় চ ভীমায় চ। নমো অগ্রেবধায় চ দূরেবধায় চ নমো হন্ত্রে চহনীয়সে চ। নমো বৃক্ষেভ্যো হরিকেশেভ্যো নমস্তারায় নমঃ শম্ভবে চ ময়োভবে চ নমঃ শঙ্করায় চ ময়স্করায় চ। নমঃ শিবায় চ শিবতরায় চ নমস্তীৰ্থায় চ কূল্যায় চ। নমঃ পাৰ্য্যায় চাৰ্য্যায় চ নমঃ প্রতরণায় চোরণায় চ। নম আতাৰ্য্যায় চাহলাদ্যায় চ নমঃ শপ্যায় চ ফেন্যায় চ।। নমঃ সিত্যায় চ প্রবাহ্যায় চ ॥৮॥

মর্মার্থ– যিনি উমার সাথে বর্তমান, সেই সোমরূপী রুদ্রকে নমস্কার। রুদ্ররূপে যিনি দুঃখের বিনাশকারী, সেই রুদ্ররূপী রুদ্রকে নমস্কার। উদয়কালে যিনি তা বা রক্ত বর্ণশালী, সেই আদিত্যরূপী রুদ্রকে নমস্কার। উদয়ের পরে যিনি অরুণবর্ণশালী, সেই আদিত্যরূপী রুদ্রকে নমস্কার। যিনি শঙ্গ অর্থাৎ সুখের প্রাপয়িতা, সেই রুদ্রকে নমস্কার। যিনি পশুগণে পালক, সেই পশুপতিরূপী রুদ্রকে নমস্কার। বিরোধীগণের নাশের নিমিত্ত ক্রোধযুক্ত বা উগ্ররূপী রুদ্রকে নমস্কার। দর্শনমাত্র শত্রুগণের ভয়োদ্রেগরূপী (ভীমা) রুদ্রকে নমস্কার। সম্মুখযুদ্ধে বধকারীরূপী রুদ্রকে নমস্কার। দুরে বধকারীরূপী রুদ্রকে নমস্কার। লোকেও বিরোধীগণের নাশক বা হন্তারূপী রুদ্রকে নমস্কার। সেই রকমে বিরোধীগণের অতিশয় নাশকরূপী রুদ্রকে নমস্কার। হরিত্বর্ণের কেশসদৃশ পর্ণ বা পত্রবিশিষ্ট কল্পতরু বৃক্ষরূপী রুদ্রকে নমস্কার। এই ভাবে প্রণবপ্রতিপাদ্য তারকরূপী, সুখের উৎপাদক শম্ভুরূপী, সুখবরূপী মোসুখোৎপাদক ময়োভব বা বিবেকরূপী, পিতা ইত্যাদিরূপে লৌকিক সুখের উৎপাদক শঙ্কররূপী, আচার্য-শাস্ত্র ইত্যাদিরূপে মোক্ষসুখের কারক ময়স্কররূপী, সাক্ষাৎ সুখকারীরূপে পূর্ববর্তী পদের ন্যায় ময়স্কর বা বিবেকরূপী, কল্যাণরূপে স্বয়ং নিষ্কল্মষ (কলুষতাহীন) শিবরূপী, অতিশয় কল্যাণরূপে আপন ভক্তগণকেও নিষ্কল্মষকারী শিবতররূপী, প্রয়াগ ইত্যাদি সন্নিহিত তীর্থরূপী, নদীতীরে (কুলে) প্রতিষ্ঠাপিত লিঙ্গরূপে অবস্থিত কুল্যরূপে, পারে অর্থাৎ সংসারসমুদ্রের পরতীরে মুমুক্ষুবৎ অবতিষ্ঠিত পার্যরূপী, সংসারের মধ্যে কাম্যফল প্রদানের নিমিত্ত অবস্থিত অবার্যরূপী, প্রকৃষ্ট মন্ত্রজপ ইত্যাদির দ্বারা পাপতরণের হেতুকর প্রতরণুরূপী, তত্ত্বজ্ঞানরূপ সকল সংসারের উত্তরণের (পার হওয়ার) হেতুকর উত্তরণরূপী, সংসার উত্তরণের হেতু তত্ত্বজ্ঞান ব্যতীরিক্ত কাম্যকর্ম অনুষ্ঠানের দ্বারা পুনরাগমন রহিতকারক কাম্যফলপ্রদ বা আর্যরূপী, সেই কাম্যফলের প্রেরকত্ব সম্বন্ধি অদালাদ্যরূপী, শম্প অর্থাৎ গঙ্গাতীরে উৎপন্ন কচি তৃণবৎ উৎপন্ন কুশাঙ্কুর ইত্যাদিরূপী অর্থাৎ শম্প্যরূপী, নদীমধ্যগত মহতী ফেনারূপী, মহতী সিকতা (বালু)-রূপী, মহতী প্রবাহরূপী-রুদ্রদেবকে নমস্কার। (পূর্ববর্তী অনুবাকের মতো পঠিতব্য এই যজুগুলিরও অধিকাংশ শুক্লযজুর্বেদের ১৫শ অধ্যায়ে প্রাপ্তব্য) ॥৮

 [সায়ণাচার্যের বক্তব্য পূর্ববর্তী পঞ্চম অনুবাকে দ্রষ্টব্য]

.

নবম অনুবাক

মন্ত্র- নব ইরিণ্যায় চ প্রপথ্যায় ৫ নমঃ কিংশিলায় চ ক্ষয়ণায় চ। নমঃ কপর্দিনে চ পুলস্তয়ে চ নমো গোষ্ঠ্যায় চ গৃহ্যায় চ। নমস্তায় চ গেহ্যায় চ নমঃ কাট্যায় চ গহ্বরেষ্ঠায় । নমো হ্ৰদব্যায় চ নিবেপ্ন্যা চ নমঃ পাসব্যায় চ রজস্যায় চ।। নমঃ শুষ্ক্যায় ব হরিত্যায় ৫ নমো ললাপ্যায় চোলপ্যায় চ। নম উায় চ সুৰ্মায় চ নমঃ পণ্যায় চ পর্ণশদ্যায় চ। নমোহপগুরমাণায় চাভিতে চ নম আখিদতে চ প্ৰখিতে । নমো বঃ কিরিকেভ্যো দেবানাং হৃদয়েভ্যো নমো বিক্ষণকেভ্যো নমো বিচিন্বকেভ্যো নম।। আনিহঁতেভ্যো নম আমীবকেভ্যঃ ॥৯॥

মর্মার্থ- হরিণ অর্থাৎ অনুর্বর ক্ষেত্রে স্থিত বা উৎপন্ন (ভব) রুদ্রকে নমস্কার। এইভাবে, বহুজনের দ্বারা সেবিত মার্গে (অর্থাৎ পথে) উৎপন্ন, কুৎসিত ক্ষুদ্র শিলাকীর্ণ প্রদেশে উৎপন্ন, নিবাসযোগ্য স্থানে বা দেশে উত্ন যিনি জটাবদ্ধবান, যিনি ভক্তের সম্মুখে অবস্থিত, যিনি গোষ্ঠে স্থিত, যিনি গৃহে উৎপন্ন, যিনি শয্যায় উৎপন্ন, যিনি প্রাসাদে উৎপন্ন, যিনি কণ্টকলতা ইত্যাদিতে পূর্ণ দুর্গম অরণ্যে স্থিত, যিনি বিষম গিরিগুহা ইত্যাদিতে স্থিত, যিনি অগাধ জলে উৎপন্ন, যিনি নিবেম্পং অর্থাৎ নীহার জলে উৎপন্ন, যিনি পরমাণুতে অবস্থিত, যিনি ধুলির মধ্যে অবস্থিত, যিনি শুষ্ক কাষ্ঠে উৎপন্ন, যিনি আর্দ্র স্থানে উৎপন্ন, যিনি তৃণ ইত্যাদি শূন্য (লুপ্ত) কঠিন প্রদেশে জাত, যিনি তৃণ ইত্যাদিতে উৎপন্ন, যিনি পৃথিবীতে উৎপন্ন, যিনি নদীর শোভন তরঙ্গে উৎপন্ন, যিনি পর্ণে অর্থাৎ (সরস) পত্রে উৎপন্ন, যিনি শুল্ক পর্ণের সমষ্টিতে (সংঘাতঃ) উৎপন্ন, যিনি (শত্রুর উদ্দেশে) উদ্যত আয়ুধধারী, যিনি (শত্রুকে) প্রহারকারী, যিনি (শত্রুকে) খেদন বা বিতাড়নকারী, যিনি ভক্তদের ধন ইত্যাদি দান করে তাদের হৃদয়স্বরূপ হয়ে থাকেন, যিনি সকল দেবতার প্রিয়সদৃশ তাদের হৃদয়স্বরূপ, যিনি বিপরীতা বিক্ষণকাঃ অর্থাৎ কখনও ক্ষয়রহিত (যাঁর কখনও ক্ষয় নেই), যিনি বৃষ্টি প্রভৃতির দ্বারা জগতের কারক, যিনি নিঃশেষে পাপকে হত করে থাকেন, যিনি সকল স্থূলীভাব প্রাপ্তবান–সেই হেন রুদ্রগণকে নমস্কার। (পূর্ববর্তী অনুবাকের মতো পঠিতব্য এই যজুগুলিরও অধিকাংশ শুক্লযজুর্বেদের ১৬শ অধ্যায়ে প্রাপ্তব্য) ॥৯॥

 [সায়ণাচার্য বলেন-দশমেইনুবাক ঋরূপা মন্ত্র উচ্যন্তে। অর্থাৎ–এই দশম অনুবাকে ঋক্‌-রূপা মন্ত্ৰসমূহ কথিত হয়েছে]

.

দশম অনুবাক

 মন্ত্র- দ্ৰাপে অন্ধসম্পতে দ্ররিদ্রনীললোহিত। এষাং পুরুষাণামে পশূনাং মা ভেৰ্মাহরো মে এষাং কিং চনাহমমৎ। যা তে রুদ্ৰ শিৰা তনুঃ শিবা বিশ্বাহভেষজী। শিবা রুদ্রস্য ভেষজী তয়া নো মৃড় জীবসে। ইমাং রুদ্রায় বসে কপর্দিনে ক্ষয়দ্বীরায় প্র ভরামহে মতি। যথা নঃ শমস-দ্বিপদে চতুষ্পদে বিশ্বং পুষ্টং গ্রামে অস্মিন্ অনাতু। মৃড়া নো রুদ্ৰোত নো ময়স্কৃধি ক্ষয়দ্বীরায় নমসা বিধেম তে।। যচ্ছং চ যোণ্ট মনুরাযজে পিতা তদশ্যাম তব রুদ্র প্রণীতৌ। মা নো মহান্তমুত মা নো অর্ভকং মা ন উক্ষতমুত মা ন উক্ষিত। মা নো বধীঃ পিতরং মোত মাতরং প্রিয়া মা নস্তনুবঃ রুদ্র রীরিষঃ। মা নস্তোকে তনয়ে মা ন আয়ুষি মা নো গোষু মা নো অশ্বেযু রীরিষঃ। বীরা নো রুদ্র ভামিতো বধীহবিষ্মন্তো নমসা বিধেম তে। আরাত্তে গোগ্ন উত পূরষয়ে ক্ষয়দ্বীরায় সুমস্মে তে অন্তু। রক্ষা চ নো অধি চ দেব ব্ৰহ্যধা চ নঃ শৰ্ম্ম যচ্ছ দ্বিবহাঃ। তুহি তং গর্তসদং যুবানং মৃগং ন ভীমমুপহকুমুগ্রম। মড়া জরিত্রে রুদ্র স্তবানো অন্যাং তে অস্মৃমি বপন্তু সেনাঃ। পরি পো রুদ্রস্য হেতিবৃর্ণ পরি ত্বেশস্য দুৰ্ম্মতিরঘায়োঃ। । অব হিরা মঘবত্তশুনুধ মীরস্তোকায় তনয়ায় মৃড়য়। মীদুষ্টম শিবম শিববা নঃ সুমনা ভব। পরমে বৃক্ষ আয়ুধং নিধায় কৃত্তিং বসান আ চর পিনাকম বিভ্ৰদা গহি। বিকিরিদ বিলোহিত নমস্তে অন্তু ভগবঃ। যাস্তে সহস্রং হেতয়োহন্যমস্মৃমি বপন্তু তাঃ। সহস্রাণি সহধা বাহুবোস্তব হেতয়ঃ। অসামীশানো ভগবঃ পরাচীনা মুখা কৃধি। ১০  

মর্মার্থ– পাপীগণকে নরক-প্রদানরূপ কুৎসিত গতি দানকারী, ভক্তগণকে অন্নের দ্বারা পালনকারী, দরিদ্র (স্বয়ং নিস্পৃহ), হে নীললোহিত (কণ্ঠে নীল ও অন্যত্র লোহিতবর্ণশালী) রুদ্র। আমাদের পুত্র-পৌত্র ইত্যাদি সহ আমাদের ও গো-মহিষ ইত্যাদি সমূহকে ভয় প্রদর্শন করবেন না, এদের মধ্যে কাউকেই কিছুমাত্র বিনাশ করবেন না, তারা যেন রুগ্ন না হয় (মা আমমন্মৈব রুগ্নমভূৎ)-হে রুদ্র! আপনার যে শিবময় (শান্ত বা মঙ্গলময়) তনু বিদ্যমান, সেই তনুর দ্বারা আমাদের জীবন সুখী করুন। (শিবত্ব সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, প্রতি দিন সকল রোগের আরোগ্যের নিমিত্ত ভেষজরূপী যিনি, তিনি শিব; দারিদ্র্য ইত্যাদির বিনাশের হেতুকারক যিনি, তিনি শিব; অধিকন্তু যিনি জ্ঞানপ্রদান পূর্বক জন্মমরণ ইত্যাদি দুঃখ নিবারণ করেন, তিনিও শিব)।–যে প্রকারেই হোক, দ্বিপদযুক্ত (অর্থাৎ মনুষ্যরূপী) আমাদের পুত্র-পৌত্র ইত্যাদির এবং চতুষ্পদমুক্ত গো-মহিষ ইত্যাদি পশুগণের যাতে সুখ হয়, তেমন করুন। অধিকন্তু, এই গ্রামে সকল প্রাণী যাতে পুষ্ট ও উপদ্ররহিতরূপে সুখী হয়, সেই নিমিত্ত আমরা রুদ্রের উদ্দেশে পূজা ধ্যান ইত্যাদি বিষয়ে বুদ্ধি প্রকর্ষের সাথে পোষণ করছি (প্রকর্ষেণ পোষয়ামঃ)। (কিরকম রুদ্র? না, তিনি বলযুক্ত, জটাবন্ধযুক্ত তাপসের মতো ও ক্ষীয়মান প্রতিপক্ষ পুরুষ ভিন্ন অপরের পাপবিনাশের হেতু।–হে রুদ্র! আমাদের ইহলোকে, এবং পরলোকেও, সুখ বিধান করুন। আমাদের পাপবিনাশকারী আপনাকে আমরা মনে মনে নমস্কারের দ্বারা পরিচর‍্যা করছি। হে রুদ্র! আমাদের পিতা বা পালক প্রজাপতি আমাদের নিমিত্ত যে সুখ ও যে দুঃখভিন্ন অপর যা কিছু ভাব সম্পাদন করেছেন, তার সবটুকুই আমরা আপনার স্নেহাতিশয়ে প্রাপ্ত হবো।-হে রুদ্র! স্থবির (বৃদ্ধ) পুরুষগণকে হিংসা করবেন না। অধিকন্তু, আমাদের অর্ভক অর্থাৎ বালক বা শিশুদের, সেচনসমর্থ যুবা পুরুষদের, গর্ভস্থ পুরুষদের, পিতা-মাতা, ও আমাদের এই প্রিয় শরীরের প্রতি হিংসা করবেন না।-হে রুদ্র! আমাদের অপত্যমাত্রকে, বিশেষভাবে আমাদের পুত্রকে হিংসা করবেন না, আমাদের আয়ু, আমাদের গো, আমাদের অশ্ব–এইগুলির প্রতি হিংসা করবেন না। আপনি ক্রুদ্ধ হয়ে আমাদের ভৃত্যদের প্রতি হিংসা করবেন না। আমরা হবিষ্মন্ত অর্থাৎ হবিযুক্ত হয়ে আপনাকে নমস্কারের দ্বারা পরিচর‍্যা করছি। গোঘ্ন অর্থাৎ গোঘাতী, পুরুষঘু অর্থাৎ পুত্রপৌত্র ইত্যাদি পুরুষগণের ঘাতক ও ভৃত্য ইত্যাদির ঘাতক আপনার যে উগ্ররূপ, তা দুরে অবস্থান করুক (দুরে তিতু); বরং আপনার সুখকর রূপ আমাদের নিকটস্থ হোক। আপনার ঘোর (উগ্র) ও শিব (শান্ত)–দুই শরীর আছে, তার যেটি ঘোর শরীর, সেটি দূরে গমন করুক, (অর্থাৎ আপনার সেই শিবময় শরীরটিই এইস্থানে আগত হোক)। অধিকন্তু, আপনি আমাদের সর্বতঃ পালন করুন। হে দেব! সকল যজমান অপেক্ষা আমাদের অধিক উৎকর্ষের কথা আপনি দেবগণের নিকট বলুন (ঐহি)। পৃথিবী ও দুলোক এই দুই লোকের বর্ধয়িতা (দ্বয়োলোকয়োর্বর্ধয়িতা) আপনি; আপনি আমাদের সুখ-প্রদান করুন।হে আমার বাক্য! তুমি সেই প্রসিদ্ধ রুদ্রের স্তুতি করো। (কিরকম রুদ্র? না,) যে রুদ্র গর্ভসদৃশ হৃদয় পদ্মে সর্বদা অবস্থান করেন, যে রুদ্র যুবানং অর্থাৎ নিত্যতরুণ এবং যে রুদ্র প্রলয়কালে সর্ব জগৎকে সংহারের নিমিত্ত উগ্ররূপী হন। (উগ্রতার নিদর্শন কি? না,) যেমন হস্তীকে বিদারিত করবার জন্য সিংহ ভয়ঙ্কর উগ্র হয়ে ওঠে। সেই হেন হে রুদ্র! দিনে দিনে ক্ষীয়মাণ আমাদের শরীরে সুখ প্রদান করুন। আপনার সেনা আমাদের শত্রুগণের বিনাশ সাধন করুক।–রুদ্রের হেতি নামক অস্ত্র যেন কখনও আমাদের বিদ্ধ না করে (বা আমাদের যেন পরিত্যাগ করে); আপনার জ্বলিত ক্রোধরূপ প্রহারের ইচ্ছান্বিত দুর্মতি বা উগ্রবুদ্ধি যেন আমাদের ত্যাগ করে; এবং বিরোধীদের বিনাশের নিমিত্ত আপনার যে উগ্রবুদ্ধি (তথা দুর্বুদ্ধি) আছে, তা হবিঃ-লক্ষণাম্বিত অন্নের দ্বারা যুক্ত যজমানগণের নিকট হতে অপনীত করুন (অপনীতাং কুরু)। হে কামসমূহের অভিবষক! আপনি আমাদের পুত্র ও তাদের পুত্রগণকে সুখ-প্রদান করুন।–হে অতিশয়রূপে কামনাসমূহের অভিবৰ্ষক (মীদুষ্টম)! হে অতিশয়রূপে শান্তস্বরূপ (শিবতম)! আপনি আমাদের প্রতি শান্ত (মঙ্গলপ্রদ) ও সৌমনস্য বা স্নেহের দ্বারা যুক্ত হোন। আপনার ত্রিশূল ইত্যাদি অস্ত্র উচ্চ বট-অশ্ব ইত্যাদিতে স্থাপন পূর্বক কৃত্তিবাস হয়ে (অর্থাৎ ব্যাঘ্রচর্মমাত্র পরিহিত হয়ে) আমাদের অভিমুখে আগত হোন। বাণ ইত্যাদি পরিত্যাগ করে কেবল ভূষণের নিমিত্ত (ভূষণার্থ) পিনাক নামক ধনু ধারণ পূর্বক এই স্থানে আগত হোন।-ভক্তের প্রতি বহুধা ধন বিশেষভাবে ক্ষেপণকারী (অর্থাৎ প্রভূত ধন দানকারী), শ্বেতবর্ণধারী (বিলোহিততা বা লৌহিত্যরহিত), (আবার বিশেষভাবে লোহিত বোঝাতে ও বিলোহিতঃ শব্দ প্রযোজ্য হতে পারে), হে ভগব (অর্থাৎ সম্পূর্ণ ঐশ্বর্য, সম্পূর্ণ বীর্য বা ধর্ম, সম্পূর্ণ যশ, সম্পূর্ণ শ্ৰী, সম্পূর্ণ জ্ঞান ও সম্পূর্ণ বৈরাগ্য–এই ছয় ভাগের দ্বারা অম্বিত বা মহাত্ম্য সম্বলিত)! আপনাকে নমস্কার। হে রুদ্র! আপনি উৎপত্তি, বিনাশ ও ভূতসমুহের বেত্তা, এই হেন গুণত্রয়বিশিষ্ট আপনাকে নমস্কার। হে রুদ্র! আপনার দুটি বাহুতে ধনু-খঙ্গ-ত্রিশূল ইত্যাদি ভেদে সহস্র রকমের অস্ত্র আছে (বিদ্যন্তে)। হে ষড়গুণোপেত ভগবন্! সব আয়ুধেরই নিয়মনে সমর্থ আপনি; আপনি সেই হেতি নামক আয়ুধগুলির মুখ বা শল্যসমূহ (ধারাল দিকগুলি) আমাদের দিক হতে বিমুখ (পরঙুখ) করুন ॥১০৷

[সায়ণাচার্য  বলেন–একাদশে শিষ্টা ঋচঃ শিষ্টানি যজুষি চোচ্যন্তে। অর্থাৎ–এই একাদশ অনুবাকে অবশিষ্ট ঋ-মন্ত্র ও অবশিষ্ট যজু-মন্ত্র কথিত হয়েছে।]

.

একাদশ অনুবাক

মন্ত্র- সহস্রাণি সহৰশশা যে রুদ্ৰা অধিভূম্যাম। তেষাং সহযোজনেহব ধনি তম্মসি। অস্মিন্মহত্যর্ণবেহস্তরিক্ষে ভবা অধি। নীলগ্রীবাঃ শিতিষ্ঠাঃ শৰ্বা অধঃ ক্ষমাচরাঃ। নীলগ্রীবাঃ শিতিষ্ঠা দিবং রুদ্রা উপশ্রিতাঃ। যে বৃক্ষে সম্পিঞ্জরা নীলগ্রীবা বিলোহিতাঃ। যে ভূতানামধিপতয়ো বিশিখাসঃ কপর্দিনঃ। যে অন্বেষু বিভিব্যক্তি পাত্ৰেযু পিৰতো জনান। যে পথাং পথিক্ষয় ঐলবৃদা যধঃ। যে তীর্থানি প্রচরন্তি সূকাবন্তো নিষণিঃ ।। য এতাৰত ভূয়াংস দিশো রুদ্রা বিতস্থিরে তেষাং সহযোজনেহৰ ধনি তম্মসি। নমো রুদ্রেভ্যো যে পৃথিব্যাং যেহন্তরিক্ষে যে দিবি যেষামন্নং ব্যাতো বমিষবস্তেভ্যো দশ প্রাচীর্দশ দক্ষিণা দশ প্রতীচীর্দশোদীচীশোৰ্দ্ধান্তেভ্যো নমস্তে নো মৃড়য় তে যং দ্বিম্মে যশ্চ নো দেষ্টি তং বো জম্ভে দমি ॥১১।

মর্মার্থ– এই পৃথিবীর উপরে রুদ্রগণের যে সহস্ররকম মূর্তি ও তাদের সহস্র সহস্র ভেদ আছে, তাঁদের সকলের ধনুগুলি আমাদের নিকট হতে সহস্র যোজন দূরবর্তী দেশে সমূহরূপে স্থাপন করছি।–এই দৃশ্যমান মহাসমুদ্রসদৃশ বিস্তীর্ণ অন্তরিক্ষে রুদ্রদেবের যে মূর্তিবিশেষগুলি (ভবা) বর্তমান, সেগুলিকে আমি আমাদের নিকট হতে পূর্বোক্ত সহস্র যোজন দূরবর্তী স্থানে স্থাপন করছি। ভূমির নিম্নে কোনও স্থানে নীলবর্ণ নীলগ্রীব, আবার অন্য কোনও স্থানে শ্বেতবর্ণ শিতিকণ্ঠ, সেই রকম কোনও স্থানে বা শর্ব নামক রুদ্রমূর্তিগুলি বিচরণ করছেন। (কিরকম? না, ভূমেরধস্তাৎ অর্থাৎ পাতালে সঞ্চরণ করছেন। স্বর্গে উপশ্রিত রুদ্রগণ নীলগ্রীব ও শিতিকণ্ঠ। লোকে রুদ্রগণ বৃক্ষে অবস্থিত, সেইরকম কোথাও সবুজবৰ্ণ তৃণের মতো, কোথাও নীলবর্ণগ্রীবা (অর্থাৎ গ্রীবাদেশ নীলবর্ণযুক্ত), অপর কোথাও বা বিশেষ ভাবে রক্তবর্ণ–এইরকম রুদ্রমূর্তি বর্তমান; আমি সেই রুদ্রগণকে সহস্র যোজন দূরবর্তী স্থানে স্থাপন করছি।এই রুদ্রগণের মধ্যে কোন রুদ্র মনুষ্যের উপদ্রবকারী ভূত-নামক গণবিশেষের অধিপতি,সেই রুদ্রগণের মধ্যে কোন কোন জন মুণ্ডিত-মস্তক (মুণ্ডিতমূধানঃ), অপর কোন কোন রুদ্রমূর্তি জটাবন্ধ ইত্যাদিরূপে বিচ্ছুরণকারী।–যে রুদ্র মনুষ্যগণের অন্নে অর্থাৎ ভুজ্যসামগ্রীতে গূঢ়ভাবে অবস্থিত থেকে বিশেষভাবে বাধা সৃষ্টি করেন, অর্থাৎ ধাতুবৈষম্য ঘটান; সেইরকম যে রুদ্র ক্ষীর জল ইত্যাদিতে গুঢ়ভাবে অবস্থিত থেকে তা পান করার বাধা সৃষ্টি করেন; সেই রুদ্রগণকে আমি সেই রুদ্রগণকে সহস্র যোজন দুরবর্তী স্থানে স্থাপন করছি। যে রুদ্রগণ পথিরক্ষয়ো অর্থাৎ লৌকিক বা বৈদিক পথমসূহের রক্ষক,–কেবল দেবতাদেরই নয়, কিন্তু সকলেরই পথের রক্ষক; যে রুদ্রগণ অন্নের পোষক; যে রুদ্রগণ আমাদের অনিষ্ট নিবারণ করেন;–সেই রুদ্রগণকে আমি সহস্র যোজন দূরবর্তী স্থানে স্থাপন করছি।যে রুদ্রগণ কাশী-প্রয়াগ ইত্যাদি তীর্থসমূহ রক্ষার নিমিত্ত বিচরণ করেন, তাদের আমি সহস্র যোজন দূরবর্তী স্থানে স্থাপন করছি; (তারা কিরকম রুদ্র? না, তারা স্কাবন্ত অর্থাৎ হস্তে ছুরিকা (তীক্ষ্ণ অস্ত্রবিশেষ) ধারণ করে থাকেন, তাঁরা নিষঙ্গিণঃ অর্থাৎ খঙ্গযুক্ত।–যে রুদ্রগণের বিষয় এই মন্ত্ৰসমূহে উক্ত হয়েছে, তাঁদের অপেক্ষাও অধিক যে রুদ্রগণ সকল দিকে প্রবিষ্ট হয়ে সহস্র সংখ্যায় বিরাজমান, আমি তাদের সহস্র যোজন দূরবর্তী স্থানে স্থাপন করছি।–যে রুদ্রগণ পৃথিবীতে অন্নরূপে, অন্তরিক্ষে বায়ুরূপে ও দুলোকে বর্ষণরূপে স্থিতবান, তাঁদের উদ্দেশে সমানভাবে নমস্কার করছি–অর্থাৎ পূর্বদিকস্থায়ী রুদ্রদের উদ্দেশে দশবার, দক্ষিণদিকস্থায়ী রুদ্রদের উদ্দেশে দশবার, পশ্চিমদিকস্থ রুদ্রদের উদ্দেশে দশবার, উত্তরদিকে পরিব্যাপ্ত রুদ্রদের উদ্দেশে দশবার এবং উধ্বদিকে বিচরণমান রুদ্রদের উদ্দেশে দশবার নমস্কার করছি; সেই রুদ্রগণ আমাদের সুখসম্পন্ন করুন। যে বৈরিগণ আমাদের দ্বেষ করে, এবং যে বৈরিগণকে আমরা দ্বেষ করি, হে রুদ্রগণ! আমরা তাদের সকলকে আপনার উগ্ররূপ বিদারিত মুখবিবরে নিক্ষেপ করছি। [এই মন্ত্রগুলির সাথে পরবর্তী কাণ্ডের ৪র্থ প্রপাঠকের ৩য় অনুবাকের মন্ত্রগুলি সংশ্লিষ্ট] ১১।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *