ঠিক আছে ইন্সপেক্টর সাহেব, ওরা হত্যাযজ্ঞ করুক, ক্লান্তভাবে বললেন হুকুম চাঁদ। প্ৰত্যেক লোকই হত্যার শিকার হোক। অন্য থানায় সাহায্য চেয়ে পাঠান এবং আপনি যে সংবাদ পাঠাবেন তার রেকর্ড রাখবেন। আমরা যেন প্রমাণ করতে পারি যে, ওদের প্রতিহত করতে আমরা চেষ্টার ত্রুটি করিনি।
হুকুম চাঁদকে মনে হলো একজন ক্লান্ত মানুষ। এক সপ্তাহে তাঁর চেহারা এমন হয়েছে যে, চেনাই যায় না। তাঁর মাথার চুলের গোড়ার সাদা অংশ দীর্ঘায়িত হয়েছে। খুব তাড়াতাড়ি দাড়ি কাটার ফলে কয়েক জায়গায় কেটে গিয়েছে। তাঁর চিবুক ঝুলে পড়েছে, ভাঁজ করা মাংস গরুর গল কম্বলের মতো ঝুলে পড়েছে। বার বার তিনি চোখ রাগড়াচ্ছেন।
আমি কি করতে পারি? কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন তিনি। সারা বিশ্বটা যেন পাগল হয়ে গিয়েছে। যাক পাগল হয়ে! আরও হাজার খানেক লোক খুন হলে কি এসে যায়? একটা বুলডোজার এনে আমরা তাদেরও আগের মতো করে সমাহিত করব। নদীর ধারে এ ধরনের ঘটনা ঘটলে আমাদের বুলডোজারেরও দরকার নেই। মৃতদেহগুলো শুধু নদীতে ফেলে দেব। চল্লিশ কোটি লোক থেকে কয়েক শ চলে গেলে কী আর এমন হবে। মহামারীর সময় তো এর দশ গুণ লোক মারা যায়। কই, তখন তো কেউ মাথা ঘামায় না!
সাব-ইন্সপেক্টর সাহেব বুঝতে পারলেন যে, এ কথা প্রকৃতপক্ষে হুকুম চাঁদের নয়। তিনি দুঃখভারাক্রান্ত মনকে হালকা করার চেষ্টা করছেন মাত্র। সাব-ইন্সপেক্টর সাহেব কিছুক্ষণ ধৈর্যের সাথে অপেক্ষা করলেন। পরে সহানুভূতির সাথে বললেন :
হাঁ স্যার, আমি সব ঘটনা এবং আমরা যা কাজ করছি তার রেকর্ড লিপিবদ্ধ করে রেখেছি। গত রাতে চন্দননগর থেকে সবাইকে সরিয়ে নিতে হয়েছে। সৈন্য বা আমার কনস্টেবলদের কারও ওপর আমি আস্থা রাখতে পারিনি। আমি একটা কাজ করতে পেরেছি। পাকিস্তানী সৈন্যরা শহরে আছে, একথা বলে আমি আক্রমণকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে সক্ষম হই। আমার কথায় ওরা ভীত হয়ে পড়ে। খুব অল্প সময়ের মধ্যে আমি মুসলমানদের সরিয়ে নিয়ে যাই। আমার চালাকি আক্রমণকারীরা আবিষ্কার করার পর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে এবং তারা মুসলমানদের ঘরবাড়ি লুঠ করে আগুন ধরিয়ে দেয়। আমি ধারণা করছি, ওদের অনেকে আমাকে ধরার জন্য থানায় আসার পরিকল্পনা করছে। কিন্তু কারও উত্তম পরামর্শে ওরা তা করেনি। আপনি তো দেখছেন স্যার, বাড়ি ঘর থেকে বিতাড়নের সময় আমি মুসলমানদের গালিগালাজ খেয়েছি, শিখদের কাছ থেকে লুঠ করা জিনিস কেড়ে নিয়ে তাদেরও গালিগালাজের শিকার হয়েছি। আমার মনে হয়, নানা বাহানায় সরকারও আমাকে তিরস্কার করবে। আমি পেলাম শুধু একটা বড় কলা। সাবইন্সপেক্টর সাহেব মৃদু হেসে হাতের বুড়ো আঙ্গুল দেখালেন।
হুকুম চাঁদের মনটা খোশ মেজাজে ছিল না। সাব-ইন্সপেক্টর সাহেবের কথার গুরুত্ব তিনি অনুধাবন করতে পারলেন না।
ঠিক বলেছেন, ইন্সপেক্টর সাহেব। এই ঘটনা প্রবাহ থেকে আপনি আমি বদনাম ছাড়া আর কিছুই পাব না। আমরা কি-ই বা করতে পারি? প্রত্যেকেই বন্দুকের ট্রিগার টিপে খুশি। ভিড়ে ঠাসা ট্রেন, মোটর গাড়ি ও অসংখ্যা হেঁটে চলা উদ্বাস্তুদের মাঝে রাইফেলের ম্যাগাজিনের গুলি শেষ করে মানুষ রক্তের হোলি উৎসবে মেতেছে। রক্তাক্ত এই উৎসব। যেখানে বুলেট উড়ছে আকাশে-বাতাসে, সেখানে যাওয়া সুস্থ মস্তিষ্কের লক্ষণ নয়। আরো এ তো হুকুম চাঁদ, একে বিদ্ধ করো না- স্ফুটন্ত বুলেট থেমে গিয়ে এ কথা চিন্তা করবে না। কে বুলেট নিক্ষেপ করছে তার নামও বুলেটে লেখা নেই। এমন কি বুলেটে যদি কারও নাম লেখাও থাকে, তাহলেও তা কারও দেহে ঢুকে গেলে সাস্তুনা পাওয়ার কিছু থাকে কি? না ইন্সপেক্টর সাহেব! পাগলের আখড়ায় একজন সুস্থ লোক শুধু একটা কাজই করতে পারে। সে ভান করতে পারে যে, সে ওদের মতোই পাগল এবং প্রথম সুযোগেই বেড়া ডিঙ্গিয়ে পলায়ন।
সাব-ইন্সপেক্টর সাহেব এ ধরনের ভাষণ শুনে অভ্যস্ত। এসব কথা যে ম্যাজিষ্ট্রেট সাহেবের মনের কথা নয়, তাও তিনি জানেন। কিন্তু হুকুম চাঁদ তাঁর কথা বুঝতে পারলেন না এটা সত্যি বিস্ময়কর। তিনি কখনও কোন কথা সোজাভাবে বলেন না। এটা তাঁর কাছে বোকামি বলে মনে হয়। তাঁর কাছে কূটনীতির আর্ট হলো, সহজ কথা কোন কিছুর সাথে জড়িয়ে বলা। এর ফলে কেউ কখনও বিপদে পড়ে না। তিনি এ কথা বলেছেন, এমন কথাও কেউ বলতে পারে না। আবার একই সাথে প্রমাণিত হয় তাঁর তীক্ষতা ও চালাকি। হুকুম চাঁদের মুতো দক্ষ কেউ নেই। যিনি পরোক্ষে অসম্মানজনক ইঙ্গিত করতে সমর্থ। আজ সকালে তিনি তাঁর মনকে বোধ হয় বিশ্রামে রেখেছেন।
গতকাল আপনার চন্দননগর যাওয়ার কথা ছিল। সাব-ইন্সপেক্টর সাহেব বললেন। তিনি যে সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন সেদিকে আলোচনার মোড় ঘোরাবার জন্য তিনি বললেন, আমি যদি পাঁচ মিনিট পরে যেতাম, তাহলে একজন মুসলমানের জীবনও রক্ষা পেত না। আমি যাওয়াতে একজন লোকও মারা যায় নি। সবাইকে আম বাইরে নিয়ে যেতে পেরেছি।
সাব-ইন্সপেক্টর সাহেব একজন লোকও এবং সবাইকে শব্দ দু’টোর ওপর বেশ জোর দিলেন। হুকুম চাঁদের প্রতিক্রিয়া তিনি লক্ষ্য করলেন।
সাব-ইন্সপেক্টর সাহেব দেখলেন, তাঁর কথায় কাজ হয়েছে। হুকুম চাঁদ তাঁর চোখের কোণা ব্লগড়ানো বন্ধ করলেন। অতি সাধারণভাবে তিনি একটা কথা জিজ্ঞাসা করলেন। ভাবখানা যেন তিনি শুধু তথ্য জানতে চাচ্ছেন। তার মানে আপনি বলতে চান, চন্দননগরে আর একটাও মুসলমান পরিবার নেই?
না স্যার, একটা পরিবারও নেই।
আমার মনে হয়, হুকুম চাঁদ বললেন, ঝামেলা মিটে গেলে ওরা ফিরে আসবে।
হতে পারে, সাব-ইন্সপেক্টর সাহেব উত্তর দিলেন। ওরা ফিরে এসে আর কিছুই পাবে না। ওদের ঘরবাড়ি হয় পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে আর না হয় দখল হয়ে গেছে। কেউ যদি ফিরেও আসে তাহলে তার জীবনের নিরাপত্তার গ্যারান্টি কে দেবে?
এ অবস্থা চিরদিন থাকবে না। আপনি দেখছেন অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে। এক সপ্তাহের মধ্যে তারা চন্দননগরে ফিরে আসবে। মুসলমান ও শিখরা আবার এক কলসির পানি পান করবে। হুকুম চাঁদের আশাবাদ যে ঠিক নয় তা তিনি নিজেই বুঝতে পারলেন তাঁর কণ্ঠস্বরে। সাব-ইন্সপেক্টর সাহেবও বুঝলেন।
আপনি হয়ত ঠিকই বলছেন স্যার। তবে সব কিছু ঠিক হতে কমপক্ষে এক সপ্তাহ সময় লাগবে। চন্দননগরের উদ্বাস্তুদের আজ রাতে ট্রেনে করে পাকিস্তান নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভগবান জানেন, কতজন জীবিত অবস্থায় ব্রিজ পার হতে পারে। যারা চলে যাবে তারা খুব তাড়াতাড়ি ফিরে আসবে বলে মনে হয় না।
সাব-ইন্সপেক্টর সাহেব এবার আসল কথাটাই বললেন। হুকুম চাঁদের চেহারা বিবর্ণ হয়ে গেল। তিনি তাঁর কৃত্রিম গান্তীর্য আর বজায় রাখতে পারলেন না।
চন্দননগরের উদ্বাস্তুরা আজ রাতের ট্রেনে যাচ্ছে। এ কথা। আপনি কোথায় শুনলেন? তিনি জিজ্ঞাসা করলেন।
ক্যাম্প কমান্ডারের কাছ থেকে আমি এ কথা শুনেছি। ক্যাম্পে আক্রমণ করার একটা আশঙ্কা ছিল। সে কারণে তিনি প্রাপ্ত প্রথম ট্রেনেই উদ্বাস্তুদের পাঠিয়ে দিচ্ছেন। তারা কেউ না গেলে তাদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা কম। তারা যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে এবং ট্রেনটা যদি দ্রুত যেতে পারে তাহলে অনেকের বাঁচার সম্ভাবনা আছে। ট্রেনটিকে লাইনচ্যুত করার পরিকল্পনা ওদের নেই। ওদের পরিকল্পনা, ট্রেনটি পাকিস্তান যাবে মৃতদেহ নিয়ে।
আকস্মিক বিপর্যয় এড়াবার জন্য যেন হুকুম চাঁদ চেয়ারের হাতল ধরলেন।
ক্যাম্প কমান্ডারকে আপনি সতর্ক করে দিচ্ছেন না কেন? তিনি উদ্বাস্তুদের না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
স্যার, ধৈর্যের সাথে ব্যাখ্যা করে সাব-ইন্সপেক্টর বললেন, ট্রেনে আক্রমণের ব্যাপারে। আমি তাকে কিছুই বলিনি। কারণ তিনি যদি উদ্বাস্তুদের না পাঠাবার সিদ্ধান্ত নেন তাহলে পুরো ক্যাম্পটিই নিশ্চিহ্ন করা হতে পারে। বিশ থেকে ত্ৰিশ হাজার উন্মত্ত গ্রামবাসী রক্তের জন্য অস্ত্ৰ হাতে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমার অধীনে পনেরো জন পুলিশ আছে। ওরা কেউ শিখদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়বে না। উন্মত্ত গ্রামবাসীকে যদি আপনি আপনার প্রভাব খাটিয়ে নিরন্ত্র করেত পারেন তাহলে আমি ক্যাম্প কমান্ডারকে ট্রেনে সম্ভাব্য আক্রমণের কথা বলে উদ্বাস্তুদের না পাঠাবার অনুরোধ জানাতে পারি।
সাব-ইন্সপেক্টর যেন এবার তাঁর তলপেটে আঘাত করলেন।
না না, ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব আঁতকে উঠলেন। অস্ত্ৰধারী উন্মত্ত জনতার ওপর কোন প্রভাব কাজে আসবে না। না। আমাদের চিন্তা করতে হবে।
হুকুম চাঁদ চেয়ারে বসেই গভীর চিন্তায় নিমগ্ন হলেন। নিজের দুহাতে তিনি মুখ ঢাকলেন। মুষ্টিবদ্ধ হাত দিয়ে কপালে বেশ কয়েকবার করাঘাতও করলেন। মাথার চুল এমন করে টানলেন যেন মস্তিষ্ক থেকে বুদ্ধি বের করে আনতে চান। তিনি।
মহাজনের খুনের কেসে যে দুজন লোককে আপনি গ্রেফতার করেছিলেন, তাদের কি হয়েছে? কিছুক্ষণ পর তিনি জিজ্ঞাসা করলেন।
ঘটনার সাথে ম্যাজিস্ট্রেট সাহেবের প্রশ্নের কোন সংযোগ খুঁজে পেলেন না ইন্সপেক্টর সাহেব।
তারা এখনও লক-আপে আছে। গোলমাল না মেটা পর্যন্ত আপনি তাদের আটকে রাখতে বলেছিলেন। যে হারে গোলমাল বাড়ছে, আমার তো মনে হয় তাদের আরও কয়েক মাস আটকে রাখতে হবে।
মানো মাজরা ছেড়ে যেতে কোন মুসলমান মেয়ে বা গৃহহীন কোন লোক অস্বীকার করেছে?
না স্যার, চলে যেতে কারও বাকি নেই। পুরুষ, মহিলা, শিশু-সবাই চলে গেছে, ইন্সপেক্টর সাহেব জবাব দিলেন। হুকুম চাঁদ কি চিন্তা করছেন তা তিনি আন্দাজ করতে পারলেন না।
জুগ্গার সাথে কোন একটা তাঁতী মেয়ের প্রেম আছে বলছিলেন একবার। কি যেন মেয়েটার নাম?
নূরান।
ওহ্ হাঁ, নূরান। কোথায় সে এখন?
সে চলে গেছে। তার বাপ মানো মাজরার মুসলমানদের কাছে নেতার মতো ছিল। গ্রামের সর্দার তাঁর সম্পর্কে আমার কাছে অনেক কিছুই বলেছে। তার মাত্র একটাই মেয়ে-নাম নূরান। সে ডাকাত জুগ্গার সন্তান ধারণ করেছে বলে অভিযোগ আছে।
অন্য লোকটির খবর কি? লোকটি রাজনৈতিক কমী না?
হ্যাঁ স্যার। পিপলস পার্টি বা ঐ ধরনের কোন পার্টির কর্মী। আমার মনে হয় লোকটি মুসলিম লীগার, নিজের পরিচয় গোপন রেখে সে কাজ করছে। আমি তাকে পরীক্ষা…
নির্দেশের জন্য কোন সাদা সরকারী কাগজ আপনার কাছে আছে? অধৈর্যের সাথে হুকুম চাঁদ তাঁর কথায় বাধা দিয়ে বললেন।
হ্যাঁ স্যার। সাব-ইন্সপেক্টর উত্তর দিলেন। তিনি কয়েকটা ছাপানো হলুদ কাগজ বের করে ম্যাজিস্ট্রেট সাহেবের হাতে দিলেন।
হুকুম চাঁদ হাত বাড়িয়ে সাব-ইন্সপেক্টর সাহেবের পকেট থেকে কলম টেনে নিলেন। টেবিলের ওপর কাগজ রাখতে রাখতে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, বন্দীদের নাম কি?
জুগ্গা বদমায়েশ এবং…
জুগ্গা বদমায়েশ, তাঁর কথায় বাঁধা দিয়ে বললেন, জুগ্গা বদমায়েশ আর …? ইতোমধ্যে তিনি একটা কাগজ পূরণ করে অন্য একটা কাগজ নিলেন।
ইকবাল মোহাম্মদ না মোহাম্মদ ইকবাল, আমি ঠিক বলতে পারছি না। ইকবাল মোহাম্মদ নয় ইন্সপেক্টর সাহেব। তার নাম মোহাম্মদ ইকবালও নয়। তার নাম ইকবাল সিং, লিখতে লিখতে তিনি বললেন। সাব-ইন্সপেক্টর সাহেব যেন বোকা বনে গেলেন। হুকুম চাঁদ কিভাবে জানেন? ম্যাজিষ্ট্রেট সাহেবের সাথে মিত সিং কি দেখা করেছে?
স্যার, কারও কথায় আপনি বিশ্বাস করবেন না। আমি পরীক্ষা…
একজন শিক্ষিত মুসলমান এই গোলমালের সময় এখানে আসতে পারে আপনি তা বিশ্বাস করেন? আপনি কি চিন্তা করেন, কোন দল এমনই বোকা যে, মুসলমানদের রক্ত ঝরাতে পাগলপারা শিখদের কাছে তারা একজন মুসলমানদে শান্তির বাণী নিয়ে পাঠাবে? ধিক আপনার কল্পনা শক্তিকো।
সাব-ইন্সপেক্টর সাহেবের মাথা নত হয়ে এলো। এটা মনে করা সমীচীন নয় যে, কোন শিক্ষিত লোক যে কোন কারণে তার জীবনকে বিসর্জন দেবে। তা ছাড়া তিনি নিজেও দেখেছেন যে, লোকটির ডান হাতে শিখরা যে স্টালের বালা পরে সেই বালা আছে।
আপনি ঠিক কথাই বলেছেন স্যার। কিন্তু ট্রেনে আক্রমণ ঠেকাতে এটার সাথে কোন সংযোগ আছে কি?
আমি ঠিক কথাই বলেছি, হুকুম চাঁদ গর্বের সাথে বললেন। আমার কথা ঠিক কি না। শীঘ্রই আপনি জানতে পারবেন। চন্দননগর যাওয়ার পথে আপনি নিজেই চিন্তা করে দেখবেন। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ওদের মুক্ত করে দেবেন। মুক্তি পাওয়ার পর ওরা দুজনেই যেন মানো মাজরায় যায় তা অবশ্যই দেখবেন। প্রয়োজন হলে ওদের জন্য একটা টাঙ্গা গাড়ি যোগাড় করে দেবেন। আজ সন্ধ্যার মধ্যে ওদের মানো মাজরা গ্রামে যাওয়া নিশ্চিত করবেন।
সাব-ইন্সপেক্টর সাহেব কাগজপত্র নিয়ে হুকুম চাঁদকে স্যালুট করলেন। নিজের সাইকেলে চড়ে তিনি থানার দিকে যাত্রা করলেন। তাঁর মন থেকে ক্ৰমেই দ্বিধাদ্বন্দ্বের ভাব কেটে গেল। হুকুম চাঁদের পরিকল্পনা তাঁর কাছে এমন স্পষ্ট হয়ে উঠল। যেমন বৃষ্টিমুখর দিনের পর উদ্ভাসিত হয় আলোকোজ্জ্বল দিন।।