৪.৪ চতুর্থ কাণ্ড। চতুর্থ প্রপাঠক

চতুর্থ কাণ্ড। চতুর্থ প্রপাঠক

প্রথম অনুবাক

মন্ত্র- রশ্মিরসি ক্ষয়ায় ত্বা ক্ষয়ং জিৰ প্ৰেতিরসি ধৰ্মায় ত্বা ধৰ্ম্মম্ জিম্বান্বিতিরসি দিৰ দ্বা দিবং জিম্ব সন্ধিরস্যন্তরিক্ষায় ত্ব হস্তরিক্ষং জিম্ব প্রতিধিরসি পৃথির্বৈত্ব পৃথিবীং জিৰ বিষ্টম্ভোহসি বৃষ্ট্যৈ ত্বা বৃষ্টিং জিম্ব প্রবাহস্যহ্নে ত্ব হহৰ্জিৰ্বানুবাহসি রাত্রিয়ৈ ত্বা রাত্রিং জিৰােশিগসি বসুভ্যস্তা বসুঞ্জি প্রকেতোহসি রুদ্রেভ্যা বৃদ্রাঞ্জিৰ সুদীতিরস্যাদিতেভ্যাহদিত্যাঞ্জি যৌজোহসি পিতৃভ্যস্তা পিতৃঞ্জি তন্তুরসি প্রজাভ্যস্তা প্রজা জিন্ধ পৃতনাষাডসি পশুভ্যস্থা পঞ্জিম্ব রেবদস্যোষধীভ্যস্ত্রৌষধীর্জিাভিজিদসি যুক্তাগ্রাবেন্দ্রায় ত্বেং জিম্বাধিপতিরসি প্রাণায় ত্বা প্রাণং জিম্ব যন্তহস্যপনায় বৃহপিনং জিম্ব সংসপোহসি চক্ষুষে ত্বা চক্ষুজ্জি বয়োধা অসি শ্রোত্রায় ত্বা শ্রোতং জিম্ব ত্রিবৃদসি প্রবৃদসি সমৃদসি বিবৃদসি সংহোহোহসি নাাহোহসি প্রবোহোহস্যনুরোহোহসি বসুকোহসি বেষত্রিরসি বস্যষ্টিসি ॥১॥ [সায়ণাচার্য বলেন–প্রথমানুবাকে স্তোমভাগা উচ্যন্তে। অর্থাৎ–এই প্রথম অনুবাকে স্তোমভাগ নামক ইষ্টকার বিষয় কথিত হয়েছে]।

মর্মার্থ- হে ইষ্টকা! তুমি আদিত্যের রশ্মিরূপা, তোমাকে নিবাস সিদ্ধির নিমিত্ত উপধান করছি, তুমি আমাদের নিবাস সম্পন্ন করো। তুমি প্ৰেতিঃ, অর্থাৎ প্রকৃষ্ট গতিযুক্তা, ধর্ম, অর্থাৎ বিহিত কর্ম অনুষ্ঠানের নিমিত্ত তোমার উপদান করছি, তুমি আমাদের কর্মানুষ্ঠান অর্থাৎ যজ্ঞকর্ম সম্পন্ন করো। তুমি সাহন্বিতিঃ, অর্থাৎ অনুকুলা গতিযুক্তা; দুলোকের নিমিত্ত তোমার উপধান করছি, তুমি আমাদের দ্যুলোক গমনের পথ প্রাপ্ত করিয়ে দাও। তুমি সন্ধি, অর্থাৎ দ্যাবাপৃথিবীর মধ্যবর্তী দেশরূপা, সেই সন্ধিদেশে গমনের নিমিত্ত তোমার উপধান করছি, তুমি আমাদের সেই স্থানে গমনের পথ প্রাপ্ত করিয়ে দাও। তুমি গন্ধর্ব ইত্যাদি লোভাগী অন্তরীক্ষরূপা; সেই অন্তরীক্ষে গমনের নিমিত্ত তোমার উপধান করছি, তুমি সেই লোকে গমনের পথ প্রাপ্ত করিয়ে দাও। তুমি প্রতিধি, অর্থাৎ ভূলোকভাগ-স্বরূপা; সেই ভূলোকের স্থিতির নিমিত্ত তোমার উপধান করছি, তুমি ভূলোকে আমাদের স্থিতি সম্পন্ন করে দাও। তুমি বিষ্টম্ভ, অর্থাৎ বিশেষভাবে, জলের ধারক মেঘ-স্বরূপা; সুতরাং মেঘ হতে বর্ষণের নিমিত্ত তোমার উপধান করছি, তুমি আমাদের বৃষ্টিপ্রাপ্ত করিয়ে দাও। তুমি প্রবোষকাল অর্থাৎ প্রথম আলোক-উৎপাদিকা (সূর্যোদয়ের পূর্বেই আলোক-প্রবর্তিকা) উষা-স্বরূপা; দিবসের সিদ্ধির নিমিত্ত তোমার উপধান করছি, তুমি আমাদের দিবসকে সার্থক করো।-হে ইষ্টকা! তুমি সূর্যাস্তের পশ্চাতে বিচরণকারিণী সায়ংসন্ধ্যা-স্বরূপা; রাত্রির সিদ্ধির নিমিত্ত তোমার উপধান করছি; তুমি আমাদের রাত্রিকে সিদ্ধির নিমিত্ত তোমার উপধান করছি; তুমি আমাদের রাত্রিকে সার্থক করো। তুমি কাম্যমানা; অতএব বসু বা ধনসমূহের কামনায় তোমার উপধান করছি, তুমি আমাদের ধনের দ্বারা প্রীত করো। তুমি রুদ্রের প্রকৃষ্ট কেতু বা ধ্বজা-স্বরূপা; সেই রুদ্রগণের নিমিত্ত তোমার উপধান করছি, তুমি রুদ্রগণের প্রতি সম্পাদন করো। তুমি শোভনা দীপ্তি-স্বরূপা; আদিত্যবর্গের নিমিত্ত তোমার উপধান করছি, তুমি তাঁদের প্রীত করো। তুমি ওজঃ বা বলরূপা; পিতৃগণের বল বা অনুগ্রহ সমর্থের নিমিত্ত তোমাকে স্থাপিত করছি, তুমি তাদের প্রীত করো। তুমি বিস্তৃতি-স্বরূপা; পুত্রপৌত্রাদির নিমিত্ত তোমার উপধান করছি, তুমি তাদের প্রীত করো। তুমি পৃতনাষা অর্থাৎ গো-ইত্যাদি পশুসমূহের অপহর্তা শত্রুসেনার অভিভবকারী-স্বরূপা; সেই পশুসমূহের নিমিত্ত তোমার উপধান করছি, তুমি তাদের রক্ষার দ্বারা প্রীত করো।-ওষধিসাধ্য যে জীবন, তুমি তৎ-রূপা; সেই ওষধিসমূহের নিমিত্ত তোমার উপধান করছি, তুমি তা সম্পাদনের দ্বারা প্রীত করো। তুমি অভিজিৎ, অর্থাৎ শত্রুগণের অভিভবকারী, যুক্তগ্রাবা, অর্থাৎ পাষাণসদৃশ বজ্রগ্রাবাকে যুক্ত হস্তে স্বীকারকারী, বজ্রধারী ইন্দ্র-স্বরূপা; তোমাকে ইন্দ্রের নিমিত্ত উপধান করছি, তুমি চক্ষু ইত্যাদি ইন্দ্রিয়ের অধিষ্ঠাতা ইন্দ্রদেবকে প্রীত করো। শ্বাসরূপ বায়ুর যে অধিপতি, তুমি তৎ-রূপা; সেই প্রাণরূপ বায়ুর নিমিত্ত তোমার উপধান করছি, তুমি সেই বায়ুকে প্রীত করো। বাহিরে নির্গমন ও পুনরায় অন্তরভাগে প্রবেশের নিয়ামক যে বায়ু, তুমি তৎ-স্বরূপা; তোমাকে সেই অপান বায়ুর নিমিত্ত উপধান করছি, তুমি তাকে প্রীত করো। তুমি সম্যক প্রবর্তমান দৃষ্টিস্বরূপা; সেই সংসপো দৃষ্টির নিমিত্ত তোমার উপধান করছি, তুমি সেই সংসর্পো দৃষ্টির নিমিত্ত তোমার উপধান করছি, তুমি সেই দৃষ্টিকে প্রীত করো। পক্ষী যেমন যত্র তত্র গমন পূর্বক আপন কার্য সাধন পূর্বক শ্রোত্রেন্দ্রিয় শক্তির দ্বারা শব্দ প্রাপ্ত হয়ে থাকে, তুমি সেই শক্তিরূপা; শ্রোত্রের শক্তির নিমিত্ত তোমার উপধান করছি, তুমি সেই শ্রবণশক্তিকে প্রীত করো। তুমি ত্রিবৃৎ অর্থাৎ নারী-পুরুষের ত্রি-অবয়ব বিশেষ মিথুনীভাব বা সঙ্গমরূপা (মিথুনীভাবরূপা ত্বমসি)। স্ত্রী-পুরুষের সংসর্গানন্তরভাবিনী যে প্রবৃত্তি, তুমি সেই প্রবৃত্তিরূপা। প্রবৃত্তির পর যে সম্যক ব্যাপার, তুমি সেই সংবৃত্তরূপা। সেই ব্যাপারের পর যে বিবৃত্তি, তুমি সেই বিবৃত্তরূপা। সম্ভোগের পর যে বীজের ক্ষেত্রে যে সমারোপ, তুমি সেই সংবোহরূপা। ক্ষেত্রে প্রক্ষিপ্ত বীজের নিঃশেষে গর্ভাশয় ব্যাপ্তি যে নীরোহ, তুমি সেই রূপা। গর্ভাশয়ে ব্যাপ্ত বীজের শরীরাকারে যে পরিণাম, তুমি সেই প্ররোহরূপা। এবং সেই পরিণত শরীরের অনুকূলে পুত্র ইত্যাদিরূপে যে প্রাদুর্ভাব, তুমি সেই অনুবোহরূপা।–তুমি বসুকো অর্থাৎ ধনসদৃশ পুত্ররূপা, ব্যাপ্ত ধনের বর্ধনকারিণী (অর্থাৎ প্রাপ্ত ধনের অভিবৃদ্ধিকারিণী) ও অভিবৃদ্ধিকৃত ধনের ভোজনরূপা। যে ধন অর্জন করে এবং যে তার বৃদ্ধির দ্বারা জীবনধারণ করে, তুমি তৎ-রূপা (অপা ত্বমসি)। [পরবর্তী কাণ্ডের ৩য় প্রপাঠকের ৫ম ও ৬ষ্ঠ অনুবাকের মন্ত্রের সাথে এই মন্ত্রগুলি সংশ্লিষ্ট] ॥১॥  

[সায়ণাচার্য বলেন–দ্বিতীয়ে নাকদাখ্যা ইষ্টক অভিধীয়ন্তে। অর্থাৎ–এই দ্বিতীয় অনুবাকে নাকসৎ নামে আখায়িতা ইষ্টকার কথা বলা হয়েছে।]

.

 দ্বিতীয় অনুবাক

মন্ত্র- রাসি প্রাচী দিগ্ৰসবস্তে দেবা অধিপতয়েহগ্নিহেঁতীনাং প্রতিধৰ্ত্তা ত্রিবৃত্তা স্তোমঃ পৃথিব্যাং এয়ত্বাজ্যমুকথমব্যথায়ৎ শুঙ্খাতু রথস্তরং সাম প্রতিষ্ঠিত্যৈ। বিরাডসি দক্ষিণা দিরুদ্রস্তে দেবা অধিপতয় ইন্দ্রো হেতীনাং প্রতিধৰ্ত্তা পঞ্চশস্তা স্তোমঃ পৃথিব্যাং এ তু উগমুথব্যথয়ৎ শুভ্রাতু বুহসাম প্রতিষ্ঠিত্যৈ। সডসি প্রতীচি দিক আদিত্যাস্তে দেবা অধিপতয়ঃ সোমমা হেতীনাং প্রতিধৰ্ত্তা সপ্তদশা স্তোমঃ পৃথিব্যাম্ শয়তু মরুতৃতীয়মুথমব্যথয়ৎ শুভ্রাতু বৈরূপং সাম প্রতিষ্ঠিত্যৈ। স্বরাডস্যুদীচী দিগ্বিন্ধে তে দেবা অধিপতয়ো বরুণো হেতীনাম প্রতিধর্তৈকবিংশত্ত্বা স্তোমঃ পৃথিব্যাং শয়তু নিক্কেবল্যমুক্ৰথমব্যথয়ৎ স্তুভ্রাতু বৈরাজং সাম প্রতিষ্ঠিত্যা। অধিপত্নসি বৃহতী দিমরুতন্তে দেবা অধিপতয়ঃ বৃহস্পতিহেতীনা। প্রতিধৰ্ত্তা নিবত্রয়স্ত্রিংশেী ত্ব স্তোমৌ পৃথিব্যাং শয়তা বৈশ্বদেবাগ্নিমারুতে উথে অব্যথয়ন্তী স্তীতাং শাৰুরৈবতে সামনী প্রতিষ্ঠিত্যা।। অন্তরিক্ষায়য়া প্রথমজা দেবেষু দিবো মাত্রয়া বরিণা প্রথন্তু বিধৰ্ত্তা চায়মধিপতিশ্চ তে ত্বা সৰ্ব্বে সংবিদানা নাকস্য পৃষ্ঠে সুবর্গে লোকে যজমানং চ সাদয়ন্তু ॥২॥

মর্মার্থ- হে ইষ্টকা! তুমি রাজ্ঞী অর্থাৎ রাজমানা হয়ে পূর্বদিকে স্বরূপা; অষ্টসংখ্যক বসু তোমার পালয়িতা (অধিপতি); তোমাতে উপদ্রবকারী শত্রুগণের অস্ত্রকে অগ্নিদেব নিরাকৃত করুন; ত্রিবৃৎ নামে আখ্যায়িত স্তোম তোমাকে পৃথিবীতে স্থাপন করুন; আজ্য নামক উথ (প্র বো দেবায়াগ্নয়ো ইত্যাদি শস্ত্রে) তোমাকে ব্যথারহিত করে দৃঢ় করুন; এবং রথন্তর নামক সাম তোমার চিরাবস্থান সম্পাদন করুন।–হে ইষ্টকা! তুমি বিরাট রূপে দক্ষিণদিক্ স্বরূপা; দেবগণ তোমার পালয়িতা (অধিপতি); তোমাতে উপদ্রবকারী শত্রুগণের অস্ত্রকে ইন্দ্রদেব নিরাকৃত করুন; পঞ্চদশ নামে আখ্যাত স্তোম তোমাকে পৃথিবীতে স্থাপন করুন; প্রউগ উথ (বায়ুরগ্রেগা ইত্যাদি শস্ত্র) তোমাকে ব্যথারহিত করে দৃঢ় করুন; এবং বৃহৎ সাম তোমার চিরাবস্থান সম্পাদন করুন।–তুমি সম্রাট রূপে পশ্চিমদিক্ স্বরূপা; আদিত্য দেবতাগণ তোমার অধিপতি (পালক); তোমাতে উপদ্ৰবকারী শত্রুগণের অস্ত্রকে সোমদেব নিরাকৃত করুন; সপ্তদশ নামে আখ্যায়িত স্তোম তোমাকে পৃথিবীতে স্থাপন করুন; আ ত্বা রথং যথোতয়ঃ ইত্যাদি মরুতৃতীয় শস্ত্র-সম্পর্কিত উথ তোমাকে ব্যথারহিত করে দৃঢ় করুন; এবং বৈরূপ সাম তোমার চিরাবস্থান সম্পাদন করুন।-তুমি স্বরাষ্ট্ররূপে উত্তরদিক স্বরূপা; দেবগণ তোমার অধিপতি (পালক); তোমাতে উপদ্রবকারী শত্রুগণের অস্ত্রকে বরুণদেব নিরাকৃত করুন; এবং একবিংশ স্তোম তোমাকে পৃথিবীতে স্থাপন করুন; অভিত্বা শূর নোনুম ইত্যাদি নিক্কেবল্য শস্ত্র-সম্পর্কিত উথ তোমাকে ব্যথারহিত করে দৃঢ় করুন; এবং বৈরাজ সাম তোমার চিরাবস্থান সম্পাদন করুন।–তুমি পালয়িত্রী বা অধিপত্নীরূপে বৃহতী দিক অর্থাৎ প্রৌঢ়া উধ্বদিক্‌ রূপা; মরুৎদেবতাগণ তোমার অধিপতি (পালক); বৃহস্পতি তোমার প্রতিধর্তা অর্থাৎ তোমাতে উপদ্রবকারী শত্রুর অস্ত্র হতে তোমার পুনরায় রক্ষাকর্তা; ত্ৰিণবয়স্ত্রিংশ স্তোম তোমাকে পৃথিবীতে স্থাপন করুন; বৈশ্বদেব- অগ্নিমারুত নামক উথদ্বয় যথাক্রমে তৎসবিতুৰ্বণীমহে ইত্যাদি শস্ত্রে ও বৈশ্বানরায় পৃথুপাজসে ইত্যাদি শস্ত্রে তোমাকে ব্যথারহিত করে তোমার দৃঢ়তা সম্পাদন করুন; শাকর-রৈবত সামদ্বয় তোমার চিরাবস্থান সম্পাদন করুন।–দেবগণের মধ্যে প্রথমজাত নারদ ইত্যাদি ঋষিগণ (দেবর্ষির্নারদস্তথা–স্মরণীয়) আকাশের যে পরিমাণ সেই পরিমাণে এ তোমাকে বিস্তৃত করুন (আকাশস্য যৎ পরিমাণং….)। (কি নিমিত্ত? না,) অন্তরীক্ষে ব্যাপ্তির নিমিত্ত। (কিরকম পরিমাণে? না,) বরণীয় পরিমাণে। কেবল প্রথমজাত ঋষিগণই নয়, কিন্তু ইষ্টকাগুলির যাঁরা নিম্পাদক ও পালক (অধিপতি) তারাও তোমার বিস্তৃতি সাধন করুন। সেই মহর্ষিবৃন্দ, নিস্পাদকগণ ও পালকগণ সকলে পরস্পর ঐকমত্য প্রাপ্ত হয়ে স্বর্গসদৃশ এই ক্ষেত্রের উপরে তোমাকে স্থাপন করুন, এবং যজমানকে স্বর্গ লোকে স্থাপন করুন (যজমানং চ স্বর্গে লোকে সাদয়)। [এই মন্ত্রগুলি পরবর্তী কাণ্ডের ৩য় প্রপাঠকের ৭ম অনুবাকের মন্ত্রের সাথে সংশ্লিষ্ট] ॥ ২॥

[সায়ণাচার্য বলেন–তৃতীয় চোডাখ্যা ইষ্টকা উচন্তে। অর্থাৎ, এই তৃতীয় অনুবাকে চোড়া নামক ইষ্টকার বিষয় কথিত হচ্ছে]

.

তৃতীয় অনুবাক

মন্ত্র- অয়ং পুরো হরিকেশঃ সূৰ্য্যরশ্মিশুস্য রথগৃৎস রথৌজাশ্চ সেনানিগ্রামণ্যে পুঞ্জিকস্থলা চ কৃতস্থলা চারসৌ যাতুনা হেতী রক্ষাংসি প্রহেতিরয়ং দক্ষিণা বিশ্বকর্মা তস্য রথস্বনশ্চ রথেচিত্ৰশ্চ সেনানিগ্রামণৌ মেনকা চ সহজন্যা চান্সরসৌ দঙ্ক্ষারঃ পশববা হেতিঃ পৌরুষেয়ো বধঃ প্রহেতিরয়ং পশ্চাষি ব্যাস্তস্য রথপোতশ্চাসমরথ সেনানিগ্রামণ্যৌ প্রশ্লোচন্তী চ অনুম্নোচন্তী চারসৌ সর্পা হেতিাম্ৰাঃ প্রহেতিরয়মুত্তরৎ সংযদ্বসুস্তস্য সেনজিচ্চ সুষেণশ্চ সেনানিগ্রামণ্যৌ বিশ্বাচী চা ঘৃতাচী চান্সরসাবাপো হেতিৰ্বাতঃ প্রহেতিরয়মুপৰ্য্যৰ্বাবসুস্তস্য তাéশ্চারিষ্টনেমিশ্চ সেনানিগ্রামণ্যাবুৰ্বশী চ পূৰ্ব্বচিত্তিশ্চারসৌ বিদ্যুদ্ধেতিরস্ফুর্জ প্রহেতিস্তেভো নমস্তে নো মৃডয়ন্তু তে যম দ্বিম্মে যশ্চ নো দ্বেষ্টি তং বো জম্ভে দম্যায়োস্ত্রা সদনে সাদয়াম্যবত-চ্ছায়ায়াং নমঃ সমুদ্রায় নমঃ সমুদ্রস্য চক্ষসে পরমেষ্ঠী ত্বা সাদয়তু দিবঃ পৃষ্ঠে ব্যচস্বতীং প্রথস্বতীং বিভূমতীং প্রভূমতীম পরিভূমতং দিবং যচ্ছ দিবং দৃংহ দিবং মা হিংসীর্বিশ্বম্মৈ প্রাণায়াপনায় ব্যানায়োদানায় প্রতিষ্ঠায়ৈ চরিত্রায় সূৰ্যাহভি পাতু মহ্যাঁ স্বস্ত্যা ছর্দিষা শম্ভমেন তয়া দেবতয়াহঙ্গিরস্বঞ্জবা সীদ।। প্রোথদশ্বে ন যবসে অবিষ্যন্যদা মহঃ সম্বরণাদ্ব্যস্থা। আদস্য বাতো অনু বাতি শশাচির স্ম তে ব্রজনং কৃষ্ণমস্তি ॥৩॥

মর্মার্থ– এই অগ্নি পূর্ব দিকে হিরণ্যকর্ণ কেশের ন্যায় (হরিকেশ) জ্বালাবিশিষ্ট সূর্যসমান; এঁর দুজন পরিচারক আছে–সেনানী ও গ্রামনী। সেনানীর নাম রথগৃৎস এবং গ্রামণীর নাম রথৌজ। (গৃৎস অর্থে গর্ধনবান, অর্থাৎ লোভী; সেই অর্থে রথে যার বৃহতী তৃষ্ণা বা আকাঙ্ক্ষা, সে রথগৃৎস)। সে রথে আরোহিত হয়ে শত্রুর সেনাদলকে পররাজ্যে বিতাড়িত করে। (ওজঃ অর্থে : বল, অর্থাৎ যার রথারোহণে অধিক বল, সে রথৌজা)। সে রথে আরোহিত হয়ে স্বরাজ্য বা গ্রাম রক্ষা করে। এই দুই পরিচারকের মতো অগ্নির দুটি অপ্সরা পরিচারিকা আছে–একজনা পুঞ্জিকস্থলা ও অপরজনা কৃতস্থলা। অবান্তর জাতিতে উৎপন্ন হেতি ও প্রহেতি হলো অগ্নির দুই অস্ত্রবিশেষ। (যাতুধান অর্থে তীক্ষ্ণ হেতি বা অস্ত্র, এবং রাক্ষস অর্থে অতি ক্রুর বা তীক্ষ্ণ প্রহেতি বা অস্ত্র)। এই হেন যে অগ্নি, হে ইষ্টকা! তুমি সেই অগ্নিস্বরূপা।–এই যে অগ্নি, ইনি অগ্নিহোত্র ইত্যাদি বিশ্বের সকল কর্মসাধনকারী বলে বিশ্বকর্মা নামে অভিহিত হয়ে দক্ষিণ দিকে স্থিত আছেন। তার দুই পরিচারক, রথস্বন ও রথেচিত্র। প্রথম জন সেনানী ও দ্বিতীয় জন গ্রামণী। রথস্বন রথে আরোহিত হয়ে শত্রুর সেনাদলকে পররাজ্যে বিতাড়িত করে। রথেচিত্র রথে আরোহিত হয়ে স্বরাজ্য বা গ্রাম রক্ষা করে। এই দুই পরিচারক হলো বিশ্বকর্মা-অগ্নির দুই অস্ত্রবিশেষ। এরা ব্যতীত এই অগ্নির দুই অপ্সরা পরিচারিকা আছে–মেনকা ও সহজন্যা। এই অগ্নির হেতিরূপ অস্ত্র হলো দংশনশীল ব্যাঘ্র ইত্যাদি ও প্রহেতিরূপ অস্ত্র হলো সংগ্রামে পুরুষগণের যে বধ। হে ইষ্টকা! তুমি সেই বিশ্বকর্মা-অগ্নিরূপা।–বিশ্ববাচ্য নামক অগ্নি পশ্চিম দিকে অবস্থিত। (বিশ্বকে প্রাপ্ত অর্থে বিশ্ববাচ্য)। তার দুই পরিচারক,রথোেত ও সমরথ। প্রথম জন সেনানীরূপে রথে আরোহিত হয়ে শত্রুর সেনাদলকে পররাজ্যে প্রেরণ করে। দ্বিতীয় জন গ্রামণীরূপে রথে আরোহিত হয়ে স্বরাজ্য বা গ্রাম রক্ষা করে। বিশ্ববাচ্য অগ্নির হেতিরূপ অস্ত্র হলো সর্পগণ ও প্রহেতিরূপ অস্ত্র হলো ব্যাঘ্রগণ। এই দুই পরিচারক ব্যতীত এই অগ্নির দুই অপ্সরা পরিচারিকা আছে–প্রম্নোচন্তী ও অনুম্নোচন্তী। হে ইষ্টকা! তুমি সেই হেন বিশ্ববাচ্য- অগ্নিরূপা। সংযদ্বসু নামক অগ্নি উত্তর দিকে অবস্থিত। (সংযপ্রাপ্ত বসু বা ধন যে অগ্নির, তিনি সংযদ্বসু)। তাঁর দুই পরিচারক,–সেনাজিৎ ও সুষেণ, যথাক্রমে সেনানী ও গ্রামণী। প্রথম জন শত্রুর সেনাদলকে পররাজ্যে প্রেরণ করে, দ্বিতীয় জন স্বরাজ্য বা গ্রাম রক্ষা করে। সংযদ্বসু নামক অগ্নির হেতিরূপ অস্ত্র হলো জল ও প্রহেতিরূপ অস্ত্র হলো বাত বা ঝড়। এই অগ্নির দুই অপ্সরা পরিচারিকা আছে বিশ্বাচী ও ঘৃতাচী। হে ইষ্টকা! তুমি সেই উত্তর দিক্রবর্তী অগ্নিরূপা।-উধ্বদিকে অবস্থিত এই অগ্নি অবাসু নামে খ্যাত। (মেঘমধ্যস্থ যে বিদ্যুৎ অবাক বা অধোমুখে পতিত হয়, সেই বিদ্রূপ অগ্নি অবাথসু)। সেই অগ্নির দুই পরিচারক–তাক্ষ ও অরিষ্টনেমি, যথাক্রমে সেনানী ও গ্রামণী। প্রথম জন শত্রুর সেনাদলকে পররাজ্যে প্রেরণ করে ও দ্বিতীয় জন স্বরাজ্য বা গ্রামকে রক্ষা করে। এই অগ্নির দুজনা অপ্সরা পরিচারিকা আছে–উর্বশী ও পূর্বাচিত্তি। অবাথুসুর হেতি ও প্রহেতিরূপ দুই অস্ত্র–ভয়ের হেতুকারক (প্রকাশমান) বিদ্যুৎ ও মারক বজ্ৰরব হলো স্ফুর্জ (মারকোহশনিরবস্ফুর্জ )। হে ইষ্টকা! তুমি সেই অগ্নিরূপা। এই যে অগ্নি, এই যে তার সেনানী ও গ্রামণীদ্বয়, এই যে তার অঙ্গরাদ্বয়, এই যে তার সেনানী ও গ্রামণীদ্বয়, এই যে তার অঙ্গরাদ্বয়, এই যে তার হেতি-প্রহেতিরূপ অস্ত্রদ্বয়–এই সকলের উদ্দেশে নমস্কার করছি (তেভ্য সর্বেভ্যো নমোহস্তু)। তারা সকলে আমাদের সুখী করুক। যে বৈরিগণ আমাদের দ্বেষ করে এবং আমরা যে বৈরিগণকে দ্বেষ করি, তাদের আমি তোমার বিদারিত আস্যে (মুখগহ্বরে) স্থাপন করছি।–সর্ব জগতের পালয়িতা আদিত্যের ছায়াতে (সন্তাপ পরিহারের নিমিত্ত) স্থানে, হে ইষ্টকা! তোমাকে স্থাপন করছি। সমুদ্রসদৃশ আদিত্যের উদ্দেশে নমস্কার করছি; সমুদ্রের প্রকাশককে (আদিত্যকে) নমস্কার করছি।–হে ইষ্টকা! পরম উৎকৃষ্ট সত্যলোকে অবস্থিত পরমেন্থী ব্রহ্মা তোমাকে দিবঃ পৃষ্ঠে অর্থাৎ স্বর্গের উপরে স্থাপন স্থাপন করুন। (তুমি কিরকম? না,) তুমি অভিব্যক্তিমতী অর্থাৎ প্রকাশময়ী, প্রথস্বতী অর্থাৎ বিস্তারবর্তী, বিভুমতী অর্থাৎ নানা নূতন উৎপাদনে শক্তিমতী, প্রভূমতী অর্থাৎ প্রভুত্বশক্তিমতী ও পরিভূমতী অর্থাৎ পরসৈন্যকে পরাভবে শক্তিমতী। তুমি নিয়ত যজমানকে স্বর্গভোগের অধীন করো (অর্থাৎ যজমান যেন সর্বাবস্থায় স্বর্গভোগ করতে পারেন, তেমন করো); দুলোকে তার (যজমানের) ভোগ দৃঢ় করো (অর্থাৎ দ্যুলোকে তার সুষ্ঠু ভোগ যেন বিনাশ করো না)। সকলের প্রাণবায়ু, অপানবায়ু, ব্যানবায়ু ও উদানবায়ুর বৃত্তিলাভের উদ্দেশে (অর্থাৎ স্থিতির জন্য), স্বগৃহে স্থিতিলাভের উদ্দেশে চরিত্রায়, অর্থাৎ শাস্ত্রীয় আচরণের উদ্দেশে, সূর্যদেব তোমাকে রক্ষা করুন। (কিভাবে? না,) মহতী যোগক্ষেম সম্পত্তির দ্বারা ও অত্যন্ত সুখকর দীপ্তি বিশেষের দ্বারা (তোমাকে রক্ষা করুন)। তুমি তোমার স্বামীরূপ দেবতার অনুগ্রহক্রমে এই স্থানে স্থির হয়ে উপবেশন করো, যেমন অঙ্গিরা ঋষিগণের চয়নানুষ্ঠানে (অর্থাৎ প্রথম অগ্নিচয়নের কালে) স্থিতা হয়েছিল।–এই জাজ্বল্যমান অগ্নি অশ্বের মতো শব্দ করছেন। (দৃষ্টান্তস্বরূপ, অশ্ব কখন শব্দ করে, তা বলা হচ্ছে)–যেমন বিরাট অশ্বশালারূপ সভৃত স্থান হতে নির্গত হয়ে অরণ্যে ঘাস ভক্ষণের নিমিত্ত গমনকালে অশ্ব শব্দ করে থাকে, সেইরকম।–অগ্নিজ্বালার শব্দের পরে অগ্নির দীপ্তি অনুসরণ করে বায়ু প্রবাহিত হচ্ছে। অগ্নিজ্বালার সঙ্গে সঙ্গে (অগ্নিজ্বালাসব্দসমনন্তরমেব) বায়ু প্রবাহিত হয় বলে লোকে অগ্নিকে বায়ুসখ নামে অভিহিত করে থাকে। হে অগ্নি! আপনার জ্বালার সাথে বায়ু সংযোগ হওয়ায় অরণ্যে গমন স্থান (ব্রজ) দাহের দ্বারা কৃষ্ণবর্ণ হয়ে যায় (কৃষ্ণবর্ণমেবাবভাসতে)। [পরবর্তী কাণ্ডের ৩য় প্রপাঠকের ৭ম অনুবাকের মন্ত্রগুলির সাথে এই অনুবাকের মন্ত্রগুলি সংশ্লিষ্ট] ॥৩৷৷

[সায়ণাচার্য বলেন–চতুর্থেহনুবাকে ছন্দোবিধা ইষ্টকা উচ্যন্তে। অর্থাৎ–এই চতুর্থ অনুবাকে ছন্দ নামে অভিহিত ইষ্টকার বিষয় কথিত হছে]।

.

চতুর্থ অনুবাক

মন্ত্র- অগ্নিৰ্ম্মৰ্ধা দিবঃ ককুৎপতিঃ পৃথিব্যা অয়ম্।। অপাং রেংসি জিম্বতি। স্বামর্গে পুন্ধরাদধ্যথা নিরমন্থত। মূস্লো বিশ্বস্য ব্যঘতঃ। অয়মগ্নিঃ সহভ্রিণো বাজস্য শতিনষ্পতিঃ। মূর্ধা কবী রয়ীণা। ভুবো যজ্ঞস্য রজসশ্চ নেতা যত্রা নিযুক্তিঃ সচসে শিবাভিঃ। দিবি মূৰ্দানং দধিষে সুবর্ষাং জিহ্বাময়ে চরুষে হব্যবাহম। অবোধ্যগ্নিঃ সমিধা জনানা প্রতি ধেনুমিবায়তীমুষাস। যত্মা ইব প্ৰ বয়ামুজ্জিহানাঃ প্ৰ ভানবঃ সিতে নাকমচ্ছ। অবোচাম কবয়ে মেধ্যায় বচো বন্দারু বৃষভায় বৃষ্ণে। গবিষ্ঠিরো নমসা স্তোমমগ্নৌ দিবীব রুমুঞ্চমশ্রেৎ। জনস গোপা অজনিষ্ট জাগৃবিরগ্নিঃ সুদক্ষঃ সুবিতায় নব্যসে।। ঘৃতপ্রতীকো বৃহতা দিবিশৃশা দ্যুমদ্বি ভাতি ভরতেভ্যঃ শুচিঃ। ত্বমগ্নে অঙ্গিরসঃ গুহা হিতমন্ববিন্দছিশ্রিয়াণাং বনেবনে। স জায়সে মথামানঃ সহহ মহত্তামাহুঃ সহসম্পুত্ৰমঙ্গিরঃ।। যজ্ঞস্য কেতুং প্রথমং পুরোহিতমগ্নিং নরখ্রিষধস্থে সমিন্ধতে। ইন্দ্রেণ দেবৈঃ সরথম স বহিষি সীদন্নি হোতা যজথায় সুতুঃ। ত্বং চিত্রশ্রবস্তম হবন্তে বিক্ষু জন্তবঃ। শশাচিঙ্কেশং পুরুপ্রিয়াগ্নে হব্যায় বোঢ়বে। সখায়ঃ সং বঃ সম্যঞ্চমিষ। স্তোমং চাগ্নয়ে। বর্ষিায় ক্ষিতীনামূৰ্জো নপত্রে সহস্বতে। সং সমিবসে বৃষন্নয়ে বিশ্বান্যৰ্য্য আ। ইড়ম্পদে সমিধ্যসে স নে বন্যা ভর। এনা বো অগ্নিং নমসোর্জো নপাতমা হুবে। প্রিয়ং চেতিষ্ঠমরতিং স্বধ্বরং বিশ্বস্য দূতমমৃত। স যোজতে অরুষো বিশ্বভোজসাস দুদ্রবৎ স্বাহুতঃ। সুব্রহ্মা যজ্ঞঃ সুশমী বসূনাং দেবং রাধা জনানা। উদস্য শোচিরস্থাদাজুঙ্কনস্য মীড়ুষঃ। উমাসো অরুষাসসা দিবিশৃশঃ সমগ্নিমিন্ধতে মরঃ। অগ্নে বাজস্য গোমত ঈশানঃ সহসো যহো। অম্মে ধেহি জাতবেদো মহি শ্ৰবঃ। স ইধানো বসুন্ধবিরগ্নিরীড়েনন্যা গিরা। রেবদম্মুভ্যং পুৰ্বণীক দীদিহি। ক্ষপো রাজমুত ত্মনাহগ্নেবস্তারুভোষসঃ। স তিগ্মজন্ত রক্ষসো দহ প্রতি। আ তে অগ্ন ইধীমহি দুমন্ত দেবাজর। যদ্ধ স্যা তে পনীয়সী সমিদ্দীদয়তি দ্যবীষ স্তোতৃভ্য আ ভর। আ তে অগ্ন ঋচা হবিঃ শুক্ৰস্য জ্যোতিষম্পতে। সুশ্চন্দ্র দম্ম বিশ্বতে হব্যবই তুভ্যং হুয়ত ইষং স্তোতৃভ্য আ ভর। উভে, সুশ্চন্দ্র সর্পিযো দৰ্বী শ্ৰীণীষ আসনি। উতো ন উৎপুপূৰ্য্যাঃ উথেষু শবসম্পত ইষং স্তোতৃভ্য আ ভর। অগ্নে তমদ্যাশ্বং ন স্তোমৈঃ ক্রতুং ন ভদ্রং হৃদিম্পৃশ। ঋধ্যামা ত ওহৈঃ। অধা হ্যগ্নে ক্ৰতোৰ্ভস্য দক্ষস্য সাবধাঃ। রথীঋতস্য বৃহততা বড়ুথ। আভিষ্টে অদ্য গীর্ভিগৃন্তোইগ্নে দাশেম। প্র তে দিবো না স্তনয়ন্তি শুষ্মঃ। এভির্নো অর্কৈৰ্ভবা নো অৰ্ব্বাঙ সুবর্ন জ্যোতিঃ। অগ্নে বিশ্বেভিঃ সুমনা অনীকৈঃ। অগ্নিং হোতারং মন্যে দাস্বস্তং বসোঃ সুনুং সহসো জাতবেদস। বিপ্রং ন জ্যতবেদসম্। য উৰ্ধয়া স্বধ্বরো দেবো দেবাচ্যা কৃপা। ঘৃতস্য বিভ্রাষ্টিমনু শুক্ৰশোচিষ আজুহানস্য সর্পিষঃ। অগ্নে ত্বং নো অন্তমঃ। উত ত্রাতা শিবো ভব বরুথ্যঃ। তং ত্বা শশাচিষ্ঠ দীদিব। সুম্মায় মুনমীমহে সখিভ্যঃ। বসুরগ্নিৰ্ব্বসুশ্রবাঃ। অচ্ছা নক্ষি মত্তমো রয়িং দাঃ ॥৪॥

মর্মার্থ– এই অগ্নি আদিত্যরূপে গিরিশিখরের ন্যায় উচ্ছিত বা মস্তক-স্থানীয়, দাহ-পাক ইত্যাদি কার্যকারণে পৃথিবীর পালকও; অধিকন্তু স্থাবরজঙ্গমের শরীরে জঠরাগ্নিরূপে প্রীতি সম্পাদক।–হে অগ্নি! অথবা নামে আখ্যাত ঋষি পদ্মপত্রের উপরে আপনাকে নিঃশেষে মথিত করেছেন (পুষ্করপৰ্ণে হেনমুপশ্রিতমবিন্দ)। (কিরকম পদ্মপত্র? না,) মূর্ধ অর্থাৎ মস্তকের ন্যায় প্রশস্ত এবং বিশ্বস্য বাঘতঃ অর্থাৎ সকল জগতের বাহক। (এই পদ্মপত্রে অগ্নিমন্থনপূর্বক যজ্ঞনিম্পাদন ইত্যাদির দ্বারা জগৎ নির্বাহিত হয়)।–এই সমিধ্যমান (অর্থাৎ সমিধের দ্বারা প্রজ্বলন্ত) অগ্নি সহস্র সহস্র শত শত অন্নের পতি বা পালক, শিরোবৎ উত্তম; কবি বা বিদ্বান; সেইরকমে এই অগ্নি আমাদের ধনদাতা হোন। এই অগ্নি ভূলোকে অনুষ্ঠেয় যজ্ঞের প্রবর্তক ও রজোগুণের নির্বাহক। সেই রকমে, হে অগ্নি! যে দ্যুলোকে সূর্যরূপ হয়ে নিযুৎ নামক অশ্বযুক্ত রথে মিলিত হন, সেই দ্যুলোক শিরোবৎ উন্নত করে ধারণ করুন। (কিরকম শিরোবৎ? না,) স্বর্গে সর্বদা অবস্থানকারী, অর্থাৎ স্বর্গতুল্য উন্নত। হে অগ্নি! আপনি এই যজ্ঞে আপনার হব্যপ্রাপিকা জিহ্বা (জ্বালা) বিস্তার করছেন। ঋত্বিগণ এই অগ্নিকে সমিধ সহযোগে প্রজ্বলিত করছেন, যেমন উষাকালে দোহনের নিমিত্ত গাভীকে (ধেনুমুষঃকালে) দোহনের নিমিত্ত শয়ন হতে জাগ্রত করা হয়ে থাকে। প্রজ্বলিত এই অগ্নির শিখাসমূহ স্বৰ্গকে অভিপ্রাপ্ত হওয়ার উদ্দেশে উর্ধ্বাভিমুখে অতিশয় প্রসারিত হচ্ছে, যেমন পক্ষীগণের মধ্যে মহান্ত অর্থাৎ বিরাটকায় পক্ষীগুলি প্ৰকর্ষের সাথে উধ্বদিকে ডানা মেলে যায়।–এই অগ্নিসমূহ বিদ্বান (বাক্যের দ্বারা যিনি সব বোঝেন)। (কিরকম বিদ্বান্? না,) মেধ্যা অর্থাৎ যাগযোগ্য, বৃষভায় অর্থাৎ শ্রেষ্ঠ, বৃষ্ণে অর্থাৎ কামসমূহের বর্ষয়িতা, ও গবিষ্ঠিরো অর্থাৎ ভূমিতে স্থির। (কিরকম বাক? না) নমস্কারযুক্ত স্তুতিরূপ বাক্য, যার দ্বারা আমরা তাদের (অগ্নিসমূহকে) বন্দনা করব। (তার দৃষ্টান্ত)– যেমন দুলোকে রোমান (দীপ্যমান) বিস্তীর্ণগতিযুক্ত আদিত্যকে সন্ধ্যাবন্দনা ইত্যাদিতে ব্রাহ্মণগণের প্রযুক্ত (উচ্চারিত) বাক্য আশ্রয় করে, সেইরকম আমাদের বাক্যও বহ্নিকে আশ্রয় করুক।–এই অগ্নি উৎপন্ন হয়েছেন। (কি নিমিত্ত? না,) সুষ্ঠুভাবে দীপ্ত (প্রকাশিত) স্তুতিযুক্ত এই (যজ্ঞ) কর্মের সিদ্ধির নিমিত্ত। (ইনি কিরকম? না,) এই অগ্নি প্রাণীগণের রক্ষক, অত্যন্ত কুশল, সদা জাগরণশীলরূপে কর্মের সাধনকারী, ঘৃতমুখ বা ঘৃতপ্রতীক (অর্থাৎ ঘৃত বা আজ্য মুখে যার)। এই হেন অগ্নি আকাশস্পর্শী জ্বালা বা শিখার দ্বারা শুদ্ধ হয়ে ভরণকুশল যজমান ইত্যাদির নিমিত্ত বিশেষরূপে শোভিত হচ্ছেন (বিশেষেণ ভাসতে)। হে অগ্নি! আপনাকে অঙ্গিরা ঋষিগণ অন্বেষণ পূর্বক লাভ করেছিলেন। (আপনি কিরকম? না,) আপনি অরণি প্রভৃতির মধ্যে গোপনে অবস্থিত ছিলেন, বনে বনে দাবাগ্নিরূপে আশ্রিত ছিলেন এবং আপনি মহৎ বলের দ্বারা বিমথ্যমান হয়ে জাত হয়েছেন। হে অঙ্গির অঙ্গসৌষ্ঠবযুক্ত অগ্নি (দেহীর ন্যায় অঙ্গধারী)! আপনাকে বলের পুত্র বলা হয়ে থাকে। (কারণ মহৎ বলের দ্বারা মন্থনে আপনি জাত)।–তিন রূপে স্থিত এই অগ্নিকে মনুষ্য ঋত্বিৰ্গণ সমিধের দ্বারা দীপ্ত করেন। (কিরকম অগ্নিকে? না,) যজ্ঞস্য কেতুং অর্থাৎ যজ্ঞের জ্ঞাতা (যজ্ঞ সম্পর্কে বিদিত বা যজ্ঞচিহ্নধারী), প্রথমে অর্থাৎ যাগের উপক্রমেই সম্পন্ন, পুরোহিতং অর্থাৎ পুরোদেশবর্তী (সম্মুখবর্তী)–এই তিনরূপে স্থিত অগ্নিকে। সুতু অর্থাৎ শোভন ক্রতু-নিম্পাদক সেই অগ্নি যাগসিদ্ধির নিমিত্ত হোতা অর্থাৎ আহ্বাতা হয়ে ইন্দ্রের ও দেবগণের সাথে রথযুক্ত হয়ে এই যজ্ঞে উপবিষ্ট হয়েছেন। হে চিত্রশ্রবন্ত (বিচিত্র কীর্তি যার, সে চিত্রশব; অতিশয় চিত্রশ্রব যে, সে চিত্রশ্রবস্তম)! হে যজমানগণের প্রিয়! হে অগ্নি! প্রজাগণের মধ্যে মনুষ্যগণ আপনাকে আহ্বান করছেন। (কি নিমিত্ত? না,) হব্যায় বোঢ়বে অর্থাৎ হবি বহনের নিমিত্ত। (কি রকম আপনি? না,) শোচিঙ্কেশ (অর্থাৎ যার জ্বালা বা শিখা কেশস্থানীয়)।–হে সখায় (অর্থাৎ পরস্পর সখ্যযুক্ত) ঋত্বিক ও যজমানগণ! আপনারা আপনাদের সমীচীন বা অভীষ্ট অন্ন সম্পাদন করুন; এবং আপনারা অগ্নির উদ্দেশে স্তোত্র সম্পাদন করুন। (কিরকম অগ্নি? না,) রক্ষকগণের মধ্যে বরিষ্ঠ (বৃদ্ধতম), স্বয়ং অতিশয় বলবান।-হে কামসমূহের বর্ষণকারী অগ্নি! সকল (যজ্ঞীয়) ফল সম্পাদিত করে আপনি যজমানে সংমিশ্রিত করুন, (অর্থাৎ যজমান যেন সকল যজ্ঞফল লাভ করেন, তেমন করুন)। আপনি ঈশ্বরস্বরূপ; এই পৃথিবীরূপা বেদি স্থানে সমিধের দ্বারা সম্যক্ প্রজ্বালিত হোন। সেই হেন আপনি মহানুভবতায় আমাদের নিমিত্ত ধনসমূহ সম্যকরূপে আহরণ পূর্বক প্রদান করুন।–হে ঋত্বিক ও যজমানগণ! আপনাদের সম্বন্ধি (অর্থাৎ আপনাদের সাথে সম্বন্ধযুক্ত) অগ্নিকে আমি নমস্কারের দ্বারা আহ্বান করছি। (কিরকম অগ্নি? না,) অন্নের অবিনাশক (নপাতম), যজমানের প্রীতির কারণস্বরূপ, অতিশয় জ্ঞাতা, সর্বদা উদ্যোগযুক্ত (অর্থাৎ সর্বদা শোভন বা সুষ্ঠু ক্রতু বা যজ্ঞের নিষ্পদনে উদ্যোগী), সর্ব জগতের দূতের ন্যায় কার্যকারী, (অর্থাৎ জগতের সকলের গৃহে দাহ, পাক ইত্যাদি কার্য সম্পাদনকারী), এবং অমৃতং বা মরণরহিত (কেবল মনুষ্য নয়, দেবতাগণেরও মৃত্যু রহিতকারী)।–সেই অগ্নি প্রস্তুত কর্ম যোজিত করেন। তিনি রোষরহিত (অর্থাৎ যজমানের প্রতি স্নিগ্ধ বা ক্রোধরহিত); তিনি বিশ্বভোজসা অর্থাৎ দাহের দ্বারা জগতের সকলের রাধো বা অন্নের সম্পাদক। (কিরকম রাবধা? না) প্রাণীগণের ব্যবহারের কারণস্বরূপ রাধো বা অন্ন। (কিরকম অগ্নি? না,) ঋত্বিকগণের দ্বারা সুষ্ঠু ও কর্মের নিমিত্ত আহুত বা ঋত্বিকরূপী ব্রহ্মা (নামক যাজ্ঞিক) কর্তৃক শোভন মন্ত্রে যজনীয়, এবং সুশমী অর্থাৎ সুষ্ঠুভাবে পাপের শময়িতা (প্রশমনকারী)।–এই অগ্নির দীপ্তি (শিখা) ঊর্ধ্বে উখিত হচ্ছে। (কিরকম এই অগ্নি? না,) এই অগ্নি সর্বতোভাবে হোমনিস্পাদক, মীষ অর্থাৎ আহুতির দ্বারা বৃষ্টির সেচনে সমর্থ; এবং এই অগ্নি হতে উখিত ধূম আকাশস্পর্শী হলেও কারও চক্ষে উপদ্ৰবকারক হয় না। এই নিমিত্তই সকল মনুষ্য ঋত্বিক ও যজমান অগ্নিকে দীপ্ত বা প্রজ্বালিত করছেন।–হে বলের পুত্র জাবেদা (অর্থাৎ জগতের যা কিছুই উৎপন্নমাত্র সেই সম্পর্কে অভিজ্ঞ) অগ্নি! আপনি বহু গোযুক্ত অন্নের সম্পাদনকারী; আমাদের মহতী কীর্তি সম্পাদন করুন।–হে। পূর্বনীক (বহু সৈন্যসম্পন্ন) অগ্নি! আপনি আমাদের ধনযুক্ত গৃহ ক্ষেত্র ইত্যাদি প্রদান করুন। (কিরকম আপনি? না, আপনি দীপ্যমান, নিবাসের হেতুভূত, বিদ্বান, অগ্রণী, প্রথম যজ্ঞের প্রবর্তক এবং মন্ত্ররূপ বাক্যের স্তুতিযোগ্য (স্তুত্য)। হে অগ্নি! আপনি দিবাভাগে এবং উষাকালেও রাক্ষসগণকে বিনাশ করুন, (অর্থাৎ সকল কালেই আপনি রাক্ষসগণের বিনাশ করুন)। হে দীপ্যমান অগ্নি! কেবল আপনার স্বকীয় সেনামুখের দ্বারাই নয়, আপনি নিজেও রাক্ষসগণের বিনাশ করুন। (এখানে সেনামুখ অর্থে মুখ বিদারণ পূর্বক জ্বম্ভন বা হাই তুলে শব্দের দ্বারা জ্বালা বা শিখা উপলক্ষিত)। হে তীক্ষ্ণ জ্বম্ভনকারী অগ্নি! আপনি সেই রাক্ষসগণকে ভস্মীভূত করুন। (অগ্নিশিখার হিস্ হিস্ ধ্বনি যেন অগ্নির জ্বম্ভন বা হাই)। হে অগ্নিদেব! জরারহিত আপনাকে আমরা প্রজ্বলিত করে দীপ্তিমন্ত করছি। যে কারণে অতিশয় স্তুতিযুক্ত সমিধ প্রতিদিন আপনাকে প্রকাশিত (প্রজ্বলন্ত) করে, সেইভাবেই চেতনবান আমরা আপনাকে দীপ্ত করব–এতে আর কি বক্তব্য আছে? (ইতি কিমু বক্তব্য)। আপনি ঋত্বির্গের নিমিত্ত অন্ন সম্পাদন করুন (আভর)। শুদ্ধ জ্যোতির পালক (শুক্ৰস্য জ্যোতিষম্পতে), সুশ্চন্দ্র অর্থাৎ সুষ্ঠু আহাদকারী, পাপের বিনাশক, প্রজাগণের পালক ও হবির বহনকারী। সেই হেন হে অগ্নি! আপনার সম্বন্ধি মন্ত্রের দ্বারা আপনি হবির নিমিত্ত আহুত হচ্ছেন।–হে সুষ্ঠু আাদকারী (সুশ্চন্দ্র) অগ্নি! আপনি হনু অর্থাৎ চোয়াল পর্যন্ত পূরণ করে হবিঃ গ্রহণ করছেন; এবং আরও, হে বলের অধিপতি (শবসম্পত)! উথে (অর্থাৎ যজ্ঞে) আমাদের। উৎকর্ষের সাথে পূর্ণতা প্রাপ্ত করান; স্তুতিকারক যজমানের নিমিত্ত অন্ন সম্পাদন করুন।–হে অগ্নি! আপনি আমাদের হৃদয়ের প্রিয়; কল্যাণকর আপনাকে অদ্য এই কর্মসমূহে স্তুতির দ্বারা সমৃদ্ধ করব। (তার একটি দৃষ্টান্ত) যেমন অশ্বকে ঘাস ইত্যাদি প্রদান পূর্বক কর্মসমৰ্থ করা হয়, তেমন। (অপর দৃষ্টান্ত) যেমন সর্ব যাগানুষ্ঠানের দ্বারা জ্যোতিষ্টোম ইত্যাদির সমৃদ্ধি সাধন করা হয়, তেমন। হে অগ্নি! আপনি আমাদের স্তোত্রের পর অনুষ্ঠীয়মান ক্রতু বা কর্মসমূহের নির্বাহক হয়েছিলেন, (অর্থাৎ আমাদের যাগকর্মরূপ রথের সারথি হয়েছিলেন); (কিরকম ক্রতু বা কর্ম? না) ভদ্রস্য অর্থাৎ কল্যাণরূপ, দস্য অর্থাৎ স্বফল প্রদানে সমর্থ, সাধো অর্থাৎ রশ্মির দ্বারা সাধ্য, ঋতস্য অর্থাৎ সত্যের ন্যায় বলশালী, ও বৃহতো অর্থাৎ প্রৌঢ় বা প্রবীণ।–হে অগ্নি! অদ্য এই কর্মে (অর্থাৎ যাগকর্মে) মন্ত্ররূপ স্তবে আমরা আপনাকে হবিঃ প্রদান করছি, আপনার প্রবল জ্বালাসমূহ প্রকর্ষের সাথে শব্দ করছে। (কিরকম শব্দ? না,) দুস্থা মেঘ ইব অর্থাৎ দ্যুলোকস্থ বা আকাশস্থ মেঘের মতো। –হে অগ্নি! আপনার সকল সৈন্যের সাথে সৌমনস্য প্রাপ্ত হয়ে (অর্থাৎ শুভ মনঃ-সম্পন্ন হয়ে), আমাদের দ্বারা অর্চনীয় হয়ে, আমাদের সমীপে আগত হোন। (কেমনভাবে? না,) স্বর্গলোকের প্রকাশরূপ আদিত্য যেভাবে সমীপবর্তী হন, সেইরকম ভাবে। –এই অগ্নিকে দেবগণের আহ্বতা বলে মনে করি। (কিরকম অগ্নি? না,) এই অগ্নি বসোদান্বন্তং অর্থাৎ ধনের দাতা, সহসঃ সুনুং অর্থাৎ বলের পুত্র, এবং জাতবেদসম্ অর্থাৎ জগতের উৎপন্নমাত্র সম্পর্কে অভিজ্ঞ। (এর দৃষ্টান্ত) কুলীন ব্রাহ্মণ যেমন উৎপন্ন পুত্র ইত্যাদি সম্পর্কে অভিজ্ঞ থাকে, সেইরকম। যে অগ্নিদেব তার অপেক্ষা উন্নত দেবতাগণের প্রতি গমনকারী জ্বালার দ্বারা সুষ্ঠু যাগনিম্পাদক হয়ে থাকেন, সেই অগ্নি ঘৃতের দ্বারা বিশেষভাবে দীপ্ত হচ্ছেন। (কিরকম ঘৃত? না,) শুদ্ধ দীপ্তিযুক্ত, সর্বতো হুয়মান ও সর্পণশীল। হে অগ্নি! আপনি আমাদের নিকটতম হোন (অন্তিকতমো ভব), আমাদের পরিত্রাণকারী হোন, আমাদের মঙ্গলকারী হোন, এবং আমাদের গৃহে নিত্য সন্নিহিত থাকুন-হে শুদ্ধতম দীপ্যমান (শোচিষ্ঠ দীদিবঃ)! আমাদের সুখের নিমিত্ত আপনার সখ্য-স্বরূপ পূর্বোক্ত গুণযুক্ত (নূনং) আপনাকে আমরা প্রাপ্ত হবো।এই অগ্নি বসুমান (অর্থাৎ ধনবান); ইনি সুশ্রবা (অর্থাৎ রুদ্র ইত্যাদি দেবতার দ্বারা আদরের সাথে শায়মান; এই কারণে ইনি বসুশ্রবা নামে অভিহিত)। এই হেন হে অগ্নি! আপনি আমাদের স্বাভিমুখী হোন এবং আমাদের শ্রেষ্ঠ ধন প্রদান করুন; (হে তাদৃশাগ্নেহচ্ছ স্বাভিমুখো নক্ষি প্রাপুহি)। [এই মন্ত্রগুলি পরবর্তী কাণ্ডের ৩য় প্রপাঠকের ৮ম অনুবাকের মন্ত্রগুলির সাথে সংশ্লিষ্ট] ॥৪

[সায়ণাচার্য বলেন–পঞ্চমে সযুজাদয় ইষ্টকা উচ্যন্তে। অর্থাৎ–এই পঞ্চম অনুবাকে সযুজা ইত্যাদি ইষ্টকার বিষয় কৃথিত হচ্ছে]।

.

পঞ্চম অনুবাক

মন্ত্র- ইন্দ্রাগ্নিভ্যাং বা সবুজা যুজা শূনত্মাঘারাভ্যাং তেজসা ব…সোকথেভিঃ স্তোমেভিচ্ছন্দোভী রয্যে পোয় সজাতানাম্ মধ্যমস্থেয়ায় ময়া ত্বা সযুজা যুজা যুনত্মম্বা দুলো নিতরি রয়ন্তী মেঘয়ন্তী বর্ষয়ন্তী চুপুণীকা নামাসি প্রজাপতিনা ত্বা বিশ্বাভির্ধীভিরূপ দমি পৃথিবদপুরমন্নেন বিষ্টা মনুষ্যাস্তে গোপ্তারোইগ্নিৰ্বিত্তোহস্যাং তামহং প্র পদ্যে সা মে শৰ্ম চ বর্ম চাধিদৌ রন্তরিক্ষং ব্ৰহ্মণা বিষ্টা মরুতন্তে গোপ্তানরা বায়ুব্বিত্তোহস্যাং তামহং ৫ পদ্যে সা মে শৰ্ম্ম চ বর্ম চাস্তু দৌরপরাজিতামৃতেন বিষ্টাহদিত্যাস্তে গোপ্তারঃ সূৰ্য্যো বিযত্তোইস্যাং তামহং প্র পদ্যে সা মে শৰ্ম্ম চ বর্ম চা ॥৫॥

মর্মার্থ হে ইষ্টকা! ইন্দ্র ও অগ্নির সাথে তোমার যে সম্বন্ধ, সেই সম্বন্ধের দ্বারা তোমাকে এই ক্ষেত্রে যুক্ত করছি। (সহ যযাজিত, সযুক, শেষে যুক শব্দের দ্বারা সম্বন্ধ বোঝায়)। এইভাবে আঘার অর্থাৎ আজাহুতি, তেজঃ অর্থাৎ কান্তি, বর্চো অর্থাৎ ধন, উথানি অর্থাৎ শস্ত্রসমূহ, স্তোমানি অর্থাৎ স্তোত্রসমূহ, ছন্দাংসি অর্থাৎ গায়ত্রী ইত্যাদি ছন্দসমূহের সাথে যোজক সম্বন্ধে তোমাকে যুক্ত করছি। ধনপুষ্টির নিমিত্ত জ্ঞাতিগণের মধ্যে মুখ্যত্বে অবস্থানের কারণে, হে ইষ্টকা! আমার সাথে তোমার যোজক সম্বন্ধের দ্বারা এই ক্ষেত্রে তোমাকে যুক্ত করছি। হে ইষ্টকা! কৃত্তিকাঁদেবীর যে অম্বা নাম, তুমি সেই নামরূপা; এই হেন তোমাকে প্রজাপতি দেবতার দ্বারা প্রেরিত হয়ে আমি সাবধানে বুদ্ধিবৈচিত্র্যের দ্বারা সম্যক উপধান করছি। (অম্বা, দুলা, নিতত্নি, অভ্রয়ন্তী, মেঘয়ন্তী, বর্ষয়ন্তী ও চুপুণীকা–এই সাতটি পদ কৃত্তিকাঁদেবীর সাতটি নাম। এই সাতটি নামবিশেষের প্রতিটির উল্লেখ পূর্বক পর পর সাতটি মন্ত্র ঐভাবে উচ্চারণীয়)। হে ইষ্টকা! অন্নের দ্বারা যুক্তা যে পৃথিবী, সেই পৃথিবী জলপূর্ণা (উদকসম্পূর্ণং)। মনুষ্যগণ তোমার রক্ষক (গোপ্তারো); অগ্নি এই পৃথিবীতে রক্ষণের নিমিত্ত বিশেষভাবে প্রযত্নবান্। সেই পৃথিবীরূপা তোমাকে আমি প্রাপ্ত হচ্ছি। সেই হেন ইষ্টকা আমার যজমানের গৃহস্থান হোক (অর্থাৎ আমার গৃহে অবস্থিত হোক) ও রক্ষার নিমিত্ত বর্ম বা কবচস্থানীয়ও হোক।-প্রৌঢ় জনের দ্বারা যুক্ত (ব্ৰহ্মণা বিষ্ট) দুলোকেরও নিম্নে যে অন্তরিক্ষ নামক লোক, হে ইষ্টকা! তা তোমার পুরী (গৃহ); মরুত্বর্গ তোমার রক্ষক (গোপ্তারো); সেই স্থান হতে (অর্থাৎ সেই অন্তরিক্ষলোক হতে) বায়ু তোমার রক্ষার নিমিত্ত যত্নবান। সেই অন্তরিক্ষরূপা তোমাকে আমি প্রাপ্ত হচ্ছি। সেই হেন ইষ্টকা আমার যজমানের গৃহস্থান হোক ও রক্ষার নিমিত্ত কবচস্থানীয় হোক। অমূতের দ্বারা যুক্ত (অর্থাৎ পীযুষের দ্বারা পূর্ণ), দ্যুলোক নামে আখ্যাতা যে তোক কারও দ্বারা পরাজিত হয় না, সেই লোক, হে ইষ্টকা! তোমার পুরী (গৃহ); দ্বাদশসংখ্যক আদিত্য তোমার রক্ষক; সেই দ্যুলোক হতে সূর্য তোমার রক্ষার নিমিত্ত যত্নবান। সেই দুলোকরূপা তোমাকে আমি প্রাপ্ত হচ্ছি। সেই হেন ইষ্টকা আমার যজমানের গৃহস্থান হোক ও রক্ষার নিমিত্ত কবচস্থানীয় হোক। [পরবর্তী কাণ্ডের ৩য় প্রপাঠকের ৯ম অনুবাকের মন্ত্রের সাথে এই মন্ত্রগুলি সংশ্লিষ্ট] ॥৫॥

[সায়ণাচার্য বলেন–ষষ্ঠে বিশ্বজ্যোতিরাদ্যা ইষ্টকা উচ্যন্তে। অর্থাৎ–এই ষষ্ঠ অনুবাকে বিশ্বজ্যোতি ইত্যাদি ইষ্টকার বিষয় কথিত হচ্ছে।]

.

ষষ্ঠ অনুবাক

 মন্ত্র- বৃহস্পতিত্ত্বা সাদয়তু পৃথিব্যাঃ পৃষ্ঠে জ্যোতিষ্মতীং বিশ্বস্মৈ প্রাণায়াপনায় বিশ্ব জ্যোতির্যচ্ছাগ্নিস্তেহধিপতির্বিশ্বকৰ্মা ত্বা সাদয়ত্বন্তরিক্ষস্য পৃষ্ঠে জ্যোতিষ্মতীং বিশ্বস্মৈ প্রাণায়াপনায় বিশ্বং জ্যেতির্যচ্ছ বায়ুন্তেহধিপতিঃ প্রজাপতিত্ত্বা সাদয়তু দিবঃ পৃষ্ঠে জ্যোতিষ্মতীং বিশ্বস্মৈ প্রাণায়াপনায় বিশ্বং জ্যেতির্যচ্ছ পরমেষ্ঠী তেহধিপতিঃ পুরোবাতসনিরস্যসনিরসি বিদ্যুৎসনিঃ অসি শুনয়িতুসনিরসি বৃষ্টিসনিরস্যগ্ন্যোনসি দেবানামগোন্যসি বায়োর্যান্যসি দেবান্যাং বায়োন্য স্যন্তরিক্ষস্য যানসি দেবানামন্তরিক্ষান্যস্যত্তরিক্ষ-মস্যন্তরিক্ষায় ত্বা সলিলায় ত্বা সর্গীকায় ত্বা সতীকায় ত্বা কেতায় ত্বা প্রচেতসে ত্বা বিবস্বতে ত্বা দিবা জ্যোতিষ আদিত্যেভ্যর্চে ত্বা রুচে ত্বা দুতে ত্বা ভাসে ত্বা জ্যোতিষে ত্বা যশোদাং ত্বা যশসি তেজোদাং বা তেজসি পয়োদাম ত্বা পয়সি দ্রবিণোদাং ত্বা দ্রবণে সাদয়ামি তেনার্ষিণা তেন ব্ৰহ্মণা তয়া দেবতয়াহঙ্গিরস্বদবা সীদ ॥৬।

মর্মার্থ- হে ইষ্টকা! বৃহস্পতি তোমাকে পৃথিবীর পৃষ্ঠে (উপরে) স্থাপন করুন। (তুমি কিরকম?,) তুমি জ্যোতিষ্মতীং অর্থাৎ প্ৰকাশবতী। (কি নিমিত্ত স্থাপন? না,) সকল প্রাণীজাতের প্রাণ ও অপানবৃত্তি লাভের নিমিত্ত, (অর্থাৎ প্রাণ ও অপান বায়ুর স্থিতির নিমিত্ত)। তুমি সম্পূর্ণ (কৃৎস্ন) স্বর্গপ্রকাশক জ্যোতিঃ সংযমিত করো। অগ্নি তোমার অধিপতি বা পালক।–জ্যোতিষ্মতীরূপা তোমাকে সকল প্রাণীজাতের প্রাণ ও অপান বায়ুর স্থিতির নিমিত্ত বিশ্বকর্মা অন্তরিক্ষের উপরে স্থাপন করুন। তুমি সম্পূর্ণ স্বর্গপ্রকাশক জ্যোতিঃ সংযমিত করো। বায়ু তোমার পালক।-সকল প্রাণীজাতের প্রাণ ও অপানবৃত্তি লাভের নিমিত্ত জ্যোতিষ্মতীরূপা তোমাকে প্রজাপতি লোকের উপরে স্থাপন করুন। তুমি স্বর্গপ্রকাশক সকল জ্যোতি সংযমিত করো। পরমেষ্ঠী তোমার পালক (অধিপতি)।–হে ইষ্টকা! তুমি পুরোবাত অর্থাৎ ঝড়-ঝঞ্ঝা দানকারিণী ও সেই রূপধারিণী, তুমি বিদ্যুৎ দানকারিণী ও বিদ্রূপা, তুমি মেঘদাত্রী ও মেঘরূপা, তুমি বৃষ্টি দানকারিণী ও বৃষ্টিরূপা।

হে ইষ্টকা! তুমি যজমানের নিমিত্ত চীয়মান অগ্নির প্রাপিকা–তুমি দেবগণের নিমিত্ত বায়ুর প্রাপিকা।-তুমি দেবগণের নিমিত্ত অন্তরিক্ষের প্রাপিকা।–হে ইষ্টকা! তুমি অন্তরিক্ষরূপা। হে দ্বিতীয় ইষ্টকা! অন্তরিক্ষ লোকের প্রীতির নিমিত্ত তোমার উপধান করছি।–হে ইষ্টকা! যে বহুল (গভীর) জলে কোন বস্তু পতিত হলে তা লীন হয়ে যায়, অর্থাৎ পাওয়া যায় না, এমন সলিলের সিদ্ধির নিমিত্ত তোমার উপধান করছি। সেইরকম, প্রবাহরূপ (সরণশীল) জলের সিদ্ধির নিমিত্ত তোমার উপধান করছি। সৎ-ভাবাপন্ন (স্থির) জলের সিদ্ধির নিমিত্ত তোমার উপধান করছি। এইভাবে কেতো অর্থাৎ জ্ঞানমাত্রের নিমিত্ত, প্রচেতঃ অর্থাৎ প্রকৃষ্ট জ্ঞানের নিমিত্ত,বিবস্বান অর্থাৎ বিশেষভাবে বাসের হেতুকারক সূর্যের প্রকাশের নিমিত্ত, দিবোজ্যোতি অর্থাৎ দ্যুলোকবর্তী নক্ষত্র ইত্যাদির প্রকাশের নিমিত্ত, এবং দ্বাদশ আদিত্যের নিমিত্ত তোমার উপধান করছি। হে ইষ্টকা! পাদবদ্ধ মন্ত্রের দ্বারা সাধনায় স্তুতির নিমিত্ত (ঋচে ত্বা রুচে ত্ব) তোমার উপধান করছি। আদিত্যের জ্যোতির নিমিত্ত, চন্দ্রের দীপ্তির নিমিত্ত, অগ্নির জ্বালার নিমিত্ত ও নক্ষত্রের আলোকের নিমিত্ত তোমার উপধান করছি।–হে ইষ্টকা! তুমি কীর্তি-প্ৰদাত্রী (যশোদা); কীর্তি বা যশ প্রাপ্তির নিমিত্ত যশোরূপা তোমার উপধান করছি। তুমি কান্তি-প্ৰদাত্রী (তেজোদা); কান্তি বা তেজঃ প্রাপ্তির নিমিত্ত তেজোরূপা তোমার উপধান করছি। তুমি ক্ষীর-প্ৰদাত্রী (পয়োদা); ক্ষীর বা দুগ্ধ প্রাপ্তির নিমিত্ত পয়োরূপা তোমার উপধান করছি। তুমি বল-প্ৰদাত্রী (বৰ্চোদা); বৰ্চ বা বল প্রাপ্তির নিমিত্ত বর্চোরূপা তোমার উপধান করছি। তুমি ধন-প্ৰদাত্রী (দ্রবিনোদা); ধনপ্রাপ্তির নিমিত্ত দ্রবিণরূপা তোমার উপধান করছি। পুরাকালে অঙ্গিরা ঋষিগণ যেভাবে তোমার উপধান করেছিলেন, সেই ভাবে যথাযথ অভিজ্ঞ ঋষি, ব্রহ্মপ্রতিপাদক যথাযথ মন্ত্রবাক্য এবং সেই সেই অভিমানী দেবতা–সেই সকলের সাথে তোমার উপধান করছি; তুমি স্থিরা হয়ে উপবিষ্টা হও। [এই মন্ত্রগুলির সাথে পরবর্তী কাণ্ডের ৩য় প্রপাঠকের ১০ম অনুবাকের মন্ত্রগুলি সংশ্লিষ্ট] ॥৬।

[সায়ণাচার্য বলেন–সপ্তমে ভূয়স্কৃদাদয় ইষ্টকা উচ্যন্তে। অর্থাৎ–এই সপ্তম অনুবাকে ভূয়স্কৃৎ ইত্যাদি ইষ্টকার বিষয় কথিত, হচ্ছে।]

.

সপ্তম অনুবাক

মন্ত্র- ভূয়স্কৃদসি বরিবস্কৃদসি প্রাচ্যসূৰ্দ্ধাহস্যন্তরিক্ষসদস্যন্তরিক্ষে সীদাসুদসি শ্যেনসদসি গৃসদসি সুপর্ণসদসি নাকসসি পৃথিব্যাস্তা দ্রবণে সাদয়াম্যন্তরিক্ষস্য ত্বা দ্রবণে সাদয়ামি দিবা দ্রবণে সাদয়ামি দিশাং ত্বা দ্রবণে সাদয়ামি দ্রবিণোদাম্ ত্বা দ্রবিণে সাদয়ামি প্রাণং মে পাহাপানং মে পাহি ব্যানং মে পাহ্যয়ুৰ্ম্মে পাহি বিশ্বায়ুৰ্ম্মে পাহি সৰ্বায়ুৰ্ম্মে পাহ্যগ্নে যত্তে পরং জান্নাম তাবেহি সংরভাবহৈ পাঞ্চজন্যেম্বপ্যেধ্যগে যাবা অযাবা এবা উমাঃ সব্দঃ সগর সুমেকঃ ॥৭৷

মর্মার্থ- হে ইষ্টকা! তুমি ভুয়ো অর্থাৎ বাহুল্যকারী হওয়ার কারণে ভূয়স্কৃৎ নামে অভিহিত; তুমি সেইরকমই (অর্থাৎ বাহুল্যকারী)। তুমি ভূমির পূজ্যত্বের (অর্থাৎ ভূমিকে পূজা করে বলে) বরিবস্কৃৎ নামে অভিহিত; তুমি সেইরকমই (অর্থাৎ ভূমির পূজাকারিণী)। তুমি পূর্ব, ঊর্ধ্ব, ও অন্তরিক্ষারূপা; তোমাকে অন্তরিক্ষে স্থাপন করছি। যে অগ্নি জলে স্থাপিত, হে ইষ্টকা! তুমি তৎ-স্বরূপা। শ্যেন (বাজপক্ষী), গৃ৮ (শকুনপক্ষী) ও সুপর্ণ (গরুড়) এই এই পক্ষীর আকারে স্থিত যে অগ্নি, তুমি সেই নাকসৎ অর্থাৎ স্বর্গে বা আকাশে বর্তমান অগ্নিরূপা; হে ইষ্টকা! সেই নাকসজ্রপা তোমাকে আকাশে স্থাপন করছি। পৃথিবী সম্বন্ধি যে ধন, তুমি সেই ধনরূপা; তোমাকে সেই ধনেই স্থাপিত করছি। তুমি ধনপ্রদা (দ্রবিণপ্রদা), সেই ধনের নিমিত্তই তোমাকে স্থাপন করছি। এইরকমে অন্তরিক্ষ, দ্যুলোক ও দিকসকলের যে ধন, সেই ধনের নিমিত্ত তোমাকে স্থাপন করছি। হে ইষ্টকা! তুমি আমার প্রাণবৃত্তিকে পালন করো। তুমি আমার অপানবৃত্তিকে পালন করো। তুমি আমার ব্যানবৃত্তিকে পালন করো। তুমি আমার স্বকীয় আয়ু ও আমার স্বসম্বন্ধি পুত্র ইত্যাদির আয়ু রক্ষা (বা পালন) করো। হে অগ্নি! তোমার যে পরম উৎকৃষ্ট (অনিষ্টনাশক) নাম আছে, সেই পাপহারক নামের সাথে তুমি আমার নিকটে আগত হও; আমরা উভয়ে (অর্থাৎ তুমি ও আমি) মিলিত হবো। হে অগ্নি! তুমি এই পাঞ্চজন্যেও অর্থাৎ এই পঞ্চচিতি সম্বন্ধি সকল স্থানে অবস্থিত হও। হে ইষ্টকা! তুমি যাবা (বসন্ত), অযাবা (গ্রীষ্ম) এব (বর্ষা), উমা (শরৎ), সব্দ (হেমন্ত), সগর (শিশির)–এই ঋতুরূপা এবং সুমেক বা সম্বৎসররূপা। তোমাকে সেই সেই ঋতুতে ও সম্বৎসরে স্থাপন করছি। [এই মন্ত্রগুলি পরবর্তী কাণ্ডের ৩য় প্রপাঠকের ১১শ অনুবাকের মন্ত্রগুলির সাথে সংশ্লিষ্ট] ॥৭॥

[সায়ণাচার্য বলেন–অষ্টম ইন্দ্রতখ্যা ইষ্টকা উচ্যন্তে। অর্থাৎ–এই অষ্টম অনুবাকে ইন্দ্ৰতনু নামে আখ্যাত ইষ্টকার বিষয় কথিত হচ্ছে।]

.

অষ্টম অনুবাক

মন্ত্র- অগ্নিনা বিশ্বাষাই সুৰ্যেণ স্বরাষ্ট্র ক্ৰত্বা শচীপতিঋষভেণ ত্বষ্টা যজ্ঞেন মঘবান দক্ষিণয়া সুবর্গোমনুনা বৃত্ৰহা সৌহার্দেন তনুধা অন্নেন গয়ঃ পৃথিব্যাহ সনোদৃগভিরশ্নটো বষট্‌কারেণর্ধঃ সাম্ন তনূপা বিরাজা জ্যেতিয়া ব্ৰহ্মণা সোমপা গোভিজ্ঞং দাধার ক্ষত্রেণ মনুষ্যানখেন চ রথেন চ বজ্ৰতুভিঃ প্রভুঃ সম্বৎসরেণ পরিভূপসাহনাধৃষ্টঃ সূৰ্যঃ সন্তনুভিঃ ॥৮॥ মর্মার্থ-হে ইষ্টকা! অগ্নির সাথে বিশ্বের পালন প্রয়াসী (বিশ্বাষাট) ইন্দ্ররূপা তুমি। সূর্যের সাথে স্বততা রাজমান (স্বরাষ্ট্র) ইন্দ্ররূপা তুমি। এইভাবে ক্রতু অর্থাৎ জ্যোতিষ্টোম ইত্যাদি প্রৌঢ় কর্মসমূহের সাথে (শচীপতি) ইন্দ্ররূপা তুমি; ধর্মের সাথে (ত্বষ্টা বা রূপকৃৎ) ইন্দ্ররূপা তুমি; যজ্ঞের সাথে (মঘবান) ইন্দ্ররূপা তুমি; দক্ষিণার সাথে (স্বর্গলোকাত্মক) ইন্দ্ররূপা তুমি; মন অর্থাৎ ক্রোধের সাথে (শত্রুঘাতী) ইন্দ্ররূপা তুমি; সৌহার্দ্য অর্থাৎ স্নেহাতিশয়ের সাথে (শরীরধারী) ইন্দ্ররূপা তুমি; অন্নের সাথে (গৃহবিশেষরূপ) ইন্দ্ররূপা তুমি; পৃথিবীর সাথে দ্রব্যাদি দানরূপ (কৃতবান) ইন্দ্ররূপা তুমি; ঋকমন্ত্র বিশেষের সাথে হবিঃ-লক্ষণ বিশিষ্ট (ভভাক্তা) ইন্দ্ররূপা তুমি; বষট্‌কারের সাথে অর্থাৎ হবিঃ-প্রদানের হেতুর সাথে (ঋদ্ধ বা সমৃদ্ধ) ইন্দ্ররূপা তুমি; সাম-মন্ত্রের সাথে (তপা বা শরীরপালক) ইন্দ্ররূপা তুমি; বিরাট বা দশাক্ষর ছন্দের সাথে (প্রকাশবা) ইন্দ্ররূপা তুমি; ঋত্বিকগণের বা মন্ত্রের সাথে (সোমপানকারী) ইন্দ্ররূপা তুমি; যজ্ঞশেষে গাভী-দক্ষিণার সাথে (যজ্ঞকারক) ইরূপা তুমি; ক্ষত্রিয় রাজার সাথে (মনুষ্যধারক) ইন্দ্ররূপা তুমি; অশ্ব ও রথারোহী (বজ্রী বা বজ্রযুক্ত) ইন্দ্ররূপা তুমি; বসন্ত ইত্যাদি ঋতুর সাথে (প্রভু বা ফলদানসমর্থ) ইন্দ্ররূপা তুমি; সম্বৎসরকালরূপের সাথে (পরিভু বা ব্যাপ্তবান) ইন্দ্ররূপা তুমি; এবং তপস্যা অর্থাৎ ভোজনবর্জন, ধনদান ইত্যাদির সাথে (অপরের অতিরস্কৃত) ইন্দ্ররূপা তুমি; তুমি দ্বাদশ মূর্তি সহ সূর্যরূপে বর্তমান যে ইন্দ্ৰ হে ইষ্টকা! তুমি সেই রূপা (তদ্রপা ত্বমসি)। [এই মন্ত্রের সাধ্য উপধান বিধি পরবর্তী কাণ্ডের ৪র্থ প্রপাঠকের ১ম অনুবাকে দেবাসুরাঃ সংযত্তা…ভ্রাতৃব্যো ভবতি মন্ত্রে প্রাপ্তব্য] ॥৮॥

[সায়ণাচার্য বলেন–নবমে যজ্ঞতদাখ্যা ইষ্টকা উচ্যন্তে। অর্থাৎ–এই নবম অনুবাকে যজ্ঞতনু নামে আখ্যাত ইষ্টকার বিষয় কথিত হচ্ছে।]

.

নবম অনুবাক

মন্ত্র- প্রজাপতিৰ্ম্মনসাহন্ধেহচ্ছেততা ধাতা দীক্ষায়াং সবিতা ভৃত্যাং পূষা সোমক্রয়ণ্যাং বরুণ উপনদ্ধোহসুরঃ ক্ৰীয়মাণণা মিত্রঃ ক্রীতঃ শিপিবিষ্ট আসাদিতো নরষিঃ পোহ্যমাণোহধিপতিরাগতঃ প্রজাপতিঃ প্ৰণীয়মানোহগিরাগ্নীঘ্ৰে বৃহস্পতি রাগীব্রাৎ প্ৰণীয়মান ইন্দ্রো হবির্ধানেহদিতিসাদিততা বিষ্ণুরূপাৰহিয়মাাহথ ক্টোপোত্তো যমোহভিযুতোহপ্পা আধুয়মাননা বায়ুঃ পয়মাননা মিত্রঃ ক্ষীরশ্রীৰ্ম্মন্থী সঙ্কুশ্রীর্বৈশ্বদেব উন্নীতো রুদ্র আহুতো বায়ুরাবৃত্তো নৃচক্ষাঃ প্রতিখ্যাতত ভক্ষ আগতঃ পিতৃণাং নারাশংসোহসুরাঃ সিন্ধুরবথমবয়ৎ সমুদ্ৰোহবগতঃ সলিলঃ প্রলুতঃ সুবরুদৃচং গতঃ ॥৯॥

 মর্মার্থ- (সঙ্কল্প হতে আরম্ভ করে সমাপ্তি পর্যন্ত যে সোমযাগ, সেইগুলি যজ্ঞপুরুষের তনুবিশেষ। সেইরকমে এই ইষ্টকা উক্ত হচ্ছে)। যে যজমান আমি যজ্ঞ করব এই উপলক্ষ্যে সঙ্কল্পিতবান হন, তিনি সঙ্কল্পদশাপন্ন প্রজাপতি নামক যজ্ঞের বিগ্রহ বা মূর্তি (সোহয়ং সঙ্কল্পদশামাপন্নে যজ্ঞস্য বিগ্রহঃ)। হে ইষ্টকা! তুমি সেই বিগ্রহরূপা। সঙ্কল্পের পর দীক্ষাতে যজ্ঞসম্বন্ধী যে ধাতৃ বা ধাতাব ন্যায় বিগ্রহ আছে, হে ইষ্টকা! তুমি সেই বিগ্রহরূপা। দীক্ষার পর ভূতি অর্থাৎ যজ্ঞভিক্ষাতে সবিতার ন্যায় যে বিগ্রহ আছে, হে ইষ্টকা! তুমি সেই বিগ্রহরূপা। যজ্ঞভিক্ষার পর সোমক্রয়ে একহায়নী অর্থাৎ একবৎসর বয়স্কা গাভীকে পূষার সমান যে যজ্ঞবিগ্রহ, হে ইষ্টকা! তুমি সেই বিগ্রহরূপা। সোমক্রয়ের পর বস্তুবদ্ধ সোমে (উপনদ্ধো) বরুণের সমান শরীর বিশিষ্ট যে যজ্ঞপুরুষের বিগ্রহ, হে ইষ্টকা তুমি সেই বিগ্রহরূপা। সোমক্রয়ের পর সেই ক্ৰীয়মান সোমে যে ইন্দ্ৰসমান বিগ্রহ, হে ইষ্টকা! তুমি সেই বিগ্রহরূপা। অতঃপর সেই ক্রীত সোমে যজ্ঞের যে মিত্রসমান বিগ্রহ, হে ইষ্টকা! তুমি সেই বিগ্রহরূপা। অতঃপর যজমানের প্রাপিত সোমে যে শিপিবিষ্ট অর্থাৎ বিষ্ণুসমান যজ্ঞ বিগ্রহ, হে ইষ্টকা! তুমি সেই বিগ্রহরূপা। অতঃপর শকটের দ্বারা প্রাংশের প্রতি নীয়মান যে সোমে নরন্ধিষ অগ্নিসমান যজ্ঞবিগ্রহ, হে ইষ্টকা! তুমি সেই বিগ্রহরূপা। অতঃপর প্রাগবংশের আসন্দী বা চৌকিতে সমাগত সোমে যে আহবনীয় অগ্নিসমান যজ্ঞবিগ্রহ, হে ইষ্টকা! তুমি সেই বিগ্রহরূপা। অতঃপর আগ্নীদ্রের প্রতি নীয়মান যে সোমে প্রজাপতিসমান বিগ্রহ, হে ইষ্টকা! তুমি সেই বিগ্রহরূপা। অতঃপর আগ্নীঞ্জে অবস্থিত যে সোমে সেই অগ্নিসমান বিগ্রহ, হে ইষ্টকা! তুমি সেই বিগ্রহরূপা। অতঃপর হবিধানের প্রতি নীয়মান, যে সোমে বৃহস্পতিসমান বিগ্রহ, হে ইষ্টকা! তুমি সেই বিগ্রহরূপা। অতঃপর হবির্ধানে প্রবিষ্ট যে সোমে ইন্দ্ৰসমান বিগ্রহ, হে ইষ্টকা! তুমি সেই বিগ্রহরূপা। (এইভাবে পরবর্তী মন্ত্রগুলি যোজিতব্য। যথা) আসন্দীতে স্থাপিত, সোমে অদিতিসমান বিগ্রহ, অধিষবণে বৃত সোমে বিষ্ণুসমান বিগ্রহ, বসতীবরীতে ক্লেদিত সোমে অথর্বঋষিসমান বিগ্রহ, অভিষবে চূর্ণিত সোমে যমসমান বিগ্রহ, ইত্যাদি। হে ইষ্টকা! তুমি সেই সেই বিগ্রহরূপা। [এই মন্ত্রগুলি পরবর্তী কাণ্ডের ৪র্থ প্রপাঠকের ১ম অনুবাকের মন্ত্রগুলির সাথে সংশ্লিষ্ট] ॥৯॥

[সায়ণাচার্য বলেন–দশমে নক্ষত্রেষ্টকা উচ্যন্তে। অর্থাৎ–এই দশম অনুবাকে নক্ষত্র নামে আখ্যাত ইষ্টকার বিষয় কথিত হচ্ছে]

.

 দশম অনুবাক

মন্ত্র- কৃত্তিকা নক্ষত্ৰমগ্নিৰ্দেতাহগ্নে রুচঃস্থ প্রজাপতেৰ্দ্ধাতুঃ সোম্যর্চে জ্বা রুচে ত্বা দুতে ত্বা ভাসে ত্বা জ্যোতিষে ত্বা রোহিণী নক্ষত্রং প্রজাপতিৰ্দেতা মৃগশীর্ষং নক্ষত্রং সোমো দেবহদ্রা নক্ষত্রং রুদ্রো দেবতা পুনৰ্ব্বসু নক্ষত্ৰমদিতিৰ্দেবতা তিষ্যো নক্ষত্রং বৃহস্পতিৰ্দেতাহশ্রেষা নক্ষত্ৰং সর্পা দেবতা মঘা নক্ষত্রং পিতরো দেবতা ফনী নক্ষত্রম্ অৰ্যমা দেবতা কল্পনী নক্ষত্রং ভগগা দেবতা হস্তো নক্ষত্রং সবিতা দেবতা চিত্রা নক্ষত্রমিন্দ্রো দেবতা স্বাতী নক্ষত্রং বায়ুৰ্দেতা বিশাখে নক্ষত্রমিন্দ্রাগ্নী দেবতাহনুরাধা নক্ষত্রং মিত্রো দেবতা রোহিণী নক্ষত্রমিন্দ্রো দেবতা বিচূতেী নক্ষত্রং পিতরো দেবতাহষাঢ়া নক্ষত্রমাপো দেবতাহষাঢ়া নক্ষত্রং বিশ্বে দেবা দেবতা শ্রোণা নক্ষত্রং বিষ্ণুৰ্দেবতা বিষ্ঠা নক্ষত্রং বসবঃ দেবতা শতভিষনক্ষত্রমিলা দেবতা পোপদা নক্ষত্রমজ একপাদেবতা গোষ্ঠাপদা নক্ষত্র মহিব্রুধিয়ো দেবতা রেবতী নক্ষত্রং পূষা দেবতাহশ্বযুজৌ নক্ষত্ৰমশ্বিনৌ দেবতাহপভরণীনক্ষত্রম্ যমমা দেবতা পূর্ণা পশ্চাদ্যত্তে দেবা অদধুঃ ॥১০৷

মর্মার্থ- অম্বা, দুলা, নিতত্নি, অভ্রয়ন্তী, মেঘয়ন্তী, বৰ্ষয়ন্তী, চুপুণীকা–এই সাতটি জ্যোতিরূপা যে নক্ষত্র-দেবতা আকাশে প্রকাশ পায় (ভাসন্তে), সেগুলি কৃত্তিকা। তাদের সমুদয়রূপ একটি নক্ষত্র (সমুদায়রপমেকং নক্ষত্রং), এবং সেই নক্ষত্রের দেবতা বা স্বামিত্ব অগ্নিতে বর্তমান। হে কৃত্তিকা! তোমরা প্রজাপতি, ধাতা ও সোমসম্বন্ধি দীপ্তিরূপে স্থিতা। উক্ত দেবতারূপা হে ইষ্টকা! স্তুতিরূপ মন্ত্রের সিদ্ধির নিমিত্ত তোমার উপধান করছি। তথা (সেই রকমে) শরীরের কান্তি সিদ্ধির নিমিত্ত তোমার উপধান করছি। অগ্নি, সূর্য ও চন্দ্রের দীপ্তি (দুদ্ভাজ্যোতি) সিদ্ধির নিমিত্ত তোমার উপধান করছি। (এবমুত্তরেম্বপি নক্ষত্রমন্ত্রে যোজনীয়ম–অর্থাৎ এইভাবে পরের নক্ষত্র-মন্ত্রগুলি যোজনীয়)। [পরবর্তী কাণ্ডের ৪র্থ প্রপাঠকের ১ম অনুবাকের মন্ত্রের সাথে এই মন্ত্রগুলি সংশ্লিষ্ট]।১০

[সায়ণাচার্য বলেন–একাদশ ঋতব্যাখ্যা ইষ্টকা উচ্যন্তে। অর্থাৎ–এই একাদশ অনুবাকে ঋতু নামে আখ্যায়িত ইষ্টকার বিষয় উক্ত হয়েছে]।

.

একাদশ অনুবাক

মন্ত্র- মধুশ্চ মাধবশ্চ বাসন্তিকাবৃতু শুক্রশ্চ শুচিশ্চ গ্রৈবৃতু নভশ্চ নভস্য বার্ষিকাবৃতু ইষশ্চোর্জশ্চ শারদাবৃতু সহ সহস্যশ্চ হৈমন্তিকাবৃতু তপশ্চ তপস্যশ্চ শৈশিরাবৃতু অগ্নেরন্তশ্লেষোহসি কল্পেং দ্যাবাপৃথিবী কল্পশ্যামাপ ওষধীঃ কল্পন্তামগ্নয়ঃ পৃথম জ্যৈষ্ঠ্যার সব্রতাঃ। যেহগ্নয়ঃ সমনসোহরা দ্যাবাপৃথিবী শৈশিরাবৃতু অভিকল্পমানা ইন্দ্ৰমিব দেবা অভি সং বিশন্তু সংযচ্চ প্রচেতাশ্চাগ্নেঃ সোমস্য সূৰ্য্যশস্যাগ্রা চ ভীমা চ পিতৃণাং যমেস্যেন্দ্রস্য বা চা পৃথিবী চ দেবস্য সবিতুৰ্ম্মরুতা বরুণস্য ধর্তী চ ধরিত্রীচ মিত্রাবরুণয়োৰ্ম্মিস্য ধাতুঃ প্রাচী চ প্রতীচী চ বসুনাং রুদ্রণা আদিত্যানাং তে তেহধিপতয়স্তেভ্যা নমস্তে নো মৃড়য়ন্তু তে যং দ্বিগ্নে যশ্চ নো দ্বেষ্টি তং বো জঙে দধামি সহস্ৰস্য প্রমা অসি সহস্ৰস্য প্রতিমা অসি সহসা বিমা অসি সহস্রস্যোম্মা অসি সাহম্রোহসি সহায় মো মে অগ্ন ইষ্টক ধেনবঃ সকো চ শতং চ সহস্রং চাযুতং চ নিযুতং চ প্রযুতুম চাবুদং চ ন্যৰ্ব্বদং চ সমুদ্রশ্চ মধ্যং চান্তশ্চ পৰ্দ্ধশ্চেমা মে অগ্ন ইষ্টক ধেনবঃ সন্তু যষ্টিঃ সহমযুতমক্ষীয়মাণা ঋতস্থাঃ স্থৰ্ত্তাবৃধো ঘৃতশ্রুততা মধুচুত ঊজ্জতীঃ স্বধাবিনীতা মে অগ্ন ইষ্টকা ধেনবঃ সন্তু বিরাজো নাম কামদুঘা অমুত্ৰামুষ্মিল্লোকে ॥১১৷৷ মর্মার্থ–মধু ও মাধব অর্থাৎ চৈত্রমাস ও বৈশাখমাস–এই দুই মাস বসন্ত ঋতু (বসন্ত সম্বন্ধিনাবৃত্ববয়বৌ)। শুক্র ও শুচি অর্থাৎ জ্যৈষ্ঠমাস ও আষাঢ়মাস–এই উভয় মাস গ্রীষ্ম ঋতু। নভঃ ও নভস্য অর্থাৎ শ্রাবণ ও ভাদ্র-এই উভয় মাস বর্ষা ঋতু। ইষ (আশ্বযুজঃ) ও উর্জঃ অর্থাৎ আশ্বিন মাস ও কার্তিকমাস–এই উভয় মাস শরৎ ঋতু। সহহ (মার্গশীর্ষ) ও সহস্যঃ (পৌষ) অর্থাৎ অগ্রহায়ণ ও পৌষ–এই উভয় মাস হেমন্ত ঋতু। তপো ও তপস্যঃ অর্থাৎ মাঘমাস ও ফাল্গুনমাস এই উভয়মাস শিশির বা শীত ঋতু।-(বসন্তে দুটি ইষ্টকায় প্রথম চিতি (অগ্নি)-র উপধান কর্তব্য, গ্রীষ্মে দুটি ইষ্টকায় দুটি চিতির উপধান করণীয়, বর্ষায় ও শরতে চারটি ইষ্টকাম মধ্যম চিতির উপধান কর্তব্য, হেমন্তে দুটি ইষ্টকায় চতুর্থ চিতির উপধান করণীয়, শীতে দুটি ইষ্টকায় পঞ্চম চিতির উপধান কর্তব্য)। সকল ঋতুরই অনুষঙ্গে এই মন্ত্রশেষ পাঠনীয়–হে ঋতুবিশেষ! তুমি চীয়মান অগ্নির অন্তঃশ্লেষ হও (অন্তঃশ্লেষোহসি)। যজমানের উৎকর্ষের নিমিত্ত দ্যাবাপৃথিবী আপন উচিত উপকার সম্পাদন করুন (স্বাচিতমুপকারং সম্পাদয়তা)। (শুক্ল যজুর্বেদের ১৩শ অধ্যায়ের ২৫শে মন্ত্র দ্রষ্টব্য)। [পরবর্তী কাণ্ডের ৪র্থ প্রপাঠকের ২য় অনুবাকের মন্ত্রগুলির সাথে এই মন্ত্রগুলি সংশ্লিষ্ট] ॥১১।

[সায়ণাচার্য বলেন–একাদশানুবাক……উক্তাঃ। তাবতা চিতয়ঃ সমাপ্তাঃ। অথান্তিমে দাদশে যাজানুবাক্যা উচ্যন্তে। অর্থাৎ, একাদশ অনুবাকে ঋতু নামক ইষ্টকার বিষয় কথিত হয়েছে। সেই পর্যন্ত চিতি সম্পর্কিত বিষয় সমাপ্ত। অতঃপর শেষে এই দ্বাদশ অনুবাকে যাজ্যা ও অনুবাক্যার মন্ত্র কথিত হয়েছে]

.

দ্বাদশ অনুবাক

মন্ত্র- সমিদ্দিামাশয়া নঃ সুবৰ্বিৰ্মধোরতে মাধবঃ পাতৃম্মান। অগ্নিৰ্দেবো দুষ্টীতুরদাভ্য ইদং ক্ষত্রং রক্ষতু পাত্ব। রথন্তরং সামভিঃ পাত্বস্মন্ গায়ত্রী ছন্দসাং বিশ্বরুপা। ত্রিবৃন্নে বিষ্ঠয়া স্তোমো অহ্নাং সমুদ্ৰো বাত ইদমোজঃ পিপর্তু। উগ্রা দিশামভিভুতিব্বয়োধাঃ শুচিঃ শুক্রে অহনন্যাজসীনা। ইন্দ্রাধিপতিঃ পিতৃদতো নো মহি ক্ষং বিশ্বততা ধারয়েদ। বৃহসাম ক্ষত্রভৃদ্ধবৃষ্ণিয়ং ত্রিষ্টুভৌজঃ শুভিমুগ্রবীরম। ইন্দ্র ভোমেন পঞ্চদশেন মধ্যমিদং বাতেন সগরেণ রক্ষ। প্রাচী দিশাং সহবশা যশস্বতী বিশ্বে দেবাঃ প্রাবৃষাহাং সুবৰ্বতী। ইদং ক্ষত্রং দুষ্টমন্ড্রোজোৎনাধৃষ্টং সহম্বিয়ম্ সহস্বৎ। বৈরূপে সামগ্নিহ তুচ্ছকেম জগত্যৈনং বিক্ষা বেশয়ামঃ। বিশ্বে দেবাঃ সপ্তদশেন বর্চ ইদং ক্ষং সলিলবাতমুম্। ধী দিশাং ক্ষমিদং দারোপস্থাহশানাং মিত্রবদস্তোজ। মিত্রাবরুণা শরদাহাং চিকিত্ন অস্মৈ রাষ্ট্রায় মহি শৰ্ম্ম যচ্ছ। বৈরাজে সামন্নধি মে মনীষানুষ্ঠুভা সস্তৃত বীৰ্য্যং সহঃ। ইদং ক্ষত্রং মিত্রবাদানু মিত্রাবরুণা রক্ষতমাধিপত্য। সম্রাড়দিশাং সহসা সহস্বত্তুহেমন্তো বিষ্ঠয়া নঃ পিপ। অবস্যুবাতাঃ বৃহতনু শকৃরীরিমং যজ্ঞমবস্তু নো ঘৃতাচীঃ। সুবৰ্বতী সুদঘা নঃ পয়স্বতী দিশা দেব্যবতু নো ঘৃতাচী। ত্বাং গোপাঃ পুর এলোত পশ্চাদবৃহম্পতে যাম্যাং যুখি বাচ। উৰ্দ্ধা দিশাং রতিরাশৌষধীনাং সম্বৎসরেণ সবিতা নো অহ্নাম। রেবৎসামাতিচ্ছন্দা উ ছন্দোহজাতশত্রু স্যোনা নো অন্তু। স্তোময়খ্রিংশে ভুবনস্য পত্নি বিবস্বদ্বাতে অভি নঃ গৃণাহি। ঘৃতবতী সবিতরাধিপত্যৈঃ পরস্বতী রস্তিরাশা নো অন্তু। ধ্রুবা দিশা, বিষ্ণুপত্নগোরাহস্যেশানা সহসো যা মনোতা। বৃহস্পতিৰ্মাতরিশোত বায়ুঃ সন্ধুবানা বাতা অভি নো গৃণ। বিষ্টন্তো দিবো ধরুণঃ পৃথিব্যা অস্যেশানা জগতত বিষ্ণুপত্নী। বিশ্বব্যা ইয়ন্তী সুভূতিঃ শিবা নো অদিতিরুপন্থে। বৈশ্বানররা ন উত্যা পৃষ্টো দিব্যনু নোহদ্যানুমতিরম্বিদনুমতে, ত্বং কয়া নশ্চিত্ৰ আ ভুবৎ কো অদ্য যুক্তে৷১২। মর্মার্থ– দিকসমূহের মধ্যে সমিধ ইন্ধনের হেতুভূত, সেই আদিত্যের উদয়-স্থানরূপ পূর্বদিক, আমাদের আশা পূর্ণ করে রক্ষা করুন, (অর্থাৎ আমাদের ধন ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কিত যা কিছু আশা আছে, তা পূরণ করুন এবং সেই প্রাপ্ত ধন ইত্যাদি বিষয় সমূহ রক্ষা করুন)। চৈত্র ও বৈশাখ মাসের ঋতু (অর্থাৎ বসন্ত) উভয়ই পূর্বদিকের ন্যায় সমিধ ইন্ধনের হেতুভূত; সেই দুই মাসে আদিত্য অতি তীক্ষ্ণভাবে প্রকাশিত হন (বা কিরণ বর্ষণ করেন)। তার মধ্যে চৈত্রমাস অধিক প্রকাশিত হোন এবং বৈশাখ মাস আমাদের সন্তাপভয় হতে রক্ষা করুন। শত্রুগণ যাঁকে হিংসা করতে অশক্ত (অসমর্থ), সেই অগ্নিদেব আমাদের বল ও আমাদের রক্ষা করুন। রথন্তর সাম অন্য সামগুলির সাথে আমাদের রক্ষা করুন। (যেমন যবের মধ্যে বহু পিপীলিকা থাকে, সেই রকম)! ছন্দের মধ্যে বহুরূপা গায়ত্রী আমাদের রক্ষা করুক। এক অহ ইত্যাদি (একাহাদি) সম্বন্ধি, অর্থাৎ এক দিবস ইত্যাদিতে প্রযুক্ত ত্রিবৃৎ নামে আখ্যাত যে স্তোম, সেই স্তোম আমাদের রক্ষা করুক। সমুদ্র নামে আখ্যাত যে বায়ু আছে (সমুদ্ৰায় ত্বা বাতায় স্বাহা সমুদ্ৰোহসি নভস্বান্ ইত্যাদি মন্ত্রে বায়ুকে সমুদ্র নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে), সেই বায়ু আমাদের রক্ষা করুক। দিমূহের মধ্যে যে দিক উগ্র, সেই দক্ষিণদিক্‌ উগ্রত্বের কারণে পাপসমূহের উগ্রত্বের অভিভবের কারণ, মৃত জনকে (পুরুষ) যমলোকে স্থাপয়িতা এবং আষাঢ় ও জ্যৈষ্ঠ সম্বন্ধিনি দিবসগুলিতে যে উষ্ণতা থাকে, তা হতেও অতিশয় উষ্ণতারূপ তেজঃযুক্ত। হে পরমৈশ্বযুক্ত ইন্দ্রদেব! আপনি এই উগ্র দিকের ও অতি উষ্ণতার স্বামী বা অধিপতি। এই উভয় হতে আমাদের রক্ষা করুন; অধিকন্তু আমাদের নিমিত্ত সর্বাপেক্ষা মহৎ বল সম্পাদন করুন (ধারয়)। বৃহৎ নামে আখ্যাত যে সাম, সেই সাম ত্রিষ্টুপ ছন্দের সাথে অনুবর্তন করুন, অর্থাৎ আমাদের পালন করুন। (কিরকম সাম? না, ক্ষত্রভৃৎ অর্থাৎ বলের ধারয়িতা, উখিত পৌরুষকারী, বলপ্রদ, শোভমান ও উগ্রবীরং অর্থাৎ তীব্র পুত্রপ্রদানকারী। হে ইন্দ্র। পঞ্চদশ নামে আখ্যাত সোম ও সগর নামে আখ্যাত বায়ুর সাথে অতীত ও অনাগত কালের মধ্যে স্থিত (অর্থাৎ বর্তমানে আমাদের শরীরকে পালন করুন। দিকের মধ্যে যেটি প্রাচী অর্থাৎ পশ্চিমদিক সেই দিক আমাদের যশ সম্পাদন করে ও সেই যশের সাথে স্বয়ংও (নিজেও) যশস্বতী, এবং স্বর্গনিবাসিনী; সেই হেন দিক আমাদের পালন করুক। বিশ্বদেবগণ বর্ষাকালের দিনসমূহের সাথে আমাদের পালন করুন। আমাদের পরিপালক রাজশরীর কখনও কোন শত্রু যেন লঙ্ঘন করতে সক্ষম না হয়; আমাদের বল অপরের অতিরস্কৃত হোক, তথা সহস্ৰসংখ্যাযযাগ্য প্রবল তেজঃ হোক। বৈরূপ নামে আখ্যাত যে সাম আছে, আমরা তাকে আশ্রয় করে কর্মসমূহের যে ফল অপেক্ষিত আছে, সেই ফলসমূহ সম্পাদনে (অর্থাৎ লাভ করতে) সমর্থ হবো। জগতী নামে যে ছন্দ আছে, সেই ছন্দ-দেবতার দ্বারা অনুগৃহীত হয়ে আমরা যজমানকে প্রজাগণের স্বামী বা অধিপতি করব। হে বিশ্বদেবগণ! সপ্তদশ নামে আখ্যাত স্তোমের দ্বারা তোমাদের অনুগৃহীত আমাদের পালক রাজশরীর (ক্ষত্ৰমস্মৃৎপালকঃ) তেজোযুক্ত, সলিল নামে আখ্যাত বায়ুবিশেষের অনুগৃহীত ও বৈরির তিরস্কারের অক্ষম তোক (উগ্রং বৈরিতিরস্কারমমস্তু)। দিমূহের মধ্যে আমাদের ধারয়িত্ৰী উত্তরদিক আমাদের পালক রাজশরীরকে রক্ষা বা পোষণ করছে। (কিরকম দিক? না,) সেই দিক আশানামুপস্থা, অর্থাৎ ধন ইত্যাদি বিষয়ক আশাসমূহের সিদ্ধির নিমিত্ত সেব্যা। সেই দিকের প্রসাদে আমাদের বল বহু মিত্রোপেত (বহু মিত্রের দ্বারা সমন্বিত) হোক। হে মিত্র ও বরুণ! শরৎ নামক এক ঋতুর দিবস সমূহের জ্ঞাতা আপনারা; আপনারা আমাদের এই (বর্তমান) রাষ্ট্রের মহৎ সুখ সম্পাদন করুন।-বৈরাজ নামে আখ্যাত যে সাম, সেই সামে আমাদের মনীষা বা বুদ্ধি আশ্রিত হোক, তথা আমাদের বীর্য বা শরীরের ব্যবহার। সামর্থ্য ও শত্রুর অতিস্কারক বল (অর্থাৎ আমাদের সেই শক্তি যা শত্রুগণকে পরাভূত করে) অনুষ্টুপ ছন্দের অভিমানী দেবতার দ্বারা সম্পাদিত হোক। হে মিত্র ও বরুণ! বহু মিত্রোপেত এই রাজশরীর জলসম্পূর্ণ ক্ষেত্র ইত্যাদির দাতারূপে যাতে থাকতে পারে, সেইভাবে আপনারা রক্ষা করুন।–দিমূহের মধ্যে সম্যক রাজমান যে ঊধ্বদিক, তা সামের সাথে বলবতী হয়ে আমাদের পালন করুক; তথা হেমন্ত নামে আখ্যাত ঋতুবিশিষ্ট হয়ে আমাদের রক্ষা করুক। বৃহতী নামক ছন্দযুক্ত শর্কর সামের যযানিভূত (সৃষ্টি-কারণরূপ) ঋকগুলিও ঘৃতাহুতিযুক্ত হয়ে আমাদের এই যজ্ঞকে রক্ষা করুক। দিমূহের স্বামিভূতা (অর্থাৎ অধিস্বামিনী) দেবী স্বর্গপ্রদায়িনী, ঘৃতযুক্তা (ঘৃতাচী) হয়ে পয়স্বতী অর্থাৎ আমাদের প্রতি কামধেনুবৎ সুষ্ঠু দোহনশীলা (সুদুঘা) হোন। হে বৃহস্পতি! আপনি এদের পুরোভাগে অর্থাৎ সম্মুখে গমন করে রক্ষক হোন, অধিকন্তু পশ্চাতেও সেইরকম রক্ষক হয়ে আমাদের বাক্য সংযত করুন। দিসমূহের মধ্যে যে উধ্বদিক, তা বৃষ্টির দ্বারা ওষধির সম্পাদিকা হয়ে আমাদের প্রীতিহেতু (প্রীতির বা সুখের কারণ) হোক। দিবসের (অহ্নাং) সমূহরূপে চিহ্নিত সম্বৎসরের সাথে সবিতা আমাদের সুখপ্রদ হোন। রেবত বা রৈবত নামে আখ্যাত যে সামগুলি আছে, সেই সাম ও অতিচ্ছন্দ যুক্ত ঋক আমাদের অজাতশত্রু করুক, (অর্থাৎ আমাদের শত্রু যেন উৎপন্ন হয়, এমন করুক)। হে ভূতজাতের অর্থাৎ প্রাণী মাত্রের পালয়িত্রী ত্রয়স্ত্রিংস স্তোমযুক্ত উধ্বদিক! হে বিবস্বান্ নামক বায়ুযুক্তা (বিবস্বদ্বাতা)! তুমি আমাদের হিত-উপদেশ দান করো। হে সবিতা! এই দিক্‌ আমাদের প্রতি ঘৃতবতী অর্থাৎ বহুল ধৃত সম্পাদিকা হোক; অধিক পালন শক্তির যোজয়িত্রী হোক; পয়স্বতী অর্থাৎ ক্ষীরসম্পাদিকা হোক ও প্রীতিহেতুকরী হোক।–দিসমূহের মধ্যে যা ধ্ৰুবা বা স্থিরা বা সমান (অর্থাৎ সূর্যের গতি সাপেক্ষ প্রাচ্য ইত্যাদি বিভাগ রহিতা), সেই সমানরূপা দিক, বৃহস্পতি, মাতরিশ্মা নামে আখ্যাত মুখ্য বায়ু, সকলেই আমাদের প্রতি হিত-উপদেশ দান করুন। (কিরকম ধ্ৰুবা? না,) তা বিষ্ণুপত্নী (অর্থাৎ বিষ্ণু যার পতি বা পালক), অঘোরা (অর্থাৎ শান্তরূপা, সকল বলের নিয়ামিকা ও পূজিতা। দিক সামান্যরূপা অদিতি দেবতা তাঁর নিজক্রোড়ে স্থিত আমাদের প্রতি শান্তা সুখকরী হোন। (কিরকম অদিতি? না,) তিনি দুলোকের আধারভূতা, পৃথিবী বা ভূমির ধারয়িত্রী, সর্ব জগতের স্বামিভূতা বা পালয়িত্রী, বিষ্ণুপত্নী, জগৎব্যাপিনী, অন্নকর্তী ও শোভন ঐশ্বর্যোপেতা। (বৈশ্বানরা…পৃষ্টো দিবি এই মন্ত্রের বৈশ্বানররা ন উত্যা–এটি পুরোনুবাক্যা এবং পৃষ্টো দিবি –এটি যাজ্যা; এই উভয়ই প্রথম কাণ্ডের পঞ্চম প্রপাঠকের শেষ অনুবাকে ব্যাখ্যাত। অনু নোহদ্যানুমতিরম্বিদনুমতে ত্বম্ এই মন্ত্রের পুরোনুবাক্যা অনু নোইদ্যানুমতি এবং যাজ্যা অন্বিদনুমতে ত্বম, এই উভয়ই ৩য় কাণ্ডের তৃতীয় প্রপাঠকের একাদশ অনুবাকে ব্যাখ্যাত। কয়া নশ্চিত্ৰ আ ভুবৎ কো অদ্য যুক্তে মন্ত্রে কয়া নশ্চিত্ৰ আ ভুবৎ পুরোনুবাক্যা এবং কো অদ্য যুক্তে যাজ্য। এই উভয়ই চতুর্থ কাণ্ডের দ্বিতীয় প্রপাঠকের একাদশ অনুবাকে ব্যাখ্যাত) ॥১২।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *