3 of 4

৪.৪২ ফিন্দের দুই বীরাঙ্গনা কন্যা

বানী জিমন উপজাতির দল-নায়ক কবি ফিরে দুইটি কন্যা ছিলো। বড়টির নাম ওফাইরাহ অর্থাৎ সূৰ্য্য এবং ছোটটির নাম হোজাইলাহ অর্থাৎ চন্দ্র। ফিন্দের বয়স যখন একশত বৎসর তখন বেকরাইদের উপজাতিবৃন্দ থালাবিদদের সাথে এক নিদারুণ সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। থালাবিদরা। সংখ্যায় তুলনামূলকভাবে অনেক বেশী।

বয়সে বৃদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও ফিন্দ এখনও বেশ শক্তিমান পুরুষ। সত্তরজন ঘোড়সোয়ার যোদ্ধার এক দলকে অসম্ভব পরতার সাথে নেতৃত্ব দিতে পারতেন তিনি। এই যুদ্ধেও তিনি তার দল নিয়ে বীরদর্পে এগিয়ে গেলেন, সাথে গেলো তার দুই কন্যা। একজন দূত মারফত তিনি তাঁর উপজাতির যুদ্ধে যোগদানের সংবাদ প্রেরণ করলেন, তিনি জানালেন, আমরা বানী জিমনেরা এক সহস্র যোদ্ধা এবং সত্তরজন ঘোড়সোয়ারের এক দল প্রেরণ করছি। এই উক্তির মাধ্যমে ফিন্দ বোঝাতে চাইছিলেন যে, তিনি একাই এক সহস্র যোদ্ধার সমান এবং এছাড়াও সত্তরজন ঘোড়সোয়ার যোদ্ধা তাকে অনুসরণ করবে।

তুমুল কথার বেগে বেকরাইদ সেনাবাহিনী এই যুদ্ধ শেষ করে। তাদের এই বীরত্বপূর্ণ যুদ্ধের ফল এখনও লোকের মুখে মুখে ছড়িয়ে আছে। থালাবিদরা এই যুদ্ধে সম্পূর্ণ পদস্ত হয় এবং সকল বন্দীকে মস্তক মুণ্ডন করে ছেড়ে দেওয়া হয়। ফিরে দুই বীরাঙ্গনা কন্যা এই যুদ্ধে তাদের অসীম সাহসীকতার জন্য লোকের স্মৃতিতে আজও অমর হয়ে আছে।

রাত ভোর হয়ে আসে। শাহরাজাদ গল্প থামিয়ে চুপ করে যায়।

 

নয়শত পঁচাত্তরতম রজনী

আবার সে বলতে শুরু করে :

যুদ্ধ যখন চরমে, উভয় পক্ষই ভীষণভাবে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে, ফিরে দুই বীরাঙ্গনা কন্যা হঠাৎ তাদের ঘোড়া থেকে লাফিয়ে পড়ে!তারা অতিরিক্ত পোষাক-পরিচ্ছদের ভার সবেগে মুক্ত করে দেয়, ভারী ভারী পোষাকে তারা মুক্ত যুদ্ধ করতে অস্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছিলো। সামান্য কটি বন্ধনী ও বক্ষবন্ধনীতে নিজেদের আচ্ছাদিত রেখে তারা বেকরাইদের দুই পার্শ্ববাহিনীর সাহায্যে ছুটে যায়। যুদ্ধের এই ভয়াবহতার মধ্যেই তারা উভয়েই একটি করে রণসংগীত রচনা করে নেয়। মুখে মুখে। মাদল এবং চার তারের এক বাদ্যযন্ত্রের রণদামামার তালে তালে ওফাইরাহ তার রণ-সংগীত গেয়ে ওঠে?

রক্তপিপাসু তরবারী খোল
বেকরাইদের সৈনিক দল।
তপ্ত শলাকা লোহিত যখন,
হান রে আঘাত বাজিয়ে মাদল!
মুক্ত স্বাধীন সৈনিক কভু
পেছু ফেরে নাকো যুদ্ধক্ষেত্রে।
বিচুর্ণ কর থালাবিদ সেনা
চিনে নিক ওরা জিমন গোত্রে!
বেরাইদের বীর সেনাদল
রাঙিয়ে নে আজ শাণিত কৃপাণ!
ওফাইরাহ বলে আমি তারি দলে
যার অসি পেলো শোণিতের ঘ্রাণ।

হোজাইলাহ ছুটে যায় বাম পার্শ্ব বাহিনীর দিকে। সেদিকে তার পিতা ফিন্দ মহা বিক্রমে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলেন। শত্রুপক্ষও বিপুল উদ্যমে লড়াই চালিয়ে যেতে থাকে! জিমন গোত্রের রণক্লান্ত সেনাদল ক্ৰমশঃ অবসন্ন হয়ে পড়তে থাকে, হোজাইলাহ তখন বিপুল উদ্যমে তার রণসংগীত শুরু করে?

বানী-জিমনের বীর সেনাদল
রাখো উন্নত কৃপাণ খড়গ।
শত্রুশোণিতে স্নান করে আজ
জিনে নিতে হবে জয়ের স্বর্গ!
কার অসি কত
রুধিরে সিক্ত
তাই দিয়ে বীর হবে সনাক্ত;
ওরে দুই বাহু।
থালাবিদ লোহু
রণ-প্রাঙ্গণ কর আরক্ত!
ঝঞ্ঝার বেগে
মত্ত আবেগে
শত্রু সবেগে বি
চুর্ণ কর নির্মম তেজে!
হোজাইলাহ বলে,
আমি তারি দলে
যার অসি বলে
রণ-বিজয়ের দুন্দুভি বাজে!

তাদের রণসংগীতে বেকরাইদের অবসন্ন সেনাদল আবার উজ্জীবিত হয়ে ওঠে।নবীন উদ্যমে তারা শত্ৰুনিধনে মেতে ওঠে। থালাবিদবাহিনী তাদের এই প্রচণ্ড আক্রমণ সহ্য করতে পারে না, বেকরাইদবাহিনীর যুদ্ধে জয়লাভ ত্বরান্বিত হয়ে ওঠে।

সেই মহা বীরত্বপূর্ণ যুগে আমাদের পিতা-প্রপিতামহরা এইভাবেই যুদ্ধ করতেন, সে আমলের নারীজাতিও এই ভাবেই তাদের সাহায্যে ছুটে যেত।

কবি ফিন্দ আর তার দুই বীরাঙ্গনা কন্যার গল্প এখানেই শেষ। যুবকটি এখন তার অতিথিবৃন্দকে এক নতুন গল্প শোনাতে শুরু করে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *