চতুর্থ কাণ্ড। তৃতীয় প্রপাঠক
প্রথম অনুবাক
মন্ত্র- অপাং ত্বেমৎ সাদয়াম্যপাং তত্বাৎ সাদয়াম্যপাং ত্বা ভস্মৎ সাদয়াম্যপাং ত্ব জ্যোতিষি সাদয়াম্যপাং ত্বাহয়নে সাদয়াম্যর্ণবে সদনে সীদ সমুদ্রে সদনে সীদ সলিলে সদনে সীদাপাং ক্ষয়ে সীদাপাং সধিষি সীদাপাং ত্ব সদনে সাদয়াম্যপাং ত্বা সধস্থে সাদয়াম্যপাং ত্বা পুরীষে সাদয়াম্যপাং ত্বা যোনৌ সাদয়াম্যপাং ত্বা পথসি সাদয়ামি গায়ত্রী ছন্দস্ত্রিচ্ছন্দো জগতী ছন্দোনুষ্ঠুছন্দঃ পঙক্তিচ্ছন্দঃ ॥১॥
[সায়ণাচার্য বলেন–প্রথমচিতিগতা অপস্যাভিধানা ইষ্টকা উচ্যতে। অর্থাৎ, এই প্রথম অনুবাকে প্রথম চিতিগতা অপস্যা নামে চিহ্নিত ইষ্টকার বিষয় কথিত হয়েছে।]
মর্মার্থ- (প্রথম মন্ত্র) হে ইষ্টকা (অর্থাৎ অপস্যা ইষ্টকা)! তোমাকে জলসম্বন্ধিনী প্রবাহ ইত্যাদিতে (গমন রীতিতে) স্থাপন করছি। হে ইষ্টকা! তোমাকে তরঙ্গ ইত্যাদি রূপ দীপ্তিতে, শুক্লরূপ নির্মল প্রকাশে স্থাপন করছি, তোমাকে নদী কূপ ইত্যাদি আধারে স্থাপন করছি। (দ্বিতীয় মন্ত্র)–হে ইষ্টকা! তুমি প্রৌঢ় তটে, জলের সদনে অর্থাৎ সমুদ্রে, শুষ্ক তটে, জলপূর্ণ মেঘে এবং উপল বা শিলাবর্ষণকারী বৃষ্টিতে উপবেশন করো। (তৃতীয় মন্ত্র)–হে ইষ্টকা! তোমাকে জলের সদনে অর্থাৎ নদী ইত্যাদিতে স্থাপন করছি, বিদ্যুৎপূর্ণ মেঘে স্থাপন করছি, নদী ইত্যাদির বালুকায় (পুরীষে) স্থাপন করছি, জলের যোনি বা কারণভূত অগ্নিতে স্থাপন করছি, এবং সমুদ্রে স্থাপন করছি। (চতুর্থ মন্ত্র)– হে ইষ্টকা! তুমি গায়ত্রী নামে আখ্যাত ছন্দোরূপা। এইভাবে তুমি ত্রিষ্টুপ, জগতী, অনুষ্টুপ ও পঙক্তি ছন্দোরূপা (ছন্দোরূপাহসি) ॥১॥
[সায়ণাচার্য বলেন–অথ দ্বিতীয় প্রাণভৃত উচ্যতে। অর্থাৎ, এই দ্বিতীয় অনুবাকে প্রাণভৃৎ নামে চিহ্নিতা ইষ্টকার বিষয় কথিত হয়েছে।]
.
দ্বিতীয় অনুবাক
মন্ত্র- অয়ং পুরো ভুবন্তস্য প্রাণো ভৌবায়নো বসন্তঃ প্রাণায়নো গায়ত্রী বাসন্তী গায়ত্রিয়ৈ গায়ত্রং গায়ত্রাদুপাংশুরুপাংশোস্ত্রিবৃত্রিবৃতো রথস্তরং রথন্তরাদ্বসিষ্ঠ ঋষিঃ প্রজাপতিগৃহীতয়া ত্বয়া প্রাণং গৃহ্বামি প্রজাভ্যোহয়ং দক্ষিণা বিশ্বকৰ্মা তস্য মনো বৈশ্বকৰ্ম্মণং গ্রীষ্মে মানসখ্রিষ্ট্রগগ্রৈষ্মী ত্রিষ্ঠুভ ঐড়মৈড়ান্তৰ্য্যামোহন্তৰ্য্যামাৎ পঞ্চদশঃ পঞ্চদশাদ বৃহ বৃহত ভরদ্বাজ ঋষিঃ প্রজাপতিগৃহীতয়া ত্বয়া মনঃ গৃহামি প্রজাভ্যোহয়ং পশ্চাবিশ্বব্যাস্তস্য চক্ষুর্বৈশ্ববাচসং বর্ষাণি চাক্ষুষাণি জগতী বার্ষী জগত্যা ঋক্ষমমৃক্ষমাণ্ডুক্রঃ শুক্ৰাৎ সপ্তদশঃ সপ্তদশাদ্বৈরূপং বৈরূপাদ্বিশ্বামিত্র ঋষিঃ প্রজাপতিগৃহীতয়া ত্বয়া চক্ষুমি প্রজাভ্য ইদমুত্তরাৎ সুবস্তস্য শ্রোত্রং সৌবং শরচ্ছুৌনুষ্টুপছারদ্যনুষ্ঠুভঃ স্বারং স্বারান্মন্থী মন্থিন একবিংশ একবিংশাদ্বৈরাজং বৈরাজাজ্জমদগ্নিঋষিঃ প্রজাপতিগৃহীতয়া ত্বয়া শ্রোত্রং গৃহামি প্রজাভ্য ইয়মুপরি মতিস্তস্যৈ বাঙ্তী হেমন্তো বাচ্যায়নঃ পঙক্তিহৈমন্তী পক্ত্যৈ নিধনবন্নধনবত আগ্রয়ণ আগ্রয়ণালিণবয়স্ত্রিংশৌ ব্রিণবয়স্ত্রিংশাভ্যাৎ শাকৃররৈবতে শাকৃররৈবতাভ্যাং বিশ্বকৰ্ম্মর্ষিঃ প্রজাপতিগৃহীতয়া ত্বয়া বাচং গৃহ্নামি প্রজাভ্যঃ ॥২৷৷
মর্মার্থ- (পূর্বদিকে উপধেয় ইষ্টকার মন্ত্র)–হে ইষ্টকা (অর্থাৎ প্রাণভৃৎ বা প্রাণের পোষক ইষ্টকা)! তোমাকে পূর্ব দিকে স্থাপন করছি, কারণ তুমি পূর্বদিকে বর্তমান প্রজাতির প্রাণস্বরূপ। তুমি প্রজাপতি-সম্বন্ধী প্রাণ, তাঁর পুত্র, বসন্ত ঋতু, গায়ত্রী, গায়ত্ৰ সাম, উপাংশু গ্রহ, ত্রিবৃৎস্তোম, রথন্তর সাম, ঋষি বসিষ্ঠ ইত্যাদি উপচারের দ্বারা সকল প্রজার প্রাণসিদ্ধির নিমিত্ত গৃহীত হয়েছ (অর্থাৎ উপদান প্রাপ্ত হয়েছে)। (এখানে ভুবঃ শব্দে প্রজাপতি-সম্বন্ধী প্রাণকে, ভৌবায়ন শব্দে তাঁর অপত্য বা পুত্রকে, সেই প্রাণের স্বাসবৃত্তিরূপে (প্রাণায়ন) অর্থাৎ অপত্যরূপে উপচরিত বা বোধিত বসন্তকে, বসন্ত-সম্বন্ধিনী বাসন্তী গায়ত্রীকে, ছন্দোরপা গায়ত্রী-সম্বন্ধী গায়ত্র-সামকে, গায়ত্র-সাম হতে উৎপন্ন উপাংশু গ্রহকে, উপাংশু গ্রহ হতে উৎপন্ন ত্রিবৃৎ-স্তোমকে, ত্রিবৃৎস্তোম হতে উৎপন্ন রথন্তর সামকে এবং রথম্ভর সাম হতে উৎপন্ন বসিষ্ঠ নামে আখ্যাত ঋষিকে উলপক্ষ করা হয়েছে)।–(দক্ষিণ দিকে উপধেয় ইষ্টকার মন্ত্র)–হে ইষ্টকা! জগতের সকল ব্যাপার বা কর্মের কর্তা যে প্রজাপতি বিশ্বকর্মা, তুমি দক্ষিণ দিকস্থায়ী সেই প্রজাপতির মনের স্বরূপ। সেই প্রজাপতির মন হতে (পূর্বে উল্লিখিত প্রাণ, বসন্ত ইত্যাদির মতো) গ্রীষ্ম, গ্রীষ্ম-সম্বন্ধিনী (গ্রৈষ্মী) ত্রিষ্টুপ ছন্দ, ত্রিষ্টুপ-সম্বন্ধীয় ঐড় নামক সামবিশেষ, ঐড়-সাম হতে অন্তর্যাম গ্রহ, অন্তর্যাম হতে পঞ্চদশ বৃহৎস্তোম ও বৃহৎভোম হতে ভরদ্বায় নামক ঋষি পরম্পরাক্রমে উৎপন্ন হয়েছেন। হে ইষ্টকা! তুমি তাদের দ্বারা গৃহীত হয়েছ। তুমি দক্ষিণ দিকস্থায়ী প্রজাপতির মনস্বরূপ, সুতরাং প্রজাগণের মন লাভের নিমিত্ত তোমাকে দক্ষিণ দিকে স্থাপন করছি (অর্থাৎ উপধান করছি)।–(পশ্চিম দিকে উপধেয় ইষ্টকার মন্ত্র)–হে ইষ্টকা! সর্ব জগৎব্যাপ্ত যে প্রজাপতি পশ্চিম দিকে অবস্থিত আছেন, তুমি তার চক্ষুস্বরূপ। সেই প্রজাপতির চক্ষু হতে বর্ষাঋতু, বর্ষাঋতু হতে জগতী ছন্দ, জগতী হতে ঋক্ষ সাম, ঋক্ষ সাম হতে শুক্র গ্রহ, শুক্ৰ হতে সপ্তদশ বৈরূপ স্তোম ও বৈরূপ হতে বিশ্বামিত্র নামক ঋষি পরস্পরাক্রমে উৎপন্ন হয়েছেন। তুমি তাদের দ্বারা গৃহীত হয়েছ। সুতরাং প্রজাগণের চক্ষু লাভের নিমিত্ত তোমাকে পশ্চিম দিকে স্থাপন করছি (অর্থাৎ উপধান করছি)।–(উত্তর দিকে উপধেয় ইষ্টকার মন্ত্র)–হে ইষ্টকা! সর্ব জগতের প্রেরয়িতা যে সুবঃ অর্থাৎ প্রজাপতি উত্তর দিকে অবস্থান করছেন, তুমি তার শ্রোত্র স্বরূপ। সেই প্রজাপতির শ্রোত্র হতে শরৎ ঋতু, শরৎ হতে অনুষ্টুপ ছন্দ, অনুষ্টুপ হতে স্বার-সাম, স্বার হতে মন্থী গ্রহ, মন্থী হতে একবিংশ বৈরাজ স্তোম ও বৈরাজ হতে জমদগ্নি নামক ঋষি পরম্পরাক্রমে উৎপন্ন হয়েছেন। তুমি তাদের দ্বারা গৃহীত হয়েছে।, সুতরাং প্রজাবর্গের শ্রোত্র লাভের নিমিত্ত তোমাকে উত্তর দিকে স্থাপন করছি (অর্থাৎ উপধান করছি)।–(মধ্যদেশে উপধেয় ইষ্টকার মন্ত্র)–সকল জগতের জ্ঞানাতীত মতি নামক যে প্রজাপতি উধ্বদিকে বর্তমান, হে ইষ্টকা! তুমি তার তনু বা শরীর স্বরূপ। সেই মতি নামধেয় প্রজাপতির তনু হতে বাক, বা হতে বাচ্যায়ন (বাকের অপত্য), বাচ্যায়ন হতে পংক্তি ছন্দ, পংক্তি ছন্দ হতে হেমন্ত ঋতু, হেমন্ত ঋতু হতে নিধনবৎ সামবিশেষ, নিধনবৎ হতে আগ্রয়ণ গ্রহ, আগ্রয়ণ হতে ত্ৰিণবত্রয়ত্রিংশ, তা হতে শাক্কর বৈরত, শোকর রৈবত হতে ঋষি বিশ্বকর্মা পরম্পরাক্রমে উৎপন্ন হয়েছেন। হে ইষ্টকা! তুমি তাদের দ্বারা গৃহীত হয়েছ। সুতরাং প্রজাগণের বাক লাভের নিমিত্ত তোমাকে গ্রহণ করছি (অর্থাৎ উপধান করছি)। (এই স্থলে এক একটি মন্ত্রে প্রজাপতি, ইন্দ্রিয় (বা), ঋতু (হেমন্ত), ছন্দ (পংক্তি), সামবিশেষ (নিধনবৎ), গ্রহ (যজ্ঞপাত্র, আগ্রয়ণ), স্তোম (ত্ৰিণবত্রয়ত্রিংশ), পৃষ্ঠস্তোত্র (শাকর বৈরত) ও ঋষি (বিশ্বকর্মা)–এই নয়টি লোকপ্রসিদ্ধ পদার্থের কথা বলা হয়েছে; যদিও এগুলির জন্ম নেই, তথাপি মন্ত্রের অর্থত্বের দ্বারা এগুলিকে এইভাবে ভাবলে কোন বিরোধ হয় না)। [এই মন্ত্রগুলির সাথে পরবর্তী কাণ্ডের ২য় প্রপাঠকের ১০ম অনুবাকের মন্ত্রগুলি সংশ্লিষ্ট] । ২।
[সায়ণাচার্য বলেন–তৃতীয়েহপানভৃত উচ্যন্তে। অর্থাৎ–এই তৃতীয় অনুবাকে অপানভৃৎ (অপান ধারণকারী) নামে চিহ্নিতা ইষ্টকার বিষয় উক্ত হয়েছে]
.
তৃতীয় অনুবাক
মন্ত্র- প্রাচী দিশাং বসন্ত ঋতৃনামগ্নিৰ্দেবতা ব্ৰহ্ম দ্রবিণং ত্রিবৃৎস্তোমঃ স উ পঞ্চদশবৰ্ত্তনিবিৰ্ব্বয়ঃ কৃতময়ানাং পুরোবাতো বাতঃ সানগ ঋষির্দক্ষিণা দিশাং গ্রীষ্ম ঋতুনামিন্দ্রো দেবতা ক্ষত্ৰং দ্রবিণং পঞ্চদশঃ স্তোমঃ স উ সপ্তদশ বৰ্ত্তনির্দিত্যবায়স্ত্রেইয়ানাং দক্ষিণাঘাত বাতঃ সনাতন ঋষিঃ প্রতীচী দিশাং বর্ষা ঋতুণাং বিশ্বে দেবা দেবতা বিট দ্রবিণং সপ্তদশঃ স্তোমঃ স উবেকবিংশবর্ভনিস্ত্রিবৎসসা বয়ো দ্বাপরোয়ানাং পশ্চাদ্বাতো বাতোহভূন ঋষিরুদীচী দিশাং শরদৃতুনাং মিত্রাবরুণৌ দেবতা পুষ্টং দ্রবিণমেকবিংশঃ স্তোমঃ স উ ত্রিণববৰ্ত্তনিস্তবায় আস্কন্দেহয়ানামুওরাঘাতত বাতঃ প্রত্ন ঋষিরূৰ্ধা দিশাং হেমন্তশিশিরাবৃতৃনাং বৃহম্পতিৰ্দেবতা বর্দো দ্রবিণং ব্রিণবঃ স্তোমঃ স উ ত্রয়স্ত্রিংশবৰ্ত্তনিঃ পষ্ঠবাদ্বয়োহভিভূরয়ানাং বিম্বঘাতত বাতঃ সুপর্ণ ঋষিঃ পিতরঃ পিতামহাঃ পরেহবরে তে নঃ পান্তু তে নোহবস্মিন্ ব্ৰহ্মনুস্মিন্ ক্ষত্রেহস্যামাশিষ্যস্যাং পুরোধায়ামস্মিন। কৰ্ম্মন্নস্যাং দেবহূত্যা ॥৩৷৷
মর্মার্থ- (পূর্বদিকে উপধেয় ইষ্টকার মন্ত্র)–হে ইষ্টকা! দিকের মধ্যে যেদি পূর্বদিক, তুমি তাই-ই। ঋতুগুলির মধ্যে যেটি বসন্ত, তুমি সেই বসন্তরূপা; দেবতাগণের মধ্যে যিনি অগ্নি, তুমি সেই অগ্নিরূপা; নিজের দ্বারা অর্জিত ধনের মধ্যে যা বিশিষ্ট ব্রাহ্মণ্যরূপ, তুমি তারই রূপা; স্তোমের মধ্যে যে ত্রিবৃৎস্তোম পঞ্চদশ স্তোমের প্রবর্তক, তুমি ত্রিবৃৎস্তোমের সেই প্রবর্তকশক্তি রূপা; বয়সের মধ্যে যা সাধসম্বৎসররূপ (বি অর্থাৎ দেড় বৎসর), তুমি তাই-ই। অয়ানাং অর্থাৎ যুগগুলির মধ্যে যেটি কৃতযুগ (অর্থাৎ সত্যযুগ), তুমি হেই সত্যযুগরূপা; বায়ুগুলির মধ্যে যা পুরোবাত (অগ্রবর্তী বায়ু) নামে আখ্যাত, তুমি সেই বায়ুরূপা; এবং ঋষিগণের মধ্যে যিনি সানগ নামে আখ্যায়িত, তুমি সেই ঋষিরূপা।–(দক্ষিণদিকে উপধেয় ইষ্টকার মন্ত্র)–হে ইষ্টকা! দিকের মধ্যে যেটি দক্ষিণদিক, তুমি তাই-ই। ঋতুগুলির মধ্যে যেটি গ্রীষ্ম, তুমি সেই গ্রীষ্মরূপা; দেবতা-গণের মধ্যে যিনি ইন্দ্র, তুমি সেই ইন্দ্ররূপা; ধনের মধ্যে যেটি ক্ষত্রিয়ত্বের দ্বারা অর্জিত, তুমি সেই ধনরূপা; স্তোমের মধ্যে যেটি সপ্তদশ স্তোমের প্রবর্তক, তুমি সেই স্তোমরূপা; বয়সের মধ্যে যা দ্বিসম্বৎসররূপ (দিত্যবাট অর্থাৎ দুই বৎসর), তুমি তাই-ই; বায়ুর মধ্যে যেটি দক্ষিণ বায়ু (দক্ষিণাঘাতঃ), তুমি সেই বায়ুরূপা; এবং ঋষিগণের মধ্যে যিনি সনাতন নামে আখ্যাত, তুমি সেই ঋষিরূপা।-(পশ্চিমদকে উপধেয় ইষ্টকার মন্ত্র)–হে ইষ্টকা! দিকের মধ্যে যেটি পশ্চিমদিক, তুমি সেই পশ্চিমদিকরূপা;ঋতুগুলির মধ্যে যেটি বর্ষা, তুমি সেই বর্ষারূপা;ধনের মধ্যে যা বৈশ্যত্বের দ্বারা অর্জিত, তুমি সেই দেবতারূপা; স্তোমের মধ্যে যেটি একবিংশ স্তোমের প্রবর্তক, তুমি সেই সপ্তদশ স্তোমরূপা; বয়সের মধ্যে যা ত্রিবৎস অর্থাৎ তিন বৎসর, তুমি সেই বয়সরূপা; যুগের মধ্যে যেটি দ্বাপরযুগ, তুমি সেই যুগরূপা; বায়ুর মধ্যে পশ্চিম দিকে প্রবাহিত যে বায়ু, তুমি সেই পশ্চিমা বায়ুরূপা; এবং ঋষিগণের মধ্যে অহভূন নামে অভিহিত যে ঋষি, তুমি সেই ঋষিরূপা।–(উত্তরদিকে উপধেয় ইষ্টকার মন্ত্র)–হে ইষ্টকা! দিকের মধ্যে যেটি উত্তর দিক, তুমি সেই উত্তরদিকরূপা; ঋতুগুলির মধ্যে যেটি শরৎ, তুমি সেই শরৎ-রূপা; দেবতাগণের মধ্যে যাঁরা মিত্রাবরুণ (মিত্র ও বরুণ), তুমি সেই মিত্রাবরুণরূপা; ধনের মধ্যে পরিচর্যাপরয়াণ (অর্থাৎ ব্রাহ্মণ-ক্ষত্রিয়-বৈশ্যের পোষকত্বে নিযুক্ত) শুদ্ৰত্বের দ্বারা অর্জিত যে ধন, তুমি সেই ধনরূপা; স্তোমের মধ্যে যা ত্রিণবের প্রবর্তক একবিংশ স্তোম, সেই একবিংশ স্তোমরূপা; বয়সের মধ্যে যেটি সার্ধত্রিসম্বৎসররূপ (তুবাই, চতুর্থ সম্বৎসরে উপনীত হতে চলেছে এমন, অর্থাৎ সাড়ে তিন বৎসর), তুমি সেই বৎসররূপা; যুগের মধ্যে যেটি সকল ধর্মের শোষণকারী কলিযুগ, তুমি সেই কলিযুগরূপা; বায়ুর মধ্যে যেটি উত্তরদিকে প্রবাহিত, তুমি সেই উত্তরবায়ুরূপা; এবং ঋষিগণের মধ্যে যিনি প্রত্ন নামধারী, তুমি সেই প্রত্ন-ঋষিরূপা।- (মধ্যদেশে উপধেয় ইষ্টকার মন্ত্র)–হে ইষ্টকা! দিকের মধ্যে যেটি উধ্বদিক, তুমি সেই ঊধ্বরূপা; ঋতুর মধ্যে যা হেমন্ত ও শিশির, তুমি সেই ঋতুদ্বয়রাপা; দেবতাগণের মধ্যে যা যিনি বৃহস্পতি, তুমি সেই দেবতারূপা; ধনের মধ্যে যে ধন চতুর্বরে বলে অর্জিত, তুমি সেই ধনরূপা; স্তোমের মধ্যে ত্রয়স্ট্রিংশ স্তোমের প্রবর্তক যে ত্রিণব স্তোম, তুমি সেই ত্ৰিণবরূপা; বয়সের মধ্যে যেটি চার বৎসর, তুমি সেই বর্ষচতুষ্টয়রূপা, (অর্থাৎ পষ্টবাট বা পৃষ্ঠে ভার বহনকারী বলীবর্দ চতুর্থ বৎসরে ভার বহনে সমর্থ হয়, এতএব তুমি সেই চার বৎসর রূপা); যুগসমূহের মধ্যে যেটি ধর্মের অভিভবকারী কলিযুগের অবসানকারী কাল, তুমি সেই কলিযুগাবসানরূপা; নানাদিকে সঞ্চরমান হওয়ার কারণে যে বায়ু বিম্বগাত নামে অভিহিত, তুমি সেই বায়ুরূপা; এবং ঋষিগণের মধ্যে যিনি সুপর্ণ ঋষি নামে খ্যাত, তুমি সেই সুপর্ণ ঋষিরূপা।–(উপরোক্ত পঞ্চ মন্ত্রের অনুসঞ্জনীয় শেষাংশ)–হে পিতা! হে পিতামহ! হে প্রপিতামহ ও পরলোকগত পিতৃপুরুষগণ! হে অবর (অর্থাৎ ভ্রাতা পুত্র ইত্যাদি অনুজাতগণ)! তোমরা যজ্ঞকর্মের অনুষ্ঠানের নিমিত্ত আমাদের পালন করো; অধিকন্তু আমাদের কর্মসিদ্ধির পালক হও। এই ব্রাহ্মণজাতিতে (ব্রহ্মন্নস্যাং), এই ক্ষত্রিয়জাতিতে (ক্ষত্রেহস্যাং), তাঁদের কামনাতে, এই রাজপুরোহিত বৃত্তিধারী পুরোধাগণে, এই অগ্নিচয়নরূপ কর্মে ও দেববর্গের আহ্বানরূপ ক্রিয়ার নিমিত্তভূত হয়ে, হে ইষ্টকা! তোমার উপধান (রক্ষণ) করছি। [ এই মন্ত্রগুলির সাথে পরবর্তী কাণ্ডের ২য় প্রপাঠকের ১০ম অনুবাকের মন্ত্রগুলি সংশ্লিষ্ট] ॥৩৷৷
[সায়ণাচার্য বলেন-তৃতীয়েনুহবাকে….। তাবতা প্রথমা চিতি সমাপ্তা। অথ চতুর্থানুবাকে দ্বিতীয়স্যাং চিতাবাশ্বিন্যাখ্যা ইষ্টকা অভিধীয়ন্তে। অর্থাৎ–তৃতীয় অনুবাক অবধি প্রথমা চিতি সমাপ্ত হয়েছে। অতঃপর এই চতুর্থ অনুবাকে দ্বিতীয় চিতিতে আশ্বিন্য নামে আখ্যাত ইষ্টকার বিষয় কথিত হয়েছে।]
.
চতুর্থ অনুবাক
মন্ত্র- বিক্ষিতিন্ত্রবয়োনিবোহসি ধ্রুবাং যোনিমা সীদ সাধ্যা। উখাস্য কেতুং প্রথমং পুরস্তাদখিনাহৰ্য্য সাদয়তামিহ ত্বা। স্বে দক্ষে দক্ষপি তহ সীদ দেবত্রা পৃথিবী বৃহতী ররাণ। স্বাসস্থা তনুবা সৎ বিশস্ব পিতেবোধ সূনব আ সুশেবাহখিনাহধ্বর্য্য সাদয়তামিহ ত্বা। কুলয়ানী বসুমতী বয়োধা রয়িং নো বর্জ বহুলং সুবীরম অপামতিং দুগ্মতিং বাধমানা রায়ম্পোষে যজ্ঞপতিমাভজন্তী সুবৰ্দেহি যজমানায় পোযমশিনাহ সাদয়তামিহ ত্বা। অগ্নেঃ পুরীষমসি দেবযানী তাং ত্বা বিশ্বে অভি গুণ দেবাঃ।। স্তোমপৃষ্ঠা খৃতবতীহ সীদ প্রজাবদস্মে দ্রবিণাই যজম্বাশ্বিনাহ সাদয়মিহ ত্ব। দিবো মূৰ্দ্ধাহসি পৃথিবা নাভিৰ্বিষ্টনী দিশামধিপত্নী ভুবননাম। ঊর্মিন্সো অপামসি বিশ্বকর্মা ত ঋষিরখিনাহধ্বৰ্য সাদয়তামিহ ত্বা। সজ ঋতুভিঃ সজুবিধাভিঃ সজুৰ্ব্বসুভিঃ সজু রুদ্রৈঃ সজুরাদিত্যেঃ সজুৰ্বিশের্দেবৈঃ সজুৰ্দেবৈ; সজুৰ্দেবৈয়োনাধৈরগয়ে ত্বা বৈশ্বানরায়শ্বিনাহর সাদয়তামিহ ত্বা। প্রাণং মে পাহ্যপানং মে পাহি ব্যানং মে পাহি চক্ষুৰ্ম্ম উল্কা বি ভাহি শ্ৰোত্ৰং মে শ্লোকয়াপনি বৌষধর্জি দ্বিপাৎ পাহি চতুম্পাদব দিব্যা বক্টিমেরয় ॥৪৷৷
মর্মার্থ- যে ভূমিতে ইষ্টকাকে আশ্রয়ান্বিত করা হয় (অর্থাৎ স্থাপন করা হয়) সেই ভূমি ধ্রুব বা স্থির; (অর্থাৎ ভূমির চাঞ্চল্যের অভাবে স্থির দেখায়)। ধ্রুবা অর্থাৎ বিনাশরহিতা মৃত্তিকা যে ইষ্টকার উৎপত্তির হেতু, হে ইষ্টকা! তুমি স্বরপতঃও সেইরকমই ধ্রুবা। আমাদের দ্বারা স্থাপিত হয়ে (অর্থাৎ উপধান-প্রাপ্ত হয়ে), তুমি স্থির অগ্নিক্ষেত্ররূপ স্থানে আগত হয়ে উপবেশন করো। এই স্থান উখাতে স্থিত অগ্নির অস্তিত্বের জ্ঞাপক (কেতুং) এবং প্রথম ইষ্টকার উপধানের পূর্ব নিষ্পন্ন। অতএব, হে ইষ্টকা! এই অগ্নিক্ষেত্রের পূর্ব দিকে দেববর্গের অধ্বর্য উভয় অশ্বিন (অশ্বিনীকুমারদ্বয়) তোমাকে স্থাপন করুন (স্থাপয়তা)। হে ইষ্টকা! তুমি আপন স্থানে উপবেশন করো, যেমন দক্ষপিতেতি লুপ্তোপমা অর্থাৎ দক্ষ বা ব্যবহার-কুশল পুত্রের গৃহে পিতা উপবেশন করে থাকেন। হে ইষ্টকা! তুমি দেবতাগণের মধ্যে স্বকীয় শরীরে সম্যক অবস্থিত হও। (কিরকম? না,) পৃথিবী যেমন মৃৎকার্যের নিমিত্ত ভূমিস্বরূপা, প্রৌঢ়া (বৃহতী), নিরুপদ্রবত্বের কারণে রমণীয়া ও সুখকরা হয়ে এই স্থানে স্থিতা আছেন। হে ইষ্টকা! তুমি, সর্বতঃ সুখে সেবিত হও, যেমন সুনবে পিতব, অর্থাৎ পুত্রের নিমিত্ত পিতা সুখে সেবিত হয়ে থাকেন। দেববর্গের অধ্বর্য উভয় অশ্বিন (অশ্বিনীকুমারদ্বায়) তোমাকে এই স্থানে স্থাপন করুন।–হে ইষ্টকা! তুমি আপন নিবাস্থানে অবস্থান পূর্বক ধনবতীরূপে ধনপ্রদা হও; তুমি বয়োধা অর্থাৎ দীর্ঘ আয়ুর সম্পাদিকা হও। এইরকমে তুমি আমাদের নিমিত্ত প্রভূত ধন (বহুলং রয়িং) ও শোভন পুত্র (সুবীরং) সম্পাদন করো। অমতি অর্থাৎ বুদ্ধিহীনতা ও দুর্মতি অর্থাৎ পাপবুদ্ধি নিঃশেষে বিনষ্ট করে ধনপুষ্টির দ্বারা যজ্ঞপতিকে সর্বতো প্রাপ্ত হও এবং স্বর্গলোকে যজমানের নিমিত্ত পুষ্টি সম্পাদন করো। দেববর্গের অধ্বর্য উভয় অশ্বিন্ তোমাকে এই স্থানে স্থাপন করুন। হে ইষ্টকা! দেবগণকে প্রাপ্ত হয়ে তুমি চিত্য (চয়িত) অগ্নির পূরক হও। এইরূপে সকল দেবতা তোমার সর্বতো কীর্তন করুন। তুমি সকল স্তোমের (বা স্তুতির) সাথে এবং হোমের ঘৃতের সাথে যুক্ত হয়ে এই স্থানে স্থিত হও। সেই সঙ্গে আমাদের পুত্রপৌত্র ইত্যাদি যুক্ত ধন সর্বত প্রদান করো। দেববর্গের অধ্বর্য উভয় অশ্বিন তোমাকে এই স্থানে স্থাপন করুন।–হে ইষ্টকা! তুমি সবাত্মকা (সর্বাত্মকাহসি)। এই কারণেই বলা হয় যে, তুমি তুমি দুলোকের শিরঃস্থানীয় আদিত্য, পৃথিবী বা ভূমির নাভিস্থানীয় মেরু ইত্যাদি, পূর্ব ইত্যাদি দিক সমূহের প্রতিবন্ধকতা দুরীকরণের ব্যবস্থাপক, সকল ভুবনের অধিপত্নীগণ অপেক্ষাও অধিক পালয়িত্রী, জলের ঊর্মি ও রস–উভয় রূপা, এবং প্রজাপতি বিশ্বকর্মা তোমার দ্রষ্টা ঋষি (ঋষিদ্ৰষ্টা)। দেববর্গের অধ্বর্য উভয় অশ্বিন তোমাকে এই স্থানে স্থাপন করুন। এই অগ্নিচয়নরূপ বিপুল যজ্ঞে প্রমাদবশতঃ অগ্নির কোন অঙ্গ অনুষ্ঠিত বা অননুষ্ঠিত হতে পারে। তা জানা সব সময়ে সম্ভব নয়। সুতরাং যদি কোন অঙ্গ অপূর্ণ হয়, তবে সেই অন্তরায় পরিহারের নিমিত্ত এই অশ্বিন্দ্বয় ইষ্টকার উপধান করুন (অর্থাৎ অশ্বিদেবদ্বয়যুক্ত মন্ত্রের দ্বারা এই ইষ্টকার উপধান হওয়ার নিমিত্ত এটি আশ্বিন্য নামে অভিহিত হবে)। তার ফলে দেববৈদ্য অশ্বিদ্বয় এই যজ্ঞের চিকিৎসা করবেন (যজ্ঞায়োষধং করোতি)।-হে ইষ্টকা! তুমি বসন্ত ইত্যাদি ঋতুগুলির সাথে সমান প্রীতিযুক্ত, (অর্থাৎ বসন্ত ইত্যাদি ঋতুসমুহ যেমন প্রীতিযুক্ত, সেইরকম হয়ে থাক)। সেইভাবেই তুমি জগতের পোষক ব্রহ্মা ইত্যাদি বিধাতাগণের সাথে, বসুগণের সাথে, রুদ্রবরে সাথে, আদিত্যবৃন্দের সাথে ও বিশ্বদেব সমূহের সাথে সমান প্রীতিযুক্ত হও। এই সকল দেবতাই বয়োনাধা অর্থাৎ আয়ুঃ-প্রদাতা। সেই দেবতাগণের সাথে সমান প্রীতিসম্পন্ন তোমাকে বৈশ্বানর অর্থাৎ সর্বপুরুষের হিতকরী অগ্নির উদ্দেশে উপধান করছি। দেববর্গের অধ্বর্য অশ্বিদ্বয় তোমাকে এই ক্ষেত্রে স্থাপন করুন। হে ইষ্টকা! আমার প্রাণকে (পঞ্চবৃত্তিক দেহস্থ বায়ুকে) পালন করো (পালয়), আমার ব্যানকে (প্রাণধারণসাধন দেহস্থ বায়ুবিশেষকে) পালন করো, ও আমার চক্ষুকে পালন করো। তুমি বিশাল দৃষ্টিতে বিভাত (প্রকাশিত) হও, অর্থাৎ বিশেষভাবে দর্শন-সামর্থ্য দান করো এবং বহুরকমে বেদ ইত্যাদি শাস্ত্র বচন (তথা শব্দসংঘাত) শ্রবণে সমর্থ করো। হে ইষ্টকা! তুমি জলের ও ওষধির প্রীতি সম্পাদন করো, দ্বিপাদ অর্থাৎ মনুষ্য সমুহের শরীরকে পালন করো ও চতুষ্পদ পশুসমুহের শরীরকে রক্ষা করো (মনুষ্যশরীরং পালয়, পশুশরীরমবরক্ষ)। তুমি দ্যুলোক বা আকাশ হতে বৃষ্টির প্রবর্তন করো। [এই মন্ত্রগুলির সাথে পরবর্তী কাণ্ডের ৩য় প্রপাঠকের ১ম অনুবাকের মন্ত্রগুলি সংশ্লিষ্ট] ॥৪॥
[সায়াণাচার্য বলেন–পঞ্চমে বয়স্যাখ্যা ইষ্টকা উচ্যন্তে। অর্থাৎ, এই পঞ্চম অনুবাকে বয়স্যা নামে আখ্যাত ইষ্টকার বিষয় উক্ত হয়েছে।]
.
পঞ্চম অনুবাক
মন্ত্র- বিৰ্ব্বয়স্ত্রিপৃছন্দো দিত্যবাড়বয়ো বিরাছন্দঃ পঞ্চবির্বয়ো গায়ত্রী ছন্দস্ত্রিবৎসো বয় উষ্ণিহা ছন্দৰ্য্যবাড়বয়োহনুছন্দঃ পণ্ঠদ্বয়ো বৃহতী ছন্দ উক্ষা বয়ঃ সততাবৃহতী ছন্দ ঋষভো বয়ঃ ককুচ্ছন্দো ধেনুৰ্ব্বয়ো জগতী ছন্দোহনড়ান্বয়ঃ। । পঙক্তিচ্ছন্দোবস্তো বয়ো বিবলং ছন্দো বৃষ্ণিৱঁয়ো বিশালং ছন্দঃ পুরুষো বয়স্তং ছন্দো ব্যাঘ্ৰো বায়োহনাধৃষ্টং ছন্দঃ সিংহে বয়চ্ছদিচ্ছন্দো বিষ্টম্ভো বয়োহধিপতিচ্ছন্দঃ ক্ষত্রং বয়ো ময়লং ছন্দো বিশ্বকর্মা বয়ঃ পয়মেষ্ঠী ছন্দো মূর্ধা বয়ঃ প্রজাপতিচ্ছদঃ ॥৫৷৷
মর্মার্থ- হে ইষ্টকা! তুমি ত্রি-অবি অর্থাৎ সাধসম্বৎসর পরিমিত কালরূপা বা দেড় বৎসর বয়সরূপা ও চতুশ্চত্বারিংশ (চুয়াল্লিশ) অক্ষর সমন্বিত ত্রিষ্টুপ ছন্দোরূপা। এই রকমেই তুমি দ্বিবৎসর ( দিবা) পরিমিত বয়সরূপা ও বিরাট ছন্দোরূপা; তুমি পঞ্চাবি অর্থাৎ সার্ধদ্বিবৎসর (আড়াইবৎসর) পরিমিত বয়সরূপা ও গায়ত্রী ছন্দোরূপা; তুমি তিনবৎসর পরিমিত বয়সরূপা ও উষ্ণিক ছন্দোরূপা, তুমি তুর্যবা অর্থাৎ সার্ধসম্বৎসরত্রয় (সাড়ে তিন বৎসর) পরিমিত বয়সরূপা ও অনুষ্টুপ ছন্দোরপা; তুমি পষ্ঠবাৎ অর্থাৎ সম্বৎসরচতুষ্টয় (চার বৎসর) পরিমিত বয়সরূপা ও বৃহতী ছন্দোরূপা; তুমি উক্ষা অর্থাৎ সাধসম্বৎসরচতুষ্টয় (সাড়ে চার বৎসর) পরিমিত বয়সরূপা ও সতোবৃহতী ছন্দোরূপা।–এইভাবে ঋষভ ইত্যাদি শব্দের দ্বারা সেই সেই শব্দের সাথে সম্বন্ধবিশিষ্ট বয়স ও ছন্দ উল্লেখিত হচ্ছে; যেমন-ঋষভো বয়ঃ ককুচ্ছন্দো অর্থাৎ ঋষভের বয়স ককু ছন্দ, ধেনুর বয়স জগতী ছন্দ, অনড়বান অর্থাৎ বলদের বয়স পংক্তি ছন্দ, বস্ত অর্থাৎ ছাগলের বয়স বিবল ছন্দ, বৃষ্ণির বয়স বিশাল ছন্দ, পুরুষের বয়স তন্দ্র ছন্দ, ব্যাঘ্রের বয়স অনাধৃষ্ট ছন্দ, সিংহের বয়স ছদি ছন্দ, বিষ্টম্ভের বয়স অধিপতি ছন্দ, ক্ষত্রিয়ের বয়স ময়ন্দ ছন্দ, বিশ্বকর্মার বয়স পরমেষ্ঠী ছন্দ, মুধার অর্থাৎ মস্তকের ন্যায় উর্ধ্বে বিরাজিত দুলোকের বয়স প্রজাপতি ছন্দ (অর্থাৎ দুলোকের বয়স যত কাল, ততকালের বয়স প্রজাপতি ছন্দ)।–তাৎপর্য এই যে, নানাবিধ বয়সরূপা ও নানাবিধছন্দোরূপা তুমি। [এই মন্ত্রগুলির সাথে পরবর্তী কাণ্ডের ৩য় প্রপাঠকের ১ম অনুবাকের মন্ত্রগুলি সংশ্লিষ্ট] ॥৫॥
[সায়ণাচার্য বলেন–পঞ্চমেহনুবাকে …। তাবতা দ্বিতীয়চিতঃ সমাপ্তা। অথ ষষ্ঠে তৃতীয়স্যাং চিতৌ স্বয়মাতৃম্নাদ্যা উচ্যন্তে। অর্থাৎ–চতুর্থ ও পঞ্চম অনুবাক অবধি দ্বিতীয়া চিতি সমাপ্তে হয়েছে। অতঃপর এই ষষ্ঠ অনুবাকে স্বয়মাতৃদ্মা ইত্যাদি ইষ্টকার বিষয় কথিত হয়েছে]।
.
ষষ্ঠ অনুবাক
মন্ত্র- ইন্দ্রাগ্নী অব্যথমানামিষ্টকাং দৃংহতং যুবম। পৃষ্ঠেন দ্যাবাপৃথিবী অন্তরিক্ষং চ বি বাধতাম বিশ্বকর্মা ত্বা সাদয়ত্বন্তরিক্ষস্য পৃষ্ঠে ব্যচস্বতীং প্রথমস্বতীং ভাস্বতীং সূরিমতীমা যা দ্যাং ভাস্যা পৃথিবীমোর্বান্তরিক্ষমন্তরিক্ষং যচ্ছান্তরিক্ষং দৃংহান্তরিক্ষং মা হিংসীর্বিশ্বম্মৈ প্রাণায়াপনায় ব্যানায়োদানায় প্রতিষ্ঠায়ৈ চরিত্রায় বায়ুস্তাহভি পাতু মহ্যাঁ স্বস্ত্যা ছর্দিষা শম্ভমেন তয়া দেবতয়াহঙ্গিরস্বদৰা সীদ। রাসি প্রাচী দিঘিরাডসি দক্ষিণ দিকসম্রাডসি প্রতীচী দিস্বরাড়স্যুদীচী দিগধিপত্নসি বৃহতী দিগায়ুৰ্ম্মে পাহি প্রাণং মে পাহ্যপানং মে পাহি ব্যানং মে পাহি চক্ষুৰ্মে পাহি শ্ৰোত্ৰৎ মে পাহি মনো মে জিম্ব বাচং মে পিন্ধাহত্বানং মে পাহি জ্যোতিৰ্মে যচ্ছ ৷৬৷৷
মর্মার্থ- হে ইন্দ্রাগ্নী (অর্থাৎ ইন্দ্র ও অগ্নিদেব)! আপনারা অব্যথমানা অর্থাৎ ভঙ্গরহিতা স্বয়মাতৃদ্মা নামে আখ্যাতা ইষ্টককে দৃঢ় করুন, এবং এই ইষ্টকা আপন উপরিভাগে তিন লোক ব্যাপ্ত করুন (বাধমানেব)। হে স্বয়মাতৃগ্না! বিশ্বের সকল কর্মের সম্পাদক বিশ্বকর্মা প্রজাপতি তোমাকে অন্তরীক্ষের উপরে স্থাপন করুন। (কিরকম? না,) ব্যক্তিযুক্তা অর্থাৎ প্ৰকাশযুক্তা, প্রথস্বতী অর্থাৎ বিস্তারযুক্তা, ভাস্বতী অর্থাৎ দীপ্তিযুক্তা, সুরিমতী অর্থাৎ বিদ্বান ঋত্বিকগণের দ্বারা যুক্তা। এই হেন যে স্বয়মাতৃগ্না! তুমি সর্বতো প্রকাশ করেছ। সেইরকমেই তুমি পৃথিবীকে প্রকাশ করেছ ও বিস্তীর্ণ অন্তরীক্ষকে প্রকাশ করেছ। সেই রূপেই তুমি গন্ধর্ব অপ্সরাগণ ইত্যাদির ধারকরূপী অন্তরীক্ষলোককে সংযথ বা নিয়মিত করো; তাকে পরের দ্বারা কৃত উপদ্রবরহিতপূর্বক দৃঢ় করো এবং তুমি সেই অন্তরীক্ষকে হিংসা করো না। সকল প্রাণ, আপন, ব্যান ও উদান নামক বায়ুর বৃত্তি বা স্থিতি লাভের নিমিত্ত, আপন গৃহে প্রতিষ্ঠা লাভের নিমিত্ত, শাস্ত্রীয় আচারসম্পন্নতার নিমিত্ত প্রাণীগণের এই সকল বিষয়ের সিদ্ধির নিমিত্ত বায়ু তোমাকে রক্ষা করুন। (কিরকমে রক্ষা করবেন? না,) মহতী বোগমে সম্পত্তি (অর্থাৎ অলব্ধ বস্তুর লাভ ও লব্ধ বস্তুর রক্ষণরূপ সামর্থ্য) ও সুখকর দীপ্তিবিশেষের দ্বারা রক্ষা করবেন। তোমার স্বামীভূত যে দেবতা, তার দ্বারা অনুগৃহীতা হয়ে তুমি এই স্থানে স্থিরা হয়ে উপবেশন করো, যেমন অঙ্গিরা ঋষিগণ কর্তৃক চয়ন (অগ্নিচয়ন) অনুষ্ঠানে স্থিরা হয়ে অবস্থান করেছিলে। হে ইষ্টকা! তুমি রাজ্ঞীরূপে (রাজমানা) পূর্বদিকরূপা, বিরাটরূপে (বিবিধরূপে রাজামানা) দক্ষিণদিকরূপা, সম্রাটরূপে (অর্থাৎ সম্যক্ রাজমানা) পশ্চিমদিকরূপা, স্বরাষ্ট্রপে (স্বয়ং রাজামানা) উত্তরদিকরূপা ও অধিপত্নীরূপে উধ্বদিকরূপা। হে ইষ্টকা! আমার আয়ুকে রক্ষা করো (মদীয়মায়ুঃ পাহি); সেইরকমে আমার প্রাণকে রক্ষা করো, আমার অপানকে রক্ষা করো, আমার ব্যানকে রক্ষা করো, আমার চক্ষুদ্বয়কে রক্ষা করো, আমার শ্রোতদ্বয়কে রক্ষা করো। আমার মন ও বাক্যের প্রীতি বিধান করা; এবং আমার জীবনস্বরূপ আত্মাকে রক্ষা করো। আমাকে জ্যোতি দান করো। [এই মন্ত্রগুলির সাথে পরবর্তী কাণ্ডের ৩য় প্রপাঠকের ২য় অনুবাকের কতকগুলি মন্ত্র সংশ্লিষ্ট ] ॥৬॥
[সায়ণাচার্য বলেন-সপ্তমে বৃহত্যাখ্যা ইষ্টকা উচ্যন্তে। অর্থাৎ–এই সপ্তম অনুবাকে বৃহতী নামে। আখ্যাত ইষ্টকার কথা বলা হয়েছে।]
.
সপ্তম অনুবাক
মন্ত্র- মা ছন্দঃ প্ৰমা ছন্দঃ প্রতিমা ছন্দোহীবিচ্ছন্দঃ পঙক্তিচ্ছল উষ্ণিহা ছন্দো বৃহতী ছন্দোনুষ্ঠুছন্দো বিরাচ্ছন্দো গায়ত্রী ছন্দস্ত্রিষ্টুপছন্দো জগতী ছন্দঃ পৃথিবী ছন্দাহন্তরিক্ষং ছন্দো দ্যৌচ্ছন্দঃ সমাচ্ছন্দো নক্ষত্রাণি ছন্দো মনচ্ছলো বাছন্দঃ কৃষিচ্ছন্দো হিরণ্যং ছন্দো গৌচ্ছন্দেহজা ছন্দোহাচ্ছন্দ। অগ্নিৰ্দেবতা বাতো দেবতা সূর্যো দেবতা চন্দ্রমা দেবতা বসবো দেবতা রুদ্রা দেবতাহদিত্যা দেবতা বিশ্বে দেবা দেবতা মরুততা দেবতা বৃহস্পতি বেতেন্দ্রো দেবতা বরুণো দেবতা মূর্ধাহসি রাড়বাহসি ধরুণা যসি যমিত্রীষে ত্বোর্জে ত্ত্বা কৃষ্যে ত্বা ক্ষেমায় ত্বা যন্ত্রী রাজ্ৰবাহসি ধরণী ধসি ধরিত্রায়ুষে ত্ব বর্ডসে স্বেীজসে ত্বা বলায় ত্ব ॥৭॥
মর্মার্থ- হে ইষ্টকা! তুমি মা নামক ছন্দোরূপা; সেইরকমে তুমি প্রমা ও প্রতিমা নামক দুই ছন্দোরূপা। হে ইষ্টকা! তুমি পংক্তি ছন্দোরূপা, উষ্ণি ছন্দোরূপা বৃহতী ছন্দোরূপা, অনুষ্টুপ ছন্দোরূপা, গায়ত্রী ছন্দোরূপা, ত্রিষ্টুপ ছন্দোরূপা, ও জগতী ছন্দোরূপা। তুমি পৃথিবী, অন্তরীক্ষ ও লেকের ছন্দোরূপা। তুমি সমা অর্থাৎ সম্বৎসরের ছন্দোরূপা; এবং তুমি নক্ষত্রসমূহের ছন্দোরূপা। তুমি বাক্, কৃষি, হিরণ্য, গৌ, ও অজার ছন্দোরূপা। তুমি অগ্নিদেবতা, বায়ুদেবতা, সূর্যদেবতা, বসুবর্গ-দেবতা, রুদ্রবর্গ-দেবতা, আদিত্যবর্গ-দেবতা, বিশ্বদেববর্গ-দেবতা, মরুত্বর্গ-দেবতা, বৃহস্পতি-দেবতা, ইন্দ্রদেবতা, বরুণ দেবতা, ইত্যাদির ছন্দোরূপা। হে ইষ্টকা! তুমি মূধার (মস্তকের) ন্যায় (উচ্চভাবে) শোভিত বা রাজমানা; তুমি ধ্ৰুবা অর্থাৎ স্থিরা ও ধারণের হেতুভূতা; তুমি স্বয়ং সংযত হয়ে সকলের সংযমনকারিণী। এই রকমে বলধারণ কৃষিকর্ম ও ক্ষেমের (অর্থাৎ লব্ধ বস্তুর রক্ষার) নিমিত্ত তোমার উপধান করছি। হে ইষ্টকা! তুমি সকলের নিয়মকারিণী ও প্রকাশযুক্তা, স্থিরা ও সকলের ধারণকারিণী, তুমি ধারিকা ও ভূমিরূপা বলে তোমার উপাধান করছি। তুমি অন্নরপা বলে তোমার উপাধান করছি। তুমি আয়ু-বৃদ্ধিকারিণী বলে তোমার উপধান করছি। তুমি কান্তিরূপা, তাই কান্তির নিমিত্ত তোমার উপধান করছি। তুমি ওজঃ, তাই বলের নিমিত্ত তোমার উপধান করছি। তুমি তেজঃ, তাই তেজকর্মের নিমিত্ত তোমার উপধান করছি। [এই মন্ত্রগুলি পরবর্তী কাণ্ডের ৩য় প্রপাঠকের ২য় অনুবাকের কতকগুলি মন্ত্রের সাথে সংশ্লিষ্ট]। ৭।
[সায়ণাচার্য বলেন–সপ্তমেহনুবাকে…। তাবতা তৃতীয়া চিতিঃ সমাপ্তা। অথষ্টমে চতুর্থাং চিতাবক্ষ্ম য়াস্তোমীয়াখ্যাস্বিষ্টকাসু কাশিদ্যুচ্যন্তে। অর্থাৎ–সপ্তম অনুবাক অবধি তৃতীয়া চিতি সমাপ্ত। এই অষ্টম অনুবাকে চতুর্থ চিতি সম্পর্কিত অশ্লয়াস্তোমীয়া নামক ইষ্টকার কথা উক্ত হয়েছে।]
.
অষ্টম অনুবাক
মন্ত্র- আশুখ্রিবৃত্তান্তঃ পঞ্চদশশা ব্যোম সপ্তদশঃ প্রতুৰ্ত্তিব্রষ্টাদশস্তপো নবদেশোহভিবর্তঃ সবিংশো ধরুণ একবিংশো বর্দো দ্বাবিংশঃ সম্ভরণস্ত্রয়োবিংশো যোনিশ্চতুর্বিংশো গর্ভাঃ পঞ্চবিংশ ওজস্ক্রিণবঃ ক্রতুরেকত্রিংশঃ প্রতিষ্ঠা এয়স্ত্রিংশো ব্ৰধস্য বিষ্টপং চতুস্ত্রিংশো নাকঃ ষট্ত্রিংশশা বিবর্ভোহাচত্বারিংশা ধর্রশ্চতুষ্টোমঃ ॥ ৮৷৷
মর্মার্থ– এই মন্ত্রে ইষ্টকাকে স্তোমরূপে (স্তুতিমন্ত্ররূপে গ্রহণ করা হয়েছে। ত্রিবৃৎ, পঞ্চদশ, সপ্তদশ, অষ্টাদশ, নবদশ ইত্যাদি শব্দের দ্বারা স্তোমবিশেষকে লক্ষ্য করা হয়েছে। (স্তোমবিশেষবাচিনঃ)। সামগুলির আবৃত্তির প্রকার (ভেদ) অনুসারে ত্রিবৃৎ ইত্যাদি স্তোম নিষ্পন্ন হয়। এই অনুবাকে ত্রিবৃৎ হতে চতুষ্টোম পর্যন্ত অষ্টাদশ সংখ্যক স্তোমবিশেষ কথিত হয়েছে (স্তোমবিশেষা আন্নাত। আশু ভাস্ত ইত্যাদি স্তোমের বিশেষণ বাচক শব্দ)। এগুলির মধ্যে কোনটি গুণবাচক (গুণবাচীনি), কোনটি বা দ্রব্যবাচক (দ্রব্যবাচীনি)। এই স্থলে গুণসম্বন্ধী বা দ্রব্যাত্মক সম্পর্কিত ভাবে স্তোমগুলির উপচার করা হয়েছে, এবং সেই সেই স্তোমরূপত্ব সম্পন্ন ইষ্টকার প্রশাংসা করা হয়েছে (তত্তদিষ্টকায়াঃ প্রশংসাৰ্থমুপন্যসতে)। যেমন–হে ইষ্টকা! যে ত্রিবৃৎ স্তোম শীঘ্র-গুণোপেতা (অর্থাৎ শীঘ্র-গুণযুক্তা), তুমি সেই ত্রিবৃৎ স্তোমরূপা। হে ইষ্টকা! যে পঞ্চদশ স্তোম ভান্তো অর্থাৎ ভাসমান-গুণেপেতা, তুমি সেই পঞ্চদশ স্তোমরূপা। হে ইষ্টকা! যে সপ্তদশ স্তোম ব্যোম বা আকাশ (বৎ)-গুণোপেতা, তুমি সেই সপ্তদশ স্তোমরূপা। হে ইষ্টকা! যে অষ্টাদশ স্তোম প্রত্যুর্তি অর্থাৎ প্রকৃষ্ট শীঘ্র গমনকারিণী-গুণোপেতা, তুমি সেই অষ্টাদশ স্তোমরূপা। হে ইষ্টকা! যে নবদশ স্তোম তপস্যা-গুণোপেতা, তুমি সেই নবদশ স্তোমরূপা। হে ইষ্টকা! যে সবিংশ (অর্থাৎ বিংশতী সংখ্যার সাথে বিদ্যমান) স্তোম অভিবর্ত নামক সামবিশেষের গুণোপেতা, তুমি সেই সবিংশ স্তোমরূপা। হে ইষ্টকা! যে একবিংশ ডোম বর্চো অর্থাৎ বলহেতুকরী গুণোপেতা, তুমি সেই একবিংশ স্তোমরূপা।–এইভাবে ইষ্টকাকে দ্বাবিংশ (২২), এয়োবিংশ (২৩), চতুর্বিংশ (২৪), পঞ্চবিংশ (২৫), ব্রিণব বা উনত্রিংশ (২৯), একত্রিংশ (৩১), এয়ঃ-ত্রিংশ (৩৩), চতুঃ-ত্রিংশ (৩৪), ষট্ত্রিংশ (৩৬), ও অষ্টচত্বারিংশ (৪৮) পর্যন্ত অর্থাৎ চতুষ্টোম পর্যন্ত স্তোমবিশেষরূপা রূপে গ্রহণ করা হয়েছে। এগুলি গুণ বা দ্রব্যাত্মকতা সম্পর্কে যথাক্রমে বলা হয়েছে–সম্ভরণ অর্থাৎ সম্যক পোষণগুণযুক্তা, যোনিঃ অর্থাৎ প্রজা-উৎপাদন গুণযুক্তা, গর্ভ-গুণযুক্তা, ওজঃ অর্থাৎ অষ্টমধাতু গুণযুক্তা, ঋতু অর্থাৎ জ্যোতিষ্টোম ইত্যাদি ক্রতুর গুণযুক্তা, প্রতিষ্ঠা অর্থাৎ স্থিতিহেতুকরী গুণযুক্তা, ব্ৰধস্য বিষ্টপং অর্থাৎ অদিতির নিবাসস্থানরূপ গুণোপেতা, নাকঃ অর্থাৎ স্বৰ্গনামক ভোগভূমির গুণযুক্তা, বিবর্তঃ অর্থাৎ বিপরীতভাবে বর্তমান হওয়ার গুণযুক্তা এবং ধর্তো অর্থাৎ ধারক গুণযুক্তা। [এই মন্ত্রগুলির সাথে পরবর্তী কাণ্ডের ৩য় প্রপাঠকের ৩য় অনুবাকের মন্ত্রগুলি সংশ্লিষ্ট] ॥৮
[সায়ণাচার্য বলেন–নবমেহবশিষ্টান্তা উচ্যন্তে। অর্থাৎ অষ্টম অনুবাকে কতকগুলি অক্ষয়াস্তোমীয় ইষ্টকার কথা বলা হয়েছে। অতঃপর এই নকম অনুবাকে অবশিষ্ট অশ্লয়াস্তোমীয় ইষ্টকার কথা বলা হচ্ছে]
.
নবম অনুবাক
মন্ত্র- অগ্নের্ভাগগাহসি দীক্ষায় আধিপত্যং ব্ৰহ্ম স্পৃতং ত্রিবৃৎস্তোম ইন্দ্রস্য ভাগোহসি বিষ্ণোরাধিপত্যং ক্ষত্ৰং স্পৃতং পঞ্চদশঃ স্তোমো নৃক্ষসাং ভাগগাহসি ধাতুরা ধিপত্যং জনি স্পৃতং সপ্তদশঃ স্তোমো মিত্রস্য ভাগগাহসি বরুণস্যাহধি পত্যং দিবো বৃষ্টিৰ্বৰ্তাঃ স্পতা একবিংশঃ তোমোহদিত্যৈ ভাগোহসি পূষ্ণ আধিপত্যমোজঃ ধৃতং ত্ৰিণঃ স্তোমো ৰসূনাং ভাগগাহসি রুদ্রাণামাধিপত্যং চতুম্পাৎ স্পৃত চতুর্বিংশঃ স্তোম আদিত্যানাং ভাগগাহসি মরুমাধিপত্যং গর্ভাঃ পৃঃ পঞ্চবিংশঃ স্তোমো দেবস্য সবিতুর্ভাগগাহসি বৃহম্পতেরাধিপত্যং সমীচীৰ্দিশঃ পৃশ্চতুষ্টোমঃ তোমো যাবানাং ভাগোহস্যবানামাধিপত্যং প্রজাঃ শৃশ্চতুশ্চত্বারিংশঃ স্তোম ঋভূণাং ভাগগাহসি বিশেষাং দেবানা মাধিপত্যং ভূতং নিশান্তং স্পৃতং ত্রয়স্ত্রিংশঃ স্তোমঃ ॥৯৷৷
মর্মার্থ- হে ইষ্টকা! এই যে হবিঃ-লক্ষণযুক্ত অগ্নির ভাগ, এই যে দীক্ষাদেবতার আধিপত্য বা স্বামিত্ব, এই যে দেবগণের প্রীতিকর মন্ত্রসমূহ বা ব্রাহ্মণজাতি (ব্রাহ্মণজাতির্বা) এবং এই যে ত্রিবৃৎ নামক স্তোমবিশেষ,–এ সবই তুমি। হে ইষ্টকা! ইন্দ্রের এই যে ভাগরূপ হবিঃবিশেষ, এই যে পরমেশ্বররূপে বিষ্ণুর আধিপত্য, এই যে প্রীতিহেতুভূত ক্ষত্রিয়ের বল বা ক্ষত্রিয় জাতি, এই যে পঞ্চদশ নামে আখ্যাত স্তোমবিশেষ, –এ সবই তুমি। এই রকমে, ঋত্বিকগণের গো-ইত্যাদি যে দক্ষিণারূপ ভাগ, প্রজাপতির যে আধিপত্য, ধৃতং অর্থাৎ প্রীতিকর জনিং অর্থাৎ জননশীল যে অন্ন,এবং সপ্তদশ নামে আখ্যাত যে স্তোম,-এ সবই তুমি। মিত্রের যে ভাগ, বরুণের যে আধিপত্য, প্রীতির কারণরূপ যে বায়ুবৃন্দ ও দুলোক হতে আগত বৃষ্টি, এবং একবিংশ নামে আখ্যাত যে স্তোম,–এ সবই তুমি। অদিতির যে ভাগ, পূষার যে আধিপত্য, অষ্টম ধাতু অর্থাৎ ওজের যে প্রীতিকারিতা এবং ব্রিণব অর্থাৎ ঊনত্রিংশ নামে আখ্যাত যে স্তেম,–এ সবই তুমি। বসুগণের যে ভাগ, রুদ্রগণের যে আধিপত্য, প্রীতিহেতু যে চতুষ্পদ গো-ইত্যাদি পশু এবং চতুর্কিশ নামে আখ্যাত যে স্তোম,–এ সবই তুমি। আদিত্যসমূহের যা ভাগ, মরুৎগণের যা আধিপত্য, মনুষ্য (দ্বিপদা) ও পশুগণের (চতুস্পদা) উদরগতা যে প্রীতি বা তৃপ্তি, এবং পঞ্চবিংশ নামে আখ্যাত যে স্তোম,–এ সবই তুমি। সবিতা দেবতার যে ভাগ, বৃহস্পতি দেবতার যে আধিপত্য, প্রাণীগণের অনুকূলরূপে (প্রীতিকারকরূপে) অবস্থিত যে দিকসমূহ এবং চতুষ্টোম নামে আখ্যাত যে স্তোম,–এ সবই তুমি। হে ইষ্টকা! শুক্ল ও কৃষ্ণপক্ষযুক্ত মাসসমূহের যে ভাগ, অর্ধমাসের (অতথাবিধাদনা) যে আধিপত্য, প্রীতিহেতুকারক যে প্রজাগণ, ও চতুশ্চত্বারিংশ নামে অভিহিত যে স্তোম,–এ সবই তুমি। ঋভু নামক দেববিশেষের যে ভাগ, বিশ্ব দেবগণ নামক গণবিশেষের যে আধিপত্য, প্রীতিহেতুকরী নিষ্পন্ন যে গৃহ, ও ত্রয়স্তিংশ নামে আখ্যাত যে স্তোম, এ সবই তুমি। (এই সকল মন্ত্রবিশেষ ও দেশবিশেষের সহযোগে অক্ষয়াস্তোমীয় ইষ্টকাগুলির উপধান বিধিমন্ত্রবিশেষে। দেশবিশেষেষু চ সহোপধানং বিধীয়তে)। [এই মন্ত্রগুলির সাথে পরবর্তী কাণ্ডের ৩য় প্রপাঠকের ৪র্থ অনুবাকের মন্ত্রগুলি সংশ্লিষ্ট] ॥৯।
[সায়ণাচার্য বলেন–দশমে সৃষ্টিশব্দাভিধেয়া ইষ্টকা উচ্যন্তে। অর্থাৎ–এই দশম অনুবাকে সৃষ্টি শব্দে অভিহিতা ইষ্টকার বিষয় কথিত হচ্ছে।]
.
দশম অনুবাক
মন্ত্র- একয়াহস্তুত প্রজা অধীয়ন্ত প্রজাপতিরধিপতিরাসীত্তিসৃভিরস্তুবত ব্রহ্মাসৃজ্যত ব্ৰহ্মণস্পতিরধিপতিরাসীৎ পঞ্চভিরস্তুবত ভূন্যসৃজ্য ত ভূতনাং পতি রধিপতিরাসীৎ সপ্তভিরস্তুত সপ্তর্ষয়োহসৃজ্যন্ত ধাতাহধিপতি রাসীন্নভিরবত পিতবোহ জ্যাদিতিরধিপত্ন্যাসীদেকাদশভিরবতৰ্ত্তবো হসৃজ্যত্যহত্তবোহধিপতিরাসীৎ এয়োদশভিরস্তুত মাসা অসৃজ্যন্ত সম্বৎসরোহধিপতিঃ আসীৎ পঞ্চদশভিরম্ভবত ক্ষত্রমসৃজ্যতেন্দ্রোহধিপতি রাসীৎ সপ্তদশভিরবত পশৰাহসুজ্যন্ত বৃহম্পতিরধিপতিরাসীন্নবদশভি রস্তুবত শূদ্ৰাৰ্যাবসৃজ্যেতামহোরাত্রে অধিপত্নী আস্তামেকাবিংশত্যাহবতৈ কশফাঃ পশবোহসৃজ্যন্ত বরুণোহধিপতিরাসীত্রয়োবিংশত্যাহস্তুত, ক্ষুদ্রাঃ পশবোহসৃজ্যন্ত পূষাধিপতিরাসীৎ পঞ্চবিংশত্যাহস্তুবতাহরণ্যাঃ পশবোহ সৃজ্যন্ত বায়ুরধিপতিরাসীৎ সপ্তবিংশত্যাহস্তুবত দ্যাবাপৃথিবী বি ঐতাং বসবো রুদ্ৰা আদিত্য অনু ব্যায়ন্তেযামাধিপত্যমাসীন্নববিংশত্যাহস্তুত বনস্পতয়োহ সৃজ্যন্ত সোমোহধিপতিরাসীদেকত্রিংশতাহস্তুত প্রজা অসৃজ্যন্ত যাবানাং চাষাবানাং চাহধিপত্যমাসীত্রয়স্ত্রিংশতাংস্তবত ভূন্যশাম্য প্রজাপতিঃ পরমেষ্ঠ্যধিপতিরাসীৎ৷৷ ১০৷৷
মর্মার্থ- পুরাকালে মহর্ষিগণ যাগানুষ্ঠানের সময়ে একটি স্তোত্রিয় ঋকের (অর্থাৎ স্তোমাত্মক মন্ত্রের) দ্বারা স্তুতি করেছিলেন, তার শক্তিতে (সামর্থ্যাৎ) প্রজাগণ উৎপন্ন হয়েছিল। তখন প্রজাপতি সেই প্রজাগণের অধিপতি হলেন। অতঃপর কোন সময়ে তারা (মহর্ষিগণ) তিনটি ঋকের দ্বারা (তিসৃভিঃ) স্তুতি করেছিলেন; তার শক্তিতে ব্রাহ্মণজাতির সৃষ্টি হয়েছিল; তখন ব্ৰহ্মণস্পতি তাদের অধিপতি হলেন। এই ভাবে মহর্ষিগণ পাঁচটি ঋকের দ্বারা স্তুতি করেছিলেন; তার শক্তিতে প্রাণীগণের সৃষ্টি হয়েছিল; তখন ভূতসমূহের পতি তাদের অধিপতি হলেন। (ভূতগণের পতি কোন দেবতা বিশেষ। অন্যত্র কথিত আছে-ভূতানাং পতয়ে স্বাহা। সেই অনুসারে ভূতজাত অর্থাৎ প্রাণীমাত্রের পতি বা অধিপতি হলেন এই দেবতা)। মহর্ষিগণ তারপর সাতটি ঋকের দ্বারা স্তুতি করেছিলেন; তার শক্তিতে সপ্তর্ষিগণ সৃষ্ট হয়েছিলেন; তখন ধাতা (জগৎস্রষ্টা) তাঁদের অধিপতি হলেন।–এইভাবে সর্বত্র যোজনীয়, যেমন–নয়টি ঋকের দ্বারা স্তুতিতে যে পিতৃগণ সৃষ্ট হয়েছিলেন, তাঁদের অধিপতি হলেন অদিতি বা ভূমি; একাদশ ঋকে ঋতুসমূহ এবং তাঁদের অধিপতি হলেন আর্তব অর্থাৎ ঋতুপালক কোন দেবতা; ত্রয়োদশ ঋকে মাসসমূহ, এবং তাদের অধিপতি সম্বৎসর; পঞ্চদশ ঋকে ক্ষত্র বা ক্ষত্রিয়জাতি, এবং তাঁদের অধিপতি ইন্দ্রদেব; সপ্তদশ ঋকে পশুগণের সৃষ্টি, এবং তাদের অধিপতি বৃহস্পতি দেবতা; ঊনবিংশ ঋকে শূদ্র ও বৈশ্য নামে জাতিদ্বয়, এবং তাদের অধিপতি অহদেবতা ও রাত্রিদেবতা; (এই জাতিদ্বয়ের অধিপত্নী বা স্বামীরূপে অহোরাত্রি দেবতা পরিগণিত); একবিংশ ঋকে একখুরবিশিষ্ট পশুসমূহ, এবং বরুণ তাদের অধিপতি; ত্ৰয়োবিংশ ঋকের দ্বারা স্তুতির শক্তিতে ক্ষুদ্র পশুসমূহ সৃষ্ট হয়, এবং পূষা তাদের অধিপতি হন; এইভাবে পঞ্চবিংশ ঋকে আরণ্য পশুসমূহের উৎপত্তি, এবং তাদের অধিপতি হলেন বায়ু; সপ্তবিংশ ঋকের দ্বারা স্তুতির সামর্থ্যে পূর্বে সংযুক্তভাবে অবস্থিতা দ্যাবাপৃথিবী দুলোক ও ভূলোক রূপে বিভক্ত হয়, এবং বসুগণ রুদ্রবর্গ ও আদিত্যসমূহ তাদের অধিপতি হন; ঊনত্রিংশ ঋকে বনস্পতিসমূহ সৃজিত হয়, এবং তাদের অধিপতি হন সোম; একত্রিংশ ঋকে যে প্রজাগণ সৃষ্টি হন, তাদের অধিপতি হলেন মাস ও অর্ধমাসের দেবতা, (যাবা অবা), অর্থাৎ এই উভয় দেবতা ঐ প্রজাগণের অধিপতি হয়েছিলেন। মহর্ষিগণ অতঃপর ত্রয়স্ত্রিংশ ঋকের দ্বারা স্তুতি করেছিলেন, তার সামর্থ্যে সৃষ্ট অশান্ত প্রাণীগণকে পরমে অর্থাৎ সত্যলোকে স্থিত (পরমেষ্ঠী) প্রজাপতি উপদ্রবরহিত করেন এবং তিনি তাদের অধিপতি হন। ১০৷৷
[সায়ণাচার্য বলেন–একাদশে ব্যষ্টিনামিকা উচ্যন্তে। অর্থাৎ, এই একাদশ অনুবাকে বৃষ্টি নামে অভিহিতা ইষ্টকার বিষয় কথিত হয়েছে।]
.
একাদশ অনুবাক
মন্ত্র- ইয়মেব সা যা প্রথম ব্যৌচ্ছদন্তরস্যাং চরতি প্রবিষ্টা। বধূর্জজান নবগজ্জনিত্রী জয় এনাং মহিমানঃ সচন্তে। ছন্দস্বতী উষসা পেপিশানে সমানং যোনিমনুসঞ্চরন্তী। সূৰ্য্যপত্নী বি চরতঃ প্রজানতী কেতুং কৃনে অজরে ভূরিরেতসা। ঋতস্য পন্থমনু তিস্র আহগুস্ত্রয়ো ঘৰ্ম্মাসে অনু জ্যোতিষাংগুঃ। প্রজামেকা রক্ষ…মেকা ব্রতমেকা রক্ষতি দেবয়ুনাম। চতুষ্টোমো অভবদ্যা তুরীয়া যজ্ঞস্য পক্ষাবৃষয়ো ভবন্তী। গায়ত্ৰীং ত্রিভং জগতীমনুষ্ঠুভং বৃহদৰ্ক যুঞ্জানাঃ সুবরাহভরামিদ। পঞ্চভিৰ্দ্ধাতা বি দধাবিদং যত্তাসাং স্বসূরজনয়ৎ পঞ্চপঞ্চ। তাসামু যন্তি প্রযবেণ পঞ্চ নানা রূপানি ক্রতবো বসানাঃ ত্রিংশৎ স্বসার উপ যন্তি নিভৃতং সমানং কেতুং প্রতিমুঞ্চমানাঃ। ঋতুংস্ততে কবয়ঃ প্রজানতীৰ্ম্মধ্যেছন্দসঃ পরি যন্তি ভাস্বতীঃ। জ্যোতিষ্মতী প্রতি মুঞ্চতে নভো রাত্রী দেবী সূৰ্য্যস্য ব্ৰতানি। বি পশ্যন্তি পশবো জায়মানা নানারূপা মাতুরস্যা উপস্থে। একাষ্টকা তপসা তপ্যমানা জজান গর্ভং মহিমামিম। তেন দস্যু ব্যসহস্ত দেবা হতাহসুরাণামভবচ্ছচীভিঃ। অনানুজামনুজাং মামক সত্যং বদন্ত্যন্বিচ্ছ এতৎ। ভূয়াস অস্য সুমতৌ যথা যুমন্যা বো অন্যামতি মা প্র যুক্ত। অভূম সুমতৌ বিশ্ববেদা আষ্ট প্রতিষ্ঠামবিদদ্ধি গাধ। ভূয়াসমস্য সুমতৌ যথা যুয়মন্যা বো অন্যামতি মা প্র যুক্ত। পঞ্চ বুষ্টীরনু পঞ্চ দোহা গাং পঞ্চমীমৃতবোহনু পঞ্চ। পঞ্চ দিশঃ পঞ্চদশেন কুপ্তাঃ সমানমূত্নীরভি লোকমেক। ঋতস্য গর্ভঃ প্রথমা বুযুষ্যপামেকা মহিমানং বিভৰ্ত্তি। সূৰ্য্যস্যৈকা চরতি নিষ্কৃতেষু ধৰ্মস্যৈকা সবিতৈকাং নি যচ্ছতি। যা প্রথম বোচ্ছিৎ সা ধেনুরভবদ্যমে। সা নঃ পয়স্বতী ধুক্ষোত্তরামুত্তরাং সমাম; শুক্ৰষর্ভ নভসা জ্যোতিষাহাবিশ্বরূপা শবলীরগ্নিকেতুঃ। সমানমর্থং স্বপস্যমানা বিভ্ৰতী জরামজর উষ আহগাঃ। ঋতূনাং পত্নী প্রথমেয়মাহগাদহাং নেত্রী জনিত্রী প্রজানা। একা সতী বহুধোযো বুচ্ছস্যজীর্ণা ত্বং জরয়সি সৰ্বমন্যৎ ॥১১।
মর্মার্থ- আদি সৃষ্টিকালে প্রথম যে প্রভাতকাল, এই উপধীয়মানা ইষ্টকা তথাবিধ (অর্থাৎ ব্যষ্টি বা প্রভাতরূপা)। সেই সৃষ্টিকালীন প্রথমা ঝুষ্টি (বা প্রভাত) আদিত্যে অনুপ্রবিষ্টা হয়ে এই পৃথিবীর দৈনন্দিন প্রভাতরূপে বিচরণ করছে। (তার দৃষ্টান্ত)–নববিবাহবতী বধূ যেমন উত্তরোত্তর সন্তানের জননী হন, সেইরকমে এই বৃষ্টি (অর্থাৎ প্রভাত) উত্তরোত্তর প্রভাতসমূহের নিম্পাদিকা। অগ্নি, সূর্য ও চন্দ্র প্রমুখ ত্রয়স্ত্রিসংখ্যক (মহিমময় দেবতা) এই ঝুষ্টির সম্যক্ বিস্তার করেছেন; অর্থাৎ এই তিন দেবতার প্রকাশের অনুগ্রহে (প্রকাশকানুগ্রহাৎ) এর প্রভাতরূপত্ব নিষ্পন্ন হয়েছে। আমি এই রকম ঝুষ্টিরূপা ইষ্টকার উপধান করছি। সৃষ্টিকালীন প্রথম উষা (পূর্বোক্ত মন্ত্রগত উষা) ও প্রতিদিনের সঞ্চারিণী ঊষা (এটি পূর্বের মন্ত্রে উক্তা) এই উভয়ে মিলিত হয়ে নানাভাবে বিচরণ করছেন। রাত্রির মতো প্রলয়কালে জগৎ যেমন তিরোহিত হয়, আবার দিবসের (মহাপ্রভাতের) আর্বিভাবের মতো যেমন সৃষ্টির সূচনা হয়, সেইরকম এই দুই ঊষার একটির দ্বারা ব্যষ্টিতে (প্রভাতে) বিচরণ তথা সৃষ্টির সূচনা হয় অপরটির দ্বারা প্রলয়রূপা রাত্রির অন্ধকার দূরীকৃত হয়। (কিরকম সেই উষাদ্বয়? না, তাঁরা ছন্দোযুক্তা (অর্থাৎ মন্ত্রের দ্বারা স্মৃয়মানা), আত্যন্তিকরূপে প্রকাশমানা, কালসামান্যে (অর্থাৎ সমকালে) উভয়ে সৃষ্টমানা, উভয়ে সূর্যের পত্নী (সূর্যপত্নী), উভয়ে স্বয়ং দেবতারূপত্বের দ্বারা প্রজ্ঞানবতী, (অর্থাৎ তারা নিজেদের দেবত্ব সম্পর্কে জ্ঞানসম্পন্না), উভয়েই প্রকাশ প্রদানের দ্বারা প্রাণীগণের রূপজ্ঞানের জনিকা (অর্থাৎ রাত্রির অন্ধকার দূর করে প্রভাত ও দিবসের আলোক বিস্তার পূর্বক প্রাণীগণের মধ্যে সকল রূপ সন্দর্শনের দ্বারা জ্ঞানার্জনের সহায়িকা), কখনও জরারহিতা, ও প্রভূত রেতস্কা (অর্থাৎ বহু ব্যাপারের কারণভূতা)।–তিনটি উষা (তিস্র উষস) যজ্ঞরক্ষার্থে ব্যবস্থিতা; তারা দীপ্তিরূপ অগ্নি, চন্দ্র ও আদিত্যের প্রকাশ-প্রদানের দ্বারা যজ্ঞমার্গ (যজ্ঞের পথ) প্রাপ্ত হয়েছেন। তিন উষাদেবীর মধ্যে একজনা যজমানের প্রজা রক্ষা করে থাকেন, একজনা যজমানের বল রক্ষা করে থাকে, এবং একজন দেবতাকাঙ্ক্ষী (দেবানাত্মন ইচ্ছতাং) যজমানের ব্রত অর্থাৎ কর্মানুষ্ঠান রক্ষা করে থাকেন। যদিও উষা একই, তথাপি জগৎকে রক্ষার নিমিত্ত যোগ-ঐশ্বর্য ইত্যাদির দ্বারা অনেক শরীর স্বীকার করে (গ্রহণপূর্বক) বহু উষা হয়ে থাকেন। এই বহুর মধ্যে যে যিনি চতুথা উষা, তিনি স্তোমচতুষ্টয়যুক্ত অগ্নিস্টোমরূপা। (কিরকম? না,) যজ্ঞের দুটি পক্ষরূপে যজ্ঞের পূর্ব ও পশ্চিমরূপ দুটি অঙ্গ (অবয়ব) সৃষ্টি করেছেন, সেইভাবে যজ্ঞনিম্পাদক ঋত্বিকগণকে সৃষ্টি করেছেন, এবং প্রৌঢ় (বৃহৎ) অর্চনরূপ স্তোত্র সম্পাদন করেছেন। গায়ত্রী ইত্যাদি চারজন দেবতা স্বর্গ ও তার ফলভূত কর্ম সর্বতোভাবে পালন করেছেন। জগতের যা কিছু আছে, সেই সকলের স্রষ্টা (ধাতা) প্রজাপতি পঞ্চ উষাদেবীর সহযোগে এই জগৎকে নির্মাণ করেছেন। সেই পঞ্চ উশা পঞ্চ পঞ্চ সংখ্যায় ভগ্নী (স্বসারঃ) সৃষ্টি করেছেন। প্রথম পঞ্চ মুখ্য উষা এবং তাঁদের পঞ্চবিংশতি সংখ্যকা ভগ্নী–এঁরা এক মাসের (ত্রিংশতি দিবসের) প্রতিপদ ইত্যাদি তিথিরূপা, অর্থাৎ ত্রিংশতি উষারূপে প্রকাশ লাভ করেছেন। সেই উষাগুলির সাথে মিশ্রিত হয়ে মুখ্য পঞ্চ উষা ক্রতু নিষ্পন্ন করে থাকেন এবং এইভাবে তারা ক্রতুর নানারকম রূপ লাভ করেছেন। তাদের মধ্যে একজনা দৈনন্দিন অগ্নিহোত্র যজ্ঞ নিষ্পন করছেন (দৈনন্দিনমগ্নিহোত্রং নিম্পাদয়তি); অন্য দুজনার মধ্যে একজন দর্শ ও একজন পূর্ণমাস যজ্ঞ নিষ্পন্ন করছেন (দর্শপূর্ণমাসৌ নিম্পাদয়তঃ); অন্য দুজনার মধ্যে একজন উপসথ্যদিনকৃত্য (ঔপসথ্যদিনকৃতং) ও একজন সুত্যা-দিনকৃত্য সম্পন্ন করছেন। মাসগত ত্রিংশতি তিথিরূপে ত্রিংশতি সংখ্যকা ভগ্নীরূপা উষাদেবী অজস্র অগ্নিহোত্র ইত্যাদি কর্ম প্রাপ্ত হচ্ছেন। (কিরকম? না,) তারা সমান প্রকাশরূপ চিহ্ন ধারণ করেছেন (কঞ্চকবদ্ধারিয়ন্ত্য), তারা বিদ্বান পুরুষের ন্যায় সেই সেই দিনে সম্পাদনীয় (কর্ম) জ্ঞাত হয়ে স্বয়ং পুনঃ পুনঃ আবর্তনের দ্বারা বসন্ত ইত্যাদি ঋতুসমূহ সম্পন্ন করছেন এবং সূর্যের পরিপার্শ্বে প্রকাশমানা হয়ে অবস্থান করছেন। এই উষা নক্ষত্রযুক্ত হওয়ার কারণে জ্যোতিষ্মতী (জ্যোতীরূপৈক্ষত্রৈযুক্তত্বাৎ); রাত্রির শেষ ও সূর্যোদয়ের পূর্বভাবিনী হওয়ার কারণে রাত্রিরূপাও দীপ্যামানা। এই উষা আকাশস্থ সূর্যের রশ্মিজালসমূহ কঞ্জুকের (কাঁচুলীর) ন্যায় স্বীকার (ধারণ) করছেন। এই উষা নানারূপ গো-মহিষ ইত্যাদি বিভিন্ন পশুগণকে জন্মলাভ সদৃশ নিদ্রা হতে জাগ্রত হয়ে মাতৃরূপা পৃথিবীর ক্রোড়ে অর্থাৎ অরণ্যে গমন ইত্যাদি নানা ব্যবহার অবলোকন করছে; (অর্থাৎ শিশু যেমন জন্মলাভ করে মাতৃক্রোড়ে স্থিত হয়, পশুগণও রাত্রির অবসানে নিদ্রা হতে জাগরণ পূর্বক পৃথিবীর ক্রোড়ে গমন করছে)। মাঘমাসের কৃষ্ণষ্টমী তিথি একাষ্টকা নামে কথিত। এই একাষ্টকা পুত্রের নিমিত্ত তপস্যা পূর্বক আপন গর্ভে মহিমময় ইন্দ্রকে উৎপাদন করেছেন। সেই ইন্দ্রের দ্বারা দেবগণ দস্যু-তস্কররূপ রাক্ষসগণকে বিশেষভাবে অভিভব (পরাভূত) করেছেন। সেই ইন্দ্ৰ আপন শক্তিতে অসুরগণের হন্তা হয়েছেন। হে একাষ্টকা দেবীগণ! আপনারা আমাকে (অর্থাৎ যজমানকে) অনুষ্ঠানে নিযুক্ত করুন (অর্থাৎ অনুষ্ঠানরহিত আমাকে অনুষ্ঠানযুক্ত করুন)। (কিরকমে? না,) তারা যেন আমাকে সত্য ধর্ম সম্পর্কে জ্ঞাত করে দেন, (অর্থাৎ তাঁরা যেন আমাকে হে যজমান! এইটি সত্য ধর্ম। এই রকম বলে প্রজ্ঞাপিত করে দেন)। হে একাষ্টকা দেবীগণ! আপনাদের প্রসাদে সৎ-মার্গাবলম্বী হয়ে আকাঙ্ক্ষিত (অপেক্ষিত) প্রার্থনা করছি। (কি সেই আকাঙ্ক্ষিত প্রার্থনা? না,)-হে একাষ্টকা দেবীগণ! আপনারা যেমন ইন্দ্রের কল্যাণবুদ্ধিতে স্থিতা হয়ে থাকেন, সেইভাবেই আমিও যেন ইন্দ্রের সম্যক অনুগ্রহচিত্তে স্থিত হই। আপনাদের মধ্যে কেউ যেমন একে অপরকে লঙ্ঘন করে কোন কর্ম করেন না, বরং পরস্পরের অনুকুলে কর্ম করেন, সেইরকম আমিও যেন ঋত্বিকগণের অনুকূলে কর্মযুক্ত হই (ব্যবহারযুক্তো ভূয়াসম)। যজমানরূপী আমার ভক্তিযুক্ত বুদ্ধিতে সর্ব জগৎ সম্পর্কে অভিজ্ঞ এই উষা স্থিতবতী হয়েছিলেন এবং আমার প্রতি অনুগ্রহে ব্যাপ্তবতী হয়েছিলেন। অগ্নিহোত, দর্শ, পূর্ণমাস, অবসথ্য ও সুত্য নামে আখ্যাত কর্মানিস্পাদিকা যে পঞ্চ মুখ্য উষার কথা পূর্বে কথিত হয়েছে, সেই উষা-পঞ্চকা হতে এই পঞ্চাত্মকা সব কিছু উৎপন্ন হয়েছে। (কি কি উৎপন্ন হয়েছে? না,) পঞ্চ দোহা উৎপন্নাঃ অর্থাৎ অন্ধকার (তমিস্রা), জ্যোৎস্না, সায়ংসন্ধ্যা, প্রাতঃসন্ধ্যা, ও দিবস–এই পঞ্চসংখ্যক দোহ উৎপন্না হয়েছে। এই পঞ্চ ঝুষ্টি হলো ঋতু অনুসারে পৃথিবীর পঞ্চবিধ নাম। যথা,-বসন্তে পৃথিবী পুষ্পবতী নামে খ্যাতা, গ্রীষ্মে তাপবতী নামে খ্যাতা, বর্ষা ঋতুতে বৃষ্টিমতী নামে খ্যাতা, শরতে জলপ্রসাদবতী (অর্থাৎ জলের নির্মলতা সম্পাদনকারিণী) নামে খ্যাতা, এবং হেমন্ত-শীতে (যুগ্মভাবে এক ঋতুতে) শৈত্যবতী নামে আখ্যাতা। এই পঞ্চ নামান্বিতা পৃথিবী ব্যষ্টি উৎপন্ন করছেন। সেইভাবেই ঝুষ্টি হতে পূর্ব ইত্যাদি পঞ্চসংখ্যক দিক (উত্তর-দক্ষিণ-পূর্ব-পশ্চিম-ঊর্ধ্ব) উৎপন্ন হয়েছে। সেইভাবেই পঞ্চদশ নামে আখ্যাত স্তোমের দ্বারা পঞ্চসংখ্যক স্তোত্রে ঝুষ্টির কথা ব্যক্ত হয়েছে। এই পঞ্চ ঝুষ্টি মুখ্য প্রকাশরূপ স্বভাব প্রাপ্ত হয়েছে, (মুখ্যস্বভাবশ্চ ঝুষ্টিং প্রকাশকত্ব)। এই রকমে ঝুষ্টিরূপা ইষ্টকার স্তুতি করা হয়েছে। পূর্ব কথিত পঞ্চসংখ্যকা মুখ্য উষার মধ্যে যিনি প্রথমা উষাকালরূপা, তিনি সত্যের গর্ভসদৃশী; তিনি আদিত্যের সাথে বর্তমান থাকেন। কোন এক উষা রশ্মির সহকারিণী হয়ে জলে মহিমা বিস্তার করছেন; তিনি গ্রীষ্মকালে রশ্মির দ্বারা জল। আনয়নপূর্বক মেঘের উদরে গর্ভরূপ মহত্ব পোষণ করছেন। অপর কোন এক উষা সূর্য-সম্বন্ধীয় সংস্কৃত (নির্মলীকৃত) প্রদেশে বিচরণ করে বর্তমান রয়েছেন। অপর কোন এক উষা দীপ্যমান অগ্নিকে প্রকাশ করছেন। আবার কোন এক উষাকে সবিতা তার দৈনন্দিন প্রকাশকারিত্বের দ্বারা নিয়মিত করছেন, অর্থাৎ সবিতা যেমনভাবে নিয়মিত উদয় ও অস্ত প্রাপ্ত হন, সেইভাবে উষাকেও নিয়মিত করে থাকেন। মুখ্য উষার মধ্যে যিনি প্রথমা, তিনি আলোক উৎপাদনের দ্বারা অন্ধকারকে বিদূরিত করছেন। সেই উষা যমের আধিপত্যে প্রতিষ্ঠিত এই ধেনুবৎ লোকে আলোক প্রদান করায় ধেনুর ন্যায় প্রীতিহেতুকরী। সেই হেন, হে উষা! ধেনু যেমন দুগ্ধ প্রদান করে, সেইভাবে আপনি আমাদের নিমিত্ত বৃষ্টিজলযুক্ত হয়ে সম্বৎসরব্যাপী নিরন্তর ঝুষ্টি ও আলোক প্রদান করুন (দোহনং কুরু)। যে উষা সকল প্রকাশ বা আলোকরূপে নক্ষত্রসমূহের মধ্যে শ্রেষ্ঠ, সেই উষা আকাশবর্তী আলোকের সাথে যুক্ত হয়ে এই স্থানে আগত হয়েছেন। (সেই উষা কেমন? না) সেই উষা বিশ্বরূপা, অর্থাৎ সকল রূপ প্রকাশকারিণী; সেই উষা শবলী বা মিশ্ৰবৰ্ণা, অর্থাৎ সূর্যোদয়ের পূর্বে সামান্য আলোকের সাথে অন্ধকারের লেশমাত্রযুক্তা; সেই উষা অগ্নিকেতু, অর্থাৎ অগ্নিহোত্রীগণ কর্তৃক প্রজ্বলিত অগ্নির কেতু বা ধ্বজা বা পতাকাস্বরূপা; সেই উষা সমানার্থে স্বপস্যমানা, অর্থাৎ সূর্যের সাথে সমান প্রয়োজনে অন্ধকার নিবারণরূপ শোভন ইচ্ছাকারিণী।–হে অজর উষা! আপনি বলীপলিত (বার্ধক্যহেতু শিথিল মাংস ও পৰু চুল) ইত্যাদি জরারহিত হয়েও সৃষ্টি ইত্যাদির আরম্ভকাল হতে চিরকাল অবস্থানরূপ (লক্ষণাং) জরা প্রাপ্ত হয়েছেন। অর্থাৎ সেই হেন উষারূপা এই ইষ্টকা (আমি যার উপধান করছি)। এই প্রথমা উষা এই কর্মে (যজ্ঞে) আগত হয়েছেন। (কিরকম উষা? না,) বসন্ত ইত্যাদি ঋতুগণের পালয়িত্রী, অর্থাৎ সদা আবর্তনের দ্বারা ঋতুসমূহকে সম্পন্ন করছেন; তিনি অহাং নেত্রী, অর্থাৎ নয়নের হেতুকরী আলোক প্রদানের দ্বারা দিবসের নিম্পাদিকা; তিনি জনিত্ৰী প্ৰজানাম, অর্থাৎ প্রজাগণের উৎপাদয়িত্রী-হে উষা! আপনি স্বরূপে এক হয়েও (স্বরূপেনৈক সতী) বহুপ্রকারা হয়ে অন্ধকার দূর করেন এবং আপনি অজীর্ণা হয়েও (অর্থাৎ স্বয়ং বলীপলিত ইত্যাদি জরারহিত হয়েও) সকল মনুষ্যের শরীর ইত্যাদিকে জীর্ণ করে থাকেন। [এই মন্ত্রের সাথে পরবর্তী কাণ্ডের ৩য় প্রপাঠকের ৪র্থ অনুবাকের না বা ইদং…তম এ বাপ হতে অংশটি সংশ্লিষ্ট] ১১।
[সায়ণাচার্য বলেন-একাদশেহনুবাকে ……. তাবতা চতুর্থচিতিঃ সমাপ্তা। অথ দ্বাদশে পঞ্চভ্যাং চিতাবসপত্নদ্যা ইষ্টকা উচ্যন্তে। অর্থাৎ, একাদশ অনুবাক অবধি চতুর্থ চিতি সমাপ্ত। অতঃপর এই দ্বাদশ অনুবাকে পঞ্চম চিতিতে অসপত্না ইত্যাদি ইষ্টকার বিষয় কথিত হচ্ছে ]
.
দ্বাদশ অনুবাক
মন্ত্র- অগ্নে জাতা প্র ণুদা নঃ সপত্না প্রত্যজাতাঞ্জাতবেদো নুদ। অস্মে দীদিহি সুমনা অহেড়ম্ভব স্যাং শৰ্ম্মবিরুথ উদ্ভিৎ। সহসা জাতা প্রণুদা নঃ সপত্না প্রত্যজাতাঞ্জাতবেদো নুদস্ব অধি নো ব্রুহি সুমনস্যমানো বয়ং স্যাম প্র ণুদা নঃ সপত্না। চতুশ্চত্বারিংশঃ স্তোমো বর্চো দ্রবিণং যোড়শ স্তোম ওজো দ্রবিণং পৃথিব্যাঃ পুরীষমসি অন্সো নাম। এবচ্ছন্দো বরিবচ্ছন্দঃ শম্ভুচ্ছদঃ পরিভূচ্ছন্দ আচ্ছচ্ছন্দো মনচ্ছন্দো ব্যচন্দঃ সিন্ধুচ্ছদঃ সমুদ্রং ছন্দঃ সলিলং ছন্দঃ সংযচ্ছন্দো বিচ্ছলো বৃহচ্ছলো রথস্তরং ছন্দো নিকায়চ্ছন্দো বিবধচ্ছন্দো গিরচ্ছন্দো জচ্ছদঃ ষষ্ঠুচ্ছন্দোনুষ্ঠুছন্দঃ ককুচ্ছদস্ত্রিককুচ্ছদঃ কাব্যং ছন্দেহপং ছন্দঃ পদপঙক্তিচ্ছন্দোহরপঙক্তিচ্ছন্দো বিষ্টারপঙক্তিচ্ছন্দঃ ক্ষুরো ভূজ্বান ছন্দঃ প্রচ্ছচ্ছন্দঃ পচ্ছন্দ এবচ্ছন্দো বরিবচ্ছন্দো বয়চ্ছন্দো বয়স্কৃচ্ছন্দো বিশালং ছন্দো বিন্ধাচ্ছন্দচ্ছদিচ্ছন্দো দূরোহণং ছন্দস্তন্দ্রং ছন্দোহষ্কাঙ্কাং ছন্দঃ ॥১২৷
মর্মার্থ- হে অগ্নি! আমাদের পূর্বে উৎপন্ন (জাতান সপন্যে) শত্রুগণকে প্রকৃষ্টরূপে নাশ করুন। হে জাতবেদা! পূর্বে উৎপন্ন ছাড়াও যে শত্রুগণ এখনও অজাত, তাদের উৎপত্তির প্রতিবন্ধ (বাধা) সৃষ্টি করে নিরাকৃত করুন, অর্থাৎ তারা যেন আর জন্মলাভ করতে না পারে, তেমন করুন। অনুগ্রহযুক্ত চিত্তে আপনি অক্ৰোধি হয়ে ত্রি-বরুথ, প্রাক-বংশ, ও হবিধানরূপ এয়োপেত (তিন রকম) গৃহে অনুষ্ঠেয় কর্মের উৎপাদক হয়ে আমাদের প্রকাশ করুন। আপনার প্রসাদে আমরা যেন সুখবা হই। হে অগ্নি! বলের দ্বারা আমাদের পূর্বে উৎপন্ন শত্রুদের বিনাশ করুন, এবং অজাত শত্রুদের উৎপত্তির প্রতিবন্ধ সৃষ্টি করে নিরাকৃত করুন। আপনি শোভনচিত্তযুক্ত হয়ে আমাদের অধিক বলরূপা, আমরাও যেন আপনার অনুগ্রহে অধিক (বলশালী) হতে পারি। আপনি আমাদের শত্রুগণকে বিনাশ করুন। এই যে স্তোম চতুশ্চত্বারিংশ আবৃত্তির দ্বারা সম্পন্ন এবং যা বলরূপ ধন, হে ইষ্টকা! তুমি সেই উভয়রূপা। সেই ভাবে, এই যে যোড়শ স্তোম (অর্থাৎ ষোড়শ আবৃত্তির দ্বারা নিষ্পদ্য স্তোম এবং এই যে ওজঃ অর্থাৎ অষ্টম ধাতুরূপ ধন); সেই উভয়রূপা তুমি। হে ইষ্টকা! তুমি চিতিরূপা পৃথিবীর পূরক এবং তুমি অন্সো নামধারিণী। হে ইষ্টকা! তুমি ঐব, বরিব, শম্ভু, পরিভু, আচ্ছৎ, মন, ব্যচ, সিন্ধু, সমুদ্র, সলিল, সংযৎ, বিঘৎ, বৃহৎ, রথন্তর, নকায়, বিবধ, গির, প্রজ, সস্তূপ, অনুষ্টুপ, ককুৎ, ত্রিককুৎ, কাব্য, অঙ্কুপম, পদপঙক্তি, অক্ষরপঙক্তি, বিষ্টারপঙক্তি, ক্ষুর ভূজ্বান, প্রচ্ছৎ, পক্ষ, বয়, বয়স্কৃৎ, বিশাল, বিস্পর্ধা, ছদি, দুঃরোহণ, তন্দ্র ও অঙ্কাঙ্ক নামে অভিহিতা স্বর্গলোকবর্তী ছন্দোবিশেষসমূহের স্বরূপা। [এই মন্ত্রগুলির সাথে পরবর্তী কাণ্ডের ৩য় প্রপাঠকের ৫ম অনুবাকের মন্ত্রগুলি সংশ্লিষ্ট] ১২
[সায়ণাচার্য বলেন–দ্বাদশে অনুবাকে…… অথ ত্রয়োদশস্যাভ্যানুবাকত্বত্তত্র যাজ্যানুবাক্যা উচ্যন্তে। অর্থাৎ-দ্বাদশ অনুবাকে অসপত্না ইত্যাদি ইষ্টকা কথিত হয়েছে। অতঃপর এই ত্রয়োদশ অনুবাকে তার যাজ্যা ও অনুবাক্যা কথিত হচ্ছে]
.
ত্রয়োদশ অনুবাক
মন্ত্র- অগ্নিবৃত্রাণি জঙ্নদ্রবিণপিন্যয়া। সমিদ্ধঃ শুক্র আহুতঃ। ত্বং সোমাসি সৎপতিং রাজোত বৃত্ৰহা। ত্বং ভদ্ৰো অসি ক্রতুঃ। ভদ্রা তে অগ্নে স্বনীক সদৃঘোরস্য সততা বিষুণস্য চারুঃ। ন যত্তে শোচিস্তমসা বরন্ত ন ধ্বম্মানস্তনবিরেপ আ ধু। ভদ্রং তে অগ্নে সহসিনীক পাক আ রোচতে সূৰ্য্যস্য। রুসদশে দশে নক্তয়া চিদরূক্ষিতং দৃশ আ রূপে অন্ন। সৈহনীকেন সুবিদত্রো অস্মে যা দেবা আজিষ্ঠঃ স্বস্তি। অদক্কো গোপা উত নঃ পরম্পা অগ্নে দুমদুত রেবদ্দিদীহি। স্বস্তি নো দিবো অগ্নে পৃথিব্যা বিশ্বায়ুৰ্দেহি যজথায় দেব। যৎ সীমহি দিবিজাত প্রশস্তং তদসু দ্রবিণাং ধেহি চিত্র। যথা হোতৰ্ম্মনুষঃ দেবতাতা যজ্ঞেভিঃ সুনো সহসো যজাসি। এবা নো অদ্য সমনা সমানানুশন্নগ্ন উশতো যক্ষি দেবা। অগ্নিমীড়ে পুরোহিতং যজ্ঞস্য দেবমৃত্বিজং। হোতারং রত্নতমম্।। বৃষা সোম দুমান্ অসি বৃষা দেব বৃষব্রতঃ। বৃষা ধর্মণি দধিষে।। সান্তপনা ইদং হবিৰ্ম্মরুতন্তজুজুষ্টন। যুম্মাকোতী রিশাদসঃ। যো নো মর্তো বসবো দুৰ্জণায়ুস্তিঃ সত্যানি মরুতঃ জিঘাংস্যাৎ। দ্রুহঃ পাশং প্রতি স মুচীষ্ট তপিঠেন তপসা হন্তনা তম্।। সম্বৎসরীণা মরুতঃ স্বৰ্কা উরুক্ষয়াঃ সগণা মানুষেষু। তেহৎপাশা প্র মুঞ্চংহসঃ সান্তপনা মদিরা মাদয়িষ্ণবঃ। পিপ্রীহি দেবাং উশতো যবিষ্ঠ বিদ্বান ঋতুং ঋতুপতে যজেহ। যে দৈব্যা ঋত্বিজস্তেভিরগ্নে ত্বং হোতৃণামস্যাযজিষ্ঠঃ। অগ্নে যদদ্য বিশো অধ্বরস্য হোতঃ পাবক শোচে বেষ্টং হি যজ্বা। ঋতা যজাসি মহিনা বি যদভূহ্যাঁ বহ ষষ্ঠি যা তে অদ্য। অগ্নিনা রয়িমশ্নবৎ পোষমেব দিবেদিবে। যশসং বীরবত্তমম্।। গয়স্ফানো অমীব বসুবিৎ পুষ্টিবর্ধনঃ। সুমিত্রঃ সোম নো ভব। গৃহমেধাস আ গত মরুততা মাহপ ভূতন। প্রমুঞ্চন্তো নো অংহসঃ। পুব্বীভিৰ্হি দদাশিম শরদ্ভিন্মরুততা বয়। মহোভিঃ চর্ষণীনাম্।। প্ৰ বুধিয়া ঈরতে বো মহাংসি প্রণামানি প্রযজ্যবস্তির। সহয়িং দম্যং ভাগমেতং গৃহমেধীয় মরুততা জুষধ্বম। উপ যমেতি যুবতিঃ সুদক্ষং দোষা বন্তোহবিষ্মতী ঘৃতাচী। উপ স্বৈনমরমতিসূয়ুঃ।। ইমো অগ্নে বীততমনি হব্যাহজম্রো বক্ষি দেবতাতিমচ্ছ। প্রতি ন ঈং সুরভীণি বিষন্তু। ক্রীড়ং বঃ শর্ধো মারুতমনৰ্বাণ। রথেশুভ। কৃথ্যা অভি প্র গায়ত। অত্যাসো ন যে মরূতঃ স্বঞ্চো যক্ষদৃশো ন শুভয়ন্ত মর্যাঃ। তে হৰ্ম্মেষ্ঠাঃ শিশবো ন শুভ্রা বৎসাশো ন প্রীড়িনঃ পয়োধাঃ। প্রৈমঘেষু বিথুরেব রেজতে ভূমিৰ্যামেষু যদ্ধ যুঞ্জেত শুভে। তে ক্রীড়য়ো ধুনয়ো ভ্রাজদৃষ্টয়ঃ স্বয়ং মহিত্বং পনয়ন্ত ধূতয়ঃ। উপহুরেষু যদচিধ্বং যয়িং বয় ই মরুতঃ কেন চিৎ পথা। শ্চোতন্তি কোশা উপ বো রথেম্বা ঘৃতমুক্ষতা মধুবর্ণমৰ্চ্চতে। অগ্নিমগ্নিং হবীমভিঃ সদা হবন্ত বিপতিম হব্যবাহং পুরুপ্রিয়ম। তং হি শশ্বস্ত ঈড়তে সুচা দেবং ঘৃতঞতা। অগ্নিং হব্যায় বোঢ়বে। ইন্দ্রাগ্নী রোচনা দিবঃ শথষ্কৃমিং বো বিশ্বতস্পরীং নরো বিশ্বকৰ্ম্ম হবিষা বাবৃধানো বিশ্বকৰ্ম্ম হবিষা বর্ধনেন ॥১৩।
মর্মার্থ– এই অগ্নি আমাদের অনুগৃহীত করুন। (কিরকম অগ্নি? না,) যিনি কর্মানুষ্ঠান-নিবারক পাপগুলি অতিশয়রূপে বিনাশ করেন (অর্থাৎ যজ্ঞকর্ম ইত্যাদি সাধনের অন্তরায়রূপ পাপগুলিকে সম্যক নষ্ট করে থাকেন), যিনি আমাদের কৃত স্তুতিতে তুষ্ট হয়ে আমাদের ধন দানে ইচ্ছুক হয়ে থাকেন, যিনি সম্যক প্রজ্বালিত, যিনি শোচমান অর্থাৎ দীপ্তির প্রকাশক ও যিনি আমাদের দ্বারা নির্বপিত হবির দ্বারা আহুত হয়েছেন।–হে সোম! আপনি সম্যক অনুষ্ঠিত কর্মের পতি বা পালক; অধিকন্তু আপনি রাজা অর্থাৎ দীপ্তিমান, বৃহা অর্থাৎ পাপঘাতী, ভদ্র অর্থাৎ মঙ্গলপ্রদ এবং ক্রতু অর্থাৎ যজ্ঞের নিম্পাদকত্বের কারণে ক্রতু বা যজ্ঞ-স্বরূপ।–হে স্বনীক (অর্থাৎ শোভন সৈন্যসম্পন্ন) অগ্নি! আপনার চরিত্র মঙ্গলময়। (কিরকম মঙ্গলময়? না,) আপনি যজমানদের দর্শন করে থাকেন, সেই হেতু আপনি বহুল জ্বালারূপে ব্যাপ্ত ও বিচরণশীল, অর্থাৎ আমাদের নিবারণকল্পে জ্বালা সমূহের প্রবর্তক। আপনার প্রকাশ (আলোক) কখনও আবৃত হয় না এবং ধ্বংসের হেতুকরী রাক্ষসগণ আপনার শরীরে প্রহাররূপ পাপ সম্পাদন করতে পারে না। হে সাহসী (অর্থাৎ বলসম্পন্ন) অগ্নি! সূর্যসদৃশ আপনার কল্যাণকর জ্বালারূপ সৈন্য নিকটে সর্বতে দীপ্ত হচ্ছে। গাঢ় অন্ধকারাবৃত রাত্রিতেও প্রাণিগণ আপনার জ্বালারূপ সৈন্যদলকে দর্শন করে থাকে। (কি নিমিত্ত? না,) রাত্রিকালে পথে হিংসক সর্প ইত্যাদিকে দর্শনের নিমিত্ত ও ভোজনকালে পাত্রে রক্ষিত অন্নকে মক্ষিকা ইত্যাদির দ্বারা উপদ্রবরহিত দর্শনের নিমিত্ত। হে অগ্নি! আপনি দীপ্যমান ও বহু ধনযুক্ত গৃহ ক্ষেত্র ইত্যাদিরও প্রকাশক (গৃহক্ষেত্রাদিকং প্রকাশয়)। (আপনি কিরকম? না,) আপনি জ্বালাসমূহের দ্বারা সুষ্ঠুভাবে দর্শিত (বেদিত);আমাদের দ্বারা অনুষ্ঠিত দেবতার উদ্দেশে যাগের নিম্পাদক; বিঘ্নরহিত বলতে যা বোঝায়, সেইরকম যাগের সমাপ্তিকারী; কারও দ্বারা হিংসিত নয়, এমন যজ্ঞের রক্ষাকারী; এবং আমাদের আত্যন্তিক পালনকারী। হে অগ্নি! আপনি আমাদের সম্পূর্ণ আয়ু প্রদান করুন। (কি নিমিত্ত? না,) যজ্ঞানুষ্ঠানের নিমিত্ত। (কোথায়? না,) দুলোকে বা ভূলোকে যখন যেখানে থাকি; (অর্থাৎ হে দেব! তখন সেখানেই আমাদের সম্পূর্ণ আয়ু প্রদান করুন)। হে দিবিজাত (অর্থাৎ স্বর্গে সমুৎপন্ন অগ্নি)! আমরা যে ধনের সেবা করি, আপনি সেই ধন আমাদের প্রদান করুন। (কিরকম ধন? না,) মণিমুক্তা ইত্যাদি নানাজাতীয় শ্রেষ্ঠ ধন। হে মনরূপ বলের পুত্র অগ্নিদেব! হে দেবগণের আহ্বাতা! আপনি মনুষ্যগণকে যেমন অনুগ্রহ পূর্বক পালন করেন, দেবতাগণকেও সেইভাবে যজ্ঞের দ্বারা পূজা করেন। হে অগ্নিদেব! অদ্য আমাদের এই যজ্ঞে দেবগণের উদ্দেশে যাগ করুন। (কিরকম আপনি? না,) আপনি দেবগণের সাথে সমানমনস্ক (সমভাবাপন্ন) এবং দেবতাগণের আস্থাযুক্ত। (দেবতাগণ কেমন? না,) আপনার তুল্য ও আপনাতে প্রীতিযুক্ত।–এই অগ্নির আমি স্তুতি করছি। (কিরকম অগ্নি? না,) আহবনীয়রূপে পুরোদেশে স্থাপিত, ঋতিগণের অনুষ্ঠীয়মান কর্মের নিম্পাদক, দেবং অর্থাৎ দ্যোতমান, হোতারং অর্থাৎ দেবগণের আহ্বতা, এবং রত্নদাতম অর্থাৎ মণিমুক্তা ইত্যাদি রত্নের অতিশয় সম্পাদক।–হে সোম! আপনি কামসমুহের বর্ষায়িতা (বৃষা) ও দীপ্তিমান্ (মাং)। হে দেব! আপনি বর্ষয়িতা হওয়ায় বৃষব্রত নামে আখ্যাত, অর্থাৎ সেই সম্পর্কিত পুণ্যসমূহের ধারক।–হে সান্তপন (অর্থাৎ শত্রুকে সম্যক্ তাপিতকারী) মরুৎগণ! আমাদের দীয়মান (প্রদত্ত) এই হবিঃ সেবন করুন। (কি নিমিত্ত? না) আপনাদের ক্ষুধা নিবৃত্তির নিমিত্ত। (কিরকম মরুৎগণ? না,) ভক্ষণের দ্বারা হিংসকগণের বিনাশকক।–হে নিবাসের হেতুভূত মরুৎগণ! দুষ্ট ক্রোধযুক্ত যে মনুষ্য অত্যন্ত পাপবুদ্ধির দ্বারা প্ররোচিত হয়ে আমাদের হত্যা করতে ইচ্ছা করে, সেই দ্রোহীকে আপনাদের রঞ্জুর দ্বারা বন্ধন করুন এবং অধিকতম সন্তাপের দ্বারা মারুন (মাবয়ত)। হে মরুৎগণ! আপনাদের স্বকীয় বন্ধরঙ্কু আমাদের নিকট হতে অপনীত করে বিরোধী জনের গলে বন্ধন করুন। (কিরকম রজ্জ্ব? না,) অংহস, অর্থাৎ পাপিষ্ঠগণের অত্যন্ত নিবন্ধনহেতুকরী। (কিরকম মরুৎ? না, তারা যাগে একবার আরধিত হলে সম্বৎসর পর্যন্ত রক্ষক হয়ে থাকেন; তাঁরা স্বর্কা, অর্থাৎ সুষ্ঠু অর্চনীয়; তারা উরুক্ষয়া, অর্থাৎ বিস্তীর্ণ গৃহশালী, তারা সগণা, অর্থাৎ সপ্তগণের সাথে যুক্ত; তারা সান্তপনা, অর্থাৎ শত্রুগণের সম্যক তাপকারী (সন্তাপ দানকারী), মদিরা, অর্থাৎ স্বয়ং হৃষ্ট হয়ে আমাদেরও হর্ষান্বিত করেন।–হে যুবতম অগ্নি! কাময়মান দেবগণকে অতিশয়রূপে প্রীত করুন। হে ঋতুপতি! সূর্যরূপে কালপরিপালক আপনি, ঋতু বা কালবিশেষ সম্পর্কে জ্ঞাত হয়ে যথাযথ এই স্থানে যাগ করুন। দৈব ঋত্বিক ও যজমান-সম্বন্ধি (অর্থাৎ মনুষ্য) ঋত্বিক, এই উভয় ঋত্বিকগণের মধ্যে আপনি সর্বতোভাবে শ্রেষ্ঠ যাগকারী।–হে স্বিষ্টকৃৎ অগ্নি! আপনি হোমকর্তা, শোধক (পাবক) ও দীপ্যমান। আমাদের অধ্বরের (অর্থাৎ যজ্ঞ) সম্বন্ধি যে হবিঃ প্রদত্ত হচ্ছে আপনি তা ভক্ষণ করুন, (অর্থাৎ আপনি যাগের কর্তারূপে আমাদের যজ্ঞে (অধ্বরে) নিজ মহিমায় যাগ করুন, এবং যুবতম অগ্নিরূপে আমাদের প্রদত্ত হবিঃ স্বীকার করুন। এই অগ্নির দ্বারা সর্বজন ধন প্রাপ্ত হয়। কেবল ধনের স্বরূপমাত্রই নয়, উপরন্তু দিনে দিনে সেই ধন পুষ্টিও প্রাপ্ত হয়, কখনও তার হ্রাস ঘটে না। (কি রকম পুষ্টি? না,) যশসং অর্থাৎ কীর্তিকর, বীরবত্তমম্ অর্থাৎ আমাদের পুত্রগণকে অতিশয়রূপে বীরবানকারী।–হে সোম! আপনি আমাদের প্রতি উচ্যমান (বিশেষণবিশিষ্ট) হোন। (বিশেষণগুলি কি? না,) আপনি আমাদের গয়স্কানো নো অর্থাৎ গৃহসমূহের বর্ধয়িতা, অমীবহা অর্থাৎ রোগবিনাশক, বসুবিৎ অর্থাৎ ধনপ্রাপক, পুষ্টিবর্ধনো অর্থাৎ গো-ইত্যাদির পুষ্টিবর্ধয়িতা এবং সুমিত্র অর্থাৎ শোভন যজমানরূপ মিত্র হোন। হে গৃহমেধা (গৃহে ক্রিয়মাণ যজ্ঞধারী) মরুত্বর্গ! আপনারা এই যজ্ঞে (কর্মে) আগত হোন, কখনও এখান হতে অপগত হবেন না। (আগত হয়ে কি করবেন? না,) পাপ হতে প্রকর্ষের সাথে আমাদের মুক্ত করুন।হে মরুৎগণ! অনাদিকাল হতে ব্রীহি ইত্যাদির দ্বারা পূর্ণসম্বৎসরে আমরা যজমানগণ মনুষ্য ঋত্বিকগণের মাধ্যমে আপনাদের হবিঃ প্রদানে প্রবৃত্ত আছি; সুতরাং আপনারা এই স্থানে আগমন করুন।–হে মরুৎগণ! অনাদিকাল হতে আপনাদের তেজঃ প্রকৃষ্টভাবে প্রবৃত্ত হয়েছে। প্রকৃষ্ট যাগযুক্ত গৃহমেধি মরুৎ নামে আপনারা লোকজগতে প্ৰকর্ষের সাথে খ্যাত হয়েছেন (খ্যাপয়ত)। সহস্র সহস্র (সহস্রসমাহঁং) গৃহমেধী (গৃহে যাগানুষ্ঠানকারী)-রূপী আপনাদের উদ্দেশে প্রদত্ত পুরোডাশরূপ ভাগ সেবন করুন। মন্ত্রের সাথে মিশ্রভূতা সম্পূর্ণ হবিযুক্তা এই ঘৃতপুষ্ট আহুতি রাত্রি ও দিবসব্যাপী কুশল স্বিষ্টকৃৎ অগ্নিকে প্রাপ্ত হোক। এই স্বিষ্টকৃৎ অগ্নি ধন-ইচ্ছুক যজমান কর্তৃক নিরন্তর হবির দ্বারা সেবিত হয়ে থাকেন। হে অগ্নিদেব! আপনি এই অতিশয় কান্তিসম্পন্ন হবিঃ দেবগণের প্রাপ্তির উদ্দেশে বহন পূর্বক গমন করুন এবং আমাদের সম্বন্ধিনী এই সুগন্ধযুক্ত হবিঃ প্রত্যেক দেবতা ভক্ষণ করুন।–হে কম্ব প্রভৃতি বেদাচার্যগণ! আপনারা বলের (মরুতের) উদ্দেশে বৈদিক স্তোত্রে প্রকর্ষের সাথে গান করুন। (কিরকম বল? না,) যে বল আপনাদের কারণস্বরূপ, মরুৎগণ-সম্বন্ধীয়, শত্রুগণের দ্বারা অতিরস্কৃত এবং রথপ্রেরণে সমর্থ। যে মরুত্বর্গ আপন শোভন সঞ্চারের দ্বারা সর্বজগৎ অলঙ্কৃত করছেন, তারা আমাদের অনুগৃহীত করুন। (কিরকম মরুৎ? না,) সতত অর্থাৎ নিরন্তর গমনশীল অশ্বের মতো, শোভন গতিযুক্ত (স্বঞ্চ), যাগ-দর্শনের নিমিত্ত উৎসুক মর্ত্যবাসীর মতো (এই স্থানে সমাগত)। প্রাসাদের উপরে আরূঢ় রাজপুত্রগণের মতো (রাজবালকা ইব) পর্বতে শুভ্র মরুৎগণ সঞ্চরণ করছেন। যেমন অত্যন্ত অজ্ঞান শিশুগণ ইতস্ততঃ পলায়ন পূর্বক প্রকর্ষের সাথে ক্রীড়া করে, সেই রকম যেখানে সেখানে সঞ্চরণশীল মরুৎগণ মেঘ উৎপাদন পূর্বক তাতে জল ধারণ করছেন।–এই মরুৎগণের গমনের দ্বারা ভূমি কম্পিত হচ্ছে, অর্থাৎ মরুৎগণ ভূকম্পন সৃষ্টি করে গমন করছেন; যেমন–ভর্তৃহীনা রমণী পালকের (স্বামীর অভাবে অত্যন্ত কম্পিতা হয়ে থাকে। যে মরুগণ জলের নিয়ামক মেঘে জল যোজিত করেন, তাঁরা স্বকীয় মহিমা স্বয়ংই ঘোষণা বা স্তুতিযুক্ত করছেন (ব্যাহরস্তি স্তবন্তি বা)। (কিরকম?না,) সেই মরুৎগণ ক্রীড়াপর, কম্পনযুক্ত অর্থাৎ সর্বদা চলন্ত, দীপ্ত বিদ্যুঞ্জপে দৃষ্ট ও শত্রুবর্গের কম্পনের হেতুভূত।–হে মরুৎগণ! যখন আপনারা পক্ষীর ন্যায় কোনও পথে আগত হয়ে জলপূর্ণ মেঘে আস্ফালন করেন, তখন ধনপূর্ণা গৃহসদৃশ জলপূর্ণ মেঘগুলি আপনাদের রথের সমীপে আগত হয়ে জল বর্ষণ করে (জলং বয়ন্তি)। আপনারাও অর্চনাকারী (যুয়মপ্যৰ্চতে) যজমানের নিমিত্ত মধুর রসোপেত ঘৃত-সমান জল সিঞ্চন করেন।-যজমানগণ প্রতি যাগে সর্বদা স্বিষ্টকৃৎ অগ্নির আহ্বান করেন। (কিরকম অগ্নি? না, সেই অগ্নি বিশপাতং অর্থাৎ প্রজাগণের পালক, হব্যবাহং অর্থাৎ দেবতাগণের প্রতি হবির বাহক, পুরুপ্রিয়ং অর্থাৎ বহু যজমানের প্রীতির কারণ (প্রীতিহেতুম)। কারণ নিরন্তর অনুষ্ঠান পরায়ণ ঋত্বিবৃন্দ ঘৃত-ক্ষরিত (ঘৃতং ক্ষরতা) সুকের (যজ্ঞপাত্রের) দ্বারা অগ্নিদেবের স্তব করছেন (স্তবতে)। [পরবর্তী যাজ্যা ও অনুবাক্যা সম্পর্কিত মন্ত্রগুলির মধ্যে দুটির ব্যাখ্যা পুর্বে করা হয়েছে; যেমন,–ইন্দ্রাগ্নী রোচনা দিবঃ স্মথদ্বত্র মন্ত্রের ইন্দ্রাগ্নী রোচনা দিব–পুরোনুবাক্যা এবং শ্লথদ্বত্র-যাজ্যা; এই মন্ত্র ইন্দ্রাগ্নী রোচনা দিবঃ (৪ কা, ২৫. ১১অ.)–এই অনুবাকে ব্যাখ্যাত হয়েছে। আবার, ইন্দ্রং বো বিশ্বতস্পরীং নর মন্ত্রের ইন্দ্রং বো বিশ্বতস্পরী–পুরোনুবাক্যা এবং ইন্দ্ৰং নরঃ-যাজ্যা; এই মন্ত্র ইন্দ্রং বো বিশ্বতস্পরি হব্যামহ (১ কা. ৬ প্র. ১২ অ.)–এই অনুবাকে ব্যাখ্যাত হয়েছে। শেষ মন্ত্রটি, অর্থাৎ বিশ্বকৰ্মন হবিষা বাবৃধানো বিশ্বকর্ম হবিষা বর্ধনেন মন্ত্রের বিশ্বকর্মন্ হবিষা বাবৃধান–পুরোনুবাক্যা এবং বিশ্বকর্ম হবিষা বধনেনঃ-যাজ্যা; এই মন্ত্র য ইমা বিশ্ব ভুবনানি জুদ (৪কা, ৬. ২অ.)–এই অনুবাকে ব্যাখ্যাত হবে ] ॥১৩৷৷