সারকাস্তেন দেশের এক শহরে এক প্রবল পরাক্রান্ত বাদশাহ দোর্দণ্ড প্রতাপে প্ৰজা শাসন করতেন। তাঁর নাম জাইন অল মুলুক। তার তিনটি পুত্র-সন্তান জন্মেছিলো। তারাও সবাই বাপ-কা-বেটা। লক্ষজনের মাঝে থাকলেও যে কেউ তাদের একনজরে চিনে নিতে পারতো। অমন সুন্দর রূপ-যৌবন আল্লাহর আশীর্বাদ।
বাদশাহ জাইন অল মুলুক কিন্তু কনিষ্ঠ পুত্রকে ঈষৎ নেকনজরে দেখতেন। একদিন তিনি গণকদের ডেকে পুত্রের ঠিকুজী তৈরি করতে বললেন।
গণকরা অনেক গুণে পড়ে বললো, আপনার এই পুত্রটি পরম শুভক্ষণে জন্মেছে। তার সুখ ও সম্ভোগের তুলনা নাই।কিন্তু একটা ব্যাপারে জাঁহাপনা আপনি নিজে সতর্ক থাকবেন। এই পুত্রের দিকে আপনার বিশেষ পক্ষপাত লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কিন্তু তা থেকে আপনি বিরত হওয়ার চেষ্টা করবেন। না হলে আখেরে আপনার চক্ষুরত্ব নষ্ট হবে।
গণকদের কথায় বাদশাহ বেশ রুষ্ট এবং চিন্তিত হয়ে উজিরকে হুকুম দিলেন, এই ছেলেকে আমার চোখের সামনে থেকে চিরদিনের মতো দূরে রাখবে। এক কাজ কর, একে আর এর মাকে দূরে কোথাও নির্বাসনে দিয়ে এসো। এ পাপ আমি আর প্রাসাদেই রাখতে চাই না।
সুলতানের হুকুম তামিল করা হলো।
এক নির্জন বনে তাদের জন্য একটি প্রাসাদ বানিয়ে সেখানে মা এবং ছেলেকে রেখে এলো উজির।
এরপর বহুকাল কেটে গেছে। কনিষ্ঠ পুত্র নূরজিহান ঘোড়ায় চেপে সারা বন-প্রান্তর ছুটে বেড়ায়।
একদিন ঐ বনে বাদশাহ জাইন অল মুলুক শিকারে গেলেন। এবং এক সময় আত্মজের মুখোমুখি হয়ে পড়লেন। কিন্তু কি নিষ্ঠুর নিয়তি, পুত্রের সঙ্গে দৃষ্টি বিনিময় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি অন্ধত্ব প্রাপ্ত হলেন। শিকার মাথায় উঠলো, তখুনি তিনি ফিরে এসে নিজের প্রাসাদে বন্দী হয়ে রইলেন। বাদশাহর আর বুঝতে বাকী রইলো না, ঐ ঘোড়সওয়ার যুবকই তার কনিষ্ঠ পুত্র! কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন তিনি, ইয়া আল্লা! একি হলো আমার, সব সন্তানের পিতাই পুত্রদের দেখে পুলকিত হয়, কিন্তু আমার ভাগ্যে এই আঁধিয়া জুটলো?
দেশ-বিদেশের বহু খ্যাতনামা হাকিম বদ্যি এলো। তারা পরীক্ষা করলো বাদশাহর চোখ। এবং সবাই এক মত হয়ে রায় দিলো, কোন সাধারণ দাওয়াই-এ এ ব্যাধি সারবার নয়। তাঁর অন্ধত্ব সারাবার একটি মাত্র উপায় আছে, কিন্তু সে বড় দুঃসাধ্য কর্ম, অবশ্য সে পরামর্শ আমরা জাঁহাপনাকে দিতে পারি না।
সুলতান জিজ্ঞেস করলেন, কি এমন দুঃসাধ্য কর্ম?
-চিনের এক সমুদ্রকন্যা!
এই সময় রাত্রি প্রভাত হয়ে এলো! শাহরাজাদ গল্প থামিয়ে চুপ করে বসে রইলো।
নয়শো পঞ্চান্নতম রজনী :
আবার সে বলতে থাকে—
হাকিমরা বললো, চীনের এক অভ্যন্তর-প্রদেশে সে মেয়ে বাস করে। তার পিতা প্রবল পরাক্রান্ত শাহেনশাহফিরোজশাহ। শাহ-কন্যার ফুল-বাগিচায় একটি সমুদ্র গোলাপ গাছ আছে। সেই গাছের ফুল যদি সংগ্রহ করে আনা যায় তবে তা দিয়েই শুধু সুলতানের চোখের ব্যাধি সারানো সম্ভব হবে। ঐ গোলাপ দৈবগুণসম্পন্ন। যে-কোনও জন্মান্ধ তার দৃষ্টি ফিরে পাবে তার গুণে।
তৎক্ষণাৎ বাদশাহ জইন অল মুলুক ঘোষণা করে দিলেন, চীনদেশ থেকে যে ঐ সমুদ্র-গোলাপ এনে দিতে পারবে তাকে তিনি তার সারা সলতানিয়তের অর্ধেক দিয়ে দেবেন।
কিন্তু এমন দুঃসাধ্য কাজে অপরে এগিয়ে আসবে কেন? বাদশাহর বড় দুই পুত্র জাহাজে পাল তুলে যাত্রা করলো চীনের উদ্দেশ্যে। ছোট ছেলে নূরজিহানও আলাদা ভাবে যাত্রা করলো চিনদেশে। তার একমাত্র পণ, পথ যত দূর্গমই হোক, যত প্রাণ-সংশয় বিপদই সামনে আসুক, সে কিছুতেই ডরাবে না! যেন তেন প্রকারে সে ঐ সমুদ্র-গোলাপ সংগ্রহ করে আনবেই আনবে। অর্ধেক সলতানিয়তের লোভে নয়, তার জন্মদাতা পিতার চোখের দৃষ্টি ফিরিয়ে আনাই তার একমাত্র ধ্যানজ্ঞান।
জাহাজে পাল তুলে সমুদ্রের হাওয়া খেতে খেতে যাওয়া নয়, সে বেছে নিলো মাটির পথ। তার প্রিয় অশ্বে জিন লাগাম চাপিয়ে সেইদিনই সে ছুটে চললো বন মরুপ্রান্তর শহর গ্রাম গঞ্জ অতিক্রম করতে করতে।
একদিন দু’দিন নয়, দিনের পর দিন, মাসের পর মাস অবিরামভাবে সে চলতে থাকে। অবশেষে একদিন সে গভীর অন্তহীন বিশাল অরণ্যের মধ্যে প্রবেশ করলো। কোথায় পথ, কীভাবে তার মধ্য থেকে বাইরে বেরুনো যেতে পারে, কিছুই তার জ্ঞাত নয়। গাছের নিবিড় ডালপালায় উপরের আকাশের কণামাত্র সূর্যালোক প্রবেশ করতে দেয় না। ঘন মসীময় অন্ধকার। দিন কি রাত কিছুই বোঝা যায় না। তার মধ্য দিয়ে অতি সন্তর্পণে পথ করে চলতে থাকে সে। যত পথই অতিক্রম করে, এক বিন্দু আশার আলো দেখতে পায় না, তবু সে অকুতোভয়, উন্নতশির হয়ে পথ চলে। কত রকম পশু-পাখীর ভয়াল ভয়ঙ্কর আওয়াজ, কিন্তু নূরজিহান ওসব কানে তোলে না। বুঝতে পারে যে-কোনও মুহূর্তে কোনও এক হিংস্র জন্তুর মুখ-গহ্বরে সে ঢুকে যেতে পারে, কিন্তু তাতেও তার পথ চলার বিরাম নাই।
সামনে ঘন কালো অন্ধকার। হঠাৎ নুর দেখলো দুটি সোনার রঙের গোলক তার দিকে এগিয়ে আসছে। নূর বুঝতে পারলে কোনও ভয়ঙ্কর শিকারী জানোয়ারের চোখ। মৃত্যু অবধারিত, পালাবার পথ নাই, পালাবার চেষ্টাও সে করলো না।
ক্রমে ক্রমে স্বর্ণগোলক দু’টি আরও নিকটবর্তী হলো। এবার সে বুঝতে পারলো ছোটখাটো পাহাড়ের মতো একটা দৈত্য-দানব তার মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়ে পড়েছে।
নূর আল্লাহর নাম করে সালাম ঠুকলো দৈত্যটাকে। নূর-এর সুন্দর চেহারা দেখেই বোধহয় দৈত্যটা বেশ খুশি-খুশি ভাব নিয়ে কাছে এসে বসে পড়লো। নূরও ঘোড়া থেকে নেমে দাঁড়ালো। এবং ঝোলা থেকে একখানা তন্দুরী রুটি বের করে দৈত্যটার দিকে বাড়িয়ে দিলো।রুটিখানা নিয়ে মুখে পুরে দিয়েই দৈত্যটা প্রশংসায় সোচ্চার হয়ে উঠলো।
বাঃ, তোমার খাবার তো বড় চমৎকার খেতে? মানুষরা কী করে এতো সুন্দর খাবার বানাতে পারে?
নূর বলে, এ আর এমন কি ভালো খাবার। আমাদের দেশে হলে তোমাকে অনেক সুন্দর সুন্দর খানা-পিনা খাওয়াতে পারতাম।
দৈত্য অবাক হয়ে বলে, এর চাইতেও ভালো! সে কেমন খাবার? কৈ দেখি আর একখানা দাও তো ভাই!
নূর আর একখানা রুটি বের করে দৈত্যের হাতে দেয়। দৈত্যটা খুব খুশি হয়ে বলে, এমন
অপূর্ব জিনিস তুমি আমাকে খাওয়ালে বন্ধু, কি করে তোমার এ উপহারের প্রতিদান দিহ বলতো?
নূর বলে, না না, তার কী দরকার! সামান্য দু’খানা রুটিই তো দিতে পেরেছি আপনাকে!
সামান্য বলছো এই খাবারকে? আমার শরীর জুড়িয়ে গেছে তোমার রুটি খেয়ে। যাক, এখন বলো কী কাজে লাগতে পারি তোমার? এরপর যদি তোমার কোনও কাজে না লাগতে পারি, তবে দিল আমার টুকরো টুকরো হয়ে যাবে।
নূর বললো, সত্যিই যদি আমার কিছু উপকার করতে চান তবে একটা কাজ করে দিতে হবে আপনাকে।
—কী কাজ বলো? তিন ভুবনের যেখান থেকে যা এনে দিতে বলবে, এক্ষুণি তা হাজির করে দেব আমি।
নূর বললো, না, আপনাকে এনে দিতে হবে না। আমাকে নিয়ে যেতে হবে এক জায়গায়।
-কোথায়? শাহেনশাহফিরুজের কন্যার ফুল-বাগিচায়। সেখানে শুনেছি, সমুদ্র-গোলাপ গাছ আছে। ঐ গোলাপ ফুল আমার দরকার। আমি নিজে হাতে তা চয়ন করবো।
নূরের কথা শুনে দৈত্যের মুখমণ্ডল সাদা কাগজের মতো ফ্যাকাসে হয়ে গেলো মুহূর্তে। বেশ কিছুক্ষণ গুম মেরে থেকে তারপর বললো, এ অসম্ভব! ঐ বাগানে বেহেস্তের জিন পরীরা পাহারা দেয়। ওখানে তো আমার যাওয়া সম্ভব নয়, বন্ধু।
নূর বলে, আপনি আমাকে বাগানের কাছে পৌঁছে দিন। তারপর কী করে কার্যোদ্ধার করতে হয় আমি দেখবো।
দৈত্য বললো, ঠিক আছে, চলো আগে তোমাকে সেখানে নিয়ে যাই তো! তারপর ভাবা যাবে কিভাবে কি করা যায়। এসো, আমার কাঁধে এসে বসে পড়। আমি তোমাকে নিয়ে বায়ুবেগে উড়ে যাবো চীনদেশে।
বায়ুর বেগই বটে, অতি অল্প সময়ের মধ্যে নূরকে নিয়ে দৈত্যটা বাদশাহ ফিরুজের কন্যার প্রমোদ-উদ্যানে এসে উপনীত হলো। বাগানের অদূরে নূরকে নামিয়ে দিয়ে সে বললো, ঐ দ্যাখো, দেয়ালে ঘেরা সেই বাগান। একটু এগোলেই সদর ফটক দেখতে পাবে। তুমি চলে যাও। আমি এখানে অপেক্ষা করবো তোমার জন্য। কাজ শেষ করে ফিরে এসো, আমি তোমাকে পৌঁছে দেব তোমার মুলুকে।
বাগানের ভিতরে প্রবেশ করে নূর-এর দু’চোখ জুড়িয়ে যায়। চারদিকে বহু বিচিত্র বর্ণের কত ফুলের সমারোহ। নূর ঘুরে ঘুরে দেখতে থাকে।
বাগানের ঠিক মাঝখানে একটা পুকুর। শান-বাঁধানো তার ঘাট। সেই পুকুরের ঠিক মাঝখানে একটা ফুলের গাছ। গাছে ফুটে আছে একটি মাত্র লাল রঙের ফুল। সে ফুলের মদির গন্ধে সারা বাগান আমোদিত হয়ে আছে। নুর বুঝতে পারলো এই সেই সমুদ্র-গোলাপ।
তখুনি জলে নেমে পড়লো। সাঁতরে গিয়ে ছিঁড়ে আনলো ডালসমেত ফুলটা। পুকুরের পাড়ে উঠে ফুলটাকে অতি সযত্নে কুর্তার নিচে কোমরে গুঁজে নিলো সে। তারপর বাগানটার চারপাশ ভালো করে দেখতে লাগলো।
এক জায়গায় এসে নুর দেখতে পেলো এক পরমাসুন্দরী কিশোরী কেশ এলায়িত করে ঘাসের উপর শুয়ে ঘুমোচ্ছে। মুগ্ধ চোখে অনেকক্ষণ সুন্দরীর রূপ-সুধা পান করতে থাকলো সে। আশা করতে লাগলো, হয়তো। একটুক্ষণ পরেই ওর ঘুম ভেঙ্গে যাবে। কিন্তু না, অনেকক্ষণ পাশে বসে থাকার পরও ওর ঘুম ভাঙ্গলো না। এদিকে দিনের আলো ফুরিয়ে আসছে, আর অপেক্ষাও করা যায় না, নূর তার হাতের একটা আংটি খুলে কিশোরীর আঙ্গুলে পরিয়ে দিয়ে বাগানের বাইরে বেরিয়ে এলো।
দৈত্যটা হাসিমুখে স্বাগত জানালো নূরকে, কী, কাজ হয়েছে?
নূর বললো, হ্যাঁ। যে জন্যে এসেছি তা পেতে কিছু বেগ পেতে হয়নি।
—তা হলে আর একখানা রুটি ছাড়, বন্ধু।
নূরও হাসলো, এই নাও, একখানা নয় দু’খানা দিলাম। বাব্বা এই সামান্য রুটি তোমার এতো ভালো লেগেছে?
নূরকে কাঁধে চাপিয়ে অতি অল্পকালের মধ্যেই দৈত্যটা জাইন অল মুলুকের প্রাসাদে এনে নামিয়ে দিলো।
সমুদ্র-গোলাপের গন্ধ নাকে শুকতেই সুলতান জাইন দিব্যদৃষ্টি মেলে তাকালেন। আনন্দে তিনি লাফিয়ে উঠলেন, আমি সব দেখতে পাচ্ছি নূর, সব পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছি।
এরপর সুলতান উজির আমির ওমরাহদের ডেকে ঘোষণা করে দিলেন, এখন থেকে আমার সারা সলতানিয়তের অর্ধেক মালিক হবে আমার কনিষ্ঠ পুত্র নূরজিহান।
এই সময় রাত্রি প্রভাত হয়ে এলো। শাহারাজাদ গল্প থামিয়ে চুপ করে বসে রইলো।
নয়শো সাতান্নতম রজনী :
আবার সে বলতে থাকে–
নূরজিহান একটা বিরাট বাগিচা বানিয়ে তার ভিতরে একটা পুকুর তৈরি করে সেই পুকুরের মাঝখানে গোলাপের ডালটাকে পুঁতে রাখলো।
বড় দুই পুত্র শূন্য হাতে ফিরে এলো। সুলতান দৃষ্টি ফিরে পেয়েছেন এবং তার পুরস্কারস্বরূপ ছোট ভাই অর্ধেক সলতানিয়তের মালিক হয়েছে দেখে তারা বিমর্ষ এবং বিক্ষুব্ধ হয়ে বললো, ওসব সমুদ্র-গোলাপ টোলাপ কিছু নয়, সবই শয়তানের যাদু।
পুত্রদের এবম্বিধ আচরণে ক্রুদ্ধ হয়ে সুলতান তাদের ডেকে যাচ্ছেতাই ভাবে বলেন, তোমরা কি আল্লাহর সৃষ্টি গাছ-গাছড়ার গুণাগুণও স্বীকার করতে চাও না? তার অপার মহিমা কে বুঝতে পারে? তবে শোনো একটা গল্প বলি :
এক সময়ে হিন্দুস্থানের এক বাদশাহ ছিলেন।তার হারেমে ছিলো শতাধিক পরমাসুন্দরী বাদী। সারা দুনিয়া থেকে বাছাই করে সংগ্রহ করেছিলেন তিনি। কিন্তু এ সত্ত্বেও তার একটিও সন্তান হলো না। সেই দুঃখে বাদশাহ কাতর হলেন।
যাই হোক অবশেষে তার সর্বকনিষ্ঠা বাঁদী একসময় গর্বতী হলো, এবং যথাসময়ে ফুটফুটে সুন্দর একটি কন্যা-সন্তান প্রসব করলো। মেয়ের মা ভয়ে আড়ষ্ট হয়ে গেলো। বাদশাহ মনে-প্রাণে কামনা করেছেন, তার যেন একটি পুত্র সন্তান হয়। এখন যদি তাকে বলা হয় কন্যা জন্মেছে, তবে তিনি সেদুঃখহয়তো সহ্য করতে পারবেন না। তাই সুলতানকে সে খবর পাঠালো যে পুত্র-সন্তানের জন্ম দিয়েছে। কিন্তু গণৎকার বলেছে পুত্রের বয়স দশ বছর পুরো না হওয়া পর্যন্ত সুলতান যে তার মুখদর্শন না করেন। তাতে ভয়ানক অনিষ্ট হবে।
মেয়েটি যখন দশে পা দিলো, সেই সময় থেকে তার মা তাকে ছেলের সাজে সাজিয়ে রাখতে লাগলো। শুধু সাজে-পোশাকেই নয়, শিক্ষা-দীক্ষা চাল-চলনও তার ছেলের ধাঁচে বদলে দিতে লাগলো সে। এইভাবে মেয়েটি দিনে দিনে একটি বালকের ন্যায় আচার আচরণে অভ্যস্ত হয়ে পড়লো।
সারাদিন সে শাহজাদার বেশে সেজে-গুজে থাকে। ঘোড়ায় চড়ে ছুটে বেড়ায়। তলোয়ার খেলে, শিকার করতে বেরোয়।
সুলতানের আনন্দ আর ধরে না! পুত্র-গর্বে গর্বিত তার বুক। তার ভবিষ্যতের উত্তরাধিকার-এর দিকে অপলক চোখে তাকিয়ে থাকেন সুলতান। ভাবেন, এতো বড় বিশাল সলনিয়ত, কিন্তু এই পুত্রটি নাহলে সবই ছারখার হয়ে যেত একদিন! খোদা বহুত মেহেরবান, তাকে পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন তিনি।
দু’হাত কপালে ঠেকিয়ে আল্লাহর উদ্দেশ্যে প্রণাম জানাতে থাকেন সুলতান।
আরও পাঁচ বছর কেটে গেলো। পাশের দেশের এক সুলতান-কন্যার সঙ্গে পুত্রের শাদীর কথা পাকা করলেন তিনি এবং সে কথা সগর্বে ঘোষণা করে দিলেন সারা দেশে।
শাহজাদী একদিকে শিহরিত, অপরদিকে আতঙ্কিত হলো। অস্থির মনে সে একা একা ঘুরে বেড়ায় মাঠ প্রান্তরে বনে জঙ্গলে। এমন একটা অস্বস্তিকর পরিস্থিতি থেকে সে রেহাই পাবে কি করে?
একদিন সন্ধ্যায় সে এক বনের মধ্যে বিচরণ করছিলো। এমন সময় এক গাছের নিচে এক জিনের সঙ্গে দেখা হয়ে গেলো শাহজাদীর! পরম রূপবান সে।
শাহজাদীর রূপে মুগ্ধ হয়ে জিন তাকে শুভেচ্ছা জানায়। শাহজাদীও জিনের অসামান্য রূপ-লাবণ্যে মোহিত হয়ে তার কাছে এগিয়ে যায়।
কিছুক্ষণের মধ্যেই ওদের দুজনের বেশ ভাব জমে ওঠে। শাহজাদী তার আসন্ন বিবাহ এবং তার সমূহ বিপদের কথা তাকে বলে।
জিন তাকে তার নিজের পুরুষত্ব প্রদান করে শাহজাদীর নারীত্ব নিজের দেহে বদল করে নিয়ে বলে, প্রথম দর্শনেই তোমাকে আমি ভালোবেসে ফেলেছি। তাই আমার পুরুষত্ব তোমাকে দিয়ে তোমার নারীত্ব গ্রহণ করলাম আমি। কিন্তু একটা শর্ত, অতি সঙ্গোপনে রাখবে এ সংবাদ, কেউ যেন না জানতে পারে। তোমার কাজ সমাধা হয়ে গেলে আবার তুমি আমার পুরুষত্ব ফিরিয়ে দেবে!
এরপর যথাসময়ে শাহজাদী বরের সাজে সেজে-গুজে পালকীতে বসলো। মহা ধুমধামে শাদীপর্ব সমাধা হয়ে গেলো। এবং সেই রাতেই পাত্রী গর্ভবতী হলো। এর ঠিক নয় মাস পরে একদিন একটি পুত্রসন্তানের জন্ম দিলো সে। স্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে স্বামী বললো, যাক, আমার অভীষ্ট সিদ্ধ হয়েছে। তুমি আমাদের বংশ রক্ষা করেছ। এবার আমার দায়িত্ব মোটামুটি শেষ। তুমি এখন থেকে নিজের পুত্রকে নিয়ে সুখে স্বচ্ছন্দে এই হারেমে বাস কর। আমি আমার কাজে ব্যস্ত থাকবো এখন থেকে।
সেইদিনই সে বনে প্রবেশ করলো জিনের সন্ধান করতে। দেখাও পেলো তার। কিন্তু একি চেহারা হয়েছে তার! শরীর শীর্ণ, ফ্যাকাশে হয়ে গেছে, কিন্তু পেটটা বিরাট একটা ধামার আকার ধারণ করেছে।
শাহজাদী বললো, আমার ওয়াদা পূরণ করতে এসেছি। তোমাকে অশেষ ধন্যবাদ, তোমার দয়ায় আজ আমার মনস্কামনা পূর্ণ হয়েছে। সবদিকে আমার কূল মান রক্ষা হয়েছে। যাক্, এবার তোমার জিনিস তুমি ফেরত নিয়ে আমার নারীত্ব আমাকে ফিরিয়ে দাও।
জিন কেঁদে ফেললো, তুমি তোমার কথা ঠিকই রাখতে পেরেছ, কিন্তু আমি পারিনি।
-কেন, কি হয়েছে?
জিন বলতে থাকে? তোমার নারীত্ব নিয়ে আমি অতি সযত্নে সাবধানে লালন করছিলাম। কিন্তু কাল হলো আমার কামনা। একদিন নিশি রাতে দল বেঁধে কয়েকটা জিন উড়ে যাচ্ছিল আকাশ পথে। ওরা আমাকে দেখতে পেয়ে নিচে নেমে আসে। ওদের মধ্যে একটি উঠতি বয়সের ছোকরা জিনকে দেখে আমি পাগল হয়ে উঠি। সেই রাতে সব কাণ্ডজ্ঞান হারিয়ে তার সঙ্গে রতিরঙ্গ করি। আঃ, সে কি পরমানন্দ তোমাকে কি করে বোঝাবো! যদিও তুমি জন্মগতভাবে নারী, তবুও নারীত্বের আস্বাদ তুমি পাওনি কখনও। আমি পুরুষ ছিলাম যখন তখন অনেক মেয়ের সঙ্গে সহবাস করেছি। তাতে যে সুখ পেয়েছি, সে সুখের তুলনায় রমণীরূপে পুরুষকে উপভোগ করার সুখ অনেক গুণ বেশি।
আমি অত্যন্ত দুঃখিত, লজ্জিত, তোমার বহু যত্নে লালিত এই নারীত্ব আমি অক্ষত রাখতে পারিনি। এখন কথা হচ্ছে, এই পাপবিদ্ধ নারীদেহ ফিরিয়ে নিয়ে তুমি কি করবে? তার চেয়ে আমার পুরুষত্ব নিয়েই তুমি সারাজীবন কাটাও।
শাহজাদী বললো, আমার তাতে ভালোই হবে, কিন্তু তোমার কোনও খেদ থাকবে না?
জিন বলে খেদ? কি বলছো তুমি? নারীদেহ ধারণ করে যে, অমৃতের স্বাদ আমি পেয়েছি, পুরুষের পক্ষে তা আহরণ করা কি? সম্ভব? তুমি কিছু ভেবো না, তোমার এই নারীদেহ আমাকে অনন্ত সুখের সন্ধান দিয়েছে। এ আমি তোমাকে ফিরিয়ে দিতে পারবো না।
সুলতান জাইন অল মুলুক বললেন, এই গল্প থেকেই বুঝতে পারছ তোমরা আল্লাহর এই জগতে কোনও কিছুই অসম্ভব নয়। তাঁর ইচ্ছাতে একটা মেয়েও ছেলেতে রূপান্তরিত হতে পারে। সুতরাং আজ আমার ছোট ছেলের চেষ্টায় আল্লাহর করুণায় আমি আমার অন্ধত্ব থেকে মুক্তি পেয়েছি, একথাই বা শয়তানের যাদুবলে ব্যঙ্গ করছো কেন?তার করুণা থাকলে অসম্ভবও সম্ভব হতে পারে। সুতরাং তোমরা এবার বিদায় হও। আমি আমার প্রতিশ্রুতি মতো নূরজিহানকে সলনিয়তের অর্ধেক ছেড়ে দিয়েছি।
এবার আমরা বাদশাহ ফিরুজের কন্যা সুন্দরী লিলির দিকে চোখ ফেরাই?
প্রতিদিন বিকালে শাহজাদী লিলি তার শখের উদ্যানে বেড়াতে যায়। ঘুরে ঘুরে প্রতিটি ফুলগাছের পরিচর্যা করে নিজের হাতে।
সেদিনও সে বাগানে গিয়েছিলো। গাছগুলো দেখাশুনা করতে করতে এক সময় সে ক্লান্ত হয়ে ঘাসের ওপর এলিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। এরপর শাহজাদা নূরজিহানের আবির্ভাব ঘটে। এবং সে তার হাতের আঙ্গুলে একটি আংটি পরিয়ে দিয়ে চলে যায়।
ঘুম ভাঙ্গতেই শাহজাদী লিলি তার সাধের গোলাপ গাছটা দেখতে না পেয়ে আঁৎকে ওঠে। তারপর নিজের আঙ্গুলে অচেনা এক আংটি দেখে বিস্মিত হয়। এ কি করে সম্ভব? তার ফুলবাগিচায় বাইরের মানুষ প্রবেশ করলো কি করে? এমন সুরক্ষিত স্থানে তো কারো পক্ষে আসা সম্ভব নয়?
শাহজাদী হতাশায় ভেঙ্গে পড়ে। সমুদ্র-গোলাপ তার চোখের মণি, বুকের কলিজা। তাকে ছাড়া সে বাঁচবে কি করে? কে সেই দুবৃত্ত, যে তার যথা সর্বস্ব লুঠ করে নিয়ে গিয়েছে?
শাহজাদী বাদশাহ ফিরুজের কাছে সব কথা জানালো।
—বাবা, ঐ সমুদ্র-গোলাপ ছাড়া আমি বাঁচবো না। ও আমার চোখের মণি। ওকে দেখতে না পেয়ে আমার চোখের যন্ত্রণা শুরু হয়েছে। যদিও আমি নাজুক এবং নাবালিকা তবু বাবা ঐ চোরটাকে আমি খুঁজে বের করবোই।
সেইদিনই শাহাজাদী তার সশস্ত্র নারী-বাহিনী সঙ্গে নিয়ে পিতার মুলুক ছেড়ে সারকাস্তানের উদ্দেশে রওনা হয়ে গেলো। এবং যথাসময়ে সে এসে পৌঁছলো সুলতান জাইন অল মুলুকের শহরে।
সে সময় সারা শহর আনন্দ উৎসবে মুখর হয়ে হাসছিলো। যুবকের ছদ্মবেশধারী শাহজাদী লিলি পথচারীদের জিজ্ঞাসা করে জানলো, সুলতান জাইন অল মুলুক অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন, কিন্তু তার কনিষ্ঠ পুত্র দুঃসাধ্য সাধন করে চিন দেশ থেকে সমুদ্র-গোলাপ এনে পিতার দৃষ্টি ফিরিয়ে দিয়েছে। তারই আনন্দে আজ মেতে উঠেছে সারা দেশ। সুলতান মুক্তহস্তে দান ধ্যান করছেন। গোটা বছর ধরে চলবে এই উৎসব।
শাহজাদী লিলি আনন্দে নেচে ওঠে। যাক, তাহলে তার হারানিধির হদিশ পাওয়া গেলো।
খুব ভালো করে শাহাজাদার ছদ্মবেশে সেজেগুজে সে সুলতানের প্রাসাদে এসে উপস্থিত হলো।
প্রাসাদের চত্বরে একটা ফুলের বাগিচা, শাহজাদী দেখতে পেলো তার সমুদ্রগোলাপ ফুটে আছে একটা বিরাট চৌবাচ্চার মাঝখানে।
সকলের অলক্ষ্যে অনায়াসেই সে তার গোলাপ গাছটাকে সোপার্ট করে পালিয়ে যেতে পারতো, কিন্তু ঐ চোরটাকে সে একবার নিজের চোখে দেখতে চায়। তাই একটা গাছের আড়ালে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে থাকলো।
কিছুক্ষণ পরে শাহজাদা নূর তার বাগানে এলো। শাহজাদার অনলাকসামান্য রূপ-যৌবন দেখে শাহজাদী লিলি বিমুগ্ধ আত্মহারা হয়ে গেলো। ভুলে গেলো সে তার প্রতিহিংসা। অপলক চোখে সে তাকিয়ে রইলো নূরের মুখের দিকে।
বেশ কিছু পরে সম্বিত ফিরে পায় লিলি। হাত দিয়ে চোখ দুটো রগড়ে আবার তাকায় সামনে। কিন্তু কোথায় সেই চোর? নিমেষে উধাও হয়ে গেছে সে।
-ওঃ, চোরটা দেখছি শুধু আমার গোলাপ-চারাটাই চুরি করেনি, এখন দেখছি আমার বুকের ভালোবাসাও নিঙড়ে নিয়ে পালিয়েছে। ইয়া আল্লাহ! একি হলো আমার? এর জন্যে আমি কার কাছে নালিশ জানাবো?
বিরহ-বেদনায় হৃদয় কাতর হলো শাহজাদীর। ঐ বাগিচার ঘাসের ওপরেই সে বসে পড়লো।
কিন্তু অনেকক্ষণ কেটে যাওয়ার পরও যখন সে দেখলো চোর-চূড়ামণি আর ফিরে এলো না, তখন সে হতাশ হয়ে নিজের বাহিনীর মধ্যে ফিরে এলো।
এক টুকরো কাগজ আর দোয়াত কলম নিয়ে নূরজিহানকে একখানা খৎ লিখলো সে। তারপর তার পরিয়ে দেওয়া আংটিটাসহ চিঠিখানা সে পাঠিয়ে দিলো এক পরিচারিকার হাতে।
শাহজাদা নূর তার আংটি দেখে চমকে উঠলো। এক অজানা আনন্দে দুলে উঠলো বুক। তবে কি সে এসেছে? তবে কি তার দেখা পাবো? চিঠিখানা সে খুলে পড়তে থাকলো :
পরমপিতা আল্লাহর অশেষ করুণায় তোমার দর্শন পেলাম। তিনিই তোমাকে নিপুণ হাতে নিখুঁতভাবে গড়েছেন। আহা! কি নির্দয় তিনি। আমাদের অঙ্গের মতো তোমার দেহেও তো তিনি একটু আধটু খুঁতটুত রেখে দিতে পারতেন। একে একপেশে ছাড়া আর কি বলবো, বলো? তোমাকে যে দেখবে, প্রথম দর্শনেই তার সব অহঙ্কার, গর্ব আভিজাত্য লুটিয়ে পড়বে তোমার পায়ের উপর।
তোমার চোখের ঐ যাদু আমাকে নিয়ত আকর্ষণ করছে কেন? আমার কী হবে বলতো? আমি কি তোমার রূপের আগুনে পতঙ্গের মতো পুড়ে ছাই হয়ে যাবো? তাই কি তুমি চাও? যে তুষের অনল জ্বলছে আমার বুকে তা কি কোনদিন নিভবে? আর সেই শাশ্বত বাণী কি মিথ্যে হয়ে যাবে? এক হৃদয়ের অব্যক্ত ভাষা আর এক দরদী হৃদয় ছাড়া কেউ শুনতে পায় না।
আজ আর নয়, এখানেই ইতি করছি।
নূরজিহান চিঠিখানা বন্ধ করে আবিষ্ট হয়ে বসে রইলো কিছুক্ষণ। তারপর কাগজ কলম। নিয়ে জবাব লিখতে থাকলো।
শোনও রজত-শুভ্রা, তোমাকে যেদিন প্রথম দেখেছি, সেদিন থেকে আমার সব চেতনা তোমাতেই বিলুপ্ত হয়ে গেছে, জগতে যা কিছু অপরূপ সুন্দর দেখি তার মধ্যেই তোমার মুখ দেখতে পাই আমি। আকাশের তারারা তোমাকে সুনজরে দেখে না। তার কারণ তুমি ওদের সব জ্যোতি কেড়ে নিয়েছ যে!
তোমার চিঠির শব্দগুলো তীর হয়ে আমার কলিজা এ-ফেঁড় ওফোঁড় করে ফেলছে। তোমাকে দেখার জন্য, কাছে পাওয়ার জন্য আমার হৃদয়ের কান্না কি তুমি শুনতে পাচ্ছো না প্রিয়তমা! আর অহেতুক বিলম্বে কি বা প্রয়োজন? মিলনের সুতবন্ধ তো তৈরি হয়ে গেছে। তুমি পায়ে পায়ে চলে এসো না আমার বাগানে? দেখবে কত ফুল, কত ফল, ঝরনা, কত কোয়েল ২০ রঙে রঙে গানে গানে মুখর করে রেখেছে। এসো না?
বিরহের যে কি যন্ত্রণা সে তো ভুক্তভোগী বিরহিণী ছাড়া বুঝতে পারে না। তবে কি, তোমার বুকে কোনও কষ্ট নাই? আমার দশা।
তো জবাই করার পর দাপানো মোরগের মতো! দিন রাত ছটফট করছি। সুতরাং আর দেরি নয়, শীঘ্র চলে এসো।
আমার কলম আর সরছে না। হাত কাঁপছে, বুক কাঁপছে। সর্বাঙ্গ থরথর করছে।
চিঠিখানা ভঁজ করে নূরজিহান পরিচারিকা দূতীর হাতে তুলে দিয়ে বলে, তোমার মালকিনকে বুঝিয়ে বলো আমার অসহায় অবস্থা।
এই সময় রাত্রি প্রভাত হয়ে আসে। শাহরাজাদ গল্প থামিয়ে চুপ করে বসে থাকে।
নয়শো ঊনষাটতম রজনী :
আবার সে বলতে শুরু করে :
চিঠিখানা পেয়ে লিলির দেহ মনে শিহরণ জাগে।
–ওরে, তোরা আমায় সাজিয়ে দে। আমি তার অভিসারে যাবো। সখীরা অপরূপ সাজে সাজিয়ে দিলো শাহজাদী লিলিকে। তারপর সে এসে উপস্থিত হলো নূর-এর ফুল-বাগিচায়। সেখানে অধীর হয়ে অপেক্ষা করছিলো শাহজাদা।
দু’জনের মিলন হলো।
এরপর ওরা অমর্ত্য প্রেমের সায়রে গা ভাসিয়ে সুখে সম্ভোগে সারাটা জীবন কাটিয়ে দিয়েছিলো।
শাহরাজাদ গল্প শেষ করে থামে। দুনিয়াজাদ দিদিকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেয়ে বলে, ওঃ, কি চমৎকার গল্প দিদি? আর কি সুন্দর করেই না বলতে পার তুমি? এই রকম আর একটা শোনাও না?
শাহরাজাদ মুচকি হেসে বলে, নিশ্চয়ই শোনাবো বোন। অবশ্য মহামান্য জাঁহাপনা যদি আজ্ঞা করেন
সুলতান শারিয়ার বলে, আমার অনুমতির কোনোও প্রয়োজন নাই। শাহরাজাদ তুমি তো জান, একটা রাতও তোমার গল্প না শুনলে আমি ঘুমোত পারি না।
শাহরাজাদ বলে, তাহলে শুনুন জাঁহাপনা, এবার আপনাকে আরও একটা মজার কাহিনী শোনাচ্ছি।