চতুর্থ কাণ্ড। প্রথম প্রপাঠক
প্রথম অনুবাক
মন্ত্র- যুঞ্জানঃ প্রথমং মনস্তত্ত্বায় সবিতা ধিয়ঃ। অগ্নি জ্যোতির্নিচায্য পৃথিব্যা অধ্যাহভরৎ। যুক্তায় মনসা দেবাৎ সুবর্যতো ধিয়া দিব। বৃহজ্জ্যোতিঃ করিষ্যতঃ সবিতা প্ৰ সুবাতি তা। যুক্তেন মনসা বরং দেবস্য সবিতুঃ সবে। সুবর্গেয়ায় শক্ত্যৈ। যুঞ্জতে মন উত যুঞ্জতে ধিয়ো বিপ্ৰা বিপ্রস্য বৃহততা বিপশ্চিতঃ। বি হোত্রা দধে বয়ুনাবিদেক ইৎ মহী দেবস্য সবিতুঃ পরিঙ্কুতিঃ। যুজে বাং ব্রহ্ম পূৰ্ব্বং নমোভিৰ্বি শ্লোকা যন্তি পথ্যেব সূরাঃ।। শৃত্তি বিশ্বে অমৃতস্য পুত্ৰা আ যে ধামানি দিব্যানি ত–। যস্য প্রয়াণমন্বন্য ইয়ুবো দেবস্য মহিমানমৰ্চতঃ। যঃ পার্থিবানি বিমমে স একশো রজাংসি দেবঃ সবিতা মহিত্বনা। দেব সবিতঃ প্র সুব যত্তং সুব যজ্ঞপতিং ভগায় দিবো গন্ধৰ্ব্বঃ। কেতপূঃ কেতং নঃ পুনাতু বাচস্পতিৰ্বাচমদ্য স্বাতি নঃ। ইমং নো দেব সবিতর্যজ্ঞং প্র সুব দেবায়ুবং সখিবিদং সত্রাজিতম ধনজিতং সুবর্জিত। ঋচা স্তোমং সমর্জয় গায়ণে রথস্তর। বৃহদ্ধায়ত্ৰবৰ্ত্তনি। দেবস্য বা সবিতুঃ প্রসবেহখিনোৰ্ব্বাহুভ্যাং পৃষ্ণো হস্তাভ্যাং গায়ণে ছন্দসাহদদেহঙ্গিরস্বদভ্রিরসি নারিঃ অসি পৃথিব্যাঃ সধস্থাদগ্নিং পুরীষ্যমঙ্গিরদাভর ত্রৈভেন ত্বা ছন্দহদদেইঙ্গিরদ্বদ্রিরসি নারিরসি ত্বয়া বয়ং সধন্থ আইগ্নিং শকেম খনিতুং পুরীষ্যং জাগতেন ত্বা ছন্দসাহদদেহঙ্গিরস্বদ্ধস্ত আধায় সবিতা বিভ্রদর্ভিং হিরণ্যয়ী। তয়া জ্যোতিরজমিদগ্নিং খাত্বী ন আ ভরাহনুইভেন ত্বা ছন্দসাহদদেহঙ্গিরস্বৎ ॥১॥
[সায়ণাচার্য বলেন–তত্রাাদান প্রতিপাদকে প্রথমানুবাকে প্রথমং তামঘদ্বামমন্ত্র উচ্যন্তে।–এই প্রথম অনুবাকে অভ্রিগ্রহণ বিষয়ক হোমমন্ত্রগুলি কথিত]।
মর্মার্থ– প্রেরণকর্তা (পরমেশ্বর) প্রথমে অগ্নিচয়ন বিষয়ে মনোনিবেশ পুর্বক সকল কর্মের সফল প্রকাশ সাধনের বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে অগ্নিকে পৃথিবীতে আনয়ন করেন। অনন্তর সেই অগ্নিমুখে উখারূপে (পাকপাত্র অর্থাৎ হাঁড়ীরূপে) এই পৃথিবীকে স্থাপিত করে এই হোমানুষ্ঠান করছি। সবিতাদেব (অর্থাৎ সেই পরমেশ্বর) চপল বা চঞ্চল ইন্দ্রিয়বিশেষগুলিকে প্রকর্ষের সাথে সংযত করে স্বর্গপ্রাপ্তির কামনায় বর্ধমান অগ্নিকে ইষ্টক ইত্যাদি বিষয়ক প্রজ্ঞার দ্বারা প্রকাশের নিমিত্ত দ্যোতমান্ করে প্রেরণ করেছেন। সেই সবিতাদেবের প্রেরণায় বিষয়সমূহ হতে মনকে নিয়মিত (সংযত করে স্বর্গলোকে গীয়মান্ (প্রশংসিত) এই অগ্নির সম্পাদনের নিমিত্ত আমরা সমর্থ হবো (গীয়মানস্যাগ্নেঃ সম্পাদনায় শক্ত্যা ভুয়াম্ম)। যজমান্ সম্বন্ধী ব্রাহ্মণ ঋত্বিকগণের অনুগ্রহে প্রথমে আপন মন বিষয়সমূহ হতে নিবর্তিত হয়; এবং ইষ্টক ইত্যাদি বিষয়ক জ্ঞানসমূহ সম্পাদিত হয়। (কিরকম বিপ্রগণের? না,) প্রভূত অগ্নিচয়নে উদ্যোগী, অর্থাৎ অগ্নির প্রয়োগে অভিজ্ঞ। সেই বিপ্রগণ হোমানুষ্ঠানের কর্মে আলস্যরহিত। তারা জানেন যে, ঋত্বিক যজমানগণের আভপ্রায় সম্পর্কে অভিজ্ঞ (বয়ুনাবিৎ) সেই এক ও অদ্বিতীয় সবিতাদেব হতেই সবকিছু নির্মিত হয়েছে। সর্ব বেদে শায়মাণা মহতী স্তুতিসমূহ সেই পরমেশ্বর সবিতাদেবের উদ্দেশেই ধ্বনিত (বা সম্পাদিত)।–হে যজমানদম্পতি! আপনাদের রথে (চলার পথে) পূর্ববর্তী মহর্ষিগণের দ্বারা অনুষ্ঠিত ব্রাহ্মণ পরিবৃত অগ্নিচয়ন নামে আখ্যাত কর্ম নমস্কারপূর্বক সম্পাদিত করছি (সম্পাদয়ামি)। সেই সম্পাদনের ফলে আপনাদের কীর্তি ভূলোকে নানাভাবে প্রসারিত হবে; (তার দৃষ্টান্ত)–যেমন অন্তরীক্ষ হতে প্রসারিত পথ ধরে সূর্যরশ্মি (সুরাঃ) প্রসারিত হয়ে আসে, সেইভাবে। অধিকন্তু, অমৃতের প্রজাপতিরূপ পুত্রগণ, অর্থাৎ দেবতাগণ, যাঁরা দিব্যলোকেও স্থিত হয়ে আছেন, তাঁরাও সকলে যজমানের সেই কীর্তিকথা শ্রবণ করতে পারবেন। যে প্রেরক পরমেশ্বর (সবিতাদেব) পৃথিবীগত অনুপরমাণু-বিশেষকে গণনা করে নিশ্চিত হয়েছেন, (অর্থাৎ নির্ভুলভাবে গণনা করেছেন), যে সবিতাদেবের মহত্ত্ব সর্বত্র ব্যাপ্ত হয়ে আছে, সেই সবিতাদেবের মহিমার অর্চনা পূর্বক অন্য সকল দেবতা তার অনুগমনে প্রবৃত্ত হয়ে থাকেন।–হে সবিতাদেব! আপনি সৌভাগ্যের নিমিত্ত (ভগায়) প্রকৃষ্টরূপে যজ্ঞের প্রবর্তন (বা প্রেরণ) করুন এবং যজ্ঞপতি অর্থাৎ যজমানকে প্রেরণ করুন। স্বর্গস্থিত কোন গন্ধর্ব পরকীয় চিত্তে বর্তমান জ্ঞানের বিভ্রান্তি পরিহার পূর্বক যেমন শোধন করেন, সেইভাবে তিনি আমাদেরও চিত্তস্থায়িনী জ্ঞানের ভ্রান্তি পরিহার পূর্বক (দূরীভূত করে) শোধিত করুন। বাচস্পতি অদ্য এই কর্মসমূহে (যজ্ঞে) আমাদের বাক্য (মন্ত্র) আস্বাদন করুন (স্বদয়তু)। হে সবিতাদেব! আমাদের এই যজ্ঞ প্রবর্তন (বা প্রেরণ) করুন। (কীরকম যজ্ঞ? না,) যে যজ্ঞ দেবতাগণের সাথে যুক্ত বা মিলিত হবে, যে যজ্ঞ স্বনিম্পাদক যজমানের বেত্তা বা সখ্যবৎ, যে যজ্ঞ দ্বাদশাহ সত্ৰসমূহের দ্বারা ব্যাপ্ত, যে যজ্ঞ তার সাধনের ফলস্বরূপ ধনজয় (অর্থাৎ ধনপ্রাপ্তি) ও স্বর্গজয় (অর্থাৎ স্বর্গলাভ) সম্পাদন করে।–হে অগ্নি! সামাধারভূত স্তোত্ৰসমূহকে ঋক-আবৃত্তিরূপে সমৃদ্ধ করুন। গায়ত্রী সামের সাথে রথন্তর সামের সমৃদ্ধি করুন (সমৰ্দ্ধয়)। যে বৃহৎসামের পথ হলো গায়ত্রীসাম (বৃহৎসামস্তগায়ত্রবর্তনি), সেই গায়ত্রীসামের সাথে বৃহৎসামকে সমৃদ্ধ করুন।–হে অত্রি (মৃত্তিকা খননের নিমিত্ত কাষ্ঠনির্মিত কুদ্দাল বা কোদাল)! সবিতাদেবের প্রেরণায় অশ্বিযুগলের (অশ্বিনীকুমার নামে অভিহিত দুই দেববৈদ্য দেবতার) বাহুযুগলের (কক্ষ বা বগল থেকে মণিবন্ধ পর্যন্ত দুই বাহুর) দ্বারা, পূষাদেবতার হস্তদ্বয়ের (মণিবন্ধ থেকে অঙ্গুলী পর্যন্ত দুই হস্তের) দ্বারা, অঙ্গিরা ঋষিগণ প্রথম যেরূপ প্রথম গায়ত্রীছন্দে (বা মন্ত্রে) তোমাকে গ্রহণ করেছিলেন, সেই রূপে গায়ত্রীছন্দে তোমাকে গ্রহণ করছি। তোমার কোন শত্রু নেই (ন বিদ্যতে অরির্যস্যাস্তব…)। হে শত্রুরহিত অভ্রি! পৃথিবীর ক্রোড় (উৎসঙ্গ) হতে পাংসু (অর্থাৎ শুষ্ক মৃত্তিকারূপ অগ্নি স্থাপন করো। (অর্থাৎ শুষ্ক মৃত্তিকা খনন করে তার দ্বারা উখা অর্থাৎ উনান নির্মাণ করে সেখানে অগ্নি প্রজ্বলন করা বা করব)। (এখানে অগ্নিচয়ন প্রকরণে সর্বত্র মৃত্তিকা ও অগ্নিকে অভিন্নরূপে বর্ণনা করা হয়েছে–অয়ং চোপচারোইগ্নিচয়নপ্রকরণে সর্বত্রানুবর্তিষ্যতে)। হে অত্রি! তুমি মৃৎসম্পাদন- কুশল, তোমার কোন শত্রু নেই। তোমার সহায়তায় আমরা পৃথিবীর উৎসঙ্গ খননে সমর্থ হবো। অঙ্গিরা ঋষিগণ যেরূপে প্রথম জগতী ছন্দে (বা মন্ত্রে), ত্রিষ্টুপছন্দে (বা মন্ত্রে) এবং অনুষ্টুপ ছন্দে (বা মন্ত্রে গ্রহণ করেছিলেন, সেইভাবে আমরাও তোমাকে জগতী, ত্রিষ্টুপ ও অনুষ্টুপ ছন্দে গ্রহণ করছি। অতঃপর এই তিন ছন্দের সহায়তায় তোমার সাথে যুক্ত হয়ে আমরা পৃথিবীর উৎসঙ্গ খনন করে (উখা নির্মাণপুর্বক) অগ্নির আহরণে (বা স্থাপনে) সমর্থ হবো। প্রেরক পরমেশ্বর (সবিতাদেব) পুরাকালে সুবর্ণনির্মিত অভ্রি আপন হস্তে ধারণ করেছিলেন। অতএব তুমি সেই হিরন্ময় অভ্রির সাথে যুক্ত হয়ে সর্বদা জ্যোতিঃ প্রকাশমান অগ্নিকে খনন করো, অর্থাৎ অগ্নিরূপ মৃত্তিকা খনন করে আমাদের নিমিত্ত আনয়ন করো (অম্মদৰ্থমাভরাহনয়)। [এই অনুবাকে ব্যাখ্যাত মন্ত্রাংশগুলি পরবর্তী কাণ্ডের প্রথম প্রপাঠকের প্রথম অনুবাকের সাথে সংশ্লিষ্ট ॥১॥
[সায়ণাচার্য বলেন–দ্বিতীয়ে মৃদাক্রান্তিরুচ্যতে। অর্থাৎ, এই দ্বিতীয় অনুবাকে মৃত্তিকার আক্রমণের বিষয় কথিত হয়েছে।]
.
দ্বিতীয় অনুবাক
মন্ত্র- ইম মগ্ন রশনামৃতস্য পূৰ্ব্ব আয়ুষি বিদথেষু ক্যা। তষ্য দেবাঃ সুতমা বভূবুতস্য সামৎ সরমারপন্তী। প্রতুত্তং বাজিমা দ্রব বরিষ্ঠমনু সম্বতম্।। দিবি তে জন্ম পরমমন্তরিক্ষে নাভিঃ পৃথিব্যামধি যোনিঃ ॥ যুঞ্জাথাং রাসভং যুবমস্মিনামে বৃষন্বসূ। অগ্নিং ভরন্তমস্ময়ুম । যোগেযোগে তবস্তরং বাজেবাজে হবামহে। সখায় ইন্দ্রমূতয়ে । প্রতুৰ্ব্ব এহ্যবক্রামন্থশস্তী রুদ্রস্য গাণপত্যান্ময়োভূরেহি। উৰ্ব্বন্তরিক্ষমন্বিহি স্বস্তিগদ্যুতিরভয়ানি কৃষ। পূষ্ণা সযুজা সহ। পৃথিব্যাঃ সধস্থাদগ্নিং পুরীষ্যমঙ্গিরস্বদচ্ছেহ্যগ্নিং পুরীষ্য মঙ্গিরস্বদচ্ছেমোহল্পিং পুরীষ্যমঙ্গিরস্বভারিষ্যামোহগ্নিং পুরীর্ষঙ্গিরস্বম্ভরামঃ ॥ অন্থগ্নিরুষসামগ্রমখ্যহানি প্রথমো জাবেদাঃ। অনু সূৰ্য্যস্য পুরুত্ৰা চ রশীননু দ্যাবাপৃথিবী আ ততান ॥ আগত্য বাজধ্বনঃ সৰ্ব্ব মৃধো বি ধুনুতে। অগ্নিং সধস্থে মহতি চক্ষুষা নি চিকীষতে ॥ আক্রম্য বাজিন পৃথিবীমগ্নিমিচ্ছ রুচা ত্ব। ভূম্যা বৃত্বায় নো ব্রহি খনাম তং বয়ম্ ॥ দৌস্তে পৃষ্ঠং পৃথিবী সধস্থমাত্মাহন্তরিক্ষং সমুদ্রস্তে যোনিঃ॥ বিখ্যায় চক্ষুষা ত্বমভি তিষ্ঠ পৃতন্যতঃ ॥ উক্রাম মহতে সৌভগায়াস্মদাস্থানাদ দ্রবিণোদা বাজি। বয়ং স্যাম সুমতৌ পৃথিব্যা অগ্নিং খনিষ্যন্ত উপস্থে অস্যাঃ। উদক্রমীন্দ্রবিদোদ্রা বাজ্যৰ্বাহকঃ স লোকং সুকৃতং পৃথিব্যাঃ। ততঃ খনেম সুপ্রতীকমগ্নিং সুবো রুহাণা অধি নাক উত্তমে। অপো দেবীরুপ সৃজ মধুমতীর্যক্ষ্মায় প্রজাভ্যঃ। তাসাং স্থানাদুজ্জিহতামোষধয়ঃ সুপিম্পলাঃ। জিঘর্মি অগ্নিম মনসা ঘৃতেন প্রতিক্ষ্যন্তং ভুবনানি বিশ্বা। পৃথুং তিরশ্চা বয়সা বৃহন্তং ব্যষ্ঠিমন্নং রভসং বিদান। আ ত্বা জিঘৰ্ম্মি বচসা ঘৃতেরক্ষা মনসা তজুষ। মৰ্য্যশ্রীঃ স্পৃহয়র্ণো অগ্নিৰ্ণভিমৃশে তনুবা জর্ষণঃ । পরি বাজপতিঃ কবিরগ্নিহব্যান্যক্রমীৎ।। দধদ্রানি দাশুষে ॥ পরি ত্বাহয়ে পুরং বয়ং বিপ্রং সহস্য ধীমহি। ধষর্ণং দিবেদিবে ভেত্তারং ভঙ্গুরাবতঃ। ত্বমগ্নে দ্যুভিমাশুশুক্ষণিমভ্যমনস্পরি। ত্বং বনেভ্যস্তুমোষধীভ্যং নৃণাং নৃপতে জায়সে শুচিঃ ॥২॥
মর্মার্থ– পূর্বে মহর্ষিগণ অশ্বের আগমনের নিমিত্ত (অর্থাৎ অশ্বকে আনয়নের নিমিত্ত) এই রশনা (লাগাম) গ্রহণ করেছিলেন, যে রশনা জ্যোতিষ্টোম ইত্যাদি যজ্ঞের পরিসমাপ্তি পর্যন্ত ঋত্বিক ও যজমানের প্রবৃত্তির (নিযুক্ত থাকার কথা জ্ঞাপিত করে (প্রবৃত্তিমারপন্তী কথয়ন্তী), সেই রশনার দ্বারা পুরাকালে দেবগণ সোমযাগ প্রাপ্ত হয়েছিলেন। সেই রকমেই (অর্থাৎ যাগপ্রাপ্তির উদ্দেশে) এই রশনা গৃহীত হয়। (রশনার দ্বারা বদ্ধ অশ্বকে মৃত্তিকা খননের স্থানে আনয়ন পূর্বক তার আক্রমণে অর্থাৎ পাদঘর্ষণের দ্বারা উৎখাত মৃত্তিকার দ্বারা নিষ্পন্ন উখাতে বা উনানে অগ্নি উৎপন্ন পূর্বক ইষ্টকোচিত দেশে, অর্থাৎ যেন ইষ্টকের দ্বারা নির্মিত এমন স্থানে, ঋত্বিকগণ জ্যোতিষ্টোম ইত্যাদি যজ্ঞের অনুষ্ঠান করে থাকেন (ঋত্বিগভিরনুষ্ঠেয়াঃ)। যজ্ঞের যে অঙ্গ মরহিত ব্যাপারের বা কর্মের দ্বারা সম্পন্ন হয়, যজ্ঞসম্বন্ধি সেই অঙ্গ সমৃদ্ধিহীন হয়। সেই কারণে এই মন্ত্র উচ্চারণ পূর্বক রশনা গ্রহণ কর্তব্য–হে অশ্ব (বাজি)! পাষাণ ইত্যাদির অভাবের কারণে অতি প্রশস্ত বা বরিষ্ঠ ভূমি অতিক্রম করার নিমিত্ত তুমি আগত হও। দ্যুলোকে পরম উৎকৃষ্ট রোহিত ইত্যাদি দেবশ্বরূপে তোমার জন্ম সাধিত হয়েছে; অন্তরীক্ষলোকে নিযুৎ নামক বায়ুর অশ্বরূপে রথ বহন করে তুমি সঞ্চরণ করো, এই পৃথিবীর ভূমির উপর তোমার নিবাসস্থান, তা প্রত্যক্ষভাবে দর্শন করা যায়। অতএব তুমি শীঘ্ৰ আগমন করো। এই শীঘ্র আগমনের স্বরূপভূত মন্ত্রের দ্বারা অশ্বের মহিমা প্রকাশিত হয়েছে। –হে যজমান-দম্পতি! আপনারা আমাদের মঙ্গলকারী অগ্নিরূপ মৃত্তিকা বহনরূপ নিয়মবিশেষের নিমিত্তভূত (অর্থাৎ বহনসমর্থ) এই গর্ভকে বশনার দ্বারা বদ্ধ করুন; আপনারা যাগ নিম্পাদনের দ্বারা ফল-অভিবর্ষণের নিমিত্তভূত ধনবর্ষণকারী। রথবহন যোদ্ধৃবহন বা এই অশ্বের যোগ্য অপরাপর প্রতিটি কর্মের দ্বারা ইন্দ্রিয় অবরোধ (বা রক্ষা) ও অন্ন প্রাপ্তির নিমিত্ত পরস্পর সখ্যতাবদ্ধ আমরা (অর্থাৎ এই ঋত্বিক ও যজমানগণ) বলশালী অশ্বের আহ্বান করছি। হে অশ্ব! পাপরূপ শত্রুবর্গের দ্বারা কৃত বিঘ্নসমূহ পরিহার পূর্বক, পশুস্বামী রুদ্রদেবের গাণপত্য হতে আমাদের সুখ সম্পাদিত করে, বিস্তীর্ণ অন্তরীক্ষ অভিলক্ষিত করে (অনুবীক্ষ্যেহি), গো-সমূহের স্বস্তি বিধান করে (অর্থাৎ ব্যাঘ্র ইত্যাদি হতে গাভীগণের আক্রমণের শঙ্কা পরিহার করে), তুমি আগমন করো। হে অশ্ব! পূদেবতার সাথে পৃথিবীর ক্রোড় হতে পুরীষায়তন অর্থাৎ শুষ্ক মৃত্তিকারূপ অগ্নি আহরণের নিমিত্ত আগত হও। (পোষাক-দেবতা পূষা উপদ্রব পরিহারের দ্বারা মার্গসমূহের সম্যক্ পরিচালক; সেই কারণে তাঁর সাহচর্যের কথা উক্ত হয়েছে)। প্রথমে অঙ্গিরা ঋষিগণ যেমন তোমাকে আহ্বান করেছিলেন, সেইভাবে আমরাও তোমাকে আহ্বান করছি। (এই ব্যাখ্যাত মন্ত্রাংশ পরবর্তী কাণ্ডের ১ম প্রপাঠকের ২য় ও ৩য় অনুবাকের সাথে সংশ্নিষ্ট। অপরাংশ পূর্বে ব্যাখ্যাত) ॥২॥
[সায়ণাচার্য বলেন-তৃতীয়ে খননমভিধীয়তে। অর্থাৎ এই তৃতীয় অনুবাকে মৃত্তিকার খননকার্য সম্পকীত বিষয় কথিত হয়েছে]।
.
তৃতীয় অনুবাক
মন্ত্র- দেবস্য ত্বা সবিতুঃ প্রসবেংশ্বিনোৰ্ব্বাহুভ্যাং পূষ্ণো হস্তাভ্যাম পথিব্যাঃ সধস্থেগ্নিং পুরীষ্যমঙ্গির খনামি।। জ্যোতিষ্মন্তং ত্বাংগ্নে সুপ্রতীমজশ্রেণ ভানুনা দীদ্যান। শিবং প্রজাপভ্যাহহিং সন্তং পৃথিব্যাঃ সধহেল্পিং পুরীষ্যমঙ্গিরস্বৎ খনামি। অপাং পৃষ্ঠমসি সপ্রথা উৰ্বায়িং ভবিষ্যদপরাৰপিষ্ঠ। বর্ধমানং মহ আ চ পুষ্করং দিবো মাত্ৰয়া বরিণা প্রথস্ব। শৰ্ম্ম চ স্থঃ বৰ্ম্ম চ স্থা অছিদ্রে বহুলে উভে। বাচস্বতী সং বসাথাং ভগ্নিং পুরীষ্যম। সং বসাথাং সুবৰ্বিদা সমীচী উরসা অনা। অগ্নিমন্তর্ভরিষ্যন্তী জ্যোতিন্তমজমিৎ। পুরীষ্যোহসি বিশ্বভরাঃ। অথৰ্ব্বা ত্বা প্রথমো নিরমন্থদগ্নে। ত্বমগ্নে পুরাদধ্যথা নিরমন্থত। মূৰ্ব্বো বিশ্বস্য বাঘতঃ। তমু ত্বা দধ্যভৃষিঃ পুত্র ঈধে অথৰ্বণঃ। বৃত্রহণং পুরন্দর। তমু ত্বা পাত্যো বৃষা সমীধে দহন্তমম্। ধনঞ্জয়ং রণেরণে। সীদ হোতঃ স্ব উ লোকে চিকিত্বানৎ সাদয়া যজ্ঞং সুকৃতস্য যোনৌ। দেবাবীর্দো হবিষা যজাস্যগ্নে বৃহদ্যজমানে বয়ো ধাঃ। নি হোত হোতৃষদনে বিদানযো দীদিবাং অসদৎ সুদক্ষঃ। অদব্রতপ্ৰমতি সিঃ সহস্ৰম্ভরঃ শুচিজিন্যে অগ্নিঃ।। সং সীদ মহান্ অসি শোস্ত্র দেববীতমঃ। বি ধূমমগ্নে অরুষং মিয়েধ্য সৃজ প্রশস্ত দর্শত। জনিম্বা হি জেন্যো অগ্রে অহ্নাং হিতে হিতেরুষো বনেযু।। দমেদমে সপ্ত রত্না দনোহগ্নিহোতা নি সাদা যজীয়ান্ ॥৩॥
মর্মার্থ- প্রেরক পরমেশ্বরের (সবিতার) প্রেরণায় অশ্বিদেবতাযুগলের বাহুদ্বয়ের দ্বারা ও পূদেবতার হস্তদ্বয়ের দ্বারা আমরা সেইভাবে পৃথিবীর ক্রোড় হতে অগ্নিস্বরূপ শুষ্ক মৃত্তিকা খনন করছি, যেভাবে প্রথম অঙ্গিরা ঋষিগণ করেছিলেন। হে অগ্নি! পৃথিবীর উপরিপ্রদেশে শুষ্ক মৃত্তিকাযোগ্য (পাংসুযোগ্যম) যে আপনাকে অঙ্গিরা ঋষিগণ প্রথম খনন করেন, (এবং বর্তমানে আমরা যে আপনাকে খনন করছি), সেই আপনি জ্যোতিৰ্ম্মন্ত (অর্থাৎ শিখাযুক্ত বা দীপ্তিবিশিষ্ট), সুপ্রতীক (অর্থাৎ সুমুখ বা সুন্দর অবয়বশালী), নিরন্তর অজস্র রশ্মির দ্বারা প্রকাশমান, প্রজাবর্গের উপকারার্থে শান্তমত (শিব, মঙ্গলময়) এবং হিংসাকর্ম রহিত।–হে পদ্মপত্র (পুষ্করপর্ণ)! তুমি জলের উপরিভাগে ভাসমান (বা সবিস্তারমত); অগ্নিসাধন মৃত্তিকা প্রভূত ভাবে (বহুলং) পূর্ণ করতে সমর্থ; জলের ন্যায়ই বিনাশহীন; দিনে দিনে বৃদ্ধিযুক্ত, নির্লেপত্বের কারণে (কোনকিছুর সাথে নিঃসম্পর্ক হেতু) পূজনীয়, অগ্নির নিম্পাদনের দ্বারা পুষ্টিকর–এইরকম যে তুমি, আকাশ অপেক্ষাও অধিক পরিমাণে বিস্তৃত হও।–হে কৃষ্ণজিন ও পুষ্করপর্ণ! তোমরা উভয়ে সুখকর হও এবং কবচের ন্যায় রক্ষকও হও (কবচবদ্রক্ষকে অপি ভবথঃ)। (কিরকম? না,) ছিদ্ররহিত বহুল বিস্তীর্ণ কৌটা ইতাদির মতো আচ্ছাদক হও (আচ্ছাদনপ্রকারবতী পুটিকাদিসদৃশ)। এইরকম তোমরা সম্যকরূপে মৃত্তিকাকে আচ্ছাদিত করে থাকো। অতএব (এই স্থলে) শুষ্ক মৃত্তিকারূপ অগ্নিকে ধারণ করো (বা আছাদিত করো)। হে কৃষ্ণাজিন ও পুষ্করপর্ণ! তোমরা স্বয়ং পরনিরপেক্ষ, বক্ষসদৃশ তোমাদের স্বরূপের বা দেহের দ্বারা সম্যকরূপে আচ্ছাদন করো। (তোমরা কীরকম? না,) তোমরা সুবর্বিদা, অর্থাৎ স্বর্গলাভ সাধনের উপায়ভূত, সমীচীনরূপ মৃত্তিকা বন্ধনের অনুকুল, অন্তরে বা আপন উদরে নিরন্তর জ্যোতিষ্মন্ত অগ্নিকে ধারণ করে আছ।–হে খনন-প্রদেশ (যজ্ঞভূমির খননযোগ্য স্থান)! তুমি বহুল পরিমিত পাংপুর (শুষ্ক মৃত্তিকার) যোগ্য, অতএব তুমি সকল উখামুখ পূরণ বা ভরণ করো।–হে অগ্নি! অথবা নামক ঋষি প্রথমে আপনাকে নিঃশেষে মথিত করেছিলেন। হে অগ্নি! অথবা নামক ঋষি যে পুষ্করপর্ণের (অর্থাৎ পদ্মপত্রের) উপরে আপনাকে নির্মন্থিত করেছিলেন, সেই পত্র মস্তকের ন্যায় (উত্তমাঙ্গবৎ) প্রশস্ত এবং সর্বজগতের বাহক (বাহকাৎ)। হে অগ্নি! অথর্বণ (বা অথবা) ঋষির পুত্র দধ্য নামক ঋষি আপনাকে প্রজ্বলিত করেছিলেন। (আপনি কিরকম? না,) আপনি বৃত্ৰহনং (অর্থাৎ বৈরিবিনাশক), পুরন্দরং (অর্থাৎ রুদ্ররূপে অসুরগণের তিনটি পুরীর বিদারক)। (রুদ্র অসুরগণের তিনটি পুরীকে একসঙ্গে ধ্বংস করে ত্রিপুরারী নামে অভিহিত হন; অগ্নিও যেন সেই রুদ্রতুল্য অসুরপুরীর ধ্বংসকারী)। হে অগ্নি! পাথ্য নামক কোনও শ্রেষ্ঠ ঋষি আপনাকে প্রজ্বলিত করেছিলেন। (সেই আপনি কিরকম? না,) আপনি দস্যুহমং (অর্থাৎ তস্করগণের অতিশয়ভাবে হত্যাকারী, রণে রণে ধনঞ্জয় (অর্থাৎ যে যে যুদ্ধে আপনি লিপ্ত হয়েছেন সেই সেই প্রতিটি যুদ্ধে আপনি ধনসমূহ জয় করেছেন)। হে হোতই (হোমনিষ্পদক)! আপনি অভিজ্ঞ; যজ্ঞস্থানে উত্তরবেদিরূপ আপনার নিজস্থানে উপবেশন করুন এবং আমাদের এই যজ্ঞ পুণ্যকর্মসম্পাদক যোগ্যস্থানে স্থাপন করুন। আপনি দেবতাগণের প্রিয়, সেই রকমে আপনি হবির দ্বারা দেবতাগণের উদ্দেশে যাগানুষ্ঠানকারী। হে অগ্নি! আপনি যজমানে দীর্ঘ আয়ু স্থাপন করুন; (অর্থাৎ যজমানকে দীর্ঘ-আয়ু প্রদান করুন)। হোমনিষ্পদকের যোগ্য উত্তরবেদিরূপ স্থানে অগ্নি সম্যক উপবিষ্ট হয়েছেন। (কিরকম অগ্নি? না,) তিনি হোতা (অর্থাৎ দেবগণের আহ্বায়ক), বিদানঃ (অর্থাৎ স্থান সম্পর্কে অভিজ্ঞ), ত্বেষো (অর্থাৎ দীপ্তিমা) দীদিবান (অর্থাৎ দেবতাগণের হবির দাতা) ও সুদক্ষ (অর্থাৎ অত্যন্ত কুশল); তিনি বিনাশহীন যজ্ঞকর্মে প্রকৃষ্টরূপে মতিমান, তিনি বশিষ্ঠ (অর্থাৎ অতিশয় বাসয়িতা বা বাসস্থান বা স্থিতি দানকারী), সহস্রম্ভর (অর্থাৎ সহস্ৰসংখ্যক হবির পোয়ণকারী) ও শুচিজি (অর্থাৎ হোমযোগ্য শিখাবিশিষ্ট)। হে অগ্নি! আপনি এই পুষ্করপর্ণে সম্যক উপবেশন করুন। আপনি অনেক যজ্ঞসাধনের হেতুভূত হওয়ায় মহান; আপনি দেববীতমঃ (অর্থাৎ দেবতার নিকট গমনকারী; এইরকম যে আপনি, দীপ্ত হন। হে মেধাহ্ (অর্থাৎ প্রশস্ত বা উৎকৃষ্ট) অগ্নি! আপনি শান্ত (শমগুণযুক্ত) ধূম বিশেষভাবে সৃজন করুন। হে অগ্নি! আপনি প্রভাতকালে জয়শীলরূপে উৎপন্ন হয়ে থাকেন। (অর্থাৎ দিবার প্রথমেই যাজ্ঞিককে জয়শীল করার নিমিত্ত প্রজ্বলিত হয়ে থাকেন)। হবিঃ-ভক্ষণকারী দেববর্গ ও ঋত্বিক যজমানরূপী মনুষ্যগণ আপনার হিত (মঙ্গল) আচরণ করেন, এই কারণে আপনিও তাদের সকলের হিত সাধন করে থাকেন। নানাবিধ ফলবৃক্ষ সমন্বিত বনে আপনি কোপরহিত হয়ে অবস্থান করুন, অর্থাৎ দাবাগ্নিরপে সেই বন দগ্ধ করবেন না। এই অগ্নি যজমানগণের গৃহে গৃহে উপবিষ্ট। (তিনি কিরকম? না,) সেই অগ্নি সপ্তরত্ন ধারণ করেন। অতএব তিনি সপ্তজিহ্ নামে সর্বত্র প্রসিদ্ধ। (আথবণ অর্থাৎ অথর্ববেদজ্ঞ ব্রাহ্মণগণ বলে থাকেন–কালী করালী চ মনোজবা চ সুলোহিতা যা চ সুধুম্রবর্ণা। স্ফুলিঙ্গিনী বিশ্বরূচী চ দেবী লেলায়মানা ইতি সপ্ত জিহ্বা ।–অর্থাৎ অগ্নির সপ্ত জিহ্বা হলেন কালী, করালী, মনোজবা, সুলোহিতা, সুধুম্রবর্ণা, স্ফুলিঙ্গিনী ও বিশ্বরুচী নামে লেলিহমান জিহ্বারূপিণী সপ্ত দেবী)। সেই অগ্নি দেবতাগণের আহ্বাতা (হোতা)। (এই অনুবাকে ব্যাখ্যাত মন্ত্ৰসমূহ পরবর্তী কাণ্ডের ১ম প্রপাঠকের ৪র্থ অনুবাকের সাথে সংশ্লিষ্ট) ॥৩॥
[সায়ণাচার্য বলেন–চতুর্থে মৃদাহরণমুচ্যতে। অর্থাৎ, এই চতুর্থ অনুবাকে মৃত্তিকার আহরণ সম্পর্কে বলা হয়েছে]
.
চতুর্থ অনুবাক
মন্ত্র- সং তে বায়ুৰ্মাতরিশ্বা দধাতৃত্তানায়ৈ হৃদয়ং যদ্বিলিস্টম। দেবানাং যশ্চতি প্রাণখেন তস্মৈ চ দেবি বষডন্তু তুভ্য। সুজাতো জ্যোতিষা সহ শৰ্ম্ম বরুথমাংসদঃ সুবঃ। বাসো অগ্নে বিশ্বরূপং সং ব্যয়স্ব বিভ্যবসসা। উদু তিষ্ঠ অধ্বারাবা নো দেব্যা কৃপা। দৃশ্যে চ মাসা বৃহতা সুশুক্কনিরাহয়ে যাহি সুশস্তিভিঃ উদ্ধোউযুণ উতয়ে তিষ্ঠা দেবোন সবিতা ঊর্ধ বাজস্য সনিতা যদঞ্জিভিৰ্বাঘদ্ভিৰ্ব্বিয়ামহে। স জাতো গবো আসি রোদস্যোরগ্নে চারুব্বিভূত ওষধীষু। চিত্রঃ শিশুঃ পরি মাংস্যক্তঃ প্র মাতৃভভ্যা অধি কনিক্ৰদাঃ । স্থিররা ভৰ বীঙ্গ আশুৰ্ভৰ বাজ্যৰ্ব্ব। পৃথুৰ্ভব সুষদস্তুমগ্নেঃ পুরীষবাহনঃ। শিবো ভব প্রজাভ্যো মানুষীভ্যস্তৃমঙ্গিরঃ। মা দ্যাবাপৃথিবী অভি শুশুচো মাহস্তরিক্ষং মা বনস্পতী। প্রৈতু বাজী কনিক্রদন্নানদ্ৰাসভঃ পত্বা। ভরন্নগ্নিং পুরীষ্যং মা পাদ্যায়ুষঃ পুরা। রাসভো বাং কনিক্ৰদৎ সুযুক্তো বৃষণা রথে। স বামগ্নিং পুরীষ্যামাশুদ্তা বদিতঃ।। বৃষাহগ্নিং বৃষণং ভরম্নপাং গর্ভং সমুদ্রিয়। অগ্ন আ যাহি বীতয় ঋতং সত্য। ওষধয়ঃ প্রতি গৃহীতাগ্নিমেতং শিবায়ত্তমভ্যত্র যুম্মান। ব্যস্যন্বিস্বা অমতীররাভীনিষীদন্নো অপ দুৰ্ম্মতিং হন। ওষধয়ঃ প্রতি মোদধ্বমেনং পুষ্পবতীঃ সুপিল্পলাঃ। অয়ং বো গর্ভ ঋত্বিয়ঃ প্রত্নং সধমাহসৎ ॥ ৪৷
মর্মার্থ- হে পৃথিবী! উর্ধ্বাভিমুখে অবস্থিত (অর্থাৎ উপরিস্থিত) আপনার হৃদয়সদৃশ যে স্থান খনন করা হয়েছে, বিশেষভাবে স্বল্পপরিমিত (বিশেষেণাপ্পীকৃতং) সেই স্থান তৃণ ইত্যাদির সাথে জলপ্রক্ষেপণের দ্বারা বায়ু যথাপূর্ব সম্যক্ করুন (অর্থাৎ সম্যকভাবে পূর্ণ করে দিন)। (সেই বায়ু কিরকম? না,) তিনি মাতরিশ্বা, অর্থাৎ অন্তরিক্ষস্থায়ী হয়ে সর্বপ্রাণীর ইয়ত্তারূপে অবধারণকারী, তিনি দেববর্গের প্রাণরূপে বিচরণকারী।-হে দেবি পৃথিবি! আপনার ও বায়ুর উদ্দেশে বষট্ মন্ত্রে তৃণের মসাথে জল আহুতি প্রদান করছি। (ভূপ্রদেশ খননজনিত কারণে অর্থাৎ হস্ত ইত্যাদি ছেদনজনিত ব্যথা অনুভবের হেতু পৃথিবী ক্রুরা হন। সেই ব্যথা দূর করার উদ্দেশে মৃত্তিকা খননের স্থানে শীতল জল প্রদান কর্তব্য। এইরকম করলে খননের কারণে পৃথিবীর অনুভব্য শোক (বা ব্যথা) প্রশমিত হবে। বায়ু দেবতাগণের প্রাণস্বরূপ হওয়ার নিমিত্ত বায়ুর দ্বারা পৃথিবীর প্রাণসন্ধান সম্পাদিত হয়। বায়ু আকাশ হতে বৃষ্টি প্রচ্যুত করে আনয়ন করেন, (বা বৃষ্টির প্রবর্তন করেন), সেই নিমিত্ত এখানে বায়ুর কথা উল্লেখিত হয়েছে)।–হে অগ্নি! আপনি সুজাত অর্থাৎ সুষ্ঠুভাবে উৎপন্ন। আপনার জ্যোতির সাথে স্বর্গসদৃশ সুখসম্পন্ন কৃষ্ণাজিননির্মিত গৃহে অবস্থানপ্রাপ্ত হোন। হে বিভাবসু (অর্থাৎ দীপ্তিরূপ ধনের অধিপতি)! হে অগ্নি! আপনি বহুরকম কৃষ্ণাজিনরূপ বস্ত্র পরিধান করুন। হে স্বধ্বর (অর্থাৎ সুষ্ঠু যাগনির্বাহক অগ্নি)! আপনি উখিত হোন, এবং উখিত হয়ে কৃপা পূর্বক আমাদের দেবনস্বভাবের দ্বারা ক্রীড়াপর হয়ে পালন করুন। হে অগ্নি! আপনি আপনার বৃহৎ দীপ্তিতে দীপ্যমান হয়ে উঠুন এবং শোভন কীর্তির সাথে সর্ব প্রাণীর দ্বারা দৃশ্যমান হয়ে আগমন করুন। হে অগ্নি! আপনি দ্যাবাপৃথিবীর গর্ভ হতে জাত হয়েছেন (জাতোহসি)। (আপনি কিরকম? না,) আপনি চারু (অর্থাৎ পূজনীয়) ও ভুজামান ওষধিসমূহের জঠরাগ্নিরূপ পোষণকারী। (অর্থাৎ জঠরস্থায়ী অগ্নির দ্বারাই ওষধিসমূহ ভুক্ত হয়ে থাকে)। আপনি চিত্রো (অর্থাৎ নানাবর্ণের জ্বালা বা শিখার দ্বারা বিচিত্ররূপে) ও (সদ্য উৎপরুত্বের কারণে) শিশুরূপে জাত (ইদানীমুৎপন্নত্বাচ্ছিশুঃ), তথাপি আপনি অন্ধকার পরিহার করছেন। এই জগতে শিশু যেমন মায়ের উদ্দেশে ক্রন্দনরূপ আদরের দ্বারা আপন গৃহে গমন করে, সেইরকম আপনিও মাতৃবৎ ওষধির নিমিত্ত অধিক ক্রন্দনাতুর হয়ে প্রকর্ষের সাথে গমন করছেন। অগ্নির হেতুভূত পুরীষের বহনকারীর মতো হে গর্দভ! হে গমনকুশল (অব)! তুমি চলনরহিত (স্থরি), দৃঢ়কায়, শীঘ্র-বেগবান ও অনুপ্রাপ্তির হেতুভূত হয়ে পৃথিবীর বিস্তীর্ণ পৃষ্ঠে অগ্নির সুখাসন হও (সুখাসনশ্চ ভব)।–হে অঙ্গিরার অগ্নি (অর্থাৎ অঙ্গিরা ঋষিগণের দ্বারা সম্পাদিত অঙ্গসৌষ্টব-সমন্বিত অগ্নি)! আপনি মনুষ্য প্রজাগণের নিমিত্ত শান্ত হোন। অধিকন্তু আপনি দ্যাবাপৃথিবী, অন্তরিক্ষ এবং বনস্পতিগণকে সন্তাপ দেবেন না (মা শুচঃ)। এই তুরগ (অশ্ব) হ্রেষাশব্দ করতে করতে প্রথম গমন করুক। অতঃপর রাসভ (গর্দভ) যথাক্রমে শব্দ করতে করতে গমন করছে, দাহক অগ্নিকে বহন করে যেন তার অপমৃত্যু না ঘটে। হে বৃষণ (সেচনসমর্থ) অশ্ব ও গর্দভ! তোমাদের দুজনের মধ্যে যে গর্দভ, সে অতিশয় উচ্চ (ভূশং) শব্দ করতে করতে রথসদৃশ মৃত্তিকার ভার বহনের নিমিত্ত সুষ্ঠুভাবে প্রযুক্ত হও এবং দুজনের মধ্যে সেই গর্দভ রাজপ্রেরিত দূতের ন্যায় শীঘ্রগামী হয়ে এই স্থান হতে পাংসু বা শুষ্ক মৃত্তিকারূপ অগ্নিকে (পুরীষ্যমগ্নিঃ) বহন করে এবং সেই ভাবে বহন করেও তোমার কোনও যেন ক্ষতি না হয়।–সেচনসমর্থ গর্দভ ফল-অভিবর্ষণে সমর্থ অগ্নিকে বহন পূর্বক গমন করুক। (কীরকম অগ্নি?) যিনি জলগর্ভ মেঘের মধ্যস্থায়ী জলে বিদ্যুঞ্জপে ও সমুদ্রে বড়বাগ্নিরূপে উৎপন্ন (উৎপন্ন)। সেই হেতু, হে অগ্নি! আপনি প্রজনন ইত্যাদি সম্পন্ন হয়ে ঋতের (অর্থাৎ পৃথিবীর) ও সত্যের (অর্থাৎ দ্যুলোকের) প্রতি আগমন করুন। (মন্ত্ৰব্ৰাহ্মণানুসারে, অবশ্যম্ভাবী কৃষি বা শস্য ইত্যাদি ফলের হেতুত্বের কারণে পৃথিবীকে ঋত এবং অবশ্যম্ভাবী কর্মফলের হেতত্বের কারণে দু বা স্বর্গকে সত্য বলা হয়েছে। পৃথিব্যা ঋতত্ব, স্বাস্য সত্যত্ব)।–হে ওষধিসমূহ! এই স্থানে (অত্রাস্মিন্ দেশে) তোমাদের অভিমুখে আগতবা শান্ত (শিব) এই অগ্নিকে প্রতিগ্রহণ করো (অর্থাৎ স্বীকার করে নাও)। এই অগ্নি তোমাদের মধ্যে নিহিত আমাদের প্রমাদ আলস্য ইত্যাদি যুক্ত দুর্মতি অপহত করুন। অপহত করে কি করবেন? না, আমাদের শত্রুসমান সকল রোগজনিত বাধা পরিহার করবেন। প্রশান্ত পুষ্পেপেতা (উৎকৃষ্ট পুষ্পশালিনী) ও শোভন ফলোপেতা (সুশোভন ফলদায়িনী) হে ওষধিসমূহ! এই অগ্নির প্রতি তোমরা হৃষ্টভাবাপন্ন হও (হৃষ্টাভবত)। এই অগ্নি তোমাদের ঋতুকালীন গভরূপ হয়ে (গর্ভ ভূত্ব) পুরাতন গর্ভযোগ্য স্থান প্রাপ্ত হয়েছেন। (এই অনুবাকে ব্যাখ্যাত মন্ত্রগুলি পরবর্তী কাণ্ডের ১ম প্রপাঠকের ৫ম অনুবাকের সাথে সংশ্লিষ্ট) ॥৪॥
[সায়ণাচার্য বলেন–পঞ্চম উখানিৰ্মাণমুচ্যতে। অর্থাৎ, এই পঞ্চ অনুবাকে উখা-নির্মাণের বিষয় কথিত হয়েছে।]
.
পঞ্চম অনুবাক
মন্ত্র- বি পাজসা পৃথুনা শাশুচানো বাধ দ্বিমো রক্ষসো অমীবাঃ। সুশৰ্মণো বৃহতঃ শৰ্ম্মণি স্যামগেরহং সুহবস্য প্রণীতৌ। আপো হি ষ্ঠা ময়োভুবস্তা ন উর্জে দধাতন। মহে রণায় চক্ষসে। যোবঃ শিবতমো রসস্তস্য ভাজয়তেহ নঃ।। উশতীরিব মাতরঃ। তম্মা অরং গমাম বো যস্য ক্ষয়ায় জিম্বথ আপো জনয়থা চ নঃ। মিত্রঃ সংসৃজ্য পৃথিবীং ভূমিং চ জ্যোতিষা সহ। সুজাতং জাতবেদসমগ্নিং বৈশ্বানরং বিভু। অযক্ষ্মায় ত্বা সং সৃজামি প্রজাভ্যঃ।। বিশ্বে ত্বা দেবা বৈশ্বানরাঃ সং সৃজানুঞ্জুভেন ছন্দসাহঙ্গিরস্বৎ। রুদ্রাঃ সভৃত্য পৃথিবীং বৃহজ্জ্যোতিঃ সমীধিরে। তেষাং ভানুরজ ইচ্ছুক্রো দেবেযু নোচতে। সংসৃষ্টাং বসুভী রুদ্রৈধরৈঃ কণ্যাং মৃদম। হস্তাভ্যাম মৃধীং কৃত্বা সিনীবালী করোতু তাম্। সিনীবালী সুকৰ্পৰ্দা সুকুরীয়া ঘৌপশা।। সা তুভ্যমদিতে মহ ওখাং দধাতু হস্তায়োঃ। উখাং করোতু শক্ত্যা বাহুভ্যামদিথির্জিয়া। মাতা পুত্রং যথোপস্থে সাহল্পিং বিভত্ত্ব গর্ভ আ। মখস্য শিরোহসি যজ্ঞস্য পদে স্থ। বসবা কৃথন্তু গায়ত্রণ ছন্দসাহঙ্গিরস্বৎ পৃথিব্যসি রুদ্রাস্থা কৃন্তু ত্রৈভেন ছন্দসাহঙ্গিরস্বদন্তরিক্ষমসি আদিত্যান্তা কৃন্বন্তু জাগতেন ছন্দসাহঙ্গিরস্বষৌরসি বিশ্বে ত্বা দেবা বৈশ্বানরাঃ কৃষানুষ্ঠুভেন ছন্দসাহঙ্গিরস্বদ্দিশোহসি বাহসি ধারয়া ময়ি প্রজাং রায়ম্পোষং গৌপত্যং সুবীৰ্য্যম সজান যজমানায়াদিত্যৈ রাস্নহস্যদিতিস্তে বিলং গৃহাতু পাঙক্তেন ছন্দসাহঙ্গিরস্বৎ। কৃত্বায় সা মহীমুখাং মৃন্ময়ীম যোনিময়ে। তাং পুত্রেভ্যঃ সং প্রাযচ্ছদদিতিঃ শ্ৰপয়ানিতি ॥৫৷৷
মর্মার্থ- হে অগ্নি! বিস্তৃতরূপে বলের দ্বারা দীপ্যমান হয়ে আপনি শত্রুরূপী রাক্ষসবর্গ ও রোগসমূহকে বিশেষভাবে রোধ করুন (বিশেষেণ বাধস্ব)। আমি শোভন সুখরূপ প্রবৃদ্ধ বা মহান আহ্বানযোগ্য অগ্নিদেবের পরিচর্যাপূর্বক সর্বদা সুখে অবস্থান করব (সর্বদাহবতিষ্ঠেয়)।-হে জলরাশি! তোমরা আমাদের স্নান-পান ইত্যাদির হেতুভূত সুখের উৎপাদক রূপে প্রসিদ্ধ। সেই রকমভাবে তোমরা তোমাদের রস আমাদের অনুভবে স্থাপন (দান) করো; অধিকন্তু আমাদের পরতত্ত্ব সাক্ষাৎকারের যোগ্য করো। (অর্থাৎ আমরা যাতে রমণীয় সেই পরমাত্মার দর্শনপ্রাপ্ত হই, সেইরকম ভাবে আমাদের যোগ্যতাসম্পন্ন করো)। প্রীতিযুক্তা মা যেমন বৎসদের আপন স্তন্যরস (দুগ্ধ) প্রদান করেন (প্রাপ্তয়ন্তি), সেইরকম তোমাদের যে শান্ততম সুখহেতুকর রস আছে, তা আমাদের এই কর্মে প্রদান করো। যে রসের ক্ষরণের বা নিবাসের নিমিত্ত তোমরা প্রীত হয়েছ, সেই রসপ্রাপ্তির উদ্দেশে আমরা যেন তোমাদের লাভ করি। অধিকন্তু, হে জলরাশি! তোমরা আমাদের প্রজার উৎপাদক করো। (অর্থাৎ আমরা যেন সুপ্রজা উৎপাদনে সমর্থ হই, তেমন করো)। সকলের হিতকরী মিত্র নামক দেবতা পৃথিবী, ভূমি (অর্থাৎ বিস্তৃত মৃত্তিকা), ও জলের দ্বারা কপাল ইত্যাদি সৃষ্টি পূর্বক অগ্নিরূপ উখা নির্মাণ করেছেন। (কিরকম অগ্নি? না,) তিনি জাতবেদারূপে সমুৎপন্ন ও সকল প্রাণী সম্পর্কে অভিজ্ঞ, তিনি বৈশ্বানর রূপে সকল পুরুষের উপকার হয়ে সকল যজমানের গৃহে ব্যাপ্ত (সর্বেষু যজমানগৃহেষু ব্যাপ্ত। হে অগ্নি! প্রজাগণের ক্ষয়রোগ ও নেত্ররোগের অভাব ঘটানোর উদ্দেশে (অর্থাৎ রোগ নিরাময়ে নিমিত্ত) আপনাকে সৃষ্টি পূর্বক সংযোজিত করছি। বৈশ্বানর, অর্থাৎ সকল পুরুষের উপকারক দেবতাসকল অনুষ্টুপ ছন্দে তোমাদের (অর্থাৎ জাবেদা, বৈশ্বানর ইত্যাদিরূপী অগ্নিদেব) যুক্ত করুন। (কি ভাবে? না) অঙ্গিরস্বৎ, অর্থাৎ পূর্বকালে অঙ্গিরা ঋষিগণ যেভাবে আপনাদের যুক্ত করেছিলেন, সেইভাবে। (মন্ত্রে দেবতান্তর পরিত্যাগ পূর্বক মিত্রকে স্বীকারের কারণ এই যে,) দেবতাগণের মধ্যে মিত্র সর্বাপেক্ষা শান্ত বা মঙ্গলপ্রদায়ক। অতএব, হে অগ্নি! আপনি শান্ত মিত্রকে স্বীকার করুন। রুদ্ৰনামক দেবগণ পৃথিবীতে উখা নিম্পাদক মৃত্তিকা গ্রহণ পূর্বক হস্ত দ্বারা সম্যকরূপে উখা নির্মাণ করেছেন (অর্থাৎ সমিধের দ্বারা প্রবীণ অগ্নিকে প্রদীপ্ত করেছেন)। রুদ্রগণের দ্বারা প্রদীপ্ত এই অগ্নি নিরন্তর দীপ্তিযুক্ত হয়ে দেবতাগণের মধ্যে শোভিত হচ্ছেন (রোচতে)। (পূর্বৰ্মন্ত্রে রুদ্র শব্দে বসুও উপলক্ষিত হয়েছে। সেই কারণে অতঃপর বলা হচ্ছে)বুদ্ধিমন্ত বসুগণ ও রুদ্রগণ উখা নির্মাণের নিমিত্ত মৃত্তিকা আহরণ করেছেন, সিনীবালী দেবী পুনরায় সেই মৃত্তিকাকে হস্ত দ্বারা মৃদু করে উখা নিম্পাদন করুণ। হে মহী (ভূমিদেবী)! সুকপর্দা অর্থাৎ শোভন জব্রা বা কেশশালিনী, সুকুরীরা অর্থাৎ শৃঙ্গারার্থে মস্তকে শোভন কবরী-ধারণকারিণী সিনীবালী দেবী) আপনার হস্তে উখাকে দান (স্থাপন) করুন। এই আদিতি (অর্থাৎ ভূমি) বুদ্ধিকৌশলের ও হস্তুকৌশলের দ্বারা এবং শারীরিক বলের সাহায্যে উখা নির্মাণ করুন। লোকে যেমন মাতা তার আপন পুত্রকে ক্রোড়ে রক্ষা করে রাখেন, তেমনই এই অদিতি তার উৎসঙ্গে (ক্রোড়ে) কর্মের সমাপ্তি পর্যন্ত এই উখাকে (তথা অগ্নিকে) ধারণ করুন (উক্ত মন্ত্র চারটির তাৎপর্য এই যে, রুদ্রগণ, বসুগণ, সিনীবালী ও আদিতি এই শব্দযুক্ত দেবতাগণ পরস্পর সম্বন্ধযুক্ত)–হে মৃৎপিণ্ড! তুমি যজ্ঞের মস্তক-স্থানস্বরূপ হও।–হে কৃষ্ণাজিন ও পুষ্করপর্ণ! তোমার যজ্ঞের পাদরূপে স্থিত হও।-হে উখা! তুমি পৃথিবীরূপা হও; বসু-নামক দেবতাগণ পূর্বকালবর্তী আঙ্গিরস ঋষিগণের মতো গায়ত্রী ছন্দ সহকারে তোমাকে নিষ্পন্ন (বা নির্মাণ) করুণ। হে উখা! তুমি অন্তরীক্ষরূপা হও; রুদ্র-নামক দেবতাগণ পূর্বকালবর্তী অঙ্গিরা ঋষিগণের মতো ত্রিষ্টুপ ছন্দ সহকারে তোমাকে স্থাপন করুন। সেইভাবে, হে উখা! তুমি দুলোকস্বরূপা হও; আদিত্য নামক দেবতাগণ পূর্ববর্তী অঙ্গিরা ঋষিগণের মতো জগতী ছন্দ সহকারে তোমাকে উৎপন্ন করন। হে উখা! তুমি দিপা হও; বৈশ্বানর-নামক (অর্থাৎ সর্ব মনুষ্যের উপকারী রূপে প্রসিদ্ধ) সকল দেববর্গ পূর্বকালীন অঙ্গিরা ঋষিগণের মতো অনুষ্টুপ ছন্দ সহকারে তোমাকে প্রতিষ্ঠিত করুন। হে উখা! তুমি ধ্রুবা (অর্থাৎ দৃঢ়া) হও; অধ্বর্যরূপী আমার এবং অপর উখা নির্মাতাগণের প্রজাবৃন্দের ধারক (স্থাপক) হও। যজমানের নিমিত্ত প্রজা, ধনপুষ্টি (রায়স্পোষং), গাণপত্য, শোভন বীর্য ও আত্মীয়স্বজন প্রদান করো। হে রেখা (রশনা বা রশ্মিসদৃশী ভাণ্ডের গলগতা চিহ্ন)! তুমি ভূমিরূপা উখার কাঞ্চীগুণস্থানীয়া (অর্থাৎ মেখলা বা কটিভূষণস্বরূপা) রশনা। হে উখা! অদিতি (অর্থাৎ ভূমি) তোমাকে পংক্তিছন্দ সহকারে পূর্বকালীন্ অঙ্গিরা ঋষিগণের ন্যায় ছিদ্রযুক্ত করুক। সেই অদিতি (বা ভূমি) অগ্নির কারণস্বরূপ মৃত্তিকার দ্বারা মহতী উখা নির্মাণ (নিম্পাদন) পূর্বক সেটি আপন পুত্ৰসদৃশ শ্ৰপণকারীগণকে (পাককারীগণকে) সম্যরূপে দান করে বলেছিলেন–পয়ন্তু ভবন্তু অর্থাৎ তোমরা পাক করো। (অদিতির পুত্রগণ দেবতারূপে প্রতিষ্ঠাপিত হন)। (এই অনুবাকে ব্যাখ্যাত মন্ত্রগুলি পরবর্তী কাণ্ডের ১ম প্রপাঠকের ৬ষ্ঠ অনুবাকের সাথে সংশ্লিষ্ট) ॥৫॥
[সায়নাচার্য বলেন-ষষ্ঠে উখাসংস্কারোইভিধীয়তে। অর্থাৎ, পঞ্চম অনুবাকে যে উখানির্মাণের কথা বলা হয়েছে, এই ষষ্ঠ অনুবাকে সেই উখার সংস্কার কথিত]।
.
ষষ্ঠ অনুবাক
মন্ত্র- বসবা ধূপয়ন্তু গায়ত্ৰেণ ছন্দসাহঙ্গিরস্বদ্রাস্তা ধূপয়ন্তু ত্রৈভেন ছন্দসাহঙ্গিরস্বদাদিত্যান্তা ধূপয়ন্তু জাগতেন ছন্দসাহঙ্গিরস্বদ্বিষে ত্বা দেবা বৈশ্বানরা ধূপয়ানুফ্টভেন ছন্দসাহঙ্গিরস্বদিস্তা ধূপয়ত্বঙ্গিরস্বদ্বিষ্ণুত্তা ধূপয়ত্বঙ্গিরস্বরুণন্তা ধূপয়ত্বঙ্গিরদিতিস্তা দেবী বিশ্বদেব্যাবতী পৃথিব্যাঃ সধহেঙ্গিরস্বৎ খনত্ববট দেবানাং ত্বা পত্নী। দেবীৰ্বিস্বাদেব্যাবতী পৃথিব্যাঃ সধহেঙ্গিরস্বদ্ধতুখে ধিণাস্তা দেবীৰ্বিশ্বদেব্যাবতীঃ পৃথিব্যাঃ সধহেঙ্গিরস্বদভীন্ধতা মুখে গ্লাস্তা দেবীৰ্বিশ্বদেব্যাবতীঃ পৃথিব্যাঃ সধহেঙ্গিরস্বপয়খে বরুত্ৰয়ো জনয়া দেবীৰ্বিশ্বদেব্যাবতীঃ পৃথিব্যা সংহেঙ্গিরস্বৎ পচন্তুখে। মিত্রৈতামুখাং পচৈষা মাভেদি। এতাং তে পরি দাম্যভিত্তৈ। অভীমা মহিনা দিবং মিত্রো বভূব সপ্রথাঃ। উত শ্ৰবসা পৃথিবী। মিত্রস্য চৰ্ষণীধৃতঃ এবো দেবস্য সানসিম। দ্যুম্নং চিত্রশ্রবস্তমম্।। দেবা সবিতোপতু সুপাণিঃ দ্বসুরিঃ। সুবাহুরুত শক্ত্যা। অপদ্যমানা পৃথিব্যাশা দি আ পৃণ। উক্তিষ্ঠ বৃহতী ভবোৰ্ধা ছিষ্ঠ ধ্রুবা ত্ব। বসবাহদন্তু গায়ণে ছন্দসাহঙ্গিরস্বদ্রুদ্ৰাস্তাহস্তু ত্রৈভেন ছন্দসাহঙ্গিরস্বাদিত্যান্ত্বাছুন্তু জাগতেন ছন্দসাহঙ্গিরস্বদ্বিষে ত্ব দেবা বৈশ্বানরা আচ্ছন্দানুষ্ঠুভেন ছন্দসাহঙ্গিরস্বৎ ॥৬॥
মর্মার্থ- হে উখা! পূর্বকালে (প্রথমে অঙ্গিরা ঋষিগণ যেমন করেছিলেন, সেইভাবে বসুগণ গায়ত্রীছন্দ সহকারে ধূমের দ্বারা তোমার সংস্কার করুন (সংস্কুবন্তু)। এই ভাবে, পূর্বকালে অঙ্গিরা ঋষিগণের মতো রুদ্রগণ ত্রিষ্টুপ ছন্দ সহকারে ধূমের দ্বারা তোমার সংস্কার করুন। এইভাবে, আদিত্যগণ জগতী ছন্দ সহকারে ও বৈশ্বানরগণ অনুষ্টুপ ছন্দ সহকারে পূর্বকালীন্ অঙ্গিরা ঋষিগণের অনুসরণে ধূমের দ্বারা তোমার সংস্কার করুন। সেই একই ভাবে, পূর্বকালীন অঙ্গিরা ঋষিগণের ন্যায় ইন্দ্র, বিষ্ণু ও বরুণ ধূমের দ্বারা তোমার সংস্কার করুন। (এই নিমিত্ত ৫ম কাণ্ডের ১ম প্রপাঠকের ৭ম অনুবাকস্থ সপ্তভিধূপয়তি সপ্ত বৈ শীর্ষণ্যা ইত্যাদি মন্ত্র বিনিযুক্ত হয়। ধূপসাধনের বিধিও ঐ একই অনুবাকস্থ অশ্বশকেন ধূপয়তি ইত্যাদি মন্ত্রে প্রাপ্তব্য)। সকল দেবগণের যোগ্যা উপচারা (পরিচর্যাকারিণী) অদিতি দেবী পৃথিবীর (অর্থাৎ ভূমির) উপরে পূর্বকালীন অঙ্গিরা ঋষিগণের ন্যায় তোমার খনন করুন। (এই মন্ত্রে খনন কর্তৃত্ব অদিতির উপরে ন্যস্ত হওয়ার কারণ অদিতি ও ভূমি একার্থক। সুতরাং অদিতি কৰ্ত্তক ভূমিখননের ফলে ভূমির হিংসা উপজাত হতে পারে না, যেমন লোকে কখনও নিজে নিজেকে হিংসা করে না। ৫ম কাণ্ডের প্রথম প্রপাঠকের ৭ম অনুবাকে অদিতিস্কৃত্যাহেয়ং বা অদিতিরদিত্যৈবাদিত্যাং ইত্যাদি মন্ত্রে এই কথা বলা হয়েছে)। সকল দেবতার উপচার বা পরিচর্যার যোগ্য দেবপত্নীবর্গ পৃথিবীর উপরে তোমাকে স্থাপন করুন, যেমন ভাবে পূর্বকালে অঙ্গিরা ঋষিগণ করেছিলেন। হে উখা! ধিষণা অর্থাৎ বিদ্যাভিমানী দেবতাগণ তোমাকে চতুর্দিক হতে প্রজ্বলিত করুন। ছন্দোভিমানী দেবতাগণ পচ্যমানতা (পাক হয়ে যাওয়া অবস্থা) সম্পন্ন (বা পরীক্ষা) করুন। হে সকল প্রাণীর হিতকরী মিত্রদেব! আপনি এই উখায় পাক করুন (পাং কুরু); এবং এই উখা যেন ভগ্ন না হয়;এই উখার ভগ্নরাহিত্যের নিমিত্ত (অর্থাৎ ভগ্ন হওয়া থেকে রক্ষার নিমিত্ত) এটিকে তোমায় প্রদান করছি। মিত্রদেব এই উখাকে প্রাপ্ত হয়েছেন। (কিরকম মিত্রদেব? না,) প্রচুর কীর্তিশালী। (এই উখাই বা কিরকম? না, এই উখা দুলোক ও পৃথিবী সদৃশ। মনুষ্যগণের ধারয়িতা, শ্রবণযোগ্য যশোশালী (কীর্তিমান) মিত্রদেব এই ফলদানশীল (দ্যুম্নং বা দ্রবিণপ্রদং) কীর্তিমান (চিত্রশ্রবাঃ) উখায় পাক সম্পন্ন করুন। হে উখা! সবিতাদেব তোমাকে গহুর হতে উর্ধ্বে আনয়ন করুন (অবটাদুর্ধমানয়)। (কিরকম সবিতা? না,) তিনি সুপানি, অর্থাৎ শোভন পাণিযুক্ত; স্বচ্ছুরি, অর্থাৎ শোভন অঙ্গুলিযুক্ত; এবং সুবাহু, অর্থাৎ শোভন বান্থশালী। (মণিবন্ধ বা হাতের কব্জির উভয় দিকের অংশ পানি ও বাহু শব্দের দ্বারা উক্ত হয়েছে)। হে উখা! পৃথিবীতে বা ভূমিতে উত্তিষ্ঠিত হয়ে ভগ্নপ্রাপ্ত না হয়ে তুমি সর্বদিক পূরণ করো। গহ্বর হতে বহিরাগত হয়ে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হও, এবং ঊর্ধ্বমুখী হয়ে ধ্ৰুবা বা স্থির হয়ে অবস্থান করো। হে উখা! বসু নামক দেবগণ পূর্বকালীন অঙ্গিরা ঋষিবর্গের মতো গায়ত্রী ছন্দে তোমার সিঞ্চন করন। হে উখা! রুদ্র নামক দেবগণ পূর্বকালীন অঙ্গিরা ঋষিগণের মতো ত্রিষ্টুপ ছন্দে তোমার সিঞ্চন করুন। হে উখা! আদিত্য নামক দেবগণ পূর্বকালীন অঙ্গিরা ঋষিগণের মত জগতী ছন্দে তোমার সিঞ্চন করুন। হে উখা! বৈশ্বানর অর্থাৎ সকলের হিতকারক দেবগণ পূর্বকালীন্ অঙ্গিরা ঋষিগণের মত তোমার সিঞ্চন করুন। (যজ্ঞসাধন পাত্র অগ্নিদগ্ধ হলে তাকে সিক্ত না করলে তা অসুরযোগ্য হয়। পাত্রকে সিক্ত বা সিঞ্চিত করলে তা দেবযোগ্য হয়। ছন্দরূপ মন্ত্রের দ্বারা সিঞ্চন কর্তব্য। এই অনুবাকে ব্যাখ্যাত মন্ত্রগুলি পরবর্তী কাণ্ডের ১ম প্রপাঠকের ৭ম অনুবাকের মন্ত্রসমূহের সাথে সংশ্লিষ্ট) ॥৬॥
[সায়ণাচার্য বলেন–সপ্তমেহনুবাকে পঞ্চপশ্বঙ্গভূতা অগ্নিক্যঃ সামিধেন্য উচ্যন্তে। অর্থাৎ, এই সপ্তম অনুবাকে অগ্নিচয়নের পঞ্চাঙ্গভূত পশুর সামিধেনী সংক্রান্ত মন্ত্রগুলি উক্ত হয়েছে।]
.
সপ্তম অনুবাক
মন্ত্র- সমাস্তায় ঋতবো বৰ্দ্ধয়ন্তু সম্বৎসরা ঋষয়ো যানি সত্যা। সং দিব্যেন দীদিহি নোচনেন বিশ্বা আ ভাহি প্ৰদিশঃ পৃথিব্যাঃ। সং চেধ্যস্বাগ্নে প্ৰচ বোধয়ৈনমুচ্চ তিষ্ঠ মহতে সৌভগায়। মা চ রিষদুপসত্তা তে অগ্নে ব্রহ্মাণস্তে যশসঃ সন্তু মাহন্যে। ত্বমগ্নে বৃণতে ব্রাহ্মণা ইমে শিববা অগ্নে। সম্বরণে ভবা নঃ। সপত্নহা নো অভিমাতিজিচ্চ স্বে গয়ে জাগৃহ্যপ্রযুচ্ছ। ইহৈবাগ্নে অধি দারয়া রয়িং মা ত্বা নি ক্ৰ পূৰ্ব্বতিা নিকারিণঃ। ক্ষত্ৰময়ে সুষমমস্তু তুভ্যমুপসত্তা বর্ধতাং তে অনিষ্টতঃ। ক্ষত্রেণাগ্নে স্বায়ুঃ সং রভস্ব মিত্রেণাগ্নে মিত্ৰধেয়ে যতস্ব। সজাতানং মধ্যমস্থা এধি রামগ্নে বিহবব্যা দীদিহীহ। অতি নিহো অতি দ্বিধোহত্যচিক্তিমত্যরীতিময়ে। বিশ্বা হ্যগ্নে দুরিতা সহস্বার্থস্মভ্যং সহবীরাং রয়িং দাঃ। অনাদৃষ্যে জাতবেদা অনিচ্ছুতো বিরাডগ্নে ক্ষত্ৰভৃন্দীদিহীহ। বিশ্বা আশাঃ প্রমুঞ্চনুয়র্ভিয়ঃ শিবাভিরদ্য পরিপাহি নো বৃধে। বৃহম্পতে সবিতর্বোধয়ৈনং সংশিতং চিৎ সন্তরাং সং শিশাধি। বর্ধয়ৈনং মহতে সৌভায় বিশ্ব এমনু মদন্তু দেবাঃ। অমুত্র ভূয়াদব যদ্যমস্য বৃহষ্পতে অভিশস্তেরমুঞ্চঃ। প্রত্যৌহতামাখিনা মৃত্যুম্মাদ্দেবানামগ্নে ভিষজা শচীভিঃ।। উদ্বয়ং তমসম্পরি পশ্যতো জ্যোতিরুত্তর। দেবং দেবত্রা সূৰ্য্যমগন্ম জ্যোতিরুত্তমম্ ॥৭॥
মর্মার্থ– হে অগ্নি! সমা (অর্থাৎ সম্বৎসর), ঋতু, মাস, পক্ষ (অধমাস) ইত্যাদি কালবিশেষ এবং মন্ত্রদ্রষ্টা ঋষিবর্গ ও তাদের সত্যবচনসমূহ (মন্ত্ৰসমূহ) আপনাকে বর্ধিত করুক ও করুন। তাদের দ্বারা বর্ধিত হয়ে দুলোকের তেজে আপনি সম্যভাবে দীপ্যমান হোন; এবং আপন সেই তেজঃপ্রভাবে পৃথিবীর সর্ব দিক উদ্ভাসিত করুন। হে অগ্নি! আপনি সমিধের দ্বারা স্বয়ং দীপ্ত হোন, এই যজমানকে কর্মানুষ্ঠানে প্রবুদ্ধ করুন এবং এই যজমানের মহতী সৌভাগ্যের নিমিত্ত (অর্থাৎ যজমানকে অত্যন্ত সৌভাগ্য দানের নিমিত্ত) উদ্যোগী হোন। হে অগ্নি! আপনার পরিচারকদের প্রতি হিংসা করবেন না (মা হিংস্যতাম)। অধিকন্তু, আপনার ব্রাহ্মণগণ অর্থাৎ ঋত্বিক ও যজমানগণ যশস্বী হোন; এবং যারা আপনার পরিচর্যা-বিমুখ (অর্থাৎ যারা অগ্নি-পরিচর্যাহীন) তারা যেন যশস্বী না হতে পারে (মা ভূব)। হে অগ্নি! এই ঋত্বিক যজমানরূপী ব্রাহ্মণগণ আপনার আরাধনা করছেন। হে অগ্নি! আপনি আমাদের অপরাধ সম্বরণ (বা আচ্ছাদনের) নিমিত্তভূত হয়ে শান্ত হোন, অর্থাৎ অপরাধ প্রকটিত করবেন না। অধিকন্তু, আপনি আমাদের শত্রুগণের বিনাশকরূপে ও পাপজয়কারী হয়ে আপন গৃহে (অর্থাৎ অগ্নি-পরিচর্যাকারীর গৃহে) প্রমাদণুন্য হয়ে বিরাজমান থাকুন। হে অগ্নি! এই গৃহে ধনের আধিক্য সম্পাদিত করুন। আমাদেরও পূর্বে যাঁরা অগ্নিচয়ন করেছেন, তারা যেন আমাদের চীয়মান অগ্নিকে নিরাকরণ (খণ্ডন বা নিবারণ) না করেন। হে অগ্নি! আপনাতে ক্ষত্রিয়বল সুস্থিত থোক, আপনার উপসত্তা বা পরিচারকবৃন্দ কারও দ্বারা হিংসিত না হয়ে যেন নিয়ত বর্ধিত হন (কেনাপি নিরামহিংসিতঃ সন্ বর্ধম)। হে অগ্নি! আপনি আপনার ক্ষত্ৰ-বলের দ্বারা আমাদের শোভন আয়ুর সংরক্ষণে অপ্রমত্ত (প্রমাদশূন্য বা সতর্ক) হয়ে থাকুন। হে অগ্নি! আপনার মিত্র আমাদের ধারণে অনুগ্রহযুক্ত চিত্ত হয়ে (আমাদের প্রতি অনুগ্রহপরায়ণ হয়ে) প্রকৃষ্টরূপে যত্ন করুন (প্রযত্নং কুরু)। প্রজাপতির মুখ-হতে আপনার (অর্থাৎ অগ্নির) সাথে ব্রাহ্মণগণও জাত হয়েছিলেন, সেই কারণে ব্রাহ্মণগণ আপনার সজাতি (সহজাত বা জ্ঞাতি); তাঁদের মধ্যে আপনি সকল সময়ে অবস্থিত থাকেন (বা ব্রাহ্মণগণের দ্বারা পূজিত হয়ে থাকেন)। হে অগ্নি! আপনি এই ভূমিভাগে রাজগণের দ্বারা অনুষ্ঠেয় বিবিধ যজ্ঞের প্রবর্তক হয়ে অতিশয়রূপে দীপ্যমান হোন। হে অগ্নি! কুকুর শূকর ইত্যাদি নিকৃষ্ট জন্মপ্রাপক যে পাপ, শরীরশোষণ ইত্যাদি হেতুকারক যে রোগ, কর্মানুষ্ঠান সম্পর্কিত যে অজ্ঞানতা, কর্মবিঘ্নকারী শত্রুগণের যে প্রয়াস, এবং আমাদের অনিষ্টকারক অন্য যা কিছু আছে, তা সবই আপনি বিনাশ করুন। অতঃপর শ্রেষ্ঠ পুত্র ইত্যাদির সাথে আমাদের ধন প্রদান করুন। হে অগ্নি! আপনি এই কর্মে দীপ্ত হোন। (কিরকম আপনি? না,) আপনি অনাধৃষ্য, অর্থাৎ কেউই আপনাকে ধর্ষন (অর্থাৎ অবজ্ঞা) করতে পারে না; জাতবেদা, অর্থাৎ জামাত্র সকল জগৎ সম্পর্কে অভিজ্ঞ; অনিত, অর্থাৎ ইতিপূর্বেও কারও দ্বারা হিংসিত না হয়ে রাজমান; ক্ষত্ৰভৃৎ, অর্থাৎ ক্ষত্রবলের ধারক। অধিকন্তু, যথোক্ত গুণবিশিষ্ট অনুগ্রহদৃষ্টিতে আমাদের সর্বতোভাবে পালন করে থাক। (কি জন্য পালন? না,) আমরা যেন সর্বরকম নিষিদ্ধ বিষয় সম্পর্কিত সকল তৃষ্ণা ব্যাধি ইত্যাদি হতে প্রকর্ষের সাথে নিবৃত্ত হতে পারি। বৃহস্পতি ও সবিতাদেব সদৃশ হে অগ্নি! আপনি। এই যজমানকে কর্মসাধন (যজ্ঞসাধন) বিষয়ে বুদ্ধি-মন্ত (বুদ্ধি প্রদান) করুন; পূর্বের ন্যায় তীক্ষ্ণীকৃত বুদ্ধি হলেও তাকে পুনরায় অতিশয়ভাবে (সম্যক) অনুশাসন করুন। এইভাবে এই যজমানের সৌভাগ্য বর্ধন করুন। সকল দেবগণও এই যজমানের প্রতি সমীচীনরূপে হৃষ্ট হোন। হে বৃহস্পতিতুল্য অগ্নি! স্বর্গে চিরকালব্যাপী অবস্থানের নিমিত্ত পাপসংক্রান্ত কারণে যমের হিংসা হতে আপনি আমাদের মুক্ত করেছেন, সেই কারণে পরলোক বিষয়ে আমাদের চিন্তা নেই। হে অগ্নি! দেববৈদ্য অশ্বিযুগল তাদের নিজস্ব শক্তিতে এই যজমানের মৃত্যু প্রতিহত করুন, অর্থাৎ ইহলোকে অপমৃত্যু নিরাকৃত করুন। আমরা উৎকৃষ্টভাবে অন্ধকার বিনাশক অগ্নিকে এবং দেবগণের মধ্যে সূর্যরূপে বর্তমান অগ্নি-সম্বন্ধিয় দেবোত্তমকে দর্শন পূর্বক জ্যোতির্গময়কে (অর্থাৎ পরব্রহ্মকে) প্রাপ্ত হবো (জ্যোতির্গন্ম প্রাপ্তস্ম) ॥৭॥
[সায়ণাচার্য বলেন–অষ্টমে প্রজযাজ্যা আপ্রীনামকা উচ্যন্তে। অর্থাৎ, এই অষ্টম অনুবাকে আপ্রীনামক প্রজ যাজ্যার বিষয় কৃথিত হয়েছে]
.
অষ্টম অনুবাক
মন্ত্র- উদ্ধা অস্য সমিধো ভবৰ্দ্ধা শুক্রা শোচীংষ্যগ্নেঃ। দুমত্তমা সুপ্রতীকস্য সূনোঃ। তন্নপাদপুরো বিশ্ববেদা দেবো দেবেষ্ণু দেবঃ। পথ আইনক্তি মধ্বা ঘৃতেন। মধ্বা যজ্ঞং নক্ষসে প্রীণাননা নরাশংসো অগ্নে। সুকৃদেবঃ সবিতা বিশ্ববারঃ। অচ্ছায়মেতি শস্য ঘৃতেনেড়ানো বহ্নিমস্য। অগ্নিং স্কুচো অধ্বরেষু প্রযৎসু। স যক্ষদস্য মহিমানমগ্নেঃ সঃ ঈ মাসু প্ৰয়সঃ। বসুশ্চেতিষ্ঠো বসুধামর্শ। দ্বারা দেবীরম্বস্য বিশ্বে ব্ৰতা দদন্তে অগ্নেঃ। উরুব্যচসো ধা পত্যমানাঃ। তে অস্য যোষণে দিব্যে ন যোনাবুসানক্তা। ইমং যজ্ঞমবতামরং নঃ। দৈব্যা হোতারাবুর্ধমধ্বরং নোহগ্নেৰ্জিামভি হ্রামভি গৃণীতম। কৃণুতং নঃ স্বিষ্টি। তিম্রো দেবীব হিরেদং সদড়াি সরস্বতী ভারতী। মহী গুণানা।। তন্নস্তুরীপমদ্ভূত পুরু বৃষ্টা সুবীর রায়ম্পোষং বিষ্যত্ নাভিমস্মে। বনস্পতেই সৃজা রাণনা দেবে। অগ্নিহব্যং শমিতা সূদয়াতি অগ্নে স্বাহা কৃণুহি জাবেদ ইন্দ্রায় হব্যম। বিশ্বে দেবা হবিরিদং জুষস্তাম্।। হিরণ্যগর্ভঃ সমবাগ্রে ভূতস্য জাতঃ পতিরেক আসীৎ।। স দাধার পৃথিবীং দ্যাম উতেমাং কস্মৈ দেবার হবিষা বিধেম।। যঃ প্রাণততা নিমিষতে মহিত্বৈক ইদ্রাজা জগতত বড়ব। য ঈশে অস্য দ্বিপদশ্চতুস্পদঃ কস্মৈ দেবায় হবিষা বিধেম। য আত্মদা বলদা যস্য বিশ্বাইপাসতে প্রশিষং যস্য দেবাঃ। যস্য ছায়ামৃতং যস্য মৃত্যুঃ কস্মৈ দেবায় হবিষা বিধেম। যস্যেমে হিমবন্তো মহিত্বা যস্য সমুদ্রং রসয়া সহ আহঃ। যস্যেমাঃ প্রদিপশা যস্য বাহু কম্মৈ দেবায় হবিষা বিধেম। যং ক্রন্দসী অবসা তন্তভানে অভ্যেক্ষেং মনসা রেজমানে। যত্ৰাধি সূর উদিতৌ ব্যেতি কস্মৈ দেবায় হবিষা বিধেম।। যেন দৌরুগ্রা পৃথিবী চ দৃঢ়ে যেন সুৰ ভিতং যেন নাকঃ। যো অন্তরিক্ষে রজসো বিমানঃ কন্মৈ দেবায় হবিষা বিধেম। আপো হ যন্মহতীর্বিশ্বং আয়ক্ষ দধানা জনয়ন্তীরগি। ততো দেবানাং নিরবত্তারেকঃ যস্মৈ দেবায় হবিষা বিধেম। যশ্চিদাপো মহিনা পৰ্যপশ্যক্ষং দধানা জয়নন্তীরগ্নিম।। যো দেবেম্বধি দেব এক আসীৎ কস্মৈ দেবায় হবিষা বিধেম ॥৮॥
মর্মার্থ– সকল প্রজের দেবতা হলেন বিশেষ বিশেষ নামে অভিহিত অগ্নি। প্রথম প্রজের অগ্নিদেবতা সমিৎ (ব্যুৎপত্তিগত অর্থে যিনি সম্যকরূপে প্রকাশিত) নামে অভিহিত। অগ্নির স্বরূপবিশেষ সেই সমিৎ-নামক দেবতা আমাদের মঙ্গলের নিমিত্ত উদ্যোগী হোন; অর্থাৎ তার পবিত্র ও সমুজ্জ্বল শিখা বা জ্বালাসমূহ ঊর্ধ্বমুখী হয়ে আকাশকে অতিশয়ভাবে দীপ্ত করুক। (সেই অগ্নি কিরূপ? না,) তিনি সুপ্রতীক (অর্থাৎ শোভন মুখবিশিষ্ট) পুত্রের ন্যায় হিতকরী। (দ্বিতীয় প্রজ তনু বা দেহকে যিনি বিনষ্ট হতে দেন না, সেই তনপাৎ নামক শরীর-পালক অগ্নিবিশেষ মধুর বা সুমিষ্ট ঘূতের দ্বারা (অর্থাৎ হবিঃর দ্বারা) ঋর্গসাধনের (অর্থাৎ স্বর্গপ্রাপ্তির উপায়ভুত) পথসমূহ সিক্ত করুক। (সেই তনুনপাৎ কিরকম? না,) তিনি প্রাণপ্রদ (অতএব শরীরপালক), বিশ্ববেদা (অর্থাৎ সমগ্র বিশ্বকে বিদিত), দেবদ্যোতনাত্মক (অর্থাৎ কেবল মনুষ্যগণেরই নয়, দেবতাগণেরও পূজনীয়)। (তৃতীয় প্রজের দেবতা হে অগ্নি! আপনি নরাশংস (নরের বা মনুষ্যের প্রশংসনীয়) রূপী হয়ে মধুর ঘৃতের (হবির) দ্বারা প্রীত বা তৃপ্ত হয়ে এই যজ্ঞ সম্পাদন করুন। (নরাশংস অগ্নি কিরকম?) তিনি সুষ্ঠু কর্মকারী বা সকল বৈকল্য-পরিহারকারী, দ্যোতনাত্মক বা সর্বপ্রকাশক, সবিতা বা সকল কর্মে আমাদের প্রেরক, বিশ্বাবার বা সকল পাপের নিবারক। (চতুর্থ প্রযাজের দেবতা) স্তুতিপ্রিয়ত্বের নিমিত্ত ঈড়ান নামধেয় অগ্নি বলের সাথে যুক্ত হয়ে এই যজ্ঞ প্রাপ্তির নিমিত্ত গমন করুন। যজ্ঞ প্রবর্তিত হলে সুচে (যজ্ঞীয় ঘৃত ধারণের পাত্র বিশেষে) রক্ষিত আজ্যের (ঘৃতের) ও নমস্কারের দ্বারা আমরা তার পরিচর্যা করব।(পঞ্চম প্রজের দেবতা) বহিনামক কোনও অগ্নিবিশেষ প্রাকৃতে বৰ্হিরগ্ন আজ্যস্য ইত্যাদি মন্ত্রে প্রসিদ্ধ। সেই বহি নামক অগ্নিবিশেষ এই সামান্যরূপ অগ্নির মহিমা বিস্তার করুন। সেই অগ্নি হর্ষজনক স্তুতিমন্ত্রে প্রয়াসবান্ (অর্থাৎ অধিক পরিচর্যাযুক্ত)। অধিকন্তু, এই বৰ্হি নামক অগ্নি প্রাণীবর্গের বাসয়িতা (নিবাসস্থান) ও প্রাণীবর্গ সম্পর্কে অতিশয়রূপে অভিজ্ঞ এবং যজমানের ধন ইত্যাদি দ্রব্যসমূহের ধারয়িংবরণকারী)। (ষষ্ঠ প্রজের দেবতা) দ্বারদেবী নামক কোনও অগ্নি প্রথমে তার ব্রত আচরণ করেছিলেন; তারপর সেই দ্বারদেবীর অনুসরণে সকল যজমান তার ব্রত-সম্পর্কিত কর্মগুলি গ্রহণ করে হবিঃ প্রদান করেন। (দ্বাঃ শব্দের দ্বারা স্ত্রীমূর্তিধর কোনও অগ্নিবিশেষকে লক্ষ্য করা হয়েছে। পূজার নিমিত্ত বহুবচন ব্যবহৃত)। (কিরকম দ্বারঃ? না,) তিনি উরুব্যচসো, অর্থাৎ বিস্তীর্ণ গতিসম্পন্না; তেজসা পত্যমানাঃ (অর্থাৎ প্রাপ্যমাণা তেজস্বিনী)। (সপ্তম প্রজের দেবতা) উষাসানক্তা (অর্থাৎ উষাসা বা উষাকাল ও নক্তা বা রাত্রিরূপা) নামক কোনও অগ্নি আমাদের এই যজ্ঞস্থানকে হিংসারহিত করুন অর্থাৎ এই যজ্ঞকে শত্রুর হিংসা হতে রক্ষা করুন। (কিরকম সেই উষা ও নক্তা? না,) ঘোষণে, অর্থাৎ পরস্পর মিশ্রিত হয়ে। (তার দৃষ্টান্ত কি? না,) দ্যুলোর্কস্থিত ভাসমান দুটি মূর্তি যেমন পরস্পর মিশ্রিত হয়ে একাকার হয়ে যায়, সেই মতো উষা ও নক্তা পরস্পর মিশ্রিত হয়ে একাকার সম্পন্ন অগ্নিরূপ হয়ে যায়। (অষ্টম প্রজের দেবতা)-হে দৈব্যা হোতৃদ্বয় নামক অগ্নি (হোতৃশব্দাভিধেয় দুই অগ্নিবিশেষ; কারণ হোতৃত্ব দুরকম, অগ্নি যথা,-দেব ও মনুষ্য)! আপনার জিহ্বা বা জ্বালা লক্ষ্য করে আমাদের প্রবর্তিত এই যজ্ঞ বিস্তৃত করুন। অধিকন্তু, আমাদের নিমিত্ত এই যজ্ঞের বৈগুণ্য পরিহারপূর্বক শোভন করুন। (নবম প্রজের দেবতা) মহী অর্থাৎ মহতী, গৃণানা অর্থাৎ যজ্ঞের প্রখ্যাপিকা–এই বিশেষণযুক্তা ইড়া, সরস্বতী ও ভারতী নামান্বিতা তিন দেবীর মূর্তিধর অগ্নি এই যজ্ঞ লাভ করুন। (দশম প্রজের দেবতা) ত্বষ্টা নামক অগ্নিবিশেষ আমাদের তাঁর ঐশ্বর্যের দ্বারা পূর্ণ করুন। (কিরকম ঐশ্বর্য? না,) আমাদের পক্ষে যা তুরীপং, অর্থাৎ শীঘ্রপ্রাপক; অদ্ভুতং, অর্থাৎ গো-অশ্ব ইত্যাদির বাহুল্যে আশ্চর্যজনক (আশ্চর্যরূপং); পুরুক্ষু, অর্থাৎ বহু মনুষ্যের দ্বারা প্রশংসিত; সুবীরম, অর্থাৎ শোভন পুত্ৰযুক্ত; রায়ম্পোষং, অর্থাৎ ধনের পোষক পুষ্টিকারক; নাভিং, অর্থাৎ রথচক্রের নাভির বন্ধনের ন্যায় সকল বন্ধুজনের আশ্রয়ভূত (অর্থাৎ চক্রের নাভি যেমন চক্ৰপরিধিকে বন্ধন করে রাখে, সেইরকম ঐশ্বর্যও সকল বন্ধুজনের আশ্রয়স্বরূপ হয়ে থাকে)। (একাদশ প্রযাজের দেবতা) হে বনস্পতি (অর্থাৎ বনস্পতি নামধেয় অগ্নিবিশেষ)! আপনি দানশীলরূপে রম্যমান হয়ে যজ্ঞে প্রদত্ত আমাদের হবিঃ স্বয়ং দেবতাগণের নিকট স্থাপন করুন। আমাদের প্রার্থিত এই অগ্নি আমাদের দুরিত অর্থাৎ পাপ বা অনিষ্ট উপশমের কর্তারূপে আমাদের প্রদত্ত এই হবিঃ দেবগণকে আস্বাদন করান। হে স্বাহা (অর্থাৎ স্বাহাকার-অভিমানী কোনও অগ্নিবিশেষ)! হে জাতবেদা (অগ্নি)! ইন্দ্রের নিমিত্ত এই হবিঃ স্বাহাকৃত অর্থাৎ স্বাহামন্ত্রে সম্যকরূপে হুত বা প্রক্ষিপ্ত করুন (অর্থাৎ ইন্দ্রের উদ্দেশে আমরা এই যে হবিঃ স্বাহা মন্ত্রে আপনাতে প্রক্ষেপণ করছি, তা আপনি গ্রহণ করুন)। তাহলে সকল দেবগণও আমার দীয়মান এই হবিঃ আস্বাদন করবেন। (সায়ণাচার্য বলেছেন, যদিও এটি একাদশ প্রজ, তথাপি দ্বিতীয় ও তৃতীয় মন্ত্রের পুরুষভেদের দ্বারা ব্যবস্থিত হওয়ায় এটি দ্বাদশ সংখ্যার বিরোধী নয়। অর্থাৎ এটি দ্বাদশ প্রযাজের মরূপেও গণ্য)।–হিরণ্যে অর্থাৎ ব্রহ্মাণ্ডরূপ গর্ভে অবস্থিত (হিরণ্যগর্ভ) প্রজাপতি সকল প্রাণিজাতের অগ্রে বা পূর্বে স্বয়ং শরীরধারী ছিলেন। তিনি উৎপন্নমাত্র পরবর্তীকালে উৎপস্যমান (অর্থাৎ যা উৎপন্ন হবে, সেই) সর্ব জগতের পতি ছিলেন। তিনি এই ভাবে পৃথিবী, দ্যুলোক ও বিস্তীর্ণ অন্তরীক্ষলোক ধারণ করে আছেন। অতি অর্থেও তিনি ভূমিকে ধারণ করে আছেন। এইরূপ যে প্রজাপতি দেবতা, আমরা তার উদ্দেশে হবিঃ নির্বপণ পূর্বক তার পরিচর্যা করছি। সেই প্রজাপতি দেবতা একাকীই (ইদেক এব) শ্বাসযুক্ত ও নিমেষযুক্ত হয়ে আপন মহিমার দ্বারা সর্ব জগতের রাজা হয়েছিলেন। অতএব এমন যে প্রজাপতি, তিনি মনুষ্য ইত্যাদি দ্বিপদ ও গো-ইত্যাদি চতুষ্পদ প্রাণী সমূহের নিয়মনে সমর্থ হন। আমরা সেই প্রজাপতি দেবতাকে হবির দ্বারা অর্চনা করছি (বিধেম)। যে প্রজাপতিদেবতা শরীরে জীবরূপে আত্মপ্রদ, বলপ্রদ ও সামর্থ্যপ্রদ, যে প্রজাপতির আজ্ঞা কেবল মনুষ্যই নয়, দেববর্গও বহন করে থাকেন, মোক্ষরূপ অমৃত বা অমরণত্ব যাঁর ছায়া বা যাঁর ছায়ার ন্যায় অধীন, মৃত্যুও অর্থাৎ প্রাণীগণের মরণও যাঁর ছায়ার ন্যায় অধীন, আমরা সেই প্রজাপতি দেবতাকে হবির দ্বারা অর্চনা করছি। হিমবন্ত বা হিমালয় প্রমুখ পর্বতসমূহ যাঁর মহিমা ধারণ করে আছে, ভূমির সাথে অবস্থিত (সহাবস্থিত) সমুদ্র যাঁর অধীন হয়ে আছে, এই দৃশ্যমান পূর্ব ইত্যাদি দিসমূহ যাঁর অধীনরূপে স্থিত, যে প্রজাপতির দুটি বাহুরূপে ধর্ম ও অধর্ম যুগপৎ বিদ্যমান, আমরা সেই হেন প্রজাপতি দেবতাকে আমরা হবির দ্বারা অর্চনা করছি। প্রজাপতির ক্রন্দন বা রোদন হতে উৎপন্ন হওয়ার কারণে দ্যাবাপৃথিবী অর্থাৎ আকাশ ও পৃথিবী যুগপৎ ক্রন্দসী (বা রোদসী) নামে খ্যাত; এই উভয় লোক মনে মনে যে প্রজাপতির দ্বারা রক্ষণের নিমিত্ত তার ঈক্ষণ (অর্থাৎ দর্শন) কামনা করে, আমরাও তার রক্ষণ বা শাসনের প্রার্থনা করি। (সেই দ্যাবাপৃথিবী কিরকম? না, সেই দ্যাবাপৃথিবী দেবতা ও মনুষ্যগণের অবস্থানের নিমিত্ত স্তম্ভিত ও দীপ্যমান। সূর্য যে প্রজাপতি দেবতাকে আশ্রয় পূর্বক উদিত হন, আমরা হবির দ্বারা সেই প্রজাপতি দেবতার অর্চনা করছি। পুণ্যরহিত প্রাণীবর্গের পক্ষে দুষ্প্রাপ্য দ্যুলোক ও পৃথিবীকে যে প্রজাপতি দৃঢ় করেছেন, (অর্থাৎ অবোলোকের পক্ষে উপযুক্ত পাপীগণ যাতে দুলোক ও পৃথিবীতে না অবস্থান করতে পারে, সেই মতো যিনি ব্যবস্থা করেছেন), পুণ্যকর্মকারী জনবর্গের নিমিত্ত যে প্রজাপতি স্বর্গসুখের বিধি নির্ধারণ করেছেন, যে প্রজাপতি জ্ঞানীবর্গের নিমিত্ত দুঃখরহিত মোক্ষ স্থির করেছেন, যে প্রজাপতি অন্তরীক্ষলোকে রজোগুণান্বিত যক্ষ, গন্ধর্ব ইত্যাদির নির্মাতা, সেই প্রজাপতি দেবকে আমরা হবির দ্বারা অর্চনা করছি। যে প্রজাপতি দেবতার অনুগ্রহে মহতী জলসমূহ বিশ্বের আকার প্রাপ্ত হয়েছে (বিশ্বাকারং প্রাপ্তাঃ), (কিরকম সেই জলসমূহ? না,) সেই জলসমূহ অগ্নিচয়নে দক্ষ বা কুশল যজমানকে উৎপন্ন করেছে, তথা চেতব্য (অর্থাৎ চয়ন করা হবে, এমন) অগ্নিকেও উৎপাদন করেছে; যে প্রজাপতি দেবতার দ্বারা সকল দেবতার সুজীবন হেতু প্রাণ নিষ্পন্ন হয়েছে, আমরা হবির দ্বারা সেই প্রজাপতি দেবতার অর্চনা করছি। (অন্য বিকল্পিত যাজ্যায় বলা হয়েছে)–যশ্চিদাপো মহিনা পৰ্য্যপশ্যদ্দক্ষং দধানা জনয়ন্তীরগ্নি। যো দেবেম্বধি দেব এক আসীৎ কস্মৈ দেবায় হবিষা বিধেম।- আপ এখানে দ্বিতীয়ার বহুবচন। যে প্রজাপতি পূর্বোক্তরীতিতে স্ব মহিমায় বিশ্বাকারে পরিণত হয়েছেন এবং অগ্নির জনয়িতা (উৎপাদক) জলসমূহকে সেইরকম সামর্থ্য প্রদানের নিমিত্ত কটাক্ষ বিক্ষেপ করেছেন, যিনি দেবগণের এক অধিদেব (সর্বেধিকো দেব), সেই প্রজাপতি দেবতার উদ্দেশে আমরা হবির দ্বারা অর্চনা করছি। [এই অনুবাকে ব্যাখ্যাত মন্ত্রগুলির সাথে পরবর্তী কাণ্ডের প্রথম প্রপাঠকের অষ্টম অনুবাকের কোন কোন মন্ত্র সংশ্লিষ্ট]।
[সায়ণাচার্য বলেন-নবমেহনুবাকেহগ্নৎপাদনমভিধত্তে। অর্থাৎ, এই নবম অনুবাকে অগ্নির উৎপাদনের বিষয় কথিত হয়েছে।]
.
নবম অনুবাক
মন্ত্র- আকৃতিমগ্নিং প্রযুজং স্বাহা মনো মেধামগ্নিং প্রযুজং স্বাহা চিত্তম বিজ্ঞাতমগিং প্রযুজং স্বাহা বাচো বিধৃতিমগ্নিং প্রযুজং স্বাহা প্রজাপতয়ে মনবে স্বাহাহগ্নয়ে বৈশ্বানরায় স্বাহা বিশ্বে দেবস্য নেতুৰ্মৰ্ত্তো বৃণীত সখ্যাং বিশ্বে রায় ইষুধ্যসি দ্যুম্নং বৃণীত পুষ্যসে স্বাহা মা সু ভিখা মা সু রিমো দৃংহ বীড়য়স্ব সু। অম্ব ধৃষ্ণু বীরয় অগ্নিশ্চেদং করিষ্যথঃ। দৃংহস্ব দেবি পৃথিবি স্বস্তয় আসুরী মায়া স্বধয়া কৃতাহসি। জুষ্টং দেবানামিদমস্তু হব্যমরিষ্টা ত্বমুদিহি যজ্ঞে অস্মিন্ । মিত্রৈতামুখাং তপৈষা মা ভেদি। এতাং তে পরি দাম্যভিত্ত্যৈ। ব্রনঃ সর্পিরাসুতিঃ প্রত্নো হোতা বরেণ্যঃ। সহসম্পুত্রো অদ্ভুতঃ। পরস্যা অধি সম্বোহবরাং অভ্যা তর। যত্ৰাহমস্মি তাং অব। পরমস্যাঃ পরাবতত রোহিদশ্বই হাহগহি। পুরীষঃ পুরুপ্রিয়োহগ্নে ত্বম্ তরা মৃধঃ। সীদ ত্বং মাতুরস্যা উপন্থে বিশ্বান্যগ্নে বয়ুনানি বিদ্বান। মৈনামচিঁষা মা তপসাহভি শূশুচোহন্তরস্যাং শুক্র জ্যেতির্বি ভাহি। অন্তরগ্নে রুচা ত্বমুখায়ৈ সদনে স্বে। তস্যাং হরসা তপঞ্জাবেদঃ শিবো ভব। শিবাঃ কৃত্বা দিশঃ সৰ্ব্বাঃ স্বাং যোনিমিহাহসদঃ ॥৯৷৷
মর্মার্থ- আমাদের অনুষ্ঠান-বিষয়ক সঙ্কল্পের প্রেরক অগ্নিদেবতার উদ্দেশে স্বাহা মন্ত্রে আহুতি প্রদান করছি। আমাদের অনুষ্ঠেয় কর্মের স্মরণসাধক মন ও স্মৃতির ধারণসামর্থ্যরূপা মেধা, এই উভয়ের প্রেরক অগ্নির উদ্দেশে স্বাহা মন্ত্রে আহুতি প্রদান করছি। অজ্ঞাত অনুষ্ঠানকে জ্ঞাত হওয়ার নিমিত্ত এবং জ্ঞাত অনুষ্ঠানকে সাধনের নিমিত্ত,–এই উভয়ের প্রেরক অগ্নির উদ্দেশে স্বাহা মন্তে আহুতি প্রদান করছি। মন্ত্রপাঠরূপ বাকের প্রেরক অগ্নির উদ্দেশে স্বাহা মন্ত্রে আহুতি প্রদান করছি। সেইরকম, যিনি মনুষ্যগণের জনক, সেই প্রজাপতির উদ্দেশে স্বাহা মন্ত্রে আহুতি প্রদান করছি; বিশ্বের মনুষ্য বা নরগণের যিনি অনুগ্রাহক, সেই বৈশ্বানর অগ্নির উদ্দেশে স্বাহা মন্ত্রে আহুতি প্রদান করছি। জগতের নির্বাহক যে দেবতার সখ্য বা অনুগ্রহ যজমান সহসা যাঞ্চা করেন এবং স্তুতির দ্বারা যজ্ঞের পোষণের (পুষ্টির) নিমিত্ত যাঁর বিশ্বাত্মক ধন প্রার্থনা করেন, সেই অগ্নির উদ্দেশে স্বাহা মন্ত্রে সপ্ত সংখ্যক আহুতি প্রদান করছি। (আকুতিম ইত্যাদি মন্ত্রে দীক্ষা সংক্রান্ত সংস্কার করণীয়)-হে উখা! তুমি ভিন্ন হয়ো না, অর্থাৎ অভিন্ন থেকে সুষ্ঠু কর্তব্য সাধন করো। সেই রকমে, তুমি স্ফুটিত হয়েও (অর্থাৎ বিস্তৃত হয়েও) হিংসা করো না। তুমি ভেদাভাবে দৃঢ়া হও এবং শুটনাভাবে আপন অঙ্গসমূহ দৃঢ়ীকৃত করো (দৃঢ়ী কুরু)। হে ধৃষ্ণু (সহিষ্ণু)! হে মাতৃ-সদৃশি উখা! তুমি বীরের মতো আচরণ করো। (মা যেমন পুত্রের প্রতি আচরণ করেন, সেইভাবে আমাদের প্রতি আচরণ করো)। অগ্নি ও তুমি মিলিত হয়ে আমাদের এই কর্ম সম্পাদিত করতে দাও।–হে পৃথিবী দেবীরূপা উখা! (মৃৎকার্যের নিমিত্তভূত হওয়ার কারণে উখা পৃথিবীদেবীরূপে সম্বোধিতা) তুমি যজমানের মঙ্গলের নিমিত্ত দৃঢ় হও। তুমি শম্বর ইত্যাদি অসুর কর্তৃক নির্মিত মায়ার ন্যায় কব্যপ্ৰদানবাচক স্বধা-শব্দের দ্বারা যাগ নিষ্পদিত করো। (স্বধা শব্দে অনুমাত্র উপলক্ষিত হয়েছে। আসুরী মায়া যেমন চিন্তার অতীত বিচিত্ররূপে প্রতিভাত, সেই ভাবে তুমি স্তনদ্বয় ইত্যাদি রচনাযুক্তা হয়ে নিষ্পন্না হও, এটাই বোঝান হয়েছে)। তোমা (উখা) হতে উংপস্যমান (পকমান) এই হবিঃ দেবতাগণের প্রীতিকর হোক (প্রিয়মস্তু)। তুমিও কারো দ্বারা হিংসিকা না হয়ে এই যজ্ঞে উগত হও। হে মিত্র! আপনি এই উখাকে তপ্ত করুন। এই উখা যাতে ভগ্ন না হয়, সেই উদ্দেশে একে আপনার হস্তে সমর্পণ করছি। (পরবর্তী কাণ্ডে উখা ভঙ্গজনিত অপরাধের প্রায়শ্চিত্তির মন্ত্র উল্লেখিত। উখাকে মিত্রের হস্তে পরিদানের দ্বারা মিত্রের পরব্রহ্মত্ব সূচিত হয়েছে)। দ্বন্নঃ সর্পিরাসুতিঃ ইত্যাদি অর্থাৎ–এই উৎপন্নমান অগ্নি পুরাতন (প্রত্ন), দেবগণের আহ্বানকারী (আহ্বাতা বা হোতা), বরণীয় (বরেণ্য), বলের পুত্র (অর্থাৎ মন্থন বা ঘর্ষণহেতু বলের দ্বারা উৎপদ্যমান), ও আশ্চর্যরকম। দ্রু অর্থাৎ বৃক্ষ বা বনস্পতি হলো এই অগ্নির খাদ্য এবং তাতে সর্পি (অর্থাৎ আজ্য বা ঘৃত) আহুতি দেওয়া হয়। (এখানে, কাষ্ঠে কাষ্ঠে ঘর্ষণের দ্বারা, অর্থাৎ অরণি-মন্থনের দ্বারা অগ্নি প্রজ্বলনের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। দাবাগ্নির দ্বারা বনের বৃক্ষ সমূহ দগ্ধ বা ভক্ষণের প্রতিও ইঙ্গিত রয়েছে)। হে যজমানগণের প্রিয় অগ্নি! আপনি যজ্ঞের উৎকৃষ্ট অধিষ্ঠাতা; আপনি এই যজ্ঞে দূরদেশ হতে আগমন পূর্বক নিকৃষ্টরূপ আমাদের দুঃখ হতে উদ্ধার করুন এবং আমাদের মিত্রদের রক্ষা করুন (অর্থাৎ শত্রুগণকে অতিক্রম করান)। আপনি লোহিতবর্ণশালী অশ্বযুক্ত ও উখার হেতুভূত পাংসুমৃত্তিকা লাভ করে থাকেন। হে অগ্নি! আপনি মাতৃসমানা এই উখার উৎসঙ্গে উপবেশন করুন। (আপনি কিরকম? না, আপনি সকল উপায় জ্ঞাত হয়ে আপনার জ্বলদর্চির তাপপ্রভাবে এই উখাকে সন্তপ্ত করেন না, এর অভ্যন্তরে নির্মল জ্যোতির প্রকাশে বিশেষভাবে দীপ্ত হয়ে থাকেন। হে অগ্নি! আপনি আমার নিমিত্ত শান্ত হোন এবং আমাদের সকলের প্রতি শান্তভাবাপন্ন হয়ে এই স্থানে উপবেশন করুন। তারপর সর্ব দিককে শান্ত করে এই উখায় অর্থাৎ আপনার নিজের স্থানে আগত হয়ে উপবেশন করুন। [এই অনুবাকের মন্ত্রগুলির সাথে পরবর্তী কাণ্ডের ১ম প্রপাঠকের ৯ম অনুবাকের মন্ত্রগুলি সংশ্লিষ্ট] ॥৯॥
[সায়ণাচার্য বলেন–দশমেহগ্নিধারণমুচ্যতে। অর্থাৎ এই দশম অনুবাকে অগ্নিধারণ সম্পর্কিত বিষয় কৃথিত হয়েছে]
.
দশম অনুবাক
মন্ত্র- যদগ্নে যানি কানি চাইতে দারুণি দসি। তদস্তু তুভ্যমিঘৃতং তজ্জ্বস্ব যবিষ্ঠা। যদপজিহিকা যদ্বম্রো অতিসর্পতি। সৰ্ব্বং তদস্তু তে ঘৃতং তজ্জ্বস্ব যবিষ্ঠা। রাত্রিং রাত্রিমপ্রয়াবং ভরন্তোহশ্বায়েব তিতে ঘাসমস্মৈ। রায়ম্পোষেণ সমিষা মদন্তোইগ্নে মা তে প্রতিবেশা রিষাম। নাভ্য পৃথিব্যাঃ সমিধানমগ্নিং রায়ম্পোষায় বৃহতে হবামহে। ইরম্মদং বৃহদুকথং যজত্রং জেতারমগ্নিং পৃতনাসু সাসহিম। যাঃ সেনা অভীত্বরীরাব্যাধিনীরুগণা উত। যে স্তেনা যে চ তস্করাস্তাংস্তে অগ্নেহপি দম্যায্যে। দংষ্ট্রাভ্যাং মলিঞ্জভ্যৈস্তরাং উত। হনূভ্যাম্ স্তেনা ভগবস্তাংস্তুং খাদ সুখাদিত্য। যে জনেষু মলিবঃ স্তেনাসস্তস্করা বনে। যে কক্ষেঘায়বস্তাংস্তে দধামি জয়য়াঃ। যো অস্মভ্যমরাতীয়াদ্যশ্চ নো ঘেষতে জনঃ। নিন্দাদ্যো অম্মা দিচ্চ সৰ্ব্বং তং মম্ম কুরু। সংশিতং মে ব্ৰহ্ম সংশিত বীৰ্য্যং বলম। সংশিতং ক্ষত্ৰং জিষ্ণু যস্যাহস্মি পুরোহিতঃ। উদেষাং বাহু অতিরমুদ্ব… উদ্ বল। ক্ষিণোমি ব্ৰহ্মণাহমিত্রানুন্নয়মি স্বাং অহম। দৃশানো রুক্স উৰ্ব্বা ব্যাদৌদুৰ্ম্মৰ্ষমায়ুঃ শ্রিয়ে রুচানঃ। অগ্নিরমৃতো অভবদ্বয়োভির্যদেনং দৌরজনয়ৎ সুরেতাঃ। বিশ্বা রূপাণি প্রতি মুঞ্চতে কবিঃ প্রাসাবীদ্ভদ্রং দ্বিপদে চতুষ্পদে। বি নাকমখ্যৎ সবিতা বরেণ্যোহণু প্রয়াণমুষস্যে বি রাজতি।। নক্তোষাসা সমনসা বিরূপে ধাপয়েতে শিশুমেকং সমীচী। দ্যাবা ক্ষমা রুক্মাঃ অন্তৰ্বি ভাতি দেবা অগ্নিং ধারয়ন্দ্ৰবিনোদাঃ। সুপর্ণোহসি গরুত্মান্ত্রিবৃত্তে শিরো গায়ত্রং চক্ষুঃ স্তোম আত্মা সাম তে তনুৰ্বামদেব্যং বৃহদ্রথন্তরে পক্ষে যজ্ঞাযজ্ঞিয়ং পুচ্ছং ছন্দাংস্যঙ্গানি ধিফিয়াঃ শফা যজুংষি নাম। সুপর্ণোহসি গুরত্মাবিং গচ্ছ সুবঃ পত ॥১০৷৷
মর্মার্থ- হে অগ্নি! কুঠারের দ্বারা ছেদন না করে শুধুমাত্র অরণ্যে পতিত যত কাষ্ঠই আপনাকে অৰ্পণ করি না কেন, তা সবই আপনার নিমিত্ত ঘৃতের ন্যায় প্রিয় হোক। হে যুবতম (অর্থাৎ শ্রেষ্ঠ যুবা বা চিরযুবা বা চিরনবীন) অগ্নি! সেই দারুণজাত সামগ্রী আপনি ভক্ষণ করুন। অরণ্য হতে আমাদের আনীত দারু বা কাষ্ঠের মধ্যে যেটি মহারণ্যে দাবাগ্নি কর্তৃক স্বল্পপরিমাণে দগ্ধ হয়েছে, পিপীলিকা-সদৃশ ক্ষুদ্রজীববৎ সেই কাষ্ঠকে আপনি ভক্ষণ করুন এবং অতিশয়রূপে যে কাষ্ঠ দগ্ধপ্রাপ্ত হয়েছে, তার সার ভক্ষণ করুন। সেগুলি সবই ঘৃতের ন্যায় আপনার প্রিয় হোক। হে অগ্নি! আপনার প্রতিবেশী (নিকটবর্তী) আমরা যেন আপনার হিংসা প্রাপ্ত না হই। আমাদের ধনপুষ্টি ও অন্নপুষ্টি সম্যকভাবে দান করুন। আমরা প্রতিটি রাত্রির অবসানে অর্থাৎ প্রতিদিন আপনাকে সমিধরূপ ঘাস প্রদান করে থাকি, যেমন অশ্বশালায় (আস্তাবলে) বদ্ধ প্রৌঢ় অশ্বকেও প্রতিদিন ঘাস প্রদান করা হয়ে থাকে। বৃহৎ ধনপোষক অগ্নির উদ্দেশে আমরা আহ্বান করছি। (কিরকম অগ্নি? না,) তিনি পৃথবীর নাভিরূপ উখার মধ্যে সম্যক্ দীপ্যমান, সমিধরূপ অন্নের দ্বারা আনন্দিত, বৃহৎ উথমন্ত্রে প্রশংসিত, যজত্রং অর্থাৎ যাগের কারণস্বরূপ, জেতার অর্থাৎ রাক্ষসবিষয়ে জয়শীল, পৃতনাসু অর্থাৎ সংগ্রামে অগ্রে গমনকারী এবং সাসহি অর্থাৎ আমাদের অপরাধের অতিশয়রূপে সোঢ়াব বা সহ্যকারী। যে কোনও শত্রুসেনা উৎকৃষ্ট (শক্তিশালী) সগণসহ পীড়া প্রদানের নিমিত্ত আমাদের অভিমুখে আগমনশীল, এবং যারা গুপ্তচোর ও যারা প্রকটচোর, তাদের সকলকে আপনার (অর্থাৎ অগ্নির) মুখে নিক্ষেপ করছি। গুপ্ত ও প্রকট ভেদে চোর দুরকম। প্রকট চোরও দুরকমের। যারা অরণ্যে, পথের মধ্যে অপহরণ করে প্রত্যক্ষরূপে পলায়মান হয়, তারা প্রকট-চোর। আবার, নির্ভয়ে গ্রামের মধ্যে গমন করে যারা চুরি করে, তারাও প্রকট-চোর। মল বা পাপের আধিক্য হেতু এদের মলিন (মলিব) বলে।–হে পূজনীয় অগ্নি! মলিন চোরগণকে দন্তপংক্তিতে, তস্করগণকে বহিদৃশ্যমান দন্তে বা জম্ভায় ও স্তেন নামক চোরদের হতে পীড়ন পূর্বক তুমি ভক্ষণ করো। মলিন, স্তেন ও তস্কর এই ত্রিবিধ চোর, পূর্ব যাদের নাম ব্যক্ত হয়েছে, তাদের মধ্যে যারা গ্রামে, পথে বা বনে জনগণের প্রতি হিংসা ইচ্ছা করে, তাদের সকলকে আপনার জম্ভায় নিক্ষেপ করছি। (পূর্বে চোরভেদ দর্শিত হয়েছে। ইদানীং শত্রুভেদ কথিত হচ্ছে)।–শত্রুও প্রধানতঃ তিন রকম। আরতি (যারা দাঁতব্যত্বের দ্বারা আমাদের প্রাপ্য ধন প্রদান করে না, অর্থাৎ প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও যারা আমাদের প্রাপ্য ধন প্রদান করে না), দ্বেষী (যারা আমাদের প্রতি বিদ্বেষ প্রযুক্ত হয়ে আমাদের কার্যে বিঘাত করে) এবং নিন্দক (বাক্-দৌজন্যমাত্ৰ সদাই আমাদের নিন্দা করে)। এতৎ ব্যতীত আমাদের বধ করতে কামনাকারী (হকাম) শত্রু আছে, যাদের চতুর্থ বলে ধরা হয়। হে অগ্নি! আপনি তাদের সকলকে চূর্ণ করুন। আমি আমার ব্রাহ্মণ্যকে (ব্রাহ্মণ্যতেজঃ বা শক্তিকে) সম্যক তীক্ষ্ণীকৃত করছি; যাতে যে রাজার আমি পুরোহিত, ব্ৰহ্মতেজের দ্বারা তার মঙ্গলসাধন করতে পারি। আমার বীর্য তথা ইন্দ্রিয়শক্তি ও বল তথা শরীরশক্তিকে সম্যকরূপে স্বকার্যক্ষম করছি। তাতে যে রাজার আমি পুরোহিত, তার প্রতি আমার প্রদেয় সেই ক্ষত্ৰতেজ জয়শীল হোক। আমার এই স্বকীয় ব্রাহ্মণত্ব রাজা ও ব্রাহ্মণ ইত্যাদির মধ্যে একে অপরের বাহু, কান্তি ও বলের দ্বারা বর্ধিত করছি।–এই মন্ত্রের সামর্থে আমি শত্রুগণকে ক্ষীণ করছি এবং আপন পুরুষজনকে উত্তপ্রাপ্ত করাচ্ছি। তিরস্কারহীন জীবন বা আয়ুলাভের আকাঙ্ক্ষা (বাঞ্ছা) করে দর্শনীয়রূপ রূক্স (সুবর্ণনির্মিত ফলকাকার আভরণবিশেষ) যেমন দীপ্ত হয়ে থাকে, সেইরকম (তথাবিধ) দ্যুলোকবাসী দেবগণের সৎ-জনের দ্বারা উৎপন্ন এই অগ্নি অন্নরূপ হবিঃ লাভ করে অমৃত অর্থাৎ অমর হয়েছেন। (অত্র রুক্সস্যাগ্নিধারণাঙ্গত্বাদগ্নিত্বমুপচরিত–এখানে অগ্নিধারণের অঙ্গ হিসাবে রুক্সেতে অগ্নিত্ব উপচরিত হয়েছে, অর্থাৎ লক্ষণার দ্বারা বোধিত হয়েছে)। কবি (পণ্ডিত বা বিদ্বান), বরেণ্য (শ্রেষ্ঠ) সবিতাদেব জগরূপ সমস্ত কিছুকে আলোকিত করেন (প্রকাশ করেন)। দ্বিপদ মনুষ্য ইত্যাদি ও চতুষ্পদ পশুবৰ্গকে আপন আপন কর্মে প্রেরণ পূর্বক এবং দুলোককে বিশেষভাবে প্রকাশিত করে উষার অন্তে উদয় লাভ করেছেন বা বিরাজিত হয়েছেন। দুজনা মাতা যেমন এক শিশুকে পালন করেন তেমনই দিবা ও রাত্র ভিন্নরূপা হয়েও (দিবা শুক্ল ও রাত্রি কৃষ্ণ হওয়া সত্ত্বেও) পরস্পর একমতি হয়ে, এক শিশুরূপ অগ্নিকে ধারণ করছে, অর্থাৎ যজমান কর্তৃক অগ্নিধারণ সম্পাদিত করছে। দ্যাবা বা দ্যুলোক, ক্ষামা বা ক্ষিতিলোক (তথা ভূলোক) ও এই উভয়লোকের মধ্যবর্তী অন্তরীক্ষলোকে রুক্মসদৃশ এই অগ্নি বিশেষভাবে প্রকাশ পাচ্ছেন। দেবগণ যাগের দ্বারা যেমন ধনরূপ ফল প্রদান করেন, সেইরকম যজমানের প্রাণ অগ্নিকে ধারণ করছে (অগ্নিমেতং ধারয়ন ধৃতবন্তঃ)। হে অগ্নিদেব! আপনি পক্ষী-আকারে চেষ্যমান বা চয়নীয় হওয়ার কারণে পক্ষীরাজ গরুড়ের ন্যায়, ত্রিবৃৎস্তোম আপনার শিরস্থানীয়, গায়ত্রী নামে আখ্যাত সাম আপনার চক্ষু, পঞ্চদশ ইত্যাদি স্তোম আপনার জীবাত্মা, বামদেব্য সাম আপনার শির ব্যতিরিক্ত তনুস্থানীয় অর্থাৎ শরীর, বৃহৎ ও রথম্ভর নামে আখ্যাত সামদ্বয় আপনার দুটি পক্ষস্থানীয় এবং যাজ্ঞিয় নামে আখ্যাত সাম আপনার পুচ্ছস্থানীয়। (উল্লিখিত গায়ত্রী ইত্যাদি ছন্দসমূহ হৃদয় ইত্যাদি অঙ্গস্থানীয়)। সৌমিক হোত্রিয় ইত্যাদির আসন আপনার শফ বা খুরস্থানীয় এবং যতগুলি যজু, তা আপনার নামস্থানীয়। [এই অনুবাকের ব্যাখ্যাত মন্ত্রগুলি পরবর্তী কাণ্ডের ১ম প্রপাঠকের ১০ম অনুবাকের মন্ত্রগুলির সাথে সংশ্লিষ্ট] ॥১০৷
[সায়ণাচার্য বলেন–অথৈকাদশে চাতুর্মাস্যগতে বৈশ্বদেবাশ্যে প্রথমপর্বণি বিহিতানাং হবিষাং যাজ্যানুবাক্যা উচ্যন্তে। অর্থাৎ–এই একাদশ অনুবাকে চাতুর্মাস্য সম্পর্কিত বৈশ্বদেবাখ্য প্রথমপর্বের বিহিত হবিঃসমূহের যাজ্যানুবাকা কথিত হয়েছে।]
.
একাদশ অনুবাক
মন্ত্র- অগ্নে যং যজ্ঞমধ্বরং বিশ্বতঃ পরিভুরসি। স ইদেবেষু গচ্ছতি। সোম যাস্তে ময়োভুব উতয়ঃ সন্তি দাশুষে। তাভির্নোহবিতা ভব। অগ্নিৰ্ম্মর্জা ভুবঃ। ত্বং নঃ সোম যাতে ধামানি। তৎসবিতুর্বরেণ্যং ভর্গো দেবস্য ধীমহি। ধিয়ো যো নঃ প্রচোদ্দয়াৎ। অচিত্তী যচ্চকৃমা দৈব্যে জনে দীনৈৰ্দক্ষৈঃ প্রভূতী পূরূষত্বতা দেবেষু চ সবিতর্মানুষেষু চ ত্বং নো অত্র সুবদনাগসঃ। চোদ্দয়িত্ৰী সুনৃতানাং চেতন্তী সুমতীনাম। যজ্ঞং দধে সরস্বতী। পাবীরবী কন্যা চিত্রায়ুঃ সরস্বতী বীরপত্নী পিয়ং ধাৎ। গ্লাভিরচ্ছিদ্রং শরণংসজোষা দুরাধর্ষং গৃণতে শৰ্ম্ম যং সৎ। পূষা গা অন্বেতু নঃ পূষা রক্ষত্বতঃ। পূষা বাজং সনোতু নঃ। শুক্রং তে অন্যদ্যজং তে অন্যৎ। বিষুরূপে অহনী দৌরিবাসি। বিশ্বা হি মায়া অবসি স্বধাবো ভদ্রা তে পূন্নিহ রাতিরস্তু। তেহবর্ধন্ত স্বতবসসা মহিত্বনাহনাকং তরুরু চক্রিরে সদঃ। বিষ্ণুদ্ধাহবধৃষণং মদচ্যুতং বয়োন সাদন্নধি বহিষি প্রিয়ে। প্র চিত্ৰমৰ্কং গৃণতে তুরায় মারুতায় স্বতবসে ভরধ্বম্। যে সহাংসি সহসা সহন্তে রেজতে অগ্নে পৃথিবী মখেভ্যঃ। বিশ্বে দেবা বিশ্বে দেবাঃ। দ্যাবা নঃ পৃথিবী ইমং সিমদ্য দিবিশৃশ। যজ্ঞং দেবেযু যচ্ছতাম। প্ৰ পূৰ্ব্বজে পিতরা নব্যসীভিগীর্ভিঃ কৃণুধ্বং সদনে ঋতস্য। আ নো দ্যাবাপৃথিবী দৈব্যেন জনেন যাতং মহি বাং বরুথ। অগ্নিং স্তোমেন বোধয় সমিধানো অমর্ত্য। হব্যা দেবেষু নো দখৎ। স হব্যাবাডমর্ত্য উশিতশ্চনোহিতঃ। অগ্নিৰ্দিয়া সমৃতি। শং নো ভবন্তু বাজেবাজে৷ ১১৷৷
মর্মার্থ- হে যজ্ঞাগ্নি! আপনি হিংসারহিত যে যজ্ঞের সর্বতঃ প্রাপ্তবান হয়ে থাকেন (অর্থাৎ সর্বতোভাবে ব্যাপ্ত হয়ে থাকেন), তা সেই যজ্ঞের দেবতাগণের নিকট গমন করে। হে সোম! যজমানের নিমিত্ত আপনার যে সুখভাব রক্ষণপ্রকার আছে, তার দ্বারা আপনি আমাদের রক্ষক হোন। (অগ্নিমূধা ভুবঃ–অর্থাৎ অগ্নি মূর্ধা বামস্তকের ন্যায় শ্রেষ্ঠ)। তৎসবিতুর্বরেণ্যং ইত্যাদি, অর্থাৎ যে সবিতাদেব আমাদের বুদ্ধিকে প্রেরণ করেন, সেই সবিতাদেবের বরণীয় তেজের আমরা ধ্যান করি। কর্তব্য-অকর্তব্য সম্বন্ধে অজ্ঞানসম্পন্ন হয়ে আমিই সব–এইরকমে দেহ ইত্যদিতে আত্ম-বুদ্ধি ধারণ পূর্বক বিষয়াসক্ত ইন্দ্রিয়ের দ্বারা দীনতা প্রাপ্ত হয়ে দেবতাসম্বন্ধিনী শরীরে দেবতা ও মনুষ্যের প্রতি যে পাপ আমরা করেছি, হে সবিতা! আমরা যাতে পাপরহিত হই (অর্থাৎ সেই পাপ হতে মুক্ত হই), সেইভাবে আমাদের প্রেরণ করুন। প্রিয়বাক্যের প্রেরয়িত্রী সরস্বতী শোভন বুদ্ধিসম্পন্ন আমাদের কৃত্য অর্থাৎ কর্ম জ্ঞাত হয়ে এই যজ্ঞ ধারণ করেছেন। দেবী সরস্বতী আমাদের কৃত এই কর্মে সাবধান অর্থাৎ অপ্রমত্ত বুদ্ধি প্রদান করুন। (কিরকম সেই সরস্বতী? না,) তিনি পাবীরবী অর্থাৎ পালক বীরগণের উৎপাদনকারিণী, কন্যা অর্থাৎ কমনীয়া, চিত্রায়ু অর্থাৎ বিচিত্র জীবনশালিনী, বীরপত্নী অর্থাৎ বীরবর্গের পালয়িত্রী ও ছন্দের দ্বারা সংযুক্তা। এই হেন সরস্বতী যজমানের প্রতি সমানপ্রীতিসম্পন্না হয়ে স্তবকারী যজমানকে সুখ প্রদান করুন। (কিরকম সুখ? না,) অবিচ্ছিন্ন অর্থাৎ ছেদহীন, শরেণ্যকে রক্ষণ ও দুরাধর্ষ (অর্থাৎ পরাভবহীন সুখ)। এই পূষা দেবতা আমাদের গাভী রক্ষণের উদ্দেশে পশ্চাতে গমন করুন; অধিকন্তু তিনি আমাদের অশ্বসমূহকে রক্ষা করুন; তিনি অন্ন সম্পন্ন করুন (সম্পাদয়তু)। হে পূষা! আপনার শুদ্ধস্বরূপ অনেক প্রকার, যথা,উদয়কালে রক্তবর্ণ, মধ্যাহ্নকালে শ্বেতবর্ণ, এইরকম অনেকপ্রকার। সেই রকম আপনার পূজনও অন্যপ্রকার, যথা,- প্রাতঃকালে মিত্রস্য চর্ষণীভূত ইত্যাদি মন্ত্রে ও মধ্যাহ্নে ত্বা সত্যেন ইত্যাদি মন্ত্রে আপনি পূজিত হয়ে থাকেন। আপনার দ্বারা নিষ্পদিত দিন ও রাত্রিও নানা রূপ, যথা–দিন প্রকাশযুক্ত (প্রকাশোপেতং) এবং রাত্রি তমসাযুক্ত, এইরকম নানারূপ। এইরকমে আপনি বহু বিচিত্ররূপ হয়েও (চিত্ৰকাৰ্য্যকৃদপি) আকাশের ন্যায়হয়ে থাকেন, অর্থাৎ আকাশ যেমন একরূপ, আপনিও তেমনই পক্ষপাতরহিত হয়ে একরূপ। (অর্থাৎ দিবা বা রাত্রিতে আকাশ যেমন একই রকম থাকে, আপনিও তেমনই দিবা বা রাত্রি কারও প্রতি পক্ষপাতী না হয়ে একই রকম থাকেন)। হে স্বধা ইত্যাদি অন্নযুক্ত (কব্যদান বাচক স্বধা শব্দের দ্বারা সকল অন্ন উপলক্ষিত)! আপনি অন্যের চিত্তবৃত্তি রক্ষা করুন (রক্ষসি)। হে পূষা! আপনার ফলপ্রদান সমীচীন হোক। স্বাধীন বলসম্পন্ন মরুত্বর্গ আপন মহিমায় বর্ধনপ্রাপ্ত হয়ে স্বর্গে গমন পূর্বক যজমানের নিমিত্ত স্থান করে দেন। বৃষণং অর্থাৎ কামবৰ্ষক (কাম্য সামগ্ৰীসমূহের প্রদায়ক), মদচ্যুত অর্থাৎ হর্ষক্ষারক বা আনন্দ-প্রদায়ক, বিষ্ণু কর্তৃক পালিত বহিতে (যজ্ঞে) মরুৎগণ অবস্থান করছেন, যেমন সন্ধ্যাকালে পক্ষীগণ বৃক্ষে অবস্থান করে। হে ঋত্বিক ও যজমানবৃন্দ! হবিঃ প্রদানের নিমিত্ত বিবিধ অর্চনাযুক্ত, শীঘ্রগামী, স্বাধীন বলসম্পন্ন, বৈরিবলের দ্বারা অ-পরাভুত (অর্থাৎ শত্ৰুবলকে পরাভবকারী) মরুত্বর্গের উদ্দেশে পূজা করো। হে অগ্নি! আপনি দর্শন করুন। (পশ্য শব্দটি বা দর্শন করুন কথাটি এখানে অধ্যাহার করা হয়েছে)। (কি দর্শন করবেন? না,) এই মখেভ্য অর্থাৎ মারুওযজ্ঞে তথা মরুত্বর্গের উদ্দেশে অনুষ্ঠিতব্য এই যজ্ঞ কেমনভাবে নির্বিঘ্নে সমাপিত হবে, তা চিন্তা করে পৃথিবী কম্পিত হচ্ছেন। (অর্থাৎ পৃথিবীর তার জন্য প্রযত্ন করছেন)। হে বিশ্বদেবগণ! আপনারা শ্রবণ করুন (শৃণুত)। (বিশ্বে দেবা ঋতাবৃধ এটি পুরোণুবাক্যা। বিশ্বে দেবাঃ শৃণুত এটি যাজ্যা। এই দুটিই ২য় কাণ্ডের ৪র্থ প্রপাঠকে ১৪শ অনুবাকের শেষাংশে ব্যাখ্যাত)। দ্যুলোকের দেবতা ও পৃথিবীর দেবতা উভয়ে অদ্য আমাদের এই যজ্ঞ দেববর্গেকে সমর্পণ করুন। (কিরকম যজ্ঞ? না,) ফলের সাধক অর্থাৎ যে যজ্ঞ অবশ্যই ফলদায়ক; দিবিস্পশম্ অর্থাৎ দ্যুলোকস্পর্শী তথা যে যজ্ঞ দ্যুলোককে স্পর্শ করতে সক্ষম। পূর্বজে অর্থাৎ পূর্বে প্রথমে উৎপন্ন দ্যাবাপৃথিবী মাতাপিতার সমান। (শ্রুতি অনুসারে–দ্যুলোক পিতা ও পৃথিবীলোক মাতা)। হে ঋত্বিক ও যজমানবৃন্দ! এই ঋতস্য সদনে অর্থাৎ যজ্ঞের স্থানে অতিশয় নূতন মন্ত্ররূপ বাক্যের দ্বারা সেই দ্যাবাপৃথিবীর (দ্যুলোক ও পৃথিবীলোকের) স্তুতি করুন।-হে দ্যাবাপৃথিবী! আপনারা দেবগণ সহ (দেবসম্বন্ধি পুরুষসমূহের সাথে) আমাদের নিকট আগত হোন; আপনাদের সাথে সম্বন্ধযুক্ত (যুবয়ো সম্বন্ধি) এই বরূথ অর্থাৎ যজ্ঞগৃহ পৃথিবীতে পূজ্য হবে। হে যজমান! আপনি সমিধের দ্বারা অগ্নি প্রজ্বলন পূর্বক মরণরহিত স্বিষ্টকৃৎ অগ্নিকে স্তোত্রের দ্বারা তুষ্ট করে বোধিত করুন যে, তিনি যেন আমাদের এই হব্য দেববর্গের সমীপে স্থাপন করেন। সেই স্বিষ্টকৃৎ অগ্নি করুণাযুক্ত চিত্তে এই স্থানে সম্যক প্রাপ্ত হোন (বা আগত হোন)। (সেই অগ্নি কিরকম? না,) সেই অগ্নি হব্যবাট, অর্থাৎ হব্যবহনকারী; তিনি অমর্তো, অর্থাৎ মরণরহিত; উশিগ, অর্থাৎ অনুগ্রহপূর্বক আমাদের কামনাকারী; দূত, অর্থাৎ দেববর্গের আজ্ঞাবাহক; এবং মনুষ্যরূপী যজমানগণের হিত-অভীষ্টকারী (অর্থাৎ মঙ্গলকামনাকারী)। আপনারা সকলে যজ্ঞে যজ্ঞে অর্থাৎ প্রতি যজ্ঞে আমাদের কল্যাণকারী হোন ॥১১।