রোববারের রোদ ঝলমলে সকাল। বাড়ির মেয়েরা সবাই গির্জায় গেছে। বাগান করার উর্দি গায়ে চড়ালেন ডন কর্লিয়নি ছাই রঙের ঢিলেঢালা প্যান্ট, রঙ-ওঠা নীল শার্ট, মাথায় বেড়ানো, নোংরা ফিডরা টুপি। টুপিটায় আবার রেশমি ফিতে পরানো রয়েছে
আগের চেয়ে অনেক মোটা হয়ে গেছেন ডন। তার বক্তব্য, টমেটো-লতার যত্ন নেন স্বাস্থ্যের কারণে। কিন্তু আসল কারণটা জানতে আর বাকি নেই কারও।
আসল কারণ বাগান করতে ভালবাসেন তিনি। ভোরে ঘুম থেকে উঠে বাগানে এলে, শরীর এবং মনে আশ্চর্য একটা পবিত্রতা অনুভব করেন। মুহূর্তে ফিরে যান যাট বছর পিছনের জীবনে, সিসিলিতে সেই তাঁর শৈশবে। বাবার বীভৎস মৃত্যু আর শোকের স্মৃতিটুকু সাবধানে মন থেকে সরিয়ে দেন। কিছুক্ষণ সুখ-স্মৃতি রোমন্থন। করেন।
সারি সারি শিম গাছের ডগায় কচি সাদা ফুল ধরেছে, তাদের ঘিরে রেখেছে পেঁয়াজ-গাছের শক্ত সবুজ বোটা। বাগানের এক ধারে মুখ বন্ধ একটা বিরাট পিপে দেখা যাচ্ছে, পিপেটা যেন পাহারা দিচ্ছে বাগানকে। গোবরের সার রয়েছে ওটায়, এর চেয়ে ভাল সার আর হয় না। বাগানের আরেক দিকে কাঠের চার কোণা ফ্রেম বানিয়ে রেখেছেন ডন, তার উপরই লতিয়ে উঠেছে টমেটো গাছগুলো।
পানি দিতে হবে বলে একটু ব্যস্তভাবে আজ বাগানে ঢুকেছেন ডন। রোদটা তেতে ওঠার আগেই পানি দেবার নিয়ম, নাহলে পানি গরম হয়ে গিয়ে লেটুস গাছের কচি পাতাগুলোকে সেদ্ধ করে ফেলে। পানির চেয়ে রোদের আঁচ বেশি, কিন্তু রোদ আর পানি যখন একসাথে মেশে তখন পানির গুরুত্ব বেড়ে যায়। দুটো জিনিসকে মেশাবার সময় সাবধানে বুদ্ধি খরচ করে কাজ না করলে গাছগুলোর সর্বনাশ হয়ে যেতে পারে।
বাগানে পিঁপড়ে খুঁজে বেড়াচ্ছেন ডন। পিঁপড়ে থাকলেই ধরে নিতে হবে, এটেল পোকা ধরেছে, সেগুলোর খোঁজেই এসেছে পিঁপড়েরা। সেক্ষেত্রে পোকা ধ্বংস করার জন্যে পিচকিরি দিয়ে ওষুধ ছড়াতে হবে।
সময় মতই গাছের গোড়ায় পানি দেয়া হলো। এরই মধ্যে তেতে উঠতে শুরু করেছে রোদটা। বিবেচনা, বিবেচনা, মনে মনে ভাবছেন ডন কর্লিয়নি। সব কাজ বিবেচনা করে করতে হয়। আবার নিচ হলেন তিনি। শেষ সারির কয়েকটা গাছকে কাঠিতে তুলে দেয়া হয়নি এখনও, ঠিক করলেন, এটা শেষ করেই ফিরে যাবেন। ঘরে।
অকস্মাৎ হতভম্ব হয়ে গেলেন ডন। তার মনে হলো, হঠাৎ মাথার একেবারে কাছে নেমে এসেছে সূর্যটা, পরমুহূর্তে লক্ষকোটি সোনালী কণা দেখতে পেলেন তিনি, চোখের সামনে নাচছে সেগুলো। বাগানে ঢুকে পড়েছে মাইকেলের বড় ছেলেটা, খিল খিল হাসির শব্দ শুনতে পাচ্ছেন তিনি, ছুটে আসছে দাদুর দিকে। পরমুহূর্তে চোখ ঝলসানো হলুদ আলোয় ঢাকা পড়ে গেল সে। পাকা অভিজ্ঞ মানুষ ডন, তাকে এত সহজে ফাঁকি দেয়া সম্ভব নয়। সবই বুঝতে পারলেন তিনি। ওই ঢোখ-ঝলসানো হলুদ আলোর পিছনে লুকিয়ে আছে পরম শত্ৰু, টের পেয়ে গেলেন তিনি। তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ার অপেক্ষায় রয়েছে মৃত্যু।
হাত নেড়ে নাতিকে কাছে আসতে নিষেধ করলেন ডন। আরেকটু দেরি করলে সময় পেতেন না। হঠাৎ হাতুড়ির ঘা পড়ল বুকের ভেতর। মুখ থুবড়ে পড়ে গেলেন তিনি। দম বন্ধ হয়ে আসছে তার।
থমকে দাঁড়িয়ে পড়ল ছেলেটা, তারপরই ঘুরে দাঁড়িয়ে ছুটল বাপকে ডাকতে। ফটকের কাছে যারা ছিল তাদের সাথে ছুটে এসে মাইকেল দেখল, উপুড় হয়ে শুয়ে মুঠো মুঠো মাটি খাবলাচ্ছেন ডন। ধরাধরি করে বাগান থেকে তুলে নিয়ে এসে শোয়ানো হলো বারান্দায়। বাপের পাশে হাটু গেড়ে বসল মাইকেল, একটা হাত ধরল তার। ইতিমধ্যে ডাক্তার আর অ্যাম্বুলেন্স ডাকার জন্যে লোক পাঠানো হয়ে গেছে।
অনেক কষ্টে, প্রাণপণ চেষ্টায় আরেকবার চোখ মেলে সরাসরি ছোট ছেলের দিকে তাকালেন ডন কর্লিয়নি। লালচে মুখটা নীল হয়ে গেছে তার। মাইকেল বুঝতে পারছে, খুব কষ্ট পাচ্ছেন বাবা। খুব বড় ধরনের হার্ট অ্যাটাক, কি হয় না হয় ভাবতেও ভয় করছে।
কিন্তু ডনের মনে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই। তিনি জানেন, এই তার অন্তিম মুহূর্ত। বাগানের সুগন্ধ ভেসে এল তাঁর নাকে। ফুরফুরে বাতাসে এলোমেলো হয়ে গেল তার পাতলা চুলগুলো। চারদিকে একবার দৃষ্টি বুলিয়ে নিয়ে আবার ছেলের চোখে স্থির হলো তার দৃষ্টি। ফিস ফিস করে তিনি বললেন, আহ, জীবন কি সুন্দর!
মেয়েদের চোখের পানি দেখতে হলো না, তারা গির্জা থেকে ফেরার আগেই মারা গেলেন তিনি। ডাক্তার, অ্যাম্বুলেন্সের জন্যেও অপেক্ষা করলেন না। শেষ সময়ে পাশে শুধু পুরুষরাই ছিল। প্রিয়তম ছোট ছেলের হাত ধরে চোখ বুজলেন ডন কর্লিয়নি।
গাম্ভীর্য আর রাজকীয় আড়ম্বরের সাথে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হলো। পাঁচ পরিবারের ডন আর তাদের ক্যাপোরেজিমিদের কেউ বাকি থাকল না আসতে। এল টেসিও আর ক্লেমেঞ্জার পরিবার। মাইকেলের নিষেধ সত্ত্বেও অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে মহান গড ফাদারের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাবার জন্যে এল জনি ফন্টেন। বড় বড় হরফে ছাপা হলো সে খবর ট্যাবলয়েড পত্রিকায়। কোন রকম অপপ্রচারের তোয়াক্কা না করেই জনি ফন্টেন ঘোষণা করল, ডন ভিটো কর্লিয়নি তার ধর্মবাপ ছিলেন; অনেক মানুষ দেখেছে সে তার জীবনে, কিন্তু ভিটো কর্লিয়নির মত আর একজনও দেখল না। এমন মহৎ-হৃদয় একজন মহান ব্যক্তির প্রতি শ্রদ্ধা দেখাবার সুযোগ পেয়ে নিজেকে সম্মানিত বোধ করছে সে। একথা স্বীকার করায় কে কি মনে করল না করল তাতে তার কিছুই এসে যায় না।
প্রাচীন প্রথা অনুসারে উঠানে নিশি-পালন অনুষ্ঠান সম্পন্ন হলো। তার জীবনের শ্রেষ্ঠ কাজ দেখাল আমেরিগো বনাসেরা। একজন মা যেভাবে তার মেয়েকে বিয়ের সাজে সাজায়, ঠিক তেমনি যত্ন আর আন্তরিকতার সাথে সে তার পুরানো বন্ধুকে, তার গড ফাদারকে সাজাল। জীবনের সমস্ত ঋণ শোধ করার এই সুযোগ পেয়ে সে মহাখুশি। তার তুলনাহীন দক্ষতা লক্ষ করে সবাই এক বাক্যে স্বীকার করল, মৃত্যুও ডন কর্লিয়নির ললাট থেকে আভিজাত্যের উজ্জলতা আর মহত্বের মহিমা হরণ করতে পারেনি। এসব মন্তব্য শুনে গর্বে আর আশ্চর্য একটা শক্তির উপলব্ধিতে চিত্ত পূর্ণ হয়ে উঠল আমেরিগো বনাসেরার। আর কেউ না জানুক, তার অন্তত জানতে বাকি নেই, মৃত্যুর করাল স্পর্শ কি সর্বনাশ ঘটিয়েছে ডনের চেহারায়।
ডনের মৃত্যু সংবাদ বিদ্যুৎ বেগে ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে পুরানো বন্ধু আর শিষ্য, অনুচর আর ভক্তেরা, যে যেখানে ছিল, ছুটে আসতে শুরু করল। লাস ভেগাস থেকে এল লুসিমানচিনি আর তার স্বামী জুলস সীগল। এল নাজোরিনি, তার স্ত্রী, স্বামীসহ ওদের মেয়ে আর তার ছেলেপুলেরা। এল টম হেগেনের স্ত্রী আর ছেলেমেয়েরা। সান ফ্রান্সিস্কো, লস অ্যাঞ্জেলেস, বস্টন আর ক্লীভল্যাণ্ড থেকে এল ডনেরা। শবাধার বয়ে নিয়ে গেল রকো ল্যাম্পনি আর অ্যালবার্ট নেরি। এদের সাথে, বলা বাহুল্য, ক্লেমেঞ্জা আর টেসিও থাকল, থাকল ডনের দুই ছেলে। মস্ত উঠান আর উঠানের সবগুলো বাড়ি ফুলে ফুলে ভরে গেল।
এমন একটা ঐতিহাসিক ঘটনার বিবরণ লিপিবদ্ধ করার জন্যে দলে দলে এসে জুটল, সাংবাদিক আর ক্যামেরাম্যানরা। উঠানের প্রকাণ্ড গেটের বাইরে ভিড় জমাল তারা। ছোট একটা ট্রাক দেখা গেল তাদের সাথে। সবাই বুঝল, ওই ট্রাকের ভেতর মুভি ক্যামেরা আছে, অবিস্মরণীয় ঘটনাটাকে জ্যান্ত ধরে রাখার জন্যে চেষ্টা করছে ওরা। নিমন্ত্রণ করা হয়নি এমন কয়েকজন সাংবাদিক চেষ্টার কোন ত্রুটি করল না উঠানের ভেতর ঢোকার। কিন্তু উঠানের সব কটা প্রবেশ পথ আর পঁচিলের চারদিকে হাতে হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে সিকিউরিটি গার্ড। তবে, কোনরকম অসৌজন্য দেখানো হয়নি সাংবাদিকদের সাথে। গলা ভেজাবার জন্যে প্রচুর দামী মদ পাঠিয়ে দেয়া হলো ওদেরকে। কিন্তু ভেতরে কাউকে ঢুকতে দেয়া হলো না। মেহমানরা বেরিয়ে আসার সময় শেষ একটা সুযোগ নিল সাংবাদিকরা, এর তার সাথে কথা বলে কিছু তথ্য আদায় করার চেষ্টা করল, কিন্তু মেহমানরা উত্তর দেয়া তো দূরের কথা, এমন অর্থহীন দৃষ্টিতে তাকাল যেন কেউ কিছু বুঝতে পারছে না, প্রত্যেকে কালা আর বোবা। কেউ নিজের ঠোঁট পর্যন্ত নাড়েনি।
আজকের প্রায় পুরো দিনটাই সেই কোণার লাইব্রেরি রুমে কাটাল মাইকেল, সাথে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ আপনজনেরা রয়েছে। টম হেগেন আর ফ্রেডি মাইকেলকে ছেড়ে বড় একটা বের হলো না কামরা থেকে। সমবেদনা জানাবার জন্যে মেহমানদেরকে নিয়ে আসা হচ্ছে এখানেই সৌজন্যের সাথে সবাইকে অভ্যর্থনা জানাচ্ছে মাইকেন। অনেকেই ওকে গড ফাদার, কেউ কেউ এমন কি ডন বলেও সম্বোধন করছে। ভদ্রতা বজায় রেখে হাসছে মাইকেল। শুধু ওর স্ত্রী কে অ্যাডামস কর্লিয়নির দৃষ্টিতে ধরা পড়ল, সম্বোধনগুলো শুনে অসন্তোষে কঠিন হয়ে উঠছে মাইকেলের মুখের চেহারা।
খানিক পর ওদের সাথে এসে জুটল টেসিও আর ক্লেমেঞ্জা। চেয়ার ছেড়ে উঠে ওদের দুজনকে নিজের হাতে পানীয় ঢেলে দিল মাইকেল ব্যবসা সংক্রান্ত ব্যাপারে হালকা কিছু কথাবার্তা হলো। প্রসঙ্গক্রমে মাইকেল বলল, উঠান আর উঠানের ভেতরের সবগুলো বাড়ি একটা গৃহ নির্মাণ সংস্থার কাছে বেচে দেয়ার সব ব্যবস্থা পাকা হয়ে গেছে। এতে প্রচুর লাভ করছে কর্লিয়নি পরিবার। ডন যে অসাধারণ একটা প্রতিভা ছিলেন, এটা তার আরেক দৃষ্টান্ত।
পরিষ্কার হয়ে গেল কর্লিয়নি পরিবার পশ্চিমে উঠে যাচ্ছে, নিউ ইয়র্কে তাদের সংগঠনই থাকবে না। ডনের অবসর গ্রহণ অথবা মৃত্যুর জন্যে সিদ্ধান্তটা স্থগিত রাখা হয়েছিল এতদিন।
উঠান আর বাড়িগুলো লোকে লোকারণ্য। এর আগে শেষবার এই রকম লোক সমাগম হয়েছিল আজ থেকে দশ বছর আগে। কে যেন বলল, কনি আর কার্লোর বিয়ের পর এক এক করে দশটা বছর কেটে গেছে। জানালার সামনে গিয়ে দাঁড়াল মাইকেল। বাইরে বাগানটা দেখা যাচ্ছে। মনে পড়ছে ওর, আজ থেকে দশ বছর আগে কে-র সাথে ওই বাগানে বসেছিল সে, সেদিন স্বপ্নেও ধারণা করেনি ভাগ্য তাকে এখানে নিয়ে এসে দাঁড় করিয়ে দেবে। কোত্থেকে কোথায় চলে এসেছে সে, ভাবতেও অদ্ভুত লাগে। চোখ বোজার আগে বাবার বলা শেষ কথাটা এখনও কানে কব্জিছে তার। যতদিন বেঁচে থাকবে, ততদিন কানে লেগে থাকবে কথা কটা-আহ, জীবন কি সুন্দর। তারপর মাইকেল স্মরণ করার চেষ্টা করলনা, বাবা কখনও মৃত্যু সম্পর্কে কোন কথা বলেছেন বলে মনে পড়ে না। সাথে সাথে উপলব্ধি করল, মৃত্যুকে অত্যন্ত শ্রদ্ধার চোখে দেখতেন বাবা, তাই সে বিষয়ে তত্ত্বকথা আওড়াতে পারতেন না।
কবরস্থানে যাবার সময় হয়ে এসেছে। মহান ডনকে এবার মাটিতে শোয়াতে হবে। মাইকেলের হাত ধরে তাকে বাগানে বের করে আনল কে। ওদের পিছু পিছু ক্যাপোরেজিমিরা, পিছনে তাদের সৈনিকরা। সৈনিকদের পিছনে দীন-দুঃখী সাধারণ মানুষেরা, যাদের মাথার ওপর সবসময় নিরাপত্তার ছাতা ধরে রাখতেন গড ফাদার, যাদেরকে তিনি আশীর্বাদ করতেন। এদের মধ্যে রয়েছে সেই কটি ওয়ালা নাজোরিনি, রয়েছে সেই বিধবা কলম্বো আর তার ছেলেরা, রয়েছে আরও অগুণতি মানুষ, যারা গড ফাদারের প্রতি আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ, জীবিতকালে কখনও না। কখনও এদের সবার উপকার করেছেন গড ফাদার। এরা সবাই বাস করত তার হেফাজতে, এদের ওপর তার শাসন ছিল কড়, কিন্তু ন্যায্য। এরা ছাড়াও এমন অসংখ্য লোক এসেছে, যারা তার প্রতিপক্ষ দলের প্রতিনিধিত্ব করছে, কিন্তু তারাও আজ তার প্রতি শেষ সম্মান দেখাবার সুযোগটা হাতছাড়া কারেনি।
সবই দেখছে মাইকেল। মুখে একটু আড়ষ্ট, কিন্তু মার্জিত হাসি। তবে কিছুই তাকে প্রভাবিত করতে পারছে না। বাবার সেই শেষ কথাটা ওর সমস্ত অস্তিতে জড়িয়ে গেছে। ভাবছে, কিছুতেই কিছু এসে যায় না, তবু মৃত্যুর সময় আমি যদি বলতে পারি জীবন কি সুন্দর! কথাটা বলে নিজের ওপর বাবার কি প্রচণ্ড আস্থা ছিল। তার দৃষ্টান্ত রেখে গেলেন, সে-ও যদি সেই রকম আস্থার সাথে বলতে পারে, জীবন কি সুন্দর হলে আর কিছুর দরকার হবে না।
তারপর ভাবল, এখন থেকে বাবার অসমাপ্ত কাজ শেষ করার জন্যে তাকে জীবন উৎসর্গ করতে হবে। ঠিক যে পথে এগোচ্ছিলেন বাবা, তাকে সেই পথ অনুসরণ করতে হবে। যত্ন নিতে হবে নিজের ছেলেমেয়েদের, নিজের পরিবারের, নিজের এলাকায়। তবে, এতে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই যে তার ছেলেমেয়েরা অন্য আরেক জগতে মানুষ হবে। ডাক্তার, শিল্পী, বৈজ্ঞানিক, গভর্নর, প্রেসিডেন্ট হবে ওরা। সব হতে পারবে। তাকে শুধু লক্ষ রাখতে হবে যে ওরা যেন মানবজাতির বৃহৎ গোষ্ঠীর বাইরে না পড়ে থাকে।
কিন্তু সেই সাথে এ-ও ঠিক যে, একজন ক্ষমতাশীল, বিবেচক অভিভাবকের মত বৃহৎ গোষ্ঠীর ওপর তীক্ষ্ণ, সতর্ক নজর রাখবে মাইকেল কর্লিয়নি।