৪. মহামানব ও দ্রষ্টাদের শিক্ষা
For the society to prosper there are two important needs. They are : Prosperity through wealth generation and cherishing the value system of the people. The Combination of the two will make the nation truely strong and prosperous.
আমি সব সময় তরুণদের স্বপ্ন দেখতে বলি। আমি তাদের সে অছিয়ত করি এই বিশ্বাসে যে আমাদের প্রত্যেকের মধ্যে সাফল্যজনক পরিস্থিতি সৃষ্টির সক্ষমতা রয়েছে। প্রয়োজন শুধু তীব্র উন্মাদনাপূর্ণ আকাক্ষা সৃষ্টি করা।
শৈশবে আইনস্টাইন কম্পাসের কাঁটা দেখে অভিভূত হয়েছিলেন। তিনি অবাক হয়ে দেখলেন কম্পাসের কাঁটাটি তিনি যেদিকেই ঘোরান না কেন সে তার আপন জায়গায় চলে যাচ্ছে। গভীরভাবে তিনি কাঁটাটির অদৃশ্য শক্তির উৎস বোঝার চেষ্টা করলেন। তার মধ্যে প্রশ্ন এল, কম্পাসের এ শক্তি আসলে ঠিক কোন জায়গায়? এটা নিয়ন্ত্রণ করছে কে? এটা সব সময়ই কাজ করে কেন? এটা কী দিয়ে তৈরী? কম্পাস তার কাজ করবে না এমন কোনও জায়গা কি আছে? থাকলে সেটা কোথায়?
আমরা জানি এটা পৃথিবীর চৌম্বকীয় শক্তি যা ওই চুম্বক নির্মিত কম্পাসের কাটাটিকে উত্তর-দক্ষিণ মুখো করে রাখে, কারণ পৃথিবী উত্তর ও দক্ষিণ মেরুর ম্যাগনেটিক ফিল্ড তাকে দুপাশ থেকে আকর্ষণ করে। কিন্তু এই কার্যকারণ বুঝতে পারাই কি আমাদের শেষ কথা?
মহামানব ও দ্রষ্টাদের শিক্ষা আমরা সহজেই এই ম্যাগনেটিক ফিল্ডের কার্যক্ষমতা দেখতে পাই কিন্তু এর সংগে আমাদের চিন্তাভাবনার সাদৃশ্য বুঝতে পারি না, যদিও আমাদের এই গ্রহের সর্বত্রই ম্যাগনেটিক ফিল্ডের অস্তিত্ব রয়েছে। যৌক্তিকভাবে আমাদের মধ্যেও রয়েছে এই ম্যাগনেটিক ফিল্ড বা চৌম্বকীয় ক্ষেত্র।
একইভাবে আমাদের এই গ্রহ অন্তহীনভাবে সচল রয়েছে, আবর্তিত হচ্ছে তার কক্ষ পথে। এ গ্রহের সবকিছুই পৃথিবীর মুভমেন্টের অংশ, যদিও আমাদের কাছে মনে হয় আমরা স্থির ও গতিহীন অবস্থায় রয়েছি। আমি যেহেতু এ গ্রহেরই অংশ সেহেতু আমিও সচল শক্তির অংশ। এ গ্রহের যে মূল পরিচালনা শক্তি, তা আমার ভেতরেও রয়েছে।
ডায়ারের মতে, আমরা আমাদের আকাঙ্ক্ষাকে জাগ্রত করতে এই শক্তিকে কাজে লাগাতে পারি। কারণ আমাদের ভেতরে যেমন আকাঙ্ক্ষা আছে তেমনি আকাঙ্ক্ষা পূরণের শক্তিও আছে। এটা মূলত একটা বিন্যাসের মত বিষয় যা আমাদের ইচ্ছাশক্তিকে প্রচণ্ডভাবে কেন্দ্রীভূত করে।
এই দৃষ্টিভঙ্গির জায়গায় বিজ্ঞান ও আধ্যাত্মিক দর্শন এক হয়েছে। আমি বেশ কয়েক বছর ধরে কিছু পবিত্র স্থান পরিদর্শনের সুযোগ পেয়েছি। এর মধ্যে সাধক তাপস ও ভবিষ্যতদ্রষ্টাদের মাজার ও তীর্থস্থানে গিয়েছি। আমার ভেতরে যে দর্শন লুকায়িত ছিল সে সব স্থানে গিয়ে তা নিজেই আবিষ্কার করেছি। এসব জায়গায় ভ্রমন করে দেখেছি বিজ্ঞান ও আধ্যাত্মিক সাধনার মধ্যে এক অপূর্ব সুফী সাধক ভিন্ন ভিন্ন বিশ্বাসের মানুষের কাছে অনুসরণীয় হয়ে ওঠেন।
একবার এক ধর্মগুরুর সংগে বিজ্ঞান ও ধর্মতত্ত্বের সংমিশ্রণ বিষয়ে আলাপ করেছিলাম। আমি অবাক বিস্ময়ে দেখলাম আধ্যাত্মিক শক্তি সম্পন্ন এক পূণ্যাত্মা কীভাবে হাসপাতাল, বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তুলেছেন। এমন কি সাধারণ মানুষের খাবার পানি সরবরাহের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন।
তার আশ্রমের এক অংশে দেখলাম রোগীদের চিকিৎসা চলছে। অন্যত্র দেখলাম একটি ধ্যানাগার যেখানে মেডিকেল সায়েন্স ও যোগসাধনার তালিম দেওয়া হচ্ছে।
আহমেদাবাদে অবস্থিত স্বামী নারায়ণ সংস্থার আচার্য প্রমুখ স্বামী মহারাজার সংগে ২০০১ সালের ১৩ জুন আমি দেখা করেছিলাম। স্বামীজীর সংগে আমার আলোচনার বিষয় ছিল বিজ্ঞান ও ধর্মের সংমিশ্রন চিন্তা এবং এই চিন্তা কীভাবে জাতীয় উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে। প্রায় ১ ঘণ্টা আমাদের কথোপকথন হয়। স্বামীজীকে আমি যেসব প্রশ্ন করেছিলাম এবং তিনি উত্তরে যা যা বলেছিলেন তার কিছু অংশ উল্লেখ করার লোভ সামলাতে পারছি না।
আব্দুল কালাম (আ: কা:) : স্বামীজি, ১৮৫৭ সাল থেকেই ভারত স্বাধীনতা লাভের স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। সেই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ দিতে আমাদের সময় লেগেছে ৯০ বছর। পরাধীনতার এই সময়ে গোটা জাতি তরুণ-বৃদ্ধ, ধনী-গরীব, শিক্ষিত-নিরক্ষর সবাই তাদের উদ্দেশ্য লাভের ক্ষেত্রে ছিল সম্মিলিত ও একান্নবর্তী।
তখন সবার লক্ষ্য ছিল একটাই, সবার সচেতন দাবি ছিল শুধুই স্বাধীনতা। স্বামীজি, আজ এই স্বাধীন ভারতের সবার প্রধান চাওয়া কি হতে পারে? গত পঞ্চাশ বছর ধরে ভারত উন্নয়নশীল একটি দেশ। কারণ আর্থিকভাবে এদেশ শক্তিশালী নয়, সামাজিকভাবে এটি সুস্থিত নয়, প্রতিরক্ষায় এদেশ এখনও স্বয়ং সম্পূর্ণতা পায়নি। এসব কারণেই ভারতকে বলা হচ্ছে উন্নয়নশীল দেশ। টিআইএফএসি (টেকনোলজি ইনফরমেশন, ফোকাসিং অ্যান্ড অ্যাসেসমেন্ট কাউন্সিল)র প্রায় ৫ শ সদস্য ভারতের পরবর্তী প্রধান পদক্ষেপ হিসেবে তাদের মতামত ব্যাখ্যা করেছেন। আগামী ২০ বছরের মধ্যে ভারতকে উন্নয়নশীল থেকে কীভাবে উন্নত দেশে পরিণত করা যায়? আমরা এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উন্নয়ন করা দরকার বলে মনে করছি। সেগুলো হল : শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবা, কৃষি, তথ্য ও যোগাযোগ, ভৌত অবকাঠামো এবং উন্নত প্রযুক্তি। স্বামীজি, আমরা আমাদের কর্মপরিকল্পনা ও প্রকল্প সরকারের কাছে উপস্থাপন করতে পারি, কিন্তু আমাদের এই বিশাল পরিকল্পনায় জনগণকে কীভাবে প্রত্যক্ষভাবে সম্পৃক্ত করব?
আমাদের দরকার দক্ষ ও সচেতন জনশক্তি। তা না হলে আমাদের জাতীয় সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার সম্ভব হবে না। এ লক্ষ্য অর্জনে আপনার পরামর্শও প্রয়োজন স্বামীজি!
স্বামীজি : এই পাঁচটির সংগে আরেকটি বিষয় যোগ করতে হবে। ষষ্ঠ বিষয়টি হলো ঈশ্বরে বিশ্বাস ও আধ্যাত্মবাদের মাধ্যমে জনগণকে গড়ে তোলা। এটা খুবই জরুরী। আমাদের প্রথমে একটি নৈতিক ও আধ্যাত্মিক মূল্যবোধের ক্ষেত্র গড়ে তুলতে হবে। আজকের এই দুর্নীতি ও অপরাধ কবলিত সমাজকে শুদ্ধ করতে পারে শুধুমাত্র নৈতিক মূল্যবোধ যা ধর্মপালনের মাধ্যমে অর্জন করা সহজ হয়। আমাদের এমন জনশক্তি তৈরী করতে হবে যারা ঈশ্বরে বিশ্বাস করে এবং তার অলিখিত আইন মেনে চলে। এজন্য দরকার এক পুনরুদ্দীপ্ত বিশ্বাস। এতে আমাদের লক্ষ্য পূরণ সহজ হয়ে পড়বে। আমাদের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে পারব।
আ: কা: স্বামীজি, ভারতভূমিকে উন্নত দেশে রূপান্তরের মত এই সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা বাস্তবায়নের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে কি প্রথমে আমাদের ঈশ্বরে বিশ্বাসের মত স্পিরিচুয়াল ট্রেডিশান গড়ে তুলতে হবে? তারপর শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের মত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে নজর দিতে হবে? নাকি যুগপৎভাবে সব বিষয়কে নিয়ে এগুতে হবেঃ
স্বামীজি : সবগুলো বিষয়কে একত্রে ধারণ করেই আমাদের সামনে এগুতে হবে। দেশের অগ্রগতির জন্য তোমার বিশেষজ্ঞদল যে পাঁচ বিষয়কে চিহ্নিত করেছে তার সবগুলোই একটি অন্যটির সহযোগী হিসেবে এগিয়ে যাবে। আমাদের ভারতীয় সংস্কৃতি আমাদের পারা (আধ্যাত্মিক) ও অপারা (পার্থিব) উভয় বিদ্যা অর্জনের শিক্ষা দেয়। সে মতে অপারা বিদ্যা অর্জনের সংগে সংগে একজন মানুষ পারা বিদ্যাও অর্জন করতে পারে। যে এই মন্ত্রের গুঢ়ার্থ বুঝতে পারবে তখন ধর্ম ও আধ্যাত্মিক ভিত্তির ওপর তার অপারা বিদ্যা প্রতিষ্ঠিত হবে।
আমাদের বুঝতে হবে এই বিশ্ব ব্রহ্মান্ড সৃষ্টির নেপথ্যে ঈশ্বরের উদ্দেশ্য একটাই। সেটা হল তার সৃষ্টির জন্য শান্তি ও সুখ নিশ্চিত করা।
আ:কা: ভারতকে উন্নত বিশ্বে পরিণত করতে আমার মনে হয় তিন শ্রেণীর লোক দরকার– পূণ্য আত্মা (সচ্চরিত্রবান লোক), পূণ্য নেতা (আদর্শবান নেতা) ও পণ্য অধিকারী নীতিবান অফিসার)। আমাদের সমাজে যদি এই তিন শ্রেণীর মানুষের সংখ্যা বাড়ানো যায় তাহলে ভারতবর্ষ জগৎগুরুতে পরিণত হবে। কিন্তু স্বামীজি, তাদের সংখ্যা কীভাবে বাড়ানো সম্ভব বলে আপনি মনে করেন?
স্বামীজি : সমাজে এজাতীয় লোকের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য একাডেমিক ও বৈজ্ঞানিক ট্রেনিংয়ের পাশাপাশি আমাদের স্কুল কলেজের পাঠ্যক্রমে আধ্যাত্মিক ট্রেনিংয়েরও ব্যবস্থা থাকতে হবে।
বর্তমানে ধর্মীয় স্কুল কলেজের সিলেবাস থেকে ধর্মীয় শিক্ষাকে বাদ দেওয়া হচ্ছে। যে নৈতিক শিক্ষাগুলো শৈশবেই একটি মানুষের জন্য দরকার সেটাই এড়িয়ে চলা হচ্ছে। কিন্তু জীবনের শুরু থেকে জন্মের পর থেকে নৈতিক শিক্ষা পেলে তবেই একটি শিশু আদর্শবান নাগরিক হয়ে উঠবে। নৈতিকমূল্যবোধ সম্পন্ন জাতিগঠনের জন্য আমাদের পাঠ্যসূচীর সিলেবাসে সাধু ও জ্ঞানতাপসদের জীবনী ও বাণী অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
সামাজিক, ধর্মীয় ও রাজনীতির ক্ষেত্রে যেসব মহান নেতা সর্বজন শ্রদ্ধেয় তাদের সঠিক মূল্যায়নের জন্য তাদের মহানশিক্ষাও পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। অতীতে, আমাদের গুরুকুল পদ্ধতির শিক্ষানীতিতে এ ধরণের পাঠ্য বিষয় চালু ছিল। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাতেই সত্যবড়া, ধর্মছড়া, পারস্পরিক সহযোগিতা, ঈশ্বরের ওপর বিশ্বাস ইত্যাদি বিষয়গুলো পড়ানো হত।
আ: কা: সরকারের আইন ছাড়া কখনও উত্তম নাগরিক গড়ে তোলা যায়। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো কি একাজটি করতে পারছে? আপনি কি পিতামাতাকে তাদের বাচ্চাদেরকে পনেরো বছরের অধিক বয়সের মানুষের নাগরিক অধিকারের প্রতি সম্মান দেখানোর জন্য নির্দেশ দিতে বলবেন? একইভাবে বাচ্চাদেরকে বড়দের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের উপদেশ দেওয়া সমস্ত স্কুল শিক্ষকদেরও উচিত। যদি আমরা এক্ষেত্রে ব্যর্থ হই তাহলে সরকারও সৎ ও ভালো নাগরিক সৃষ্টি করতে ব্যর্থ হবে। স্বামীজি কি আমার সংগে একমত হবেন?
স্বামীজি : অবশ্যই। একথা সত্যি। একথা সর্বাংশে সত্যি। প্রথম থেকেই তো আমরা বলছি বাড়িতে পিতামাতার কাছ থেকে, স্কুলে শিক্ষক-শিক্ষিকার কাছ থেকে এ শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। আর পরবর্তী জীবনে গুরুর নির্দেশ মত জীবন গঠন করতে হবে।
আ: কা: স্বামীজি, আমি যখন প্রথম একটি রকেট উৎক্ষেপন করি– সেটি ব্যর্থ হয়েছিল। কিন্তু আইএসআরওর সহযোগীতা ও প্রেরণায় দ্বিগুণ উৎসাহিত হয়ে আমার টিম ব্যর্থতাকে সফলতায় পরিণত করে। একই ঘটনা ঘটেছিল তিরুয়াভালুবার উৎক্ষেপনের সময়। প্রথমে ব্যর্থ হয়ে, ব্যর্থতাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে সে মিশনেও সফল হয়েছিলাম।
স্বামীজি : এমন মহান উচ্চাশা ও আকাঙ্ক্ষা থাকলে দেশপ্রেম আপনিই জাগ্রত হয়। একারণেই আমরা বলি, জীবনের শুরুতে যদি কারও মধ্যে ধর্মীয় জ্ঞানের জন্ম দেওয়া যায় তাহলে আপোসেই তার মধ্যে জাতির প্রতি, সমাজের প্রতি এবং ধর্মের প্রতি ভালোবাসা পয়দা হবে। মোট কথা, ধর্মীয় অনুভূতি জীবনের পোক্ত ভিত্তি রচনা করে।
আ: কা: ও আধ্যাত্মিক শক্তি অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। এর সংগে আমি মনে করি অর্থনৈতিক শক্তিও দরকার। মানে আমি বলতে চাইছি আধ্যাত্মিক শক্তি ও অর্থনৈতিক শক্তির সম্মিলন হওয়া জরুরী। আর এ দুটো অর্জনের জন্য অপরিহার্য বিষয় হলো শ্রম-ঘাম। কঠোর পরিশ্রম অবশ্যই দরকার।
স্বামীজি: আমরা প্রায়ই বলি, ঈশ্বরের আশীর্বাদ আর মানুষের কর্ম। এমন কি এই যে একটু আগে তুমি বললে তোমার প্রথম রকেট উৎক্ষেপন ব্যর্থ হয়েছিল; তার মধ্যেও কল্যাণ নিহিত রয়েছে। তোমার প্রথম চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ায় তুমি কাজটি আরও নিখুঁতভাবে করতে পেরেছিলে। ঈশ্বর স্বাভাবিকভাবেই অবশেষে তোমাকে সাফল্য দিয়েছেন।
আ: কা: ভারতবর্ষের উন্নয়নের জন্য পাঁচজন মহান ব্যক্তিকে সংগে নিয়ে আমি ভিশন ২০২০ নামে একটি গণমত আন্দোলন গড়তে চাচ্ছি। আমি আপনার আশীর্বাদ চাচ্ছি।
স্বামীজি: তোমার ওপর এমনিতেই ঈশ্বরের আশীর্বাদ রয়েছে। আমি প্রার্থনা করি তোমার উদ্দেশ্য ও পরিকল্পনা যেন সাধারণ মানুষ বুঝতে পারে। ভারতবর্ষ আধ্যাত্মিক ও অর্থনৈতিক ভাবে যেন উন্নত হয়। আমার প্রার্থনা ভারতবাসী যেন আধ্যাত্মিক ও নৈতিক সম্পদে ঐশ্বর্যবান হয়। ঐশ্বর্যশালী ইচ্ছাশক্তির মানুষের কাছে পৃথিবীর তাবৎ ঐশ্বর্য আপনিই ধরা দেয়। তুমি যদি শুধু পার্থিব ধনের পাহাড় গড়ে তোল তাহলে মানুষ জাগতিক ও পার্থিব ভোগবিলাসীতায় হারিয়ে যাবে। আধ্যাত্মিক শক্তি তার সহগামী হলে ধ্বংসের পথ থেকে তাকে তা রক্ষা করবে। বাস্তবতায় আমরা জনগণের ভাত, কাপড়, আশ্রয়ের ব্যবস্থা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি। কিন্তু এসবের সংগে তার আধ্যাত্মিক স্বাস্থ্যের দিকেও আমাদের খেয়াল করতে হবে। যখন একজন মানুষ তার প্রয়োজনের চেয়ে অনেক বেশী সম্পদের মালিক হয়ে ওঠে তখন সে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। নিজেই নিজের ধ্বংস ডেকে আনে।
তুমি এখানে আসাতে আমরা খুবই আনন্দিত হয়েছি। আমাদের অতীতের ঋষি মুনিরা আমাদের বিজ্ঞান দিয়ে গেছেন, তুমিও দিচ্ছ। তুমিও অনেক বড় সাধক, তুমিও ঋষি।
২০০১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আজমিরের সুফি সাধক গরীবে নওয়াজ খাজা মঈনুদ্দিন চিশতীর দরগাহ শরীফে গিয়েছিলাম। ১২৫৬ সালে ১১৪ বছর বয়সে তার ইন্তেকালের কিছুদিন আগে এই বুজর্গ ৬ দিনব্যাপী ইবাদতের জন্য এখানে নির্মিত তার প্রকোষ্ঠে ঢুকেছিলেন। আমি যখন দরগাহ ঘুরে ঘুরে দেখছিলাম, তখন মাজারের প্রতীকী স্থাপনার সৌন্দর্য দেখে বিমুগ্ধ ও হতবাক হয়েছিলাম।
আটশ বছর আগে শশ মাইল পাড়ি দিয়ে সৌদি আরব থেকে আজমির এসেছিলেন এই ওলী। এখানে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ তার মাজারের চারপাশে সম্প্রীতির সাথে বাস করছে।
খাজা গরীব নওয়াজের শিক্ষা ও বাণী তাকে এক অনন্য চরিত্রে রূপায়িত করেছে। তার সাধারণ অছিয়ত পাথর হৃদয়ের মানুষকেও দ্রবীভূত করতো। তার স্নেহশীল দৃষ্টি তার জানের দুশমনকেও প্রশান্ত করে ফেলতো। তিনি বিশ্বশান্তি ও ভালোবাসার বার্তা নিয়ে এসেছিলেন ভারতবাসীর জন্য। চিশতী সুফিরা তার সে শিক্ষাকে এখনও ধারণ করে আছেন। জাতীয় সম্প্রীতির ক্ষেত্রে তাদের অবদান ভুলবার নয়।
বিভিন্ন বইয়ে খাজা সাহেবের বাণী ও শিক্ষা লিপিবদ্ধ রয়েছে। খাজা সাহেব বলতেন, সেই ব্যক্তিই উত্তম চরিত্রের লোক যে দারিদ্র্য নিয়েও অবিচল, দুঃখের মধ্যেও সুখী, ক্ষুধার্ত থেকেও তৃপ্ত ও আক্রান্ত হয়েও বন্ধুবৎসল। এই ওলীকুল শিয়োমনির মতে, জাহান্নাম থেকে নিশ্চিত পরিত্রানের উপায় হলো ক্ষুধার্তকে মহামানব ও দ্রষ্টাদের শিক্ষা খাওয়ানো, বস্ত্রহীনকে বস্ত্রদান এবং পীড়িতকে সেবাদান করা। খাজা সাহেব ছিলেন সত্যিকার ঈমানদার বা আরিফের একজন রোল মডেল : যিনি শত্রুর মাঝেও শংকামুক্ত ছিলেন এবং সর্বদা আল্লাহকে স্মরণ করতেন। একজন আরিফ আল্লাহভীত হন। লজ্জাবোধ তার চরিত্রের বিশেষ অলঙ্কার।
আমি চিন্তা করতে লাগলাম, আমরা কেন নিজেদের আরিফ হিসেবে গড়ে তুলতে পারি না?
কোনও কাজ করার আগে নিজেকে প্রশ্ন করতে হয়, যা বলতে যাচ্ছি বা করতে যাচ্ছি তা কি আমার জন্য শান্তি বয়ে আনবে? ডায়ার বলেছেন, উত্তরটা যদি হ্যাঁ হয় তাহলে প্রাণমন দিয়ে সে কাজে এগিয়ে যাও। আর যদি না হয় তাহলে তুমি তোমার অহংবোধ থেকে সাবধানী হও। কারণ অহংবোধ বা আমিত্ব তোমাকে অন্যদের থেকে আলাদা করে ফেলবে, এমনকি আল্লাহ থেকেও। খাজা সাহেবের মাজারে আমি সেদিন শুধু একটি ধ্বনিই শুনেছি, সর্বাবস্থায় তোমরা শান্তিতে থাকো।
দরগাহ শরীফের পাশেই পবিত্র পুষ্করণী নামে একটা লেকের মত জলাশয় রয়েছে। এ দুটি পবিত্র জায়গাকে আমার ভারতের ধর্ম সহিষ্ণু অসাম্প্রদায়িকতার প্রতীক বলে মনে হল। আজমির শান্তিপূর্ণ সমাজের আদর্শতম মডেল। আমি মাজারে শোকরানা নামাজ আদায় করলাম। এ দরগাহ শরীফের দৃশ্য আমাকে আরও দুটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের কথা মনে করিয়ে দিল। এর একটি হলো নগর দরগাহ, আরেকটি ভেলানকান্নি গীর্জা।
২০০১ সালের ২ অক্টোবর ভিএসএসসির পরিচালক জি, মধুবন নায়ার এবং IISc-এর প্রফেসর এন বালাকৃষ্ণর সংগে কেরালার অমৃত ইনস্টিটিউট অব কম্পিউটার টেকনোলজি পরিদর্শন করতে গিয়েছিলাম। সেখানে প্রায় ১হাজার তরুণ শিক্ষার্থী, শিক্ষক, ব্রহ্মচারী ও স্বামীদের মধ্যে আমি বক্তব্য রেখেছিলাম।
আমার বক্তব্যের মূল বিষয় ছিল, জ্ঞানের বহুমুখী ব্যবহার। আমি দেখলাম ছাত্রদের মধ্যে নতুন আইডিয়া গ্রহণের সাংঘাতিক প্রবণতা রয়েছে। আমার প্রতি তাদের বিভিন্ন প্রশ্নের মধ্য দিয়ে তারা শুধু প্রযুক্তি উন্নয়নের ক্ষেত্রেই নয় বরং সঞ্জীবন যাপনের ব্যাপারেও আগ্রহ প্রকাশ করলো। তাদের সংগে কথাবার্তা শেষ করে আমি আম্মার সংগে দেখা করলাম। এটি আমার জীবনের এক উল্লেখযোগ্য অভিজ্ঞতা।
সেখানকার প্রধান সাধ্বীকে সবাই আম্মা বলে ডাকে। একজন মানুষ কীভাবে নিজেকে ঈশ্বরের নিকটবর্তী করে গড়ে তুলতে পারে তিনি লোকজনের কাছে সেই বাণীই প্রচার করে থাকেন। ধর্মোপদেশদান ছাড়াও তিনি হাসপাতাল নির্মানের উদ্যোগ নিয়েছেন, প্রতিষ্ঠা করেছেন একটি উচ্চশিক্ষাদানকারী ব্যবস্থাপনা কলেজ। পরিদর্শনের এক পর্যায়ে আশ্রমের প্রধান আম্মা এবং অন্যান্য সন্ন্যাসীদের সংগে কথা হল। যদিও তার এ প্রতিষ্ঠানে আধুনিক সকল শিক্ষাই দেওয়া হয় এবং সেখান থেকে প্রতিবছর অসংখ্য প্রকৌশলী, চিকিৎসক, ব্যবস্থাপনা ও বিজ্ঞানের উচ্চতম ডিগ্রিধারী বেরিয়ে আসছে তারপরও তারা তাদের আধ্যাত্মিক শিক্ষার স্বকীয় বৈশিষ্ট্য থেকে বিচ্যুৎ হননি।
কথা বলার এক পর্যায়ে আম্মা বললেন, কিছু একটা হারিয়ে যাচ্ছে। এই কিছু একটা আসলে কী? এই কিছু একটা বলতে তিনি পার্থিব ও আধ্যাত্মিক শিক্ষার সমন্বয়কে বোঝাতে চাইছিলেন।
আমি যখন রাজকোটের খ্রীস্ট কলেজ পরিদর্শন করছিলাম, সে সময় রামকৃষ্ণ মিশন থেকে স্বামী নিখিলেশ্বরানন্দ আমাকে নেমন্তন্ন জানালেন। স্বামীজি তার আশ্রমটাতে একবার ঘুরে যাবার জন্য অনুরোধ পাঠালেন। আমিও না গিয়ে পারলাম না। খ্রীস্ট কলেজের অনুষ্ঠান শেষ করে আশ্রমে হাজির হলাম। আমি যখন আশ্রমে পৌঁছেছি তখন আশ্রমের সান্ধ্য আরতি ও ভজন শুরু হয়েছে। ভজন সংগীতের মুচ্ছনা আমাকে এত আপুত করলো যে প্রায় পনের মিনিট আমি তাদের সংগে বসে এক অতিলৌকিক ধ্যানের জগতে চলে গেলাম।
মহাত্মা গান্ধীর জন্মস্থান পোরবান্দারে অবস্থিত স্বামী বিবেকানন্দ হলে ধ্যান করার সময় আমার ভেতরে যে শিহরণ অনুভব করেছিলাম, এখানেও সেই আধ্যাত্মিক শিহরণ আমার সমস্ত দেহমনকে নাড়িয়ে গেল।
২০০১ সালের ৬ অক্টোবর কাঞ্চিতে প্রায় ১শ গ্রামের মানুষ, বিশেষ করে কৃষক পরিবার তাদের গ্রামীন উন্নয়নের উদ্দেশ্যে শঙ্করাচার্য নামের একটি সভার মহামানব ও দ্রষ্টাদের শিক্ষা আয়োজন করেছিল। আমাকে নেমন্তন্ন করা হলো এবং সে সভায় যোগ দিলাম আমি। ওই সভায় বিভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের মানুষ তাদের গ্রামাঞ্চলে শহরকেন্দ্রীক নাগরিক সুবিধা সৃষ্টির লক্ষ্যে মিলিত হয়েছেন। স্থানীয় পঞ্চায়েত সভাটির সভাপতিত্ব করলেন। একটি বিষয় দেখে আমি খুব অবাক ও আনন্দিত হলাম যে উন্নয়নমুখী কার্যক্ষেত্রে ধর্মীয় নেতারাও এগিয়ে এসেছেন।
সভাশেষ হলে প্রধান দুই আচার্য আমার সংগে একান্ত আলোচনায় বসলেন। স্বামী বিজয়েন্দ্র স্বরস্বতীগল হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার কথা জিজ্ঞেস করলেন, আমার শারীরিক অবস্থার কথা জিজ্ঞেস করলেন ও আশীর্বাদ করলেন।
স্বামী বিজয়েন্দ্র স্বরস্বতীগল আমাকে জানালেন, সেখানকার ৩শ বছরের পুরনো একটি বিখ্যাত মসজিদের ইমাম আমাকে দাওয়াত দিয়েছেন। স্বামীজি আমাকে মৌলভী সাহেবের দাওয়াত কবুল করার এবং সে মসজিদ পরিদর্শন করার পরামর্শ দিলেন।
তার কথা শুনে, সাবেক প্রেসিডেন্ট আর ভেঙ্কটরমনের কথা মনে পড়ে গেল। বছর দশেক আগে কাঞ্চি মঠের কাছে ভেঙ্কটরমন একবার আমাকে একটা বহু প্রাচীন মসজিদ দেখিয়েছিলেন। কয়েক বছর আগে মসজিদ কর্তৃপক্ষ এবং জেলা কর্তৃপক্ষ মসজিদটি আরেক জায়গায় স্থানান্তর করার সিদ্ধন্ত নেয় কারণ মসজিদ ও মঠের অবস্থান কাছাকাছি হওয়ায় উভয় সম্প্রদায়ের মানুষের জন্য কিছুটা অসুবিধা হচ্ছিল। তাছাড়া প্রতিদিন ওই মসজিদে হাজার হাজার মানুষ ইবাদত করার জন্য আসে; অন্যদিকে মঠেও হিন্দু সম্প্রদায়ের বহু লোক আসে। এর ফলে ট্রাফিক জ্যাম সৃষ্টি হয়। সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় মঠ কর্তৃপক্ষ ওই ঐতিহাসিক মসজিদটি অন্যত্র স্থানান্তর করবে তাদের অর্থায়নে। এ খবর পরমাচার্যের কাছে পৌঁছলে তিনি কঠিনভাবে এ সিদ্ধান্তের বিরোধীতা করেন। পরমাচার্য বললেন, ভোর সাড়ে চারটায় যে ফজরের আযান হয় সে আযান আমাদেরও উপাসনা করার জন্য জাগিয়ে দেয়। এ ছাড়াও নানা কারণে তিনি মসজিদ সরিয়ে নেবার বিরোধীতা করেন। তিনি জেলা কর্তৃপক্ষ ও মঠ পরিচালকদের তার বক্তব্য বুঝিয়ে বললেন এবং মাওনাদিম বা গভীর ধ্যানে মনঃসংযোগ করলেন। অবশেষে তার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মসজিদ স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত বাতিল হয়ে যায়।
পরমাচার্যের মঠ থেকে আমি মসজিদ পরিদর্শনে এলাম। সেখানকার কাজী ও মৌলভীর সংগে দেখা করলাম। সেখানে নামাজ আদায় করলাম। সেখানে প্রায় পঞ্চাশজন তালবে এলেম কোরান শরীফ শিখছিল। আমি তাদের পাশে বসলাম এবং কোরান শরীফের আত্মাখ্যাত আলহামদু সুরা পড়ার জন্য তাদের অনুরোধ করলাম।
এই কাঞ্চিতে এসেই আমি ছাত্রদের কোরান ও বেদ পাশাপাশি বসে পড়তে দেখেছি।
এখানেই ভারতের প্রকৃত মহত্ব লুকিয়ে আছে। কাঞ্চির এই ধর্মীয় সহিষ্ণুতা আমাদের জন্য এবং পরবর্তী পৃথিবীর জন্য এক মহান শিক্ষা।
শঙ্কর কলেজ অব ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সংস্কৃত বিভাগের অধ্যাপক, ছাত্র ও শিক্ষকদের এক আলোচনায় আমি উপস্থিত ছিলাম। বক্তাদের আলোচনায় সেদিন একটি বিষয় পরিষ্কার হয়েছিল যে প্রাচীন সংস্কৃত সাহিত্য বিজ্ঞান চেতনার এক অপূর্ব সম্ভার। এই সংস্কৃত সাহিত্যেই বিমান আবিষ্কারের ধারণা রয়েছে।
এছাড়া পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, চিকিৎসাবিদ্যা, আয়ুর্বেদীর বহু সূত্র রয়েছে সংস্কৃত পুঁথি ও পূরাণে। সে আলোচনায় তারা আমাদের প্রাচীন পণ্ডিত ও বিজ্ঞানীদের মতামত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তাকে আধুনিক বিজ্ঞানের সংগে সমন্বয় ঘটানোর ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
হোয়াইটফিল্ডে অবস্থিত শ্ৰী সত্যসাঈ ইনস্টিটিউট থেকে একবার প্রফেসর রমা রাও ও আমাকে দাওয়াত করা হয়েছিল।
ফজরের নামাজ শেষে আনুষঙ্গিক ইবাদত শেষ করে সকাল ৭টায় একটা কাব্যিক আবহে সেখানে ধর্মালোচনা শুরু হল। আলোচনার বিষয় ছিল কিভাবে অন্তর থেকে অহংকার উপড়ে ফেলে সেখানে ভালোবাসা প্রতিষ্ঠা করা যায়। দেখলাম, সঈ বাবা যখন তার অনুসারীদের মধ্য দিয়ে হেঁটে গেলেন তখন তার চেহারা মোবারকের নূরানী তাজাল্লিতে ভক্তকুলের সব দুঃখ কষ্ট যেন মুহূর্তে উধাও হয়ে গেল।
২০০২ সালের জানুয়ারিতে হোয়াইটফিল্ডের একটি চিকিৎসা প্রযুক্তি ও স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ক সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলাম। সকাল সাড়ে নটায় আলোচনা শুরু হল, শেষ হল রাত আটটায়। ওই সম্মেলনের পুরো আলোচনা অনুষ্ঠানে শ্রী সাঈ সত্যবাবা উপস্থিত ছিলেন। প্রত্যেক আলোচকের বক্তব্যেই তিনি সাধুবাদ
মহামানব ও দ্রষ্টাদের শিক্ষা জানাচ্ছিলেন। আমি আমার পাঁচ মিনিটের বক্তৃতায় বোঝানোর চেষ্টা করলাম কীভাবে প্রযুক্তি মানুষের কাজে এসেছে–দৃষ্টান্ত হিসেবে আমাদের আবিষ্কৃত কার্ডিয়াক স্টেন্টের উল্লেখ করলাম যা পঙ্গু রোগীদের হাঁটা-চলায় সাহায্য করে।
আমার বক্তব্য শেষ হতেই সত্যবাবা দর্শকদের চেয়ারে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে হাত তুলে আমাকে আশীর্বাদ জানাতে লাগলেন। হোয়াইটফিল্ডের আগে তার আখড়ায় গিয়ে অভূতপূর্ব আতিথেয়তা পেয়েছি, বিস্মিত হয়েছি। এখানে এই আলোচনার প্রতি সাঈজীর আগ্রহ দেখে আবার বিস্মিত হলাম। আলোচনার আগে তিনি বলেছিলেন, চেন্নাইয়ে পানির আকাল চলছে। বিশুদ্ধ পানির অভাবে মানুষ ভারী সমস্যায় পড়েছে। তিনি যখন তার বক্তব্যে ঘোষণা করলেন তিনি চেন্নাইয়ের এ জলসংকট নিরসন করবেন, তখন মনটা তার প্রতি শ্রদ্ধায় ভরে গেল।
২০০২ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি অবু পাহাড়ে অবস্থিত ব্ৰহ্মকুমারী আশ্রমে ঘুরে আমার কিছু ব্যতিক্রমী অভিজ্ঞতা হয়েছে। সেখানে গিয়ে শুনলাম ধাধী গুর্জর নামে এক শিবভক্তের ওপর শিব ভর করেছে। ধাধী নামের সেই মহিলা আমাদের দিকে চাইল। তার চেহারা যেন একেবারে পাল্টে গেছে। মুখ রক্তিম হয়ে গেছে। জলদগম্ভীর কণ্ঠে সে জ্ঞান, যোগ, চরিত্র ও কর্ম, এই চারটি বিষয়ে আমাদের উপদেশ দেওয়া শুরু করলো।
আমাদের মানে আমি, শিবতনু পিল্লাই, ও সিলভামূর্তি এই তিনজনকে হঠাৎ সে কাছে ডাকল। ভয়ে ভয়ে তার কাছে গেলাম। সে গম্ভীর কণ্ঠে আমাদের আশীর্বাদ করে বললো, ভারতই হবে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরতম দেশ।
ব্ৰহ্মকুমারী একাডেমী পরিচালিত গ্লোবাল হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টারে চিকিৎসা গ্রহণ করতে আসা করোনারি আর্টারি ডিজিস (সিএডি)র রোগীদের সংগে আমি দেখা করলাম। এখানে একই সংগে রোগীর শারীরিক ও মানসিক চিকিৎসা সেবা দানের পাশাপাশি তাদের আধ্যাত্মিক শক্তি বৃদ্ধিরও চেষ্টা চালানো হয়। আমার বন্ধু ডক্টর ডব্লিউ সিলভামূর্তি দীর্ঘদিন চিকিৎসা বিদ্যা চর্চার পর স্বীকার করেছেন, যোগ সাধনা ও ধ্যান রোগীর ব্যথা উপশমে সাংঘাতিক কার্যকর।
আমি যখন প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর বিজ্ঞান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। তখন ডিআইপিএস (ডিফেন্স ইনস্টিটিউট অব ফিজিওলজি অ্যান্ড আলাইড সায়েন্স)-এ আমি মেডিটেশনের মাধ্যমে রোগীকে আরোগ্য করে তুলতে দেখেছি। কার্ডিয়াক রোগীদের চিকিৎসা করার জন্য ডা, প্রতাপ মৃধা ও ডা. সিলভামূর্তি দুজনে মেডিটেশন সংশ্লিষ্ট এক অভিনব চিকিৎসা পদ্ধতি অনুসরণ করতেন। দুবছর পরে খোঁজ নিয়ে শুনেছি অন্তত ৪শ রোগী আরোগ্যের পথে এবং ৬০ জন সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছে।
তাদের চিকিৎসা পদ্ধতির অংশ হিসেবে তারা রোগীদের প্রতিদিন যোগ সাধনা করাতেন, উচ্চ রক্তচাপ এড়ানোর জন্য স্বপ্নমাত্রার চর্বিযুক্ত খাবার দিতেন আর রোগিদের কার্ডিওভাসকুলার ও মেটাবোলিক এফিশিয়েন্সী বাড়ানোর জন্য কোন না কোন ব্যায়াম করাতেন। আমি আশা করি চিকিৎসাবিদ্যা শুধু শারীরিক রোগ উপসর্গ দূর করার প্রবণতা ছেড়ে মনের অসুখ সারিয়ে তোলার ক্ষেত্রে সচেষ্ট হবে।
অবু পাহাড়ের ব্ৰহ্মকুমারী একাডেমী পরিদর্শনের সময় একাডেমীতে সদ্য যোগদানকারীনী ১৩ জন ব্ৰহ্মকুমারীর সংগে বাক বিনিময় করার সুযোগ দিয়েছিলেন ওই প্রতিষ্ঠানের সিস্টার ঊষা। রাতের খাবার শেষে তাদের সংগে আলোচনায় অংশ নিলাম। আমি তাদের জিজ্ঞেস করেছিলাম তাদের জীবনের লক্ষ্য কী? তারা জবাবে বলেছিল ধর্মীয় আদর্শের পথে থেকে বাকি জীবন তারা দেশবাসীর জন্য কাজ করে যেতে চায়। তাদের কথা শুনে আমি ও ডা. সিলভামূর্তি হাজার বছর আগে লেখা তামিল ভাষার কবি আওয়াইয়ারের লেখা একট কবিতা আবৃত্তি করলাম:
মানুষ হয়ে জন্মানোটা দুঃসাধ্য বটে
খুঁতহীন জন্ম নিয়েও নিখুঁত মানুষ
কজন হতে পারে?
অঢেল জ্ঞান আর শিক্ষা পেয়েও কজন
মানুষ শিক্ষিত আর জ্ঞানী?
সবার চেয়ে কঠিনতম কাজ
সত্যিকারের পুজো আর সত্যি আরাধনা
এ কাজ যারা করতে পারে
অথবা পেরেছিল–
তাদের জন্যে স্বর্গদুয়ার–চিরকালই খোলা
স্বর্গে তারা চিরকালই মহান অতিথি।
মহামানব ও দ্রষ্টাদের শিক্ষা। এর পর আমি ব্ৰহ্মকুমারীদের কাছে থাম্বার বিশপের ঘটনা খুলে বললাম, কেমন করে তিনি স্পেস রিসার্চ স্টেশনের জন্য তার উপসনালয় আমাদের হাতে ছেড়ে দিয়েছিলেন। (এ বইয়ের তৃতীয় অধ্যায়ে এ ঘটনা বলেছি আমি)।
বলার পর ব্রহ্মকুমারীদের কাছে প্রশ্ন করলাম, এ ঘটনা সম্পর্কে তোমাদের মন্তব্য কী?
তারা বললো, আমাদের জাতি অনেক উন্নত। আমাদের সমৃদ্ধ সভ্যতা আমাদের উদারভাবে, সমঝোতার দৃষ্টিতে সব কিছু দেখতে শিখিয়েছে। এমন একটি সম্ভ্রান্ত জাতি হয়ে কেন আমরা বর্ণবাদী ও সাম্প্রদায়িক সংঘাতে যাবো? আমি বিশ্বাস করি যখন কোন জাতির ভবিষ্যত লক্ষ্য থাকবে না তখন সে জাতি হীনম্মন্যতায় ঢেকে যাবে। হারিয়ে যাবে কালের অতল গর্ভে।
মানবতার জন্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে উপযোগী করতে হলে বিজ্ঞান ও ধর্মের সংমিশ্রণ ঘটাতে হবে। ১৯১১ সালে শ্রী অরবিন্দ তার মানবতার গানে বলেছিলেন, এমন একটা সময় আসবে যেদিন নিজস্ব সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের পূর্ণ মুক্তির জন্য গোটা ভারতবর্ষ তার দেহের ওপর আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে থাকা অন্ধকারকে ঝাড়া দিয়ে ফেলে দেবে। দারিদ্র্যের এই শৃংখল থেকে মুক্তির জন্য আমাদের এখনই একযোগে কাজ করতে হবে।
আমি যতবার যেখানে গেছি, সবখানেই একটি সাধারণ মেসেজ প্রচারের চেষ্টা করেছি। সেটা হল তোমার মধ্যেই আরেকজন মহান তুমি রয়েছে যে এই দৃশ্যমান পৃথিবীর সীমান্ত ছাড়িয়ে যেতে পারে। আমি আমার আব্বার মধ্যে এমন একটি সত্তার উপস্থিতি টের পেয়েছিলাম।
আব্বার কাছ থেকেই আমি পারিপার্শ্বিক অস্থিরতার মধ্যেও মনকে প্রশান্ত রাখার বিষয়টি শিখেছি। বহু দুঃখ ও ব্যর্থতার মুখোমুখি হয়েও নিজেকে পরাজিত হিসেবে বিবেচনা করিনি। বাকি জীবনটা আমি আমার ও আমার চার পাশের মানুষের সংগে শান্তিতে কাটাতে চাই। অন্যদের সংগে বিতন্ডায় জড়ানোর কোন ইচ্ছে আমার নেই।
ব্যক্তি সীমাবদ্ধতাকে ছাপিয়ে বহুত্বে বিলীন হবার জন্য এটা অবশ্যই জরুরী বলে আমি মনে করি।
এ প্রসংগে আমি পবিত্র কোরান শরীফের একটি সুরার উল্লেখ করতে চাই:
হে রাসূল (সঃ), যারা ঈমান আনেনি তাদের কাছে আপনি দ্বীনের দাওয়াত প্রচার অব্যাহত রাখুন।
আপনি যার এবাদত করেন, আমি তার এবাদত করি না আর আমি যা করি আপনি তা করেন না।
আপনার কর্মফল আপনার কাছে।
আর আমার কর্মফল আমার কাছে।
আমরা নিজেরা নিজেদের ব্যাপারে যে মত পোষণ করি, আমরা নিজেরা যা বিশ্বাস করি আমাদের কাছে সেটাই সত্য। একদা আমরা জ্ঞানে-বিজ্ঞানে আস্থা এনছিলাম তাই আজ এতদূর আসতে পেরেছি। এই বিশ্বাসকে আরও দৃঢ় করতে পারলে এই অবস্থাই আমাদের ব্যক্তি থেকে মহাকালে ছড়িয়ে দেবে।
ভারতীয়রা নিজেদের মর্যাদাশালী জাতি হিসেবে হাজার বছর ধরে ভেবে এসেছে। আমাদের পূর্বপুরুষরাও সেই বিশ্বাস নিয়ে তাদের জীবন কাটিয়ে গেছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আজকের দিনে ভারতের মানুষ তার সেই চেতনাকে ফেলে এমন গভীরভাবে বস্তুজগতের মোহে ছোটা শুরু করেছে যা প্রকৃত জীবনের জন্য অত্যন্ত পশ্চাৎপদ বলে আমি মনে করি।
একবার এক বিশেষ উপলক্ষ্যে আমাকে ব্যাঙ্গালোরে যেতে হচ্ছিল। আমার এক বন্ধুকে আমার সম্ভাব্য যাত্রা সম্পর্কে বললাম। তাকে জানালাম সেখানে গিয়ে আমি তরুণ-কিশোরদের সংগে দেখা করব, তাদের সংগে কথা বলবো। এ ব্যাপারে আমি তার পরামর্শ চাইলাম। তিনি সরাসরি আমাকে কোন পরামর্শ দিলেন না কিন্তু একগুচ্ছ প্রজ্ঞাময় হাদীসের বাণী শোনালেন—
যখন কথা বলবে, সত্য বলবে,
প্রতিশ্রুতি দিলে পূরণ করবে
কাউকে আঘাত করা এবং মন্দ ও বেআইনি জিনিস
গ্রহণ থেকে তোমার হাতকে বিরত রাখবে।
কোন কাজ সর্বাপেক্ষা উত্তম? মানুষের মনে শান্তি দেওয়া, ক্ষুধার্তকে খাদ্য দেওয়া, দুস্থকে সহায়তা করা, দুঃখীর দুঃখ হ্রাস করা আর আহতকে মহামানব ও দ্রষ্টাদের শিক্ষা সারিয়ে তোলাই সর্বাপেক্ষা ভাল কাজ।
আল্লাহর সমস্ত সৃষ্টি নিয়েই তার পরিবার এবং সেই ব্যক্তিই তার সবচে প্রিয় যে তার সৃষ্টির জন্য ভাল কিছু করার সর্বোচ্চ চেষ্টা চালায়।
এগুলোই রাসুলের হাদীস। এ হাদীসগুলো যিনি আমাকে শুনিয়েছিলেন তিনি হলেন তামিলনাড়ু র বিখ্যাত এক দীক্ষিদারের নাতির ছেলে এবং একজন গণপতিগল (বেদ বিশেষজ্ঞ)র নাতি। আমার এ ঘনিষ্ঠ বন্ধুটি ওয়াই, এস, রাজন ছাড়া আর কেউ নন। এমন উদার মানসিকতা খুঁজে পাওয়া কেবল আমাদের দেশেই সম্ভব। ঋগ্বেদে বলা হয়েছে,
আনো ভদ্রো ও কর্তব্য য়েনথু বিম্ব থা?-অর্থাৎ সর্বদিক হতে (তোমাদের দিকে) মহান জ্ঞান আসতে দাও।
আমার পরিবারের একটি ঘটনা মনে পড়ছে। আমার দাদা ও তার বাবা রামেশ্বরের আম্বালাকারার বা সম্ভ্রান্ত নেতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন। কথিত আছে আমার জন্মভূমি এই রামেশ্বর দ্বীপেই ভগবান রাম রাবনের বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। এ ঘটনাকে চিরস্মরণীয় করতে রামেশ্বরমবাসী প্রতি বছর রাম-সীতার বিবাহ উৎসব পালন করে থাকে।
এখানে রাম তীর্থম নামে একটি পবিত্র পুষ্করণী আছে। পুষ্করণীটি সাংঘাতিক গভীর। পুষ্করণীর মাঝখানে ছোট একটি ভাসমান মন্ডপ বানানো হয়েছে। উৎসবের দিন স্বর্ণালংকার শোভিত রাম-সীতার বিগ্রহ একটি সুসজ্জিত ভেলায় ওই মন্ডপে নিয়ে যাওয়া হতো এবং পুজো করা হতো। আমার দাদার বাবা প্রতিবছর ওই ভেলা সরবরাহ করতেন। বহু প্রাচীনকাল থেকে রামেশ্বরে ওই রাম-সীতার বিবাহ উৎসব আজ অবধি পালিত হয়ে আসছে।
এক বছর, আমার দাদার বাবা পুষ্করণীর পাড়ে দাঁড়িয়ে উৎসব দেখছিলেন। তখনই একটা দুর্ঘটনা ঘটে। হঠাৎ তিনি দেখলেন বিগ্রহটি ভেলা থেকে পড়ে ডুবে গেল। কোন ভাবনা চিন্তা না করেই তিনি পুষ্করণীতে ঝাঁপিয়ে পড়লেন এবং ডুবন্ত সেই বিগ্রহ উদ্ধার করে আনলেন। ঘটনাটি ঘটলো পুরো রামেশ্বরমবাসীর সামনে।
এ ঘটনার পর–
মন্দিরের পুরুৎ আমার দাদার বাবার সম্মানে আমাদের পরিবারকে বিগ্রহে প্রথম শ্রদ্ধাঞ্জলি প্রদানের সুযোগ দিলেন। বিগ্রহ উদ্ধারের পর করুণাময়ের প্রশংসায় ও আমাদের পরিবারের শান্তি কামনা করে ওই দিন রামেশ্বরম মসজিদে বিশেষ মোনাজাত করা হয়েছিল।
আজকের বাস্তবতায় পারস্পরিক সম্প্রীতি ও মানবতার ক্ষেত্রে আমার কাছে। এ ঘটনা এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত বলে মনে হয়।
আমরা কি সবাই এমন সৌভ্রাতৃত্ত্বের মন্ত্রে জেগে উঠতে পারবো না?
১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট মধ্যরাতে পন্ডিত জওহরলাল নেহেরুর স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ শুনতে আমার হাইস্কুলের শিক্ষক ইয়াদুরাই সলোমন আমাকে নিয়ে গিয়েছিলেন। আমরা এখন স্বাধীন এমন ঘোষণা শুনতে আমরা সবাই সেদিন জড়ো হয়েছিলাম।
পরের দিন সকাল বেলায় নেহেরুর সেই ঐতিহাসিক ভাষণ পত্রিকার প্রধান শিরোনামে ছাপা হল। তামিল ভাষায় প্রকাশিত ওই সংবাদপত্রে নেহেরুর ভাষণের সংবাদের পাশেই আরেকটি সংবাদ ছাপা হয়েছিল যা আজও আমার স্মৃতিতে প্রোথিত হয়ে আছে। সংবাদটি ছিল সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা কবলিত পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়াতে মহাত্মা গান্ধী ১৫ আগস্ট নোয়াখালিতে পায়ে হেঁটে উপস্থিত হয়েছেন।
স্বাভাবিকভাবেই জাতির জনক হিসেবে মহাত্মা গান্ধী সেদিন স্বাধীন ভারতের প্রথম পতাকা উত্তোলন করতে পারতেন। কিন্তু তা না করে মানবাত্মার সেবায় তিনি তখন খালি পায়ে নোয়াখালিতে হেঁটে বেড়াচ্ছেন। এমনই ছিল মহাত্মার মহত্ব। যে মহত্ব একজন স্কুলছাত্রের মনে কী ভীষণ এক অমোচনীয় রেখাপাত করেছিল।
তারুণ্যের শক্তি উপলব্ধি করে এবং বয়োজেষ্ঠ্যদের প্রজ্ঞাকে সম্বল করে আমি আমার প্রযুক্তি কেন্দ্রীক উন্নয়ন পরিকল্পনায় হাত দিয়েছি। যেখানে মানুষ নতুন নতুন বাধা অতিক্রম করবে নতুন নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে।
সেখানে তারা বুঝতে চেষ্টা করবে কঠিন সমস্যা উৎরে কীভাবে সফলতার পথে আসতে হয়। আমরা আগেই আলোচনা করেছি কীভাবে স্বপ্ন দেখতে হয়, কীভাবে প্রতিশ্রুতিকে বাস্তবায়ন করতে হয়। আর কীভাবে আধ্যাত্মিক শক্তিকে জাগতিক সমস্যা সমাধানে ব্যবহার করতে হয়। এতে কি সৃষ্টিচক্রের কিছুমাত্র ক্ষতি হতে পারে?
This book ought to be include in school syllabus.