৪. মমির গল্প (দ্বিতীয় পর্ব)

মমির গল্প (দ্বিতীয় পর্ব)

পরের দিন সন্ধেবেলায় ভবেশদার দোকানে গিয়ে দেখি যথারীতি বই মুখে নিয়ে বসে আছেন। দোকানে খদ্দের তো দেখি না বিশেষ কখনো, কী করে সংসার চলে কে জানে। আমাদের দেখে মাথা তুলে বললেন,

‘বাহ মানিকজোড়, এসে গেছ? খুব ভালো, ঝট করে বাকিটা বলে দিই। আজকে একটু জলদি বাড়ি ফিরতে হবে। তা কোথায় যেন ছিলাম?’

‘ওই যে মমির শরীরের ঠিকঠাক ডিসেকশনের ব্যাপারে কথা হচ্ছিল।’

‘ও হ্যাঁ হ্যাঁ, মমির প্রথম মেডিক্যাল অটোপসি। যিনি করেছিলেন সেই মানুষটার জীবনটাও ছিল অদ্ভুত, বুঝলে।’

‘কীরকম?’

‘অগাস্টাস গ্রেনভিল, জন্ম ১৭৮৩ সালে মিলান শহরে। অগাস্টাস যখন বড়ো হচ্ছেন তখন ইতালির ওই অংশটা নেপোলিয়নের দখলে। ডাক্তারি পাশ করতে-না-করতেই অগাস্টাস খবর পেলেন যে তাঁরকে নেপোলিয়নের সেনাবাহিনীতে ঢুকতেই হবে। এদিকে যুদ্ধ তো ওঁর বিন্দুমাত্র ভালো লাগে না। তাই তিনি মিলান থেকে পালিয়ে চলে এলেন ভেনিসে। তার পরের বছরগুলোতে অগাস্টাস ইউরোপের একটার পর একটা দেশে ঘুরে ঘুরে ডাক্তারি করেছেন আর নানান রোগে ভুগেছেন। প্রথমে গ্রিস, যেখানে ম্যালেরিয়ার কবলে পড়লেন। সেটা যদি-বা সারল, তো তুরস্কতে গিয়ে হল প্লেগ। তুরস্ক থেকে স্পেন, সেখান থেকে পর্তুগাল। সেখান থেকে ব্রিটিশ নেভির জাহাজে করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এত দেশ ঘুরে অগাস্টাস সাহেব অবশেষে এক ব্রিটিশ মেমকে বিয়ে করে লন্ডনে থিতু হলেন। লন্ডনে ওঁর পসার ফুলেফেঁপে বেড়ে উঠতে লাগল। উনি তখন শহরের নামজাদা সার্জন আর গাইনেকোলজিস্ট। সমাজের সবরকম উঁচুতলার লোকেদের সঙ্গে ওঠাবসা।’

তা এই অগাস্টাসের একজন রুগি ছিলেন আর্চিবল্ড এডমন্সটন, যিনি কিনা সদ্য ইজিপ্ট থেকে ফিরেছেন। তিনি সার্জন সাহেবকে একটা অদ্ভুত খবর দিলেন। আর্চিবল্ড নাকি ইজিপ্টের থিবস এলাকা থেকে একটা গোটা মমি তুলে নিয়ে এসেছেন, একদম কফিনে সিল করা। অগাস্টাসের তো চোখ দুটো চকচক করে উঠল। তোমাদের আগেই বলেছি সেই সময় লন্ডনের যেখানে সেখানে লোক জড়ো করে মমি খোলার ধুম পড়ে গেছে। কিন্তু অগাস্টাস ভাবলেন যে যদি একদম যত্ন নিয়ে মমিটা খোলা যায় তাহলে মামিফিকেশনের রহস্যটা বোঝা যাবে! সেকথা বললেনও আর্চিবল্ডকে। ব্যস, পরের দিনই অগাস্টাসের বাড়ির দরজায় হাজির হয়ে গেল থিবসের সেই মমি। সালটা ১৮২৫।

ছয় সপ্তাহ ধরে গ্রেনভিল একটু একটু করে মমির গায়ের কাপড়ের প্যাঁচ খুললেন। কাপড়ের ভাঁজের মধ্যে পাওয়া গেল কয়েকটা নীলচে কাচের ছোটো ছোটো গুলি আর গমের দানা। পুরোটা খুলে ফেলার পরে বোঝা গেল সেটি একজন নারীর। শরীরটা শুকিয়ে এলেও পেটের চামড়া থেকে বোঝা যায় জীবদ্দশায় ইনি বেশ মোটাসোটা ছিলেন। মমির গোটা শরীরে লাগানো ছিল মোম আর বিটুমেনের মিশ্রণ। গ্রেনভিল ভেবেছিলেন এই দিয়েই সংরক্ষণ করা হয়েছিল এই মহিলাকে।

কালকেই তোমাদের বলেছিলাম যে মমি তৈরির সময়ে মৃতদেহের পেটের বাঁ-দিকে লম্বালম্বি চিরে পেটের মধ্যের অংশগুলো বের করে নেওয়া হত। তবে একটু গরিব ক্লায়েন্টদের ক্ষেত্রে পদ্ধতিটা ছিল অন্যরকম। তাদের পায়ুদ্বার দিয়ে অ্যাসিড জাতীয় কিছু একটা ঢুকিয়ে দেওয়া হত। তাতে পেটের নাড়িভুঁড়িগুলো গলে গিয়ে পায়ুদ্বার দিয়েই বেরিয়ে আসত। ড গ্রেনভিলের এই মমিও ছিল অনেকটা সেরকম। এঁর পেটের ওপরে কোনো কাটা দাগ ছিল না। কিন্তু গ্রেনভিল মমির দেহের ডিসেকশন আরম্ভ করার পরে পেটের মধ্যেকার নাড়ি, লিভার, কিডনি প্রায় অক্ষত অবস্থাতেই পেয়েছিলেন। হয়তো এঁর ক্ষেত্রে দ্বিতীয় পদ্ধতিটা ব্যবহার করা হলেও সেটা ভালো কাজ করেনি।

যাই হোক, কোমরের হাড় দেখে গ্রেনভিল মৃতের বয়সটা আন্দাজ করেছিলেন ৫০-৫৫র কাছাকাছি। আর সবাইকে অবাক করে দিয়ে এই মহিলার মৃত্যুর কারণটাও বলে দিয়েছিলেন।’

পিজি এবারে টুল থেকে প্রায় লাফিয়ে উঠল,

‘কীভাবে! অত হাজার বছরের পুরোনো মমি থেকে মৃত্যুর কারণ বলে দেওয়া গেল! তখন কি মেডিক্যাল সায়েন্স থোড়াই এত অ্যাডভান্স ছিল নাকি?’

‘না, তা ছিল না, তবে মমির ওভারিতে একটা টিউমার পাওয়া যায়। তাই গ্রেনভিল এই সিদ্ধান্তে পৌঁছোন যে ওই টিউমারই এর মৃত্যুর কারণ। অটোপসির রেজাল্ট বেশ যত্ন করে পাবলিশ করেছিলেন। তাতে ওঁর নিজের হাতে করা মমিটির কিছু স্কেচও ছিল। এই ঘটনার পরেই গ্রেনভিল বিখ্যাত হয়ে যান। 

এতটাই যে একসময় রয়াল ইনস্টিটিউশনে এই মমিটিকে নিয়ে গিয়ে লেকচার দেন। সেদিন সেই লেকচার থিয়েটারের আলো জ্বালানো হয়েছিল মমির শরীর আর কাঠের কফিন থেকে পাওয়া মোমগুলো পুড়িয়েই।’

image46.jpg

গ্রেনভিলের মমি

‘বাবা রে, এ তো একদম সিনেমার মতো গল্প!

‘ইতিহাস জিনিসটাই তো সিনেমার মতো প্রদীপ্ত ভাই, রোমাঞ্চে ভরা। তোমাকে শুধু তাকে খুঁজে নিতে হবে।’

এবারে আমি বললাম, ‘তাহলে গ্রেনভিলের সেই মমি এখন কোথায় আছে?’

‘ব্রিটিশ মিউজিয়ামে। তবে গ্রেনভিল সাহেব কিন্তু ভুল ছিলেন। ওই মহিলার মৃত্যু আসলে ওভারিয়ান ক্যান্সারে হয়নি। হয়েছিল অন্য একটা রোগে।’

‘কীসে?’

‘আমাদের দেশে খুব কমন, কী বলো তো?’

‘লাং ক্যান্সার?’

‘না না, ক্যান্সার-ট্যান্সার নয়। ওকে, একটা হিন্ট দিচ্ছি, দাদা, আমি বাঁচতে চাই!’

পিজি টপ করে প্রশ্নটা লুফে নিল,

‘‘‘মেঘে ঢাকা তারা’’র নীতা!’

‘একদম ঠিক, তা নীতার কী রোগ হয়েছিল জানা আছে?’

‘টিউবারকিউলোসিস!’

‘বাহ, সিনেমার ব্যাপারে কিন্তু তোমার জবাব নেই পিজি ভাই। এই টিবি রোগেই অক্কা পেয়েছিলেন আমাদের এই মামিফায়েড মহিলাটি।’

‘তাই নাকি! কিন্তু সেটা কীভাবে জানা গেল?’

‘সে আরেক গল্প, গ্রেনভিলের আবিষ্কারের ১৩০ বছর পরে ব্রিটিশ মিউজিয়ামের স্টোররুমে একটা বড়ো কাঠের বাক্স পান ইজিপ্টোলজিস্ট জন টেলর। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে মিউজিয়ামের অনেক কালেকশনই স্টোররুমে সরিয়ে রাখা হয়েছিল নিরাপত্তার জন্য। কিন্তু যুদ্ধ শেষ হয়ে গেলেও তার মধ্যের বেশ কিছু ওই স্টোররুমেই রয়ে যায়। ওই বাক্সটাও তার মধ্যে একটা। বাক্সটা খুলে তার মধ্যে দুটো ট্রে পাওয়া যায়। সেগুলো আবার ছোটো ছোটো খুপরিতে ভাগ করা, তাতে গুছিয়ে রাখা আছে একটা মমির শরীরের বিভিন্ন অংশগুলো। আর বাক্সর নাম্বারের সঙ্গে ক্যাটালগ মিলিয়ে দেখা গেল অগাস্টাস গ্রেনভিলই ওই বাক্স মিউজিয়ামকে দান করেন।’

‘গ্রেনভিলের ডিসেক্ট করা মমি আবার সামনে এল তাহলে?!’

‘হ্যাঁ, কিন্তু সেটাও বাক্সবন্দি হয়ে পড়ে ছিল আরও তিরিশ বছর। ২০০৯ সালের মাঝামাঝি ইউনিভার্সিটি অফ লন্ডন সেই মমির টুকরোগুলোকে নিয়ে আবার রিসার্চ শুরু করে। গ্রেনভিল সাহেবের সময় থেকে বিজ্ঞান তো অনেক এগিয়ে এসেছে, তাই ওরা মমির ফুসফুস, গল ব্লাডার আর হাড় থেকে টিউবারকিউলোসিসের জীবাণুর অংশ পায়। আড়াই হাজার বছর আগে তো টিবির কোনো ওষুধ ছিল না। তাই ইনি টিবিতেই মারা যান।’

‘আপনি বললেন কী করে আড়াই হাজার বছর আগে এই মমি তৈরি হয়েছিল? মমির গায়ে তো আর লেখা ছিল না।’

‘না, তা ছিল না, তবে মমির শরীরের রেডিয়োকার্বন ডেটিং থেকে বোঝা গেছে যে এটা যিশুর জন্মের ছ-শো বছর আগের।’

পিজি এবারে আমার মাথায় একটা চাঁটি মেরে বলল,

‘কী বোকার মতো একটা প্রশ্ন করলি, কার্বন ডেটিং তো এখন আকছার হয়। আমি জানতামই ওই করেই মমি কত পুরোনো সেটা বের করেছে। কিন্তু ভবেশদা একটা কথা বলুন। ওভারির টিউমারেই যে সেই মহিলা মারা যাননি সেটা কী করে প্রমাণ হল?’

ভবেশদা এবারে একটু হেসে বললেন,

‘নাহ, তোমাকে যতটা ছ্যাবলা ভেবেছিলাম ততটা নও তুমি। ভালো প্রশ্ন করলে, ইউনিভার্সিটি কলেজ অফ লন্ডনের প্যাথলজিস্ট এডি ট্যাপ ওই ওভারি, ইউটেরাস আর ফ্যালোপিয়ান টিউব পরীক্ষা করেছেন। তাতেই প্রমাণিত হয়েছে যে টিউমারে ক্যান্সার নেই।’

‘বিনাইন টিউমার?’

‘ঠিক, বিনাইন টিউমার। তোমরা ডাক্তারির ছাত্র, তোমরাই জানবে এর মানে কী।’

আমি এবারে বললাম,

‘সে জানি, মানে ওই টিউমার সাধারণ মানের, ও থেকে কখনো ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা খুব খুব কম।’

‘হ্যাঁ, সুতরাং ইরতেরসেনুকে মেরেছিল টিউবারকিউলোসিস, হাজার হাজার বছরের পুরোনো যে ব্যাকটেরিয়া আজও আমাদের চারপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে।’

‘ইরতেরসেনু? সে আবার কে?’

‘ওহ, এটা তো বলা হয়নি। ওটাই ভদ্রমহিলার নাম, মমির কফিনের গায়ে লেখা ছিল। গ্রেনভিলের সময় তো হায়রোগ্লিফসের মানে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি, তাই কী লেখা আছে কেউ বুঝতে পারেনি। এখন বোঝা গেছে নামটা। এই নামের গোদা ইংরেজি মানে করলে দাঁড়ায় ‘লেডি অফ দ্য হাউস’। মানে কারো বাড়ির সর্বময়ী কর্ত্রী বলতে পার।’

পিজি চোখ বড়ো বড়ো করে এবারে বলল,

‘বেশ ডিটেকটিভ গল্পের মতো কিন্তু ব্যাপারটা, তাই না!’

‘সে তো বটেই, মৃতের মৃত্যুর কারণ বের করা, তোমাদের ফরেনসিক মেডিসিনের মতোই তো। মমি থেকে আরও যা সব তথ্য পাওয়া গেছে তা জানলে চোখ কপালে উঠে যাবে!’

‘তাই নাকি! সব ওই অটোপসি করে?’

‘না না, এখন আর অটোপসির দরকারই পড়ে না। এই তো বছর চারেক আগে ব্রিটিশ মিউজিয়ামেই দারুণ একটা কাজ করা হল।’

‘কীরকম?’

‘কায়রোর মিউজিয়ামের পরেই পৃথিবীতে মিশরের মমির সবচেয়ে বড়ো কালেকশন আছে ব্রিটিশ মিউজিয়ামে, প্রায় ১২০ খানা মমি আছে ওদের কাছে। তার মধ্যে থেকেই আটখানা মমি বেছে নেওয়া হয়, তারপরে তাদের সিটি স্ক্যান করে সেই ইমেজগুলোকে নিয়ে থ্রিডি বা ত্রিমাত্রিক একটা আকার দেওয়া হয়। তাতেই ভেতরে থাকা মমিদের অবয়ব একদম স্পষ্ট বোঝা গেছে। এতটাই স্পষ্ট যে চামড়া, মাথার চুল, নখ সব চেনা যাচ্ছিল। সেই ছবিগুলো পরীক্ষা করেই মানুষগুলোর জীবনযাত্রা, রোগভোগ নিয়ে অনেক কিছু আন্দাজ করা গেছে। তার কয়েকটা তোমাদের বলি, শোনো। প্রায় প্রতিটা মমিরই দাঁতের অবস্থা খুব খারাপ ছিল, অনেকের মাড়িতে ঘা বা অ্যাবসেসের দাগও পাওয়া গেছে। খুব কম বয়সেই দাঁত ক্ষয়ে যাওয়া বা দাঁতের রোগ হওয়ার পেছনে ছিল হাইজিনের অভাব আর ওদের খাদ্যাভ্যাস। রুটি প্রধান খাদ্য ছিল। সেই রুটি যা তৈরি হত গম বা ভুট্টার আটা দিয়ে। আটার সঙ্গে স্বাভাবিকভাবেই মিশে থাকত মরুভূমির বালি। আর সেই বালির দানার ঘষা লেগে লেগেই দাঁত ক্ষয়ে যেত। সেই সময়ের লোকেরা আবার হার্টের সমস্যাতেও ভুগত। খাবারের সঙ্গে প্রচুর পরিমাণে রেড মিট খাওয়ার জন্য শরীরে যথারীতি কোলেস্টেরল জমত। কয়েকটা মমির আর্টারিতে তাই জমে থাকা কোলেস্টেরল পাওয়া গেছে।’

image47.jpg

ব্রিটিশ মিউজিয়ােম প্রথম মমি রুম

image48.jpg

মমির সিটি স্ক্যানিং

আমি এবারে বললাম,

‘অ্যাদেরোসক্লেরোসিস?’

‘একদম তাই, তোমাদের ডাক্তারি ভাষায় তো এইটাই রোগটার নাম, এই থেকেই হার্টে রক্ত চলাচলও কমে যায়, যার ফল হার্ট অ্যাটাক। তবে একটা মজার কথা বলি, এরই মধ্যে একটা মমির মাথার খুলির মধ্যে একটুকরো তামাও পাওয়া গেছে, কী করে সেটা ওখানে গেল বলো তো?’

‘খুলির মধ্যে তামার টুকরো? ইজিপশিয়ানরা কি ব্রেনের অপারেশন করতেও জানত নাকি!’

‘ধুস, সেরকম কিছু নয়। মনে করে দেখো, মমি বানাবার সময়ের একটা স্টেপ বলেছিলাম।’

এবারে আমার কাছে ব্যাপারটা পরিষ্কার হয়ে গেল,

‘বুঝেছি বুঝেছি, মৃতের নাকের মধ্যে দিয়ে তামার শিক ঢুকিয়ে ঘিলু বের করে নেওয়া হত তো! তখনই নির্ঘাত একটা টুকরো ভেঙে ভেতরে রয়ে গেছিল।’

ভবেশদা এবারে আমার পিঠ চাপড়ে বললেন,

‘ওয়েল ডান, স্পন্দন ভাই! এই তো, তুমিও এখন ডিটেকটিভ হয়ে গেছ! একদম ঠিকই বলেছ। বেচারা লোকটা ওই তামার টুকরো নিয়েই কাটাচ্ছে এখনও। আরেকটা দারুণ খবর বলি, ২০১৫তে ব্রিটিশ মিউজিয়ামই একটা আস্ত কুমিরের মমির সিটিস্ক্যান করেছিল।’

‘বলেন কী! কুমিরের মমি!!’

‘হ্যাঁ, অস্বাভাবিক কিছু নয় তো, কুমিরকে মিশরীয়রা দেবতার মতো পুজো করত। এই দেবতার নাম সোবেক। ইজিপ্টের আসওয়ান শহর থেকে পঞ্চাশ কিলোমিটার দূরে কোম ওম্বো নামের একটা মন্দির আছে। সেই মন্দির কুমিরদেবতা সোবেকের নামেই। সেখানে ৩০০ খানা মমি বানানো কুমির আছে! সেখান থেকেই একটা মমি আসে ব্রিটিশ মিউজিয়ামে। সেটাকেই ওরা স্ক্যান করে।’

image49.jpg

সোবেক

পিজি এবারে মুখ বেঁকিয়ে বলল,

‘এরা দেখছি যা পাচ্ছে তাকেই স্ক্যানারে ঢুকিয়ে দিচ্ছে। কোনোদিন শুনব বেড়াল কুকুরের মমিও স্ক্যান করেছে।’

‘সেটাও করেছে, ভায়া। তবে তুমি শুধু কুমিরেরটা শোনো, এই চার মিটার লম্বা কুমিরের মমিটা স্ক্যান করে এত ভালো ইমেজ পাওয়া গেছে যে কুমিরটার শেষ খাদ্য হিসেবে একটা গোরুর হাড়ও পাওয়া গেছে পাকস্থলীতে! আর ওটার পিঠের সঙ্গে লাগানো ছিল পঁচিশ খানা ছোটো ছোটো কুমিরের বাচ্চা!’

‘আরিব্বাস! যত শুনছি তত অবাক হচ্ছি, সত্যি।’

‘ইজিপ্টের ইতিহাস অবাক করার মতোই, এ তো কিছুই নয়, আরও কত কত গল্প আছে…’

এবারে ভবেশদার কথার মাঝেই পিজি বলল,

‘একটা কথা আমি আগের দিন থেকে ভেবে যাচ্ছি, ভবেশদা। সেটা বলি এবারে, নাহলে আজকেও জিজ্ঞাসা করতে ভুলে যাব।’

‘বলে ফেলো, ভাইটু।’

‘মমি বলতেই মাথায় এসেছিল, কাকাবাবুর ‘‘মিশর রহস্যতে’’ পড়েছিলাম গিজার পিরামিডের কাছে থাকা রানি হেতেফেরিসের সমাধির কথা, যেখানে কিনা হেতেফেরিসের মমি গায়েব হয়ে গিয়ে আবার ফিরে এসেছিল। এটা কি সত্যি?’

image50.jpg

কোম ওম্বোর মন্দিেরর কুমিরের মমি

ভবেশদা এবারে স্বভাবসুলভ ‘সব জানি’ টাইপের হাসিটা দিয়ে বললেন,

‘না, আংশিক সত্যি। বইটাতে এক জায়গায় হেতেফেরিসের নামের বানানও ভুল আছে। গিজার পিরামিড নিয়েও তো তোমাদের কিছু বলা হয়নি। শুনবে নাকি সে-গল্প?’

‘শুনব না মানে! আলবাত শুনব!’ 

‘ওকে, তাহলে সামনের শুক্রবার সন্ধেবেলায় দিলখুশা কেবিনে দেখা হচ্ছে। ফিশ কবিরাজি খেতে খেতে কথা হবে ’খন।’

image51.jpg

কুমিরের মমি

বলা বাহুল্য, কবিরাজিটা আমাদেরকেই খাওয়াতে হবে। তবে এই নৈবেদ্য-তে যে প্রসাদ পাওয়া যাবে তার স্বাদ যে কী সে আমরা বুঝে গেছি এতদিনে!

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *