৪. দিল্লি এয়ারপোর্টের ওপরে

দিল্লি এয়ারপোর্টের ওপরে যখন প্লেনটা এল তখন আটটা বাজতে দশ।

দেখতে দেখতে প্লেনটা নামতে লাগল। ল্যান্ডিং লাইট দুটো আলোর বন্যা বইয়ে জ্বলে উঠল অন্ধকারে। নিচের টারম্যাকের দু’পাশে সারবন্দী রঙীন বাতিগুলো ক্রমশ কাছে এগিয়ে আসতে লাগল। তারপর সামনের চাকা দুটো মাটি পেল-লাফিয়ে উঠল প্লেনটা। পিছনের চাকাও মাটিতে নামল।

এমন হয় না কখনও বড় একটা। ও পাইলট বোধহয় ঝুমার মতো কোনো এয়ারহোস্টেসের কথা ভাবছিল।

ব্যাড ল্যান্ডিং–অ্যাবসলুটলি ব্যাড ল্যান্ডিং।

এমন চমৎকার আবহাওয়ায় এরকম ল্যান্ডিং হওয়ার কথা নয়। প্লেনটা যখন থেমে দাঁড়ালো ডোমেস্টিক লাউঞ্জের সামনে সিঁড়ি এসে লাগল–যখন প্লেনের দরজা খোলা হল তখনই বাবলি বুঝল বাইরে বৃষ্টি না হলেও ঝড়ের মতো হাওয়া বইছে। গরম হাওয়া। এখুনি ঝড় বৃষ্টি হবে।

দিল্লি এয়ারপোর্টের লবী-করিডর–এসব দেখলে নতুন লোকের তাক লেগে যাবার কথা। ফায়ারব্রিকস-এর দেওয়াল চতুর্দিক ঝকঝক তকতক করছে। এখানে এসে নামলেই মন ভালো লাগে। তাছাড়া, বাবলি দিল্লির মেয়ে বলেও

কাকা-কাকিমা নিতে এসেছিলেন বাবলিকে।

ওর স্যুটকেসটা এখনও পেতে দেরি। এখানে অবশ্য কনভেয়র বেল্টে করে ঘুরে ঘুরে যায় মালপত্রগুলো। দমদমের মতো নয়–তাই এত বেশি সময় লাগে না।

তবু কাকা কাকীমার সঙ্গে কফি খেতে গেল বাবলি।

কাকা রসিক লোক-বাবার মতো। কাকীমা রাশভারী গম্ভীর। বাবলি জানে কাকীমা বাবলিকে পছন্দ করেন না। কিন্তু কি করা যাবে? এ পৃথিবীতে সকলের কি পছন্দ হয় সকলকে।

কাকা বললেন–আমার এক বন্ধু আছেন এখানে ইনকাম ট্যাক্সের কমিশনার। তুই তার কাছে এ দুদিন গিয়ে তালিম-টালিম নিয়ে নে।

বাবলি হাসল। বলল, আহা। আমরা এতদিন মুসৌরীতে নাগপুরে কি করলাম তাহলে?

কাকা হাসলেন। বললেন–কি করলি তা তো আমি জানি। আর যাই ই করিস কাজ শিখিস নি মোটেই।

বাবলি কপট রাগের সঙ্গে বলল–তোমার অ্যাসেসমেন্ট করলেই বুঝবে কাজ শিখেছি কি না। তখন ছেড়ে দে ছেড়ে দে বলে তুমি কাঁদতে বসবে।

কাকা হাসলেন। বললেন–এটাই তো তোদের ভুল ধারণা। ভালো কাজ শেখা মানেই বুঝি লোকের ওপর অত্যাচার করা? যে ভালো কাজ জানে, সে সবসময় ফেয়ার অ্যাসেসমেন্ট করে। তার অ্যাসেসমেন্ট কখনও আপীলে যায় না এবং আপীলে গেলেও তা সবসময় কনফার্মড হয়। এমনভাবে কাজ করবি যেন কাজে সুনাম হয়। দাদার মুখ রাখিস। বুঝলি বাবি।

কাকীমা বিরক্তির গলায় বললেন–কাজের কথা তো পরেও বলা যাবে। এয়ারপোর্টেই যদি সব কাজের কথা বলে শেষ করবে তাহলে আমাকে আনা কেন?

কাকা লজ্জা পেয়ে বললেন, সরী! সরী! বল বাবলি। ইম্ফল কেমন দেখলি?

বাবলি বলল–দারুণ। আর শুধুই কি ইম্ফল? নাগাল্যান্ড গিয়েছিলাম–জান?

কাকা অবাক হলেন। বললেন কই? যাওয়ার কথা ছিল না কি?

–না। কথা ছিল না। ওয়েদারের জন্য ইম্ফলের ফ্লাইট পর পর চার পাঁচ দিন ক্যানসেল হল। তারপর এয়ার ইন্ডিয়ার পাইলটদের স্ট্রাইক। পরে অবশ্য স্ট্রাইক ভেঙে গেল। নইলে আর এলাম কি করে, রিস্ক না নিয়ে মেসোমশাই একজন এসকর্ট ঠিক করে আমাকে মন্টিমামার বাগানে পৌঁছে দেবার বন্দোবস্ত করেছিলেন। ইম্ফল থেকে কোহিমা–তারপর ডিমাপুর। ডিমাপুর থেকে বাগান অবধি ট্রেন–তারপরে দমদমে মন্টিমামাদের কোম্পানীর প্লেনে বাগান থেকে।

কাকা কফির কাপটা নামিয়ে রাখতে রাখতে বললেন–বুঝলাম। কিন্তু এসকর্টটি কে? কোনো নাগা সন্ন্যাসী নাকি?

–অ্যাই অসভ্য! বলে বাবলি বকল কাকাকে।

কাকীমা বললেন, তোর কাকুর বরাবরই কথাবার্তা ওরকম। কার সঙ্গে কি বলবে তার কোনো বাছ-বিচার নেই।

কাকা বললেন–কথাটা ঘুরে যাচ্ছে। বললি না তো বাবলি এসকর্টটি কে?

বাবলি বলল, আরে না। নাগা-ফাগা নয়। একেবারে সাদামাটা একজন ক্যাবলা-ট্যাবলা বাঙালি ভদ্রলোক–মেসোমশাইয়ের অফিসেই আছেন।

কাকা ঘুরে বসে বললেন–দাঁড়া দাঁড়া, আমার বন্ধু বাণীরূপের ভাই আছে ওখানে–অভীরূপ। অভী–সে নয় তো? তোর মেসোমশাইয়ের অফিসেই আছে।

বাবলি এবার বেশ ঘাবড়ে গেল। নার্ভাস-নার্ভাস লাগল ওর। ঐ ক্যাবলা লোকটাকে সকলেই এক নামে চিনে ফেলবে তা কি ও ভেবেছিল?

বাবলি ঢোক গিলে বলল–সে ভদ্রলোকের নামও তো অভী। জানি না তোমার বন্ধুর ভাই নাকি? পৃথিবীতে তো সব জায়গায় তোমার একজন করে বন্ধু আর তার ভাইদের রেখেছ। আমি কি করে জানব? কী একটা নাম? অভী! তা কি দুজনের হতে পারে না?

কাকু এবার উত্তেজিত হয়ে উঠে দাঁড়ালেন।

বললেন–তোর এসকর্ট যদি সেই-ই হয় তাহলে তোর অনেক জন্মের তপস্যার ফল রে বাবলি বুঁচি। বহুদিন ওরকম ব্রিলিয়ান্ট ছাত্র কেউ বেরোয় নি তা জানিস? লন্ডনের স্কুল অফ ইকনমিক্স থেকে?

বাবলির একবার মনে হল মাথা ঘুরে পড়ে যাবে ও।

প্রতিবাদ করে ও বলল–এ তাহলে অন্য কোনো অভী হবে। এ বিলেত ফিলেত যায় নি। একেবারে ক্যাবলা গণেশ গো কাকু। এ সে হতেই পারে না। তাছাড়া, লন্ডন স্কুল অফ ইকনমিক্স থেকে পাস করা ছেলে ইম্ফলে পচতে যাবে কেন?

কিন্তু কাকা ছাড়বার পাত্র নন।

ইতিমধ্যে মাল এসে পৌঁছনোর খবর অ্যানাউন্সড হয়েছে।

ওরা সকলে উঠে সেদিকে এগোল।

কাকু আবার বললেন–কেমন দেখতে বল তো?

বাবলি বলল–ভীষণ আনইমপ্রেসিভ চেহারা। তারপর বলল, এরকম এরকম দেখতে।

সব শুনে কাকা বললেন–করেছিস কি? অভীকে দিয়ে গাড়ি চালিয়ে তুই ত্যান্ডাই-ম্যান্ডাই করে বেড়িয়েছিস? ওর পা-ধোয়া জল নিয়ে এলি না কেন এক ঘড়া। সকাল-বিকেল খেলে তোর মগজ খুলত। অভীকে আমি ছেলেবেলা থেকে চিনি। ওর সবচেয়ে বড় গুণ যে ও একেবারে আনঅ্যাসুমিং, ওকে দেকে কিছু বোঝার উপায় নেই। কোনো এয়ার-ফেয়ার নেই নিজের সম্বন্ধে। একেবারে খাঁটি ছেলে। তুই জানিস না, ও কত বড় গর্ব আমাদের। যাক, তোর এই অ্যাচিভমেন্টটা তোর আই আর এস-এ সাকসেসফুল হওয়ার অ্যাচিভমেন্টের চেয়েও বড়।

কোন অ্যাচিভমেন্ট?

বিস্ময়ে শুধোল বাবলি।

এই অভীর সঙ্গে ত্যান্ডাই-ম্যান্ডাই করার অ্যাচিভমেন্ট।

কাকীমা এতক্ষণে কাকার কথায় মজা পেয়েছেন। উনি হাসছিলেন।

বললেন, অভীকে আমিও চিনি। তুই যা মেয়ে তাকেও ছাড়িস নি বোধহয়—নাকানি-চোবানি খাইয়েছিস নিশ্চয়ই।

বাবলি একেবারে চুপসে গিয়েছিল। বলল, আরে না না। আমি কি সকলের সঙ্গে ইয়ার্কি মারতে পারি নাকি? তারপর চিনি না জানি না। কি যে বলো তুমি কাকীমা।

কাকীমা বললেন, কী জানি! তোকে কিছুই বিশ্বাস নেই।

মালপত্র কালেক্ট করে এয়ারপোর্ট থেকে ওরা যখন বেরোল তখন বাইরে জোর বৃষ্টি হয়ে আবহাওয়া বেশ ঠাণ্ডা হয়ে গেছে। দিল্লি এয়ারপোর্টের সামনেটাতেই ভীষণ জল জমে। ঐ জায়গাটা সাবধানে পেরিয়ে কাকা গাড়ির স্পীড বাড়ালেন।

হু-হু করে হাওয়া আসছিল–ঠাণ্ডা। বাবলি সামনের সীটে কাকার পাশে বসেছিল। কাকীমা পিছনে বসেছিলেন।

কাকা কাকীমা কি সব টুকরো-টাকরা কথা বলছিলেন। বাবলির কানে যাচ্ছিল না। বাবলি মনে মনে অনেক দূরে চলে গিয়েছিল।

বাবলির মনের চোখে ভেসে উঠেছিল সেই নাগা পাহাড়ের কাঠুরের ঘর। সেই ভয়; সেই ঠাণ্ডা। সেই সবকিছু মনে পড়ে যাচ্ছিল আর চোখের সামনে ভেসে উঠছিল কাঠের আগুনের সামনে বসে থাকা, একটি ছেলেমানুষ সরল, আন্তরিক; দায়িত্বজ্ঞানসম্পন্ন চিন্তিত মুখ। বাইরের অন্ধকারে পাশফেরানো মাথা-ভরা এলোমেলো চুলে-ভরা একটি শিশুসুলভ মুখ।

.

পুরোনো দিল্লির ভাঙা দুর্গ-টুর্গ তোরণ-টোরণগুলোর মধ্যে অন্ধকারে ভিজে-হাওয়াটা শিস তুলছিল। বাবলির বুকের মধ্যেও কিসের যেন শিসই উঠছিল।

বাবলি জানে না, বাবলি কি করবে? কি ওর করা উচিত? ভয়ে, আনন্দে, অনুশোচনায় বাবলির গলা শুকিয়ে আসতে লাগল।

হঠাৎ কাকীমা বললেন, কাল সকালে একবার কালীবাড়ি যাব ভাবছি। তুই যাবি বাবলি? না। তুই তো আবার মেমসাহেব।

বাবলি ভগবান-টগবান মানে না। বাবলি বরাবরই বলে, ট্র্যাশ। এমন কি এ পর্যন্ত কোনো পরীক্ষা দেওয়ার সময়ও কোনো ঠাকুর দেবতার ছবিকেও প্রণাম করে যায় নি বাবলি।

কিন্তু বাবলি বলল, বেশ তো কাকীমা। যাবো তোমার সঙ্গে। পরশুদিন নতুন জীবন আরম্ভ হবে–নতুন চাকরি। একবার না হয় তোমার সঙ্গে যাবোই–তোমার যখন এতই ইচ্ছা।

কাকা স্টিয়ারিং ধরে হেডলাইট জ্বালানো পথে সামনে চেয়েছিলেন। বাবলির এই কথায় হঠাৎ চকিতে মুখ ঘুরিয়ে বাবলির দিকে তাকালেন।

তাকিয়েই আবার রাস্তার দিকে মুখ করলেন।

বাবলি বলল, কি কাকু, কি হল?

কাকা একটা মোড় নিতে নিতে বললেন, কিছু হয় নি, কিন্তু হতে পারে!

কাকীমা চোখে রাতে ভালো দেখতে পান না–কোনোদিনই না–বললেন, কি গো? রাস্তায় কোনো গোলমালের কথা বলছ?

কাকা হেসে উঠলেন হো হো করে।

বললেন, গোলমাল! তবে রাস্তায় নয়, একেবারে ঘরের মধ্যেই মনে হচ্ছে। কেস খুব গড়বড়।

বাবলি যেন কিছু বুঝতে পারে নি এমনভাবে বলল, কাকুমণি, তুমি কখন যে কি বল, আর কি ভেবে কি বল, তুমিই জান। তোমার এই হেঁয়ালী হেঁয়ালী কথা থামাও তো! তাড়াতাড়ি বাড়ি চল। আমার ভীষণ খিদে পেয়েছে।

কাকা আবার হাসলেন। বললেন, খিদে আমারও পেয়েছে। বলেই সুর করে নাকি নাকি গলায় বললেন, হাউ-মাউ-খাট, চেনা মানুষের গন্ধ পাঁউ।

বাড়ি পৌঁছে সোজা নিজের ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করল বাবলি।

কাকীমাকে বলল, কাকীমা সেই ভোরবেলা চা বাগানে চান করে বেরিয়েছি। ঘেন্না করছে। ভালো করে চান করব। চান করে তারপরে খেতে বসব। তুমি কিষাণ সিংকে খাওয়ার ঠিকঠাক করতে বল।

ঘরে ঢুকেই বাবলি আয়নার সামনে এসে দাঁড়াল।

আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে ধিক্কার দিল বাবলি। আয়নায় ওর পাশে ও ঝুমার চেহারাটা কল্পনা করে নিল। কল্পনায় ওর পাশে ঝুমাকে দেখে ও লজ্জায় মরে গেল। ছিঃ ছিঃ, কি বিচ্ছিরী ফিগার বাবলির। আর মুখশ্রীই বা কি। তাকানো যায় না। ঈ-শ-শ!

এই প্রথম, প্রথমবার জীবনে, সে নিজে সুন্দরী বলতে যা বোঝায় তা নয় বলে, তার ফিগার ভালো নয় বলে বাবলি আক্ষেপ করল। আজ এই মুহূর্তে ও জানতে পারল, মেয়েদের আর যে গুণই থাক, চিত্রাঙ্গদা হলে, মেয়েরা মেয়েসুলভ সৌন্দর্যের অধিকারী না হলে, অর্জুনরা, কোনো অর্জুনই তাদের মুখে নারীকে আবিষ্কার করতে পারে না।

এই-ই প্রথম জীবনে প্রথমবার বাবলি হেরে যাবার, ফেল করার ভয় পেল। এ পরীক্ষায় যে ওর কখনও বসতে হবে, তা ও বুঝতে পারে নি। স্বপ্নেও ভাবতে পারে নি। ও কি জানত যে, পৃথিবীর সমস্ত মেয়েকেই এই মেয়েলি পরীক্ষায় কোনো-না-কোনো সময় বসতেই হয়।

.

অভীর অনেক রাত হয়ে গেল ইম্ফল পৌঁছতে পৌঁছতে।

অত রাতে ও আর বাবলির মেলোমশাইয়ের বাড়িতে গেল না। ডিমাপুর থেকে বেরিয়েছিল সকাল চারটাতে, এখন প্রায় রাত এগারোটা বাজে। এই ছোট্ট শহরে রাত এগারোটা অনেক রাত।

বাড়ি ফিরে গাড়ি গ্যারেজ করে, ও বাড়ি ঢুকেই সোজা টেলিফোনের কাছে গেল, তারপর কি মনে করে, দেরাজ খুলে গ্লাসে একটা বড় হুইস্কি ঢেলে, জল নিয়ে, একটা বড় চুমুক লাগিয়ে, এসে ফোন তুলল।

ফোনটা অন্য প্রান্তে বাজছিল।

কুরকুর কুরর করে। কোনো প্রোষিতভর্তৃকার কাছে স্বামীর খবর বয়ে নিয়ে আসা কোনো রূপকথার পাখির মতো ফোনটা ডাকছিল।

অনেকক্ষণ পরে বাবলির মাসী ফোন তুললেন, কি যেন চিবোচ্ছিলেন। উনি। বললেন, হ্যালো!

আমি অভী বলছি।

মসলা চিবোতে চিবোতেই বৌদি বললেন, অভী। বাবা বাঁচালে। এত চিন্তায় ছিলাম না আমরা। তোমরা নাকি পথে গাড়ি খারাপ হয়ে নাগাপাহাড়ে ছিলে এক রাত? কি ডেঞ্জারাস ব্যাপার।

অভী অবাক হল। বলল, এ খবর ইতিমধ্যেই এখানে পৌঁছল কি করে?

তোমার দাদা যে আজ সকাল আটটার সময় ডিমাপুরে ট্রাঙ্ককল করেছিলেন। ঐ দস্যিমেয়েই নিশ্চয় জোর করে তোমাকে সেদিনই যেতে বলেছিল ডিমাপুর? নইলে তোমাকে তো তোমার দাদা বার বার বলে দিয়েছিলেন কোহিমায় নাইট স্পেন্ড করতে। কি যে কর না তোমরা? তোমরা দুজনেই সাফিসিয়েন্টলি গ্রোন আপ। তোমাদের কাছ থেকে আরও একটু গুড সেন্স আশা করেছিলাম।

এমন সময় ফোনের পাশ থেকে বড়সাহেবের গলার স্বর শোনা গেল।

–আমায় দাও।

অমনি বৌদি বললেন, নাও, তোমার দাদার সঙ্গে কথা বল।

বড়সাহেব ফোনটা হাতে নিয়েই বললেন, অভী, তুমি নিশ্চয়ই খুব টায়ার্ড। পোর ইয়োরসেলফ আ স্টিফ ড্রিঙ্ক, হ্যাভ আ নাইট হট বাথ, ভালো করে খাওয়া-দাওয়া করো। অ্যান্ড দেন গো টু বেড।

তারপর একটু থেমে বললেন, কাল অফিসে কথা হবে। গুড নাইট।

অভী জানে বড়সাহেব কাল অফিসে কি কথা বললেন তাকে।

ফাঁকা ঘরে পাইপটা ধরিয়ে উনি বলবেন, কনগ্রাচুলেশনস। উ্য আর এ ফাস্ট ওয়ার্কার।

অভী বাজী ফেলতে পারে এ বিষয়ে।

সোফায় বসে পড়ে হুইস্কির গ্লাসে আরেকটা চুমুক দিয়ে অভী ভাবল এই জন্যই এত উন্নতি হয়েছে ভদ্রলোকের। এই সময় ঐ ভদ্রমহিলার হাত থেকে অভীকে উনি না বাঁচালে ঠায় এক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ওর প্রলাপ শুনতে হত। সত্যি, মেয়েরা টেলিফোনে বিনা কারণে এত বেশি কথা কেন যে বলে, তা কি কেউ জানে? এর কি কোনো ওষুধ নেই?

হুইস্কিটা শেষ করে উঠে গিয়ে অভী গরম জলের শাওয়ারের নিচে দাঁড়াল। হিম হিম বর্ষার রাতে। ইম্ফলে।

দিল্লিতে চান শেষ করল বাবলি। বাবলির গা দিয়ে সাবানের গন্ধ বেরোচ্ছিল। বেডরুমের দরজা বন্ধই ছিল। পেলমেটের নিচে পর্দাও। বাবলি কিছু না-পরে এসে আয়নার সামনে দাঁড়াল। ভালো করে পাউডার মাখলো সারা গায়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে। তারপর ভিতরের জামা, প্যান্টি, সায়া পরা হয়ে গেলে একটি হাল্কা সাদা-কালো ফুল-ফল ছাপা শাড়ি পরলো বাবলি।

কেন জানে না। বাবলির খুব ভালো লাগছিল। উড়তে ইচ্ছা করছিল বাবলির পাখির মতো।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *