৪
চারদিক ঘুরঘুট্টি অন্ধকার। জ্যোৎস্না থাকলে না হয় ঘরের ভাঙা চাল দিয়ে এক আধটু আলো এসে পড়ত। কৃষ্ণপক্ষের রাত। ঘুম ভেঙে চোখে আর কিছু ঠাহর পাই না। কানের ভেতরেও হঠাৎ কী রকম একটা ভোঁ ভোঁ করছে, কানেও কিছু শুনতে পাই না। শেষ রাতে ঘুম তো আর নতুন ভাঙল না? কৃষ্ণপক্ষ, শুক্লপক্ষ, শেষ রাতে একবার আমাকে উঠে বাইরে যেতেই হয়। এ বরাবরের ব্যাপার। আজো উঠেছি কিন্তু আজ যেন অন্য রকম লাগছে। বেগটা আছে অথচ নেই। উঠতে ইচ্ছে করছে অথচ ঠিক উঠতে পারছি না। বুকের ওপর কেমন একটু চাপ। নিঃশ্বাসটা গরম। জ্বর নাকি? না। হাত দিয়ে দেখি কপাল ঠাণ্ডা, হাত- পা ঠাণ্ডা একেবারে ভালো মানুষের মতো। অথচ একটা তাপ অনুভব করছি। কিছুক্ষণের মধ্যেই মনে হলো, তাপটা ঠিক আমার শরীরের ভেতরে নয়, বাইরে কোথাও; যেন কাছেই একটা উনুন জ্বলছে গনগন করে।
উনুনের কথাটা মনে আসতেই সব পরিষ্কার হয়ে গেল আমার কাছে। আমি হেসে ফেললাম। সারা দিন খাওয়া হয় নি, সেই ভোরে এক মুঠো পান্তা পেটে পড়েছিল, ব্যাস আর কিছু না; আমার বৌ চান বড়ু ছেলেমেয়েদের থেকে কেটে রাতে দুমুঠো খেতে বলেছিল, আমি দেহটা ‘ভালো নেই” বলে উপোস দিয়ে শুয়ে পড়েছিলাম। এখন বুঝতে পারলাম এ হচ্ছে ক্ষুধার কাণ্ড। উনুনে হাঁড়ি চড়াতে পারি না, উনুনের তাপ পাচ্ছি। জোর করে বিছানা থেকে উঠে বসলাম।
একটাই মাত্র ঘর, সেই ঘরে এখনো কোনো রকমে আমার বিশ বছরের পুরনো চৌকিটা টিকে আছে, আর আমিও এখনো সেই চৌকিতেই রাতে শরীর ছেড়ে দিই। চৌকির ঠিক নিচেই মাটির ওপরে মাদুর বিছিয়ে শোয় চান বড়ু আর তিন মেয়ে, দরোজার ওদিকটায় আমার দুই ছেলে। সন্ধেবেলায় বাতি দেখিয়েই আলো নিভিয়ে ফেলা হয়, তা আজ প্রায় বছর দশেক হয়ে গেল, বাতির তেলের চেয়ে হাঁড়ির জন্যে চাল কেনাটা বেশি দরকার। ভবিষ্যৎ যার অন্ধকার, রাতের অন্ধকার দূর করা না করা তার কাছে সমান কথা। সে যাক। এসব কথা এখানেও কিছু না, ওখানেও কিছু না। আসল কথা, এই অন্ধকারে কাউকে না মাড়িয়ে দরোজা খুলে বাইরে যাওয়াটা রীতিমতো ম্যাজিক। এ পর্যন্ত একবার বাইরে যাবার সময়, স্টেজে একই খেলা দেখাতে গিয়েও ম্যাজিশিয়ানদের মতো প্রতিবারই বুক কেঁপে ওঠে। আজ মনে করলাম, শরীর যে রকম খারাপ বোধ হচ্ছে, কারো ঘাড়ে না পা দিয়ে বসি। একবার ভাবলাম সাড়া দিয়ে বেরোই; কিন্তু চান বড়র মুখখানা মনে করে মায়া হলো— সারা দিন পরে নিশ্চয়ই অঘোরে ঘুমুচ্ছে, যতক্ষণ ঘুমিয়ে আছে ততক্ষণই জ্বালা নেই, যন্ত্রণা নেই, ক্ষুধার বোধশক্তিও নেই। থাক।
আজও সেই ম্যাজিক পার করে দিলাম, কারো গায়ে পা না ঠেকিয়ে অন্ধকারের ভেতরেও চমৎকার বাইরে বেরিয়ে এলাম। ঘরের পেছনে বসবার জন্যে যাব, দক্ষিণ একটা বাঁক নিয়েছি হঠাৎ মনে হলো কী একটা শব্দ— খুট খস; হিসস। কান খাড়া করে দাঁড়িয়ে পড়লাম, কিন্তু কান খাড়া করবার সঙ্গে সঙ্গে কানের ভেতরে আবার সেই ভোঁ ভোঁ শব্দটা হতে লাগল। চোখ যথাসম্ভব বিস্ফোরিত করে সমুখের দিকে তাকালাম, দূরে ঝোপের ভেতরে অথবা পেছনে, মনে হলো অন্ধকারের ভেতর খানিকটা জায়গা একটু বেশি অন্ধকার। যেন, গাঢ় রঙের ওপর গাঢ়তর রঙের একটা ছোপ।
মনে হলো, পায়ের শব্দ যেন।
কে? আমি ডেকে উঠলাম।
কেউ সাড়া দিল না।
এগোতে গেলাম, পা উঠল না।
যেন পক্ষাঘাতে অচল হয়ে গেছে পা।
আমার হাত হঠাৎ পাথরের মতো কেবল ভারিই বোধ হলো না, সেই সঙ্গে মনে হলো জীবন্ত দেহের অঙ্গ নয়, কাঠের হাত।
বিস্ফারিত চোখে তাকিয়ে আছি। কতক্ষণ তাকিয়ে ছিলাম বলতে পারব না, হঠাৎ দেখি অন্ধকারের ভেতরে গাঢ় সেই অন্ধকারটুকু আর নেই, যেন আদপেই কখনো ছিল না, কানের ভেতরে ভোঁ ভোঁ শব্দটাও বেমালুম পরিষ্কার এখন, পা আবার তুলতে পারছি, হাত আবার নিজেরই হাত বলে বোধ করছি, নতুনের ভেতরে এই মাত্র যে, অতি ক্ষীণ একটা পোড়া গন্ধ নাকে এসে লাগছে।
তাড়াতাড়ি ঘরে ফিরে এসে উজির আর নাজিরকে ডেকে তুললাম; সঙ্গে সঙ্গে তারা হাঁকডাক করে বেরিয়ে পড়ল; ঘরের আদাড়ে বাদাড়ে তারা সন্ধান করতে লাগল, চান বড় ঘুম থেকে উঠে পড়েছে ততক্ষণে, সে চেঁচাতে লাগল— ছেলে দুটো না চোর খুঁজতে গিয়ে সাপ খোপের হাতে প্রাণ দেয়, তার সে চেঁচানি শুনে মেয়ে তিনটিও উঠে পড়ল। সে এক তুমুল কাণ্ড। এর মধ্যে গুলি আবার ডাক ছেড়ে কেঁদে উঠল। গুলি আমার ছোট মেয়ে। বড় দুটির নাম, দুলি আর পুলি, একাত্তরে যখন আরেকটা মেয়ে হলো আগের সঙ্গে মিলিয়ে নাম আর মাথায় এল না, চারদিকে গুলি গোলা, চান বড়ু মেয়ে কোলে করে থরথর করে কাঁপছে, বড় ছেলে উজির একদিন ঘোষণা করল, তার নতুন বোনটির নাম গুলি। আমরা প্রথমে হাঁ হাঁ করে উঠেছিলাম, এ কী ধরনের রসিকতা? – কিন্তু শেষ অবধি সেই নামটাই দেখি টিকে গেল। সেই গুলি। এখন পা মেলে কাঁদতে শুরু করল তারস্বরে এবং উজির বাইরে থেকে ফিরে এসে অন্ধকারে আন্দাজ নিয়ে, গুলির গালে চড় কষিয়ে বলল, চোপ, দুদিন বাদে তোর জন্যে যখন লোকে এসে বেড়া নাড়া দেবে, তখন কাঁদিস।
বুঝলাম, উজির সন্দেহ করছে টাউনের কোনো নষ্ট ছেলে দুলি অথবা ফুলির জন্যে শেষ রাতে ঘুরঘুর করছিল।
চান বড়ু বলল, চোরও তো হতে পারে।
নাজির এতক্ষণ চুপ করেছিল, অন্ধকারে তার ধমক শোনা গেল, হাঁহ, চোর। চোর আসবে তোমার ভাঙা কপাল চুরি করতে। চুরি করবার মতো আছে কী যে চুরি করবে? অভাবের ঘরে যার মুখে যা আসে তাই বলে; যখন যার যে মেজাজ হয়, রাখ ঢাক নেই, উগরে দেয়। বাপ হয়ে আমার শাসন করবার কথা উজিরকে গুলির গালে অহেতুক চড় মারবার জন্যে; নাজিরকে আপন জননীকে তাড়া দেবার জন্যে; তার বদলে আমি আমতা আমতা করে শান্তি ফেরাবার চেষ্টা করলাম এই বলে, যে, হয়ত আমারই মনের ভুল, আসলে কিছু না। বললাম মনের ভুল, কিন্তু সারাদিন আমার মন থেকে শেষ রাতের সেই কয়েক মুহূর্তের অদ্ভুত ধাক্কাটা বিদায় নিল না। কাউকে কিছু বললাম না, এমনকি চান বড়ুকেও কিছু জানালাম না, মনে মনে স্থির করলাম— আজ রাতে জেগে থাকব, মটাকা মেরে পড়ে থাকব, দেখব— ব্যাপারখানা কী?
আমার ভেতর থেকে কে যেন ফিসফিস করে বলছিল, জেগে থেকো, জেগে থেকো। আমার কানের ভেতরে থেকে থেকে ভোঁ ভোঁ ধ্বনির স্মৃতি ফিরে আসছিল। চোখের ভেতরে সেই অন্ধকারের ভেতরে গাঢ় অন্ধকারটুকু ক্রমশ সাহেবদের শোলা হ্যাটের আকার ধারণ করছিল— বিশালা এক শোলা হ্যাট। ব্রিটিশ আমলে পাটের দালাল, দারোগা আর রাজ কর্মচারীরা সে রকম হ্যাট পরত— অবিকল সেই জিনিস। এসব আমি সারা দিন বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছি, এবং পরে বুঝেছি— এসব আমার মনে আমার সিদ্ধান্তে গড়ে ওঠে নি, বীথিপৃর ষ্যনুমেরা টেলিপ্যাথির মাধ্যমে অনুভূতিগুলো পাঠিয়ে চলেছিল।
সবাই ঘুমিয়ে পড়ল, আমি জেগে রইলাম, ফুলি কোথা থেকে কিছু চাল আর একটা লাউ এনেছিল, আমরা কোনো প্রশ্ন করি নি, এমনকি উজিরও নীরব ছিল; দুপুরে লাউ ভাতের খ্যাট পেট পুরে খাওয়া হয়েছিল সবার, রাতে চমৎকার ঘুম এসেছে ছেলেমেয়েদের; চান বড়ু তো আহারে অনাহারে বিছানায় কাত হলেই জাগ্রত জগৎ পায়; ভেবেছিলাম যে উজির নাজির আজ রাতে জেগে থাকবে নষ্ট ছেলেদের হাতেনাতে ধরে ফেলবার জন্যে, আমি কেন জানি মনের ভেতরে প্রার্থনা করে চলেছিলাম— উজির নাজির যেন জেগে না থাকে; আমার প্রার্থনা আল্লাহ শুনেছেন; সকলেই ঘুমে, আমি জেগে, যেন আমি কারো অথবা কোনো কিছুর অপেক্ষায় আছি, যেন আমাকে অপেক্ষায় থাকতে বলা হয়েছে। আমি একাকী অপেক্ষা করছি নির্ধারিত সময়ের অগ্রসর হয়ে আসবার জন্যে।
শুধুই কি সময়ের অগ্রসর হয়ে আসবার জন্যে?
পরে জেনেছি বীথিপৃর ষ্যনুমেরা আমাকে অপেক্ষমাণ রেখেছিল তাদের জন্যে।
রাত এখন কত, জানি না; শুধু জানি, এই হচ্ছে সেই মুহূর্ত। বেরুবার কোনো বেগ অনুভব করলাম না, শুধু মনে হলো যে আমাকে এখন বাইরে বেরুতে হবে। আমি নিঃশব্দে বেরিয়ে এলাম কারো গায়ে পা না মাড়িয়ে, সেই আগের মতোই, আরো একবার। দরোজা ভেজিয়ে, সেই অন্যান্য রাতের মতোই আমি দক্ষিণ বাঁক নিলাম ঘরের পেছনে যাবার জন্যে। বাঁক নিয়ে, সেই গত রাতের মতোই আমি একই জায়গায় দাঁড়িয়ে পড়লাম এবং বিশাল সেই শোলা হ্যাটটি দেখতে পেলাম, গতরাতের মতোই অন্ধকারে গাঢ়তর অন্ধকার একটি ছোপ খুট, খস, হিসস।
আজ আমার বুক হিম হয়ে গেল না।
কানের ভেতরে সেই ভোঁ ভোঁ শব্দ।
আজ আমার উৎকণ্ঠা হলো না।
আমি পা বাড়ালাম, আমি আজ পা বাড়াতে পারলাম।
আমি হাত প্রসারিত করলাম, আমি আজ হাত আমার জীবন্ত দেহের অঙ্গ বলেই অনুভব করতে পারলাম।
কয়েক পা এগিয়ে যেতেই আমি দেখতে পেলাম শোলা হ্যাটের আকৃতি ধীরে স্পষ্ট হয়ে উঠল চিকন ও তীব্র সবুজ রঙের আলোয়। আমি দেখলাম, শোলা হ্যাটের ওপরের দিকে বাতাস চলাচলের জন্যে যেমন দুটো ছিদ্র থাকে তেমনি দুটো ছিদ্র আলো হয়ে ফুটে উঠল চাপা কমলা রঙের ফুলকির মতো। অচিরে সেই কমলা আলো আমার সমুখের পথ আলোকিত করে তুলল, যেন কেউ আমাকে পথ দেখিয়ে নেবার জন্যে সহানুভূতিশীল হয়ে প্রায় খরচ হয়ে যাওয়া ব্যাটারির আলো জ্বেলে ধরল।
প্রায় হাত দশেকের ভেতরে এসে গেছি, হঠাৎ একটি ধাক্কা খেলাম; অথচ সমুখে কোনো প্রতিবন্ধক নেই। আমার বোধ হলো যেন একটা কাচের দেয়ালের সঙ্গে টক্কর খেয়েছি। আমার হাত দুটো সেই অদৃশ্য দেয়াল অনুভব করবার জন্যে সমুখে প্রসারিত হলো; হাত দিয়ে ঠিকই অনুভব করতে পারছি কঠিন মসৃণতা, কিন্তু চোখে কিছুই পড়ছে না। কয়েক পা পিছিয়ে এসে বিহ্বল ও বিমূঢ় আমি তখন স্থানু হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম।
টুক করে কমলা আলো নিভে গেল।
অত্যন্ত ধীরে হ্যাটের চারপাশের সবুজ আলো মরে ছাই হয়ে গেল।
আমার খুব কাছে, একেবারে কানের ভেতরে, কে যেন খুব সুরেলা গলায় অদ্ভুত এক ভাষায় বলে উঠল— মতগস্বা; কক্ষশি বহেসা। আমি এর এক বর্ণ বুঝতে পারলাম না।
আমি বিচলিত হয়ে প্রশ্ন করতে গেলাম, হতভম্ব হয়ে গেলাম যখন উচ্চারিত হতে শুনলাম সম্পূর্ণ অপরিচিত সেই ভাষায় আমার প্রশ্ন— রাকা? রাকা নেখাও? আমার নিজেরই কণ্ঠে। এ কি দুঃস্বপ্ন? আমি নিজেই কি আমি আর নই?
আমার সমুখে বিশাল শোলা হ্যাটের গায়ে হঠাৎ দরোজার মতো চৌকো আলো কেটে বেরুল; হাঁ, দরোজাই; স্পষ্ট দেখলাম রুপার মতো চকচকে একটি ছোট সিঁড়ি নিঃশব্দে নেমে এল দরোজার ভেতর থেকে, আর আমাকে কী একটা অদৃশ্য শক্তি এখন আকর্ষণ করে নিতে লাগল সেই সিঁড়ির দিকে।
আমার তখনো মনে আছে যে কাচের দেয়ালে বাধা পেয়ে আমি দাঁড়িয়ে পড়েছিলাম একটু আগেই, এখনো আমি অদৃশ্য আকর্ষণে এগিয়ে যাচ্ছি ঠিকই কিন্তু আমার শঙ্কা হলো আবার না ধাক্কা খাই।
না। আমি স্বচ্ছন্দে পার হয়ে গেলাম। মনে হলো সেই কাচ এখন গলিত পর্দার মতো, আমি ভেদ করে অপর পারে পৌঁছে গেলাম, পেছনে আবার কঠিন হয়ে গেল কাচের দেয়াল। অন্তরাল থেকে আবার আমাকে সুরেলা গলায় কেউ সম্বোধন করল— মতগস্বা, কক্ষশি বহেসা। কিন্তু এবার এক বিস্ময়কর ব্যাপার লক্ষ করলাম, বাক্যটি বুঝতে আমার বিন্দুমাত্র অসুবিধে হলো না। আমি আমার কানের ভেতর স্পষ্ট বাংলায় শুনতে পেলাম— স্বাগতম, শিক্ষক সাহেব।
এবং আবার যখন আমি কৌতূহলী হয়ে প্রশ্ন করতে গেলাম, কারা? কারা ওখানে? আমি নিজের কানেই শুনতে পেলাম, আমি উচ্চারণ করছি রাকা? রাকা? নেখাও?
শোলা হ্যাটের আলোকিত দরোজা, চকচকে সিঁড়ি; আমি একেবারে সিঁড়ির ধাপের কাছে এখন, পা রাখব কি রাখব না; ইতস্তত করছি, সুরেলা সেই কণ্ঠ এবার আমাকে অভয় দিল— কাংশ ইনে, টকনি নহো।
আমি সিঁড়িতে পা দেবার আগে নিঃসংশয় হবার জন্যে জানতে চাইলাম, রেতভে?
উত্তর হলো, তভী নচ্ছেহ নকে?
না, আমি আর ভীত নই, মন্ত্র বলে আমার সমস্ত ভয় যেন চলে গেছে, আমি সিঁড়িতে পা রাখলাম। পৃথিবীর কোনো জীবিত মানুষের যে অভিজ্ঞতা আজ পর্যন্ত হয় নি, যে দৃশ্য কেউ কখনো চোখে দেখে নি, আমি তাই দেখলাম, আমি সেই অভিজ্ঞতার ভেতরে প্রবেশ করলাম। আমি বীথিপৃর স্পেসশীপে পা দিয়ে একজন য্যনুমকে দেখতে পেলাম। তার যেখানে মুখ থাকবার কথা, সেখানে চকচক করছে নীলাভ কাচ দিয়ে তৈরি একটি ফুটবল, সেই ফুটবলের ভেতর থেকে দুটি স্মিত চোখ, রুপার নরোম সুতোয় তৈরি জামা দিয়ে তার সর্ব অঙ্গ ঢাকা, সে টলমলে হাত বাড়িয়ে আমার হাত ধরল, তার স্পর্শ একই সঙ্গে কঠিন ও কোমল, স্নিগ্ধ এবং তপযুক্ত। আমি বোধহয় তখনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলাম।