কর্নেল সেন গল্প থামিয়ে নি:শব্দে চুরুট টানতে লাগলেন। ওঁর মুখটা একটু বিষণ্ণ দেখাচ্ছে। একটা হাই তুলে বললেন, রাত বেশি নেই। এবার একটু শুয়ে পড়া যাক!
মাধবী বলল, কিন্তু কে খুন করল? ওই মেয়েটি, না সূরযলাল?
কর্নেল সেন কিছু বলতে যাচ্ছিলেন, রঞ্জন তাঁকে বাধা দিয়ে বলল, মামাবাবু, বলবেন না, বলবেন না। ফট করে এককথায় খুনির নাম বলে দিলে, এই ধরনের গল্পের কোনো মজা থাকে না। ডিডাকশান করে যদি না বেরিয়ে আসে–। এখনও অনেক কিছু জানতে বাকি আছে। সূরযলাল, বুদ্বুরাম, হরিনাথ এদের কথা তো এইমাত্র শুনলাম। এদের সঙ্গে করবীর কী সম্পর্ক সেটা এখনও জানা হল না। তা ছাড়া খুনের একটা মোটিভ থাকে—
কর্নেল সেন বললেন, তাহলে সেসব আবার কাল হবে। আমার একটু ক্লান্ত লাগছে। এখন। অনেকক্ষণ বকবক করেছি।
রঞ্জন বলল, এখন প্রায় সাড়ে তিনটে বাজে। এখন আর শুয়ে লাভ নেই। ঘণ্টা কয়েক বাদেই ভোর হয়ে যাবে। বৃষ্টি থেমে গেছে। বাকি রাতটা গল্প করেই কাটানো যাক। আর এক কাপ করে কফি হবে নাকি?
মাধবী বলল, না, না, এতরাত্তিরে আর কফি খায় না!
রঞ্জন হাসতে হাসতে বলল, তোমাকে বানাতে হবে বলে ভয় পাচ্ছ তো? তোমাকে কিছু করতে হবে না। তুমি চুপ করে বসে থাকো। সুনীল বানিয়ে দেবে। সুনীল খুব ভালো কফি বানায়।
আমি বললাম, ভ্যাট। আমি এখন উঠতে পারব না। তুই নিজে যেতে পারছিস না? তোর নিজের বাড়ি—আর আমি কফি বানাব?
না, না, তুই ভালো বানাস কি না তাই বলছিলাম।
কফি বানানোর আবার ভালো আর খারাপ কী? আমি নিজে কোনোদিন বানিয়ে খাইনি–
রঞ্জন অনিচ্ছা সত্ত্বেও গা মোড়ামুড়ি দিয়ে উঠে বলল, মামাবাবু, আপনি কফি খাবেন তো?
আপত্তি নেই।
জল চাপিয়ে এসে রঞ্জন বলল, মামাবাবু এবার বলুন, খুনের মোটিভ কী? খানিকটা অবশ্য বোঝাই যাচ্ছে–
কর্নেল সেন বললেন, আমি তো এতক্ষণ বললাম, এবার তোমরাই বলো-না, বাকিটা কী হতে পারে।
ঠিক আছে, আমরা সেটা চেষ্টা করব। আপনি আমাদের আর কয়েকটা তথ্য সাপ্লাই করুন। যেমন সুখেন রায় লোকটা কেমন ছিল—।
মাধবী বলল, ওই করবী বলে মেয়েটার শেষপর্যন্ত কী হল? ফাঁসি হয়েছিল?
কর্নেল সেন হেসে ফেলে বললেন, তার মানে তুমি ধরেই নিচ্ছ যে, করবীই খুন করেছিল?
রঞ্জন বলল, মাধবী, তুমি থামো তো! আগে মামাবাবুকে আর একটু বলতে দাও তারপর তো খুনি কে সেটা বুঝবে!
মাধবী বলল, আমায় আর কিছু বলতে হবে না। আমি ঠিক জানি, ওই মেয়েটাই খুন করেছে।
রঞ্জন বলল, আঃ তুমি থামো তো! এসব ক্রাইম-স্টোরি ফলো করা মেয়েদের কর্ম নয়! মামাবাবু, এটা কিন্তু আপনার ভারি অন্যায়! এতক্ষণ গল্প বেশ চলছিল, হঠাৎ গল্পের শেষ দিকে দুমদাম করে সূর্যলাল, হরিনাথ, বুদ্বুরাম এই এতগুলো ক্যারেকটার এনে ফেললেন! এদের সম্পর্কে আগে আভাস দেওয়া উচিত ছিল। খুনি কখনো লাস্ট দৃশ্যে আসে না।
কিন্তু আমি তো গল্প বানাতে জানি না। বানানো গল্প হলে লেখকরা ভেবেচিন্তে চরিত্র ঠিক করে। কিন্তু আমার জীবনে ব্যাপারটা যেভাবে ঘটেছিল, আমি সেইভাবেই বললাম। সূরযলাল বা হরিনাথ বা বুদ্বুরামের কথা তো আমি নিজেও আগে জানতে পারিনি।
ওই দারোগাটির সঙ্গে ওদের কতখানি সম্পর্ক সেটাও ভালোভাবে জানা দরকার!
কর্নেল সেন বললেন, এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত মানুষগুলো সম্পর্কে মোটামুটি একটা ধারণা করার জন্য আমি তোমাদের আর একটু জানিয়ে দিচ্ছি। মামলা চলার সময় আমাকে বেশ জড়িয়ে পড়তে হয়েছিল—তাই আমি অনেক কিছু জানতে পেরেছিলাম। সব বলতে গেলে তো এক মহাভারত হয়ে যাবে। সংক্ষেপে কিছু কিছু বলছি।
সেদিন ওদের সবাইকে নিয়ে থানায় আসার পথে দারোগাবাবু আমার হাত জড়িয়ে ধরে বলেছিলেন, স্যার আমাকে ফাঁসাবেন না। আমার চাকরিটা অন্তত বাঁচিয়ে দেবেন। আমি নিতান্ত মায়ায় পড়েই কেসটা চেপে যেতে চাইছিলাম। নইলে আমার আর অন্য কোনো স্বার্থ নেই। বিশ্বাস করুন! আমি এদের সবাইকেই আগে থেকে চিনি। সুখেনকেও আমি স্নেহ করতাম। এরা ঝোঁকের মাথায় একটা কান্ড করে ফেলেছে, নইলে এরা কিন্তু কেউই মানুষ খারাপ নয়। আমি তাই ভেবেছিলাম, একজন যখন ঘরেই গেছে, তাকে তো আর বাঁচানো যাবে না—তবে শুধু শুধু এদেরও জীবনটা নষ্ট করে কী হবে, আর একটা সুযোগ যদি দেওয়া যায়—পুলিশ অফিসার হিসেবে কেসটা চেপে যাওয়ার চেষ্টা করে আমি অন্যায় করেছি ঠিকই। কিন্তু বিশ্বাস করুন, এ ব্যাপারে আমার কোনো স্বার্থ নেই। টাকাপয়সার ব্যাপারও নেই। পুলিশ হলেও আমারও তো একটা মানুষের প্রাণ আছে। আমি ওদের ওপর মায়া করেই–
দারোগাবাবু একটা কথা অন্তত ঠিকই বলেছিলেন, ওরা কেউই ঝানু ক্রিমিনাল নয়। হত্যাকান্ড ঝোঁকের মাথাতেই হয়েছে। ওরা যদি খাঁটি ক্রিমিনাল হত তাহলে ওরা আমাকেও ছাড়ত না। আমাকে মেরে ফেললেই ওদের ঝামেলা চুকে যেত। ওইরকম নির্জন ডাকবাংলোয় একটা খুনও যা, দুটো খুনও তাই, আমাকে মারার সুযোগও ওরা পেয়েছিল। ঘরের মধ্যে মেয়েটিকে দেখার পর আমি যখন খানিকটা অসাবধানভাবে বাইরে বেরিয়েছিলাম—তখন ওরা জিপের আড়ালে লুকিয়ে অনায়াসেই আমাকে গুলি করতে পারত। রিভলবার ছিল সূরযলালের কাছে। আমাকেও মেরে ফেলে দুটো লাশ একসঙ্গে পুঁতে ফেলায় ঝাট আর কী ছিল! আমি যে সেই রাত্রে ওই ডাকবাংলোয় থাকব—তা তো আর কেউ জানত না। কিন্তু কথায় কথায় মানুষ খুন করার অভ্যেস সত্যিই ওদের নেই। কিংবা, আমি মিলিটারির লোক বলেই ওরা ভয় পেয়েছিল কি না কে জানে। সত্যিকারের ক্রিমিনালরা অবশ্য ওইরকম অবস্থায় কিছুই পরোয়া করে না। সূরযলালের গান লাইসেন্স ছিল বটে কিন্তু সে ঠিকমতন রিভলবার চালাতে জানত কি না—সেটাই একটা সন্দেহের ব্যাপার। খুব ক্লোজ রেঞ্জে ফায়ার করা এককথা—আর দূর থেকে কারুকে গুলি করতে গেলে রীতিমতন প্র্যাকটিস থাকা দরকার।
সুখেন রায় লোকটি ছিল খুব নিরীহ আর শান্ত ধরনের। বেশ জনপ্রিয় ছিল সে। তার নম্র ব্যবহার আর বিদ্যেবুদ্ধির জন্য সবাই ভালোবাসত তাকে। খুবই গরিব পরিবারের ছেলে সে, কোনোরকমে লেখাপড়া শিখে চাকরি জুটিয়েছে। বউটিও তার সুন্দরী। সংসারে কোনো ঝামেলা নেই। লোকের চোখে সে মোটামুটি সুখী মানুষ। পেশায় ওভারসিয়ার হলেও তার ঝোঁক ছিল নানা রকমের বই পড়ার—সামান্য মাইনে পেলেও সে, সেই টাকার মধ্যে বাঁচিয়ে বাঁচিয়ে অনেক বই ও পত্রপত্রিকা আনত বাইরে থেকে।
সুখেন রায়ের বাড়িতে রীতিমতন একটা আড্ডা ছিল। আড্ডার অন্যতম আকর্ষণ ছিল অবশ্য, তার বউ করবী এবং করবীর হাতে বানানো চা। করবীর বিয়ে হয়েছিল খুব অল্পবয়সে। ষােলো বছর বয়সে তার বিয়ে হয়—তখন সে রোগা পাতলা একটি গ্রাম্য লাজুক মেয়ে। বিয়ের পর সুখেন রায় নানান জায়গায় বদলি হয়েছে—করবী সেইসব জায়গায় লোকজনের সঙ্গে মিশে আস্তে আস্তে বেশ চটপটে হয়ে উঠেছে। লোকজনের সঙ্গে মিশতে পারে, পুরুষদের আড্ডায় সমানে যোগ দিতে পারে। মফসসল জায়গায় এ-রকম মেয়ে তো সহজে চোখে পড়ে না। অবিবাহিতা মেয়েরা পুরুষদের সঙ্গে আড্ডায় যোগ দিতে পারে না, আর বিবাহিতা মেয়েরা বাচ্চা-কাচ্চা সামলাতেই ব্যস্ত। করবীর ঝামেলাও ছিল না—তারপর সে একটু-আধটু গান-টানও গাইতে পারে।
এমনিতে সুখেন রায়ের সংসারটাকে সুখের সংসারই বলা যেতে পারত। স্বামী-স্ত্রীর ছোট্ট সংসার—খুব একটা অভাবের টানাটানি ছিল না। সুখেন রায়ের সংস্পর্শে থেকে করবী খানিকটা লেখাপড়াও শিখেছিল। বন্ধুবান্ধব আসে বাড়িতে, হইচই আনন্দ হয়—সব মিলিয়ে অভিযোগ করার মতন কিছু নেই।
কিন্তু ওই যে বললাম, কিছুক্ষণ আগে, করবী ঠিক সাধারণ মেয়ে নয়। তার স্বভাব ও শরীরের মধ্যে এমন একটা কিছু আছে যা পুরুষদের মধ্যে আগুন জ্বালায়। সাধারণ শান্তশিষ্ট বাড়ির বউ হয়ে থাকবার মতন মেয়ে সে নয়। তা ছাড়া বিয়ের পর আট বছরের মধ্যেও তার কোনো ছেলেপুলে হয়নি। স্বাস্থ্য খুব ভালো। সব মিলিয়ে তার মধ্যে একটা ছটফটানি ছিল। ছোট্ট সংসারের গন্ডি ছাড়িয়ে সে উপচে পড়তে চাইত।
পুরুষরা আকৃষ্ট হত তাকে দেখে। এই ধরনের মেয়েদের দেখে প্রলুব্ধ হওয়ার মতন রসিক পুরুষের অভাব নেই কোনো দেশে। সুখেন রায় যেখানে যেখানে ট্রান্সফার হয়েছে, তার অনেক জায়গাতেই দু-একটা ছোটোখাটো গোলমাল হয়েছে করবীকে নিয়ে। সেজন্য কতটা দোষ করবীর আর কতটা অন্য পুরুষদের—তা বলা যায় না। সে একবার ধরাও পড়েছে সুখেনের কাছে, তখন করবী অনুনয় বিনয় করে অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছে। সুখেনই অনেক সময় ইচ্ছে করে বদলি হয়ে গেছে এক-এক জায়গা থেকে। লোকজনের সঙ্গে ঝগড়া মারামারি করার মতন স্বভাব সুখেনের নয়। যেখানেই দেখেছে কোনো লোক করবীর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করতে চাইছে—সেখান থেকেই সে ট্রান্সফার নিয়ে চলে গেছে। কোনোক্রমে। বউকে কোনো শাস্তি দিতে চায়নি। আবার, তার বাড়িতে যে আড্ডা বসে, এটাও সে বন্ধ করে দিতে চায়নি কখনো, কারণ সে নিজেই আড্ডা দিতে ভালোবাসত। মোটকথা, স্ত্রীকে অসম্ভব ভালোবাসত সুখেন। তার এই ধরনের ছোটোখাটো দোষত্রুটিও সে ক্ষমা করতে পারত। করবীও স্বামীকে ভালোবাসত—একথাও ঠিক। নইলে সুখেনকে ছেড়ে কখনো সে চলে যায়নি কেন? যেতেও তো পারত। সেরকম সুযোগও তার ছিল। সব মিলিয়ে করবী মেয়েটা অদ্ভুত ধরনের। স্বামীর প্রতি ভালোবাসাও ছিল তার আবার অতৃপ্তিও ছিল। অতৃপ্তিটা কখনো কখনো বেড়ে গেলেই গোলমাল দেখা দিত।
সুখেন তার স্ত্রীকে ছেড়ে কোথাও যেত না। টুরে যাওয়ার কথা সব বাজে। কোনোদিন সে স্ত্রীকে একলা বাড়িতে রেখে টুরে যায়নি, মৃত্যুর আগের দিনও না। করবীকে বাপের বাড়িতেও পাঠাত না সে-যদিও করবীর বাপের বাড়িতে বিশেষ কেউ ছিল না—তার বাবা মা, দু-জনেই মারা গেছে অল্পবয়সে। দাদার সংসারে মানুষ।
সূরযলালের সঙ্গে তার ঠিক কতখানি ঘনিষ্ঠতা হয়েছিল—তা জানা যায়নি শেষ পর্যন্ত। আদালতে হাজার জেরাতেও ওরা এ-সম্পর্কে একটি কথাও বলেনি—এমনকী সূরযলালই জোর করে করবীর দিকে ঝুঁকেছিল, না করবীই আকৃষ্ট করেছিল তাকে—তাও বলা যায় না। তবে, দু-জনের মধ্যে দেখাসাক্ষাৎ ছিল। সূরযলাল অনেকবার এসেছে ওদের বাড়িতে, সুখেনের উপস্থিতিতেই।
ব্যাপারটা তোমাদের পক্ষে, অনুমান করা নিশ্চয়ই শক্ত হবে না। সুখেনের বাড়িতে নিয়মিত আড্ডা বসত, তার সুন্দরী স্ত্রী করবী চা তৈরি করে খাওয়াত সবাইকে। আড্ডার লোভে না হোক, চায়ের লোভেই তো যেতে পারে অনেকে–
রঞ্জন ফস করে বলে উঠল, কিংবা যে বানিয়ে দেয় তার লোভেও কেউ কেউ যেতে পারে। আপনি যেরকম বলছেন, তাতে মেয়েটি–
কর্নেল সেন মাথা নীচু করে মৃদু হেসে বললেন, ব্যাপারটা বোধ হয় সেইরকমই দাঁড়িয়েছিল। ওই আড্ডার মধ্যে কেউ কেউ একটু ঝুঁকে পড়ে করবীর দিকে। সুখেন বোধ হয় সেদিকে নজর দেয়নি। অন্যান্য পুরুষমানুষদের মধ্যে সূরযলালই করবীকে বেশি আকৃষ্ট করতে পারবে। তার সুন্দর চেহারা, পয়সাকড়ি যথেষ্ট আছে, ফুর্তিবাজ। সুখেনকে লুকিয়েও যে সে করবীর সঙ্গে দেখা করত–
মাধবী ধড়ফড় করে উঠে পড়ে বলল, এই যা…। জল গরম হয়ে উথলে পড়ে যাচ্ছে— তোমার খেয়ালই নেই। তোমার দ্বারা যদি একটু কাজ হয়
রঞ্জন বলল, ও জল চাপিয়েছিলাম, না? যাও, যাও, কফি বানিয়ে নিয়ে এসো, এসব কী আর পুরুষমানুষের কাজ!
মাধবীর কফি বানিয়ে আনার অপেক্ষায় আমরা একটুক্ষণ চুপ করে বসে রইলুম। মনে মনে আমি করবী নামে মেয়েটির চেহারাটা কল্পনা করার চেষ্টা করছিলাম। এই গল্পের প্রথম দিকে তার চরিত্রটা অনেকখানি রহস্যে মোড়া ছিল। এখন আস্তে আস্তে স্পষ্ট হয়ে আসছে। মেয়েটির জীবন তার সংসারকে ছাপিয়ে আরও বড়ো হয়ে উঠছিল। অন্য ধরনের পরিবেশে পড়লে কিংবা অন্য রকমের সুযোগ পেলে এই ধরনের মেয়েরাই দেশনেত্রী হয়, সমাজসেবিকা হয় কিংবা ফিলম স্টার বা ডাকাতদলের সর্দারনিও হতে পারে। যেসব মেয়ে সংসার ছাড়িয়ে আরও বড়ো হয়ে ওঠে, তারাই জীবনে বড়ো কিছু করে। এখানে, দুর্ভাগ্যবশত বেচারি অবৈধ প্রেম আর খুনখারাপির মধ্যে জড়িয়ে পড়েছে।
কফিতে চুমুক দিয়ে কর্নেল সেন বললেন, সূরযলাল সম্পর্কে বিশেষ কোনো বদনাম আগে শোনা যায়নি। তার বাবা কাঠের ব্যাবসা করে কিছু টাকা রেখে গিয়েছিলেন। বাবার মৃত্যুর পর সূরযলাল ব্যাবসার দিকে বেশি মন না দিয়ে টাকাপয়সা ওড়াবার দিকে মন দেয়। অল্পবয়েসেই বিয়ে হয় ওদের। স্ত্রীটি সুন্দরী, দু-টি বাচ্চাও আছে। কিন্তু ঘরে মন টেকে না সূরযলালের। বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে ফুর্তি করে, মদ-টদ খায়। তার মা এখনও বেঁচে আছেন বলে বাড়িতে ওসব চলে না—মাঝে মাঝেই বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে বাইরে চলে যেত। এইসব সত্ত্বেও সূরযলালের মনটা উদার—অনেককে সে টাকাপয়সা দিয়ে সাহায্য করেছে। কখনো কারুর কোনো ক্ষতি-টতি করেনি। মোটামুটিভাবে তার জীবনটা কেটে যেতে পারত—কিন্তু সুখেন রায় তার স্ত্রীকে নিয়ে ওই ছোট্ট শহরে বদলি হয়ে আসার ফলেই তার জীবনেও সব কিছুই বদলি হয়ে গেল। সূরলাল রাশি রাশি টাকার জিনিস কিনে উপহার দিয়েছে করবীকে। করবীও সেসব নিতে আপত্তি করেনি–।
কর্নেল সেন, মাধবীর দিকে তাকিয়ে একটু ইতস্তত করে বললেন, সূরযলালের সঙ্গে করবীর অবৈধ মিলনের কোনো সুযোগ কখনো ঘটেছিল কি না তা জানা যায়নি। যদিও সূরযলালের বউ তার সাক্ষ্যে বলেছিল, ওই ডাইনিই তার স্বামীর সর্বনাশ করেছে।
এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত একজন লোকের শেষ পর্যন্ত আর পাত্তা পাওয়া যায়নি। তার নাম হরিনাথ।
এই হরিনাথ ছিল সুখেনের অফিসেরই সহকর্মী। কিন্তু সে সূরযলালের ফুর্তির সঙ্গী একজন। সূরলালের টাকায় আমোদ-আহ্লাদ করাই ছিল তার প্রধান কাজ। ঘটনার দিন রাত্রিতে সে ডাকবাংলোতে উপস্থিত ছিল। কিন্তু গুলি চলার পরই সে দৌড়ে পালিয়ে যায়। সেই যে পালিয়েছে, আর কেউ তার কোনো খোঁজ পায়নি। পুলিশ বহুচেষ্টা করেও ধরতে পারেনি তাকে—চাকরি-টাকরি সব ছেড়ে সে অবাক কান্ড করেই রইল।
এই তো শুনলে লোকগুলির পরিচয়। এবার তোমরা–
রঞ্জন জিজ্ঞেস করল, আর সেই বুন্ধুরাম?
কর্নেল সেন হাসতে হাসতে বললেন, সে কিছু না। মজার ব্যাপার হচ্ছে, সূরযলাল বা করবী—কেউই গাড়ি চালাতে জানে না। সুতরাং ডেডবডিটা আর জিপগাড়িটা সরানোর জন্য একজন ড্রাইভার দরকার। এটা একটা মজার ব্যাপার। এটা থেকেই বুঝতে পারবে, কত ছোটোখাটো ঘটনার জন্য কত বড়ো বড়ো ব্যাপার ফাঁস হয়ে যায়। করবীর পক্ষে গাড়ি চালাতে না-জানা অস্বাভাবিক কিছু নয়—কিন্তু সূরযলাল বড়লোকের ছেলে—তাদের নিজেদের কোম্পানির দু-তিনটে ট্রাক আছে—সে তো গাড়ি চালাতে জানতেও পারত। তা হলেই, খুনের রাত্তিরেই সে ডেডবডিটা সরিয়ে ফেলতে পারত–আমি ডাকবাংলোয় গিয়ে কিছুই দেখতে পেতাম না। ওরা পুরো ঘটনাটাই চাপা দিতে পারত, বিশেষ করে দারোগাবাবুর সঙ্গে যখন ওদের খাতির। কিন্তু তা হতে পারল না। সুখেন রায় একমাত্র গাড়ি চালাতে জানত ওদের মধ্যে—সে মারা যাওয়ার পর গাড়ি চালাবে কে? এইজন্যেই সূরযলাল অনেক টাকাকড়ি দিয়ে ভুলিয়ে-ভালিয়ে বুদ্বুরামকে ডেকে নিয়ে গিয়েছিল। তার পরদিন লোকটার বুদ্ধিসুদ্ধিও কম—সে হয়তো কিছুই ফাঁস করত না শেষ পর্যন্ত। বেচারা তার পুরো টাকা পায়নি বলে সেই টাকার লোভে বসেছিল।
মাধবী জিজ্ঞেস করল, তাহলে কি ওই হরিনাথ নামের লোকটাই খুন করেছে?
রঞ্জন বলল, তা হতেই পারে না। মা
ধবী বলল, কেন হতে পারে না?
তার কারণ হরিনাথ বলে কোনো লোকের অস্তিত্বের কথা আমরা জানতুমই না। হঠাৎ গল্পের শেষের দিকে একটা লোকের কথা শোনা গেল। আর সেই খুনি হয়ে গেল।-এটা হয় না। ডিটেকটিভ গল্পে এটা খুব ব্যাড ফর্ম।
কর্নেল সেন বললেন, কিন্তু রঞ্জন, এটা তো গল্প নয়। জীবনের সব ঘটনা কি গল্পের নিয়ম মেনে চলে? আমি হয়তো ঘটনাটা ঠিকমতন সাজিয়ে বলতে পারিনি
মাধবী বলল, খুন না করলে ওই লোকটা পালাবে কেন? লুকিয়েই বা থাকবে কেন?
রঞ্জন বলল, ভয় পেয়ে পালিয়েছে। ওইসব কান্ডমান্ড দেখে ওর পিলে চমকে গিয়েছিল
কর্নেল সেন বললেন, লোকটা একেবারে চাকরি-বাকরি ছেড়ে দিয়ে জন্মের মতন পালিয়ে গেল—এটা সত্যিই আশ্চর্য ব্যাপার নয়?
রঞ্জন নিরাশভাবে বললে, তা হলে মামাবাবু, আপনি বলছেন, ওই হরিনাথই খুন করেছে?
না, সে-কথা আমি বলছি না। আদালতেও সে-কথা বলা হয়নি। যে পালিয়ে যায়; তার প্রতিই বেশি সন্দেহ জাগে—সেইজন্যই হরিনাথের নামটা প্রথম মনে আসে। কিন্তু খুনের একটা মোটিভ থাকা চাই তো। সেই হিসেবে হরিনাথের পক্ষে খুন করার কোনো কারণই নেই বলতে গেলে। সে একটা সাধারণ ফুর্তিবাজ লোক। সূরযলালের মাথায় কাঁঠাল ভেঙে মদ্য পান-টান করাই ছিল তার প্রধান উদ্দেশ্য। অবিবাহিত লোক, সংসারের কোনো বন্ধনও নেই। লোকের মুখে আমি যা শুনেছি—হরিনাথের চেহারাটাও ছিল বেশ খারাপ-লম্বা শিড়িঙ্গে চেহারা, মুখের একপাশে একটা পোড়া দাগ। এইসব লোক সাধারণত নারীর প্রীতি বা ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হয়। অন্তত অবৈধ প্রেমের নায়ক হিসেবে এদের কল্পনা করা যায় না। তা ছাড়া, যতদূর জানা গেছে, মেয়েদের ব্যাপারে হরিনাথের দুর্বলতাও ছিল না বিশেষ। সুতরাং তার পক্ষে হঠাৎ সুখেন রায়কে খুন করার কোনো যুক্তিসংগত ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না।
হরিনাথের কোনো পুরোনো ক্রিমিনাল রেকর্ডও নেই। সম্ভবত জীবনে প্রথম চোখের সামনে একটা মানুষকে অপঘাতে মরতে দেখে তার মাথার গোলমাল হয়ে যায়। দেখেশুনে ভয়ের চোটে সে সেই যে এক দৌড় দেয়—কোথায় গিয়ে থেমেছে, তার ঠিক নেই। কিংবা হয়তো এখনও দৌড়োচ্ছে।
মাধবী বলল, তা হলে কে খুন করেছে বলুন! আর সাসপেন্স ভালো লাগছে না। রঞ্জন বলল, এখন না! বলে দিলেই তো সব ফুরিয়ে গেল!
কর্নেল সেন বললেন, আমি তো ঘটনাটা সব খুলে বললাম তোমাদের। লোকজনদেরও চিনিয়ে দিলাম। এই কাহিনির এই ক-জনই পাত্র-পাত্রী। এদের সম্পর্কে আমি যেটুকু জেনেছি তা সব-ই বলেছি তোমাদের। এর বাইরের আর কেউ এর সঙ্গে জড়িত নয়, অন্য কেউ খুন করেনি। এদের মধ্যে থেকেই খুনিকে খুঁজে নিতে হবে। এবার তোমরাই বলো কে খুন করেছে?
মাধবী সঙ্গে সঙ্গে বলল, আমি ঠিক জানি, ওই মেয়েটাই খুন করেছে!
কর্নেল সেন, রঞ্জন আর আমি একসঙ্গে হেসে উঠলাম। রঞ্জন বলল, তোমার ওই মেয়েটার ওপর খুব রাগ তাই-না?
মাধবী বলল, নিশ্চয়ই! যে-মেয়ে স্বামীর মৃতদেহ পাশের ঘরে রেখে নিজে বাইরের লোকের সঙ্গে হেসে গল্প করতে পারে—সে সব পারে!
আমি বললাম, মাধবী, তোমাকে যদি বিচারকের আসনে বসিয়ে দেওয়া হত—তাহলে তুমি নিশ্চয়ই মেয়েটাকে ফাঁসি দিতে, তাই-না?
দিতুমই তো!
আমি জিজ্ঞেস করলাম, আচ্ছা মাধবী, তুমি যে বলছ করবীই খুন করেছে, কিন্তু কীভাবে খুন করেছে, সেটাও তো তোমাকে বলতে হবে। শুধু শুধু একজনকে খুনি বললেই তো আর হয় না!
মাধবী বলল, এ তো খুব জলের মতন বোঝাই যাচ্ছে। ওই অসভ্য পাজি মেয়েটার সঙ্গে সূরযলালের নিয়মিত দেখা হত গোপনে। সুখেন কখনো অফিসের কাজে বাইরে গেলে তো আর কথাই নেই! সেবার যখন সুখেন বাইরে গেল–
রঞ্জন বলল, সুখেন তো আসলে যায়নি বাইরে—
আঃ, আমাকে বলতে দাও না! সুখেন পাটনায় যাওয়ার নাম করে বাইরে লুকিয়ে-টুকিয়ে ছিল। সূরযলাল রাত্তিরে ওদের বাড়িতে যেই এসেছে—সুখেনও ঢুকে পড়েছে। ধরা পড়ে গিয়ে বেগতিক দেখে করবী অমনি সূরযলালের পিস্তল নিয়ে গুলি চালিয়ে দিয়েছে। ও মেয়ে সব পারে!
আমি বললুম, কিন্তু মাধবী, এর সঙ্গে ডাকবাংলোর সম্পর্ক কী? ঘটনাটা ওদের বাড়িতে ঘটে ডাকবাংলোয় ঘটল কেন? করবীর পক্ষে বাড়িতে থাকাই তো সুবিধেজনক!
বাড়িতেই তো হয়েছে। তারপর ডেডবডিটা ডাকবাংলোয় নিয়ে কিছু একটা করার মতলব ছিল।
মাধবী, আগাথা ক্রিস্টি তোমাকে দেখলে লজ্জা পেতেন! মেয়েরা এমন ভালো ডিটেকটিভ গল্প লিখতে পারে, আর তোমার এই বুদ্ধি।
রঞ্জন বলল, তোমার মেয়েটার প্রতি একটুও সহানুভূতি হচ্ছে না? আমার কিন্তু একটু একটু হচ্ছে।
তা তো হবেই! তোমরা পুরুষমানুষরা…
আর এক দফা হেসে রঞ্জন আমার দিকে তাকিয়ে বলল, সুনীল, তুই বল কে খুন করেছে।
আমি বললাম, আমি ঠিক বুঝতে পারছি না। তুই বল না!
রঞ্জন বলল, আমার ধারণা, এই ঘটনায় করবীর ভূমিকাটা একটু বড় করে দেখানো হচ্ছে। আসলে এরমধ্যে টাকাপয়সার কোনো ব্যাপার জড়িত। সূরযলাল, সুখেন, হরিনাথ, বুদ্বুরাম আর ডাকবাংলোর চৌকিদার এরা সবাই মিলে কোনো অবৈধ ব্যাবসার সঙ্গে জড়িত ছিল। এসব জায়গায় এ-রকম হয়। ওই ব্যাবসার ব্যাপারেই কোনো গোলমাল হয়, সুখেন বোধ হয় ব্রিট্রে করেছিল—তাই সূরযলাল আর অন্যরা মিলে সুখেনকে মেরে ফেলে। তারপর সূরযলালই কোনো বুদ্ধি খাটিয়ে করবীকে ওই ডাকবাংলোয় ডেকে নিয়ে গিয়ে ওকে জড়িয়ে ফেলে খুনের ঘটনার সঙ্গে। করবী তখন নিজে বাঁচবার জন্যই বাধ্য হয়ে সহযোগিতা করে ওদের সঙ্গে। মামাবাবু যে সুখেনকে ভালো লোক বলছেন, তারই বা প্রমাণ কী! বাইরে থেকে দেখে অনেককে ভালো মনে হয়। সুখেনই হয়তো নিজের বউকে অন্যদের সামনে এগিয়ে দিত।
কর্নেল সেন বললেন, রঞ্জন, তোমার থিয়োরিটা একেবারে অবাস্তব। এটা চমকপ্রদ বটে কিন্তু একটুও সত্যি নয়। ওদের মধ্যে কোনো ব্যাবসার সম্পর্ক যে ছিল না সেটা আমি ভালোভাবেই জেনেছি।
রঞ্জন হতাশ হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, সুনীল, তুই তা হলে বল!
আমি বললাম, আমি ভাই পারব না। আমি ধাঁধার উত্তর দিতে পারি না একদম।
ধাঁধা কোথায়? লজিক্যাল অ্যানালিসিস করলেই তো পাওয়া যায়।
ওইটাই যে আমি পারি না। আমি যখন ডিটেকটিভ গল্প-টল্প পড়ি—কোনোদিন আগে থেকে বুঝতে পারি না খুনি কে–। তা ছাড়া মানুষকে চেনা অত সহজ নয়। কোন মানুষ কখন কীরকম ব্যবহার করবে—তা কেউ বলতে পারে না। আমার তো মনে হচ্ছে, ওদের মধ্যে যে-কেউ খুন করতে পারে—করবী, সূরযলাল—এমনকী হরিনাথের পক্ষেও কোনো কারণে খুন করা অসম্ভব নয়। তার মনের মধ্যে কী জটিলতা ছিল, তা তো আমরা জানতে পারব না। বুদ্বুরামও যদি খুন করে, তাতেও অস্বাভাবিক কিছু নেই।
কর্নেল সেন বললেন, এরকমভাবে ভাবলে অবশ্যই সবাইকেই সন্দেহ করতে হয় কিংবা কোনো মানুষকেই সন্দেহ করা যায় না। একথা ঠিক, বাইরে থেকে দেখে আর মানুষকে কতটা বোঝা যায়। ভেতরে ভেতরে মনের মধ্যে তার কী খেলা চলছে, সেটা কেউ জানতে পারে না। তবে, অন্য একটা দিক থেকেও রহস্য সমাধানের চেষ্টা করা যায়। ক্রাইমের সময় এবং ঘটনাটা যদি রি-কনস্ট্রাক্ট করা যায়, তাহলে ব্যাপারটা অনেকটা সহজ হতে পারে। আমি যেদিন ডাকবাংলোতে হাজির হয়েছিলাম—তার আগের রাত্তিরে অর্থাৎ যেসময় খুনটা হয়েছিল—সেই সময়কার ঘটনা যদি কল্পনা করা যায়—তাহলে খুনিকে সহজেই দেখতে পাওয়া যাবে। চরিত্রগুলো যদি চেনা হয়ে যায়, তা হলে তাদের ব্যবহার কীরকম হবে, সেটাও অনেকটা কাছাকাছি আন্দাজ করা যায়। কোনো মানুষই তার স্বভাববিরুদ্ধ ব্যবহার সহজে করে না। বাইরে ভালো মানুষ আর ভেতরে ভেতরে হিংস্র শয়তান-এ-রকম লোকের সংখ্যা খুবই কম। অনেক উত্তেজক ডিটেকটিভ গল্পে পড়েছি—প্রথম দিকে ঘটনাটা যা মনে হয়েছিল শেষের দিকে তার সম্পূর্ণ একটা উলটো ব্যাখ্যা দেওয়া হল। রঞ্জনও সেই টেকনিকেই বলার চেষ্টা করছিল। কিন্তু আমার মনে হয়, বাস্তবে ওরকম ব্যাপার খুব কমই ঘটে। আমি তোমাদের যে ঘটনা বললাম, এটা কিন্তু পুরোপুরি বাস্তব–এরমধ্যে অদ্ভুত অপ্রাকৃত কিছু নেই। আগের রাত্রে কী কী ঘটেছিল, সেটা টুকরো টুকরোভাবে আমি বলে দিতে পারি। কিন্তু পুরো ছবিটা ফুটিয়ে তোলার জন্য ক্ষমতার দরকার। সে-ক্ষমতা আমার নেই। সুনীল তুমি তো গল্প-উপন্যাস লেখো—তুমি কল্পনায় সেই রাত্তিরটার একটা ছবি ফোটাতে পারবে না?
আমি বললাম, গল্প-উপন্যাস লেখা এককথা আর অন্যের মুখে একটা ঘটনা শুনে সেটাকে বাস্তবের মতন ভাবা একটা অন্য ব্যাপার। আমি বোধ হয় এটা পারব না।
রঞ্জন বলল, পারবি, চেষ্টা কর-না।
মাধবী বলল, হ্যাঁ, আপনি বলুন। আপনার যদি ভুল হয়, আমরা ধরে দেব।
রঞ্জন বলল, এইরকমভাবে আরম্ভ করো। ডাকবাংলোয় কে আগে গিয়েছিল সুখেন, না করবীর সঙ্গে সূর্যলাল—