ইংরেজ প্রতিপত্তি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সমগ্র উত্তর ভারতে যে অসংখ্য বাঙালী ছড়িয়ে পড়েন, তাঁরা সবাই কামিনীরঞ্জন ছিলেন না। পেশোয়ার-রাওলপিণ্ডি থেকে গিরিডি-জসিডি-মধুপুর বা রাঁচী জামসেদপুরের স্কুল-কলেজ-লাইব্রেরী, মঠ-মন্দির, সংবাদপত্র-সাহিত্য সভা ইত্যাদির ইতিহাস একটু ঘাঁটাঘাঁটি করলেই অসংখ্য উদার শিক্ষিত পরোপকারী বাঙালীর আশ্চর্য কীর্তি-কাহিনী জানা যাবে। বাঙালী শুধু কালীমন্দির দুর্গাবাড়ি বা থিয়েটারের ক্লাব গড়েনি বলেই আজো তারা বহু শহরে-নগরে শ্রদ্ধার আসনে আছেন।
গঙ্গাধর-কামিনীরঞ্জন বা তাদের বংশধরদের রক্তে রাজভক্তির মহা শক্তিশালী বীজ প্রায় কর্নওয়ালিসের চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের মত স্থায়ী আসন বিছিয়ে বসায় শিক্ষা-দীক্ষা বা পরোপকারের বিষ ঢুকতে পারেনি। একমাত্র ব্যতিক্রম রাজা অবলাকান্ত। উনি বোধ হয় ভুল করেই গর্ভধারিণীর স্মৃতিতে একটা স্কুল তৈরি করেছিলেন। অবশ্য তার কারণ ছিল।
কামিনীরঞ্জন হু এভার ম্যারেজ মাই মাদার, ইজ মাই ফাদার নীতি নিয়ে রাজার জাত ইংরেজদের ভজনায় এমনই নিমগ্ন ছিলেন যে ছেলেমেয়েদের ভদ্র-শিক্ষিত করার চেষ্টায় সারা জীবনে এক মুহূর্ত সময়ও নষ্ট করতে পারেনি। তাই তো তাঁর মৃত্যুর পর ছেলেমেয়েদের মধ্যে মারামারি কাটাকাটি শুরু হতে একটুও দেরি হল না। মামলা মোকদ্দমাও চলল বেশ কয়েক বছর। তারপর শুরু হল ভাগভাগি কাড়াকাড়ি। যাই হোক শেষ পর্যন্ত কামিনীরঞ্জনের ঐশ্বর্যের এক ভগ্নাংশ নিয়ে অবলাকান্ত একদিন বিহারের এই শহরে এসে হাজির। সম্বল বলতে শদেড়েক একর চাষের জমি, একটা পুরনো কুঠীবাড়ি, কয়েক লাখ টাকার বাসন-কোসন, গহনাগাটি ও প্রায় লাখখানেক টাকার কোম্পানির কাগজ। এই সামান্য সম্বল নিয়ে গঙ্গাতীরের এই ছোট্ট শহরে মোটামুটি শান্তিতে জীবন কাটাবার আশায় উনি এখানে এলেন। ছোট হলেও শহরটি মন্দ নয়। কলকারখানা তো দূরের কথা, কোন বড় সরকারী অফিসও এখানে নেই। তবে কোর্ট-কাছারি ও কালেক্টর আছেন। কয়েক বছর আগে একটা সরকারী হাসপাতালও হয়েছে। আশেপাশের জমিতে চাষ-আবাদ ভালই হয়। এছাড়া সর্বোপরি বহু ব্রাহ্মণের বাস। ঠিক জমিদার কেউ না থাকলেও কয়েক ঘর ধনী বারেন্দ্র আছেন। তার মধ্যে ওকালতি করে যতীন মুখুজ্যে ইতিমধ্যেই দুটি দোতলা ও তিন-চারটি একতলা বাড়ি বানিয়েছেন। তাছাড়া উনি জুড়িগাড়ি চড়ে কোর্টে যান। বাঙালীটোলার কালীমন্দির তৈরির জন্য উনি পাঁচশ এক টাকা দান করে বাঙালী সমাজের সর্বজনস্বীকৃত নেতা বলে বিবেচিত হন। এছাড়া ডাঃ নগেন্দ্রবিজয় বাঙ্গালী ঘোড়ায় চড়ে রুগী দেখতে যান ও নগদ দুটাকা ফী পান বলেও কম সম্মানিত না। এমনি আরও কয়েকজন আছেন।
এদের সবাইকে টেক্কা দেওয়া ছাড়াও সারা শহরের মানুষকে চমকে দেবার জন্য অবলাকান্ত পুরনো কুঠীবাড়িটাকে একটা প্রাসাদে রূপান্তরিত করতে কলকাতা থেকে সিমেন্ট-লোহালক্কড় ছাড়াও ইটালি থেকে মার্বেল ও জয়পুর থেকে মিস্ত্রী-কারিগর আনলেন। গৃহপ্রবেশের আগে অবলাকান্ত নিজে শহরের প্রত্যেকটি বাঙালীর বাড়িতে গিয়ে করজোড়ে নিবেদন করলেন, আমি একজন দীনদরিদ্র ব্রাহ্মণ। প্রয়াগ থেকে নতুন এসেছি এবং আপনাদের এই শহরে স্থায়িভাবে বসবাসের অভিপ্রায়ে কোন মতে দিন কাটাবার মত একটা কুটির বানিয়েছি। গৃহপ্রবেশের দিন আপনারা দয়া করে সপরিবারে সবান্ধবে পায়ের ধুলো দিলে কৃতার্থ বোধ করব।
সারা শহরের সাধারণ মানুষের মধ্যে ইতিমধ্যেই রটে গিয়েছিল, এলাহাবাদের রাজার কোঠী তৈরী হচ্ছে। বাঙালীটোলার বাঙালীরা অবশ্য জানতেন না, এলাহাবাদের রাজার বাড়ি না, অবলাকান্ত বাঁড়ুজ্যে বলে কোন এক জমিদার এ বাড়ি তৈরি করছেন। জমিদার না হলে কেউ ইটালি থেকে মার্বেল পাথর আনাতে পারে?
যাইহোক গৃহপ্রবেশের নিমন্ত্রণ পর্ব শেষ হতে না হতেই বাঙালীটোলার ঘরে ঘরে অবলাকান্তকে নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হল। কেউ কেউ বললেন, জমিদার হলেও লোকটি বেশ বিনয়ী। আবার কেউ কেউ বললেন, নতুন এসেছেন তো! তাই সমাজে ঢোকার চেষ্টা করছেন। আবার দু-চারজন বলাবলি করলেন যে এই উপলক্ষে সবাইকে দেখিয়ে দেবেন, কত বড় জমিদার। তবে সবাই ঠিক করলেন, নিমন্ত্রণ রক্ষা করতেই হবে। হাজার হোক জমিদার। তারপর বাড়ি এসে যখন নেমন্তন্ন করেছেন তখন না যাওয়া অত্যন্ত অন্যায় ও অসামাজিক কাজ হবে।
শহরের ধারের গঙ্গার মত এখানকার বাঙালী সমাজেও জোয়ার ভাটা হত না। গতানুগতিকভাবেই তাদের দিন কাটছিল। যতীন মুখুজ্যে ও নগেন গাঙ্গুলীর মত কয়েকজন মাত্র উপলব্ধি করলেন, অবলাকান্ত ওদের শান্তিতে থাকতে দেবেন না।
গৃহপ্রবেশের দিন দুপুরের মধ্যে বাঙালীটোলার ঘরে ঘরে রটে গেল, গৃহ প্রবেশের পূজা করার জন্য অবলাকান্ত পুরুতঠাকুরকে একশ টাকা দক্ষিণা, রুপোর বাসন-কোসন ও বহু কাপড়-চোপড় ছাড়াও দশ বিঘে জমি দান করেছেন। কোর্ট থেকে ফিরে এসে গিন্নীর কাছে এই সংবাদ শুনেই যতীন মুখুজ্যে বললেন, বুঝলে গিন্নী, এ হারামজাদা আমার মত দু-একজনকে অপমান করার জন্যই এইসব বদমায়েসী শুরু করেছে।
গিন্নী পান চিবুতে চিবুতে বললেন, সরলা পিসীর কাছে খবরটা শুনে আমি তো ভাবলাম, জমিদার হলেও লোকটা বড় ধাম্মিক।
ঘোড়ার ডিম ধার্মিক! শালা টাকার গরম দেখাচ্ছে।
গিন্নী রাঁধুনী-মার হাত থেকে লুচি-হালুয়ার পাত্র নিয়ে স্বামীর সামনে রেখেই বললেন, তাহলে আমরা আর ওর রাজবাড়িতে নেমন্তন্ন খেতে যাচ্ছি না।
না, না, গিন্নী যেতে আমাদের হবেই।
যে তোমাকে অপমান করতে চায়, তার বাড়িতে যাব কেন?
যতীন উকিল একটু হেসে গিন্নীর দিকে তাকিয়ে বলেন, তুমি তো চাণক্য শ্লোক পড়নি। পড়লে জানতে যুদ্ধ জয় করতে হলে আগে শত্রু সঙ্গে বন্ধুত্ব করে ভিতরের সব খবর জেনে নিতে হয়। আমরা শুধু আজই যাব না, নিয়মিত যাতয়াত করব।
অবলাকান্ত সত্যি এলাহি ব্যাপার করেছিলেন। গেটের কাছেই সব অতিথি-অভ্যাগতদের মাথায় আতর জল ছিটিয়ে দেওয়া হল। কর জোড়ে অভ্যর্থনা করলেন স্বয়ং অবলাকান্ত। পারস্য দেশীয় কার্পেটের উপর দিয়ে হেঁটে অতিথিরা প্যালেসের সামনে পৌঁছতেই তাদের প্রত্যেকের গলায় মালা, হাতে গোলাপফুল দেওয়া হল। ওদিকে কাশীর ওস্তাদ নাসিরুদ্দীন খাঁ সাহেব বিভোর হয়ে সানাই বাজা চ্ছিলেন। ইটালিয়ান মার্বেল দিয়ে মোড়া সিঁড়ি পার হয়ে দোতলার মেন ড্রইং রুমে পুরুষ অতিথিরা না ঢুকতে ঢুকতেই সবার হাতে এক গ্লাস করে চন্দনের শরবত তুলে দেওয়া হল। বাঙালীটোলার বাসিন্দারা ঘরদোর সাজসজ্জা দেখে সত্যি বিস্মিত না হয়ে পারেন না। সবাই ফিসফিস করে বলাবলি করেন, লোকটার যেমন পয়সা তেমন রুচি আছে। ইতিমধ্যে হঠাৎ স্বয়ং কালেক্টর সাহেব মেমসাহেবকে নিয়ে হাজির হতেই বাঙালীটোলার সবাই যেন ভূত দেখার মত চমকে ওঠেন। এমন কি যতীন উকিল ও নগেন ডাক্তারও স্বপ্নে ভাবেননি কালেক্টর সাহেব মেমসাহেবকে নিয়ে এই সদ্য আগত অবলাকান্তর বাড়িতে গৃহপ্রবেশের নেমন্তন্ন খেতে আসবেন। তাছাড়া এ শহরে কোন বাঙালীর বাড়িতে ইতিপূর্বে কোন কালেক্টর সাহেবের শুভাগমন হয়নি। আমন্ত্রিত সম্ভ্রান্ত ধনী বাঙালীরাও বিস্মিত হলেন।
সেদিনের আমন্ত্রিত বাঙালী সজ্জনদের বিস্ময়ের পর্ব এখানেও শেষ হল না। কালেক্টর সাহেবের বিদায় লগ্নের পূর্ব মুহূর্তে অবলাকান্ত জন-কল্যাণে ব্যয় করার জন্য মেমসাহেবের হাতে পাঁচ হাজার এক টাকা দান করলেন। সমস্ত বাঙালীর সামনে কালেক্টর সাহেব বললেন অবলাকান্তর মত দায়িত্বশীল ও কর্তব্যপরায়ণ প্রজার জন্য আমরা সত্যি গর্বিত।
বাড়িতে ফেরার পর যতীন উকিলের স্ত্রী বললেন, গল্পের বইতেই রাজবাড়ির কথা পড়েছি কিন্তু আজ সত্যি একটা রাজবাড়ি দেখলাম। লোকটার যে কত কোটি টাকা আছে, তা কে জানে।
উকিলবাবু গম্ভীর হয়ে কথাগুলো শুনে শুধু বললেন, হুঁ।
তবে লোকটার দিল আছে। তা না হলে শুধু গৃহপ্রবেশের জন্য এত টাকা ব্যয় করতে পারে।
এবার উকিলবাবুর মুখ দিয়ে আর একটি শব্দও বেরোয় না কিন্তু ওর গিন্নী চুপ করে থাকতে পারেন না। বলেন, অমিাদের এই বাঙালীটোলা কালীমন্দিরের জন্য দু-আড়াই হাজার টাকা তুলতেই সবাই হিমসিম খেয়ে গেল। তুমি পঁচিশ টাকা না দিলে তো মন্দিরটাও শেষ হত না আর এই অবলা বাঁড়ুজ্যে দুম করে পাঁচ হাজার টাকা মেমসাহেবের হাতে তুলে দিল!
এবারও উকিলবাবু চুপ। কী বলবেন?
শুধু যতীন মুখুজ্যের বাড়িতেই না বাঙালীটোলার ঘরে ঘরেই অবলাকান্তকে নিয়ে আলোচনা শুরু হল। সবাই স্বীকার করলেন, লোকটা সত্যি রাজা। রাজা না হলে ঐ রকম প্রাসাদ বানাতে পারে? নাকি অমন মুড়ি-মুড়কির মত টাকা খরচ করতে পারে? সেদিন দুপুরে অবনী চাটুজ্যেদের বাড়ির পাঁচ বউ শুয়ে শুয়ে অবলাকান্তকে নিয়েই আলোচনা করছিলেন। বাড়ির বড় বউ অবনী-গিন্নী বললেন, অবলাকান্তর স্ত্রীকে দেখতে সত্যি রানীর মত। এই বয়সেও কী রূপ! চোখ ঝলসে যায়?
সেজ বউ বললেন, তাছাড়া বড়দি, উনি কত হীরের গহনা পরে ছিলেন, তা দেখেছো?
মেজ বউ একটু হেসে বললেন, আজ ওকে দেখে যতীন উকিলের বউয়ের দেমাক ঠাণ্ডা হয়েছে।
বড় বউ বললেন, আমি খুব খুশি। যতীন উকিলের বউয়ের এত অহঙ্কার আর সহ্য করা যাচ্ছিল না।
ছোট বউ বললেন, বড়দি, শুধু ওর কথা কেন বলছ? ডাক্তার বাবুর স্ত্রীর অহঙ্কার কী কম?
আবার একটা পান মুখে পুরে মেজ বউ বললেন, এবার সব ঠাণ্ডা। নন্দ ঠাকুরপোর ছেলের অন্নপ্রাশনে আমি গরদ পরে যাইনি বলে ডাক্তারের বউ আমাকে সবার সামনে যে অপমান করেছিল, তা কী আমি জীবনে ভুলব?
বড় বউ বললেন, ঐ উকিল আর ডাক্তারের বউ–দুটোই সমান। সব সময় দেখাতে চায় ওদের অনেক টাকা আছে। আর এখন? অবলা বাড়ুজ্যে তো ওদের মত লোককে চাকর রাখতে পারে। দুতিন বউ একসঙ্গে বলে, ঠিক বলেছ!
শুধু মেয়েদের মধ্যে না, বাঙালীটোলার পুরুষদের মধ্যেও এখন। একমাত্র আলোচনার বিষয় রাজা অবলাকান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়। বৈঠক খানায়, তাসের আড্ডায়, ব্যায়ম সমিতির মাঠে, কালীমন্দিরের চত্বরে–যেখানেই দু-চারজন বাঙালী বাবুদের দেখা হয়, সেখানেই ঐ একথা, আলোচনা। দিনের পর দিন, সপ্তাহের পর সপ্তাহ কিন্তু মাস ঘুরতে ঘুরতেই বাঙালীদের আলোচনায় নতুন মোড় ঘুরল।
সেদিন কী কারণে যেন কোর্ট-কাছারির ছুটি। স্কুল-টুলও বন্ধ। কর্তা ব্যক্তিরা সবাই বাড়িতে আছেন বা ইতিমধ্যে পাড়ার সমস্ত বাচ্চা কাচ্চার সম্মিলিত চিৎকার–মোটরগাড়ি! মোটরগাড়ি!
মোটরগাড়ি? বাঙালীটোলায়? ছেলেমেয়েরা বলে কী? এ শহরে শুধু কালেক্টর সাহেবের মোটরগাড়ি আছে। তাও তিনি নিয়মিত ব্যবহার করেন না। কদাচিৎ, কখনও। তবে ছোটলাট মাঝে মাঝে আসেন বলে কালেক্টর সাহেবকে এই মোটরগাড়ি দেওয়া হয়েছে। ছেলেমেয়েদের চিৎকার শুনে বুড়ো-বুড়ীরাও চুপ করে বসে থাকতে পারেন না। বাইরে বেরিয়ে না এলেও ওরা সবাই জানলা দিয়ে উঁকি দিলেন। না দিয়ে পারলেন না। হ্যাঁ সত্যি তো একটা মোটরগাড়ি ঐ মোড়ের মাথায় দাঁড়িয়ে আছে। তবে কী কালেক্টর সাহেব এলেন? কিন্তু বাঙালীটোলায়…
দাদু! দাদু! রাজবাড়ির মোটরগাড়ি।
কী বললি?
রাজবাড়ি থেকে মোটরগাড়ি এসেছে তুই কী করে জানলি?
আমি শুনলাম।
প্রথমে বুড়ো-বুড়ীরা বিশ্বাস করেননি কিন্তু কয়েক মিনিটের মধ্যেই দেখা গেল, ওরা ঠিকই বলেছে। আগামী শনিবার সন্ধ্যায় রাজ বাড়িতে শনি-সত্যনারায়ণ পূজা হবে। তাই স্বয়ং অবলাকান্তর স্ত্রী বাড়ি বাড়ি নেমন্তন্ন করতে বেরিয়েছেন।
গড়গড়ার নল পাশে সরিয়ে রেখে যতীন মুখুজ্যে ওর স্ত্রীকে বললেন, বুঝলে গিন্নী, অবলাকান্ত এক ঢিলে দুই পাখি মারল। শনি-সত্য নারায়ণের নেমন্তন্ন করাও হল, আবার নতুন মোটরগাড়িটাও বাঙালীটোলার সবাইকে দেখিয়ে গেলেন।
তা ঠিক কিন্তু মোটরগাড়িটা ভারী সুন্দর!
উকিলবাবু চুপ।
তাছাড়া যে লোকটা গোল চাকার মত কি একটা ধরে চালাচ্ছিল, সে কী সুন্দর জামা-কাপড় পরেছিল!
এবারও উকিলবাবু চুপ।
গিন্নী কিন্তু চুপ করে থাকতে পারেন না। স্বামীকে জিজ্ঞেস করেন, হ্যাঁগো-একটা মোটরগাড়ি কিনতে কত টাকা লাগে?
হবে দশ-পনের হাজার।
বাপরে বাপ! এত টাকা লাগে? ঐ টাকা দিয়ে তো তুমি দু-তিনটে বাড়ি বানিয়েছ?
এবার উকিলবাবু একটু রেগেই বলেন, আজেবাজে বকবক করা বন্ধ কর তো।
যাইহোক এই ভাবেই অবলাকান্ত তার পাঁচ পুত্র ও তিন কন্যাকে নিয়ে এই নতুন শহরে জীবন আরম্ভ করলেন।