৪. আপনি কেন আজ সকালে ঘুম থেকে উঠেছিলেন?

৪. আপনি কেন আজ সকালে ঘুম থেকে উঠেছিলেন? 

প্রতি সকালে আপনাকে দৃঢ়তা নিয়ে ঘুম থেকে উঠতে হবে যদি আপনি সন্তষ্ট চিত্তে বিছানায় যেতে চান।
—George Lorimer 

আপনি কেন আজ সকালে ঘুম থেকে উঠেছিলেন? এটা সম্ভবত সেই প্রশ্ন যা আপনাকে কেউ কখনো জিজ্ঞেস করেননি। কিন্তু এক মুহূর্তের জন্যে এটা ভেবে দেখুন, অধিকাংশ সকালে কেন আপনি ঘুম থেকে ওঠেন? কেন আপনি উষ্ণ আরামদায়ক বিছানা ত্যাগ করেন? প্রতিদিন সকালে আপনি কি এইজন্যে বিছানা ছাড়েন যে, আপনি প্রকৃতপক্ষে এটা চান তাই? অথবা এটা কি এজন্যে যে, যে- কোনও কারণেই হোক আপনাকে বিছানা ছাড়তে হয়? যদি আপনি অধিকাংশ মানুষের মতো হয়ে থাকেন তাহলে আপনি প্রতি সকালে অ্যালার্ম ঘড়ির একটানা শব্দের সঙ্গে উঠে পড়েন ও অনিচ্ছায় নিজেকে বিছানা থেকে টেনে তোলেন কারণ আপনাকে কোথাও যেতে হয়, কোনও কাজ করতে হয় অথবা কারো দেখভাল করতে হয়। তবে ঘুমের অপশন থাকলে অধিকাংশ মানুষ ঘুমিয়েই থাকবে। 

সুতরাং, স্বাভাবিকভাবেই আমাদের মন বিদ্রোহ করে। আমরা বেজে উঠা অ্যালার্ম ঘড়ি সুজ করি এবং অনিবার্য জেগে ওঠা বাদ দিয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়ি। জেগে উঠার বিরুদ্ধে আমাদের এ প্রতিরোধ বিশ্বকে একটি মেসেজ দিচ্ছে যে, আমরা বরং আমাদের বিছানায় শুয়েই থাকব; সচেতন ও সক্রিয়ভাবে জীবনযাপন করা এবং আমাদের কাঙ্ক্ষিত জীবন তৈরি করে নেওয়ার পরিবর্তে অসচেতনভাবে বিছানায় থাকাই আমাদের পছন্দ। আমাদের অধিকাংশই অবসর নিয়েছি একটি নির্দিষ্ট স্তরের মাঝারি মানের (mediocrity) জীবনে। আমাদের সম্ভাবনা অপূর্ণ রয়ে গেছে। আমরা এটা পছন্দ করি না। এখানে ভালো লাগার কিছু নেই। আমরা জানি যে সফলতা, অর্জন ও পূর্ণতার আরেকটি স্তর রয়েছে যে স্তরে পৌঁছানো আমাদের পক্ষে সম্ভব। কিন্তু আমরা আটকে যাই এবং আমরা জানিনা কীভাবে নিজেদেরকে মুক্ত করতে হয়। 

স্নুজ করলেন, আপনি হেরে গেলেন : জেগে উঠার ব্যাপারে সত্য কথাটি 

“স্নুজ করলেন (ঝিমালেন), আপনি হেরে গেলেন” এই প্রাচীন প্রবাদটির খুব গভীর একটা অর্থ রয়েছে, যা হয়ত আমরা অনুধাবন করি না। যখন আপনি অনিবার্য কারণ ছাড়া ঘুম থেকে উঠতে দেরি করেন, তার মানে এই যে বিছানা ছাড়ার সম্ভাব্য শেষ মুহূর্তটুকু পর্যন্ত আপনি দেরি করেন এবং তারপর দিন শুরু করেন। ভেবে দেখুন, এভাবে আপনি প্রকৃতপক্ষে আপনার জীবনকে থামিয়ে রাখছেন। প্রতিবার যখনই আপনি অ্যালার্ম ঘড়ি সুজ করছেন, আপনি থামিয়ে দিচ্ছেন আপনার দিন, জীবন, জেগে উঠা এবং আপনার কাঙ্ক্ষিত জীবন। যখন আপনি শুরু হওয়া একটি দিনকে থামিয়ে দেয়া চিন্তায় দিনটি শুরু করেন, সেই নেতিবাচক শক্তির কথা ভাবুন যা তখন আপনাকে পরিবেষ্টিত করে রাখে। যখন আপনি অ্যালার্ম ঘড়ি বেজে উঠার শব্দের সঙ্গে সঙ্গে তাল মিলিয়ে নিজের ভেতর থেকে বলতে থাকেন, “ওহ নো, ইতোমধ্যে জেগে ওঠার সময় হয়ে গেছে, আমাকে উঠতে হবে। আমি উঠতে চাইনে।” একথাগুলোর মাধ্যমে আপনি যেন প্রকারন্তরে বলছেন, “আমি আমার জীবন যাপন করতে চাইনে, কমপক্ষে পূর্ণভাবে।” 

অনেক মানুষ যারা হতাশায় ভোগেন তাদের কাছে সকালের সময়টা সবচেয়ে কঠিন। তারা একটা ভয় নিয়ে ঘুম থেকে ওঠেন। কখনো এটা হতে পারে তাদের কর্মস্থলের বাধ্যবাধকতা, অথবা একটি সম্পর্ক যা ভেঙে যাচ্ছে। কিছু মানুষ এরকম অনুভব করেন শুধুমাত্র তাদের হতাশ প্রকৃতি এবং এ থেকে তারা তাদের মন, আবেগ ও হৃদয়ের ওপর কোনো নির্দিষ্ট কারণ ছাড়াই যে চাপ অনুভব করেন, সেজন্যে। সকালের আবহে যে সুর আছে তার একটি শক্তিশালী প্রভাব আমাদের মনে সারাদিন বিরাজ করে। এটা একটি চক্রে পরিণত হয়: হতাশা নিয়ে ঘুম থেকে উঠা, সারাদিন অবিরাম সেই হতাশা বয়ে বেড়ানো, উদ্বিগ্ন বা বিষণ্ন মনে ঘুমাতে যাওয়া এবং পরের দিনও সেই একই বিষাদ চক্রের পুনরাবৃত্তি। 

প্রতিদিন সকালে উদ্দেশ্যপূর্ণভাবে ঘুম থেকে না উঠা মানুষেরা শুধু স্বচ্ছতা, শক্তি, অনুপ্রেরণা ও নিজস্ব শক্তি থেকেই বঞ্চিত হচ্ছেন না, প্রতিদিন তারা এভাবে দিনকে থামিয়ে রাখার অনিবার্য প্রক্রিয়ায় বিশ্বকে শক্তভাবে একথা জানিয়ে দিচ্ছেন যে, কাঙ্ক্ষিত জীবনের জন্যে প্রচেষ্টা ও সেরূপ জীবনযাপনের চেয়ে বিছানার অচেতন জীবনই তাদের বেশি পছন্দ। 

অন্যদিকে, প্রতিদিন আবেগ ও উদ্দেশ্য নিয়ে ঘুম থেকে উঠার মাধ্যমে আপনি সেই কতিপয় অতি অর্জনকারীদের দলে যোগ দিচ্ছেন, যারা তাদের স্বপ্নের জীবনযাপন করছেন। অধিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে যে, আপনি সুখী হবেন। শুধুমাত্র সকালে উঠার ব্যাপারে দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করে আপনি আক্ষরিকভাবেই সবকিছু পরিবর্তন করতে সক্ষম হবেন। সকালে উঠার ব্যাপারে শুধু আমার কথাই নয়, আপনি আস্থা রাখুন সকালে উঠা এইসব বিখ্যাত মানুষদের উপর: Oprah Winfrey, Tony Robbins, Bill Gates, Howard Schultz, Deepak Chopra, Wayne Dyer, Thomas Jefferson, Benjamin Franklin, Albert Einstein, Aristotle, and far too many more to list here. এই তালিকায় আরও অনেক নাম আছে। 

কেউ আমাদেরকে কখনো এটা শেখায়নি যে, প্রতিদিন সকালে উঠার জন্যে খুব সচেতনভাবে প্রকৃত একটি ইচ্ছা ও উৎসাহ নিয়ে মন তৈরি করে জেগে উঠার ফলে আমরা আমাদের সমগ্র জীবনে পরিবর্তন আনতে পারি। 

যদি আপনি প্রতিদিন সকালে ঝিমাতে থাকেন আপনার কাজে যাওয়ার সম্ভাব্য শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত, এবং তারপর বাচ্চাদের স্কুলে নেওয়া, পরিবারের দেখাশুনা করা এবং তারপর বাড়ি ফিরে ঘুমানোর আগ পর্যন্ত টেলিভিশনে মগ্ন থাকেন, তাহলে আপনার প্রতি আমার প্রশ্নঃ কখন আপনি আপনার উন্নয়ন করে এতদিনের কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তিতে পরিণত হবেন এবং যার ফলে সেই স্তরের স্বাস্থ্য, সম্পদ, সুখ, সফলতা এবং স্বাধীনতা ভোগ করবেন— যা আপনি প্রকৃতই চেয়ে থাকেন এবং যা আপনার প্রাপ্য? অতি দুর্বল চিন্তায় বাস্তবতা থেকে পালানোর পথ খোঁজা থেকে সরে এসে কখন আপনি আপনার প্রকৃত জীবন যাপন করবেন? কেমন হবে যদি আপনার বাস্তবতা, আপনার জীবন এমন কিছু হয়ে যায় যা আপনার সচেতন চিন্তার বাইরে? 

আমাদের আজকের চেয়ে উত্তম কোনো দিন নেই যা আমরা ছিলাম তা পরিত্যাগ করে যা আমরা হতে পারি এবং যে জীবন আমরা যাপন করছি সেই জীবনের কাঙ্ক্ষিত উন্নতির জন্যে। আপনার হাতে থাকা এই বইটির চেয়ে উত্তম কোনো বই নেই এটা দেখাতে যে কীভাবে আপনি সেই ব্যক্তিতে পরিণত হবেন যে ব্যক্তিতে পরিণত হওয়ার আপনার চুড়ান্ত লক্ষ্য। আপনার এতদিনের কাঙ্ক্ষিত জীবন খুব দ্রুতই সৃষ্টি হয়ে যাবে, আপনি স্থায়ীভাবে সে জীবন যাপন করতে সক্ষম হবেন। 

কতটুকু ঘুম আমাদের বাস্তবিকই প্রয়োজন? 

কয় ঘণ্টা ঘুম আমাদের প্রয়োজন এ বিষয়ে প্রথম যে কথাটি বিশেজ্ঞরা আপনাকে বলবেন, তা হচ্ছে যে এব্যাপের কোনো “ম্যাজিক নাম্বার” নেই। ঘুমের যে আদর্শ পরিমাণ তা একেক জনের ক্ষেত্রে একেক রকম। এ ব্যপারে বয়স, বংশধারা, সার্বিক স্বাস্থ্য, শরীরচর্চা ও আরো অনেক বিষয়ের প্রভাব রয়েছে। যেখানে রাতে সাত ঘণ্টা ঘুম আপনার জন্যে যথেষ্ট, সেখানে কারো কারো ক্ষেত্রে সুখী ও স্বাচ্ছন্দ্য জীবনের জন্যে নয় ঘণ্টা ঘুমের প্রয়োজন হয়। 

National Sleep Foundation অনুসারে, গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, দীর্ঘ সময়ব্যাপী (নয় ঘণ্টা কিংবা তারও বেশি) ঘুম রোগ, অসুস্থতা এমনকি মৃত্যুর কারণ হতে পারে। এই গবেষনায় আরো উদ্ঘাটিত হয়েছে, দীর্ঘ সময়ের ঘুমের সঙ্গে বিষণ্নতার গভীর যোগসূত্র রয়েছে। 

যেহেতু ঘুম নিয়ে অসংখ্য পরিসংখ্যান ও বিশেজ্ঞদের মতামতে এরূপ ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে এবং যেহেতু ঘুমের সময়ের পরিমাণ নিয়ে ব্যক্তিতে ব্যক্তিতে ভিন্নতা রয়েছে তাই আমি এখানে কোনো বিজ্ঞানসম্মত দিকে যাচ্ছি না। তার পরিবর্তে, আমি আমার ব্যক্তিগত বাস্তব জগতের ফলাফল শেয়ার করছি। এখানে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ও পরীক্ষানিরীক্ষার কথা উল্লেখ করব। এর কয়েকটি কিছুটা বিতর্কিতও হতে পারে। 

কীভাবে অধিক শক্তি নিয়ে জেগে উঠা যায় (কম ঘুমে)

এখানে আমার নিজস্ব পরীক্ষানিরীক্ষায়, সেইসঙ্গে Miracle Morning-এর অন্যান্য আগ্রহী ব্যক্তি যারা এই থিওরি পরীক্ষা করে দেখেছেন তাদের সঙ্গে মিলে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি যে, আমাদের ঠিক ততটুকু ঘুম প্রয়োজন যতটুকু আমরা প্রয়োজন বলে বিশ্বাস করি। অন্যভাবে বলতে গেলে, আমার কাছে মনে হয়েছে, সকালে ঘুম থেকে উঠে আমরা কেমন অনুভব করি তা রাতে কয়ঘণ্টা ঘুমিয়েছিলাম তার ওপর নির্ভর করে না; এটা নির্ভর করে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ঘুম থেকে উঠে কেমন অনুভব করব বলে নিজে চিন্তা করেছিলাম তার ওপর। 

উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, যদি আপনি বিশ্বাস করেন যে, ঘুমের পূর্ণতার জন্যে আপনার ৮ ঘণ্টা সময় প্রয়োজন, কিন্তু তারপরও যদি আপনাকে রাত ১২:০০টায় বিছানায় যেয়ে সকাল ৬:০০টায় ঘুম থেকে উঠতে হয়; তাহলে আপনি আপন মনে বলবেন যে, “ নাহ, আমি আজ রাতে মাত্র ছয় ঘণ্টা ঘুমাতে পারব, যেখানে আমার প্রয়োজন আট ঘণ্টা ঘুমের। ঘুমের ঘাটতির জন্যে সকালে আমার খুবই অবসন্ন লাগবে।” এ অবস্থায় কেমন লাগবে যখন সকালে আপনার অ্যালার্ম ঘড়ি বেজে উঠবে, আপনি চোখ খুলবেন এবং বুঝবেন যে, এখন জেগে উঠতে হবে? প্রথমেই কোন জিনিসটি আপনি ভাববেন? এটা নিশ্চয় সেই ভাবনার পুনরাবৃত্তি, যা আপনি ঘুমানোর আগে করেছিলেন! “ নাহ, আমি মাত্র ছয় ঘণ্টা ঘুমিয়েছি? আমার খুবই ক্লান্ত লাগছে।” এটা নিজ মনে সৃষ্ট একটা অন্তর্ঘাতমূলক চিন্তা। যদি ভাবেন যে, সকালে আপনি ক্লান্ত অনুভব করবেন, তাহলে নিশ্চিভাবেই সকালে আপনাকে নিজের কাছে ক্লান্ত মনে হবে। যদি আপনি বিশ্বাস করেন যে, ঘুমের পূর্ণতার জন্যে আপনার ৮ ঘণ্টা সময় দরকার, তাহলে কোনো অবস্থাতেই এর চেয়ে কম সময়ের ঘুমে আপনি তৃপ্ত হবেন না, আপনাকে নিজের কাছে অবসাদগ্রস্ত মনে হবে। কিন্তু কেমন হবে যদি ঘুম নিয়ে অপনার বিশ্বাসের জগতটা পাল্টে ফেলেন? 

শরীর-মনের যোগসূত্র একটি শক্তিশালী জিনিস এবং আমি বিশ্বাস করি, জীবনের সর্ববিষয়ে আমাদের একটা দায়িত্ববোধ থাকতে হবে। উদ্যমী ও শক্তিশালী হয়ে সকালে ঘুম থেকে উঠাও এর অন্তর্ভুক্ত, আমরা কয় ঘণ্টা ঘুমাই এটা বিবেচ্য নয়। 

ঘুমের বিভিন্ন সময়কাল নিয়ে আমি পরীক্ষানিরীক্ষা করেছি – সর্বনিম্ন চার ঘণ্টা থেকে সর্বোচ্চ নয় ঘণ্টা ঘুমের সময় নিয়ে এটা করেছি। এভাবে পরীক্ষানিরীক্ষার একটি বিষয় ছিল যে, কয় ঘণ্টা ঘুমিয়েছি এর উপর ভিত্তি করে আমি নিজে নিজেকে খুব জোরালোভাবে বলছিলাম সকালে আমি কেমন অনুভব করব। প্রথমত, ঘুমের প্রতিটি সময়কালে, বিছানায় যাওয়ার আগে নিজে নিজেকে বলেছিলাম যে, আমি বেশি সময় ঘুমাতে পারব না, সুতরাং সকালে আমার খুব অবসন্ন লাগবে। 

চার ঘণ্টা ঘুমের পর, আমি জেগে উঠে অবসন্ন বোধ করেছিলাম। পাঁচ ঘণ্টা ঘুমের পর, আমি জেগে উঠে অবসন্ন বোধ করেছিলাম। ছয় ঘণ্টা ঘুমের পর, অনুমান করুন – এবারও অবসন্ন বোধ করেছিলাম। 

সাত ঘণ্টা… আট ঘণ্টা… নয় ঘণ্টা… অ্যালার্ম ঘড়ি বেজে উঠার পর ঘুমের সময়কালের পরিবর্তন আমার অনুভূতিতে কোনো পরিবর্তন আনেনি। যতক্ষণ পর্যন্ত আগের রাতে বিছানায় যাওয়ার আগে আমি নিজেকে বলেছিলাম যে, আমি যথেষ্ট ঘুমাতে পারব না; সকালে ঘুম থেকে উঠে আমি ক্লান্ত অনুভব করেছিলাম, প্রকৃতপক্ষে ওটাই ছিল আমার অনুভূতি। 

তারপর, প্রতিটি সময়কাল নিয়ে আমি আবারো পরীক্ষানিরীক্ষা করেছিলাম – নয় ঘণ্টা থেকে চার ঘণ্টার ঘুম নিয়ে। এবার আমি ঘুমাতে যাওয়ার আগে একটি ইতিবাচক আত্মকথন আবৃত্তি করেছিলাম এবং নিজেকে বলেছিলাম যে, খুব শক্তিমান হয়ে আমি সকালে ঘুম থেকে উঠব। “আজ রাতে আমাকে এই পাঁচ ঘণ্টা ঘুমের সময় দেওয়ার জন্যে ধন্যবাদ। সকালে ঘুম থেকে উঠে সতেজ ও শক্তিশালী অনুভব করার জন্যে এই পাঁচ ঘণ্টা সময়ই আমার প্রয়োজন। আমার শরীর অলৌকিক ক্ষমতাসম্পন্ন, পাঁচ ঘণ্টা ঘুমের বিশ্রাম থেকে আমার শরীর প্রচুর শক্তি উৎপন্ন করতে সক্ষম। আমি বিশ্বাস করি যে, আমি বাস্তবতা থেকে অভিজ্ঞতা অর্জন করি এবং সারাদিনের জন্যে আগামীকাল সকালে শক্তিমান ও উত্তেজনাপূর্ণ অনুভুতি নিয়ে ঘুম থেকে উঠা আমার পছন্দের বিষয়। আমি এজন্যে কৃতজ্ঞ।” 

আমি যা পর্যবেক্ষণ করেছিলাম তা হচ্ছে, নয় ঘণ্টা, আট ঘণ্টা, সাত ঘণ্টা, ছয় ঘণ্টা, পাঁচ ঘণ্টা অথবা এমনকি চার ঘণ্টার ঘুম যেটাই হোক না কেন, যখন আমি বিছানায় যাওয়ার আগে সচেতনভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে ভাবতাম যে, ঘুমের জন্যে আমি যে সময়টা পাচ্ছি তা যথাযথ, শারীরিকভাবে শক্তিমান হয়ে সকালে খুব চমৎকার অনুভুতি পাওয়ার জন্যে ঘুমের ওই ঘণ্টাগুলোই যথেষ্ট, এরকম সকালে আমি অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে ভালো অনুভূতি নিয়ে ঘুম থেকে উঠতাম। যাহোক, এটা আমার কথা। আমি আপনাকে উৎসাহিত করছি, আপনি নিজে ঘুমের এই ব্যাপারটা পরীক্ষানিরীক্ষা করে দেখবেন। 

সুতরাং ঘুমের জন্যে প্রকৃতপক্ষে কয় ঘণ্টা সময় আপনার প্রয়োজন? এবার আমাকে বলুন 

প্রতিটি সকাল ঈদের সকালের মতো আনন্দময় করার গোপন রহস্য

অতীতে আপনার জীবনের সেইসব সময়ের কথা ভেবে দেখুন যখন, আপনি সকালে ঘুম থেকে উঠতে সত্যিই খুব উত্তেজনা অনুভব করতেন। হতে পারে এটা কয়েক মাসের প্রতীক্ষার পর পাওয়া কোনো এক বড় ছুটির শুরুতে খুব সকালের বিমান ধরা। হতে পারে এটা আপনার নতুন চাকরির প্রথম দিনের সকাল, অথবা স্কুলে আপনার প্রথম দিনের সকাল। এটা হতে পারে আপনার বিয়ের দিন, অথবা সর্বশেষ জন্মদিন। ব্যক্তিগতভাবে, কয় ঘণ্টা ঘুমিয়েছিলাম তার ওপর ভিত্তি করে আমার জীবনে আমি কোনো সময়ের কথাই ভাবতে পারি না যখন আমি সকালে উঠতে অধিক উত্তেজনা অনুভব করতাম। এটা ঘটতো শুধুমাত্র প্রতি বছর ঈদের সকালে, বিশেষ করে আমার শিশুকালে। আপনি মিলিয়ে দেখতে পারেন। 

অতীতে সকালে আনন্দের সঙ্গে ঘুম থেকে উঠার উপলক্ষ্যগুলো যাই-ই হোক না কেন, ওই সকালগুলো পেয়ে আপনি কেমন অনুভব করতেন? আপনি কি নিজেকে জোর করে বিছানা থেকে টেনে নিয়ে যেতেন? এরকম সকালগুলোতে আমারা জেগে থাকার অপেক্ষায় থাকতে পারি না। আমরা সত্যিই উদ্যমী ও উত্তেজিত হয়ে যাই। আমরা দ্রুত বিছানা থেকে লাফিয়ে উঠি, দিনটি পওয়ার জন্যে ব্যস্ত হয়ে যাই! কল্পনা করুন, যদি আপনার প্রতিটি দিন এরকম হতো! এরকম কি হতে পারে না? পারে। 

The Miracle Morning হচ্ছে শক্তি ও প্রাণচাঞ্চল্যের সঙ্গে সকালে ঘুম থেকে উঠার সেই অভিজ্ঞতারই পুনর্জন্ম। আপনার জীবনে প্রতিটি দিনই এরকম হবে এবং তা সারাজীবন স্থায়ী হবে। এটা হচ্ছে প্রতি সকালে উদ্দেশ্যপূর্ণভাবে ঘুম থেকে উঠা। একারণে নয় যে, আপনি বাধ্য হয়ে এটা করবেন; এটা একারণে যে, আপনি প্রকৃতই চান— আপনার প্রতিদিনের সময় নিবেদিত হোক আপনার ব্যক্তিগত উন্নয়নের জন্যে এবং তা আপনাকে সেই ব্যক্তিতে পরিণত করুক, যে ব্যক্তিটি হওয়া আপনার জন্যে প্রয়োজন; যেন আপনি সৃষ্টি করে নিতে পারেন আপনার কল্পনার সবচেয়ে অসাধারণ, পরিপূর্ণ ও প্রাচুর্যে ভরা জীবন। The Miracle Morning ইতোমধ্যে পৃথিবীব্যাপী হাজার হাজার মানুষের জন্যে সেই কাজটিই করছে। ঠিক আপনার মতো মানুষদের জন্যেই। 

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *